রোজার নিয়ম কানুন । ইতিকাফ কোথায় করিবে
রোজার নিয়ম কানুন । ইতিকাফ কোথায় করিবে >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১৪, অনুচ্ছেদঃ ৪৭-৮২=৩৬টি
অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ যিনি বলেন, আমি পুরো রমাযানের সওম রেখেছি
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ দুই ঈদের দিন সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৪৯ঃ তাশরীকের দিনসমূহে সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৫০ঃ শুধু জুমুআহর দিনকে সওম পালনের জন্য নির্দিষ্ট করা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-৫১ঃ কেবল শনিবারকে সওম পালনের জন্য নির্দিষ্ট করা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-৫২ঃ এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৫৩ঃ সারা বছর সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৫৪ঃ হারাম [সম্মানিত] মাসসমূহে সওম পালন সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৫৫ঃ মুহাররম মাসের সওম
অনুচ্ছেদ-৫৬ঃ রজব মাসের সওম
অনুচ্ছেদ-৫৭ঃ শাবান মাসের সওম
অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ শাওয়াল মাসের সওম
অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ শাওয়াল মাসের ছয় দিন সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৬০ঃ নাবী [সাঃআঃ] কিভাবে সওম পালন করিতেন
অনুচ্ছেদ-৬১ঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৬২ঃ [যিলহাজ্জের] দশ দিন সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৬৩ঃ যিলহাজ্জের দশ দিন সওম না রাখার বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-৬৪ঃ আরাফাহর দিন আরাফাহর ময়দানে সওম পালন প্রসঙ্গ
অনুচ্ছেদ-৬৫ঃ আশূরার দিন সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ বর্ণিত আছে যে, মুহাররমের নয় তারিখ আশূরার দিন
অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ আশূরার সওম পালনের ফাযীলত
অনুচ্ছেদ-৬৮ঃ একদিন সওম রাখা ও একদিন বিরতি দেয়া
অনুচ্ছেদ-৬৯ঃ প্রতি মাসে তিনদিন সওম পালন
অনুচ্ছেদ-৭০ঃ যিনি বলেন, [ঐ তিনটির দুটি হলো] সোম ও বৃহস্পতিবার
অনুচ্ছেদ-৭১ঃ যিনি বলেন, মাসের যে কোন দিন সওম পালন করা যায়
অনুচ্ছেদ-৭২ঃ সওম পালনের নিয়্যাত সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৭৩ঃ এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৭৪ঃ যিনি বলেন, নফল সওম ভঙ্গ করলে এর ক্বাযা করিতে হইবে
অনুচ্ছেদ-৭৫ঃ স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর নফল সওম রাখা
অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ সওম পালনকারীকে বিবাহভোজের দাওয়াত দিলে
অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ খাবার খেতে ডাকলে সওম পালনকারী যা বলবে
অনুচ্ছেদ-৭৮ঃ ইতিকাফ
অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ ইতিকাফ কোথায় করিবে?
অনুচ্ছেদ-৮০ঃ ইতিকাফকারী প্রয়োজনে [মাসজিদ থেকে বেরিয়ে] ঘরে প্রবেশ করিতে পারে
অনুচ্ছেদ-৮১ঃ ইতিকাফকারীর রোগী দেখিতে যাওয়া
অনুচ্ছেদ-৮২ঃ মুস্তাহাযা মহিলার ইতিকাফ
অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ যিনি বলেন, আমি পুরো রমাযানের সওম রেখেছি
২৪১৫. আবু বাক্রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে, আমি পুরো রমাযান মাস সওম রেখে এবং এর পূর্ণ রাত [সলাতে] দাঁড়িয়ে কাটিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি [সাঃআঃ] এরূপ আত্মপবিত্রতা প্রকাশ অপছন্দ করেছেন নাকি কিছু সময় নিদ্রা ও বিশ্রামের প্রয়োজন বলিয়াছেন তা আমার জানা নেই। {২৪১৫}
দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬৩৬৭], যয়ীফ সুনান নাসায়ী [১২০/২১০৯]। ২৪১৫ নাসায়ী, আহমাদ, ইবনি খুজাইমাহ। এর সনদ মুরসাল। হাসান হাদিসটি আবু আবু বাকরাহ থেকে শুনেননি।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ দুই ঈদের দিন সওম পালন
২৪১৬. আবু উবাইদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা উমার [রাদি.] এর সাথে আমি এক ঈদের সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুত্ববাহ্র পূর্বে সলাত পড়লেন। অতঃপর বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ দুদিন সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। কেননা কুরবানীর দিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুর গোশত খেয়ে থাকো। আর ঈদুল ফিতরের দিন হল তোমাদের সওমের সমাপ্তি।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪১৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করেছেনঃ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা- এ দুদিন সওম পালন করিতে এবং দুই ধরনের পোশাক পরতে, [সাম্মা] এক কাপড়ে সমগ্র শরীর পেঁচিয়ে নিয়ে শরীরকে এভাবে ঢাকা যে, হাঁটু উঁচু করে বসলে নীচ থেকে লজ্জাস্তান খোলা থাকে এবং দুই সময়ে সালাত আদায় করিতে- ফাজরের পর এবং আসরের পর।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৯ঃ তাশরীকের দিনসমূহে সওম পালন
২৪১৮. উম্মু হানী [রাদি.]-এর মুক্তদাস আবু মুররাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি আবদুল্লাহ ইবনি আমরের সাথে তার পিতা আমর ইবনিল আসের [রাদি.] এর নিকট যান। তিনি তাহাদের উভয়ের সামনে খাবার এনে তা খেতে বলিলেন। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, আমি সওমরত আছি। আমর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ দিনগুলোতে আমাদেরকে সওম ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তা হল তাশরীকের দিনগুলো।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪১৯. উকবাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আরাফাহর দিন, কুরবানীর দিন এবং তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে আমাদের মুসলিমদের ঈদের দিন, এগুলো পানাহারের দিন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫০ঃ শুধু জুমুআহর দিনকে সওম পালনের জন্য নির্দিষ্ট করা নিষেধ
২৪২০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কেবল জুমুআহর দিন সওম না রাখে। [রাখতে চাইলে] জুমুআহর আগে অথবা পরের দিনও যেন সওম রাখে।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫১ঃ কেবল শনিবারকে সওম পালনের জন্য নির্দিষ্ট করা নিষেধ
২৪২১. আবদুল্লাহ ইবনি বুসর আস-সুলামী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার বোন আস-সাম্মা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা শুধু শনিবারে সওম রেখো না। তবে ঐ দিন তোমাদের উপর ফারয কৃত সওম রাখতে পারো। তোমাদের কেউ যদি সওম ভঙ্গের জন্য আঙ্গুর গাছের ছাল বা অন্য গাছের ডালা ছাড়া কিছু না পায়, তাহলে তা চিবিয়ে সওম ভঙ্গ করিবে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদিসটি মানসূখ।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫২ঃ এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে
২৪২২. জুয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] জুমুআহর দিন তাহাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি সওম পালন অবস্তায় ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি গতকাল সওম রেখেছিলে? তিনি বলিলেন, না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি আগামীকাল সওম পালনের ইচ্ছা আছে? তিনি বলিলেন, না। তিনি বলিলেনঃ তাহলে সওম ভঙ্গ করো।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪২৩. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তার নিকট শুধু শনিবার সওম রাখা নিষেধ সম্পর্কিত হাদিস আলোচনা করা হলে তিনি বলেন, এটাতো হিমসী বর্ণিত হাদিস। {২৪২৩}
{২৪২৩} বায়হাক্বী। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ মাকতু মারফুজ
২৪২৪. আল-আওযাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, শনিবারের সওম সম্পর্কিত ইবনি বূসর বর্ণিত হাদিসটি আমি গোপন রেখেছিলাম। কিন্ত আমি দেখলাম যে, তা ব্যপকভাবে প্রসার পেয়েছে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিয়াছেন, এ হাদিসটি মিথ্যা।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
অনুচ্ছেদ-৫৩ঃ সারা বছর সওম পালন
২৪২৫. আবু ক্বাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিভাবে সওম রাখেন? এতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসন্তুষ্ট হলেন। উমার [রাদি.] তা দেখেতে পেয়ে বলিলেন, আমরা আল্লাহকে আমাদের রব, ইসলামকে আমাদের দ্বীন এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] কে আমাদের নাবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে তাহাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই। উমার [রাদি.] উক্ত বাক্যটি বারবার বলিতে লাগলেন, এক পর্যায়ে নাবী [সাঃআঃ] এর অসন্তুষ্টির ভাব দূরীভূত হল। এরপর উমার [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ বাক্তি কেমন যে সারা বছর সওম রাখে? তিনি বলিলেনঃ এমনও কি কেউ সামর্থ্য রাখে? তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ বাক্তি কেমন যে দুই দিন সওম পালন করে এবং একদিন রোযাহীন থাকে? তিনি বলিলেন, কেউ কি এরূপ করিতে সহ্মম? তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ ব্যক্তি কেমন যে একদিন সওম পালন করে এবং একদিন রযাহীন থাকে? তিনি বলিলেন, তা দাউদ [আঃ] এর সাওমের মতই। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ ব্যক্তির সওম কেমন যে একদিন সওম রেখে দুদিন রোযাহীন থাকে? তিনি বলিলেনঃ আমি এটাই কামনা করি, যেন আমাকে এরূপ শক্তি দেয়া হয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ প্রতি মাসে তিনটি সওম এবং এক রমাযান থেকে পরবর্তী রমাযান পর্যন্ত প্রতি বছরের রমাযানের সওম, এটাই হচ্ছে সর্বদা সওম পালনের সমতুল্য। আরাফাহ্ দিনের সওম আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, এর দ্বারা তিনি পূর্বের বছর এবং পরের বছরের গুনাহ ক্ষমা করবেন। আর আশূরার সওম, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি [এর বিনিময়ে] আগামী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করবেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪২৬. আবু ক্বাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিস বর্ণিত। তাতে অতিরিক্ত রয়েছেঃ তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালনের ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? তিনি বলিলেনঃ ঐ দিন আমি জন্মগ্রহন করেছি এবং ঐ দিনই আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪২৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমার ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার সাথে সাক্ষাত করে বলিলেনঃ আমাকে কি জানানো হয়নি যে, তুমি বলেছো, আল্লাহর শপথ! আমি সারা দিন সওম রাখবো এবং সারা রাত দাঁড়িয়ে সলাত পড়বো? তিনি বলিলেন হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এরূপ বলেছি। তিনি বলিলেনঃ সলাত আদায় করিবে এবং নিদ্রায়ও যাবে। সওম পালন করিবে এবং কোন দিন সওম থেকে বিরত থাকিবে। তুমি প্রতি মাসে [১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখ] তিনটি সওম রাখো, এটাই সারা বছর সওম পালনের সমতুল্য। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এর চেয়ে অধিক শক্তি রাখি। তিনি বলিলেনঃ তাহলে একদিন সওম রাখো এবং একদিন সওম থেকে বিরত থেকো। এটিই সর্বোত্তম সওম এবং এটিই হচ্ছে দাউদ [আঃ]-এর সওম। আমি বলিলাম, আমি এর চাইতেও অধিক শক্তি রাখি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ এর চেয়ে উত্তম সওম নেই।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৪ঃ হারাম [সম্মানিত] মাসসমূহে সওম পালন সম্পর্কে
২৪২৮. বাহিলিয়্যাহ গোত্রীয় মুজীবা নাম্নী নামক জনৈক মহিলা হইতে তার পিতা অথবা চাচা হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি [পিতা অথবা চাচা] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে দেখা করে চলে যান। অতঃপর এক বছর পরে তিনি আসেন। তখন তার মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটেছিলো। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে চিনতে পারেননি? তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কে? তিনি বলিলেন, আমি ঐ বাহিলী, আমি গত বছর এসেছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কি কারণে তোমার এরূপ পরিবর্তন ঘটলো, অথচ তুমি তো সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলে? আমি বলিলাম, আমি আপনার নিকট থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকে রাত ছাড়া আহার করিনি [ দিনে অনবরত সওম রেখেছি]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি তোমার নাফসকে কেন এরূপ কষ্ট দিয়েছো? অতঃপর তিনি বলেনঃ ধৈর্যের মাস [রমাযান] এবং প্রতি মাসে একটি করে সওম রাখো। তিনি বলিলেন, আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন, কেননা আমার সামর্থ্য আছে। তিনি বলিলেনঃ দুদিন সওম রাখো। লোকটি বলিলেন, আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বলিলেনঃ [ প্রতি মাসে] তিন দিন সওম রাখো। লোকটি বলিলেন, আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বলিলেনঃ তুমি হারাম মাসগুলোতে সওম রাখো এবং সওম বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে সওম রাখো এবং সওম বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে সওম রাখো এবং সওম বর্জনও করো। একথা বলে তিনি তিনটি আঙ্গুল একত্র করার পর ফাঁক করে দিলেন। {২৪২৮}
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৫ঃ মুহাররম মাসের সওম
২৪২৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ রমাযান মাসের পর আল্লাহর মাস মুহররম-এর সওম হচ্ছে সর্বোত্তম এবং ফরয সালাতের পর রাতের সলাতই সর্বোত্তম।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৬ঃ রজব মাসের সওম
২৪৩০. উসমান ইবনি হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি সাঈদ ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে রজব মাসের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] আমাকে জানিয়েছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অনবরত সওম পালন করিতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি এ মাসে সওম বর্জন করবেন না। আবার তিনি অনবরত সওম বর্জন করিতেন, এমনকি আমরা বলতাম তিনি [হয়তো] আর সওম রাখবেন না।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৭ঃ শাবান মাসের সওম
২৪৩১. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূল্লুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট সকল মাসের মধ্যে শাবান মাসে অধিক সওম রাখা অধিক পছন্দনীয় ছিলো? তিনি এ মাসে সওম অব্যাহত রেখে তা রমযানের সাথে যুক্ত করিতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ শাওয়াল মাসের সওম
২৪৩২. উবাইদুল্লাহ ইবনি মুসলিম আল-ক্বারাশী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে জিজ্ঞেস করেছি [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] অথবা তাঁকে সারা বছর সওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেনঃ তোমার স্ত্রীর প্রতি তোমার কর্তব্য রয়েছে। সুতরাং তুমি রমাযান মাস এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট মাসে আর প্রতি বুধবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন করো। তুমি এরূপ করলে সারা বছরই সওম রাখলে।
দুর্বলঃ যইফ আল-জামিউস সাগীর [১৯১৪], মিশকাত [২০৬১], যইফ সুনান আত-তিরমিজি [১২২/৭৫২]। ২৪৩২ তিরমিজি, নাসায়ী। সানাদে উবাইদুল্লাহ বিন মুসলিম মাজহুল [অজ্ঞাত] ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ হাদিসটি গরীব। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ শাওয়াল মাসের ছয় দিন সওম পালন
২৪৩৩. নাবী [সাঃআঃ] এর সাহাবী আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযান মাসের সওম রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সওম রাখলো, সে যেন সারা বছর সওম রাখলো।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬০ঃ নাবী [সাঃআঃ] কিভাবে সওম পালন করিতেন
২৪৩৪. নাবী [সাঃআঃ] এর স্ত্রী আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একাধারে সওম রাখতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি সওম বর্জন করবেন না। আবার তিনি সওম বর্জন করিতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি হয়তো আর সওম রাখবেন না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে রমাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে পূর্ণ মাস সওম পালন করিতে দেখিনি। আর আমি তাঁকে শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে অধিক [নফল] সওম রাখতে দাখিনি।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৩৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অর্থের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ তিনি [শাবান মাসে] সামান্য কদিন ছাড়া গোটা মাসই সওম পালন করিতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৬১ঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন
২৪৩৬. উসামাহ ইবনি যায়িদ [রাদি.] এর আযাদকৃত গোলাম হইতে বর্ণীতঃ
তিনি উাসমাহ [রাদি.] এর সাথে তার কোন মালের সন্ধানে ওয়াদিয়ুল কুরায় যান। উসামাহ [রাদি.] প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন করিতেন। তার মুক্তদাস তাহাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার কেন সওম রাখেন অথচ আপনি একজন বৃদ্ধ মানুষ। নাবী [সাঃআঃ] সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম রাখতেন। তাঁকে এর কারন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার আমলসমূহ পেশ করা হয়।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬২ঃ [যিলহাজ্জের] দশ দিন সওম পালন
২৪৩৭. হুনাইদাহ ইবনি খালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার স্ত্রী হইতে এবং তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর কোন এক স্ত্রী সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যিলহাজ্জ মাসের নয় তারিখ পর্যন্ত, আশূরার দিন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন, মাসের প্রথম সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম রাখতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৩৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মহান আল্লাহর নিকট যে কোন দিনের সৎ আমলের চাইতে যিলহাজ্জ মাসের দশ প্রথম দিনের আমলের অধিক প্রিয়। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? তিনি বলিলেনঃ না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে জিহাদে বের হয় এবং এর কোন একটি নিয়েও ফিরে না আসে তার কথা স্বতন্ত্র।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৩ঃ যিলহাজ্জের দশ দিন সওম না রাখার বর্ণনা
২৪৩৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে কখনো [যিলহাজ্জ মাসে] দশ দিন সওম পালন করিতে দেখিনি।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৪ঃ আরাফাহর দিন আরাফাহর ময়দানে সওম পালন প্রসঙ্গ
২৪৪০. ইকরিমাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা আবু হুরায়রা [রাদি.] এর কাছে তারঘরে অবস্থান করছিলাম। তখন তিনি আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফাহর দিন আরাফাহর ময়দানে সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। {২৪৪০}
দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬০৬৯], যয়ীফ সুনান ইবনি মাজাহ [৩৭৮/১৭৩২], সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফাহ [৪০৪], মিশকাত[২০৬৩]। {২৪৪০} ইবনি মাজাহ, আহমাদ, বায়হাক্বী। সানাদে মাহদী হাজারী অজ্ঞাত [মাজহুল]। যেমন বলিয়াছেন ইবনি হাযম মুহাল্লা গ্রন্থে। ঈমাম যাহাবী একে সর্মথন করেছেন আল-মীযান গ্রন্থে এবং ইবনি হাতিম সূত্রেও অনুরূপ উল্লেখ হয়েছে। আত-তাহযীব গ্রন্থে ইবনি মাঈন থেকেও অনুরূপ উক্তি রয়েছে। ইবনি হাযম ও ইবনিল কাইয়্যিম হাদিসটিকে যয়ীফ বলিয়াছেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৪১
আল-হারিস কন্যা উম্মুল ফাদল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আরাফাহর দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সওম পালন করেছেন কিনা এ নিয়ে কতিপয় লোক তার নিকট বিতর্ক করেন। তাহাদের কেউ বলিলেন, তিনি সওম রেখেছেন, আবার কতিপয় বলিলেন, তিনি সওম রাখেননি। সুতরাং আমি তাহাঁর কাছে এক পেয়ালা দুধ পাঠালাম, তখন তিনি তাহাঁর উষ্ট্রীর পিঠের উপর আরাফাহইতে অবস্থান করছিলেন। তিনি দুধটুকু পান করিলেন। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৫ঃ আশূরার দিন সওম পালন
২৪৪২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জাহিলিয়াতের যুগে কুরাইশরা আশূরার সওম পালন করতো। জাহিলী যুগে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -ও এ দিন সওম রাখতেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনায় এসে এ দিন সওম রেখেছেন এবং লোকদেরকেও সওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর রমযানের সওম ফরয হলে সেটিই ফরয হিসেবে বহাল হলো এবং আশূরার দিন সওম রাখার আবশ্যকতা পরিত্যক্ত হলো। ফলে যার ইচ্ছা সওম রাখতো এবং যার ইচ্ছা ত্যাগ করতো।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৪৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আশূরা এমন দিন ছিলো যে, জাহিলী যুগে আমরা এ দিন সওম পালন করতাম। অতঃপর রমাযান মাসের সওম ফারয করা হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ এটি আল্লাহর দিনসমূহের একটি দিন। কাজেই যার ইচ্ছা সওম রাখুক, আর যার ইচ্ছা তা ত্যাগ করুক।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৪৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মাদীনাহয় এসে ইয়াহুদীদের আশূরার দিন সওম পালনরত পেলেন। তাহাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বললো, এটি একটি মহান দিন, যেদিন মহান আল্লাহ মূসা [আঃ]-কে ফেরাউনের উপর বিজয়ী করেছেন। সুতরাং এ মহান দিনের সম্মানার্থে আমরা সওম পালন করি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমাদের চাইতে আমরা মূসা [আঃ] -এর বেশি হকদার। অতঃপর তিনি ঐদিন সওম পালনের নির্দেশ দেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ বর্ণিত আছে যে, মুহাররমের নয় তারিখ আশূরার দিন
২৪৪৫. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] যখন নিজে আশূরার দিন সওম রাখলেন এবং আমাদেরকেও এ সওম পালনের নির্দেশ দেন, তখন লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা এ দিনটিকে সম্মান করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আগামী বছর এলে আমরা নবম দিনও সওম পালন করবো। কিন্ত আগামী বছর না আসতেই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইনতিকাল করেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৪৬. আল-হাকাম ইবনি আরাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর নিকট এলাম। এ সময় তিনি মাসজিদুল হারামে তার চাঁদরে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। আমি তাহাকে আশূরার সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন তুমি মুহাররমের নতুন চাঁদ দেখবে, তখন থেকে গণনা করিতে থাকিবে। এভাবে যখন নবম দিন আসবে তখন সওম অবস্থায় ভোর করিবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] কি এভাবে সওম রাখতেন? তিনি বলেন, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এভাবেই সওম রাখতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ আশূরার সওম পালনের ফাযীলত
২৪৪৭. আব্দুর রহমান ইবনি মাসলামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার চাচা হইতে বর্ণীতঃ
একদা আসলাম গোত্রের লোকেরা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট আগমন করলে তিনি বলিলেনঃ তোমরা কি তোমাদের এই দিনে সওম রেখেছো? তারা বললো, না। তিনি বলিলেনঃ দিনের বাকী অংশটুকু [পানাহার না করে] পূর্ণ করো এবং এদিনের সওম ক্বাযা করে নাও। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ আশূরার দিন। {২৪৪৭}
২৪৪৭ বায়হাক্বী। সনদের আব্দুর রহমান বিন মাসলামাহ মাক্ববূল। ঈমাম বায়হাক্বী বলেনঃ তিনি অজ্ঞাত [মাজহুল]। তার পিতার নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আব্দুল হাক্ব বলেনঃ সওম ক্বাযা করার এই হাদিস সহিহ নয়। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৮ঃ একদিন সওম রাখা ও একদিন বিরতি দেয়া
২৪৪৮. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিয়াছেনঃ আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সওম হলো দাউদ [আঃ] -এর সওম এবং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সলাত হলো দাউদ [আঃ] -এর সলাত। তিনি রাতের অর্ধেক অংশ ঘুমাতেন এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্বিয়াম করিতেন। আবার এক ষষ্ঠমাংশ ঘুমাতেন। আর তিনি একদিন সওম ত্যাগ করিতেন এবং একদিন সওম রাখতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৯ঃ প্রতি মাসে তিনদিন সওম পালন
২৪৪৯.ইবনি মিলহান আল-ক্বায়সী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আইয়ামে বীয অর্থৎ চাদেঁর ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সওম পালনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ এগুলো সারা বছর সওম রাখার সমতুল্য।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৫০. আব্দুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রতি মাসের প্রথম দিকে তিনদিন সওম পালন করিতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭০ঃ যিনি বলেন, [ঐ তিনটির দুটি হলো] সোম ও বৃহস্পতিবার
২৪৫১. হাফসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রতি মাসে তিন দিন সওম রাখতেনঃ [প্রথম সপ্তাহে] সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে সোমবার।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৪৫২. হুনাইদাহ আল-খুযাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার মা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ [রাদি.] এর কাছে গিয়ে সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে প্রতি মাসে তিন দিন সওম পালনের নির্দেশ দিতেন। মাসের প্রথম সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং [দ্বিতীয় সপ্তাহের] বৃহস্পতিবার। {২৪৫২}
মুনকারঃ মিশকাত [২০৬০]। ২৪৫২ নাসায়ী, আহমাদ। সানাদে হুনাইদার মায়ের পরিচয় জানা যায়নি। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
অনুচ্ছেদ-৭১ঃ যিনি বলেন, মাসের যে কোন দিন সওম পালন করা যায়
২৪৫৩. মুআযাহ [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি আয়িশাহ [রাদি.] -কে জিজ্ঞেস করি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করি , মাসের কোন্ কোন্ দিনে সওম রাখতেন? তিনি বলিলেন, তিনি নির্দিধায় যে কোন তিন দিন সওম রাখতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭২ঃ সওম পালনের নিয়্যাত সম্পর্কে
২৪৫৪. নাবী [সাঃআঃ] এর স্ত্রী হাফসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি ফাজরের পূর্বে সওমের নিয়্যাত করেনি তার সওম হয়নি।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭৩ঃ এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে
২৪৫৫. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমার কাছে এসে বলিতেনঃ তোমাদের কাছে কোন খাবার আছে কি? আমরা না বললে তিনি বলিতেনঃ আমি সওম রাখলাম। একদিন তিনি [সাঃআঃ] আমাদের কাছে আগমন করলে আমরা বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেকে কিছু হাইস হাদিয়া দেয়া হয়েছে। আমরা তা আপনার জন্য রেখে দিয়েছি। তিনি বলিলেনঃ তা আমার কাছে নিয়ে এসো। অথচ তিনি সওম অবস্থায় ভোর করেছেন, পরে তা খেয়ে ইফতার করিলেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
২৪৫৬. উম্মু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন ফাত্বিমাহ [রাদি.] এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বাম পাশে বসলেন আর উম্মু হানী [রাদি.] বসলেন তাহাঁর ডান পাশে। বর্ণনাকারী বলেন, এক দাসী এক পাত্র পানীয় এনে তাঁকে দিলে তিনি তা থেকে কিছু পান করার পর উম্মু হানীর দিকে পাত্রটি এগিয়ে দিলেন এবং তিনি তা থেকে পান করিলেন। উম্মু হানী [রাদি.] বলিলেন হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে এখন ইফতার করলাম, আমি তো সওম রেখেছিলাম! তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি এগুলো ক্বাযা করিতে চাও? তিনি বলিলেন, না। তিনি বলিলেনঃ যদি তা নফল [সওম] হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭৪ঃ যিনি বলেন, নফল সওম ভঙ্গ করলে এর ক্বাযা করিতে হইবে
২৪৫৭. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমাকে ও হাফসাহ [রাদি.] -কে কিছু খাবার উপঢৌকন দেয়া হয়। তখন আমরা দুজনেই সওম অবস্থায় ছিলাম। আমরা সওম ভাঙ্গলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এলে আমরা তাঁকে বলিলাম হে, আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে হাদিয়া দেয়া হয়েছিল। আমাদের তা খেতে ইচ্ছে হওয়ায় আমরা তা খেয়ে সওম ভেঙ্গে ফেলি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ কোন অসুবিধা নেই, তবে এর পরিবর্তে অন্য দিন সওম রেখে নিবে। {২৪৫৭}
দুর্বলঃ যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [১১৮/৭৩৮] পরবর্তী দিন শব্দে, যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬৩০৩], মিশকাত [২০৮০]। ২৪৫৭ তিরমিজি, আহমাদ। আবু দাউদের সানাদে যুমাইল রয়েছ। হাফিয বলেনঃ তিনি অজ্ঞাত [মাজহুল]। আর তিরমিজিতে যুহরীর হাদিস সম্পর্কে ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ আমি এ বিষয়ে ঈমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আয়িশাহ সূত্রে উরওয়াহ হইতে যুহরীর হাদিসটি সহিহ নয়। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭৫ঃ স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর নফল সওম রাখা
২৪৫৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ স্বামীর উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া স্ত্রী রমাযান মাসের সওম ব্যতীত নফল সওম রাখবে না এবং তার উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে তার ঘরে আসার অনুমতি দিবে না।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৫৯. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তার কাছে এক মহিলা এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্বামী সাফওয়ান ইবনি মুআত্তাল যখন আমি সলাত আদায় করি তখন আমাকে প্রহার করে। আমি সওম রাখলে সে আমাকে সওম ভঙ্গ করায় এবং সূর্য উঠার পূর্বে সে ফাজরের সলাত আদায় করে না। বর্ণনাকারী বলেন, সেখানে সাফওয়ানও উপস্থিত ছিলেন। তার স্ত্রী তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে সে সম্পর্কে তিনি [সাঃআঃ] তাহাকে জিজ্ঞেস করিলেন। জবাবে তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! তার অভিযোগ হলো, আমি যখন সলাত আদায় করি সে আমাকে প্রহার করে, কারণ হচ্ছে, সে এমন দুটি দীর্ঘ সূরাহ দিয়ে সলাত আদায় করে যা পাঠ করিতে আমি তাহাকে নিষেধ করি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বলিলেনঃ [ফাতিহার পর] সংক্ষিপ্ত একটি সূরাহই লোকদের জন্য যথেষ্ঠ। তার অভিযোগ, আমাকে সওম ভাঙ্গতে বাধ্য করে, ব্যাপার এই যে, সে প্রায়ই সওম রাখে। আমি একজন যুবক, ধৈর্যধারণ করিতে পারিনা। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই দিনই বলিলেনঃ কোন নারী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া [নাফল] সওম রাখবে না। এবং তার অভিযোগ, সূর্য উঠার পূর্বে আমি [ফাজরের] সলাত আদায় করি না, কারণ হলো, আমার পরিবারের লোকেরা সর্বদা কাজে [পানি সরবরাহে] ব্যস্ত থাকে। ফলে সূর্য উঠার আগে আমরা ঘুম থেকে জাগতে পারি না। তার কথা শুনে তিনি বলিলেনঃ যখনই তুমি জাগ্রত হইবে তখনই সলাত আদায় করে নিবে।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ সওম পালনকারীকে বিবাহভোজের দাওয়াত দিলে
২৪৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কাউকে খাওয়ার দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন তাতে যোগদান করে। সে রোযাহীন হলে যেন খাবার খায়, আর সওম রেখে থাকলে যেন দাওয়াতকারীর জন্য দুআ করে। হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এখানে সলাত অর্থ দুআ।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ খাবার খেতে ডাকলে সওম পালনকারী যা বলবে
২৪৬১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কোন [সওম পালনকারী] ব্যক্তিকে খাবার দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন বলে, নিশ্চয়ই আমি রোযাদার।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭৮ঃ ইতিকাফ
২৪৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] রমাযান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করিতেন যতদিন না আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুদান করেন। এরপর তাহাঁর স্ত্রীগণও [ইতিকাফ করেন]।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৩. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] রমাযান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন। এক বছর তিনি ইতিকাফ করিতে না পারায় পরবর্তী বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৪. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফের ইচ্ছা করলে ফজরের সলাত আদায়ের পর তাহাঁর ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করিতেন। তিনি বলেন, একবার তিনি রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফের ইচ্ছা করিলেন। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, তিনি একটি তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলে তা খাটানো হয়। এরপর তা দেখে আমিও আমার জন্য একটি তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলে তা খাটানো হয়। তিনি বলেন, আমি ছাড়া নাবী [সাঃআঃ] অন্যান্য স্ত্রীরাও অনুরূপ তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলে তাহাদের জন্যও তা খাটানো হয়। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] ফাজর সলাতের পর তাবুঁগুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ এগুলো কি? এটা এমন কি ভালো কাজ যা তোমরা করিতে চাইছো? আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, তিনি নির্দেশ দিলে তাহাঁর তাঁবু ভেঙ্গে ফেলা হলো। স্ত্রীগণও নির্দেশ দিলে তাঁদের তাঁবুগুলোও ভেঙ্গে ফেলা হলো। অতঃপর তিনি শাওয়াল মাসের প্রথম দশক পর্যন্ত ইতিকাফ পিছিয়ে দেন।
ইমামা আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদিস ইবনি ইসহাক্ব ও আল-আওযাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইয়াহিয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ সূত্রে বর্ণনা করে বলেন, নাবী [সাঃআঃ] শাওয়াল মাসে বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ ইতিকাফ কোথায় করিবে?
২৪৬৫./ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] রমাযান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন। নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদের যে স্থানে ইতিকাফ করিতেন আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] ঐ স্থানটি আমাকে দেখিয়েছেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] প্রতি রমাযানে দশ দিন ইতিকাফ করিতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৮০ঃ ইতিকাফকারী প্রয়োজনে [মাসজিদ থেকে বেরিয়ে] ঘরে প্রবেশ করিতে পারে
২৪৬৭. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফরত অবস্থায় স্বীয় মাথা আমার নিকটবর্তী করিতেন। আর আমি তাহাঁর মাথা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি মানাবীয় প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করিতেন না।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যুহরী হইতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে উরওয়াহ ও আমরাহর বর্ণনার উপর কেউই ঈমাম মালিকের অনুসরণ করেননি এবং মামার, যিয়াদ ইবনি সাদ প্রমুখ যুহরীর মাধ্যমে উরওয়াহ হইতে আয়িশাহ [রাদি.] সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। {২৪৬৮}
আমি এটি সহিহ এবং যঈফেও পাইনি।{২৪৬৮} এর পূর্বেরটি দেখুন। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২৪৬৯.আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাহাঁর ঘরের ফাঁক দিয়ে তাহাঁর মাথা আমার দিকে এগিয়ে দিতেন। আমি হায়িয অবস্থায় তাহাঁর মাথা ধুয়ে দিতাম এবং চিরুনী করে দিতাম।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৭০. সাফিয়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফরত ছিলেন। এক রাতে আমি তাহাঁর সাথে দেখা করিতে যাই। তাহাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর আমি ঘরে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালে তিনিও আমাকে এগিয়ে দিতে উঠলেন। তার [সাফিয়্যাহর] বাসস্থান ছিলো উসামাহ ইবনি যায়িদের ঘরের সাথে। দুজন আনসারী ব্যক্তি ঐ পথ অতিক্রমকালে নাবী [সাঃআঃ] -কে দেখিতে পেয়ে দ্রুত চলে যেতে লাগলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমরা স্বাভাবিক গতিতে হাঁটো। এ মহিলাটি হচ্ছেন হুয়াইর কন্যা সাফিয়্যাহ। তারা উভয়ে বলিলেন, সুবহানাল্লাহ, হে আল্লাহ রসূল। তিনি বলিলেনঃ শয়তান রক্তপ্রবাহের ন্যায় মানুষের শিরায়-উপশিরায় প্রবেশ করে। আমার আশঙ্কা হলো, সে তোমাদের মনে কুধারণা বা খারাপ কিছুর উদ্রেক করিতে পারে।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৭১. আয-যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। সাফিয়্যাহ [রাদি.] বলেন, তিনি যখন উম্মু সালামাহ [রাদি.] এর দরজার নিকটস্থ মাসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌছলেন তখন তাঁদের পাশ দিয়ে দুজন লোক অতিক্রম করলো। অতঃপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদিসটির অর্থে বর্ণনা করেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮১ঃ ইতিকাফকারীর রোগী দেখিতে যাওয়া
২৪৭২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ইতিকাফরত অবস্থায় রোগীর কাছে যেতেন এবং তাহাকে দেখেই চলে যেতেন, সেখানে [অবস্থান করে] তাহাকে কিছু জিজ্ঞেস করিতেন না। ইবনি ঈসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণনায় রয়েছেঃ আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ইতিকাফ অবস্থায় রোগী দেখিতে যেতেন। {২৪৭২}
দুর্বলঃ মিশকাত [২১০৫]। ৪৭২ বায়হাক্বি। সানাদে লাইস বিন আবু সুলাইম রয়েছে। তিনি শেষ বয়সে হাদিস সংমিশ্রণ করিতেন। তার হাদিসগুলো পৃথক করা যায়নি। সুতরাং তাহাকে বর্জন করা হয়েছে। আল্লামা মুনযিরী বলেনঃ তিনি সমালোচিত। হাফিয আত-তালখীস গ্রন্থে বলেনঃ তিনি যয়ীফ। রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৭৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হলোঃ সে কোন রোগী দেখিতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করিবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করিবে না, তার সাথে সহবাস করিবে না এবং অধিক প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না, সওম না রেখে ইতিকাফ করিবে না এবং জামে মাসজিদে ইতিকাফ করিবে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উল্লিখিত বিষয়গুলোকে আয়িশাহ [রাদি.] সুন্নাত বলিয়াছেন এ কথাটি আবদুর রহমান ইবনি ইসহাক্ব ব্যতীত অন্য কেউ বলেননি। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তিনি একে আয়িশাহ [রাদি.] এর উক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
২৪৭৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উমার [রাদি.] জাহিলী যুগে মানত করেছিলেন যে, তিনি এক রাত বা এক দিন কাবা ঘরের চত্বরে ইতিকাফ করবেন। তিনি এ বিষয়ে নাবী [সাঃআঃ] -কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ইতিকাফ করো এবং সওম পালন করো।
সহীহঃ তবে “অথবা একদিন” এবং “সওম পালন করো” – এ কথাটুকু বাদে , রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৭৫. আবদুল্লাহ ইবনি বুদাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
উক্ত সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। একদা উমার [রাদি.] ইতিকাফরত অবস্থায় মাসজিদের বাইরে লোকদের তাকবীর ধ্বনি শুনে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আব্দুল্লাহ! এটা কিসের শব্দ? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের মুক্ত করে দিয়েছেন। তিনি বলিলেন, তুমি এ দাসীটিকেও [মুক্ত করে] তাহাদের সাথে পাঠিয়ে দাও।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮২ঃ মুস্তাহাযা মহিলার ইতিকাফ
২৪৭৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে তাহাঁর কোন এক স্ত্রী ইতিকাফ করেছিলেন। তাহাঁর স্রাবের রক্তের রং হলুদ ও লাল দেখা যেতো। আর আমরা কখনো তার [দু পায়ের মাঝে] একটি পাত্র রেখে দিতাম। এ অবস্থায় তিনি সলাত আদায় করিতেন।
রোজার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply