সালাম দেওয়ার পদ্ধতি – Method of Greetings
সরাসরি হাদীস থেকে বিস্তারিত পড়ুন >> সহীহ বুখারী >> আদাবুল মুফরাদ >> সহীহ মুসলিম >> তিরমিজি >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজা >> রিয়াদুস সালেহীন
পরিচ্ছেদ ১ঃ সালামের সূচনা
পরিচ্ছেদ ২ঃ অনুমতি চাওয়ার নিয়ম
পরিচ্ছেদ ৩ঃ তিন বার সালাম দেওয়া
পরিচ্ছেদ ৪ঃ সালাম পৌঁছানো
পরিচ্ছেদ ৫ঃ সালামের উত্তর বা সালাম বিনিময়ের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ৬ঃ বর্ধিত শব্দযোগে সালাম ও উত্তর দেওয়া
পরিচ্ছেদ ৭ঃ কেউ বসতিহীন ঘরে প্রবেশ করিল।
পরিচ্ছেদ ৮ঃ মসজিদে সালাম দেওয়া এবং আলাইকাস্ সালাম না বলা
পরিচ্ছেদ ৯ঃ আমীরকে সালাম দেয়া।
পরিচ্ছেদ ১০ঃ সালাম হলো মহামহিম আল্লাহর নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি নাম।
পরিচ্ছেদ ১১ঃ অমুসলিমদের সালামের জবাবের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ১২ঃ মজলিস থেকে বিদায়কালে সালাম প্রদানকারীর অধিকার।
পরিচ্ছেদ ১ঃ সালামের সূচনা
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর। সেখানে যদি কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত। সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হইবেনা, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। [১৯ ] (সুরা আন-নূর ২৪/২৭-২৯)
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদাম (আঃ) –কে তাহাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শোনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ এটাই হইবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেনঃ
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আস্সালামু আলাইকুম, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক
তাঁরা জবাবে বললেনঃ
السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّ
আস্সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ।
তাঁরা বাড়িয়ে বললেনঃ
وَرَحْمَةُ اللَّهِ
ওয়া রহমাতুল্লাহ
বাক্যটি। তারপর নাবী (সাঃআঃ) আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে তারা আদাম (আঃ) –এর আকৃতি বিশিষ্ট হইবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ কমে আসছে।
[সহীহ বুখারী ৬২২৭], [আদাবুল মুফরাদ ৯৮৭], [রিয়াদুস সালেহীন ৮৫০]
পরিচ্ছেদ ২ঃ অনুমতি চাওয়ার নিয়ম
কালাদাহ ইবনি হাম্বাল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যাহ [রাদি.] তাহাকে কিছু দুধ, একটি হরিণ ছানা ও কিছু শসাসহ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট প্রেরণ করিলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] মক্কার উঁচু স্থানে অবস্থান করছিলেন। আমি সালাম না দিয়েই তাহাঁর নিকট প্রবেশ করলে তিনি বলিলেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক
বলো। ঘটনাটি ঘটেছিলো সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যাহ [রাদি.]-এর ইসলাম গ্রহণের পর।
[আবু দাউদ ৫১৭৬], [তিরমিজি ২৭১০ সহিহ], [রিয়াদুস সালেহীন ৮৭৭, ৮৭৮]
রিবঈ ইবনি হিরাশ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত [আবু দাউদ ৫১৭৭, ৫১৭৮, সহিহ] [আদাবুল মুফরাদ ১০৯৪]
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা উমার [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তাহাঁর কাঠের মাচানে ছিলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন,
السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ, আস্সালামু আলাইকুম, উমার কি প্রবেশ করিবে?
[আবু দাউদ ৫২০১, সহিহ হাদিস]
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত [আদাবুল মুফরাদ ১০৯৫, সহিহ]
বনী আমিরর এক ব্যক্তি হইতে বর্ণীত [আবু দাউদ ৫১৭৯]
পরিচ্ছেদ ৩ঃ তিন বার সালাম দেওয়া
আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু মূসা [রাদি.] উমার [রাদি.] এর নিকট অনুমতি চেয়ে বলেন,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পারি?
উমার [রাদি.] বলেন, এক। আবু মূসা [রাদি.] কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তিনি আবারও সালাম দিয়ে বলেন, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? উমার [রাদি.] বলেন, দুই। তারপর আবু মূসা [রাদি.] অল্প সময় নীরবতা অবলম্বন করিলেন। তিনি আবার বলিলেন, আসসালামু আলাইকুম السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ, আমি কি আসতে পারি? উমার [রাদি.] বলিলেন, তিন। এবার তিনি চলে যেতে লাগলেন। উমার [রাদি.] প্রহরীকে জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি কি করছেন? প্রহরী বলিল, তিনি চলে গেছেন। তিনি বলিলেন, তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে নিয়ে এসো। তারপর তিনি উমারের সামনে এলে তিনি প্রশ্ন করিলেন, আপনি এরকম করিলেন কেন? তিনি বলিলেন, আমি সুন্নাত পালন করেছি। উমার [রাদি.] বলিলেন, সুন্নাত পালন করিয়াছেন? আল্লাহর কসম! এর স্বপক্ষে আপনাকে দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করিতে হইবে, তা না হলে আমি আপনার ব্যবস্থা করছি [অর্থাৎ- শাস্তি দিব]। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি [আবু মূসা] আমাদের নিকট আসলেন। আমরা কয়জন আনসারী বন্ধু একসাথে বসে ছিলাম। তিনি বলিলেন, হে আনসার সম্প্রদায়! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর হাদীস সম্পর্কে কি তোমরা সবার চাইতে বেশি জ্ঞাত নও? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলেননি যে, তিনবার অনুমতি চাইতে হইবে? তারপর তোমাকে অনুমতি দিলে তো দিল, নতুবা ফিরে যাবে। উপস্থিত লোকজন তার সাথে কৌতুক করিতে লাগল। আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, এবার আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম এবং বললাম, আপনার উপর এ ব্যাপারে কোন শাস্তি হলে আমি আপনার অংশীদার হব। রাবী বলেন, তারপর তিনি উমারের নিকট এসে এ ঘটনা বলিলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি এ সম্পর্কে জানতাম না।
[তিরমিজি ২৬৯০, সহীহ হাদীস]
ক্বাইস ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সঙ্গে দেখা করিতে আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি বলিলেন,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহ্মাতুল্লাহ। আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক
বর্ণনাকারী বলেন, সাদ [রাদি.] আস্তে সালামের উত্তর দিলেন। ক্বাইস [রাদি.] বলেন, আমি বলিলাম, আপনি কি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রবেশের অনুমতি দিবেন না? তিনি বলিলেন, থামো, তাঁকে বেশী বেশী আমাদেরকে সালাম দিতে দাও। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ। সাদ [রাদি.] এবারেও আস্তে সালামের জবাব দিলেন। পুনরায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। অতঃপর তিনি ফিরে যেতে থাকলেন। সাদ [রাদি.] তাহাঁর পিছনে পিছনে গিয়ে তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয়ই আমি আপনার সালাম শুনতে পারছিলাম এবিং চুপে চুপে সালামের জবাব দিচ্ছিলাম, যাতে আপনি বেশী বেশী সালাম দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সঙ্গে ফিরে আসলেন এবং সাদ [রাদি.] তাহাঁর গোসলের জন্য পানি এনে দিতে নির্দেশ দিলেন, অতঃপর তিনি গোসল করিলেন। এরপর তাঁকে জাফরান বা ওয়ার্স দ্বারা রঞ্জিত একটি চাদর দিলেন। তিনি তা পরিধান করিলেন। অতঃপর দুহাত তুলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি সাদ ইবনি উবাদাহ্র পরিবার-পরিজনের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে খাবার দেয়া হলো। তিনি [সাঃআঃ] যখন রওয়ানা করার জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন সাদ [রাদি.] পিঠে মখমলের চাদর বা গদি বিছানো একটি সুসজ্জিত গাধা এনে তার নিকটবর্তী করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাতে আরোহণ করিলেন। সাদ [রাদি.] বলিলেন, হে ক্বাইস! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে যাও। ক্বাইস [রাদি.] বলেন, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেনঃ আরোহণ করো। কিন্তু আমি সম্মত হলাম না। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আরোহণ করো নতুবা ফিরে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ফিরে এলাম। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উমার ইবনি আবদুল ওয়াহিদ ও ইবনি সামআহ [রাদি.] আল-আওয়াঈর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাদিসটি মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন এবং তারা উভয়ে ক্বাইস ইবনি সাদ [রাদি.]-এর উল্লেখ করেননি। {৫১৮৩}
আবু দাউদ ৫১৮৫, দুর্বল হাদিস [আবু দাউদ ৫১৮৫, দুর্বল ]
আবদুল্লাহ ইবনি বুস্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন কওমের দরবারে এলে দরজায় মুখ করে দাঁড়াতেন না, বরং দরজার বাম বা ডান পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলিতেনঃ
السَّلاَمُ عَلَيْكُمُ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আস্সালামু আলাইকুম, আস্সালামু আলাইকুম । কারণ সে যুগে দরজায় পর্দা টানানো থাকতো না।
[আবু দাউদ ৫১৮৬, সহিহ হাদিস]
পরিচ্ছেদ ৪ঃ সালাম পৌঁছানো
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেনঃ
وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّ
ওয়া আলাইহিস্ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক
[সহীহ বুখারী ৬২৫৩]
[আদাবুল মুফরাদ ১০৪৬ সহীহ হাদিস] [তিরমিজি ২৬৯৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীত, সহীহঃ وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ]
পরিচ্ছেদ ৫ঃ সালামের উত্তর বা সালাম বিনিময়ের পদ্ধতি
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
একদা আমরা মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী এক স্থানে একটি গাছের ছায়ায় নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট বসা ছিলাম। তখন এক কর্কশ ও কঠোর প্রকৃতির বেদুইন এসে বললো,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম।
লোকজন বললো,
وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ
ওয়া আলাইকুম সালাম ।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৪২, সহীহ হাদিস]
মুয়াবিয়া ইবনি কুররা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমার পিতা আমাকে বলিলেন, হে বৎস! কোন ব্যক্তি তোমাকে অতিক্রমকালে তোমাকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম
বললে তুমি শুধু
وَعَلَيْكَ
‘ওয়া আলাইকা‘ [এবং তোমার উপরও]
বলো না। কেননা তাতে কেবল তাকেই সালাম দিচ্ছে, অথচ সে একা নয়। বরং তুমি বলবে, আসসালামু আলাইকুম।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৪৭, সহীহ হাদিস]
কাইলা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি বললো,
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ।
তিনি বলেনঃ
وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
ওয়া আলাইকাস সালামু ওয়া রহমাতুল্লাহ।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৪৪, হাসান সহীহ], [আদাবুল মুফরাদ ১০৪৫ সহীহ হাদিস], [রিয়াদুস সালেহীন ৮৫৬]
আবু হামযা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-কে সালাম দেয়া হলে তার জবাবে আমি তাকে
وَعَلَيْكَ، وَرَحْمَةُ اللَّهِ
“ওয়া আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ”
বলিতে শুনিয়াছি।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৪৩, সহীহ হাদিস]
পরিচ্ছেদ ৬ঃ বর্ধিত শব্দযোগে সালাম ও উত্তর দেওয়া
ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক লোক নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আস্সালামু আলাইকুম, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বলিলেনঃ দশ নেকি! এরপর আরেকজন এসে বললো,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
নাবী [সাঃআঃ] অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বলিলেন, বিশ নেকি! অতঃপর আরেকজন এসে বললো,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
নাবী [সাঃআঃ] তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বলিলেনঃ ত্রিশ নেকি।
[আবু দাউদ ৫১৯৫], [তিরমিজি ২৬৮৯ সহিহ হাদিস], [রিয়াদুস সালেহীন, ৮৫৫ সহীহ]
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত [আদাবুল মুফরাদ ৯৯৫]
সাহল ইবনি মুআয ইবনি আনাস [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
সাহল ইবনি মুআয ইবনি আনাস [রাদি.] হইতে তার পিতার মাধ্যমে নাবী [সাঃআঃ]-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের সমার্থক হাদিস বর্ণনা করেন। এতে আরো রয়েছে ঃ এরপর আরেকজন এসে বললো,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু, আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত বরকত ও ক্ষমা বর্ষিত হোক।
তিনি [সাঃআঃ]বলিলেনঃ চল্লিশ নেকি। নাবী [সাঃআঃ]আরো বলেনঃ এভাবে নেকি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
[আবু দাউদ ৫১৯৬, দুর্বল হাদিস]
আবু তামীমা আল-হুজাইমী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে খোঁজ করে না পেয়ে বসে রইলাম। এরই মধ্যে আমি তাঁকে একদল লোকেরা মাঝে দেখিতে পেলাম, কিন্তু আমি তাঁকে চিনতাম না। তাহাদের মাঝে তিনি মীমাংসা করেছিলেন। কাজ শেষে কয়েকজন তাহাঁর সাথে উঠে দাড়ালো এবং বলিল, হে আল্লাহ্র রাসূল ! আমি ইহা দেখে তাঁকে বললাম,
আলাইকাস্ সালামু ইয়া রসুলুল্লাহ!
তিনি বললেনঃ
عَلَيْكَ السَّلاَمُ
“আলাইকাস্ সালামু ” হল মৃত ব্যক্তির জন্য সালাম। এ কথাটি তিনি তিন বার বলিলেন। তারপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের সময় যেন বলে,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহি”। অতঃপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার সালামের উত্তর দিলেনঃ
وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
ওয়া আলাইকা ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ ওয়া আলাইকা ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ।
[তিরমিজি ২৭২১, সহীহ হাদীস]
উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত.
আমি বাহনের পেছন দিকে আবু বাকর [রাঃআঃ]-এর সফরসংগী ছিলাম। তিনি যে কোন জনসমষ্টিকে অতিক্রম করেন তাহাদেরকে
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম
বলেন। তারা বললো,
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আর তিনি
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
বললে তারা বলে,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আবু বাকর [রাঃআঃ] বলেন, লোকজন আজ আমাদের চেয়ে অনেক বেশী সওয়াবের অধিকারী হলো।
[আদাবুল মুফরাদ ৯৯৬ সহীহ হাদিস], [রিয়াদুস সালেহীন ৮৬১]
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ]-র মুক্তদাস সালেম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
কেউ ইবনি উমার [রাঃআঃ]-কে সালাম দিলে তিনি বর্ধিত শব্দযোগে তার উত্তর দিতেন। আমি তার নিকট আসলাম এবং তিনি তখন বসা ছিলেন। আমি বললাম,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম।
তিনি উত্তর দেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আমি পুনরায় তার নিকট এসে বললাম,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
তিনি উত্তর দেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আমি পুনরায় তার নিকট এসে বললাম,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
তিনি এবার জবাব দিলেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، وَطَيِّبُ صَلَوَاتِهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া তাইয়্যিবু সালাওয়াতিহি।
[আদাবুল মুফরাদ ১০২৬, দুর্বল মাওকুফ]
আবু উসাইদ মালিক বিন রাবীআহ আস-সাইদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব [রাদি.]-র ওখানে প্রবেশ করে তাহাঁকে বলেনঃ
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলায়কুম। তাহারা উত্তরে বলেন,
وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
ওয়া আলাইকাস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন ঃ তোমাদের রাত কেমন গেলো? তাহারা বলেন, ভালোভাবেই কেটেছে, আল্লাহর প্রশংসা করছি। হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। আপনার রাত কেমন কেটেছে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর প্রশংসা করছি, আমার রাতও ভালোই কেটেছে। {৩০৪৩}
[ইবনি মাজাহ ৩৭১১, দুর্বল হাদিস]
পরিচ্ছেদ ৭ঃ কেউ বসতিহীন ঘরে প্রবেশ করিল।
নাফে [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেন, কেউ বসতিহীন ঘরে প্রবেশ করলে যেনো বলে,
السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ
“আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন” [আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক]।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৬৫, হাসান হাদিস]
পরিচ্ছেদ ৮ঃ মসজিদে সালাম দেওয়া এবং আলাইকাস্ সালাম না বলা
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সলাত আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করলো। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ
وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ
ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সলাত আদায় করো নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করিল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সালাত আদায় করোনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করিল। তখন সে দ্বিতীয় বারে অথবা তার পরের বারে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করিবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযূ করিবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হইবে, তা তিলাওয়াত করিবে। তারপর তুমি রুকূ করিবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সাজদাহ করিবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করিবে। আবু উসামাহ (রাদি.) বলেন, এমনকি শেষে তুমি সোজা হয়ে দণ্ডায়মান হইবে।
[সহীহ বুখারী ৬২৫১] [তিরমিজি ২৬৯২]
জাবির ইবনি সুলাইম [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললাম,
عَلَيْكَ السَّلاَمُ
আলাইকাস্ সালাম। তিনি বলিলেন, আলাইকাস্ সালাম বল না বরং
السَّلاَمُ عَلَيْكَ
আসসালামু আলাইকা বল। তারপর তিনি দীর্ঘ ঘটনা বর্ণনা করেন।
[তিরমিজি ২৭২২ সহীহ]
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করিল এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন মসজিদের এক কোণে উপবিষ্ট ছিলেন। সে নামায পড়ার পর এসে
سَلَّمَ
সালাম করিল। তিনি উত্তরে বলেনঃ
وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ
তোমার প্রতিও সালাম।
ইবনে মাজা ৩৬৯৫, সহীহ হাদিস
আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি সবেমাত্র নামায পড়ে অবসর হয়েছেন। আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তাকে ইসলামী রীতিতে সালাম দিয়েছে। তিনি বলেনঃ
وَعَلَيْكَ، وَرَحْمَةُ اللَّهِ
ওয়া আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ।
তুমি কোন গোত্রের লোক? আমি বললাম, গিফার গোত্রের।
আবু জুরায়্যি আল-হুজাইমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলাম,
عَلَيْكَ السَّلاَمُ يَا رَسُولَ
আলাইকাস্ সালামু ইয়া রসূলুল্লাহ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আলাইকাস্ সালাম বলো না। কারণ এটা হলো মুর্দার প্রতি সালাম।
আবু দাউদ ৫২০৯, সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৯ঃ আমীরকে সালাম দেয়া।
ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] আবু বাকর ইবনি সুলায়মান ইবনি আবু হাসমাকে জিজ্ঞেস করেন, কেনো আবু বাকর [রাঃআঃ] পত্রের শিরোনামে লিখতেনঃ
আবু বাকর, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খলীফার পক্ষ থেকে।
অতঃপর উমার [রাঃআঃ] লিখতেন,
উমার ইবনুল খাত্তাব, আবু বাকরের খলীফার [প্রতিনিধির] পক্ষ থেকে।
সর্বপ্রথম কে “আমীরুল মুমিনীন” শব্দটি লেখার প্রচলন করেন? তিনি বলেন, আমার পিতামহী শিফা [রাঃআঃ] আমাকে বলেছেন, তিনি প্রথম যুগের মুহাজির মহিলাদের একজন এবং উমার ইবনুল খাত্তাব [রাঃআঃ] বাজারে গেলে তার সাথে অবশ্যই সাক্ষাত করিতেন। উমার ইবনুল খাত্তাব [রাঃআঃ] ইরাকের শাসনকর্তাকে লিখে পাঠান, আমার নিকট দুইজন বিজ্ঞ ও সম্ভ্রান্ত লোক পাঠাও যাদেরকে আমি ইরাক ও তার অধিবাসীদের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো। ইরাকের শাসনকর্তা লবীদ ইবনি রবীয়া এবং আদী ইবনি হাতেম [রাঃআঃ]-কে তার নিকট পাঠান। তারা মদীনায় পৌছে তাহাদের বাহনদ্বয় মসজিদের চত্বরে বাঁধেন। অতঃপর তারা মসজিদে প্রবেশ করে আমর ইবনুল আস [রাঃআঃ]-এর সাক্ষাত পান। তারা তাকে বলেন, হে আমর! “আমীরুল মুমিনীন” উমার [রাঃআঃ]-এর সাথে আমাদের সাক্ষাতের অনুমতি নিয়ে দিন। আমর [রাঃআঃ] উমার [রাঃআঃ]-এর কাছে দ্রুত ছুটে গেলেন এবং বলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আমীরুল মুমিনীন। উমার [রাঃআঃ] তাকে বলেন, হে আসের পুত্র! এই পদবী তুমি কোথায় পেলে? তুমি যা বলেছে তা প্রত্যাহার করো। তিনি বলেন, হাঁ, লবীদ ইবনি রবীয়া এবং আদী ইবনি হাতেম [রাঃআঃ] এসেছেন। তারা আমাকে বলেছেন, আমীরুল মুমিনীনের নিকট থেকে আমাদের জন্য সাক্ষাতের অনুমতি এনে দিন। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! তোমরা দু’জনে তার যথার্থ নামকরণ করেছো। নিশ্চয় তিনি আমীর এবং আমরা মুমিন। সেদিন থেকে তা লেখার প্রচলন হয়।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৩৩, সহীহ হাদিস]
উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
মুআবিয়া [রাঃআঃ] যখন খলীফারূপে প্রথমবার হজ্জ করিতে আসেন তখন উসমান ইবনি হুনাইফ আনসারী [রাঃআঃ] তার নিকট আসেন এবং বলেন,
السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا الْأَمِيرُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম আয়্যুহাল আমীর ওয়া রহমাতুল্লাহ [হে আমীর! আপনাকে সালাম ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক]।
সিরিয়াবাসীদের তা অপছন্দ হলো। তারা বললো, কে এই মোনাফিক যে আমীরুল মুমিনীনের প্রতি অভিবাদনটাকে খাটো করেছে? তখন উসমান [রাঃআঃ] তার হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন। এরা এমন একটি ব্যাপারকে অপছন্দ করছে যা তাহাদের চাইতে আপনি অধিক জ্ঞাত। আল্লাহর শপথ! আমি আবু বাকর, উমার ও উসমান [রাঃআঃ]-কে এভাবে অভিবাদন করেছি। তাহাদের কেউই তা অপছন্দ করেননি। মুআবিয়া [রাঃআঃ] সিরিয়াবাসীদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ কথা বলেছে তাকে বলেন, ওহে! চুপ করো। তিনি যা বলেছেন ব্যাপার অনেকটা তাই। কিন্তু সিরিয়াবাসীরা গোলযোগ ঘটে যাবার পর বলে, আমাদের খলীফার প্রতি অভিবাদনকে সংক্ষিপ্ত করবো না। হে মদীনাবাসীগণ! আমি তোমাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, তোমরা যাকাত আদায়কারীদেরকেও “আমীর” বলে সম্বোধন করে থাকো।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৩৪, সহীহ হাদিস]
তামীম ইবনি হাযলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
কুফাতে সর্বপ্রথম কাকে আমীর সম্বোধন করে সালাম দেয়া হয়েছিল তা আমার অবশ্যই স্মরণ আছে। মুগীরা ইবনি শোবা [রাঃআঃ] কুফার রাহবা ফটক দিয়ে বের হলে কিনদার এক ব্যক্তি তার নিকট আসেন। লোকের ধারণা যে, তিনি ছিলেন আবু কুররা আল-কিন্দী। তিনি তাকে সালাম দিয়ে বলেন,
السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا الْأَمِيرُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকা আয়্যুহাল আমীর ওয়ারহমাতুল্লাহ আসসালামু আলাইকুম।
মুগীরা [রাঃআঃ] তা অপছন্দ করেন এবং বলেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَيُّهَا الْأَمِيرُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
আসসালামু আলাইকুম আয়্যুহাল আমীরু ওয়া রহমাতুল্লাহ আসসালামু আলাইকুম,
এটা কি? আমি তাহাদেরই একজন কিনা? সিমাক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, অতঃপর মুগীরা [রাঃআঃ] এই আমীর উপাধি গ্রহণ করেন।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৩৬, সহীহ হাদিস]
হিময়ারের এক শাখার সদস্য যিয়াদ ইবনি উবায়েদ আর-রুয়াইনী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমরা রুয়াইফে [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি তখন আনতাবুলসের আমীর [শাসক]। এক ব্যক্তি এসে তাকে সালাম দিয়ে বললো,
আসসালামু আলাল আমীর।
আবদা [রাহিমাহুল্লাহ]-এর বর্ণনায় আছে, সে বললো,
السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا الْأَمِيرُ
আসসালামু আলাইকা আয়্যুহাল আমীর।
রুয়াইফে [রাঃআঃ] তাকে বলেন, তুমি যদি আমাকেই সালাম দিতে তবে অবশ্যই আমি তোমার সালামের জবাব দিতাম। তুমি তো মিসরের শাসক মাসলামা ইবনি মুখাল্লিদকে সালাম দিয়েছো। তুমি তার নিকট যাও, তিনিই তোমার সালামের জবাব দিবেন। রাবী যিয়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমরা তার ওখানে গেলে এবং তিনি মজলিসে উপস্থিত থাকলে আসসালামুআলাইকুম বলতাম।
[আদাবুল মুফরাদ ১০৩৭, দুর্বল মাওকুফ]
পরিচ্ছেদ ১০ঃ সালাম হলো মহামহিম আল্লাহর নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি নাম।
ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
লোকজন নাবী [সাঃআঃ]-এর পেছনে নামায পড়ছিলো। এক ব্যক্তি বললো,
السَّلَامُ عَلَى اللَّهِ
আসসালামু আলাল্লাহ [আল্লাহর প্রতি সালাম]।
নাবী [সাঃআঃ] নামায শেষে জিজ্ঞেস করেনঃ আসসালামু আলাল্লাহ কে বলেছে? নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সালাম [শান্তিদাতাবারানি]। বরং তোমরা বলো,
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি……. আবদুহু ওয়া রাসূলুল্লাহু’। “সমস্ত সম্মান, ইবাদত, উপাসনা এবং পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর রহমাত এবং প্রাচুর্যও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তার বান্দাহ ও রাসূল”। রাবী বলেন, সাহাবীগণ তা এতো গুরুত্ব সহকারে শিক্ষা করিতেন, যেমন তোমাদের কেউ কুরআনের সূরা শিক্ষা করে।
[আদাবুল মুফরাদ ৯৯৯, সহীহ হাদিস]
পরিচ্ছেদ ১১ঃ অমুসলিমদের সালামের জবাবের পদ্ধতি
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ইয়াহূদী যদি তোমাদের সালাম করে তবে তাদের কেউ অবশ্যই বলবেঃ
السَّامُ عَلَيْكَ
আস্সামু আলাইকা, তোমাদের মরণ হোক
তখন তোমরা উত্তরে বলবে
وَعَلَيْكَ
ওয়াআলাইকা, তোমারও-হোক
[সহীহ বুখারী ৬২৫৭], [সহীহ মুসলিম ৫৫৪৭, ৫৫৪৮], [আবু দাউদ ৫২০৬, ৫২০৭], [আদাবুল মুফরাদ ১১১৬]
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিত [সহীহ বুখারী ৬২৫৮], [সহীহ মুসলিম ৫৫৪৫, ৫৫৪৬], [ইবনে মাজা ৩৬৯৭], [৮৭২] [আদাবুল মুফরাদ ১১১৫]
জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত [ইবনে মাজা ৩৬৯৮] [ইবনে মাজা ৩৬৯৯, সহীহ হাদিস] [আদাবুল মুফরাদ ১১২০, সহীহ]
আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা ইয়াহূদী রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট [দেখা করার জন্যে] অনুমতি চাইল। তারা সে সময় বলিল,
السَّامُ عَلَيْكُمْ
“আস্সামু আলাইকুম”, তোমাদের মরণ হোক!
তখন আয়েশাহ [রাদি.] বলিলেন,
عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ
“বরং তোমাদের উপরে মরণ ও লানাত হোক। ” তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে আয়েশাহ! আল্লাহ্ তাআলা সকল বিষয়ে সহনশীলতা পছন্দ করেন। আয়েশাহ [রাদি.] বলিলেন, আপনি কি তাদের কটূক্তি শুনেননি? তিনি বলিলেন, আমিও তো বলে দিয়েছি “
وَعَلَيْكُمْ
ওয়া আলাইকুম” [তোমাদের উপরেও]।
[সহীহ মুসলিম ৫৫৪৯, ৫৫৫০] [তিরমিজি ২৭০১, সহীহ]
আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট কয়েকজন ইয়াহূদী আসলো। তারা বলিল-
السَّامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ
হে আবুল কাসিম! তোমার মৃত্যু হোক। তিনি বলিলেন,
وَعَلَيْكُمْ
তোমাদের উপরেও। আয়েশাহ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম- arbi
عَلَيْكُمُ السَّامُ وَالذَّامُ
বরং তোমাদের মৃত্যু ও অপমান হোক। সে সময় রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে আয়েশাহ! তুমি অশ্লীলভাষী হয়ো না। তিনি বলিলেন, তারা কি বলেছে, তা কি আপনি শুনেননি? তিনি বলিলেন, তারা যা বলেছিল, তা-ই কি আমি তাদের ফিরিয়ে দেইনি? আমি যা বলেছি-
وَعَلَيْكُمْ
ওয়া আলাইকুম তোমাদের উপরেও।
[সহীহ মুসলিম ৫৫৫১, ৫৫৫৩],
পরিচ্ছেদ ১২ঃ মজলিস থেকে বিদায়কালে সালাম প্রদানকারীর অধিকার।
মুয়াবিয়া ইবনি কুররা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমার পিতা আমাকে বলিলেন, হে বৎস! তুমি যদি কোন মজলিসে তার কল্যাণ লাভের আশায় অংশগ্রহণ করো, অতঃপর কোন প্রয়োজনে তোমাকে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি উঠে যেতে হয় তবে তুমি বলবে,
سَلَامٌ عَلَيْكُمْ
সালামুন আলাইকুম! তাহলে সেই মজলিসে অংশগ্রহণকারীগণ তাতে যে কল্যাণ লাভ করিবে, তুমিও তাতে শরীক থাকিবে। আর যারা কোন মজলিসে অংশগ্রহণের পর আল্লাহকে স্মরণ না করে মজলিস ভঙ্গ করে উঠে যায়, তারা যেন একটি মৃত গাধা [খেতে একত্র হওয়ার পর] উঠে গেলো।
[আদাবুল মুফরাদ ১০১৯, সহীহ মাওকুফ]
Leave a Reply