শেষ যুগে ঈমান বিদায় নিবে এবং ফিত্‌নার সৃষ্টি হওয়া

শেষ যুগে ঈমান বিদায় নিবে এবং ফিত্‌নার সৃষ্টি হওয়া

শেষ যুগে ঈমান বিদায় নিবে >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৬৪. অধ্যায়ঃ কারো কারো অন্তর থেকে ঈমান ও আমানাতদারী উঠিয়ে নেয়া এবং অন্তরে ফিত্‌নার সৃষ্টি হওয়া
৬৫. অধ্যায়ঃ শুরুতেই ইসলাম ছিল অপরিচিত; শিঘ্রই আবার তা অপরিচিতের ন্যায় হয়ে যাবে এবং তা দু মাসজিদ [মাসজিদুল হারাম ও মাসজিদুন নাবাবী] এর মাঝে আশ্রয় নিবে
৬৬. অধ্যায়ঃ শেষ যুগে ঈমান বিদায় নিবে
৬৭. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতির কারণে ঈমান গোপন রাখা যায়
৬৮. অধ্যায়ঃ ইমানের দূর্বলতা র দরুণ যার ব্যাপারে ধর্মত্যাগের সন্দেহ হয়, তার হৃদয় জয়ের জন্য বিশেষ সৌজন্য প্রদর্শন এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে নিশ্চিত মুমিন বলে ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকা

৬৪. অধ্যায়ঃ কারো কারো অন্তর থেকে ঈমান ও আমানাতদারী উঠিয়ে নেয়া এবং অন্তরে ফিত্‌নার সৃষ্টি হওয়া

২৬৩

হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] আমাদেরকে দুটি কথা বলেছিলেন, সে দুটির একটি তো আমি স্বচোখেই দেখেছি আর অপরটির অপেক্ষা করছি। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, মানব হৃদয়ের মূলে আমানাত নাযিল হয়, {৫৩} তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। অনন্তর তারা কুরআন শিখেছে এবং সুন্নাহর জ্ঞান লাভ করেছে। তারপর তিনি আমাদেরকে আমানাত উঠিয়ে নেয়ার বর্ণনা দিলেন। বলিলেন, মানুষ ঘুমাবে আর তখন তার অন্তর হতে আমানাত তুলে নেয়া হইবে। ফলে তার চিহ্ন থেকে যাবে একটি নুকতার মত। এরপর আবার সে ঘুমায় তখন তার অন্তর থেকে আমানাত তুলে নেয়া হইবে। ফলে তার চিহ্ন থেকে যাবে ফোস্কার মত; যেন একটি আগুনের ফুলকি যা তুমি তোমার পায়ে রগড়ে দিলে। তখন তাতে ফোস্কা পড়ে যায় এবং তুমি তা ফোলা দেখিতে পাও অথচ তাতে [পুঁজ-পানি ব্যতীত] কিছু নেই। তারপর রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] কয়েকটি কাঁকর নিয়ে তাহাঁর পায়ে ঘষলেন এবং বলিলেন, যখন এমন অবস্থা হয়ে যাবে তখন মানুষ বেচাকেনা করিবে কিন্তু কেউ আমানাত শোধ করিবে না। এমন কি বলা হইবে যে, অমুক বংশে একজন আমানাতদার আছেন। এমন অবস্থা হইবে যে, কাউকে বলা হইবে বড়ই বাহাদুর, হুঁশিয়ার ও বুদ্ধিমান অথচ তার অন্তরে দানা পরিমাণ ঈমান থাকিবে না।

হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] বলেন, এমন এক যুগও গেছে যখন যে কারোর সাথে লেনদেন করিতে দ্বিধা করতাম না। কারণ সে যদি মুসলিম হতো তবে তার দীনদারীই তাকে আমার হাক্‌ পরিশোধ করিতে বাধ্য করতো। আর যদি সে খৃষ্টান বা ইয়াহূদী হতো তবে তার প্রশাসক তা শোধ করিতে তাকে বাধ্য করত। কিন্তু বর্তমানে আমি অমুক অমুক ব্যতীত কারো সাথে লেনদেন করিতে রাজি না।

ইবনি নুমায়র ও ইসহাক্‌ ইবনি ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে পূর্ব বর্ণিত সানাদের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। [ই.ফা. ২৬৫, ২৬৬; ই.সে. ২৭৫, ২৭৬]

{৫৩} হাসান বলেন, আমানাত অর্থ দ্বীন ইসলাম, তাহাঁর দ্বীন সম্পূর্ণ আমানাত। আর আবুল আলিয়া বলেন, আমানাত অর্থ শারীআতের বিধি ও নিষেধ। মুকাতিল [রাঃআ:] বলেন, আমানাত অর্থ ইবাদাত। ইমাম ওয়াহিদী বলেন, অধিকাংশ মুফাস্‌সিরীনদের কথা এটাই যে, আমানাত অর্থ ফারযসমূহ ও ইবাদাতসমূহ যা পালন করিতে হইবে। পালন না করলে আল্লাহর আযাব হইবে। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

৬৫. অধ্যায়ঃ শুরুতেই ইসলাম ছিল অপরিচিত; শিঘ্রই আবার তা অপরিচিতের ন্যায় হয়ে যাবে এবং তা দু মাসজিদ [মাসজিদুল হারাম ও মাসজিদুন নাবাবী] এর মাঝে আশ্রয় নিবে

২৬৪

হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমরা উমার [রাঃআ:]-এর কাছে ছিলাম। তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে ফিত্‌নাহ সম্পর্কে আলোচনা করিতে শুনেছ? উপস্থিত একদল বলিলেন, আমরা শুনিয়াছি। উমার [রাঃআ:] বলিলেন, তোমরা হয়তো একজনের পরিবার ও প্রতিবেশীর ফিতনার কথা মনে করেছ। তারা বলিলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলিলেন, সলাত, সিয়াম ও সদাকার মাধ্যমে এগুলোর কাফ্‌ফারাহ্‌ হয়ে যায়। কিন্তু তোমাদের মধ্যে কে রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] হতে বড় বড় ফিত্‌নার কথা বর্ণনা করিতে শুনেছ, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ধেয়ে আসবে।

হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] বলেন, প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, আমি [শুনিয়াছি]। উমার [রাঃআ:] বলিলেন, তুমি শুনেছ, মাশাআল্লাহ। হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] —কে বলিতে শুনিয়াছি, চাটাই বুননের মত এক এক করে ফিত্‌না মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায় তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করিবে তাতে একটি উজ্জ্বল দাগ পড়বে। এমনি করে দুটি অন্তর দুধরনের হয়ে যায়। এটি সাদা পাথরের ন্যায়; আসমান ও জমিন যতদিন থাকিবে ততদিন কোন ফিত্‌না তার কোন ক্ষতি করিতে পারে না। আর অপরটি হয়ে যায় উল্টানো সাদা মিশ্রিত কলসির ন্যায়, তার প্রবৃত্তির মধ্যে যা গেছে তা ছাড়া ভাল-মন্দ বলিতে সে কিছুই চিনে না।

হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] বলিলেন, উমার [রাঃআ:]-কে আমি আরো বললাম, আপনি এবং সে ফিতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। অচিরেই সেটি ভেঙ্গে ফেলা হইবে। উমার [রাঃআ:] বলিলেন, সর্বনাশ! তা ভেঙ্গে ফেলা হইবে? যদি ভেঙ্গে ফেলা না হত তাহলে হয়ত পুনরায় বন্ধ করা যেত। হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] উত্তর করিলেন, না ভেঙ্গে ফেলাই হইবে। হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] বলিলেন, আমি উমার [রাঃআ:]-কে এ কথাও শুনিয়েছি, সে দরজাটি হলো একজন মানুষ; সে নিহত হইবে কিংবা স্বাভাবিত মৃত্যুবরণ করিবে। এটি কোন গল্প নয় বরং রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর হাদীস।

বর্ণনাকারী আবু খালিদ বলেনঃ আমি সাদকে জিজ্ঞেস করলাম, এর অর্থ কী? উত্তরে তিনি বলিলেন, কালো-সাদায় মিশ্রিত রং। আমি বললাম, এর অর্থ কী? তিনি বলিলেন, উল্টানো কলসি। [ই.ফা. ২৬৭; ই.সে. ২৭৭]

২৬৫

রিবঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:]-এর নিকট থেকে ফিরে এসে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বলিলেন, গতকাল যখন আমি আমীরুল মুমিনীন উমার [রাঃআ:]-এর কাছে বসা ছিলাম, তখন তিনি তাহাঁর সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কার ফিত্‌না সম্পর্কীয় হাদীস স্মরণ আছে …..। এরপর রাবী আবু খালিদ বর্ণিত পূর্বের হাদীসটির ন্যায় বর্ণনা করেন। তবে তিনি এর আবু মালিক বর্ণিত ব্যাখ্যার উল্লেখ করেননি। [ই.ফা. ২৬৮; ই.সে. ২৭৮]

২৬৬

রিবঈ ইবনি হিরাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন উমার [রাঃআ:] বলিলেন, রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] ফিত্‌নাহ্‌ সম্পর্কে কি বলেছেন এ সম্পর্কে তোমাদের কেউ আমাকে হাদীস বর্ণনা করিতে পারবে? তখন হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:]-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমি পারব …..। এরপর রিবঈ-এর সূত্রে বর্ণিত আবু মালিক-এর রিওয়ায়াতের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে এও উল্লেখ করেন যে, হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] বলেছেন, আমি উমার [রাঃআ:]-কে যে হাদীস বর্ণনা করেছি তা কোন বানোয়াট কথা নয়; বরং রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] থেকেই তা বর্ণনা করেছি। [ই.ফা. ২৬৯; ই.সে. ২৭৯]

২৬৭

আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করিয়াছেন : ইসলাম শুরুতে অপরিচিত ছিল, অচিরেই তা আবার শুরুর মতো অপরিচিত হয়ে যাবে। {৫৪} সুতরাং এরূপ অপরিচিত অবস্থায়ও যারা ইসলামের উপর টিকে থাকিবে তাহাদের জন্য মুবারাকবাদ। [ই.ফা ২৭০; ই.সে. ২৮০]

{৫৪} ইসলামের শুরু হয়েছে মাদীনাহ্‌ হতে অর্থাৎ পবিত্র মাক্কাহ্‌ হতে কিছু অপরিচিত মানুষ হিজরত করে মাদীনায় আসেন। তাহাদের দ্বারাই ইসলাম শুরু হয়েছে। ইসলাম শেষ যুগে ঐ অবস্থায় ফিরে যাবে। অর্থাৎ সারা বিশ্বে কাফির ও বেঈমানদের রাজ্য কায়িম হইবে। আর ঈমানদারগণ ওদের ভয়ে মাদীনায় ফিরে আসবে।

কাযী ইয়াজ বলেন : হাদীসের উদ্দেশ্য এই যে, প্রথমে ইসলাম আরম্ভ হয়েছিল অল্প সংখ্যক লোকের দ্বারা, শেষে যুগে কমতে কমতে ইসলাম আবার অল্প সংখ্যক লোকের মধ্যে রয়ে যাবে। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

২৬৮

ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] থেকে বর্ণনা করে বলেন, অপরিচিতের ন্যায় ইসলাম শুরু হয়েছিল, অচিরেই তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে তার গর্তে প্রবেশ করে তদ্রূপ ইসলামও দুই মাসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। {৫৫} [ই.ফা. ২৭১; ই.সে. ২৮১]

{৫৫} যখন পৃথিবীতে আল্লাহর নাম বলার মতো লোক থাকিবে না। তখন মহাপ্রলয় সংঘটিত হইবে। ইমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ যখন সমস্ত মানুষ অসৎ ও নিকৃষ্ট হয়ে যাবে তখন কিয়ামাত সংঘটিত হইবে। আর অন্য হাদীসে আছে কিয়ামাতের পূর্বে ইয়ামানের দিক হতে এক প্রকার হাওয়া প্রবাহিত হয়ে আসবে যার ফলে সব ঈমানদার লোক মৃত্যুবরণ করিবে। আর কিয়ামাতের আযাব নিকৃষ্ট দুর্ভাগা লোকদের উপরই কায়িম হইবে। [নাবাবী]

২৬৯

আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেনঃ সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে আপন গর্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তদ্রূপ ইসলামও সংকুচিত হয়ে মাদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করিবে। [ই.ফা. ২৭২; ই.সে. ২৮২]

৬৬. অধ্যায়ঃ শেষ যুগে ঈমান বিদায় নিবে

২৭০

আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলার মতো লোক থাকিবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামাত হইবে না।

আব্‌দ ইবনি হুমায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : আল্লাহ আল্লাহ বলার মতো একটি মানুষ অবশিষ্ট থাকতে কিয়ামাত হইবে না। [ই.ফা. ২৭৩, ২৭৪; ই.সে. ২৮৪]

৬৭. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতির কারণে ঈমান গোপন রাখা যায়

২৭১

হুযাইফাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর সাথে ছিলাম। তিনি নির্দেশ দিলেন, কতজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে তার হিসাব করে আমাকে বল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আমাদের সম্পর্কে কিছু আশঙ্কা করেন? আমাদের সংখ্যা ছয়শ থেকে সাতশ পর্যন্ত। তিনি বলিলেন, তোমরা জান না, হয়ত তোমরা কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে। {৫৬} রাবী বলেন, এরপর এক সময় আমরা এমন পরীক্ষা ও বিপদের সম্মুখীন হই যে, আমাদের কোন কোন লোককে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় আত্মগোপন করে সলাত আদায় করিতে হয়েছে। [ই.ফা. ২৭৫; ই.সে. ২৮৫]

{৫৬} আল্লাহর রসূল [সাঃআ:] বলেন, তোমরা জান না হয়ত তোমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে। অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] ঐ ফিত্‌নার দিকে ইশারা করিয়াছেন, যা তাহাঁর [সাঃআ:] ওফাতের পর সংঘটিত হয়েছে এবং মুসলিমরা একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। যার ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, মাসজিদে সলাত আদায় করা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; কোন কোন লোক প্রাণের ভয়ে ঘরেই সলাত আদায় করিতেন। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

৬৮. অধ্যায়ঃ ইমানের দূর্বলতা র দরুণ যার ব্যাপারে ধর্মত্যাগের সন্দেহ হয়, তার হৃদয় জয়ের জন্য বিশেষ সৌজন্য প্রদর্শন এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে নিশ্চিত মুমিন বলে ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকা

২৭২

সাদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] একবার কিছু মাল বণ্টন করছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে কিছু দিন, কেননা সে নিশ্চয়ই একজন মুমিন ব্যক্তি। নবি [সাঃআ:] বলিলেন, বরং বল যে, সে একজন মুসলিম। সাহাবী বলিলেন, আমি কথাটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছি, তিনিও তিনবারই আমাকে ঐ একই উত্তর দিয়েছেন। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, অপরজন আমার নিকট অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি কাউকে এ কারণে দিয়ে থাকি যে, আল্লাহ তাআলা যেন তাকে উল্টো করে জাহান্নামে না ফেলেন। [ই.ফা. ২৭৬; ই.সে. ২৮৬]

২৭৩

সাদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] কিছু লোককে কিছু মাল দিলেন। তখন সাদ [রাঃআ:] তাহাদের মধ্যে বসেছিলেন। সাদ [রাঃআ:] বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] তাহাদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে কিছু দিলেন না, অথচ আমার দৃষ্টিতে সে ছিল পাওয়ার বেশি উপযুক্ত। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তাকে তো মুমিন বলে জানি। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, বরং বল সে মুসলিম। আমি কিছুক্ষণ নীরব থাকলাম। তার সম্পর্কে আমি যা জানি তা আমার নিকট প্রবল হয়ে উঠল, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে অবশ্যই মুমিন বলে ধারণা করি! রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিলেন, বরং বল সে মুসলিম। আমি কিছুক্ষণ চুপ রইলাম। পুনরায় তার সম্পর্কে আমি যা জানি তা প্রবল হয়ে উঠল, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম, আমি তো তাকে অবশ্যই মুমিন বলে জানি! রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, বরং বল সে মুসলিম। অন্যজন আমার নিকট অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি কাউকে এ আশঙ্কায় কিছু দান করে থাকি যে, আল্লাহ তাআলা যেন তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ না করেন। {৫৭} [ই.ফা. ২৭৭; ই.সে. ২৮৭]

{৫৭} ইমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন : এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, [১] হাকিম বা শাসকের নিকট বৈধ কাজের একাধিকবার অনুরোধ করা জায়িয। [২] যুক্তিসঙ্গত কাজ হলে অধম উত্তমকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারে। আর উত্তমের জন্য আবশ্যকও নয় যে, তা মেনে নিবেন। বরং তাকে যে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করিতে হইবে। যুক্তিসঙ্গত না হলে প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন। [৩] কাউকেও নিশ্চিতভাবে মুমিন বলা সঠিক নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়া যায়। [৪] ইমাম নিজের ইচ্ছানুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজে পর্যায়ক্রমে মাল খরচ করিতে পারেন। [৫] শারঈ দলীল ছাড়া কাউকেও জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া সঠিক হইবে না। শারঈ দলীল যেমন- ১০ জন সহাবা ও অন্যান্য ব্যক্তিগণ যার উপর আহলে সুন্নাতের ইজমা আছে। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

২৭৪

সাদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] কয়েকজন লোককে কিছু দিলেন। তখন আমি তাহাদের মধ্যে বসা ছিলাম। এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এতটুকু বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর নিকট গেলাম এবং চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? [ই.ফা. ২৭৮, ই.সে ২৮৮]

২৭৫

ইসমাঈল ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনি সাদকে এ হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। তবে তিনি তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, সাদ [রাঃআ:] বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] আমার ঘাড় ও বাহুর মাঝখানে সজোরে হাত রেখে বলিলেন, হে সাদ! তুমি কি এজন্য বিতর্ক করিতে চাও? আমি কাউকে দান করি। [ই.ফা. ২৭৯; ই.সে. ২৮৯]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply