জান্নাতবাসীদের বিবরণ, জাহান্নাম ও কিয়ামাতের বর্ণনা
জান্নাতবাসীদের বিবরণ, জাহান্নাম ও কিয়ামাতের বর্ণনা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১. অধ্যায়ঃ জান্নাতে এমন একটি গাছ রয়েছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করিতে থাকিবে কিন্তু এতেও সে তার ছায়া অতিক্রম করিতে পারবে না
২. অধ্যায়ঃ জান্নাতবাসীদের উপর [চিরস্থায়ী] সন্তুষ্টি নাযিল হওয়া এবং কখনো অসন্তুষ্ট না হওয়া
৩. অধ্যায়ঃ জান্নাতীগণ আকাশের তারকারাজির ন্যায় বালাখানাসমূহ দেখিতে পাবে
৪. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ]-কে যারা তাদের পরিবার-পরিজন ও ধনৈশ্বর্যের বিনিময়ে দেখিতে পছন্দ করিবে
৫. অধ্যায়ঃ জান্নাতের বাজার ও তাতে যে সৌন্দর্য ও নিআমাত পাওয়া যাবে
৬. অধ্যায়ঃ পূর্ণিমার রাতের চাঁদের ন্যায় যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের মুখমণ্ডল দীপ্তিমান হইবে এবং তাঁদের গুণাবলী ও সহধর্মিণীগণের বর্ণনা
৭. অধ্যায়ঃ জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাদের তাসবীহ পাঠ
৮. অধ্যায়ঃ জান্নাতীদের নিআমাত চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহর বাণী : “আর তাদের সম্বোধন করে বলা হইবে, তোমরা যা করিতে তারই বিনিময়ে তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে”
৯. অধ্যায়ঃ জান্নাতের তাঁবু এবং তাতে মুমিনগণের স্ত্রীদের বর্ণনা
১০. অধ্যায়ঃ জান্নাতের নহরসমূহ থেকে যা দুনিয়াতে রয়েছে
১১. অধ্যায়ঃ পাখীর হৃদয়ের ন্যায় হৃদয় বিশিষ্ট কতিপয় লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে
১২. অধ্যায়ঃ জাহান্নামের আগুনের প্রবল উত্তাপ ও গভীর তলদেশ এবং শাস্তিপ্রাপ্তদের যা স্পর্শ করিবে
১৩. অধ্যায়ঃ দুর্দান্ত প্রতাপশালীরা জাহান্নামে এবং দুর্বলেরা যাবে জান্নাতে
১৪. অধ্যায়ঃ দুনিয়ার নশ্বরতা ও কিয়ামাতের বর্ণনা
১৫. অধ্যায়ঃ কিয়ামাত দিবসের বর্ণনা, এ দিবসের ভীতিকর অবস্থাতে আল্লাহ আমাদেরকে সহযোগিতা করুন
১৬. অধ্যায়ঃ পৃথিবীতে জান্নাতী ও জাহান্নামী লোকদের পরিচয়
১৭. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির কাছে জান্নাত কিংবা জাহান্নামের ঠিকানা উপস্থিত করা হয়, আর কবরের শাস্তি প্রমাণ করা এবং তাত্থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা
১৮. অধ্যায়ঃ হিসাব-নিকাশের বর্ণনা
১৯. অধ্যায়ঃ মৃত্যুক্ষণে আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা গ্রহণ করার হুকুম প্রসঙ্গে
১. অধ্যায়ঃ জান্নাতে এমন একটি গাছ রয়েছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করিতে থাকিবে কিন্তু এতেও সে তার ছায়া অতিক্রম করিতে পারবে না
৭০২২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতকে পরিবেষ্টন করে রাখা হয়েছে কষ্টদায়ক জিনিস দ্বারা এবং জাহান্নামকে পরিবেষ্টন করে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় জিনিস দ্বারা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯২৬]
৭০২৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] হইতে অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯২৭]
৭০২৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীত। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনি।
এ কথাটি অনুরূপ আল-কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে-
قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَعْدَدْتُ لِعِبَادِيَ الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ
“কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন মুগ্ধকর কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ”- [সূরাহ্ আস্ সাজ্দাহ্ ৩২ : ১৭]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯২৮]
৭০২৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীত। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক্কার বান্দাদের জন্য এমন বস্তু তৈরি করে রেখেছি যা কোন চক্ষু কক্ষনো দেখেনি, কোন কর্ণ কক্ষনো শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ যা কক্ষনো চিন্তাও করেনি। এসব নিআমাত আমি জমা রেখে দিয়েছি। তবে আল্লাহ তোমাদেরকে যা অবগত করিয়েছেন তা অবগত হয়েছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯২৯]
৭০২৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু কক্ষনো দেখেনি, কোন কর্ণ কক্ষনো শুনেনি এবং যা কোন অন্তঃকরণ কক্ষনো চিন্তাও করেনি। এগুলো আমি তোমাদের জন্য গচ্ছিত করে রেখে দিয়েছি। এ সকল ব্যতীত আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দেখিয়েছেন। এর কোনই মূল্য নেই। arbi
তারপর তিনি পাঠ করিলেন, “কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন মুগ্ধকর কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ”-
[সূরাহ্ আস্ সাজদাহ্ ৩২ : ১৭। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩০]
৭০২৭. সাহ্ল ইবনি সাদ আস্ সাইদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। তিনি জান্নাতের গুণকীর্তন করে শেষ অবধি বলিলেন, এতে এমন সব নিআমাত রয়েছে যা কোন চক্ষু কক্ষনো দেখেনি, কোন কান কক্ষনো শোনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কক্ষনো কল্পনাও করেনি। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] পাঠ করিলেন- তারা শয্যা ত্যাগ করতঃ তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আশায় ও আশংকায় এবং তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন মনোমুগ্ধকর কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কর্মফল স্বরূপ”-
[সূরা আস্ সাজদাহ্ ৩২ : ১৬-১৭]। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩১]
৭০২৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীত। তিনি বলেন, জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত সফর করিতে থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩২]
৭০২৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে যে, এতেও সে সফর শেষ করিতে পারবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৩]
৭০৩০. সাহ্ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতের মাঝে এমন একটি গাছ রয়েছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর ভ্রমণ করেও তা শেষ করিতে পারবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৪]
৭০৩১. বর্ণনাকারী আবু হাযিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
নুমান ইবনি আবু আইয়্যাশ যুরাকীর কাছে এ হাদীস আমি বর্ণনা করার পর তিনি বলিলেন, আমাকে আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.] বলেছেন, নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতের মাঝে এমন একটি গাছ রয়েছে, যা দ্রুতগামী শক্তিশালী অশ্বারোহী একশ বছর পর্যন্ত চলার পরও তা সে অতিক্রম করিতে পারবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৪]
২. অধ্যায়ঃ জান্নাতবাসীদের উপর [চিরস্থায়ী] সন্তুষ্টি নাযিল হওয়া এবং কখনো অসন্তুষ্ট না হওয়া
৭০৩২. আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ৩এও জান্নাতী লোকদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে জান্নাতীগন! তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আপনার আনুগত্যের জন্য উপস্থিত আছি। যাবতীয় কল্যাণ আপনারই হাতে। তারপর তিনি বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছো? তারা জবাব দিবে, হে আমাদের রব! কেন আমরা সন্তুষ্ট হব না? অথচ আপনি আমাদেরকে এমন বস্তু দান করিয়াছেন যা আপনার সৃষ্টি জগতের অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি বলবেন, আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে উত্তম বস্তু দান করব না? তারা বলবে, হে পালনকর্তা! এর চাইতে উত্তম বস্তু আর কি হইতে পারে? এরপর আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি নাযিল করব। অতঃপর তোমাদের উপর আমি আর কক্ষনো অসন্তুষ্ট হব না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৫]
৩. অধ্যায়ঃ জান্নাতীগণ আকাশের তারকারাজির ন্যায় বালাখানাসমূহ দেখিতে পাবে
৭০৩৩. সাহ্ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতবাসীগণ জান্নাতের সুউচ্চ বালাখানাসমূহ দেখিতে পাবে, তোমরা যেমন আকাশের তারকারাজি দেখে থাকো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৬]
৭০৩৪. নুমান ইবনি আবু আইয়্যাশ হইতে বর্ণীতঃ
বর্ণনাকারী বলেন, নুমান ইবনি আবু আইয়্যাশ-এর নিকট এ হাদীসটি আমি বর্ণনা করার পর তিনি বলিলেন, আমি আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.]-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যেমনিভাবে তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম আকাশের উজ্জ্বল তারকারাজি দেখে থাকো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৬]
৭০৩৫. আবু হাযিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে উভয় সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
ইয়াকূব-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৭]
৭০৩৬. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, জান্নাতের বাসিন্দাগণ জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদসমূহ উপর দিকে দেখিতে পাবে, যেমন দূরবর্তী উজ্জ্বল নক্ষত্রসমূহ তোমরা আকাশের পূর্ব বা পশ্চিম কোণে স্পষ্ট দেখিতে পাও। কেননা তাদের পরস্পরের সম্মানের ক্ষেত্রে পার্থক্য সূচিত থাকিবে। এ কথা শ্রবণে সহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ স্তরসমূহ তো নবীদের জন্য নির্ধারিত। তাদের ছাড়া অন্যেরা তো এ স্তরে কক্ষনো পৌঁছতে পারবে না। জবাবে তিনি বলিলেন, কেন পারবে না, অবশ্যই পারবে। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ আমি তাহাঁর শপথ করে বলছি! যে সকল লোক আল্লাহইতে ঈমান আনয়ন করে এবং তাহাঁর রসূলদের প্রতি আস্থা স্থাপন করে, তারা সকলেই এ মর্যাদা সম্পন্ন স্তরসমূহে প্রবেশ করিতে সক্ষম হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৮]
৪. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ]-কে যারা তাদের পরিবার-পরিজন ও ধনৈশ্বর্যের বিনিময়ে দেখিতে পছন্দ করিবে
৭০৩৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমার উম্মাতের মাঝে আমাকে বেশি মহব্বতকারী ঐ সব লোকেরা হইবে, যারা আবির্ভূত হইবে আমার ইন্তিকালের পর, তারা আকাঙ্ক্ষা করিবে, হায় যদি তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদের বিনিময়েও আমাকে দেখিতে পেত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩৯]
৫. অধ্যায়ঃ জান্নাতের বাজার ও তাতে যে সৌন্দর্য ও নিআমাত পাওয়া যাবে
৭০৩৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতে একটি বাজার থাকিবে। প্রত্যেক জুমুআয় জান্নাতী লোকেরা এতে একত্রিত হইবে। তারপর উত্তরদিকের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরো বেড়ে যাবে। তারপর তারা স্ব স্ব পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদের শরীরের রং এবং সৌন্দর্যও বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের নিকট হইতে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহ শপথ! তোমাদের শরীরের সৌন্দর্য তোমাদের নিকট থেকে যাবার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪০]
৬. অধ্যায়ঃ পূর্ণিমার রাতের চাঁদের ন্যায় যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের মুখমণ্ডল দীপ্তিমান হইবে এবং তাঁদের গুণাবলী ও সহধর্মিণীগণের বর্ণনা
৭০৩৯. মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা গর্ব প্রকাশ করে বলিল, অথবা আলোচনা করতঃ বলিল, জান্নাতে পুরুষ অধিক হইবে, না মহিলা? এ কথা শ্রবণে আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলিলেন, আবুল কাসিম [সাঃআঃ] কি বলেননি, যে দলটি জান্নাতে প্রথমে প্রবেশ করিবে তাদের মুখায়ব পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হইবে। তাদের পর যারা জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা হইবে ঊর্দ্ধাকাশের আলোকিত নক্ষত্রের মতো। তাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকিবে দু জন সহধর্মিণী। গোশ্তের এ পাশ হইতে তাদের পায়ের নলার মগজ দৃশ্য হইবে। জান্নাতের মাঝে কেউ [আর] অবিবাহিত থাকিবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪১]
৭০৪০. ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে] কারা অধিক জান্নাতী হইবে, এ বিষয়ে পুরুষ ও মহিলাগন ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। তারপর তারা এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলে তিনি ইবনি উলাইয়্যার ন্যায় বলিলেন, আবুল কাসিম [সাঃআঃ] এ কথা বলেছেনঃ ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪২]
৭০৪১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক সর্বপ্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। কুতাইবাহ্ ও যুহায়র ইবনি হার্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. আবু হুরায়রা্ [রাদি.] হইতে বর্ণীত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের মুখমণ্ডল পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হইবে। তাদের পর যারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের মুখমণ্ডল আকাশে উদিত আলোকজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো হইবে। তারা প্রস্রাব-পায়খানা করিবে না, থু-থু ফেলবে না এবং নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনী হইবে স্বর্ণের। তাদের গায়ের ঘাম হইতে মিশকের ঘ্রাণ আসবে এবং তাদের ধূপদানী হইবে আলূওয়াহ্ নামে এক ধরণের সুগন্ধি কাষ্ঠের তৈরি। তাদের স্ত্রীগণ হইবে ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট। তাদের চরিত্র হইবে একই লোকের চরিত্রের মতো। আদি পিতা আদাম [আঃ]-এর আকৃতির মতো হইবে তাদের আকৃতি। যা ষাট হাত দীর্ঘ আকৃতি বিশিষ্ট।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪৩]
৭০৪২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রথমে আমার উম্মাতের যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের চেহারা হইবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলোকিত। তারপর যারা জান্নাতে যাবে তাদের মুখমণ্ডল হইবে ঊর্ধ্বাকাশে উদিত তারকারাজির মতো। অতঃপর যারা জান্নাতে দাখিল হইবে তাদের কয়েকটি ধাপ হইবে। তারা প্রস্রাব-পায়খানা করিবে না, নাক ঝাড়বে না এবং থু-থু ফেলবে না। তাদের চিরুনি হইবে স্বর্ণের এবং তাদের ধূপদানী হইবে আলূওয়াহ্ নামক সুগন্ধিযুক্ত কাষ্ঠের। তাদের শরীরের ঘাম হইতে মিশকের ঘ্রাণ বিচ্ছুরিত হইবে। তাদের চরিত্র একই ব্যক্তির চরিত্রের ন্যায় হইবে। তারা তাদের আদি পিতা আদাম [আঃ]-এর মতো ষাট হাত দীর্ঘ হইবে।
ইবনি আবী শাইবাহ্-এর বর্ণনাতে عَلَى خُلُقِ رَجُلٍ অর্থাৎ একই ব্যক্তির চরিত্রের। আর আবু কুরায়ব-এর বর্ণনাতে عَلَى خُلُقِ رَجُلٍ অর্থাৎ একই ব্যক্তির গঠনের ন্যায় হইবে। কিন্তু ইবনি আবু শাইবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, তাদের আকৃতি আদি পিতা আদাম [আঃ]-এর ন্যায় হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪৪]
৭. অধ্যায়ঃ জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাদের তাসবীহ পাঠ
৭০৪৩. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যা আবু হুরায়রা্ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তম্মেধ্যে একটি হলো এই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে দলটি প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের মুখমণ্ডল পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলোকজ্জ্বল হইবে। তথায় তারা থু-থু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না এবং পায়খানাও করিবে না। সেখানে তাদের বাসন এবং চিরুণীসমূহ স্বর্ণ এবং রৌপ্য নির্মিত হইবে। তাদের ধূপদানী হইবে আলূওয়াহ্ নামে এক ধরণের সুগন্ধি কাষ্ঠের নির্মিত। তাদের গায়ের ঘাম মিশ্কের মতো সুঘ্রাণযুক্ত হইবে। তাদের প্রত্যেকেরই দুজন করে সহধর্মিণী থাকিবে। সৌন্দর্যের কারণে গোশ্তের উপর থেকে তাদের পায়ের নলাস্থিত মজ্জা পরিদৃষ্ট হইবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকিবে না, আর কোন হিংসা-বিদ্বেষ থাকিবে না। তাদের অন্তঃকরণ একই অন্তরের মতো হইবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪৫]
৭০৪৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে পানাহার করিবে। তবে থু-থু ফেলবে না, প্রস্রাব-পায়খানা করিবে না এবং নাকও ঝাড়বে না। এ কথা শুনে সহাবাগণ বলিলেন, তবে ভক্ষিত খানা যাবে কোথায়? উত্তরে তিনি বলিলেন, এক ঢেকুরে শেষ হয়ে যাবে। তাদের শরীরের ঘাম মিশ্কের মতো সুঘ্রাণযুক্ত হইবে। আল্লাহর পবিত্রতা এবং প্রশংসা তাদের অন্তঃকরণে এভাবে দেয়া হইবে যেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮৪৬]
৭০৪৫. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে
كَرَشْحِ الْمِسْكِ
[মিশ্কের সুঘ্রাণের ন্যায়] পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪৭]
৭০৪৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতবাসীগণ তথায় পানাহার করিবে। তবে তারা সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করিবে না এবং নাকও ঝাড়বে না। তাদের এ ভক্ষিত খাদ্য ঢেকুরের মাধ্যমে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাদের শরীরের ঘাম মিশকের ন্যায় সুঘ্রাণ বিচ্ছুরিত করিবে। তাসবীহ ও তাহমীদের গোগ্যতা তাদের অন্তঃকরণে এভাবে দেয়া হইবে যেমনিভাবে মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে থাকে।
তবে হাজ্জাজ-এর হাদীসে এ কথা বর্ধিত আছে যে, طَعَامُهُمْ ذَلِكَ [এটাই তাদের খাদ্য]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮৪৮]
৭০৪৭. জাবির [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
অবিকল হাদীস বর্ণিত আছে। তবে এতে এ কথা বর্ণিত আছে যে,
يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّكْبِيرَ كَمَا يُلْهَمُونَ النَّفَسَ
[তাসবীহ ও তাকবীরের যোগ্যতা তাদের অন্তঃকরণে এভাবে দেয়া হইবে যেমনিভাবে মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে থাকে]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪৯]
৮. অধ্যায়ঃ জান্নাতীদের নিআমাত চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহর বাণী : “আর তাদের সম্বোধন করে বলা হইবে, তোমরা যা করিতে তারই বিনিময়ে তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে”
৭০৪৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যে লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে সে স্বাচ্ছন্দে থাকিবে কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হইবে না। তার পরিধেয় বস্ত্র কখনো পুরনো হইবে না এবং তার যৌবন কক্ষনো শেষ হইবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫০]
৭০৪৯. আবু সাঈদ আল খুদরী ও আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন আহ্বানকারী জান্নাতী লোকেদেরকে আহ্বান করে বলবে, এখানে সর্বদা তোমরা সুস্থ থাকিবে, কক্ষনো অসুস্থ হইবে না। তোমরা স্থায়ী জীবন লাভ করিবে, কখনো তোমরা মরবে না। তোমরা যুবক থাকিবে, কক্ষনো তোমরা বৃদ্ধ হইবে না। তোমরা সর্বদা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকিবে, কক্ষনো আর তোমরা কষ্ট-ক্লেশে পতিত হইবে না। এটাই মহা মহিম আল্লাহর বাণী : arbi
“আর তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হইবে, তোমরা যে আমাল করিতে তারই বিনিময়ে তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে”- [সূরাহ্ আল আরাফ ৭ : ৪৩] এর ব্যাখ্যা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫১]
৯. অধ্যায়ঃ জান্নাতের তাঁবু এবং তাতে মুমিনগণের স্ত্রীদের বর্ণনা
৭০৫০. আবদুল্লাহ ইবনি কায়স [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুমিনদের জন্য জান্নাতে মধ্যস্থলে ফাঁকা এমন একটি মুক্তার তাঁবু নির্মাণ করা হইবে যার দৈর্ঘ্য হইবে ষাট মাইল। মুমিনদের সহধর্মিণীগণও এতে থাকিবে। তারা তাদের সকলের নিকট গমন করিবে। তবে স্ত্রীগণ পরস্পর একে অন্যকে দেখিতে পাবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫২]
৭০৫১. আবদুল্লাহ ইবনি কায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে [মুমিনদের জন্য] মাঝে ফাঁকা এরূপ মুক্তার একটি বিশাল তাঁবু থাকিবে, যার বিস্তৃতি হইবে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক প্রান্তেই স্ত্রীগণ থাকিবে। তারা পরস্পর একে অপরকে দেখিতে পাবে না। মুমিনেরা ঘুরে ঘুরে সকল রমণীর নিকট যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৩]
৭০৫২. আবু মূসা [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জান্নাতের তাঁবুগুলো মণি-মুক্তার তৈরি হইবে। এর দৈর্ঘ্য হইবে ঊর্ধাকাশের দিকে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক কোণে মুমিনদের সহধর্মিণীগণ থাকিবে। তবে পরস্পর একে অপরকে দেখিতে পাবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৪]
১০. অধ্যায়ঃ জান্নাতের নহর সমূহ থেকে যা দুনিয়াতে রয়েছে
৭০৫৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাইহান, জাইহান [দুটি নদ] এবং ফুরাত ও নীল [দুটি নদ] এসবের প্রত্যেকটিই জান্নাতের নহরসমূহেরই অন্তর্ভুক্ত হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৫]
১১. অধ্যায়ঃ পাখীর হৃদয়ের ন্যায় হৃদয় বিশিষ্ট কতিপয় লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে
৭০৫৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এমন কিছু লোক জান্নাতে যাবে, যাদের অন্তর পাখীর অন্তরের মতো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৬]
৭০৫৫. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে কিছু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এর মধ্যে একটি হলো এ-ই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদাম [আঃ]-কে তাহাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করিয়াছেন। তার দৈর্ঘ্য হলো ষাট হাত। সৃষ্টির পর তিনি তাকে বলিলেন, যাও এদেরকে সালাম করো। সেখানে একদল ফেরেশ্তারা বসা ছিলেন। সালামের জবাবে তারা কি বলে তা খুব মনোযোগ সহকারে শুনো। কেননা তোমার এবং তোমার বংশধরদের অভিবাদন হইবে এ-ই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন ও বলিলেন, arbi “আস্সালামু আলাইকুম”। জবাবে তারা বলিলেন, “আস্সালামু আলাইকা ওয়ারহমাতুল্লাহ্”। তাঁরা ওয়ারহমাতুল্লাহ্ বাড়িয়ে বলেছেনঃ । অবশেষে তিনি বলিলেন, যে লোক জান্নাতে যাবে সে আদাম [আঃ]-এর আকৃতি বিশিষ্ট হইবে। তার দৈর্ঘ্য হইবে ষাট হাত। {তিনি [সাঃআঃ] বলেন,} তারপর আদাম [আঃ]-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ ক্রমশই খাটো হয়ে আসছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৭]
১২. অধ্যায়ঃ জাহান্নামের আগুনের প্রবল উত্তাপ ও গভীর তলদেশ এবং শাস্তিপ্রাপ্তদের যা স্পর্শ করিবে
৭০৫৬. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জাহান্নামকে এভাবে উপস্থিত করা হইবে। সেদিন তাতে সত্তর হাজার লাগাম লাগানো থাকিবে। প্রতিটি লাগামের সাথে সত্তর হাজার ফেরেশ্তা থাকিবে তাঁরা তাকে টেনে নিয়ে যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৮]
৭০৫৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের এ অগ্নি যা আদাম সন্তানগণ জ্বালিয়ে থাকে তা জাহান্নামের অগ্নির উত্তাপের সত্তর ভাগের একভাগ। সহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম! এ আগুনই তো যথেষ্ট ছিল? তিনি বলিলেন, সে আগুন তো এ আগুনের তুলনায় উনসত্তর গুণ অধিক তাপমাত্রা সম্পন্ন। এ উনসত্তরের প্রতিটি তাপমাত্রাই দুনিয়ার আগুনের তাপমাত্রার সমতুল্য।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৯]
৭০৫৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে আবু যিনাদ-এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে হাম্মাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [আর-বী] [প্রতিটি]-এর স্থলে [আরবী] [সবগুলোই তার তাপমাত্রার সমতুল্য] বলেছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৩ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬০]
৭০৫৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি হঠাৎ একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কি জান, এটা কিসের আওয়াজ? বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলিলেন, এ একটি পাথর যা সত্তর বছর আগে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তারপর তা কেবল নিম্নে পতিত হইতে হইতে এখন সেটা তার তলদেশে গিয়ে পৌঁছেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬১]
৭০৬০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] থেকে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে এ কথা বর্ধিত বর্ণিত রয়েছে যে, এ পাথরটি এখন জাহান্নামের অতল গভীরে গিয়ে পৌঁছেছে, তাই তোমরা বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়েছো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৫, ই.সে৬৯৬২]
৭০৬১. সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছেন যে, অগ্নি জাহান্নামীদের কাউকে তো তার উভয় গোড়ালি পর্যন্ত স্পর্শ করিবে; আবার কাউকে তার কোমর পর্যন্ত এবং কাউকে তার গর্দান পর্যন্ত স্পর্শ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬৩]
৭০৬২. সামুরাহ্ ইবনি জুনদাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অগ্নি জাহান্নামীদের কাউকে তার উভয় টাখনু পর্যন্ত স্পর্শ করিবে, কাউকে তার উভয় হাঁটু পর্যন্ত স্পর্শ করিবে, কাউকে তার কোমর পর্যন্ত, আবার কাউকে তার গলা পর্যন্ত স্পর্শ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬৪]
৭০৬৩. সাঈদ [রাদি.] থেকে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে [আর-বী] পরিবর্তে [আরবী] [উভয় শব্দের অর্থ একই, অর্থাৎ কোমর] শব্দটি বর্ণিত আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬৫]
১৩. অধ্যায়ঃ দুর্দান্ত প্রতাপশালীরা জাহান্নামে এবং দুর্বলেরা যাবে জান্নাতে
৭০৬৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জাহান্নাম ও জান্নাত পরস্পর বাক-বিতন্ডা করিল। অতঃপর জাহান্নাম বলিল, প্রতিপত্তি সম্পন্ন অহংকারী লোকেরা আমার মাঝে প্রবেশ করিবে। জান্নাত বলিল, দুর্বল ও নিঃস্ব লোকেরা আমার মাঝে প্রবেশ করিবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বলিলেন, তুমি আমার আযাব, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা আযাব দিব। কোন কোন সময় তিনি বলেছেন, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা বিপদে ফেলব। তারপর তিনি জান্নাতকে বলিলেন, তুমি আমার রহমত, আমি যাকে ইচ্ছা তোমার দ্বারা রহমত করব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই পেট ভর্তির ব্যবস্থা থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬৬]
৭০৬৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, একদা জাহান্নাম ও জান্নাত বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লো। জাহান্নাম বলিল, অহংকারী এবং প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন লোকেরা আমার মাঝে প্রবেশ করিবে। জান্নাত বলিল, আমার কি হলো, মানুষের মাঝে যারা দুর্বল, নীচু স্তরের এবং অক্ষম, তারাই আমার মধ্যে প্রবেশ করিবে। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বলিলেন, তুমি আমার রহমাত, আমার বান্দাদের যার প্রতি ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা রহমাত বর্ষণ করব। তারপর তিনি জাহান্নামকে বলিলেন, তুমি আমার আযাব, আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা আযাব দিব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই পেট ভর্তির ব্যবস্থা থাকিবে। এতদ্সত্ত্বেও জাহান্নাম পূর্ণ হইবে না। তাই আল্লাহ্ তাআলা এর উপরে স্বীয় পা মুবারাক রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট হয়ে গেছে। এ সময়ই জাহান্নাম পরিপূর্ণ হইবে এবং একাংশ অপরাংশের সাথে মিলে যাবে অর্থাৎ সঙ্কুচিত হয়ে যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬৭]
৭০৬৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ একদা জান্নাত ও জাহান্নাম বিতর্ক যুদ্ধে লিপ্ত হলো। অতঃপর ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু যিনাদ-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬৮]
৭০৬৭. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন। তন্মধ্যে একটি হাদীস হলো এইযে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর তর্কে লিপ্ত হয়েছে। জাহান্নাম বলিল, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অহংকারীদের জন্য আমাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। জান্নাত বলিল, আমার কি হলো, আমার মাঝে কেবল দুর্বল ও নগণ্য লোকেরাই প্রবেশ করিবে। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বলিলেন, তুমি আমার রহ্মাত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে চাই তার প্রতি আমি রহ্মাত নাযিল করব এবং তিনি জাহান্নামকে বলিলেন, তুমি আমার আযাব। তোমার দ্বারা আমি আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আযাব দিব। বস্তুতঃ তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই পেট ভরপুর করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু জাহান্নাম কিছুতেই পরিপূর্ণ হইবে না। পরিশেষে তিনি স্বীয় পা মুবারাক তার উপরে রাখলে তখন জাহান্নাম বলবে, হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। তখনই জাহান্নাম পরিপূর্ণ হইবে এবং এর একাংশ অন্য অংশের সাথে মিলে গিয়ে সংকুচিত হয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টির কারো উপর অবিচার করবেন না। আর জান্নাত পরিপূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তাআলা অন্য মাখলূক সৃষ্টি করবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬৯]
৭০৬৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একদা জান্নাত ও জাহান্নাম তর্কে লিপ্ত হলো। অতঃপর তিনি আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-এর হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে [আর-বি] -এর পরিবর্তে [আরবি] [অর্থাৎ- তোমাদের প্রত্যেককে পরিপূর্ণ অংশ প্রদান করা আমার দায়িত্ব] কথাটি বর্ণিত আছে। তবে এর পরবর্তী অংশটুকু এখানে বর্ধিত বিবৃত হয়নি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭০]
৭০৬৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জাহান্নাম সবসময় বলিতে থাকিবে, আরো বেশি আছে কি? শেষ অবধি আল্লাহ রব্বুল আলামীন আপন পা মুবারাক তাতে স্থাপন করবেন। তখন সে বলবে, আপনার ইয্যতের কসম! হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। তখন এর এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে গিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭১]
৭০৭০. আনাস [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে শাইবান-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭২]
৭০৭১. মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ আর্ রুয্যী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
মহান আল্লাহর বানী:
يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ
–এর ব্যাখ্যায় আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] থেকে উল্লেখ করেন যে, নবী [সাঃআঃ] বলেন: অনবরত [জাহান্নামীদেরকে] জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। তবুও জাহান্নাম বলবে, আরো বেশি আছে কি? অবশেষে আল্লাহ রব্বুল আলামীন এতে আপন পা মুবারাক স্থাপন করবেন। তখন এর একাংশ অপরাংশের সাথে মিলে গিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং বলবে, তোমার ইয্যত ও অনুগ্রহের কসম! হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। পক্ষান্তরে জান্নাতের মধ্যস্থলে কিছু জায়গা অব্যাহতভাবে খালি পরে থাকিবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা এর জন্য অন্য মাখলূক সৃষ্টি করবেন এবং শূন্যস্থানে তাদেরকে আবাসের ব্যবস্থা করবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭৩]
৭০৭২. আনাস [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ স্থান জান্নাতে শূন্য থাকিবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা নিজ ইচ্ছানুযায়ী এর জন্য অন্য মাখলূক সৃষ্টি করবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭৪]
৭০৭৩. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন মৃত্যুকে একটি সাদা মেষের আকৃতিতে উপস্থিত করা হইবে। আবু কুরায়ব বর্ধিত বর্ণনা করে বলেন, তারপর তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে দাঁড় করানো হইবে। এরপর উভয়ই অবশিষ্ট হাদীস একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। তখন বলা হইবে, হে জান্নাতীগণ! তোমরা কি একে চিনো? এ কথা শুনে তারা মাথা উঠিয়ে দেখবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বলা হইবে, হে জাহান্নামীগণ! তোমরা কি একে চিনো? তখন তারা মাথা তুলে দেখবে এবং বলবে, হ্যাঁ! এতো মৃত্যু। তারপর নির্দেশ দেয়া হইবে এবং সেটাকে যবাহ্ করা হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বলা হইবে, হে জান্নাতীগণ! মৃত্যু নেই, তোমরা অনন্তকাল এখানে থাকিবে। হে জাহান্নামীরা! মৃত্যু নেই, তোমরা অনন্তকাল এখানেই থাকিবে। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাঠ করিলেন, arbi “তুমি তাদেরকে সাবধান করে দাও-অনুশোচনার দিন সম্পর্কে, যখন সকল বিষয়ে ফায়সালা করা হইবে। অথচ তারা গাফিলতির মাঝে নিপতিত হয়ে আছে এবং ঈমান গ্রহণ করছে না।” এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্বীয় হাত দ্বারা দুনিয়ার প্রতি ইশারা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭৫]
৭০৭৪. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যখন জান্নাতী লোকেদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হইবে এবং জাহান্নামী লোকেদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হইবে, তখন বলা হইবে, হে জান্নাতবাসীগণ! তারপর জারীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু মুআবিয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর অবিকল হাদীস উল্লেখ করেন। কিন্তু তাতে [আর-বি] –এর স্থলে [আরবি] –কথাটি বর্ণনা করিয়াছেন। আর এতে অতঃপর তিনি স্বীয় হাত দ্বারা পৃথিবীর দিকে ইশারা করিয়াছেন-এ কথাটিও তিনি বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭৬]
৭০৭৫. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে দাখিল করানোর পর জনৈক ঘোষণাকারী তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করিবে, হে জান্নাতবাসীগণ! এখন মৃত্যু নেই, হে জাহান্নামীরা! এখর আর মৃত্যু নেই। প্রত্যেকে চিরকাল নির্ধারিত স্থানে থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭৭]
৭০৭৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করিবে, তখন মৃত্যুকে আনা হইবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যবেহ্ করে দেয়া হইবে। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করিবে, হে জান্নাতবাসীগণ! এখানে আর তোমাদের মৃত্যু নেই। অনুরূপভাবে জাহান্নামীদেরকেও বলা হইবে, হে জাহান্নামীরা! আর তোমাদের মৃত্যু নেই। এতে জান্নাতীদের আনন্দের সাথে আরো আনন্দ বেড়ে যাবে এবং জাহান্নামীদের শোকের সাথে আরো শোক বহুগুণ বেড়ে যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭৮]
৭০৭৭. আবু হুরাইয়াহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাফিরদের দাঁত উহুদ পাহাড়েন ন্যায় বড় হইবে এবং তাদের চামড়া তিন দিনের দূরত্ব পরিমাণ মোটা হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭৯]
৭০৭৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] থেকে মারফূ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ জাহান্নামে কাফিরদের দু কাঁধের মাঝখানে দ্রুতগামী আরোহী ব্যক্তির তিন দিনের দূরত্বের পথ হইবে।
তবে ওয়াকীঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [আরবি] [জাহান্নামে] কথাটি বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮০]
৭০৭৯. হারিসাহ্ ইবনি ওয়াহ্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীর পরিচয় বলব না? সহাবাগণ বলিলেন, হ্যাঁ! অবশ্যই। তিনি বলেলেন, তারা হইবে দুর্বল লোক তাদের [দুনিয়া] দুর্বলই মনে করা হতো। যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসীর পরিচয় জানাব না? সহাবাগণ বলিলেন, হ্যাঁ, জানাবেন। তিনি বলিলেন, তারা হইবে নিষ্ঠুর, দাম্ভিক ও অহংকারী লোক।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮১]
৭০৮০. শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে পার্থক্য এই যে, তিনি [আরবি] স্থলে [আরবি] শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন, অর্থ একই [আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব না]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮২]
৭০৮১. হারিসাহ্ ইবনি ওয়াহ্ব আল খুযাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতবাসীগণের পরিচয় আমি কি তোমাদেরকে জানাব না? তারা হইবে দুর্বল কোমল হৃদয় বিনয়ী লোক। যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে কসম করলে আল্লাহ তা পূর্ণ করান। তিনি আবার বলিলেন, আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের পরিচয় বলব না? তারা হইবে দাম্ভিক, হীন বা নীচ এবং অহংকারী লোক।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮৩]
৭০৮২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কিছু সংখ্যক এমন জীর্ণশীর্ণ লোক আছে, যাদেরকে মানুষের দ্বার হইতে বিতাড়িত করা হয়। [অথচ তারা আল্লাহর নিকট এত প্রিয় যে,] তারা যদি আল্লাহর নামে কোন কসম করে তবে আল্লাহ তাআলা তা পূর্ণ করে দেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮৪]
৭০৮৩. আবদুল্লাহ ইবনি যামআহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খুতবাহ্ প্রদানকালে {সালিহ [আঃ]-এর} উষ্ট্রী সম্পর্কে এবং যে লোক সেটার পা কেটেছিল তার সম্পর্কে আলোচনা করিলেন। তিনি বলিলেন, যখন ঐ উষ্ট্রীকে হত্যা করার জন্য তাদের কাওমের সবচেয়ে হতভাগ্য লোকটি উদ্যত হল, তখন এ কাজের জন্য ঐ কাওমের মধ্যে আবু যামআর ন্যায় সবচেয়ে শক্তিশালী, নিষ্ঠুর, অসভ্য ও হতভাগ্য লোক ছিল। এ খুতবায় তিনি মহিলাদের বিষয়ে আলোচনা করিলেন এবং তাদের নাসীহাত করিলেন। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে তার স্ত্রীকে অযথা প্রহার করে। আবু বকর-এর বর্ণনায় আছে, ক্রীতদাসীর ন্যায় প্রহার করে। আবু কুরায়ব-এর বর্ণনায় আছে, ক্রীতদাসের ন্যায় প্রহার করে। কিন্তু আবার দিন শেষে রাতের বেলা তার সঙ্গে মিলিত হয়। এরপর তিনি বায়ু নিঃসরণ করে হাসি দেয়া সম্বন্ধে উপদেশ করিলেন এবং বলিলেন, যে কাজ তোমরা স্বয়ং করিবে সে ব্যাপারে তোমরা কি করে হাসতে পার?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮৫]
৭০৮৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি বানী কাব-এর বাবা আম্র ইবনি লুহাই ইবনি কামাআহ্ ইবনি খিন্দিফকে জাহান্নামের মাঝে দেখেছি সে তার পেট হইতে সব নাড়ী-ভুড়ি টেনে বের করছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮৬]
৭০৮৫. সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বাহীরাহ্ বলা হয় এমন উষ্ট্রীকে, যা কোন দেবতার নামে মানৎ করে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে আর কেউ দোহন করে না। আর সায়িবাহ্ বলা হয় এমন উটকে, মুশরিকগণ তাদের দেবতার নামে ছেড়ে দিত। এভাবে ছেড়ে দেয়ার পর এর পিঠে কোন বোঝা বহন করা হত না।
ইবনি মুসাইয়্যাব [রাদি.] আরো বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি জাহান্নামের মাঝে আমির আল খুযাঈকে দেখেছি, সে তার নাড়ী-ভুড়ি টেনে বের করছে। কেননা সে-ই সর্বপ্রথম দেব-দেবীর নামে সায়িবাহ্ [উটের] জন্তুর প্রথা চালু করেছিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮৭]
৭০৮৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দু প্রকার লোক জাহান্নামী হইবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক প্রকার ঐ সব লোক যাদের কাছে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি থাকিবে। তারা এর দ্বারা লোকেদের পিটাবে। দ্বিতীয় প্রকার ঐ শ্রেণীর মহিলা, যারা কাপড় পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ প্রায়, মানুষকে আকৃষ্টকারিণী ও স্বয়ং বিচ্যুত। যাদের মাথার খোপা বুখতী উটের পিঠের উঁচু কুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে না এবং জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮৮]
৭০৮৭. উম্মু সালামার মুক্তদাস আবদুল্লাহ ইবনি রাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয়, অচিরেই তোমরা এক সম্প্রদায় দেখিতে পাবে, যাদের হাতে থাকিবে গরুর লেজের মতো চাবুক। সকাল অতিবাহিত হইবে তাদের আল্লাহর গযবের মধ্যে এবং সন্ধ্যা যাপন হইবে আল্লাহর অভিশাপের মধ্যে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮৯]
৭০৮৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছি, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তাহলে অচিরেই তোমরা এমন এক সম্প্রদায় দেখিতে পাবে, যাদের সকাল হইবে আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভিতর এবং সন্ধ্যা হইবে আল্লাহর অভিসম্পাতের মাঝে। তাদের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯০]
১৪. অধ্যায়ঃ দুনিয়ার নশ্বরতা ও কিয়ামাতের বর্ণনা
৭০৮৯. বানূ ফিহ্র-এর ভাই মুসতাওরিদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহর শপথ! ইহকাল-পরকালের তুলনায় অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখলে যে, কতটুকু পরিমাণ এতে পানি লেগেছে। বর্ণনাকারী ইয়াহ্ইয়া এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করিয়াছেন।
ইয়াহ্ইয়া ছাড়া সকলের বর্ণনার মাঝেই আছে, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি।
আর আবু উসামার বর্ণনাতেও [আরবি] শব্দ উল্লেখ রয়েছে।
তাতে এ কথাও উল্লেখ আছে যে, ইসমাঈল বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯১]
৭০৯০. আয়িশাহ্ সিদ্দীকা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের মাঠে সকল মানুষকে একত্রিত করা হইবে খালি পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাত্নাবিহীন অবস্থায়। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ এবং মহিলা এক সঙ্গেই উত্থিত হইবে আর তারা পরস্পর একে অপরের প্রতি তাকাবে? তিনি বলিলেন, হে আয়িশাহ্! তখনকার প্রেক্ষাপট এতটা কঠিন ও ভয়ঙ্কর হইবে যে, একে অপরের প্রতি তাকানোর কল্পনারও উদ্রেক হইবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯২]
৭০৯১. হাতিম ইবনি আবু সাগীরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এতে [আরবি] “খাতনাবিহীন শব্দটি বর্ণনা নেই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯৩]
৭০৯২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ]-কে খুতবারত অবস্থায় এ কথা বলিতে শুনেছেন যে, অবশ্যই তোমরা খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে, উলঙ্গদেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করিবে। তবে যুহায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর হাদীসে খুতবাহ্ প্রদানের শব্দটি বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯৪]
৭০৯৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উপদেশ সম্বলিত ভাষণ প্রদানের উদ্দেশে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সামনে খালি পা ও উলঙ্গদেহে এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত হইবে। [আল্লাহর বাণী] “যেমন আমি প্রথম দিন সৃষ্টি শুরু করেছিলাম, তেমনি তার পুনরাবৃত্তি করব। এটা আমার একটা ওয়াদা, তা পালন করা আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। আমি তা পালনে বদ্ধপরিকর।” সাবধান! কিয়ামাতের দিন সৃষ্টির মাঝে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম [আঃ]-কে পোশাক পরিধান করানো হইবে, সেদিন আমার উম্মাতের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে হাযির করা হইবে, এদের মধ্যে যারা বামহাতে আমালনামা প্রাপ্ত তাদের পাকড়াও করা হইবে। তখন আমি বলব, হে আমার রব! এরা তো আমার উম্মাত। উত্তরে আমাকে বলা হইবে, তুমি জানো না তোমার পরে এরা কি কার্যকলাপে জড়িত ছিল। আমি তখন আল্লাহর সৎ বান্দা {ঈসা [আঃ]}-এর ন্যায় বলব, “যতদিন আমি তাদের মাঝে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের পর্যবেক্ষণকারী এবং তুমিই সর্ব বিষয়ে সাক্ষী, তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে মাফ করো তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” তখন আমাকে বলা হইবে, তুমি তাদের থেকে বিদায় গ্রহণের পর থেকে তারা সবসময় মুখ ফিরিয়ে কুফরির আশ্রয় নিয়েছিল।
ওয়াকী এবং মুআয-এর হাদীসের মধ্যে রয়েছে- [আরবি]- অতঃপর বলা হইবে, আপনি অবশ্য জানেন না আপনার পরে তারা কোন্ নতুন ধর্মমত আবিষ্কার করেছে?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯৫]
৭০৯৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, লোকদেরকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করে সমবেত করা হইবে। প্রথম দল আশা পোষণকারী এবং ভীত-সন্ত্রস্ত লোকদের দল। দ্বিতীয় দলে সেসব লোক যাদের দুজন থাকিবে এক উটের উপর, কোন উটের উপর তিনজন, কোনটির উপর চারজন, আর কোনটির উপরে আরোহিত হইবে দশজন। অবশিষ্টরা হইবে সে সকল লোক যাদেরকে আগুন তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেখানে রাত্রিযাপন করিবে আগুনও তাদের সঙ্গে রাত কাটাবে। তারা যেখানে বিশ্রাম নিবে আগুনও সেখানে বিশ্রাম নিবে। তাদের যেখানে সকাল হইবে আগুনও তাদের সঙ্গে থাকিবে। আর যেখানে তাদের সন্ধ্যা হইবে একই সঙ্গে আগুনও তাদের সাথে থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯৬]
১৫. অধ্যায়ঃ কিয়ামাত দিবসের বর্ণনা , এ দিবসের ভীতিকর অবস্থাতে আল্লাহ আমাদেরকে সহযোগিতা করুন
৭০৯৫. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[আরবি] – এর ব্যাখ্যায় নবী [সাঃআঃ] বলেন, সেদিন মানুষ অর্ধ কর্ণ পর্যন্ত ঘামে ডুবে দাঁড়িয়ে থাকিবে।
ইবনিল মুসান্নার বর্ণনাতে তিনি [আরবি] “যেখানে” শব্দটি উল্লেখ করা ছাড়া শুধু [আরবি] “লোকজন দাঁড়িয়ে থাকিবে” উল্লেখ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯৭]
৭০৯৬. ইবনি উমর [রাদি.]-এর সূ্ত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
উবাইদুল্লাহর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।
তবে মূসা ইবনি উকবাহ্ ও সালিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসের মধ্যে রয়েছে যে, [আরবি] অর্থাৎ- তাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি স্বীয় ঘামে দুই কানের অর্ধেক অবধি ডুবে যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯৮]
৭০৯৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কিয়ামাতের দিন ঘাম জমিনের উপর দিয়ে একশ চল্লিশ হাত পর্যন্ত উঁচু হয়ে বয়ে যাবে। আর তা মানুষের মুখমণ্ডল পর্যন্ত বা কান পর্যন্ত পৌছাবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ দুয়ের মধ্যে কোন্টির কথা বলেছেন, বর্ণনাকারী সাওর এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯৯]
৭০৯৮. মিকদাদ ইবনিল আস্ওয়াদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের দিন সূর্যকে মানুষের সন্নিকটবর্তী করে দেয়া হইবে। অবশেষে তা মানুষের এক মাইলের দূরত্বের মাঝে চলে আসবে।
বর্ণনাকারী সুলায়ম ইবনি আমির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানি না, [আরবি] শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে, জমিদের দূরত্ব, না ঐ শলাকা যা চোখে সুরমা দেয়া কাজে ব্যবহৃত হয়। মানুষ তাদের আমাল অনুসারে ঘর্মের মাঝে ডুবে থাকিবে। তাদের কারো ঘাম পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত হইবে, কেউ হাঁটু পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকিবে, কেউ কোমর পর্যন্ত আর কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকিবে।
বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রসূল [সাঃআঃ] নিজ মুখের প্রতি ইঙ্গিত করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪২, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০০]
১৬. অধ্যায়ঃ পৃথিবীতে জান্নাতী ও জাহান্নামী লোকদের পরিচয়
৭০৯৯. ইয়ায ইবনি হিমার আল মুজাশিঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেন,] একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খুতবাহ্ প্রদানকালে বললেনঃ সাবধান! আমার প্রতিপালক আজ আমাকে যা শিক্ষা প্রদান করিয়াছেন, এ থেকে তোমাদেরকে এমন বিষয়ের শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন, যে বিষয়ে তোমরা সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞাত। তা হলো এই যে, আমি আমার বান্দাদেরকে যে প্রাচুর্য দিয়েছি তা সম্পূর্ণরূপে বৈধ। আমি আমার সকল বান্দাদেরকে একনিষ্ঠ [মুসলিম] হিসেবে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শাইতান এসে তাদেরকে দ্বীন হইতে সরিয়ে দেয়। আমি যে সমস্ত জিনিস তাদের জন্য বৈধ করেছিলাম সে তা হারাম করে দেয়। অধিকন্তু সে তাদেরকে আমার সাথে এমন বিষয়ে অংশীদার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে, যে বিষয়ে আমি কোন প্রমাণ পাঠাইনি। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীবাসীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে কিতাবীদের কিছু লোক ছাড়া আরব-আজম সকলকে অপছন্দ করিয়াছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশে এবং তোমার দ্বারা অন্যদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশে আমি তোমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছি এবং তোমার প্রতি আমি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা পানি কখনো ধুয়ে-মুছে ফেলতে পারবে না। ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় তুমি সেটা পাঠ করিবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন কুরায়শ সম্প্রদায়ের লোকেদেরকে জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ করিয়াছেন। আমি তখন বললাম, হে আমার প্রতিপালক! আমি যদি এ কাজ করি তবে তারা তো আমার মাথা ঙেঙ্গে রুটির মতো টুকরো টুকরো করে ফেলবে। আল্লাহ তাআলা বলিলেন, তারা যেমনিভাবে তোমাকে বহিষ্কার করেছে ঠিক তেমনিভাবে তুমিও তাদেরকে বহিষ্কার করে দাও। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ করো। আমি তোমাকে সাহায্য করব। ব্যয় করো আল্লাহর পথে, তোমার জন্যও ব্যয় করা হইবে। তুমি একটি সেনাদল প্রেরণ করো, আমি অনুরূপ পাঁচটি বাহিনী প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যারা তোমার বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের সাথে যুদ্ধ করো। তিন শ্রেণীর মানুষ জান্নাতী হইবে। এক প্রকার মানুষ তারা, যারা রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের তাওফীক লাভে ধন্য লোক। দ্বিতীয় ঐ সকল মানুষ, যারা দয়ালূ এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। তৃতীয় ঐ শ্রেণীর মানুষ, যারা পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক। অতঃপর তিনি বলিলেন, পাঁচ ধরনের মানুষ জাহান্নামী হইবে। এক- এমন দুর্বল মানুষ যাদের মধ্যে পার্থক্য ক্ষমতা নেই, যারা তোমাদের এমন তাবেদার যে, না তারা পরিবার-পরিজন চায়, না ধনৈশ্বর্য। দুই- এমন খিয়ানতকারী মানুষ, সাধারণ বিষয়েও যে খিয়ানত করে যার লালসা কারো নিকটই লুক্কায়িত নেই। তিন- ঐ ব্যক্তি, যে তোমার পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদের বিষয়ে তোমার সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা প্রতারণা করে। অবশেষে তিনি কৃপণতা, মিথ্যা বলা এবং গালমন্দ করার কথাও বর্ণনা করিয়াছেন। তবে আবু গাস্সান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার হাদীসের মাঝে [আরবি] অর্থাৎ- “তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, আমিও তোমার জন্য ব্যয় করব” বাক্যটি উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০১]
৭১০০. কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে তিনি
كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلاَلٌ
অর্থাৎ “আমি বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা সম্পূর্ণরূপে বৈধ” কথাটি বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০২]
৭১০১. ইয়ায ইবনি হিমার হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভাষণ দিলেন। তারপর তিনি পুরো হাদীসটি বর্ণনা করিলেন এবং শেষ ভাগে বলেছেনঃ , কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি মুতার্রিফকে বলিতে শুনেছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০৩]
৭১০২. বানী মুজাশি-এর ভাই ইয়ায ইবনি হিমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভাষণ প্রদানকালে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ দিয়েছেন। তারপর তিনি কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে হিশাম-এর সানাদে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে এ কথা বর্ধিত উল্লেখ করিয়াছেন যে, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল করিয়াছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, কারো উপর কেউ যেন গর্ব না করে এবং কারো প্রতি যেন কেউ যুল্ম না করে। এ হাদীসে এটাও রয়েছে যে, তারা তোমাদের এমন অনুগামী যে, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ সন্ধান করে না।
কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আবু আবদুল্লাহ! এমনটি কি হইবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ অবশ্যই। জাহিলিয়্যাতের যুগে আমি তাদেরকে পেয়েছি। আর এরূপ এক গোত্রে কোন এক লোক ছিল। সে বকরী চরাতো। দাসী ছাড়া সেখানে তার কাছে কেউ যেত না। তার সাথেই সে সহবাস করত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০৪]
১৭. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির কাছে জান্নাত কিংবা জাহান্নামের ঠিকানা উপস্থিত করা হয় , আর কবরের শাস্তি প্রমাণ করা এবং তাত্থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা
৭১০৩. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কোন লোকের মৃত্যুর পর সকাল-সন্ধ্যা তার সম্মুখে তার [পরকালীন] ঠিকানা পেশ করা হয়। যদি সে জান্নাতবাসী হয় তবে জান্নাতবাসীদের থেকে আর যদি জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নামীদের থেকে। আর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার বাসস্থান। কিয়ামাতে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০৫]
৭১০৪. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে তার [পরকালীন] ঠিকানা পেশ করা হয়। যদি সে জান্নাতবাসী হয় তবে জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নাম।
তারপর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার ঐ বাসস্থান যেখানে তোমাকে কিয়ামাতের দিন পাঠানো হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০৬]
৭১০৫. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.]-এর সূত্রে আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম না, বরং আমাকে যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নাজ্জার গোত্রের একটি প্রাচীর ঘেরা বাগানে তাহাঁর একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। এ সময় আমরা তাহাঁর সাথে ছিলাম। অকস্মাৎ তা লাফিয়ে উঠল এবং তাঁকে ফেলে দেয়ার উপক্রম করিল। দেখা গেল, সেখানে ছয়টি কিংবা পাঁচটি অথবা চারটি কবর রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, জুরাইরী এমনটিই বর্ণনা করিতেন। অতঃপর তিনি প্রশ্ন করিলেন, এ কবরবাসীদেরকে কে চিনে? তখন এক ব্যক্তি বলিলেন, আমি চিনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, তারা কখন মৃত্যুবরণ করেছে? তিনি বলিলেন, তারা শিরকের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এ উম্মাতকে তাদের কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হইবে। তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বর্জন করিবে, এ আশঙ্কা না হলে আমি আল্লাহর নিকট দুআ করতাম যেন তিনি তোমাদেরকেও কবরের আযাব শুনান যা আমি শুনতে পাচ্ছি। তারপর তিনি আমাদের প্রতি মনোনিবেশ করে বলিলেন, তোমরা সাবই জাহান্নামের আযাব হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। সহাবাগণ বলিলেন, জাহান্নামের শাস্তি হইতে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তারপর তিনি বলিলেন, তোমরা সকলে কবরের শাস্তি হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। সহাবাগণ বলিলেন, কবরের আযাব হইতে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার ফিতনা হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। তারা বলিলেন, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার ফিতনা হইতে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তিনি আবারো বলিলেন, তোমরা দাজ্জালের ফিতনা হইতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সহাবাগণ বলিলেন, দাজ্জালের ফিতনা হইতে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০৭]
৭১০৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা মৃতদেরকে দাফন করা বর্জন করিবে এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করতাম যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের কিছু আযাব শুনিয়ে দেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫০, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০৮]
৭১০৭. আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্যাস্ত হওয়ার পর বের হলেন। এমন সময় তিনি একটি শব্দ শুনতে পেয়ে বলিলেন, ইয়াহূদী লোকদেরকে তাদের কবরের মধ্যে আযাব দেয়া হচ্ছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫১, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০৯]
৭১০৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরের মধ্যে রেখে তার সঙ্গী-সাথীরা সেখান থেকে ফিরে আসে এবং সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় তখন তার কাছে দুজন ফেরেশ্তা এসে তাকে উঠিয়ে বসান। তারপর তাকে তারা জিজ্ঞেস করে, এ লোকটির ব্যাপারে তুমি কি বলিতে? মুমিন বান্দা তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাহাঁর রসূল। তখন তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তুমি তোমার আসন দেখে নাও। আল্লাহ তাআলা তোমার এ আসনকে জান্নাতের আসনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তখন সে তার উভয় আসন অবলোকন করে নেয়।
বর্ণনাকারী কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাদের নিকট এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতঃপর তার কবরকে [দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে] সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সবুজ শ্যামল গাছের দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়া হয় কিয়ামাত পর্যন্ত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫২, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১০]
৭১০৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃতদেরকে যখন তার কবরে রাখা হয় তখন সে তার সঙ্গী-সাথীদের ফিরে আসার সময় তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১১]
৭১১০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রেখে তার সঙ্গী-সাথীগণ প্রত্যাবর্তন করে। অতঃপর সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] শাইবান-এর সানাদে কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১২]
৭১১১. বারা ইবনি আযিব [রাদি.]- এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আল্লাহর বাণী : “যারা শাশ্বত বাণীতে ঈমান রাখে তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন” সম্পর্কে বলেন, এ আয়াত কবরের আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার রব কে? সে বলে, আমার রব আল্লাহ এবং আমার নবী মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]। এটাই আল্লাহর নিম্নবর্ণিত বাণীর মর্ম, “যারা শাশ্বত বাণীতে ঈমান রাখে তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১৩]
৭১১২. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আল্লাহর বাণী : “যারা শাশ্বত বাণীতে ঈমান রাখে তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন”- [সূরাহ্ ইব্রাহীম ১৪ : ২৭] সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি কবরের শাস্তির ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১৪]
৭১১৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুমিন লোকের রূহ্ কব্য করার পর দুজন ফেরেশ্তা এসে তার রূহ আকাশের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
বর্ণনাকারী হাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] এখানে ঐ রূহের সুগন্ধি এবং মিশ্কের কথা বর্ণনা করিয়াছেন।
তিনি বলেন, আকাশের বাসিন্দারা বলিতে থাকে, এক পবিত্রাত্মা পৃথিবী হইতে আগমন করেছে! আল্লাহ তোমার প্রতি এবং তোমার আবাদকৃত শরীরের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন। তারপর তাকে তার প্রতিপালকের নিকট নিয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। আর যখন কোন কাফির লোকের রূহ বের হয়- বর্ণনাকারী হাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] এখানে তার দুর্গন্ধ এবং তার প্রতি অভিসম্পাতের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। তখন আকাশমণ্ডলীর অধিবাসীরা বলিতে থাকে, এক অপবিত্র আত্মা দুনিয়া হইতে এসেছে। অতঃপর বলা হয়, তোমরা তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলেন, এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গায়ে জড়ানো একটি পাতলা কাপড় দ্বারা নিজের নাকটি এভাবে ধরলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১৫]
৭১১৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমর [রাদি.]-এর সাথে একদা আমরা মাক্কাহ্ ও মাদীনার মধ্যবর্তী স্থানে ছিলাম। তখন আমরা চাঁদ দেখছিলাম। আমি তীক্ষ্ন দৃষ্টিসম্পন্ন ছিলাম, তাই আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আমি ব্যতীত কেউ বলেনি যে, সে চাঁদ দেখেছে। তিনি বলেন, আমি উমর [রাদি.]-কে বলছিলাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? এ-ই তো চাঁদ। কিন্তু তিনি দেখছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমর [রাদি.] বলছিলেন, আমি আমার বিছানায় শুয়ে থেকেই তা দেখিতে পাব। অতঃপর তিনি আমাদের নিকট বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কাফিরদের [নিহত হবার] ঘটনার অবস্থা বর্ণনা করিতে শুরু করিলেন। বলিলেন, গতকাল বাদ্র যোদ্ধাদের ধরাশায়ী হবার স্থান রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে [পূর্ব থেকেই] দেখাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় এটা অমুকের ধরাশায়ী হবার স্থান। বর্ণনাকারী বলেন, উমর [রাদি.] বলেছেনঃ শপথ সে সত্তার! যিনি তাঁকে সত্য বাণী সহ পাঠিয়েছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে সীমারেখা বলে দিয়েছেন, তারা সে সীমারেখা একটুও অতিক্রম করেনি। তারপর তাদেরকে একটি কূপে একজনের উপর অপরজনকে নিক্ষেপ করা হলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের কাছে গিয়ে বলিলেন, হে অমুকের ছেলে অমুক, হে অমুকের ছেলে অমুক! আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল যে ওয়াদা তোমাদের সঙ্গে করিয়াছেন তোমরা কি তা বাস্তবে পেয়েছ? আমার প্রতিপালক আমার সঙ্গে যে ওয়াদা করিয়াছেন আমি তা বাস্তবে সঠিক পেয়েছি।
তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! যেসব দেহে প্রাণ নেই, আপনি তাদের সাথে কিভাবে কথা বলছেন? নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি যা বলছি, তা তোমরা তাদের চেয়ে অধিক শুনছ না। তবে তারা এ কথার প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১৬]
৭১১৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বদর যুদ্ধে নিহত লোকদেরকে তিন দিন পর্যন্ত এভাবেই রেখে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি তাদের কাছে এসে তাদের লাশের সামনে দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে উচ্চ আওয়াজে বলিলেন, হে হিশামের পুত্র আবু জাহল! হে উমায়্যাহ্ ইবনি খালাফ! হে উত্বাহ্ ইবনি রাবীআহ্! হে শাইবাহ্ ইবনি রাবীআহ্! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের সঙ্গে যা ওয়াদা করিয়াছেন তোমরা কি তা বাস্তবে পাওনি? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যা ওয়াদা করিয়াছেন আমি তা বাস্তবে পেয়েছি। নবী [সাঃআঃ]-এর এ কথা উমর [রাদি.] শুনে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]। তারা তো মৃত। কিভাবে তারা শুনবে এবং কিভাবে তারা উত্তর দিবে? তিনি বলিলেন, আমি তাদেরকে যা বলছি এ কথা তাদের থেকে তোমরা বেশি শুনছ না। তবে তারা প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম। অতঃপর তিনি তাদের সম্বন্ধে আদেশ দিলে তাদেরকে হেঁচড়িয়ে নিয়ে বাদ্রের কূপে নিক্ষেপ করা হলো।
{৯} [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১৭]{৯} কোন মানুষ মারা যাবার পর দুনিয়াবাসীর কারো কোন কথা শোনার ক্ষমতা রাখে না। কোন জীবিত মানুষও কোন মৃতকে কোন কিছু শোনাতে পারে না। তবে আলোচ্য হাদীসে যে বর্ণনা তা নবী [সাঃআঃ]-এর বিশেষ মুজিযা ছিল সে সময়ের জন্য যা তিনি করেছিলেন। অন্য কোন সময় তিনি এ রকম করিয়াছেন বলে কোন প্রমাণ নেই।
৭১১৬. আবু তাল্হাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নবী [সাঃআঃ] যখন কাফিরদের উপরি বিজয়ী হলেন, তখন তিনি বিশের অধিক কুরায়শ নেতৃবৃন্দ। অপর হাদীসে রাওহ [রাদি.] বলেন, চব্বিশ জন কুরায়শ নেতৃবৃন্দ সম্বন্ধে আদেশ দিলেন। তারপর তাদের লাশ বাদ্র প্রান্তে এক নোংরা আবর্জনাপূর্ণ কুয়ায় নিক্ষেপ করা হলো। অতঃপর তিনি আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত সাবিত-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬০, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১৮]
১৮. অধ্যায়ঃ হিসাব-নিকাশের বর্ণনা
৭১১৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ কিয়ামাতের দিন যার হিসাব [কষাকেষিভাবে] করা হইবে তার শাস্তি নিশ্চিত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তাআলা কি বলেননি : [আর-বি] “তার হিসাব-নিকাশ সহজেই নেয়া হইবে”। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃএ তো হিসাব নয় বরং এটা তো কেবল নামে মাত্র পেশ করা। কারণ কিয়ামাতের দিন যার হিসাব [কঠিনভাবে] নেয়া হইবে তার শাস্তি নিশ্চিত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬১, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১৯]
৭১১৮. আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬২, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২০]
৭১১৯. আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যারই হিসাব [কঠিনভাবে] নেয়া হইবে তার ধ্বংস অনিবার্য। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ কি সহজ হিসাবের কথা বলেননি? তিনি বলিলেন, এ তো কেবল নামে মাত্র পেশ করা। কারণ যার হিসাবে কষাকষি করা হইবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২১]
৭১২০. আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যার হিসাব নেয়া হইবে তার ধ্বংস অবধারিত। এরপর উসমান ইবনি আসওয়াদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু ইউনুস-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২২]
১৯. অধ্যায়ঃ মৃত্যুক্ষণে আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা গ্রহণ করার হুকুম প্রসঙ্গে
৭১২১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁকে আমি এ কথা বলিতে শুনেছি যে, তোমাদের সকলেই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২৩]
৭১২২. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২৪]
৭১২৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর তিরোধানের তিন দিন আগে আমি তাকে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, তোমাদের সকলেই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২৫]
৭১২৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, প্রত্যেক বান্দা কিয়ামাতের দিন ঐ অবস্থায় পুনরুত্থিত হইবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২৬]
৭১২৫. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি [আরবি] “আমি শুনেছি” না বলে [আরবি] “নবী [সাঃআঃ] হইতে” এ শব্দে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২৭]
৭১২৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি, আল্লাহ যখন কোন গোত্রকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করেন তখন এ শাস্তি ঐ গোত্রে অবস্থিত প্রত্যেকের উপরই নিপতিত হয়। অতঃপর কিয়ামাতের দিন [তাদের প্রত্যেককে] নিজ নিজ আমালের উপর পুনরুত্থিত করা হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৭০, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২৮]
Leave a Reply