দান করার হাদিস । ওয়ারিশ ওয়াকফ ঋণ দেনা ইত্তাদি

দান করার হাদিস

দান করার হাদিস । ওয়ারিশ ওয়াকফ ঋণ দেনা ইত্তাদি, এই অধ্যায়ে মোট  =৪৬ টি হাদীস (২৩৯০ – ২৪৩৫)>> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১৫-দান খয়রাত, অধ্যায়ঃ (৪১-৬১)=২১টি, হাদীস (২৩৯০ – ২৪৩৫)

১৩/৪১. অধ্যায়ঃ দান করে তা পুনরায় ফেরত নেয়া।
১৩/৪২. অধ্যায়ঃ কেউ কিছু দান করার পর তা বিক্রয় হইতে দেখলে সে কি তা ক্রয় করিতে পারে?
১৩/৪৩. অধ্যায়ঃ কেউ কোন জিনিস দান করার পর তাহার ওয়ারিশ হলে।
১৩/৪৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ওয়াকফ করিল।
১৩/৪৫. অধ্যায়ঃ আরিয়া [অস্থাবর মাল ধার দেয়া]
১৩/৪৬. অধ্যায়ঃ ওয়াদিয়া [নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য প্রদত্ত আমানত] ।
১৩/৪৭. অধ্যায়ঃ আমানত গ্রহণকারী আমানতের মাল দিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হলে।
১৩/৪৮. অধ্যায়ঃ হাওয়ালা [ঋণের দায় হস্তান্তর] ।
১৩/৪৯. অধ্যায়ঃ যামিন হওয়া [কাফালাহ]
১৩/৫০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পরিশোধ করার অভিপ্রায় নিয়ে ঋণ গ্রহণ করে
১৩/৫১. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করিল কিন্তু তা পরিশোধের অভিপ্রায় তাহার নাই।
১৩/৫২. অধ্যায়ঃ ঋণের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি
১৩/৫৩. অধ্যায়ঃ কেউ ঋণ বা নাবালেগ সন্তান রেখে মারা গেলে, তাহার দায়িত্ব আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের
১৩/৫৪. অধ্যায়ঃ অসচ্ছল ব্যক্তিকে [ঋণ পরিশোধে] অবকাশ দেয়া।
১৩/৫৫. অধ্যায়ঃ উত্তম পন্থায় পাওনা আদায়ের তাগাদা দেয়া এবং বিনীতভাবে পাওনা গ্রহণ করা।
১৩/৫৬. অধ্যায়ঃ উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধ করা
১৩/৫৭. অধ্যায়ঃ পাওনাদারের কঠোর আচরণ করার অধিকার আছে
১৩/৫৮. অধ্যায়ঃ দেনার কারণে আটক করা এবং পেছনে লেগে থাকা।
১৩/৫৯. অধ্যায়ঃ করয দেয়া।
১৩/৬০. অধ্যায়ঃ মৃতের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা।
১৩/৬১. অধ্যায়ঃ তিন কারণে দেনাদার হলে আল্লাহ তাহাঁর পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দিবেন।

১৩/৪১. অধ্যায়ঃ দান করে তা পুনরায় ফেরত নেয়া।

২৩৯০ উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন তুমি তোমার কৃত দান ফেরত নিও না। {২৩৯০}

{২৩৯০} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৪৮৯, ১৪৯০, ২৬৩৬, ২৭৭৫, ২৯৭০, ২৯৭১, ৩০০২, মুসলিম ১৬২০, ১৬২১, তিরমিজি ৬৬৮, নাসাঈ ২৬১৫, ২৬১৭, আবু দাউদ ১৫৯৩, আহমাদ ১৬৭, ২৮৩, ৫১৫৫, ৫৭৬২, মুয়াত্তা মালিক ৬২৫, ইরওয়া ৮৪৯, সহীহ আবু দাউদ ১৪১৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি হিশাম বিন সাদ সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার মুখস্তশক্তি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার হাদিস গ্রহন করা যায় কিন্তু তা দলীলযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। তাহার শীয়া মতাবলম্বী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৭৭, ৩০/২০৪ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৩৯১ আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দান করে তা পুনরায় ফেরত নেয়, সে কুকুরের সমতুল্য, যে বমি করে পুনরায় ফিরে এসে তা গলাধঃকরণ করে। {২৩৯১}

{২৩৯১} মুসলিম ১৬২২, আহমাদ ২১২০, ৪৭৯৫, ৫৪৬৯, ইরওয়া ১৬২২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৪২. অধ্যায়ঃ কেউ কিছু দান করার পর তা বিক্রয় হইতে দেখলে সে কি তা ক্রয় করিতে পারে?

২৩৯২ উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে একটি ঘোড়া দান করেছিলেন। তিনি তাহার মালিককে সেটি সস্তায় বিক্রয় করিতে দেখে নবী [সাঃআঃ] এর নিকটে এসে এ সম্পর্কে তাহাকে জিজ্ঞেস করেন। নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমার দান তুমি ক্রয় করোনা। {২৩৯২}

{২৩৯২} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৪৮৯, ১৪৯০, ২৬২৩, ২৬৩৬, ২৭৭৫, ২৯৭০, ২৯৭১, ৩০০২, ৩০০৩, মুসলিম ১৬২০, ১৬২১, তিরমিজি ৬৬৮, নাসাঈ ২৬১৫, ২৬১৬, ২৬১৭, আবু দাউদ ১৫৯৩, আহমাদ ১৬৭, ২৬০, ২৮৩, ৫১৫৫, ৫৭৬২, মুয়াত্তা মালিক ৬২৪, ৬২৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৩৯৩ যুবায়র ইবনিল আওওয়াম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহার গামর বা গামরা নামের একটি ঘোড়া দান করেন। তিনি তাহার সেই ঘোড়ার গর্ভজাত একটি নর বা মাদী ঘোড়া বিক্রয় হইতে দেখলেন। তা ক্রয় করিতে নিষেধ করা হলো। {২৩৯৩}

{২৩৯৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৩/৪৩. অধ্যায়ঃ কেউ কোন জিনিস দান করার পর তাহার ওয়ারিশ হলে।

২৩৯৪ বুরায়দাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক মহিলা নবী [সাঃআঃ] নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাকে আমার একটি ক্রীতদাসী দান করার পর তিনি ইনতিকাল করেন। আমি ছাড়া তাহার আর কোন ওয়ারিস নাই। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান দিবেন এবং তা ওয়ারিসী সূত্রে তোমাকে ফেরত দিয়েছেন। {২৩৯৪}

{২৩৯৪} মুসলিম ১১৪৯, তিরমিজি ৬৬৭, আবু দাউদ ১৬৫৬, ২৮৭৭, ৩৩০৮, আহমাদ ২২৪৪৭, ২২৪৬২, ২২৫২৩, ২২৫৪৫, সহীহ আবু দাউদ ২৫৬১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ বিন আতা সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুক ও তাদলীস করেন। ঈমাম যাহাবী তাহাকে সত্যবাদী বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪২৯, ১৫/৩১১ নং পৃষ্ঠা]।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৩৯৫ আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] এর নিকটে এসে বলল, আমি আমার মাকে আমার একটি বাগান দান করেছিলাম। তিনি ইনতিকাল করিয়াছেন এবং আমাকে ছাড়া আর কোন ওয়ারিস রেখে যাননি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমার দান পূর্ণ রূপে আদায় হইয়াছে এবং তোমার বাগান তোমার মালিকানায় ফেরত এসেছে। {২৩৯৫}

{২৩৯৫} আহমাদ ৬৬৯২, আত-তালীক আলা ইবনি খুযাইমাহ ২৪৬৫, সহীহাহ ২৪০৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১৩/৪৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ওয়াকফ করিল।

২৩৯৬ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] খায়বারে এক খণ্ড জমি পেলেন। তিনি নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে তাহাঁর নির্দেশ প্রার্থনা করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি খায়বারে এক খণ্ড সম্পত্তি লাভ করেছি। আমার মতে এতো উত্তম সম্পত্তি আমি আর কখনও অর্জন করিনি। এই সম্পত্তির সম্পর্কে আপনি আমাকে কী হুকুম করেন? তিনি বলেনঃ তুমি ইচ্ছা করিলে মূল সম্পত্তি [তোমার মালিকানায়] বহাল রেখে তাহার আয় দান-খয়রাত করিতে পারো। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, উমার [রাদি.] নিম্নোক্ত শর্তযোগে তাই করিলেনঃ “মূল সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবেনা, দান করা যাবেনা, তাতে ওয়ারিসী স্বত্বও বর্তাবে না এবং তাহার আয় দরিদ্র, নিকটাত্মীয়, দাসমুক্তি, আল্লাহর রাস্তায় মুসাফির ও মেহমানদের আপ্যায়ন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে দান করা হইবে। যে তাহার মোতাওয়াল্লী হইবে, সে তা থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে আহার করিতে পারবে, কিন্তু জমা করিতে পারবেনা। {২৩৯৬}

{২৩৯৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৭৩৭, ২৭৬৪, ২৭৭২, ২৭৭৩, ২৭৭৮, মুসলিম ১৬৩৩, তিরমিজি ১৩৭৫, নাসাঈ ৩৫৯৭, ৩৬০৩, ৩৬০৪, ৩৬০৫, আবু দাউদ ২৮৭৮, আহমাদ ৪৫৯৪, ৫১৫৭, ইরওয়া ১৫৮২, সহীহ আবু দাউদ ২৫৬২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৩৯৭ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! খায়বারের আমি যে একশত অংশ জমি পেয়েছি, তাহার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন সম্পত্তি আমি আর কখনো পাইনি। আমি তা দান-খয়রাত করার সংকল্প করেছি। নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি মূল সম্পত্তি বহাল রেখে দাও এবং তাহার আয় দান করো। মুহম্মাদ বিন আবু উমার আল-আদানী, সুফইয়ান, আব্দুল্লাহ বিন উমার [জইফ বা দুর্বল] , নাফি, ইবনি উমার [রাদি.]। তিনি বলেন, উমার [রাদি.] বলিলেন, …….উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ। {২৩৯৭}

{২৩৯৭} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৭৩৭, ২৭৬৪, ২৭৭২, ২৭৭৩, ২৭৭৮, মুসলিম ১৬৩৩, তিরমিজি ১৩৭৫, নাসাঈ ৩৫৯৭, ৩৬০৩, ৩৬০৪, ৩৬০৫, আবু দাউদ ২৮৭৮, আহমাদ ৪৫৯৪, ৫১৫৭, ইরওয়া ১৫৮৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি উবায়দুল্লাহ বিন উমার সম্পর্কে আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি দুর্বল, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী ও আলী ইবনিল মাদানী বলেন, তিনি দুর্বল। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৪০, ১৫/৩২৭ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু উবায়দুল্লাহ বিন উমার এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ১৮২ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ৩০ টি খুবই দুর্বল, ৫৬ টি দুর্বল, ৪২ টি হাসান, ৫৪ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ ২৭৩৪, ২৭৭২, ২৭৭৩, মুসলিম, ১১৮৫, তিরমিজি ১৩৭৫, আবু দাউদ ২৮৭৮, আহমাদ ৪৫৯৪, ৫১৫৭, ৬০৪২, ৬৪২৪, দারাকুতনী ৪৩৫৬-৪৩৬৫। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৪৫. অধ্যায়ঃ আরিয়া [অস্থাবর মাল ধার দেয়া]

২৩৯৮ আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ আরিয়া পরিশোধ করিতে হইবে এবং মানীহা [দুধ পান করিতে দেয়া পশু] ফেরত দিতে হইবে। {২৩৯৮}

{২৩৯৮} তিরমিজি ৬৭০, ১২৬৫, আবু দাউদ ৩৫৬৫, আহমাদ ১২৭৯১, সহীহাহ ৬১০, ৬১১, ইরওয়া ১৪১২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদানী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭২, ৩/১৬৩ নং পৃষ্ঠা] ২. শুরাহবীল বিন মুসলিম সম্পর্কে আবু মুহাম্মাদ আল-ফাতায়ানী ও ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ বিন নুমায়র বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৭২১, ১২/৪৩০ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৩৯৯ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ আরিয়া [ধার] পরিশোধ করিতে হইবে এবং মানীহা [দুধ পান করিতে দেয়া পশু] ফেরত দিতে হইবে। {২৩৯৯}

{২৩৯৯} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪০০ সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি [ধারে] যা গ্রহণ করেছে তা ফেরত না দেয়া পর্যন্ত তাহার জন্য সে দায়ী থাকিবে। {২৪০০}

{২৪০০} তিরমিজি ১২৬৬, আবু দাউদ ৩৫৬১, আহমাদ ১৯৫৮২, ১৯৬৪৩, দারেমী ২৫৯৬, ইরওয়া ১৫১৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি সকলেই সিকাহ তবে হাসান সামুরাহ থেকে হাদিস শ্রবন না করা সত্ত্বেও তিনি আনআন সুত্রে হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৩/৪৬. অধ্যায়ঃ ওয়াদিয়া [নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য প্রদত্ত আমানত] ।

২৪০১ আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ কারো কাছে ওয়াদিয়া রাখলে [তা ধ্বংস হলে] তাহার কোন ক্ষতিপূরণ নাই। {২৪০১}

{২৪০১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ১৫৪৭, সহীহাহ ২৩১৫, আত-তাকীকুর আলার রাওদাতুন নাদিয়্যাহ ২/১৪৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি ১. আয়্যুব বিন সুওয়ায়দ সম্পর্কে আবু বকর আল-ইসমাইলী বলেন, তাহার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। যাকারিয়্যা বিন ইয়াহইয়া আস-সাজী বলেন, তিনি দুর্বল। ঈমাম বুখারী বলেন, তাহার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬১৬, ৩/৪৭৪ নং পৃষ্ঠা] ২. মুসান্না সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, পূর্ব ঈমামগণ তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু হাতিম আর-রাযী ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৭৭৩, ২৭/২০৩ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৩/৪৭. অধ্যায়ঃ আমানত গ্রহণকারী আমানতের মাল দিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হলে।

২৪০২ উরওয়া আল-বারিকী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর জন্য একটি ছাগল কেনার উদ্দেশে তাহাকে একটি দীনার দেন। তিনি তাহাঁর জন্য দুটি ছাগল কিনে এর একটি এক দীনারে বিক্রয় করে একটি দীনার ও একটি ছাগল নিয়ে নবী [সাঃআঃ] -এর নিকট উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহার জন্য বরকতের দোয়া করেন। রাবী বলেন, এরপর তিনি মাটি কিনলে তাতেও লাভবান হইতেন।

{উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে। অপর সানাদটি হলোঃ}

২/২৪০২ [১] . আহমাদ বিন সাঈদ আদ-দারেমী, হাব্বান বিন হিলাল, সাঈদ বিন যায়দ [তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন] , যুবায়রর ইবনিল খিররীত, আবু লাবীদ লিমাযাহ বিন যাব্বার [তিনি সত্যবাদী তবে নাসিবী] , উরওয়াহ বিন আবুল জাদ আল-বারিকী [রাদি.] বলেন, একটি বাণিজ্যিক কাফেলা পণ্যদ্রব্য নিয়ে আসলো। নবী [সাঃআঃ] আমাকে একটি দীনার দিলেন…… পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। {২৪০২}

{২৪০২} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩৬৪৩, তিরমিজি ১২৫৮, আবু দাউদ ৩৩৮৪, আহমাদ ১৮৮৬৭, ১৮৮৭৩, সহীহ আত-তিরমিজি ১২৫৮, মিশকাত ২৯৩২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি সাঈদ বিন যায়দ সম্পর্কে আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তিনি হাদিস গ্রহনে শিথিল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ ও ভুল করেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২২৭৬, ১০/৪৪১ নং পৃষ্ঠা]দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৪৮. অধ্যায়ঃ হাওয়ালা [ঋণের দায় হস্তান্তর] ।

২৪০৩ আবু হুরায়ররাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা অন্যায়। সচ্ছল ব্যক্তির নিকট তোমাদের কারো পাওনা থাকলে সে যেন তাহার পেছনে লেগে থাকে। [শেষোক্ত বাক্যের আরো একটি অর্থ হইতে পারেঃ তোমাদের কারো ঋণ পরিশোধ করার জন্য ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কোন সক্ষম ব্যক্তির উপর দায়িত্ব ন্যস্ত করিলে তা অনুমোদন করা উচিত] {২৪০৩}

{২৪০৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২২৮৭, ২২৮৮, ২৪০০, মুসলিম ১৫৬৪, তিরমিজি ১৩০৮, নাসাঈ ৪৬৮৮, ৪৬৯১, আবু দাউদ ৩৩৪৫, আহমাদ ৭২৯১, ২৭৭৭৮, ৭৪৮৮, ২৭৩৯২, ৮৬৭৯, ২৭২৩৯, ৯৬৭৬, মুয়াত্তা মালিক ১৩৭৯, দারেমী ২৫৮৬, ইরওয়া ১৪১৮, রাওদুন নাদীর ১১৩৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪০৪ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সচ্ছল ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম। সচ্ছল ব্যক্তির নিকট তোমার পাওনা থাকলে তাহার পেছনে লেগে থাকো। {২৪০৪}

{২৪০৪} আহমাদ ৫৩৭২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৪৯. অধ্যায়ঃ যামিন হওয়া [কাফালাহ]

২৪০৫ আবু উমামাহ আল-বাহিলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ যামিনদার দায়বদ্ধ এবং ঋণ অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। {২৪০৫}

{২৪০৫} তিরমিজি ১২৬৫, আবু দাউদ ৩৫৩৫, ইরওয়া ১৪১২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদানী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭২, ৩/১৬৩ নং পৃষ্ঠা] ২. ২. শুরাহবীল বিন মুসলিম আল-খাওলানী সম্পর্কে আবু মুহাম্মাদ আল-ফাতায়ানী ও ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ বিন নুমায়র বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৭২১, ১২/৪৩০ নং পৃষ্ঠা]দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪০৬ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর যুগে এক ব্যক্তি তাহার দেনাদারের পেছনে লাগলো। সে তাহার নিকট দশ দীনার পাওনা ছিল। দেনাদার বলল, আমার নিকট তোমাকে দেয়ার মতো কোন জিনিস নাই। পাওনাদার বলল, না, আল্লাহর শপথ ! আমার দেনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত অথবা একজন যামিনদার উপস্থিত না করা পর্যন্ত আমি তোমাকে ছাড়ছি না। সে তাহাকে টেনে-হেঁচড়ে নবী [সাঃআঃ] -এর নিকট নিয়ে গেলো। তিনি পাওনাদারকে বলেনঃ তুমি তাহাকে কতো দিনের অবকাশ দিতে পারো? সে বলল, এক মাস। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তাহলে আমিই তাহার যামিন। দেনাদার নবী [সাঃআঃ] -এর বলে দেয়া সময়সীমার মধ্যে পাওনাসহ তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাহাকে বলেনঃ তুমি এগুলো কোথায় পেলে? সে বলল, খনিতে। তিনি বলেনঃ এতে কোন কল্যাণ নেই। অতঃপর তিনি নিজের পক্ষ থেকে ঋণদাতাহার পাওনা পরিশোধ করেন। {২৪০৬}

{২৪০৬} আবু দাউদ ৩৩২৮, ইরওয়া ১৪১৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা]দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪০৭ আবু কাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জানাযাহার নামায পড়ার জন্য একটি লাশ নবী [সাঃআঃ] এর নিকট নিয়ে আসা হলো। তিনি বলেনঃ তোমরা তোমাদের সঙ্গীর জানাযাহার নামাজ পড়ো। কেননা সে ঋণগ্রস্ত। আবু কাতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি তাহার ঋণের যামিন হচ্ছি। নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ পরিশোধ করার জন্য তো? তিনি বলেন, পরিশোধ করার জন্য। তাহার ঋণের পরিমাণ ছিলো আঠার বা উনিশ দিরহাম। {২৪০৭}

{২৪০৭} তিরমিজি ১০৬৯, নাসাঈ ১৯৬০, ৪৬৯২, আহমাদ ২২০৮০, ২২১৫০, দারেমী ২৫৯৩, আল-আহকাম ৮৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পরিশোধ করার অভিপ্রায় নিয়ে ঋণ গ্রহণ করে

২৪০৮ মায়মূনাহ [রাদি.] [হুযায়ফাহ] হইতে বর্ণীতঃ

উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা [রাদি.] ধারকর্জ গ্রহণ করিতেন। তাহার পরিবারের কেউ কেউ বলল, আপনি ধারকর্জ করবেন না এবং তাহার এ কাজকে তাহারা অপছন্দ করিল। তিনি বলেন, হাঁ আমি আমার নবী ও বন্ধু [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ যে কোন মুসলমান ধারকর্জ গ্রহণ করে এবং আল্লাহ জানেন যে, তা পরিশোধ করার অভিপ্রায় তাহার রয়েছে, তাহলে দুনিয়াতেই আল্লাহ তাহার ঐ ধারকর্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। {২৪০৮}

তাহকিক আলবানীঃ [আরবি] শব্দ ব্যতিত সহীহ।{২৪০৮} দারেমী ৪৬৮৬, ৪৬৮৭, সহিহাহ ১০২৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৩৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ [فِي الدُّنْيَا] শব্দ ব্যাতিত সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবীদাহ বিন হুমায়দ সম্পর্কে আবু হাফস উমার বিন শাহীন বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। যাকারিয়্যা বিন ইয়াহইয়া আস-সাজী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭৫২, ১৯/২৫৭ নং পৃষ্ঠা]।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

২৪০৯ আবদুল্লাহ বিন জাফর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাহার সাথে থাকেন, যদি না সে আল্লাহর অপছন্দনীয় উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ বিন জাফর [রাদি.] তাহার কোষাধ্যক্ষকে বলিতেন, যাও, আমার জন্য ঋণ গ্রহণ করো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট যে হাদিস শুনিয়াছি তাহারপর থেকে এক রাতও আল্লাহ আমার সঙ্গে থাকা ছাড়া কাটাতে অপছন্দ করি। {২৪০৯}

{২৪০৯} দারেমী ২৫৯৫, সহিহাহ ১০০০, ১০২৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫১. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করিল কিন্তু তা পরিশোধের অভিপ্রায় তাহার নাই।

২৪১০ সুহায়ব আল-খায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে কোন ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করিল এবং তা পরিশোধ না করিতে সংকল্পবদ্ধ, [কিয়ামতের দিন] সে আল্লাহর সাথে তস্কররূপে সাক্ষাত করিবে। {২৪১০}

{উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হইয়াছে, অপর সানাদটি হলোঃ}

২/২৪১০ [১] . সুহায়ব আল-খায়র [রাদি.]

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।{২৪১০} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। রাওদুন নাদীর ১০৪৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৩৩, ৩৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল হামীদ বিন যিয়াদ বিন সায়ফী বিন সুহায়ব সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, এই হাদিস ব্যাতিত তাহার সম্পর্কে কোথাও জানা যায় না, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭১৩, ১৬/৪২৯ নং পৃষ্ঠা]দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৪১১ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার অভিপ্রায় গ্রহণ করে, আল্লাহ তাহাকে ধ্বংস করবেন। {২৪১১}

{২৪১১} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৩৮৭, আহমাদ ৮৫১৬, ৯১৩৫, গায়াতুল মারাম ৩৫২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইয়াকুব বিন হুমায়দ বিন কাসিব সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭০৮৬, ৩২/৩১৮ নং পৃষ্ঠা] ২. আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫২. অধ্যায়ঃ ঋণের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি

২৪১২ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর মুক্ত দাস সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তিনটি দোষ থেকে মুক্ত অবস্থায় যাহার দেহ থেকে তাহার প্রাণবায়ু বের হইয়াছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ অহংকার, আত্নসাৎ ও ঋণ। {২৪১২}

{২৪১২} তিরমিজি ১৫৭২, আহমাদ ২১৮৬৪, ২১৮৮৫, ২১৯২১, ২১৯২৮, দারেমী ২৫৯২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৩২, ৩৩, মিশকাত ২৯২১, সহীহাহ ২৭৮৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪১৩ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির রূহ তাহার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যাবত না তা পরিশোধ করা হয়। {২৪১৩}

{২৪১৩} তিরমিজি ১০৭৮, ১০৭৯, আহমাদ ৯৩৮৭, ৯৮০০, ১০২২১, দারেমী ২৫৯১, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৭৬, ৯/২৫, বায়হাকী ফিশ শুআব ৫৫৪৪, আল হাকিম ফিল-মুসতাদরাক ২/২৬, ৩৩, ইবনি হিব্বান ৩০৬১, মিশকাত ২৯১৫, আল-আহকাম ১৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবু মারওয়ান আল-উসমানী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন ও সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ঈমাম বুখারী তাহাকে সত্যবাদী বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৪৫৪, ২৬/৮১ নং পৃষ্ঠা] ২. উমার বিন আবু সালামাহ সম্পর্কে আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪২৪৭, ২১/৩৭৫ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪১৪ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তাহার যিম্মায় এক দীনার বা এক দিরহাম পরিমাণ ঋণ রেখে মারা গেলে [কিয়ামতের দিন] তাহার নেক আমলের দ্বারা তা পরিশোধ করা হইবে। আর সেখানে কোন দীনারও থাকিবে না দিরহামও থাকিবে না। {২৪১৪}

{২৪১৪} আহমাদ ৫৫১৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/২১, আহকামুল জানায়িয ৫ নং পৃষ্ঠা। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. মুহাম্মাদ বিন সাওয়া সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস কাদারিয়্যা মতাবলম্বী ছিলেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার ব্যাপারে কাদারিয়্যা মতাবলম্বী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫২৭২, ২৫/৩২৮ নং পৃষ্ঠা] ২. মাতারিল ওয়াররাক সম্পর্কে আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তাহার হাদিস কেউ বর্জন করিয়াছেন এ মর্মে আমার জানা নেই। আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, এই সানাদে তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৯৯৪, ২৮/৫১ নং পৃষ্ঠা]।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫৩. অধ্যায়ঃ কেউ ঋণ বা নাবালেগ সন্তান রেখে মারা গেলে, তাহার দায়িত্ব আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের

২৪১৫ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে কোন মুমিন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে তিনি জিজ্ঞেস করিতেন, সে কি তাহাঁর ঋণ পরিশোধ করার মত কোন কিছু রেখে গেছে? লোকজন যদি বলতো, হাঁ, তবে তিনি তাহার জানাযাহার নামায পড়তেন। আর যদি তাহারা বলতো, না, তাহলে তিনি বলিতেনঃ তোমরা তোমাদের সঙ্গীর জানাযাহার নামায পড়ো। অতঃপর আল্লাহ তাহাঁর রাসূল [সাঃআঃ] -কে [যুদ্ধে] অসংখ্য বিজয় দান করিলে তিনি বলেনঃ আমিই মুমিনদের জন্য তাহাদের নিজেদের চেয়ে অধিক কল্যাণকামী। অতএব কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে তা পরিশোধের দায়িত্ব আমার। আর সে যে সম্পদ রেখে যাবে, তা তাহার ওয়ারিসদের প্রাপ্য। {২৪১৫}

{২৪১৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২২৯৭, ২৩৯৮, ২৩৯৯, ৪৭৮১, ৫৩৭১, ৬৭৩১, ৬৭৪৫, ৬৭৬৩, মুসলিম ১৬১৯, তিরমিজি ১০৭০, ২০৯০, নাসাঈ ১৯৬৩, আবু দাউদ ২৯৫৫, আহমাদ ৭৮০১, ৭৮৩৯, ২৭৪৫৫, ৮২১৩, ৮৪৫৯, ৯৫৩৮, ৯৫৬৫, ৯৬৫৯, ১০৪৩৫, ২৫৯৪, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/৭৩, ৯/৭৩, ১০/৩০২, ইবনি হিব্বান ৩০৬৩, ৫০৫৪, ৮৪৪৮, আল-আহকাম ৮৬, ইরওয়া ১৪৩৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪১৬ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি সম্পদ রেখে মারা গেলে তা তাহার ওয়ারিসদের প্রাপ্য। আর কোন ব্যক্তি ঋণ অথবা অসহায় সন্তান রেখে মারা গেলে তা পরিশোধের দায়িত্ব আমার এবং তাহাদের লালন-পালনের দায়িত্বও আমার। আমিই মুমিনদের অধিক উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষক। {২৪১৬}

{২৪১৬} মুসলিম ৮৬৭, নাসাঈ ১৫৭৮, ১৯৬২, আবু দাউদ ২৯৪৫, ২৯৫৬, আহমাদ ১৩৭৪৪, ১৩৯২৪, ১৪০২২, ১৪২১৯, ১৪৫৬৬, দারেমী ২০৬, ইরওয়া ৫/২৪৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫৪. অধ্যায়ঃ অসচ্ছল ব্যক্তিকে [ঋণ পরিশোধে] অবকাশ দেয়া।

২৪১৭ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অসচ্ছল [ঋণগ্রস্ত] ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে, আল্লাহ দুনিয়াতে ও আখিরাতে তাহার সাথে সহজ ব্যবহার করবেন। {২৪১৭}

{২৪১৭} তিরমিজি ১৩০৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩৫৭, বায়হাকী ফিশ-শুআব ১১২৪৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪১৮ বুরায়দাহ আল-আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি [ঋণগ্রস্ত] অভাবী ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে, সে দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি ঋণ শোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ও সময় বাড়িয়ে দিবে সেও প্রতিদিন দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে। {২৪১৮}

{২৪১৮} আহমাদ ২২৪৬১, ২২৫৩৭, সহীহাহ ৮৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি নুফায় আবু দাউদ সম্পর্কে আবু বিশর আদ-দাওলাবী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত তাহার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করা যাবে না। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ঈমাম বুখারী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল, তাহার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৪৬৬, ৩০/১০ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু নুফায় আবু দাউদ এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ২৯০ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে ১ টি জাল, ১৮ টি খুবই দুর্বল, ৯৬ টি দুর্বল, ৮১ টি হাসান, ৯৪ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ মুসলিম ১৫৬৫, ৩০১৫, তিরমিজি ১৩০৬, আবু দাউদ ৩৪৬০, দারেমী ২৫৮৮, আহমাদ ৫৩৩, ৩০০৮, ৪৭৩৫, ৭৩৮৩, ১৫০৯৪, ১৫০৯৫, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২৪৬৮, মুজামুল আওসাত ৮৭৯, ৮৮৯, ২২১৭, ৪১২৪, ৪২৪১, ৪৫৩৭, ৪৫৯২, ৫০২২, ৭৯২০, ৮২৪৮। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪১৯ আবুল য়াসর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে আল্লাহ তাহাকে তাহাঁর ছায়ার নিচে স্থান দিন, সে যেন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় অথবা তাহার দেনা মাফ করে দেন। {২৪১৯}

{২৪১৯} মুসলিম ৩০১৪, আহমাদ ১৫০৯৪, দারেমী ২৫৮৮, রাওদুন নাদীর ৮৪৪, সহীহ আত-তাহারগীব ওয়াত তাহারহীব ৯০১, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. আব্দুর রহমান বিন ইসহাক সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীলযোগ্য হইবে না। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার কাদারিয়্যা মতাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, তিনি কাদারিয়্যা মতাবলম্বী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭৫৫, ১৬/৫১৯ নং পৃষ্ঠা] ২. আব্দুর রহমান বিন মুআবিয়াহ সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়, তাহার হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হইবে না। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৯৬২, ১৭/৪১৪ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪২০ হুযায়ফাহ ও আবু মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি মারা গেলে তাহাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি কী আমল করেছো? সে নিজের স্মৃতি থেকে অথবা তাহাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে বলল, আমি নগদ অর্থ ধার দিতাম এবং অভাবগ্রস্তকে [ঋণ পরিশোধে] অবকাশ দিতাম। এজন্য আল্লাহ তাহাকে ক্ষমা করে দেন। আবু মাসঊদ [রাদি.] বলেন, আমিও এ হাদিস রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট শুনিয়াছি। {২৪২০}

{২৪২০} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০৭৭, ২৩৯১, মুসলিম ১৫৬০, ১৫৬১, তিরমিজি ১৩০৭, ননাসাঈ ২০৮০, আহমাদ ১৬৬১৬, ১৬৬৩৫, ২২৮৪৩, ২২৮৭৫, ২২৯৫৩, দারেমী ২৫৪৬, সহীহ আত-তাহারগীব ওয়াত তাহারহীব ৮৯৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫৫. অধ্যায়ঃ উত্তম পন্থায় পাওনা আদায়ের তাগাদা দেয়া এবং বিনীতভাবে পাওনা গ্রহণ করা।

২৪২১ ইবনি উমার ও আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি পাওনা আদায়ের তাগাদা দিলে যেন বিনীতভাবেই তাগাদা দেয়, তাতে পাওনা আদায় হোক বা না হোক। {২৪২১}

{২৪২১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আত-তালীকুর রাগীব ৩/২০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইয়াহইয়া বিন আয়্যুব সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি তাহার মুখস্ত হাদিস থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন, কিন্তু তাহার কিতাবে লিখিত হাদিস থেকে বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আবু বকর আল-ইসমাইলী বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়। আবু মুহাম্মাদ বিন হাযম বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৭৯২, ৩১/২৩৩ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪২২ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জনৈক পাওনাদারকে বলেন, তুমি তোমার পাওনা ভদ্র ও বিনীতভাবে গ্রহণ করো, তা পূর্ণরূপে আদায় হোক বা না হোক। {২৪২২}

{২৪২২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১৩/৫৬. অধ্যায়ঃ উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধ করা

২৪২৩ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তি উত্তম যে উত্তমরূপে ঋণ পরশোধ করে। {২৪২৩}

{১৪২৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৩০৫, মুসলিম ১৬০১, তিরমিজি ১৩১৬, ১৩১৭, নাসাঈ ৪৬১৮, ৪৬৯৩, আহমাদ ৮৮৬২, ৯২৮৯, ৯৮১৪, ১০২৩১, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩৫০, ৩৫১, ৬/২০, ২৫, ৮/৩৩৮, ইরওয়া ৫/২২৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪২৪ আবদুল্লাহ বিন আবু রাবীআহ আল-মাখযূমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] হুনায়ন যুদ্ধের সময় তাহার কাছ থেকে তিরিশ অথবা চল্লিশ হাজার দিরহাম ধার নিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তাহার পাওনা পরিশোধ করেন। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] তাহাকে বলেনঃ আল্লাহ পাক তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। ধারের প্রতিদান হলো, তা পরিশোধ করা এবং প্রশংসা করা। {২৪২৪}

{২৪২৪} আহমাদ ১৫৯৭৫, ইরওয়া ১৩৮৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৩/৫৭. অধ্যায়ঃ পাওনাদারের কঠোর আচরণ করার অধিকার আছে

২৪২৫ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি ঋণ বা পাওনা আদায়ের তাগাদা দেয়ার জন্য নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এলো এবং কিছু কঠোর কথা বলল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীগণ এতে ক্রুদ্ধ হলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে বললেনঃ থামো! পাওনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ঋণদাতা তাহার দেনাদারকে কঠোরভাবে তাগাদা দেয়ার অধিকার রাখে। {২৪২৫}

{২৪২৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আত-তালীকুর রাগীব ৩/২০, যইফাহ ৩১৮০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ খুবই দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবি হানাশ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৩৩০, ৬/৪৬৫ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

২৪২৬ আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক বেদুঈন নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে তাহার ঋণ শোধের জন্য তাহাঁকে কঠোর ভাষায় তাগাদা দিলো, এমনকি সে তাহাঁকে বলল, আমার ঋণ পরিশোধ না করিলে আমি আপনাকে নাজেহাল করিব। সাহাবীগণ তাহার উপর চড়াও হইতে উদ্যত হয়ে বলিলেন , তোমার অনিষ্ট হোক! তুমি কি জানো কার সাথে কথা বলছো? সে বলল, আমি আমার পাওনা দাবি করছি। তখন নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা কেন পাওনাদারের পক্ষ নিলে না? অতঃপর তিনি কায়েসের কন্যা খাওলা [রাদি.] -এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাহাকে বলিলেন, তোমার কাছে খেজুর থাকলে আমাকে ধার দাও। আমার খেজুর আসলে তোমার ধার পরিশোধ করিব। খাওলা [রাদি.] বলিলেন, হ্যাঁ, আমার পিতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক, ইয়া রাসূলাল্লাহ। রাবী বলেন, তিনি তাহাঁকে ধার দিলেন। তিনি বেদুঈনের পাওনা পরিশোধ করিলেন এবং তাহাকে আহার করালেন। তিনি বলেনঃ উত্তম লোকেরা এমনই হয়। যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোর-জবরদস্তি ছাড়া তাহাদের পাওনা আদায় করিতে পারে না সেই জাতি কখনো পবিত্র হইতে পারেনা। {২৪২৬}

{২৪২৬} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫৮. অধ্যায়ঃ দেনার কারণে আটক করা এবং পেছনে লেগে থাকা।

২৪২৭শারীদ বিন সুওয়ায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে সচ্ছল ব্যক্তি কোন দেনা পরিশোধ করিতে গড়িমসি করে , তাহাকে অপমান ও শাস্তি দেয়া উভয়ই আমার জন্য হালাল। আল আত-তানাফিসী [রাদি.] বলেন , অপমান করা অর্থ তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে এবং শাস্তি দেয়ার অর্থ তাহাকে জেলখানায় কয়েদ করা। {২৪২৭}

{২৪২৭} নাসাঈ ৪৬৯০, আবু দাউদ ৩৬২৮, আহমাদ ১৮৯৬২, ইরওয়া ১৪৩৪, মিশকাত ২৯১৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৪২৮ সালাবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি আমার এক দেনাদারকে নিয়ে নবী [সাঃআঃ] এর কাছে এলাম। তিনি বলেনঃ এর পিছে লেগে থাকো। অতঃপর দিনের শেষে তিনি আমার নিকট নিয়ে যাওয়ার সময় বলেনঃ হে তামীম গোত্রের ভাই!তোমার কয়েদী কি করেছে? {২৪২৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দঈফ তালীক আলা ইবনি মাজাহ।{২৪২৮} আবু দাউদ ৩৬২৯। তালীক আলা ইবনি মাজাহ। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. হাদিয়্যাহ বিন আবদুল ওয়াহহাব সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। ইবনি আবু আসিম বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো সন্দেহ করেন। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৫৪, ৩০/১৫৮ নং পৃষ্ঠা] ২. হিরমাস বিন হাবীব সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি একজন গ্রাম্যলোক তাহার থেকে নাদর ব্যাতিত কেউ হাদিস বর্ণনা করেনি। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, আমি তাহাকে চিনি না। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৫৮, ৩০/১৬২ নং পৃষ্ঠা] ৩. হাবীব সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়না। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১১০৬, ৫/৪১০ নং পৃষ্ঠা]দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৪২৯ আবদুল্লাহ বিন কাব বিন মালিক [রাদি.] থেকে তাহার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

কাব বিন মালিক [রাদি.], বিন আবু হাদরাদকে তাহার দেয়া ঋন ফেরত দানের জন্য মসজিদের মধ্যে তাগাদা দিলেন। এতে তাহাদের উভয়ের কণ্ঠস্বর চরমে উঠে এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ঘর থেকে তা শুনতে পান। তিনি তাহাদের নিকট বের হয়ে এসে কাব [রাদি.] কে ডাকলেন। কাব [রাদি.] উত্তর দিলেনঃ আমি হাজির ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বলেনঃ তোমার পাওনা থেকে এই পরিমাণ ছেড়ে দাও এবং নিজের হাত দিয়ে ইশারা করে অর্ধেক ছেড়ে দিতে বলেন। কাব [রাদি.] বলিলেন, আমি মাফ করে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দেনাদারকে বলেনঃ উঠে যাও, এবং ওর ঋণ পরিশোধ করো। {২৪২৯}

{২৪২৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৪৫৭, ৪৭১, ২৪১৮, ২৪২৪, ২৭০৬, ২৭১০, মুসলিম ১৫৫৮, নাসাঈ ৫৪০৮, ৫৪১৪, আবু দাউদ ৩৫৯৫, আহমাদ ২৬৬৩২, ২৬৬৩৬, দারেমী ২৫৮৭, ইরওয়া ১৪২২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫৯. অধ্যায়ঃ করয দেয়া।

২৪৩০ কায়স বিন রূমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

সুলায়মান বিন আদনান [রাদি.] আলকামা [রাদি.] কে তাহার ভাতা প্রাপ্তির সাপেক্ষে এক হাজার দিরহাম করয দিয়াছিলেন। সুলায়মান তাহাকে কঠোরভাবে করয থেকে দানের তাগাদা দিলেন। আলকামা [রাদি.] তাহার কর্য ফেরত দিলেন এবং তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন। কয়েক মাস পর তিনি সুলায়মানের নিকট এসে বলেন, হাঁ খুব ভাল কথা। হে উতবার মা! দয়া করে তোমার নিকট গচ্ছিত মোহর করা থলেটি নিয়ে এসো। সে তা নিয়ে এলে সুলায়মান [আলকামাকে] বলেন, আল্লাহর শপথ ! দেখুন, এগুলো আপনার সেই দিরহাম যা আপনি আমাকে ফেরত দিয়াছিলেন। আমি তা থেকে একটি দিরহাম ও সরাইনি। আলকামা [রাদি.] বলেন, আল্লাহর জন্য তোমার পিতা উৎসর্গিত হোক! তবে কোন জিনিস তোমাকে আমার সাথে রূঢ় আচরণ করেতে প্ররোচিত করেছিল? তিনি বলেন, আমি আপনার নিকট যে হাদিস শুনিয়াছি তা। আলকামা [রাদি.] বলেন, তুমি আমার নিকট কী হাদিস শুনেছ? তিনি বলেন আমি আপনাকে বিন মাসঊদ [রাদি.] -র সুত্রে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি যে নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে দুবার করয দিলে সে সেই পরিমাণ মাল একবার দান-খয়রাত করার সমান সওয়াব পায়। ” আলকামাহ [রাদি.] বলেন, ইবনূ মাসঊদ [রাদি.] আমাকে এভাবেই অবহিত করিয়াছেন। {২৪৩০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দঈফ তবে মারফূ সুত্রে হাসান।

{২৪৩০} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ১৩৮৯, আত-তালীকুর রাগীব ২/৩৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ তবে মারফু সুত্রে হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি ১. সুলায়মান বিন ইয়াসার সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয় তবে তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযযুক্ত। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৫৭৫, ১২/১০৬ নং পৃষ্ঠা] ২. কায়স বিন রুমী সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, এই হাদিস ছাড়া তাহার সম্পর্কে কোথাও কিছু জানা যায় না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৯০৪, ২৪/৩৮ নং পৃষ্ঠা]দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

২৪৩১ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমি জান্নাতে একটি দরজায় লেখা দেখলাম, দান খয়রাতে দশ গুন সওয়াব এবং করযে আঠারো গুন! আমি বললামঃ হে জিব্রাঈল! করয দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম হওয়ার কারণ কি? তিনি বলেন, ভিক্ষুক নিজের কাছে [সম্পদ] থাকতেও ভিক্ষা চায়, কিন্তু করযদান প্রয়োজনের তাগিদেই করয চায়। {২৪৩১}

{২৪৩১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৩৮, আত-তালীকুর রাগীব ২/৩৪, যইফাহ ৩৬৩৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ খুবই দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবি খালিদ বিন ইয়াযীদ বিন আবু মালিক সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নয়। ঈমাম যাহাবী তাহাকে সিকাহ বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৬৩, ৮/১৯৬ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

২৪৩২ ইয়াহইয়া বিন ইসহাক আল-হুনায়ী হইতে বর্ণীতঃ

আমি আনাস বিন মালিক [রাদি.] কে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের মধ্যে কেউ তাহার ভাইকে মাল করয দেয়, অতঃপর করযদার তাহাকে উপঢৌকন দেয়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন জিনিস করয দেয়ার পর করযদার তাহাকে কিছু উপঢৌকন দিলে বা তাহার সওয়ারীতে আরোহণ করাতে চাইলে সে যেন তাতে আরোহণ না করে এবং উপঢৌকন গ্রহণ না করে। তবে তাহাদের মধ্যে আগে থেকেই এরূপ সৌজন্যমূলক বিনিময়ের প্রচলন থাকলে আপত্তি নেই। {২৪৩২}

{২৪৩২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ১৪০০, মিশকাত ২৮৩১, যইফাহ ১১৬২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদানী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭২, ৩/১৬৩ নং পৃষ্ঠা] ২. উতবাহ বিন হুমায়দ আদ-দাব্বী সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭৭৩, ১৯/৩০৫ নং পৃষ্ঠা] ৩. ইয়াহইয়া বিন আবু ইসহাক সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ঈমাম যহাবী বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৭৮৩, ৩১/১৯৯ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৩/৬০. অধ্যায়ঃ মৃতের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা।

২৪৩৩ সাদ ইবনিল আতওয়াল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাহার ভাই ইন্তিকাল করেন এবং তিন শত দিরহাম ও কতক অসহায় সন্তান রেখে যান। আমি সেগুলো তাহার সন্তানদের জন্য খরচ করিতে মনস্থ করলাম। নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমার ভাই দেনার কারণে আটক রয়েছে। অতএব তাহার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করো। সাদ [রাদি.] বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তাহার পক্ষ থেকে সব দেনা শোধ করেছি, কেবল এক মহিলার দাবিকৃত দুটি দীনার বাকী আছে। কিন্তু তাহার কাছে কোন প্রমাণ নেই। তিনি বলেনঃ তা তাহাকে দিয়ে দাও, কারণ সে সত্যবাদিনী। {২৪৩৩}

{২৪৩৩} আহমাদ ১৬৭৭৬, ১৯৫৭২, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/১২১, আহকামুল জানায়িয ১৫ নং পৃষ্ঠা। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪৩৪ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাহার পিতা তাহার দায়িত্বে তিরিশ ওয়াসাক [খাদ্যশস্য] দেনা রেখে যান। এক ইহূদীর নিকট থেকে তা ধার নেয়া হয়েছিল। জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] তাহার কাছে সময় চাইলে সে তাহাকে সময় দিতে রাযী হলো না। জাবির [রাদি.] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে আলাপ করিলেন যে, সে যেন তাহার করযের বিনিময়ে জাবিরের বাগানের খেজুর নিয়ে নেয়। ইহূদী তাতে সম্মত হলো না। পুনরায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে সময় দিতে বললে এবারও সে তাহাকে সময় দিতে রাজী হলো না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জাবিরের বাগানে প্রবেশ করে তাহার মধ্যে পায়চারি করিলেন, তাহারপর জাবির [রাদি.] কে বললেনঃ খেজুর কেটে তাহার সম্পূর্ণ পাওনা তাহাকে মিটিয়ে দাও। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর প্রত্যাবর্তনের পর জাবির [রাদি.] তা কাটলেন এবং তা থেকে ইহূদীকে তিরিশ ওয়াসাক দেয়ার পর আরো ১২ ওয়াসাক উদ্বৃত হলো। অতএব জাবির [রাদি.] এ খবর জানানোর জন্য রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে এলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে অনুপস্থিত পেলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিরে এলে তিনি তাহাঁর কাছে এসে জানাল যে, তিনি ইহূদীর সম্পূর্ণ পাওনা পরিশোধ করিয়াছেন এবং যা উদ্বৃত হলো তাহাঁর কথাও তাহাঁকে অবহিত করিলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ খবরটি উমার ইবনিল খাত্তাব কেও পৌঁছিয়ে দাও। জাবির [রাদি.] উমর [রাদি.] এর কাছে গিয়ে খবরটি জানালে তিনি তাহাকে বলেনঃ আমি জানতাম যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন বাগানের মধ্যে পায়চারী করছেন তখন আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাতে বরকত দিবেন। {২৪৩৪}

{২৪৩৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৩৯৬, ২৬০১, ২৭০৯, ২৭৮১, ৪০৫৩, নাসাঈ ৩৬৩৬, ৩৬৩৭, ৩৬৩৮, ৩৬৩৯, ৩৬৪০, ২৮৮৪, আল-আহকাম ১৭, ১৮, সহীহ আবু দাউদ ২৫৫৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩/৬১. অধ্যায়ঃ তিন কারণে দেনাদার হলে আল্লাহ তাহাঁর পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দিবেন।

২৪৩৫ আবদুল্লাহ বিন আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ অবস্থায় মারা গেলে কিয়ামতের দিন তাহার থেকে ঋণ কর্তন করা হইবে। কিন্তু তিন কারণে ঋণগ্রস্থ হলে ভিন্ন কথা। [এক] যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করিতে করিতে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে ঋণ করে আর তাহার দ্বারা আল্লাহর দুশমন এবং নিজের দুশমনের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয় করে। [দুই] কোন ব্যক্তির নিকট কোন মুসলমান মারা গেলে তাহাকে দাফন করার জন্য সে ঋণগ্রস্থ হলে। [তিন] যে অবিবাহিত ব্যক্তি দারিদ্র্যের কারণে আল্লাহর দ্বীন থেকে বিপথগামী হওয়ার আশংকায় ঋণ করে বিবাহ করে। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাহাদের পক্ষ থেকে ঋণ শোধ করবেন। {২৪৩৫}

{২৪৩৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যইফাহ ৫৪৮৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৩৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. রিশদীন বিন সাদ সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল তাহাকে দুর্বল বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাহার থেকে কোন হাদিস লিপিবদ্ধ করেন নি। আমর ইবনিল ফাল্লাস ও আবু যুরআহ আর-রাযী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু হাতিম আর-রাযী মুনকারুল হাদিস ও তাহার মাঝে অমনোযোগিতাহার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৯১১, ৯/১৯১ নং পৃষ্ঠা] ২. [আবদুর রহমান বিন যিয়াদ] ইবনি আনউম আল-ইফরিকী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাত্তান বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন বর্জনীয়। ইবনি মাহদী বলেন, তাহার থেকে হাদিস বর্ণনা করা উচিত নয়। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, আমি তাহার থেকে হাদিস লিপিবদ্ধ করিনি। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৯৪৮, ৫/৭০ নং পৃষ্ঠা] ৩. ইমরান বিন আবদুল মাআফিরী সম্পর্কে আবুল হাসান ইবনিল কাত্তান বলেন, তাহার অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৪৯৫, ২২/৩৩৭ নং পৃষ্ঠা] দান করার হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

One response to “দান করার হাদিস । ওয়ারিশ ওয়াকফ ঋণ দেনা ইত্তাদি”

Leave a Reply