ইবনে মাজাহ তাহকিক কৃত হাদিস – বিচার ও বিধান

ইবনে মাজাহ তাহকিক

ইবনে মাজাহ তাহকিক কৃত হাদিস – বিচার ও বিধান , এই অধ্যায়ে মোট  =৬৭ টি হাদীস (২৩০৮ – ২৩৭৪) >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১৩-বিচার ও বিধান, অধ্যায়ঃ (১-৩৩)=৩৩টি , হাদীস (২৩০৮ – ২৩৭৪)

১৩/১. অধ্যায়ঃ বিচারকমণ্ডলী সম্পর্কে আলোচনা
১৩/২. অধ্যায়ঃ জুলুম ও উৎকোচ সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি
১৩/৩. অধ্যায়ঃ বিচারকের ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা
১৩/৪. অধ্যায়ঃ বিচারক উত্তেজিত অবস্থায় বিচারকার্য করিবে না
১৩/৫. অধ্যায়ঃ বিচারক রায় দিলেই হারাম হালাল হয় না এবং হালাল হারাম হয় না
১৩/৬. অধ্যায়ঃ কেউ পরের মা#14ল নিজের বলে দাবি করে তা হস্তগত করার জন্য মামলা দায়ের করিলে
১৩/৭. অধ্যায়ঃ বাদীর দায়িত্ব সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা এবং বিবাদীর দায়িত্ব শপথ করা।
১৩/৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি অপরের মাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে
১৩/৯. অধ্যায়ঃ অপরের প্রাপ্য অধিকার বা স্বত্ব আত্মসাতের উদ্দেশ্যে শপথ করিলে
১৩/১০. অধ্যায়ঃ আহলে কিতাব সম্প্রদায়কে শপথ উচ্চারণপূর্বক কিছু বলা
১৩/১১. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তি একই পণ্যের মালিকানা দাবী করিলে এবং তাহাদের কারো কাছে কোন দলীল-প্রমাণ না থাকলে
১৩/১২. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তাহার চুরি যাওয়া মাল ক্রেতাহার নিকট পেলে
১৩/১৩. অধ্যায়ঃ গবাদি পশু কিছু বিনষ্ট করিলে তাহার হুকুম
১৩/১৪. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেললে তাহার হুকুম
১৩/১৫. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তাহার প্রতিবেশীর দেয়ালের সাথে খুঁটি পুঁতলে
১৩/১৬. অধ্যায়ঃ রাস্তার প্রস্হের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ হলে।
১৩/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজের মালিকানাস্বত্বে প্রতিবেশীর জন্য ক্ষতিকর কিছু নির্মাণ করে।
১৩/১৮. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তি একই কুঁড়ে ঘরের মালিকানা দাবী করিলে।
১৩/১৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি অপরের নিকট থেকে ছাড়ানোর শর্ত করিল।
১৩/২০. অধ্যায়ঃ লটারীর মাধ্যমে মীমাংসা।
১৩/২১. অধ্যায়ঃ কিয়াফা সম্পর্কে।
১৩/২২. অধ্যায়ঃ শিশু পিতা-মাতাহার মধ্যে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে পারবে।
১৩/২৩. অধ্যায়ঃ সন্ধি ও সমঝোতা স্থাপন।
১৩/২৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ নষ্ট করে তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ।
১৩/২৫. অধ্যায়ঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির দেউলিয়া হওয়া এবং তাহার পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধের জন্য তাহার সম্পত্তি বিক্রয় করা।
১৩/২৬. অধ্যায়ঃ ঋণদাতা দেউলিয়ার দখলে অবিকল তাহার মাল পেয়ে গেলে।
১৩/২৭. অধ্যায়ঃ কাউকে সাক্ষ্য দিতে না বললে স্বউদ্যোগে সাক্ষ্য দেয়া মাকরুহ।
১৩/২৮. অধ্যায়ঃ [বিবদমান বিষয়ে জ্ঞাত] সাক্ষী সম্পর্কে বাদী অনবহিত থাকলে
১৩/২৯. অধ্যায়ঃ দেনা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান।
১৩/৩০. অধ্যায়ঃ যে সব লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।
১৩/৩১. অধ্যায়ঃ একজন সাক্ষী এবং [বাদীর] শপথের ভিত্তিতে মীমাংসা করা।
১৩/৩২. অধ্যায়ঃ মিথ্যা সাক্ষ্য প্রসঙ্গে।
১৩/৩৩. অধ্যায়ঃ আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের পরস্পরের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্যদান।

১৩/১. অধ্যায়ঃ বিচারকমণ্ডলী সম্পর্কে আলোচনা

২৩০৮ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যাকে জনগনের বিচারক নিযুক্ত করা হলো, তাহাঁকে বিনা ছুরিতে যবেহ করা হলো। {২৩০৮}

{২৩০৮} তিরমিজি ১৩২৫, আবু দাউদ ৩৫৭১, ৩৫৭২, আহমাদ ৭১০৫, ৮৫৫৯, মিশকাত ৩৭৩৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৩১, রাওদুন নাদীর ১১৩৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি উসমান বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৮৫৯, ১৭/১৯৩ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩০৯ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাযীর পদ প্রার্থনা করে নেয় তাহাঁর দায়দায়িত্ব তাহার উপরই চাপানো হয়। আর যাকে এই পদ গ্রহনে বাধ্য করা হয়, তাহাঁর নিকট একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে তাহাঁকে সঠিক পথে চালিত করেন। {২৩০৯}

{২৩০৯} তিরমিজি ১৩২৩, ১৩২৪, আবু দাউদ ৩৫৭৮, আহমাদ ১১৭৭৪, ১২৮৮৯, যইফাহ ১১৫৪, জইফ আল-জামি ৫৬১৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আবুল আলা সম্পর্কে আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, যারা হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন তিনি তাহাদের একজন। আবু যুরআহ আর-রাযী ও আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৬৮৪, ১৬/৩৫২ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৩১০ আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে ইয়ামানে পাঠান। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন, অথচ আমি একজন যুবক মাত্র। আমি লোকদের মধ্যে মীমাংসা করিব, অথচ বিচার কি জিনিস তাই আমি জানি না। রাবী বলেন, নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর হাত দিয়ে আমার বুকে আঘাত করে বলেনঃ “ইয়া আল্লাহ! আপনি তাহাঁর অন্তরে হেদায়েত দান করুন এবং তাহাঁর জিহবাকে [বাকশক্তিকে] সুস্থির রাখুন”। আলী বলেন, এরপর পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিচার করিতে আমি কখনো সন্দেহে পতিত হইনি। {২৩১০}

{২৩১০} তিরমিজি ১৩৩১, আবু দাউদ ৩৫৮২, ইরওয়া ২৫০০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/২. অধ্যায়ঃ জুলুম ও উৎকোচ সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি

২৩১১ আবদুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে বিচারকই মানুষের বিচার করে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় হাজির হইবে যে, একজন ফেরেশতা তাহাঁর ঘাড় ধরে থাকিবেন। অতঃপর সে আকাশের দিকে মাথা তুলবে। আল্লাহ যদি বলেন, তাহাঁকে নিক্ষেপ করো, তবে সেই ফেরেশতা তাহাঁকে একটি গর্তে নিক্ষেপ করবেন, যাহার মধ্যে সে চল্লিশ বছর ধরে গড়িয়ে পড়তে থাকিবে। {২৩১১}

{২৩১১} আহমাদ ৪০৮৬, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৩৩, মিশকাত ৩৭৩৯, জইফ আল-জামি ৫১৬৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি মুজালিদ বিন সাঈদ সম্পর্কে ঈমাম বুখারী ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাত্তান বলেন, তিনি জইফ বা দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহন করা যাবে না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৭৮০, ২৭/২১৯ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

২৩১২ আবদুল্লাহ বিন আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাযী যতক্ষণ পর্যন্ত জুলুম না করে, আল্লাহ তাহাঁর সাথে থাকেন। যখন সে জুলুম করে, তখন তিনি তাহাকে তাহার নিজের উপর ছেড়ে দেন। {২৩১২}

{২৩১২} তিরমিজি ১৩৩০, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৩৮, মিশকাত ৩৭৪১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ বিন বিলাল সম্পর্কে আবু জাফার আল উকায়লী বলেন, আমার দৃষ্টিতে তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, আমি তাহার ব্যাপারে ভালো ছাড়া খারাফ কিছু শুনিনি। ঈমাম যাহাবী বলেন, মানুষ যেভাবে ভুল করে তিনিও সেরকম ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৯৯, ২৪/৫৪৫ নং পৃষ্ঠা] ২. ইমরান আল-কাত্তান সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায়। আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম আন-নায়সাবুরী বলেন, তিনি সত্যবাদী। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৪৮৯, ২২/৩২৮ নং পৃষ্ঠা] ৩. হুসায়ন বিন ইমরান সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার সম্পর্কে সমালোচনা রয়েছে, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ঈমাম বুখারী বলেন, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৩২৬, ৬/৪৫৭ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ হাসান হাদিস

২৩১৩ আবদুল্লাহ বিন আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতাহার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। {২৩১৩}

{২৩১৩} তিরমিজি ১৩৩৭, আবু দাউদ ৩৫৮০, ৬৫৯৬, ৬৭৩৯, ৬৭৯১, ৬৯৪৫, ইরওয়া ২৬২০, মিশকাত ৩৭৫৩, রাওদুন নাদীর ৫৮৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৪৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৩. অধ্যায়ঃ বিচারকের ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা

২৩১৪ আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ বিচারক যখন ইজতিহাদ করে [চিন্তাভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার চেষ্টা করে] বিচার করে, অতঃপর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়, তাহাঁর জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার। আর সে যখন ইজতিহাদ করে বিচার করিতে গিয়ে ভুল করে বসে তবুও তাহাঁর জন্য রয়েছে একটি পুরস্কার। {২৩১৪}

{২৩১৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৭৩৫২, মুসলিম ১৭১৬, আবু দাউদ ৩৫৭৪, আহমাদ ৬৭১৬, ১৭৩২০, ১৭৩৬০, ইরওয়া ২৫৫৮, রাওদুন নাদীর ৬৭২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩১৫ বুরায়দাহ ইবনিল হাসীব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কাযীগণ তিন শ্রেণীভুক্ত। দু শ্রেণীর কাযী জাহান্নামী এবং এক শ্রেণীর কাযী জান্নাতী। যে ব্যক্তি [কাযী] ন্যায়সঙ্গত ফয়সালা দান করে সে জান্নাতী। যে ব্যক্তি [কাযী] সত্য উপলদ্ধি না করে অজ্ঞতাহার ভিত্তিতে বিবদমান দলের মধ্যে রায় প্রদান করে সে জাহান্নামী এবং যে ব্যক্তি [কাযী] জ্ঞাতসারে অন্যায় রায় প্রদান করে সেও জাহান্নামী। আবু হাশিম [রাদি.] বলেন, যদি বিন বুরাইদা থেকে তাহাঁর পিতাহার সুত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর এ হাদিসটি না থাকতো তাহলে আমরা অবশ্যই বলতাম যে, কাযী ইজতিহাদ করে বিচার করিলে সে জান্নাতী হইবে। {২৩১৫}

{২৩১৫} তিরমিজি ১১৮৫, আবু দাউদ ৩৫৭৩, ইরওয়া ২৬১৪, মিশকাত ৩৭৩৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি খালফ বিন খালিফাহ সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, আমি আশা করি তাহার মাঝে কোন সমস্যা নেই। তিনি কিছু কিছু রেওয়ায়াতে ভুল করিয়াছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শেষ বয়সে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করিয়াছেন। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৭০৭, ৮/২৮৪ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৪. অধ্যায়ঃ বিচারক উত্তেজিত অবস্থায় বিচারকার্য করিবে না

২৩১৬ আবু বাকরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ বিচারক যেন রাগান্বিত অবস্থায় দু [বিবাদমান] পক্ষের মধ্যকার বিচারকার্য পরিচালনা না করে। রাবী হিশাম [রাদি.] তাহাঁর হাদীসে বলেনঃ রাগান্বিত অবস্থায় দু [বিবাদমান] পক্ষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করা বিচারকের জন্য সংগত নয়। {২৩১৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ প্রথম শব্দে সহীহ।

{২৩১৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৭১৫৮, মুসলিম ১৭১৭, তিরমিজি ১৩৩৪, নাসাঈ ৫৪০৬, ৫৪২১, আবু দাউদ ৩৫৮৯, আহমাদ ১৯৮৬৬, ১৯৮৭৬, ১৯৮৮০, ১৯৯৫৪, ১৯৯৯৯, ইরওয়া ২৬২৬, রাওদুন নাদীর ৯২৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ প্রথম শব্দে সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৫. অধ্যায়ঃ বিচারক রায় দিলেই হারাম হালাল হয় না এবং হালাল হারাম হয় না

২৩১৭ উম্মু সালামাহ [রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহা] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আমার কাছে বিবদমান বিষয় মীমাংসার জন্য এসে থাকো। আমিও একজন মানুষ। হয়তো তোমাদের কেউ [একপক্ষ] অপর কারো [বিপক্ষের] তুলনায় নিজের যুক্তি-প্রমাণ পেশে অত্যন্ত বাকপটু হয়ে থাকিবে। আর আমি তো তোমাদের বক্তব্য শুনেই তাহার ভিত্তিতে বিচারকার্য করি। অতএব আমি তোমাদের কারো পক্ষে তাহার ভাইয়ের হকের কোন অংশের ফয়সালা দিয়ে ফেলতে পারি। এ অবস্থায় সে যেন তাহার কিছুই গ্রহণ না করে। কারণ আমি তাহাকে জাহান্নামের একটি টুকরাই কেটে দিচ্ছি , যা নিয়ে সে কিয়ামতের দিন হাজির হইবে। {২৩১৭}

{২৩১৭} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৪৫৮, ২৬৮০, ৬৯৬৭, ৭১৬৯, ৭২৮১, ৮১৮৫, মুসলিম ১৭১৩, তিরমিজি ১৭৩৯, নাসাঈ ৫৪০১, ৫৪২২, আবু দাউদ ৩৫৮৩, আহমাদ ২৫১৪২, ২৯৫৫২, ২৬০৭৮, ২৬০৮৬, ২৬১৭৭, মুয়াত্তা মালিক ১৪২৪, ইরওয়া ২৬২৪, সহীহাহ ৪৫৬, ১১৬২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩১৮ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমিও একজন মানুষ। হয়তো তোমাদের কেউ অপর কারো তুলনায় নিজের যুক্তি-প্রমাণ পেশে অত্যন্ত বাকপটু হয়ে থাকিবে। অতএব আমি তাহাকে তাহার ভাইয়ের হক থেকে কিছু কর্তন করে দিয়ে থাকলে তাহাকে জাহান্নাম এর একটি টুকরাই কর্তন করে দিলাম। {২৩১৮}

{২৩১৮} আহমাদ ৮১৯৩, ইরওয়া ৮/২৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবু আমর বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হুরায়স সম্পর্কে ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে ঈমাম যাহাবী বলেন, তাহার পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ঈমাম দারাকুতনী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫১৩, ২৬/২১২ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ হাসান সহীহ

১৩/৬. অধ্যায়ঃ কেউ পরের মাল নিজের বলে দাবি করে তা হস্তগত করার জন্য মামলা দায়ের করিলে

২৩১৯ আবু যাহার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন জিনিস দাবি করে যা তাহার নয়। সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তাহার বাসস্থান বানিয়ে নেয়। {২৩১৯}

{২৩১৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৫০৮, মুসলিম ৬১, আহমাদ ২০৯৫৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩২০ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো যুলুমমূলক মামলায় সহযোগিতা করে অথবা যুলুমে সহায়তা করে, তা থেকে নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বদাই সে আল্লাহর গযবে নিপতিত থাকে। {২৩২০}

{২৩২০} আবু দাউদ ৩৫৯৭, ইরওয়া ৭/৩৫০, সহীহাহ ৪৩৮, ১০২১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ বিন সাওয়া সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে কাদিরিয়া মতাবলম্বী ছিলেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার ব্যাপারে কাদারিয়া মতাবলম্বী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫২৭২, ২৫/৩২৮ নং পৃষ্ঠা] ২. মাতারিল ওয়াররাক সম্পর্কে আবু বাকর আল-বাযযাহার বলেন, তাহার হাদিস কেউ বর্জন করিয়াছেন এ মর্মে আমার জানা নেই। আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, এই সানাদে তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৯৯৪, ২৮/৫১ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৭. অধ্যায়ঃ বাদীর দায়িত্ব সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা এবং বিবাদীর দায়িত্ব শপথ করা।

২৩২১ ইবনি আব্বাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ লোকেদেরকে তাহাদের দাবি মোতাবেক ফয়সালা দেয়া হলে অবশ্যই কতক লোক অন্য লোকের জীবন [মৃত্যুদন্ড] ও সম্পদ দাবি করে বসতো। কিন্তু বিবাদীকেই শপথ করিতে হইবে। {২৩২১}

{২৩২১} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৫১৪, ২৬৬৮, ৪৫৫২, মুসলিম ১৭১১, তিরমিজি ১৩৪২, নাসাঈ ৫৪২৫, আবু দাউদ ৩৬১৯, আহমাদ ৩১৭৮, ৩২৮২, ৩৪১৭, ইরওয়া ২৬৪১, আত-তালীকু আলাত তানকীল ১/৪০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩২২ আল-আশআস বিন কায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার এবং এক ইহুদীর যৌথ মালিকানাধীন এক খন্ড জমি ছিল। সে আমার অংশ অস্বীকার করিলে তাহাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর নিকট পেশ করলাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলেনঃ তোমার কি দলীল-প্রমাণ আছে? আমি বললাম, না। তিনি ইহুদীকে বলেনঃ শপথ করো। আমি বললাম, এ সম্পর্কে সে শপথ করার সাথে সাথে আমার সম্পত্তি নিয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করেন [অনুবাদ] ঃ “ নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাহাদের কোন অংশ নেই”। সূরা আল-ইমরানঃ ৭৭ … আয়াতের শেষ পর্যন্ত। {২৩২২}

{২৩২২} আবু দাউদ ২৬২১, আহমাদ ২১৩৩০, ইরওয়া ২৬৩৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি অপরের মাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে

২৩২৩ আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলমানের মাল আত্মসাতের লক্ষ্যে সজ্ঞানে মিথ্যা শপথ করে, সে কিয়ামতের দ্বীন এমন অবস্থায় আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হইবে যে, তিনি তাহার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট থাকিবেন। {২৩২৩}

{২৩২৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৩৫৭, মুসলিম ১৩৮, তিরমিজি ২৫৬৯, ২৯৯৬, আবু দাউদ ৩২৪৩, আহমাদ ৩৫৬৬, ৩৫৮৬, ৩৯৩৬, ৪০৩৯, ৪২০০, ৪৩৮১, রাওদুন নাদীর ২৪০, ৬৪০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩২৪ আবু উমামাহ আল-হারিসী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপর মুসলমানের প্রাপ্য স্বত্ব মিথ্যা শপথ করে কর্তন করে নিলে আল্লাহ তাহার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং জাহান্নাম তাহার জন্য অবধারিত করে দিবেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি তা সামান্য জিনিস হয়। তিনি বললেনঃ যদি তা পিলু গাছের একটি মেসওয়াকও হয়। {২৩২৪}

{২৩২৪} মুসলিম ১৩৭, নাসাঈ ৫৪১৯, আহমাদ ২১৭৩৬, মুয়াত্তা মালিক ১৪৩৫, দারেমী ২৬০৩, রাওদুন নাদীর ২৪০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৯. অধ্যায়ঃ অপরের প্রাপ্য অধিকার বা স্বত্ব আত্মসাতের উদ্দেশ্যে শপথ করিলে

২৩২৫ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এই মিম্বারের নিকট দাঁড়িয়ে মিথ্যা শপথ করিবে, সে যেন জাহান্নামে তাহার ঠিকানা বানিয়ে নেয়, যদিও তা একটি সবুজ মিসওয়াকের জন্যও হয়। {২৩২৫}

{২৩২৫} আবু দাউদ ৩২৪৬, আহমাদ ১৪২৯৬, ১৪৬০৬, মুয়াত্তা মালিক ১৪৩৪, রাওদুন নাদীর ২৪০, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪৮, ইরওয়া ২৬৯৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩২৬ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এই মিম্বারের নিকট কোন পুরুষ অথবা নারী মিথ্যা শপথ করিলে সে যেন জাহান্নামে তাহার আবাস নির্ধারণ করিল, তা একটি কাঁচা দাঁতনের জন্য হলেও। {২৩২৬}

{২৩২৬} আহমাদ ১০৩৩৩, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৬৮, ইরওয়া ৮/৩১৩, মিশকাত ৩৭৭৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/১০. অধ্যায়ঃ আহলে কিতাব সম্প্রদায়কে শপথ উচ্চারণপূর্বক কিছু বলা

২৩২৭ বারা বিন আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এক ইহূদী সম্প্রদায়ের এক পন্ডিত ব্যক্তিকে ডেকে বলেনঃ ” আমি তোমাকে সেই মহান সত্ত্বার শপথ করে বলছি যিনি মূসা [আলাইহিস সালাম] -এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করিয়াছেন। “{২৩২৭}

{২৩২৭} মুসলিম ১৭০০, আবু দাউদ ৪৪৪৭, ৪৪৪৮, আহমাদ ১৭০৫৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩২৮ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] দু ইহূদীকে বলেনঃ ” আমি তোমাদের দুজনকে সেই আল্লাহর শপথ দিচ্ছি যিনি মূসা [আলাইহিস সালাম] -এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করিয়াছেন” {২৩২৮}

{২৩২৮} আবু দাউদ ৪৪৫২, আত-তালীকু আলা ইবনি মাজাহ। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি মুজালিদ বিন সাঈদ সম্পর্কে ঈমাম বুখারী ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাত্তান বলেন, তিনি জইফ বা দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহন করা যাবে না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৭৮০, ২৭/২১৯ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু মুজালিদ বিন সাঈদ এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ৪৭৫ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ৭ টি জাল, ১০৭ টি খুবই দুর্বল, ১৩২ টি দুর্বল, ১০৯ টি হাসান, ১২০ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ বুখারী ১৩২৯, ৩৬৩৫, ৪৫৫৬, ৬৮১৯, ৬৮৩০, ৬৮৪০, ৬৮৪১, ৭৩৩২, ৭৫৪৩, মুসলিম ১৬৯২, ১৭০২, ১৭০৩, ১৭০৪, তিরমিজি ১৪৩১, ১৪৩২, ১৪৩৬, ১৪৩৭, আবু দাউদ ৪৮৮, ৩৬২৪, ৪৪১৮, ৪৪৪৬, ৪৪৪৭, ৪৪৪৮, ৪৪৪৯, ৪৪৫০, ৪৪৫১, ৪৪৫২, ৪৪৫৫, দারেমী ২৩২১, ২৩২৩, আহমাদ ১৫৪, ১৯৯, ২৭২, ৩০৪, ৩২১, ৩৫৪, ৩৯৩, ৯৫১, ১১৬৮, ২৩৬৪, ৪৪৮৪, ৪৬৫২, ৫২৫৪, ৫২৭৮, ৫৪৩৬, ৬০৫৮।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/১১. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তি একই পণ্যের মালিকানা দাবী করিলে এবং তাহাদের কারো কাছে কোন দলীল-প্রমাণ না থাকলে

২৩২৯ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

দু ব্যক্তি একটি জন্তুর মালিকানা দাবি করিল কিন্তু তাহাদের কারো নিকটই দলীল-প্রমাণ ছিলো না। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাদেরকে লটারী করে তাতে যাহার নাম উঠে, তাহাকে শপথ করার পর তা নিতে বলেন। {২৩২৯}

{২৩২৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৬৭৪, আবু দাউদ ৩৬১৬, ৩৬১৭, ইরওয়া ৮/২৭৫-২৭৭, ২৬৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৩০ আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নিকট দু ব্যক্তি একটি জন্তুর ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করিল এবং তাহাদের একজনের নিকটও কোন প্রমাণ ছিলো না। তিনি তাহাদের উভয়কে সেটির অর্ধেক অর্ধেক মালিকানা দান করেন। {২৩৩০}

{২৩৩০} নাসাঈ ৫৪২৪, আবু দাউদ ৩৬১৩, আহমাদ ১৯১০৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৬৯, ইরওয়া ২৬৫৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

১৩/১২. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তাহার চুরি যাওয়া মাল ক্রেতাহার নিকট পেলে

২৩৩১ সামুরাহ বিন জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ “যদি কোন ব্যক্তির কোন মাল বিনষ্ট হয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায়, অতঃপর সে তা কোন ক্রেতাহার নিকট পেয়ে যায়, তবে সে তা ফেরত পাবে এবং ক্রেতা বিক্রেতাহার নিকট থেকে তাহার মূল্য ফেরত নিবে। “{২৩৩১}

{২৩৩১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যইফাহ ১৬২৭, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১৩৮, জইফ আল-জামি ৫৮০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হাজ্জাজ বিন আরতা সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বকর আল বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়, অন্যত্র তিনি তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন। মুহাম্মাদ বিন সাদ তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১১১২, ৫/৪২০ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

১৩/১৩. অধ্যায়ঃ গবাদি পশু কিছু বিনষ্ট করিলে তাহার হুকুম

২৩৩২ ইবনি মুহায়্যিসাহ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বারা বিন আযিব [রাদি.] -র একটি দুষ্ট উটনী ছিল। সেটি এক সম্প্রদায়ের বাগানে ঢুকে তা বিনষ্ট করে দেয়। বিষয়টি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি সিদ্ধান্ত দেন যে, দিনের বেলা সম্পদের হেফাযত করার দায়িত্ব তাহার মালিকের [তাই দিনে ফসল বিনষ্ট করিলে তাহার জন্য জন্তুর মালিক দায়ী নয়]। আর জন্তু রাতে যে ক্ষতি করিবে, তা জন্তুর মালিকের উপর বর্তাবে। “{২৩৩২}

{উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হইয়াছে, অপর সানাদটি হলোঃ}

২/২৩৩২ [১] . বারা বিন আযিব [রাদি.] , বারা এর পরিবারের একটি উষ্ট্রী কিছু ফসল নষ্ট করিলে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ফয়সালা দেন…..পূর্বোক্ত অনুরুপ। {২৩৩২}

তাহক্বীক আলবানীঃ সহীহ।{২৩৩২} আবু দাউদ ৩৫৬৯, সহীহাহ ২৩৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি মুআবিয়াহ বিন হিশাম সম্পর্কে আবুল ফারাজ আল-জাওযী বলেন, তাহার থেকে কেউ হাদিস শ্রবন করেনি তবে যারা হাদিস শ্রবন করেছে তাহারা তা বর্জন করেছে। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬০৬৭, ২৮/২১৮ নং পৃষ্ঠা]ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/১৪. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেললে তাহার হুকুম

২৩৩৩ সাওআত গোত্রের এক ব্যক্তি [ইসমু মুবহাম বা নাম অজ্ঞাত] হইতে বর্ণীতঃ

আমি আয়েশা [রাদি.] কে বললাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না। “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। ” [সূরা আল-কালামঃ ৪]। আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর সাহাবীদের সাথে ছিলেন। আমি তাহাঁর জন্য আহার তৈরী করলাম এবং হাফসা [রাদি.] -ও তাহাঁর জন্য আহার তৈরী করিলেন। তিনি বলেন, হাফসা [রাদি.] আমার আগে [খাবার নিয়ে] গেলেন। আমি দাসীকে বললাম, যাও, তাহার পাত্র উল্টে ফেলে দাও। অতএব সে হাফসার নিকট গেলো। হাফসা [রাদি.] যখন তা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর সামনে রাখতে গেলো অমনি সে তা উল্টে ফেলে দিলো। ফলে পাত্রটি ভেঙ্গে গেলো এবং খাদ্যদ্রব্য ছড়িয়ে পড়লো। আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] পাত্রের টুকরাগুলো একত্রিত করিলেন এবং তাহাঁর খাবার স্বীয় তালুর সম্মুখে রাখলেন অতঃপর তা খেলেন। তাহারপর তিনি আমার পাত্রটি হাফসাকে দিয়ে বলেনঃ ” তোমার পাত্রের বদলে এই পাত্র নাও এবং এতে যা আছে তা খাও। ” আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর চেহারায় এর কোন প্রতিক্রিয়াই লক্ষ্য করলাম না। {২৩৩৩}

তাহকিক আলবানীঃ সনদ দুর্বল।{২৩৩৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সানাদ দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবি শারীক বিন আবদুল্লাহ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন, তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৭৩৬, ১২/৪৬২ নং পৃষ্ঠা]

ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

২৩৩৪ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মুমিন জননীগনের একজনের হুজরায় ছিলেন। তাহাদের অন্যজন একটি পাত্রভর্তি আহার্য তাহাঁর নিকট পাঠান। তিনি [হুজরার জননী] আহার্যের পাত্র বহনকারীর হাতে আঘাত করিলে পাত্রটি নীচে পড়ে ভেঙ্গে যায়। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] পাত্রের টুকরা দুটি তুলে নিয়ে একটির সাথে অপরটি জোড়া লাগিয়ে তাহার মধ্যে পতিত খাবার জমা করেন এবং বলেনঃ “তোমাদের মাতাহার আত্নসম্মানে আঘাত লেগেছে। তোমরা [এটা] খাও। ” অতএব তাহারা তা আহার করিলেন। অতঃপর তিনি তাহার ঘরের খাবার ভর্তি পাত্র নিয়ে এলে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] অক্ষত পাত্রটি বাহককে দিলেন এবং ভাঙ্গা পাত্রটি ভঙ্গকারিণীর ঘরে রেখে দিলেন। {২৩৩৪}

{২৩৩৪} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৪৮১, ৫২২৫, নাসাঈ ৩৯৫৫, আবু দাউদ ৩৫৬৭, আহমাদ ১১৬১৬, ১৩৩৬১,দারেমী ২৫৭৮, ইরওয়া ১৫২৩, রাওদুন নাদীর ৯৩ ৯৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/১৫. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তাহার প্রতিবেশীর দেয়ালের সাথে খুঁটি পুঁতলে

২৩৩৫ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেনঃ ” তোমাদের কেউ তাহার প্রতিবেশীর নিকট তাহার দেয়ালের সাথে নিজের খুঁটি গাড়ার অনুমতি চাইলে সে যেন তাহাকে নিষেধ না করে। “আবু হুরাইরা [রাদি.] উপস্হিত লোকদের নিকট এ হাদিস বর্ণনা করিলে তাহারা মাথা নত করে দেয়। তিনি তাহাদের এ অবস্হা দেখে বলেন, কী ব্যাপার, আমি দেখছি তোমরা এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু কাঁধের মাঝখানে খুঁটি গাড়বো। {২৩৩৫}

{২৩৩৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৪৬৩, ৫৬২৭, মুসলিম ১৬০৯, তিরমিজি ১৩৫৩, আবু দাউদ ৩৬৩৪, আহমাদ ৭১১৩, ৭২৩৬, ৭৬৪৫, ৮১৩৫, ৮৯০০, ৯৪৭৭, ৯৬৪৫, মুয়াত্তা মালিক ১৪৬২, ইরওয়া ১৪৩০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৩৬ মুজাম্মি বিন ইয়া্যীদ হইতে বর্ণীতঃ

[ইকরিমা বিন সালামাহ সংবাদ দিয়েছেন যে] মুগীরা গোত্রের দু ভাইয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এক ভাই বলে যে, অপর ভাই তাহার দেয়ালের সাথে খুঁটি পুঁতলে তাহার গোলাম আযাদ হয়ে যাবে। অতঃপর মুজাম্মি বিন ইয়াযীদ [রাদি.] সহ আনসারদের আরো অনেক লোক এসে বলেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যেন তাহার প্রতিবেশীকে তাহার দেয়ালের সাথে খুঁটি গাড়তে বাধা না দেয়।” তখন বিতর্ককারী ভাই বলল, হে ভাই! ফয়সালা আমার বিপক্ষে এবং তোমার অনুকূলেই রয়েছে। যেহেতু আমি শপথ করেছি, তাই তুমি আমার দেয়ালের পাশে একটি বড় খুঁটি পুঁতে তাহার উপর তোমার কাঠ রাখো। {২৩৩৬}

{২৩৩৬} আহমাদ ১৫৫০৮, ইরওয়া ১৪৩০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি হিশাম বিন ইয়াহইয়া সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তাহার পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞাত। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ঈমাম যাহাবী বলেন, তাহার বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৯১, ৩০/২৬৪ নং পৃষ্ঠা] ২. ইকরিমাহ বিন সালামাহ সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪০০৬, ২০/২৫২ নং পৃষ্ঠা]ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ হাসান হাদিস

২৩৩৭ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, “তোমাদের কেউ যেন তাহার প্রতিবেশীকে তাহার দেয়ালের সাথে কাঠ পুঁততে নিষেধ না করে। “{২৩৩৭}

{২৩৩৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইবনি লাহীআহ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তাহার হাদিসের ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আমর বিন ফাল্লাস বলেন, তাহার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় যে হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন তা দুর্বল। আবু কাসিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ার পর হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। বিশর ইবনিস সারী বলেন, যদি তাহার সাথে আমার সাক্ষাৎ হত তবে আমি তাহার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করতাম না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫১৩, ১৫/৪৮৭ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/১৬. অধ্যায়ঃ রাস্তার প্রস্হের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ হলে।

২৩৩৮ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ ” তোমরা রাস্তা সাত হাত পরিমাণ চওড়া করো “{২৩৩৮}

{২৩৩৮} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৩৯ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ “তোমরা রাস্তার প্রস্হ নিয়ে মতানৈক্য করিলে তা সাত হাত চওড়া করো। “{২৩৩৯}

{২৩৩৯} আহমাদ ২০৯৯, ২৭৫২, ২৯০৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি কাবিসাহ সম্পর্কে আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। আব্দুর রহমান বিন ইউসুফ বলেন, তিনি সত্যবাদী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৮৪৩, ২৩/৪৮১ নং পৃষ্ঠা] ২. সিমাক বিন হারব সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন, তাহার পূর্বে বর্ণিত হাদিস যারা শ্রবন করিয়াছেন তা সহীহ। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৫৭৯, ১২/১১৫ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজের মালিকানাস্বত্বে প্রতিবেশীর জন্য ক্ষতিকর কিছু নির্মাণ করে।

২৩৪০ উবাদাহ ইবনিস সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] নির্দেশ দিয়েছেন যে, “ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। ” {২৩৪০}

{২৩৪০} আহমাদ ২২২৭২, সহীহাহ ২৫০, ইরওয়া ৮৯৬, গায়াতুল মারাম ৬৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ফুদায়ল বিন সুলায়মান সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭৫৯, ২৩/২৭১ নং পৃষ্ঠা] ২. ইসহাক বিন ইয়াহইয়া ইবনিল ওয়ালীদ সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তাহার হাদিস রক্ষিত নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তাহার সম্পর্কে অজ্ঞাত। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি তাহার পিতা থেকে হাদিস শ্রবন করেননি। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৯১, ২/৪৯৩ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৪১ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ “ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। “{২৩৪১}

{২৩৪১} আহমাদ ২৮৬২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি জাবির আল জুফী সম্পর্কে শুবাহ ইবনিল হাজ্জাজ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সত্যবাদী। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মিথ্যা কথা বলেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আল-জাওযুজানী তাহাকে মিথ্যুক বলেছেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৮৭৯, ৪/৪৬৫ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু জাবির আল-জুফী এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ৫৪ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ১ টি জাল, ১৮ টি খুবই দুর্বল, ২৮ টি দুর্বল, ৭ টি হাসান হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ আহমাদ ২৮৬২, ২২২৭২, দারাকুতনী ৩০৬০, ৪৪৯৩, ৪৪৯৫, মুজামুল আওসাত ৩৭৭৭, ৫১৫৩। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৪২ আবু সিরমাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করিবে, আল্লাহ তাহার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দিবে, আল্লাহ তাহাকে কষ্ট দিবেন। “{২৩৪২}

{২৩৪২} তিরমিজি ১৯৪০, আবু দাউদ ৩৬৩৫, আহমাদ ১৫৩২৮, ইরওয়া ৮৯৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ হাসান হাদিস

১৩/১৮. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তি একই কুঁড়ে ঘরের মালিকানা দাবী করিলে।

২৩৪৩ জারিয়াহ বিন যুফর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কতক লোক একটি কুঁড়ে ঘরের মালিকানা নিয়ে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নিকট নালিশ দায়ের করিল। তিনি হুযায়ফাহ [রাদি.] -কে তাহাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিতে পাঠান। যাদের রশি দিয়ে সে ঘর বাঁধা ছিল তিনি তাহাদের পক্ষে রায় দেন। অতঃপর তিনি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নিকট ফিরে এসে তাহাঁকে তাহার মীমাংসার কথা জানান। তিনি বলেনঃ “তুমি যথার্থ ফয়সালা করেছো এবং ভালো করেছো। “{২৩৪৩}

{২৩৪৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ খুবই দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবি দাহসাম বিন কুররান সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু নুমায়র আল-আসবাহানী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যাবে না। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নয়। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৮০৪, ৮/৪৯৬ নং পৃষ্ঠা] ২. নিমরান বিন জারিয়াহ সম্পর্কে আবুল হাসান ইবনিল কাত্তান বলেন, তাহার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৪৭২, ৩০/১৯ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ খুবই দুর্বল

১৩/১৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি অপরের নিকট থেকে ছাড়ানোর শর্ত করিল।

২৩৪৪ সামুরাহ বিন জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন কোন জিনিস দু ব্যাক্তির কাছে বিক্রয় করা হলে তা প্রথম খরিদদার পাবে। রাবী আবুল ওয়ালীদ [রাদি.] বলেন, এ হাদীসে অপরের থেকে ছাড়িয়ে এনে দেয়ার শর্ত বাতিল করা হইয়াছে। {২৩৪৪}

{২৩৪৪} আহমাদ ১৯৫৮১, ১৯৬০৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৬৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের সকল রাবীই সিকাহ তবে হাসান আল-বাসরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর আন আন সুত্রে হাদিস বর্ণনার কারণে দুর্বল বলা হইয়াছে। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

১৩/২০. অধ্যায়ঃ লটারীর মাধ্যমে মীমাংসা।

২৩৪৫ ইমরান বিন হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তির ছয়টি গোলাম ছিল, এদের ব্যতীত তাহার আর কোন মাল ছিলো না। সে তাহার মৃত্যুর পূর্বে তাহাদেরকে দাসত্বমুক্ত করে দেয়। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] লটারীর মাধ্যমে এদের মধ্যে দুজনকে দাসত্বমুক্ত করে দেন এবং চারজনকে গোলাম হিসেবে বহাল রাখেন। {২৩৪৫}

{২৩৪৫} মুসলিম ১৬৬৮, তিরমিজি ১৩৬৪, নাসাঈ ১৯৫৮, আবু দাউদ ৩৯৫৮, ৩৯৪১, আহমাদ ১৯৩২৫, ১৯৩৪, ১৯৪৩০, ১৯৪৩৬, ১৯৪৪৯, ১৯৪৯৯, ১৯৫০৭, ইরওয়া ১৬৫৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৪৬ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

দু ব্যক্তি একটি বিক্রীত পণ্য নিয়ে ঝগড়া করছিল। তাহাদের একজনের নিকটও কোন প্রমাণ ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাদেরকে নির্দেশ দেন যে, “লটারীতে তাহাদের দুজনের মধ্যে যাহার নাম উঠবে সে শপথ করে পণ্য নিবে, তাতে তাহারা সন্তুষ্ট হইতে পারুক বা না পারুক। “{২৩৪৬}

{২৩৪৬} আবু দাউদ ৩৬১৬, ৩৬১৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/২৭৩, ইরওয়া ৪/২৭৫-২৭৭, ২৬৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি জামাল ইবনিল হাসান আল-আতাকী সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আলী আল-জুরযানী বলেন, আনি আশা করি তাহার মাঝে কোন সমস্যা নেই। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, আমরা তাহার সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম কিন্তু তাহার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করিনি। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মাসলামহ ইবনি কাসিম বলেন, তিনি সিকাহ। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৯৬৮, ৫/১২৮ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৪৭ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যখন সফরে যেতেন, তাহাঁর স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করিতেন। {২৩৪৭}

{২৩৪৭} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৫৯৪, ৪১৪১, ৫২১১, মুসলিম ২৪৪৫, ২৭৭০, আবু দাউদ ২১৩৮, আহমাদ ২৪৩১৩, ২৪৩৩৮, ২৫০৯৫, ২৫৭৮২, দারেমী ২২০৮, ২৪২৩, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইয়াহইয়া বিন ইয়ামান সম্পর্কে আবু বকর বিন আবু শায়বাহ বলেন, তিনি হাদিস খুব দ্রুত মুখস্ত করিতে পারেন আবার খুব দ্রুত ভুলে যান। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ইদতিরাব করেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি একাধিক হাদিসে ভুল করিয়াছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হুজ্জাহ নয়, তিনি দুর্বল। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তাহার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা ও তাহার হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুলের কারণে তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহন করা যাবে না। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি একজন সত্যবাদী ও আবিদ তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৯৫৩, ৩২/৫৫ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৪৮ যায়দ বিন আরকাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আলী বিন আবু তালিব ইয়ামান থাকাকালে তাহার সামনে মীমাংসার জন্য এই মর্মে একটি বিষয় উত্থাপিত হয় যে, তিন ব্যাক্তি একই তুহরে এক নারীর সাথে সংগম করে [ফলে তাহার একটি সন্তান হয়]। আলী [রাদি.] দুজনকে জিজ্ঞেস করেন [তৃতীয় ব্যাক্তিকে দেখিয়ে] ঃ তোমরা কি সন্তানটি এই ব্যাক্তির বলে স্বীকার করো? তাহারা বলল, না। তিনি আবার দুজনকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি সন্তানটি এই ব্যাক্তির বলে স্বীকার করো? তাহারা বলিল, না। তিনি যখনই দুজনকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কি সন্তানটি তাহার বলে স্বীকার করো, তখনই তাহারা বলে, না। অতঃপর আলী [রাদি.] তাহাদের মধ্যে লটারির ব্যবস্থা করেন এবং লটারিতে যাহার নাম উঠে তিনি তাহাকে সন্তানটি দিলেন এবং তাহার উপর দু-তৃতীয়াংশ দইয়াত ধার্য করেন। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর কাছে বলা হলে তিনি এমনভাবে হেসে দিলেন, যে তাহাঁর সামনের পাটির দাঁত প্রকাশ পেলো। {২৩৪৮}

{২৩৪৮} নাসাঈ ২৪৮৮, ২৪৯০, আবু দাউদ ২২৬৯, ২২৭০, সহীহ আবু দাউদ ১৯৬৩-১৯৬৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/২১. অধ্যায়ঃ কিয়াফা সম্পর্কে।

২৩৪৯ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রফুল্ল মনে ঘরে প্রবেশ করে বলিতে লাগলেন, হে আয়েশা! তুমি কি দেখনি, যে মুজাযযায আল-মুদলিজী আমার ঘরে প্রবেশ করে উসামা ও যায়েদকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে তাহাদের মাথা ঢাকা ও পা বের করা অবস্থায় ঘুমন্ত দেখিতে পেল। সে বলল, এই পা গুলোর কতক অপর কতক থেকে। {২৩৪৯}

{২৩৪৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩৫৫৫, ৩৭৩১, ৬৭৭০, ৬৭৭১, মুসলিম ১৪৫৯, তিরমিজি ২১২৯, নাসাঈ ২৪৯৩, ২৪৯৪, আবু দাউদ ২২৬৭, আহমাদ ২৪০০৫, বায়হাকী ফিস সুনান ১/২৬২, ইবনি হিব্বান ৪১০২, দারাকুতনী ৪/২৪০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৫০ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কুরাইশগণ এক জ্যোতিষী নারীর কাছে গিয়ে তাহাকে বলল, আমাদের মধ্যে মাকামে ইব্রাহীমের মালিকের [ইব্রাহীম আঃ] সাথে কার অধিক সাদৃশ্য তা বলে দিন। সে বলল, তোমরা যদি এই নরম মাটির উপর দিয়ে একটি চাদর টেনে দেবার পর উক্ত মাটির উপর দিয়ে [নগ্নপদে] হেঁটে যাও তবে আমি তোমাদের তা বলিতে পারব। ইবনি আব্বাস [রাদি. বলেন, অতঃপর তাহারা একটি চাদর টেনে নেয়ার পর ঐ মাটির উপর দিয়ে হেঁটে গেল। অতঃপর সেই নারী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পদ চিহ্ন দেখিয়ে বলিল, তোমাদের মধ্যে ইনিই তাহাঁর [ইব্রাহিমের] সাথে অধিক সাদৃশ্যপুর্ণ। এই ঘটনার পর তাহারা আল্লাহর মর্জি বিশ বছর বা ততোধিক অপেক্ষা করিল। শেষে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] কে নবুয়াত দান করেন। {২৩৫০}

{২৩৫০} আহমাদ ৩০৬২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ মুনকার জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি সিমাক বিন হারব সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন, তাহার পূর্বে বর্ণিত হাদিস যারা শ্রবন করিয়াছেন তা সহীহ। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৫৭৯, ১২/১১৫ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল মুনকার

১৩/২২. অধ্যায়ঃ শিশু পিতা-মাতাহার মধ্যে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে পারবে।

২৩৫১ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] একটি শিশুকে তাহার পিতা ও মাতাহার মধ্যে [যাকে ইচ্ছা গ্রহণ করার] এখতিয়ার দিয়ে বললেনঃ হে বৎস! এই তোমার মা এবং এই তোমার বাপ। {২৩৫১}

{২৩৫১} তিরমিজি ১৩৫৭, নাসাঈ ৩৪৯৬, আবু দাউদ ২২৭৭, ইরওয়া ২১৯২, সহীহ আবু দাউদ ১৯৭০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৫২ ইসমু মুবহাম বা নাম অজ্ঞাত হইতে বর্ণীতঃ

তাহার পিতা-মাতা নবী [সাঃআঃ] এ সামনে [সন্তানের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে] বিবাদ পেশ করে। তাহাদের একজন ছিল কাফের, অপরজন মুসলমান। তিনি সন্তানকে এখতিয়ার দিলে সে কাফেরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আল্লাহ! তাহাকে হেদায়াত দান করুন। অতঃপর সে মুসলমানের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতএব তিনি তাহাকে মুসলমানের সাথে থাকার ফয়সালা দেন। {২৩৫২}

{২৩৫২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহ আবু দাউদ ১৯৪১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল হামিদ বিন সালামাহ সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। ঈমাম যাহাবী বলেন, তাহার পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭১৬, ১৬/৪৩২ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু আবদুল হামিদ বিন সালামাহ এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ৫৯ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে একটি জাল, ১২ টি খুবই দুর্বল, ২৫ টি দুর্বল, ৬ টি হাসান, ১৫ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ আবু দাউদ ২২৪৪, আহমাদ ২৩২৪২, ২৩২৪৩, ২৩২৪৪, ২৩২৪৬, দারাকুতনী ৩৯৭২, ৩৯৭৩, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১২৬১৬।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/২৩. অধ্যায়ঃ সন্ধি ও সমঝোতা স্থাপন।

২৩৫৩ আমর বিন আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি, মুসলমানের মধ্যে সন্ধি ও সমঝোতা স্থাপন করা জায়েজ, তবে হালালকে হারামকারী এবং হারামকে হালালকারী সন্ধি ব্যতীত। {২৩৫৩}

২৩৫৩} তিরমিজি ১৩৫২, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৬৪, ইরওয়া ১৩০৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি খালিদ বিন মাখলাদ আল-কাতওয়ানী সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, ইনশাআল্লাহ্‌ আমার নিকট তাহার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীলযোগ্য নয়। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী। ঈমাম যাহাবী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হইবে না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৫২, ৮/১৬৩ নং পৃষ্ঠা] ২. কাসীর বিন আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আওফ সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, আমভাবে তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি মিথ্যুকদের একজন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৯৪৮, ২৪/১৩৬ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু কাসীর বিন আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আওফ এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ২৮ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ৭ টি খুবই দুর্বল, ৯ টি দুর্বল, ১২ টি হাসান হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ তিরমিজি ১৩৫২, আবু দাউদ ৩৫৯৪, আহমাদ ৮৫৬৬, দারাকুতনী ২৮৬৮।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/২৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ নষ্ট করে তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ।

২৩৫৪ আনাস বিন মালিক [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে এক ব্যাক্তি ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তি করিতে গিয়ে [বুদ্ধির দুর্বলতাহার কারণে] ঠকে যেত। তাহার পরিবারের লোকজন নবী [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করুন। নবী [সাঃআঃ] তাহাকে ডেকে নিয়ে ক্রয়-বিক্রয়ে লিপ্ত হইতে নিষেধ করিলেন। সে বলিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ করে ধৈর্য্য ধারণ করিতে পারব না। তিনি বললেনঃ তুমি ক্রয়-বিক্রয় করাকালে বলো, নগদ আদান-প্রদান হইবে এবং যেন প্রতাহারণা করা না হয়। {২৩৫৪}

{২৩৫৪} তিরমিজি ১২৫০, নাসাঈ ৪৪৮৫, আবু দাউদ ৩৫০১, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/১৭২, ইবনি হিব্বান ১৫৩৭, আল-হাকিম ফিল মসতাদরাক ১/১১৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৫৫ মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া বিন হাব্বান হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুনকিয বিন আমর হলেন আমার নানা। তাহার মাথায় একটি প্রচন্ড আঘাত লাগার ফলে তাহার জিহবা আড়ষ্ট হয়ে গেল। এতদসত্ত্বেও তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করেননি। তিনি প্রায়ই ঠকে যেতেন। তিনি নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বিষয়টি তাহাঁকে জানান। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে বলেনঃ তুমি যখন ক্রয়-বিক্রয় করিবে তখন বল, যেন প্রতাহারণা করা না হয়। অতঃপর তুমি যে পণ্যই ক্রয় করিবে, তিন দিনের এখতিয়ার পাবে। তুমি সন্তুষ্ট হইতে পারলে পণ্য রেখে দিবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা তাহার মালিককে ফেরত দিবে। {২৩৫৫}

{২৩৫৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ হাসান হাদিস

১৩/২৫. অধ্যায়ঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির দেউলিয়া হওয়া এবং তাহার পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধের জন্য তাহার সম্পত্তি বিক্রয় করা।

২৩৫৬ আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে এক ব্যাক্তি ফলের বাগান ক্রয় করে লোকসানের শিকার হয় এবং মারাত্মকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকেদের বলেনঃ তোমরা তাহাকে দান-খয়রাত কর। এতএব লোকজন তাহাকে দান-খয়রাত করিল, কিন্তু তাতেও তাহার ঋণ শোধ হল না। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাওনাদারদের বললেনঃ তোমরা যা পেয়েছ তা ই নিয়ে নাও, এর বেশি আর পাবেনা। {২৩৫৬}

{২৩৫৬} মুসলিম ১৫৫৬, তিরমিজি ৬৫৫, নাসাঈ ৪৫৩০, ৪৬৭৮, আবু দাউদ ২৪৬৯, আহমাদ ১০৯২৪, ১০১১, ইরওয়া ১৪৩৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৫৭ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুআয বিন জাবাল [রাদি.] কে তাহার পাওনাদারদের থেকে নিষ্কৃতি দেন, তাহারপর তাহাকে ইয়ামানের শাসক নিয়োগ করেন। মুআয [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার মাল দ্বারা আমাকে ঋণমুক্ত করেন, অতঃপর আমাকে শাসক নিয়োগ করেন। {২৩৫৭}

{২৩৫৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ বিন মুসলিম বিন হুরমুয সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না, তিনি দুর্বল। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল, আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫৬৭, ১৬/১৩০ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

১৩/২৬. অধ্যায়ঃ ঋণদাতা দেউলিয়ার দখলে অবিকল তাহার মাল পেয়ে গেলে।

২৩৫৮ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন ব্যক্তি দেউলিয়ার দখলে অবিকল তাহার মাল পেয়ে গেলে অন্যের তুলনায় সে-ই তাহার অগ্রগণ্য হকদার। {২৩৫৮}

{২৩৫৮} মাজাহ ২৩৫৯, ২৩৬০, ২৩৬১, সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৪০২, মুসলিম ১৫৫৯, তিরমিজি ১২৬২, নাসাঈ ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, আবু দাউদ ৩৫১৯, ৩৫২০, ৩৫২৩, আহমাদ ৭০৮৪, ৭৩২৫, ৭৩৪৩, ৭৪৫৫, ৮৩৬১, ৮৭৬৯, ৯০৬৫, ৯০৮৩, ৯৭০৫, ৯৭৮১, ৯৯৪৯, ১০৪১৫, মুয়াত্তা মালিক ১৩৮৩, দারেমী ২৫৯০, ইরওয়া ১৪৪২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৫৯ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট বাকিতে তাহার পণ্য বিক্রয় করার পর ক্রেতা দেউলিয়া হয়ে গেলে এবং তাহার পণ্য অবিকল অবস্থায় তাহার নিকট বিদ্যমান থাকলে সে-ই তা ফেরত পাবে। আর তাহার পণ্যের কিছু মূল্য আদায় করে থাকলে সে অন্যান্য পাওনাদারের অন্তর্ভুক্ত হইবে। {২৩৫৯}

{২৩৫৯} মাজাহ ২৩৫৮, ২৩৬০, ২৩৬১, সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৪০২, মুসলিম ১৫৫৯, তিরমিজি ১২৬২, নাসাঈ ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, আবু দাউদ ৩৫১৯, ৩৫২০, ৩৫২৩, আহমাদ ৭০৮৪, ৭৩২৫, ৭৩৪৩, ৭৪৫৫, ৮৩৬১, ৮৭৬৯, ৯০৬৫, ৯০৮৩, ৯৭০৫, ৯৭৮১, ৯৯৪৯, ১০৪১৫, মুয়াত্তা মালিক ১৩৮৩, দারেমী ২৫৯০, ইরওয়া ৫/২৬৯, ১৪৪৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদানী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭২, ৩/১৬৩ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৬০ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি খালদাহ ছিলেন মদীনার বিচারপতি। তিনি বলেন, আমরা আবু হুরাইরা [রাদি.] -এর কাছে আমাদের এক দেউলিয়া সঙ্গীর ব্যাপারে জানতে আসলাম। তিনি বলেন, এ ধরনের লোক সম্পর্কে নবী [সাঃআঃ] এই মীমাংসা দিয়েছেন যে, কোন ব্যক্তি দেউলিয়া হলে অথবা মারা গেলে, ঋণদাতা তাহার মাল অবিকল তাহার নিকট বিদ্যমান পেলে সে-ই হইবে তাহার অগ্রগণ্য প্রাপক। {২৩৬০}

{২৩৬০} মাজাহ ২৩৫৯, ২৩৫৮, ২৩৬১, সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৪০২, মুসলিম ১৫৫৯, তিরমিজি ১২৬২, নাসাঈ ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, আবু দাউদ ৩৫১৯, ৩৫২০, ৩৫২৩, আহমাদ ৭০৮৪, ৭৩২৫, ৭৩৪৩, ৭৪৫৫, ৮৩৬১, ৮৭৬৯, ৯০৬৫, ৯০৮৩, ৯৭০৫, ৯৭৮১, ৯৯৪৯, ১০৪১৫, মুয়াত্তা মালিক ১৩৮৩, দারেমী ২৫৯০, ইরওয়া ৫/২৭১, মিশকাত ২৯১৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আবুল মুতামির বিন রাফি সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তাহার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত। ইবনি আবদুল বার আল-আন্দালাসী বলেন, তিনি ইলম বহনে পরিচিত নয়। ঈমাম যাহাবী তাহাকে সিকাহ বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭৬৩৮, ৩৪/৩০৫ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

২৩৬১ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি নিজ দখলে অপরের মাল অবিকল অবস্থায় রেখে মারা যায় এবং মালিক তাহার আংশিক মুল্য আদায় করে থাকুক বা না থাকুক, সে অন্যান্য পাওনাদারের অন্তর্ভুক্ত হইবে। {২৩৬১}

{২৩৬১} মাজাহ ২৩৫৯, ২৩৬০, ২৩৫৮, সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৪০২, মুসলিম ১৫৫৯, তিরমিজি ১২৬২, নাসাঈ ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, আবু দাউদ ৩৫১৯, ৩৫২০, ৩৫২৩, আহমাদ ৭০৮৪, ৭৩২৫, ৭৩৪৩, ৭৪৫৫, ৮৩৬১, ৮৭৬৯, ৯০৬৫, ৯০৮৩, ৯৭০৫, ৯৭৮১, ৯৯৪৯, ১০৪১৫, মুয়াত্তা মালিক ১৩৮৩, দারেমী ২৫৯০, ইরওয়া ৫/২৭১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ইয়ামান বিন আদী সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, আমি আশা করি তাহার মাঝে কোন সমস্যা নেই। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭১২৪, ৩২/৪০৫ নং পৃষ্ঠা]। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/২৭. অধ্যায়ঃ কাউকে সাক্ষ্য দিতে না বললে স্বউদ্যোগে সাক্ষ্য দেয়া মাকরুহ।

২৩৬২ আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি উত্তম? তিনি বলেনঃ আমার যুগ, অতঃপর তাহার নিকটতর [পরবর্তী] যুগ, অতঃপর তাহার নিকটতর যুগ। অতঃপর এমন সব লোক আসবে যারা শপথের পূর্বে সাক্ষ্য দিবে এবং সাক্ষ্যের পূর্বে শপথ করিবে। {২৩৬২}

{২৩৬২} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৬৫২, মুসলিম ২৫৩৩, তিরমিজি ৩৮৫৯, আহমাদ ৩৫৮৩, ৩৯৫৩, ৪১৯৯, ৪১৬২, ৪২০৫, রাওদুন নাদীর ৩৪৭, সহীহাহ ৭০০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৬৩ জাবীর বিন সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] আমাদের উদ্দেশে [দামিশকের] জাবিয়া নামক স্থানে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, তোমাদের সামনে যেমন [ভাষণ দিতে] দাঁড়ালাম, তদ্রূপ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমরা আমার সাহাবীদের [আমার সাহচর্য লাভের মর্যাদার] হেফাজত করিবে, অতঃপর তাহাদের নিকটবর্তীদের [মর্যাদার] হেফাজত করিবে, অতঃপর তাহাদের পরবর্তীদের। অতঃপর এমনভাবে মিথ্যার প্রসার ঘটবে যে, কারো কাছে সাক্ষ্য তলব না করিতেই সে সাক্ষ্য দিবে এবং শপথ করিতে না বলিতেই শপথ করিবে। {২৩৬৩}

{২৩৬৩} আহমাদ ১৭৮, সহীহাহ ৪৩১, ১১১৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ ইবনিল জাররাহ সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিসের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য। আবু যুরআহ আর-রাযী তাহাকে সত্যবাদী বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩১৯৯, ১৪/৩৬১ নং পৃষ্ঠা] ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/২৮. অধ্যায়ঃ [বিবদমান বিষয়ে জ্ঞাত] সাক্ষী সম্পর্কে বাদী অনবহিত থাকলে

২৩৬৪ যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ সাক্ষীগণের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তলব করার আগেই সাক্ষ্য দেয়। {২৩৬৪}

{২৩৬৪} মুসলিম ১৭১৯, তিরমিজি ২২৯৫, ২২৯৭, আবু দাউদ ৩৫৯৬, আহমাদ ১৬৫৯২, ১৬৬১৪, ২১১৬৫, ২১১৭৫, মুয়াত্তা মালিক ১৪২৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি যায়দ ইবনিল হুবাব সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আলী ইবনিল মাদানী ও উসমান বিন আবু শায়বাহ তাহাকে সিকাহ বলেছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করিয়াছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২০৯৫, ১০/৪০ নং পৃষ্ঠা] ২. উবাই বিন আব্বাস বিন সাহল বিন সাদ আস-সাঈদী সম্পর্কে আবু বিশর আদ দাওলাবী ও আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মুনকার। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তাহার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৭৭, ২/২৫৯ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু উবাই বিন আব্বাস বিন সাহল বিন সাদ আস-সাঈদী এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ৭২ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ৪ টি জাল, ৮ টি খুবই দুর্বল, ২৩ টি দুর্বল, ১৮ টি হাসান, ১৯ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ মুসলিম, ১৭২২, তিরমিজি ২২৯৫, ২২৯৭, আবু দাউদ ৩৫৯৬, আহমাদ ১৬৫৯২, ১৬৫৯৯, ১৬৬১৪, ২১১৬৪, ২১১৭৪, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১৫৫৫৭, ১৫৫৫৮, শারহুস সুন্নাহ ১৫১৩।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/২৯. অধ্যায়ঃ দেনা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান।

২৩৬৫ আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করিলে

‏يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنْتُمْ بِدَيْنٍ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى

[অনুবাদঃ] “হে মুমিনগণ ! তোমরা যখন একে অপরের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের লেনদেন করো তখন তা লিপিবদ্ধ করে রাখো…” [২ঃ২৮২]। তিনি তিলাওয়াত করিতে করিতে “তোমাদের একে অপরকে বিশ্বাস করিলে, যাকে বিশ্বাস করা হয়, সে যেন আমানত প্রত্যর্পণ করে” [২ঃ ২৮৩] পর্যন্ত পৌঁছে বলেন, এই শেষোক্ত বিধান তাহার পূর্ববর্তী বিধানকে রহিত করেছে। {২৩৬৫}

{২৩৬৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি ১. জামাল ইবনিল হাসান আল-আতাকী সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আলী আল-জুরযানী বলেন, আনি আশা করি তাহার মাঝে কোন সমস্যা নেই। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, আমরা তাহার সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম কিন্তু তাহার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করিনি। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মাসলামহ ইবনি কাসিম বলেন, তিনি সিকাহ। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৯৬৮, ৫/১২৮ নং পৃষ্ঠা] ২. মুহাম্মাদ বিন মারওয়ান আল-ইজলী সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫৯৫, ২৬/৩৮৭ নং পৃষ্ঠা] ৩. আবদুল মালিক বিন আবু নাদারাহ সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। ঈমাম দারাকুতনী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তাহার মাঝে কোন সমস্যা নেই। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫৭০, ১৮/৪২৭ নং পৃষ্ঠা] ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ হাসান হাদিস

১৩/৩০. অধ্যায়ঃ যে সব লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।

২৩৬৬ আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতাহারক [খেয়ানতকারী] নারী-পুরুষ, ইসলামী আইনের আওতায় হদ্দের শাস্তি ভোগকারী এবং বিপক্ষের প্রতি শত্রুতা পোষণকারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। {২৩৬৬}

{২৩৬৬} আহমাদ ৬৮৬০, ৬৯০১, ইরওয়া ২৬৬৯, মিশকাত ৩৭৮২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি হাজ্জাজ বিন আরতা সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বকর আল বায়হাকী বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়, অন্যত্র তিনি তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন। মুহাম্মাদ বিন সাদ তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১১১২, ৫/৪২০ নং পৃষ্ঠা] ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ হাসান হাদিস

২৩৬৭ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ নগরবাসীর পক্ষে গ্রামবাসীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। {২৩৬৭}

{২৩৬৭} আবু দাউদ ৩৬০২, ইরওয়া ২৬৭৪, মিশকাত ৩৭৮৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৩১. অধ্যায়ঃ একজন সাক্ষী এবং [বাদীর] শপথের ভিত্তিতে মীমাংসা করা।

২৩৬৮ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একজন সাক্ষীর সাথে [বাদীর] শপথের ভিত্তিতে ফয়সালা করিয়াছেন। {২৩৬৮}

{২৩৬৮} তিরমিজি ১৯৪৩, আবু দাউদ ৩৬১০, ইরওয়া ৮/৩০০, ৩০১। রাওদুন নাদীর ৯৮৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা] ২. সুহায়ল বিন আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সাবত। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার হাদিস সহীহ নয়। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তাহার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৬২৯, ১২/২৩৩ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৬৯ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] একজন সাক্ষীর সাথে [বাদীর] শপথের ভিত্তিতে মোকদ্দমার রায় দিয়েছেন। {২৩৬৯}

{২৩৬৯} তিরমিজি ১৩৪৪, আহমাদ ১৩৮৬৬, ইরওয়া ৮/৩০৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৭০ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একজন সাক্ষী ও [বাদীর] শপথের ভিত্তিতে ফয়সালা করিয়াছেন। {২৩৭০}

{২৩৭০} মুসলিম ১৭১২, আবু দাউদ ৩৬০৮, আহমাদ ২২২৫, ২৮৮১, ২৯৬১, ইরওয়া ২৬৮৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

২৩৭১ সুররাক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] একজন সাক্ষী ও বাদীর শপথ [দ্বারা ফয়সালা করা] অনুমোদন করিয়াছেন। {২৩৭১}

{২৩৭১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৮/৩০৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ সহীহ হাদিস

১৩/৩২. অধ্যায়ঃ মিথ্যা সাক্ষ্য প্রসঙ্গে।

২৩৭২ খুরায়ম বিন ফাতিক আল-আসদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] ফজরের নামায পড়লেন। নামায শেষে তিনি সুষ্ঠুভাবে দাঁড়িয়ে বলেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে আল্লাহর সাথে শরীক করার সমতুল্য [অপরাধ] গণ্য করা হইয়াছে। তিনি তিনবার একথা বলেন, অতঃপর এ আয়াত তিলাওয়াত করেন

‏وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ حُنَفَاءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بِه

[অনুবাদ] ঃ “তোমরা মিথ্যা কথন থেকে দূরে থাকো আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে এবং তাহাঁর সাথে কোন শরীক না করে”। [২২ঃ৩০-৩১]। {২৩৭২}

{২৩৭২} তিরমিজি ২৩০০, আবু দাউদ ৩৫৯৯, আহমাদ ১৮৪১৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৬৬, ইবনিস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৪৯/১১৮, আর রাদ্দু আলাল বালীক ১৯২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হাবীব বিন নুমান আল-আযদী সম্পর্কে আবুল হাসান ইবনিল কাত্তান বলেন, তাহার সম্পর্কে কিছু জানা যায়না। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাকবুল। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি মুনকার। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১১০১, ৫/৪০৪ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

২৩৭৩ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, [কিয়ামতের দিন] মিথ্যা সাক্ষ্যদাতাহার জন্য আল্লাহ্‌ তাআলা জাহান্নামের ফয়সালা না দেয়া পর্যন্ত সে তাহার পদদ্বয় একটুও নাড়াতে পারবে না। {২৩৭৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট।{২৩৭৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যইফাহ ১২৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ ইবনিল ফুরাত সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত। আবু বাকর বিন আবু শায়বাহ বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু মুহাম্মাদ বিন হাযম বলেন, তিনি সকলের ঐক্যমতে দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫৪০, ২৬/২৬৯ নং পৃষ্ঠা]।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ জাল হাদিস

১৩/৩৩. অধ্যায়ঃ আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের পরস্পরের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্যদান।

২৩৭৪ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের পরস্পরের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্যদান অনুমোদন করিয়াছেন। {২৩৭৪}

{২৩৭৪} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। বায়হাকী ফিস সুনান ৬/১৭৫, ইরওয়া ২৬৬৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. আবু খালিদ আল আহমার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু তাহার হাদিস দলীলযোগ্য নয়। আলী ইবনিল মাদানী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সালেহ কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ ও ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৫০৪, ১১/৩৯৪ নং পৃষ্ঠা] ২. মুজালিদ বিন সাঈদ সম্পর্কে ঈমাম বুখারী ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাত্তান বলেন, তিনি জইফ বা দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহন করা যাবে না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৭৮০, ২৭/২১৯ নং পৃষ্ঠা] ।ইবনে মাজাহ তাহকিক ঃ দুর্বল হাদিস

Comments

One response to “ইবনে মাজাহ তাহকিক কৃত হাদিস – বিচার ও বিধান”

Leave a Reply