অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ বুখারী >> আদাবুল মুফরাদ >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> রিয়াদুস সালেহীন হাদীস শরীফ হতে
পর্বঃ ৫, অধ্যায়ঃ ১
- অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
অধিকাংশ লেখকবৃন্দ এর মধ্যে মুহাদ্দিসগণ ও ফুকাহারা জানাযাহ্ পর্বকে সলাতের পরে এনেছেন। কেননা মৃত ব্যক্তির সাথে গোসল, কাফন ইত্যাদি ক্রম করা হয় বিশেষ করে তার ওপর নামাজ [সালাত/নামায/নামাজ] আদায় করা হয় যেখানে তার জন্য ক্ববরের আযাব হইতে মুক্তি পাওয়ার উপকারিতা বিদ্যমান থাকে। কারো মতে মানুষের দু অবস্থা একটি জীবিত অপরটি মৃত অবস্থা আর প্রত্যেকটির সাথে সম্পর্ক থাকে ইবাদাত ও মুআমিলাতের হুকুম-আহকাম। আর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হচ্ছে নামাজ। সুতরাং যখন জীবিতকালীন সম্পর্কিত হুকুম-আহকাম হইতে মুক্ত হল তখন মৃত্যুকালীন সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচনা করা হল তন্মধ্যে নামাজ ও অন্যান্য বিষয়।
কারো মতে, জানাযার নামাজ শুরু হয়েছে হিজরীর প্রথম বৎসরে, সুতরাং যারা মাক্কায় মারা গেছে তাদের ওপর নামাজ আদায় হয়নি।
১৫২৩. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্ষুধার্তকে খাবার দিও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখিতে যেও, বন্দী ব্যক্তিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করো। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৩৭৩, ৫৬৪৯, আবু দাউদ ৩১০৫, আহমাদ ১৯৫১, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ৮৬১৮, ইবনি হিব্বান ৩৩২৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৭৫। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫২৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক মুসলিমের ওপর আর এক মুসলিমের পাঁচটি হাক্ব বর্তায়। [১] সালামের জবাব দেয়া, [২] রোগ হলে দেখিতে যাওয়া, [৩] জানাযায় শামিল হওয়া, [৪] দাওয়াত গ্রহণ করা ও [৫] হাঁচির জবাব দেয়া। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১২৪০, মুসলিম ২১৬২, আহমাদ ১০৯৬৬, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৯৯৭৮, আমালুল ইওয়ামে ওয়াল লায়লাহ্ ২২১, ইবনি হিব্বান ২৪১, সহীহ আত তারগীব ২১৫৬, সহীহ আল জামি ৩১৫০। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫২৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিমের ওপর মুসলিমের ছয়টি হাক্ব [অধিকার] আছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ অধিকারগুলো কি কি? জবাবে তিনি বলেন, [১] কোন মুসলিমের সাথে দেখা হলে, সালাম দেবে, [২] তোমাকে কেউ দাওয়াত দিলে, তা কবূল করিবে, [৩] তোমার কাছে কেউ কল্যাণ কামনা করলে তাকে কল্যাণের পরামর্শ দেবে, [৪] হাঁচি দিলে তার জবাব ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলবে, [৫] কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখিতে যাবে, [৬] কারো মৃত্যু ঘটলে তার জানাযায় শারীক হবে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২১৬২, আহমাদ ৮৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯০৯, শুআবুল ঈমান ৮৭৩৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪০৫, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৯৯১, সহীহ আত তারগীব ৩৪৯৪, সহীহ আল জামি ৩১৫১। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫২৬. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে সাতটি আদেশ ও সাতটি কাজ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করিয়াছেন- [১] রোগীর খোঁজ-খবর নিতে, [২] জানাযায় শারীক হইতে, [৩] হাঁচির আলহামদুলিল্লা-হর জবাবে ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলিতে, [৪] সালামের জবাব দিতে, [৫] দাওয়াত দিলে তা কবূল করিতে, [৬] কসম করলে তা পূর্ণ করিতে, [৭] মাযলূমের সাহায্য করিতে। এভাবে তিনি আমাদেরকে [১] সোনার আংটি পরতে, [২] রেশমের পোশাক, [৩] ইস্তিবরাক {মোটা রেশম], [৪] দীবাজ {পাতলা রেশম] পরতে, [৫] লাল নরম গদীতে বসতে, [৬] ক্বাস্সী ও [৭] রূপার পাত্র ব্যবহার করিতে। কোন কোন বর্ণনায়, রূপার পাত্রে পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কেননা যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রূপার পাত্রে পান করিবে আখিরাতে সে তাতে পান করিতে পারবে না। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৭৫, ৫৬৩৫, ৫৬৫০, ৫৮৪৯, ৬২২২, মুসলিম ২০৬৬, আত তিরযিমী ২৮০৯, নাসায়ী ১৯৩৯, ৫৩০৯, আহমাদ ১৮৫০৪, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৯২৪, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ২০৭৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৬। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫২৭. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার অসুস্থ কোন মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য চলতে থাকে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করিতে থাকে ৷ {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৫৬৮, আত তিরমিজি ৯৬৭, আহমাদ ২২৪৪৪, ইবনি হিব্বান ২৯৫৭, সহীহ আত তারগীব ৩৪৭৫, সহীহ আল জামি ১৯৪৮। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫২৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে বনী আদাম! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখিতে আসোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে দেখিতে যাব? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখিতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখিতে যেতে, আমাকে অবশ্যই তার কাছে পেতে। হে আদাম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে খাবার দিতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল? তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, সে সময় যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে? হে বনী আদাম! আমি তোমার কাছে পিপাসা নিবারণের জন্য পানি চেয়েছিলাম। তুমি পানি দিয়ে তখন আমার পিপাসা নিবারণ করোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি কিভাবে তোমার পিপাসা নিবারণ করতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তখন তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি সে সময় তাকে পানি দিতে, তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৫৬৯, ইবনি হিব্বান ৯৪৪, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫১৭, সহীহ আত তারগীব ৯৫২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১৯১৬। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫২৯. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] একবার একজন অসুস্থ বেদুইনকে দেখিতে গেলেন। আর কোনো রোগীকে দেখিতে গেলে তিনি বলিতেন, ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ভয় নেই, তুমি ভালো হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে। তাহাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলিল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নবী [সাঃআঃ] বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, ইবনি হিব্বান ২৯৫৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৭১৮। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের কারো অসুখ হলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ডান হাত রুগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলিতেন,
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءٌ لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আযহিবিল বাসা রব্বা নাসি ওআসফি আন্তাস সাফি লা সিফায়া ইল্লা সিফায়ুকা সিফায়ু লা ইউ গাদিরু সাক্কামা
হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দিন৷ তাকে নিরাময় করে দিন৷ নিরাময় করার মালিক আপনিই৷ আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই৷ এমন নিরাময় যা কোন রোগকে বাকী রাখে না৷ {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৭৫০, মুসলিম ২১৯১, ইবনি মাজাহ ৩৫২০, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৪৯০, আহমাদ ২৪৭৭৬, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ৭৪৬৬, ইবনি হিব্বান ২৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৯০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১৩০৩। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন মানুষ তার দেহের কোন অংশে ব্যথা পেলে অথবা কোথাও ফোড়া কিংবা বাঘী উঠলে বা আহত হলে আল্লাহর নবী [সাঃআঃ] ঐ স্থানে তাহাঁর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলিতেন,
بِسْمِ اللّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا لِيُشْفى سَقِيْمُنَا بِإِذْنِ رَبِّنَا
“বিসমিল্লা-হি তুরবাতু আরযিনা- বিরীক্বাতি বাযিনা- লিইউশ্ফা- সাক্বীমুনা- বিইযনি রব্বিনা-” [অর্থাৎ আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারো মুখের থুথুর সাথে মিশে আমাদের রোগীকে ভালো করিবে, আমাদের মহান রবের নির্দেশে] ৷ {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৭৪৫, মুসলিম ২১৯৪, ইবনি মাজাহ ৩৫২১, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৩৫৬৯, আবু দাউদ ৩৮৯৫, ইবনি হিব্বান ২৯৭৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮২৬৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ অসুস্থ হলে [مُعَوِّذَاتِ] মুআবিবযা-ত অর্থাৎ সূরাহ্ আন্ নাস ও সূরাহ্ আল ফালাক্ব পড়ে নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে শরীর মুছে ফেলতেন। তিনি মৃত্যুজনিত রোগে আক্রান্ত হলে আমি মুআবিবযাত পড়ে তাহাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম, যেসব মুআবিবযাত পড়ে তিনি নিজে ফুঁ দিতেন। তবে আমি নবী সাঃআঃ-এর হাত দিয়েই তাহাঁর শরীর মুছে দিতাম। [বোখারী, মুসলিম]{১}
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেছেন, তাহাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি মুআবিবযাত পড়ে তার গায়ে ফুঁ দিতেন।
{১} সহীহ : বোখারী ৪৪৩৯, মুসলিম ২১৯২, ইবনি হিব্বান ৬৫৯০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৬৭৩। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩৩. উসমান ইবনি আবুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে তাহাঁর শরীরে অনুভূত একটি ব্যথার কথা জানালেন। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাঃআঃ তাঁকে বললেন, যে জায়গায় তুমি ব্যথা অনুভব করো সেখানে তোমার হাত রাখো। তারপর তিনবার
بِسْمِ اللّهِ
বিসমিল্লা-হ
[অর্থাৎ আল্লাহর নামে] আর সাতবার বলো,
أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللّهِ وَقُدْرَتِه مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
আঊযু বিইযযাতিল্ল-হি ওয়া কুদ্রাতিহী মিন্ শার্রি মা- আজিদু ওয়াউহা-যির
[অর্থাৎ আমি আল্লাহর সম্মান ও তাহাঁর ক্ষমতার আশ্রয় নিচ্ছি, যা আমি অনুভব করছি ও আশংকা করছি তাহাঁর ক্ষতি হইতে]।
উসমান ইবনি আবুল আস বলেন, আমি তা করলাম। ফলে আমার শরীরে যে ব্যথা-বেদনা ছিল তা আল্লাহ দূর করে দিলেন। [মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২২০২, আবু দাউদ ৩৮৯১, আত তিরমিজি ২০৮০, ইবনি মাজাহ ৩৫২২, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭৪২, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৩৫৮৩, আহমাদ ১৬২৬৮, ইবনি হিব্বান ২৯৬৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৭১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২৫৮, সহীহ আত তারগীব ৩৪৫৩, সহীহ আল জামি ৩৪৬। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩৪. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একবার জিবরীল [আঃ] নবী সাঃআঃ-এর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ! জিবরীল [আঃ] বললেন,
بِسْمِ اللّهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ مِنْ شَرِ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ
বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীকা, মিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ ‘আইনি হা-সিদিন, আল্লা-হু য়্যাশফীকা, বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা
আপনাকে কষ্ট দেয় এমন সব বিষয়ে আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছি প্রত্যেক ব্যক্তির অকল্যাণ হইতে। অথবা তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বিদ্বেষী চোখের অকল্যাণ হইতে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ছি। [মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২১৮৬, আত তিরমিজি ৯৭২, ইবনি মাজাহ ৩৫২৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৭৭৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭০। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩৫. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ হাসান ও হুসায়ন [রাদি.]-কে এ ভাষায় দুআ করে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করিতেন। তিনি বলিতেন,
أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে প্রত্যেক শায়ত্বনের [শয়তানের] অনিষ্ট হইতে, প্রত্যেক ধ্বংসকারী হিংস্র জন্তু জানোয়ারের ধ্বংস হইতে, প্রত্যেক কুদৃষ্টিসম্পন্ন চোখ হইতে তোমাদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করছি।
তিনি আরো বলিতেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহীম [আঃ] এ কালিমার দ্বারা তাহাঁর সন্তান ইসমাঈল ও ইসহককে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করিতেন। বোখারী; মাসাবীহ সংস্করণের অধিকাংশ স্থানে বিহা শব্দের জায়গায় بهما [বিহিমা-] শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিবচন শব্দে।{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৩৭১, আবু দাউদ ৪৭৩৭, আত তিরমিজি ২০৬০, ইবনি মাজাহ ৩৫২৫, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৩৫৭৭, আহমাদ ২১১২, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৭৭৮, ইবনি হিব্বান ১০১৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৭৮১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৬। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। [বোখারী]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৪৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭৪০, আহমাদ ৭২৩৫, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৬, ইবনি হিব্বান ২৯০৭, শুআবুল ঈমান ৯৩২৩, সহীহ আত তারগীব ৩৪০৫, সহীহ আলুজামি আস্ সগীর ৬৬১০। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] ও আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, মুসলিমের ওপর এমন কোন বিপদ আসে না, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন চিন্তা, কোন দুঃখ-কষ্ট হয় না, এমনকি তার গায়ে একটি কাঁটাও ফুটে না, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ না করেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৪১, মুসলিম ২৫৭২, আহমাদ ৮০২৭, ইবনি হিব্বান ২৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২১, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৪৯২, সহীহ আত তারগীব ৩৪১৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮১৮। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি নবী [সাঃআঃ] -এর কাছে গেলাম। তিনি সে সময় জ্বরে ভুগছিলেন। আমি আমার হাত দিয়ে তাঁকে স্পর্শ করলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার তো বেশ জ্বর। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের দুজনে যা ভোগ করে আমি তা ভুগছি। আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, এর কারণ, আপনার জন্য দুগুণ পুরস্কার রয়েছে? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ কোন মুসলিমের প্রতি যে কোন কষ্ট পৌঁছে থাক না কেন চাই তা রোগ হোক বা অপর কিছু হোক আল্লাহ তাআলা তা দ্বারা তার গুনাহসমূহ ঝেড়ে দেন যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৪৮, ৫৬৬০, ৫৬৬৭, মুসলিম ২৫৭১, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১০৮০০, আহমাদ ৩৬১৮, দারিমী ২৮১৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৬১, ইবনি হিব্বান ২৯৩৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৪১৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩১, সহীহ আত তারগীব ৩৪৩২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭০৩। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৩৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বেশী রোগ যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়েছে এমন কাউকে দেখিনি। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৪৬, মুসলিম ২৫৭০, ইবনি মাজাহ ১৬২২। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমার বুক ও চিবুকের মাঝে মাথা রেখে মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। তাই নবী [সাঃআঃ] –এর পর আর কারো মৃত্যু যন্ত্রণাকে আমি খারাপ মনে করি না। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৪৪৬, নাসায়ী ১৮৩০, আহমাদ ২৪৩৫৫৪, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১৯৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৮২৭। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪১. কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিনের দৃষ্টান্ত হলো, ক্ষেতের তরতাজা ও কোমল শস্য শাখার মতো, যাকে বাতাস এদিক-ওদিক ঝুঁকিয়ে ফেলে। একবার এদিকে কাত করে। আবার সোজা করে দেয়। এভাবে তার আয়ু শেষ হয়ে যায়। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হলো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পিপুল গাছের মতো। একেবারে ভূমিতে উপড়ে পড়ার আগে এ গাছে ঝটকা লাগে না। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৪৪, ৫৬৪৩, মুসলিম ২৮১০, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩৪৪১২, আহমাদ ১৫৭৬৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২২৮৩, সহীহ আত তারগীব ৩৩৯৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮৪১। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিনের দৃষ্টান্ত হলো এক শস্য ক্ষেতের মতো। শস্য ক্ষেতকে যেভাবে বাতাস সবসময় ঝুঁকিয়ে রাখে, ঠিক এভাবে মুমিনকে বিপদাপদ দোলায়। বালা-মুসীবত ঘিরে থাকে। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হলো, পিপুল গাছের মতো। পিপুল গাছ বাতাসের দোলায় ঝুঁকে না পড়লেও পরিশেষে শিকড়সহ উপড়ে যায় । {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৪৪, মুসলিম ২৮০৯, আহমাদ ৭১৯২, মুসান্নাফ আবদুর রায্যাক্ব ২০৩০৭, আত তিরমিজি ২৮৬৬, শুআবুল ঈমান ৯৩২১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৭, সহীহ আত তারগীব ৩৪০০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮৪২। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উম্মু সায়িব [রাদি.] -এর কাছে গেলেন। তাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন? উম্মু সায়িব [রাদি.] বলিল, আমার জ্বর বেড়েছে। আল্লাহ এর ভাল না করুন। তার কথা শুনে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর বানী আদামের গুনাহগুলো এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে হাপর লোহার মরিচ দূর করে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৫৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৭১৫, সহীহ আত তারগীব ৩৪৩৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৩২১। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪৪. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষ রোগে অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তার আমলনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হত। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ২৯৯৬, আহমাদ ১৯৬৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৪৭, ইরওয়া ৫৬০, সহীহ আত তারগীব ৩৪২০। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ত্বাউন [মহামারী]র কারণে মৃত্যু মুসলিমদের জন্য শাহাদাতের মর্যাদা। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ২৮৩০, ৫৭৩২, মুসলিম ১৯১৬, আহমাদ ১৩৩৩৫, সহীহ আত তারগীব ১৩৯৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩৯৪৭। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শাহীদরা পাঁচ প্রকার-[১] মহামারীতে মৃত ব্যক্তি, [২] পেটের অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, [৩] পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, [৪] দেয়াল চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং [৫] আল্লাহর পথে জিহাদ করে মৃত ব্যক্তি। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ২৮২৯, মুসলিম ১৯১৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩৩, আহমাদ ৮৩০৫, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৮৬, শুআবুল ঈমান ৯৪১২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩৭৪১। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা এক রকম আযাব। আল্লাহ যার উপর চান এ আযাব পাঠান। কিন্তু মুমিনদের জন্য তা তিনি রহমাত গণ্য করিয়াছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারী কবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৪৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৪২। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪৮. উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ত্বাঊন বা মহামারী হলো এক রকমের আযাব। এ ত্বাঊন বানী ইসরাঈলের একটি দলের ওপর নিপতিত হয়েছিল। অথবা তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর নিপতিত হয়েছিল। তাই তোমরা কোন জায়গায় ত্বাঊন-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শুনলে সেখানে যাবে না। আবার তোমরা যেখানে থাকো, মহামারী শুরু হয়ে গেলে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৪৭৩, মুসলিম ২২১৮, ২২১৯, আবু দাউদ ৩১০৩, আত তিরমিজি ১০৬৫, আহমাদ ২১৭৬৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৮৩, ইবনি হিব্বান ২৯৫২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৪৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২২৪৮। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৪৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আমি যখন আমার কোন বান্দাকে তার প্রিয় দুটি জিনিস দিয়ে বিপদ্গ্রস্ত করি, আর সে এর উপর ধৈর্যধারণ করে, আমি তাকে এ দুটি প্রিয় জিনিসের বিনিময়ে জান্নাত দান করব। প্রিয় দুটো জিনিস বলিতে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটো চোখ বুঝিয়েছেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৫৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২৬, সহীহ আত তারগীব ৩৪৪৮। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৫৫০. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে মুসলিম সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মুসলিমকে দেখিতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার মালাক [ফেরেশতা] দুআ করিতে থাকে। যদি সে তাকে সন্ধ্যায় দেখিতে যায়, তার জন্য সত্তর হাজার মালাক [ফেরেশতা] সকাল পর্যন্ত দুআ করিতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি হয়। {১}
{১} সহীহ : আত তিরমিজি ৯৬৯, আবু দাউদ ৩০৯৮, ইবনি মাজাহ ১৪৪২, সহীহ আত তারগীব ৩৪৭৬, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৬৭। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৫১. যায়দ ইবনি আরক্বাম [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] একবার আমার চোখের অসুখ হলে আমাকে দেখিতে আসলেন। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১০২, আহমাদ ১৭৭৬১। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৫২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়্যাতে ভাল করে উযূ করার পর তার কোন অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখিতে যায়, তাকে জাহান্নাম থেকে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৩০৯৭, জইফ আত তারগীব ২০২৫, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৫৩৯। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে ফাযল বিন দালহাম আল ওয়াসিত্বী রয়েছে যিনি স্মৃতিশক্তিগত ত্রুটির কারণে একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৫৩. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক মুসলিম তার এক অসুস্থ মুসলিমকে দেখিতে গিয়ে যদি সাতবার বলে,
أَسْأَلُ اللّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ أَنْ يَّشْفِيَكَ
“আস্আলুল্ল-হাল আযীমা রব্বাল আরশিল আযীমি আই ইয়াশ্ফিয়াকা”
[অর্থাৎ আমি মহান আল্লাহর দরবারে দুআ করছি তিনি যেন আপনাকে আরোগ্য দান করেন, যিনি মহান আরশের রব।]। তাহলে তাকে অবশ্যই আরোগ্য দান করা হয় যদি না তার জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হয়। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১০৬, আত তিরমিজি ২০৮৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৯, আহমাদ ২১৩৭, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৮২০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭৪৮৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৯, সহীহ আত তারগীব ৩৪৮০. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৫৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে জ্বরসহ অসুখ-বিসুখ হইতে পরিত্রাণ পাবার জন্য এভাবে দুআ করিতে শিখিয়েছেন,
بِسْمِ اللهِ الْكَبِيْرِ أَعُوذُ بِاللّهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ كُلِّ عِرْقٍ نَعَّارٍ وَمِنْ شَرِّ حَرِّ النَّارِ
“মহান আল্লাহর নামে, মহান আল্লাহর কাছে সব রক্তপূর্ণ শিরার অপকার হইতে ও জাহান্নামের গরমের ক্ষতি হইতে।” {১}
{১} জইফ : আত তিরমিজি ২০৭৫, ইবনি মাজাহ ৩৫২৬, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৫০১, আহমাদ ২৭২৯, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৬০৩, জইফ আল জামি ৪৫৮৭। এর সানাদে ইব্রাহীম বিন ইসমাঈল একজন দুর্বল রাবী। যদিও ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। কিন্তু জমহূর মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৫৫. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমাদের কেউ ব্যথা-বেদনা অনুভব করলে অথবা তার কোন মুসলিম ভাই তার নিকট ব্যথা-বেদনার কথা বললে, সে যেন দুআ করে,
رَبُّنَا اللّهُ الَّذِي فِي السَّمَاءِ تَقَدَّسَ اسْمُكَ أَمْرُكَ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ كَمَا أَنَّ رَحْمَتُكَ فِي السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِي الْأَرْضِ اغْفِرْ لَنَا حُوْبَنَا وَخَطَايَانَا أَنْتَ رَبُّ الطَّيِبِيْنَ أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ وَشِفَاءً مِنْ شِفَائِكَ عَلى هذَا الْوَجَعِ. فَيَبْرَأُ
“আমাদের রব আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। হে রব! তোমার নাম পূতঃ-পবিত্র। তোমার নির্দেশ আকাশ ও পৃথিবী উভয় স্থানেই প্রযোজ্য। আকাশে যেভাবে তোমার অগণিত রহমাত আছে, ঠিক সেভাবে তুমি পৃথিবীতেও তোমার অগণিত রহমাত ছাড়িয়ে দাও। তুমি আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করে দাও। তুমি পূতঃ-পবিত্র লোকদের রব। তুমি তোমার রহমাতগুলো হইতে বিশেষ রহমাত ও তোমার শেফাসমূহ হইতে বিশেষ শেফা এ ব্যথা-বেদনার নিরাময় পাঠিয়ে দাও।”
এ দুআ তার সকল ব্যথা-বেদনা দূর করে দেবে। {১}
{১} খুবই দুর্বল : আবু দাউদ ৩৮৯২, জইফ আত তারগীব ২০১০, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৪২২। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এর সানাদে যিয়াদ বিন মুহাম্মাদ রয়েছে যাকে ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] মুনকারুল হাদিস বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
১৫৫৬. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখিতে যায় তখন সে যেন বলে,
اللّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ يَنْكَأُ لَكَ عَدُوًّا أَوْ يَمْشِىْ لَكَ إِلى جَنَازَةٍ
“আল্ল-হুম্মাশফি আবদাকা ইয়ান্কাউ লাকা আদ্যুওয়ান আও ইয়াম্শী লাকা ইলা-জানা-যাহ্”
[অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও। সে যাতে তোমার জন্য শত্রুকে আঘাত করিতে পারে। অথবা তোমার সন্তষ্টির জন্য জানাযায় অংশ নিতে পারে।] {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১০৭, আহমাদ ৬৬০০, ইবনি হিব্বান ২৯৭৪, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৭৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৩০৪, সহীহ আল জামি ৪৬৬। তবে আহমাদের সানাদটি দুর্বল কারণ তাতে ইবনুল লাহ্ইয়া রয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৫৭. উমাইয়্যাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [উমাইয়্যাহ] একদিন আয়িশাহ [রাদি.]-কে “ আর-বি তোমাদের অন্তরে যা আছে তোমরা যদি তা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে তোমারদের হিসাব নিবেন”-[সূরাহ আল বাকারাহ ২:২৮৪] এবং “যে অন্যায় কাজ করিবে সে তার শাস্তি ভোগ করিবে”-[সূরাহ আন নিসা ৪:১২৩]- এ দুটি আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
উত্তরে আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবার পর এ পর্যন্ত কেউ আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেনি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, এ দুটি আয়াতে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা হল দুনিয়ায় বান্দার যে জ্বর ও দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি হয়, তা দিয়ে আল্লাহ যে শাস্তি দেন তাই, এমনকি বান্দা জামার পকেটে কে সম্পদ রাখে, তারপর হারিয়ে ফেলে তার জন্য অস্থির হয়ে যায়-এটাও এ শাস্তির মধ্যে গণ্য। অবশেষে বান্দা তার গুনাহগুলো হইতে পবিত্র হয়ে বের হয়। যেভাবে সোনাকে হাপরের আগুনে পরিস্কার করে বের করা হয়। {১}
{১} জইফ : আত তিরমিজি ২৯৯১, আহমাদ ২৫৮৩৫, শুআবুল ঈমান ৯৩৫২, জইফ আল জামি ৬০৮৬। কারণ এর সানাদে আলী বিন যায়দ বিন যায়দান রয়েছে যিনি একজন দুর্বল রাবী এবং উমাইয়্যাহ্ যে তার পিতার স্ত্রী একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৫৮. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বড় হোক কিংবা ছোট হোক, বান্দা যেসব দুঃখ-কষ্ট পায়, নিশ্চয়ই তা তার অপরাধের কারণে। তবে আল্লাহ্ যা ক্ষমা করে দেন তা এর চেয়েও অনেক বেশী। এ কথার সমর্থনে তিনি [সাঃআঃ] এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন-অর্থাৎ
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْ عَنْ كَثِيْر [الشورى 42 : 30]
“তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদের কর্মফলের কারণে। আর আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন অনেক অনেক বেশি”-[সূরাহ আশ শূরা ৪২:৩০]। {১}
{১} যঈফুল ইসনাদ : আত তিরমিজি ৩২৫২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৭৩২। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে উবায়দুল্লাহ্ বিন আল ওয়াযি এবং তার উস্তায শায়খ দুজনই মাজহূল রাবী। তবে আল জামিতে তিনি হাদিসটিকে সম্ভবতঃ শাহিদ এর কারণে হাসান বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৫৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বান্দা যখন ইবাদতের কোন সুন্দর নিয়ম-পদ্ধতি পালন করে চলতে শুরু করে এবং তারপর যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে [ইবাদতের ধারা বন্ধ হয়ে যায়], তখন তার আমালনামা লিখার জন্য নিযুক্ত মালাককে [ফেরেশতাকে] বলা হয়, এ বান্দা সুস্থ অবস্থায় যে আমাল করত [অসুস্থ অবস্থাও] তার আমালনামায় তা লিখতে থাকো। যে পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করে দিই অথবা তাকে আমার কাছে ডেকে আনি। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ৬৮৯৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৪৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২৯, সহীহ আত তারগীব ৩৪২১। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৬০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে শারীরিক বিপদে ফেলা হলে মালায়িকাহ-কে [ফেরেশতাদেরকে] বলা হয়, এ বান্দা নিয়মিত যে নেক কাজ করত, তা-ই তার আমালনামায় লিখতে থাকো। এরপর তাকে আল্লাহ্ আরোগ্য দান করলে গুনাহখাতা হইতে ধুয়ে পাকসাফ করে নেন। আর যদি তাকে উঠিয়ে নেন, তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহমাত দান করেন। {১}
{১} হাসান সহীহ : আহমাদ ১২৫০৪, ইবনি আবী শায়বাহ্ ০৮৩১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩০, ইরওয়া ২, সহীহ আত তারগীব ৩৪২২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
১৫৬১. জাবির ইবনি আতীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে নিহত শাহীদ ছাড়াও সাত ধরনের শাহীদ রয়েছে। এরা হচ্ছে [১] মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, [২] পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তি, [৩] যা-তুল জানব রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, [৪] পেটের রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, [৫] অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি, [৬] কোন প্রাচীর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং [৭] প্রসবকালে মৃত্যুবরণকারী মহিলা। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১১১, নাসায়ী ১৮৪৬, আহমাদ ২৩৭৫৩, ইবনি হিব্বান ৩১৮৯, সহীহ আত তারগীব ১৩৯৮, সহীহ আর-জামি আস্ সগীর ৩৭৩৯। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৬২. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] –কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর নবী! কোন সব লোককে বিপদাপদ দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। জবাবে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, নবীদেরকে। তারপর তাদের পরে যারা উত্তম তাদেরকে। মানুষকে আপন আপন দ্বীনদারীর অনুপাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। দ্বীনদারীতে যে যত বেশি মজবুত হয় তার বিপদ-মুসীবাত তত বেশি কঠিন হয়। দ্বীনের ব্যাপারে যদি মানুষের দুর্বলতা থাকে, তার বিপদও ছোট ও সহজ হয়। এভাবে তার বিপদ হইতে থাকে। এ নিয়েই সে মাটিতে চলাফেরা করিতে থাকে। তার কোন গুনাহখাতা থাকে না। {১}
{১} হাসান সহীহ : আত তিরমিজি ২৩৯৮, ইবনি মাজাহ ৪০২৩, আহমাদ ১৬০৭, দারিমী ২৮২৫, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনি হিব্বান ২৯০১, সহীহ আত তারগীব ৩৪০২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৫৬৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মৃত্যু কষ্ট দেখেছি। তাই এরপর আর সহজভাবে মৃত্যু হইতে দেখলে ঈর্ষা করি না। {১}
{১} সহীহ : আত তিরমিজি ৯৭৯, শামায়িল ৩২৫, নাসায়ী ১৮৩০। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৬৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] -কে আমি তাহাঁর মৃত্যুবরণ করার সময় দেখেছি। তাহাঁর কাছে একটি পানিভরা বাটি ছিল। এ বাটিতে তিনি বারবার হাত ডুবাতেন। তারপর হাত দিয়ে নিজের চেহারা মুছতেন ও বলিতেন,
اللّهُمَّ أَعِنِّىْ عَلى مُنْكَرَاتِ الْمَوْتِ أَوْ سَكَرَاتِ الْمَوْتِ
হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে মৃত্যু যন্ত্রণায় সাহায্য করো। {১}
{১} জইফ : আত তিরমিজি ৯৭৮, মুখতাসার আশ্ শামায়িল ৩২৪, ইবনি মাজাহ ১৬২৩। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে মূসা বিন সারজিস রয়েছে যাকে কেউই বিশ্বস্ত হিসেবে উল্লেখ করেননি এবং তার থেকে মাত্র দুজন ব্যক্তি হাদিস বর্ণনা করেছে। অতএব, তিনি একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৬৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাহাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হইতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। {১}
{১} সহীহ : আত তিরমিজি ২৩৯৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৬৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার। আল্লাহ তাআলা কোন জাতিকে ভালবাসেন তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। {১}
{১} হাসান : আত তিরমিজি ২৩৯৬, ইবনি মাজাহ ৪০৩১, শুআবুল ঈমান ৯৩২৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৪৬, সহীহ আত তারগীব ৩৪০৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৫৬৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: মুমিন নারী-পুরুষের বিপদ মুসীবাত লেগেই থাকে, এই বিপদ মুসীবাত তার শারীরিক, তার ধন-সম্পদের, তার সন্তান- সন্তুতির ব্যপারে হইতে পারে। আল্লাহর সাথে মিলিত হবার আগ পর্যন্তই তা চলতে থাকে। আর আল্লাহর সাথে তার মিলিত হবার পর তার উপর গুনাহের কোন বোঝাই থাকেনা। [
তিরমিজি; মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহীহ।]। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
১৫৬৮. মুহাম্মাদ ইবনি খালিদ আস্ সুলামী হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর দাদা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর তরফ হইতে কোন মানুষের জন্য যখন কোন মর্যাদা নির্ধারিত হয়, যা সে আমাল দিয়ে লাভ করিতে পারে না, তখন আল্লাহ তাকে তার শরীরে অথবা তার সন্তান-সন্ততির উপর বিপদ ঘটিয়ে পরীক্ষা করেন। এতে তাকে ধৈর্যধারণ করারও শক্তি দান করেন। যাতে সেরূপ মর্যাদা লাভ করিতে পারে, যা আল্লাহর তরফ হইতে তার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। {১}
{১} সহীহ লিগায়রিহী : আবু দাউদ ৩০৯০, সহীহ আত তারগীব ৩৪০৯।এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১৫৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি শিখখীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদম সন্তানকে তার চারদিকে নিরানব্বইটি বিপদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি এ বিপদগুলোর সবগুলোই তার ক্ষতি করিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে অন্তত বার্ধক্যজনিত বিপদে পতিত হয়। পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে। {১}
{১} হাসান : আত তিরমিজি ২৪৫৬, শুআবুল ঈমান ১০০৯১, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮২৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৫৭০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবাতগ্রস্ত লোকদেরকে সওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করিবে। বলবে, আহা! তাদের চামড়া যদি দুনিয়াতেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত! {১}
{১} হাসান : আত তিরমিজি ২৪০২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৮১৭৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৫৭১. আমির আর্ র-ম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন অসুখ-বিসুখ প্রসঙ্গে বললেন, মুমিনের অসুখ হলে পরিশেষে আল্লাহ তাকে আরোগ্য করেন। এ অসুখ তার জীবনের অতীত গুনাহের কাফ্ফারাহ্। আর ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা। কিন্তু মুনাফিকের অসুখ-বিসুখ হলে তাকেও আরোগ্য দান করা হয়, সেই উটের মতো যাতে মালিক বেঁধে রেখেছিলো তারপর ছেড়ে দিলো। সে বুঝলো না কেন তাকে বেঁধে রেখেছিল। আর কেনইবা ছেড়ে দিলো। এ সময় এক ব্যাক্তি বলে উঠলো, হে আল্লাহর রসূল! অসুখ-বিসুখ আবার কি? আল্লাহর শপথ আমার কোন সময় অসুখ হয়নি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, আমাদের কাছ থেকে সরে যাও। তুমি আমাদের মধ্যে গণ্য নও। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৩০৮৯, শুআবুল ঈমান ৬৭২৮, জইফ আত তারগীব ১৯৯৯, সহীহ আল জামি ১৭৬৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৪০। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে শামের [সিরিয়ার] অধিবাসী আবুল মানযূর রয়েছে যিনি একজন দুর্বল রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৭২. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কোন রোগীকে দেখিতে গেলে, তার জীবনের ব্যাপারে তাকে সান্ত্বনা যোগাবে, এ সান্ত্বনা যদিও তার তাক্বদীর পরিবর্তন করিতে পারবে না। কিন্তু তার মন প্রশান্তি লাভ করিবে। {১}
{১} খুবই দুর্বল : আত তিরমিজি ২০৮৭, ইবনি মাজাহ ১৪৩৮, শুআবুল ঈমান ৮৭৭৮, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৮৪। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে মূসা বিন মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আত তায়মী রয়েছে যিনি মুনকারুল হাদিস হিসেবে আখ্যায়িত। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
১৫৭৩.সুলায়মান ইবনি সুরাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাকে তার পেটের অসুখ হত্যা করেছে, তাকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হবে না। {১}
{১} সহীহ : আত তিরমিজি ১০৬৪, নাসায়ী ২০৫২, আহমাদ ১৮৩১১, সহীহ আত তারগীব ১৪১০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬৪৬১। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৫৭৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী যুবক নবী [সাঃআঃ] -এর খিদমাত করিতেন। তাহাঁর মৃত্যুশয্যায় নবী [সাঃআঃ] তাকে দেখিতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলিল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। এরপর নবী [সাঃআঃ] তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারীর ১৩৫৬, নাসায়ী ৩০৯৫, আহমাদ ১৩৯৭৭, ইবনি হিব্বান ৪৮৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১২১৫৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৫৭, ইরওয়া ১২৭২। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৭৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রোগীকে দেখার জন্য যায়, আসমান থেকে একজন মালাক [ফেরেশতা] তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ধন্য হও তুমি, ধন্য হোক তোমার পথ চলা। জান্নাতে তুমি একটি মনযিল তৈরি করে নিলে। {১}
{১} হাসান : আত তিরমিজি ৮৬১১, ইবনি মাজাহ ১৪৪৩, আহমাদ ৮৫৩৬, সহীহ আত তারগীব ২৫৭৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬৩৮৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৫৭৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নবী [সাঃআঃ] যে রোগে মৃত্যুবরণ করিয়াছেন, সে অসুখের সময় একদিন আলী [রাদি.] তাহাঁর কাছ থেকে বের হয়ে এলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আবু হাসান! আজ সকালে আল্লাহর রসূলের অবস্থা কেমন রয়েছে? আলী [রাদি.] বললেন, আলহামদুলিল্লাহ সকাল ভালই যাচ্ছে। {১}
{১} সহীহ : বোখারীর ৪৪৪৭, আহমাদ ২৩৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৬৫৭৪, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১১৩০। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৭৭. আত্বা ইবনি আবু রবাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আব্বাস [রাদি.] আমাকে একবার বললেন, হে আত্বা! আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এ কালো মহিলাটিকে দেখো। এ মহিলাটি একবার নবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত। রোগের ভয়াবহতার ফলে আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, যদি তুমি চাও, সবর করিতে পার। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর তুমি চাইলে, আমি তোমার আরোগ্যের জন্য দুআ করব। আল্লাহ যেন তোমাকে ভাল করে দেন। জবাবে মহিলাটি বলিল, আমি সবর করব। পুনরায় মহিলাটি বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। দুআ করুন আমি যেন উলঙ্গ হয়ে না পড়ি। তিনি [সাঃআঃ] তার জন্য দুআ করিলেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৬৫২, মুসলিমর ২৫৭৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৪৪৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২৩, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫০৫, সহীহ আত তারগীব ৩৪১৮। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৭৮. ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কালে এক ব্যক্তির মৃত্যু হলো। এ সময় আর এক ব্যক্তি মন্তব্য করিল, লোকটির ভাগ্য ভাল। মারা গেল কিন্তু কোন রোগে ভুগতে হল না। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, আহ্! তোমাকে কে বলিল, লোকটির ভাগ্য ভাল? যদি আল্লাহ তাআলা লোকটিকে কোন রোগে ফেলতেন, আর তার গুনাহ মাফ করে দিতেন তাহলেই না সবচেয়ে ভাল হতো! {১}
{১} মুরসাল জইফ : মুয়াত্ত্বা মালিক ১৭৫৩, জইফ আত তারগীব ২০০৫। কারণ হাদিসটি মুরসাল।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল মুরসাল
১৫৭৯. শাদ্দাদ ইবন আওস ও সুনাবিহী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
একবার তাঁরা দুজন এক রোগীকে দেখিতে গেলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আজ সকালটা তোমার কেমন যাচ্ছে? রোগীটি বলিল, আল্লাহর রহ্মতে ভালই। তার কথা শুনে শাদ্দাদ বললেন, তোমার গুনাহ ও অপরাধ মাফ হবার শুভ সংবাদ! কারণ আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্যে কোন মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি। রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও যে আমার শুকরিয়া আদায় করিবে, সে রোগশয্যা হইতে সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো সব গুনাহ হইতে পবিত্র হয়ে উঠবে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা মালাকগণকে [ফেরেশতাদেরকে] বলেন, আমি আমার বান্দাকে রোগ দিয়ে বন্দী করে রেখেছি। তাই তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য যা লিখতে তা-ই লিখো। {১}
{১} হাসান : আহমাদ ১৭১১৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২০০৯, সহীহ আত তারগীব ৩৪২৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৩০০।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৫৮০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বান্দার গুনাহ যখন বেশী হয়ে যায় এবং এসব গুনাহের কাফ্ফারার মতো যথেষ্ট নেক আমাল তার না থাকে, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বিপদে ফেলে চিন্তাগ্রস্ত করেন। যাতে এ চিন্তাগ্রস্ততা তার গুনাহের কাফ্ফারাহ্ হয়ে যায়। {১}
{১} জইফ : আহমাদ ২৫২৩৬, শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ২৬৯৫, জইফ আত তারগীব ১৯৯৪, জইফ আল জামি ৬৭৮। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন। এর সানাদে লায়স বিন সুলায়ম রয়েছে যিনি একজন দুর্বল এবং মুখতালাত্ব রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৮১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার জন্য রওয়ানা হয় তখন সে আল্লাহর রহ্মাতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকে। যে পর্যন্ত রোগীর বাড়ী গিয়ে না পৌঁছে। আর বাড়ী পৌঁছার পর রহ্মাতের সাগরে ডুব দেয়। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ১৪২৬০, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১০৮৩৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫০৪, সহীহ আত তারগীব ৩৪৭৭, ইবনি হিব্বান ২৯৫৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৮৩। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৮২. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: তোমাদের কারো জ্বর হলে জ্বর আগুনের অংশ, আগুনকে পানি দিয়ে নিভানো হয়। সে যেন ফাজ্রের সলাতের পর সূর্য উঠার আগে প্রবাহিত নদীতে ঝাঁপ দেয় আর ভাটার দিকে এগুতে থাকে। এরপর বলে,
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ وَصَدَقَ رَسُوْلُكَ بَعْدَ صَلَاةِ الصُّبْحِ وَقَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَلْيَنْغَمِسْ فِيهِ ثَلَاثَ غَمْسَاتٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي ثَلَاثٍ فَخَمْسٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي خَمْسٍ فَسَبْعٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي سَبْعٍ فَتِسْعٍ فَإِنَّهَا لَا تَكَادَ تُجَاوِزُ تِسْعًا بِإِذْنِ اللّهِ عَزَّ وَجَلَّ
হে আল্লাহ! শেফা দান করো তোমার বান্দাকে। সত্যবাদী প্রমাণ করো তোমার রসূলকে। ওই ব্যক্তি যেন নদীতে তিনদিন তিনটি করে ডুব দেয়। এতে যদি তার জ্বর না সারে তবে পাঁচদিন। তাতেও না সারলে, সাতদিন। সাতদিনেও যদি আরোগ্য না হয় তাহলে নয়দিন। আল্লাহর রহমাতে জ্বর-এর অধিক আগে বাড়বে না। {১}
{১} জইফ : আত তিরমিজি ২০৮৪, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ২৩৩৯, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৩৭৫। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে رَجُلٌ হলো সাঈদ বিন যুরআহ্ আল হিমসী। ঈমাম আবু হাতিম এবং যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] তাকে মাজহূল আর হাফিয ইবনি হাজার [রাহিমাহুল্লাহ] মাসতুর বলে অবহিত করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৮৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে একবার জ্বর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এ সময় এক লোক জ্বরকে গালি দিলো। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী [সাঃআঃ] বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর গুনাহ দূর করে যেভাবে [কামারের] হাপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়। {১}
{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৩৪৬৯, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১০৮১০। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৮৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার এক অসু্স্থ লোককে দেখিতে গিয়ে বললেন, সুসংবাদ! আল্লাহ তাআলা বলেন, তা আমার আগুন। আমি দুনিয়াতে এ আগুনকে আমার মুমিন বান্দার কাছে পাঠাই। তা এজন্যই যাতে এ আগুন ক্বিয়ামাতে তার জাহান্নামের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়। {১}
{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৩৪৭০, আত তিরমিজি ২০৮৮, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১০৮০২, আহমাদ ৯৬৭৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৫৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩২। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৮৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: আমার মহান রব বলেন, আমার ইয্য্ত ও প্রতাপের শপথ, আমি ততক্ষণ কাউকে দুনিয়া হইতে বের করে আনি না যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করে দেবার ইচ্ছা করি। যতক্ষণ না তার ঘাড়ে থাকা প্রত্যেকটি গুনাহকে তার দেহের কোন রোগ অথবা রিয্ক্বের সংকীর্ণতা দিয়ে বিনিময় করে দিই। {১}
{১} জইফ : আত তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০০৪।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৮৬. শাক্বীক্ব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আবদুল্লাহ ইবনি মাস্উদ [রাদি.] অসুস্থ হলে আমরা দেখিতে গেলাম। আমাদেরকে দেখে তিনি কাঁদতে শুরু করিলেন। তা দেখে তাঁকে কেউ কেউ খারাপ বলিতে লাগলেন। সে সময় আবদুল্লাহ ইবনি মাস্উদ [রাদি.] বললেন, আমি অসুখের জন্য কাঁদছি না। আমি শুনিয়াছি, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অসুখ হচ্ছে গুনাহের কাফ্ফারাহ্। আমি বরং কাঁদছি এজন্য যে, এ অসুখ হল আমার বৃদ্ধ বয়সে। আমার শক্তি-সামর্থ্য থাকার সময়ে হল না। কারণ মানুষ যখন অসুস্থ হয় তার জন্য সে সাওয়াব লেখা হয়, যা অসুস্থ হবার আগে তার জন্য লেখা হত। এজন্যই যে অসুস্থতা তাকে ওই ইবাদাত করিতে বাধা দেয়। {১}
{১} রযীন : এর তাখরিজটি সম্পূর্ণ পাওয়া হয়নি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
১৫৮৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নবী [সাঃআঃ] কোন রোগীকে [রোগগ্রস্ত হবার পর] তিনদিন না হওয়া পর্যন্ত দেখিতে যেতেন না। {১}
{১} মাওযূ : ইবনি মাজাহ ১৪৩৭, শুআবুল ঈমান ৮৭৮১, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৪৫, জইফ আল জামি ৪৪৯৯। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে ইবনি জুরায়জ একজন মুদ্দালিস রাবী এবং মাসলামাহ্ বিন আলী মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত।এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
১৫৮৮. উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তুমি কোন অসুস্থ লোককে দেখিতে গেলে, তাকে তোমার জন্য দুআ করিতে বলবে। কারণ রুগ্ন লোকের দুআ মালায়িকার [ফেরেশ্তাদের] দুআর মতো। {১}
{১} খুবই দুর্বল : ইবনি মাজাহ ১৪৪১, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১০০৪, জইফ আত তারগীব ২০২৯, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৪৮৭। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হাদিসটি দুটি কারণে দুর্বল। প্রথমতঃ মায়মূন বিন মিহরান এবং উমার [রা]-এর মাঝে বিচ্ছিন্নতা। আর দ্বিতীয়তঃ জাফার বিন বুরক্বর হইতে কাসীর বিন হিশাম হাদিস বর্ণনা করেননি। বরং উভয়ের মাঝে হাসান বিন আরফায রয়েছে যিনি মূলত একজন মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
১৫৮৯. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রোগীকে দেখিতে যাবার পর নিয়ম হলো, রোগীর কাছে বসা। তার কাছে উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলা। ইবনি আব্বাস তাহাঁর এ কথার সমর্থনে বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুশয্যায় তাহাঁর পাশে লোকেরা বেশি কথাবার্তা ও মতভেদ শুরু করলে তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছ থেকে সরে যাও। {১}
{১} রযীন : এর তাখরিজ সম্পূর্ণ হয়নি। তবে হাদিসটি মারফূ সূত্রে বোখারীতে রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
১৫৯০.আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রোগী দেখিতে অল্প সময় নেবে। {১}
{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ৮৭৮৬, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৩৯৫৪, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৩৮৯৯। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে ইসমাঈল বিন আল ক্বাসিম একজন দুর্বল রাবী এবং আবু আলী আল আনাযীও একজন দুর্বল রাবী যেমনটি হাফিয হাজার তাকরীবে বলেছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৯১. সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যিব- হইতে বর্ণীতঃ
রোগীকে দেখার উত্তম নিয়ম হলো তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া। {১}
{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ৮৭৮৫, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ২৫১৭। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হাদিসটি মুরসাল হওয়ার সাথে আরো দুটি কারণে জইফ। প্রথমতঃ বাসারী শায়খ একজন মাজহূল রাবী এবং দ্বিতীয়তঃ আবু মুহাম্মাদ আল আতাকী আমার নিকট একজন অপরিচিত রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৯২.আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] একবার একজন রোগীকে দেখিতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, কি খেতে তোমার মন চায়? জবাবে সে বলিল, গমের রূটি। এ কথা শুনে নবী [সাঃআঃ] বললেন, তোমাদের কাছে গমের রুটি আছে সে যেন তা তার ভাইয়ের জন্য পাঠায়। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের কোন রোগী কিছু খেতে চাইলে, তাকে তা খাওয়াবে। {১}
{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৪৩৯, ৩৪৪০। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে সফ্ওয়ান বিন হুরাইরাহ সম্পর্কে হাফিয ইবনি হাজার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, সে লীনুল হাদিস [হাদিস বর্ণনায় শিথিল]। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৯৩. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মাদীনায় মারা গেলেন, মাদীনায়ই তার জন্ম হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জানাযায় নামাজ আদায় করালেন। তারপর তিনি বললেন, হায়! এ ব্যক্তি যদি তার জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোন জায়গায় মৃত্যুবরণ করত। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, কেন? হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, কোন লোক জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোথাও মৃত্যুবরণ করলে তার মৃত্যুস্থান ও জন্মস্থানের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের জায়গা হিসেবে গণ্য করা হয়। {১}
{১} হাসান : নাসায়ী ১৮৩২, ইবনি মাজাহ ১৬১৪, সহীহ আত তারগীব ৩১৩৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৫৯৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সফররত অবস্থায় মারা যায় সে শাহীদ। {১}
{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৬১৩, জইফ আত তারগীব ১৮২৫। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এর সানাদে আবুল মুনযির আল হুযায়ল বিন আল হাকাম রয়েছে যাকে ঈমাম বোখারী এবং ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] মুনকারুল হাদিস বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৯৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রোগে ভুগে মারা যায়, সে শাহীদ হয়ে মারা গেল; তাকে ক্ববরের ফিতনাহ্ হইতে রক্ষা করা হবে। এছাড়াও সকাল-সন্ধ্যায় তাকে জান্নাত থেকে রিয্ক্ব দেয়া হবে। {১}
{১} মাওযূ : আত তিরমিজি ১৬১৫, শুআবুল ঈমান ৯৪২৫, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৪৬৬১, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৮৫০। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম বিন মুহাম্মাদ রয়েছে যাকে ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ এবং ইবনি মাঈন মিথ্যুক বলেছেন আর দারাকুত্বনী মাতরূক বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
১৫৯৬. ইরবায ইবনি সারিয়াহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শাহীদগণ এবং যারা বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা আল্লাহ তাআলার নিকট প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারীদের ব্যাপারে ঝগড়া করিবে। শাহীদগণ বলবে, “এরা আমাদের ভাই। কেননা আমাদেরকে যেভাবে নিহত করা হয়েছে, এভাবে এদেরকেও নিহত করা হয়েছে।” আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীগণ বলবে, “এরা আমাদের ভাই। এ লোকেরা এভাবে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যেভাবে আমরা মরেছি।” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, এদের জখমগুলোকে দেখা হোক। এদের জখম যদি শাহীদদের জখমের মতো হয়ে থাকে, তাহলে এরাও শাহীদদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের সাথে থাকিবে। বস্তুত যখন জখম দেখা হবে, তখন তা শাহীদদের জখমের মতো হবে। {১}
{১} সহীহ : নাসায়ী ৩১৬৪, আহমাদ ১৭১৫৯, শুআবুল ঈমান ৯৪১৬, সহীহ আত তারগীব ১৪০৬, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৮০৪৬। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৫৯৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্লেগ রোগ চড়িয়ে পড়লে ওখান থেকে ভেগে যাওয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে ভেগে যাবার মতো। প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে সেখানেই ধৈর্য ধরে অবস্থানকারী শাহীদের সাওয়াব পাবে। {১}
{১} হাসান লিগায়রিহী : আহমাদ ১৪৮৭৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২৯৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪২৭৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি
Leave a Reply