Lu Lu Wal Marjan পানীয় মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা

Lu Lu Wal Marjan পানীয় মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা

Lu Lu Wal Marjan পানীয় মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা , এই পর্বের হাদীস = ৪৫ টি (১২৯২-১৩৩৬) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৩৬ঃ পানীয়

৩৬/১. মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা এবং তা আঙ্গুরের রস, পাকা খেজুর, শুকনা খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হোক যা মাতাল করে।
৩৬/৫. পাকা খেজুর ও কিশমিশ একত্র করে নাবিজ বানানো মাকরূহ।
৩৬/৬. আলকাতরা মাখানো পাত্রে, কদুর বোলে, সবুজ কলস ও কাঠের বোলে নাবিজ বানানো নিষিদ্ধ এবং এ বিধান রহিত হয়ে যাওয়া ও বর্তমানে এটা হালাল যতক্ষণ না তা মাতাল করে।
৩৬/৮. যে মদপান করিল তা থেকে বিরত হল না বা তাওবাহ করিল না তার শাস্তি তাকে পরকালে তা থেকে বঞ্চিত করা হইবে।
৩৬/৯. নাবিজ ততক্ষণ [খাওয়া] বৈধ যতক্ষণ না তা কঠিনভাবে বিকৃত হয় এবং মাদকদ্রব্যে পরিণত হয়।
৩৬/১০. দুগ্ধপান বৈধ।
৩৬/১১. নাবিজ পান করা ও পাত্র ঢেকে রাখা।
৩৬/১২. পাত্র ঢেকে রাখা, মশ্‌ক বেঁধে রাখা, দরজা বন্ধ করা, এগুলো করার সময় বিসমিল্লাহ বলা এবং ঘুমানোর সময় বাতি ও আগুন নিভিয়ে রাখা এবং মাগরিবের পর শিশু ও গরু বাছুর বাড়ীর বাইরে যেতে না দেয়ার নির্দেশ।
৩৬/১৫. জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা।
৩৬/১৬. পান করার সময় পাত্রে নিঃশ্বাস ছাড়া ঘৃণিত এবং পাত্রের বাইরে তিনবার নিঃশ্বাস ছাড়া মুস্তাহাব।
৩৬/১৭. প্রথমে পানকারীর পর দুধ, পানি বা এ জাতীয় বস্তুর পাত্র ডান দিক থেকে ঘুরান মুস্তাহাব।
৩৬/১৮. আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়া ও কোন লোকমা পড়ে গেলেও তাতে ময়লা লাগলে পরিষ্কার করে খেয়ে নেয়া মুস্তাহাব এবং হাত চেটে খাওয়ার পূর্বে মুছে ফেলা মাকরূহ।
৩৬/১৯. খাবারের মালিক দাওয়াত দেয়নি এমন কেউ মেহমানের সঙ্গী হলে মেহমান কী করিবে? এবং মেজবানের জন্য উত্তম হল সঙ্গী ব্যক্তিকে খাবারের অনুমতি দেয়া।
৩৬/২০. মেহমানের জন্য তার সাথে অন্য এমন লোককে নিয়ে যাওয়া বৈধ যার ব্যাপারে সে নিশ্চিত যে বাড়িওয়ালা এতে সন্তুষ্ট থাকিবে এবং যথাযথ মূল্যায়ন করিবে।
৩৬/২১. ঝোল খাওয়া জায়িয, কুমড়া খাওয়া মুস্তাহাব এবং দস্তরখানায় লোকেদের কতককে অন্যদের উপর প্রাধান্য দেয়া যদি মেজবান এটা অপছন্দ না করে।
৩৬/২৩. তাজা খেজুরের সাথে শসা খাওয়া।
৩৬/২৫. একসাথে খাওয়ার সময় সাথীদের বিনা অনুমতিতে এক সাথে দুটো খেজুর বা দু টুকরা খাওয়া নিষিদ্ধ।
৩৬/২৭. মাদীনাহ্‌র খেজুরের মর্যাদা।
৩৬/২৮. কামআ [এক প্রকার ছত্রাক যা খাওয়া যায়]-এর ফাযীলাত এবং চক্ষু রোগের ঔষধ হিসেবে তার ব্যবহার।
৩৬/২৯. কালো কাবাস [আরক গাছের ফল]-এর ফাযীলাত
৩৬/৩২. মেহমানের সম্মান ও তাকে [মেহমানকে] প্রাধান্য দেয়ার ফাযীলাত
৩৬/৩৩. খাদ্য অল্প হলেও ভাগ করে খাওয়ার ফাযীলাত এবং দুজনের খাবার তিনজনের বা অনুরূপ কমলোকের খাবার বেশী জনের জন্য যথেষ্ট হওয়ার বর্ণনা।
৩৬/৩৪. মুমিন খায় এক পেটে, কাফির খায় সাত পেটে।
৩৬/৩৫. খাবারের দোষ বর্ণনা না করা।

৩৬/১. মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা এবং তা আঙ্গুরের রস, পাকা খেজুর, শুকনা খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হোক যা মাতাল করে।

১২৯২.আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্য হইতে যে অংশ আমি পেয়েছিলাম, তাতে একটি জওয়ান উটনীও ছিল। আর নাবী [সাঃআঃ] খুমুসের মধ্য হইতে আমাকে একটি জওয়ান উটনী দান করেন। আর আমি যখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.]-এর সঙ্গে বাসর যাপন করব, তখন আমি বানূ কায়নুকা গোত্রের এক স্বর্ণকারের সঙ্গে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, সে আমার সঙ্গে যাবে এবং আমরা উভয়ে মিলে ইযখির ঘাস সংগ্রহ করে আনব। আমার ইচ্ছে ছিল তা স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তা দিয়ে আমার বিবাহের ওয়ালীমা সম্পন্ন করব। ইতোমধ্যে আমি যখন আমার জওয়ান উটনী দুটির জন্য আসবাবপত্র যেমন পালান, থলে ও রশি ইত্যাদি একত্রিত করছিলাম, আর আমার উটনী দুটি এক আনসারীর ঘরের পার্শ্বে বসা ছিল। আমি আসবাবপত্র যোগাড় করে এসে দেখি উট দুটির কুঁজ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কোমরের দিকে পেট কেটে কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। উটনী দুটির এ হাল দেখে আমি অশ্রু চেপে রাখতে পারলাম না। আমি বললাম, কে এমনটি করেছে? লোকেরা বলিল, হামযা ইবনি আবদুল মুত্তালিব এমনটি করেছে। সে এ ঘরে আছে এবং শরাব পানকারী কতিপয় আনসারীর সঙ্গে আছে। আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাহাঁর নিকট যায়দ ইবনি হারিসা [রাদি.] উপস্থিত ছিলেন। রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমার চেহারা দেখে আমার মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করিতে পারলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আমি আজকের মত দুঃখজনক অবস্থা দেখেনি। হামযাহ আমার উট দুটির উপর অত্যাচার করেছে। সে দুটির কুঁজ কেটে ফেলেছে এবং পাঁজর চিরে ফেলেছে। আর সে এখন অমুক ঘরে শরাব পানকারী দলের সঙ্গে আছে। তখন নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর চাদরখানি আনতে আদেশ করিলেন এবং চাদরখানি জড়িয়ে পায়ে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়দ ইবনি হারিসা [রাদি.] তাহাঁর অনুসরণ করলাম। হামযাহ যে ঘরে ছিল সেখানে পৌঁছে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিল। তখন তারা শরাব পানে বিভোর ছিল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] হামযাহকে তার কাজের জন্য তিরস্কার করিতে লাগলেন। হামযাহ তখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত। তার চক্ষু দুটি ছিল রক্তলাল। হামযাহ তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর প্রতি তাকাল। অতঃপর সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাহাঁর হাঁটু পানে তাকাল। আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহাঁর নাভির দিকে তাকাল। আবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহাঁর মুখমণ্ডলের দিকে তাকাল। অতঃপর হামযাহ বলিল, তোমরাই তো আমার পিতার গোলাম। এ অবস্থা দেখে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বুঝতে পারলেন, সে এখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত আছে। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] পেছনে হেঁটে সরে আসলেন। আর আমরাও তাহাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসলাম।

[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩০৯১; মুসলিম ৩৬/১ হাঃ ১৯৭৯] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৯৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমি আবু তালহার বাড়িতে লোকজনকে শরাব পান করাচ্ছিলাম। সে সময় লোকেরা ফাযীখ শরাব ব্যবহার করিতেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে আদেশ করিলেন, যেন সে এ মর্মে ঘোষণা দেয় যে, সাবধান! শরাব এখন হইতে হারাম করে দেয়া হয়েছে। আবু তালহা [রাদি.] আমাকে বলিলেন, বাইরে যাও এবং সমস্ত শরাব ঢেলে দাও। আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত শরাব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। আনাস [রাদি.] বলেন, সে দিন মাদীনার অলিগলিতে শরাবের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। তখন কেউ কেউ বলিল, একদল লোক নিহত হয়েছে, অথচ তাহাদের পেটে শরাব ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা পূর্বে যা কিছু পানাহার করেছে তার জন্য তাহাদের কোন গুনাহ হইবে না”-[আল-মা-য়িদাহ ৯৩]।

[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ২৪৬৪; মুসলিম ৩৬/১, হাঃ ১৯৮০]. Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/৫. পাকা খেজুর ও কিশমিশ একত্র করে নাবিজ বানানো মাকরূহ।

১২৯৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] কিসমিস, শুকনো খেজুর, কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশ্রণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৬০১; মুসলিম ৩৬/৫, হাঃ ১৯৮৬] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৯৫. আবু ক্বাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] খুরমা ও আধাপাকা খেজুর এবং খুরমা ও কিসমিস একত্রিত করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আর এগুলো প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথকভাবে ভিজিয়ে নাবীয তৈরী করা যাবে।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৬০২; মুসলিম ৩৬/৫, হাঃ ১৯৮৮], Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস,

৩৬/৬. আলকাতরা মাখানো পাত্রে, কদুর বোলে, সবুজ কলস ও কাঠের বোলে নাবিজ বানানো নিষিদ্ধ এবং এ বিধান রহিত হয়ে যাওয়া ও বর্তমানে এটা হালাল যতক্ষণ না তা মাতাল করে।

১২৯৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কদু [লাউ]র খোলসে এবং আলকাতরা মাখানো পাত্রে নাবিজ তৈরি করো না।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৫৫৮৭; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৯৯২, ১৯৯৩] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৯৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] দুব্বা [কদু বা লাউয়ের খোলস] ও মুযাফ্‌ফাত [আলকাতরার প্রলেপ দেয়া পাত্র] ব্যবহার করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৯৪; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৯৯৪] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৯৮. ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আসওয়াদকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি কি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কোন্ কোন্ পাত্রের মধ্যে নাবীয তৈরী করা মাকরূহ। তিনি উত্তর করলেনঃ হাঁ। আমি বলেছিলাম, হে উম্মুল মুমিনীন! কোন্ কোন্ পাত্রের মধ্যে নাবী [সাঃআঃ] নাবীয তৈরী করিতে নিষেধ করিয়াছেন? তখন তিনি বললেনঃ নাবী [সাঃআঃ] আমাদের অর্থাৎ আহলে বায়তকে দুব্বা [কদু বা লাউয়ের খোলস] ও মুযাফ্‌ফাত [আলকাতরার প্রলেপ দেয়া পাত্র] নামক পাত্রে নাবীয তৈরী করিতে নিষেধ করিয়াছেন। [ইবরাহীম বলেন] আমি বললামঃ আয়েশা [রাদি.] কি জার [মাটির কলসী] ও হানতাম [মাটির সবুজ পাত্র] নামক পাত্রের কথা উল্লেখ করেননি? তিনি বললেনঃ আমি যা শুনিয়াছি কেবল তাই তোমাকে বর্ণনা করেছি। আমি যা শুনি নি তাও কি আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করব?

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৯৫; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৯৯৫] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৯৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী [সাঃআঃ]-এর দরবারে হাযির হয়ে আরয করলো, ………… আর আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি শুষ্ক কদুর খোলস, সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র, খেজুর কাণ্ড নির্মিত পাত্র, তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করিতে।

[বোখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ১৩৯৮; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৭] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩০০. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী [সাঃআঃ] এক ধরনের পাত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করিলেন, তখন নাবী [সাঃআঃ]-কে বলা হল, সব মানুষের নিকট তো মশ্‌ক মওজুদ নেই। ফলে নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের কলসীর জন্য অনুমতি দেন, তবে আলকাতরার প্রলেপ দেয়া পাত্রের জন্য অনুমতি দেননি।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৯৩; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ২০০০] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস . ৩৬/৭. যা মাতলামি আনে তাই মাদকদ্রব্য আর প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম।

১৩০১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে সকল পানীয় নেশা সৃষ্টি করে, তা হারাম। [বোখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৭১ হাদীস নং ৫৫৮৫, ৫৫৮৬, ২৪২; মুসলিম ৩৬/৭, হাঃ ২০০১], Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩০২. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে [আবু মূসাকে গভর্নর নিযুক্ত করে] ইয়ামানে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়ামানে তৈরি করা হয় এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, ঐগুলো কী কী? আবু মূসা [রাদি.] বলিলেন, তা হল বিত্উ ও মিয্‌র শরাব। বর্ণনাকারী সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আবু বুরদাকে জিজ্ঞেস করলাম বিত্উ কী? তিনি বলিলেন, বিত্উ হল মধু থেকে গ্যাজানো রস আর মিয্‌র হল যবের গ্যাঁজানো রস। [সাঈদ বলেন] তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, সকল নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম।

[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬০ হাদীস নং ৪৩৪৩; মুসলিম ৩৬/৭, হাঃ ১৭৩৩] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস।

৩৬/৮. যে মদপান করিল তা থেকে বিরত হল না বা তাওবাহ করিল না তার শাস্তি তাকে পরকালে তা থেকে বঞ্চিত করা হইবে।

১৩০৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে এরপর সে তা থেকে তাওবাহ করেনি, সে ব্যক্তি আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকিবে।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৫৭৫; মুসলিম ৩৬/৮, হাঃ ২০০৩] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস।

৩৬/৯. নাবিজ ততক্ষণ [খাওয়া] বৈধ যতক্ষণ না তা কঠিনভাবে বিকৃত হয় এবং মাদকদ্রব্যে পরিণত হয়।

১৩০৪. সাহ্‌ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু উসায়দ আস্ সাঈদী [রাদি.] শাদী উপলক্ষে নাবী [সাঃআঃ]-কে তার ওয়ালীমায় দাওয়াত করিলেন। তাহাঁর নববধু সেদিন খাদ্য পরিবেশন করছিলেন। সাহ্‌ল বলেন, তোমরা কি জান, সে দিন নাবী [সাঃআঃ]-কে কী পানীয় সরবরাহ করা হয়েছিল? সারারাত ধরে কিছু খেজুর পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখে তা থেকে তৈরি পানীয়। নাবী [সাঃআঃ] যখন খাওয়া শেষ করিলেন, তখন তাঁকে ঐ পানীয়ই পান করিতে দেয়া হয়।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৭২ হাদীস নং ৫১৭৬; মুসলিম ৩৬/৯, হাঃ ২০০৬] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩০৫. সাহ্‌ল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আবু উসায়দ আস্‌সাঈদী [রাদি.] তাহাঁর ওয়ালীমায় নাবী [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবিগণকে দাওয়াত দিলেন, তখন তাহাঁর নববধূ উম্মু উসায়দ ব্যতীত আর কেউ উক্ত খাদ্য প্রস্তুত এবং পরিবেশন করেননি। তিনি একটি পাথরের পাত্রে সারা রাত পানির মধ্যে খেজুর ভিজিয়ে রাখেন। যখন [সাঃআঃ] খাওয়া-দাওয়া শেষ করেন, তখন সেই তোহফা [সাঃআঃ]-কে পান করান।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৭৮ হাদীস নং ৫১৮২; মুসলিম ৩৬/৯, হাঃ ২০০৬] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩০৬. সাহ্‌ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আরবের জনৈকা মহিলার কথা আলোচনা করা হলে, তিনি আবু উসাইদ সাঈদী [রাদি.]-কে আদেশ দিলেন, সেই মহিলার নিকট কাউকে পাঠাতে। তখন তিনি তার নিকট একজনকে পাঠালে সে আসলো এবং সায়িদা গোত্রের দূর্গে অবতরণ করিল। এরপর নাবী [সাঃআঃ] বেরিয়ে এসে তার কাছে গেলেন। নাবী [সাঃআঃ] দূর্গে তার কাছে প্রবেশ করে দেখলেন, একজন মহিলা মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে। নাবী [সাঃআঃ] যখন তার সঙ্গে কথোপকথন করিলেন, তখন সে বলে উঠল, আমি আপনার থেকে আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চাই। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে পানাহ দিলাম। তখন লোকজন তাকে বলিল, তুমি কি জান ইনি কে? সে উত্তর করলঃ না। তারা বললঃ ইনি তো আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]। তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। সে বলিল, এ মর্যাদা থেকে আমি চির বঞ্চিতা। এরপর সেই দিনই নাবী [সাঃআঃ] অগ্রসর হলেন এবং তিনি ও তাহাঁর সহাবীগণ অবশেষে বানী সায়িদার চত্বরে এসে বসে পড়লেন। এরপর বললেনঃ হে সাদ! আমাদের পানি পান করাও। সাহ্‌ল বলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য এই পেয়ালাটিই বের করে আনি এবং তা দিয়ে তাঁদের পান করাই। বর্ণনাকারী বলেন, সাহ্‌ল তখন আমাদের কাছে সেই পেয়ালা বের করে আনলে আমরা তাতে করে পানি পান করি। তিনি বলেছেনঃ পরবর্তীকাল উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাদি.] তাহাঁর নিকট হইতে সেটি দান হিসাবে পেতে চাইলে, তিনি তাঁকে তা হেবা করে দেন।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৫৬৩৭; মুসলিম ৩৬/৯, হাঃ ২০০৭] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/১০. দুগ্ধপান বৈধ।

১৩০৭. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী [সাঃআঃ] মাদীনাহ্‌র দিকে যাচ্ছিলেন তখন সুরাকা ইবনি মালিক ইবনি জুশাম তাহাঁর পেছনে ধাওয়া করিল। নাবী [সাঃআঃ] তার জন্য বদ্‌দুআ করিলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে মাটিতে দেবে গেল। তখন সে বলিল, আপনি আল্লাহ্‌র কাছে আমার জন্য দুআ করুন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। নাবী [সাঃআঃ] তার জন্য দুআ করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তৃষ্ণার্ত হলেন। তখন তিনি এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু বাক্‌র সিদ্দীক [রাদি.] বলেন, তখন আমি একটি বাটি নিয়ে এতে কিছু দুধ দোহন করে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে নিয়ে এলাম, তিনি এমনভাবে তা পান করিলেন যে, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৩৯০৮; মুসলিম ৩৬/১০, হাঃ নং ২১৪৬] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩০৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে রাতে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বাইতুল মুকাদ্দাসে ভ্রমণ করানো হয়, সে রাতে তাহাঁর সামনে দুটি পেয়ালা রাখা হয়েছিল। তার একটিতে ছিল শরাব এবং আরেকটিতে ছিল দুধ। তিনি উভয়টির দিকে তাকালেন এবং দুধ বেছে নিলেন। তখন জিবরীল [আঃ] বলিলেন, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহ্‌র, যিনি আপনাকে স্বাভাবিক পথ দেখিয়েছেন। যদি আপনি শরাব বেছে নিতেন, তাহলে আপনার উম্মাত অবাধ্য হয়ে যেত

। [বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৪৭০৯; মুসলিম ৩৬/১০, হাঃ ১৬৮] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/১১. নাবিজ পান করা ও পাত্র ঢেকে রাখা।

১৩০৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু হুমাইদ [রাদি.] এক পাত্রে দুধ নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে বললেনঃ এটিকে ঢেকে রাখলে না কেন? এর উপর একটি কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখা উচিত ছিল।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৫৬০৫; মুসলিম ৩৬/১১, ২০১০] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস.

৩৬/১২. পাত্র ঢেকে রাখা, মশ্‌ক বেঁধে রাখা, দরজা বন্ধ করা, এগুলো করার সময় বিসমিল্লাহ বলা এবং ঘুমানোর সময় বাতি ও আগুন নিভিয়ে রাখা এবং মাগরিবের পর শিশু ও গরু বাছুর বাড়ীর বাইরে যেতে না দেয়ার নির্দেশ।

১৩১০.জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেন, যখন রাতের আঁধার নেমে আসবে অথবা বলেছেন, যখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে [ঘরে] আটকে রাখবে। কেননা এসময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হইবে তখন তাহাদেরকে ছেড়ে দিতে পার। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করিবে এবং আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করিবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩৩০৪; মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ২০১২] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩১১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরগুলোতে আগুন রেখে ঘুমাবে না।

[বোখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ৬২৯৩; মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ২০১৫] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩১২. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একবার রাত্রি কালে মাদীনাহ্‌র এক ঘরে আগুন লেগে ঘরের লোকজনসহ পুড়ে গেল। এদের অবস্থা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট জানানো হলে, তিনি বললেনঃএ আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য চরম শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তোমাদেরই হিফাযতের জন্য তা নিভিয়ে ফেলবে।

[বোখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ৬২৯৪; মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ২০১৬] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস।

৩৬/১৩. খাওয়া ও পান করার আদাব এবং তার বিধান।

১৩১৩. উমার ইবনি আবু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে হিসাবে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করতাম।

[বোখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৫৩৭৬; মুসলিম ৩৬/১৩, হাঃ ২০২২] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩১৪. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মশ্‌কের মুখ খুলে, তাতে মুখ লাগিয়ে পানি পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৫৬২৫; মুসলিম ৩৬/১৩, হাঃ ২০২৩] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/১৫. জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা।

১৩১৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] -এর নিকট যমযমের পানি পেশ করলাম। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করিলেন।

[বোখারী পর্ব ২৫ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ১৬৩৭; মুসলিম ৩৬/১৫, হাঃ ২০২৭] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/১৬. পান করার সময় পাত্রে নিঃশ্বাস ছাড়া ঘৃণিত এবং পাত্রের বাইরে তিনবার নিঃশ্বাস ছাড়া মুস্তাহাব।

১৩১৬, আবু কাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে।

[বোখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ১৫৩; মুসলিম ৩৬/১৬, হাঃ ২৬৭] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩১৭. সুমামাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আনাস [রাদি.]-এর নিয়ম ছিল, তিনি দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পাত্রের পানি পান করিতেন। তিনি ধারণা করিতেন যে, নাবী [সাঃআঃ] তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৫৬৩১; মুসলিম ৩৬/১৬, হাঃ ২০২৮] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/১৭. প্রথমে পানকারীর পর দুধ, পানি বা এ জাতীয় বস্তুর পাত্র ডান দিক থেকে ঘুরান মুস্তাহাব।

১৩১৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের এই ঘরে আগমন করিলেন এবং কিছু পান করিতে চাইলেন। আমরা আমাদের একটা বকরীর দুধ দোহন করে তাতে আমাদের এই কুয়ার পানি মিশালাম। অতঃপর তা সম্মুখে পেশ করলাম। এ সময় আবু বকর [রাদি.] ছিলেন তাহাঁর বামে, উমার [রাদি.] ছিলেন তাহাঁর সম্মুখে, আর এক বেদুঈন ছিলেন তাহাঁর ডানে। তিনি যখন পান শেষ করিলেন, তখন উমার বলিলেন, ইনি আবু বকর; কিন্তু রসূল  [সাঃআঃ] বেদুঈনকে তার অবশিষ্ট পানি দান করিলেন। অতঃপর বলিলেন, ডান দিকের ব্যক্তিদেরকেই [অগ্রাধিকার], ডান দিকের ব্যক্তিদের [অগ্রাধিকার] শোন! ডান দিক থেকেই শুরু করিবে। আনাস [রাদি.] বলেন, এটাই সুন্নাত, এটাই সুন্নাত, এটাই সুন্নাত।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ২৫৭১; মুসলিম ৩৬/১৭, হাঃ ২০২৯] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩১৯. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট একটি পিয়ালা আনা হল। তিনি তা হইতে পান করিলেন। তখন তাহাঁর ডান দিকে ছিল একজন বয়ঃকনিষ্ঠ বালক আর বয়স্ক লোকেরা ছিলেন তাহাঁর বাম দিকে। তিনি বলিলেন, হে বালক! তুমি কি আমাকে অবশিষ্ট [পানিটুকু] বয়স্কদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে? সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আপনার নিকট থেকে ফাযীলাত পাওয়ার ব্যাপারে আমি আমার চেয়ে অন্য কাউকে প্রাধান্য দিব না। অতঃপর তিনি তা তাকে প্রদান করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৩৫১; মুসলিম ৩৬/১৭, হাঃ ২০৩০] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/১৮. আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়া ও কোন লোকমা পড়ে গেলেও তাতে ময়লা লাগলে পরিষ্কার করে খেয়ে নেয়া মুস্তাহাব এবং হাত চেটে খাওয়ার পূর্বে মুছে ফেলা মাকরূহ।

১৩২০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন আহার করে সে যেন তার হাত না মোছে, যতক্ষণ না সে তা নিজে চেটে খায় কিংবা অন্যকে দিয়ে চাটিয়ে নেয়।

[বোখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ৫২ হাদীস নং ৫৪৫৬; মুসলিম ৩৬/১৮, হাঃ ২০৩১] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/১৯. খাবারের মালিক দাওয়াত দেয়নি এমন কেউ মেহমানের সঙ্গী হলে মেহমান কী করিবে? এবং মেজবানের জন্য উত্তম হল সঙ্গী ব্যক্তিকে খাবারের অনুমতি দেয়া।

১৩২১. আবু মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু শুআইব নামক এক আনসারী এসে তার কসাই গোলামকে বলিলেন, পাঁচ জনের উপযোগী খাবার তৈরী কর। আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-সহ পাঁচজনকে দাওয়াত করিতে যাই। তাহাঁর চেহারায় আমি ক্ষুধার চিহ্ন দেখিতে পেয়েছি। তারপর সে লোক এসে দাওয়াত দিলেন। তাহাদের সঙ্গে আরেকজন অতিরিক্ত এলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এ আমাদের সঙ্গে এসেছে, তুমি ইচ্ছে করলে একে অনুমতি দিতে পার আর তুমি যদি চাও সে ফিরে যাক, তবে সে ফিরে যাবে। সাহাবী বলিলেন, না, বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম।

[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ২০৮১; মুসলিম ৩৬/১৯, হাঃ ২০৩৬] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/২০. মেহমানের জন্য তার সাথে অন্য এমন লোককে নিয়ে যাওয়া বৈধ যার ব্যাপারে সে নিশ্চিত যে বাড়িওয়ালা এতে সন্তুষ্ট থাকিবে এবং যথাযথ মূল্যায়ন করিবে।

১৩২২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখিতে পেলাম। তখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে কোন কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দারুন ক্ষুধার্ত দেখেছি। তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন। আমার বাড়ীতে একটা বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ করলাম। আর সে [আমার স্ত্রী] যব পিষে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সেও তার কাজ শেষ করিল এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে ফিরে চললাম। তখন সে [স্ত্রী] বলিল, আমাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। তখন নাবী [সাঃআঃ] উচ্চৈঃস্বরে সবাইকে বলিলেন, হে পরিখা খননকারীরা! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরি করিবে না। আমি [বাড়ীতে] আসলাম এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবা-ই-কিরামসহ তাশরীফ আনলেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলিল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি। এরপর সে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের জন্য দুআ করিলেন। এরপর তিনি ডেকচির কাছে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এর জন্য বরকতের দুআ করিলেন। তারপর বলিলেন, রুটি প্রস্তুতকারিণীকে ডাক। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত বেড়ে দিক। তবে [উনুন হইতে] ডেকচি নামাবে না। তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহ্‌র কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেয়ে বাকী খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি আগের মতই টগবগ করছিল আর আমাদের আটার খামির থেকেও আগের মতই রুটি তৈরি হচ্ছিল।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৪১০২; মুসলিম ৩৬/২০. ২০৩৯] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩২৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু তাল্‌হা [রাদি.] উম্মু সুলায়ম্‌কে বলিলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর কন্ঠস্বর দুর্বল শুনিয়াছি। আমি তাহাঁর মধ্যে ক্ষুধা বুঝতে পেরেছি। তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? তিনি বলিলেন, হাঁ আছে। এই বলে তিনি কয়েকটা যবের রুটি বের করিলেন। অতঃপর তাহাঁর একখানা ওড়না বের করে এর কিয়দংশ দিয়ে রুটিগুলো মুড়ে আমার হাতে গোপন করে রেখে দিলেন ও ওড়নার অপর অংশ আমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন এবং আমাকে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট পাঠালেন। রাবী আনাস বলেন, আমি তাহাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময় তিনি কতক লোকসহ মাসজিদে ছিলেন। আমি গিয়ে তাঁদের সামনে দাঁড়ালাম। নাবী [সাঃআঃ] আমাকে দেখে বলিলেন, তোমাকে আবু ত্বলহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি, হাঁ। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি-হাঁ। তখন নাবী [সাঃআঃ] সঙ্গীদেরকে বলিলেন, চল, আবু ত্বলহা আমাকে দাওআত করেছে। আমি তাঁদের আগেই চলে গিয়ে আবু ত্বলহা [রাদি.]-কে নাবী [সাঃআঃ]-এর আগমনের কথা শুনলাম। এতদশ্রবণে আবু ত্বলহা [রাদি.] বলেন, হে উম্মু সুলাইম! নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে নিয়ে আসছেন। তাঁদেরকে খাওয়ানোর মত কিছু আমাদের নিকট নেই। উম্মু সুলায়ম [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূল  [সাঃআঃ] ই ভাল জানেন। আবু ত্বলহা [রাদি.] তাঁদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য বাড়ি হইতে কিছুদূর এগুলেন এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে দেখা করিলেন এবং নাবী [সাঃআঃ] আবু ত্বলহা [রাদি.]-কে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে আসলেন, আর বলিলেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো। তিনি যবের ঐ রুটিগুলি হাযির করিলেন এবং তাহাঁর নির্দেশে রুটিগুলো টুক্‌রা টুক্‌রা করা হল। উম্মু সুলায়ম ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে কিছু ঘি বের করে তরকারী হিসেবে উপস্থিত করিলেন। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] পাঠ করে তাতে ফুঁ দিলেন অতঃপর দশজনকে নিয়ে আসতে বলিলেন। তাঁরা দশজন আসলেন এবং রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়ে চলে গেলেন। অতঃপর আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তারা আসলেন এবং তৃপ্তি সহকারে রুটি খেয়ে চলে গেলেন। আবার আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন এবং পেটপুরে খেয়ে নিলেন। ঐভাবে উপস্থিত সকলেই রুটি খেয়ে তৃপ্ত হলেন। সর্বমোট সত্তর বা আশিজন লোক ছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৫৭৮; মুসলিম ৩৬/২০, হাঃ ২০৪০] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/২১. ঝোল খাওয়া জায়িয, কুমড়া খাওয়া মুস্তাহাব এবং দস্তরখানায় লোকেদের কতককে অন্যদের উপর প্রাধান্য দেয়া যদি মেজবান এটা অপছন্দ না করে।

১৩২৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক দরজী খাবার তৈরী করে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে দাওয়াত করিলেন। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সামনে রুটি এবং ঝোল যাতে লাউ ও গোশতের টুকরা ছিল, পেশ করিলেন। আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে দেখিতে পেলাম যে, পেয়ালার কিনারা হইতে তিনি লাউয়ের টুকরা খোঁজ করে নিচ্ছেন। সেদিন হইতে আমি সব সময় লাউ ভালবাসতে থাকি।

[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ২০৯২; মুসলিম ৩৬/২১, হাঃ ২০৪১] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/২৩. তাজা খেজুরের সাথে শসা খাওয়া।

১৩২৫. আবদুল্লাহ ইবনি জাফর ইবনি আবু ত্বলিব হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে তাজা খেজুর কাঁকুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দেখেছি।

[বোখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৫৪৪০; মুসলিম ৩৬/২৩, হাঃ ২০৪৩] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/২৫. একসাথে খাওয়ার সময় সাথীদের বিনা অনুমতিতে এক সাথে দুটো খেজুর বা দু টুকরা খাওয়া নিষিদ্ধ।

১৩২৬. জাবালাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা মাদীনায় কিছু সংখ্যক ইরাকী লোকের সাথে ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনি যুবাইর [রাদি.] আমাদেরকে খেজুর খেতে দিতেন। ইবনি উমার [রাদি.] আমাদের নিকট দিয়ে যেতেন এবং বলিতেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ব্যতীত এক সাথে দুটো করে খেজুর খেতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ২৪৫৫; মুসলিম ৩৬/২৫, হাঃ ২০৪৫] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/২৭. মাদীনাহ্‌র খেজুরের মর্যাদা।

১৩২৭. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সকাল বেলা সাতটি আজ্ওয়া [মাদীনায় উৎপন্ন উন্নত মানের খুরমার নাম] খেজুর খাবে, সে দিন কোন বিষ বা যাদু তার কোন ক্ষতি করিবে না।

[বোখারী পর্ব ৭৬ অধ্যায় ৫২ হাদীস নং ৫৭৬৯; মুসলিম ৩৬/২৭, হাঃ ২০৪৭] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/২৮. কামআ [এক প্রকার ছত্রাক যা খাওয়া যায়]-এর ফাযীলাত এবং চক্ষু রোগের ঔষধ হিসেবে তার ব্যবহার।

১৩২৮. সাঈদ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [আরবী] আল কামাআত [ব্যাঙের ছাতা] মান্না জাতীয়। আর তার পানি চোখের রোগের প্রতিষেধক।

[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৪৪৭৮; মুসলিম ৩৬/২৮, হাঃ ২০৪৯] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/২৯. কালো কাবাস [আরক গাছের ফল]-এর ফাযীলাত

১৩২৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে কাবাস [পিলু] গাছের পাকা ফল বেছে বেছে নিচ্ছিলাম। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, এর মধ্যে কালোগুলো নেয়াই তোমাদের উচিত। কেননা এগুলোই অধিক সুস্বাদু। সাহাবীগণ বলিলেন, আপনি কি ছাগল চরিয়েছিলেন? তিনি বলিলেন, প্রত্যেক নাবীই তা চরিয়েছেন।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ২৯ হাদীস নং ৩৪০৬; মুসলিম ৩৬/২৮, হাঃ ২০৫০] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/৩২. মেহমানের সম্মান ও তাকে [মেহমানকে] প্রাধান্য দেয়ার ফাযীলাত

১৩৩০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক নাবী [সাঃআঃ]-এর খেদমতে এল। তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের নিকট পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, কে আছ যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সাথে খাওয়াতে পার? তখন এক আনসারী সাহাবী {আবু ত্বলহা } বলিলেন, আমি। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর মেহমানকে সম্মান কর। স্ত্রী বলিলেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারী বলিলেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাহাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল তা উপস্থিত করিল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করিতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই সারারাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলেন, তখন তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ্ তোমাদের গত রাতের কাণ্ড দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করিয়াছেন।

وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأَولئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কৃপণতা হইতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত [সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৯]।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩৭৯৮; মুসলিম ৩৬/৩২, হাঃ ২০৫৪] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৩১. আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সফরে নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমরা একশ ত্রিশজন লোক ছিলাম। সে সময় নাবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের কারো সঙ্গে কি খাবার আছে? দেখা গেল, এক ব্যক্তির সঙ্গে এক সা কিংবা তার কমবেশী পরিমাণ খাদ্য আছে। সে আটা গোলানো হল। অতঃপর দীর্ঘ দেহী এলোমেলো চুলওয়ালা এক মুশরিক এক পাল বকরী হাঁকিয়ে নিয়ে এল। নাবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন। বিক্রি করিবে, না, উপহার দিবে? সে বলিল, না, বরং বিক্রি করব। নাবী [সাঃআঃ] তার নিকট হইতে একটা বকরী কিনে নিলেন। সেটাকে যব্‌হ করা হল। নাবী [সাঃআঃ] বকরীর কলিজা ভুনা করার আদেশ দিলেন। আল্লাহর কসম! একশ ত্রিশজনের প্রত্যেককে নাবী [সাঃআঃ] সেই কলিজার কিছু কিছু করে দিলেন। উপস্থিতদের হাতে দিলেন; আর অনুপস্থিত ছিল তার জন্য তুলে রাখলেন। অতঃপর দুটি পাত্রে তিনি গোশত ভাগ করে রাখলেন। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে গেল। আর উভয় পাত্রে কিছু উদ্বৃত্ত রয়ে গেল। সেগুলো আমরা উটের পিঠে উঠিয়ে নিলাম। অথবা রাবী যা বলিলেন।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ২৬১৮; মুসলিম ৩৬/৩২ হাঃ ২০৫৬] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৩২. আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আসহাবে সুফ্‌ফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। [একদা] নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ যার নিকট দুজনের আহার আছে সে যেন [তাঁদের হইতে] তৃতীয় জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজনকে সঙ্গে নিয়ে যায়। আবু বাক্‌র [রাদি.] তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবু বাকরের ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা [এই তিন জন সদস্য] ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি-না? আবু বাক্‌র [রাদি.] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] -এর ঘরেই রাতের আহার করেন, এবং ইশার সলাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সলাতের পর তিনি আবার [রাসূলুল্লাহ্[সাঃআঃ]-এর ঘরে] ফিরে আসেন এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ি ফিরলে তাহাঁর স্ত্রী তাঁকে বলিলেন, মেহমানদের নিকট আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] মেহমান হইতে। আবু বাক্‌র [রাদি.] বলিলেন, এখনও তাহাদের খাবার দাওনি? তিনি বলিলেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাহাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, [পিতার তিরস্কারের ভয়ে] আমি সরে গিয়ে আত্মগোপন করলাম। তিনি [রাগানি¦ত হয়ে] বলিলেন, ওরে বোকা এবং ভর্ৎসনা করিলেন। আর [মেহমানদের] বলিলেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি তা কখনই খাব না। আবদুর রহমান বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা লুক্‌মা উঠিয়ে নিতেই নীচ হইতে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে অধিক খাবার রয়ে গেলো। আবু বাক্‌র [রাদি.] খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখিতে পেলেন তা পূর্বের সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়েও বেশি। তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে বলিলেন, হে বানূ ফিরাসের বোন। একি? তিনি বলিলেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি! আবু বাক্‌র [রাদি.]-ও তা হইতে আহার করিলেন এবং বলিলেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ হইতেই হয়েছিল। অতঃপর তিনি আরও লুক্‌মা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নাবী [সাঃআঃ]-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর কাছেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে সন্ধি ছিলো তার সময়সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। [এবং তারা মাদীনায় আসে] আমরা তাহাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাহাদের প্রত্যেকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিলো। তবে প্রত্যেকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহ্ই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য হইতে আহার করেন। [রাবী বলেন] কিংবা আবদুর রহমান যেভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৯ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৬০২; মুসলিম ৩৬/৩২, হাঃ ২০৫৭] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/৩৩. খাদ্য অল্প হলেও ভাগ করে খাওয়ার ফাযীলাত এবং দুজনের খাবার তিনজনের বা অনুরূপ কমলোকের খাবার বেশী জনের জন্য যথেষ্ট হওয়ার বর্ণনা।

১৩৩৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।

[বোখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৩৯২; মুসলিম ৩৬/৩৩, হাঃ ২০৫৮] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/৩৪. মুমিন খায় এক পেটে, কাফির খায় সাত পেটে।

১৩৩৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন এক পেটে খায় আর কাফির অথবা মুনাফিক সাত পেটে খায়।

[বোখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৫৩৯৪; মুসলিম ৩৬/৩৪, হাঃ ২০৬০] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৩৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক খুব বেশী পরিমাণে আহার করত। লোকটি মুসলিম হলে অল্প আহার করিতে লাগল। ব্যাপারটি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ মুমিন এক পেটে খায়, আর কাফির খায় সাত পেটে।

[বোখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৫৩৯৭; মুসলিম ৩৬/৩৪, হাঃ ২০৬০] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬/৩৫. খাবারের দোষ বর্ণনা না করা।

১৩৩৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] কখনো কোন খাবারকে মন্দ বলিতেন না। রুচি হলে খেতেন না হলে বাদ দিতেন।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬৩; মুসলিম ৩৬/৩৫, হাঃ ২০৬৪] Lu lu wal marjan -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “Lu Lu Wal Marjan পানীয় মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা”

Leave a Reply