রুকু ও সিজদার তাসবিহ পদ্ধতি এবং নামাজের দোয়া সমূহ

রুকু ও সিজদার তাসবিহ পদ্ধতি এবং নামাজের দোয়া সমূহ

রুকু ও সিজদার তাসবিহ পদ্ধতি এবং নামাজের দোয়া সমূহ >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ ১৪০-১৭৫ =৩৬টি

অনুচ্ছেদ-১৪০ নামাজে পরিপূর্ণ তাকবীর বলা
অনুচ্ছেদ-১৪১ সাজদাহর সময় হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৪২ বিজোড় রাকআতের পরে দাঁড়ানোর নিয়ম
অনুচ্ছেদ-১৪৩ দু সাজদাহর মাঝখানে বসা
অনুচ্ছেদ-১৪৪ রুকু হইতে মাথা উঠানোর সময় যা বলবে
অনুচ্ছেদ-১৪৫ দু সাজাদাহর মাঝখানে দুআ
অনুচ্ছেদ-১৪৬ ইমামের পিছনে নামায আদায়কালে মহিলারা সাজদাহ হইতে মাথা কখন উঠাবে
অনুচ্ছেদ-১৪৭ রুকূ হইতে উঠে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো এবং দু সাজদাহর মাঝে দীর্ঘক্ষণ বসা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৪৮ যে ব্যক্তি রুকূতে স্বীয় পিঠ সোজা করে না
অনুচ্ছেদ-১৪৯ নাবী -(সাঃআঃ) এর বাণীঃ কারো ফরয নামায ত্রুটি থাকলে তা তার নাফল নামায দিয়ে পূর্ণ করা হইবে
অনুচ্ছেদ-১৫০ দু হাত দু হাটুঁর উপর রাখা
অনুচ্ছেদ-১৫১ রুকু ও সাজদাহর দুআ
অনুচ্ছেদ-১৫২ রুকু ও সাজদাহয় যা পাঠ করিবে
অনুচ্ছেদ-১৫৩ নামাজের মধ্যে দুআ করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১৫৪ রুকূ ও সিজদায় অবস্থানের পরিমাণ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১৫৫ কেউ ঈমামকে সিজদারত পেলে কি করিবে?
অনুচ্ছেদ–১৫৬ সাজদাহর অঙ্গসমূহ
অনুচ্ছেদ–১৫৭ নাক ও কপালের সাহায্যে সাজদাহ্ করা
অনুচ্ছেদ–১৫৮ সাজদাহ্‌র পদ্ধতি
অনুচ্ছেদ-১৫৯ প্রয়োজনে এ বিষয়ে শিথিলতা
অনুচ্ছেদ-১৬০ কোমরে হাত রাখা ও ইক্বআ করা
অনুচ্ছেদ-১৬১ নামাজে কান্নাকাটি করা
অনুচ্ছেদ-১৬২ নামাজের মধ্যে ওয়াস্‌ওয়াসা ও বিভিন্ন চিন্তা আসা অপছন্দনীয়
অনুচ্ছেদ-১৬৩ নামায ইমামের ভুল ধরিয়ে দেয়া
অনুচ্ছেদ-১৬৪ নামাজে ক্বিরাআতের ভুল শোধরানো নিষেধ
অনুচ্ছেদ-১৬৫ নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৬৬ নাক দিয়ে সাজদাহ্ করা

অনুচ্ছেদ-১৪০ নামাজে পরিপূর্ণ তাকবীর বলা

৮৩৫. মুত্বাররিফ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি এবংইমরান ইবনি হুসায়িনআলী ইবনি আবু তালিব (রাঃআঃ) এর পিছনে নামায আদায় করি। তিনি সাজদাহ ও রুকুকালে তাকবীর বলিতেন এবং দু রাকআত নামায শেষে (তৃতীয় রাকআতের জন্য) উঠার সময় তাকবীর বলিতেন। নামায শেষে প্রত্যাবর্তনকালে ইমরান (রাঃআঃ) আমার হাত ধরে বললেনঃ ইতিপূর্বে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আমাদেরকে নিয়ে যে নিয়মে নামায আদায় করিয়াছেন তিনিও সে নিয়ামেই নামায আদায় করিলেন।

দুর্বল ঃ বোখারি ও মুসলিম। রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৩৬. আবু বাকর ইবনিআবদূর রহমান এবং আবু সালামাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেন, আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) প্রত্যেক ফারয ও অন্যান্য নামায দাঁড়ানো এবং রুকুর সময় তাকবীর বলিতেন। অতঃপর সাজদাহয় যাওয়ার পূর্বে (দাঁড়িয়ে) বলিতেন

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ 

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ”

এরপর বলিতেন

 رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ

“রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ”।

তারপর সাজদাহকালে তিনি

اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার

বলিতেন। এরপর সাজদাহ থেকে মাথা উঠানো ও পুনরায় সাজদাহকালে এবং পুনরায় সাজদাহ হইতে মাথা উঠানোর সময় তিনি তাকবীর বলিতেন। দ্বিতীয় রাকআতের বৈঠক হইতে দাঁড়ানোর সময়ও তিনি তাকবীর বলিতেন। প্রত্যেক রাকআতেই তিনি তাকবীর বলিতেন। অতঃপর নামায শেষে তিনি বলিতেনঃ সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। তোমাদের তুলনায় আমার নামায রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি (সাঃআঃ) দুনিয়া ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত এভাবেই নামায আদায় করতেন।

দুর্বল ঃ বোখারি, মুসলিমে সংক্ষেপে। ঈমাম আবু দাউদ (রাঃআঃ) বলেন, ঈমাম মালিক, যুবায়দী, ও অন্যরা যুহরী হইতে আলী ইবনি হুসাইনের সূত্রে এটাকে সর্বশেষ বাক্য বলেছেন। আর আব্দুল আলা মামার হইতে যুহরীর সূত্রে এ বিশয়ে একমত পোষণ করিয়াছেন। রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৩৭. আব্দুর রহমান ইবনি আবযা হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথে নামায আদায় করিয়াছেন। তিনি (সাঃআঃ) পূর্ণভাবে তাকবীর বলিতেন না। ঈমাম আবু দাউদ (রাঃআঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, তিনি (সাঃআঃ) রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর সাজদাহয় গমনের ইচ্ছা করলে পূর্ণরূপে তাকবীর বলিতেন না এবং সাজদাহ থেকে উঠে দাঁড়নোর সময়ও পূর্ণরূপে তাকবীর বলিতেন না। {৮৩৭}

{৮৩৭}- আহ্মাদ (৩/৪০৬,৪০৭)। এর সানাদের হাসান ইবনিইমরান সম্পর্কে হাফিযআত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় শিথিল। রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৪১ সাজদাহর সময় হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখা প্রসঙ্গে

৮৩৮. ওয়ায়িল ইবনি হুজর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি দেখেছি নাবী (সাঃআঃ) নামায সাজদাহয় গমনকালে (জমিনে) হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখতেন এবং সাজদাহ হইতে দাঁড়নোর সময় হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন। {৮৩৮}

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৩৯. আবদুল জাব্বার ইবনি ওয়ায়িল হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ) এর নামায সম্পর্কে হাদিস বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) সাজদাহকালে স্বীয় হস্তদ্বয় মাটিতে রাখার পূর্বে হাঁটুদ্বয় মাটিতে স্থিরভাবে রাখতেন। বর্ণনাকারী হাম্মাম (রাঃআঃ) শাক্বীক্ব সূত্রে বর্ণনা করেন যে,আসিম ইবনি কুলায়ির তাহাঁর পিতার হইতে নাবী (সাঃআঃ) এর সূত্রে উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। উল্লিখিত বর্ণনাকারীদ্বয়ের মধ্যে আমার জানামতে সম্ভাব্য মুহাম্মাদ ইবনি জুহাদা বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ তিনি (সাঃআঃ) সাজদাহর পর উঠে দাঁড়ানোর সময় হাঁটু ও রানের উপর ভর করে দাঁড়াতেন। {৮৩৯}

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৪০. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সাজদাহর সময় উটের ন্যায় না বসে এবং সাজদাহকালে যেন মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখে

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪১. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কেউ নামায উটের বসার ন্যায় বসে থাকে।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৪২ বিজোড় রাকআতের পরে দাঁড়ানোর নিয়ম

৮৪২. আবু ক্বিলাবাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আবু সুলায়মান মালিক ইবনিল হুওয়াইরিস (রাঃআঃ) আমাদের মাসজিদে এসে বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে নিয়ে নামায আদায়ের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে পদ্ধতিতে নামায আদায় করতেন তা তোমাদেরকে দেখাতে চাই।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি আবু ক্বিলাবাহকে বললাম, তিনি কিভাবে নামায আদায় করতেন? জবাবে তিনি বলিলেন, আমাদের শায়খআমর ইবনি সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- এর নামাজের অনুরূপ, যিনি তাহাঁদের ঈমাম ছিলেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, তিনি প্রথম রাকআতের শেষ সাজদাহ্ হইতে মাথা উঠানোর পর একটু বসতেন, অতঃপর উঠে দাঁড়াতেন।

সহীহঃ বোখারি।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪৩. আবু ক্বিলাবাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আবু সুলায়মান মালিক ইবনিল হুওয়াইরিস (রাঃআঃ) আমাদের মাসজিদে এসে বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি এখন নামায আদায় করবো, কিন্তু নামায আদায়ের উদ্দেশে নয়। বরং রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছি তা তোমাদেরকে দেখাতে চাই।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি প্রথম রাকআতের দ্বিতীয় সাজদাহ হইতে মাথা উঠানোর পর একটু বসতেন

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪৪. মালিক ইবনিল হুওয়াইরিস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি দেখেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) নামাজের বিজোড় রাকআত সমূহে সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত দাঁড়াতেন না।

সহীহঃ বোখারি।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৪৩ দু সাজদাহর মাঝখানে বসা

৮৪৫. ইবনি জুরাইজ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু জুবাইর ত্বাউস থেকে শুনে আমাকে বলেছেন যে, আমরা ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) কে দু সাজদাহর মাঝে দু পায়ের গোড়ালির উপর পাছা রেখে বসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বলেন, এটি সুন্নাত। ত্বাউস বলেন, আমরা বললাম, আমরা এরূপ করাকে পায়ের জন্য কষ্টকর মনে করি। জবাবে ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) বলিলেন, এরূপ করা তোমার নাবীর (সাঃআঃ) সুন্নাত।

সহীহঃ মুসলিম।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৪৪ রুকু হইতে মাথা উঠানোর সময় যা বলবে

৮৪৬. আবদুল্লা ইবনি আবুআওফা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে বলিতেনঃ

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ ‏

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, মিলউস-সামাওয়াতি ওয়া মিলউল আরদি ওয়া মিলউ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু”।

সহীহঃ মুসলিম।

ঈমাম আবু দাউদ (রাঃআঃ) বলেন, সুফয়ান ও শুবাহ হাদিসটিউবাইদ আবুল হাসান হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে “রুকূর পরে” কথাটি উল্লেখ নেই। সুফয়ান সাওরী বলেন, আমরা শায়খউবাইদ আবুল হাসানের সাথে সাক্ষাত করেছি। তিনিও তাতেরুকুর পরে কথাটি উল্লেখ করেননি। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবুইসমাহ হইতে, তিনি আমাশ হইতে, তিনিউবাইদ হইতে এ হাদিস বর্ণনার সময় “রুকুর পরে” কথাটি উল্লেখ করেন।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ 

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলার পর বলিতেন

اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاءِ 

“আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ মিলউস-সামায়ি”।

(বর্ণনাকারী মুআম্মালের বর্ণনা মতে)

 مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ 

“মিলউস সামাওয়াতি ওয়া মিলউল আরদি ওয়া মিলউ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু, আহলুস সানায়ি ওয়াল মাজদি আহাক্কু মা ক্বলালআবদু, ওয়া কুল্লুনা লাকাআবদুন লা মা-নিআ লিমা আত্বাইতা”।

বর্ণনাকারী মাহমুদের বর্ণনায় এ বাক্যটিও রয়েছেঃ

‏ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ

“ওয়ালা মুত্বিয়া লিমা মানাতা”।

অতঃপর সমস্ত বর্ণনাকারী এ বাক্যটি বলার বিষয়ে একমতঃ

 وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ 

“ওয়ালা ইয়ানফাউ যাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।”

সহীহঃ মুসলিম।

বর্ণনাকারী বিশর বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কেবল “রব্বানা লাকাল হামদ” বলিতেন। মাহমুদের বর্ণনায় “আল্লাহুম্মা” শব্দটি নেই। তিনি শুধু “রব্বানা লাকাল হামদ” এর কথা উল্লেখ করিয়াছেন।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪৮. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ঈমাম

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্”

বললে তোমরা বলবেঃ

 اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ

“আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ”।

কেননা যার এ উক্তি ফেরেশতাহাঁদের উক্তির সাথে একই সময়ে উচ্চারিত হইবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হইবে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪৯. আমির (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুক্তাদীগণ ইমামের পিছনে

سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ 

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলবে না, বরং বলবে

 رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ

“রব্বানা লাকাল হামদ”।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান মাকতু

অনুচ্ছেদ১৪৫ দু সাজাদাহর মাঝখানে দুআ

৮৫০. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দু সাজদাহ্র মাঝে এ দুআ পড়তেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

“আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াআফিনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুক্বনী”।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ১৪৬ ইমামের পিছনে নামায আদায়কালে মহিলারা সাজদাহ হইতে মাথা কখন উঠাবে

৮৫১. আসমা বিনতু আবু বাক্‌র (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের (নারীদের) মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে বিশ্বাসী, তারা যেন পুরুষদের মাথা উঠানোর পূর্বে নিজেদের মাথা উত্তোলন না করে। কেননা পুরুষদের সতর দেখা নারীদের জন্য অপছন্দনীয়।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৪৭ রুকূ হইতে উঠে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো এবং দু সাজদাহর মাঝে দীর্ঘক্ষণ বসা সম্পর্কে

৮৫২. আল-বারাআ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সাজদাহ্, রুকূ ও দু সাজদাহ্র মধ্যবর্তী বৈঠক প্রায় একই সমান হতো।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৫৩. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যেমন সংক্ষেপে অথচ পূর্ণাঙ্গভাবে নামায আদায় করতেন, আমি এরূপ নামায অন্য কারো পিছনে আদায় করিনি। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ 

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার পর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমাদের মনে হতো যে, তিনি ভুলে গেছেন। অতঃপর তিনি তাকবীর বলে সাজদাহ্ করতেন এবং দু সাজদাহ্র মধ্যবরতী সময়ে এতো দীর্ঘক্ষণ বসতেন যে, আমাদের মনে হতো তিনি দ্বিতীয় সাজদাহ্র কথা হয়তো ভুলে গেছেন।

সহীহঃ মুসলিম, বোখারি সংক্ষেপে।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৫৪. আল-বারাআ ইবনিআযিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি ইচ্ছাকৃতভাবে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) কে নামাযরত অবস্থায় দেখি। আমি তাহাঁর ক্বিয়ামকে রুকূ ও সাজদাহ্র অনুরূপ পেলাম। তাহাঁর রুকূ তাহাঁর সাজদাহ্র সমান এবং দু সাজদাহ্র মাঝখানের বৈঠক, অতঃপর সাজদাহ্ করা, অতঃপর সালাম ফিরানো পর্যন্ত বৈঠক প্রায় একই সমান পেয়েছি।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুসাদ্দাদ বলেন, তাহাঁর রুকূ এবং দু রাকআতের মধ্যবর্তী ইতিদাল, তাহাঁর সাজদাহ্ ও দু সাজদাহ্র মাঝে বসা, দ্বিতীয় সাজদাহ্ এবং সালাম ফিরানোর পর লোকদের দিকে মুখ করে বসা- সবই প্রায় একই সমান ছিল।

সহীহঃ মুসলিম।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৪৮ যে ব্যক্তি রুকূতে স্বীয় পিঠ সোজা করে না

৮৫৫. আবু মাসউদ আল-বাদ্‌রী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রুকূ ও সাজদাহ্তে পিঠ সোজা করে না, তাহাঁর নামায যথেষ্ট নয়।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৫৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মসজিদে প্রবেশ করিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করলো এবং এসে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে সালাম করলো। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং আবার নামায আদায় করো, তুমি নামায আদায় করোনি। লোকটি ফিরে গিয়ে আগের মতো নামায আদায় করে এসে নাবী (সাঃআঃ) কে পুনরায় সালাম দিলো। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সালামের জবাব দিয়ে বলেনঃ তুমি গিয়ে আবার নামায আদায় করো, কারণ তুমি তো নামায আদায় করোনি। এভাবে লোকটি তিনবার নামায আদায় করলো। অতঃপর লোকটি বলিল, ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন, আমি এর চাইতে উত্তমরূপে নামায আদায় করতে পারি না। কাজেই আমাকে নামাজের পদ্ধতি শিখিয়ে দিন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ তুমি নামায দাঁড়ানোর সময় সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর তোমার সুবিধানুয়ায়ী কুরআনের আয়াত পাঠ করিবে, অতঃপর শান্তি ও স্থিরতার সাথে রুকূ করিবে, অতঃপর রুকূ হইতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে সাজদাহ্ করিবে। এরপর প্রশান্তির সাথে বসবে। এভাবেই তোমার পুরো নামায আদায় করিবে।

অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ নাবী (সাঃআঃ) সর্বশেষে তাকে বললেনঃ তুমি এভাবে নামায আদায় করলে তোমার নামায পরিপূর্ণভাবে আদায় হইবে। আর এর কোন অংশ আদায়ে ত্রুটি করলে তোমার নামাযও ত্রুটিপুর্ণ হইবে। এতে আরো রয়েছেঃ নাবী (সাঃআঃ) তাকে বলেনঃ তুমি নামায আদায় করতে চাইলে প্রথমে উত্তমরূপে উযু করে নিবে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৫৭. আলী ইবনি ইয়াহইয়াহ (রাঃআঃ) হইতে তাহাঁর চাচার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। অতঃপর তিনি পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তিনি তাতে বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ উযুর অঙ্গসমূহ উত্তমরূপে না ধুলে নামায পূর্ণ হইবে না। উযুর অঙ্গসমূহ উত্তমরূপে না ধুলে নামায পূর্ণ হইবেনা।

উযুর পর তাকবীরে তাহরীমা বলে হাম্‌দ ও সানা পড়ে কুরআন হইতে যা ইচ্ছে হয় তিলওয়াত করিবে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে এমনভাবে রুকু করিবে যেন তার জোড়াসমূহ স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান করে। অতঃপর “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌” বলে স্থিরভাবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে এমন সাজদাহ্‌ করিবে, যাতে শরীরের জোড়াসমূহ স্ব–স্ব স্থানে যথারীতি অবস্থান করে। অতঃপর “আল্লাহু আকবার” বলে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে এবং পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্‌তে যাবে, শরীরের জোড়া সমূহ প্রশান্তি লাভ না করা পর্যন্ত সাজদাহ্‌তে অবস্থান করিবে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্‌ হইতে মাথা উঠাবে। কোন ব্যক্তি যখন এরূপে নামায আদায় করিবে, তখনই তার নামায পরিপূর্নভাবে আদায় হইবে।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৫৮. রিফাআহ ইবনি রাফি (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গভাবে উযু না করলে কারও নামায শুদ্ধ হইবে না। সুতরাং সে তার মুখমন্ডল এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুবে, মাথা মাসাহ করিবে এবং উভয় পা গোড়ালীসহ ধুবে। অতঃপর হাম্মাদের হাদিসের অনুরূপ। তিনি (সাঃআঃ) বলেনঃ আল্লাহু আকবার বলে কপাল মাটিতে লাগিয়ে সাজদাহ করিবে এমনভাবে যেন শরীরের জোড়াসমূহ স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান করে ও প্রশান্তি পায়। এরপর তাকবীর বলে সোজা হয়ে পাছার উপর ভর দিয়ে বসবে এবং পিঠ সোজা রাখবে। এরূপে তিনি চার রাকআত নামাজের নিয়ম শেষ পর্যন্ত বর্ণনা দেন। এ পদ্ধতিতে নামায আদায় না করলে তোমাদের কারো নামাযই পরিপূর্ণ হইবে না।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৫৯.রিফাআহ ইবনি রাফি (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

উপরোক্ত ঘটনা বর্ণিত আছে। তিনি (সাঃআঃ) বলেনঃ তুমি নামায আদায়ে দাঁড়ালে ক্বিবলাহমুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলে সূরাহ ফাতিহা এবং কুরআনের কিছু অংশ তিলওয়াত করিবে। অতঃপর রুকূতে তোমার দুহাত দুহাঁটুর উপর রাখবে এবং পিঠ লম্বা করে রাখবে। তিনি আরো বলেনঃ তুমি সাজদাহ্ করলে তাতে কিছুক্ষন অবস্থান করিবে এবং সাজদাহ্ হইতে মাথা উঠানোর পর তোমার বাম উরূর উপর বসবে।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৮৬০. রিফাআহ ইবনি রাফি (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি (সাঃআঃ) বলেনঃ তুমি নামায আদায়ে দাঁড়িয়ে মহা মহীয়ান আল্লাহর নামে তাকবীর বলবে। এরপর কুরআনের যে অংশ তোমার জন্য সহজ তা তিলওয়াত করিবে। তিনি (সাঃআঃ) বলেনঃ তুমি নামাজের প্রথম বৈঠকে প্রশান্তির সাথে বসবে এবং এ সময় তোমরা বাম পা বিছিয়ে দিবে, অতঃপর তাশাহুদ পড়বে। অতঃপর আবার দাঁড়ালে উপরোক্ত নিয়মেই নামায শেষ করিবে।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৮৬১. রিফাআহ ইবনি রাফি (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে উপরোক্ত হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী উযূ করো, তারপর শাহাদাত পাঠ করো। তারপর দাঁড়িয়ে

আল্লাহু আকবার বলার পর কুরআনের মুখস্থ অংশ পাঠ করো। অন্যথায়

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

পাঠ করো। তাতে আরো রয়েছেঃ এর থেকে কিছু বাদ দিলে তুমি তোমার নামাযকে ত্রুটিপূর্ণ করলে।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৬২. আবদুর রহমান ইবনি শিব্‌ল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিষেধ করিয়াছেন কাকের ঠোকরের মত (তাড়াতাড়ি) সাজদাহ্‌ করতে, চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বাহু বিছাতে এবং উটের ন্যায় মাসজিদের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৮৬৩. সালিম আল-বার্‌রাদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরাউক্ববাহ ইবনিআমির আল-আনসারী (রাঃআঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললাম, আমাদেরকে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নামায সম্পর্কে অবহিত করুন। তখন তিনি আমাদের সামনে মাসজিদে দাঁড়ালেন এবং

আল্লাহু আকবার

বলে নামায আরম্ভ করিলেন। তিনি রুকূতে স্বীয় দুহাত দুহাঁটুর উপর রাখেন এবং তাহাঁর আঙ্গুলগুলো হাঁটুর নীচের অংশে রাখেন আর দুহাতের কনুইদ্বয় ফাঁকা রাখেন, এমতাবস্থায় শরীর স্থির হয়ে যায়। এরপর তিনি

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ 

সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌

বলে সোজা হয়ে দাঁড়ান। অতঃপর

আল্লাহু আকবার

বলে সাজদাহ্‌তে যান এবং দুহাতের কনুইদ্বয় ফাঁকা রেখে এমনভাবে সাজদাহ্‌ করেন যে, তাহাঁর সমস্ত শরীর স্থির হয়ে গেলো। অতঃপর সাজদাহ্‌ থেকে মাথা উঠিয়ে স্থিরভাবে বসেন। তিনি আরো এক রাকআত অনুরূপভাবে আদায় করেন। এভাবে তিনি চার রাকআত নামায আদায় করার পর বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে এভাবেই নামায আদায় করতে দেখেছি।

রুকু ও সিজদার তাসবিহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৪৯ নাবী -(সাঃআঃ) এর বাণীঃ কারো ফরয নামায ত্রুটি থাকলে তা তার নাফল নামায দিয়ে পূর্ণ করা হইবে

৮৬৪. আনাস ইবনি হাকীম আদ্‌-দাব্বী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি যিয়াদ অথবা ইবনি যিয়াদের ভয়ে মদিনায় চলে আসেন এবং আবু হুরাইরা (রাঃআঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করেন। আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) আমাকে তাহাঁর বংশ পরিচয় দিলেন এবং আমি ও আমার বংশ পরিচয় দিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ হে যুবক! আমি কি তোমার কাছে হাদিস বর্ণনা করব না? জবাবে আমি বলিঃ হ্যাঁ, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন ! বর্ণনাকারী ইউনুস বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এ হাদিস সরসরি নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষেরআমালসমূএর মধ্যে সর্বপ্রথম তাহাঁদের নামায সম্পর্কে হিসাব নেয়া হইবে। তিনি বলেনঃ আমাদের মহান রব্ব ফেরেশতাহাঁদের বান্দার নামায সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করবেন, দেখো তো সে তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি তাতে কোন ত্রুটি রহিয়াছে? অতঃপর বান্দার নামায পূর্নাঙ্গ হলে পূর্নাঙ্গই লিখা হইবে। আর যদি তাতে ত্রুটি থাকে তাহলে মহান আল্লাহ ফেরেশতাহাঁদের বলবেন, দেখো তো আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি থাকে তাহলে তিনি বলবেনঃ আমার বান্দার ফরয নামাজের ঘাটতি তার নফল নামায দ্বারা পরিপূর্ণ করো। অতঃপর সকল আমলই এভাবে গ্রহন করা হইবে (অর্থাৎ নফল দ্বারা ফরযের ত্রুটি দূর করা হইবে)।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৬৫. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত।

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৮৬৬. তামীম আদ্-দারী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ অর্থের হাদিস বর্ণিত। তিনি (সাঃআঃ) বলেনঃ অতঃপর যাকাতের হিসাব ও অনুরূপভাবে নেয়া হইবে। অতঃপর অন্যান্য আমলের হিসাব ও অনুরূপভাবে গ্রহণ করা হইবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫০ দু হাত দু হাটুঁর উপর রাখা

৮৬৭. মুসআব ইবনি সাদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে নামায আদায়কালে আমার দুহাত দুহাটুঁর মাঝখানে রাখলে তিনি আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু আমি পুনরায় এরূপ করলে তিনি আমাকে বলেনঃ এরূপ করো না, কেননা পূর্বে আমরাও এরূপ করতাম; কিন্তু আমাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করা হয় এবং আমাদেরকে হাঁটুর উপর হাত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৬৮. আলক্বামাহ ও আসওয়াদ হইতেআবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমাদের কেউ রুকুর সময় যেন তার দুই বাহু রানের উপর বিছিয়ে রাখে এবং দুহাত একত্রে মিলিয়ে রাখে। কেননা (এখনো) আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর আঙ্গুলগুলো বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে দেখছি।

সহীহঃ মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫১ রুকু সাজদাহর দুআ

৮৬৯. উক্ববাহ ইবনিআমির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,

ফাসাব্বিহ বিসমিরব্বিকাল আযীম কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, তোমরা এটা রুকুতে পাঠ করিবে। অতঃপর সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা এ আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি বলেন, তোমরা এটা সাজদাহইতে পাঠ করিবে। {৮৬৯}

দুর্বলঃ ইরওয়া। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৭০. উক্ববাহ ইবনিআমির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছেঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রুকুতে

‏ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ

সুবহানা রব্বিয়াল আযীম ওয়া বিহামদিহী

তিনবার বলিতেন এবং সাজদাহইতে

 سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى وَبِحَمْدِهِ

সুবহানা রব্বিয়াল আলা ওয়া বিহামদিহী

তিনবার বলিতেন। {৮৭০}

দুর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রাঃআঃ) বলেন,বিহামদিহী শব্দটি নিয়ে আমরা সন্দিহান।

{৮৭০}- এটি পূর্বের হাদীসে গত হয়েছে এবং এর সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক ব্যক্তি রহিয়াছে।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৭১. হুযাইফাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে নামায আদায় করিয়াছেন। তিনি রুকুতে

 سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

সুবহানা রব্বিয়াল আযীম, আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি

الْعَظِيمِرَبِّيَ سُبْحَانَ
মহান আমার রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি

এবং সাজদা হইতে

 سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

সুবহানা রব্বিয়াল আলা, আমার রবের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি, যিনি সবার উপরে

الأَعْلَىرَبِّيَ سُبْحَانَ
যিনি সবার উপরেআমার রবের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি

পাঠ করতেন এবং কুরআন তিলাওয়াতকালে তিনি কোন রহমাতের আয়াতে পৌঁছলে সেখানে থেমে রহমাতের দুআ করতেন এবং কোনআযাবের আয়াত তিলাওয়াতকালে সেখানে থেমেআযাব থেকে পরিত্রান চাইতেন।

সহীহঃ মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭২. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সাজদাহ এবং রুকূতে

 سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلاَئِكَةِ وَالرُّوحِ 

সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ, (আল্লাহ তাআলা) পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত; (তিনি) সব ফেরেশতা ও জিবরিলের প্রভু

رَبُّ قُدُّوسٌ سُبُّوحٌ
প্রভুআল্লাহ তাআলাঅতিপবিত্র
وَالرُّوحِ الْمَلاَئِكَةِ
ও জিবরিলেরসব ফেরেশতা

বলিতেন।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭৩. আওফ ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সাথে নামায আদায়ে দাঁড়ালাম। তিনি সূরাহ বাক্বারাহ তিলাওয়াতের সময় কোন রহমাতের আয়াতে পৌঁছলে তথায় থেমে রহমাত চাইতেন এবং যখন কোন আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, তখন সেখানে থেমে আযাব হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। অতঃপর তিনি কিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকূতে অবস্থান করেন এবং তাতে

 سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ وَالْمَلَكُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ 

“সুবহানা যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়ালআযমাতি”, অর্থ : ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি সর্বময় ক্ষমতা, সার্বভৌমত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী।’

الْجَبَرُوتِ ذِي سُبْحَانَ
পবিত্র ওই সত্তা
وَالْعَظَمَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْمَلَكُوتِ

পাঠ করেন। অতঃপর তিনি কিয়ামের সমপরিমাণ সময় সাজদাহইতে অবস্থান করেন এবং তাতেও উক্ত দুআ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি (দ্বিতীয় রাকআতে) দাঁড়িয়ে সূরাহ আলে-ইমরান তিলাওয়াত করেন। অতঃপর (প্রত্যেক রাকআতে) একটি করে সূরাহ তিলাওয়াত করেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭৪. হুযাইফাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা রাতে তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে নামায আদায় করতে দেখলেন। এ সময় তিনি (সাঃআঃ)

তিনবার আল্লাহু আকবার

বলার পর

যুল-মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়ালআযমাতি, অর্থ : ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি সর্বময় ক্ষমতা, সার্বভৌমত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী।’

পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সূরাহ বাকারাহ তিলাওয়াত শুরু করেন। এবং তাহাঁর রুকু ছিলো কিয়ামের সমপরিমাণ সময়। তিনি রুকুতে

 سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ 

সুবহানা রব্বিয়াল আযীম, সুবহানা রব্বিয়াল আযীম, আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি

পাঠ করেন। অতঃপর রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে প্রায় রুকুর সমপরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন এবং এ সময়

 لِرَبِّيَ الْحَمْدُ 

“লি-রব্বিয়াল হামদ”

পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সাজদাহয় গিয়ে তাতে কিয়ামের অনুরূপ সময় অবস্থান করেন এবং হে সময়সুবহানা রব্বিয়াল আলা পাঠ করেন। অতঃপর সাজদাহ হইতে মাথা উঠিয়ে দু সাজদাহর মাঝে সাজদাহয় অবস্থানের সমপরিমাণ সময় বসে থাকেন এবং এখানে তিনি

 رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي 

রব্বিগফিরলী রব্বিগফিরলী, প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন, প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন

পাঠ করেন। এরূপে তিনি চার রাকআত নামায আদায় করেন এবং এ নামায সূরাহ আল-বাকারাহ, সূরাহ আলে-ইমরান, সূরাহ নিসা এবং সূরাহ মায়িদাহ অথবা সূরাহ আনআম তিলাওয়াত করেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫২ রুকু সাজদাহয় যা পাঠ করিবে

৮৭৫. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বান্দা সাজদাহর সময়ে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে। কাজেই এ সময় তোমরা অধিক পরিমাণে দুআ পাঠ করিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭৬. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) (অসুস্থকালে) স্বীয় হুজরার পর্দা উঠিয়ে দেখলেন, লোকেরা আবু বাকর (রাঃআঃ)-এর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ হে লোকেরা ! নবুওয়্যাতের কিছুই অবশিষ্ট নেই, তবে মুসলিমরা যে নেক স্বপ্ন দেখবে তা ব্যতিত। তিনি আরো বলেনঃ আমাকে রুকু ও সাজদা হইতে কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা রুকু অবস্থায় রব্বের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো এবং সাজদাহইতে বেশি করে দুআ পড়ার চেষ্টা করো। আশা করা যায়, তোমাদের দুআ কবুল হইবে।

সহীহঃ মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭৭. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রুকূ ও সাজদাহ্তে বেশী করে এ দুআ পড়তেনঃ

 سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী”। অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু, আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি আর আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।

رَبَّنَا اللَّهُمَّ سُبْحَانَكَ
হে আমাদের প্রভু, আল্লাহ!আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি
اغْفِرْ لِياللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ
আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিনহে আল্লাহ!আর আপনার প্রশংসা করছি

তিনি এভাবে কুরআনের আয়াতকে ব্যাখ্যা করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭৮. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সাজদাহ্তে এ দুআ পড়তেনঃ

‏ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ

“আল্লাহুম্মাগফিরলী যামবী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জুল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু।”, অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার সব গুনাহ ক্ষমা করে দাও। সুক্ষ্ম ও স্থূল, শুরুর দিকের ও শেষের দিকে (গুনাহ ক্ষমা করে দাও);

لِي اغْفِرْ اللَّهُمَّ
আমার সব গুনাহ ক্ষমা করে দাওহে আল্লাহ!
دِقَّهُ كُلَّهُ ذَنْبِي
সব শেষের দিকে
وَآخِرَهُوَأَوَّلَهُ وَجِلَّهُ
শেষের দিকে

ইবনিস সারহ এ বাক্যটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেনঃ

 عَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ

“আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।” প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (গুনাহও ক্ষমা করে দাও)।’

وَسِرَّهُعَلاَنِيَتَهُ

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭৯. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বিছানায় না পেয়ে তার খোঁজে মাসজিদে গিয়ে সেখানে তাঁকে সাজদাহ্রত দেখিতে পেলাম। এ সময় তাহাঁর দু পায়ের পাতা খাড়া ছিল। তিনি এ দুআ পড়ছিলেনঃ

 أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَأَعُوذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

“আউযু বিরিদাকা মিন্ সাখাতিকা ওয়া আউযু বিমাআফাতিকা মিনউকুবাতিকা ওয়া আউযুবিকা মিনকা লা উহসী সানায়ানআলাইকা আনতা কামা আসনাইতাআলা নাফসিকা।, অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার খুশির জন্য তোমার অখুশি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, তোমার ক্ষমা ও অনুকম্পার জন্য তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং তোমার সত্বা হতে তোমার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পরি না, তুমি তেমনি যেমন তুমি নিজের প্রশংসা করেছ।’

مِنْ بِرِضَاكَ أَعُوذُ
থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি
بِمُعَافَاتِكَ وَأَعُوذُ سَخَطِكَ
আশ্রয় প্রার্থনা করিতোমার অখুশি
وَأَعُوذُ عُقُوبَتِكَ مِنْ
আশ্রয় প্রার্থনা করিতোমার শাস্তিথেকে
لاَ مِنْكَ بِكَ
না
عَلَيْكَ ثَنَاءً أُحْصِي
أَثْنَيْتَ كَمَا أَنْتَ
যেমন
نَفْسِكَعَلَى
তুমি নিজের

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫৩ নামাজের মধ্যে দুআ করা সম্পর্কে

৮৮০. উরওয়াহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

আয়িশা (রাঃআঃ) তাঁকে অবহিত করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে এ দুআ পড়তেনঃ

 اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

“আল্লাহুমা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযাবিল ক্ববরি ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুমা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরাম।”

তখন এক ব্যাক্তি বললো, মাগরাব (ঋণ) হইতে অধিক পরিমাণে আশ্রয় প্রার্থনার কারণ কি? জবাবে তিনি বলিলেন, কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হলে কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদাহ্ করলে তা ভঙ্গ করে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৮১. আবদুর রহমান উবনু আবু লায়লাহ (রাঃআঃ) হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পাশে দাঁড়িয়ে নফল নামায পড়ছিলাম। তখন আমি তাঁকে এ দুআ পড়তে শুনেছিঃ

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ النَّارِ وَيْلٌ لأَهْلِ النَّارِ

“আউযুবিল্লাহি মিনান্নার ওয়া ওয়াইলুল লি-আহলিন্নার। {৮৮১}

{৮৮১} মুসলিম, আহমাদ। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৮২. আবু সালামাহ্ (রাঃআঃ) হইতে আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সাথে আমরা নামাজে দাঁড়ালাম। নামাজের মধ্যেই এক বেদুইন বললোঃহে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) ও আমার উপর রহমাত বর্ষণ করুন এবং আমাদের সাথে অন্যদের উপর রহমাত করবেন না। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সালাম ফিরিয়ে ঐ বেদুইনকে বললেনঃ তুমি প্রশস্ত বস্তুকে সংকীর্ণ করে ফেলেছো। অর্থাৎ মহান আল্লাহ রহমাত প্রশস্ত।

সহীহঃ বোখারি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৮৩. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)

“সাব্বিহিসমা রব্বিকালআলা” তিলাওয়াত করলে বলিতেনঃ “সুবহানা রব্বিকাল আলা।”

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৮৪. মূসা ইবনি আবুআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার বাড়ির ছাদে নামায আদায় করতেন। তিনি যখন কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করতেনঃ “তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন?” তখন জবাবে বলিতেন, “সকল পবিত্রতা তোমারই জন্য, অবশ্যই আপনি সক্ষম।” পরে লোকেরা এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) কাছ থেকে এরূপ শুনিয়াছি। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ ঈমাম আহমাদ বলেছেন, ফরয নামাজের দুআয় আমি কুরআনের আয়াত পড়া পছন্দ করি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫৪ রুকূ সিজদায় অবস্থানের পরিমাণ সম্পর্কে

৮৮৫. সাদী (রাঃআঃ) হইতে তাহাঁর পিতা অথবা তাহাঁর চাচার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে নামাযরত অবস্থায় দেখেছি। তিনি রুকূ ও সাজদাহ্তে

سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ ‏

“সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহিী” তিনবার পড়ার সমপরিমাণ সময় অবস্থান করতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৮৬. আবদুল্লা ইবনি মাসঊদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ রুকূতে গিয়ে যেন কমপক্ষে তিনবার বলেঃ

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

“সুবহানা রব্বিয়ালআযীম” আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি

এবং সাজদাহ্তে গিয়ে যেন তিনবার বলেঃ

 سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

“সুবহানা রব্বিয়াল আলা” আমার রবের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি, যিনি সবার উপরে

আর এটাই সর্বনিম্ম পরিমাণ। {৮৮৬}

দূর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ বর্ণনাটি মুরসাল। কেননাআওনআবদুল্লা ইবনি মাসঊদ (রাঃআঃ)-এর সাক্ষাত পাননি।

{৮৮৬} তিরমিযী (অধ্যায়ঃ নামায, অনুঃ রুকূ ও সাজদাহ্র তাসবীহ, হাঃ ২৬১, ঈমাম তিরমিযী বলেন, এর সানাদ মুত্তাসিল নয়, কেননাআওন ইবনি মাসউদের সাক্ষাৎ পাননি), ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ নামায ক্বায়িম, অনুঃ রুকূ ওসাজদাহ্র তাসবীহ, হাঃ ৮৯০)। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৮৭. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “ওয়াত ত্বীন-ওয়ায যাইতূণ”-এর “আলাইসাল্লাহু বি-আহকামিল হাকিমিন” বলার সময় তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই বলেঃ “বালা ওয়া আনাআলা যালিকা মিনাশ শাহিদীন”। এমনিভাবে কেউ “লা উক্বসিমু বি-ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি”-এর শেষ আয়াত “আলাইসা যালিকা বি-ক্বাদিরীনআলা আই যুহইয়াল মাওতা” পাঠ করার সময় যেন অবশ্যই বলেঃ “বালা।” আর যে ব্যক্তি “সূরাহ মুরনামায” তিলাওয়াত করিবে এবং তার “ফাবি-আইয়ি হাদীসিন বাদাহু য়ুউমিনূন” আয়াতটি পাঠ করিবে, যে যেন অবশ্যই বলেঃ “আমান্না”।

বর্ণনাকারী ইসমাইল বলেন, অতঃপর আমি আরবের ঐ বেদুইন বর্ণনাকারীকে দেখিতে যাই তার বর্ণনাটি সঠিক কিনা জানার জন্য। তখন বর্ণনাকারী আমাকে বলেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি মনে করেছো আমি হাদিস ভুলে গিয়েছি? আমি ষাটবার হাজ্জ করেছি এবং প্রত্যেক হাজ্জে আমি কি ধরনের উটের উপর আরোহণ করেছি, তা এখনও আমার স্মরণ আছে। {৮৮৭}

দুর্বলঃ মিশকাত ৮৬০। {৮৮৭} তিরমিযী (অধ্যায়ঃ তাফসীরুল কুরআন, অনুঃ সূরাহ ত্বীন হইতে, হাঃ ৩৩৪৭, ঈমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান), আহমাদ। এর সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক বেদুইন ব্যক্তি রহিয়াছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৮৮. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) ইন্তিকালের পর এ যুবক অর্থাৎউমার ইবনিআবদুলআযীয ছাড়া কারো পিছনেই রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নামাজের অনুরূপ নামায আদায় করিনি। তিনি বলেন, আমরা তাহাঁর রুকূতে দশবার এবং সাজদাহ্তে দশবার তাসবীহ পড়ার হিসাব করেছি। {৮৮৮}

দুর্বলঃ মিশকাত ৮৮৩। {৮৮৮} আহমাদ, নাসায়ী (অধ্যায়ঃ তাত্ববীক্ব, অনুঃ সাজদাহ্তে তাসবীহ পাঠের সংখ্যা, হাঃ ১১৩৪)। এর সানাদ দুর্বল। সানাদে ওয়াহাব ইবনি মানুস সম্পর্কে ইবনি কাত্তান বলেন, মাজহুলুর হাল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫৫ কেউ ঈমামকে সিজদারত পেলে কি করিবে?

৮৮৯. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা নামাজে এসে আমাদেরকে সাজদাহ্‌ অবস্থায় পেলে সাজদাহ্‌য় চলে যাবে। তবে এ সাজদাহ্‌কে (নামাজের রাকআত) গণ্য করিবে না। যে ব্যক্তি রুকূ পেলো সে নামায পেয়েছে।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫৬ সাজদাহর অঙ্গসমূহ

৮৯০. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে (হাম্মাদের বর্ণনায় রহিয়াছে) তোমাদের নাবীকে (সাঃআঃ) সাতটি অঙ্গ দ্বারা সাজদাহ্ করতে আদেশ করা হয়েছে। তিনি নামাজের অবস্থায় চুল ও কাপড় মুষ্টিবদ্ধ করতে (বাঁধতে) নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৯১. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি, অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ তোমাদের নাবীকে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সাজদাহ্ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৯২. আব্বাস ইবনিআবদুল মুত্তালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেনঃ যখন বান্দা সাজদাহ্ করে, তখন তার সাথে তার শরীরের সাতটি অঙ্গও সাজদাহ্ করেন। (যেমন) তার মুখমন্ডল, দু হাতের তালু, দু হাঁটু এবং দু পা।

সহীহঃ মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৯৩. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে মরাফূভাবে বর্ণিত। তিনি (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুখমন্ডলের ন্যায় দুহাতও সাজদাহ্ করে। তোমাদের কেউ মুখমন্ডল (কপাল) যমীনে রাখার সময় যেন অবশ্যই তার দুহাতের তালু যমীনে রাখে এবং যমীন থেকে মুখমন্ডল উঠানোর সময় যেন দু হাতও উঠায়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫৭ নাক কপালের সাহায্যে সাজদাহ্ করা

৮৯৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) জামাআতের সাথে নামায আদায়ের পর তাহাঁর কপাল ও নাকের উপর মাটির দাগ দেখা যায়।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৯৫. আবদুর রাযযাক্ব হইতে মামার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত।

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ১৫৮ সাজদাহ্‌র পদ্ধতি

৮৯৬. আবু ইসহাক্ব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা বারাআ ইবনিআযিব (রাঃআঃ) আমাদের কাছে সাজদাহ্র পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে তাহাঁর দু হাত মাটিতে রাখেন এবং হাঁটুর উপর ভর করে (সাজদাহ্তে) পাছা উঁচু করে রাখেন, অতঃপর বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এভাবে সাজদাহ্ করতেন। {৮৯৬}

{৮৯৬} নাসায়ী (অধ্যায়ঃ তাত্ববীক্ব, অনুঃ সাজদাহ্র বৈশিষ্ট্য, হাঃ ১১০৩), আহমাদ, ইবনি খুযাইমাহ (হাঃ ৬৪৬)। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৯৭. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা সাজদাহ্‌তে ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় দু হাতকে যমীনে বিছিয়ে না দেয়।

দুর্বল ঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৯৮. মায়মূনাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) সাজদাহ্‌তে স্বীয় দু হাত এতোটা ফাঁকা রাখতেন যে, কোন বকরীর বাচ্চা এর নীচ দিয়ে যেতে চাইলে চলে যেতে পারতো।

দুর্বল ঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৯৯. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ)- এর নামাজেরত অবস্থায় আমি তাহাঁর পিছন দিয়ে চলে আসি এবং হে সময় আমি তাহাঁর বগলের সাদা অংশ দেখিতে পাই। কারণ তিনি তাহাঁর দুহাত প্রসারিত করে রেখেছিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯০০. রসুলুল্লাহ্ (সাঃআঃ)-এর সহাবী আহমার ইবনি জায হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) সাজদাহ্‌তে তাহাঁর দুবাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতেন এবং এ অবস্থা দেখে আমাদের করুণা সৃষ্টি হতো।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৯০১. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সাজদাহ্‌ করার সময় যেন স্বীয় দু হাত কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে না রাখে এবং দু উরু যেন মিলিয়ে রাখে। {৯০১}

{৯০১}- ইবনি খুযাইমাহ (হাঃ ৬৫৩)। এর সানাদে দাররাজ দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ১৫৯ প্রয়োজনে বিষয়ে শিথিলতা

৯০২. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এর সাহাবীগণ নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে তাহাঁদের সমস্যার কথা জানান যে, সাজদাহ্‌র সময় তারা হাতকে বগল থেকে এবং পেটকে উরু থেকে আলাদা করে রাখলে এতে তাহাঁদের কষ্টবোধ হয়। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃএক্ষেত্রে তোমরা হাঁটুর সাহায্য নাও। {৯০২}

{৯০২}- তিরমিযী (অধ্যায়ঃ নামায, অনুঃ সাজদাহর সময় কিছুতে ভয় দেয়া, হাঃ ২৮৬, ঈমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদিসটি গরীব), আহমাদ। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ১৬০ কোমরে হাত রাখা ইক্বআ করা

৯০৩. যিয়াদ ইবনি সুবাইহ আল-হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি ইবনিউমারের পাশে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করি এবং আমি আমার কোমরের দু পার্শ্বের উপর দু হাতের ভর করি। নামায শেষে তিনি আমাকে বললেনঃ এটা হচ্ছে নামাজের শূলী। এমনটি করতে রসুলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) নিষেধ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৬১ নামাজে কান্নাকাটি করা

৯০৪. মুত্বাররিফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তার পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসুলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) নামায আদায় করছিলেন এবং সে সময় তাহাঁর বুক থেকে যাঁতা পেষার আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ হচ্ছিল।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৬২ নামাজের মধ্যে ওয়াস্‌ওয়াসা বিভিন্ন চিন্তা আসা অপছন্দনীয়

৯০৫. যায়িদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ উত্তমরূপে উযু করে নির্ভুলভাবে দু রাকআত নামায আদায় করলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৯০৬. উক্ববাহ ইবনিআমির আল-জুহানী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ উত্তমরূপে উযু করে একাগ্রচিত্তে খালিস অন্তরে দু রাকআত নামায আদায় করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।

সহীহ্‌ ঃ মুসলিম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৬৩ নামায ইমামের ভুল ধরিয়ে দেয়া

৯০৭. মিসওয়ার ইবনি ইয়াযীদ আল-মালিকী (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথে নামায আদায় করি। নামাজের ক্বিরাআতে তাহাঁর পঠিত আয়াতের অংশ বিশেষ ভুলবশত ছুটে গেলে নামায শেষে এক ব্যক্তি তাঁকে বললো, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি অমুক অমুক আয়াত ছেড়ে দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে বলিলেন, তুমি আমাকে তা স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন? সুলাইমানের বর্ণনায় রয়েছঃ আমি ভেবে ছিলাম, তা মানসূখ হয়ে গেছে।

হাসান।

ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কোন এক নামাজে কেরাত পাঠে আটকে গেলেন। নামায শেষে তিনি উবাই ইবনি কাবকে বলিলেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামায আদায় করেছো? তিনি বলিলেন, হাঁ। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাকে কিসে বাঁধা দিয়েছে (আমাকে আয়াত মনে করিয়ে দিতে)?

দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

অনুচ্ছেদ১৬৪ নামাজে ক্বিরাআতের ভুল শোধরানো নিষেধ

৯০৮. আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ হেআলী! তুমি নামাজের মধ্যে ইমামের ভুল শোধরাবে না। {৯০৮}

দুর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন হারীসের কাছ থেকে ইসহাক্ব কেবল চারটি হাদিস শুনেছেন। তাতে এ হাদিসটি নেই। {৯০৮}- এর সানাদ দুর্বল। সানাদে হারিস আল-আওয়া রহিয়াছে। হাফিয বলেন, তার হাদীসে দুরবলতা আছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ১৬৫ নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে

৯০৯. আবু যার (রাঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ নামাজের মধ্যে বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত এদিক সেদিক না তাকায়, ততক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহর দৃষ্টি তার দিকে থাকে (বা আল্লাহ তার সামনেই থাকেন)। পক্ষান্তরে যখন সে এদিক সেদিক তাকায়, তখন মহান আল্লাহ তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। {৯০৯}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৯১০. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)–কে নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক তাকানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এটাতো শাইত্বানের ছোঁ মারা, সে বান্দার নামাজের কিছু অংশ ছোবল মেরে নিয়ে যায়।

দুর্বলঃ বোখারি। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৬৬ নাক দিয়ে সাজদাহ্ করা

৯১১. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা লোকদেরকে নিয়ে জামাআতে নামায আদায়ের পর রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) কপালে ও নাকে মাটি লেগে থাকতে দেখা যায়।

দুর্বল ঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

By ইমাম আবু দাউদ

এখানে কুরআন শরীফ, তাফসীর, প্রায় ৫০,০০০ হাদীস, প্রাচীন ফিকাহ কিতাব ও এর সুচিপত্র প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্ন/পরামর্শ/ ভুল সংশোধন/বই ক্রয় করতে চাইলে আপনার পছন্দের লেখার নিচে মন্তব্য (Comments) করুন। “আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়” -বুখারি ৩৪৬১। তাই এই পোস্ট টি উপরের Facebook বাটনে এ ক্লিক করে শেয়ার করুন অশেষ সাওয়াব হাসিল করুন

Leave a Reply