ইমানে সততা, নিষ্ঠা, মনের কল্পনা ও সৎকর্মের নিয়্যাত করা

ইমানে সততা, নিষ্ঠা, মনের কল্পনা ও সৎকর্মের নিয়্যাত করা

ইমানে সততা ও নিষ্ঠা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৫৬. অধ্যায়ঃ ইমানে সততা ও নিষ্ঠা
৫৭. অধ্যায়ঃ মনের কল্পনা বা খটকা আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন, মানুষের সামর্থ্যানুযায়ীই আল্লাহ তাকে দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং ভাল বা মন্দ কর্মের মনস্থ করার বিধান
৫৮. অধ্যায়ঃ অন্তর ও নাফ্‌সের কুচিন্তাসমূহের গুনাহ ক্ষমা করা হইবে যদি তা অন্তর ও নাফ্‌সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে
৫৯. অধ্যায়ঃ বান্দা যখন সৎকর্মের নিয়্যাত করে তখন সেটার [সাওয়াব] লিপিবদ্ধ করা হয়, আর যখন কোন পাপকাজের নিয়্যাত করে তা লিপিবদ্ধ করা হয় না [যতক্ষণ না তা কাজে পরিণত করে]
৬০. অধ্যায়ঃ ঈমান সম্পর্কে ওয়াস ওয়াসার সৃষ্টি হওয়া এবং কারো অন্তরে যদি তা সৃষ্টি হয় তবে সে কি বলবে?

৫৬. অধ্যায়ঃ ইমানে সততা ও নিষ্ঠা

২২৬. আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

[আল্লাহ তাআলার বাণী] :

الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ‏

“যারা ঈমান এনেছে এবং তাহাদের ঈমানকে যুল্‌ম দ্বারা কলূষিত করেনি নিরাপত্তা তাহাদের জন্য, তারাই সৎপথপ্রাপ্ত”-[সূরাহ আল আনআম ৬ : ৮২]। এ আয়াতটি অবতীর্ণ হলে তা সহাবাদের কাছে খুবই কঠিন মনে হলো। তাঁরা বলিলেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে নিজের উপর আদৌ অত্যাচার করেনি? তখন রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, তোমরা যা মনে করেছ বিষয়টি তা নয়, বরং এর মর্মার্থ হচ্ছে লুক্‌মান তাহাঁর পুত্রকে সম্বোধন করে যা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন :

‏ يَا بُنَىَّ لاَ تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

“হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শারীক করো না, নিশ্চয়ই শির্‌ক চরম যুল্‌ম”-[সূরাহ লুক্‌মান ৩১ : ১৩]।

[ই.ফা. ২২৭; ই.সে. ২৩৫]

২২৭. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে উক্ত সানাদে হইতে বর্ণিতঃ

আবু কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি ইদ্‌রীস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, প্রথমতঃ আমার পিতা আমাকে আবান ইবনি তাগলিব থেকে আমাশ-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, পরবতীকালে আমি নিজেই আমাশ থেকে  এ হাদীস শুনিয়াছি।

[ই.ফা. ২২৮; ই.সে. ২৩৬]

৫৭. অধ্যায়ঃ মনের কল্পনা বা খটকা আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন, মানুষের সামর্থ্যানুযায়ীই আল্লাহ তাকে দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং ভাল বা মন্দ কর্মের মনস্থ করার বিধান

২২৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

যখন এ আয়াত নাযিল হলো :

 لِلَّهِ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللَّهُ فَيَغْفِرُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ‏

আসমান ও জমিনে যত কিছু আছে সমস্ত আল্লাহরই। তোমাদের মনের অভ্যন্তরে যা আছে তা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের নিকট থেকে তার হিসাব গ্রহণ করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান– [সূরাহ আল বাকারাহ্‌ ২ : ২৮৪]। রাবী বলেন, তখন বিষয়টি সহাবাদের কাছে খুবই কঠিন মনে হলো। তাই সবাই রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর কাছে আসলেন এবং হাঁটু গেড়ে বসে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! সলাত, সিয়াম, জিহাদ, সদাকাহ্‌ প্রভৃতি যে সমস্ত আমাল আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ছিল এ যাবৎ আমাদেরকে সেগুলোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এ বিষয়টি তো আমাদের ক্ষমতার বাইরে। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, আহলে কিতাব-ইয়াহূদী ও খৃষ্টানের ন্যায় তোমরাও কি এমন কথা বলবে যে, শুনলাম কিন্তু মানলাম না। বরং তোমরা বল; শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর তোমার কাছেই আমরা ফিরে যাব। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর এ নির্দেশ শুনে সহাবায়ে কিরাম বলিলেন, আমরা শুনিয়াছি ও মেনেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তনস্থল। রাবী বলেন, সহাবাদের সকলে এ আয়াত পাঠ করিলেন এবং মনেপ্রাণে তা গ্রহণ করে নিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন : রসূল ঈমান এনেছেন তাহাঁর প্রতি তাহাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুমিনগণও তাহাদের সকলেই আল্লাহর, তাহাঁর ফেরেশতাগণের, তাহাঁর কিতাবসমূহের এবং তাহাঁর রসূলগণের ঈমান এনেছে। [তারা বলে] আমরা তাহাঁর রসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর তাঁরা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম! হে আমাদের রব! আমরা তোমার নিকট ক্ষমা চাই আর তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল- [সূরাহ আল বাকারাহ্‌ ২ : ২৮৫]। যখন তাঁরা সর্বতোভাবে আনুগত্য প্রকাশ করিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে নাযিল করিলেন : “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়-দায়িত্ব অর্পন করেন না যা তার পক্ষে করা অসম্ভব। সে ভাল যা উপার্জন করে তা তারই এবং মন্দ যা উপার্জন করে তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করে ফেলি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” আল্লাহ তাআলা বলিলেন, হ্যাঁ, মেনে নিলাম। আরো ইরশাদ হলো : “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না। আল্লাহ তাআলা বললেনঃ হ্যাঁ, মেনে নিলাম। আরো ইরশাদ হল : “হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।” আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হ্যাঁ, মেনে নিলাম। আরো ইরশাদ হলো, “আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও, আমাদের উপর দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে বিজয় দান কর।” -[ arbi সূরাহ আল বাকারাহ্‌ ২ : ২৮৬]। আল্লাহ তাআলা বলিলেন, হ্যাঁ, মেনে নিলাম।

[ই.ফা. ২২৯, ই.সে ২৩৭]

২২৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

[মহান আল্লাহর বাণী] : “তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের নিকট হতে তার হিসাব গ্রহণ করবেন”-[সূরাহ্‌ আল বাকারাহ্‌ ২ : ২৮৪]। এ আয়াতটি নাযিল হলে সহাবাগণ খুবই উদ্বিগ্ন হলেন, আর কোন বিষয়ে তারা এতো উদ্বিগ্ন হননি। তখন নবি [সাঃআ:] বলেন, বরং তোমরা বল, শুনলাম, আনুগত্য স্বীকার করলাম এবং মেনে নিলাম। ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন। তিনি নাযিল করিলেন, আল্লাহ তাআলা কারোর উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে তা তারই, আর মন্দ যা উপার্জন করে তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা ভুল করে ফেলি তবে আমাদের পাকড়াও করো না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ অবশ্যই মেনে নিলাম। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করিলেন : হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অবশ্যই মেনে নিলাম। আল্লাহ তাআলা আরও ঘোষণা করিলেন :  [বলুন] আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের রব। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অবশ্যই মেনে নিলাম।

[ই.ফা. ২৩০; ই.সে. ২৩৮] arbi

৫৮. অধ্যায়ঃ অন্তর ও নাফ্‌সের কুচিন্তাসমূহের গুনাহ ক্ষমা করা হইবে যদি তা অন্তর ও নাফ্‌সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে

২৩০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আমার উম্মাতের জন্য তাহাদের মনে কল্পনাগুলোকে মাফ করে দিয়েছেন।

[ই.ফা. ২৩১; ই.সে. ২৩৯]

২৩১. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আমার উম্মাতের জন্য কথা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত তাহাদের মনের কল্পনাগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন।

যুহায়র ইবনি হার্‌ব, ইসহাক্‌ ইবনি মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] … কাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রেও হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণিত আছে।

[ই.ফা. ২৩২, ২৩৩; ই.সে. ২৪০-২৪১]

৫৯. অধ্যায়ঃ বান্দা যখন সৎকর্মের নিয়্যাত করে তখন সেটার [সাওয়াব] লিপিবদ্ধ করা হয়, আর যখন কোন পাপকাজের নিয়্যাত করে তা লিপিবদ্ধ করা হয় না [যতক্ষণ না তা কাজে পরিণত করে]

২৩২. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা [ফেরেশতাহাদেরকে] বলেন, আমার বান্দা কোন পাপ কর্মের কথা ভাবলেই তা লিখবে না বরং সে যদি তা করে তবে একটি পাপ লিখবে। আর যদি সে কোন নেক কাজের নিয়্যাত করে কিন্তু সে যদি তা না করে, তাহলেও এর প্রতিদানে তার জন্য একটি সাওয়াব লিখবে। আর তা সম্পাদন করলে লিখবে দশটি সাওয়াব।

[ই.ফা. ২৩৪; ই.সে. ২৪২]

২৩৩. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমার বান্দা যখন কোন ভাল কাজের নিয়্যাত করে অথচ এখনো তা করেনি, তখন আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি তা কাজে পরিণত করে তবে দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি মন্দ কাজের নিয়্যাত করে অথচ এখনো তা কাজে পরিণত করেনি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কাজে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি।

[ই.ফা. ২৩৫; ই.সে. ২৪৩]

২৩৪. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ যখন আমার কোন বান্দা মনে মনে কোন ভাল কাজ করার কল্পনা করে, তখন সে কাজ না করিতেই আমি তার জন্যে একটি সাওয়াব লিখে রাখি। আর যদি সে কাজটি সম্পন্ন করে তখন তার দশগুণ নেকী লিখে রাখি। আর যদি সে অন্তরে অন্তরে কোন মন্দ কাজ করার কল্পনা করে, তখন সে কাজ না করা পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেই। আর যদি সে কাজটি করে ফেলে তখন একটি মাত্র গুনাহ লিখে রাখি।

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] আরো বলেছেনঃ ফেরেশতারা বলেন- হে প্রভূ! তোমার অমুক বান্দা একটি মন্দ কাজ করার ইচ্ছা করেছে অথচ তিনি স্বচক্ষে তা দেখেন, তখন তিনি তাহাদেরকে [ফেরেশতাহাদেরকে] বলেনঃ তাকে পাহারা দাও। [অর্থাৎ দেখ সে কি করে]। যদি সে এ কাজটি করে, তা হলে একটি গুনাহ লিখ। কেননা সে আমার ভয়েই তা বর্জন করেছে।

অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যদি তোমাদের কিউ ইসলামে নিষ্ঠাবান হয় তখন তার প্রত্যেকটি নেক কাজ যা সে করে তার জন্যে দশ থেকে সাতশ গুণ পরিমাণ নেকী লিখা হয় এবং প্রত্যেক মন্দ কাজের জন্য কেবলমাত্র একটি করে গুনাহ লিখা হয়। এভাবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত [অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত] চলতে থাকে।

[ই.ফা. ২৩৬; ই.সে. ২৪৪]

২৩৫. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেনঃ যে ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা করে অথচ সম্পাদন করেনি, তার জন্য একটি সাওয়াব লিখা হয়। আর যে ইচ্ছা করার পর কার্যত সম্পাদন করে অনন্তর তার ক্ষেত্রে সাতশ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিখা হয়। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করে আর তা না করে, তার কোন গুনাহ লিখা হয় না; আর তা করলে [একটি] গুনাহ লিখা হয়।

[ই.ফা. ২৩৭; ই.সে. ২৪৫]

২৩৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ভালো এবং মন্দ উভয়টিকে লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর তিনি এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, যে ব্যক্তি কোন ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে অথচ তা এখনও বাস্তবে পরিণত করেনি, তার জন্যে আল্লাহ নিজের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি সে কোন ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে এবং তা বাস্তবেও পরিণত করে, তখন আল্লাহ নিজের কাছে দশ থেকে সাতশ বা আরো অনেক গুণ বেশী সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি সে কোন মন্দ কাজ করার ইচ্ছা করে এবং তা বাস্তবে পরিণত না করে, তখন আল্লাহ নিজের কাছে একটি পরিপূর্ণ সাওয়াব লিখেন, কিন্তু যদি সে মন্দ কাজটি বাস্তবে পরিণত করে, তখন আল্লাহ তাআলা কেবলমাত্র একটি পাপই লিপিবদ্ধ করেন।

[ই.ফা. ২৩৮; ই.সে. ২৪৬]

২৩৭. জাদ আবু উসমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উল্লেখিত সানাদে আবদুল ওয়ারিস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেন। তবে এ হাদীসের বর্ণনাকারী নিম্নের বাক্যটি অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন, আল্লাহ উক্ত গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর বিরুদ্ধে গিয়ে একমাত্র সে ধ্বংস হয় যার ধ্বংস অনিবার্য।

[ই.ফা. ২৩৯; ই.সে. ২৪৭]

৬০. অধ্যায়ঃ ঈমান সম্পর্কে ওয়াস ওয়াসার সৃষ্টি হওয়া এবং কারো অন্তরে যদি তা সৃষ্টি হয় তবে সে কি বলবে?

২৩৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] এর কিছু সহাবা তাহাঁর সামনে এসে বলিলেন, আমাদের অন্তরে এমন কিছু খটকার সৃষ্টি হয় যা আমাদের কেউ মুখে উচ্চারণ করিতেও মারাত্মক মনে করে। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, সত্যই তোমাদের তা হয়? তারা জবাব দিলেন, জ্বী, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ এটিই স্পষ্ট ঈমান। [কারণ ঈমান আছে বলেই সে সম্পর্কে ওয়াস্‌ওয়াসা ও সংশয়কে মারাত্মক মনে করা হয়]।

[ই.ফা. ২৪০; ই.সে. ২৪৮]

২৩৯. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা. ২৪১; ই.সে. ২৪৯]

২৪০. আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:]-কে ওয়াস্‌ওয়াসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিলেন, এটাই সত্যিকারের ঈমান।

[ই.ফা. ২৪২; ই.সে. ২৫০]

২৪১. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, মানুষের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয় যে, এ সৃষ্টিজগত তো আল্লাহ সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করিল কে? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, যার অন্তরে এমন প্রশ্নের উদয় হয় সে যেন বলে, আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। {৪৭}

[ই.ফা. ২৪৩; ই.সে. ২৫১]

{৪৭} শাইতানের কুমন্ত্রণা হতে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করিতে হয়, আউযুবিল্লাহ-হি …..  পাঠ করিবে এবং বলবে, [আরবী] আমি আল্লাহর উপর এবং রসূলগণের উপর ঈমান এনেছি-[মুত্তাফাকুন আলাইহি] । হাদীসে উল্লেখ আছে, তাহলে শাইতান নিরাশ হয়ে চলে যায়। কেননা, তার প্রতারণায় কোন ক্ষতি হলো না। যদি কারো মনে সন্দেহ আসে তবে তার আরও একটি চিকিৎসা আছে, তা হলো শাইতানকে বলবে, আল্লাহ সকলের সৃষ্টিকর্তা। তাহাঁর সৃষ্টিকর্তা কেউ হতে পারে না। অতএব তোমার এ ধরনের প্রশ্ন বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

২৪২. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] –এর সূত্রে উক্ত সানাদে হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, শাইতান তোমাদের নিকট এসে বলে, আকাশ কে সৃষ্টি করিয়াছেন? জমিন কে সৃষ্টি করিয়াছেন? উত্তরে সে বলে, আল্লাহ। এরপর রাবী পূর্ব হাদীসটির অনুরূপ এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি এর সঙ্গে [আরবী] শব্দটি বর্ধিত বর্ণনা করেন।

[ই.ফা. ২৪৪; ই.সে. ২৫২]

২৪৩. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : শাইতান তোমাদের কারো নিকট আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরনের ভাবনা থেকে বিরত হও। {৪৮}

[ই.ফা. ২৪৫; ই.সে. ২৫৩]

{৪৮} অর্থাৎ শাইতানের কুমন্ত্রণায় কোন ধারণা আসলে, তাকে দূর করে অন্য কাজে মনোযোগ দিবে এবং মনে করিবে যে, এ শাইতানের কুমন্ত্রণা তাকে পথভ্রষ্ট করিতে চায়। [নাবাবী]

২৪৪. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : শাইতান আল্লাহর বান্দার কাছে আসে এবং কুমন্ত্রণা দিয়ে বলে; এটা কে সৃষ্টি করেছে? ….. [বাকী অংশ] পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ।

[ই.ফা. ২৪৬; ই.সে. ২৫৪]

২৪৫. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, মানুষ তোমাদেরকে জ্ঞানের কথা জিজ্ঞেস করিবে, এক পর্যায়ে তারা এ কথাও জিজ্ঞেস করিবে, আল্লাহ তো আমাদের সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করিল কে?

রাবী বলেন, তখন আবু হুরাইরা [রাঃআ:] এক ব্যক্তির হাত ধরা অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] সত্যই বলেছেন। আমাদের দুই ব্যক্তি এ ধরনের প্রশ্ন করেছে, আর এ হলো তৃতীয় জন। বর্ণনাকারী বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, আমাকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছে আর এ হলো দ্বিতীয় জন।

যুহায়র ইবনি হা্রব ও ইয়কুব আদ্‌ দাওরাকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বলেন যে, মানুষ সর্বদা …..। এরপর রাবী আবদুল ওয়ারিসের রিওয়ায়াতের ন্যায় বর্ণনা করেন। তবে তিনি এ সানাদে নবি [সাঃআ:]-এর উল্লেখ করেননি। তবে হাদীসটির শেষে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআ:] সত্যই বলেছেন কথাটি সংযুক্ত করেন।

[ই.ফা. ২৪৭; ই.সে. ২৫৫-২৫৬]

২৪৬. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

একদা রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] আমাকে বললেনঃ হে আবু হুরাইরা! মানুষ তোমাকে প্রশ্ন করিতে থাকিবে। এমন কি এ প্রশ্নও করিবে, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করিয়াছেন; তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করিল কে? আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বলেন, পরবর্তীকালে একদিন আমি মাসজিদে [নাবাবীতে] উপস্থিত ছিলাম। এমন সময়ে কতিপয় বেদুঈন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করিতে লাগল, হে আবু হুরাইরা! এ তো আল্লাহ তাআলা। তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হাতে কিছু কংকর নিয়ে তাহাদের প্রতি তা নিক্ষেপ করিলেন এবং বলিলেন, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, আমার বন্ধু [রসূল [সাঃআ:]] সত্য কথাই বলে গেছেন।

[ই.ফা. ২৪৮; ই.সে. ২৫৭]

২৪৭. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন। অবশ্যই লোকেরা তোমাদেরকে সব বিষয়ে জিজ্ঞেস করিবে। এমন কি তারা বলবে, আল্লাহ তো সব কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন, তাঁকে সৃষ্টি করিল কে?

[ই.ফা. ২৪৯; ই.সে. ২৫৮]

২৪৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আপনার উম্মাত সর্বদা এটা কে সৃষ্টি করিল। এ ধরনের প্রশ্ন করিতে থাকিবে। এমনকি এ প্রশ্নও করিবে যে, সকল সৃষ্টিই আল্লাহ সৃষ্টি করিয়াছেন, তা হলে আল্লাহকে সৃষ্টি করিল কে?

[ই.ফা. ২৫০; ই.সে. ২৫৯]

২৪৯. আনাস [রাঃআ:]-এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] থেকে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করিয়াছেন। তবে রাবী ইসহাক্‌ তাহাঁর রিওয়ায়াতে “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আপনার উম্মাত” ….. এ কথাটি উল্লেখ করেননি।

[ই.ফা. ২৫১; ই.সে. ২৬০]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply