Qadr শবে বরাত ও শবে কদর এর ফযীলত
শবে বরাত ও শবে কদর এর ফযীলত বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ বুখারী >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ কদর & বরাত>> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে
পরিচ্ছেদ ০ঃ বরকতময় রজনী সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ১ঃ শবে বরাত বা মধ্য শাবানের রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ২ঃ লাইলাতুল কদর এর ফযীলত ও দোয়া
পরিচ্ছেদ ৩ঃ ২১ তম রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৪ঃ ২৩ তম রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৫ঃ ২৭ তম রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৬ঃ নবম ও সপ্তম রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৭ঃ নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৮ঃ শেষ দশকে বেজোর রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ৯ঃ পরিচ্ছেদ শেষ ৭ রাত্রির বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ১০ঃ শেষ দশকে অনুসন্ধান করা
পরিচ্ছেদ ১১ঃ রমাযানে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা
পরিচ্ছেদ ১ঃ বরকতময় রজনী সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥ ﴾ [القدر: ١، ٥]
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি এ [কুরআন]কে অবতীর্ণ করেছি মর্যাদাপূর্ণ রাত্রিতে। আর মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি সম্বন্ধে তুমি কি জান? মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। ঐ রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও রূহ [জিবরীল] অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাহাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিময় সেই রাত্রি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। [সূরা ক্বাদর]
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ حمٓ ١ وَٱلۡكِتَٰبِ ٱلۡمُبِينِ ٢ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٣ فِيهَا يُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِيمٍ ٤ أَمۡرٗا مِّنۡ عِندِنَآۚ إِنَّا كُنَّا مُرۡسِلِينَ ٥ رَحۡمَةٗ مِّن رَّبِّكَۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٦ ﴾ [الدخان: ١، ٦]
র্থাৎ, নিশ্চয় আমি এ [কুরআন] অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার আদেশক্রমে, আমি তো রসূল প্রেরণ করে থাকি। এ তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে করুণা; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা দুখান ৩ আয়াত]
পরিচ্ছেদ ১ঃ শবে বরাত বা মধ্য শাবানের রাত্রির বর্ণনা
আবু মূসা আল-আশআরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাহাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।
[ইবনে মাজাহ ১৩৯০, হাসান] [মিসকাত ১৩০৬, ১৩০৭ হাসান]
বাযযার, আল-মুসনাদ ১/১৫৭, ২০৭, ৭/১৮৬; আহমাদ ইবনু হাম্বল, আল-মুসনাদ ২/১৭৬; ইবনু আবি আসিম, আস-সুন্নাহ,পৃ ২২৩-২২৪; ইবনু হিববান, আস-সহীহ ১২/৪৮১; তাবারানী, আল-মুজাম আল-কাবীর, ২০/১০৮, ২২/২২৩; আল-মুজাম আল-আওসাত, ৭/৬৮; বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান, ৩/৩৮১; ইবনু খুযায়মা, কিতাবুত তাওহীদ ১/৩২৫-৩২৬।
আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে হারিয়ে ফেললাম [বিছানায় পেলাম না]। আমি [তাহাঁর সন্ধানে] বের হলাম। এসে দেখলাম তিনি বাকী কবরস্তানে আছেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি ভয় করছ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তোমার প্রতি কোন অবিচার করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অনুমান করলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকটে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা মধ্য শাবানে [১৫ তারিখের রাতে] দুনিয়ার কাছের আকাশে অবতীর্ণ হন। তারপর কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের চেয়েও বেশী সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন।
[তিরমিজি ৭৩৯, দুর্বল] [ইবনি মাজাহ ১৩৮৯ দুর্বল] নাসায়ি ২০৩৭ [মিসকাত ১২৯৯, দুর্বল]
আলী বিন আবু তালিব [রাঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড় এবং এর দিনে সওম রাখ। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত [তিনি এভাবে আহবান করেন]। {১৩৮৮}
[ইবনে মাজাহ ১৩৮৮ জাল, তাহকীক আলবানি] [মিসকাত ১৩০৮, জাল]
আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে বললেন : তুমি কি জানো এ রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের পনের তারিখে কি ঘটে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো জানি না। আপনিই বলে দিন এ রাতে কি ঘটে? রাসূলুল্লাহ [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন : বানী আদামের প্রতিটি লোক যারা এ বছর জন্মগ্রহণ করিবে এ রাতে তাদের নাম লেখা হয়। আদাম সস্তানের যারা এ বছর মৃত্যুবরণ করিবে এ রাতে তা ঠিক করা হয়। এ রাতে বান্দাদের আমাল উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। এ রাতে বান্দাদের রিযক্ব আসমান থেকে নাযিল করা হয়। আয়িশাহ এমএ প্রশ্ন করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন লোকই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না? তিনি [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ইরশাদ করিলেন : হ্যাঁ! কোন মানুষই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না। তিনি [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এ বাক্যটি তিনবার উচ্চারণ করিলেন। আয়িশাহ্ [রাদি.] আবেদন করিলেন, এমনকি আপনিও নয়! এবার তিনি [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আপন মাথায় হাত রেখে বললেন, আমিও না, তবে আল্লাহ তার রহমাত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেবেন। এ বাক্যটিও তিনি তিনবার উচ্চারণ করিলেন। [বায়হাক্বী এ বর্ণনাটি দাওয়াতুল কাবীর নামক গ্রন্থে নকল করেছে]
[মিসকাত ১৩০৫]
{১} জইফ : শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হাদিসটি কোন গ্রন্থে রয়েছে, এর সানাদটি এবং সানাদের ব্যাপারে সমালোচনা করিয়াছেন এসব কোন বিষয়েই আমি অবগত হয়নি। তবে مَا مِنْ أحدٍ -এর পরের অংশটুকু সহীহ হাদীসে রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ২ঃ লাইলাতুল কদর এর ফযীলত ও দোয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হইবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করিবে, তারও অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করা হইবে।
সহীহ বুখারী ২০১৪, ৩৭, ৩৮, ৩৫, ১৯০১, ফাজায়েলে রমজান, শবে কদর ১
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নির্ভরযোগ্য আহলে ইলমকে বলিতে শুনেছেন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে তাঁর পূর্ববর্তী লোকদের আয়ু দেখান হয়। অথবা উহাতে যতটুকু আল্লাহ্ চেয়েছেন তা দেখান হয়। ফলে তিনি যেন তাঁর উম্মতের আয়ুকে সংক্ষিপ্ত মনে করলেন যার কারণে আমলের দিক দিয়ে তাঁরা পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হইবে না। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাকে হাজার মাস হইতে উত্তম লাইলাতুল ক্বদর প্রদান করেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
৬৯১তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলে দিন, যদি আমি কদর রাত পাই, এতে আমি কী দুআ করব? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তুমি বলবে,
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعَفُ عَنِّىْ
তুমিই إِنَّكَ | হে আল্লাহ اَللّٰهُمَّ |
তুমি পছন্দ করো تُحِبُّ | ক্ষমাকারী عَفُوٌّ |
মাফ করে দাও فَاعَفُ | ক্ষমা করাকে الْعَفْوَ |
আমাকে عَنِّىْ |
আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা আফুউয়্যন, তুহিব্বুল আফ্ওয়া, ফাফু আন্নী [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই ক্ষমাকারী। আর ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও।]
মিশকাত ২০৯১, সহীহ হাদিস, বুলুগুল মারাম ৭০৬, সহীহ হাদিস, ফাজায়েলে রমজান, শবে কদর ৭
পরিচ্ছেদ ৩ঃ ২১ তম রাত্রির বর্ণনা
আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃ] রমজান মাসের প্রথম দশকে ইতিকাফ করিলেন। এরপর তিনি মাঝের দশকেও একটি তুকী তাঁবুর মধ্যে ইতিকাফ করলেনে এবং তাঁবুর দরজায় একটি চাটাই ঝুলানো ছিল। রাবী বলেন, তিনি নিজ হাতে চাটাই ধরে তা তাঁবুর কোণে রাখলেন, এরপর নিজের মাথা বাইরে এনে লোকদের সাথে কথা বলিলেন এবং তারাও তাহাঁর নিকট এগিয়ে এলো। তিনি বলিলেন, এ রাতের অনুসন্ধানকল্পে আমি [রমাযানের] প্রথম দশকে ইতিকাফ করলাম। অতঃপর মাঝের দশকে ইতিকাফ করলাম। এরপর আমার নিকট একজন আগন্তুক [লোক] এসে আমাকে বলিল, লায়লাতুল ক্বদর্ শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ করিতে চায় সে যেন ইতিকাফ করে। লোকেরা তাহাঁর সঙ্গে [শেষ দশকে] ইতিকাফ করিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরও বলিলেন, স্বপ্নে আমাকে তা কোন এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং আমি যেন সে রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের সাজ্দাহ্ করছি। [রাবী বলেন], তিনি ২১ তম রাতের ভোরে উপনীত হয়ে ফাজ্রের সলাতে দাঁড়ালেন এবং আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ফলে ছাঁদ থেকে মাসজিদে পানি বর্ষিত হল এবং আমি স্বচক্ষে কাদা ও পানি দেখিতে পেলাম। তিনি ফজরের নামাজ শেষে যখন বের হয়ে এলেন, তখন তাহাঁর কপাল ও নাকের ডগা সিক্ত ও কর্দমাক্ত ছিল। আর তা ছিল রমাযানের শেষ দশকের ২১তম রাত।
সহীহ মুসলিম ২৬৬১, মিশকাত ২০৮৬
আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃ] [রমাযানের] মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। অতঃপর ২০ তম দিন অতিবাহিত হবার পর এবং ২১ তম দিনের সূচনাতে তিনি নিজ বাসস্থানে ফিরে আসেন এবং তাহাঁর সঙ্গে যারা ইতিকাফ করেন, তারাও নিজ নিজ আবাসে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর একবার রমজান মাসের মাঝের দশকে তিনি ইতিকাফ করিলেন- যে রাতে তাহাঁর ইতিকাফ হইতে ফিরে আসার কথা, সে রাতে [পুনরায়] ইতিকাফ আরম্ভ করিলেন ও লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আমি সাধারণত এ [মধ্যম] দশকে ইতিকাফ করতাম। এরপর শেষ দশকেও ইতিকাফ করা আমার কাছে সমীচীন মনে হল। অতএব যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করিতে চায়, যেন নিজ ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করে। আমি এ কদরের রাত স্বপ্নে দেখেছিলাম, কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তা অনুসন্ধান কর। আমি স্বপ্নে নিজেকে পানি ও কাদার মধ্যে সাজ্দাহ্ করিতে দেখেছি। আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] বলেন, ২১ তম রাতে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়। তিনি যখন ফজরের নামাজ থেকে ফিরলেন, তখন আমি তাহাঁর মুখমণ্ডল কাদা ও পানিতে সিক্ত দেখলাম।
সহীহ বুখারী ২০১৬, ২০১৮, সহীহ মুসলিম ২৫৫৯, ২৬৬০, মুয়াত্তা মালিক ৬৮৫, আবু দাউদ ১৩৮২
ইমাম মুসলিম, আবু সালামাহ্ [রাদি.] এর সুত্রে একই হাদীস বর্ণনা করেন, সহীহ মুসলিম ২৬৬২
ইমাম মুসলিম ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবু কাসীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে একই হাদীস বর্ণনা করেন, সহীহ মুসলিম ২৬৬৩
পরিচ্ছেদ ৪ঃ ২৩ তম রাত্রির বর্ণনা
আবদুল্লাহ ইবনি উনায়স [রা.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আমাকে লায়লাতুল কদর এর রাত দেখানো হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে ঐ রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্ন আরও দেখানো হয়েছে যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সাজ্দাহ্ করছি। রাবী বলেন, অতএব ২৩ তম রাতে বৃষ্টি হল এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সাথে [ফজরের] নামাজ আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাহাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখিতে পেলাম। রাবী আবদুল্লাহ ইবনি উনায়স [রাদি.] বলিতেন, তা ছিল ২৩ তম।
সহীহ মুসলিম ২৬৬৫
দামরাহ ইবনি আবদুল্লা ইবনি উনাইস (র.) হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি বনু সালামাহ্র মাজলিসে উপস্থিত হই এবং সেখানে আমিই ছিলাম বয়সে ছোট। তারা বলিলেন, আমাদের মাঝে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে ক্বদর রাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার মত কেউ আছে কি? ঘটনাটি রমাযানের একুশ তারিখ সকাল বেলার। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি এ উদ্দেশে বের হই এবং মাগরিবের নামাজে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সাক্ষাত লাভ করি। আমি তাহাঁর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। তিনি আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে বললে আমি প্রবেশ করি। এ সময় তাহাঁর রাতের খাবার আনা হলো। খাবার কম থাকায় আমি সামান্য খেয়েছি। তিনি খাওয়া শেষ করে বললেনঃ আমার জুতা দাও। এরপর তিনি উঠলে আমিও তাহাঁর সাথে উঠি। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কোনো প্রয়োজন আছে কি? আমি বললাম, হাঁ, বনু সালামাহ্র লোকেরা আপনার নিকট লাইলাতুল ক্বদর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার জন্যে আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আজ কত তারিখ? আমি বললাম, বাইশ। তিনি বললেনঃ তা আজ রাতেই। তিনি তেইশ তারিখের রাতের দিকে ইংগিত করেন।
আবু দাউদ ১৩৭৯, হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
আবদুল্লাহ্ ইবনি উনায়স জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ্ সাঃ-এর খিদমতে আরজ করলেন, আমি এমন এক ব্যক্তি যার বাড়ি অনেক দূরে অবস্থিত, তাই আমাকে আপনি একটি রাত বলে দিন যে রাত্রে আমি [ইবাদতের জন্য এই মসজিদে] আগমন করব। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে বলিলেন, তুমি রমযানের তেইশে রাত্রে আগমন কর।
মুয়াত্তা মালিক ৬৮৮, ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদে মুনকাতে তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছেতাহকিকঃ অন্যান্য, আবু দাউদ ১৩৮০ হাসান সহিহ, মিশকাত ২০৯৪
ইবনি মাসউদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে বলেছেনঃ তোমরা লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ করো রমাযানের সতের, একুশ ও তেইশ তারিখের রাতে। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন।
১৩৮৪, দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ৫ঃ ২৭ তম রাত্রির বর্ণনা
সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীত তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [পিতা] বলেন, এক ব্যক্তি [রমাযানের] ২৭ তম রাতে লায়লাতুল ক্বদ্র দেখিতে পেল। নবী [সাঃ] বলিলেন, আমাকেও তোমাদের মত স্বপ্ন দেখানো হয়েছে যে, তা রমাযানের শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব এর বেজোড় রাতগুলোতে তা অনুসন্ধান কর।
সহীহ মুসলিম ২৬৫৩
যির ইবনি হুবায়শ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে বললাম, আপনার ভাই আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, যে ব্যক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে- সে ক্বদ্রের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি [উবাই] বলিলেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি এ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমজান মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭ তম রজনী। অতঃপর তিনি দৃঢ় শপথ করে বলিলেন, তা ২৭ তম রজনী। আমি [যির] বললাম, হে আবুল মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে তা বলেছেন? তিনি বলিলেন, বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে-যে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে অবহিত করিয়াছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উদয় হইবে। কিন্তু তাতে আলোকরশ্নি থাকিবে না।
সহীহ মুসলিম ২৬৬৭, তিরমিজি ৭৯৩ সহীহ হাদীস, মিশকাত ২০৮৮, আবু দাউদ ১৩৭৮, হাসান সহীহ
উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ক্বদরের রাত সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর শপথ! ক্বদরের রাত সম্পর্কে আমি খুব ভাল করেই জানি। শুবাহ্ বলেন, আমার জানামতে তা হচ্ছে, সে রাত যে রাতে জেগে ইবাদাত করার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তা হচ্ছে রমাযানের ২৭ তম রজনী। “তা হচ্ছে সে রাত, যে রাতে ইবাদাত করার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।” এ বাক্যটুকু সম্পর্কে শুবাহ্ সন্দেহে পতিত হয়েছেন এবং বলেছেন, আমার এক বন্ধু তার শায়খের সূত্রে আমার নিকট ঐ কথা বর্ণনা করিয়াছেন।
সহীহ মুসলিম ২৬৬৮
মুআবিয়াহ ইবনি আবু সুফিয়ান (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলেছেনঃ লাইলাতুল ক্বদর সাতাইশের রাতে।
আবু দাউদ ১৩৮৬ সহিহ হাদিস
মু’আবীয়াহ বিন আবূ সুফইয়ান [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে বলেছেন, তা ২৭শে রমযানের রাত। আবূ দাউদ এটি বর্ণনা করে মওকুফ হবার ব্যাপারেই অভিমত দিয়েছেন। লাইলাতুল কদরের দিনক্ষণ নির্ণয়ের ব্যাপারে ৪০ প্রকার মতভেদপূর্ণ কওল [কথা] রহিয়াছে। যার উল্লেখ আমি ফতহুল বারীতে [বুখারীর শরায়] করেছি।”
বুলুগুল মারাম ৭০৫, আবূ দাউদ ১৩৮৬, হাদিসটি মাওকুফ, তাওযিহুল আহকাম ৩/৫৯০। হাদিসের তাহকীকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৬ঃ নবম ও সপ্তম রাত্রির বর্ণনা
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর। ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪ তম রাতে তালাশ কর।
সহীহ বুখারী ২০২২
পরিচ্ছেদ ৭ঃ নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাত্রির বর্ণনা
আবু সাঈদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ করো এবং তা অন্বেষণ করো নয়, সাত এবং পাঁচের মধ্যে।
আবু নাদরাহ বলেন, আমি বললাম, হে আবু সাঈদ! গণনার ব্যাপারে আপনারা আমাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত। তিনি বলিলেন, তাতো বটেই! আমি জিজ্ঞেস করলাম, নয়, সাত এবং পাঁচ কি? তিনি বলিলেন, নয় হচ্ছে রমাযানের একুশ তারিখের রাত, সাত হলো তেইশের রাত এবং পাঁচ হলো পঁচিশ তারিখের রাত।
ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসের কোন অংশ আমার নিকট অস্পষ্ট কিনা আমি তা অবহিত নই।
আবু দাউদ ১৩৮৩ সহিহ হাদিস
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) রমযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর। লাইলাতুল কদর (শেষ দিক হইতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।
সহীহ বুখারী ২০২১, আবু দাউদ ১৩৮১
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লায়লাতুল কদরকে রমাযান [রমজান] মাসের শেষ দশকে সন্ধান করো। লায়লাতুল কদর হলো নবম রাতে [অর্থাৎ- একুশতম রাতে], বাকী দিন হলো সপ্তম রাতে [সেটা হলো তেইশতম রাত], আর অবশিষ্ট থাকল পঞ্চম রাত [আর তা হলো পঁচিশতম] রাত।
মিশকাত ২০৮৫
আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লায়লাতুল কদর এর রাত অন্বেষণের উদ্দেশ্যে তা তাহাঁর কাছে সুস্পষ্ট হবার পূর্বে রমাযানের মধ্যেই দশদিন ইতিকাফ করিলেন। দশদিন অতিবাহিত হবার পর তিনি তাঁবু তুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। অতএব তা গুটিয়ে ফেলা হল। অতঃপর তিনি জানতে পারলেন যে, তা শেষ দশ দিনের মধ্যে আছে। তাই তিনি পুনরায় তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন। তা খাঁটানো হল। এরপর তিনি লোকদের নিকট উপস্থিত হয়ে বলিলেন, হে লোক সকল! আমাকে লায়লাতুল কদর এর রাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং আমি তোমাদের তা জানানোর জন্য বের হয়ে এলাম। কিন্তু দু ব্যক্তি পরস্পর ঝগড়া করিতে করিতে উপস্থিত হল এবং তাদের সাথে ছিল শাইত্বান। তাই আমি তা ভুলে গেছি। অতএব তোমরা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে অন্বেষণ কর। তোমরা তা ৯ম, ৭ম ও ৫ম রাতে অন্বেষণ কর। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবু সাঈদ! আপনি সংখ্যা সম্পর্কে আমাদের তুলনায় অধিক জ্ঞানী। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমরাই এ বিষয়ে তোমাদের চেয়ে অধিক হাক্বদার। আমি বললাম ৯ম, ৭ম, ৫ম সংখ্যাগুলো কী? তিনি বলিলেন, যখন ২১তম রাত অতিবাহিত হয়ে যায় এবং ২২তম রাত শুরু হয়-তখন তা হচ্ছে ৯ম তারিখ, ২৩তম রাত অতিক্রান্ত হবার পরবর্তী রাত হচ্ছে ৭ম তারিখ এবং ২৫তম রাত অতিবাহিত হবার পরের দিনটি হচ্ছে ৫ম তারিখ।
ইবনি খাল্লাদের বর্ণনায়……. [আরবি]………-এর শব্দের স্থলে …… [আরবি]……শব্দের উল্লেখ আছে [অর্থ একই, অর্থাৎ তারা ঝগড়া করে]।
সহীহ মুসলিম ২৬৬৪
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বের হয়ে আমাদের কাছে এলেন, অতঃপর বলিলেন, আমাকে অবশ্য এই রাত্রিটি [শবে-ক্বদর] রমযানে দেখান হয়েছে, হঠাৎ দুজন লোক বিতর্কে লিপ্ত হল, ফলে উহা [আমার স্মৃতি হইতে] তুলে নেওয়া হয়। অতঃপর তোমরা উহাকে তালাশ কর নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাত্রে।
মুয়াত্তা মালিক ৬৮৯ তাহকিকঃ অন্যান্য
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদেরকে লায়লাতুল কদরের খবর দেবার জন্য [মাসজিদে নাবাবীর হুজরা থেকে] বের হলেন। এ সময় মুসলিমদের দু ব্যক্তি ঝগড়া শুরু করিল। [এ অবস্থা দেখে] তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ আমি তোমাদেরকে লায়লাতুল কদর সম্পর্কে খবর দিতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হলো। ফলে [লায়লাতুল কদরের খবর আমার মন হইতে] উঠিয়ে নেয়া হলো। বোধ হয় [ব্যাপারটি] তোমাদের জন্য কল্যাণকর হয়েছে। তাই তোমরা লায়লাতুল কদরকে [রমাযানের] ২৯, ২৭ কিংবা ২৫-এর রাতে খোঁজ করিবে।
মিশকাত ২০৯৫ সহীহ হাদিস, ফাজায়েলে রমজান, শবে কদর ৫
তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর।
পরিচ্ছেদ ৮ঃ শেষ দশকে বেজোর রাত্রির বর্ণনা
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধান কর।
সহীহ বুখারী ২০১৭, সহীহ মুসলিম ২৬৬৬, মিশকাত ২০৮৩, ফাজায়েলে রমজান, শবে কদর ৪
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে রমজান মাসের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। তিনি বলেন, আমাকে লায়লাতুল কদর দেখানো হয়েছিল; পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হইয়াছে। অতএব তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে তা অনুসন্ধান করো।
ইবনে মাজাহ ১৭৬৬ সহীহ হাদিস
আবদুর রাহমান [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, লাইলাতুল কাদর প্রসঙ্গে একবার আবু বাক্রা [রাদি.]-এর কাছে আলোচনা হল। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একটি বাণী শোনার কারণে আমি রমযান মাসের শেষ দশদিন ব্যতীত অন্য কোন রাত্রে লাইলাতুল কাদরকে খোঁজ করি না। আমি তাঁকে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা কাদরের রাত্রে খোঁজ কর রমযানের নয়দিন বাকী থাকতে বা সাতদিন বাকী থাকতে বা পাঁচদিন বাকী থাকতে বা তিন দিন বাকী থাকতে অথবা এর শেষ রাত্রে।
তিরমিজি ৭৯৪ -সহীহ, মিশকাত তাহকীক ছানী [২০৯২]।বর্ণনাকারী বলেন, রমযানের বিশদিন পর্যন্ত আবু বাক্রা [রাদি.] সারা বছরের মতই নামাজ আদায় করিতেন, কিন্তু তিনি শেষ দশদিন আসলে যতটুকু সম্ভব সাধনা করিতেন। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। ,সহীহ হাদীস
আবু বাকরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা লায়লাতুল কদরকে [রমাযান [রমজান] মাসের] অবশিষ্ট নবম রাতে, অর্থাৎ- ২৯তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে, অর্থাৎ- ২৭তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট পঞ্চম রাতে, অর্থাৎ- ২৫তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট তৃতীয় রাতে, অর্থাৎ- ২৩তম রাতে; অথবা শেষ রাতে খোঁজ করো।
মিশকাত ২০৯২, সহীহ হাদিস
ফাজায়েলে রমজান, শবে কদর ৬, উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] সুত্রে উপরের হাদিস এর মত বর্ণনা করছেন এবং লক্ষন গুলি উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদ ৯ঃ শেষ ৭ রাত্রির বর্ণনা
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) – এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।
সহীহ বুখারী ২০১৫,
সহীহ মুসলিম, আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.]২৬৫১, ২৬৫২,
মুওয়াত্তা মালিক ৬৮৭ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবু দাউদ ১৩৮৫
মিশকাত ২০৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে বর্ণীতঃ
বুলুগুল মারাম ৭০৪ ইবনু উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
মুওয়াত্তা মালিক ৬৯০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সালিম ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর পিতা {আবদুল্লাহ [রাদি.]} বলেছেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে লায়লাতুল ক্বদ্র সম্পর্কে বলিতে শুনেছি, তোমাদের কতিপয় লোককে দেখানো হল যে, তা রমাযানের প্রথম সাতদিনের মধ্যে, আবার কতিপয় লোককে দেখানো হয়েছে যে, তা শেষ সাতদিনের মধ্যে। অতএব [রমাযানের] শেষ দশকের মধ্যে তা অন্বেষণ কর।
সহীহ মুসলিম ২৬৫৪
পরিচ্ছেদ ১০ঃ শেষ দশকে অনুসন্ধান করা
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন এবং বলিতেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর।
তিরমিজি ৭৯২
জাবালাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি উমর [রাদি.]-কে নবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিতে শুনেছি যে, তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদর এর রাত অনুসন্ধান করিতে চায়, সে যেন [রমাযানের] শেষ দশকে তা অনুসন্ধান করে।
সহীহ মুসলিম ২৬৫৬
মালিক ৬৮৬ উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] রমজান মাসের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ইবাদাতে অধিক মশগুল থাকতেন।
ইবনে মাজাহ ১৭৬৭, সহীহ হাদিস, তিরমিজি ৭৯৬, মিশকাত ২০৮৯
আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] রমজান মাসের শেষ দশকে রাত জাগতেন, তহবন্দ শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং তাহাঁর পরিবার-পরিজনকে [ইবাদাতে মশগুল হওয়ার জন্য] জাগিয়ে দিতেন।
ইবনে মাজাহ ১৭৬৮, সহীহ হাদিস, সহীহ বুখারী ২০২০
তিরমিজি ৭৯৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃসহীহ হাদিস
উক্ববাহ্ ইবনি হুরায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি উমর [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা [রমাযানের] শেষ দশ দিনে লায়লাতুল কদর এর রাত অনুসন্ধান কর। তোমাদের কেউ যদি দূর্বল অথবা অপরাগ হয়ে পড়ে, তবে সে যেন শেষের সাত রাতে অলসতা না করে।
সহীহ মুসলিম ২৬৫৫
ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা [রমাযানের] শেষ দশকে লায়লাতুল কদর এর রাত অনুসন্ধান কর অথবা তিনি বলেছেন, শেষের সাত রাতে।
সহীহ মুসলিম ২৬৫৭
আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমাকে স্বপ্নে লায়লাতুল কদর এর রাত দেখানো হয়েছিল। অতঃপর আমার পরিবারের কেউ আমাকে ঘুম থেকে জাগানোর ফলে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা তা শেষ দশকে অন্বেষণ কর।
