ফরজ নামাজের পর জিকির Zikr After Salah
সংকলিত হাদীসঃ ফাজায়েলে জিকির
অধ্যায়ঃ ফরজ নামাজের পর জিকির
সংকলকের নামঃ দাঈ খোন্দকার মশিউর রহমান ফকির
প্রকাশনায়ঃ www.hadisquran.com
যে সব হাদীস হতে সঙ্কলিতঃ সহীহ বুখারী >> আবু দাউদ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> রিয়াদুস সালেহীন >> বুলুগুল মারাম
সুচিপত্র
পরিচ্ছেদ ১ঃ উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দেওয়া
পরিচ্ছেদ ২ঃ ইস্তিগফার পাঠ করা
পরিচ্ছেদ ৩ঃ আল্লাহকে শান্তিদাতা ও বারকাতময় হিসাবে ঘোষণা
পরিচ্ছেদ ৪ঃ ইস্তিগফার পাঠ ও আল্লাহকে শান্তিদাতা ও বারকাতময় হিসাবে ঘোষণা
পরিচ্ছেদ ৫ঃ তাহলীল পাঠ
পরিচ্ছেদ ৬ঃ তাসবিহ ও তাহলীল পাঠ
পরিচ্ছেদ ৭ঃ তাসবিহ, তাহমীদ এবং তাকবীর পাঠ
পরিচ্ছেদ ৮ঃ তাসবীহ তাহমীদ তাকবীর ও তাহলীল পাঠ
পরিচ্ছেদ ৯ঃ তাসবীহ তাহমীদ তাকবীর এবং প্রশংসা রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান
পরিচ্ছেদ ১০ঃ প্রশংসা ও রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর আর তিনিই সর্বশক্তিমান
পরিচ্ছেদ ১১ঃ আল্লাহ ছাড়া কেউ প্রতিরোধ, রক্ষা এবং প্রদান করতে পারে না
পরিচ্ছেদ ১২ঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু……..কারিহাল কাফিরুন
পরিচ্ছেদ ১৩ঃ সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস
পরিচ্ছেদ ১৪ঃ আয়াতুল কুর্সী
পরিচ্ছেদ ১৫ঃ আল্লাহকে স্মরণ, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ইবাদাতের জন্য সাহায্য কামনা
পরিচ্ছেদ ১৬ঃ গোপন ও প্রকাশ্য পাপ হতে ক্ষমা চাওয়া
পরিচ্ছেদ ১৭ঃ কাপুরুষতা কৃপণতা অলসতা ফিতনা ও কবরের শাস্তি হতে আশ্রয় প্রাথনা।
পরিচ্ছেদ ১৮ঃ দোষ হইতে মুক্ত থাকা এবং শত্রু ও বিদ্রোহী হতে আশ্রয় প্রাথনা।
পরিচ্ছেদ ১৯ঃ আমার এবং পরিবার পরিজনের জন্য ফরিয়াদ
পরিচ্ছেদ ১ঃ উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দেওয়া
আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা তাকবীর
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
পাঠ দ্বারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ শেষ হওয়া জানতে পারতাম। অর্থাৎ – নামাজ শেষ হলেই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উচ্চৈঃস্বরে আল্ল-হ আকবর বলিতেন। তখন আমরা বুঝতে পারতাম।
[সহীহ মুসলিম ১২০৩, ১২০৪, ১২০৫], [সুনানে নাসাঈ ১৩৩৫, সহীহ] মিশকাত ৯৫৯, সহীহ
পরিচ্ছেদ ২ঃ ইস্তিগফার পাঠ করা
সাওবান (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) নামাজ শেষে তিনবার
أستغفر الله
ইস্তিগফার
পাঠ করতেন। অতঃপর সাওবান (রাঃআঃ)আল্লাহুম্মা হইতে …..আয়েশার (রাঃআঃ) হাদিসের ভাবার্থ বর্ণনা করেন।
[আবু দাউদ ১৫১৩]
পরিচ্ছেদ ৩ঃ আল্লাহকে শান্তিদাতা ও বারকাতময় হিসাবে ঘোষণা
আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) নামাজের সালাম ফিরানোর পর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
“আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম”। অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা এবং তোমার নিকট হইতেই শান্তি আসে। হে পরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী! তুমি প্রাচুর্যময় ও বারকাতময়”
ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সুফয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)আমর ইবনি মুররাহ হইতে আঠারটি হাদিস শুনেছেন, এ হাদিস সেগুলোরই একটি।
[আবু দাউদ ১৫১২, সহিহ হাদিস], [মিশকাত ৯৫৯, সহীহ ]
পরিচ্ছেদ ৪ঃ ইস্তিগফার পাঠ ও আল্লাহকে শান্তিদাতা ও বারকাতময় হিসাবে ঘোষণা
সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ হইতে ফুরসত হইতে চাইতেন তখন
أستغفر الله
তিনবার মার্জনা/ইস্তিগফার
প্রার্থনা করিতেন; তারপর বলিতেন,
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতাস্ সালামু ওয়া মিনকাস সালামু তাবারক্তা জালজালালি ওয়াল ইকরাম” অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা এবং তোমার নিকট হইতেই শান্তি আসে। হে পরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী! তুমি প্রাচুর্যময় ও বারকাতময়”।
السَّلاَمُ | أَنْتَ | اللَّهُمَّ |
শান্তিদাতা | তুমিই | হে আল্লাহ |
تَبَارَكْتَ | السَّلاَمُ | وَمِنْكَ |
বারকাতময় | শান্তি | এবং তোমার নিকট হইতেই |
وَالإِكْرَامِ | ذَا الْجَلاَلِ | يَا |
ও সম্মানের অধিকারী | পরাক্রম | হে |
[তিরমিজি-৩০০, সহিহ], [মাহমূদ ইবন খালিদ এর বর্ণনায় এই হাদিসটি নাসাই-১৩৩৭, সহীহ হাদিস] [আয়িশাহ্ [রাদি.] এর বর্ণনায় একই উল্লেখ করেছন, তবে ইয়া সব্দটি উল্লেখ করেন নি। [তিরমিজি ২৯৮, সহিহ] [মিশকাত ৯৬১, সহীহ], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪২৩], [বুলুগুল মারাম ৩২৩]
পরিচ্ছেদ ৫ঃ তাহলীল পাঠ
আবুয-যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,আব্দুল্লাহ ইবনিয যুবাইর (রাঃআঃ) প্রত্যেক ফার্য নামাজের পর
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
পাঠ করতেন। অতঃপর উপরোক্ত দুআর অনুরূপ। আরো বৃদ্ধি করেনঃ
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ লা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু লাহুন নিমাতু..।”
অতঃপর অবশিষ্ট হাদিস বর্ণনা করেন।
[আবু দাউদ ১৫০৭, সহিহ হাদিস]
পরিচ্ছেদ ৬ঃ তাসবিহ ও তাহলীল পাঠ
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের নামাজের পর একশত বার
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
এবং একশত বার
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হইবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনাসম হয়।
[সুনানে নাসাঈ ১৩৫৪, সহীহ]
পরিচ্ছেদ ৭ঃ তাসবিহ, তাহমীদ এবং তাকবীর পাঠ
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, দরিদ্রলোকেরা নাবী (সাঃআঃ)–এর নিকট এসে বলিলেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চমর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তাঁরা আমাদের মত সালাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হাজ্জ, উমরাহ, জিহাদ ও সদাক্বাহ করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করিবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র , তাহমীদ
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর এবং তাকবীর
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
পাঠ করিবে। (এ নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলিল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়ব। তেত্রিশ বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। অতঃপর আমি তাহাঁর নিকট ফিরে গেলাম। তিনি বলিলেন,
سُبحانَ اللهِ وَالحَمدُ للّهِ وَ اللهُ أَكبَر
বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশবার করে হয়ে যায়।
[সহীহ বুখারী ৮৪৩], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪২৬]
আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে যে, কোন মুসলমান ঐ দুটি অভ্যাসে অভ্যস্ত হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। ঐ দুটি অভ্যাস সহজ অথচ তার আমলকারী হইবে খুবই কম। তিনি বলে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তোমাদের কেউ যদি প্রত্যেক নামাজের পর দশবার তাসবীহ
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
দশবার তাহমীদ
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
এবং দশবার তাকবীর
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
বলে, তাহলে একশত পঞ্চাশ বার মুখে বলা হয় আর তা পাল্লায় হইবে এক হাজার পাঁচশত বার আর আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে দেখলাম যে, তিনি তা অঙ্গুলি দ্বারা গণনা করছেন। আর যখন তোমাদের কেউ তার বিছানায় অথবা শয়নের স্থানে আসবে, তখন সে যেন সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আর আল্লাহু আকবর ৩৪ বার বলে। এ তো মুখে বলা হইবে একশত বার, আর পাল্লায় হইবে এক হাজার বার। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে প্রত্যেক দিন রাতে দুই হাজার পাঁচশত গুনাহ করে? কেউ বলিল, ইয়া রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ]! আমরা কেন তার অভ্যাস গড়ে তুলব না? তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, শয়তান তোমাদের আরো কাছে এসে তার নামাজরত অবস্থায় বলিতে থাকে, অমুক কাজ স্মরণ কর, অমুক কাজ স্মরণ কর আর তার নিদ্রার সময় তার কাছে এসে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
[সুনানে নাসাই ১৩৪৮ সহীহ]
কা’ব ইবনি উজরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, এমন কতগুলো তাসবীহ রয়েছে যার পাঠকারী তার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হইবে না। প্রত্যেক নামাজের পর সে
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র , (৩৩ বার)
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর এবং তাকবীর
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান (৩৪ বার) বলবে।
[সুনানে নাসাই ১৩৪৯ সহীহ], [সুনান আত তিরমিজি ৩৪১২, সহীহ], [মিশকাত ৯৬৬], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪২৮]
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট হাযির হয়ে আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নিআমতের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সলাত আদায় করি তারাও আমাদের মতই সলাত আদায় করে, আমাদের মতো সওম পালন করে। তবে যারা দান-সদক্বাহ করে। আমরা তা করিতে পারি না। তারা গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করিতে পারি না। অতঃপর রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদগামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের চেয়ে বেশী উত্তম হইতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো আমাল করিবে? গরীব লোকেরা বললেন, বলুহ হে আল্লাহর রসূল! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তোমরা প্রতি সলাতের পর
سُبْحَانَ اللهِ
সুবহা-নাল্লাহ,
اللَّهُ أَكْبَرُ
আল্ল-হু আকবার,
الْحَمْدُ لِلَّهِ
আলহামদু লিল্লা-হ তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবু সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের আমালের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ আমার করছেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, এটা আল্লাহ তাআলার কুরুনা, যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। [বোখারী, মুসলিম; আবু সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বোখারীর অন্য বর্ণনায় তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সলাতের পর দশবার করে সুবহা-নাল্ল-হ, আলাহমাদু লিল্লা-হ, আল্ল-হু আকবার পাঠ করার কথা পাওয়া যায়। {১}
[মিশকাত ৯৬৫, সহীহ হাদিস]
পরিচ্ছেদ ৮ঃ তাসবীহ তাহমীদ তাকবীর ও তাহলীল পাঠ
যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে, প্রতি সলাতের শেষে সুব্হা-নাল্ল-হ তেত্রিশবার, আলহাম্দু লিল্লা-হ তেত্রিশবার ও আল্ল-হু আকবার চৌত্রিশবার পাঠ করিতে। একজন আনসারী স্বপ্নে দেখিতে পেল যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি তোমাদেরকে প্রতি সলাত শেষে এতো এতো বার তাসবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন? আনসারী স্বপ্নের মধ্যে বলিল, হ্যাঁ। মালাক [ফেরেশ্তা] বললেন, এ তিনটি কালিমাকে পঁচিশবার করে পাঠ করার জন্য নির্ধারিত করিবে। এবং এর সাথে লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ পাঠ করে নিবে। সকালে ঐ আনসারী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তার স্বপ্ন সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করিলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, যা বলা হয়েছে তাই করো।
মিশকাত ৯৭৩, সহীহ
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, কিছু দরিদ্র লোক [একদা] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে সে বলিল, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! ধনীরাও নামাজ আদায় করে থাকে যেমনিভাবে আমরা আদায় করে থাকি আর তারাও সিয়াম পালন করে থাকে যেমনিভাবে আমরা পালন করে থাকি, কিন্তু তাহাদের জন্য রয়েছে সম্পদ, যা থেকে তারা দান-সদকা করে থাকে এবং গোলাম [কিনে] আযাদ করে থাকে। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যখন তোমরা নামাজ আদায় করিবে, তখন বলবে, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবর ৩৩ বার এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ১০ বার। কেননা, এর দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমপর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারবে এবং তোমাদের পরবর্তী থেকে অগ্রগামী হয়ে যেতে পারবে।
[সুনানে নাসাই ১৩৫৩, তাহকিকঃ অন্যান্য]
পরিচ্ছেদ ৯ঃ তাসবীহ তাহমীদ তাকবীর এবং প্রশংসা রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান
আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আবু যার (রাঃআঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধনীরা তো সওয়াবে অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেমন নামাজ আদায় করি, তেমন তারাও নামাজ আদায় করে, আমরা যেমন সওম পালন করি, তারাও তেমন সওম পালন করে। কিন্তু তারা তাহাঁদের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ দান-খয়রাত করে। (দান খয়রাতের জন্য) আমাদের তো পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আবু যার! আমি কি তোমাকে এমন দুটি বাক্য শিক্ষা দিবো না যা পাঠ করলে তুমি তোমার চেয়ে অগ্রগামীদের সমপর্যায় হইতে পারবে এবং তোমার পিছনের লোকেরাও তোমাকে অতিক্রম করতে পারবে না? তবে তার কথা ভিন্ন যে তোমার মতো আমল করে। তিনি বলিলেন, হাঁ, নিশ্চয়। তিনি বললেনঃ তুমি প্রত্যেক নামাজের পর তেত্রিশবার
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
তেত্রিশবার
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
তেত্রিশবার
سُبْحَانَ اللَّهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহ , অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
এবং শেষে একবার
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়াআলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর” অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান
إِلاَّ | إِلَهَ | لاَ |
ছাড়া | ইলাহ | নেই |
لاَ | وَحْدَهُ | اللَّهُ |
নেই | সমস্ত প্রশংসা | আল্লাহ |
لَهُ | لَهُ | شَرِيكَ |
তাঁরই | তাঁর | শরীক |
الْحَمْدُ | وَلَهُ | الْمُلْكُ |
প্রশংসা | তাঁর | রাজত্ব |
كُلِّ | عَلَى | وَهُوَ |
সকল | ওপর | আর তিনি |
قَدِيرٌ | شَىْءٍ | |
ক্ষমতাবান | কিছুর |
বলবে। কেউ এ দুআ পড়লে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাণ হলেও তা ক্ষমা হইবে।
[ফাজায়েলে আমল, কালেমায়ে ছুওমের ৭,৮ নং হাদিস], [ আবু দাউদ-১৫০৪], [মিশকাত ৯৬৭], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪২৭], [বুলুগুল মারাম ৩২৪]
পরিচ্ছেদ ১০ঃ প্রশংসা ও রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর আর তিনিই সর্বশক্তিমান
আবদুর রহমান ইবনি গানম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজ্র ও মাগরিবের সলাতের শেষে জায়গা হইতে উঠার ও পা ঘুরানোর আগে এ দুআ দশবার পড়েঃ
لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ يُحْيِىْ وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহ্ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহ্য়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর” [অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, তাহাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাহাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাহাঁরই, তাহাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনিই সর্বশক্তিমান]। তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়। আর এ দুআ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শয়তান থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্ক ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। আমালের দিক দিয়ে এ লোক হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যাতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম আমাল করিবে।
[মিশকাত ৯৭৫, হাসান লিগাইরিহি]
পরিচ্ছেদ ১১ঃ আল্লাহ ছাড়া কেউ প্রতিরোধ, রক্ষা এবং প্রদান করতে পারে না
মুগীরাহ ইবনি শুবাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজের সালাম ফিরানোর পর কোন দুআ পাঠ করতেন তা জানার জন্য মুআবিয়াহ (রাঃআঃ) মুগীরাহ ইবনি শুবাহর কাছে পত্র লিখলেন। অতঃপর মুগীরাহ (রাঃআঃ) মুআবিয়াহর (রাঃআঃ) নিকট পত্রের জবাব লিখে পাঠালেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিতেন
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়াআলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আত্বায়তা ওয়ালা মুত্বিআ লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দু মিনকাল জাদ্দ।” অর্থ : আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই জন্য, প্রশংসাও তাঁরই জন্য এবং তিনিই সর্বশক্তিমান।হে আল্লাহ! তুমি যা প্রদানের ইচ্ছা কর, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না এবং তুমি যাতে বাধা দাও, তা কেউ প্রদান করতে পারে না এবং কোনো সম্পদশালীর সম্পদই তোমার নিকট তাকে রক্ষা করতে পারে না
[আবু দাউদ ১৫০৫, সহিহ হাদিস], [মিশকাত ৯৬২, সহীহ], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪২৪ সহীহ], [বুলুগুল মারাম ৩২১]
পরিচ্ছেদ ১২ঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু……..কারিহাল কাফিরুন
আবুয-যুবাইর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমিআবদুল্লা ইবনিয যুবাইর (রাঃআঃ)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণে বলিতে শুনিয়াছি, নাবী (সাঃআঃ) ফরয নামাজ শেষে বলিতেনঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ أَهْلُ النِّعْمَةِ وَالْفَضْلِ وَالثَّنَاءِ الْحَسَنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়াআলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ দ্বীন ওয়ালাও কারিহাল কফিরুন। আহলুন নিআমি ওয়াল ফাদলি, ওয়াস সানায়িল হুসনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুল দ্বীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরুন।” অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তাহাঁর কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সকল প্রশংসা তাহাঁর জন্য। তিনিই প্রান দান করেন এবং মৃত্যু দেন। সকল কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”,
إِلاَّ | إِلَهَ | لاَ |
لَهُ | مُخْلِصِينَ | اللَّهُ |
كَرِهَ | وَلَوْ | الدِّينَ |
النِّعْمَةِ | أَهْلُ | الْكَافِرُونَ |
الْحَسَنِ | وَالثَّنَاءِ | وَالْفَضْلِ |
إِلاَّ | إِلَهَ | لاَ |
لَهُ | مُخْلِصِينَ | اللَّهُ |
كَرِهَ | وَلَوْ | الدِّينَ |
الْكَافِرُونَ | ||
[আবু দাউদ-১৫০৬, সহিহ], [মিশকাত ৯৬৩, সহীহ], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪২৫ সহীহ]
পরিচ্ছেদ ১৩ঃ সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস
উক্ববাহ ইবনিআমির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে প্রত্যেক নামাজের পর কুল আঊযু বি-রব্বিল ফালাক্ব ও কুল আঊযু বি-রব্বিন্ নাস সূরাহ দুটি পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
[আবু দাউদ ১৫২৩, সহিহ হাদিস] [মিশকাত ৯৬৯, সহীহ]
পরিচ্ছেদ ১৪ঃ আয়াতুল কুর্সী
আবূ উমামাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে কেউ আয়াতুল কুর্সী প্রত্যেক ফরয নামাজের পরে পাঠ করলে তার মৃত্যুই তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য বাধা হয়ে আছে। নাসায়ি হাদিস; ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {৩৬৫} তাবারানী বৃদ্ধি করেছেনঃ এবং “কুল্হু আল্লাহু আহাদ”।
اَللّٰهُ لَآ اِلٰهَ اِلَّا ھُوَ ۚ اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ ڬ لَا تَاْخُذُهٗ سِـنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ ۭ لَهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ ۭ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗٓ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ۭ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَھُمْ ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖٓ اِلَّا بِمَا شَاۗءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ۚ وَلَا يَـــــُٔـــوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ۚ وَھُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ ٢٥٥ ﴾.
(আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূমু লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহূ মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী। ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযীম)। “আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দু’টির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।”
[বুলুগুল মারাম, ৩২৬, সহিহ হাদিস] [আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীত, রিয়াদুস সালেহীন ৯৭৪, জাল হাদিস]
পরিচ্ছেদ ১৫ঃ আল্লাহকে স্মরণ, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ইবাদাতের জন্য সাহায্য কামনা
মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার হাত ধরে বলিলেন, হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বলিলেন, হে মুআয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর এ দুআটি কখনো পরিহার করিবে না ঃ
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
“আল্লাহুম্মা আঈন্নীআলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনিইবাদাতিকা” (অর্থ ঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)।
অতঃপর মুআয (রাঃআঃ) আস-সুনাবিহী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে এবং আস-সুনাবিহীআবদুর রহমানকে এরূপ দুআ করার ওয়াসিয়াত করেন।
[আবু দাউদ ১৫২২, সহিহ হাদিস], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪৩০], [বুলুগুল মারাম ৩২৪]
পরিচ্ছেদ ১৬ঃ গোপন ও প্রকাশ্য পাপ হতে ক্ষমা চাওয়া
আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নামাজের সালাম ফিরানোর পর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
আল্লাহুম্মাগ ফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্খারতু ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা আলানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আলামু বিহি মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুয়াখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন যা কিছু আমি পূর্বে ও পরে করেছি, গোপনে, প্রকাশ্যে ও সীমালঙ্ঘন করেছি, এবং যা আমার চেয়ে আপনি অধিক জ্ঞাত। আপনিই আদি ও অন্ত। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
[আবু দাউদ ১৫০৯, সহিহ হাদিস]
পরিচ্ছেদ ১৭ঃ কাপুরুষতা কৃপণতা অলসতা ফিতনা ও কবরের শাস্তি হতে আশ্রয় প্রাথনা।
সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তার সন্তানদেরকে দুআর এ কালিমাগুলো শিক্ষা দিতেন ও বলিতেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাতের পর এ কালিমাগুলো দ্বারা আল্লাহর নিকটে আশ্রয় চাইতেন:
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْقَبْرِ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আউযুবিকা মিন আরযালিল উমুরি, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া-ওয়া আযা-বিল ক্ববরি” [অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। কৃপণতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। অলসতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফিতনাহ ও ক্ববরের শাস্তি থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই]।
[মিশকাত ৯৬৪, সহীহ], [বোখারী ২৮২২c, ৬৩৭০c], [রিয়াদুস সালেহীন ১৪২৯], [বুলুগুল মারাম ৩২২]
পরিচ্ছেদ ১৮ঃ দোষ হইতে মুক্ত থাকা এবং শত্রু ও বিদ্রোহী হতে আশ্রয় প্রাথনা।
ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দুআ করতেন ঃ “
رَبِّ أَعِنِّي وَلاَ تُعِنْ عَلَىَّ وَانْصُرْنِي وَلاَ تَنْصُرْ عَلَىَّ وَامْكُرْ لِي وَلاَ تَمْكُرْ عَلَىَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرْ هُدَاىَ إِلَىَّ وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَىَّ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي لَكَ شَاكِرًا لَكَ ذَاكِرًا لَكَ رَاهِبًا لَكَ مِطْوَاعًا إِلَيْكَ مُخْبِتًا أَوْ مُنِيبًا رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِي وَاغْسِلْ حَوْبَتِي وَأَجِبْ دَعْوَتِي وَثَبِّتْ حُجَّتِي وَاهْدِ قَلْبِي وَسَدِّدْ لِسَانِي وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ قَلْبِي
হে আমার রব্ব! আমাকে সাহায্য করুন, আমার বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন না। শত্রুর বিরুদ্ধে আমাকে প্রতারিত করুন, কিন্তু তাকে আমার উপর প্রতারক বানাবেন না। আমাকে কল্যাণের পথ দেখান, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার পথকে আমার জন্য সহজ করুন, যে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করুন, হে আল্লাহ! আমাকে আপনার কৃতজ্ঞ ও স্মরণকারী, ভীত ও আনুগত্যকারী, আপনার প্রতি আস্থাশীল ও আপনার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বানিয়ে দিন। হে রব্ব! আমার তাওবাহ কবুল করুন, আমার সমস্ত গুনাহ ধুয়ে পরিস্কার করুন, আমার ডাকে সাড়া দিন, আমার ঈমান ও আমলের প্রমাণে আমাকে ক্ববরে ফেরেশতাহাঁদের প্রশ্নে স্থির রাখুন, আমার অন্তরকে সরল পথের অনুসারী করুন, আমার জিহ্বাকে সদা সত্য বলার তাওফীক দিন এবং আমার অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ ও যাবতীয় দোষ হইতে মুক্ত রাখুন।”
[আবু দাউদ ১৫১০, সহিহ হাদিস]
পরিচ্ছেদ ১৯ঃ আমার এবং পরিবার পরিজনের জন্য ফরিয়াদ
যায়িদ ইবনি আরক্বাম (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি। বর্ণনাকারী সুলায়মানের বর্ণনায় রহিয়াছে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) প্রত্যেক ফার্য নামাজের পর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَىْءٍ اجْعَلْنِي مُخْلِصًا لَكَ وَأَهْلِي فِي كُلِّ سَاعَةٍ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ اسْمَعْ وَاسْتَجِبِ اللَّهُ أَكْبَرُ الأَكْبَرُ اللَّهُمَّ نُورَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ
আল্লাহুম্মা রব্বানা কুল্লি সাইয়িন আজালনি মুখলিসান লাকা ওয়া আহলি ফি কুল্লি সায়াতিন ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাতি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম আসমায়ু ওয়া আসতাখিবিল্লাহু আকবারুল আকবারুল্লাহুম্মা নুরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, “ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এবং প্রত্যেক বস্তুর রব। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ আপনার বান্দাহ ও রসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এবং প্রত্যেক বস্তুর রব্ব! আমাকে এবং আমার পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতি মূহুর্তে আপনার অকৃত্রিমইবাদতকারী বানিয়ে দিন। হে মহান পরাক্রমশালী ও সম্মানের অধিকারী! আমার ফরিয়াদ শুনুন, আমার দুআ কবুল করুন। আল্লাহ মহান, আপনি সবচেয়ে মহান। হে আল্লাহ! আসমান ও যমীনের নূর।
সুলায়মান ইবনি দাউদ বলেছেন, আপনিই আকাশ ও যমীনের রব্ব! হে আল্লাহ! আপনি মহান, অতি মহান। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি মহান! অতি মহান।
[আবু দাউদ ১৫০৮, দুর্বল হাদিস]
Leave a Reply