মৃতকে গোসল করানো ও মাইয়্যিতকে কাপড় পরানো

মৃতকে গোসল করানো ও মাইয়্যিতকে কাপড় পরানো

মৃতকে গোসল করানো ও মাইয়্যিতকে কাপড় পরানো  >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৮. অধ্যায়ঃ প্রথম আঘাতেই ধৈর্যধারণ হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্যধারণ
৯. অধ্যায়ঃ মাইয়্যিতের পরিজনের কান্নাকাটির দরুন মাইয়্যিতকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হয়
১০. অধ্যায়ঃ বিলাপ করে কান্নাকাটি করার ব্যাপারে হুঁশিয়ারী
১১. অধ্যায়ঃ জানাযার পিছনে যেতে নারীদের নিষেধ প্রসঙ্গে
১২. অধ্যায়ঃ মৃতকে গোসল করানো প্রসঙ্গে
১৩. অধ্যায়ঃ মৃতকে কাফন পরানো
১৪. অধ্যায়ঃ মাইয়্যিতের সর্বাঙ্গ ঢেকে দেয়া
১৫. অধ্যায়ঃ মাইয়্যিতকে সুন্দরভাবে কাপড় পরানো

৮. অধ্যায়ঃ প্রথম আঘাতেই ধৈর্যধারণ হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্যধারণ

২০২৪. সাবিত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধারণ করা হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০০৮, ইসলামিক সেন্টার- ২০১৫]

২০২৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার পুত্রের মৃত্যু শোকে কাঁদছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। স্ত্রীলোকটি বলিল, আপনি তো আমার মতো মুসীবাতে পড়েননি। যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চলে গেলেন, কেউ তাকে বলিল, ইনিই তো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]। এ কথা শুনে মহিলার অবস্থা মৃতবৎ হয়ে গেল। সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর দরজায় এসে দেখল তাহাঁর দরজায় কোন দ্বাররক্ষী নেই। সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, প্রকৃত সবর হচ্ছে প্রথম আঘাতের সময় ধৈর্য ধারণ করা অথবা বলেছেন, বিপদের প্রথম লগ্নে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০০৯, ইসলামিক সেন্টার- ২০১৬]

২০২৬. ইয়াহ্ইয়া ইবনি হাবীব আল হারিসী, উক্ববাহ্ ইবনি মুকরিম আল আম্মী, আহমাদ ইবনি ইব্রাহীম আদ দাওরাক্বী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] …. সকলে শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

উসমান ইবনি উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আবদুস সামাদ-এর হাদীসে আছে, নবী [সাঃআঃ] ক্ববরের নিকট ক্রন্দনরত এক মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১০, ইসলামিক সেন্টার- ২০১৭]

৯. অধ্যায়ঃ মাইয়্যিতের পরিজনের কান্নাকাটির দরুন মাইয়্যিতকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হয়

২০২৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

হাফ্‌সাহ্‌ [রাদি.] উমারের জন্য [ঘাতক কর্তৃক আহত হলে] কাঁদছিলেন। তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, হে স্নেহের কন্যা! তুমি কি জান না রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার স্বজনদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১১, ইসলামিক সেন্টার- ২০১৮]

২০২৮. উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার প্রতি অধিক কান্নাকাটি করার দরুন ক্ববরে আযাব দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১২, ইসলামিক সেন্টার- ২০১৮]

২০২৯. উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার প্রতি অধিক কান্নাকাটি করার দরুন ক্ববরে আযাব দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- নেই, ইসলামিক সেন্টার- নেই]

২০৩০. আলী ইবনি হুজ্‌র আস্‌ সাদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন উমর [রাদি.] [আততায়ীর আঘাতে] আহত হন এবং সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। লোকেরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করিল। যখন তাহাঁর জ্ঞান ফিরে এল, তিনি বলিলেন, তোমরা কি জান না রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে জীবিতদের কান্নার দরুন শাস্তি দেয়া হয়?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৩, ইসলামিক সেন্টার- ২০২০]

২০৩১. আবদুল্লাহ ইবনি ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন উমর [রাদি.] গুরুতরভাবে আহত হন, সুহায়ব [রাদি.] আক্ষেপ করে বলিতে লাগলেন, আহ! ভাই উমর! উমর [রাদি.]তাঁকে বলিলেন, হে সুহায়ব! তোমার কি মনে নেই, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে জীবিতদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৪, ইসলামিক সেন্টার- ২০২১]

২০৩২. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন উমর [রাদি.] গুরুতরভাবে আহত হন, সুহায়ব [রাদি.] তাহাঁর গৃহ থেকে রওয়ানা হয়ে উমারের কাছে এলেন এবং তার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। উমর [রাদি.] তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কেন কাঁদছ, আমার জন্য কাঁদছ? তিনি বলিলেন, কসম আল্লাহর! হে আমীরুল মুমিনীন! হ্যাঁ, আপনার জন্যই কাঁদছি। উমর [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর ক্বসম! তুমি তো অবশ্যই জান রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যার জন্য কান্নাকাটি করা হইবে তাকে শাস্তি দেয়া হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৫, ইসলামিক সেন্টার- ২০২২]

তিনি {আবু মূসা [রাদি.]} বলেন, এরপর আমি এ কথাটি মূসা ইবনি ত্বলহার কাছে বললাম। তিনি বলিলেন, আয়িশা [রাদি.] বলিতেন, যাদের আযাবের কথা বলা হয়েছে, তারা ছিল ইয়াহূদী সম্প্রদায়।

২০৩৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.] যখন আহত হলেন, হাফ্‌সাহ্‌ [রাদি.] সশব্দে কাঁদতে লাগলেন। তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, ওগো হাফ্‌সাহ্‌! তুমি কি শোননি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যার জন্য উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করা হয় তাকে শাস্তি দেয়া হইবে? তাহাঁর প্রতি সুহায়ব [রাদি.]-ও কাঁদতে থাকলে উমর [রাদি.] তাকেও বলিলেন, হে সুহায়ব! তুমি কি জান না যার জন্য চিৎকার করে কান্নাকাটি করা হয় তাকে আযাব দেয়া হইবে?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৬, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৩]

২০৩৪. আবদুল্লাহ ইবনি আবু মুলায়কাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমর [রাদি.]-এর পাশে বসা ছিলাম এবং আমরা উসমানের কন্যা উম্মু আবান-এর জানাযাহ পড়ার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। আর তাহাঁর [ইবনি উমর] নিকটেই ছিল আম্‌র ইবনি উসমান [রাদি.]। এমন সময় ইবনি আব্বাস [রাদি.] আসলেন, তাঁকে একজন পথ নির্দেশনাকারী হাতে ধরে নিয়ে আসছে। আমার ধারণা সে তাঁকে ইবনি উমারের উপস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছে। তিনি এসে আমার পাশে বসলেন। আমি উভয়ের মাঝখানে ছিলাম। হঠাৎ ঘর থেকে একটা [কান্নার] আওয়াজ শুনা গেল। তখন ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, মনে হয় তিনি আম্‌রের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন যেন তিনি উঠে তাদেরকে [কান্না থেকে] বিরত রাখেন-আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নার দরুন শাস্তি দেয়া হয়। বর্ণনাকারী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] এ কথাটা সাধারণভাবে বলেই ছেড়ে দিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৭, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৪]

২০৩৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা একবার আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনিল খাত্ত্বাব-এর সাথে ছিলাম। যখন আমরা বায়দা নামক স্থানে পৌছলাম, হঠাৎ জনৈক ব্যক্তিকে একটা গাছের ছায়ায় অবস্থানরত দেখলাম। উমর [রাদি.] আমাকে বলিলেন, এগিয়ে যাও তো! গিয়ে দেখ আমাকে জানাও ঐ ব্যক্তি কে? আমি গিয়ে দেখলাম তিনি সুহায়ব [রাদি.]। আমি ফিরে এসে বললাম, আপনি আমাকে আদেশ করিয়াছেন, ঐ ব্যক্তির পরিচয় জেনে আপনাকে জানাতে। তিনি হচ্ছেন, সুহায়ব [রাদি.]। পুণরায় তিনি আমাকে বলিলেন, তাঁকে আমাদের সাথে মিলিত হইতে বল। আমি বললাম, তার সাথে তার পরিবারবর্গ রয়েছে। তিনি বলিলেন, তার সাথে পরিবারবর্গ থাকলে তাতে কি আছে। কখনও আইয়ূব বলেছেন- “তাকে বল- সে যেন আমাদের নিকট আসে।” এরপর যখন আমরা মাদীনায় পৌছলাম, অল্প সময়ের মধ্যেই আমীরুল মুমিনীন উমর [রাদি.] আহত হলেন। সুহায়ব [রাদি.] তাঁকে দেখিতে এসে দীর্ঘ-নিঃশ্বাস ছেড়ে বলিলেন, আহ! ভাই উমর! আহ! সঙ্গী উমর! উমর [রাদি.] শুনে বলিলেন, সুহায়ব! তুমি কি অবহিত নও, অথবা শোননি- [আইয়ুব] বলেছেনঃ অথবা বলেছেন, “তুমি কি জান না, তুমি কি শোন না।” রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নার দরুন শাস্তি দেয়া হয়।

আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, তিনি এ কথাটা সাধারণভাবে বলেছিলেন। কিন্তু উমর [রাদি.] “কোন কোন লোকের” শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৭, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৪]

২০৩৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

অতঃপর আমি উঠে গিয়ে আয়িশা [রাদি.] এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে ইবনি উমর [রাদি.]-এর উক্তি সম্পর্কে জানালে তিনি বললেনঃ না, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনও এরূপ বলেননি যে, মৃত ব্যক্তিকে কারো কান্নার দরুন আযাব দেয়া হইবে বরং তিনি বলেছেন, কাফির ব্যক্তির আযাব আল্লাহ তাআলা তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন আরও বাড়িয়ে দেন এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহই হাসান এবং কাঁদান। “আর কোন বহনকারীই অন্যের বোঝা বহন করিবে না”- [সূরাহ আল ইসরা/ইসরাঈল ১৭:১৫]।

আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি আবু মূলায়কাহ্ বলেছেন, আমাকে ক্বাসিম ইবনি মুহাম্মাদ জানিয়েছেন, তিনি বলেন, আয়িশা [রাদি.]-এর নিকট যখন উমর [রাদি.] ও ইবনি উমর-এ বক্তব্য পৌছল তখন তিনি বলিলেন, তোমরা আমাকে এমন দু ব্যক্তির কথা শুনাচ্ছ, যারা মিথ্যাবাদী নন আর তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নও করা যায় না। তবে কখনও শুনতে ভুল হয়ে যেতে পারে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৭, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৪]

২০৩৭. আবদুল্লাহ ইবনি আবু মুলায়কাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাক্কায় উমর ইবনি আফ্‌ফান [রাদি.]-এর এক কন্যা ইনতিকাল করলে আমরা তার জানাযায় হাজির হওয়ার জন্য আসলাম। জানাযায় ইবনি উমর [রাদি.] ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] উপস্থিত হলেন। বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ বলেন, আমি উভয়ের মাঝখানে বসে ছিলাম। অথবা তিনি বলেন, প্রথমে আমি একজনের পাশে বসে ছিলাম। অতঃপর অন্যজন এসে আমার পাশে বসে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমর তার সামনে বসা আম্‌র ইবনি উসমানকে লক্ষ্য করে বলিলেন, তোমরা কান্নাকাটি করা থেকে কেন বারণ করছ না? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৮, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৫]

২০৩৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমর [রাদি.] তো কোন কোন লোকের কথা বলিতেন। অতঃপর তিনি হাদীস বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, আমি একবার উমারের সাথে মাক্কাহ্ থেকে রওয়ানা হয়ে “বায়দা” নামক সমতল ভূমিতে পৌছলাম। দেখলাম, একটা গাছের ছায়ায় একদল আরোহী। তাদেরকে দেখে তিনি {উমর [রাদি.]} বলিলেন, গিয়ে দেখ তো, এর কারা? আমি গিয়ে দেখলাম তথায় সুহায়ব [রাদি.]। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এসে তাঁকে [উমর] খবর দিলাম। তিনি বলিলেন, তাকে আমার কাছে ডেকে আন। আদেশ পেয়ে আমি সুহায়ব [রাদি.] এর নিকট ফিরে এসে বললাম চলুন, আমীরুল মুমিনীনের সাথে সাক্ষাৎ করুন। এরপর যখন উমর [রাদি.] আহত হন, সুহায়ব [রাদি.] তাঁকে দেখিতে এসে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, আহ! ভাই উমর! আহ ! সঙ্গী উমর! উমর [রাদি.] বলিলেন, হে সুহায়ব! আমার জন্য কাঁদছ? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের কান্নাকাটির দরুন আযাব দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৮, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৫]

২০৩৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমর [রাদি.] ইনতিকাল করলে আমি অত্র হাদীসটি আয়েশাহ [রাদি.] নিকট ব্যক্ত করলাম। তিনি বলিলেন, উমর [রাদি.- কে আল্লাহ রহমাত করুন! কখনও না আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনও এমন হাদীস ব্যক্ত করেননি যে, ঈমানদার ব্যক্তিকে কারো কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হইবে। বরং তিনি বলেছেনঃ কাফির ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন আল্লাহ তাআলা তার আযাবকে আরো বাড়িয়ে দিবেন। এছাড়া আয়িশা [রাদি.] আরও বলেছেন, তোমাদের জন্য আল্লাহর কুরআনই যথেষ্ট। কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, “কোন ব্যক্তিই অন্যের পাপের বোঝা বহন করিবে না।” বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, “এবং আল্লাহই হাসান, আল্লাহই কাঁদান।” ইবনি আবু মুলায়কাহ্ বলেন, আল্লাহর ক্বসম! ইবনি উমর [রাদি.]-এর ওপর আর কোন কথাই বলেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৮, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৫]

২০৪০. ইবনি আবু মুলায়কাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা উম্মু আবান বিন্‌তু উসমান [রাদি.]এর যামানায় উপস্থিত হলাম। অবশিষ্ট বর্ণনা উপরের হাদীসের অনুরূপ। তবে তিনি এ হাদীস ইবনি উমর-এর সূত্রে  রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীত হওয়ার কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু আইয়ূব ও ইবনি জুরায়জ এটাকে মারফূ হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন। তাঁদের বর্ণনা আমর-এর বর্ণনার চেয়ে পূর্ণাঙ্গ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০১৯, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৬]

২০৪১. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার বংশধরের কান্নাকাটির দরুন আযাব দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২০, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৭]

২০৪২. উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আয়িশা [রাদি.]-এর কাছে ইবনি উমারের বক্তব্য “মৃত ব্যক্তিকে তার স্বজনদের কান্নাকাটির দরুন আযাব দেয়া হয়” উল্লেখ করা হল। তিনি বলিলেন, আল্লাহ আবু আবদুর রহমানের [ইবনি উমর] প্রতি রহমাত করুন। তিনি একটা কথা শুনেছেন, তবে স্মরণ রাখতে পারেননি। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছেঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে দিয়ে এক ইয়াহূদীর জানাযাহ্ যাচ্ছিল। তখন তার আত্মীয় স্বজনরা কাঁদছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা কাঁদছ? অথচ তাকে এজন্য আযাব দেয়া হচ্ছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২১, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৮]

২০৪৩. হিশাম তার পিতা {উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]} হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আয়েশাহ [রাদি.]-এর নিকট উল্লেখ করা হল, ইবনি উমর [রাদি.]  রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন, “মৃত ব্যক্তিকে তার ক্ববরে তার স্বজনদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়।” তিনি বলিলেন, ইবনি উমর [রাদি.] ভুলে গেছেন। আসলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে কথা বলেছেন তা হচ্ছে এই: মৃত ব্যক্তিকে তার পাপের দরুন ক্ববরে শাস্তি দেয়া হয়। আর তার পরিবার-পরিজনেরা তার জন্য কান্নাকাটি করছে। আর এটা হচ্ছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাদ্রের একটা কূপের পাশে দাঁড়িয়ে যাতে বদরের দিন নিহত কাফিরদের লাশ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল- তাদেরকে সম্বোধন করে যেরূপ বলেছিলেন। তিনি তাদের সম্পর্কে বলেছিলেন, তারা অবশ্যই আমি যা কিছু বলছি তা শুনতে পাচ্ছে অথচ তিনি [ইবনি উমর] এ কথার অর্থ ভুল বুঝেছে। তিনি [সাঃআঃ] যা বলেছেন তার সঠিক তাৎপর্য হচ্ছে এইঃ আমি যা কিছু তাদেরকে তাদের জীবদ্দশায় বলেছিলাম, তারা এখন ভালভাবে তা অনুধাবন করেছে যে, তা সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত ও সত্য। অতঃপর তিনি [আয়েশাহ] এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “আপনি অবশ্যই মৃত ব্যক্তিদেরকে শুনাতে সক্ষম নন”- [সূরাহ্ আন্ নাম্ল ২৭:৭০; সূরাহ্ রুম ৩০:৫২] এবং “আপনি ক্ববরের অধিবাসীদেরকেও শুনাতে সক্ষম নন”- [সূরাহ্ ফা-ত্বির ৩৫:২২২]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথাটা তখন বলেছিলেন যখন তারা জাহান্নামে নিজ ঠিকানায় পৌছে গেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২২, ইসলামিক সেন্টার- ২০২৯]

২০৪৪. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সূত্রে আবু উসামাহ্-এর হাদীসের সমর্থনে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু উসামাহ্ এর বর্ণিত হাদীসই পূর্ণাঙ্গ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২৩, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩০]

২০৪৫. আমরাহ্ বিনতু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আয়িশা [রাদি.] এর কাছে শুনেছেন যখন তার কাছে উল্লেখ করা হল যে, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার বংশধরদের কান্নাকাটির দরুন শাস্তি দেয়া হয়। আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ আবু আবদুর রহমানকে [ইবনি উমর] ক্ষমা করুন, কথাটা ঠিক নয়। তবে তিনি মিথ্যা বলেননি। বরং তিনি [প্রকৃত কথাটা] ভুলে গেছেন অথবা ভুল বুঝেছেন। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছেঃ একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ইয়াহূদী নারীর ক্ববরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন তার জন্য কান্নাকাটি করা হচ্ছে। তিনি বলিলেন, তারা এর জন্য কান্নাকাটি করছে আর এ নারীকে তার ক্ববরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২৪, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩১]

২০৪৬. আলী ইবনি রবীআহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির প্রতি বিলাপ করা হয়েছে, সে হচ্ছে কুফা নগরীর ক্বারাযাহ্ ইবনি কাব। মুগীরাহ্ ইবনি শুবাহ্ [রাদি.] বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যার জন্য বিলাপ করে কান্না হয়, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে এর জন্য আযাব দেয়া হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২৫, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩২]

২০৪৭. মুগীরাহ্ ইবনি শুবাহ্ [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২৬, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৩]

২০৪৮. মুগীরাহ্ ইবনি শুবাহ্ [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২৭, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৪]

১০. অধ্যায়ঃ বিলাপ করে কান্নাকাটি করার ব্যাপারে হুঁশিয়ারী

২০৪৯. আবু মালিক আল আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলী যুগের চারটি কু-প্রথা রয়ে গেছে যা লোকেরা পরিত্যাগ করিতে চাইবে না। [১] বংশের গৌরব, [২] অন্যকে বংশের খোঁটা দেয়া, [৩] নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য প্রার্থণা করা, [৪] মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা। তিনি আরও বলেন, বিলাপকারী যদি মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্ না করে তাহলে ক্বিয়ামাতের দিন তাকে এভাবে উঠানো হইবে যে, তার গায়ে আলকাতরার [চাদর] খসখসে চামড়ার ওড়না থাকিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২৮, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৪]

২০৫০. আমরাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আয়িশা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট যায়দ ইবনি হারিসাহ্ [রাদি.] জাফার ইবনি আবুত্ ত্বলিব [রাদি.] ও আবদুল্লাহ ইবনি রওয়াহাহ্ [রাদি.]-এর শাহাদাতের খবর পৌছল, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিমর্ষচিত্তে বসে পড়লেন। তাহাঁর চেহারায় শোকের ছাপ ফুটে উঠল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে তাদের লাশ দেখছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! জাফার-এর স্ত্রীগণ অথবা তার পরিবারের মহিলারা কান্নাকাটি করছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে গিয়ে তাঁদেরকে কাঁদতে নিষেধ করার জন্য আদেশ করিলেন। লোকটি গিয়ে ফিরে এসে জানাল যে, তারা তার কথা শুনছে না। তখন দ্বিতীয়বার তাকে আদেশ করিলেন যেন গিয়ে তাদেরকে নিষেধ করে। লোকটি গিয়ে আবার ফিরে এসে বলিল, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! তারা আমাদের ওপর প্রাধান্য লাভ করেছে। আয়েশাহ [রাদি.] বলেন, আমার মনে হয় এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, এবার গিয়ে তাদের মুখে কিছু মাটি ঢেলে দাও। আয়েশাহ [রাদি.] বলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহ তোমার নাককে ভূলুন্ঠিত করুক। আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাকে যে আদেশ করিয়াছেন, তা তুমি পালন করছ না বা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বিরক্ত করা থেকেও রেহাই দিচ্ছ না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০২৯, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৫]

২০৫১. আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্, আবুত্ ত্বহির, আহমাদ ইবনি ইব্রাহীম আদ্ দাওরাক্বী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. সকলেই ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসে এরূপ বর্ণিত হয়েছেঃ তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে পরিশ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকছ না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩০, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৬]

২০৫২. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের বায়আতের সঙ্গে এ ওয়াদাও নিয়েছেন যে, আমরা যেন মৃতের জন্যে বিলাপ করে কান্নাকাটি না করি। কিন্তু পরে মাত্র পাঁচজন মহিলা ছাড়া আমাদের কোন মহিলাই তা পালন করেনি। তাঁরা হচ্ছেন- উম্মু সুলায়ম, উম্মুল আলা, আবু সাবুরাহ্-এর কন্যা ও মুআয -এর স্ত্রী প্রমুখ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩১, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৭]

২০৫৩. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বায়আতের সময় আমাদের নিকট থেকে এ ওয়াদা নিয়েছেন- যেন আমরা বিলাপ করে কান্নাকাটি না করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা ব্যতীত আর কেউই এ ওয়াদা পালন করিতে পারেনি। উম্মু সুলায়ম [রাদি.] এদের অন্যতম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩২, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৮]

২০৫৪. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল- “সে মহিলারা আপনার নিকট এ কথার ওপর বাইয়াত করছে যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শারীক করিবে না এবং কোন ভাল কাজে তারা নাফরমানী করিবে না-[সূরাহ্ আল মুমতাহিনাহ্ ৬০:১২]।” উম্মু আত্বিয়্যাহ্ বলেন, মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাও অন্তর্ভূক্ত ছিল। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তবে অমুকের পরিবার, তারা জাহিলী যুগে আমার সহায়তা করেছিল অতএব আমার ওপর তাদের সহায়তা করা জরুরী। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [তাকে অনুমতি দিয়ে] বলিলেন, আচ্ছা! অমুকের পরিবার ছাড়া।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ২০৩৯]

১১. অধ্যায়ঃ জানাযার পিছনে যেতে নারীদের নিষেধ প্রসঙ্গে

২০৫৫. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে [মহিলাদেরকে] জানাযার অনুসরণ করিতে [পিছনে যেতে] নিষেধ করা হত। কিন্তু আমাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হত না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪০]

২০৫৬. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে জানাযায় অনুগমনে নিষেধ করা হয়েছে। তবে আমাদেরকে কঠোরতা আরোপ করা হয়নি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩৫, ইসলামিক সেন্টার- নেই]

১২. অধ্যায়ঃ মৃতকে গোসল করানো প্রসঙ্গে

২০৫৭. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ] এর কন্যা [যায়নাব]-কে গোসল দেয়ার সময় তিনি আমাদের কাছে এসে বলিলেন, “তাকে তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনবোধে এর চেয়ে অধিক বড়ইপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও এবং শেষে কিছুটা কর্পুর দিয়ে দাও।” তোমরা গোসল শেষ করলে আমাকে খবর দিও। আমরা গোসল শেষ করে তাঁকে খবর দিলাম। তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর নিজ লুঙ্গি আমাদের কাছে দিয়ে বলিলেন, এ কাপড় তার গায়ে জড়িয়ে দাও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪১]

২০৫৮. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা তাহাঁর [যায়নাব] মাথার চুল আঁচড়িয়ে তিনভাগে ভাগ করে দিয়েছি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪২]

২০৫৯. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এর কোন কন্যা ইনতিকাল করেন। ইবনি উলাইয়্যাহ্-এর বর্ণনায় আছে। উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কন্যাকে গোসল দেয়ার সময় তিনি আমাদের নিকট আসলেন। মালিক-এর হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কন্যা ইনতিকাল করলে তিনি আমাদের কাছে আসলেন, অনুরূপ ইয়াযীদ ইবনি যুরাই [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর হাদীস যা ….. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪৩]

২০৬০. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে কেবল ব্যতিক্রম এই যে, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিনবার, পাঁচবার, সাতবার বা এর চেয়েও অধিকবার গোসল দেয়া যদি তোমরা প্রয়োজনবোধ কর তাই করিবে। এরপর হাফসাহ [রাদি.] উম্মু আত্বিয়্যাহ সূত্রে বলেন, আমরা তার মাথার চুলকে তিন গোছায় ভাগ করে দিয়েছি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪৪]

২০৬১. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তাকে [যায়নাবকে] বেজোড় সংখ্যায় গোসল দাও তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার। আর উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] বলেছেন, আমরা তার চুলকে তিন গোছায় বিভক্ত করে আঁচড়ে দিয়েছি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪০, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪৫]

২০৬২. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কন্যা যায়নাব [রাদি.] যখন ইনতিকাল করেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বলিলেন, তাকে বেজোড় সংখ্যায় গোসল দাও, তিনবার বা পাঁচবার। আর পঞ্চমবারের সাথে কর্পুর দাও অথবা বলেছেন কিছু কর্পুর দাও। গোসল শেষ করে আমাকে খবর দিও। উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] বলেন, গোসল শেষ করে আমরা তাঁকে খবর দিলাম। তিনি [সাঃআঃ] আমাদের কাছে তাহাঁর লুঙ্গি দিয়ে বলিলেন, এটা কাফনের ভিতরে তার গায়ে জড়িয়ে দাও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪১, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪৬]

২০৬৩. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে আসলেন। তখন আমরা তাহাঁর এক মৃত কন্যাকে গোসল দিচ্ছিলাম। তিনি বলিলেন, তাকে বেজোড় সংখ্যায় পাঁচবার বা তার চেয়ে অধিকবার গোসল দাও। অবশিষ্ট বর্ণনায় আইয়ূব ও আসিম-এর বর্ণনার অনুরূপ। আর হাদীস বর্ণনাকালে উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] বলিলেন, এরপর আমরা তার চুলকে তিন গোছায় ভাগ করে দু কানের দু দিকে ও কপালের দিকে ঝুলিয়ে দিলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪২, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪৭]

২০৬৪. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাকে তাহাঁর [রসূলের] মৃত কন্যাকে গোসল দেয়ার আদেশ করিলেন, তাকে বলিলেন, তার ডানদিক থেকে আরম্ভ কর এবং তার ওযূর অঙ্গগুলো আগে ধৌত করো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪৩. ইসলামিক সেন্টার- ২০৪৮]

২০৬৫. উম্মু আত্বিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কন্যার গোসল দেয়ার সময় তাদেরকে বলে দিলেনঃ তোমরা তার ডান দিক থেকে আরম্ভ কর এবং তাহাঁর ওযূর অঙ্গগুলো আগে ধুয়ে নাও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ২০৪৯]

১৩. অধ্যায়ঃ মৃতকে কাফন পরানো

২০৬৬. খাব্বাব ইবনিল আরাত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে হিজরাত করলাম। অতএব, আল্লাহর কাছে আমাদের পুরস্কার পাওয়া অনিবার্য হয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এভাবে দুন্‌ইয়া থেকে চলে গেলেন যে, তাহাঁর পুরস্কারের কোন কিছুই তিনি ভোগ করেননি। মুসআব ইবনি উমায়র [রাদি.] তাদের অন্যতম। তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন শাহাদাত বরণ করেন। তাঁকে কাফন দেয়ার মতো একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। আমরা যখন তা দিয়ে তাহাঁর মাথা ঢাকলাম পা বেরিয়ে আসল। আর যখন পায়ের উপর রাখলাম, মাথা বেরিয়ে আসল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ“তোমরা চাদরটি এভাবে পরাও যাতে তা মাথা জড়িয়ে থাকে আর তাহাঁর পা ইযখির নামক [এক প্রকার] শুকনো ঘাস দিয়ে ঢেকে দাও”। এছাড়া আমাদের মধ্যে কারো কারো ফল পেকে গেছে, যা তারা আহরণ করছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫০]

২০৬৭. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫১]

২০৬৮. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ]-কে [সিরিয়ার] সাহূল নগরীর তৈরি তিন কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হয়। তন্মধ্যে জামা ও পাগড়ী ছিল না। [তাহাঁর নিকট সংরক্ষিত] জোড়া কাপড় সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দ্বিধা-দন্দ্ব ছিল যে, তা কাফনের উদ্দেশে খরিদ করা হয়েছে কিনা? তাই তা রেখে দেয়া হল এবং সাহূল নগরীর তৈরি সাদা তিন কাপড়েই কাফন দেয়া হল। এদিকে আবদুল্লাহ ইবনি আবু বকর [রাদি.] জোড়াটা নিয়ে বলিলেন, আমি অবশ্যই তা সংরক্ষণ করব এবং আমি নিজেকে এর দ্বারা কাফন দিব। তিনি পুনরায় বলিলেন, আল্লাহ যদি এটা তাহাঁর নবীর জন্য পছন্দ করিতেন, তবে অবশ্যই তিনি তা দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করিতেন। অতঃপর তা বিক্রি করে তিনি তার মূল্য সদাক্বাহ্‌ করে দিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫২]

২০৬৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ]- প্রথমে ইয়ামানী জোড়া কাপড়ে রাখা হয়েছিল, যা ছিল আবদুল্লাহ ইবনি আবু বাক্‌র-এর। অতঃপর তা তাহাঁর থেকে খুলে ফেল হল এবং ইয়ামন দেশের সাহূল নগরের তৈরি কাপড়ের তিন কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হল। এতে পাগড়ী ও কামিজ ছিল না। অতঃপর আবদুল্লাহ জোড়া চাদরটা তুলে বললেনঃএ কাপড়ে আমার কাফন দেয়া হইবে। একটু পর আবার বলিলেন, যে কাপড় দিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কাফন দেয়া হয়নি তা দিয়ে আমার কাফন দেয়া হইবে? অতঃপর তিনি তা সদাক্বাহ করে দিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫৩]

২০৭০. আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্, ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. সকলে হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাদের হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনি আবু বকর-এর ঘটনা উল্লেখ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫৪]

২০৭১. আবু সালামাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কয়টি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল? তিনি বলিলেন, তিন কাপড়ে যা সাহূল অঞ্চলের তৈরি ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৫০, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫৫]

১৪. অধ্যায়ঃ মাইয়্যিতের সর্বাঙ্গ ঢেকে দেয়া

২০৭২. উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইনতিকাল করলে তাঁকে ইয়ামানী চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৫১, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫৬]

২০৭৩. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৫২, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫৭]

১৫. অধ্যায়ঃ মাইয়্যিতকে সুন্দরভাবে কাপড় পরানো

২০৭৪. আবুয্‌ যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন। একদিন নবী [সাঃআঃ]খুত্‌বাহ্‌ দিতে গিয়ে তাহাঁর সাহাবীগণের মধ্যে জনৈক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করিলেন। তিনি মারা গেলে তাকে অপর্যাপ্ত কাপড়ে কাফন দেয়া হয় এবং তাকে রাত্রিবেলা ক্ববর দেয়া হয়। নবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে এই বলে তিরস্কার করিলেন যে, কেন তাকে রাত্রিবেলা দাফন করা হল। অথচ তিনি তার জানাযাহ পড়তে পারলেন না, কোন মানুষ নিরুপায় না হলে এরূপ করা ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে নবী [সাঃআঃ]বলিলেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফন দিবে সে যেন ভাল কাপড় দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২০৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ২০৫৮]

Comments

One response to “মৃতকে গোসল করানো ও মাইয়্যিতকে কাপড় পরানো”

Leave a Reply