রাবী হারমালাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেনঃ “আমি তা ভুলে গেছি”
সহীহ মুসলিম ২৬৫৮
পরিচ্ছেদ ১১ঃ রমাযানে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন যে, তোমরা (লাইলাতুল কদর) অনুসন্ধান কর।
সহীহ বুখারী ২০১৯
আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কেলাইলাতুল ক্বদর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তা আমি শুনি। তিনি বলেছেনঃ তা পুরো রমাযানেই নিহিত আছে। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সুফয়ান ও শুবাহ এ হাদিসটি আবু ইসহাক্ব হইতে ইবনিউমারের নিজস্ব বক্তব্য রূপে বর্ণনা করিয়াছেন, তাঁরা এর সানাদ নাবী (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌঁছাননি। {১৩৮৭}
আবু দাউদ ১৩৮৭, দুর্বলঃ সহীহ্ হচ্ছে মাওকূফ। ১৩৮৭} বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (৪/৩০৭)। এর সানাদ দুর্বল।
২০৯৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লায়লাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তা প্রত্যেক রমাযানে আসে।
[আবু দাউদ। ঈমাম আবু দাউদ বলেন, সুফ্ইয়ান ও শুবাহ্ আবু ইসহাক হইতে, তিনি মাওকূফ হিসেবে এ হাদিসটি ইবনি উমার হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।]{১}{১} জইফ : তবে সঠিক হলো তা মাওকূফ। আবু দাউদ ১৩৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫২৬, জইফ আল জামি ৬১০২। কারণ এর সানাদে আবু ইসহাক একজন মুখতালাত্ব রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে ক্বদরের রাত সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করছিলাম। তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে সে [রাত] স্মরণ রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হইবে থালার একটি টুকরার ন্যায়।
সহীহ মুসলিম ২৬৬৯
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, যে ব্যক্তি শবে-ক্বদরের ইশার নামাযে উপস্থিত হয়েছে, সে উহার [শবে-ক্বদর] অংশ প্রাপ্ত হয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
৬৯২ এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লায়লাতুল কদর শুরু হলে জিবরীল আমীন মালায়িকাহ্র [ফেরেশতাগণের] দলবলসহ [পৃথিবীতে] নেমে আসেন। তাঁরা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা আল্লাহর স্মরণকারী আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার জন্য দুআ করিতে থাকেন। এরপর ঈদুল ফিতরের দিন এলে আল্লাহ তাআলা মালায়িকার কাছে তাহাঁর বান্দাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, হে আমার মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা]! বলো দেখি সে প্রেমিকের কী পুরস্কার হইতে পারে যে নিজ কাজ সম্পাদন করেছে? মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] বলেন, হে আমাদের রব! তার পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে তার পুরস্কার। তখন আল্লাহ বলেন, আমার মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা]! আমার বান্দা ও বান্দীগণ তাদের ওপর আমার অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। আজ [ঈদের দিন] আমার নিকট দুআর ধ্বনি দিতে দিতে ঈদগাহের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমার ইজ্জতের, বড়ত্বের, উঁচু শানের কসম! জেনে রাখো তাদের দুআ আমি নিশ্চয়ই কবূল করব। এরপর আল্লাহ বলেন, আমার [বান্দাগণ]! আমি নিশ্চয়ই তোমাদের সকল অপরাধ মাফ করে দিলাম। তোমাদের গুনাহখাতাগুলোকে নেক কাজে পরিবর্তন করে দিলাম। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ী ফিরে যায়।
মিশকাত ২০৯৬, জাল হাদিস
শবে বরাত ও শবে কদর সম্পর্কে আরও হাদীস যদি আপনার জানা থাকে তাহলে নিচে Comment এ জানাবেন। আমরা এই লেখার সাথে যোগ করে দিব। ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply