সহীহ ইবনে খুজাইমা Sahih Ibn Khuzaimah

সহীহ ইবনে খুজাইমা Sahih Ibn Khuzaimah

Arabic Contents

Hadis Bub RangeHadis Number Range
1-100
101-200
201-300
301-400
401-500
501-600
601-700
701-800
801-900
901-1000
1001-1100
1101-1200
1201-1300
1301-1400
1401-1500
1501-1600
1601-1700
1701-1800
1801-1900
1901-2000
2001-2100
2101-2200
2201-2300
2301-2400
2401-2500
2501-2600
2601-2700
2701-2800
2801-2900
2901-3000
3001-3100

সুচিপত্র

সহীহ ইবনে খুজাইমা ভূমিকা …………………………………………….. ১-৫
প্র ম অধ্যায়: ইব্ন খুযায়মাহ্ (র)-এর সমসাময়িক অবস্থা ……………………….. ৬-৭১
প্র ম অনুচ্ছেদ: রাজনৈতিক অবস্থা ৬-৩১
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: সামাজিক অবস্থা ৩২-৪০
তৃতীয় অনুচ্ছেদ: শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অবস্থা ৪১-৭১
দ্বিতীয় অধ্যায়: ইব্ন খুযায়মাহ্ (র)-এর জীবন পরিμমা ………………. ৭২-১২৭
নাম ও বংশ পরিচয় ৭৩
জন্ম ও জন্মস্থান ৭৪
বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন ৭৫
হাদীস অন্বেষণে দেশ ভ্রমণ ৭৬-৭৮
ইব্ন খুযায়মাহ্ (র)-এর জ্ঞান ৭৮-৮০
স্মৃতি শক্তি ৮০
স্বভাব-চরিত্র ৮০-৮১
তাক্ওয়া ৮১-৮২
শিক্ষকবৃন্দ ৮২-১১০
ছাত্রবৃন্দ ১১০-১২১
রচনাবলী ১২১-১২৪
ইন্তিকাল ১২৫
তাঁর সম্পর্কে মনীষীগণের অভিমত ১২৫-১২৭
তৃতীয় অধ্যায়: সহীহ ইব্ন খুযায়মাহ্ সংকলনের শর্তাবলী ও সংকলন পদ্ধতি ১২৮-১৭৩
প্র ম অনুচ্ছেদ: সহীহ ইব্ন খুযায়মাহ্ সংকলনের শর্তাবলী ১২৯-১৩৫
দ্বিতীয় অনুচ্ছে: সংকলন পদ্ধতি ১৩৬-১৭৩

উপসংহার …………………………………………………………………………… ৫০২-৫০৪
গ্রন্থপঞ্জী ………………………..

দ্বিতীয় অধ্যায়
মুহাম্মাদ ইব্ন খুযায়মাহ্ (র.)-এর জীবনী নাম ও বংশ পরিচয়

ইব্ন খুযায়মাহ্১ (র.)-এর প্রকৃত নাম মুহাম্মাদ, উপনাম আবূ বকর২ ইমামুল-আয়িম্মাহ উপাধীতে বেশী খ্যাতি লাভ করেন।৩ তাঁর পিতার নাম ইব্ন ইসহাক, বংশ পরিμমা হলো, মুহাম্মাদ ইব্ন ইসহাক ইব্ন খুযায়মাহ্৪ ইব্নুলমুগীরাহ ইব্ন সালিহ ইব্ন বকর আস্-সুলামী৫ আন্-নায়শাপূরী৬ আশ্-শাফি‘ঈ৭।৮

জন্ম ও জন্মস্থান
ইব্ন খুযায়মাহ্ (র.) ২২৩ হিজরীর সফর মাস মোতাবিক ৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে নায়শাপূরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে
জন্মগ্রহণ করেন।৯ তাঁর জন্ম তারীখ নিয়ে জীবনীকারবৃন্দ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তিনি স্বীয় পরিবারেই লালিতপালিত
হন।১০

বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন

ইব্ন খুযায়মাহ্ (র.) শৈশবকাল পিতৃগৃহে অতিবাহিত করেন। তার শৈশবকালীন অবস্থার μমালোচনা সংμান্ত তথ্য বিশদভাবে জানা যায়নি। তবে তিনি পিতৃ-মাতৃ μোড়ে অত্যন্ত ¯েড়বহমায়া-মমতায় নিবিড় পরিবেশে প্রতিপালিত হন। এ পরিবারের বেশীর ভাগ সদস্যই ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিদগ্ধ পণ্ডিত। তারা জ্ঞানচর্চার পথে সিদ্ধহস্ত ভূমিকা পালন করতঃ প্রবৃদ্ধি ও প্রসারে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে কুণ্ঠবোধ করতেন না। এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ইব্ন খুযায়মাহ্ (র.)-কে জ্ঞান অন্বেষণে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। তৎকালীন যুগে হাদীছ অভিজ্ঞানের ব্যাপক প্রচার ও
প্রসার ঘটলে তিনি জীবনের প্র মভাগেই এ প্রকার অভিজ্ঞানের বুৎপত্তি অর্জনে আগ্রহী হয়ে উঠেন।১১

তিনি প্রাথমিকভাবে নায়সাপূরের নিজ গৃহকে পাঠশালা হিসেবে গ্রহণ করেন। পরিবারের যে সকল লোকজন হাদীছ অভিজ্ঞানে অভিজ্ঞ তাদের নিকট থেকে হাদীছ শ্রবণ করতে থাকেন।১২
হাদীছ শাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি নিজ শহরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করারপর বিভিনড়ব শহর পরিভ্রমণ শুরু করেন।
এ লক্ষ্যে তিনি সর্বপ্র ম কুতাইবাহ্ ইব্ন সা‘দ১৩ (মৃত ২৪০ হি.)-এর নিকট গমন করার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা
করেন। তাঁর পিতা তাকে বলেন, ‘প্র মে তুমি কুর’আন মুখস্থ করো, তারপর তোমাকে অনুমতি দিব’। ইব্ন খুযায়মাহ্
(র.) বলেন, ‘আমি তখন কুর’আন মুখস্থ করলাম (এরপর অনুমতি প্রার্থনা করলে) আমার পিতা আমাকে বললেন,
“আরও কিছু দিন অপেক্ষা করো, যতদিন না তুমি নামাযে পূর্ণ কুর’আন তিলাওয়াত করতে পারো”। ইব্ন খুযায়মাহ্
বলেন, ‘আমার খুবই ইচ্ছা ছিল বিখ্যাত হাদীছ বিশারদ হযরত কুতাইবা (র.)-এর নিকট থেকে হাদীছের শিক্ষা গ্রহণ করবো। তাই আবার অনুমতি প্রার্থনা করলাম। অতপর তিনি আমাকে অনুমতি প্রদান করলেন।১৪ আমি তখন মারভে
গিয়ে মুহাম্মাদ ইব্ন হিশাম থেকে হাদীছ শ্রবণ করলাম। ইত্যবসরে কুতাইবাহ্ ইব্ন সা‘দ মৃত্যু বরণ করলেন।১৫
তখন ছিলো ২৪০ হিজরী সন। এরপর তিনি ২৪০ হিজরী সনে জ্ঞানার্জনের জন্য বিভিনড়ব শহর পরিভ্রমণ করতে বের
হন এবং মুহাদ্দিছগণের নিকট থেকে হাদীছ শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর ভ্রমণ ইসলামী বিশ্বের প্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
বিভিনড়ব দেশ পরিভ্রমণ করে তিনি অধিক সংখ্যক হাদীছ শ্রবণ করেন, তারপর সেগুলো পরিমার্জন করেন এবং লিপিবদ্ধ
করেন। তিনি সে সময়ে খুরাসানে একজন বড় মুহাদ্দিছ হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। ফলে ইমামাত ও হাদীছ
সংরক্ষণের সিলসিলা তাঁর পর্যন্ত পৌঁছে।১৬

খুরাসানের রাজনৈতিক অবস্থা


ইব্ন খুযায়মাহ্ (র)-এর জন্মের সমসাময়িক খুরাসানের গভর্ণর ছিলেন ‘আবদুল্লাহ ইবন ত্বহির। মুহাম্মাদ
ইব্ন কা¡ সিম নিজেকে খুরাসানের ভাবি গভর্ণর মনে করে আবদুল্লাহ ইব্ন ত¡ি হরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা
করে। গভর্ণর এ বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন। তালিকান অঞ্চলে বেশ ক’টি যুদ্ধ
সংঘটিত হয়। প্ের ত্যকটি যুদ্ধে মুহাম্মাদ ইব্ন কা¡ সিম উলূভী পরাস্ত হয়।১৩৯ তাবারিস্তানের রঈস মাযইয়ার
ইব্ন কারিন খুরাসানের গভণর্ েরর অধীনে ছিলেন। তিনি তাকে খিরাজ দিতেন। কোন কারণে মাযইয়ার ও
‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বহিরের মধ্যে অসন্তেুাষ সৃষ্টি হয়। মাযইয়ার ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বহিরের কাছে খিরাজ
পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়।১৪০
এ খবর আফশীন জানতে পেরে খুরাসানের গভর্ণর না হওয়ার পুরাতন কষ্ট তাকে পেয়ে বসল। আফশীন
‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বহিরের বিরুদ্ধে মাযইয়ার কে প্ের রাচিত করে একটি চিঠি পাঠালে, মাযইয়ার ত¡ি হরের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে। ত্বহির এ সংবাদ শুনে আপন চাচা হাসান ইব্ন হুসাইনকে একটি
বাহিনী দিয়ে এ বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। খলীফা মু‘তাসিম বিল্লাহর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে
তিনি ও ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বহিরের সাহায্যার্থে বাহিনী প্রেরণের ফরমান জারী করেন। কিন্তু আফশীনকে
সেদিকে গমনের নির্দেশ দেয়া থেকে বিরত থাকেন। ফলে মাযইয়ার ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বাহিরের নিকট নীত
হয়।১৪১
২৩০ হিজরী সনে খুরাসানের গভর্ণর ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বাহির ইন্তিকাল করেন। তার অন্তিম ইচ্ছানুসারে
খলীফা ওয়াছিক বিল্লাহ ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বাহিরের পুত্র ত্বহির ইব্ন ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বহিরকে খুরাসানের
গভর্ণর পদে সমাসীন করেন।১৪২
২৪৮ হিজরীতে ত্বাহির ইব্ন ‘আবদুল্লাহ ইন্তিকাল করেন। খলীফা মুস্তাইন বিল্লাহ ইব্ন ত্বহিরকে তাঁর স্থলে
খুরাসানের গভর্ণর নিযুক্ত করেন।১৪৩
২৫৩ হিজরীতে খুরাসানের গভর্ণর মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত¡ি হর বাগদাদে ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুর
পূর্বে তিনি তার পুত্র ‘উবায়দুল্লাহকে তার স্থলে খুরাসানের গভর্ণর নিয়োগের ওসীয়ত করে যান। কিন্তু তার
অপর পুত্র ও ‘উবায়দুল্লাহ্ ভাই ত্বহির ইব্ন মুহাম্মাদ তার বিরোধিতা করেন। উভয়ের মধ্যে জানাযার জামা‘আতেই সংঘর্ষ দেখা দেয়। অবশেষে পিতার অন্তিম ইচ্ছানুসারে ‘উবায়দুল্লাহ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন
বলে স্বীকৃত হয়।১৪৪ কিন্তু শেষ পর্যন্ত খলীফা মু‘তাজ্জ সুলাইমান ইব্ন ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ত্বহিরকেই তার
স্থলাভিষিক্ত করেন।১৪৫
ই‘আকূব ইব্ন লাইস পর্যায়μমে খুরাসান থেকে ত্বহির বংশীয়দেরকে বহিস্কার করে তার নিজের রাজত্ব গড়ে
তোলেন। এতকাল ত্বহির ইব্ন হুসাইনের বংশধররাই একাধারে খুরাসানে রাজত্ব চালিয়ে আসছিল।১৪৬ই‘আকূবইবন লাইস সিজিস্তান আসেন, তারপর হিরাত থেকে খুরাসান পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে খুরাসানের বিভিনড়ব
নগরীতে তিনি শাসন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। ২৫৯ হিজরীতে খুরাসানের রাজধানী নাইশাপুরে প্রবেশ করে,
ত্বহিরী শাসক মুহাম্মাদ ইব্ন ত্বহিরকে বন্দী করেন।১৪৭ ত্বহিরীয়দেরকে সেখান থেকে বহিস্কার করেন।
২৬০ হিজরীতে হাসান ইব্ন যায়দ ‘উলুভী দায়লাম থেকে ফৌজ নিয়ে ই‘আকুবের উপর হামলা চালায়। কিন্তু
হাসান পরাস্ত হয়।১৪৮
ই‘আকূব ইব্ন লাইস সাফার খুরাসান দখল করে ক্ষ্যান্ত না হয়ে রাজধানী দখলের প্ের চষ্টায় স-সৈন্যে অগ্রসর
হয়। এ খবর জানতে পেরে খলীফা মু‘তামিদ তাঁর ভাই মুওয়াফ্ফাককে সাফারকে প্রতিরোধ করতে পাঠান।
ই‘আকূব ইব্ন লাইস তার কাছে পরাস্ত হয়।১৪৯
ই‘আকূব ইব্ন লাইস সাফারের শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। খুরাসান ও ফারিসের বিভিনড়ব পূর্বাঞ্চলীয়
প্রদেশসমূহ তার দখলে চলে যায়। খলীফা বাধ্য হয়ে তাকে খুরাসানের শাসক হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
দেয়ার প্রচেষ্টারত অবস্থায় ২৬৫ হিজরীতে ই‘আকূব ইবন লাইস তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। খলীফা তাকে
খুরাসান, ইস্পাহান, সিন্ধু ও সাহিস্তানের গভণর্ েরর সনদ প্রদান করেন।১৫০
কিন্তু খুরাসানে তখনো ত¡ি হরীয় বংশের সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের অভাব ছিল না। তাদের একজন ছিল আবূ
তালহা এবং অপরজন ছিল রাফি‘ ইবন হারসানা। তারা হুসাইন ইব্ন ত্বহিরের নামে লোকজনকে সংগঠিত
করে শহর জনপদ দখল করতে এবং নিজেদের রাজত্ব গড়ে তুলতে প্রয়াস পায়। এ কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য বুখারার শাসক ইসরা’ঈল ইব্ন আহমাদ ইব্ন আহমাদ ইব্ন আসাদ ইব্ন সামানের সাহায্য-সহযোগিতা
কামনা করে। তখন খুরাসানে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করতে থাকে।১৫১
২৬৮ হিজরীতে রাফি‘ ইবন হারসামা ‘আমর ইব্ন লাইস থেকে নায়শাপূর জয় করেন।১৫২
২৭১ হিজরীতে খলীফার ভাই মুত্তয়াফ্ফাক নিজের পক্ষ থেকে মুহাম্মাদ ইব্ন ত¡ি হরকে খুরাসানের শাসক
নিয়োগ দেন। ‘আমর ইব্ন লাইস সাফারকে খলীফা গভর্ণরী পদ তেকে পদচ্যুত করেন। মুহাম্মাদ ইব্ন ত্বহির
বাগদাদে অবস্থান করায় রাফি‘ ইব্ন হারসামাকে তার নায়িব রূপে নিয়োগ প্রদান করেন।১৫৩
২৭৯ হিজরীতে ‘আমর ইব্ন লাইসকে চুড়ান্তভাবে গভর্ণর রূপে নিয়োগ করা হয়।১৫৪ ২৮৩ হিজরীতে রাফি‘
ইব্ন হারসামা ‘আমর ইব্ন লাইসের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু এ যুদ্ধে তিনি প্রাণ হারান। ‘আমর ইব্ন
লাইস ২৮৭ হিজরীতে ইসমা‘ঈল সামানীর কাছে বন্দী হয়ে সামারকন্দের কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ২৮৮
হিজরীতে তাকে বাগদাদে পাঠিয়ে দেয়া হয়।১৫৫ এমনি সব পরিস্থিতিতের মধ্য দিয়ে ইব্ন খুযায়মাহ্ খুরসানে
তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন।

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – সামাজিক অবস্থা


মানুষ সামাজিক জীব।১৫৬ বিভিনড়ব জাতি ও গোষ্ঠির সমাহারই সমাজ।১৫৭ সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ তার অস্তিত্ব
টিকিয়ে রাখতে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে।১৫৮ ইব্নুল-জাওযী (মৃত ৫৯৭ হিজরী) বলেন,
‘আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে বিভিনড়ব জাতি ও শ্রেণীর লোকদের বসবাস ছিল, ‘আরবী, পারসিক, তুর্কী, নিবতী,
আর্মেনীয়, জার্কাস, কুর্দী, জার্জিয়ানী ও বার্বার প্রভৃতি।১৫৯ উমাইয়া শাসনামলে প্রশাসনিক ও সামাজিক
উভয়ক্ষেত্রে ‘আরবদের প্রাধান্য ছিল বেশী।১৬০ ‘আব্বাসীয় শাসনামলের প্র ম দিকে খুরাসানীদের প্রাধান্য
ছিল বেশি। প্র ম আবুল ‘আব্বাস আস্-সাফফাহ্ এর মন্ত্রী ছিলেন খালিদ বারমাকী। খালিদের ইন্তিকালের
পর তার পুত্র ইয়াহ্ইয়া বারমাকী আযারবাইযানের গভর্নর নিযুক্ত হন। এমন কি তারা ‘আব্বাসীয়
খিলাফাতের সবোর্” চ মর্যাদার জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।১৬১
কিন্তু সপ্তম ‘আব্বাসী খলীফা আল মু’তাসিম বিল্লাহর শাসনামলে (২১৮-২২৭ হিজরী/৮৩৩-৮৪২ খ্রিস্টাব্দ)
তুর্কীদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। তিনি বুখারা, সামারকন্দ, তুর্কীস্থান, মারওয়াউন্-নাহার, ফারাগানা ও
আশরুসানাহ্ প্রভৃতি এলাকা থেকে তুর্কীদেরও সেনাবাহিনীতে ভর্তি করান।১৬২ তিনি এত সংখ্যক তুর্কীকে ফৌজে ভর্তি করেন এবং তাদেরকে এত গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে অধিষ্ঠিত করেন যে,
সংখ্যা ও গুরুত্বের দিক থেকে তারা রীতিমত ‘ইরানীদের প্রতিদ্ব›দ্ধী হয়ে দাঁড়ায়। ‘আরব সৈন্যরা সংখ্যায়
হ্রাস পেতে পেতে কেবল মিসরীয় এবং ইয়ামানীরাই খলীফার বাহিনীতে অবশিষ্ট থাকে।১৬৩
এমন সামাজিক পরিস্থিতিতেই (২২৩-৩১১ হিজরী) ইব্ন খুযায়মাহ্ জন্মগ্রহণ করেন। পরবতীর্ েত এ তূর্কীরাই
স্বয়ং খলীফাদের পতনের কারণ হয়। তুর্কীরা ছিল মরুচারী, দৈহিক ক্ষমতার অধিকারী, সাহসী, অভিজ্ঞ
তীরন্দায এবং রণপ্রান্তরে বীর যোদ্ধা।১৬৪ তুর্কীদের চেহারা ছিল আকর্ষণীয় এবং লাবন্যময়। খলীফাদের রাজ
প্রাসাদে, ঐশ্বর্যশালী ও ধনীদের ঘরে তুর্কী দাসীরা অধিক হারে স্থান পায়। এ যুগের অধিকাংশ খলীফাই দাসী
মায়েদের সন্তান ছিলেন।১৬৫ জীবিকার্জনের জন্য একশ্রেনীর মানুষ দাস-দাসীর ব্যবসা করতো। তুর্কীস্থান,
মধ্য আফ্রিকা, ইরান, স্পেন ও ফ্রান্সের বিভিনড়ব এলাকা থেকে দাস-দাসী আমদানী করা হতো।১৬৬ তারা
গায়িকা, নর্তকীদের উপপতড়বী হিসেবে ব্যবহার করতো। নাচ-গান শিক্ষার প্রতি তাদের ঝোঁক ছিল বেশী।
তখন সুন্দরী ও সুশিক্ষিত দাসীদের মর্যাদা ছিল বেশী। আর তাই মনিবরা দাস-দাসীদের শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি
মনোযোগ দিতো। এ ধরনের শিক্ষিত দাসীর মর্যাদা ও মুল্য অন্য দাসীদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশী
ছিল।১৬৭
দাস-দাসীর সংখ্যা এতই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, খলিফা মুতাওয়াক্কিলের হেরেমে ৪০০০ দাসীর সমাবেশ
ঘটেছিল।১৬৮ খলীফা মুকতাদিরের প্রসাদে ১১,০০০ খোজা μীতদাস রক্ষিত ছিল।১৬৯ উম্মু ওয়ালাদের মর্যাদা
ছিল সাধারন দাসীদের চেয়ে অনেক গুণ বেশী।১৭০ তৎকালিন সমাজে অধিকহারে তূর্কী, ফার্সী এবং রোমীয়
দাসীদের আগমনের ফলে পুরুষরা নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি উদাসীন এবং দাসীদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।১৭১ ‘আরবীয়দের সাথে অনারবদের রক্তের মিশ্রন
ঘটে, নিরঙ্কুশ ‘আরবীয় আভিজাত্য লোপ পায়। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ কারদ ‘আলী বলেন,
‘আব্বাসীয়রা নিজেদের মধ্যে বিদেশী রক্তের অনুপ্ের বশ ঘটিয়ে, তাদের ‘আরবী রক্ত নষ্ট করে দেয়। তারা
নিজস্ব জাতি গোষ্ঠিকে ভুলে যায় এবং শুধুমাত্র সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যদের সাহায্য নিয়ে স্বজাতীয়দের
মনোভাব নষ্ট করে দেয়। ফলশ্রুতিতে অনুপ্রবেশকারীরা মূলের মর্যাদা লাভ করে আর মূল প্রত্যাখাত হয় এবং
মহৎ সম্মানী ব্যক্তি বর্গ লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হতে থাকে।১৭২
‘আরব জাতির জীবন যাত্রার মান বিবেচনায় জনগণকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। প্র মত: খাসসা বা
বিশেষ শ্রেণী বা অভিজাত শ্রেণী। এ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত ছিলেন খলীফার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, উযীর,
সেনাপতি ও রাজকীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা খলীফার সাথে সাক্ষাতের জন্য বাবুল-খাসসা নামে বিশেষ ফটক
ছিল যে ফটক দিয়ে তারা খলীফার সাথে সাক্ষাত করতো। তাদের জন্য বিশেষ রানড়বাঘর,বিশেষ আস্তাবল
ছিলো। দ্বিতীয়ত: ‘আম্মা বা সাধারণ শ্রেণী। যাদের অন্তর্ভূক্ত ছিল ‘আলিম, ব্যবসায়ী, শিল্পী, কৃষিজীবি, সেনাবাহিনী,
দাস-দাসী প্রভৃতি। তাদের খলীফার সাথে সাক্ষাতের জন্য সাধারণ ফটক, সাধারণ রানড়বাঘর ও সাধারণ
আস্তাবল ছিলো।১৭৩
‘আব্বাসীয় যুগে মুসলমানগণ শী‘আহ, সুনড়বী ও বিভিনড়ব ধর্মীয় দল উপদলে বিভক্ত হওয়ার ফলে ইসলামী
সমাজ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এ বিরোধ শুধুমাত্র শী‘আ-সুনড়বীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং এটি
পরবর্তীতে সুনড়বীদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। হাম্বলীরা খুব শক্তিশালী ধর্মীয় মতবাদ হিসেবে
প্রতিষ্ঠালাভ করে। তারা ৩১০ হিজরীতে মুহাম্মদ ইবন জারীর আত্-ত্ববারীকে সমাহিত করতে বাধা সৃষ্টি
করে। কারণ তিনি اختلاف الفقھاء নামে গ্রন্থ সংকলন করেন, যেখানে আহমাদ ইব্ন হা¤া^ লকে
ফকীহগণের আলোচনার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেন নি।১৭৪ খলীফা মুকতাদির বিল্লাহর খিলাফাতকালে ৩১৮ হিজরী সনে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ১৭৫
-“হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাক্বামে মাহমূদে পৌঁছাবেন”-এর ব্যাখ্যা নিয়ে সুনড়বীদের সাথে
হাম্বালীদের মত বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে হাম্বালীরা সুনড়বীদের সাথে এ সংμান্ত বিরোধের সমাধানকল্পে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়।১৭৬ প্রশেড়ব খলীফা মু’তাসিম বহুসংখ্যক ‘আলীম ও জ্ঞানী-গুণীকে নানারূপ কষ্ট দিয়েছেন। এ প্রশেড়ব
হযরত আহমাদ ইবন হা¤া^ লকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালান ।১৭৭
খলীফা ওয়াছিক বিল্লাহ خلق قرأن প্রশেড়ব আহমাদ ইবন নাসরকে১৭৮ গ্রেফতার করে নিজ হাতে হত্যা
করেন।১৭৯ খলীফা মুতাওয়াক্কিল ধর্মীয় ‘আকীদার পার্থক্যের কারণে স্বীয় পুত্র মুনতাসিরের উত্তরাধিকারী
বাতিল করে পুত্র ম‘ুতাজুকে উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন।১৮০
‘আব্বাসীয় খলীফাদের কেউ কেউ মহিলাদের ক্ষমতায়ন পছন্দ করতেন, আবার কেউ কেউ পছন্দ করতেন
না। বিভিনড়ব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজ-কর্মের ব্যাপারে মহিলাদের সাথে পরামর্শের ক্ষেত্রেও তাঁরা নিরুৎসাহ বোধ
করতেন। ২৩২ হিজরী থেকে নারীরা ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। কিছু কিছু নারী রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে
বিশেষ মর্যাদায় আসীন ছিলেন। আল মু‘তাসিম বিল্লাহ্র (২১৮-২৩২) সময় ‘উবায়দা আত্-তুনবুরিয়া নামক
এক রমনী তার সৌন্দর্য এবং সঙ্গীত প্রীতির জন্য জাতীয় ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হয়েছিলেন।১৮১ খলীফা
মুতাওয়াক্কিলের সময়ে ফাযলাহ নামক এক মহিলা কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।১৮২ খলীফা আল
মু‘তাজ্জ-এর মাতা কাবীহা, আল-মুকতাদিরের মাতা সাইয়্যেদা ও তার মহিলা প্রতিনিধি সুমাল উম্মু মূসা
প্রমুখ খ্যাতি অর্জন করেন। খলীফা আল-মুকতাদির বিল্লাহ্ (২৯৫-৩২০)-এর মাতা সাইয়্যেদার ব্যাপক
কর্তৃত্ব ও প্রভাব ছিল।১৮৩ তিনি খলীফার থেকেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বেশী প্রয়োগ করতেন।১৮৪ রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে তাঁর অযথা হস্তক্ষেপের কারণে আব্বাসী খিলাফত দুর্বল হয়ে পড়ে।১৮৫ এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ হল, উযীর ‘আলী বিন ‘ঈসা তার নিকট একটি পত্র প্রেরণ করেন, যে পত্রে উযীর রাষ্ট্রের অথর্ ৈনতিক কর্মকাণ্ডে তার বিরুদ্ধে
আরোপিত অভিযোগগুলো নির্দোষ প্রমানের চেষ্টা করেন এবং নিজেকে সংশোধনের আশ্বাস দেন। তারপরও
পদ থেকে পদচ্যূত হন।
ইব্নুল-আছীর বলেন, উকিল উম্মে মূসা কিহিরমানাহ হেরেম ও তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের খোরাক, পোশাক ও
প্রয়োজনীয় বিষয় আলোচনার জন্য উযীরের বাসভবনে আগমন করেন। উযীর তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁর
ব্যক্তিগত সহকারী উযীর জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। উম্মে মূসা μোধান্বিত হয়ে বাড়ী ফিরে
যান। উযীর ঘুম থেকে উঠে তার সহকারী ও পুত্রকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য প্রেরণ করলেও তিনি
তা গ্রহণ করেননি বরং খলীফা আল-মুকতাদিরের দরবারে প্রবেশ করে উযীরের বিরুদ্ধে এমন কতিপয়
অভিযোগ করেন, ফলে উযীর গ্রেফতার হয়ে পদচ্যূত হন।১৮৬
রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে সায়্যেদার হস্তক্ষেপের কারণে ‘আব্বাসীয় খিলাফাত দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন তার মহিলা
প্রতিনিধি উম্মু মূসার আবেদনে সাড়া না দেয়ার কারণে উযীর ‘আলী ইবন ‘ঈসাকে গ্রেফতার করায় প্রতিভা ও
সঠিক রাজনীতি হতে খিলাফাত উপকৃত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া সায়্যেদার প্রতিনিধি সুমালকে
সাহিবাতুন মাযালিম নিয়োগ করায় জনগণ খিলাফাতের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয় এবং শাসকদেরকে ঘৃণার দৃষ্টিতে
দেখতে থাকে।১৮৭ ‘আরব্য উপন্যাসে ‘আব্বাসীয় খিলাফাতের পতনের যুগে উপপতড়বীর সংখ্যাধিক্য, মানুষের
বিলাস প্রিয়তা এবং নারীর নৈতিক অধঃপতনের পরিচয় পাওয়া যায়।১৮৮ মদ্যপান সমাজের প্রায় সর্বস্তরে প্রচলিত ছিল।১৮৯ মদ্যপান ইসলাম বিরোধী হলে ও প্রশাসনিকভাবে প্রায়শই
এটাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয় নাই। মদের প্রশংসায় বিভিনড়ব কবিতা রচনা এবং كتابالاغانى গ্রন্থেও
‘আরব্য উপন্যাসে মাতলামির যে সকল কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তা হতে ‘আববাসীয় যুগে মদ্যপানের বি¯ৃÍি ত
এবং পরিমাণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায়।১৯০ এ প্র া পারস্য রাজ দরবারে উৎপনড়ব হয়ে মুসলিম
খলীফাদের দরবারের মাধ্যমে সমাজের সর্ব¯Íে র প্রসার লাভ করেছিল। অনেকে ধর্মীয় বিধি পালনের নিমিত্ত
আঙ্গুর রস ও বাদাম প্রভৃতি হতে উৎপনড়ব নাবিস পান করত।১৯১ ইব্ন খালদূন বলেছেন যে, খলীফা হারূন
এবং মামুন এ নাবিস পান করতেন। সাময়িক আনন্দমেলা এবং গানের আসর সমাজে বহুল প্রচলিত
ছিল।১৯২মূলত, মাতাল মেলাই এর প্রকৃত নাম। এ সমস্ত মেলায় যে সকল গায়িকা অংশগ্রহণ করত, তাদেও প্রভাবে তৎকালীন যুবকদের যে নৈতিক পদস্খলন দেখা দিয়েছিল এর পরিচয় সে যুগের সাহিত্যে স্পষ্টভাবে
পাওয়া যায়।১৯৩
তখনকার সমাজে বিবাহের অনুষ্ঠান বিশেষভাবে উদযাপিত হতো এবং তাতে লোকজন অংশগ্রহণ করে
আনন্দ হৈহুল্লা করতো ও দেখা-সাক্ষাতের ফলে পারস্পরিক সর্ম্পক সূ-দৃঢ় হতো। অভিজাত শ্রেণীর বিবাহতে
প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হতো। বিবাহের অনুষ্ঠানে অনেক অপব্যয় করা হতো। মানুষ দেখানোর উদ্দেশ্যে
জাঁকজমক পূর্ণ করা হতো। অনেক উপঢৌকন পাওয়া যেতো। ১৯৪
মিটিং বা সভা সমাবেশ ভাবগাম্ভীর্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে হতো। ৩০৫ হিজরী সনে ‘আব্বাসীদের সাথে সন্ধি
চুক্তির জন্য রোম সম্রাটের দূত বাগদাদে আগমন উপলক্ষ্যে খলীফা মুকতাদির বিল্লাহ বিশাল শোভাযাত্রা ও
অভ্যর্থনার আয়োজন করেন। অস্ত্রে সজ্জিত ১৬০ হাজার সেনা বাবুস্-সিয়াসিয়া থেকে সিংহাসন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে
থাকে। তাদের পেছনে থাকে ৭ হাজার খাদিম ও ৭ শত হাজিব। সিংহাসনের দেয়ালে রেশমের ৩৮ হাজার
পর্দা ঝুলানো ছিল, ২২ হাজার কার্পেট বিছানো ছিল। প্রাসাদের সম্মুখের দিক ৭ শত হিংস্র প্রাণী আবদ্ধ
ছিল।১৯৫ পরিষ্কার পরিচ্ছনড়বতা ঈমানের অঙ্গ। ‘আব্বাসীয় শাসনামলে গোসল করা এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে,
শুধু প্ের য়াজনবোধেই নয়, বরং তা আমোদ-প্ের মাদ ও বিলাসিতার বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। বাগদাদ নগরীতেই
অসংখ্যা সড়বানাগার বিদ্যমান ছিল। আল খত্বীবের বর্ণনানুযায়ী আল মুকতাদির বিল্লাহর শাসনামলে বাগদাদে
২৭০০০ হাম্মামখানা ছিল। এই সকল সড়বানাগারে গরম ও শীতল উভয় প্রকারের পানিই সরবরাহ করা হতো।
গোসলখানাগুলো মধ্যবর্তী কামরায় ছিল, যার চারপার্শ্বে দেয়াল দ্বারা বিভক্ত ছিল। মধ্যবর্তী কামরার উপরিভাগে
গম্বুজ আকৃতিতে ছাদ ছিল যার ফলে গম্বুজের নিচে বড় বড় ছিদ্র ছিল, যা দিয়ে বাইরের আলো
গোসলখানাগুলোতে আসতো। আর গোসল খানার চার পার্শ্বের কামরাগুলো সাধারণত আমোদ-প্রমোদের জন্য
ব্যবহার হতো।১৯৬
খলীফাদের রাজপ্রাসাদ ছিল বিস্তৃত, প্রাসাদের উপরে ছিল গম্বুজ। সামনে ছিল ফুলের বাগান। সৌন্দর্য বৃদ্ধি
করতে প্রাসাদের পাশ দিয়ে তৈরী করা হতো পুকুর ও লেক। মনে হতো যেন, এটি একটি বড় শহর।১৯৭
খলীফা আল-কাহিরের ‘বুসতানু আন নারিনজ’ বা ‘লেবু বাগানে’ নামে একটি সুন্দর ও মনোরম বাগান ছিল।
আল মাস‘উদী বলেন-“খলীফা আল-কাহিরের একটি বাগান ছিল, যাতে সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও লেবুর চারা গাছ
ছিল। চারাগুলো ছিল ভারতীয়, যা বসরা এবং ওমান হতে আমদানী করা হয়েছিল। গাছগুলো এরূপ ঘন ছিল
যে, ডালপালাগুলো পরস্পর প্রবিষ্ট করে রেখেছিল। ফলগুলো লাল হলুদ তারার মত চমকাচ্ছিল। এর মাঝে
ছিল বিভিনড়ব প্রকারের ‘আরূস, সুগন্ধ গুল্ম, গোলাপ ইত্যাদি। সেই সাথে বাগান প্রাঙ্গনে ছিল বিভিনড়ব দেশ, শহর হতে আমদানী করা ঘুঘু, দুবাসী, শাহারীর নামে বিভিনড়ব জাতের কবুতর তোতা ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর
পাখি।১৯৮ খলীফা মুস্তা‘ঈনের পিতার খাস কামরায় একটি ফারাস বা বিছানা ছিল দীনার দ্বারা
কারুকার্যমন্ডিত। তাতে সোনা দ্বারা তৈরী পশুর ছবি ছিল। আর তার চোখ জহুরাত দ্বারা তৈরী ছিল।১৯৯
ইবন খুযায়মাহ্ (৩১১ হিজরী)-এর জীবদ্দশায় গান বাদ্য ও বিনোদনের আসর বসতো যেখানে কবি,
সাহিত্যিক, গায়ক, গান বিশেষজ্ঞ, μীড়া বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত হতেন।২০০ খলীফা ওয়াছিক বিল্লাহ সঙ্গীত
বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি অন্যান্য খলীফা ও রাজপুত্রদের থেকে সঙ্গীত বিদ্যায় এগিয়ে ছিলেন এবং
তিনি সঙ্গীতের বিভিনড়ব সুর উদ্ভাবন করেছিলেন। তিনি প্রায় একশত-এর কাছাকাছি সুর ও কণ্ঠ তৈরী
করেছিলেন। তিনি গিটার বাজনায়,কবিতা আবৃতি ও গল্প কাহিনীর বর্ণনায় খুব পারদর্শী ছিলেন। তিনি
ইসহাক আল মাওসীলির সঙ্গীত গাইতে পারতেন। এটি ছিল তার প্রিয় সঙ্গীত। ২০১ ইব্ন মাস‘উদ বলেন,
আল-মুতাওয়াক্কিল ‘আলাল্লাহ (২৩২-২৪৭ হিজরী/৮৪৭-৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) প্র ম খলীফা যিনি ‘আব্বাসীয় যুগে
সর্বপ্র ম তাঁর দরবারে একবার কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের একত্রিত করেন।২০২ খলীফা আল মু‘তামিদ
‘আলাল্লাহ (২৫৭-২৭৯ হিজরী /৮৭০-৮৯২ খ্রিস্টাব্দ) বিনোদন, গান বাদ্য ও সঙ্গীতের প্রতি আসক্ত
ছিলেন।২০৩সঙ্গীতের আসরে শুধু খলীফাগণই নন, সাথে আমীর ও উযীর ও রাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মাঝেও
প্রভাব পড়ে। এ যুগে সঙ্গীতের প্রসারের কারণ ছিল সঙ্গীত শিল্পী দাসীদের বৃদ্ধি পাওয়া। চর্তু হিজরী শতাব্দীর প্র ম দিকে বাগদাদে সে সব সঙ্গীত শিল্পীরা সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, তাদের অধিকাংশ
ছিলেন দাসী। তার অল্প সংখ্যক ছিল স্বাধীনা নারী।২০৪ ৩২১ হিজরী সনে খলীফা আল-কাহির বিল্লাহ (৩২০-
৩২২ হি./৯৩২-৯৩৪ খ্রি.) সঙ্গীত শিল্প ও মদ্যপান নিষিদ্ধ করার ফরমান জারি করে শিল্পীদের গ্রেফতার
করেন ও উপকরণসমূহ ভেঙ্গে ফেলেন। যেমন হিজরী চর্তু শতাব্দীর প্র ম দিকে হাম্বালীরা করেছিলেন। এ
ছাড়া এ মর্মে শিল্পী ও দাসীদের বিμি করতে নির্দেশ দেন যে, তারা সাদাসিধে গান বাদ্যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো খলীফা আল-কাহির নিজেই মদ্যপান ও গায়িকার গান বাজনাতে আসক্ত ছিলেন।২০৫ গান ও নৃত্যের পাশাপাশি আরো একটি শিল্প ছিল তা হলো বাদ্যযন্ত্র। এতে শুধু পুরুষরাই ছিলনা বরং
মেয়েরাও এতে অংশগ্রহণ করে। সে সময়ে বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে ছিল ঢোল, তবলা, তাম্বুরা, বাঁশি, বীনা প্রভৃতি।
এ সব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারকারীকে যন্ত্রের নামের প্রতি সম্পৃক্ত করে ডাকা হতো।২০৬
‘আব্বাসীয় যুগে খেলাধুলার প্রচলন ছিল। খেলাধুলা শিল্প বলে বিবেচিত হতো।২০৭ ঘরোয়া খেলার মধ্যে,
দাবা এবং পাশাই প্রধান ছিল। তাছাড়া ধনুর্বিদ্যা, পোলো, বল, অসি সঞ্চালন, বর্শা নিক্ষেপ, ঘোড়দৌড় এবং
সর্বোপরি শিকার যাত্রা সুপ্রসিদ্ধ ছিল।২০৮ তখন শিকার করা ছিল খলীফা ও শাহজাদাগণের বিনোদনের
অন্যতম মাধ্যম। পারসিকদের অনুকরণে পোষাপাখি ও কুকুরের সাহায্যে বন্যপাখি শিকার ‘আরবদের মধ্যেও
প্রচলিত ছিল।২০৯
ইবন খুযায়মাহ্র জীবনকালে ‘আব্বাসীয়রা বিশেষ শ্রেণীরা বিশেষ পোষাক পরিধান করতো। তারা
মণিমুক্তাখচিত পোষাক পরিধান করতো।২১০ এছাড়া তারা ঢিলেঢালা পায়জামা, কামিজ, দিরা’আহ সিতরাহ
বা ছোট আঁট সাঁট জামা, কুফতান বা লম্বা হাতাযুক্ত ঢিলা জুব্বা, চোগা, গাউন, কোবা, টুপি ইত্যাদি, আর
সাধারণ শ্রেণীরা সাধারণ পোষাক তথা লুঙ্গি, কামিস, দিরাআহ লম্বা সিতরাহ, বেল্ট, জুতা ও মুজা পরিধান
করতো।২১১
খলীফা মুতাওয়াক্কিল-এর আবিস্কৃত অত্যন্ত সুন্দর রঙ্গের যুদ্ধের পোষাককে “আল-মুতাওয়াক্কিলিয়্যাহ বলা
হতো।২১২ সুফী সাধক ও দরবেশগণ পশম ও মোটা কাপড়ের পোষাক পরিধান করতো।২১৩
‘আব্বাসীয় সমাজে পুরুষদের বিশেষ পোষাক হিসেবে মাথায় পাগড়ি ব্যবহার হতো। খলীফার সাথে
সাক্ষাতের সময় কালো পাগড়ি পরিধান করতো। কারণ কালো রং ‘আব্বাসীদের সরকারী প্রতীক ছিল।২১৪
নারীদের পোষাক ছিল ঢিলেঢালা বোরকা, ঘাড়ের কাছে ফাঁড়া কামিস, তার উপর শীতকালে ছোট আঁটসাঁট
চাঁদর পরতো। আর ঘরের বাইরে বের হলে লম্বা চাঁদর পরতো, যা তাদের দেহ সম্পূর্ণ আবৃত করতো। পৃক
ছোট আকৃতির কাপড় দিয়ে, মাথা ঢেকে দিয়ে ঘাড়ের উপর বাঁধতো।২১৫ বিশেষ বা অভিজাত শ্রেণীর নারীরা
‘স্বর্ণের চেইন, মুক্তা দ্বারা সজ্জিত ও সুন্দর পাখির জুড়ানো ‘বুরুনস” নামক টুপি মাথায় পরতো। অধিক বর্ষা
কবলিত অঞ্চলের লোকজন মোম প্রলেপ বিশিষ্ট কাপড়ের কোর্ট বা রেইনকোর্ট ব্যবহার করতো।২১৬ ‘আব্বাসাীয় খলীফাগণ খাবারের প্রতি বিশেষ যতড়ববান ছিলেন। তারা রকমারী খাবার সম্পর্কে গ্রন্থ রচনায়
বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ সম্পর্কে গ্রন্থ রচয়িতাগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মুহাম্মদ ইব্নুল- হাসান
ইব্ন ‘আবদিল-কারীম আল-কাতিব আল-বাগদাদী। তিনি ‘আত্-ত্বাবীখ’ নামে (৬২৩ হি./১২২৬ খ্রি.) গ্রন্থ
রচনা করেন। এতে রচয়িতা স্বীয় যুগ এবং তাঁর পূর্ববর্তী ‘আব্বাসী যুগের খাবারের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি
স্বীয় যুগে সমাজের ভিনড়ব ভিনড়ব ¯Íে রর ভিত্তিতে খাবারের তিনটি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করেছেন। ধনীকশ্রেণীদের
খাবার, দরীদ্রশ্রেণীদের খাবার ও জাতীয় খাবার। ধনীক শ্রেণীর প্রধান খাবারের মধ্যে ছিল মুরগীর গোশ্ত।
আর এ কারণেই মুরগীর মূল্য ছিল অনেক বেশী। মুরগির গোশ্ত খাবার গ্রহণকারীর পছন্দ অনুযায়ী বিভিনড়ব
পদ্ধতিতে রানড়বা করা হতো।২১৭ জাতীয় খাবারের তালিকায় ছিল গোশত, রুটি, পনির, মাছ, সিরকা আবার
এগুলো ভুনা, ভাজী ইত্যাদি। ২১৮ সুফী-সাধক, যাহিদ (যারা সামান্য খাবার গ্রহণ করেন) ও দরিদ্র শ্রেণীর
খাবার তালিকায় ছিল শুকনা রুটি, লবণ, সামান্য ব্যঞ্জন অন্তর্ভূক্ত। তাছাড়া পাখির গোশত, মাছ, চিনি, মধু,
ফল-ফলাদি ও উপাদেয় খাদ্য। এ যুগের আমীরও ধনীরা বিভিনড়ব রকমের খাবার তৈরিতে অপব্যয়
করতেন।২১৯

তৃতীয় অনুচ্ছেদ – শিক্ষা-সাংস্কৃতিক অবস্থা


উমাইয়া যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বীজ অঙ্কুরিত হয়, আর ‘আব্বাসীয় যুগে এর বিকাশ লাভ করে।২২০ ‘আব্বাসীয়
যুগে জ্ঞান বিজ্ঞানের এক নবযুগের সূচনা হয়।২২১ ‘আব্বাসীয় খলীফাদের মধ্যে খলীফা আল- মানসূর,
হারূনুর-্ রশীদ ও আল-মামুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধণে পৃষ্ঠপোষকতাকরেছেন। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায়গ্রীক, সিরীয়, পারসিক, সংস্কৃতি ভাষায় লিখিত বিভিনড়ব গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাদি ‘আরবী ভাষায় অনূদিত হয়।২২২ যার
ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাণ্ডার আরো সমৃদ্ধশালী হয়। খলীফা আল-মানসুরের পৃষ্ঠপোষকতায় আল-ফাজারী
পাক ভারতের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ “সিদ্ধান্ত” ‘আরবীতে অনুবাদ করেন।২২৩ খলীফা হারূর্নু-
রশীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফযল ইব্ন নওবকত ও হাজ্জাজ ইব্ন ইউসুফ গ্রীক ভাষা হতে জ্যোর্তিবিদ্যা ও গণিত
বিষয়ক অনেক মূল্যবান গ্রন্থ ‘আরবীতে অনুবাদ করেন।২২৪ খলীফা আল-মামুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘বায়তুলহিকমাহ’
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার সার্বজনীন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।২২৫ সুপণ্ডিত, চিকিৎসক ও দক্ষ অনুবাদক
হুনায়ন ইব্ন ইসহাক (৮০৯-৮৭৩ খ্রি.)-কে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিকগণ মামুনের
রাজত্বকালকে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগাস্টন যুগ বলে অভিহিত করেন।২২৬ এ ধারা ইব্ন খুযায়মাহ্
(২২৩-৩১১ হিজরী/৮৩৮-৯২৪ খ্রিস্টব্দ)-এর সময়কালেও অব্যাহত থাকে। ফলে এ সময়কালে জ্ঞানবিজ্ঞাে
নর বিভিনড়ব শাখা তথা তাফসীর, হাদীছ, ফিকহ, ইতিহাস, ভূগোল, আরবী সাহিত্য, দর্শন, চিকিৎসা
বিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যাসহ অন্যান্য শাখায় চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। নি¤েড়ব সে সম্পর্কিত আলোচনা
উপস্থাপিত হলো। ‘ইলমুল-হাদীছ
‘আব্বাসীয় খিলাফাতকালকে হাদীছ সংকলনের স্বর্ণযুগ বলা হয়।২২৭ মুহাদ্দিছগণ হাদীছ অনুসন্ধানে মুসলিম
জাহানের প্রতিটি কেন্দ্রে, প্রতিটি শহরে ও গ্রামে পৌঁছে বিক্ষিপ্ত হাদীছ সমূহকে একত্রিত করেন।২২৮ তাঁরা পূর্ণ
সনদ সম্পনড়ব হাদীছ সমূহ সতন্ত্রভাবে সজ্জিত ও সুবিন্যস্ত করেন এবং সনদের বিশুদ্ধতার উপর পূর্ণমাত্রায়
গুরুত্ব আরোপ করেন। এ সময় হাদীছের সত্যতা, বস্তুনিষ্ঠতা, সনদের বলিষ্ঠতা যাচাই-বাছাইয়ের নিমিত্তে
হাদীছের মূলনীতির উদ্ভব হয় এবং আসমার্উ-রিজাল বিরচিত হয়। প্রখ্যাত সিহাহ্ সিত্তাহও এসময় সংকলিত হয়।২২৯ আরো উল্লেখ্য যে, এ সময় একদিকে যেমন হাদীছ সংগ্রহ, সংকলন, গ্রন্থ প্রণয়ন ও হাদীছ সম্পর্কিত
জরুরী জ্ঞানের অপূর্ব উদ্ভাবন হয়, অপর দিকে মুসলিম জনগণের মধ্যে হাদীছ শিক্ষা ও চর্চার অদম্য উৎসাহ
এবং বিপুল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। এ যুগে অনেকে হাদীছ শাস্ত্রে প্রসিদ্ধ ছি লেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলেন, সিহাহ্ সিত্তার ইমামগণ। তাঁরা হলেন, মুহাম্মাদ ইব্ন ইসমা‘ঈল আল-বুখারী২৩০ (মৃত ২৫৪ হিজরী), মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ আল-কুশায়রী২৩১ (মৃত ২৬১ হিজরী), আবূ দাউদ আস্-সিজিস্তানী২৩২ (মৃত ২৭৫
হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন ‘ঈসা আত্-তিরমিযী২৩৩ (মৃত ২৭৯ হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন মাজাহ্২৩৪ (মৃত ২৭৩
হিজরী), আহমাদ ইব্ন শু‘আইব আন-্ নাসা’ঈ২৩৫ (মৃত ৩০৩ হিজরী)। এছাড়া এ যুগে হাদীছ শাস্ত্রে যারা বিশেষ অবদান রেখে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ হলেন, আহমাদ ইব্ন
মানী‘ আল-বাগাভী (মৃত ২২৪ হিজরী), না‘ঈম ইব্ন হাম্বাদ আল-খুযা‘ঈ (মৃত ২২৮ হিজরী), মুসাদ্দাদ ইব্ন
মুর্সারাহাদ আল-বসরী (মৃত ২২৮ হিজরী), সা‘ঈদ ইব্ন মানসুর (মৃত ২২৯ হি.)২৩৬, তাঁর সুনানি সা’ঈ ইব্ন
মানসূর, আবূল-হাসান তূসী (মৃত ২২৯ হি.)২৩৭ তাঁর চেহেল হাদীছ ঃ আবূল-হাসান তূসী,আবুল-হাসান ‘আলী ইব্ন
আল-জু‘দ আল-জাওহারী (মৃত ২৩০ হিজরী), ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুহাম্মাদ আল-জু‘ফী আল-মুসনাদী (মৃত ২২৯
হিজরী), ইয়াহ্ইয়া ইব্ন মু‘ঈন২৩৮ (মৃত ২৩৩ হিজরী), আবূ খায়সামাহ্ যুহায়র ইব্ন হারব (২২৯ হিজরী), মুহাম্মাদ
ইব্ন সা’দ (মৃত ২৩০ হি.)২৩৯, ‘আলী ইব্নুল-মাদীনী২৪০ (মৃত ২৩৪ হিজরী), আবূ-বকর ইব্ন আবূ শায়রাহ২৪১,আবূ বকর ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন ইব্রাহীম ইব্ন ‘উছমান ইব্ন আবী শায়বাহ্ (মৃত ২৩৫ হিজরী), ইসহাক ইব্ন রাহওয়াই
(মৃত ২৩৮ হি.)তাঁর মুসনাদ ইসহাক ইব্ন রাহওয়াই২৪২,আবূ খায়সামা (মৃত ২৩৪ হি.)২৪৩, খলীফাহ্ ইব্ন খাইয়্যাত
(মৃত ২৪০ হিজরী)২৪৪, ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বাল (মৃত ২৪১ হি.) তাঁর মুসনাদ ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বাল,২৪৫ ইসহাক ইব্ন ইব্রাহীম ইব্ন নাসর আস্-সা‘দী (মৃত ২৪২ হিজরী) আবূ মুহাম্মাদ আল-হাসান ইব্ন ‘আলী আলহালাওয়ানী
(মৃত ২৪২ হিজরী),‘আবদ ইব্ন হুমায়দ ইব্ন নাসর কাশ্শী২৪৬ (মৃত ২৪৩ হি.) তাঁর মুসনাদে ‘আবদ ইব্ন হুমায়দ ইব্ন নাসর কাশ্শী,ইব্ন আবী ‘আমর মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আল-মাদানী (মৃত ২৪৩ হিজরী),
‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন হুমায়দ (মৃত ২৪৯ হিজরী),মুহাম্মাদ ইব্ন হিশাম আস্-সুদূসী (মৃত ২৫১ হিজরী), ইমাম দারিমী
(মৃত ২৫৫ হি.)২৪৭, ইব্ন সানযার (মৃত ২৫৮ হিজরী), আহমাদ ইব্ন সিনান আল-কাত্ত্বান আল-ওয়াসিতী (মৃত ২৫৯
হিজরী), ই‘আকূব ইব্ন শায়বাহ্ (মৃত ২৬২ হিজরী), আবূ মুসলিম আল্-কাশ্শী (মৃত ২৬২ হি.)২৪৮ তাঁর সুনানে আবূ
মুসলিম আল্-কাশ্শী, আবূ যুর‘আহ র্আ-রাযী (মৃত ২৬৪ হি.),২৪৯মুহাম্মাদ ইব্ন মাহদী (মৃত ২৭২ হিজরী), বাক্বী ইব্ন মাখলাদ২৫০ (মৃত ২৭৬ হি.),ইব্ন আবী ‘উযরাহ্ আহমাদ ইব্ন হায্ম (মৃত ২৭৬ হিজরী), আবূ হাতিম র্আ-
রাযী২৫১ (মৃত ২৭৭ হিজরী), ইব্রাহীম ইব্ন ইসমা‘ঈল আত্-তূসী (মৃত ২৮০ হিজরী), আবূ যূর’আহ আদ্-
দিমাশকী২৫২ (মৃত ২৮১ হিজরী), হারিছ ইব্ন আবী উসামা২৫৩ (মৃত ২৮২ হি.) তাঁর মুসনাদে হারিছ ইব্ন আবি উসামা,ইব্রাহীম ইব্নুল-‘আসকারী (মৃত ২৮২ হিজরী), আবূ মুহাম্মাদ আল-হারিস ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন আবী
উসামাহ্ যাহির আত্-তামীমী (মৃত ২৮২ হিজরী), ইব্ন আবী ‘আসিম আহমাদ ইব্ন ‘আমর আশ্-শায়বানী (মৃত
২৮৭ হিজরী), আহমাদ ইব্ন ‘আমর আল-বায্যায (মৃত ২৯২ হিজরী), ইব্রাহীম ইব্ন মা‘কাল আন্-নাসাফী (মৃত
২৯০ হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন নাসর আল-মারওয়াযী, আবূ বকর আল-বায্যার২৫৪ (মৃত ২৯২ হিজরী), ইউসুফ ইবন
ই‘আকূব আল-কাযী২৫৫ (মৃত ২৯৭ হিজরী), ‘আস্-সুনান’ ( السنن ), জা‘ফর আল-ফিরইয়াবী২৫৬ (মৃত ৩০১ হিজরী), আবূ বকর আল-বারদীজী২৫৭ (মৃত ৩০১ হিজরী), ইব্রাহীম ইব্ন ইউসুফ আল-হানজাভী (মৃত ৩০১ হিজরী), আবুল‘আব্বাস
আল-হাসান ইব্ন সুফইয়ান (মৃত ৩০৩ হিজরী), আল-ক্বাসিম আল-মাতরায২৫৮ (মৃত ৩০৫ হিজরী) ‘আল- মুসনাদ’ ( المسند ), আবু ই‘আলা আল-মাওসিলী (মৃত ৩০৭ হিজরী)২৫৯ তাঁর মুসনাদে আবু ই‘আলা মাওসিলী,আবূ
বকর র্আ-রূইয়ানী২৬০ (মৃ. ৩০৭ হিজরী) ‘আল-মুসনাদ’ ( المسند ), মুহাম্মাদ ইব্ন জারীর আত্-ত্ববারী২৬১ (মৃত ৩১০
হিজরী) প্রমুখ।এ যুগে হাদীছ সংগ্রহের কাজ শেষ হয় এবং সহীহ্, গায়রে সহীহ্সহ সকল হাদীছ সনদসহ চিহিৃত করে দেয়া
হয়। আসমার্উ-রিজাল শাস্ত্রের পূর্ণতা লাভ করে। হাদীছের বিশুদ্ধতা নিণর্ েয়র নীতিমালা ও নির্ধারণ করা
হয়। ‘উলূমুল-হাদীছকে একটি পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্রে প্রতিষ্ঠিত করানো হয়। ‘ইলমুল-হাদীছের উপর ন্যুনতম মৌলিক
কোন গ্রন্থ রচনা করার প্ের য়াজনীয়তাও লোপ পায়। কেননা তখন হাদীছ সংগ্ের হর কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়।
‘ইলমুত্-তাফসীর
‘আব্বাসীয় খিলাফাতকাল ছিল তাফসীর চর্চার স্বর্ণযুগ। এ সময় মুসলিম সমাজে বাতিল চিন্তাধারা ও
মতবাদের উদ্ভব হয়। বুদ্ধি ও যুক্তিবাদের প্রবণতা বেশী দেখা যায়। এর প্রভাব থেকে ‘ইলমুত্-তাফসীরকে
মুক্ত করণের লক্ষে কুরআন, সুনড়বাহ্ ও ইজতিহাদের মাধ্যমে তাফসীর চর্চার অনুসৃত ধারা অনুযায়ী এ যুগে যে
সকল মনীষী তাফসীর চর্চায় বিশেষ অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, আবূ ‘উবায়দ আল-
ক্বাসিম ইব্ন সাল্লাম (মৃত ২২৩ হিজরী), সা‘ঈদ ইব্ন মানসূর আল-খুরাসানী (মৃত ২২৭ হিজরী), সুরায়জ
ইব্ন ইউনুস আল-বাগদাদী (মৃত ২৩৫ হিজরী), ইমাম আবূ বকর ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুহাম্মাদ আল-কূফী (মৃত
২৩৫ হিজরী), ইসহাক ইব্ন রাহওয়াই ইব্ন ইব্রাহীম আন্-নায়সাপূরী (মৃত ২৩৮ হিজরী), শায়খ আবী
মারওয়ান ‘আবদুল মালিক ইব্ন হাবীব আল-কুরতুবী (মৃত ২২৯ হিজরী), ইসমা‘ঈল ইব্ন ইসহাক আল-
জাহদামী (মৃত ২৪০ হিজরী), আহমাদ ইব্ন হাম্বাল (মৃত ২৪১ হিজরী), আবূ হাতিম সাহ্ল ইব্ন মুহাম্মাদ আস-্ সিজিস্তানী (মৃত ২৪৮ হিজরী), তাফসীরে আবূ হাতিম,২৬২আবূ হাফ্স ‘আমর ইব্ন ‘আলী আল-বাহিলী
(মৃত ২৪৯ হিজরী), রাহওয়াই ইব্ন ‘উবাদ আল-কায়সী (মৃত ২৫০ হিজরী), ইমাম দারিমী (মৃত ২৫৫
হিজরী), আবূ সা‘ঈদ ‘আবদিল্লাহ্ ইব্ন সা‘ঈদ আল-কিন্দী (মৃত ২৫৬ হিজরী), ইব্ন ‘আবিস-্ সাল্জ আলবাগদ
াদী (মৃত ২৫৭ হিজরী), ইসমা‘ঈল ইব্ন যায়দ আল-কাত্ত্বান (মৃত ২৬০ হিজরী), হাফিয আবূ
‘আবদিল্লাহ্ (মৃত ২৭৩ হিজরী), বাকী¡ ইব্ন মাখলাদ (মৃত ২৭৬ হিজরী), আবূ মুহাম্মাদ ইব্ন কুতাইবা২৬৩
(মৃত ২৭৬ হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন সা‘দ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্নুল-হাসান (মৃত ২৭৬ হিজরী), আবূ মানসূর
মুহাম্মাদ ইব্ন আহমাদ ইব্ন আল-আযহার আল-হারওয়াভী (মৃত ২৮২ হিজরী), হাফিয বাক্বী ইব্ন মাখলাদ
আল-কুরতুবী (মৃত ২৮৬ হিজরী), আবূ হানীফা ইব্ন দাউদ আন্-নাহ্ভী (মৃত ২৯০ হিজরী), মা‘কাল আন্-
নাসাফী আল-হানাফী (মৃত ২৯৫ হিজরী), ইমাম আবূ ‘আবদির-রহমান আহমাদ ইব্ন শু‘আইব আন্-নাসাঈ
(মৃত ৩০৩ হিজরী), তাফসীরুন-্ নাসাঈ২৬৪ আবূ ইসহাক ইব্রাহীম ইব্ন ইসহাক আন্-নায়সাপূরী (মৃত ৩০৩
হিজরী), আবূ ‘আবদিল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইব্ন যায়দ আল-ওয়াসিতী (মৃত ৩০৬ হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন জারীর
আত-্ ত্ববারী (মৃত ৩১০ হিজরী) তাঁর রচিত তাফসীর গ্রন্থ ‘জামিউল-বায়ান ‘আত্-তা’বীলে ‘আঈ আল-কুর’আন’ ( جامعالبیانعنتأویلآیالقرآن ) এটি তাঁর অনবদ্য রচনা।২৬৫ শায়খ আবূ ইসহাক ইব্রাহীম ইবনুস্-
সিরী আন-্ নাহভী (মৃত ৩১০ হিজরী), আবূ ‘উবায়দ আল-ক্বাসিম ইব্ন সাল্লাম (মৃত ৩১১ হিজরী)।
‘ইলমুল-ফিক্হ
‘আব্বাসীয় যুগে ‘ইলমুল-ফিকহের ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হয়। ইতোপূর্বে ‘ইলমুল-ফিকহের কোন স্বাতন্ত্র
রূপ ছিল না। এ যুগে কুর’আন ও হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফিক্হ শাস্ত্র রচনা শুরু হয়। বিভিনড়ব অঞ্চলে
ফাতাওয়া কেন্দ্র গড়ে ওঠে।২৬৬ তন্মধ্যে সাতটি কেন্দ্র সমধিক প্রসিদ্ধ ছিল। যথা মদীনা, মক্কা, কূফা, বসরা,
সিরিয়া, মিসর এবং বাগদাদ।
ইমাম শাফি‘ঈ২৬৭ (র) (মৃত ২০৪ হিজরী) আবুল-‘আব্বাস ইব্ন সুরায়জ২৬৮ (মৃ. ৩০৬ হিজরী) তাঁকে
‘শায়খুশ্-শাফি‘ঈয়্যাহ’ বলা হয়। এ সময় ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বাল (র.) (মৃত ২৪১ হি.) কর্তৃক হাম্বালী মাযহাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর এ
মাযহাব সিরিয়া, নয্দ এবং বাহরাইনে প্রসার লাভ করে।২৬৯ ইব্ন খুযায়মাহ্ (র)-এর সময়কালে হাম্বালী
মাযহাবের উল্লেখযোগ্য ফকীহ্ হলেন, ইসহাক ইব্ন রাহওয়াই (মৃত ২৩৮ হিজরী), আবূ বকর আহমাদ ইব্ন
মুহাম্মাদ ইব্ন হানী২৭০ (মৃত ২৭৩ হি.), আহমাদ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন হাজ্জাজ আল-মারুজী২৭১ (মৃত ২৭৫ হি.), ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন আহমাদ (মৃত ২৯০ হি.)২৭২, হাম্বালী মাযহাবের পাশাপাশি এ সময়ে যাহিরী মাযহাব
নামে একটি মাযহাব প্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা আবূ সুলাইমান দাউদ আয্-যাহিরী (মৃত ২৯৭ হি.)২৭৩।
একই সময় মাযহাবে ত্ববারী নামে আরো একটি মাযহাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ইব্ন
জারীর আত-্ ত্ববারী (মৃত ৩১০ হি.)। তিনি শাফি‘ঈ ফিক্হ চর্চা করতেন। তাই শাফি‘ঈ মাযহাবের সাথে
‘আকীদায় তেমন কোন পার্থক্য ছিল না।২৭৪ কিন্তু এ মাযহাবদ্বয়ের স্থায়ীত্ব বেশী দিন ছিল না। সময়ের
ব্যবধানে তাদের বিলুপ্তি ঘটে।২৭৫
এছাড়া যারা ‘ইলমুল-ফিকহ্ বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, আহমাদ ইব্ন হাফ্স,
বশীর ইব্ন গিয়াস মুরীসী (মৃত ২২৮ হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন সিমা‘আ আত্-তামীমী (মৃত ২৩৩ হিজরী),
মুহাম্মাদ ইব্ন শু‘জা সালজী (মৃত ২৬৭ হিজরী), হিলাল ইব্ন ইয়াহ্ইয়া ইব্ন মুসলিম আল-বাসরী (মৃত
২৪৪ হিজরী), আবূ জা‘ফর আহমাদ ইব্ন ‘ইমরান (মৃত ২৮০ হিজরী), আহমাদ ইব্ন ‘উমার আল-খস্সাফ (মৃত ২৬১ হিজরী), বাক্কার ইব্ন কুতায়বা ইব্ন আসাদ (মৃত ২৯০ হিজরী), আবূ হাযিম ‘আবদুল- হামীদ
ইব্ন ‘আবদিল-‘আযীয (মৃত ২৯২ হিজরী) প্রমুখ।
‘ইলমুল-কালাম
ইব্ন খুযায়মাহ্ (র)-এর যুগে ‘ইলমুল-কালাম২৭৬ শাস্ত্রের প্রভূত উৎকর্ষ সাধিত হয়।২৭৭ ‘আব্বাসী যুগের
(১৩২-৬৫৬ হি./৭৫০-১২৫৮ খ্রি.) প্রাথমিক অবস্থায় বিভিনড়ব ধর্মীয় দল ও উপদলের উদ্ভব হয়, তবে তখন
মু‘তাযিলাগণই আগ্রগামী ছিলেন। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর ‘ফিকহুল আকবর’ গ্রন্থটি এ সময়ে রচিত
হয়।২৭৮ আবুল-হুযাইল আল-আল্লাফ (মৃত ২৩৫ হি.) ছিলেন এ যুগের একজন বিশিষ্ট তার্কীক। তিনি ছিলেন
তখনকার মু‘তাযিলা মতবালম্বীদের প্রধান। তিনি অনুসারীদের নিকট হুযাইলা হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন।
আহ্মাহ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আল-মুরতাদী (মৃত ৩২৫ হিজরী) বলেন, ‘আমি যাহিয ও আবূ হুযাইল থেকে
অধিক তার্কীক আর কাউকে দেখিনি।’ তিনি একটি মজলিসে উপস্থিত থেকে তিনশত পংক্তির কবিতা আবৃত্তি
করেন। যা তাঁকে উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে।২৭৯ বাগদাদে বিশিষ্ট কালাম শাস্ত্রবীদ আবূ মুহাম্মদ আল-জুব্বাঈ২৮০ (মৃত ৩০৩ হি.) মু‘তাযিলা মতালম্বীদের পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি এ মতবাদ সম্পর্কে
অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা লিপিবদ্ধ করেছেন।২৮১
‘আরবী ব্যাকরণ ও সাহিত্য
‘আব্বাসীয় যুগে ‘আরবী ব্যাকরণ তথা ‘ইলমুন্-নাহু ও ‘ইলমুস্-সরফের বিকাশ সাধিত হয়। কূফা ও বসরায়
‘ইলমুন্-নাহু চর্চার কেন্দ্র গড়ে ওঠে।২৮২ এ সময় এ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়। ‘ইলমুন-্ নাহ্ভ চর্চার
উৎকর্ষ সাধনে যারা অসাধারণ অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ই‘আকূব ইব্নুস্-
সিক্কীত২৮৩ (মৃত ২৪৪ হিজরী), আবূ ইসহাক আয্-যুজাযী আন-্ নাহ্ভী২৮৪ (মৃত ৩১১ হি.)। ‘আরবরা সবসময়ই সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। জাহিলী যুগেও কা‘বা গৃহের ‘উকাজ মেলায় প্রতিবছর সাহিত্য
প্রতিযোগীতার আসর বসতো। যাদের কবিতা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতো, তাদের কবিতা কা‘বা গৃহের দেয়ালে
স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে ঝুলিয়ে রাখা হতো।২৮৫ তবে জাহিলী যুগের সাহিত্য চর্চার প্রকৃতি ও ধারা ছিল
সম্পূর্ণ অনৈসলামিক। রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর যুগ থেকে এর প্রকৃতি ও ধারার পরিবর্তন সাধিত হয়।
‘আব্বাসীয় যুগে ‘আরবী সাহিত্যের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। এ যুগে উল্লেখযোগ্য কবি হলেন, আবূ ‘উছমান
আল-জাহিয২৮৬ (মৃত ২৫০ হিজরী), আবূ সা‘ঈদ আস্-সুক্কারী২৮৭ (মৃত ২৭৫ হিজরী), ইব্ন কুতাইবাহ্
আদ্-দিনাওয়ারী২৮৮ (মৃত ২৭৬ হিজরী), আবূ বকর ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন ‘আবীদ্-দুনইয়া২৮৯ (মৃত ২৮১ হিজরী), আবূল-আব্বাস আল-মুর্বারাদ২৯০ (মৃত ২৮৬ হিজরী), ইব্নুল-বিসামী আল-বাগদাদী২৯১ (মৃত ৩০২ হিজরী),
ইব্ন দুরাইদ২৯২ (মৃত ৩২১ হিজরী) অন্যতম। খলীফা আল-মুকতাদিরের খিলাফাতকালে ‘ইলমুল্-লুগাতের
বিশেষজ্ঞ কাযী ইউসুফ ইবন ই‘আকূব (মৃত ২৯৭ হিজরী) ছিলেন অন্যতম। ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে তিনি
পরবর্তীদের জন্য অভিধান বিষয়ক জ্ঞানের উৎকর্ষতার পথ সুগম করেছেন।২৯৩ ‘আরবী অভিধান রচনার
মাধ্যমে ‘আরবী ভাষাকে মানুষের কাছে সহজতর করে তোলা হয়।


by

Comments

Leave a Reply