আবু দাউদ শরীফ । চুল আঁচড়ানো অধ্যায়
আবু দাউদ শরীফ । চুল আঁচড়ানো অধ্যায় , এই অধ্যায়ে হাদীস ৫৫ টি (৪১৫৯ – ৪২১৩) >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায় – ৩৫ঃ চুল আঁচড়ানো, অনুচ্ছেদঃ ১-২১=২১টি, হাদীসঃ (৪১৫৯-৪২১৩)=৫৫টি
অনুচ্ছেদ-১: অধিক জাঁকজমক প্রদর্শন নিষেধ
অনুচ্ছেদ-২ঃ সুগন্ধী পছন্দ করা
অনুচ্ছেদ-৩ঃ চুল পরিপাটি করে রাখা
অনুচ্ছেদ-৪ঃ নারীদের জন্য খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–৫ঃ পরচুলা ব্যবহার
অনুচ্ছেদ-৬ঃ সুগন্ধি ফেরত দেয়া সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৭ঃ বাইরে যাওয়ার সময় নারীদের সুগন্ধি ব্যবহার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–৮ঃ পুরুষের জন্য জাফ্রানী রং ব্যবহার [নিষেধ]
অনুচ্ছেদ-৯ঃ মাথার চুল রাখা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১০ঃ চুলের সিঁথি সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১১ঃ চুল লম্বা করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১২ঃ পুরুষের চুলের গুচ্ছ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১৩ঃ মাথা মুড়ানো
অনুচ্ছেদ–১৪ঃ গুচ্ছচুল সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১৫ঃ চুলের গুচ্ছ রাখার [অনুমতি] সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ গোঁফ ছাঁটা
অনুচ্ছেদ–১৭”ঃ সাদা চুল উপড়ে ফেলা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১৮ঃ খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ হলুদ রঙের খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২০ঃ কালো রঙের খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২১ঃ হাতির দাঁত ব্যবহার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১: অধিক জাঁকজমক প্রদর্শন নিষেধ
৪১৫৯. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সব সময় চুল আঁচড়াতে নিষেধ করেছেন, তবে একদিন পরপর [আঁচড়ালে দোষ নেই]।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৬০. আবদুলাহ ইবনি বুরাইদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-এর এক সাহাবী মিসরে অবস্থারত ফাদালাহ ইবনি উবাইদ [রাদি.]-এর নিকট পৌঁছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি কেবল আপনার সাথে সাক্ষাৎ করিতে আসিনি, বরং আমি এবং আপনি যে হাদিসটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুনিয়াছি, আশা করি এ সম্পর্কে আপনার কিছু জানা আছে। তিনি বলিলেন, তা কোন বিষয়ে? তিনি বলিলেন, এরূপ এরূপ। তিনি বলেন, আপনি একটি স্থানের নেতা, অথচ আপনার মাথায় চুল উস্কোখুস্কো দেখছি? সাহাবী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে মাত্রাতিরিক্ত জাঁকজমক দেখাতে নিষেধ করেছেন। তিনি [ফাদালাহ] বলেন, আপনার পায়ে জুতা দেখছি না কেন? তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে মাঝেমধ্যে খালি পায়ে চলার আদেশ দিতেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৬১.আবু উমামাহ সালাবা আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণ তাহাঁর সামনে দুনিয়াদারী সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমরা কি শুনতে পাও না! তোমরা কি শুনতে পাও না যে, পোশাক-পরিচ্ছেদে নম্রতা প্রকাশ ঈমানের অঙ্গ, পোশাক-পরিচ্ছেদে নম্রতা প্রকাশ ঈমানের অঙ্গ অর্থাৎ পোশাক পরিচ্ছদে বাবুগিরি প্রদর্শন না করা।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২ঃ সুগন্ধী পছন্দ করা
৪১৬২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর একটি উত্তম আতরদানি ছিল, তিনি তা হইতে সুগন্ধি ব্যবহার করিতেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩ঃ চুল পরিপাটি করে রাখা
৪১৬৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যার মাথায় চুল আছে সে যেন এর যত্ন নেয়।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৪ঃ নারীদের জন্য খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
৪১৬৪.ইয়াহহিয়া ইবনি আবু কাসীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কারীমহ বিনতু হাম্মাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমাকে বর্ণনা করেন যে, এক মহিলা মেহেদির খেযাব লাগানো সম্পর্কে আয়িশাহ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা ব্যবহারে কোন দোষ নেই; তবে আমি তা অপছন্দ করি। কারণ আমার প্রিয় নাবী [সাঃআঃ] এটির গন্ধ অপছন্দ করিতেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ মাথার চুলের খেযাব। {৪১৬৪}
{৪১৬৪} নাসায়ী, আহমাদ। সনদের কারীমাহ বিনতু হাম্মাম সম্পর্কে হাফিজ বলেনঃ মাক্ববূল। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪১৬৫. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উতবাহ্র কন্যা হিন্দ [রাদি.] বলেন, হে আল্লাহর নাবী! আমার বাইআত নিন। তিনি বলেনঃ তুমি তোমার দু হাতের তালু পরিবর্তন না করা পর্যন্ত তোমাকে বাইয়াত করবো না। সে দুটি যেন হিংস্র প্রাণীর থাবার ন্যায়। {৪১৬৫}
{৪১৬৫} বায়হাক্বী, মিশকাত। এর সনদের গিবতাহ মাক্ববূল। উম্মুল হাসান ও তার দাদীর অবস্থা জানা যায়নি। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪১৬৬.আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক মহিলা পর্দার আড়াল হইতে একটি কিতাব হাতে নিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দিকে বাড়িয়ে দিলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর হাত না বাড়িয়ে বলিলেনঃ আমি বুঝতে পারছি না এটা কোন পুরুষের হাত নাকি নারীর হাত? সে বললো, বরং নারীর হাত। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি মহিলা হলে অবশ্যই তোমার নখগুলো মেহেদির রং দ্বারা রঞ্জিত করিতে।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ–৫ঃ পরচুলা ব্যবহার
৪১৬৭. হুমাইদ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
মুআবিয়াহ [রাদি.] তার রাজত্বকালে হাজ্জ উপলক্ষে এক সমাবেশে মিম্বারে দাঁড়ালেন। তিনি তার দেহরক্ষী পুলিশের হাত হইতে একগুচ্ছ কৃত্রিম চুল নিজ হাতে নিয়ে সবাইকে সম্বোধন করে বলিলেন, হে মাদীনাহ্বাসী! তোমাদের আলেমগণ কোথায়? আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এটা ব্যবহার করিতে নিষেধ করিতে শুনিয়াছি এবং আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি যে, বনী ইসরাঈলের নারীরা এ কৃত্রিম চুল ব্যবহারে অভ্যস্থ হওয়ায় ধ্বংস হয়েছে।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৬৮. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অভিশাপ দিয়েছে ঐসব নারীদেরকে যারা পরচুলা তৈরী করে, যারা তা ব্যবহার করে, যারা দেহে উল্কি লাগিয়ে দেয় ও যারা উল্কি লাগায়।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৬৯. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্ লানাত করেছেন ঐ নারীদের যে নারী উল্কি আঁকে ও যার দেহে অংকন করানো হয়। মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, “যারা কৃত্রিম চুল ব্যবহার করে।” উসমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, “এবং যারা কপালের উপরের চুল উপড়িয়ে কপাল প্রশস্ত করে”, অতঃপর তারা দুজনেই একমত হয়ে বলেন, “এবং যারা সৌন্দর্য লাভের জন্যে রেতি ইত্যাদি দ্বারা দাঁত ঘর্ষণ করে সরু করে দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে, আল্লাহ্র সৃষ্টির পরিবর্তন করে তাহাদের প্রতিও লানাত। তিনি বলেন, বনী আসাদের উম্মু ইয়াকূব নাম্নী এক মহিলা একথা শুনেন এবং ঐ মহিলা কুরআন পড়তেন।” পরে উভয়ে একমত হয়ে বলেন, মহিলাটি তাহাঁর নিকট এসে বলেন, শুনতে পেলাম আপনি নাকি ঐসব নারীদের অভিশাপ দিয়েছেন, যারা দেহে উল্কি লাগায়, কৃত্রিম চুল ব্যবহার করে, কপালের উপরের চুল উপড়িয়ে কপাল প্রশস্ত করে, এবং যারা রেতি ইত্যাদি দ্বারা দাঁত ঘষে সরু করে, [উসমান বলেন], যারা আল্লাহ্র সৃষ্টির পরিবর্তন করে। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন, আমি তাহাদের অভিশাপ দিবো না এ কেমন কথা? অথচ এ বিষয়টি মহান আল্লাহ্র কিতাবে বিদ্যমান। মহিলা বলেন, আমি তো এ কিতাবের আদ্যোপান্ত পড়েছি; কিন্তু এ কথা তো পাইনি। তিনি বলেন, “আল্লাহ্র কসম! তুমি [ভালোভাবে] পড়লে অবশ্যই তা পেয়ে যেতে।” অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ [অর্থ]
“আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ করো, আর যা হইতে তোমাদের বিরত রাখেন, তা হইতে বিরত থাকো, আর আল্লাহকে ভয় করো; নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ কঠোর শাস্তিদাতা” [সূরাহ হাশরঃ ৭]
মহিলা বলিলেন, আমি আপনার স্ত্রীকে দেখছি তিনি এসবের কিছু কিছু করেন। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি ভেতরে গিয়ে দেখে এসো। অতঃপর তিনি ভেতরে ঢুকে বেরিয়ে এলেন। তিনি [আবদুল্লাহ] বলিলেন, কি দেখলেন? উসমান বলেন, তিনি বেরিয়ে এসে বলিলেন, না এসব করিতে দেখিনি। তিনি বলিলেন, এসব থাকলে সে আমার সাথে থাকতে পারতো না।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৭০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন অসুস্থতা ছাড়া যেসব নারী পরচুলা তৈরী করে, যে নারী তা ব্যবহার করে, যে নারী ভ্রুর চুল উপড়ে ফেলে এবং যে নারী দেহে উল্কি অংকন করে তাহাদেরকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, [আরবী] শব্দের ব্যাখ্যা হলো, যে নারী অন্য নারীর চুলের সাথে কৃত্রিম চুল সংযোজন করে। অর্থ হলো, [আরবী] যে নারী এরূপ কৃত্রিম চুল ব্যবহার করে। [আরবী] অর্থ যে নারী সরু করার জন্য ভ্রুর চুল উপড়িয়ে দেয়, [আরবী] অর্থ হলো, যে নারী এ কাজ করায়। [আরবী] অর্থ হলো, যে নারী চেহারায় সুরমা বা রঙের কালি দিয়ে চিত্র অঙ্কিত করে। [আরবী] অর্থ হলো যে নারী এ কাজ করায়।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৭১. সাঈদ ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
নারীদের জন্য রেশমী বা পশমী সুতার কৃত্রিম চুল ব্যবহারে দোষ নেই। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মনে হয় তার মতে নারীদের চুল দ্বারা তৈরী পরচুলা ব্যবহার নিষিদ্ধ। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ঈমাম আহ্মাদের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মত হলো, রেশমী বা পশমী সুতার কৃত্রিম ব্যবহারে অসুবিধা নেই। {৪১৭১}
দুর্বল মাক্বতু মুনকার। {৪১৭১} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সনদের শারীক ইবনি আব্দুল্লাহর স্মরণশক্তি মন্দ। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
অনুচ্ছেদ-৬ঃ সুগন্ধি ফেরত দেয়া সম্পর্কে
৪১৭২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কাউকে সুগন্ধি বস্তু উপহার দেয়া হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কারণ তা উত্তম সুগন্ধি এবং সহজে বহনযোগ্য।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭ঃ বাইরে যাওয়ার সময় নারীদের সুগন্ধি ব্যবহার সম্পর্কে
৪১৭৩. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ নারীরা যখন সুগন্ধি লাগিয়ে জনসমাজকে এর গন্ধ বিলানোর জন্য তাহাদের পাশ দিয়ে যাতায়াত করে, সে তখন এরূপ এরূপ। একথা বলে তিনি একটি কঠোর মন্তব্য করেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪১৭৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ একদা আমার সাথে এক মহিলার দেখা হল, যার শরীর থেকে সুগন্ধি বের হচ্ছিল এবং তার [পাতলা] কাপড়ও বাতাসে উড়ছিল। তখন আমি তাহাকে বলি, হে বেহায়া মহিলা! তুমি কি মাসজিদ থেকে আসছো? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তুমি কি খুশবু ব্যবহার করেছো? সে বলিল, হ্যাঁ। তখন আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেন, আমি আমার প্রিয় আবুল কাসিম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে মহিলা খুশবু লাগিয়ে এ মাসজিদে আসে, তার সলাত কবূল হয় না, যতক্ষণ না সে ফিরে গিয়ে নাপাকীর গোসলের ন্যায় গোসল করে। [এমন উত্তমরূপে গোসল করে যাতে তার দেহে কোন সুগন্ধি না থাকে]।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৭৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে কোন নারী সুগন্ধি লাগাবে, সে যেন আমাদের সাথে ইশার সলাতে উপস্থিত না হয়।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৮ঃ পুরুষের জন্য জাফ্রানী রং ব্যবহার [নিষেধ]
৪১৭৬. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একরাতে দুহাত ফাটা অবস্থায় আমি আমার পরিবারের কাছে হাজির হলে তারা আমার দুহাতে জাফরান রঙের প্রলেপ লাগিয়ে দেয়। পরদিন সকালে আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাহাকে সালাম করলে তিনি আমার সালামের জবাব দেননি এবং মারহাবাও বলেননি বরং তিনি বলেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং একে ধুয়ে ফেল। আমি তা ধুয়ে পুনরায় তাহাঁর নিকট হাজির হই, কিন্তু সে রঙের কিছু তখনও অবশিষ্ট ছিল। এরপর আমি তাহাকে সালাম দিলে তিনি আমার সালামের জবাব দেননি এবং মারহাবাও বলেননি। তিনি বলেনঃ ফিরে যাও এবং হাত থেকে এ রং ধুয়ে ফেল। আমি ফিরে গিয়ে ধুয়ে ফেলে তাহাঁর কাছে এসে তাহাকে সালাম করি। তখন তিনি আমার সালামের জবাব দেন এবং মারহাবা বলেন। তারপর তিনি বলেনঃ ফেরশ্তারা কাফিরের জানাযা, জাফরান রং ব্যবহারকারী ও অপবিত্র লোকদের নিকট আসে না। তবে তিনি নাপাক অবস্থায় অযূ করার পর পানাহার করিতে ও নিদ্রা যেতে অনুমতি দিয়েছেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪১৭৭. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি কুসুম রং ব্যবহার করেছিলাম… অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ ঘটনা। তবে প্রথম সূত্রের ঘটনা পূর্ণাঙ্গ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি উমার ইবনি আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিলাম, লোকজন কি ইহ্রাম অবস্থায় ছিল? তিনি বলেন, না ইহ্রামহীন ছিল।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪১৭৮. আর-রবী ইবনি আনাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার দুজন দাদা বা নানা হইতে বর্ণীতঃ
তারা বলেন, আমরা আবু মূসা [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যার শরীরে সামান্য পরিমাণও জাফ্রান থাকে, আল্লাহ্ তার সলাত কবুল করেন না। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তার দুই দাদা বা নানার নাম হলো যায়িদ ও যিয়াদ। {৪১৭৮}
{৪১৭৮}আহমাদ। সনদের আবু জাফার আর-রাযী হলো ঈসা ইবনি মাহান। হাফিয বলেনঃ যিয়াদ হলো আনাস ইবনি রবী, তিনি মাজহুল। অনুরুপভবে যায়িদ মাজহুল। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪১৭৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পুরুষদের জন্য জাফ্রান রং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৮০. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তিন প্রকার ব্যক্তির নিকট ফেরেশতারা আসেন না। [১] কাফিরের লাশের নিকট [জানাযায়], [২] জাফ্রান রং ব্যবহারকারী, এবং [৩] নাপাক ব্যক্তির নিকট, তবে সে উযু করলে ভিন্ন কথা।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪১৮১. ওয়ালীদ ইবনি উক্ববাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, যখন আল্লাহ্র নাবী [সাঃআঃ] মাক্কাহ বিজয় করেন, তখন মক্কাবাসীরা তাহাদের শিশুদের নিয়ে তাহাঁর নিকট আসতে লাগলো। তিনি তাহাদের কল্যাণের জন্য দুআ করিতে থাকেন এবং তাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমাকেও তাহাঁর নিকট নিয়ে আসা হলো। তখন আমাদের দেহে জাফ্রান লাগানো ছিল। জাফ্রানের কারণে তিনি আমাকে স্পর্শ করেননি।{৪১৮১}
{৪১৮১} আহমাদ। সনদের আবদুল্লাহ হামাদানী অজ্ঞাত। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
৪১৮২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলো। তার দেহে হলদে রঙের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। কারো চেহারায় তাহাঁর অপছন্দনীয় কিছু দেখলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খুব কমই তার দিকে তাকাতেন। লোকটি চলে গেলে তিনি বলিলেনঃ তোমরা যদি তাহাকে এগুলো ধুয়ে ফেলার আদেশ দিতে।{ ৪১৮২}
{৪১৮২} বুখারী আদাবুল মুফরাদ, তিরমিজি, নাসায়ী, আহমাদ। সনদের সাল্ আল-আলাভী সম্পর্কে ইরাকী বলেনঃ যয়ীফ। অনুরূপ হাফিয বলেনঃ যয়ীফ। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৯ঃ মাথার চুল রাখা সম্পর্কে
৪১৮৩. আল-আরাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি কারুকার্য খচিত লাল চাদর পরিহিত রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] চেয়ে সুন্দর কোন বাবরী চুলওয়ালাকে দেখিনি। মুহাম্মাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ তাহাঁর বাবরী চুল কাঁধ পর্যন্ত ছিল। শুবাহ্র বর্ণনায় রয়েছেঃ কানের লতি পর্যন্ত ছিল।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৮৪. আল-বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর চুল তাহাঁর কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৮৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৮৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] মাথার চুল কানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছাতো।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৮৭. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] মাথার চুল কানের লতির নীচে এবং ঘাড়ের উপর পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ–১০ঃ চুলের সিঁথি সম্পর্কে
৪১৮৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আহ্লে কিতাব তাহাদের মাথার চুল লম্বাভাবে ঝুলিয়ে দিতো। আর মুশরিকরা মাথায় সিঁথি করতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে যে বিষয়ে আল্লাহ্র পক্ষ হইতে কোন হুকুম ছিলো না, সেক্ষেত্রে তিনি আহ্লে কিতাবের নিয়ম পালন করিতে ভালোবাসতেন। তাই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও তাহাঁর কপালের চুল লম্বাভাবে ঝুলিয়া দেন, অতঃপর আবার সিঁথি করেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৮৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] মাথার চুলে সিঁথি করিতে চাইলে মাথার মাঝ বরাবর দুভাগ করে সিঁথি করতাম এবং তাহাঁর দুচোখের মাঝখান হইতে সোজা কপালের দুদিকে চুল ছেড়ে দিতাম।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–১১ঃ চুল লম্বা করা সম্পর্কে
৪১৯০. ওয়াইল ইবনি হুজর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলাম। আমার মাথায় লম্বা চুল ছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখে বলিলেনঃ অশুভ! অমঙ্গলজনক! তিনি বলেন, আমি ফিরে এসে চুল কেটে ফেললাম। পরদিন সকালে আমি তাহাঁর নিকট গেলে তিনি বলিলেনঃ আমি তো তোমাকে কষ্ট দেইনি। আর এরূপ [চুল] খুবই চমৎকার!
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১২ঃ পুরুষের চুলের গুচ্ছ সম্পর্কে
৪১৯১. মুজাহিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উম্মু হানী [রাদি.] বলিয়াছেন, নাবী [সাঃআঃ] যখন মক্কায় আগমন করেন, তখন তাহাঁর মাথার চুলে চারটি গুচ্ছ ছিল।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৩ঃ মাথা মুড়ানো
৪১৯২. আবুদুল্লাহ ইবনি জাফার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] জাফারের [রাদি.] পরিবারকে তিন দিন শোক পালনের সুযোগ দিলেন। অতঃপর তিনি তাহাদের নিকট এসে বলিলেনঃআজকের পর হইতে তোমরা আমার ভাইয়ের জন্য আর কাঁদবে না। অতঃপর বলিলেনঃ আমার ভাইয়ের ছেলেদের নিয়ে এসো। অতঃপর আমাদেরকে তাহাঁর কাছে আনা হলো। আমরা যেন পাখির বাচ্চার ন্যায় অসহায়। তিনি বলিলেনঃ আমার নিকট নাপিত ডেকে আনো। [নাপিত এলে] তিনি তাহাকে মাথা মুড়ানোর আদেশ দিলে সে আমাদের মাথা মুড়িয়ে দিলো।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৪ঃ গুচ্ছচুল সম্পর্কে
৪১৯৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাযাআ করিতে বারণ করেছেন। কাযাআ হলো শিশুদের মাথায় কিছু চুল অবশিষ্ট রেখে কিছু চুল কামিয়ে ফেলা।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৯৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] কাযাআ করিতে নিষেধ করেছেন। তা হলো শিশুদের মাথা কামিয়ে তাতে কিছু চুল অবশিষ্ট রাখা।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৯৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা নাবী [সাঃআঃ] দেখলেন যে, একটি শিশুর মাথার কিছু অংশ কামানো আর কিছুটা অবশিষ্ট রাখা আছে। তিনি তাহাদেরকে এরূপ করিতে নিষেধ করিলেন এবং বলিলেনঃ হয় সবটুকু কামিয়ে ফেলো নতুবা সবটুকু রেখে দাও।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৫ঃ চুলের গুচ্ছ রাখার [অনুমতি] সম্পর্কে
৪১৯৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার মাথার চুলে গুচ্ছ ছিল। আমার মা আমাকে বলিলেন, এটা কাটবো না, কারণ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা টানতেন ও স্পর্শ করিতেন।{৪১৯৬}
{৪১৯৬} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সনদের মাইমূন ইবনি আবদুল্লাহ সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাজহুল। হাদিসটি রয়েছে মিশকাত হা/৪৪৬১। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪১৯৭. আল-হাজ্জাজ ইবনি হাস্সান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা আমরা আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]- এর নিকট গেলাম। আমার বোন আল-মুগীরাহ আমার নিকট বর্ণনা করেন, তুমি তখন বালক ছিলে আর তোমার মাথায় দুটি শিং অর্থাৎ দুটি চুলের গুচ্ছ ছিল। তিনি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে তোমার কল্যাণের জন্য দুআ করে বলেন, এ দুটি কামিয়ে ফেলো বা কেটে ফেলো। কারণ এটা ইয়াহুদীদের রীতি। {৪১৯৭}
{৪১৯৭}আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সনদের মুগীরাহ হাস্সান সম্পর্কে হাফিজ বলেন ঃ মাক্ববূলাহ। হাদিসটি রয়েছে মিশকাত হা/৪৪৮৪।আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ গোঁফ ছাঁটা
৪১৯৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ পাঁচটি বিষয় ফিত্বরাতের অন্তর্ভুক্তঃ [১] খৎনা করা, [২] নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করা, [৩] বগলের লোম উপড়ে ফেলা, [৪] নখ কাটা এবং [৫] মোঁচ ছাঁটা।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১৯৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মোঁচ কাটতে ও দাঁড়ি লম্বা করিতে আদেশ দিয়েছেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুলাহ [সাঃআঃ] আমাদের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন অন্তত চল্লিশ দিনে একবার নাভির নীচের লোম কামাতে, নখ কাটতে মোঁচ ছাঁটতে এবং বগলের লোম উপড়ে ফেলতে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদিসটি জাফার ইবনি সুলাইমান হইতে আবু ইমরান থেকে আনাস [রাদি.] সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। এ সূত্রে বর্ণনাকারী নাবী [সাঃআঃ] বলেন এরূপ বর্ণনা করননি, বরং বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ আমাদের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এটাই অধিক সহিহ।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা হাজ্জ ও উমরাহ ছাড়া দাঁড়ির সম্মুখ ভাগ লম্বা করে রাখতাম। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ নাভির নীচের লোম কামিয়ে ফেলা।{৪২০১}
{৪২০১} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবনি হাজার এটি ফাতহুল বারী গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৭”ঃ সাদা চুল উপড়ে ফেলা সম্পর্কে
৪২০২. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা পাকা চুল-দাঁড়ি উপড়ে ফেলো না। কেননা কোন মুসলিম ইসলামের মধ্যে থেকে চুল পাকালে [সুফিয়ানের বর্ণনায় রয়েছে] এটা তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন উজ্জ্বল নূর হইবে। [ইয়াহইয়ার বর্ণনায় রয়েছে] আল্লাহ তার প্রতিটি পাকা চুলের পরিবর্তে তাহাকে একটি নেকী দান করবেন এবং একটি গুনাহ মিটিয়ে দিবেন। {৪২০২}
{৪২০২} তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ এই হাদিসটি হাসান। আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ–১৮ঃ খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
৪২০৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ নিশ্চয় ইয়াহুদী ও নাসারাগণ চুল-দাঁড়িতে খেযাব লাগায় না। কাজেই তোমরা তাহাদের বিপরীত করো।
আবু দাউদ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন আবু কুহাফাকে আনা হলো।এ সময় তার মাথার চুল ও দাঁড়ি সাগামাহ [গাছের] মত একেবারে সাদা ছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ খেযাব লাগিয়ে এগুলো পরিবর্তন করো কিন্তু কালো রঙ বর্জন করো।
আবু দাউদ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০৫. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ এ বার্ধক্য পরিবর্তনের সবচেয়ে উত্তম রং হলো মেহেদি ও কাতাম [কালো রং নিঃসারক উদ্ভিদ]।
আবু দাউদ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০৬,.আবু রিমসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি আমার পিতার সঙ্গে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট যাই। নাবী [সাঃআঃ]-এর কানের লতি পর্যন্ত দীর্ঘ বাবরি চুল মেহেদির রঙে রঞ্জিত ছিল এবং তাহাঁর পরিধানে ছিল দুটি সবুজ রঙের চাদর।
আবু দাউদ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০৭. আবু রিমসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, অতঃপর আমার পিতা তাঁকে বলেন, আপনার পিঠের এ জিনিসটি [নবূওয়্যাতের মোহর] আমাকে দেখান, কারণ আমি একজন চিকিৎসক। তিনি বলিলেনঃ আল্লাহ্ হলেন চিকিৎসক, আর তুমি একজন বন্ধু। তিনিই এর চিকিৎসক যিনি একে সৃষ্টি করেছেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০৮. আবু রিমসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি ও আমার পিতা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বা তার পিতাহাকে বলিলেনঃ এটা কে? তিনি বলেন, আমার ছেলে। তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ তার উপর মন্দ আচরণ করো না। এ সময় তাহাঁর দাঁড়ি মেহেদির রঙে রঞ্জিত ছিল।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২০৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাহাকে নাবী [সাঃআঃ]-এর খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনি [সাঃআঃ] খেযাব ব্যবহার করেননি। কিন্তু আবু বকর [রাদি.] ও উমর [রাদি.] খেযাব লাগিয়েছেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ হলুদ রঙের খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
৪২১০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] পাকা চামড়ার তৈরী জুতা পরতেন এবং তাহাঁর দাঁড়িতে ওয়ার্স ঘাসের রস ও জাফ্রান লাগাতেন। ইবনি উমার [রাদি.]-ও এরূপ করিতেন।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪২১১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক লোক মেহেদির খেযাব লাগিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ এটা খুবই চমৎকার। বর্ণনাকারী বলেন, আরেক লোক মেহেদি ও কাতাম মিশ্রিত খেযাব লাগিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বলেনঃ এটি ওটার চেয়েও সুন্দর। অতঃপর আরেক লোক হলদে রঙের খেযাব লাগিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেনঃ এটি পূর্বের দুটির তুলনায় আরো সুন্দর।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-২০ঃ কালো রঙের খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে
৪২১২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শেষ যুগে এমন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হইবে, যারা কবুতরের গলায় থলের ন্যায় কালো রঙের খেযাব লাগাবে। তারা জান্নাতের ঘ্রানও পাবে না।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২১ঃ হাতির দাঁত ব্যবহার সম্পর্কে
৪২১৩. রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সফরে বের হওয়ার সময় পরিবারের লোকদের মধ্যেকার সবশেষে ফাত্বিমাহ্র কাছ থেকে বিদায় নিতেন; আর সফর শেষে বাড়ি এসে সবার আগে ফাত্বিমাহ্র সাথে দেখা করিতেন। একদা তিনি কোন এক যুদ্ধ হইতে ফিরে এসে দেখেন, ফাত্বিমাহ্ ঘরের দরজায় পশমী চাদর বা পর্দা ঝুলিয়েছেন এবং হাসান হুসাইনকে রূপার কাঁকন পরিয়েছেন। তাই তিনি তাহাঁর ঘরে ঢুকেননি। ফাত্বিমাহ্ [রাদি.] বুঝতে পারলেন যে, এসব দেখেই তিনি আমার নিকট আসেননি। তাই তিনি পর্দা ছিঁড়ে ফেলেন এবং কাঁকন দুটো ছেলেদ্বয়ের হাত হইতে খুলে তাহাদের সামনেই ভেঙ্গে ফেলেন। তারা দুজন কাঁদতে কাঁদতে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট গেলে তিনি তাহাদের হাত থেকে ভাঙ্গা কাঁকন নিয়ে বলিলেনঃ হে সাওবান! তুমি এটা নিয়ে মাদীনাহ্র আহ্লে বইতের অমুক পরিবারে যাও। নিঃসন্দেহে এরা হলো আমার ঘরের লোক। এরা তাহাদের পার্থিব জীবনে উত্তম খাবার গ্রহণ করুক তা আমি চাই না। হে সাওবান! ফাত্বিমাহ্র জন্য একটি পুঁতির মালা ও হাতির দাঁতের তৈরি দুটি কাঁকন কিনে আনো।
আবু দাউদ শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মুনকার
Leave a Reply