শাস্তি হাদিস । হদ্দ যেনা অপবাদ চোর ছিনতাইকারী মাদক ইত্যাদি
শাস্তি হাদিস । হদ্দ যেনা অপবাদ চোর ছিনতাইকারী মাদক ইত্যাদি , এই অধ্যায়ে মোট =৮২টি হাদীস (২৫৩৩ – ২৬১৪) >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ২০- হদ্দ [দণ্ড], অধ্যায়ঃ (২৪-৩৮)=১৫টি, হাদীস (২৫৩৩ – ২৬১৪)
১৪/১. অধ্যায়ঃ তিনটি কারণ ব্যতীত কোন মুসলমানের রক্তপাত বৈধ নয়
১৪/২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজের দ্বীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়
১৪/৩. অধ্যায়ঃ হদ্দ কার্যকর করা
১৪/৪. অধ্যায়ঃ যাহার উপর হদ্দ কার্যকর করা আবশ্যিক নয়
১৪/৫. অধ্যায়ঃ মুমিন ব্যক্তির দোষ গোপন রাখা এবং সন্দেহের ভিত্তিতে হদ্দ মওকুফ করা
১৪/৬. অধ্যায়ঃ হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ
১৪/৭. অধ্যায়ঃ যেনার হদ্দ
১৪/৮. অধ্যায়ঃ কেউ নিজ স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করিলে
১৪/৯. অধ্যায়ঃ রজম করা
১৪/১১. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অশ্লীল কর্ম [যেনা] করে
১৪/১২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয়
১৪/১৪. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাসীর উপর হদ্দ কার্যকর করা
১৪/১৫. অধ্যায়ঃ যেনার মিথ্যা অপবাদ [কায্ফ] আরোপের শাস্তি
১৪/১৬. অধ্যায়ঃ মদ্যপের শাস্তি
১৪/১৭. অধ্যায়ঃ কোন ব্যাক্তি বারবার মাদক সেবনে লিপ্ত হলে
১৪/১৮. অধ্যায়ঃ বৃদ্ধ ও রোগীর উপর হদ্দ আবশ্যিকভাবে কার্যকর করা
১৪/১৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি [মুসলমানদের বিরুদ্ধে] অস্ত্র ধারন করে
১৪/২০. অ১৪/২১. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ
১৪/২১. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ
১৪/২২. অধ্যায়ঃ চোরের শাস্তি
১৪/২৩. অধ্যায়ঃ কর্তিত হাত কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া
১৪/২৪. অধ্যায়ঃ চোর স্বীকারোক্তি করিলে
১৪/২৫. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাস চুরির অপরাধ করিলে
১৪/২৬. অধ্যায়ঃ আত্মসাৎকারী, লুণ্ঠনকারী ও ছিনতাইকারী
১৪/২৭. অধ্যায়ঃ ফল ও গাছের মাথি চুরির অপরাধে হাত কর্তন করা যাবে না
১৪/২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সুরক্ষিত স্থান থেকে চুরি করে
১৪/২৯. অধ্যায়ঃ চোরকে তালকীন দেয়া
১৪/৩০. অধ্যায়ঃ বল প্রয়োগে যাকে কিছু করিতে বাধ্য করা হয়
১৪/৩১. অধ্যায়ঃ মসজিদে হদ্দ কার্যকর করা নিষেধ
১৪/৩২. অধ্যায়ঃ তাযীর প্রসঙ্গ
১৪/৩৩. অধ্যায়ঃ হদ্দ [শাস্তি] হলো [গুনাহের] কাফফারা
১৪/৩৪. অধ্যায়ঃ কেউ নিজের স্ত্রীর সাথে বেগানা পুরুষ লোককে পেলে
১৪/৩৫. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি পিতাহার মৃত্যুর পর তাহার স্ত্রীকে বিবাহ করিলে
১৪/৩৬. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দিলে এবং নিজের মনিব ব্যতীত অন্যকে মনিব বলে পরিচয় দিলে।
১৪/৩৭. অধ্যায়ঃ কেউ কাউকে নিজের গোত্র থেকে খারিজ করিলে
১৪/৩৮. অধ্যায়ঃ নপুংসকদের বিধান।
১৪/১. অধ্যায়ঃ তিনটি কারণ ব্যতীত কোন মুসলমানের রক্তপাত বৈধ নয়
২৫৩৩ উসমান বিন আফ্ফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [ছাদের] উপর থেকে বিদ্রোহীদের প্রতি তাকালেন। হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করিতে শুনে তিনি বললেনঃ তাহারা আমাকে হত্যার সংকল্প করছে। কেন তাহারা আমাকে হত্যা করিবে? আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ তিনটি কারণের কোন একটি বিদ্যমান না থাকলে কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করিলে, তাহাকে রজম [প্রস্তরাঘাতে হত্যা] করা অথবা যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে অথবা যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর মুরতাদ হয়ে যায়। আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগেও কখনো যেনা করিনি এবং ইসলামী যুগেও না, আমি কোন মুসলমানকে হত্যা করিনি এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে মুরতাদ হইনি। {২৫৩৩}
{২৫৩৩} তিরমিজি ২১৫৮, নাসাঈ ৪০১৯, আবু দাউদ ৪৫০২, আহমাদ ৪৩৯, ৪৫৪, ৫১১, ১৪০৫, ২২৯৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/১৯৪, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৫০, ইরওয়া ৭/২৫৪, তাখরীজুল মাখতাহার ৩০০-৩০২, ৩৪২, ৩৪৬, ৩৪৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৩৪ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি আল্লাহর রাসূল তাহার রক্তপাত বৈধ নয়। কিন্তু তিন শ্রেণীর লোক হত্যার যোগ্যঃ জানের [হত্যার] বদলে জান [হত্যা], বিবাহিত যেনাকারী এবং মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে দ্বীন ত্যাগকারী। {২৫৩৪}
{২৫৩৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৮৭৮, মুসলিম ১৬৭৬, তিরমিজি ১৪০২, নাসাঈ ৪০১৬, ৪৭২১, আবু দাউদ ৪৩৫২, আহমাদ ৩৬১৪, ৪০৫৫, ৪২৩৩, ৪৪১৫, ২৪৯৪৭, দারেমী ২৪৪৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২১৩, ২৮৩, ২৮৪, ইবনি হিব্বান ৪৪০৮, ৫৯৭৭, দারাকুতনী ৩/৭২, ইরওয়া ২১৯৬, যিলালুল জান্নাহ ৬০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজের দ্বীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়
২৫৩৫ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে [মুসলমান] ব্যক্তি নিজের দ্বীন পরিবর্তন করে, তাহাকে তোমরা হত্যা করো। {২৫৩৫}
{২৫৩৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩০১৭, ৬৯২২, তিরমিজি ১৪৫৮, নাসাঈ ৪০৫৯, ৪০৪৬, ৪০৬১, ৪০৬২, ৪০৬৪, ৪০৬৫, আবু দাউদ ৪৩৫১, আহমাদ ১৮৭৪, ২৫৪৭, ২৯৬০, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৬৭, ২০২, ৮/১৯৫, ইবনি হিব্বান ৪৪৭৬, ৫৬০৬, আল-হুমায়দী ৫৩৩, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৩/৫৩৮, ইরওয়া ২৪৭১, ইবনিস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৮৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৩৬ মুআবিয়াহ বিন হায়দাহ বিন মুআবিয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ তাহার কোন আমলই গ্রহণ করেন না, যাবত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলমানের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে। {২৫৩৬}
{২৫৩৬} আহমাদ ১৯৫৩৩, ইরওয়া ৫/৩২, সহীহাহ ৩৬৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪/৩. অধ্যায়ঃ হদ্দ কার্যকর করা
২৫৩৭ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত হাদ্দসমূহের মধ্য থেকে কোন হাদ্দ কার্যকর করা, চল্লিশ রাত মহান আল্লাহর কোন জনপদে বৃষ্টিপাত হওয়ার চেয়ে উত্তম। {২৫৩৭}
{২৫৩৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২৬৭, সহীহাহ ২৩১, মিশকাত ৩৫৫৮, রাওদুন নাদীর ১০৬৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি সাঈদ বিন সিনান সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তাহার হাদিস নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি আহলে ইলমগনের নিকট দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আলী ইবনিল মাদানী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২২৯৫, ১০/৪৯৫ নং পৃষ্ঠা]।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৫৩৮ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন জনপদে একটি হদ্দ কার্যকর করা সেই জনপদে চল্লিশ দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার তুলনায় উত্তম। {২৫৩৮}
{২৫৩৮} নাসাঈ ৪৯০৪, ৪৯০৫, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩০৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি জারীর বিন ইয়াযীদ সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি কুফুরী নয় এমন কোন কওলী বা আমলি ফিসক এর সাথে জড়িত। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৯১৯, ৪/৫৫১ নং পৃষ্ঠা]।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৫৩৯ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যাক্তি কুরআনের একটি আয়াতও অস্বীকার করে তাহাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি বলে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তাহার কোন শরীক নাই এবং মুহাম্মাদ তাহাঁর বান্দা ও রাসূল,” তাহার উপর হদ্দ কার্যকর করার কোন পথ থাকে না। কিন্তু সে হদ্দযোগ্য অপরাধ করিলে তা তাহার উপর কার্যকর হইবে। {২৫৩৯}
{২৫৩৯} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যইফাহ ১৪১৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হাফস বিন উমার সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবুল আরব আল-কিরওয়ানী ও আবুল ফারাজ ইবনিল জাওযী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি মিথ্যুক। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৪০৫, ৭/৪২ নং পৃষ্ঠা] ২. হাকাম বিন আবান সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তাহার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম আন-নায়সাবুরী বলেন, তিনি সত্যবাদী। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৪২২, ৭/৮৬ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৪০ উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা কাছের ও দুরের সকলের উপর আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দ কার্যকর করো। আল্লাহর কাজে কোন সমালোচকের সমালোচনা যেন তোমাদের বিব্রত না করে। {২৫৪০}
{২৫৪০} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। মিশকাত ৩৫৮৭, সহীহাহ ৬৭০, ১৯৪২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি কাসিম ইবনিল ওয়ালীদ সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল ও সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে অপরিচিত। ঈমাম যাহাবী ও ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৮৩৩, ২৩/৪৫৬ নং পৃষ্ঠা]।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪/৪. অধ্যায়ঃ যাহার উপর হদ্দ কার্যকর করা আবশ্যিক নয়
২৫৪১ আতিয়্যাহ আল-কুরাযী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বনু কুরায়জাকে হত্যার দিন আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে উপস্থিত করা হলো। যাহার [লজ্জাস্থানের] লোম গজিয়েছিল, তাহাকে হত্যা করা হলো এবং যাহার লোম গজায়নি তাহাকে রেহাই দেয়া হলো। আমি ছিলাম লোম না গজানোদের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমাকে রেহাই দেয়া হয়। {২৫৪১}
{২৫৪১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২৩৯, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৬৫, মিশকাত ৩৯৭৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪২ আতিয়্যাহ আল-কুরাযী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তখন থেকেই আমি তোমাদের সামনে আছি। {২৫৪২}
{২৫৪২} তিরমিজি ১৫৮৪, নাসাঈ ৩৪৩০, ৪৯৮১, আবু দাউদ ৪৪০৪, আহমাদ ১৮২৯৯, ১৮৯২৮, আহমাদ ২২১৫২, ২২১৫৩, দারেমী ২৪৬৪, বায়হাকী ফিস সুনান ১০/৩১৭, আল-হাকিম ফিল মুসতদারাক ২/৫৯, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৩ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমাকে উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে উপস্থিত করা হলো, তখন আমি চৌদ্দ বছরের তরুণ। তিনি আমাকে [জিহাদে শরীক হইতে] অনুমতি দেননি। পরে খন্দকের যুদ্ধের দিন আমাকে তাহাঁর সামনে পেশ করা হয়। তখন আমি পনের বছরের তরুন। তিনি আমাকে [যুদ্ধে যোগদানের] অনুমতি দেন। নাফে [রাদি.] বলেন, আমি এ হাদিস উমার বিন আব্দুল আযিয [রাদি.] এর খেলাফত আমলে তাহার নিকট বর্ণনা করিলে তিনি বলেন, এটাই নাবালেগ ও বালেগের মধ্যে পার্থক্যবিন্দু। {২৫৪৩}
{২৫৪৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৬৬৪, ৪০৯৭, মুসলিম ১৮৬৮, তিরমিজি ১৩৬১, ১৭১১, নাসাঈ ৩৪৩১, আবু দাউদ ২৯৫৭, ৪৪০৬, আহমাদ ৪৬৪৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৪/৩৮৩, ৫/৩১১, ৩১২, ৬/৫৮, ইবনি হিব্বান ৪৭৮০, ৪৭৮১, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ১/১২৩, ৪/৩৯০, আল-হুমায়দী ৮৮৮, ইরওয়া ১১৮৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/৫. অধ্যায়ঃ মুমিন ব্যক্তির দোষ গোপন রাখা এবং সন্দেহের ভিত্তিতে হদ্দ মওকুফ করা
২৫৪৪ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাহার দোষ গোপন রাখবেন। {২৫৪৪}
{২৫৪৪} মুসলিম ২৬৯৯, তিরমিজি ১৪২৫, ১৯৩০, ২৯৪৫, আবু দাউদ ৪৯৪৬, আহমাদ ৭৩৭৩, ৭৩৭৯, ৭৬৪৪, ৭৮৮২, ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫, ১০১১৮, ১০২৯৮, ১০৩৮২, সহীহাহ ২৩৪১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৫ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা হদ্দ প্রতিরোধ করিবে, যাবত তা প্রতিরোধের কোন অজুহাত পাও। {২৫৪৫}
{২৫৪৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ২৩৫৬, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ ইবনিল জাররাহ সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিসের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য। আবু যুরআহ আর-রাযী তাহাকে সত্যবাদী বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩১৯৯, ১৪/৩৬১ নং পৃষ্ঠা] ২. ইবরাহীম ইবনিল ফাদল সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২২৪, ২/১৬৫ নং পৃষ্ঠা]।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৪৬ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি তাহার মুসলিম ভাইয়ের গোপন [অপরাধের] বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাহার গুপ্ত [অপরাধের] বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তাহার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবে, আল্লাহ তাহার গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবেন, এমনকি এই কারণে তাহাকে তাহার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন। {২৫৪৬}
{২৫৪৬} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আত-তালীকুর রাগীব৩/১৭৬, সহীহাহ ২৩৪১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইয়াকুব বিন হুমায়দ বিন কাসিব সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭০৮৬, ৩২/৩১৮ নং পৃষ্ঠা] ২. মুহাম্মাদ বিন উসমান আল-জুমাহী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৪৫৬, ২৬/৮৪ নং পৃষ্ঠা] ৩. হাকাম বিন আবান সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তাহার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম আন-নায়সাবুরী বলেন, তিনি সত্যবাদী। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৪২২, ৭/৮৬ নং পৃষ্ঠা]
উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু মুহাম্মাদ বিন উসমান আল-জুমাহী এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ২১৯ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ২ ত খুবই দুর্বল, ৩৭ টি দুর্বল, ৯০ টি হাসান, ৯০ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ মুসলিম ২৫৯২, আবু দাউদ ৪৮৯১, আহমাদ, ৭৮৮২, ৮৯৯৫, ২৭৪৮৪, ১০৩৮২, ১৬১৬০, ১৬৫১১, ১৬৮৮০, ১৬৮৮১, ১৬৯৪০, ১৬৯৪৪, ১৬৯৯৪, ১৭০০১, ২২৬৭৩, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১৮৯৩৩, ১৮৯৩৫, ১৮৯৩৬, মুজামুল আওসাত ১৪৮১, ৪৯৯২, ৬১৫২, ৭৯২৬, ৮০৮৫, ৮১৩৩, ৮৭০৫, আল-ফাওয়াইদ ১০২১।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/৬. অধ্যায়ঃ হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ
২৫৪৭ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মাখযূম গোত্রের এক নারী চুরি করে ধরা পড়লে তাহার বিষয়টি কুরায়শদেরকে অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। তাহারা বলাবলি করিল, বিষয়টি নিয়ে কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে কথা বলিতে পারে? তাহারা বলাবলি করিল রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর প্রিয়পাত্র উসামা বিন যায়েদ ছাড়া আর কেউ এমন দুঃসাহস করিতে পারবে না। অতঃপর উসামা [রাদি.] তাহাঁর সঙ্গে বিষয়টি বিয়ে আলাপ করিলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি কি আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করছো? অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন এবং বলেনঃ হে জনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ কারণে ধ্বংস হইয়াছে যে, তাহাদের মধ্যকার কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করিলে তাহারা তাহাকে ছেড়ে দিতো এবং কোন দুর্বল অসহায় ব্যক্তি চুরি করিলে তাহাকে শাস্তি দিতো। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তাহলে অবশ্যই আমি তাহার হাতও কেটে দিতাম। রাবী মুহাম্মাদ বিন রুম্হ [রাদি.] বলেন, আমি লায়স ইবনি সাদকে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ তাআলা তাহাকে [হযরত ফাতিমাকে] চুরি করা থেকে হেফাযত করিয়াছেন। প্রত্যেক মুসলমানেরই এরূপ বলা উচিত। {২৫৪৭}
{২৫৪৭} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৬৪৮, ৩৪৭৫, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, মুসলিম ১৬৮৮, তিরমিজি ১৪৩০, নাসাঈ ৪৮৯৫, ৪৮৯৬, ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, ৪৮৯১, ৪৯০০, ৪৯০১, ৪৯০২, ৪৯০৩, আবু দাউদ ৪৩৭৩, আহমাদ ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২, ইরওয়া ২৩১৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৪৮ মাসঊদ ইবনিল আসওয়াদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
সেই নারী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ঘর থেকে সেই চাদরটি চুরি করিলে তা আমাদেরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। সে ছিল কুরায়শ বংশীয়া। অতঃপর আমরা নবী [সাঃআঃ] এর সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করিতে এলাম। আমরা বললাম, আমরা তাহার পক্ষ থেকে চল্লিশ উকিয়া ফিদ্য়া দিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সে পবিত্র হোক, এটাই তাহার জন্য উত্তম। আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নরম সুর শুনে উসামার কাছে এসে বললাম, তুমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গে আলোচনা করো। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পরিস্থিতি আঁচ করে খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের কী হইয়াছে যে, তোমরা আমার কাছে আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করছো, যা তাহাঁর কোন এক বান্দীর উপর প্রযোজ্য হচ্ছে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যদি আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমাও ঐ নারীর স্তরে উপনীত হতো, তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ তাহার হাত কেটে দিতো। {২৫৪৮}
{২৫৪৮} আহমাদ ২৬২৫২, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৪৬, যইফাহ ৪৪২৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনিল মাদানী বলেন, তিনি সালিহ। সুলায়মান বিন তাহারখান ও সুলায়মান বিন মিহরান বলেন, তিনি মিথ্যুক। তিনি মুদাল্লিস রাবী তাহার আন আন সুত্রে হাদিস বর্ণনার কারণে হাদিসটি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/৭. অধ্যায়ঃ যেনার হদ্দ
২৫৪৯ আবদুল্লাহ শিবলি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাহাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলেছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা করে দিন। তাহার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তাহার প্রতিপক্ষ বলল, হাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। তিনি বলেনঃ বলো। লোকটি বলল, আমার পুত্র এই ব্যক্তির শ্রমিক ছিল, সে তাহার স্ত্রীর সাথে যেনা করেছে। আমি তাহার পক্ষ থেকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিলে আমাকে বলা হয় যে, আমার পুত্রকে এক শত বেত্রাঘাত করিতে হইবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হইবে, আর এই ব্যক্তির স্ত্রীকে রজম [প্রস্তরাঘাতে হত্যা] করিতে হইবে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দুজনের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করিব। তুমি তোমার এক শত বকরী ও গোলাম ফেরত লও এবং তোমার পুত্রকে এক বছরের নির্বাচনসহ এক শত বেত্রাঘাত করা হইবে। আর হে উনাইস! তুমি আগামী কাল সকালে তাহার স্ত্রীর নিকট যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাহাকে রজম করিবে। অধস্তন রাবী হিশাম বলেন, উনায়স [রাদি.] পরদিন সকালে তাহার নিকট গেলো এবং সে স্বীকারোক্তি করিলে তিনি তাহাকে রজম করেন। {২৫৪৯}
{২৫৪৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৩১৫, ২৬৪৯, ২৬৯৬, ২৭২৫, ৬৬৩৩, ৬৮২৮, ৬৮৩২, ৬৮৩৩, ৬৮৩৬, ৬৮৪৩, ৬৮৬০, ৭১৯৫, ৭২৬০, ৭২৭৯, মুসলিম ১৬৭৯, তিরমিজি ১৪৩৩,নাসাঈ ৫৪১০, ৫৪১১, আবু দাউদ ৪৪৪৫, আহমাদ ১৬৫৯০, মুয়াত্তা মালিক ১৫৫৬, দারেমী ২৩১৭, ইরওয়া ১৪৬৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
ব্যাখ্যা
২৫৫০ উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা আমার কাছ থেকে [দ্বীনের বিধান] শিখে নাও। আল্লাহ তাহাদের [মহিলাদের জন্য একটি পথ করে দিয়েছেন। যদি অবিবাহিত পুরুষ অবিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাহাদের প্রত্যেককে এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করিতে হইবে। আর যদি বিবাহিত পুরুষ বিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাহাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত এবং রজম করিতে হইবে। {২৫৫০}
{২৫৫০} মুসলিম ১৬৯০, তিরমিজি ১৪৩৪, ১৪৫১, আবু দাউদ ৪৪১৫, আহমাদ ২২১৫৮, ২২১৯৫, ২২২০৮, ২২২২৩, ২২২৭৪, দারেমী ২৩২৭, ইরওয়া ২৩৪১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/৮. অধ্যায়ঃ কেউ নিজ স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করিলে
২৫৫১ নুমান বিন বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[হাবীব বিন সালিম] বলেন, নুমান বিন বাশীর [রাদি.] এর নিকট এক ব্যক্তিকে হাযির করা হলো, যে তাহার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করেছিল। তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ফয়সালার অনুরূপ ফয়সালাই করিব। তিনি বলেন, যদি তাহার স্ত্রীর ক্রীতদাসীকে তাহার জন্য হালাল করে দিয়ে থাকে, তবে এ যেনাকারীকে একশত বেত্রাঘাত করিব। আর যদি তাহার স্ত্রী তাহাকে অনুমতি না দিয়ে থাকে, তবে তাহাকে আমি রজম করিব। {২৫৫১}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দঈফ তালীক ইবনি মাজাহ।{২৫৫১} তিরমিজি ১৪৫১, নাসাঈ ৩৩৬০, ৩৩৬১, ৩৩৬২, আবু দাউদ ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, আহমাদ ১৭৯৩০, দারেমী ২৩২৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হাবীব বিন সালিম সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ইদতিরাব করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তাহার মাঝে কোন সমস্যা নেই। ঈমাম বুখারী বলেন, তাহার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। ঈমাম তিরমিজি ও ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ইদতিরাব করিয়াছেন। উক্ত সানাদের সকল রাবীই সিকাহ তবে তাহার হাদিস ইদতিরাব করার কারণে হাদিসটি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫/৩৭৪ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৫২ সালামাহ ইবনিল মুহাব্বিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হলো যে তাহার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করেছিল। তিনি তাহার উপর হদ্দ কার্যকর করেননি। {২৫৫২}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দঈফ তালীক ইবনি মাজাহ।{২৫৫২} আবু দাউদ ৪৪৬০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তিনি সালামাহ ইবনিল মুহাব্বিক থেকে হাদিস শ্রবন করেননি তবুও তাহার আন আন সুত্রে হাদিস বর্ণনার কারণে হাদিসটি দুর্বল। [ইবনি আবু হাতিম ১/৪৪৭]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/৯. অধ্যায়ঃ রজম করা
২৫৫৩ উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি আশঙ্কা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ বলে বসবে, আমি আল্লাহর কিতাবে রজমের কথা পাচ্ছি না। ফলে সে আল্লাহর ফরযসমূহের মধ্যকার একটি ফরয ত্যাগ করার কারণে পথভ্রষ্ট হইবে। সাবধান! রজম [প্রস্তরাঘাতে হত্যা] করা বাধ্যতামূলক- অপরাধী বিবাহিত হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা গর্ভসঞ্চার হলে অথবা স্বীকারোক্তি করিলে। অতঃপর আমি রজমের এ আয়াত পাঠ করিঃ “বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা যেনায় লিপ্ত হলে তোমরা তাহাদের উভয়কে রজম করো”। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রজম করিয়াছেন এবং তাহাঁর পরে আমরাও রজম করেছি। {২৫৫৩}
{২৫৫৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৮২৯, ৬৮৩০, ৭৩২৩, মুসলিম ১৬৯১, তিরমিজি ১৪৩১, ১৪৩২, আবু দাউদ ৪৪১৮, আহমাদ ১৫৫, ১৯৮, ২৫১, ২৭৮, ৩০১, ৩৩৩, ৩৫৪, ৩৯৩, মুয়াত্তা মালিক ১৫২০, দারেমী ২৩২২, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৩, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৫৭, ইরওয়া ২৩৩৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৫৪ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মাইয বিন মালিক নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললোঃ আমি যেনা করেছি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আবার সে বলল, আমি যেনা করেছি। তিনি এবারও তাহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে আবার বলল, আমি যেনা করেছি। এবারও তিনি তাহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে আবার বলল, আমি যেনা করেছি। তিনি তাহার থেকে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এমনিভাবে সে চারবার স্বীকারোক্তি করিল। অতঃপর তিনি তাহাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। তাহার দেহে পাথর নিক্ষিপ্ত হইতে থাকলে সে দ্রুত পালাতে তৎপর হলো। এক ব্যক্তি তাহার নাগাল পেয়ে গেলো। তাহার হাতে ছিল উটের চোয়ালের হাড়। সে তাহাকে আঘাত করে ভূপাতিত করিল। তাহার গায়ে পাথর নিক্ষিপ্ত হওয়ায় তাহার পলায়নের কথা নবী [সাঃআঃ] এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা কেন তাহাকে ছেড়ে দিলে না। {২৫৫৪}
{২৫৫৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৫২৭২, মুসলিম ১৬৯১, তিরমিজি ১৪২৮, আবু দাউদ ৪৪২৮, ৯৫৩৫, আবু দাউদ ৪৪২৮, ৯৫৩৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৯, ২২৮, আত-তহাবী ৩/১৪৩, ইরওয়া ৭/৩৫৩, মিশকাত ৩৫৬৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবু আমর বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হুরায়স সম্পর্কে ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে ঈমাম যাহাবী বলেন, তাহার পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ঈমাম দারাকুতনী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫১৩, ২৬/২১২ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৫৫৫ ইমরান ইবনিল হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক নারী নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে যেনার স্বীকারোক্তি করিল। তিনি তাহার দেহে তাহার পরিধেয় বস্ত্র শক্ত করে পেঁচিয়ে তাহাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তাহার জানাযাহার নামায পড়লেন। {২৫৫৫}
{২৫৫৫} মুসলিম ১৬৯৬, তিরমিজি ১৪৩৫, নাসাঈ ১৯৫৭, আবু দাউদ ৪৪৪০, আহমাদ ১৯৩৬০, ১৯৪০২, ১৯৪০২, ১৯৪২৪, ১৯৪৫২, দারেমী ২৩২৫, ইরওয়া ২৩৩৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আব্বাস বিন উসমান আদ-দিমাশকী সম্পর্কে আবুল হাসান বিন সুমায় বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি কখনো কখনো সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩১৩২, ১৪/২৩৩ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস।১৪/১০. অধায়ঃ ইহূদী পুরুষ ও নারীকে রজম করা
২৫৫৬ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] দুইয়াহূদীকে রজম করার নির্দেশ দিয়াছিলেন। আমিও রজমকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমি পুরুষ লোকটিকে দেখেছি যে, সে নারীটিকে পাথর থেকে আড়াল করছে। {২৫৫৬}
{২৫৫৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৩২৯, ৩৬৩৫, ৪৫৫৬, ৬৮১৯, ৮৬৪১, ৭৩৩২, ৭৫৪৩, মুসলিম ১৬৯৯, তিরমিজি ১৪৩৬, আবু দাউদ ৪৪৪৬, ৪৪৪৯, আহমাদ ৪৪৮৪, ৪৬৫২, ৬৩৪৯, মুয়াত্তা মালিক ১৫৫১, দারেমী ২৩২১, ইরওয়া ১২৫৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৫৭ জাবীর বিন সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] একজোড়া ইহূদী নারী-পুরুষকে রজম করেছিলেন। {২৫৫৭}
{২৫৫৭} তিরমিজি ১৪৩৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইসমাইল বিন মুসা সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন, তাহার ব্যাপারে শীয়া মতাবলম্বী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৯১, ৩/২১০ নং পৃষ্ঠা] ২. সিমাক বিন হারব সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন, তাহার পূর্বে বর্ণিত হাদিস যারা শ্রবন করিয়াছেন তা সহীহ। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৫৭৯, ১২/১১৫ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৫৮ বারা বিন আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] এমন এক ইহূদীকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, যাহার মুখে কালি মাখিয়ে বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। তিনি তাহাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করিলেনঃ তোমরা কি তোমাদের কিতাবে যেনাকারীর এরূপ শাস্তি পেয়েছো? তাহারা বলল, হাঁ। তিনি তাহাদের আলেমদের মধ্যকার একজনকে ডেকে বলেনঃ আমি তোমাকে সেই সত্তার শপথ দিয়ে বলছি যিনি মূসা [আঃ]-এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করিয়াছেন! তোমরা কি যেনাকারীর এরূপ শাস্তিই পেয়েছো? সে বলল, না। আপনি যদি আমাকে শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস না করিতেন তবে আমি আপনাকে এ কথা বলতাম না। আমরা আমাদের কিতাবে যেনাকারীর শাস্তি পেয়েছি রজম করা। কিন্তু আমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদের মধ্যে রজমের [যেনার] অপরাধ বেড়ে গেলো। এমতাবস্থায় আমরা সম্ভ্রান্ত লোককে [এ অপরাধে] গ্রেপ্তার করিলে তাহাকে ছেড়ে দিতাম এবং আমাদের দুর্বল ও অসহায় লোককে [একইরূপ অপরাধে] গ্রেপ্তার করিলে তাহার উপর হদ্দ কার্যকর করতাম। [এক পর্যায়ে] আমরা বললাম এসো আমরা একটা বিষয়ে একমত হই, যা আমরা সম্ভ্রান্ত ও দুর্বল সকলের উপর কার্যকর করিতে পারি। তখন থেকে আমরা [শাস্তি লাঘব করে] রজমের পরিবর্তে মুখমন্ডলে কালি মেখে বেত্রাঘাতের শাস্তি কার্যকর করিতে একমত হই। নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তাহাদের ধ্বংস করা তোমার হুকুমকে জীবিত করেছে। অতঃপর তাহাঁর নির্দেশে ঐ ইহূদীকে রজম করা হয়। {২৫৫৮}
{২৫৫৮} ইবনি মাজাহ ২৩২৭, মুসলিম ১৭০০, আবু দাউদ ৪৪৪৭, ৪৪৪৮, আহমাদ ১৭০৫৪, ইরওয়া ২৬৯৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/১১. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অশ্লীল কর্ম [যেনা] করে
২৫৫৯ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি যদি কাউকে সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া রজম করতাম, তবে অবশ্যই অমুক নারীকে রজম করতাম। কেননা তাহার কথাবার্তায় ও দৈহিক বেশভূষায় এবং যারা তাহার কাছে যাতায়াত করে তাহাদের থেকে অশ্লীলতা প্রকাশ পেয়েছে। {২৫৫৯}
{২৫৫৯} ইবনি মাজাহ ২৫৬০, সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৫৩১০, ৫৩১৬, ৬৮৫৫, ৬৮৫৬, ৭২৩৮, মুসলিম ১৪৯৭, নাসাঈ ৩৪৭০, ৩৪৭১, আহমাদ ৩০৯৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬০ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
দু লিআনকারীর কথা উল্লেখ করিলেন। ইবনি শাদ্দাদ [রাদি.] তাহাকে বলিলেন, এই সেই নারী যাহার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেনঃ আমি যদি কাউকে সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই রজম করতাম, তবে অবশ্যই তাহাকে রজম করতাম। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, সেই নারী তো প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করেছে। {২৫৬০}
{২৫৬০} ইবনি মাজাহ ২৫৫৯, সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৫৩১০, ৫৩১৬, ৬৮৫৫, ৬৮৫৬, ৭২৩৮, মুসলিম ১৪৯৭, নাসাঈ ৩৪৭০, ৩৪৭১, আহমাদ ৩০৯৬, ইরওয়া ৭/১৮৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/১২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয়
২৫৬১ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা কাউকে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাহাকে এবং যাহার সাথে তা করা হয় তাহাকে হত্যা করো। {২৫৬১}
{২৫৬১} তিরমিজি ১৪৫৬, আবু দাউদ ৪৪৬২, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০, মিশকাত ৩৫৭৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬২ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেনঃ তোমরা উপরের এবং নিচের ব্যক্তিকে অর্থাৎ উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করো। {২৫৬২}
{২৫৬২} তিরমিজি ১৪৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ৬/১৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি আসিম বিন উমার সম্পর্কে আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন, তিনি সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় খুবই দুর্বল। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩০১৭, ১৩/৫১৭ নং পৃষ্ঠা] ২. সুহসায়ল বিন আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সাবত। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার বর্ণিত হাদিস সহীহ নয়। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তাহার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৬২৯, ১২/২৩৩ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৫৬৩ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সর্বাধিক আশঙ্কা করি। {২৫৬৩}
{২৫৬৩} তিরমিজি ১৪৫৭, বায়হাকী ফিস সুনান ২/২১৫, ৬/১০৬। আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৭, ১৯৮, মিশকাত ৩৫৭৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আকীল সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় শিথিল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫৪৩, ১৬/৭৮ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস।১৪/১৩. অধায়ঃ যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে যৌনাচার করে
২৫৬৪ ইবনি আব্বাস [রা] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাহাকে হত্যা করো এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাহাকেও হত্যা করো এবং পশুটিও হত্যা করো। {২৫৬৪}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ ২য় অংশ ব্যতীত দঈফ কারণ, ২য় অংশটি সহীহ। {২৫৬৪} তিরমিজি ১৪৫৫, ৮/৩৩০, দারাকুতনী ৩/১২৭, ইরওয়া ৮/১৪-১৫, ২৩৪৮, ২৩৫২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৯, জইফ আল-জামি ৫৮৭৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ ২য় অংশ ব্যাতিত জইফ কারণ ২য় অংশ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইবরাহীম বিন ইসমাইল সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি আমাদের শহরে দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৪৬, ২/৪২ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য
১৪/১৪. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাসীর উপর হদ্দ কার্যকর করা
২৫৬৫ শিবলি [মাকবূল] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা নবী [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাহাঁকে অবিবাহিত ক্রীতদাসীর যেনায় লিপ্ত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তাহাকে বেত্রাঘাত করো। যদি সে পুনরায় যেনা করে তবে আবার তাহাকে বেত্রাঘাত করো। তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বলেনঃ চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাহাকে বিক্রি করে দাও। {২৫৬৫}
{২৫৬৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২১৫২, ২১৫৪, ২২৩৩, ২২৩৪, ২৫৫৬, ৬৮৩৮, ৬৮৩৯, মুসলিম ১৭০৩, ১৭০৪, তিরমিজি ১৪৩৩, ১৪৪০, আবু দাউদ ৪৪৬৯, ৪৪৭০, আহমাদ ৭৩৪৭, ৮৬৮৯, ৯১৭৪, ১০০৩৩, ১৬৫৯৫, ১৬৬০৯, মুয়াত্তা মালিক ১৫৬৪, দারেমী ২৩২৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৯, ২৪৪, ১০/৮৬, আল-হুমায়দী ৮১১, ইরওয়া ২৩২৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬৬ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্রীতদাসী যেনায় লিপ্ত হলে তাহাকে বেত্রাঘাত করো। সে আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবার তাহাকে বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবারও তাহাকে বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবারও তাহাকে বেত্রাঘাত করো। অতঃপর একটি রাশির বিনিময়ে হলেও তাহাকে বিক্রি করে দাও। {২৫৬৬}
{২৫৬৬} আহমাদ ২৩৮৪০, সহীহাহ ২৯২১, সহীহ আল-জামি সগীর ৫২৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/১৫. অধ্যায়ঃ যেনার মিথ্যা অপবাদ [কায্ফ] আরোপের শাস্তি
২৫৬৭ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত মিথ্যা অপবাদ খণ্ডন করে কুরআনের আয়াত নাযিল হলে পর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদের মিম্বারে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বিষয়টি উল্লেখ করে কুরআন [সেই আয়াত] তিলাওয়াত করেন, অতঃপর মিম্বার থেকে অবতরন করে দুজন পুরুষ ও একজন নারী সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তাহাদের উপর হদ্দ কার্যকর করা হয়। {২৫৬৭}
{২৫৬৭} তিরমিজি ৩১৮১, আবু দাউদ ৪৪৭৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনিল মাদানী বলেন, তিনি সালিহ। সুলায়মান বিন তাহারখান ও সুলায়মান বিন মিহরান বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি আমার নিকট হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৫৬৮ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে “হে মুখান্নাস”[নপুংসক] বললে তাহাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো এবং কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে “হে লূতী”[সমকামী] বললে তাহাকেও বিশটি বেত্রাঘাত করো। {২৫৬৮}
{২৫৬৮} তিরমিজি ১৪৬২, তাখরীজুল মিশকাত ৩৬৩২, জইফ আল-জামি ৬১০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ইবনি আবু হাবীবাহ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি আমাদে শহরে দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৪৬, ২/৪২ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/১৬. অধ্যায়ঃ মদ্যপের শাস্তি
২৫৬৯ আলী বিন আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মদ্যপ ব্যাতীত অপর কোন অপরাধী আমার নির্দেশে হদ্দ কার্যকর করার কারণে নিহত হলে আমি তাহার দিয়াত পরিশোধ করিব না। কারণ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদ্যপের হদ্দ নির্ধারণ করেন নি। আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে মদ্যপের হদ্দ নির্ধারণ করেছি [তাই তাহার দিয়াত পরিশোধ করিব]। {২৫৬৯}
{২৫৬৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৭৭৮, আবু দাউদ ৪৪৮৬, আহমাদ ১০২৭, ১০৮৭, ইরওয়া ২৩৮১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইসমাইল বিন মুসা সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন, তাহার ব্যাপারে শীয়া মতাবলম্বী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৯১, ৩/২১০ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭০ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদ্যপকে জুতা ও লাঠি দ্বারা প্রহার করিতেন। {২৫৭০}
{২৫৭০} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৭৭৩, ৬৭৭৬, মুসলিম ১৭০৬, তিরমিজি ১৪৪৩, আবু দাউদ ৪৪৭৯, আহমাদ ১১৭২৯, ১২৩৯৪, ১২৪৪৪, ১৩১৭১, দারেমী ২৩১১, সহীহ আল-জামি ৪৯৭৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭১ আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[হুদায়ন ইবনিল মুনযির] বলেন, ওয়ালিদ বিন উকবাকে উসমান [রাদি.]-এর আদালতে আনা হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণে তাহার [মদ্যপানের] অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি আলী [রাদি.] কে বলেন, এই নিন আপনার চাচাতো ভাইকে এবং তাহার উপর হদ্দ কার্যকর করুন। আলী [রাদি.] তাহাকে বেত্রাঘাত করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মদ্যপকে] চল্লিশ বেত্রাঘাত করিয়াছেন, আবু বকর [রাদি.] ও চল্লিশ বেত্রাঘাত করিয়াছেন এবং উমার [রাদি.] আশি বেত্রাঘাত করিয়াছেন। এ সবই সুন্নাত। {২৫৭১}
{২৫৭১} মুসলিম ১৭০৭, আবু দাউদ ৪৪৮০, ৪৪৮১, আহমাদ ৬২৫, ১১৮৮, ১২৩৪, দারেমী ২৩১২, ইরওয়া ৩০৮০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/১৭. অধ্যায়ঃ কোন ব্যাক্তি বারবার মাদক সেবনে লিপ্ত হলে
২৫৭২ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ মাদক গ্রহণ করিলে তাহাকে বেত্রাঘাত করো, সে পুনরায় মাদক গ্রহণ করিলে তাহাকে বেত্রাঘাত করো, সে পুনরায় মাদক গ্রহণ করিলে তাহাকে বেত্রাঘাত করো। চতুর্থবারে তিনি বলেনঃ সে পুনরায় মাদক গ্রহণ করিলে তাহাকে হত্যা করো। {২৫৭২}
{২৫৭২} আবু দাউদ ৪৪৮৪, আহমাদ ৭৭০৪, ৭৮৫১, ১০১৬৯, ১০৩৫১, দারেমী ২১০৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৮৭, সহীহাহ ১৩৬০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৫৭৩ মুআবিয়া বিন আবু সুফইয়ান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ লোকেরা মদপান করিলে তোমরা তাহাদেরকে বেত্রাঘাত করো, পুনরায় মদ পান করিলে তাহাদেরকে বেত্রাঘাত করো, আবার মদপান করিলে আবার তাহাদেরকে বেত্রাঘাত করো, পুনরায় [চতুর্থবার] মদপান করিলে তাহাদেরকে হত্যা করো। {২৫৭৩}
{২৫৭৩} তিরমিজি ১৪৪৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আসিম বিন বাহদালাহ সম্পর্কে আবু বকর আল-বাযযাহার বলেন, তিনি হাফিয ছিলেন না, তাহার হাদিস কেউ বর্জন করিয়াছেন এমন কাউকে পাইনি। আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল ছাড়া তাহার মাঝে অন্নি কোন দোষ পাইনি। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সিকাহ। ইসমাইল বিন উলায়্যাহ বলেন, তাহার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে, তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩০০২, ১৩/৪৭৩ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৪/১৮. অধ্যায়ঃ বৃদ্ধ ও রোগীর উপর হদ্দ আবশ্যিকভাবে কার্যকর করা
২৫৭৪ সাদবিন উবাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[সাঈদ বিন সাদ] বলেন, আমাদের বাড়িতে একটি বিকলাঙ্গ ও দুর্বল লোক বাস করতো। লোকেরা তাহার ব্যাপারে কোন আশঙ্কা করতো না। কিন্তু একদা বাড়ির এক ক্রীতদাসীর সাথে সে যেনায় লিপ্ত হলে লোকেরা তাজ্জব বনে যায়। সাদ বিন উবাদা [রাদি.] তাহার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট পেশ করিলেন। তিনি বলেনঃ তাহাকে এক শত বেত্রাঘাত করো। লোকজন বলল, হে আল্লাহর নবী! সে এ শাস্তি সহ্য করিতে [স্বাস্থ্যগতভাবে] দুর্বল [অক্ষম]। তাহাকে যদি আমরা এক শত বেত্রাঘাত করি তবে সে মারা যেতে পারে। তিনি বলেনঃ তাহলে তোমরা একশত শাখাবিশিষ্ট একটি গাছের ডাল লও এবং তা দ্বারা তাহাকে একবার প্রহার করো।
{উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হইয়াছে, অপর সানাদটি হলোঃ}
২/২৫৭৪[১]. <সুফইয়ান বিন ওয়াকী><আল-মুহারিবী><মুহাম্মাদ বিন ইসহাক [তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন, তাহার শীয়া ও কাদারিয়া মতাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে]><ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ><আবু উমামাহ বিন সাহল><সাদ বিন উবাদাহ [রাদি.]> {২৫৭৪}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।{২৫৭৪} আবু দাউদ ৪৪৭২, আহমাদ ২১৪২৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনিল মাদানী বলেন, তিনি সালিহ। সুলায়মান বিন তাহারখান ও সুলায়মান বিন মিহরান বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি আমার নিকট হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা] ২. সুফইয়ান বিন ওয়াকী সম্পর্কে ঈমাম বুখারী মন্তব্য করিয়াছেন। ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নয়। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাহার হাদিস বর্জন করিয়াছেন। ঈমাম যাহাবী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৪১৮, ১১/২০০ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু সুফইয়ান বিন ওয়াকী এর কারণে সানাদটি সন্দেহযুক্ত। সঠিক সানাদ হলঃ মুহাম্মাদ বিন ইসহাক এর সুত্রে সাঈদ বিন সাদ বিন উবাদাহ। হাদিসটির ১০৪ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ১ টি জাল, ২১ টি খুবই দুর্বল, ৫৬ টি দুর্বল, ২০ টি হাসান, ৬ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ আবু দাউদ ৪৪৭২, আহমাদ ২৩৩৮৮, দারাকুতনী ৩১৩১, ৩১৩২, ৩১৩৩, ৩১৩৪, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১৬১৩৩, ১৬১৩৪, মুজামুল আওসাত ৬৬০, শারহুস সুন্নাহ ২৫৯০, ২৫৯১।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/১৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি [মুসলমানদের বিরুদ্ধে] অস্ত্র ধারন করে
২৫৭৫ আবু হুরায়ারাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। {২৫৭৫}
{২৫৭৫} মুসলিম ১০১, আহমাদ ৮১৫৯, ২৮৫০০, ইবনিস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইয়াকুব বিন হুমায়দ বিন কাসিব সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭০৮৬, ৩২/৩১৮ নং পৃষ্ঠা] ২. সুহায়ল বিন আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সাবত। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার বর্ণিত হাদিস সহীহ নয়। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তাহার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৬২৯, ১২/২২৩ নং পৃষ্ঠা] ৩. মুগীরাহ বিন আবদুর রহমান সম্পর্কে আবুল কাসিম বিন বিশকাওয়াল বলেন, তাহার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী ও ফকীহ তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬১৩৫, ২৮/৩৮১ নং পৃষ্ঠা] ৪. আবু মাশার সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল, তিনি সিকাহ নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তাহার মুখস্ত করার আগে হাদিস বর্ণনার ব্যাপারে কিছু আহলে ইলম সমালোচনা করিয়াছেন। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৩৮৬, ২৯/৩২২ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু আবু মাশার এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ১৭৭ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ২ টি জাল, ২৩ টি খুবই দুর্বল, ৭৪ টি দুর্বল, ৩৭ টি হাসান, ৪১ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ বুখারী ৬৮৭৪, ৭০৭০, ৭০৭১, মুসলিম ১০১, ১০২, ১০৩, তিরমিজি ১৪৫৯, দারেমী ২৫২০, আহমাদ ৪৪৫৩, ৪৬৩৫, ৫১২৭, ৫৭৬৪, ৬২৪১, ৬৩৪৫, ৬৬৮৫, ৬৭০৩ মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১৭১৯৯, ১৮৬৮০, ১৮৬৮২।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭৬ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। {২৫৭৬}
{২৫৭৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৮৭৪, ৭০৭০, মুসলিম ৯৮, নাসাঈ ৪১০০, আহমাদ ৪৪৫৩, ৪৬৩৫, ৫১২৭, ৬২৪১, ৬৩৪৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭৭ আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
{২৫৭৭} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৭০৭১, মুসলিম ১০০, তিরমিজি ১৪৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/২০. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি রাহাজানি ও লুটতরাজ করে এবং জনজীবনে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে
২৫৭৮ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উরায়নাহ গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে [মদীনায়] আগমন করে। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাহাদের স্বাস্থ্যের অনুকূল হলো না। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা যদি আমাদের উটের চারণভূমিতে যেতে এবং তাহার দুধ ও পেশাব পান করিতে [তাহলে হয়তো নিরাময় লাভ করিতে]। তাহারা তাই করিল [এবং রোগমুক্ত হলো]। অতঃপর তাহারা দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করিল [মুরতাদ হয়ে গেল], রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর রাখালকে হত্যা করিল এবং তাহাঁর উটের পাল লুট করে নিয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এদের পিছু ধাওয়া করিতে লোক পাঠালেন। তাহাদেরকে গ্রেফতাহার করে নিয়ে আসা হলে তিনি তাহাদের হাত-পা কেটে এবং তাহাদের চোখে লৌহ শলাকা বিদ্ধ করে তাহাদেরকে উত্তপ্ত বালুর উপর ফেলে রাখলেন। অবশেষে তাহারা মারা গেলো। {২৫৭৮}
{২৫৭৮} ইবনি মাজাহ ৩৫০৩, সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৩৩, ১৫০১, ৩০১৮, ৪১৯২, ৪১৯৩, ৪৬১০, ৫৬৮৫, ৫৬৮৬, ৫৭২৭, ৬৮০২, ৬৮০৪, ৬৮০৫, ৬৮৯৯, মুসলিম ১৬৭১, তিরমিজি ৭২, ৭৩, ১৮৪৫, নাসাঈ ৩০৫, ৩০৬, ৪০৪২, ৪০২৫, ৪০২৭, ৪০২৮, ৪০২৯, ৪০৩০, ৪০৩১, ৪০৩২,৪০৩৪, ৪০৩৫, আবু দাউদ ৪৩৬৪, আহমাদ ১১৬৩১, ১২২২৮, ১২৪০৮, ১২৬৩৩, ১২৭১৫, ১৩৬৪৭, ১৩৬৭২, ইরওয়া ১৭৭, রাওদুন নাদীর ৪৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৭৯ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর উটের পাল লুট করিল। নবী [সাঃআঃ] তাহাদের হাত-পা কেটে দিলেন এবং তাহাদের চোখে লৌহ শলাকা বিদ্ধ করিলেন। {২৫৭৯}
{২৫৭৯} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আদ-দারাওয়ারদী সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি সিকাহ তবে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আল-আজালী তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি যখন তাহার কিতাব থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করেন তখন তা সহীহ কিন্তু তিনি যখন মানুষের কিতাব থেকে হাদিস বর্ণনা করিতেন তখন তিনি সন্দেহ করিতেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/২১. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ
২৫৮০ সাঈদ বিন আমর বিন নুফায়ল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যাক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। {২৫৮০}
{২৫৮০} তিরমিজি ১৪১৮, ১৪২১, নাসাঈ ৪০৯০, ৪০৯১, ৪০৯৪, ৪০৯৫, আবু দাউদ ৪৭৭২, আহমাদ ১৬৩১, ১৬৩৬, ১৬৫২, আল-আহকাম ৪১-৪২ নং পৃষ্ঠা, ইরওয়া ৭০৮, মিশকাত ৩৫২৯, রাওদুন নাদীর ৩২৯, ৫৮৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮১ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির ধন-সম্পদ লুট করিতে চাইলে সে তাতে বাধা দিতে গিয়ে তাহার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়। {২৫৮১}
{২৫৮১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৫/৩৬৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইয়াযীদ বিন সিনান আল-জাযারী সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তিনি হাদিস গ্রহনে শিথিল। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭০০১, ৩২/১৫৫ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু ইয়াযীদ বিন সিনান আল-জাযারী এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ৪৮০ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ৯ টি জাল, ৭৭ টি খুবই দুর্বল, ১০৫ টি দুর্বল, ৯৪ টি হাসান, ১০৫ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ বুখারী ২৪৮০, মুসলিম ১৪২, তিরমিজি ১৪১৮, ১৪১৯, ১২২০, ১৪২১, আবু দাউদ ৪৭৭১, ৪৭৭২, আহমাদ ৫৯১, ১৬০১, ১৬৩১, ১৬৫৫, ২৭৭৫, ৬৪৮৬, ৬৭৭৭, ৬৭৮৪, ৬৭৯০, ৬৮৭৪, ৬৮৮৩, ৬৯১৭, ৬৯৭৫। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮২ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কারো ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করার চেষ্টা করা হলে এবং সে তা রক্ষা করিতে গিয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়। {২৫৮২}
{২৫৮২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৫/৩৬৩-৩৬৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৪/২২. অধ্যায়ঃ চোরের শাস্তি
২৫৮৩ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ চোরের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত, ডিম চুরি করার অপরাধে যাহার হাত কাটা যায় এবং রশি চুরি করার অপরাধে যাহার হাত কাটা যায়। {২৫৮৩}
{২৫৮৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৭৮৩, ৬৭৯৯, মুসলিম ১৬৮৭, নাসাঈ ৪৮৭৩, আহমাদ ৭৩৮৮, ইরওয়া ২৪১০। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২৫৮৪ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিন দিরহাম মুল্যের একটা ঢাল চুরির অপরাধে নবী [সাঃআঃ] হাত কাটার নির্দেশ দেন। {২৫৮৪}
{২৫৮৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৭৯৫, ৬৭৯৬, ৬৭৯৭, ৬৭৯৮, মুসলিম ১৬৮৬, তিরমিজি ১৪৪৬, নাসাঈ ৪৯০৬, ৪৯০৭, ৪৯০৮, ৪৯০৯, ৪৯১০, আবু দাউদ ৪৩৮৫, ৪৩৮৬, আহমাদ ৪৪৮৯, ৫১৩৫, ৫২৮৮, ৫৪৯৩, ৫৫১৮, ৬২৮১, মুয়াত্তা মালিক ১৫৭২, দারেমী ২৩০১, ইরওয়া ৮/৬২, ২৪১২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮৫ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সিকি দীনার অথবা তাহার অধিক পরিমাণ ছাড়া [চোরের] হাত কাটা যাবে না। {২৫৮৫}
{২৫৮৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৭৮৯, ৬৭৯০, ৬৭৯১, ৬৭৯২, মুসলিম ১৬৮৪, তিরমিজি ১৪৪৫, নাসাঈ ৪৯১৪, ৪৯১৬, ৪৯১৭, ৪৯১৮, ৪৯১৯, ৪৯২০, ৪৯২১, ৪৯২২, ৪৯২৩, ৪৯২৪, ৪৯২৫, ৪৯২৬, ৪৯২৭, ৪৯২৮, ৪৯৩০, ৪৯৩১, ৪৯৩২, ৪৯৩৩, ৪৯৩৪, ৪৯৩৫, ৪৯৩৬, ৪৯৩৭, ৪৯৩৮, ৪৯৩৯, আবু দাউদ ৪৩৮৩, ৪৩৮৪, আহমাদ ২৩৫৫৮, ২৩৯৯৪, ২৪২০৪, ২৪৮৮৬, ২৫৫৮৫, ২৫৬১০, মুয়াত্তা মালিক ১৫৭৫, ১৫৭৬, দারেমী ২৩০০, ইরওয়া ২৪০২, রাওদুন নাদীর ৭৮৩, ৭৮৪, আত-তালীকু আলাত তানকীল ২/১১২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।উক্ত হাদিসের রাবি আবু মারওয়ান আল-উসমানী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন ও সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ঈমাম বুখারী তাহাকে সত্যবাদী বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৪৫৪, ২৬/৮১ নং পৃষ্ঠা]।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৮৬ সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, একটি ঢালের সম-পরিমাণ চুরির বেলায় চোরের হাত কাটা হইবে। {২৫৮৬}
{২৫৮৬} আহমাদ ১৪৫৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আবু ওয়াকীদ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তাহার হাদিস নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য ছিলেন না। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৮৩৫, ১৩/৮৪ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/২৩. অধ্যায়ঃ কর্তিত হাত কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া
২৫৮৭ ফাদালাহ বিন উবায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[ইবনি মুহায়রিয] বলেন, আমি ফাদালাহ বিন উবায়দ [রাদি.] কে কর্তিত হাত কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, এটাই নিয়ম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তির হাত কেটে তা তাহার কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে দিয়াছিলেন। {২৫৮৭}
{২৫৮৭} আবু দাউদ ৪৪১১, ইরওয়া ২৪৩২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হাজ্জাজ বিন আরতা সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বকর আল বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়, অন্যত্র তিনি তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন। মুহাম্মাদ বিন সাদ তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১১১২, ৫/৪২০ নং পৃষ্ঠা]। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস।
১৪/২৪. অধ্যায়ঃ চোর স্বীকারোক্তি করিলে
২৫৮৮ সালাবাহ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমর বিন সামুরাহ বিন জুনদুব [রাদি.] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি অমুক গোত্রের একটি উট চুরি করেছি। অতএব আমাকে পবিত্র করুন। নবী [সাঃআঃ] সেই গোত্রের নিকট লোক পাঠালে তাহারা বলল, আমরা আমাদের একটি উট হারিয়েছি। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] নির্দেশ দিলে তাহার হাত কর্তন করা হয়। ছালাবা [রাদি.] বলেন, আমি লক্ষ্য করছিলাম, যখন তাহার হাতটি [কেটে] পড়ে গেলো তখন সে বলল, সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তোমার থেকে আমাকে পবিত্র করিয়াছেন। তুমি আমার দেহটাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাতে চেয়েছিলে। {২৫৮৮}
{২৫৮৮} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ইবনি লাহীআহ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তাহার হাদিসের ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আমর বিন ফাল্লাস বলেন, তাহার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় যে হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন তা দুর্বল। আবু কাসিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ার পর হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। বিশর ইবনিস সারী বলেন, যদি তাহার সাথে আমার সাক্ষাৎ হত তবে আমি তাহার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করতাম না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫১৩, ১৫/৪৮৭ নং পৃষ্ঠা] ২. আব্দুর রহমান বিন সালাবাহ আল-আনসারী সম্পর্কে হাজার আল-আসকালনী ও ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭৭৯, ১৭/২২ নং পৃষ্ঠা]।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/২৫. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাস চুরির অপরাধ করিলে
২৫৮৯ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ক্রীতদাস চুরির অপরাধ করিলে বিশ দিরহামের বিনিময়ে হলেও তাহাকে বিক্রি করে দাও। {২৫৮৯}
{২৫৮৯} আবু দাউদ ৪৪১২, আহমাদ ৮২৩৪, ৮২৪৬, ৮৪৫৭, ৮৭৯৭, মিশকাত ৩৬০৬, জইফ আল-জামি ৫৪৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি উমার বিন আবু সালামাহ সম্পর্কে আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসাঈ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪২৪৭, ২১/৩৭৫ নং পৃষ্ঠা]।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৯০ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যুদ্ধলব্ধ মাল [গানীমাত] থেকে প্রাপ্ত একটি যুদ্ধবন্দী দাস যুদ্ধলব্ধ মালের রাষ্ট্রের প্রাপ্য অংশ থেকে চুরি করিলে তাহাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট পেশ করা হলো। কিন্তু তিনি তাহার হাত কর্তনের নির্দেশ দেননি। তিনি বলেনঃ মহামহিম আল্লাহর সম্পদের একাংশ অপরাংশ চুরি করেছে। {২৫৯০}
{২৫৯০} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ২৪২৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. জুবারাহ ইবনিল মুগাল্লিস সম্পর্কে মুসলিম বিন কায়স বলেন, ইনশাআল্লাহ্ [আল্লাহ্ চায়তো] তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মিথ্যুক ও হাদিস বানিয়ে বর্ণনা করেন। ঈমাম বুখারী বলেন, তিনি মুদতাহারাব ভাবে হাদিস বর্ণনা করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তাহার একাধিক মুনকার হাদিস রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৮৯১, ৪/৪৮৯ নং পৃষ্ঠা] ২. হাজ্জাজ বিন তামীম সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি সিকাহ নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১১১৩, ৫/৪২৮ নং পৃষ্ঠা] ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/২৬. অধ্যায়ঃ আত্মসাৎকারী, লুণ্ঠনকারী ও ছিনতাইকারী
২৫৯১ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আত্মসাৎকারী, লুণ্ঠনকারী ও ছিনতাইকারীর হাত কর্তন করা হইবে না। {২৫৯১}
{২৫৯১} তিরমিজি ১৪৪৮, নাসাঈ ৪৯৭১, ৪৯৭২, ৪৯৭৩, ৪৯৭৪, ৪৯৭৫, ৪৯৭৬, আবু দাউদ ৪৩৯১, ৪৩৯২, আহমাদ ১৪৬৫২, দারেমী ২৩১০, ইরওয়া ২৪০৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৯২ আবদুর রহমান বিন আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি, ছিনতাইকারীর হাত কর্তন করা যাবে না। {২৫৯২}
{২৫৯২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৮/৬৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/২৭. অধ্যায়ঃ ফল ও গাছের মাথি চুরির অপরাধে হাত কর্তন করা যাবে না
২৫৯৩ রাফিবিন খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ফল ও মাথি [নারিকেল, খেজুর, তাল ইত্যাদি গাছের মাথার মূল কচি অংশ] চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। {২৫৯৩}
{২৫৯৩} তিরমিজি ১৪৪৯, নাসাঈ ৪৯৬০, ৪৯৬১, ৪৯৬২, ৪৯৬৩, ৪৯৬৪, ৪৯৬৫, ৪৯৬৬, ৪৯৬৭, ৪৯৬৮, ৪৯৬৯, ৪৯৭০, আবু দাউদ ৪৩৮৮, আহমাদ ১৫৩৭৭, ১৫৩৮৭, ১৬৮০৯, ১৬৮৩০, ১৫৮৩, দারেমী ২৩০৪, ২৩০৫, ২৩০৬, ২৩০৭, ২৩০৮, ২৩০৯, ইরওয়া ২৪১৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৯৪ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ফল ও মাথি চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। {২৫৯৪}
{২৫৯৪} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৮/৭৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি সাদ বিন সাঈদ আল-মাকবুরী সম্পর্কে আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, তিনি কাদারিয়্যা মতাবলম্বী। ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২২০৭, ১০/২৬১ নং পৃষ্ঠা] ২. আবদুল্লাহ বিন সাঈদ আল-মাকবুরী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, আমি তাহার মজলিসে বসে জানতে পেরেছি যে, তাহার মাঝে মিথ্যাবাদিতা রয়েছে। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইবনি মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ নন। ঈমাম বুখারী তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। আবু যুরআহ তাহাকে দুর্বল সাব্যস্ত করিয়াছেন। আমর ইবনিল ফাল্লাস তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহীহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৩০৫, ১৫/৩১ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু সাদ বিন সাঈদ আল-মাকবুরী ও আবদুল্লাহ বিন সাঈদ আল-মাকবুরী এর কারণে সানাদটি খুবই দুর্বল। হাদিসটির ১২৫ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ৩ টি জাল, ৫১ টি খুবই দুর্বল, ৫৭ টি দুর্বল, ১০ টি হাসান, ৪ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ তিরমিজি ১৪৪৯, আবু দাউদ ৪৩৮৮, দারেমী ২৩০৪, ২৩০৫, ২৩০৬, ২৩০৮, ২৩০৯, আহমাদ ১৫৩৭৭, ১৫৩৮৭, ১৬৮০৯, ১২৮৩০।
শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪/২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সুরক্ষিত স্থান থেকে চুরি করে
২৫৯৫ সাফওয়ান বিন আবু উমায়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নিজের চাদরকে বালিশবৎ বানিয়ে তা মাথার নিচে রেখে মসজিদে ঘুমিয়েছিলেন। চোর তাহার মাথার নিচ থেকে তা চুরি করিল। তিনি তাহাকে গ্রেপ্তার করে নবী [সাঃআঃ] এর নিকট নিয়ে এলেন। নবী [সাঃআঃ] তাহার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। সাফওয়ান [রাদি.] বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো এটা চাইনি! আমার চাদর আমি তাহাকে দান করলাম। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহলে তাহাকে আমার কাছে আনার আগে কেন তা করিলে না? {২৫৯৫}
{২৫৯৫} নাসাঈ ৪৮৭৮, ৪৮৭৯, ৪৮৮১, ৪৮৮৩, ৪৮৮৪, আহমাদ ১৪৮৭৯, ২৭০৯০, ২৭০৯৭, মুয়াত্তা মালিক ১৫৭৯, দারেমী ২২৯৯, ইরওয়া ২৩১৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫৯৬ আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মুযায়না গোত্রের এক লোক নবী [সাঃআঃ] কে ফল [চুরির অপরাধ] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। তিনি বলেনঃ [গাছের মাথার] গুচ্ছ থেকে নিলে তাহার মূল্য এবং তাহার সাথে তাহার সমপরিমান দিতে হইবে। আর খলিয়ান থেকে নিলে এবং তাহার মূল্য একটি ঢালের মূল্যের সমপরিমান হলে হাত কাটা যাবে। আর যদি শুধু খায়, নিয়ে না যায় তবে তাহার উপর কিছুই [জরিমানা] ধার্য হইবে না। লোকটি বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! চারণভূমি থেকে বকরী নিয়ে গেলে? তিনি বলেনঃ তাহার মূল্য ও সাথে সমপরিমান দিতে হইবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হইবে। আর বাথান থেকে চুরি করিলে তাহার মূল্য যদি একটি ঢালের মূল্যের সমপরিমান হয় তবে হাত কাটা যাবে। {২৫৯৬}
{২৫৯৬} তিরমিজি ১২৮৯, নাসাঈ ৪৯৫৮, ৪৯৫৯, আবু দাউদ ১৭১০, ৪৩৯০, ইরওয়া ২৪১৩, সহীহ আবু দাউদ ১৫০৪-১৫০৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪/২৯. অধ্যায়ঃ চোরকে তালকীন দেয়া
২৫৯৭ আবু উমায়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এক চোরকে উপস্থিত করা হলে সে তাহার অপরাধের স্বীকারোক্তি করিল। কিন্তু তাহার কাছে চুরিকৃত মাল পাওয়া গেলো না। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ মনে হয় তুমি চুরি করোনি। সে বলল, হাঁ [চুরি করেছি]। তিনি আবার বললেনঃ মনে হয় তুমি চুরি করোনি। সে বলল, হাঁ [চুরি করেছি]। অতঃপর তিনি হুকুম দিলে তাহার হাত কেটে দেয়া হয়। নবী [সাঃআঃ] [লোকটিকে] বললেনঃ তুমি বলো, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাহাঁর কাছে তওবা করছি। সে বললোঃ “আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাহাঁর কাছে তওবা করছি”। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তাহার তওবা কবুল করো”। তিনি দুবার একথা বলেন। {২৫৯৭}
{২৫৯৭} নাসাঈ ৪৮৭৭, আবু দাউদ ৪৩৮০, আহমাদ ২২০২, ইরওয়া ২৪২৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আবুল মুনযীর সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাকবুল। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭৬৫০, ৩৪/৩২০ নং পৃষ্ঠা].শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/৩০. অধ্যায়ঃ বল প্রয়োগে যাকে কিছু করিতে বাধ্য করা হয়
২৫৯৮ ওয়ায়িল বিন হুজর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে কোনরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষণকারীকে হদ্দের শাস্তি দেন। তিনি মহিলার জন্য মোহরের ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা তা রাবী উল্লেখ করেননি। {২৫৯৮}
{২৫৯৮} তিরমিজি ১৪৫৩, ১৪৫৪, ইরওয়া ৭/৩৪১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হাজ্জাজ বিন আরতা সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বকর আল বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়, অন্যত্র তিনি তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন। মুহাম্মাদ বিন সাদ তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১১১২, ৫/৪২০ নং পৃষ্ঠা] ।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/৩১. অধ্যায়ঃ মসজিদে হদ্দ কার্যকর করা নিষেধ
২৫৯৯ ।ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মসজিদের মধ্যে হদ্দ কার্যকর করা যাবে না। {২৫৯৯}
{২৫৯৯} তিরমিজি ১৪০১, দারেমী ২৩৫৭, ইরওয়া ৭/২৭১, ২৩২৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি ইসমাইল বিন মুসলিম সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, আমরা তাহার হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করি না। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু আলী আল-হাফিয আন-নায়সাবুরী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৮৩, ৩/১৯৮ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৬০০ আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদের মধ্যে হদ্দ কার্যকর করিতে নিষেধ করিয়াছেন। {২৬০০}
{২৬০০} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৭/৩৬২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি ইবনি লাহীআহ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তাহার হাদিসের ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আমর বিন ফাল্লাস বলেন, তাহার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় যে হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন তা দুর্বল। আবু কাসিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ার পর হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। বিশর ইবনিস সারী বলেন, যদি তাহার সাথে আমার সাক্ষাৎ হত তবে আমি তাহার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করতাম না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫১৩, ১৫/৪৮৭ নং পৃষ্ঠা]। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪/৩২. অধ্যায়ঃ তাযীর প্রসঙ্গ
২৬০১ আবু বুরদাহ বিন নিয়ার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিতেন, আল্লাহর নির্ধারিত হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধ ব্যতীত অপর কোন অপরাধে অপরাধীকে দশের অধিক বেত্রাঘাত করা যাবে না। {২৬০১}
{২৬০১} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬৮৪৮, ৬৮৫০, মুসলিম ১৭০৮, ১৪৬৩, আবু দাউদ ৪৪৯১, আহমাদ ১৫৪০৫, ১৬০৫১, দারেমী ২৩১৪, ইরওয়া ২০৩২, ২১৮০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৬০২। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমারা দশটি বেত্রাঘাতের অধিক তাযীর [শাস্তি] নির্ধারণ করো না। {২৬০২}
{২৬০২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদানী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭২, ৩/১৬৩ নং পৃষ্ঠা] ২. আব্বাদ বিন কাসীর সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করো না। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তাহার হাদিস লেখার যোগ্য নয়। আমর বিন খালিদ সম্পর্কে ওকী বিন জাররাহ বলেন, তাহার থেকে মিথ্যা বলা প্রকাশ পেয়েছে। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মিথ্যাবাদী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩০৯০, ১৪/১৪৫ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪/৩৩. অধ্যায়ঃ হদ্দ [শাস্তি] হলো [গুনাহের] কাফফারা
২৬০৩ উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে, অতঃপর সে যত সত্বর শাস্তি ভোগ করে, সেটাই তাহার অপরাধের কাফফারা অন্যথায় তাহার বিষয়টি আল্লাহর নিকট সোপর্দ হয়। {২৬০৩}
{২৬০৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৮, ৩৮৯২, ৩৮৯৩, ৪৮৯৪, ৬৭৮৪, ৬৮০১, ৬৮৭৩, ৭২১৩, ৭৪৬৮, মুসলিম ১৭০৯, তিরমিজি ১৪৩৯, নাসাঈ ৪১৬১, ৪১৬২, ৪১৭৮, ৪২১০, ৫০০২, আহমাদ ২২১৬০, ২২১৭০, ২২২২৫, ২২২৪৮, দারেমী ২৪৫৩, সহীহাহ ২৩১৭, ২৯৯৯।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২৬০৪ আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন পাপ করার পর সেজন্য শাস্তি ভোগ করিলে আল্লাহ তাআলা তাহার সেই বান্দাকে পুনর্বার [একই অপরাধের] শাস্তি দেয়ার বিষয়ে অধিক ন্যায়পরায়ণ। কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে পাপকাজ করার পর আল্লাহ তা গোপন করে রাখলেন। আল্লাহ যা উপেক্ষা করিয়াছেন তাহার জন্য পুনরায় গ্রেফতাহার করার ব্যাপারে অধিক দয়াপরবশ। {২৬০৪}
{২৬০৪} তিরমিজি ২৬২৬, রাওদুন নাদীর ৭০৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ইউনুস আবু ইসহাক সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি তাহার রেওয়ায়াতে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কিছু সন্দেহ করেন। যাকারিয়্যা বিন ইয়াহইয়া আস-সাজী বলেন, তিনি সত্যবাদী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭১৭০, ৩২/৪৮৮ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/৩৪. অধ্যায়ঃ কেউ নিজের স্ত্রীর সাথে বেগানা পুরুষ লোককে পেলে
২৬০৫ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
সাদ বিন উবাদাহ আল-আনসারী [রাদি.] বলিলেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! কোন ব্যক্তি বেগানা পুরুষ লোককে তাহার স্ত্রীর সাথে [অবৈধ কাজে লিপ্ত] পেলে সে কি তাহাকে হত্যা করিবে? রাসূলল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ না। সাদ [রাদি.] বলেন, হাঁ, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দান করে সম্মানিত করিয়াছেন [সে তাহাকে অবশ্যই হত্যা করিবে]। রাসূলল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের নেতা যা বলেন তা শোনো। {২৬০৫}
{২৬০৫} মুসলিম ১৪৯৮, আবু দাউদ ৪৫৩২, ৪৫৩৩, আহমাদ ২৭২৫১, মুয়াত্তা মালিক ১৪৪৬, ১৪৫৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা] ২. সুহায়ল বিন আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সাবত। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার বর্ণিত হাদিস সহীহ নয়। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তাহার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৬২৯, ১২/২২৩ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৬০৬ সালামাহ ইবনিল মুহাব্বিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
হাদ্দ সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে তীক্ষ্ণ আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী আবু সাবিত সাদ বিন উবাদা [রাদি.] কে বলা হলো, তোমার স্ত্রীর সাথে বেগানা কোন পুরুষ লোককে পেলে তুমি কি করিবে? তিনি বলেন, আমি তাহাদের উভয়কে তরবারির আঘাতে হত্যা করিব। আমার দ্বারা এটা সম্ভব হইবে না যে আমি এই অপকর্মের চারজন সাক্ষী তালাশ করিব এবং সাক্ষী নিয়ে আসতে আসতে সে তাহার অপকর্ম শেষ করিবে অথবা আমি তোমাদের সামনে এসে বলবো যে, আমি এরূপ এরূপ দেখেছি এবং তোমরা আমাকে যেনার অপবাদের শাস্তি দিবে এবং আর কখনো আমার সাক্ষ্য গ্রহণ করিবে না। রাবী বলেন, বিষয়টি নবী [সাঃআঃ] এর সামনে আলোচনা করা হলে তিনি বলেনঃ তরবারিই সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট, অতঃপর তিনি বলেনঃ না [এ অনুমতি দেয়া যায় না]। আমি আশঙ্কা করছি যে, উন্মাদ ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি তাই করে বসবে। ঈমাম আবু আবদুল্লাহ ইবনি মাজা [রাদি.] বলেন, আমি আবু যুরআ [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি যে, এটা হলো আলী বিন মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী বর্ণিত হাদিস, যাহার অংশবিশেষ আমার স্মরণ নাই। {২৬০৬}
{২৬০৬} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যইফাহ ৪০৯১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আল-ফাদল বিন দালহাম সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় খুবই দুর্বল। আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তিনি হাফিয ছিলেন না। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭৩৩, ২৩/২২০ নং পৃষ্ঠা] ২. কাবীসাহ বিন হুরায়স সম্পর্কে আবুল হাসান ইবনিল কাত্তান বলেন, তিনি অজ্ঞ। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তাহার পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়না। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তাহার হাদিস বিশুদ্ধ নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম বুখারী বলেন, তাহার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৮৪১, ২৩/৪৭৫ নং পৃষ্ঠা]। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪/৩৫. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি পিতাহার মৃত্যুর পর তাহার স্ত্রীকে বিবাহ করিলে
২৬০৭ আবু বুরদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[বারা বিন আযিব] বলেন, আমার মামা [আবু বুরদাহ] আমাকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। অধস্তন রাবী হুশাইম তাহার রিওয়ায়াতে তাহার জন্য একটি পতাকা তৈরি করে দিয়াছিলেন। আমি তাহাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে এক ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছেন, যে তাহার পিতাহার মৃত্যুর পর তাহার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন তাহাকে হত্যা করি। {২৬০৭}
{২৬০৭}তিরমিজি ১৩৬২, নাসাঈ ৩৩৩১, ৩৩৩২, আবু দাউদ ৪৪৫৭, ৪৪৫৬, আহমাদ ১৮১৩৪, ১৮১৪৬, দারেমী ২২৩৯, ইরওয়া ২৩৫১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইসমাইল বিন মুসা সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন, তাহার ব্যাপারে শীয়া মতাবলম্বী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৯১, ৩/২১০ নং পৃষ্ঠা] ২. আশআস বিন সাওওয়ার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। উসমান বিন আবু শায়বাহ বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু তাহার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ঈমাম যাহাবী বলেন, সালিহুল হাদিস। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫২৪, ৩/২৬৪ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু আশআস বিন সাওওয়ার এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ১৪৫ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ১৮ টি খুবই দুর্বল, ৩৯ টি দুর্বল, ৪১ টি হাসান, ৪৭ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ তিরমিজি ১৩৬২, আবু দাউদ ৪৪৫৭, দারেমী ২২৩৯, আহমাদ ১৮০৮৫, ১৮১০৬, ১৮১০৭, ১৮১৪৬, দারাকুতনী ৩৪০৪, ৩৪০৫, ৩৪১৭, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১০৮০৪, মুজামুল আওসাত ১১১৯, ৪৪৬২, ৬৬৫২, শারহুস সুন্নাহ ২৫৯২।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৬০৮ মুআবিয়াহ বিন কুররাহ হইতে বর্ণীতঃ
তাহার পিতা [কুররাহ বিন ইয়াস] [রাদি.] বলেন, এক ব্যক্তি তাহার পিতাহার স্ত্রীকে বিবাহ করিলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে হত্যা করার জন্য তাহার সমস্ত মালপত্র নিয়ে নেয়ার জন্য আমাকে পাঠান। {২৬০৮}
{২৬০৮} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৮/২১-২২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি খালিদ বিন আবু কারীমাহ সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে ইবনি মাঈন তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৪৭, ৮/১৫৬ নং পৃষ্ঠা] শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৪/৩৬. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দিলে এবং নিজের মনিব ব্যতীত অন্যকে মনিব বলে পরিচয় দিলে।
২৬০৯ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সাথে জন্মসূত্র স্থাপন করে অথবা নিজের মনিব ব্যতীত অন্যকে মনিব বানায়, তাহার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাকুল ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। {২৬০৯}
{২৬০৯} আহমাদ ২৮১২, ২৯০৭, ৩০২৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৮৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইবনি আবুদ দায়ফ সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তাহার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তাহার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৩০৫, ২৫/৪০৪ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু ইবনি আবুদ দায়ফ এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির শতাধিক শাহিদ হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ বুখারী ৩৫০৮, ৪৩২৭, ৬৭৬৭, মুসলিম ৬৩, ৬৫, ৬৬, ১৫০৯, আবু দাউদ ৫১১৩, ৫১১৪, ৫১১৫, দারেমী ২৫২৯, ২৫৩০, ২৮৬০, ২৮৬৪, আহমাদ ১৪৫৭, ১৫০০, ১৫০২, ১৫০৭, ১৫৫৬, ২৯১৭, ৩০২৯। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৬১০ আবু উসমান আন-নাহ্দী হইতে বর্ণীতঃ
আমি সাদ [রাদি.] ও আবু বাকরাহ [রাদি.], কে বলিতে শুনিয়াছি এবং তাহাদের প্রত্যেকেই বলেছেন, আমার উভয় কান শুনেছে এবং আমার অন্তর মুখস্থ রেখেছে যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সজ্ঞানে নিজের পিতাহাকে বাদ দিয়ে অন্য লোককে বাপ বলে পরিচয় দেয়, জান্নাত তাহার জন্য হারাম। {২৬১০}
{২৬১০} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৪৩২৭, ৬৭৬৭, মুসলিম ৬৩, আবু দাউদ ১৪৫৭, ১৫০০, ১৫৫৬, ১৯৮৮৩, ১৯৯৫৩, দারেমী ২৫৩০, ২৮৬০, গায়াতুল মারাম ২৬৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৬১১ আবদুল্লাহ বিন আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের পিতাহাকে বাদ দিয়ে অপর ব্যক্তিকে বাপ বলে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। অথচ পাঁচ শত বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুবাস পাওয়া যাবে। {২৬১১}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দঈফ তবে ৭০ বছরের হাদিসটি মাহফুয।{২৬১১} আহমাদ ৬৫৫৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৮৮, রাওদুন নাদীর ৫৮৭, সহীহাহ ২৩০৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ তবে ৭০ বছরের হাদিসটি মাহফুয।শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য
১৪/৩৭. অধ্যায়ঃ কেউ কাউকে নিজের গোত্র থেকে খারিজ করিলে
২৬১২ আশআস বিন কায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি কিনদাহ গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসলাম। তাহারা [কিনদা গোত্র] আমাকে তাহাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে করতো। আমি বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনারা কি আমাদের অন্তর্ভূক্ত নন? তিনি বলেন আমরা বানূ নাযর বিন কিনানার বংশধর। আমরা আমাদের মাতাহার প্রতি অপবাদ আরোপ করি না এবং আমাদের পিতৃপুরুষ থেকেও পৃথক হই না। রাবী বলেন, [এরপর থেকে] আশআছ বিন কায়স [রাদি.] বলিতেন, যে ব্যক্তি কুরায়শ গোত্রের কোন লোককে নাযর বিন কিনানা গোত্রভুক্ত নয় বলে দাবি করিবে, আমি অবশ্যই তাহাকে কাযাফ-এর শাস্তি দিবো। {২৬১২}
{২৬১২} আহমাদ ২১৩৩৩, ২১৩৩৮, ইরওয়া ২৩৬৮, সহীহাহ ২৩৭৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৪/৩৮. অধ্যায়ঃ নপুংসকদের বিধান।
২৬১৩ সাফওয়ান বিন উমায়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত থাকতেই তাহাঁর নিকট আমর বিন মুররা [রাদি.] এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আমার কপালে দুর্ভাগ্য লিখে দিয়েছেন। আমি আমার হাতের এই দফ [ঢোল] বাজানো ছাড়া রিযিক প্রাপ্তির আর কোন পথ দেখি না। অতএব আপনি আমাকে নির্দোষ সংগীতের অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আমি তোমাকে অনুমতিও দিবো না এবং তোমাকে সন্মানিত করে তোমার চোখও শীতল করিব না। হে আল্লাহর দুশমন! তুমি মিথ্যা বলেছো। আল্লাহ তোমাকে পবিত্র ও হালাল রিযিক দান করিয়াছেন। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে যে হালাল রিযিক দিয়েছেন তাহার পরিবর্তে আল্লাহ তোমার জন্য যে রিযিক হারাম করিয়াছেন তুমি তাই গ্রহণ করেছো। আমি যদি তোমাকে ইতোপূর্বে নিষেধ করে থাকতাম তবে অবশ্যই তোমাকে শাস্তি দিতাম। আমার এখান থেকে উঠে যাও এবং আল্লাহর নিকট তওবা করো। সাবধান! তোমাকে নিষেধ করার পরও যদি তুমি এ কাজ করো তবে আমি অবশ্যই তোমাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবো, তোমার মাথা মুণ্ডন করিয়ে বিকৃত করে দিবো, তোমার পরিবার থেকে তোমাকে নির্বাসিত করিব এবং তোমার সহায় সম্পত্তি লুণ্ঠন করা মদীনার যুবকদের জন্য হালাল করে দিবো। এ কথায় আমর উঠে দাঁড়ায় এবং নিজেকে এতোটা লাঞ্ছিত ও অপমানিত বোধ করে যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সে উঠে চলে গেলে নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ এইসব লোক পাপাচারী। এদের কেউ তওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাহাকে নপুংসক ও বিবস্ত্র অবস্থায় উত্থিত করবেন, যেরূপ সে দুনিয়াতে ছিল। সে একটুকরা কাপড় দিয়েও মানুষের সামনে লজ্জা নিবারণ করিবে না এবং যখনই সে দাঁড়াবে সাথে সাথে আছাড় খেয়ে পড়ে যাবে। {২৬১৩}
{২৬১৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট। উক্ত হাদিসের রাবি ইয়াহইয়া ইবনিল আলা সম্পর্কে আবু বিশর আদ দাওলাবী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে জড়িত। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মিথ্যুক। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৮৯৫, ৩১/৪৮৪ নং পৃষ্ঠা] ২. বিশর বিন নুমায়র সম্পর্কে আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে জড়িত। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাহার হাদিস বর্জন করিয়াছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নয়, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য, তিনি খুবই দুর্বল। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭১০, ৪/১৫৫ নং পৃষ্ঠা] ৩. ইয়াযীদ বিন আবদুল্লাহ সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী ও তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তাহার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭০১৮, ৩২/১৮২ নং পৃষ্ঠা]শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ জাল হাদিস
২৬১৪ উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] তাহার ঘরে প্রবেশ করিলেন। তিনি এক নপুংসককে আবদুল্লাহ বিন আবু উমাইয়্যার প্রতি বলিতে শুনলেন, আল্লাহ যদি আগামীতে তায়েফ বিজয় দান করেন তবে আমি তোমাকে এমন এক নারীকে দেখাবো, যে চার ভাঁজে সামনে আসে এবং আট ভাঁজে পিছনে যায়। নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও। {২৬১৪}
{২৬১৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৪৩২৪, ৫৮৮৭, মুসলিম ২১৮০, আবু দাউদ ৪৯২৯, ২৫৯৫১, ২৬১৫৯, মুয়াত্তা মালিক ১৪৯৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। শাস্তি হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply