স্বপ্নের ব্যাখ্যা । স্বপ্ন তিন প্রকার। শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যতীত বলবে না

স্বপ্নের ব্যাখ্যা । স্বপ্ন তিন প্রকার। শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যতীত বলবে না

স্বপ্নের ব্যাখ্যা । স্বপ্ন তিন প্রকার। শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যতীত বলবে না, এই অধ্যায়ে মোট =৩৪ টি হাদীস (৩৮৯৩ – ৩৯২৬) >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩৫- স্বপ্নের ব্যাখ্যা, অধ্যায়ঃ (১-১০)=১০টি, হাদীস (৩৮৯৩ – ৩৯২৬)

১. অধ্যায়ঃ যে উত্তম স্বপ্ন মুসলমান ব্যক্তি দেখে বা তাহাকে দেখানো হয়
২. অধ্যায়ঃ স্বপ্নে নবী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দর্শন লাভ।
৩. অধ্যায়ঃ স্বপ্ন তিন প্রকার
৪. অধ্যায়ঃ কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে
৫. অধ্যায়ঃ ঘুমের মধ্যে যাহার সাথে শয়তান খেলা করে, সে যেন তা লোকের নিকট ব্যক্ত না করে
৬. অধ্যায়ঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হলে তা বাস্তবায়িত হয়। অতএব তা শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যতীত কারো কাছে বলবে না
৭. অধ্যায়ঃ কিভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হইবে?
৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে
৯. অধ্যায়ঃ অধিক সত্যবাদী লোকের স্বপ্ন অধিক পরিমাণে সত্য হয়
১০. অধ্যায়ঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা

১. অধ্যায়ঃ যে উত্তম স্বপ্ন মুসলমান ব্যক্তি দেখে বা তাহাকে দেখানো হয়

৩৮৯৩ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সৎলোকের উত্তম স্বপ্ন নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ। {৩২২৫}

{৩২২৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৯৮৩, ৬৯৮৮, ৬৯৯৪, মুসলিম ২২৬৪, তিরমিজি ২২৭২ আহমাদ ১১৮৬৩,১১৯৭৭,১২০৯৯,১৩৪৩৭,মালিক ১৭৮১,২১৩৭।

স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৮৯৪ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ। {৩২২৬}

{৩২২৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৯৮৩,৬৯৮৮,৬৯৯০,৭০১৭ মুসলিম ২২৬৩,২২৬৪, তিরমিজি ২২৭০,২২৯১, আবু দাঊদ ৫০১৭,৫০১৯ আহমাদ ৭১২৮,৭১৪৩,৭৫৮৬,২৭৩৭৮,৮১১৪,৮৩০১,৮৬০১,২৭২১৩,২৭৩১৩,১০২১২ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৮৯৫ আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ নেককার মুসলমান ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়াতের সত্তর ভাগের একভাগ। {৩২২৭}

{৩২২৭} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৯৮৯।রাওদুন নাদীর ৬১৬।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৮৯৬ উম্মু কুরয আল-কাবিয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ নবুওয়াতের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে, কিন্তু মুবাশশিরাত [শুভ সংবাদ] অবশিষ্ট আছে। {৩২২৮}

{৩২২৮} আহমাদ ২৬৬০০,দারেমী ২১৩৮।ইরওয়া ৮/১২৯।প্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৮৯৭ বনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ উত্তম স্বপ্ন নবুওয়াতের সত্তর ভাগের একভাগ। {৩২২৯}

{৩২২৯} মুসলিম ২২৬৫।রাওদুন নাদীর ৬২৬স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৮৯৮ উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর বাণী ঃ “তাহাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে সুসংবাদ” [১০ঃ৬৪] সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেনঃ ভালো স্বপ্ন যা মুসলিম ব্যক্তি দেখে অথবা তাহাকে দেখানো হয়। {৩২৩০}

{৩২৩০} তিরমিজি ২২৭৫,আহমাদ ২২১৭৯,২২২৩৪,২২২৬১,দারেমী ২১৩৬।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩৮৯৯ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রোগগ্রস্থ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পর্দা তুলে দেখলেন, লোকেরা সারিবদ্ধভাবে আবু বকর [রাদি.]-এর পেছনে আছে। তিনি বললেনঃ হে লোকসকল! মুসলিম ব্যক্তি যে ভালো স্বপ্ন দেখে অথবা তাহাকে যে ভালো স্বপ্ন দেখানো হয়, তা ব্যতিত নবুওয়াতের সুসংবাদের কিছুই অবশিষ্ট নাই। {৩২৩১}

{৩২৩১} মুসলিম ৪৭৯,নাসাঈ ১০৪৫,১১২০,আবু দাঊদ ৮৭৬,আহমাদ ১৯০৩, দারেমী ১৩২৫।ইরওয়া ৮/১৩০।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২. অধ্যায়ঃ স্বপ্নে নবী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দর্শন লাভ।

৩৯০০ আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখলো, সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখলো। কেননা শয়তান আমার স্বরূপ [সাদৃশ্য] ধারণ করিতে পারে না। {৩২৩২}

{৩২৩২} তিরমিজি ২২৭৬,আহমাদ ৩৫৪৯,৩৭৮৮,৪১৮২,৪২৯২,দারেমী ২১৩৯।রাওদুন নাদীর ২১৩৯ ৯৯৫,সহীহাহ ২৭২৯ ,মুখতাশরুশ শামাইল ৩৪৩। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯০১ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখলো, সে আমাকেই দেখলো। কেননা শয়তান আমার স্বরূপ ধারণ করিতে পারে না। {৩২৩৩}

{৩২৩৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১১০,৬১৯৭, মুসলিম ২২৬৬,আবু দাঊদ ৫০২৩,আহমাদ ৭১২৮,৭৫০০,৮৩০৩,৯০৬১,৯০৬৯,৯২০৪,৯৬৫০,৯৭১৩,৯৭৫৯।আল মুখতাসাব ৩৪৪।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯০২ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে সে আমাকেই দেখেছে। কেননা আমার স্বরূপ ধারণ শয়তানের পক্ষে সম্ভব নয়। {৩২২৪}

{৩২৩৪} মুসলিম ২২৬৮,আহমাদ ১৪৩৬৫।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯০৩ আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখেছে সে আমাকেই দেখেছে। কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করিতে পারে না। {৩২৩৫}

{৩২৩৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৯৯৭,আহমাদ ২৭৬৪৭। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯০৪ আবু জুহায়ফাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখেছে। কেননা আমার আকৃতি ধারণ করার সামর্থ্য শয়তানের নাই। {৩২৩৬}

{৩২৩৬} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।সহীহাহ ১০০৪। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩৯০৫ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখেছে সে আমাকেই দেখেছে। কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করিতে পারে না। {৩২৩৭}

{৩২৩৭} আহমাদ ৩৪০০।মুখতাসরূশ সামাইল ৩৪৭। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩. অধ্যায়ঃ স্বপ্ন তিন প্রকার

৩৯০৬ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকার। [১] আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, [২] বান্দার মনের খেয়াল এবং [৩] শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতি প্রদর্শনমূলক কিছু। অতএব তোমাদের কেউ পছন্দনীয় কিছু স্বপ্নে দেখলে তা ইচ্ছা করিলে অপরের কাছে ব্যক্ত করিতে পারে। আর সে অপছন্দনীয় কিছু স্বপ্নে দেখলে যেন তা ব্যক্ত না করে এবং উঠে নামায পড়ে। {৩২৩৮}

{৩২৩৮} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৭০১৭,মুসলিম ২২৬৩,তিরমিজি ২২৭০,২২৯১ আবু দাঊদ ৫০১৯ আহমাদ ৭৫৮৬,১০২১২,দারেমী ২১৪৩।সহীহাহ ১৩৪১।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯০৭ আওফ বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকার। [এক] শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতিজনক স্বপ্ন যাহার দ্বারা সে আদম সন্তানকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। [দুই] মানুষ জাগ্রত অবস্থায় যা দেখলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় স্বপ্নে তা দেখে। [তিন] স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ। অধস্তন রাবী বলেন, আমি তাহাকে বললাম, আপনি কি ঐ হাদিস রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলিলেন, এটা আমি রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] এর নিকট শুনিয়াছি, এটা আমি রাসুলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] এর নিকট শুনিয়াছি। {৩২৩৯}

{৩২৩৯} সহীহাহ ১৮৭০, আত তালীকু আলাত তানকীল ২/২৪২। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪. অধ্যায়ঃ কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে

৩৯০৮ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সে যেন বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে, তিনবার আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং সে যে দিকে কাৎ হয়ে শুয়েছিলো তা যেন পরিবর্তন করে। {৩২৪০}

{৩২৪০} মুসলিম ২২৬২, আবু দাঊদ ৫০২২, আহোমদ ১৪৩৬৫। সহীহাহ ১৩১১।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯০৯ আবু কাতাদাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এবং খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। অতএব তোমাদের কেউ স্বপ্নে অপছন্দনীয় কিছু দেখলে সে যেন তাহার বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে, আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত শয়তান থেকে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং যে পাশে শোয়া ছিলো তা পরিবর্তন করে। {৩২৪১}

{৩২৪১} সহিহুল বুখারী ৩২৯২, ৬৯৮৪, ৬৯৮৬, ৬৯৯৫, ৭০০৫, ৭০৪৪, মুসলিম ২২৬১, তিরমিজি ২২৭৭, আবু দাউদ ৫০২১, আহমাদ ২২০১৯, ২২০৫৮, ২২০৯২, ২২১৩৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৮৪, দারেমী ২১৪১, ২১৪২। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯১০ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ অপছন্দনীয় কিছু স্বপ্নে দেখলে সে যে কাতে শোয়া ছিলো তা যেন পরিবর্তন করে, তাহার বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে আল্লাহর নিকট স্বপ্নের কল্যাণ কামনা করে এবং তাহার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। {৩২৪২}

{৩২৪২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহাহ ১৩১১।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫. অধ্যায়ঃ ঘুমের মধ্যে যাহার সাথে শয়তান খেলা করে, সে যেন তা লোকের নিকট ব্যক্ত না করে

৩৯১১ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার মাথায় প্রহার করা হচ্ছে। আর প্রহারকারীকে দেখলাম যে, সে থর থর করে কাঁপছে। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ শয়তান তোমাদের কারো সাথে তামাশা করে, যাতে সে ভয় পায়। অতঃপর সকাল বেলা সে লোকদের নিকট তা বলে বেড়ায়। {৩২৪৩}

{৩২৪৩} আহমদ ৮৫৪৫ সহীহাহ ২৪৫৩। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯১২ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এর ভাষণদানরত অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নে যা দেখে, আমিও গত রাতে তদ্রূপ স্বপ্নে দেখলাম। আমার ঘাড়ে আঘাত করার ফলে আমার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গেল। আমি সেটির অনুসরণ করে তা ধরে ফেললাম এবং পুনরায় ঘাড়ে স্থাপন করলাম। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ ঘুমের মধ্যে তোমাদের কারো সাথে শয়তান খেলা করিলে সে যেন তা লোকের কাছে না বলে। {৩২৪৪}

{৩২৪৪} মুসলিম ২২৬৮, আহমদ ১৩৯৭৪।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯১৩ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সে যেন ঘুমের মধ্যে তাহার সাথে শয়তানের খেলা লোকের নিকট ব্যক্ত না করে। {৩২৪৫}

{৩২৪৫} মুসলিম ২২৬৮, আহমাদ ১৩৯৭৪। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬. অধ্যায়ঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হলে তা বাস্তবায়িত হয়। অতএব তা শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যতীত কারো কাছে বলবে না

৩৯১৪ আবু রাযীন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেন ঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা না করা পর্যন্ত তা উড়ন্ত পাখির পায়ে ঝুলন্ত জিনিস সদৃশ। তাহার ব্যাখ্যা করা হলে তা ছিটকে পড়ে যায় [বাস্তবায়িত হয়]। তিনি আরো বলেনঃ স্বপ্ন হচ্ছে নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, আমার মনে হয় তিনি আরো বলেছেনঃ সে যেন আমানতদার অথবা স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে পারদর্শী ব্যক্তি ব্যতীত কারো কাছে তা ব্যক্ত না করে। {৩২৪৬}

{৩২৪৬} তিরমিজি ২২৭৮, ২২৭৯, আবু দাউদ ৫০২০, আহমাদ ১৫৭৪৯, ১৫৭৫৮, ১৫৭৬২, ১৫৭৭২, দারেমী ২১৪৮। সহীহাহ ১১৯, ১২০।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭. অধ্যায়ঃ কিভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হইবে?

৩৯১৫ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তাহাদের নামসমূহ দ্বারা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করো, তাহাদের উপনাম দ্বারা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করো এবং প্রথম ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যা মোতাবেক সাধারণত বাস্তবায়িত হয়। {৩২৪৭}

{৩২৪৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাযাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহাহ ১১৯, ১২০।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে

৩৯১৬ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করিবে তাহাকে দুটি যবের দানার মধ্যে গিট লাগাতে বাধ্য করা হইবে এবং এজন্য তাহাকে শাস্তি দেয়া হইবে। {৩২৪৮}

{৩২৪৮} তিরমিজি ২২৮৩, আবু দাউদ ৫০২৪, আহমাদ ২২১৪, ৩৩৭৩। সহীহ আল-জামি ৬১৩৯। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯. অধ্যায়ঃ অধিক সত্যবাদী লোকের স্বপ্ন অধিক পরিমাণে সত্য হয়

৩৯১৭ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শেষ যমানায় মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন কদাচিৎ অবাস্তব হইবে। তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক সত্যবাদী তাহার স্বপ্নও অধিক সত্য হইবে। মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। {৩২৪৯}

{৩২৪৯} সহিহুল বুখারী ৬৯৮৩, ৬৯৮৮, ৬৯৯০, ৭০১৭, মুসলিম ২২৬৩, ২২৬৪, ২২৬৬, তিরমিজি ২২৭০,২২৯১, আবু দাউদ ৫০১৭, ৫০১৯, আহমাদ ৭১২৮, ৭১৪৩, ৭৫৮৬, ২৭৩৭৮, ৮১১৪, ৮৩০১, ৮৬০১, ২৭২১৩, ২৭৩১৩, ১০২১২ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০. অধ্যায়ঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা

৩৯১৮ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উহুদ থেকে নবী [সাঃআঃ] এর ফেরার পথে এক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে একটি ছায়াদার মেঘ দেখেছি, যা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঘি ও মধু পড়ছিলো!। লোকদেরকে দেখলাম যে, তাহারা হাতে তুলে নিয়ে তা পান করছে। কেউ বেশি পাচ্ছে এবং কেউ কম পাচ্ছে। আমি আরো দেখলাম যে, আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত একটি রশি ঝুলছে। আমি দেখলাম যে, আপনি তা ধরে উপরে উঠে গেছেন। আপনার পর আরেকজন তা ধরে উপরে উঠে গেল, তাহার পরে আরেকজন তা ধরে উপরে উঠে গেল। তাহার পরে আরেকজন তা ধরলে রশিটি ছিঁড়ে গেলো। পুনরায় তা জোড়া লেগে গেলো এবং সেও তা ধরে উপরে উঠে গেল। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করিতে দিন। তিনি বললেনঃ আচ্ছা, তুমি এর ব্যাখ্যা করো। আবু বকর [রাদি.] বলেন, মেঘখন্ড হলো ইসলামের ছায়া। পতিত ঘি ও মধু হলো কুরআন থেকে বেশি ও কম লাভকারী। আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত ঝুলন্ত রশি হলো সেই মহাসত্য যাহার উপর আপনি প্রতিষ্ঠিত। আপনি রশিটি ধরলেন এবং আল্লাহ আপনাকে উপরে উঠিয়ে নিলেন। আপনার পর তা আরেকজন ধরবে এবং আল্লাহ তাহাকে উপরে তুলে নিবেন। তাহার পরে আরেকজন ধরবে, সেও তা ধরে উপরে উঠে যাবে। এরপর আরেকজন রশিটি ধরবে এবং তা ছিঁড়ে যাবে। আবার তা জোড়া লাগবে এবং সেও তা ধরে উপরে উঠে যাবে। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি কিছু তো ঠিক বলেছো এবং কিছু বলেছো ভুল। আবু বকর [রাদি.] বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনাকে শপথ দিয়ে বলছি, আপনি আমাকে বলে দিন, আমি কোথায় ঠিক করেছি এবং কোথায় ভুল করেছি। নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আবু বকর! শপথ দিয়ে বলো না। [বুখারী, মুসলিম ও তিরমিজি]

{উপরোক্ত হাদীসে মোট ২ টি সানাদের ১টি বর্ণিত হইয়াছে, অপর সানাদটি হলোঃ} ২/৩৯১৮[১]. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] বর্ণনা করিতেন যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে আসমান-যমীনের মাঝে একটি ছায়াদার মেঘখন্ড দেখলাম, যা থেকে ঘি ও মধু ঝরে পড়ছে। ………অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরুপ। {৩২৫০}তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ ইবনি আব্বাস ও আবু হুরাইরার হাদিস সহীহ।{৩২৫০} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৭০৪৬, মুসলিম২২৬৯, তিরনিযী ২২৯৩, আবু দাউদ ২২৬৮, ৪৬৩২, আহমাদ ১২২৪, দারেমী ২১৫৬। ইবনি আব্বাসের হাদিস আয যিলাল১১৪৩। আবু হুরাইরার হাদিস আয যিলাল ১১৪৩, সহীহাহ ১২১।উক্ত হাদিসের রাবি ১। ইয়াকুব বিন হুমায়দ বিন কাসিব সম্পর্কে আবু জাফর আল-উকায়লী বলেন, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭০৮৬, ৩২/৩১৮ নং পৃষ্ঠা] স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯১৯ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর যুগে আমি ছিলাম অবিবাহিত যুবক। আমি মসজিদেই রাত কাটাতাম। আমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখলে সে তা নবী [সাঃআঃ] এর নিকট বর্ণনা করতো। আমি মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমার জন্য কোন কল্যাণ থাকলে তা আমাকে স্বপ্নে দেখাও যাহার ব্যাখ্যা নবী [সাঃআঃ] আমাকে বলে দিবেন। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি স্বপ্নে আমার নিকট দুজন ফেরেশতাহাকে আসতে দেখলাম। তাহারা আমাকে নিয়ে রওয়ানা হলেন, পথিমধ্যে আরেকজন ফেরেশতা তাহাদের সাথে মিলিত হন। তিনি বলেন, তুমি ভয় পেয়ো না। ফেরেশতাদ্বয় আমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চললো। তা ছিলো একটি কূপের ন্যায়। তাতে আমি কিছু সংখ্যক লোক দেখিতে পেলাম, যাদের কতককে আমি চিনতে পেরেছি। তাহারা আমাকে ডান দিকে নিয়ে গেলো। ভোর হলে আমি বিষয়টি হাফসা [রাদি.] কে বললাম। হাফসা [রাদি.] তা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট বলিলেন। তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ একজন সৎ লোক। সে যদি রাতে অধিক নামায পড়তো। যুহরী [রাদি.] বলেন, তখন থেকে আবদুল্লাহ [রাদি.] রাতে বেশী বেশী নামায পড়তেন। {৩২৫১}

{৩২৫১} বুখারী ৪৪০, ১১২২, ৩৭৩৯, ৭০২৯, ৭০৩১, মুসলিম ৪৫২৮, তিরমিজি ৩২১, নাসাঈ ৭২২, আহমাদ ৪৫৯৩, ৬২৯৪, দারেমী ১৪০০, ২১৫২। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯২০ খারাশাহ ইবনিল হুর্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মদীনায় পৌছে মসজিদে নববীতে প্রবীনদের এক মজলিসে বসলাম। একজন প্রবীন লোক তাহার লাঠিতে ভর দিয়ে আসলেন। লোকেরা বলল, যে ব্যক্তি কোন জান্নাতী লোক দেখে আনন্দিত হইতে চায়, সে যেন এই ব্যক্তির দিকে তাকায়। তিনি খুঁটির পেছনে দাঁড়িয়ে দু রাকআত সলাত আদায় করিলেন। আমি উঠে গিয়ে তাহাকে বললাম, লোকেরা এই এই বলেছে। তিনি বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, জান্নাত আল্লাহর এবং তিনি যাকে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করাবেন। আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর যুগে একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি দেখলাম এক ব্যক্তি যেন আমার নিকট এসে আমাকে বলল, চলুন। আমি তাহার সাথে গেলাম। সে আমাকে একটি বিরাট প্রশস্ত রাস্তায় পৌছে দিলো। আমার বাঁ দিকে একটি পথ দেখানো হলো। আমি সেই পথ ধরে অগ্রসর হইতে চাইলাম। সে বলল, তুমি এ পথের উপযুক্ত নও। অতঃপর আমার ডানে একটি রাস্তা দেখানো হলো। আমি সেই রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হলাম। আমি একটি পিচ্ছিল পাহাড়ে পৌছলে সে আমার হাত ধরে আমাকে ধাক্কা দিলো এবং আমি এর চূড়ায় পৌছে গেলাম, কিন্তু আমি সেখানে স্থির হয়ে থাকতে পরলাম না। আমি এর চূড়ায় লোহার একটি খুঁটি দেখিতে পেলাম। এর চূড়ায় ছিলো একটি সোনার হাতল। সে [ফেরেশতা] আমার হাত ধরে ধাক্কা দিলে আমি সেই হাতল ধরে ফেললাম। সে বলল, তুমি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছ? আমি বললাম, হাঁ। সে তাহার পা দ্বারা খুঁটিতে আঘাত করিলে আমি হাতলটি দৃঢ়ভাবে ধরে ফেললাম। তিনি বলিলেন, আমি ঘটনাটি নবী [সাঃআঃ] কে অবহিত করলাম। তিনি বলেনঃ তুমি উত্তম স্বপ্ন দেখেছো। বিরাট প্রশস্ত রাস্তাটি হলো হাশরের ময়দান। তোমার বাঁ দিকে যে রাস্তাটি চলে গেছে তা হলো জাহান্নামীদের রাস্তা। তুমি জাহান্নামী নও। তোমার ডান দিক দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে তা হলো জান্নাতীদের রাস্তা। পিচ্ছিল পাহাড়টি হলো শহীদদের মনযিল। যে হাতলটি তুমি আঁকড়ে ধরেছিলে, সেটি হলো ইসলামের হাতল। অতঃএব তুমি আমৃত্যু এটি আঁকড়ে ধরে রাখবে। আশা করি আমি জান্নাতবাসী হবো। স্বপ্নটি দেখেছিলেন আব্দুল্লাহ বিন সালাম [রাদি.]। {৩২৫২}

{৩২৫২} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩৮১৩, মুসলিম ২৪৮৪, আহমাদ ২৩২৭৫। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩৯২১ আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি মক্কা থেকে খেজুর গাছ সমৃদ্ধ এক এলাকায় হিজরত করছি। আমার মনে হলো যে, সেই এলাকা ইয়ামামা অথবা হাজার। কিন্তু আসলে তা মদীনা, যাহার নাম ইয়াসরিব। আমি আমার এ স্বপ্নে আরও দেখলাম যে, আমি তরবারি নাড়াচাড়া করছি এবং তা মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে গেল। আসলে তা ছিলো উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের উপর আগত বিপদ। আমি পুনরায় তরবারি নাড়া দিলে তা পূর্বাপেক্ষা আরো উত্তম রূপ ধারণ করিল। আসলে তা ছিলো আল্লাহ প্রদত্ত পরবর্তী সময়ের বিজয় [মক্কা বিজয়] এবং মুসলমানদের সম্মিলিত অভ্যূত্থান। আমি স্বপ্নে আরো দেখিতে পেলাম একটি গাভী। আল্লাহ কল্যাণময়। এরা ছিলেন উহুদের যুদ্ধের শহীদ একদল মুমিন। তাও ভালো, যা আল্লাহ গনীমতের মাল হিসাবে পরে আমাদের দান করিয়াছেন এবং তাও ভালো, যা সত্যের বিনিময় হিসাবে আল্লাহ আমাদের বদর যুদ্ধের দিন দান করেছিলেন। {৩২৫৩}

{৩২৫৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩৬২২, মুসলিম ২২৭২, দারেমী ২১৫৮। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯২২ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি স্বপ্নে আমার হাতে দুটি সোনার চুড়ি দেখিতে পেলাম। আমি ফুঁ দিতেই তা উড়ে চলে গেলো। আমি এই চুড়িদ্বয়ের এ ব্যাখ্যা করেছি যে, নবুয়াতের দু মিথ্যা দাবিদারের আবির্ভাব হইবে। তাহারা হলোঃ মুসায়লামা ও আনসী। {৩২৫৪}

{৩২৫৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩৬২১, মুসলিম ২২৭৩, তিরমিজি ২২৯২, আহমাদ ২৭৪৬৯। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯২৩ উম্মুল ফাদল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উম্মুল ফাদল [রাদি.] বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে আপনার দেহের কোন একটি অঙ্গ আমার ঘরে দেখিতে পেলাম। তিনি বলেনঃ তুমি ভালোই দেখেছো। ফাতিমাহ একটি সন্তান প্রসব করিবে এবং তুমি তাহাকে দুধ পান করাবে। অতএব ফাতিমাহ [রাদি.] হুসাইন অথবা হাসান [রাদি.] কে প্রসব করেন এবং তিনি তাহাকে কুসাম এর ভাগের দুধ পান করান। তিনি বলেন, আমি তাহাকে নিয়ে নবী [সাঃআঃ] এর নিকট গেলাম এবং তাহাকে তাহাঁর কোলে রাখলাম। সে পেশাব করে দিলে আমি তাহার কাঁধে আঘাত করলাম। নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি আমার সন্তানকে কষ্ট দিলে, আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন। {৩২৫৫}

{৩২৫৫} আবু দাউদ ৩৭৫। উক্ত হাদিসের রাবি মুআবিয়াহ বিন হিশাম সম্পর্কে আবুল ফারাজ আল-জাওযী বলেন, তাহার থেকে কেউ হাদিস শ্রবন করেনি তবে যারা হাদিস শ্রবন করেছে তাহারা বর্জন করেছে। আবু বাক্‌র আল-বায়হাকি বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতীম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। আবু হাতীম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হসদীস বর্ণনায় ভুল করেন। আহমাদ বিন হাম্বলণ বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন।[তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬০৬৭, ২৮/২১৮ নং পৃষ্ঠা]২.উক্ত হাদিসের রাবি সিকাম সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন, তাহার পূর্বে বর্ণিত হাদিস যারা শ্রবন করিয়াছেন তা সহীহ। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।[তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৫৭৯, ১২/১১৫ নং পৃষ্ঠা]স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩৯২৪ আবদুল্লাহ বিন উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, এলোমেলো চুলবিশিষ্ট এক কৃষ্ণকায় নারী নির্গত হয়ে মাহইয়াআ অর্থাৎ জুহফায় পৌছে যাত্রাবিরতি করিল। আমি স্বপ্নের এই ব্যাখ্যা করলাম যে, মদীনার মহামারী জুহফায় স্থানান্তরিত হইয়াছে। {৩২৫৬}

{৩২৫৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৭০৩৮, তিরমিজি ২২৯০, আহমাদ ৫৮১৫, ৫৯৪০, ৬১৮১। দারেমী। স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯২৫ তালহাহ বিন উবায়দুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

দুব্যক্তি দূর-দূরান্ত থেকে রাসূল্লুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে উপস্থিত হলো। তাহারা ছিলো খাঁটি মুসলমান। তাহাদের একজন ছিলো অপরজন অপেক্ষা শক্তিধর মুজাহিদ। তাহাদের মধ্যকার মুজাহিদ ব্যক্তি যুদ্ধ করে শহীদ হলো এবং অপরজন এক বছর পর মারা গেলো। তালহা [রাদি.] বলেন, আমি একদা স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি জান্নাতের দরজায় উপস্থিত এবং আমি তাহাদের সাথে আছি। জান্নাত থেকে এক ব্যক্তি বের হয়ে এলো এবং তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরে মারা গিয়েছিল তাহাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিলো। সে পুনরায় বের হয়ে এসে শহীদ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিলো। পরে সে আমার নিকট ফিরে এসে বলল, তুমি চলে যাও। কেননা তোমার [জান্নাতে প্রবেশের] সময় এখনও হয়নি, তোমার পালা পরে। সকাল বেলা তালহা [রাদি.] উক্ত ঘটনা লোকদের নিকট বর্ণনা করিলেন। তাহারা এতে বিস্ময়াভিভূত হলো। বিষয়টি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]এর কানে গেলো এবং তাহারাও তাহাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করিল। তিনি বলেনঃ কী কারণে তোমরা বিস্মিত হলে? তাহারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই ব্যক্তি তাহাদের দুজনের মধ্যে অধিক শক্তিধর মুজাহিদ। তাহাকে শহীদ করা হইয়াছে। অথচ অপর লোকটি তাহার আগেই জান্নাতে প্রবেশ করিল। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ অপর লোকটি কি তাহার পরে এক বছর জীবিত থাকেনি? তাহারা বলল, হাঁ। তিনি বলেনঃ সে একটি রমাদান মাস পেয়েছে, রোযা রেখেছে এবং এক বছর যাবত এই এই নামায কি পড়েনি? তাহারা বলল, হাঁ। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আসমান-জমীনের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তাহাদের দুজনের মধ্যে রয়েছে তাহার চেয়ে অধিক ব্যবধান। {৩২৫৭}

{৩২৫৭} আহমাদ ১৪০৪, ৮১৯৫। আততালীকুর রাগীব ১/১৪২, ১৪৩।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৯২৬ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে গলায় চাকতি দেখা অপছন্দ করি, কিন্তু আংটা পছন্দ করি। কারণ আংটা অর্থ দ্বীনের উপর অবিচল থাকা। {৩২৫৮}

{৩২৫৮} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৭০১৭, মুসলিম ২২৬৩, তিরমিজি ২২৭০, ২২৯১, আবু দাউদ ৫০১৯, দারেমী ২১৬০।স্বপ্নের ব্যাখ্যা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

Comments

One response to “স্বপ্নের ব্যাখ্যা । স্বপ্ন তিন প্রকার। শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যতীত বলবে না”

Leave a Reply