সালামের নিয়ম -মহিলা পুরুষ ও অমুসলিমদের সালাম ও জবাব কীভাবে দিবে

সালামের নিয়ম -মহিলা পুরুষ ও অমুসলিমদের সালাম ও জবাব কীভাবে দিবে

সালামের নিয়ম -মহিলা পুরুষ ও অমুসলিমদের সালাম ও জবাব কীভাবে দিবে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৭৯, অনুমতি চাওয়া, অধ্যায়ঃ (১-২২)=২৩টি

৭৯/১. অধ্যায়ঃ সালামের সূচনা
৭৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর। সেখানে যদি কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত। সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হইবেনা, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। [১৯ ] (সুরা আন-নূর ২৪/২৭-২৯)
৭৯/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার নামের মধ্যে সালাম একটি নাম।
৭৯/৪. অধ্যায়ঃ অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোকেদের সালাম করিবে।
৭৯/৫. অধ্যায়ঃ আর আরোহী পদচারী কে সালাম করিবে।
৭৯/৬. অধ্যায়ঃ পদচারী উপবিষ্টকে সালাম দিবে।
৭৯/৭. অধ্যায়ঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম করিবে।
৭৯/৮. অধ্যায়ঃ সালামের বিস্তারণ।
৭৯/৯. অধ্যায়ঃ পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।
৭৯/১০. অধ্যায়ঃ পর্দার আয়াত
৭৯/১১. অধ্যায়ঃ তাকানোর অনুমতি গ্রহন করা ।
৭৯/১২. অধ্যায়ঃ যৌনাঙ্গ ব্যতীত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার ।
৭৯/১৩. অধ্যায়ঃ তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া ।
৭৯/১৪. অধ্যায়ঃ যখন কোন ব্যক্তিকে ডাকা হয় আর সে আসে, সেও কি প্রবেশের অনুমতি নিবে ?
৭৯/১৫. অধ্যায়ঃ শিশুদের সালাম দেয়া।
৭৯/১৬. অধ্যায়ঃ মহিলাকে পুরুষদের এবং পুরুষকে মহিলাদের সালাম দেয়া।
৭৯/১৭. অধ্যায়ঃ যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন যে, ইনি কে? আর তিনি বলেন, আমি।
৭৯/১৮. অধ্যায়ঃ যে সালামের জবাব দিল এবং বললঃ আলাইকাস্‌ সালাম।
৭৯/১৯. অধ্যায়ঃ যদি কেউ বলে যে, অমুক তোমাকে সালাম দিয়েছে।
৭৯/২০. অধ্যায়ঃ মুসলিম ও মুশরিকদের একত্রিত মাজলিসে সালাম দেয়া।
৭৯/২১. অধ্যায়ঃ গুনাহগার ব্যক্তির তাওবাহ করার আলামাত প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এবং গুনাহগারের তাওবাহ কবূল হবার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত যিনি তাকে সালাম করেননি এবং তার সালামের জবাবও দেননি।
৭৯/২২. অধ্যায়ঃ অমুসলিমদের সালামের জবাব কীভাবে দিতে হইবে।

৭৯/১. অধ্যায়ঃ সালামের সূচনা

৬২২৭

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদাম (আঃ) –কে তাহাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শোনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ এটাই হইবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেনঃ আস্‌সালামু আলাইকুম। তাঁরা জবাবে বললেনঃ আস্‌সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ। তাঁরা বাড়িয়ে বললেনঃ ওয়া রহমাতুল্লাহ বাক্যটি। তারপর নাবী (সাঃআঃ) আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে তারা আদাম (আঃ) –এর আকৃতি বিশিষ্ট হইবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ কমে আসছে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮১)

৭৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর। সেখানে যদি কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত। সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হইবেনা, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। [১৯ ] (সুরা আন-নূর ২৪/২৭-২৯)

[১৯] এ আয়াত নাযিল হওয়ার উপলক্ষ ছিল এই যে, একজন মহিলা সহাবী রসূলে কারীম (সাঃআঃ) –এর দরবারে হাজির হয়ে বলিলেন: “হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার ঘরে এমন অবস্থায় থাকি যে, তখন আমাকে সে অবস্থায় কেউ দেখিতে পাক তা আমি মোটেই পছন্দ করিনা- সে আমার ছেলে-সন্তানই হোক কিংবা পিতা অথচ এ অবস্থায়ও তারা আমার ঘরে প্রবেশ করে। এখন আমি কী করব? এরপরই এ আয়াতটি নাযিল হয়। বস্তুত আয়াতটিতে মুসলিম নারী-পুরুষের পরস্পরের ঘরে প্রবেশ করার প্রসঙ্গে এক স্থায়ী নিয়ম পেশ করা হয়েছে। মেয়েরা নিজেদের ঘরে সাধারণত খোলামেলা অবস্থায়ই থাকে। ঘরের অভ্যন্তরে সব সময় পূর্ণাঙ্গ আচ্ছাদিত করে থাকা মেয়েদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় কারো ঘরে প্রবেশ করা- সে মুহাররম ব্যক্তিই হোক না কেন- মোটেই সমীচীন নয়। আর গায়র মুহাররাম পুরুষের প্রবেশ করার তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। কেননা বিনানুমতিতে ও আগাম না জানিয়ে কেউ যদি কারো ঘরে প্রবেশ করে তাহলে ঘরের মেয়েদেরকে অপ্রস্তত অবস্থায় দেখার এবং তাদের দেহের যৌন অঙ্গের উপর নজর পড়ে যাওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের সঙ্গে চোখাচোখি হইতে পারে। তাদের রূপ-যৌবন দেখে পুরুষ দর্শকের মনে যৌন লালসার আগুন জ্বলে উঠতে পারে। আর তারই পরিণামে এ মেয়ে-পুরুষের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে গোটা পরিবারকে তছনছ করে দিতে পারে। মেয়েদের যৌন অঙ্গ ঘরের আপন লোকদের দৃষ্টি থেকে এবং তাদের রূপ-যৌবন ভিন পুরুষের নজর থেকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যেই এ ব্যবস্থা পেশ করা হয়েছে।

জাহিলিয়াতের যুগে এমন হতো যে, কারো ঘরের দুয়ারে গিয়ে আওয়াজ দিয়েই টপ্‌ করে ঘরে প্রবেশ করত, মেয়েদেরকে সামলে নেবারও কোনো সময় দেয়া হত না। ফলে কখনো ঘরের মেয়ে পুরুষ কে একই শয্যায় কাপড় মুড়ি দেয়া অবস্থায় দেখিতে পেত, মেয়েদেরকে দেখত অসংবৃত বস্ত্রে।

এজন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ (—)

“সেই ঘরে যদি কোন লোক না পাও তবে তাতে তোমরা প্রবেশ করিবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হইবে। আর যদি তোমাদের ফিরে যেতে বলা হয়, তবে তোমরা অবশ্যই ফিরে যাবে। এ হচ্ছে তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতর নীতি । তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ মাত্রায় অবহিত রয়েছেন।” (সুরা নূর আয়াতঃ ২৮)

আনাস হইতে বর্ণিত হয়েছে। নাবী কারীম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ

“হে প্রিয় পুত্র, তুমি যখন তোমার ঘরের লোকদের সামনে যেতে চাইবে, তখন বাইরে থেকে সালাম কর। এ সালাম করা তোমার ও তোমাদের ঘরের লোকদের পক্ষে বড়ই বারাকাতের কারণ হইবে।

কারো ঘরে প্রবেশ করিতে চাইলে প্রথমে সালাম দেবে, না প্রথমে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইবে, এ নিয়ে দুরকমের মত পাওয়া যায়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন যে, প্রথমে অনুমতি চাইবে, পরে সালাম দিবে। কিন্তু এ মত বিশুদ্ধ নয়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেই যে প্রথমে তাই করিতে হইবে এমন কোন কথা নেই। কুরআনে তো কী কী করিতে হইবে তা এক সঙ্গে বলে দেয়া আছে। এখানে পূর্বাপরের বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই। বিশেষত বিশুদ্ধ হাদীসে প্রথমে সালাম করার উপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।“

বানী আমের গোত্রীয় এক সহাবী হইতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ আমি রাসুল- (সাঃআঃ) এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম। রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর দাসীকে নির্দেশ দিলেন বেরিয়ে গিয়ে তাকে বলঃ আপনি আস্‌সালামু আলাইকুম বলে বলুনঃ আমি কি প্রবেশ করব? কারণ সে কীভাবে প্রবেশ করিতে হয় ভাল করে তা জানে না………। [হাদীসটি সহীহ, দেখুন “সহীহ আবী দাঊদ” (৫১৭৭), “সহীহ আদাবিল মুফরাদ” (১০৮৪)]

আতা বলেনঃ আমি আবু হুরাইরাহ (রাদি.)- কে বলিতে শুনেছিঃ কেউ যদি বলেঃ আমি কি [ঘরে] প্রবেশ করব আর সালাম প্রদান না করে তাহলে তুমি তাকে না বল যে পর্যন্ত সে চাবি না নিয়ে আসে। আমি বললামঃ আস্‌সালাম। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। [“সহীহ আদাবিল মুফরাদ” (১০৮৩)]।

ইবনু আব্বাস হইতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ উমার নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করিতে গিয়ে বলেছিলেনঃ আস্‌সালামু আলা রসূলিল্লাহ, আস্‌সালামু আলাইকুম উমার কি প্রবেশ করিবে? [“সহীহ আদাবিল মুফরাদ” (১০৮৫)]

কালদা ইবনে হাম্বল বলেনঃ আমি রসূলের (সাঃআঃ) ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম, কিন্ত প্রথমে সালাম করিনি বলে অনুমতিও পাইনি। তখন নাবী (সাঃআঃ)বললেনঃ (—)

ফিরে যাও, তারপর এসে বল আস্‌সালামু আলাইকুম, তার পরে প্রবেশের অনুমতি চাও।

জাবের বর্ণিত হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃআঃ)বললেনঃ

যে লোক প্রথমে সালাম করেনি, তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিও না।

জাবের বর্ণিত অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ

(—) কথা বলার পূর্বে সালাম দাও।

আবু মূসা আশআরী ও হুযায়ফা (রাদি.) বলেছেনঃ (—)

মাহরাম মেয়েলোকদের কাছে যেতে হলেও প্রথমে অনুমতি চাইতে হইবে

এক ব্যক্তি রসূলে কারীম (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ

আমার মায়ের ঘরে যেতে হলেও কি আমি অনুমতি চাইব?

রসূলে কারীম (সাঃআঃ)বললেনঃ অবশ্যই । সে লোকটি বললঃ আমি তো তার সঙ্গে একই ঘরে থাকি- তবুও? রাসুল (সাঃআঃ)বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই অনুমতি চাইবে। সেই ব্যাক্তি বললঃ আমি তো তার খাদেম।

তখন রসূলে কারীম (সাঃআঃ) বললেনঃ (—)

অবশ্যই পূর্বাহ্নে অনুমতি চাইবে, তুমি কি তোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখিতে পছন্দ কর?

তার মানে, অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখিতে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাম করিতে হইবে এবং পরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে হইবে। অনুমতি না পেলে ফিরে যেতে হইবে। এ ফিরে যাওয়া অধিক ভাল, সম্মানজনক প্রবেশের জন্য কাতর অনুনয়-বিনয় করার হীনতা থেকে।

ইবনে আব্বাস (রাদি.) হাদীসের ইলম লাভের জন্যে কোন কোন আনসারীর ঘরের দ্বারদেশে গিয়ে বলে থাকতেন, ঘরের মালিক বের হয়ে না আসা পর্যন্ত তিনি প্রবেশের অনুমতি চাইতেন না। এ ছিল উস্তাদের প্রতি ছাত্রের বিশেষ আদব, শালীনতা।

কারো বাড়ির সামনে গিয়ে প্রবেশের অনুমতির জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে দরজার ঠিক সোজাসুজি দাঁড়ানও সমীচীন নয়। দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে নজর করিতেও চেষ্টা করিবে না। কারণ, নাবী কারীম (সাঃআঃ) থেকে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ আবদুল্লাহ ইবনে বুসর বলেনঃ

নাবী কারীম (সাঃআঃ) যখন কারো বাড়ি বা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াতেন, তখন অবশ্যই দরজার দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন না। বরং দরজার ডান কিংবা বাম পাশে সরে দাঁড়াতেন এবং সালাম করিতেন।

এক ব্যক্তি রসূলে কারীমের (সাঃআঃ) বিশেষ কক্ষপথে মাথা উঁচু করে তাকালে রসূলে কারীম (সাঃআঃ)তখন ভিতরে ছিলেন এবং তাহাঁর (সাঃআঃ)হাতে লৌহ নির্মিত চাকুর মত একটি জিনিস ছিল। তখন তিনি বললেনঃ

এ ব্যক্তি বাইরে থেকে উঁকি মেরে আমাকে দেখবে তা আগে জানতে পারলে আমি হাতের এ জিনিসটি দ্বারা তার চোখ ফুটিয়ে দিতাম। এ কথা থেকে বোঝা উচিত যে, এ চোখের দৃষ্টি বাঁচানো আর তা থেকে বাঁচবার উদ্দেশ্যেই পূর্বাহ্নে অনুমতি চাওয়ার রীতি করে দেয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে স্পষ্ট, আরো কঠোর হাদীস বর্ণিত আছে। নাবী কারীম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ

কেউ যদি তোমার অনুমতি ছাড়াই তোমার ঘরের মধ্যে উঁকি মেরে তাকায়, আর তুমি যদি পাথর মেরে তার চোখ ফুটিয়ে দাও, তাহলে তাতে তোমার কোন দোষ হইবে না।

তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি অনুমতি পাওয়া না যায়, তাহলে ফিরে চলে যেতে হইবে। আবু সায়ীদ খুদরী একবার উমার ফারূকের দাওয়াত পেয়ে তাহাঁর ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলেন এবং তিনবার সালাম করার পরও কোন জবাব না পাওয়ার কারণে তিনি ফিরে চলে গেলেন। পরে সাক্ষাত হলে উমার ফারূক বললেনঃ

“তোমাকে দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও তুমি আমার ঘরে আসলে না কেন?”

তিনি বললেনঃ “আমি তো এসেছিলাম, আপনার দরজায় দাঁড়িয়ে তিনবার সালামও করেছিলাম। কিন্তু কারো কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমি ফিরে চলে এসেছি। কেননা নাবী কারীম (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কারো ঘরে যাওয়ার জন্যে তিনবার অনুমতি চেয়েও না পেলে সে যেন ফিরে যায়।” (বুখারী, মুসলিম)

ইমাম হাসান বসরী বলেছেনঃ

“তিনবার সালাম করার মধ্যে প্রথমবার হল তার আগমন সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়বার সালাম প্রবেশের অনুমতি লাভের জন্যে এবং তৃতীয়বার হচ্ছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা ।”

কেননা তৃতীয়বার সালাম দেয়ার পরও ঘরের ভেতর থেকে কারো জবাব না আসা সত্যই প্রমাণ করে যে, ঘরে কেউ নেই, অন্তত ঘরে এমন কোন পুরুষ নেই, যে তার সালামের জবাব দিতে পারে।

আর যদি কেউ ধৈর্য ধরে ঘরের দুয়ারেই দাঁড়িয়েই থাকতে চায়, তবে তারও অনুমতি আছে, কিন্ত শর্ত এই যে, দুয়ারে দাঁড়িয়েই অবিশ্রান্তভাবে ডাকা-ডাকি ও চিল্লাচিল্লি করিতে থাকতে পারবে না।

একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতাংশেঃ

“তারা যদি ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষায় থাকত যতক্ষণ না তুমি ঘর থেকে বের হচ্ছ, তাহলে তাদের জন্যে খুবই কল্যাণকর হত।” (সুরা হুজরাতঃ ৫)

আয়াতটি যদিও বিশেষভাবে রাসূলে কারীম (সাঃআঃ) প্রসঙ্গে; কিন্তু এর আবেদন ও প্রয়োগ সাধারণ। কোন কোন কিতাবে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ইবনে আব্বাস (রাদি.) যিনি ইসলামের বিষয়ে মস্তবড় মনীষী ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন – উবাই ইবনে কাব (রাদি.) –এর বাড়িতে কুরআন শেখার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করিতেন। তিনি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন, কাউকে ডাক দিতেন না, দরজায় ধাক্কা দিয়েও ঘরের লোকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন না। যতক্ষণ না উবাই (রাদি.) নিজ ইচ্ছেমত ঘর থেকে বের হইতেন, ততক্ষণ এমনিই দাঁড়িয়ে থাকতেন।

৬২২৮

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একবার কুরবানীর দিনে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফায্‌ল ইবনু আব্বাস (রাদি.) –কে আপন সওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে বসালেন। ফায্‌ল একজন সুপুরুষ ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) লোকেদের মাসাআলা মাসায়িল বলে দেয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশআম গোত্রের এক সুন্দরী নারী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট একটা মাসাআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আসল। তখন ফায্‌ল (রাদি.) তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাঁকে আকৃষ্ট করিল। নাবী (সাঃআঃ) ফায্‌ল (রাদি.) –এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফায্‌ল (রাদি.) তাহাঁর দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফায্‌ল (রাদি.) –এর চিবুক ধরে ঐ নারীর দিকে না তাকানোর জন্য তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। [২০] এরপর স্ত্রীলোকটি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাহাঁর বান্দাদের উপর যে হাজ্জ ফরয হবার বিধান দেয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বৃদ্ধ হবার কারণে সওয়ারীর উপরে বসতে তিনি অক্ষম। যদি আমি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে? তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ হাঁ।(আঃপ্রঃ- ৫৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮২)

[*] এ আয়াত নাযিল হওয়ার উপলক্ষ ছিল এই যে, একজন মহিলা সহাবী রসূলে কারীম ﷺ-এর নিকটে হাজির হয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার ঘরে এমন অবস্থায় থাকি যে, তখন আমাকে সে অবস্থায় কেউ দেখিতে পাক তা আমি মোটেই পছন্দ করি না- সে আমার ছেলে-সন্তানই হোক কিংবা পিতা অথচ এ অবস্থায়ও তারা আমার ঘরে প্রবেশ করে। এখন আমি কী করব? এরপরই এ আয়াতটি নাযিল হয়। বস্ত্তত আয়াতটিতে মুসলিম নারী-পুরুষের পরস্পরের ঘরে প্রবেশ করার প্রসঙ্গে এক স্থায়ী নিয়ম পেশ করা হয়েছে। মেয়েরা নিজেদের ঘরে সাধারণত খোলামেলা অবস্থায়ই থাকে। ঘরের অভ্যন্তরে সব সময় পূর্ণাঙ্গ আচ্ছাদিত করে থাকা মেয়েদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় কারো ঘরে প্রবেশ করা- সে মুহাররম ব্যক্তিই হোক না কেন- মোটেই সমীচীন নয়। আর গায়র মুহাররম পুরুষের প্রবেশ করার তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। কেননা বিনানুমতিতে ও আগাম না জানিয়ে কেউ যদি কারো ঘরে প্রবেশ করে তাহলে ঘরের মেয়েদেরকে অপ্রস্ত্তত অবস্থায় দেখার এবং তাদের দেহের যৌন অঙ্গের উপর নজর পড়ে যাওয়ার খুবই সম্ভবনা রয়েছে। তাদের সঙ্গে চোখাচোখি হইতে পারে। তাদের রূপ-যৌবন দেখে পুরুষ দর্শকের মনে যৌন লালসার আগুন জ্বলে উঠতে পারে। আর তারই পরিণামে এ মেয়ে-পুরুষের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে গোটা পরিবারকে তছনছ করে দিতে পারে। মেয়েদের যৌন অঙ্গ ঘরের আপন লোকদের দৃষ্টি থেকে এবং তাদের রূপ-যৌবন ভিন পুরুষের নজর থেকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যেই এ ব্যবস্থা পেশ করা হয়েছে।

জাহিলিয়াতের যুগে এমন হতো যে, কারো ঘরের দুয়ারে গিয়ে আওয়াজ দিয়েই টপ্ করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করত, মেয়েদেরকে সামলে নেবারও কোন সময় দেয়া হত না। ফলে কখনো ঘরের মেয়ে পুরুষকে একই শয্যায় কাপড় মুড়ি দেয়া অবস্থায় দেখিতে পেত, মেয়েদেরকে দেখত অসংবৃত বস্ত্রে।

এজন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ

فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا ۖ هُوَ أَزْكَىٰ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

সেই ঘরে যদি কোন লোক না পাও তবে তাতে তোমরা প্রবেশ করিবে না যতক্ষণ না তোমাদেরকে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হইবে। আর যদি তোমাদেরকে ফিরে যেতে বলা হয়, তাহলে অবশ্যই ফিরে যাবে। এ হচ্ছে তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতর নীতি। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ মাত্রায় অবহিত রয়েছেন। সুরা নূর আয়াতঃ ২৮)

আনাস হইতে বর্ণিত হয়েছে। নাবী কারীম ﷺ বলেছেনঃ

يَابُنَيَّ اِذَا دَخَلْتَ عَلى اهلِكَ فَسَلِّمْ تَكُوْنَ بَرْكَةً عَلَيْكَ وعَلى اَهْلِ بَيْتِكَ- ترمذي)

হে প্রিয় পুত্র, তুমি যখন তোমার ঘরের লোকদের সামনে যেতে চাইবে, তখন বাইরে থেকে সালাম কর। এ সালাম করা তোমার ও তোমার ঘরের লোকদের পক্ষে বড়ই বারাকাতের কারণ হইবে।

কারো ঘরে প্রবেশ করিতে চাইলে প্রথমে সালাম দেবে, না প্রথমে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইবে, এ নিয়ে দুরকমের মত পাওয়া যায়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন যে, প্রথমে অনুমতি চাইবে, পরে সালাম দিবে। কিন্তু এ মত বিশুদ্ধ নয়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেই যে প্রথমে তাই করিতে হইবে এমন কোন কথা নেই। কুরআনে তো কী কী করিতে হইবে তা এক সঙ্গে বলে দেয়া হয়েছে। এখানে পূর্বাপরের বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই। বিশেষত বিশুদ্ধ হাদীসে প্রথমে সালাম করার উপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বানী আমের গোত্রীয় এক সহাবী হইতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ আমি রাসুল -এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম। রাসুল তাহাঁর দাসীকে নির্দেশ দিলেন বেরিয়ে গিয়ে তাকে বলঃ আপনি আস্সালামু আলাইকুম বলে বলুনঃ আমি কি প্রবেশ করব? কারণ সে কীভাবে প্রবেশ করিতে হয় ভাল করে তা জানে না …। [হাদীসটি সহীহ, দেখুন সহীহ আবী দাঊদ ৫১৭৭), সহীহ আদাবিল মুফরাদ ১০৮৪)]।

আতা বলেনঃ আমি আবু হুরাইরাহ -কে বলিতে শুনেছিঃ কেউ যদি বলেঃ আমি কি [ঘরে] প্রবেশ করব আর সালাম প্রদান না করে তাহলে তুমি তাকে না বল যে পর্যন্ত সে চাবি না নিয়ে আসে। আমি বললামঃ আস্সালাম। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। [সহীহ আদাবিল মুফরাদ ১০৮৩)]।

ইবনু আববাস হইতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ উমার নাবী ﷺ-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করিতে গিয়ে বলেছিলেনঃ আস্সালামু আলা রসূলিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকুম উমার কি প্রবেশ করিবে? [সহীহ আদাবিল মুফরাদ ১০৮৫)]।

কালদা ইবনে হাম্বল বলেনঃ আমি রসূলের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু প্রথমে সালাম করিনি বলে অনুমতিও পাইনি। তখন নাবী ﷺ বললেনঃ

اِرجِعْ فَقُلْ اَلسَّلاَمُ عَلَيْمُمْ ءَاَدْخُلُ- ابو اداؤد،ترمذى)

ফিরে যাও, তারপর এসে বল আসসালামু আলাইকুম, তার পরে প্রবেশের অনুমতি চাও।

জাবের বর্ণিত হাদীসে রাসূলে কারীম ﷺবললেনঃلاَتَأذَنُوْا لِمَنْ لَمْ يُبْداْ بِالسَّلاَمِ- بيهقى)

যে লোক প্রথমে সালাম করেনি, তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিও না।

জাবের বর্ণিত অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ

السلام قبل الكلام- ترمذى) কথা বলার পূর্বে সালাম দাও।

আবু মূসা আশআরী ও হুযায়ফা বলেছেনঃ اَسْتاْذَنُ عَلى ذَوَاتِ الْمَحَارِمِ-

মাহরাম মেয়েলোকদের কাছে যেতে হলেও প্রথমে অনুমতি চাইতে হইবে।

এক ব্যক্তি রসূলে কারীম ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেনঃ

আমার মায়ের ঘরে যেতে হলেও কি আমি অনুমতি চাইব?

রসূলে কারীম ﷺ বললেনঃ অবশ্যই। সে লোকটি বললঃ আমি তো তার সঙ্গে একই ঘরে থাকি-তবুও? রাসুল ﷺ বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই অনুমতি চাইবে। সেই ব্যক্তি বললঃ আমি তো তার খাদেম।

তখন রসূলে কারীম ﷺ বললেনঃاِسْتاْذَنْ عَلَيْهاَ اَتُحِبُّ اَنْتَرَاهَا عُرْيَانَةً-

অবশ্যই পূর্বা‎‎হ্ন অনুমতি চাইবে, তুমি কি তোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখিতে পছন্দ কর?

তার মানে, অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখিতে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাম করিতে হইবে এবং পরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে হইবে। অনুমতি না পেলে ফিরে যেতে হইবে। এ ফিরে যাওয়া অধিক ভাল, সম্মানজনক প্রবেশের জন্য কাতর অনুনয়-বিনয় করার হীনতা থেকে।

ইবনে আববাস রাযি.) হাদীসের ইলম লাভের জন্যে কোন কোন আনসারীর ঘরের দ্বারদেশে গিয়ে বসে থাকতেন, ঘরের মালিক বের হয়ে না আসা পর্যন্ত তিনি প্রবেশের অনুমতি চাইতেন না। এ ছিল উস্তাদের প্রতি ছাত্রের বিশেষ আদব, শালীনতা।

কারো বাড়ির সামনে গিয়ে প্রবেশের অনুমতির জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে দরজার ঠিক সোজাসুজি দাঁড়ানও সমীচীন নয়। দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে নজর করিতেও চেষ্টা করিবে না। কারণ, নাবী কারীম ﷺ থেকে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর বলেনঃ

كَانَ رَسُوْلُ ﷺاِذَا اَتى بَابَ قَوْمٍ لَمْ يَسْتَقْبِلِ اْلبَابَ مِنْ يِلْقَاءِ وَجْهِه وَلكِنْ مِنْ رُكِْنِه الاَيْمَنِ اَوِالاَيْسَرِفَيَقُوْلُ اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْر ابو داؤد)

নাবী কারীম ﷺ যখন কারো বাড়ি বা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াতেন, তখন অবশ্যই দরজার দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন না। বরং দরজার ডান কিংবা বাম পাশে সরে দাঁড়াতেন এবং সালাম করিতেন।

এক ব্যক্তি রসূলে কারীমের বিশেষ কক্ষপথে মাথা উঁচু করে তাকালে রসূলে কারীম ﷺ তখন ভিতরে ছিলেন এবং তাহাঁর হাতে লৌহ নির্মিত চাকুর মত একটি জিনিস ছিল। তখন তিনি বললেনঃ

لواعلم ان هذا ينظرني لطعنت بالمد رى فى عينه وهل جعل الاستيذان الامن اجل البصر-

এ ব্যক্তি বাইরে থেকে উঁকি মেরে আমাকে দেখবে তা আগে জানতে পারলে আমি আমার হাতের এ জিনিসটি দ্বারা তার চোখ ফুটিয়ে দিতাম। এ কথা তো বোঝা উচিত যে, এ চোখের দৃষ্টি বাঁচানো আর তা থেকে বাঁচবার উদ্দেশ্যেই পূর্বা‎‎‎হ্ন অনুমতি চাওয়ার রীতি করে দেয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কে আবু হুরাইরাহ রাযি.) থেকে স্পষ্ট, আরো কঠোর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নাবী কারীম ﷺ বলেছেনঃ

لَوْ اَنَّ امْرَأً اَطَّلَعَ عَلَيْكَ بِغَيْرِ اِذْنٍ فَخَذَفْتِهُ بِحَصَاةِ فَفَقاْتِ عَيْنَهُ مَاكَانَ عَلَيْكِ ضِلْعٌ-

কেউ যদি তোমার অনুমতি ছাড়াই তোমার ঘরের মধ্যে উঁকি মেরে তাকায়, আর তুমি যদি পাথর মেরে তার চোখ ফুটিয়ে দাও, তাহলে তাতে তোমার কোন দোষ হইবে না।

তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি অনুমতি পাওয়া না যায়, তাহলে ফিরে চলে যেগে হইবে। আবু সায়ীদ খুদরী একবার উমার ফারূকের দাওয়াত পেয়ে তাহাঁর ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলেন এবং তিনবার সালাম করার পরও কোন জবাব না পাওয়ার কারণে তিনি ফিরে চলে গেলেন। পরে সাক্ষাত হলে উমার ফারূক বললেনঃ

তোমাকে দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও তুমি আমার ঘরে আসলে না কেন?

তিনি বললেনঃ

আমি তো এসেছিলাম, আপনার দরজায় দাঁড়িয়ে তিনবার সালামও করেছিলাম। কিন্তু কারো কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমি ফিরে চলে এসেছি। কেননা নাবী কারীম ﷺ আমাকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কারো ঘরে যাওয়ার জন্যে তিনবার অনুমতি চেয়েও না পেলে সে যেন ফিরে যায়। বুখারী, মুসলিম)

ইমাম হাসান বসরী বলেছেনঃ

তিনবার সালাম করার মধ্যে প্রথমবার হল তার আগমন সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়বার সালাম প্রবেশের অনুমতি লাভের জন্যে এবং তৃতীয়বার হচ্ছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা।

কেননা তৃতীয়বার সালাম দেয়ার পরও ঘরের ভেতর থেকে কারো জবাব না আসা সত্যই প্রমাণ করে যে, ঘরে কেউ নেই, অন্তত ঘরে এমন কোন পুরুষ নেই, যে তার সালামের জবাব দিতে পারে।

আর যদি কেউ ধৈর্য ধরে ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়েই থাকতে চায়, তবে তারও অনুমতি আছে, কিন্তু শর্ত এই যে, দুয়ারে দাঁড়িয়েই অবিশ্রান্তভাবে ডাকা-ডাকি ও চিল্লাচিল্লি করিতে থাকতে পারবে না।

একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতাংশেঃ

তারা যদি ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষায় থাকত যতক্ষণ না তুমি ঘর থেকে বের হচ্ছ, তাহলে তাদের জন্যে খুবই কল্যাণকর হত। সুরা হুজরাতঃ ৫)

আয়াতটি যদিও বিশেষভাবে রাসূলে কারীম প্রসঙ্গে; কিন্তু এর আবেদন ও প্রয়োগ সাধারণ। কোন কোন কিতাবে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ইবনে আববাস যিনি ইসলামের বিষয়ে মস্তবড় মনীষী ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন- উবাই ইবনে কাব -এর বাড়িতে কুরআন শেখার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করিতেন। তিনি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন, কাউকে ডাক দিতেন না, দরজায় ধাক্কা দিয়েও ঘরের লোকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন না। যতক্ষণ না উবাই নিজ ইচ্ছেমত ঘর থেকে বের হইতেন, ততক্ষণ এমনিই দাঁড়িয়ে থাকতেন।

[১]. চোখের দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীক্ষ্ম-শানিত তীর যা নারী বা পুরুষের অন্তর ভেদ করিতে পারে। প্রেম-ভালবাসা তো এক অদৃশ্য জিনিস, যা কখনো চোখে ধরা পড়ে না, বরং চোখের দৃষ্টিতে ভর করে অপরের মর্মে গিয়ে পৌঁছায়। বস্ত্তত দৃষ্টি হচ্ছে লালসার ব‎‎হ্নর দখিন হাওয়া। মানুষের মনে দৃষ্টি যেমন লালসাগ্নি উৎক্ষিপ্ত করে, তেমনি তার ইন্ধন যোগায়। দৃষ্টি বিনিময় এক অলিখিত লিপিকার আদান-প্রদান, যাতে লোকদের অগোচরেই অনেক প্রতিশ্রুতি- অনেক মর্মকথা পরস্পরের মনের পৃষ্ঠায় জ্বলন্ত অক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।

ইসলামের লক্ষ্য যেহেতু মানব জীবনের সার্বিক পবিত্র ও সর্বাঙ্গীণ উন্নত চরিত্র, সে জন্যে দৃষ্টির এ ছিদ্রপথকেও সে বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে, দৃষ্টিকে সুনিয়ন্ত্রিত করার জন্যে দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশ। কুরআন মাজীদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেঃ

মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে, এ নীতি তাদের জন্যে অতিশয় পবিত্রতাময়। আর তারা যা কিছু করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ মাত্রায় অবহিত।

কেবল পুরুষদেরকেই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কেও বলা হয়েছেঃ

মুমিন মহিলাদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে। সুরা আন-নূরঃ ৩১)

দুটো আয়াতে একই কথা বলা হয়েছে- দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা সংরক্ষণ, কিন্তু এ একই কথা পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে এবং মহিলাদের জন্যে তার পরে স্বতন্ত্র একটি আয়াতে বলা হয়েছে। এর মানেই হচ্ছে এই যে, এ কাজটি স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই সমানভাবে জরুরী। এ আয়াতদ্বয়ে যেমন রয়েছে আল্লাহর নৈতিক উপদেশ, তেমনি রয়েছে ভীতি প্রদর্শন। উপদেশ হচ্ছে এই যে, ঈমানদার পুরুষই হোক কিংবা স্ত্রীই, তাদের কর্তব্যই হচ্ছে আল্লাহর হুকম পালন করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। কাজেই আল্লাহর বিধান মুতাবিক যার প্রতি চোখ তুলে তাকানো নিষিদ্ধ, তার প্রতি যেন কখনো তাকাবার সাহস না করে। আর দ্বিতীয় কথা, দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ হলে অবশ্যই লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা পাবে, কিন্তু দৃষ্টিই যদি নিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলে পরপুরুষ কিংবা পরস্ত্রী দর্শনের ফলে হৃদয় মনের গভীর প্রশস্তি বিঘ্নিত ও চূর্ণ হইবে, অন্তরে লালসার উত্তাল উন্মাদনার সৃষ্টি হয়ে লজ্জাস্থানের পবিত্রতাকে পর্যন্ত ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। কাজেই যেখানে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত নয়, দেখাশোনার ব্যাপারে যেখানে পর, আপন, মাহরাম, গায়র মাহরামের তারতম্য নেই, বাছ-বিচার নেই, সেখানে লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষিত হচ্ছে তা কিছুতেই বলা যায় না। ঠিক এজন্যই ইসলামে দৃষ্টিকে- পরিভাষায় যাকে بريد العشق প্রেমের পয়গাম বাহক বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপদেশের ছলে বলা হয়েছেঃ ذلك أزكى لهم এ-নীতি তাদের জন্যে খুবই পবিত্রতা বিধায়ক অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত রাখলে চরিত্রকে পবিত্র রাখা সম্ভব হইবে। আর শেষ ভাগে ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছেঃ

মুমিন হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রী-পুরুষ যদি এ হুকুম মেনে চলতে রাযী না হয়, তাহলে আল্লাহ রববুল আলামীন নিশ্চয়ই এর শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি তাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে পুরোমাত্রায় অবহিত রয়েছেন।

এ ভীতি যে কেবল পরকালের জন্যেই, এমন কথা নয়। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও পবিত্রতা রক্ষা না করা হলে এ দুনিয়ায়ও তার অত্যন্ত খারাপ পরিণতি দেখা দিতে পারে। আর তা হচ্ছে স্বামীর দিল অন্য মেয়েলোকের দিকে আকৃষ্ট হওয়া এবং স্ত্রীর মন সমর্পিত হওয়া অন্য পুরুষের কাছে। আর এরই পরিণতি হচ্ছে পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে আশু বিপর্যয় ও ভাঙ্গণ। দৃষ্টিশক্তির বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেনঃ

তিনি দৃষ্টিসমূহের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে এবং তারই কারণে মনের পর্দায় যে কামনা-বাসনা গোপনে ও অজ্ঞাতসারে জাগ্রত হয় তা ভালভাবেই জানেন। সুরা মুমিনঃ ১৯)

এ আয়াত খন্ডের ব্যাখ্যায় ইমাম বায়যাবী লিখেছেনঃ

বিশ্বাসঘাতক দৃষ্টি গায়র-মাহরাম মেয়েলোকের প্রতি বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করার মতই, তার প্রতি চুরি করে তাকানো বা চোরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অথবা দৃষ্টির কোন বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণ। আনওয়ারুত তানযীল ওয়া ইসরারুত তাওয়ীল, দ্বিতীয় খন্ড ২৬৫ পৃষ্ঠা)

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেনঃ চোখ নিয়ন্ত্রণ ও নীচু করে রাখায় চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। মাজমুআ ফাতাওয়া ১৫শ খন্ড ২৮৫ পৃষ্ঠা)

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্যে আলাদা আলাদাভাবে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার কারণ এই যে, যৌন উত্তেজনার ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রী ও পুরুষের প্রায় একই অবস্থা। বরং স্ত্রীলোকের দৃষ্টি পুরুষদের মনে বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি করে থাকে। প্রেমের আবেগ উচ্ছাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকের প্রকৃতি অত্যন্ত নাজুক ও ঠুনকো। কারো সাথে চোখ বিনিময় হলে স্ত্রীলোক সর্বাগ্রে কাতর এবং কাবু হয়ে পড়ে, যদিও তাদের মুখ ফোটে না। তার স্বাভাবিক দুর্বলতা-বৈশিষ্ট্যও বলা যেতে পারে একে। বাস্তব অভিজ্ঞতায় এর শত শত প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। এ কারণে স্ত্রীলোকদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এমন হওয়া কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নয় যে, কোন সুশ্রী স্বাস্থ্যবান ও সুদর্শন যুবকের প্রতি কোন মেয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হল, আর অমনি তার সর্বাঙ্গে প্রেমের বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল, সৃষ্টি হল প্রলয়ঙ্কর ঝড়। ফলে তার বহিরাঙ্গ কলঙ্কমুক্ত থাকতে পারলেও তার অন্তর্লোক পঙ্কিল হয়ে গেল। স্বামীর হৃদয় থেকে তার মন পাকা ফলের বোঁটা থেকে খসে পড়ার মত একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেল, তার প্রতি তার মন হল বিমুখ, বিদ্রোহী। পরিণামে দাম্পত্য জীবনে ফাটল দেখা দিল, আর পারিবারিক জীবন হল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন।

কখনো এমনও হইতে পারে যে, স্ত্রীলোক হয়ত বা আত্মরক্ষা করিতে পারল, কিন্তু তার অসর্তকতার কারণে কোন পুরুষের মনে প্রেমের আবেগ ও উচ্ছাস উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে। তখন সে পুরুষ হয়ে যায় অনমনীয় ক্ষমাহীন। সে নারীকে বশ করবার জন্যে যত উপায় সম্ভব তা অবলম্বন করিতে কিছুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। শেষ পর্যন্ত তার শিকারের জাল হইতে নিজেকে রক্ষা করা সেই নারীর পক্ষে হয়ত সম্ভবই হয় না। এর ফলেও পারিবারিক জীবনে ভাঙ্গণ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

দৃষ্টির এ অশুভ পরিণামের দিকে লক্ষ্য করেই কুরআন মাজীদের উপরোক্ত আয়াত নাযিল করা হয়েছে, আর এরই ব্যাখ্যা করে রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করিয়াছেন অসংখ্য অমৃত বাণী।

৬২২৯

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, একবার নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের রাস্তায় বসা ব্যতীত গত্যন্তর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তখন তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি তোমাদের রাস্তায় মজলিস করা ব্যতীত উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাস্তার হক আদায় করিবে। তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কী? তিনি বলিলেন, তা হলো চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয়া আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।আঃপ্রঃ- ৫৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৩)

৭৯/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার নামের মধ্যে সালাম একটি নাম।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “যখন তোমাদেরকে সসম্মানে সালাম প্রদান করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তমরূপে জওয়াবী সালাম দাও কিংবা (কমপক্ষে) অনুরূপভাবে দাও।” (সুরা আন-নিসা ৪ : ৮৬)

৬২৩০

 আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যখন আমরা নাবী সাঃআঃ -এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম, তখন আমরা আল্লাহর প্রতি তাহাঁর বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম, জিব্রীল আ.)-এর প্রতি সালাম, মীকাঈল (আ.)-এর প্রতি সালাম এবং অমুকের প্রতি সালাম দিলাম। নাবী সাঃআঃ সালাত শেষ করে, আমাদের দিকে তাহাঁর চেহারা ফিরিয়ে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা নিজেই সালাম। অতএব যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে বসবে, তখন বলবেঃ

التَّحِيَّاتُ لله وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ

মুসল্লী যখন এ কথাটা বলবে, তখনই আসমান যমীনে সব নেক বান্দাদের নিকট এ সালাম পৌঁছে যাবে। তারপর বলবে

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه” وَرَسُوْلُه”

তারপর সে তার পছন্দমত দুআ বেছে নেবে। [৮৩১] আঃপ্রঃ- ৫৭৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৪)

৭৯/৪. অধ্যায়ঃ অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোকেদের সালাম করিবে।

৬২৩১

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩২, ৬২৩৩,৬২৩৪; মুসলিম ৩৯/১, হাদীস ২১৬০, হাদীস ১০৬২৯] (আ. প্র. ৫৭৯০, ই. ফা. ৫৬৮৫)

৭৯/৫. অধ্যায়ঃ আর আরোহী পদচারী কে সালাম করিবে।

৬২৩২

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩১] (আ. প্র. ৫৭৯১, ই. ফা. ৫৬৮৬)

৭৯/৬. অধ্যায়ঃ পদচারী উপবিষ্টকে সালাম দিবে।

৬২৩৩

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৭)

৭৯/৭. অধ্যায়ঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম করিবে।

৬২৩৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।(আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)

৭৯/৮. অধ্যায়ঃ সালামের বিস্তারণ।

৬২৩৫

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাতটি কাজেরঃ রোগীর খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, হাঁচি দাতার জন্য দুআ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলূমের সাহায্য করা, সালাম প্রসার করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ণ করা। আর নিষেধ করিয়াছেন (সাতটি কাজ থেকে): রূপার পাত্রে পানাহার, স্বর্ণের আংটি পরিধান, রেশমী যিনের উপর সাওয়ার হওয়া, মিহিন রেশমী বস্ত্র পরিধান, পাতলা রেশম বস্ত্র ব্যবহার, রেশম মিশ্রিত কাতান বস্ত্র পরিধান এবং গাঢ় রেশমী বস্ত্র পরিধান করা।(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৮)

৭৯/৯. অধ্যায়ঃ পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।

৬২৩৬

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক নাবী (সাঃআঃ) কে জিজ্ঞেস করলঃ ইসলামে কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষুধার্তকে অন্ন দেবে, আর সালাম দেবে যাকে তুমি চেন আর যাকে চেন না।(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৯)

৬২৩৭

আবু আইউব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ)বলেছেনঃ কোন মুসলিমের পক্ষে তার কোন ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে, তাদের দুজনের দেখা সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে, আরেকজন অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে প্রথম সালাম করিবে। আবু সুফ্‌ইয়ান (রাদি.) বলেন যে, এ হাদীসটি আমি যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে তিনবার শুনিয়াছি।(আঃপ্রঃ- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯০)

৭৯/১০. অধ্যায়ঃ পর্দার আয়াত

৬২৩৮

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসুলুল্লাহ (রাদি.) যখন মদিনায় আসলেন, তখন তাহাঁর (বর্ণনাকারীর) বয়স ছিল দশ বছর। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর জীবনের দশটি বছর আমি তাহাঁর খিদমত করি। আর পর্দার বিধান ব্যাপারে আমি সব চেয়ে অধিক অবগত ছিলাম, যখন তা অবতীর্ণ হয়। উবাই ইবনু কাব (রাদি.) প্রায়ই আমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতেন। যাইনাব বিনত জাহশ (রাদি.)- এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর বাসরের দিনে প্রথম পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। নাবী (সাঃআঃ) নতুন দুলহা হিসেবে সে দিন লোকেদের দাওয়াত করেন এবং এরপর অনেকেই দাওয়াত খেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কয়েকজন তাহাঁর কাছে রয়ে যান এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে যাই, যাতে তারা বের হয়ে যায়। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) চলেন এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে চলি। এমনকি তিনি আয়েশাহ (রাদি.) –এর ঘরের দরজায় এসে পৌঁছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ভাবলেন যে, নিশ্চয়ই তারা বেরিয়ে গেছে। তখন তিনি ফিরে আসেন আর তাহাঁর সঙ্গে আমিও ফিরে আসি। তিনি যাইনাব (রাদি.) –এর ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তারা তখনও বসেই আছেন, চলে যায়নি। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফিরে গেলেন এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে ফিরে গেলাম। এমনকি তিনি আয়েশাহ (রাদি.)- এর দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত এসে পৌছেন। এরপর তিনি ভাবলেন যে, এখন তারা অবশ্যই বেরিয়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসে দেখেন যে, তারা বেরিয়ে গেছে। এ সময় পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং তিনি তাহাঁর ও আমার মধ্যে পর্দা টেনে দেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯১)

৬২৩৯

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) যাইনাব (রাদি.) –কে বিয়ে করিলেন, তখন একদল (মেহমান) তাহাঁর ঘরে এসে খাওয়া-দাওয়া করিলেন। এরপর তাঁরা ঘরে বসেই আলাপ-আলোচনা করিতে লাগলেন। তিনি দাঁড়ালে কিছু লোক উঠে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু অবশিষ্ট কিছু লোক বসেই থাকলেন। নাবী (সাঃআঃ) ঘরে প্রবেশ করার জন্য ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা বসেই আছেন। কিছুক্ষন পরে তারা উঠে চলে গেলেন। তারপর আমি নাবী (সাঃআঃ) কে ওদের চলে যাবার খবর দিলে তিনি এসে প্রবেশ করিলেন। তখন আমি ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে করলে তিনি আমার ও তাহাঁর মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। এ সময় আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “হে ইমানদারগণ! তোমরা নাবীর ঘরগুলোতে প্রবেশ করো না”। …… শেষ পর্যন্ত। (সুরা আল-আহযাবঃ ৫৩)(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯২)

৬২৪০

নাবী (সাঃআঃ)- এর স্ত্রী আয়েশাহ হইতে বর্ণিতঃ

যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট প্রায়ই বলিতেন যে , আপনি আপনার স্ত্রীদের পর্দা করান। কিন্তু তিনি তা করেননি। নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রীগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রাতে মাঠের দিকে বাইরে যেতেন। একবার সাওদাহ বিনত যামআহ (রাদি.) বেরিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার (রাদি.) মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি পর্দার নির্দেশ অবতীর্ণ হবার আগ্রহে বললেনঃ ওহে সাওদাহ! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। তখন আল্লাহ তাআলা পর্দার আয়াত নাযিল করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৩)

৭৯/১১. অধ্যায়ঃ তাকানোর অনুমতি গ্রহন করা ।

৬২৪১

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একবার এক লোক নাবী (সাঃআঃ)- এর কোন এক হুজরায় উঁকি দিয়ে তাকালো। তখন নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে একটা মিদরা ছিল, যা দিয়ে তিনি তাহাঁর মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি জানতাম যে , তুমি উঁকি দিবে, তবে এ দিয়ে তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহনের বিধান দেয়া হয়েছে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৪)

৬২৪২

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে , একবার জনৈক লোক নাবী (সাঃআঃ) -এর এক কক্ষে উঁকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ফলক কিংবা তীর ফলকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাদি.) বলেনঃ তা যেন আমি এখনও দেখছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য তাকে খুঁজছিলেন। [৬৮৮৯, ৬৯০০; মুসলিম ৩৮/৯, হাদীস ২১৫৭, আহমাদ ১৩৫০৭] আঃপ্রঃ- ৫৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৫)

৭৯/১২. অধ্যায়ঃ যৌনাঙ্গ ব্যতীত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার ।

৬২৪৩

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বানী আদামের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হইবে। চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে। [২১][মুসলিম ৪৬/৫, হাদীস ২৬৫৭, আহমাদ ৮২২২] আঃপ্রঃ- ৫৮০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৬)

[১]. আল্লামা খাত্তাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃদেখা ও কথা বলাকে যিনা বলার কারণ এই যে, দুটোই হচ্ছে প্রকৃত যিনার ভূমিকা- যিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহবা হচ্ছে বাণী বাহক, যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার- সত্য প্রমাণকারী। মাআলিমুস সুনান ৩য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা)

হাফিয আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেছেনঃদৃষ্টিই হয় যৌন লালসা উদ্বোধক, পয়গাম বাহক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌন অঙ্গেরই সংরক্ষণ। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই হচ্ছে তার সর্ব কিছুর মুল কারণ। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়, আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা-বিভ্রমে নিমজ্জিত করে, আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছা শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে, আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প অধিকতর শক্তি অর্জন করে বাস্তবে ঘটনা সংঘটিত করে। বাস্তবে যখন কোন বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোন উপায় থাকে না। আল-জাওয়াব আলকাফী, পৃষ্ঠা ২০৪)

অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি চালনার কুফল সম্পর্কে সতর্ক করিতে গিয়ে নাবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ النظرة سهم مسموم من سهام ابليس

অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি ইবলীসের বিষাক্ত বাণ বিশেষ। মুসনাদ আশশিহাব ১মখন্ড ১৯৫-১৯৬ পৃষ্ঠা)

আল্লামাহ ইবনে কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ প্রসঙ্গে লিখেছেনঃالنظرة سهم سم إلى القلب

দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীর, যা মানুষের হৃদয়ে বিষের উদ্রেক করে। ইবনু কাসীর ৩য় খন্ড ৩৭৬ পৃষ্ঠা)

দৃষ্টি চালনা সম্পর্কে রসূলের ﷺ নির্দেশ

রাসুল কারীম ﷺ বলেছেনঃ غًضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ

তোমাদের দৃষ্টিকে নীচু কর, নিয়ন্ত্রিত কর এবং তোমাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করো।

মুজামুল কাবীর, ৮ম খন্ড ২৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস ৮০১৮, মাজমূআ ফাতাওয়া ১৫শ খন্ড ৩৯৫ পৃষ্ঠা)

এ দুটো যেমন আলাদা আলাদা নির্দেশ, তেমনি প্রথমটির অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে শেষেরটি অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত হলেই লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ সম্ভব। অন্যথায় তাকে চরম নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হইতে হইবে নিঃসন্দেহে।

নাবী কারীম ﷺ আলী -কে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃيَاعَلِيُّلَاتُتْبِعْالنَّظْرَةَالنَّظْرَةَفَإِنَّلَكَالأُولَىوَلَيْسَتْلَكَالآخِرَةُ

হে আলী, একবার কোন পরস্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি পড়লে পুনরায় তার প্রতি চোখ তুলে তাকাবে না। কেননা তোমার জন্যে প্রথম দৃষ্টিই ক্ষমার যোগ্য, দ্বিতীয়বার দেখা নয়। আবুদাউদ ২১৪৯, হাসান, আলবানী)

এর কারণ সু্স্পষ্ট। আকস্মিকভাবে কারো প্রতি চোখ পড়ে যাওয়া আর ইচ্ছাক্রমে কারো প্রতি তাকানো সমান কথা নয়। প্রথমবার যে চোখ কারো উপর পড়ে গেছে, তার মূলে ব্যক্তির ইচ্ছার বিশেষ কোন যোগ থাকে না; কিন্তু পুনর্বার তাকে দেখা ইচ্ছাক্রমেই হওয়া সম্ভব। এ জন্যেই প্রথমবারের দেখায় কোন দোষ হইবে না; কিন্তু দ্বিতীয়বার তার দিকে চোখ তুলে তাকানো ক্ষমার অযোগ্য। বিশেষত এ জন্য যে, দ্বিতীয়বারের দৃষ্টির পিছনে মনের কলুষতা ও লালসা পংকিল উত্তেজনা থাকাই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের দৃষ্টি দিয়ে পরস্ত্রীকে দেখা স্পষ্ট হারাম।

তার মানে কখনো এ নয় যে, পরস্ত্রীকে একবার বুঝি দেখা জায়েয এবং এখানে তার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আসলে পরস্ত্রীকে দেখা আদতেই জায়েয নয়। এজন্যেই কুরআন ও হাদীসে দৃষ্টি নত করে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রসূলে কারীম ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হলঃ পরস্ত্রীর প্রতি আকস্মিক দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে আপনার কী হুকুম? তিনি বললেনঃ اصرف بصرك তোমার চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও। আবু দাউদ ২১৪৮, সহীহ আলবানী)

দৃষ্টি ফেরানো কয়েকভাবে হইতে পারে। উদ্দেশ্য হচ্ছে পরস্ত্রীকে দেখার পংকিলতা থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা। আকস্মিক নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি কারো প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই চোখ নীচু করা, অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ঈমানদার ব্যক্তির কাজ।

নাবী কারীম ﷺ একবার নিকটে উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞেস করলেনঃ মেয়েলোকদের জন্য ভাল কী?

প্রশ্ন শুনে সকলেই চুপ মেরে থাকলেন, কেউ কোন জবাব দিতে পারলেন না। আলী এখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বাড়ি এসে ফাতিমা -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দিলেনঃ لا يراهن الرجال ভিন্ পুরুষরা তাদের দেখবে না। এটাই তাদের জন্যে ভাল ও কল্যাণকর)।

অপর বর্ণনায় ফাতিমা বললেনঃ لا يرين الرجال ولا يرون هن মেয়েরা পুরুষদের দেখবে না, আর পুরুষরা দেখবে না মেয়েদেরকে। দারকুতনী, বাযযার)

বস্ত্তত ইসলামী সমাজ জীবনের পবিত্রতা রক্ষার্থে পুরুষদের পক্ষে যেমন ভিন্ মেয়েলোক দেখা হারাম, তেমনি হারাম মেয়েদের পক্ষেও ভিন্ পুরুষদের দেখা। কুরআন মাজীদে এ সম্পর্কে যেমন পাশাপাশি দুটো আয়াতে রয়েছে-পূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে- তেমনি হাদীসেও এ দুটো নিষেধ বাণী একই সঙ্গে ও পাশাপাশি উদ্ধৃত রয়েছে। উম্মে সালামা বর্ণিত এক হাদীসের ভিত্তিতে আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃيحرمعلىالمرأةنظرالرجلكمايحرمعلىالرجلنظرالمرأة

পুরুষদেরকে দেখা মেয়েদের জন্য হারাম, ঠিক যেমন হারাম পুরুষদের জন্য মেয়েদের দেখা। নাইলুল আওত্বর ৬ষ্ঠ খন্ড ১৭৭ পৃষ্ঠা)

এর কারণস্বরূপ তিনি লিখেছেনঃ

ولأنالنساءأحدنوعيالآدميينفحرمعليهنالنظرإلىالنوعالآخرقياساعلىالرجالويحققهأ

نالمعنىالمحرمللنظرهوخو

فالفتنةوهذافيالمرأةأبلغفإنهااشدشهوةوأقلعقلافتسارعإليهاالفتنةأكثرمنالرجل

কেননা মেয়েলোক মানব জাতিরই অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি। এজন্য পুরুষের মতই মেয়েদের জন্য তারই মত অপর প্রজাতি পুরুষদের দেখা হারাম করা হয়েছে। এ কথার যথার্থতা বোঝা যায় এ দিক দিয়েও যে, গায়র-মুহাররমের প্রতি তাকানো হারাম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যৌন বিপর্যয়ের ভয়। আর মেয়েদের ব্যাপারে এ ভয় অনেক বেশী। কেননা যৌন উত্তেজনা যেমন মেয়েদের বেশী, সে পরিমাণে বুদ্ধিমত্তা তাদের কম। আর পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কারণেই অধিক যৌন বিপর্যয় ঘটে থাকে। নাইলুল আওত্বর ৬ষ্ঠ খন্ড ১৭৭ পৃষ্ঠা)

মোটকথা, গায়র মুহাররম স্ত্রী-পুরুষের পারস্পরিক দৃষ্টি বিনিময় কিংবা একজনের অপরজনকে দেখা, লালসার দৃষ্টি নিক্ষেপ ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে করে পারিবারিক জীবনে শুধু যে পংকিলতার বিষবাষ্প জমে তাই নয়, তাতে আসতে পারে এক প্রলয়ঙ্কর ভাঙ্গণ ও বিপর্যয়। মনে করা যেতে পারে, একজন পুরুষের দৃষ্টিতে কোন পরস্ত্রী অতিশয় সুন্দরী ও লাস্যময়ী হয়ে দেখা দিল। পুরুষ তার প্রতি দৃষ্টি পথে ঢেলে দিল প্রাণ মাতানো মন ভুলানো প্রেম ও ভালবাসা। স্ত্রীলোকটি তাতে আত্মহারা হয়ে গেল, সেও ঠিক দৃষ্টির মাধ্যমেই আত্মসমর্পণ করিল এই পর-পুরুষের কাছে। এখন ভাবুন, এর পরিণাম কী? এর ফলে পুরুষ কি তার ঘরের স্ত্রীর প্রতি বিরাগভাজন হইবে না? হইবে নাকি এই স্ত্রী লোকটি নিজের স্বামীর প্রতি অনাসক্তা, আনুগত্যহীনা। আর তাই যদি হয়, তাহলে উভয়ের পারিবারিক জীবনের গ্রন্থি প্রথমে কলংকিত ও বিষ-জর্জর এবং পরে সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হইতে বাধ্য। এর পরিণামই তো আমরা সমাজে দিনরাতই দেখিতে পাচ্ছি।

৭৯/১৩. অধ্যায়ঃ তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া ।

৬২৪৪

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে ,নাবী (সাঃআঃ) যখন সালাম করিতেন , তখন তিনবার সালাম দিতেন এবং যখন কথা বলিতেন তখন তিনবার তার পুনরাবৃত্তি করিতেন।(আঃপ্রঃ- ৫৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৭)

৬২৪৫

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবু মূসা (রাদি.) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেনঃ আমি তিনবার উমার (রাদি.)- এর নিকট অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম। উমার (রাদি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করিতে কিসে বাধা দিল? আমি বললামঃ আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। (কারণ) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমার (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাকে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ আছে কি যিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীস শুনেছে? তখন উবাই ইবনু কাব (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিই উঠে দাঁড়াবে। আর আমি দলের সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তাহাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললামঃ নাবী (সাঃআঃ) অবশ্যই এ কথা বলেছেন।

ইবনু মুবারাক বলেন, আবু সাঈদ হইতে ভিন্ন একটি সূত্রেও অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [২০৬২; মুসলিম ৩৮/৭, হাদীস ২১৫৩, আহমাদ ১৯৬৩০] আঃপ্রঃ- ৫৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৮)

৭৯/১৪. অধ্যায়ঃ যখন কোন ব্যক্তিকে ডাকা হয় আর সে আসে, সেও কি প্রবেশের অনুমতি নিবে ?

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত । নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ এ ডাকাই তার জন্য অনুমতি ।

৬২৪৬

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদিন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে গিয়ে একটি পেয়ালায় দুধ পেলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবু হির! তুমি আহলে সুফ্‌ফার নিকট গিয়ে তাদের আমার নিকট ডেকে আন। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে এলাম। তারপর তারা এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর তারা প্রবেশ করিল।(আঃপ্রঃ- ৫৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৯)

৭৯/১৫. অধ্যায়ঃ শিশুদের সালাম দেয়া।

৬২৪৭

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, একবার তিনি একদল শিশুর পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করা কালে তিনি তাদের সালাম করে বলিলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) -ও তা করিতেন।[মুসলিম ৩৯/৫, হাদীস ২১৬৮] আঃপ্রঃ- ৫৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০০)

৭৯/১৬. অধ্যায়ঃ মহিলাকে পুরুষদের এবং পুরুষকে মহিলাদের সালাম দেয়া।

৬২৪৮

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা জুমুআহর দিনে খুশি হতাম। রাবী বলেন, আমি তাঁকে বললামঃ কেন? তিনি বললেনঃ আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন লোককে বুদাআ নামক খেজুর বাগানে পাঠিয়ে বীট চিনির শিকড় আনতো। তা একটি হাঁড়িতে দিয়ে সে তাতে কিছুটা যবের দানা দিয়ে ঘুঁটে এক রকম খাবার তৈরি করতো। এরপর আমরা যখন জুমুআহর সলাত আদায় করে ফিরতাম, তখন আমরা ঐ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করতো। আমরা এজন্য খুশি হতাম। আমাদের নিয়ম ছিল যে, আমরা জুমুআহর পরেই মধ্যাহ্ন ভোজন ও মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতাম।(আঃপ্রঃ- ৫৮০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০১)

৬২৪৯

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)বললেনঃ হে আয়েশাহ! ইনি জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন আমিও বললামঃ ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমরা যা দেখছি না, তা আপনি দেখছেন। ইউনুস ও নুমান যুহরী সূত্রে বলেন, এবং বারাকাতুহু –ও বলেছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৮০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০২)

৭৯/১৭. অধ্যায়ঃ যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন যে, ইনি কে? আর তিনি বলেন, আমি।

৬২৫০

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

জাবির (রাদি.) বলেন, আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে এলাম এবং দরজায় আঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? আমি বললামঃ আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি আমি, যেন তিনি তা অপছন্দ করিলেন। [২১২৭; মুসলিম ৩৮/৮, হাদীস ২১৫৫] আঃপ্রঃ- ৫৮০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৩)

৭৯/১৮. অধ্যায়ঃ যে সালামের জবাব দিল এবং বললঃ আলাইকাস্‌ সালাম।

জিবরীল (আঃ) এর সালামের উত্তরে আয়েশাহ (রাদি.) “ওয়া আলাইহিস্‌ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু” বলেছেন। আর নাবী (সাঃআঃ)বলেনঃ আদাম (আঃ) –এর সালামের জবাবে ফেরেশতা বলেনঃ “আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ”।

৬২৫১

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সলাত আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করলো। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সলাত আদায় করো নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করিল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সালাত আদায় করোনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করিল। তখন সে দ্বিতীয় বারে অথবা তার পরের বারে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করিবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযূ করিবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হইবে, তা তিলাওয়াত করিবে। তারপর তুমি রুকূ করিবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সাজদাহ করিবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করিবে। আবু উসামাহ (রাদি.) বলেন, এমনকি শেষে তুমি সোজা হয়ে দণ্ডায়মান হইবে।(আঃপ্রঃ- ৫৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৪)

৬২৫২

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তারপর উঠে বস ধীরস্থিরভাবে।(আঃপ্রঃ- ৫৮১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৫)

৭৯/১৯. অধ্যায়ঃ যদি কেউ বলে যে, অমুক তোমাকে সালাম দিয়েছে।

৬২৫৩

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইহিস্‌ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।(আঃপ্রঃ- ৫৮১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৬)

৭৯/২০. অধ্যায়ঃ মুসলিম ও মুশরিকদের একত্রিত মাজলিসে সালাম দেয়া।

৬২৫৪

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, একবার নাবী (সাঃআঃ) এমন একটি গাধার উপর সাওয়ার হলেন, যার জ্বীনের নীচে ফাদাকের তৈরী একখানি চাদর ছিল। তিনি উসামাহ ইবনু যায়দকে নিজের পিছনে বসিয়েছিলেন। তখন তিনি হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্রের সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -এর দেখাশোনার উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের আগের ঘটনা। তিনি এমন এক মাজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, প্রতিমাপূজক, মুশরিক ও ইয়াহূদী ছিল। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূলও ছিল। আর এ মাজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)-ও হাজির ছিলেন। যখন সাওয়ারীর পদাঘাতে বিক্ষিপ্ত ধূলাবালি মাজলিসকে ঢেকে ফেলছিল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার চাদর দিয়ে তার নাক ঢাকল। তারপর বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধূলাবালি উড়িয়ো না। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাদের সালাম করিলেন। তারপর এখানে থামলেন ও সাওয়ারী থেকে নেমে তাদের আল্লাহর প্রতি আহ্বান করিলেন এবং তাদের কাছে কুরআন পাঠ করিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল বললঃ হে আগন্তুক! আপনার এ কথার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। তবে আপনি যা বলছেন, যদিও তা সত্য, তবুও আপনি আমাদের মাজলিসে এসব বলে আমাদের বিরক্ত করবেন না। আপনি আপনার নিজ বাসস্থানে ফিরে যান। এরপর আমাদের মধ্য হইতে কোন লোক আপনার নিকট গেলে তাকে এসব কথা বলবেন। তখন ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের মাজলিসে আসবেন, আমরা এসব কথা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীদের মধ্যে পরস্পর গালাগালি শুরু হয়ে গেল। এমনকি তারা একে অন্যের উপর আক্রমণ করিতে উদ্যত হল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের নিরস্ত করিতে লাগলেন। শেষে তিনি তাহাঁর সাওয়ারীতে উঠে রওয়ানা হলেন এবং সাদ ইবনু উবাদাহর কাছে পোঁছলেন। তারপর তিনি বললেনঃ হে সাদ! আবু হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কী বলেছে, তা কি তুমি শুনোনি? সাদ (রাদি.) বললেনঃ সে এমন কথাবার্তা বলেছে। তিনি আরো বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তাকে মাফ করে দিন। আর তার কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তাআলা আপনাকে যেসব নিয়ামত দান করার ছিল তা সবই দান করিয়াছেন। অন্যদিকে এ শহরের অধিবাসীরা তো পরামর্শ করে স্থির করেছিল যে, তারা তাকে রাজমুকুট পরাবে। আর তার শিরে রাজকীয় পাগড়ী বেঁধে দিবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে দ্বীনে হক দান করিয়াছেন, তা দিয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে সে (দুঃখের আগুনে) জ্বলছে। এজন্যই সে আপনার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তা আপনি নিজেই দেখেছেন। তারপর নাবী (সাঃআঃ) তাকে মাফ করে দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৮১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৭)

৭৯/২১. অধ্যায়ঃ গুনাহগার ব্যক্তির তাওবাহ করার আলামাত প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এবং গুনাহগারের তাওবাহ কবূল হবার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত যিনি তাকে সালাম করেননি এবং তার সালামের জবাবও দেননি।

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বলেনঃ শরাবখোরদের সালাম দিবে না।

৬২৫৫

আবদুল্লাহ ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু কাব (রাদি.) বলেনঃ যখন কাব ইবনু মালিক (রাদি.) তাবূকের যুদ্ধে যোগদান না করে পিছনে রয়ে যান, আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার সাথে সালাম কালাম করিতে সকলকে নিষেধ করে দেন। (তখনকার ঘটনা) আমি কাব ইবনু মালিক (রাদি.) –কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে আসতাম এবং তাঁকে সালাম করতাম আর মনে মনে বলতাম যে, আমার সালামের জবাবে তাহাঁর ঠোঁট দুটি নড়ছে কিনা। পঞ্চাশ দিন পূর্ণ হলে নাবী (সাঃআঃ) ফজরের সালাতের সময় ঘোষণা দিলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওবাহ কবূল করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৮১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৮)

৭৯/২২. অধ্যায়ঃ অমুসলিমদের সালামের জবাব কীভাবে দিতে হইবে।

৬২৫৬

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার একদল ইয়াহূদী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বললঃ আস্‌সামু আলাইকা। (তোমার মরণ হোক)। আমি এ কথার অর্থ বুঝে বললামঃ আলাইকুমুস্‌ সামু ওয়াল লানাতু। (তোমাদের উপর মৃত্যু ও লানাত)। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আয়েশাহ! তুমি থামো। আল্লাহ সর্ব হালতে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! তারা যা বললোঃ তা কি আপনি শুনেননি? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এ জন্যই আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (অর্থাৎ তোমাদের উপরও)। (আঃপ্রঃ- ৫৮১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৯)

৬২৫৭

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ইয়াহূদী যদি তোমাদের সালাম করে তবে তাদের কেউ অবশ্যই বলবেঃ আস্‌সামু আলাইকা। তখন তোমরা উত্তরে বলবে ওয়াআলাইকা। [৬৯২৮; মুসলিম ৩৯/৪, হাদীস ২১৬৪, আহমাদ ৪৬৯৮] আঃপ্রঃ- ৫৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১০)

৬২৫৮

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলবে ওয়া আলাইকুম (তোমাদের উপরও)। [২৯৬২; মুসলিম ৩৯/৪, হাদীস ২১৬৩, আহমাদ ১১৯৪৮] আঃপ্রঃ- ৫৮১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১১)

By ইমাম বুখারী

এখানে কুরআন শরীফ, তাফসীর, প্রায় ৫০,০০০ হাদীস, প্রাচীন ফিকাহ কিতাব ও এর সুচিপত্র প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্ন/পরামর্শ/ ভুল সংশোধন/বই ক্রয় করতে চাইলে আপনার পছন্দের লেখার নিচে মন্তব্য (Comments) করুন। “আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়” -বুখারি ৩৪৬১। তাই এই পোস্ট টি উপরের Facebook বাটনে এ ক্লিক করে শেয়ার করুন অশেষ সাওয়াব হাসিল করুন

Leave a Reply