ইস্তিস্কার নামাজ এ বৃষ্টি চাওয়া ও বৃষ্টি বন্ধের দোয়া
এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ বুখারী >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> বুলুগুল মারাম হাদীস হতে
বৃষ্টি দোয়া
পরিচ্চেদ ১ঃ বায়ূ প্রবাহিত হলে পড়ার দো‘আ
পরিচ্চেদ ২ঃ মেঘের গর্জন শুনলে পড়ার দো‘আ
পরিচ্চেদ ৩ঃ বৃষ্টির চাওয়ার দোয়া
পরিচ্চেদ ৪ঃ বৃষ্টি দেখলে দো‘আ
পরিচ্চেদ ৫ঃ বৃষ্টি বর্ষণের পর যিকির
পরিচ্চেদ ৬ঃ বৃষ্টির চাওয়া ও বন্দের জন্য প্রার্থনা
পরিচ্চেদ ৭ঃ বৃষ্টি বন্দের দো‘আ
পরিচ্চেদ ১ঃ বায়ূ প্রবাহিত হলে পড়ার দো‘আ
আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যখন বাতাস প্রবল আকার ধারণ করত, তখন নবী [সাঃআঃ] এভাবে দুআ করিতেন :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রাহা- ওয়া খয়রা মা- ফীহা- ওয়া খয়রা মা- উর্সিলাত বিহী, ওয়া আঊযুবিকা মিন্ শার্রিহা- ওয়া শার্রি মা- ফীহা- ওয়া শার্রি মা- উর্সিলাত বিহী”, [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে মেঘের কল্যাণ কামনা করছি ও এর মধ্যে যে কল্যাণ নিহিত আছে এবং যে কল্যাণের সাথে প্রেরিত হয়েছে তাও এবং তোমার কাছে এর অকল্যাণ ও এর মধ্যে যে অকল্যাণ নিহিত আছে এবং যে অকল্যাণ নিয়ে এসেছে তা থেকে আশ্রয় চাই।]
আয়িশা [রাদি.] বলেন, যখন আসমানে মেঘ বিদ্যুৎ ছেয়ে যেত তাহাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত এবং তিনি ভিতরে বাইরে আগে পিছনে ইতস্ততঃ চলাফেরা শুরু করে দিতেন। এরপর যখন বৃষ্টি হতো তাহাঁর এ অবস্থা দূর হয়ে যেত। আয়িশা [রাদি.] বলেনঃ এ অবস্থা বুঝতে পেরে আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিতেন, হে আয়েশাহ ! আমার আশঙ্কা এরূপ হয় নাকি যেরূপ আদ সম্প্রদায় বলেছিল। যেমন কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে, “যখন তারা এটাকে তাদের প্রান্তর অভিমুখে মেঘের আকারে এগিয়ে আসতে দেখল, তারা বলিল, এ মেঘ আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষাবে [পক্ষান্তরে তা ছিল আসমানী গজব]”- [সুরা আল আহ্ক্বা-ফ ৪৬:২৪]।
ইমাম মুসলিম আয়েশাহ [রাদি.] এর সুত্রে উপরোক্ত দোয়া বর্ণনা করেছেন। [সহীহ মুসলিম ১৯৭০]
পরিচ্চেদ ২ঃ মেঘের গর্জন শুনলে পড়ার দো‘আ
سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلاَئِكةُ مِنْ خِيفَتِهِ
সুবহা-নাল্লাযী ইউসাব্বিহুর –রা‘দু বিহামদিহি ওয়াল-মালা-ইকাতু মিন খীফাতিহি, “পবিত্র-মহান সেই সত্তা, রা‘দ ফিরিশতা যার মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে, আর ফিরিশতাগণও তা-ই করে যাঁর ভয়ে।”
মুওয়াত্তা ইমাম মালেক ২/৯৯২। মওকূফ সহীহ”।
পরিচ্চেদ ৩ঃ বৃষ্টির চাওয়ার দোয়া
আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাহাঁর দু হাত স্বীয় চেহারা বরাবর উঠিয়ে দুআ করলেনঃ
اللَّهُمَّ اسْقِنَا
আল্লাহুম্মাসক্বিনা, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দাও।
[আবু দাউদ ১১৭৫], [নাসাই ১৫১৬]
ইবনে হাজার আসক্বালানী, আনাস (রাঃআঃ) হইতে উপরোক্ত দোয়া ২ বার উল্লেখ করেজেম [বুলুগুল মারাম ৫১৭] যেমন اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا
আমর ইবনি শুআইব (রাঃআঃ) তার পিতা হইতে তার দাদার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বৃষ্টির জন্য দুআ করার সময় বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْىِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ
আল্লা-হুম্মাসক্বি ইবা-দাকা ওয়া বাহা-ইমাকা ওয়ানশুর রহমাতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মায়্যিতা, হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দাদের ও প্রাণীদেরকে পানি দান করুন, আপনার রহমাত বিস্তৃত করুন এবং আপনার মৃত শহরকে (শুস্ক ভূমিকে) জীবিত করুন।
ইমাম আবু দাউদ ও মুহিউস সুন্নাহ ও মালিক, জাবির ইবনি আবদুল্লা [রাদি.] হইতে বর্ণীত উপরোক্ত হাদীস সংকলন করেন। [আবু দাউদ ১১৭৬, হাসান হাদিস] [মিসকাত ১৫০৬], [মুয়াত্তা ৪৩৫]
আয়িশাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে লোকজন অনাবৃষ্টির অভিযোগ পেশ করলে তিনি একটি মিম্বার স্থাপনের নির্দেশ দিলেন। সেটি তাহাঁর ঈদগাহে রাখা হলো এবং তিনি লোকদেরকে ওয়াদা দিলেন যে, তিনি তাহাঁদেরকে নিয়ে একদিন সেখানে যাবেন।আয়িশাহ (রাঃআঃ) বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ সূর্য উদিত হওয়ার পর বের হয়ে মিম্বারের উপর বসে তাকবীর বলে মহা মহীয়ান আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং বলেনঃ তোমরা তোমাদের অনাবৃষ্টির অভিযোগ করেছ। অথচ মহান আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করিয়াছেন তোমরা তাকে ডাকো, তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে ওয়াদাবদ্ধ। অতঃপর তিনি বলেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ * مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন। আররহমা-নির রাহি-ম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন। সকল প্রশংসা বিশ্ব জগতের রব আল্লাহর জন্য, যিনি দয়ালু ও অতিশয় মেহেরবান, শেষ বিচারের দিনের মালিক।
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ اللَّهُمَّ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلاَغًا إِلَى حِينٍ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফ‘আলু মা-ইউরীদ, আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা-ইলাহা ইল্লা-আনতাল গনিয়্যু ওয়া নাহনুল ফুকারা-উ, আনযিল আলাইনাল গয়সা ওয়াজ‘আল মা-আনযালতা লানা-ক্যুওয়াতান ওয়া বালাগান ইলা-হীন। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করেন। হে আল্লাহ! আপনিই আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আপনি সম্পদশালী আর আমরা ফকীর ও মুখাপেক্ষী। কাজেই আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং আপনি যা কিছু বর্ষণ করবেন, তদ্দ্বারা আমাদের জন্য প্রবল শক্তি ও প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌছার ব্যবস্থা করে দিন। অতঃপর তিনি দু হাত এতোটা উঁচু করিলেন যে, তাহাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা গেলো। অতঃপর হাত উঠানো অবস্থায়ই তিনি লোকদের দিকে স্বীয় পিঠ ঘুরিয়ে দিয়ে চাদরটি উল্টিয়ে নিলেন। এরপর তিনি লোকজনের দিকে ফিরে মিম্বার হইতে নেমে দু রাকাআত নামাজ/ ইসতিসকার নামাজ আদায় করিলেন। এ সময় মহান আল্লাহ এক খণ্ড মেঘের আবির্ভাব ঘটালেন, যার মধ্যে গর্জন ও বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টিপাত হলো। এমনকি তিনি মসজিদ পর্যন্ত আসতে না আসতেই পথপঘাট পানিতে প্লাবিত হয়ে গেলো। যখন লোকজনকে বাড়ি-ঘরের দিকে দৌড়াতে দেখলেন, তখন নাবী সাঃআঃ এমনভাবে হাসলেন যে, তার সামনের পাটির দাঁত দেখা গেলো। অতঃপর তিনি বলিলেন,
أَشْهَدُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ وَأَنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ
আশহাদু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি সায়্যিন কাদির ওয়া আন্নি আব্দুল্লাহি ওয়া রসুলুহু, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চই আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতবান এবং আমি আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রসূল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি গরীব। তথাপি হাদিসটির সানাদ ভাল।
ইমাম আবু দাউদ ও মুহিউস সুন্নাহ ও ইবনে হাজার আসক্বালানী, আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীত উপরোক্ত হাদীস সংকলন করেন। [আবু দাউদ ১১৭৩, হাসান], [মিসকাত ১৫০৮], [বুলুগুল মারাম ৫১৪]
জাবির ইবনি আবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী সাঃআঃ এর কাছে কতিপয় লোক (বৃষ্টি না হওয়ায়) ক্রন্দনরত অবস্থায় এলে তিনি দুআ করলেনঃ
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا مَرِيعاً نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ
আল্লাহুম্মাস কিনা গইসান মুগিসান মারিয়ান নাফিয়ান গইরা দারিন আজিলান গয়রা আজিলিন, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাহাঁদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায় (এবং বৃষ্টি হয়)।
ইমাম আবু দাউদ ও মুহিউস সুন্নাহ, আয়িশাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণীত উপরোক্ত হাদীস সংকলন করেন। [আবু দাউদ ১১৬৯, সহিহ ], [মিসকাত ১৫০৭]
ইবনে মাজা, ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন [ইবনে মাজা ১২৭০, দুর্বল] যেমন اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا طَبَقًا مَرِيعًا غَدَقًا عَاجِلاً غَيْرَ رَائِثٍ
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব, লোকেরা অনাবৃষ্টির কবলে পতিত হলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চাচা আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্ত্বালিব-এর ওয়াসীলায় আল্লাহর নিকট বৃষ্টির জন্য দুআ করিতেন। তিনি বলিতেন,
اللّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا
আল্লাহুম্মা ইন্না কুন্না নাতাওয়াসসালু ইলাইকা বিনাবিয়্যিনা ফাতাস্কিনা ওয়া ইন্না নাতাওয়াসসালু ইলাইকা বি আম্মি বিনাবিয়্যিনা ফাসকিনা, হে আল্লাহ! তোমার নিকট এতদিন আমরা আমাদের নবীর মধ্যমতা পেশ করতাম। তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিয়ে পরিতৃপ্ত করিতে। এখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর চাচার ওয়াসীলা পেশ করছি। তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করো।
ইমাম মুহিউস সুন্নাহ, আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীত উপরোক্ত হাদীস সংকলন করেন। [মিসকাত ১৫০৯, সহীহ হাদিস]
পরিচ্চেদ ৪ঃ বৃষ্টি দেখলে দো‘আ
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বৃষ্টি দেখলে বলিতেন,
صَيِّبًا نَافِعًا
সায়্যিবান নাফি‘আন, হে আল্লাহ! মুষলধারায় কল্যাণকর বৃষ্টি দাও।
ক্বাসিম ইবনু ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উবাইদুল্লাহর সূত্রে তার বর্ণনায় আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন এবং উকায়ল ও আওযায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তা বর্ণনা করিয়াছেন।
ইমাম বুখারী, আয়েশাহ [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেন [সহীহ বুখারী ১০৩২]
ইমাম নাসাই, আয়েশাহ [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন [নাসাই ১৫২৩] اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ صَيِّبًا نَافِعًا
ইমাম নাসাই ও ইবনে হাজার আসক্বালানী, আয়েশাহ [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন [মিসকাত ১৫০০] [বুলুগুল মারাম ৫২০] اللَّهُمَّ صيبا نَافِعًا
সা’দ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বৃষ্টি চাওয়ার [ইসতিকার] সময় এই বলে দু’আ করেছিলেনঃ
اللَّهُمَّ جَلِّلْنَا سَحَابًا كَثِيفًا قَصِيفًا دَلُوقًا ضَحُوكًا، تُمْطِرُنَا مِنْهُ رَذَاذًا قِطْقِطًا سَجْلًا، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
আল্লাহুম্মা যাল্লিলনা সাহাবান কাছিফান কসিফান দালুকান দাহুকান তুমতিরুনা মিনহু রাজাজান কিতকিতান সাজলান ইয়া যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম, হে আল্লাহ ! আমাদের এমন মেঘ দাও –যা ঘন , গর্জনকারী , বিদ্যুৎ চমকান মেঘ হয় যা থেকে তুমি আমাদের উপর মুষলধারায় বর্ষণকারী ছোট ও সূক্ষ্ম-ঘন ফোঁটাবিশিষ্ট পর্যাপ্ত বৃষ্টি দিবে–হে প্রবল প্রতাপশালী মহা সন্মানিত ।
আবু`আউওয়ানাহ তাহাঁর সহিহ গ্রন্থে এ হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন । {৫৫৭}
ইবনে হাজার আসক্বালানী, সা’দ [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেন [বুলুগুল মারাম ৫২১ খুবই দুর্বল]
আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন , ইসতিকার নামাজ আদায়ের জন্য সুলাইমান [আঃ] বের হয়ে এসে দেখলেন যে, একটি পিঁপড়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পা-গুলাকে আকাশের দিকে করে এই বলে প্রার্থনা করছে , arbi
اللَّهُمَّ إِنَّا خَلْقٌ مِنْ خَلْقِكَ، لَيْسَ بِنَا غِنًى عَنْ سُقْيَاكَ
হে আল্লাহ ! আমরা তোমার সৃষ্টির মধ্যে এক প্রকার সৃষ্ট জীব –আমরা তোমার পানির পূর্ণ মুখাপেক্ষী রয়েছি ।
এটা শুনে সুলাইমান [আঃ] তাহাঁর সঙ্গিদের বলিলেন, তোমরা ফিরে চলো—অন্যর প্রার্থনার ফলে তোমরাও পানি পেয়ে গেলে । হাকিম একে সহিহ বলেছেন । {৫৫৮}
ইবনে হাজার আসক্বালানী, সা’দ [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেন [বুলুগুল মারাম ৫২২]
পরিচ্চেদ ৫ঃ বৃষ্টি বর্ষণের পর যিকির
مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ
মুতিরনা বিফাদলিল্লা-হি ওয়া রহমাতি-হি। “আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।”
বুখারী ১/২০৫, নং ৮৪৬; মুসলিম ১/৮৩, নং ৭১।
পরিচ্চেদ ৬ঃ বৃষ্টির চাওয়া ও বন্দের জন্য প্রার্থনা
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জুমুআহর দিন মিম্বরের সোজাসুজি দরজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তখন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। সে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তখন তাহাঁর উভয় হাত তুলে দুআ করিলেন,
اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا
আল্লাহুম্মাসক্বিনা, আল্লাহুম্মাসক্বিনা, আল্লাহুম্মাসক্বিনা, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন।
আনাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা, মেঘের চিহ্ন বা কিছুই দেখিতে পাইনি। অথচ সালআ (মদীনার একটি পাহাড়) পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোন ঘর-বাড়ি ছিল না। আনাস (রাদি.) বলেন, হঠাৎ সালআ পর্বতের পিছন হইতে ঢালের মত মেঘ বেরিয়ে এল এবং তা মধ্য আকাশে পৌঁছে বিস্তৃত হয়ে পড়ল। অতঃপর বর্ষণ শুরু হল। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সূর্য দেখিতে পাইনি। অতঃপর এক ব্যক্তি পরবর্তী জুমুআর দিন সে দরজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তখন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাটও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি বন্ধের জন্য দুআ করুন। আনাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর উভয় হাত তুলে দুআ করিলেন,
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’ হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে, আমাদের উপর নয়; টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।
নাস (রাদি.) বলেন, এতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা (মসজিদ হইতে বেরিয়ে) রোদে চলতে লাগলাম। শরীক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আনাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কি আগের সেই লোকটি? তিনি বলিলেন, আমি জানি না।
ইমাম বুখারী , আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেন [বুখারী ১০১৩]
ইমাম বুখারী ও মুসলিম , আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] হইতে দোয়া ২টি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন সহীহ [বুখারী ১০১৪] [সহীহ মুসলিম ১৯৬৩]
اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ وَبُطُونِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
ইমাম বুখারী , আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] হইতে এই দোয়া ২টি বর্ণনা করেন [বুখারী ১০২১]
اللَّهُمَّ اسْقِنَا
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا
ইমাম নাসাই, আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়া ২টি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন [নাসাই ১৫১৮]
اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الْآكَامِ وَالظِّرَابِ، وَبُطُونِ الْأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
ইমাম নাসাই, শরীক ইব্ন আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে দোয়া ২টি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন [নাসাই ১৫১৫]
للَّهُمَّ اسْقِنَا
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، وَلَكِنْ عَلَى الْجِبَالِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
ইমাম নাসাই, আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে দোয়া ২টি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন [নাসাই ১৫১৭]
اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا
ইমাম আবু দাউদ, জাবির ইবনি আবদুল্লা [রাঃআঃ] হইতে দোয়াটি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেন [আবু দাউদ ১১৬৯] اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا مَرِيعاً نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ
পরিচ্চেদ ৭ঃ বৃষ্টি বন্দের দো‘আ
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলিল, গৃহপালিত পশুগুলো মরে যাচ্ছে এবং রাস্তাগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি দুআ করিলেন। ফলে সে জুমুআ হইতে পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত আমাদের উপর বৃষ্টি হইতে থাকল। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার এসে বলিল, (অতি বৃষ্টির ফলে) ঘরবাড়ী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, রাস্তা অচল হয়ে যাচ্ছে এবং পশুগুলোও মরে যাচ্ছে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে বললেনঃ
اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়া বুতুনিল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’ হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।
তখন মদীনা হইতে মেঘ এমনভাবে কেটে গেল, যেমন কাপড় ছিঁড়ে ফাঁক হয়ে যায়।
ইমাম বুখারী , আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী ১০১৬]
ইমাম বুখারী , আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে এই দোয়াটি বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী ১০১৭] اللَّهُمَّ عَلَى رُءُوسِ الْجِبَالِ وَالآكَامِ وَبُطُونِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
ইমাম নাসাই, আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে এই দোয়াটি বর্ণনা করেন। [নাসাই ১৫০৪] اللَّهُمَّ عَلَى رُءُوسِ الْجِبَالِ، وَالْآكَامِ، وَبُطُونِ الْأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
ইমাম মুয়াত্তা , আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে এই দোয়াটি বর্ণনা করেন। [মুয়াত্তা ৪৩৬] اللهُمَّ ظُهُورَ الْجِبَالِ وَالْآكَامِ وَبُطُونَ الْأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتَ الشَّجَرِ
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জুমুআর দিন খুতবা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন। তিনি যেন আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তিনি তখন দুআ করিলেন। ফলে এত অধিক বৃষ্টি হল যে, আমাদের নিজ নিজ ঘরে পৌঁছতে পারছিলাম না। এমনকি পরের জুমুআ পর্যন্ত বৃষ্টি হইতে থাকল। আনাস (রাদি.) বলেন, তখন সে লোকটি অথবা অন্য একটি লোক দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি দুআ করুন, আল্লাহ যেন আমাদের উপর হইতে বৃষ্টি সরিয়ে দেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا
আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা, হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়।
আনাস (রাদি.) বলেন, আমি দেখিতে পেলাম, মেঘ ডানে ও বামে পৃথক হয়ে বৃষ্টি হইতে লাগল, মদীনাবাসীর উপর বর্ষণ হচ্ছিল না।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম, আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী ১০১৫, ১০১৬, ১০৩৩] [সহীহ মুসলিম ১৯৬৪, ১৫২৭, ১৫২৮]
ইমাম বুখারী , ইবনু মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী ১০২০]
ইমাম বুখারী , আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে এই দোয়াটি বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী ১০১৯] اللَّهُمَّ عَلَى ظُهُورِ الْجِبَالِ وَالآكَامِ وَبُطُونِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
ইমাম আবু দাউদ ও , আনাস [রাঃআঃ] হইতে এই দোয়াটি বর্ণনা করেন। [আবু দাউদ ১১৭৪] حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا
Leave a Reply