সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম – অনুমতি, মুসাফাহা, কোলাকুলি
সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম – অনুমতি, মুসাফাহা, কোলাকুলি >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ৪৩, অনুচ্ছেদঃ ১৩৭-১৫৬=২০টি
অনুচ্ছেদ-১৩৭ঃ অনুমতি চাওয়া সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৩৮ঃ অনুমতি চাওয়ার নিয়ম
অনুচ্ছেদ-১৩৯ঃ অনুমতি নিতে কতবার সালাম দিবে?
অনুচ্ছেদ-১৪০ঃ কেউ প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার জন্য দরজা খটখট করলে
অনুচ্ছেদ-১৪১ঃ কাউকে আহবান করা কি তার জন্য অনুমতি ধর্তব্য ?
অনুচ্ছেদ-১৪২ঃ তিন সময়ে প্রবেশানুমতি প্রার্থনা
অনুচ্ছেদ-১৪৩ঃ সালামের প্রসার ঘটানো
অনুচ্ছেদ-১৪৪ঃ সালাম বিনিময়ের পদ্ধতি
অনুচ্ছেদ-১৪৫ঃ যে প্রথমে সালাম দেয় তার ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-১৪৬ঃ কে প্রথমে সালাম দিবে?
অনুচ্ছেদ-১৪৭ঃ পরস্পর আলাদা হওয়ার পর আবার সাক্ষাত হলে তারা কি সালাম দিবে?
অনুচ্ছেদ-১৪৮ঃ শিশুদেরকে সালাম দেয়া
অনুচ্ছেদ-১৪৯ঃ মহিলাদেরকে সালাম দেয়া সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৫০ঃ মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিককে সালাম দেয়া সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৫১ঃ মাজলিস হইতে বিদায়ের সময় সালাম দেয়া
অনুচ্ছেদ-১৫২ঃ আলাইকাস সালাম বলা অপছন্দনীয়
অনুচ্ছেদ-১৫৩ঃ দলের পক্ষ হইতে একজনের সালামের উত্তর দান
অনুচ্ছেদ-১৫৪ঃ মুসাফাহা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৫৫ঃ কোলাকুলি সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৫৬ঃ কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো
অনুচ্ছেদ-১৩৭ঃ অনুমতি চাওয়া সম্পর্কে
৫১৭১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর এক হুজরাতে উঁকি মারলো। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক বা একাধিক তীর-ফলক নিয়ে তার দিকে দাঁড়ালেন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকটির চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য যেভাবে তাহাকে খুঁজছিলেন সে দৃশ্য এখনো যেন আমার চোখের সামনে ভাসছে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৭২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি কোন গোত্রের ঘরে তাহাদের অনুমতি ছাড়া উঁকি মারে এবং তারা তার চোখ ফুঁড়ে দেয় তাহলে এর কোন ক্ষতিপূরণ নেই।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৭৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ চোখ প্রবেশ করলে এরপর অনুমতি নেয়ার দরকার থাকলো কই। {৫১৭১}
দুর্বলঃ যঈকাহ হা/২৫৮৬
{৫১৭১} আহমাদ, বায়হাক্বী।
এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫১৭৪. হুযাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা এক ব্যক্তি অর্থাৎ সাদ [রাদি.] এসে নাবী [সাঃআঃ]-এর ঘরের দরজা বরাবর মুখ করে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নাবী [সাঃআঃ] তাহাকে বলিলেনঃ দরজার ডান অথবা বাম দিকে সরে দাঁড়াও। কেননা চোখের দৃষ্টির কারণেই অনুমতি নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৭৫. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। {৫১৭৩}
{৫১৭৩} বায়হাক্বী।
এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
অনুচ্ছেদ-১৩৮ঃ অনুমতি চাওয়ার নিয়ম
৫১৭৬. কালাদাহ ইবনি হাম্বাল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যাহ [রাদি.] তাহাকে কিছু দুধ, একটি হরিণ ছানা ও কিছু শসাসহ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট প্রেরণ করিলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] মক্কার উঁচু স্থানে অবস্থান করছিলেন। আমি সালাম না দিয়েই তাহাঁর নিকট প্রবেশ করলে তিনি বলিলেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং আসসালামু আলাইকুম বলো। ঘটনাটি ঘটেছিলো সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যাহ [রাদি.]-এর ইসলাম গ্রহণের পর।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৭৭. রিবঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বনী আমিরের এক লোক আমাকে বলেন, তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর ঘরে অবস্থানকালে তাহাঁর নিকট অনুমতি চেয়ে বলেছিলেন, আমি কি আসবো? নাবী [সাঃআঃ] তার খাদেম কে বলিলেন, তুমি বের হয়ে তার নিকট গিয়ে তাহাকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম শিখিয়ে দাও। তুমি তাহাকে বলো, আস্সালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? লোকটি এ কথা শুনে বললো, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? নাবী [সাঃআঃ] তাহাকে অনুমতি দিলেন এবং সে ভেতরে প্রবেশ করলো।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৭৮. রিবঈ ইবনি হিরাশ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, বনী আমিরের এক লোক নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলো …… অতঃপর পূর্বের হাদিসের অনুরূপ। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এভাবেই মুসাদ্দাদ আবু আওয়ানাহ হইতে মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাতে আমির গোত্রের এক ব্যক্তির সূত্রে-কথাটি নেই। {৫১৭৬}
{৫১৭৬} আহমাদ, বায়হাক্বী।
এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৫১৭৯. বনী আমিরর এক ব্যক্তি হইতে বর্ণীতঃ
সে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট অনুমতি চাইলো…… অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাহাঁর কাছ থেকে শুনে বলিলাম, আস্সালামু আলাইকুম, আসতে পারি কি? {৫১৭৭}
{৫১৭৭} আহমাদ, বায়হাক্বী।
এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
অনুচ্ছেদ-১৩৯ঃ অনুমতি নিতে কতবার সালাম দিবে?
৫১৮০. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আনসারগণের এক সমাবেশে বসা ছিলাম। এ সময় আবু মূসা [রাদি.] ভীত অবস্থায় উপস্থিত হলেন। আমরা তাহাকে বলিলাম, আপনার ভীত হওয়ার কারণ কি? তিনি বলিলেন, উমার [রাদি.] আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি তার নিকট এসে তিনবার অনুমতি চেয়েও অনুমতি না পেয়ে ফিরে গেলাম। তিনি [উমার] আমাকে প্রশ্ন করিলেন, [ভেতরে প্রবেশ করিতে] তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? আমি বলিলাম, আমি এসে তিনবার অনুমতি চেয়েছি কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কেউ যদি তিনবার অনুমতি চেয়েও অনুমতি না পায় তবে সে ফিরে যাবে। উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমাকে অবশ্যই আমাকে এর সাক্ষী পেশ করিতে হইবে। বর্ণনাকারী বলিলেন, অতঃপর আবু সাঈদ [রাদি.] বলিলেন, আপনার সঙ্গে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে দলের সর্বকনিষ্ঠ লোকটিই উঠবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতপঃর আবু সাঈদ [রাদি.] তার সঙ্গে গিয়ে তার পক্ষে সাক্ষী দিলেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৮১. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি উমার [রাদি.] এর নিকট এসে তিনবার এভাবে অনুমতি চাইলেনঃ আবু মূসা অনুমতি চাচ্ছে; আল-আশআরী অনুমতি চাচ্ছে এবং আবদুল্লাহ ইবনি ক্বাইস অনুমতি চাচ্ছে। কিন্তু তিনি তাহাকে অনুমতি না দেয়ায় আবু মূসা [রাদি.] ফিরে যেতে লাগলেন। উমার [রাদি.] তাহাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করিলেন, কিসে আপনাকে ফিরে যেতে বাধ্য করলো? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ অনুমতি চাইবে তিনবার। যদি তাহাকে অনুমতি দেয়া হয় তো ভালো, অন্যথায় ফিরে যাবে। উমার [রাদি.] বলিলেন এর স্বপক্ষে আমাকে প্রমাণ দিন। অতএব তিনি গিয়ে সাক্ষী নিয়ে এসে বলিলেন, এই উবাই। উবাই [রাদি.] বলিলেন, হে উমার! রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাহাবীগণকে শাস্তিদাতা হইবেন না। উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি কখনো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীগণকে শাস্তি দিবো না।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫১৮২. উবাইদ ইবনি উমাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবু মূসা [রাদি.] উমার [রাদি.] –এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন……অতঃপর উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ কিস্সা। তবে বর্ণনাকারী আরো বলেনঃ তিনি আবু সাঈদ [রাদি.]–কে নিয়ে এলেন এবং তিনি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত এ হাদিস আমার অজানা রয়ে গেলো! বাজারের বেচাকেনাই আমাকে এ ব্যাপারে অনবহিত রেখেছে। এখন আপনার ইচ্ছেমত আমাকে সালাম দিন এবং অনুমতির দরকার নেই।
সহিহ। তবে এ কথাটি বাদেঃ “এখন আপনি ইচ্ছেমত আমাকে ……”।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৮৩. আবু বুরদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
বর্ণনাকারী বলেন, উমার [রাদি.] আবু মূসা [রাদি.]-কে বলিলেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে অপবাদ দিচ্ছি না। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূত্রে হাদিস বর্ণনা করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৮৪. রাবীআহ ইবনি আবু আবদুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এবং তাহাদের একাধিক আলিম হইতে বর্ণীতঃ
উমার [রাদি.] আবু মূসা [রাদি.]-কে বলেন, জেনে রাখুন! আমি আপনাকে অপবাদ দিচ্ছি না। কিন্তু আমি ভয় করছি যে, মানুষ হয়ত দায়িত্বহীনভাবে রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] হাদিস বর্ণনা করিবে। {৫১৮২}
{৫১৮২} এর পূর্বেরটি দেখুন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৮৫. ক্বাইস ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সঙ্গে দেখা করিতে আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি বলিলেন, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহ্মাতুল্লাহ। বর্ণনাকারী বলেন, সাদ [রাদি.] আস্তে সালামের উত্তর দিলেন। ক্বাইস [রাদি.] বলেন, আমি বলিলাম, আপনি কি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে প্রবেশের অনুমতি দিবেন না? তিনি বলিলেন, থামো, তাঁকে বেশী বেশী আমাদেরকে সালাম দিতে দাও। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সাদ [রাদি.] এবারেও আস্তে সালামের জবাব দিলেন। পুনরায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। অতঃপর তিনি ফিরে যেতে থাকলেন। সাদ [রাদি.] তাহাঁর পিছনে পিছনে গিয়ে তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয়ই আমি আপনার সালাম শুনতে পারছিলাম এবিং চুপে চুপে সালামের জবাব দিচ্ছিলাম, যাতে আপনি বেশী বেশী সালাম দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সঙ্গে ফিরে আসলেন এবং সাদ [রাদি.] তাহাঁর গোসলের জন্য পানি এনে দিতে নির্দেশ দিলেন, অতঃপর তিনি গোসল করিলেন। এরপর তাঁকে জাফরান বা ওয়ার্স দ্বারা রঞ্জিত একটি চাদর দিলেন। তিনি তা পরিধান করিলেন। অতঃপর দুহাত তুলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি সাদ ইবনি উবাদাহ্র পরিবার-পরিজনের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে খাবার দেয়া হলো। তিনি [সাঃআঃ] যখন রওয়ানা করার জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন সাদ [রাদি.] পিঠে মখমলের চাদর বা গদি বিছানো একটি সুসজ্জিত গাধা এনে তার নিকটবর্তী করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাতে আরোহণ করিলেন। সাদ [রাদি.] বলিলেন, হে ক্বাইস! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে যাও। ক্বাইস [রাদি.] বলেন, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেনঃ আরোহণ করো। কিন্তু আমি সম্মত হলাম না। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আরোহণ করো নতুবা ফিরে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ফিরে এলাম। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উমার ইবনি আবদুল ওয়াহিদ ও ইবনি সামআহ [রাদি.] আল-আওয়াঈর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাদিসটি মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন এবং তারা উভয়ে ক্বাইস ইবনি সাদ [রাদি.]-এর উল্লেখ করেননি। {৫১৮৩}
{৫১৮৩} আহমাদ। সনদের মুহাম্মাদ ইবনি আবদুর রহমান হাদিসটি ক্বাইস হইতে শুনেন নি। সুতরাং এটা মুনতাকি। হাফিয বলেনঃ সঠিক কথা হলো উভয়ের মাঝে আরেকজন ব্যক্তি রয়েছেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫১৮৬. আবদুল্লাহ ইবনি বুস্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন কওমের দরবারে এলে দরজায় মুখ করে দাঁড়াতেন না, বরং দরজার বাম বা ডান পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলিতেনঃ আস্সালামু আলাইকুম, আস্সালামু আলাইকুম । কারণ সে যুগে দরজায় পর্দা টানানো থাকতো না।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪০ঃ কেউ প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার জন্য দরজা খটখট করলে
৫১৮৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া ঋণ সম্পর্কে আলোচনার জন্য নাবী [সাঃআঃ]এর নিকট যান। আমি [জাবির] দরজা খটখট করলে তিনি বলিলেনঃকে? আমি বলিলাম, আমি। তিনি বলিলেনঃআমি! আমি! মনে হলো, তিনি এরূপ বলা অপছন্দ করেছেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৮৮. নাফি ইবনি আবদুল হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সঙ্গে বের হয়ে এক বাগানে প্রবেশ করলাম। তিনি আমাকে বলিলেনঃ দরজা বন্ধ করে রাখো। পরে দরজায় আঘাত করা হলে আমি বলিলাম, কে? অতঃপর বাকি অংশ আবু মূসা [রাদি.] বর্ণিত হাসীসের অনুরূপ। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ আবু মূসা আল-আশআরীর [রাদি.] হাদিস। তাতে রয়েছেঃ সে দরজা খটখট করলো।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪১ঃ কাউকে আহবান করা কি তার জন্য অনুমতি ধর্তব্য ?
৫১৮৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]বলিয়াছেনঃ কোন ব্যক্তিকে ডেকে আনার জন্য কোন লোক পাঠালে তা তার অনুমতি হিসেবে ধর্তব্য।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৯০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি পানাহারের জন্য আমন্ত্রিত হয় এবং সে আমন্ত্রনকারীর প্রতিনিধির সঙ্গে আসে, তবে তার জন্য এটাই অনুমতি।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪২ঃ তিন সময়ে প্রবেশানুমতি প্রার্থনা
৫১৯১. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবু ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, অধিকাংশ লোকই অনুমতি গ্রহণ সম্পর্কিত আয়াতের উপর আমল করে না। আমি তো আমার এই দাসীকে আমার নিকট আসতে অনুমতি নেয়ার আদেশ দিয়েছি। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আত্বা ইবনি আব্বাস [রাদি.] সূত্রে এমনটিই বর্ণনা করেছেন, তিনি অনুমতি নেয়ার আদেশ দিতেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ
৫১৯২. ইকরিমাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইরাকের অধিবাসী একদল লোক ইবনি আব্বাস [রাদি.] নিকট প্রশ্ন করলো, হে ইবনি আব্বাস! এ আয়াত সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তাতে আমাদেরকে যা নির্দেশ দেয়ার দেয়া হয়েছে, কিন্তু কেউই সে মোতাবেক আমল করে না। মহান আল্লাহ বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়োপ্রাপ্ত হয়নি তারা যেন তোমাদের ঘরে প্রবেশ করিতে তিন সময়ে অনুমতি নেয়, ফাজর সালাতের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখো এবং ইশার সালাতের পর- এ তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময়ে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাহাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের একজনকে অপরজনের নিকট যাতায়াত করিতে হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাহাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। তোমাদের সন্তান-সন্তুতি বয়োপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তোমাদের বয়োজ্যেষ্ঠাদের মতো অনুমতি গ্রহন করে। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাহাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়” [সূরাহ নূরঃ ৫৮-৫৯]।
ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সহনশীল, পরম দয়ালু। তিনি গোপনীয়তা ভালোবাসেন। লোকজনের ঘরে কোনোরূপ পর্দার ব্যবস্থা ছিলো না। ফলে কখনো ঘরে স্বামী-স্ত্রী অবস্থানকালে তার খাদেম বা বালক-বালিকারা ঢুকে পড়তো। এজন্যই আল্লাহ গোপনীয়তা অবলম্বনে এ সময়গুলোতে অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ দেন। অতএব আল্লাহ তাহাদের জন্যে গোপনীয়তা অবলম্বন ও কল্যাণকর ব্যবস্থা দিয়েছেন। অথচ আমি কাউকে তদনুসারে আমল করিতে দেখি না। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উবাইদুল্লাহ ও আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। এ হাদিসকে দুর্বল করে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান মাওকুফ
অনুচ্ছেদ-১৪৩ঃ সালামের প্রসার ঘটানো
৫১৯৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]বলিয়াছেনঃ কসম সেই সত্ত্বার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হইতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় অবহিত করবো না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হইবে? তা হলো, তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৯৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করলো, ইসলামের কোন দিকটি উত্তম? তিনি বলিলেনঃ তোমার পরিচিত ও অপরিচিতজনকে তুমি খানা খাওয়াবে এবং সালাম দিবে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪৪ঃ সালাম বিনিময়ের পদ্ধতি
৫১৯৫. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক লোক নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো, আস্সালামু আলাইকুম। তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বলিলেনঃ দশ নেকি! এরপর আরেকজন এসে বললো, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাবী [সাঃআঃ] অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বলিলেন, বিশ নেকি! অতঃপর আরেকজন এসে বললো, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নাবী [সাঃআঃ] তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বলিলেনঃত্রিশ নেকি।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৯৬. সাহল ইবনি মুআয ইবনি আনাস [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
সাহল ইবনি মুআয ইবনি আনাস [রাদি.] হইতে তার পিতার মাধ্যমে নাবী [সাঃআঃ]-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের সমার্থক হাদিস বর্ণনা করেন। এতে আরো রয়েছে ঃ এরপর আরেকজন এসে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু। তিনি [সাঃআঃ]বলিলেনঃ চল্লিশ নেকি। নাবী [সাঃআঃ]আরো বলেনঃ এভাবে নেকি বৃদ্ধি পেতে থাকে। {৫১৯৪}
{৫১৯৪} হাফিয ইবনি হাজার ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেনঃ এর সনদ দুর্বল। এর দোষ হচ্ছে সনদের ইবনি আবু মারইয়াম। তিনি দুর্বল। তাছাড়া তিনি নাফি হইতে হাদিস শুনার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪৫ঃ যে প্রথমে সালাম দেয় তার ফাযীলাত
৫১৯৭. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪৬ঃ কে প্রথমে সালাম দিবে?
৫১৯৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ সালাম দিবে ছোট বড়কে, পথচারী বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক অধিক সংখ্যককে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১৯৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আরোহী ব্যক্তি সালাম দিবে পদব্রজে যাতায়াতকারীকে। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরা হাদিস বর্ণনা করেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪৭ঃ পরস্পর আলাদা হওয়ার পর আবার সাক্ষাত হলে তারা কি সালাম দিবে?
৫২০০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করে, তখন সে যেন তাহাকে সালাম দেয়। অতঃপর দুজনের মাঝে যদি গাছ, দেয়াল বা পাথর আড়াল হয়ে যায় এবং তারপর আবার সাক্ষাত হয়, তাহলেও যেন তাহাকে সালাম দেয়। {৫১৯৮}
সহিহ মাওকূফ ও মারফুভাবে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৫২০১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা উমার [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তাহাঁর কাঠের মাচানে ছিলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ, আস্সালামু আলাইকুম, উমার কি প্রবেশ করিবে?
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪৮ঃ শিশুদেরকে সালাম দেয়া
৫২০২. সাবিত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আনাস [রাদি.] বলিয়াছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খেলাধূলারত একদল বালকের নিকট এসে তাহাদেরকে সালাম দিয়েছেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫২০৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের শিশুদের নিকট এসে পৌঁছলেন। আমিও শিশু হিসেবে তাহাদের সঙ্গে ছিলাম। তিনি [সাঃআঃ] আমাদেরকে সালাম দিলেন। এরপর তিনি আমার হাত ধরে আমাকে একটি চিঠি দিয়ে পাঠালেন। তিনি একটি দেয়ালের পাশে ছায়ায় বসে থাকলেন, যতক্ষণ না আমি তাহাঁর নিকট ফিরে আসি।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪৯ঃ মহিলাদেরকে সালাম দেয়া সম্পর্কে
৫২০৪. আসমা বিনতু ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] আমাদের একদল মহিলার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সালাম দিয়েছেন। {৫২০২}
এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
অনুচ্ছেদ-১৫০ঃ মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিককে সালাম দেয়া সম্পর্কে
৫২০৫. সুহাইল ইবনি আবু সালিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। তারা গির্জাসমূহের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তাতে অবস্থানরত খ্রিষ্টানদের সালাম দিলেন। আমার পিতা বলিলেন, তোমরা আগে তাহাদেরকে সালাম দিও না। আবু হুরায়রা [রাদি.] আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা আগে তাহাদেরকে [আহলে কিতাবকে] সালাম দিবে না। রাস্তায় তাহাদের সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাত হলে তাহাদের রাস্তার সংকীর্ণ দিকে চলে যেতে বাধ্য করিবে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫২০৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ ইয়াহুদীদের কেউ তোমাদের সালাম দেয়ার সময় বলে যে “আস্সামু আলাইকুম” [অর্থ ঃ তোমাদের মৃত্যু হোক]। জবাবে তোমরা বলবে ঃ ওয়া আলাইকুম [অর্থ ঃ তোমার উপরও তাই]। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবদুল্লাহ ইবনি দীনার সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান সাওরীও আবদুল্লাহ ইবনি দীনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ [জবাবে তোমরা বলবে], ওয়া আলাইকুম।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫২০৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণ নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিলেন, আহলে কিতাবরা আমাদেরকে সালাম দেয়। আমরা তার জবাব কিভাবে দিবো? তিনি বলিলেনঃ তোমরা বলবে, ওয়া আলাইকুম।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫১ঃ মাজলিস হইতে বিদায়ের সময় সালাম দেয়া
৫২০৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ মাজলিসে উপস্থিত হলে যেন সালাম দেয় এবং মাজলিস হইতে বিদায়ের সময়ও যেন সালাম দেয়। প্রথম সালাম শেষ সালামের চেয়ে জরুরী নয়।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-১৫২ঃ আলাইকাস সালাম বলা অপছন্দনীয়
৫২০৯. আবু জুরায়্যি আল-হুজাইমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলাম, আলাইকাস্ সালামু ইয়া রসূলুল্লাহ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আলাইকাস্ সালাম বলো না। কারণ এটা হলো মুর্দার প্রতি সালাম।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫৩ঃ দলের পক্ষ হইতে একজনের সালামের উত্তর দান
৫২১০. আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাসান ইবনি আলী [রাদি.] এটি মারফুভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ পথ অতিক্রমকালে দলের একজন যদি সালাম দেয়, তাহলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট। এমনিভাবে উপবিষ্টদের একজন তার উত্তর দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫৪ঃ মুসাফাহা সম্পর্কে
৫২১১. আল-বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ দুইজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে, আল্লাহর প্রশংসা করলে এবং ক্ষমা চাইলে আল্লাহ উভয়কে ক্ষমা করে দেন। {৫২০৯}
দুর্বলঃ যঈফাহ হা/২৩৪৪।
{৫২০৯} বায়হাক্বী। হাদিসের সনদ মুযতারিব। সনদের আবু বালজ হলো ইয়াহইয়া ইবনি আবু সুলাইম। তার সম্পর্কে ঈমাম বুখারী বলেনঃ তার ব্যাপারে আপত্তি আছে। ঈমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মুনকার হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনি হিব্বান বলেনঃ তিনি ভুল করিতেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫২১২. আল-বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ দুইজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাহাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫২১৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা ইয়ামানবাসীরা এসে উপস্থিত হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমাদের নিকট ইয়ামানবাসীরা এসেছে। আর এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা করেছে।
সহিহ। কিন্তু তার বক্তব্যঃ “এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা করেছে”-এ কথাটি মুদরাজ, যা আনাসের উক্তি।
এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
অনুচ্ছেদ-১৫৫ঃ কোলাকুলি সম্পর্কে
৫২১৪. আনাযাহ গোত্রের এক ব্যক্তি হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আবু যার [রাদি.]-কে সিরিয়া ত্যাগের সময় বলিলেন, আমি আপনার নিকট রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] হাদিসসমূহের মধ্যকার একটি হাদিস সম্পর্কে প্রশ্ন করিতে আগ্রহী। আবু যার [রাদি.] বলিলেন, তা গোপন কোন বিষয় না হলে আমি আপনাকে বলবো। আমি বলিলাম, না, তা কোন গোপন বিষয় নয়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আপনাদের দেখা হলে তিনি কি আপনাদের সঙ্গে মুসাফাহা করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ যখনই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমার দেখা হতো তিনি আমার সঙ্গে মুসাফাহা করিতেন। একদিন তিনি আমার নিকট লোক পাঠালেন। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। আমি ফিরে এলে জানানো হলো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট লোক পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর আমি তাহাঁর নিকট আসলাম। তখন তিনি গদির উপর ছিলেন। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তা ছিলো খুবই উত্তম ও মনোরম। {৫২১২}
দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৪৬৮৩।
{৫২১২} আহমাদ। সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক ব্যক্তি রয়েছে। এছাড়া সনদের আইয়ূব ইবনি বাশীর সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাসতূর [লুপ্ত]।
এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫৬ঃ কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো
৫২১৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সাদ [রাদি.]-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বনু কুরাইযার লোকেরা আত্মসমর্পণ করলো, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার নিকট লোক পাঠালেন। সাদ [রাদি.] একটি সাদা বর্ণের গাধায় চড়ে আসলে নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমরা তোমাদের নেতা বা তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তির আগমনে দাঁড়াও। অতঃপর সাদ [রাদি.] এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বসলেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫২১৬. শুবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
শুবাহ [রাদি.] সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তিনি [সাদ] মাসজিদের নিকটে আসলেন তখন নাবী [সাঃআঃ] আনসারদের বলিলেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার আগমনে দাঁড়াও।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫২১৭. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে শারীরিক গঠন, চাল-চলন, চরিত্র, [বর্ণনাকারী হাসানের মতে] আলাপচারিতা ও কথাবার্তায় ফাত্বিমাহ্র [রাদি.] চাইতে এতোখানি মিল আর কাউকে আমি দেখিনি। বর্ণনাকারী হাসান শারীরিক গঠন, চাল-চলন, চরিত্র বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেননি। ফাত্বিমাহ্ [রাদি.] যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসতেন, তিনি উঠে তার দিকে এগিয়ে যেতেন, তার হাত ধরে চুমু খেতেন এবং তাহাঁর আসনে তাহাকে বসাতেন। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন ফাতিমার নিকট যেতেন, তথন তিনিও তাহাঁর জন্য উঠে আসতেন, তাহাঁর হাতে ধরে চুমু খেতেন এবং তার আসনে তাঁকে বসাতেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস