দোআ, জিকর, ইস্তিগফার, ইস্তিখারা ও আশ্রয় প্রার্থণা করা
অনুচ্ছেদ-৩৫৮ দুআ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৫৯ কংকর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করা
অনুচ্ছেদ-৩৬০ নামাজে সালাম ফিরানোর পর কি পড়বে?
অনুচ্ছেদ-৩৬১ (ইস্তিগফার) ক্ষমা প্রার্থণা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৬২ কোন ব্যক্তির স্বীয় পরিবার ও সম্পদকে বদ্দুআ করা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-৩৬৩ নাবী-রসূল ছাড়া অন্যের উপর দরূদ পাঠ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৬৪ কারো অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৬৫ কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতির আশংকা করলে যে দুআ পড়তে হয়
অনুচ্ছেদ-৩৬৬ ইস্তিখারা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৬৭ (আল্লাহর কাছে) আশ্রয় প্রার্থণা করা
অনুচ্ছেদ-৩৫৮ দুআ সম্পর্কে
১৪৭৯. নুমান ইবনি বাশীর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দুআও একটিইবাদাত। তোমাদের রব্ব বলেছেনঃ
قَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।“ (সূরাহ আল-মুমিনঃ৬০)।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮০. সাদ (রাঃআঃ) এর এক পুত্রের সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার আব্বা আমাকে বলিতে শুনলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত, তাহাঁর সমস্ত নিয়ামত ও আনন্দদায়ক বস্তু চাই এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনার কাছে আশ্রয় জাহান্নামের আগুন হইতে ও তথাকার শক্ত শিকল ও হাতকড়া বেড়ী হইতে, এবং ইত্যাদি। তিনি বলিলেন, হে আমার পুত্র! আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছিঃ শীঘ্রই এমন জাতির আবির্ভাব হইবে যারা দুআর মধ্যে সীমালঙ্ঘন করিবে। সাবধান! তুমি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। তোমাকে জান্নাত দেয়া হলে সমগ্র জান্নাত ও তাহাঁর যাবতীয় কল্যাণকর সম্পদও তোমাকে দেয়া হইবে। আর যদি জাহান্নামের আগুন হইতে রেহাই পাও তাহলে তথাকার যাবতীয় অমঙ্গল ও কষ্টদায়ক সব কিছু হইতেই রেহাই পাবে।
হাসান সহীহঃ অনুরূপ গত হয়েছে (৯৬৫)। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১৪৮১. ফাদালাহ ইবনিউবাইদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে নামাজের মধ্যে দুআকালে আল্লাহর বড়ত্ব ও গুণাবলী বর্ণনা এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে শুনলেন না। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এ ব্যক্তি তাড়াহুড়া করেছে। অতঃপর তিনি ঐ ব্যক্তিকে অথবা অন্য কাউকে বললেনঃ তোমাদের কেউ নামাজ আদায়কালে যেন সর্বপ্রথম তাহাঁর প্রভুর মহত্ব ও প্রশংসা বর্ণনা করে এবং পড়ে নাবী (সাঃআঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করে, অতঃপর ইচ্ছানুযায়ী দুআ করে।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮২. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) পরিপূর্ণ বাক্যে দুআ করা পছন্দ করতেন (যে দুআয় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কথা থাকে), এছাড়া অন্যান্য দুআ ত্যাগ করতেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮৩. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে, হে আল্লাহ! তোমরা ইচ্ছা হলে আমার প্রতি অনুগ্রহ করো। বরং যা চাওয়ার দৃঢ়তার সাথে চাইবে। কেননা তাহাঁর উপর কারোর প্রভাব চলে না।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮৪. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের দুআ কবুল হয়ে থাকে, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে এবং বলে, আমি তো দুআ করেছি, অথচ কবুল হয়নি?
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮৫. আবদুল্লা ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরের দেয়ালগুলো পর্দায় আবৃত করো না। যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তার ভাইয়ের চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাকালো। তোমরা হাতের পৃষ্ঠের দ্বারা নয় এবং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইবে। অতঃপর দুআ শেষে তোমাদের হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৮৬. মালিক ইবনি ইয়াসার আস-সাকূনী আল-আওফী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট দুআর সময় হাতের তালুকে সম্মুখে রেখে দুআ করিবে, হাতের পৃষ্ঠ দিয়ে নয়।
হাসান সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সুমায়মান ইবনিআবদুল হামীদ (রঃ) বলেন, আমাদের মতে মালিক ইবনি ইয়াসার (রাঃআঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাহচর্য পেয়েছেন। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১৪৮৭. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কখনো তাহাঁর দু হাতের তালু দ্বারা এবং কখনো দু হাতের পৃষ্ঠ দ্বারা দুভাবেই দুআ করতে দেখেছি।
সহিহঃ এ শব্দেঃ —( আরবী)
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮৮. সালমান ফারসী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমাদের রব্ব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দাহ দু হাত তুলে তাহাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৮৯. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তুমি উভয় হাতকে তোমার কাঁধ বরাবর বা অনুরূপ উঁচু করে দুআ করিবে এবং ইস্তিগফারের সময় এক আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিবে এবং দুআতে কাকুতি মিনতির সময় দু হাত প্রসারিত করিবে।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৯০. আব্বস ইবনিআবদুল্লা ইবনি মাবাদ ইবনি আব্বাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, কাকুতি মিনতির প্রার্থনা এরূপঃ দু হাতের পৃষ্ঠকে চেহারার কাছাকাছি নিয়ে যাবে।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৯১. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন…অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৯২. আস-সায়িব ইবনি ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) দুআর সময় দু হাত উপরে উঠাতেন এবং দু হাত দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডল মুছতেন। {১৪৯২}
{১৪৯২} এ সূত্রে আবু দাউদ একক হয়ে গেছেন। এর সানাদ দূর্বল। সানাদে হাফস ইবনি হাশিম অজ্ঞাত। অনুরূপ ইবনি লাহীআহ একজন মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসটির শাহিদ (সমর্থক) বর্ণনা রহিয়াছে তিরমিযীতে হাম্মাদ ইবনি জুহানী হইতে ইবনি উমার সূত্রে। ঈমাম তিরমিযী বলেনঃহাদিসটি সহিহ গরীব। আমরা এটি কেবল হাম্মাদ ইবনি ঈসার হাদিস বলেই জানি। তিনি এতে একক হয়ে গেছেন। তার হাদিস কম। হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ তিনি দুর্বল। আলবানী ইওয়াউল গালীল (২/১৭৯) গ্রন্থে বলেনঃ এর সানাদ দুর্বল। কঠিন দুর্বল হওয়ার কারনে উভয় সূত্র একটি অপরটিকে শাহিদ হিসেবে শক্তি যোগাবে না। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৯৩. আবদুল্লা ইবনি বুরাইদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে বলিতে শুনলেন ঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা আন্নী আশ্হাদু আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ূলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই, আমি সাক্ষ্য দেই যে, তুমিই আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি একক, তুমি ঐ সত্তা যে, তুমি কারো হইতে জন্ম নাওনি এবং কাউকে জন্মও দাওনি, কেউই তোমার সমকক্ষ নয়”।
তিনি বললেনঃ তুমি এমন নামে আল্লাহর কাছে চেয়েছো, যে নামে চাওয়া হলে তিনি দান করেন এবং যে নামে ডাকা হলে সাড়া দেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৯৪। মালিক ইবনি মিগওয়াল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
এ হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃতুমি আল্লাহর ইসমে আযম দ্বারাই প্রার্থনা করেছো।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৯৫. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সাথে বসা ছিলেন। এসময় এক ব্যক্তি নামাজ আদায় করে এই বলে দুআ করলোঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সকল প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবী একমাত্র সৃষ্টকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরন্জ্ঞীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী”। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দুআ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাহাঁর নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৯৬. আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ইসমে আযম এ দুটি আয়াত রহিয়াছেঃ (এক) তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই, তিনি অতি দয়ালু মেহেরবান (সূরা আল-বাক্বারাহঃ ১৬৩)। (দুই) সূরা আলে-ইমরানের প্রথমাংশ, আলিফ-লাম-মীম, তিনি সেই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। {১৪৯৬}
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪৯৭. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা তার একখানা চাদর চুরি হয়ে যায়। তিনি চোরকে বদদুআ করতে শুরু করলে নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তুমি তার পাপকে হালকা করো না। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,লা তুসাববিখী এর অর্থ হচ্ছে, হালকা করো না। {১৪৯৭}
{১৪৯৭} ইবনি আবু শায়বাহমুসান্নাফ (১০/৩৪৮), আলবানী একে উল্লেখ করিয়াছেন জঈফ আল-জামি (৬২৩৩), এবং একে জঈফ বলেছেন সম্ভবতঃ এর দোষ হচ্ছে সানাদের হাবীব ইবনি আবু সাবিত। হাফিযআত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ তার ইরসাল ও তাদলীস অধিক। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৯৮. উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমিউমরাহ করতে যাবার জন্য নাবী (সাঃআঃ) এর অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দিয়ে বললেনঃহে আমার ছোট ভাই! তোমার দুআয় আমাদেরকে যেন ভুলো না। পরবর্তীতেউমার (রাঃআঃ) বলেন, তাহাঁর এ একটি শব্দ আমাকে এতোটা অনন্দ দিয়েছে যে, এর বিনিময়ে সমগ্র দুনিয়ার সম্পদও আমাকে এতোটা অনন্দিত করতে পারতো না। শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, পরবর্তীতে আমি মদিনায়আসিমের সাথে দেখা করলে তিনি আমাকে এ হাদিসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনিআমাদেরকে ভুলো না এর স্থলেআমাদেরকেও শরীক করো বলেছেন। {১৪৯৮}
{১৪৯৮} বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (৫/২৫১), ইবনি সাদত্বাবাক্বাত (৩/১৯৫)আসিম ইবনিউবাইদুল্লাহ হইতে। এর সানাদ দুর্বল। সানাদেরআসিম ইবনিউবাইদুল্লাহ সম্পর্কে হাফিযআত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ দুর্বল। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৯৯. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি দু আঙ্গুল উঠিয়ে দুআ করছিলাম, এমন সময় নাবী (সাঃআঃ) আমার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেনঃএক আঙ্গুল উঠিয়ে দুআ করো এবং তিনি তর্জনী (শাহাদাত আঙ্গুল) দ্বারা ইশারা করিলেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৫৯ কংকর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করা
১৫০০. আয়েশা বিনতু সাদ (রাঃআঃ) হইতে তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সাথে এক মহিলার কাছে গিয়ে তার সম্মুখে খেজুর বিচি অথবা কংকর দেখিতে পেলেন। মহিলাটি ওগুলোর সাহায্যে তাসবীহ পাঠ করছিলো। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি কি তোমাকে এর চাইতে অধিক সহজ ও উত্তম পদ্ধতি জানাবো না! “আকাশের সমস্ত সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ
سُبْحَانَ اللَّهِ
সুবহানাল্লাহ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
اللهِ | سُبْحَانَ |
আল্লাহ | পবিত্র |
এবং যমীনের সমস্ত সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ সুবহানাল্লাহ। আকাশ ও যমীনের মাঝে যা কিছু রহিয়াছে সে পরিমাণ সুবহানাল্লাহ এবং অনুরূপ সংখ্যক
اللَّهُ أَكْبَرُ
আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
أَكْبَرُ | اللَّهُ |
মহান | আল্লাহ |
الْحَمْدُ لِلَّهِ
আল্হামদুলিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
لِلَّهِ | الْحَمْدُ |
মহান আল্লাহর | সমস্ত প্রশংসা |
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” {১৫০০}
{১৫০০} তিরমিযী (অধ্যায়ঃ দাওয়াত অনুঃ প্রত্যেক ফর্য নামাজে নাবী (সাঃআঃ) -এর দুআ ও আশ্রয় প্রার্থনা, হাঃ ৩৫৬৮) ইবনি ওয়াহাব হইতে, ঈমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদিসটি হাসান গরীব)। এর সানাদে খুযাইমাহ রহিয়াছে। হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃআয়েশা বিনতু সাদ হইতে খুযাইমাকে চেনা যায়নি। ম হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫০১. ইউসায়রাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁদেরকে নির্দেশ দিয়েছেনঃ তোমরা তাকবীর, তাকদীস এবং তাহলীল এগুলো খুব ভালো ভাবে স্মরণে রাখবে এবং এগুলোকে অঙ্গুলে গুনে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জ্ঞিজ্ঞাসা করা হইবে এবং এগুলোও সেদিন (ক্বিয়ামাতে) কথা বলবে।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৫০২. আবদুল্লা ইবনি আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে আঙ্গুলে গুনে গুনে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি। ইবনি কুদামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫০৩. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) জুওয়াইরিয়াহ (রাঃআঃ) এর কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন। ইতিপূর্বে তার নাম ছিলো বাররাহ, নাবী (সাঃআঃ) তার এ নাম পরিবর্তন করেন। তিনি তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও মুসাল্লায় বসে তাসবীহ পাঠ করতে করতে দেখেন এবং ফিরে এসেও তাকে ঐ মুসাল্লায় বসে থাকতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি তখন থেকে একটানা এ মুসাল্লায় বসে রয়েছো? তিনি বলিলেন, হাঁ। তিনি বলিলেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি তিনবার চারটি কালেমা পড়েছি; এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুমি যা কিছু পাঠ করেছো, উভয়টিওজন হলে আমার ঐ চারটি কালেমা ওজনে ভারী হইবে। তা হচ্ছেঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
“সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহিআদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিদা নাফসিহি, ওয়া যিনাতাআরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।”
সহিহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫০৪. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আবু যার (রাঃআঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধনীরা তো সওয়াবে অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেমন নামাজ আদায় করি, তেমন তারাও নামাজ আদায় করে, আমরা যেমন সওম পালন করি, তারাও তেমন সওম পালন করে। কিন্তু তারা তাহাঁদের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ দান-খয়রাত করে। (দান খয়রাতের জন্য) আমাদের তো পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আবু যার! আমি কি তোমাকে এমন দুটি বাক্য শিক্ষা দিবো না যা পাঠ করলে তুমি তোমার চেয়ে অগ্রগামীদের সমপর্যায় হইতে পারবে এবং তোমার পিছনের লোকেরাও তোমাকে অতিক্রম করতে পারবে না? তবে তার কথা ভিন্ন যে তোমার মতো আমল করে। তিনি বলিলেন, হাঁ, নিশ্চয়। তিনি বললেনঃ তুমি প্রত্যেক নামাজের পর তেত্রিশবার
اللَّهُ أَكْبَرُ
আল্লাহু আকবার,
আল্লাহ মহান
তেত্রিশবার
الْحَمْدُ لِلَّهِ
আলহামদু লিল্লাহ,
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
তেত্রিশবার
سُبْحَانَ اللَّهِ
সুবহানাল্লাহ
অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
এবং শেষে একবার
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়াআলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর”
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান
إِلاَّ | إِلَهَ | لاَ |
ছাড়া | ইলাহ | নেই |
لاَ | وَحْدَهُ | اللَّهُ |
নেই | সমস্ত প্রশংসা | আল্লাহ |
لَهُ | لَهُ | شَرِيكَ |
তাঁরই | তাঁর | শরীক |
الْحَمْدُ | وَلَهُ | الْمُلْكُ |
প্রশংসা | তাঁর | রাজত্ব |
كُلِّ | عَلَى | وَهُوَ |
সকল | ওপর | আর তিনি |
قَدِيرٌ | شَىْءٍ | |
ক্ষমতাবান | কিছুর |
বলবে। কেউ এ দুআ পড়লে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাণ হলেও তা ক্ষমা হইবে।
সহিহঃ কিন্তুঃ “কেউ এ দুআ পড়লে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাণ হলেও তা ক্ষমা হইবে।” তার এ কথাটুকু মুদরাজ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬০ নামাজে সালাম ফিরানোর পর কি পড়বে?
১৫০৫. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজের সালাম ফিরানোর পর কোন দুআ পাঠ করতেন তা জানার জন্য মুআবিয়াহ (রাঃআঃ) মুগীরাহ ইবনি শুবাহর কাছে পত্র লিখলেন। অতঃপর মুগীরাহ (রাঃআঃ) মুআবিয়াহর (রাঃআঃ) নিকট পত্রের জবাব লিখে পাঠালেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিতেন
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়াআলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আত্বায়তা ওয়ালা মুত্বিআ লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দু মিনকাল জাদ্দ।”
সহিহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫০৬. আবুয-যুবাইর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমিআবদুল্লা ইবনিয যুবাইর (রাঃআঃ)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণে বলিতে শুনিয়াছি, নাবী (সাঃআঃ) ফরয নামাজ শেষে বলিতেনঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ أَهْلُ النِّعْمَةِ وَالْفَضْلِ وَالثَّنَاءِ الْحَسَنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
““লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়াআলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ দ্বীন ওয়ালাও কারিহাল কফিরুন। আহলুন নিআমি ওয়াল ফাদলি, ওয়াস সানায়িল হুসনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুল দ্বীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরুন।” অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তাহাঁর কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সকল প্রশংসা তাহাঁর জন্য। তিনিই প্রান দান করেন এবং মৃত্যু দেন। সকল কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”,
সহিহ ঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫০৭. আবুয-যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,আব্দুল্লাহ ইবনিয যুবাইর (রাঃআঃ) প্রত্যেক ফার্য নামাজের পর
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
পাঠ করতেন। অতঃপর উপরোক্ত দুআর অনুরূপ। আরো বৃদ্ধি করেনঃ
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ লা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু লাহুন নিমাতু..।”
অতঃপর অবশিষ্ট হাদিস বর্ণনা করেন।
সহিহ ঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫০৮. যায়িদ ইবনি আরক্বাম (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি। বর্ণনাকারী সুলায়মানের বর্ণনায় রহিয়াছে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) প্রত্যেক ফার্য নামাজের পর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَىْءٍ اجْعَلْنِي مُخْلِصًا لَكَ وَأَهْلِي فِي كُلِّ سَاعَةٍ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ اسْمَعْ وَاسْتَجِبِ اللَّهُ أَكْبَرُ الأَكْبَرُ اللَّهُمَّ نُورَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ
“ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এবং প্রত্যেক বস্তুর রব। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ আপনার বান্দাহ ও রসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এবং প্রত্যেক বস্তুর রব্ব! আমাকে এবং আমার পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতি মূহুর্তে আপনার অকৃত্রিমইবাদতকারী বানিয়ে দিন। হে মহান পরাক্রমশালী ও সম্মানের অধিকারী! আমার ফরিয়াদ শুনুন, আমার দুআ কবুল করুন। আল্লাহ মহান, আপনি সবচেয়ে মহান। হে আল্লাহ! আসমান ও যমীনের নূর।
সুলায়মান ইবনি দাউদ বলেছেন, আপনিই আকাশ ও যমীনের রব্ব! হে আল্লাহ! আপনি মহান, অতি মহান। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি মহান! অতি মহান। {১৫০৮}
{১৫০৮} আহমাদ (৪/৩৬৯), নাসায়ীআমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ (১৮৩, হাঃ ১০১)। এর সানাদ দুর্বল। সানাদে দাউদ তুফাবিয়্যা রহিয়াছে। ইবনি মাঈন বলেন ঃ তিনি কিছুই না। হাফিযআত-ত্বাকরীব বলেন ঃ তিনি হাদিস বর্ণনায় শিথিল। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫০৯. আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নামাজের সালাম ফিরানোর পর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
আল্লাহুম্মাগ ফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্খারতু ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা আলানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আলামু বিহি মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুয়াখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন যা কিছু আমি পূর্বে ও পরে করেছি, গোপনে, প্রকাশ্যে ও সীমালঙ্ঘন করেছি, এবং যা আমার চেয়ে আপনি অধিক জ্ঞাত। আপনিই আদি ও অন্ত। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১০. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দুআ করতেন ঃ “
رَبِّ أَعِنِّي وَلاَ تُعِنْ عَلَىَّ وَانْصُرْنِي وَلاَ تَنْصُرْ عَلَىَّ وَامْكُرْ لِي وَلاَ تَمْكُرْ عَلَىَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرْ هُدَاىَ إِلَىَّ وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَىَّ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي لَكَ شَاكِرًا لَكَ ذَاكِرًا لَكَ رَاهِبًا لَكَ مِطْوَاعًا إِلَيْكَ مُخْبِتًا أَوْ مُنِيبًا رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِي وَاغْسِلْ حَوْبَتِي وَأَجِبْ دَعْوَتِي وَثَبِّتْ حُجَّتِي وَاهْدِ قَلْبِي وَسَدِّدْ لِسَانِي وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ قَلْبِي
হে আমার রব্ব! আমাকে সাহায্য করুন, আমার বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন না। শত্রুর বিরুদ্ধে আমাকে প্রতারিত করুন, কিন্তু তাকে আমার উপর প্রতারক বানাবেন না। আমাকে কল্যাণের পথ দেখান, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার পথকে আমার জন্য সহজ করুন, যে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করুন, হে আল্লাহ! আমাকে আপনার কৃতজ্ঞ ও স্মরণকারী, ভীত ও আনুগত্যকারী, আপনার প্রতি আস্থাশীল ও আপনার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বানিয়ে দিন। হে রব্ব! আমার তাওবাহ কবুল করুন, আমার সমস্ত গুনাহ ধুয়ে পরিস্কার করুন, আমার ডাকে সাড়া দিন, আমার ঈমান ওআমলের প্রমাণে আমাকে ক্ববরে ফেরেশতাহাঁদের প্রশ্নে স্থির রাখুন, আমার অন্তরকে সরল পথের অনুসারী করুন, আমার জিহ্বাকে সদা সত্য বলার তাওফীক দিন এবং আমার অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ ও যাবতীয় দোষ হইতে মুক্ত রাখুন।”
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১১. সুফয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমিআমর ইবনি মুররাহকে উপরোক্ত সানাদ ও অর্থে হাদিস বর্ণনা করতে শুনিয়াছি। তিনিওয়া ইয়াসসিরিল হুদা ইলাইয়্যা বলেছেন, কিন্তুহুদায়া বলেননি।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১২. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) নামাজের সালাম ফিরানোর পর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
“আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম”। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সুফয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)আমর ইবনি মুররাহ হইতে আঠারটি হাদিস শুনেছেন, এ হাদিস সেগুলোরই একটি।
সহিহ ঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১৩. রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) নামাজ শেষে তিনবার
أستغفر الله
ইস্তিগফার
পাঠ করতেন। অতঃপর সাওবান (রাঃআঃ)আল্লাহুম্মা হইতে …..আয়েশার (রাঃআঃ) হাদিসের ভাবার্থ বর্ণনা করেন।
সহিহ ঃ মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬১ (ইস্তিগফার) ক্ষমা প্রার্থণা সম্পর্কে
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গুনাহ করার পরপরই ক্ষমা চায়, সে বারবার গুনাহকারী গণ্য হইবে না। যদি সে দৈনিক সত্তর বারও ঐ পাপে লিপ্ত হয়। {১৫১৪}
{১৫১৪} তিরমিযী (অধ্যায় ঃ দাওয়াত, হাঃ ৩৫৫৯, ঈমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদিসটি গরীব, আমরা এটি আবু নাযরাহর হাদিস বলে জানি, এর সানাদ মজবুত নয়উসমান ইবনি ওয়াক্বিদ সূত্রে)। সানাদে আবু বাকর এর মুক্তদাসের জাহলাতের কারণে এর সানাদ দুর্বল। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫১৫. আগার আল-মুযানী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কখনো কখনো আমার হৃৎপিন্ডের উপরও আবরণ পড়ে। তাই আমি দৈনিক একশো বার ক্ষমা চাই।
সহিহ ঃ মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১৬. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দুআ পাঠ করিয়াছেন এবং আমরা তা গণনা করেছি ঃ
“রাব্বিগফিরলি ওয়াতুবআলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহীম।”
প্রভূ হে! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার তাওবাহ কবুল করে নাও, তুমিই তাওবাহ কবুলকারী ও দয়ালু।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১৭. নাবী (সাঃআঃ) এর মুক্তদাস বিলাল ইবনি ইয়াসার ইবনি যায়িদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
আমি আমার আব্বাকে আমার দাদার সূত্রে বর্ণনা করতে শুনিয়াছি, তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি দুআ পাঠ করিবে ঃ
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
“আসতাগফিরুল্লাহ আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহি”
সে জিহাদের ময়দান হইতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হইবে।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১৮. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হইতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা হইতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক্ব দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। {১৫১৮}
{১৫১৮} ইবনি মাজাহ (অধ্যায় ঃ আদব, অনুঃ ইসতিগফার, হাঃ ৩৮১৯), বায়হ্বাকীসুনানুল কুবরা (৩/৩৫১) হিশাম ইবনিউমারাহ হইতে। এর সানাদ দুর্বল। সানাদে হাকাম ইবনি মুসআব সম্পর্কে হাফিয বলেন ঃ মাজহুল (অজ্ঞাত)। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫১৯. আবদুলআযীয ইবনি সুহাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস (রাঃআঃ)-কে নাবী (সাঃআঃ) অধিকাংশ সময় কোন দুআ পাঠ করতেন তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি অধিকাংশ সময় এ দুআ পাঠ করতেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
“আল্লাহুম্মা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়া ফিল আখিরাতি হাসনাতাও ওয়াক্বিনাআযাবান নারি।”
যিয়াদের বর্ণনায় এটাও রহিয়াছে যে, আনাস (রাঃআঃ) কেবল একটি দুআ দিয়ে মুনাজাতের ইচ্ছা করলে এটিই পাঠ করতেন, আর একাধিক দুআ পড়তে চাইলেও তাতে এ দুআ শামিল করতেন।
সহিহ ঃ বোখারি ও মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২০. আবু উমামাহ ইবনি সাহল ইবনি হুনাইফ (রাঃআঃ) হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর নিকট শাহাদাত চায়, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদা দিবেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।
সহিহ ঃ মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২১. আসমা ইবনিল হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমিআলী (রাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি এমন এক ব্যক্তি, যখন আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে কোনো হাদিস শুনি, তখন তার মাধ্যমে মহান আল্লাহ যতটুকু চান কল্যাণ লাভ করি। কিন্তু যদি তাহাঁর কোন সাহাবী আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন, আমি তাকে (সত্যতা যাচাইয়ের জন্য) শপথ করাতাম। তিনি শপথ করলে আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃআঃ) আমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করিলেন, মূলতঃ তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যখন কোনো বান্দা কোনরূপ গুনাহ করার পর উত্তমরূপে উযু করে দাঁড়িয়ে দু রাকআত নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। অতঃপর তিনি প্রমাণ হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করেন ঃ
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ
“এবং যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে……..আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরাহ আলেইমরান ঃ ১৩৫)।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২২. মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার হাত ধরে বলিলেন, হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বলিলেন, হে মুআয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর এ দুআটি কখনো পরিহার করিবে না ঃ
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
“আল্লাহুম্মা আঈন্নীআলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনিইবাদাতিকা” (অর্থ ঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)।
অতঃপর মুআয (রাঃআঃ) আস-সুনাবিহী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে এবং আস-সুনাবিহীআবদুর রহমানকে এরূপ দুআ করার ওয়াসিয়াত করেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২৩. উক্ববাহ ইবনিআমির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে প্রত্যেক নামাজের পর কুল আঊযু বি-রব্বিল ফালাক্ব ও কুল আঊযু বি-রব্বিন্ নাস সূরাহ দুটি পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২৪. আবদুল্লা ইবনি মাসউদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তিনবার দুআ পাঠ করা এবং তিনবার ক্ষমা চাওয়া পছন্দ করতেন। {১৫২৪}
{১৫২৪} আহমাদ (হাঃ ৩৭৪৪) শায়খ আহমাদ শাকির বলেন ঃ এর সানাদ সহিহ। নাসায়ীআমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ (৪৫৭), ইবনি হিব্বানমাওয়ারিদ (হাঃ ২৪১০) এবংইহসান (হাঃ ৯১৯) সকলে আবু ইসহাক্ব হইতে। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫২৫. আসমা বিনতু উমাইস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিবো না, যা তুমি বিপদের সময় পাঠ করিবে? তা হচ্ছে ঃ
اللَّهُ اللَّهُ رَبِّي لاَ أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
“আল্লাহু আল্লাহু রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান”
(অর্থ ঃ আল্লাহ! আল্লাহ! আমার রব্ব! তাহাঁর সাথে আমি কাউকে শরীক করি না)।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২৬. আবুউসমান আন-নাহদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবু মূসা আল-আশআরী (রাঃআঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সাথে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে লোকেরা উচ্চস্বরে তাকবীর বললো। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা তো কোনো বধির কিংবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না, যাকে তোমরা ডাকছো তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড়ের চাইতেও অতি নিকটে আছেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আবু মূসা! আমি কি তোমাকে আল্লাহর ধন-ভান্ডারসমূহ হইতে একটি ভান্ডারের খোঁজ দিবো না। আমি বললাম, সেটা কি? তিনি বললেনঃ
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”
সহিহ ঃ বোখারি ও মুসলিম এ কথাটি বাদে ঃ “তোমরা যাকে ডাকছো তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড়ের চাইতেও অতি নিকটে আছেন।” কেননা এ অংশটুকু মুনকার। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২৭. আবু মূসা আল-আশআরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
একদা তারা আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে পাহাড়ী পথে এক টিলার চূড়ায় আরোহণকালে এক ব্যক্তি উচ্চস্বরে বললো
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমরা কোনো বধির বা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না। অতঃপর তিনি বললেনঃ হেআবদুল্লা ইবনি ক্বায়িস….এরপর অবশিষ্ট পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।১
সহিহ ঃ বোখারি ও মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২৮. আবু মূসা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে তিনি বলেন, অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের নফসের প্রতি সদয় হও।
সহিহ ঃ বোখারি ও মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২৯. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি বলে ঃ arbi
আমি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-কে রসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৩০. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ আমার উপর একবার দরূদ পড়লে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমাত বর্ষণ করেন।
সহিহ ঃ মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৩১. আওস ইবনি আওস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর মধ্যে জুমুআহর দিনটি উৎকৃষ্ট। কাজেই এ দিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী পরিমাণে দরূদ পাঠ করিবে। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে উপস্থিত করা হইবে অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বললো, আপনি তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহিআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ নাবীদের দেহকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬২ কোন ব্যক্তির স্বীয় পরিবার ও সম্পদকে বদ্দুআ করা নিষেধ
১৫৩২. জাবির ইবনিআবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা নিজেদেরকে বদ্দুআ করো না, তোমাদের সন্তানদের বদ্দুআ করো না, তোমাদের খাদিমদের বদ্দুআ করো না এবং তোমাদের ধন-সম্পদের উপরও বদ্দুআ করো না। কেননা ঐ সময়টি আল্লাহর পক্ষ হইতে কবুলের মূহুর্তও হইতে পারে, ফলে তা কবুল হয়ে যাবে।
সহিহ ঃ মুসলিম। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি মুত্তাসিল।উবাদা ইবনিল ওয়ালীদ ইবনিউবাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবিরের (রাঃআঃ) সাক্ষাত পেয়েছেন। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬৩ নাবী-রসূল ছাড়া অন্যের উপর দরূদ পাঠ সম্পর্কে
১৫৩৩. জাবির ইবনিআবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
এক মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-কে বললো, আপনি আমার ও আমার স্বামীর জন্য দুআ করুন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, arbi
তোমার উপর ও তোমার স্বামীর উপর আল্লাহর রহমাত বর্ষণ করুন।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬৪ কারো অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করা সম্পর্কে
১৫৩৪. আবু দারদা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করে, তখন ফেরেশতাগণ বলেন, আমীন, এবং তোমার জন্যও অনুরূপ হইবে।
সহিহ ঃ মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৩৫. আবদুল্লা ইবনি আমর ইবনিলআস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, অনুপস্থিত ব্যক্তিদের পরস্পরের জন্য দুআ অতি দ্রুত কবুল হয়। {১৫৩৫}
{১৫৩৫} এর সানাদ দুর্বল। বোখারিআদাবুল মুফরাদ (অধ্যায় ঃ আদাব, অনুঃ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করা, হাঃ ৬২৩), তিরমিযী (অধ্যায় ঃ বির ওয়াস সিলাহ, অনুঃ এক ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে আরেক ভাইয়ের তার জন্য দুআ করা, হাঃ ১৯৮০, ঈমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদিসটি গরীব, আমরা এটি কেবল এ সূত্রেই অবগত হয়েছি, সানাদের আফরীকীকে হাদীসে দুর্বল বলা হয়)। হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে আফরীকীকে দুর্বল বলেছেন। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৩৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির দুআ নিঃসন্দেহে কবুল হয় ঃ (এক) পিতার দুআ, (দুই) মুসাফিরের দুআ, (তিন) মজলুমের দুআ।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬৫ কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতির আশংকা করলে যে দুআ পড়তে হয়
১৫৩৭. আবু বুরদা ইবনিআবদুল্লা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতা তাকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতির আশংকা করলে বলিতেনঃ
“হে আল্লাহ! আমরা তাহাঁদের মোকাবিলায় তোমাকে যথেষ্ট ভাবছি এবং তাহাঁদের অনিষ্ট হইতে তোমার কাছে আশ্রয় চাইছি”।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬৬ ইস্তিখারা সম্পর্কে
১৫৩৮. জাবির ইবনিআবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে কুর্আনের সুরাহ্ শিক্ষা দানের মত ইস্তিখারাও শিক্ষা দিতেন। তিনি (সাঃআঃ) আমাদেরকে বলেতেনঃ তোমাদের কেউ কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের মনস্থ করলে সে যেন ফরয ছাড়া দু রাকআত নফল নামাজ আদায় করে এবং বলেঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার অবগতির মাধ্যমে আপনার কাছে ইস্তিখারা করছি। আপনার কুদরত এর মাধ্যমে আমি শক্তি কামনা করি। আমি আপনার মহান অনুগ্রহ কামনা করি। আপনিই ক্ষমতাবান, আমার কোন ক্ষমতা নেই। আপনিই সবকিছু অবগত, আমি অজ্ঞ। আপনিই অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে আমার এ কাজ (এ সময় নির্দিষ্ট কাজের নাম বলবে) আমার দ্বীন, পার্থিব জীবন, পরকাল এবং সর্বোপরি আমার পরিণামে কল্যাণকর হলে তা আমাকে হাসিল করার শক্তি দিন, আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার জন্য তাতে বরকত দিন। আর আপনার অবগতিতে সেটা আমার জন্য প্রথমে উল্লিখিত কাজসমূহে অকল্যাণকর হলে আমাকে তা থেকে দূরে রাখুন এবং সেটিকেও আমার থেকে দূরে রাখুন। আমার জন্য যা কল্যাণকর আমাকে তাই হাসিল করার শক্তি দিন, তা যেখানেই থাক না কেন। অতঃপর আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট থাকুন, অথবা বলেছেন, অবিলম্বে কংবা দেরীতে।
সহীহঃ বোখারি। ঈমাম আবু দাউদ বলেন, ইবনি মাসলাম ও ইবনি ঈসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুহাম্মদ ইবনিল মুনকাদির থেকে তিনি জাবির (রাঃআঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
এক নজরে ইস্তিখারা নামাজের পদ্ধতিঃ
(১) ইস্তিখারা করতে হইবে সাদা মনে। এ সময় কোন বিষয়ে দৃঢ় সকল্প করিবে না। কেননা তাতে ইস্তিখারা করার পরে ও তার ঐ দৃঢ় সকল্পই তার মনে উদয় হইবে।
(২) ইস্তিখারার পর তার মন যেদিকে টানবে সে তাই করিবে। এতে ইনশাআল্লাহ সে নিরাশ হইবে না। উল্লেখ্য-ইস্তিখারার পরে ঐ বিষয়ে স্বপ্ন দেখা বা উক্ত বিষটি তার কাছে পরিস্কার হয়ে যাওয়া-এমন কোন শর্ত নাই। বরং মনের আকর্ষণ যে দিকে যাবে সেভাবেই কাজ করতে হইবে।
(৩) ইস্তিখারার নামাজ দিনে রাতে যে কোন সময় পড়া যাবে। তবেইশার নামাজের পরে ঘুমানোর পূর্বে এটি আদায় করা উত্তম। আর এর পর সে কোন কথা বলবে না।
(৪) ঈমাম শাওকানী বলেনঃ ইস্তিখারা একই বিষয়ে একাধিক বার করা যেতে পারে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, নাবী (সাঃআঃ) কখনো দুআ করলে একই সময়ে তিনবার দুআ করতেন।
(৫) ফার্য নামাজের জন্য নির্ধারিত সুন্নাত সমূহে কিংবা তাহিয়্যাতুল মাসজিদের দুরাকাআত নামাজে অথবা পৃথকভাবে দুরাকাআত নফল নামাজে ইস্তিখারার দুআ পাঠের মাধ্যমে এ নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
(৬) ইস্তখারার নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠের পরে যে কোন সূরা পাঠ করিবে। অতঃপর হামদ ও দরূদ পাঠ করিবে। তারপর ইস্তিখারার দুআটি পাঠ করিবে।
(৭) ইস্তিখারার দুআ নামাজের মধ্যে ক্বিরাতের পর রুকূর পূর্বে, কিংবা সিজদাতে অথবা সালাম ফিরানোর পূর্বে সর্বাবস্থায় পাঠ করা যাবে।
(৮) ঈমাম শাওকানী বলেনঃ নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর পরে অন্যান্য দুআর ন্যায় ইস্তিখারার দুআ পাঠ করা যাবে এবং এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই। (নায়লুল আওত্বার, সালাতুর রাসূল ও অন্যান্য)
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬৭ (আল্লাহর কাছে) আশ্রয় প্রার্থণা করা
১৫৩৯. উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) পাঁচটি বস্তু হইতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেনঃ ভীরুতা, কৃপণতা, বয়োবৃদ্ধি জনিত দূরাবস্থা, অন্তরের ফিতনাহ এবং ক্ববরের শাস্তি হইতে। {১৫৩৯}
{১৫৩৯} নাসায়ী (অধ্যায়ঃ আশ্রয় প্রার্থণা করা, হাদীসঃ ৫৪৪৩), ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ দুআ, হাঃ ৩৮৪৪)। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৪০. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য হইতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই ক্ববরের শাস্তি হইতে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ হইতে”।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪১. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) এর খিদমাত করতাম। আমি তাকে অধিকাংশ সময় বলিতে শুনেছিঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَضَلْعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
“হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বেদনা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের নির্যাতন হইতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।
সহীহঃ বোখারি, দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪২. আবদুল্লা ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁদের নিচের দুআটি এমনভাবে শিখাতেন, যেমনভাবে তাহাঁদেরকে কুর্আনের সূরাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আযাব হইতে আশ্রয় চাই, ক্ববরের আযাব হইতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনাহ হইতে এবং আশ্রয় চাই জীবন মরণের বিপদাপদ হইতে”।
সহীহঃ মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪৩. আশিয়াহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এ বাক্যগুলো দিয়ে দুআ করতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ وَعَذَابِ النَّارِ وَمِنْ شَرِّ الْغِنَى وَالْفَقْرِ
“হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা, আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হইতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪৪. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْفَقْرِ وَالْقِلَّةِ وَالذِّلَّةِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হইতে, আপনার কম দয়া হইতে ও অসম্মানী হইতে। আমি আপনার নিকট আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা হইতে অথবা অত্যাচারিত হওয়া হইতে।”
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪৫. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) বিভিন্ন দুআর মধ্যে এটাও অন্যতমঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحْوِيلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ
“হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতে বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সমস্ত ক্রোধ হইতে”।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ বলে দুআ করতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الشِّقَاقِ وَالنِّفَاقِ وَسُوءِ الأَخْلاَقِ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ঝগঢ়া-বিবাদ, মুনাফেকী ও দুশ্চরিত্রতা থেকে আশ্রয় চাই। ” {১৫৪৬}
{১৫৪৬} নাসায়ী (অধ্যায়ঃ আশ্রয় প্রার্থণা করা, অনুঃ মুনাফিকী হইতে আশ্রয় চাওয়া,হাঃ ৫৪৮৬), হাদিসটি মুনষিরীআত-তারগীব গ্রন্থে (৩/৪১৩) এবং তাবরীযীমিশকাত গ্রন্থে (২৪৬৮) উল্লেখ করিয়াছেন। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৫৪৭. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُوعِ فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيعُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخِيَانَةِ فَإِنَّهَا بِئْسَتِ الْبِطَانَةُ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা হইতে আশ্রয় চাই, কারণ তা নিকৃষ্ট শয্যাসঙ্গী। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই খিয়ানত করা হইতে, কেননা তা খুবই নিকৃষ্ট বন্ধু”। {১৫৪৭}
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৫৪৮. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الأَرْبَعِ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دُعَاءٍ لاَ يُسْمَعُ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চারটি বস্তু হইতে আশ্রয় চাইঃ এমন জ্ঞান যা উপকারে আসে না, এমন হৃদয় যা ভীত হয় না, এমন আত্মা যা তৃপ্ত হয় না এবং এমন দুআ যা কবুল হয় না”।
সহীহঃ মুসলিম,যায়দ ইবনি আরক্বাম হইতে। দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪৯. আবুল মুতামির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমার ধারণা আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) আমাদেরকে এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ صَلاَةٍ لاَ تَنْفَعُ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন নামাজ হইতে যা উপকার দেয় না। ”
এছাড়া অন্য দুআ ও উল্লেখ করেন”।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৫০. ফারওয়াহ ইবনি নাওফাল আল-আশজাঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি উম্মুল মুমিনীন (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কি দুআ পড়তেন তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
“হে আল্লাহ! আমি আমার কর্মের অনিষ্টতা হইতে আশ্রয় চাই, যা আমি করেছি এবং যা আমি এখনও করি নাই। ”
সহীহঃ মুসলিম।দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৫১. আবু আহমাদ শাকাল ইবনি হুমাইদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি দুআ শিক্ষা দিন। তিনি বললেনঃ তুমি বলোঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানের অশ্লীল শ্রবণ, চোখের কুদৃষ্টি, জিহবার কুবাক্য, অন্তরের কপটতা ও কামনার অনিষ্টতা হইতে আশ্রয় চাই। ”
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৫২. আবুল ইয়াসার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এরূপ দুআ করতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ হইতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ হইতে, আমি আপনার নিকট হইতে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ হইতে এবং অতি বার্ধক্য হইতে। আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শাইত্বানের প্রভাব হইতে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা হইতে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রানীর দংশনে মৃত্যুবরণ হইতে। ”
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৫৩. আবুল ইয়াসার (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
(পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ) বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছেঃ “দুশ্চিন্তা হইতে আশ্রয় চাই”।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৫৪. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হইতে। ”
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৫৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে আবু উমামাহ নামক এক আনসারী সাহাবীকে দেখিতে পেয়ে তাকে বললেনঃ হে আবু উমামাহ! কি ব্যাপার! আমি তোমাকে নামাজের ওয়াক্ত ছাড়া মাসজিদে বসে থাকতে দেখছি? তিনি বলিলেন, সীমাহীন দুশিন্তা ও ঋণের বোঝার কারণে হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিবো না, তুমি তা বললে আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা ও করে দিবেন? তিনি বলিলেন,আমি বললাম, হাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি সকাল সন্ধ্যায় বলবেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য হইতে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল হইতে”।
আবু উমামাহ (রাঃআঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। ফলে মহান আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা দূর করিলেন এবং আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দিলেন। {১৫৫৫}
১৫৫৫} আবু দাউদ এটি একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যুবাইদী একেআল-ইলতিহাফ (৫/১০০) এবং মুনযিরীআত-তারগীব (হাঃ ২) গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন আবু সাঈদ খুদরী সূত্রে। এর সানাদ দুর্বল। সম্ভবত এর দোষ হচ্ছে সানাদের গাস্সান ইবনিআওফ। হাফিয বলেনঃ তিনি হাদীসে শিথিল।
দো‘আ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply