শপথ, দাস, নারি, মুসলমান, দাত, ও চরের কিসাস
শপথ কাসামাহ কিসাস দিয়াত হত্যা আত্মরক্ষা ইত্যাদির বর্ণনা >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪৬, শপথ কাসামাহ, হাদীস (৪৭০৬-৪৭৮৪)
১.পরিচ্ছেদঃ জাহিলী যুগে প্রচলিত কাসামাহ
২.পরিচ্ছেদঃ শপথ
৩.পরিচ্ছেদঃ নিহইতের অভিভাবকদের প্রথমে শপথ করানো
৪.পরিচ্ছেদঃ এই হাদীসে সাহ্ল হইতে বর্ণনাকারীর বর্ণনাগত পার্থক্য
৫.পরিচ্ছেদঃ আলকামা ইব্ন ওয়ায়লের থেকে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
৬.পরিচ্ছেদঃ উল্লিখিত আয়াতের{১} ব্যাখ্যা এবং এ সম্পর্কে ইকরিমা থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে বর্ণনাগত পার্থক্য
৭.পরিচ্ছেদঃ আযাদ ও দাসের মধ্যে হত্যার কিসাস
৮.পরিচ্ছেদঃ দাসের জন্য মনিবের থেকে কিসাস
৯.পরিচ্ছেদঃ নারীকে নারীর পরিবর্তে হত্যা করা
১০.পরিচ্ছেদঃ নারীর পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করা
১১.পরিচ্ছেদঃ মুসলমান হইতে কাফিরের কিসাস রহিত হওয়া
১২.পরিচ্ছেদঃ যিম্মিকে {১} হত্যা করা গুরুতর পাপ
১৩.পরিচ্ছেদঃ দাসদের মধ্যে যখম ও অঙ্গহানির জন্য কিসাস নেই
১৪.পরিচ্ছেদঃ দাঁতের কিসাস
১৫.পরিচ্ছেদঃ সামনের দাঁতের কিসাস
১৬.পরিচ্ছেদঃ কামড় দেওয়ার কিসাস এবং এ সম্পর্কে ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ]-থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে পার্থক্য
১৭.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আত্মরক্ষা করে
১৮.পরিচ্ছেদঃ আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এই হাদিসের রাবীদের বর্ণনাগত পার্থক্য
১৯.পরিচ্ছেদঃ খোঁচা দেওয়ার কিসাস
২০.পরিচ্ছেদঃ চড়ের কিসাস
টানা-হেঁচড়া করার কিসাস
২১.পরিচ্ছেদঃ বাদশাহদের নিকট হইতে কিসাস
২১.পরিচ্ছেদঃ বাদশাহর কাজে বাধা প্রদান
২৩.পরিচ্ছেদঃ ধারালো অস্ত্র ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা কিসাস নেয়া
২৪.পরিচ্ছেদঃ তার ভাইয়ের পক্ষ হইতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার দেয় আদায় বিধেয় [২ঃ১৭৮]-এর ব্যাখ্যা
২৫.পরিচ্ছেদঃ কিসাস ক্ষমা করার আদেশ
১.পরিচ্ছেদঃ জাহিলী যুগে প্রচলিত কাসামাহ
৪৭০৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সর্বপ্রথম জাহিলী যুগে যে কাসামাহ [শপথ গ্রহণ]-এর ঘটনা ঘটে, তা ছিল এইরূপ যে, কুরায়শের এক শাখা গোত্রের এক ব্যক্তি হাশেম গোত্রের এক ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে কাজ করার জন্য রেখেছিল। সে তার সাথে তার উটের স্থানে গেল। সেখানে অন্য এক লোকের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়, সেও বনূ হাসেমেরই লোক ছিল। সেই ব্যক্তির থলির রশি ছিঁড়ে গিয়েছিল। সেই লোক বললো, একটি রশি দ্বারা আমার সাহায্য করুন, যেন আমি আমার থলিটি বাঁধতে পারি। এমন না হয় যে, থলির মালামাল পড়ে যায় আর সে কারণে উট ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। হাশিম গোত্রীয় মজুর তাকে একখানা রশি দিয়ে দিল যাতে তার থলি বাঁধতে পারে। যখন তারা অবতরণ করিল সকল উট তো বাঁধা হলো কিন্তু একটি উট থেকে গেল, তা বাঁধা গেল না। যে ব্যক্তি তাকে কাজে রেখেছিল, সে জিজ্ঞাসা করলোঃ এই উটের কি হলো ? একে বাঁধলে না কেন ? চাকর বললোঃ এর বাঁধার রশি নেই। সে জিজ্ঞাসা করলোঃ রশি কোথায় গেল ? চাকর বললোঃ বনী হাশিমের এক ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তার থলি বাঁধার রশি ছিঁড়ে গিয়েছিল, সে আমাকে বললোঃ একটি রশি দিয়ে আমার সাহায্য করুন, যা দ্বারা আমি আমার থলির মুখ বন্ধ করিতে পারি যাতে আমার উট পালিয়ে না যায়। আমি তাকে বাঁধার জন্য রশি দিয়ে দেই। একথা শুনেই মালিক মজুরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ফলে মজুরটি মারা যায়। সে যখন মুমূর্ষু, তখন ইয়ামেনী জনৈক ব্যক্তি তার নিকট দিয়া যাচ্ছিল। সে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি হজ্জে যাবেন? সে বললোঃ পূর্বে একবার গিয়েছিলাম এবার যাব না। সে বললোঃ আপনি যখনই যাবেন, আমার একটি সংবাদ তখন পৌঁছাতে পারবেন কি? লোকটি বললোঃ হ্যাঁ। সে বললঃ আপনি হজ্জ মৌসুমে গেলে সেখানে হে কুরায়শ গোত্রের লোক! বলে ডাক দিবেন, তারা জবাব দিলে আবার ডাকবেন, হে হাশিম গোত্রের লোক! তারা জবাব দিলে আপনি আবু তালিব সম্পর্কে খোঁজ নেবেন। তাঁকে বলবেন, আমাকে অমুক ব্যক্তি একটি রশির কারণে হত্যা করেছে। এই বলেই সে মৃত্যুবরণ করলো। মালিক ব্যক্তি মক্কায় আসলে আবু তালিব তাকে জিজ্ঞাসা করলঃ আমাদের লোক কোথায়? সে বললঃ তার অসুখ হইয়াছিল, আমি তার উত্তমরূপে সেবা করি, কিন্তু সে মারা যায়। আমি অবতরণ করে তাকে দাফন করি। আবু তালিব বললেনঃ তোমার থেকে সে এরূপ ব্যবহার পাওয়ারই উপযুক্ত ছিল। কিছুদিন পর ইয়ামন হইতে ঐ ব্যক্তি আগমন করিল, যাকে ঐ মজুর ব্যক্তি সংবাদ দেওয়ার ওসীয়ত করেছিল। সে বললঃ হে কুরায়শ গোত্র! তারা বললঃ এই যে আমরা। সে বললঃ হে বনী হাশেম! তারা বললঃ এই যে বনূ হাশেমের লোক। সে জিজ্ঞাশা করলোঃ আবু তালিব কোথায়? তারা বললঃ এই যে আবু তালিব। সে বললঃ আমাকে অমুক ব্যক্তি ওসীয়ত করেছিল, আপনাকে এই সংবাদ দেওয়ার জন্য যে, অমুক ব্যক্তি একটি রশির জন্য তাকে লাঠির আঘাতে হত্যা করেছে। আবু তালিব সে ব্যক্তির নিকট গিয়ে বলিলেন, তুমি আমার গোত্রের লোককে হত্যা করেছ। এখন তিনটি প্রস্তাবের একটা গ্রহণ কর। যদি তুমি ইচ্ছা কর, তবে দিয়াতের একশত উট দিয়ে দাও। কেননা তুমি আমাদের লোককে ভুলবশত হত্যা করেছ। আর যদি তুমি ইচ্ছা কর, তা হলে তোমার গোত্রের পঞ্চাশ জন লোক কছম খেয়ে বলবে যে, তুমি তাকে হত্যা করনি। যদি তুমি এর কোন শর্ত গ্রহণ না কর, তবে আমরা তোমাকে ঐ ব্যক্তির পরিবর্তে হত্যা করবো। সে ব্যক্তি তার গোত্রের নিকটে গিয়ে একথা বললো। তখন তারা বললঃ আমরা শপথ করবো। এরপর বনূ হাশেম গোত্রের এক নারী যাহার সে গোত্রে বিয়ে হইয়াছিল, পুত্র সন্তানও জন্ম দিয়েছিল, আবু তালিবের নিকট এসে বললঃ হে আবু তালিব! আমার ইচ্ছা আপনি পঞ্চাশজন লোকের একজন হিসাবে আমার এই ছেলেকে শপথ হইতে নিষ্কৃতি দেবেন। আবু তালিব তা মঞ্জুর করিলেন। এরপর তাহাদের আরেক ব্যক্তি এসে বললঃ হে আবু তালিব! আপনি একশত উটের পরিবর্তে ৫০ লোকের শপথ নিতে চান, তাতে একজনের জন্য দুই উট পড়ে। অতএব, এই দুই উট গ্রহণ করে আমাকে শপথ হইতে রেহাই দিন। আবু তালিব এটাও গ্রহণ করিলেন। পড়ে আটচল্লিশজন লোক এসে কসম করলো। ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] আল্লাহর কসম! এক বছর শেষ না হইতেই ঐ আটচল্লিশজন লোকের সবাই মারা গেল।
{১} কাউকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলে, তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যে কসম করা হয়, সেই কসমকে শরীয়তে কাসামাহ বলা হয়।{২} কোন কোন বর্ণনায় এ রকমই আছে। কিন্তু এটা ভুল ; সঠিক হচ্ছে [আরবি] যেমন নাসাঈ শরীফের হিন্দুস্থানী মুদ্রণে আছে। তা ছাড়া বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ বর্ণনাও তাই এবং ইব্ন হাজার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সেটাকেই বিশুদ্ধ বলেছেনঃ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২.পরিচ্ছেদঃ শপথ
৪৭০৭. রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর এক আনসারী সাহাবী থেকে বর্ণিত হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কাসামাহ জাহিলী যুগে যেভাবে প্রচলিত ছিল সেভাবেই বহাল রাখেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭০৮. রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কয়েকজন সাহাবী হইতে বর্ণিত হইতে বর্ণিতঃ
কাসামাহ জাহিলী যুগে প্রচলিত ছিল। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একে বহাল রাখেন। তিনি আনসারদের মোকদ্দমায় কাসামাহ-এর আদেশ দেন, যখন তারা খায়বরের ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যার দাবি উত্থাপন করেছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭০৯. ইবনি মুসায়্যাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে কাসামাহ প্রচলিত ছিল। পরে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একে সেই আনসারীর ক্ষেত্রে আরোপ করেন, যাহার লাশ ইয়াহুদীদের কূপে পাওয়া গিয়েছিল, কেননা আনসার দাবি করে যে, ইয়াহুদীরা আমাদের লোককে হত্যা করেছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৩.পরিচ্ছেদঃ নিহইতের অভিভাবকদের প্রথমে শপথ করানো
৪৭১০. সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা তাঁদের অর্থ-কষ্টের দরুন খায়বরের দিকে রওয়ানা হন। পরে মুহায়্যিসার নিকট এক ব্যক্তি এসে বললঃ আবদুল্লাহ্ ইবনি সাহ্ল নিহত হইয়াছে। আর তাকে এক অতি অন্ধকার কূপে ফেলে দেয়া হইয়াছে। একথা শুনে মুহায়্যিসা ইয়াহূদীদের নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আল্লাহর শপথ! তোমরা তাকে হত্যা করেছ। তারা বললোঃ আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি। মুহায়্যিসা সেখান থেকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করিলেন। এরপর মুহায়্যিসা, তার বড় ভাই হুয়ায়্যিসা এবং আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আসলেন। মুহায়্যিসা, যিনি খায়বারে ছিলেন। আগে কথা বলিতে চাইলে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ বড়কে আগে কথা বলিতে দাও। এরপর হুয়ায়্যিসা কথা বলিলেন, তারপর বলিলেন, মুহায়্যিসা। সব শুনে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ ইয়াহূদীদের উচিত তোমার ভাইয়ের দিয়াত আদায় করা, অন্যথায় তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হইবে। তারপর তিনি ইয়াহূদীদেরকে এ ব্যপারে লিখলে তারা উত্তর দিল, আল্লাহর শপথ! আমরা হত্যা করিনি। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হুয়ায়্যিসা,মুহায়্যিসা এবং আবদূর রহমানকে বললেনঃ আচ্ছা, এখন তোমরা শপথ করে তোমাদের ভাইয়ের হত্যার প্রমাণ দাও। তখন তাঁরা বললেনঃ না, আমরা শপথ করবো না। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহলে ইয়াহূদীরা কসম করে বলবে যে, আমারা হত্যা করিনি, তারা বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! ইয়াহূদীরা তো মুসলমান নয় [তারা মিথ্যা কসম করিবে]। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিজে তাহাদেরকে দিয়াত স্বরূপ একশত উট দিয়ে দেন। তারা উট নিয়ে তাহাদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। সাহ্ল [রাঃআঃ] বলেনঃ এর একটি লাল উটনী আমাকে পদাঘাত করেছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭১১. সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা [রাঃআঃ] তাঁদের অভাবের দরুন খায়বরের যান। এরপর মুহায়্যিসা-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললঃ আবদুল্লাহ্ ইবনি সাহ্লকে হত্যা করা হইয়াছে এবং একটি অন্ধকার কূপে তাকে নিক্ষেপ করা হইয়াছে। একথা শুনে মুহায়্যিসা ইয়াহূদীদের নিকট গিয়ে বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমরা তাকে হত্যা করেছ। তারা বললোঃ আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি। মুহায়্যিসা সেখান থেকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া সকল ঘটনা তাঁকে অবহিত করেন। এরপর মুহায়্যিসা, তার বড় ভাই হুওয়ায়্যিসাহ এবং আবদুর রহমান ইবনি সাহ্ল মিলিত হইয়া আসলেন। মুহায়্যিসা [রাঃআঃ] খায়বরে প্রথম গমন করেন বিধায় তিনি প্রথমে কথা বলিতে চাইলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ বড় ভাইকে সম্মান কর। পরে হুয়ায়্যিসা সকল ঘটনা বর্ণনা করিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের ভাইয়ের দিয়াত দিয়ে দেওয়া ইয়াহূদীদের কর্তব্য, অন্যথায় তাহাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হইবে। এরপর [সাঃআঃ] এ ব্যপারে ইয়াহূদীদের লিখলে তারা জবাব দেয় যে, আল্লাহর কসম! আমরা তাঁকে হত্যা করি নাই। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হুয়ায়্যিসা, মুহায়্যিসা এবং আবদূর রহমানকে বললেনঃ এখন তোমরা শপথ করে তোমাদের ভাইয়ের হত্যা প্রমাণিত কর। তাঁরা বললেনঃ আমরা শপথ করিতে পারি না [কারণ আমরা চাক্ষুষ দেখিনি]। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তা হলে ইয়াহুদীরা তোমাদের বিপক্ষে শপথ করিবে। তারা বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! তারা তো মুসলমান নয়। পরে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দিয়াত নিজেই আদায় করেন এবং একশত উট তাহাদের নিকট পাঠিয়ে দেন। যা নিয়ে তারা তাহাদের ঘরে প্রবেশ করেন। সাহ্ল বলেনঃ এর একটি লাল উটনী আমাকে পদাঘাত করেছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭১২. বুশায়র ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা এবং রাফি ইবনি খাদীজ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা ইবনি মাসউদ একত্রে বের হন। খায়বরের পৌঁছলে কোন এক স্থানে তারা পরস্পর পৃথক হইয়া যান। এরপর মুহায়্যিসা [রাঃআঃ] আবদুল্লাহ্ ইবনি সাহ্লকে দেখলেন যে, তিনি মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি তাকে দাফন করিলেন। পরে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হন। তিনি নিজে, হুওয়ায়্যিসা ইবনি মাসউদ এবং আবদুর রহমান ইবনি সাহ্ল। আবদুর রহমান সকলের মধ্যে বয়সে ছোট ছিলেন। তিনি প্রথমে কথা বলিতে আরম্ভ করলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেনঃ যারা বয়সে বড় তাহাদের সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখ। তখন তিনি চুপ হইয়া যান। তখন তার সাথীদ্বয় কথা বলিতে থাকেন এবং তিনিও তাহাদের সাথে কথা বলছিলেন। তারা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট ঐ স্থানের কথা বললেনঃ যেখানে আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল নিহত হন। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমরা পঞ্চাশ ব্যক্তি কি শপথ করিতে পারবে যা দ্বারা তোমরা তোমাদের অভিযুক্ত ব্যক্তি কিংবা বলিলেন, তোমাদের লোকের হত্যাকারীর বিচার লাভের অধিকার প্রতিষ্ঠা করিবে? তারা বললেনঃ যখন আমরা দেখিনি এবং আমরা উপস্থিতও ছিলাম না, তখন আমরা কী করে শপথ করিতে পারি। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীদের পঞ্চাশ ব্যক্তি শপথ করে তোমাদের অভিযোগ থেকে মুক্ত হইয়া যাক? তারা বললেনঃ আমরা কাফিরদের কসম কীরূপে বিশ্বাস করবো? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এ অবস্থা দেখে নিজে দিয়াত আদায় করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ এই হাদীসে সাহ্ল হইতে বর্ণনাকারীর বর্ণনাগত পার্থক্য
৪৭১৩. বুশায়র ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা এবং রাফি ইবনি খাদীজ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তারা বলেনঃ মুহায়্যিসা ইবনি মাসউদ এবং আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল তাহাদের কোন প্রয়োজনে খায়বর গমন করেন। সেখানে তারা খেজুর বাগানে পৃথক হইয়া যান। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইবনি সাহ্ল নিহত হন। সুতরাং তার ভাই আবদুর রহমান ইবনি সাহ্ল এবং তার দুই চাচাতো ভাই হুওয়ায়্যিসাহ ও মুহায়্যিসা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলেন। আবদুর রহমান তার ভাই সম্পর্কে কথা বলা শুরু করেন। আর তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে বয়সে ছোট। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ যারা বয়সে বড় তাহাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। পরে তারা দুইজন তাহাদের সাথীর ব্যাপারে কথা বলিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একটা কথা বলিলেন, যাহার অর্থ হল, তোমাদের মধ্য হইতে পঞ্চাশজন লোক কসম করিবে। তখন তারা বললেনঃ আমরা যা প্রত্যক্ষ করিনি তার উপর আমরা কিরূপ শপথ করবো? তিনি বলেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা পঞ্চাশজন শপথ করে তোমাদের দাবি হইতে রেহাই পেয়ে যাবে। তারা বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! তারা তো কাফির। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিজের পক্ষ হইতে দিয়াত আদায় করে দেন। সাহ্ল [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি উট রাখার স্থানে গেলে যে উট আমাদেরকে দেওয়া হইয়াছিল তার একটি আমাকে পদাঘাত করেছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭১৪. বুশায়র ইবনি ইয়াসার সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা ইবনি মাসউদ ইবনি যায়দ খায়বর গেলেন। এটা সেই সময়, যখন সেখানে সন্ধি স্থাপিত হইয়া গিয়েছিল। তারা তাহাদের কাজে সেখানে পরস্পর পৃথক হইয়া যান। এরপর মুহায়্যিসা আবদুল্লাহ্ ইবনি সাহ্লের নিকট গিয়ে দেখিতে পান যে, তিনি নিহত হইয়াছেন এবং তার দেহ রক্তে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তিনি তাকে সেখানে দাফন করে মদীনায় ফিরে আসলেন। তারপর আবদুর রহমান ইবনি সাহ্ল হুওয়ায়্যিসা ও মুহায়্যিসা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলেন। আবদুর রহমান ছিলেন সকলের ছোট। তিনি প্রথমে কথা বলিতে আরম্ভ করলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে বয়সে বড় তাকে সম্মান কর। সুতরাং তিনি চুপ হইয়া গেলেন। তারপর অন্য দুজন কথা বলিলেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের পঞ্চাশজন কি শপথ করিতে পারবে যে, যা দ্বারা তোমরা তোমাদের অভিযুক্ত ব্যক্তির কিংবা বলিলেন, তোমাদের লোকের হত্যাকারীকে হত্যা করার অধিকার লাভ করিবে? তারা বললেনঃ আমরা সেখানে ছিলাম না এবং আমরা যখন দেখিনি, তখন আমরা কিভাবে তা করিতে পারি? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহলে ইয়াহূদীদের মধ্য হইতে পঞ্চাশজন শপথ করিবে। তারা বললেনঃ কাফিরদের শপথ আমরা কিরূপে মেনে নিতে পারি? এ অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিজে তাহাদের দিয়াত আদায় করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭১৫. বুশায়র ইবনি ইয়াসার সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল এবং মুহায়্যিসা ইবনি মাসউদ ইবনি যায়দ খায়বর গমন করেন। খায়বরে তখন সন্ধি স্থাপিত হইয়া গেছে। সেখানে যাওয়ার পর তারা কাজে পৃথক হইয়া যান। এরপর মুহায়্যিসা আবদুল্লাহ্র নিকট যান। দেখেন কি তিনি নিহত অবস্থায় রক্তের মধ্য গড়াগড়ি খাচ্ছেন। তিনি তাকে দাফন করে মদীনায় ফিরে আসেন। এরপর আবদুর রহমান ইবনি সাহ্ল, হুওয়ায়্যিসা মুহায়্যিসা এবং ইবনি মাসউদ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হন। প্রথমে আবদুর রহমান কথা বলিতে শুরু করেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে বয়সে বড়, তাকে সম্মান কর। তিনি ছিলেন বয়সে ছোট। তিনি চুপ করিলেন। এরপর তারা দুজন নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে কথা বলিলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা পঞ্চাশজন কি শপথ করিবে যা দ্বারা তোমরা তোমাদের লোকের হত্যাকারীর বিচার করার অধিকার লাভ করিবে? তারা বললেনঃ আমরা যখন দেখিনি, তখন আমরা কি করে শপথ করবো? তিনি বললেনঃ তাহলে ইয়াহূদীদের পঞ্চাশজন কসম করে তোমাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণ করিবে। তারা বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! কাফিরদের শপথ আমরা কি করে বিশ্বাস করবো? তখন তিনি নিজে তাহাদের দিয়াত আদায় করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭১৬. সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল আনসারী এবং মুহায়্যিসা ইবনি মাসউদ খায়বার গমন করেন। পরে তারা উভয়ে তাহাদের কাজে পৃথক হইয়া যান এবং আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্ল আনসারী নিহত হন। এরপর মুহায়্যিসা ও আবদুর রহমান, নিহত ব্যক্তির ভাই এবং হুওয়ায়্যিসা ইবনি মাসউদ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হন। আবদুর রহমান কথা বলিতে উদ্যত হলে নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বললেনঃ বয়সে যে বড় তার সম্মান কর। তখন মুহায়্যিসা ও হুওয়ায়্যিসা আবদুল্লাহ ইবনি সাহ্লের ঘটনা বর্ণনা করিলেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা পঞ্চাশ ব্যক্তি শপথ কর এবং তোমাদের লোকের ঘাতকের বিচার লাভের অধিকার প্রমাণ কর। তারা বলেনঃ আমরা যখন দেখিনি এবং উপস্থিতও ছিলাম না, তখন আমরা কী করে শপথ করিতে পারি? নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তবে তো তারা পঞ্চাশজন শপথ করে তোমাদের অভিযোগ থেকে মুক্ত হইয়া যাবে। তখন তারা বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! কাফিরদের শপথ আমরা কিভাবে মেনে নিতে পারি? রাবী বলেনঃ এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিজে দিয়াত আদায় করে দেন। সাহ্ল ইবনি আবু হাসমা [রাঃআঃ] বলেনঃ ঐ সকল উটের একটি আমাকে আমাদের উট রাখার স্থানে পদাঘাত করেছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭১৭. সাহল ইবনি আবু হাসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি সাহলকে মৃতাবস্থায় পাওয়া গেল, তখন তার ভাই এবং দুই চাচা হুওয়াইয়্যিসা এবং মুহাইয়্যিসা, যারা আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-এরও চাচা ছিলেন, রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হলেন। আবদুর রহমান প্রথমে কথা বলিতে শুরু করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ বয়সে যে বড় তাকে সম্মান কর। তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আবদুল্লাহ ইবনি সাহলকে মৃতাবস্থায় পেয়েছি। আর তাকে হত্যা করে ইয়াহূদীদের এক কূপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কাকে সন্দেহ কর? তারা বললেনঃ ইয়াহূদীদের উপরই আমাদের সন্দেহ হয়। তিনি বললেনঃ তোমরা কি কসম করে বলিতে পার যে, ইয়াহূদীরা তাকে হত্যা করেছে। তারা বললেনঃ আমরা যখন চোখে দেখিনি তখন আমরা কিরূপে কসম করিতে পারি। তিনি বলেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা পঞ্চাশজন শপথ করে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। তখন তারা বললেনঃ আমরা তাহাদের শপথ কিরূপে বিশ্বাস করবো? কেননা তারা তো মুশরিক। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজে তাহাদের দিয়াত আদায় করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭১৮. বুশায়র ইবনি ইয়াসার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি সাহল আনসারী এবং মুহায়্যিসা ইবনি মাসউদ খায়বর গমন করার পর নিজ নিজ কাজের জন্য পৃথক হয়ে যান। তারপর আবদুল্লাহ ইবনি সাহল নিহত হন। মুহায়্যিসা সেখান থেকে ফিরে আসেন। এরপর তিনি, তাহাঁর ভাই হুওয়ায়্যিসা এবং আবদুর রহমান ইবনি সাহল রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হন। আবদুর রহমান তাহাঁর ভাই হিসাবে প্রথমে কথা শুরু করেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ বয়সে যে বড়, তাকে সম্মান কর। তখন হওয়ায়্যিসা এবং মুহায়্যিসা কথা বলিতে শুরু করেন। তারা আবদুল্লাহ ইবনি সাহলের অবস্থা বর্ণনা করলে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে বললেনঃ তোমরা পঞ্চাশজন শপথ করে কি তোমাদের লোকের হত্যাকারীর বিচার লাভের অধিকার সাব্যস্ত করিতে পারবে? ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ ইয়াহ্ইয়া বলেছেনঃ বুশায়র মনে করেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজে দিয়াত আদায় করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭১৯. বুশায়র ইবনি ইয়াসার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সাহল ইবনি আবু হাসমা নামক এক আনসারী তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তার গোত্রের কয়েকজন খায়বরে গমন করেন। সেখানে তারা পৃথক হয়ে যান পরে তারা তাহাদের একজনকে নিহত অবস্থায় পেলেন। তারা যে স্থানে নিহত ব্যক্তিকে পেলেন, সেখানকার লোকজনকে বলিলেন, তোমরা আমাদের লোককে হত্যা করেছ। তারা বললোঃ না, আমরা তাকে হত্যা করিনি এবং হত্যাকারীকে আমরা চিনিও না। এরপর তারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা খায়বার গিয়েছিলাম, সেখানে আমরা আমাদের এক ব্যক্তিকে নিহত পেয়েছি। তিনি বললেনঃ বয়সে বড় ব্যক্তির সম্মান কর। তিনি বললেনঃ তোমরা কি সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারবে যে, কে হত্যা করেছে? তারা বললেনঃ আমাদের কোন সাক্ষী নেই। তিনি বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীরা তোমাদের সামনে শপথ করিবে। তারা বলিলেন, আমরা ইয়াহূদীর শপথ বিশ্বাস করি না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট ঐ ব্যক্তির রক্ত বৃথা যাওয়া পছন্দ হলো না। কাজেই তিনি সাদকার উট থেকে একশত উট দিয়াত স্বরূপ তাহাদের দিয়ে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭২০. আমর ইবনি শুআয়ব তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে হইতে বর্ণিতঃ
মুহায়্যিসার ছোট ছেলে খায়বারের লোকালয়ের সামনে নিহত হন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি হত্যাকারী সম্পর্কে দুইজন সাক্ষী পেশ কর; আমি তাকে তার রশিসহ তোমাদের নিকট সোপর্দ করবো। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমি দুইজন সাক্ষী কোথা হইতে আনবো ? এতো তাহাদের দুয়ারে মৃতাবস্থায় পতিত ছিল। তিনি বললেনঃ তবে তুমি পঞ্চাশবার শপথ করিবে। তিনি বললেনঃ আমি যা জানি না, তার কসম আমি কি করে করবো ? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তা হলে ইয়াহূদীদের মধ্য হইতে পঞ্চাশজন থেকে আমরা শপথ নিই ? তিনি বললেনঃ আমরা তাহাদের থেকে শপথ নেব, যখন তারা ইয়াহূদী ? তখন রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] তার দিয়াত তাহাদের মধ্যে ভাগ করে দেন; আর অর্ধেক দিয়াত নিজের পক্ষ হইতে দিয়ে তাহাদের সাহায্য করেন।{১}
{১} ইয়াহূদীরা দিয়াত আদায় করিতে অস্বীকার করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্বয়ং দিয়ত আদায় করে দেন।হাদিসের তাহকিকঃ শায
৪৭২১. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়, তিনটি কারণ ব্যতীত ; প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, যে ব্যক্তি বিবাহের পরও ব্যভিচার করে এবং ঐ ব্যক্তি যে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে মুসলিম সমষ্টি হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭২২. আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর সময়ে এক ব্যক্তি এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে, হত্যাকারীকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আনা হয়। তিনি তাকে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের নিকট দিয়ে দেন। তখন হত্যাকারী বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহু! আল্লাহর কসম! আমি তাকে হত্যা করার ইচ্ছা করিনি। তিনি নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসকে বললেনঃ যদি এই ব্যক্তি সত্যবাদী হয়, অতঃপর তুমি তাকে হত্যা কর, তবে তুমি জাহান্নামী হইবে। তখন সেই ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দিল। ঐ ব্যক্তি রশিতে বাঁধা ছিল, সে তার রশি টানতে টানতে চলে গেল। সেদিন হইতে তাকে রশিওয়ালা ব্যক্তি বলা হতো।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭২৩. ওয়ায়ল হায্রামী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে ঘাতক কাউকে হত্যা করেছিল, তাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে আসা হল। নিহত ব্যক্তির অভিভাবকই তাকে উপস্থিত করলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি তাকে ক্ষমা করে দেবে ? সে বললোঃ না। তিনি বললেনঃ তাকে হত্যা করিবে ? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যাও, তাকে হত্যা কর। সে রওয়ানা হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, যদি তুমি তাকে ক্ষমা কর, তবে সে তোমার গুনাহ এবং তোমার বন্ধুর গুনাহ বহন করিবে। তখন সে তাকে ক্ষমা করলো এবং তাকে ছেড়ে দিল। সে ব্যক্তি তার রশি টানতে টানতে চলে গেল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫.পরিচ্ছেদঃ আলকামা ইব্ন ওয়ায়লের থেকে বর্ণনাকারীদের পার্থক্য
৪৭২৪. হামযা আবু আমর আইযী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, যখন নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস এক হত্যাকারীকে রশিতে বেঁধে টেনে আনে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তাকে ক্ষমা করে দেবে ? সে বললোঃ না। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ দিয়াত নেবে ? সে বললোঃ না। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তাকে হত্যা করিবে ? সে বললোঃ হ্যা। তিনি বললেনঃ তা হলে তাকে নিয়ে যাও। যখন সে তাকে নিয়ে চললোঃ তখন তিনি তাকে বললেনঃ তুমি তাকে ক্ষমা করে দেবে ? সে বললোঃ না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ দিয়াত নেবে ? সে বললোঃ না। আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তাকে হত্যা করিবে ? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাকে নিয়ে যাও। পরে তিনি বললেনঃ যদি তুমি তাকে ক্ষমা কর, তবে সে তোমার পাপ এবং নিহত ব্যক্তির পাপ বহন করিবে। তখন সে তাকে ক্ষমা করে ছেড়ে দিল। [রাবী বলেন] আমি দেখলাম, সে রশি টানতে টানতে যাচ্ছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭২৫. জামি ইব্ন মাতার হাবাতী আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল [রাঃআঃ] থেকে এবং তিনি তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪৭২৬. জামি ইব্ন মাতার আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল থেকে এবং ওয়ায়ল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি অন্য একজনকে নিয়ে আসে। সে বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! এই ব্যক্তি এবং আমার ভাই উভয়ে কুয়ায় কাজ করতো, হঠাৎ সে কোদাল উঠিয়ে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করিল এবং তাকে হত্যা করিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তাকে ক্ষমা করে দাও। সে ব্যক্তি অস্বীকার করলো এবং বলিল, হে আল্লাহর নাবী! এই ব্যক্তি এবং আমার ভাই কুয়া খনন করছিল। হঠাৎ সে কোদাল তুলে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করিল এবং হত্যা করিল। তিনি বললেনঃ তাকে ক্ষমা কর, কিন্তু সে অস্বীকার করিল, তারপর দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর নাবী ! এই ব্যক্তি এবং আমার ভাই কুয়া খনন করছিল। হঠাৎ সে কোদাল তুলে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করিল এবং তাকে হত্যা করিল। তিনি বলিলেন, তাকে ক্ষমা কর। কিন্তু সে অস্বীকার করিল। শেষে তিনি বললেনঃ যাও, যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তবে তুমিও তার মত হইবে। সে তাকে নিয়ে দূরে যাওয়ার পর আমরা চিৎকার করে বললামঃ তুমি কি শুনছ না রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলছেন। সে ফিরে এসে বললোঃ যদি আমি তাকে হত্যা করি তবে কি আমিও ঐরূপ হবো ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাকে ক্ষমা কর। এরপর সে রশি টানতে টানতে বের হল এবং আমাদের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭২৭. সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল তার পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর নিকট বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে রশিতে বেঁধে টেনে নিয়ে আসল এবং বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! এই ব্যক্তি আমার ভাইকে হত্যা করেছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তাকে হত্যা করেছ ? বাদী বললো, যদি সে স্বীকার না করে তা হলে আমি সাক্ষী আনবো। তখন সে ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমি হত্যা করেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিভাবে হত্যা করেছ ? সে বললো, আমি এবং তার ভাই এক গাছের লাকড়ি কুড়াচ্ছিলাম। তখন সে আমাকে গালি দিল এবং আমাকে রাগিয়ে দিল। ফলে আমি তার মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত করি। রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার নিকট কি অর্থ-সম্পদ আছে, যা তুমি তোমার প্রাণের বিনিময়ে দিতে পার ? সে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমার নিকট একটা কম্বল এবং কুড়াল ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর, তোমার লোক তোমাকে দিয়াতের টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেবে। সে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার গোত্রের নিকট আমার এত মর্যাদা নেই যে, তারা আমাকে মালের বিনিময়ে ছড়িয়ে নেবে। একথা শুনে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ওয়ারিসের দিকে রশি নিক্ষেপ করিলেন এবং বলিলেন, তাকে নিয়ে যাও। যখন সে যেতে লাগলোঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যদি সে তাকে হত্যা করে, তবে সেও তার মত হইবে। লোক গিয়ে তাকে বললোঃ তোমার সর্বনাশ হোক, রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি সে তাকে হত্যা করে তবে সেও এইরূপ হইবে। তখন সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে ফিরে আসল এবং বললোঃ লোক বলছে, আপনি নাকি বলেছেনঃ আমি তাকে হত্যা করলে আমিও তার মত হবো ? আমি তো তাকে আপনার আদেশেই নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি চাও যে, সে তোমার এবং তোমার এই পাপ নিজের উপর নিয়ে যাক। সে বললোঃ অবশ্যই। তিনি বললেনঃ তাই হইবে। সে বললোঃ তবে তাই হোক।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭২৮. সিমাক ইব্ন হারব হইতে বর্ণিতঃ
আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল তার পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তিকে টেনে আনে …………… অতঃপর তিনি পূর্বের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪৭২৯. ইসমাঈল ইব্ন সালিম হইতে বর্ণিতঃ
আলকামা ইব্ন ওয়ায়ল থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা তাহাদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে অন্য এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। তিনি হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের কাছে সোপর্দ করে দিলেন যাতে সে তাকে হত্যা করে। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবীগণকে বললেনঃ নিহত ব্যক্তি এবং হত্যাকারী উভয়ে জাহান্নামে যাবে। এক ব্যক্তি ওয়ারিসকে এই সংবাদ দিল। যখন তাকে এ সংবাদ দেওয়া হলো, সে হত্যাকারীকে ছেড়ে দিল। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি দেখলাম, তাকে ছেড়ে দেয়ার পর সে রশি টানতে টানতে প্রস্থান করিল। রাবী ইসমাঈল বলেনঃ আমি হাবীবের নিকট এই হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আমার নিকট সাঈদ ইব্ন আশওয়া বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করার আদেশ দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৩০. আনাস ইব্ন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি তার এক ঘনিষ্ঠজনের হত্যাকারীকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে আসল। নাবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তাকে ক্ষমা করে দাও। সে ব্যক্তি তা অস্বীকার করিল। তিনি বললেনঃ যাও তাকে হত্যা কর, আর তুমিও তার মত হইবে। সে চলে গেল। এক ব্যক্তি তার সাথে মিলিত হয়ে বললোঃ রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি তুমি তাকে হত্যা কর তবে তুমিও তার মত হইবে। একথা শুনে ঐ ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দিল। তখন সে আমার সামনে দিয়ে রশি টেনে নিয়ে চলে গেল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৩১. বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! এ ব্যক্তি আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] বললেনঃ যাও, তুমিও তাকে হত্যা কর, যেমন সে তোমার ভাইকে হত্যা করেছে। সেই ব্যক্তি বললোঃ আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে ক্ষমা করে দাও, তোমার অনেক সওয়াব হইবে, আর কিয়ামতের দিন তোমার এবং তোমার ভাই-এর জন্য উত্তম হইবে। একথা শুনে সে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিল। পরে রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] একথা জানিতে পেরে তাকে জিজ্ঞাসা করলে, সে যা করেছিল, তা বর্ণনা করলো। তখন রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] তাকে {হত্যাকারীকে} তিরস্কার করে বললেনঃ কিয়ামতের দিন সে অর্থাৎ নিহত ব্যক্তি তোমার সাথে যা করিবে, তার চেয়ে এটাই {অর্থাৎ শান্তি গ্রহণই} তোমার পক্ষে শ্রেয় ছিল। সে বলবে, হে আল্লাহ ! তাকে জিজ্ঞাসা করুন, সে আমাকে কেন হত্যা করেছিল ?
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৬.পরিচ্ছেদঃ উল্লিখিত আয়াতের{১} ব্যাখ্যা এবং এ সম্পর্কে ইকরিমা থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে বর্ণনাগত পার্থক্য
{১} অর্থঃ আর যদি বিচার-নিষ্পত্তি কর, তবে ন্যায়বিচার করো- [৫ ঃ ৪২]।
৪৭৩২. সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
ইকরিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এবং তিনি হযরত ইব্ন আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ কুরায়যা ও নষীর ইয়াহূদীদের দুটি গোত্র। এদের মধ্যে বনূ নযীর গোত্র বনূ কুরায়যা গোত্র থেকে মযাদাশালী ছিল। বনূ কুরায়যাহার কোন ব্যক্তি বনূ নয়ীরের কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তাকে হত্যা করা হতো। কিন্তু বনূ নযীরের কোন ব্যক্তি বনূ কুরায়যাহার কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে রক্তপণ স্বরূপ সে একশত ওসাক খেজুর আদায় করতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নবূয়তের পর বনূ নযীরের এক ব্যক্তি কুরায়যাহার এক ব্যক্তিকে হত্যা করিল। তখন বনূ কুরায়যাহার লোকেরা বললঃ হত্যাকারীকে আমাদের হাওলা কর, আমরা তাকে হত্য করবো। বনূ নযীরের লোকেরা বললোঃ তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে নাবী [সাঃআঃ] রহিয়াছেন। তারা তাহাঁর নিকট আসলে, তখন আয়াত নাযিল হলোঃ “যদি আপনি কফিরদের মধ্যে মীমাংসা করেন, তবে ইনসাফের সাথে মীমাংসা করবেন,” আর ইনসাফ হলো প্রাণের পরিবর্তে প্রাণ নেয়া। এরপর নাযিল হলোঃ “তারা কি অজ্ঞতার যুগের রেওয়াজ পছন্দ করছে ?”
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৩৩. দাঊদ ইব্ন হুসায়ন হইতে বর্ণিতঃ
ইকরিমা থেকে এবং তিনি ইব্ন আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, সূরা মায়িদার আয়াতঃ “তারা যদি তোমার কাছে আসে, তবে তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করো, অথবা তাহাদেরকে উপেক্ষা করো। তুমি যদি তাহাদেরকে উপেক্ষা কর, তবে তারা তোমার কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। আর যদি বিচার-নিষ্পত্তি কর তবে ন্যায়বিচার করো। আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” [৫ ঃ ৪২] বনূ নয়ীর এবং বনূ কুরায়যাহার রক্তপণের ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল। যেহেতু বনূ নযীর গোত্র ছিল মর্যাদাশালী, তাই তাহাদের কোন ব্যক্তি নিহত হলে তারা পূর্ণ রক্তপণ আদায় করতো, আর যদি কুরায়যাহার কোন ব্যক্তি নিহত হতো তবে তারা অর্ধ রক্তপণ পেত। এরপর তারা এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট মীমাংসা –প্রার্থী হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের ব্যাপারে এই আয়াত নাযিল করেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ ব্যাপারে তাহাদের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন এবং দিয়াত সমান করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৭.পরিচ্ছেদঃ আযাদ ও দাসের মধ্যে হত্যার কিসাস
৪৭৩৪. কায়স ইবনি উবাদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এবং আশতার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আলী [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে, জিজ্ঞাস করলামঃ রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] কি এমন কিছু আপনাকে বলেছেন, যা সাধারণভাবে কাউকে বলেননি ? তিনি বললেনঃ না, আমার এই কাগজে যা লিখিত আছে, তা ব্যতীত আর কিছুই তিনি বলেননি। একথা বলে তিনি তাহাঁর তলোয়ারের খাপ হইতে লিখিত এক টুকরা কাগজ বের করেন। তাতে লেখা ছিলঃ মুসলমানের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন, আর তারা অমুসলমানদের ব্যাপারে একটি হাতের মত। মুসলমানদের পক্ষ হইতে একজন সাধারণ লোকও কাউকে আশ্রয় দান করিতে পারে যা সকলের জন্য রক্ষা করা বাধ্যতামূলক। জেনে রাখ, কোন মুসলমানকে কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাকে তার প্রতিশ্রুতিতে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় হত্যা করা যাবে না। যে ব্যক্তি ধর্মে কোন প্রকার বিদআত প্রতিষ্ঠা করিবে, এর পাপ তার উপর বর্তাবে। যদি কোন ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্ৰয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সকল লোকের অভিসম্পাত।
কিসাস এর হাদিস- হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৩৫. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন, অমুসলমানদের ব্যাপারে তারা একটি হাতের ন্যায়। তাহাদের পক্ষ হইতে একজন সাধারণ মুসলিমও কাউকে আশ্রয়দানের পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারে [যা রক্ষা করা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক হইবে। জেনে রাখ, কোন মুসলমানকে কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাকেও তার প্রতিশ্রুতিতে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় হত্যা করা যাবে না।
কিসাস এর হাদিস-হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮.পরিচ্ছেদঃ দাসের জন্য মনিবের থেকে কিসাস
৪৭৩৬. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার দাসকে হত্যা করলে আমরা তাকে হত্যা করবো। আর যদি কোন ব্যক্তি তার দাসের নাক-কান কেটে দেয়, আমরা তার নাক-কান কেটে দেব। যদি কোন ব্যক্তি তার দাসকে খাসি করে দেয়, তবে আমরা তাকে খাসি করে দেব।
কিসাস এর হাদিস-হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৭৩৭. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি তার দাসকে হত্যা করলে আমরা তাকে হত্যা করবো। আর যদি দাসের নাক-কান কাটে, আমরা তার নাক-কান কেটে দেব।
কিসাস এর হাদিস-হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৭৩৮. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ তার দাসকে হত্যা করলে, আমরা তাকে হত্যা করবো, আর কেউ তার দাসের নাক কান কাটলে, আমরা তার নাক কান কেটে দেব।
কিসাস এর হাদিস-হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৯.পরিচ্ছেদঃ নারীকে নারীর পরিবর্তে হত্যা করা
৪৭৩৯. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মীমাংসা কী ছিল, তিনি তা জানিতে চাইলেন। তখন হামল ইবনি মালিক দাঁড়িয়ে বলেনঃ আমি দুই নারীর বাসস্থানের মধ্যস্থলে ছিলাম। এমন সময় একজন নারী অন্যজনকে তার তাঁবুর ডাণ্ডা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করলো এবং তার পেটের সন্তানকেও হত্যা করিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সন্তানের বদলে এক দাস অথবা দাসী দেওয়ার আদেশ করেন এবং নারীর পরিবর্তে ঐ নারীকে হত্যা করার আদেশ দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০.পরিচ্ছেদঃ নারীর পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করা
৪৭৪০. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ইয়াহূদী একটি বালিকাকে তার রূপার অলঙ্কারের জন্য হত্যা করে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ বালিকার কিসাস স্বরূপ ইয়াহূদীকে হত্যার আদেশ দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪১. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ইয়াহূদী এক বালিকার রূপার অলঙ্কার কেড়ে নিল এবং পরে তাকে দুইটি পাথরের মাঝে রেখে তার মাথা চূর্ণ করলো। লোকজন এসে দেখলো, তার নিঃশ্বাস তখনও অবশিষ্ট রয়েছে। লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগলোঃ তোমাকে কি ঐ ব্যক্তি মেরেছে? ঐ ব্যক্তি মেরেছে? অবশেষে ঐ ইয়াহূদীর নাম আসতেই সে বললোঃ হ্যাঁ। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আদেশে তার মাথা দুটি পাথরের মাঝখান রেখে চূর্ণ করে দেওয়া হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪২. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক বালিকা রূপার অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় বের হলে এক ইয়াহূদী তাকে ধরল। তার মাথা দুটি পাথরের মাঝে রেখে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে এবং তার শরীরের অলঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে গেল। লোকজন এসে তাকে এমন অবস্থায় পেল যে, তখনও তার নিঃশ্বাস অবশিষ্ট আছে। তারা তাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে গেলে তিনি বললেনঃ তোমাকে কে আঘাত করেছে ? অমুক ব্যক্তি ? সে বললোঃ না, আল্লাহর কসম! তিনি বললেনঃ অমুক ব্যক্তি ? শেষ পর্যন্ত তিনি আঘাতকারী ইয়াহূদীর নাম নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, সে তার মাথার ইশারায় বললোঃ হ্যাঁ। ঐ লোকটি ধৃত হলে তা সে স্বীকার করলো। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদেশ করলে দুই প্রস্তরের মধ্যে রেখে তার মাথা চূর্ণ করা হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১.পরিচ্ছেদঃ মুসলমান হইতে কাফিরের কিসাস রহিত হওয়া
৪৭৪৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তিন অবস্থার যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমতঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তখন তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হইবে, দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম হইতে বের হইয়া যায়, এবং পরে আল্লাহ্ তাআলা এবং আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাকে হত্যা করা হইবে বা শূলীতে চড়ানো হইবে অথবা দেশান্তর করা হইবে।
কিসাস এর হাদিস-হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪৪. আবু জুহায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
একদা আমরা আলী [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনার নিকট কি কুরআন ব্যতীত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কোন অন্য বাণী রয়েছে? তিনি বললেনঃ না, আল্লাহ্ তাআলার শপথ! যিনি বীজ বিদীর্ণ করে অঙ্কুর বের করে থাকেন, এবং জীবন দান করেন। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ্ তাআলা কোন বান্দাকে তাহাঁর কিতাবের যে বুঝ-সমঝ দান করেন অথবা যা সহীফায় রয়েছে সেটা ভিন্ন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ ঐ সহীফায় কী রয়েছে। তিনি বললেনঃ তাতে রয়েছে দিয়াতের আহকাম, দাসমুক্ত করার বর্ণনা এবং আরো রয়েছে, কোন মুসলমানকে কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪৫. আবু হাস্সান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আলী [রাঃআঃ] বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে এমন কিছু বলেন নি যা তিনি অন্যান্য লোকের নিকট বলেন নি; তবে আমার তলোয়ারের খাপে যে এক কিতাব রয়েছে তা ব্যতীত। জনগণ তার পিছু ছাড়লেন না। পরে তিনি সেই লিখা বের করিলেন। দেখা গেল, তাতে লিখিত রয়েছে যে, মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন। একজন সাধারণ মুসলমানও কাউকে আশ্রয় দিতে পারে, মুসলিমগণ অমুসলিমদের ব্যাপারে এক হাতের ন্যায়, আর কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর নিজের ওয়াদার উপর স্থির কোন যিম্মিকে হত্যা করা যাবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪৬. মালিক আশতার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আলী [রাঃআঃ]-কে বললেনঃ মানুষ [আপনার কাছ থেকে জ্ঞান-প্রজ্ঞার] বিপুল কথা শুনে থাকে। যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আপনাকে খাস কিছু বলে থাকেন, তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তখন আলী [রাঃআঃ] বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে এমন কিছু বলেন নি, যা তিনি অন্যান্য লোককে বলেন নি। তবে আমার তলোয়ারের খাপে যা রয়েছে তা ব্যতীত। এরপর দেখা গেল, তাতে রয়েছেঃ মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন, একজন সাধারণ মুসলমান একজন কাফিরকে আশ্রয় দিতে পারে, আর কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর না ঐ যিম্মিকে হত্যা করা যাবে, যে তার ওয়াদার উপর স্থির রয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২.পরিচ্ছেদঃ যিম্মিকে {১} হত্যা করা গুরুতর পাপ
________________________________________
{১} অমুসলিম নাগরিক।
৪৭৪৭. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিবে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪৮. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করিবে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাতের সুবাস গ্রহণও হারাম করে দেবেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪৯. কাসিম ইবনি মুখায়মারা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জনৈক সাহাবী থেকে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করিবে, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ সত্তর বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৫০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করিবে, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩.পরিচ্ছেদঃ দাসদের মধ্যে যখম ও অঙ্গহানির জন্য কিসাস নেই
৪৭৫১. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
কয়েকজন গরীব লোকদের একটি গোলাম ছিল, সে ধনীদের এক দাসের কান কেটে ফেলে। সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলে তিনি তার জন্য কিছুই সাব্যস্ত করেন নি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪.পরিচ্ছেদঃ দাঁতের কিসাস
৪৭৫২. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁতের ব্যাপারে কিসাসের আদেশ দেন। তিনি বলেনঃ কিসাস হচ্ছে আল্লাহর বিধান।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৫৩. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দাসকে হত্যা করিবে, আমরা তাকে হত্যা করবো; আর যে ব্যক্তি তার দাসের অঙ্গ কাটবে, আমরা তার অঙ্গ কাটবো।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৭৫৪. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দাসকে খাসি করিবে, আমরা তাকে খাসি করে দেব এবং যে ব্যক্তি তার দাসের কোন অঙ্গ কাটবে, আমরা তার অঙ্গ কাটবো।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৭৫৫. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রুবায়্যি-এর বোন উম্মে হারিছা এক ব্যক্তিকে যখম করে। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এ মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। তিনি বলেনঃ কিসাস নেয়া হইবে। তখন রুবায়্যির মা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! তার থেকে কী বদলা নেয়া হইবে ? আল্লাহর কসম ! তার থেকে কখনও বদলা নেয়া যাবে না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সুব্হানাল্লাহ্ ! হে রুবায়্যি-এর মা ! কিসাস নেয়া তো আল্লাহর বিধান। সে বললোঃ আল্লাহর শপথ ! তার নিকট হইতে কখনও কিসাস নেয়া যাবে না; এরূপ বলিতে থাকলো। এমনকি তারা দিয়াত কবূল করে নিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলার কিছু বান্দা এমনও রয়েছে যে, যদি সে আল্লাহর উপর ভরসা করে কোন শপথ করে বসে, তবে আল্লাহ্ তাআলা তার শপথ সত্যে পরিণত করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫.পরিচ্ছেদঃ সামনের দাঁতের কিসাস
৪৭৫৬. হুমায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আনাস [রাঃআঃ] বলেছেনঃ তার ফুফু এক বালিকার দাঁত ভেঙেছিল; তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিসাসের আদেশ দেন। তার ভাই আনাস ইবনি নাযর জিজ্ঞাসা করলোঃ অমুকের দাঁত কি ভাঙ্গা হইবে? যিনি আপনাকে সত্য নাবী করে পাঠিয়েছেন, তাহাঁর শপথ করে বলছিঃ কখনও তার দাঁত ভাঙ্গা যাবে না। তারা এর পূর্বেই ঐ বালিকার ওয়ারিসদেরকে বলে রেখেছিল যে, তাকে ক্ষমা করে দাও, অথবা দিয়াত নাও। যখন তার ভাই আনাস ইবনি নাযরের চাচা, যিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হইয়াছিলেন, শপথ করিলেন, তখন তার ওয়ারিসরা তাকে ক্ষমা করার জন্য রাযী হইয়া গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলার কোন কোন বান্দা এমন রয়েছে, যদি সে আল্লাহর উপর ভরসা করে শপথ করে বসে, তখন আল্লাহ্ তাআলা তার শপথ সত্যে পরিণত করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৫৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রুবায়্যি এক বালিকার দাঁত ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর তিনি তার ওয়ারিসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। কিন্তু ঐ বালিকার ওয়ারিসরা ক্ষমা করিতে সম্মত হলো না। পরে দিয়ত দেওয়ার প্রস্তাব করলেও তারা সম্মত হলো না। পরে তারা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি কিসাসের আদেশ দেন। তখন আনাস ইবনি নাযর বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! রুবায়্যি-এর কি দাঁত ভেঙে দেয়া হইবে ? না, যিনি আপনাকে নাবী হিসাবে প্রেরণ করিয়াছেন তাহাঁর শপথ ! কখনও তার দাঁত ভাঙ্গা যাবে না। তিনি বললেনঃ হে আনাস ! আল্লাহর কিতাবের মীমাংসা তো কিসাস। পরে ঐ লোকেরা সম্মত হইয়া গেল এবং ক্ষমা করে দিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলার কোন কোন বান্দা এমন রয়েছে, যদি সে আল্লাহর উপর ভরসা করে কোন শপথ করে, তবে তিনি তা সত্যে পরিণত করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬.পরিচ্ছেদঃ কামড় দেওয়ার কিসাস এবং এ সম্পর্কে ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ]-থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে পার্থক্য
৪৭৫৮. ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির হাতে কামড় দিল। যখন সেই ব্যক্তি তার হাত টেনে নিল, তাতে তার একটি দাঁত অথবা তিনি বলেন, কয়েকটি দাঁত পড়ে গেল। সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট ফরিয়াদ জানালো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তুমি আমাকে কী আদেশ দিতে বল ? তুমি এই বল যে, আমি তাকে আদেশ করি এবং সে তার হাত তোমার মুখে দিয়ে রাখুক; আর তুমি তা চিবাতে দাও, যেমন জন্তু চিবিয়ে থাকে ? যদি তোমার ইচ্ছা হয়, তবে তোমার হাত তাকে চিবাতে দাও। তারপর বের করে নাও।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৫৯. যুরারা ইবনি আওফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির বাহুর উপর কামড় দিল। সে হাত টেনে নিলে ঐ ব্যক্তির দাঁত পড়ে গেল। পরে এই মোকদ্দমা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরবারে পেশ করা হলে তিনি দিয়াত বাতিল করে দেন এবং বলেনঃ তুমি জন্তুর ন্যায় নিজের ভাইয়ের মাংস চিবাতে চাও ?
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৬০. যুরার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইয়ালা এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলো এবং তাহাদের একজন অন্যজনের হাতে কামড় দিল। সে তার মুখ থেকে নিজের হাত টেনে নিতেই অন্যজনের দাঁত পড়ে গেল। পরে উভয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বিচারপ্রার্থী হলে আসল। তিনি বললেনঃ তোমাদের একেকজন তার ভাইকে কামড় দিবে আবার দিয়াতও চাইবে ? তার জন্য কোন দিয়াত নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৬১. যুরারা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
ইয়ালা বলেন, এক ব্যক্তি অন্যজনের হাতে কামড় দিলে তার দাঁত পড়ে যায়। রসূলুল্লাহ, [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার জন্য কোন দিয়াত নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৬২. যুরারা ইবনি আওফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির বাহু কামড়ে ধরে, ফলে তার দাঁত পড়ে যায়। সে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে তা বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের বাহু জানোয়ারের মত কামড়াতে চেয়েছিলে। তিনি তার দিয়াত বাতিল করে দিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আত্মরক্ষা করে
৪৭৬৩. ইয়ালা ইবনি মুন্ইয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সে অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে তাহাদের একজন অন্যজনকে কামড়ে দেয়। অপর ব্যক্তি তার মুখ থেকে হাত টেনে নিলে তার দাঁত পড়ে যায়। পরে এই মোকদ্দমা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বললেনঃ তোমাদের একজন নিজের ভাইকে কামড়াবে, যেমন যুবক উট কমড়ায় ? তিনি তার দিয়াত বাতিল করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৬৪. ইয়ালা ইবনি মুনইয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বনী তমীমের এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করে তার হাতে কামড় দেয়। ঐ ব্যক্তি হাত টেনে নিলে তার দাঁত পড়ে যায়। তারা এই ঝগড়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে গেলে তিনি বললেনঃ তোমাদের একজন তার ভাইকে উটের ন্যায় দাঁত দিয়ে কামড়িয়েছে। আর তিনি তাকে দিয়াত দিতে বলেন নি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮.পরিচ্ছেদঃ আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এই হাদিসের রাবীদের বর্ণনাগত পার্থক্য
৪৭৬৫. মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আতা ইবনি আবু রাবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে, তিনি সাফ্ওয়ান ইবনি আবদুল্লাহ থেকে এবং তিনি তার দুই চাচা সালামা এবং ইয়ালা ইবনি উমাইয়া [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে বের হলাম। আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিল, সে এক মুসলমান ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে, সে তার হাতে কামড় দিল। ঐ ব্যক্তি তার মুখ হইতে হাত টেনে নিলে তার দাঁত পড়ে গেল। তখন নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে দিয়াতের জন্য আবেদন করলো। তিনি বললেনঃ তোমাদের এক ব্যক্তি বের হইয়া জানোয়ারের ন্যায় নিজের ভাইকে কামড়ায়, পরে সে দিয়াতের জন্য আগমন করে। সে দিয়াত পাবে না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দিয়াত বাতিল করে দিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৬৬. সুফ্ইয়ান ইবনি আমর আতা থেকে ইয়ালা [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির হাতে কামড় দিলে, তাতে তার দাঁত পড়ে যায়। পরে সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি দিয়াত বাতিল করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪৭৬৭. আমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও ইবনি জুরায়জ আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে, তিনি সাফওয়ান ইবনি ইয়ালা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এবং তিনি ইয়ালা [রাঃআঃ] হইতে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি এক ব্যক্তিকে চাকর রাখেন, সে অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করে তার হাতে কামড় দেয়। ফলে তার দাঁত পড়ে যায়। পরে সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নালিশ করলে, তিনি বললেনঃ ঐ ব্যক্তি তার হাত দেবে যাতে সে পশুর ন্যায় কামড়াতে পারে ?
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৬৮. ইবনি জুরায়জ আতা হইতে, তিনি সাফওয়ান ইবনি ইয়ালা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এবং তিনি তার পিতা [রাঃআঃ] হইতে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে তাবুক যুদ্ধে গমন করি। সেখানে আমি একজন লোককে চাকর হিসাবে রাখি। সেখানে আমার চাকর অন্য এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে, সে তাকে দাঁত দিয়ে কামড়ায়। এতে তার দাঁত পড়ে যায়। সে ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে সকল ঘটনা বর্ণনা করলে, তিনি তার দিয়াত বাতিল করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৬৯. ইবনি জুরায়জ আতা হইতে, তিনি সাফ্ওয়ান ইবনি ইয়ালা হইতে এবং তিনি ইয়ালা ইবনি উমাইয়া [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে তাবুক যুদ্ধে শরীক হই। আমার ধারণামতে তা ছিল সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক কাজ। আমার এক চাকর ছিল, সে একজন লোকের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে একে অন্যের আঙ্গুলে কামড় দেয়। সে ব্যক্তি আঙ্গুল টেনে বের করলে তার দাঁত পড়ে যায়। সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া নালিশ করলে তিনি তার দাঁতের দিয়াত বাতিল করে দেন এবং বলেনঃ সে কি তোমার মুখে হাত রেখে দেবে, আর তুমি তা চিবিয়ে ফেলবে ?
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৭০. কাতাদা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে, তিনি ইবনি ইয়ালা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এবং তিনি ইয়ালা [রাঃআঃ] হইতে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তদ্রুপ বলেন, যা পূর্বে বর্ণনা করা হইয়াছে। তবে এতে রয়েছেঃ নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার জন্য কোন দিয়াত নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৭১. বুদায়ল ইবনি মায়সারা আতা হইতে এবং তিনি সাফ্ওয়ান ইবনি ইয়ালা ইবনি মুনইয়া [রাঃআঃ] থেকে হইতে বর্ণিতঃ
ইয়ালা ইবনি মুনইয়ার চাকর এক ব্যক্তির হাতে দাঁত দ্বারা কামড় দিলে, ঐ ব্যক্তি তার মুখ থেকে নিজের হাত টেনে নিল। এই ঘটনা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করা হলো। কেননা, যে কামড় দিয়েছিল তার দাঁত পড়ে যায়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার দিয়াত বাতিল করে দেন এবং বলেনঃ সে কি তার হাত তোমার মুখে রেখে দিবে, আর তুমি তা পশুর মত চিবাতে থাকিবে ?
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৪৭৭২. সাফওয়ান ইবনি ইয়ালা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সেখানে একজন লোককে চাকর হিসাবে রাখেন। সে এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলে ঐ ব্যক্তি তার হাতে কামড় দেয়। সে ব্যথা পেলে হাতে টান দিল। এভাবে সে তার দাঁত ফেলে দিল। এ ব্যাপারটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেনঃ তোমাদের একজন নিজের ভাইকে জন্তুর মত দংশন করিবে ? এরপর তিনি তার দাঁতের দিয়াত বাতিল করে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯.পরিচ্ছেদঃ খোঁচা দেওয়ার কিসাস
৪৭৭৩. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছু বন্টন করছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি সামনের দিক হইতে এসে তাহাঁর উপর ঝুঁকে পড়লে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে তাহাঁর হাতের কাঠি দ্বারা খোঁচা দেন। এতে ঐ ব্যক্তি বের হইয়া যায়। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এসো, প্রতিশোধ নাও। সে ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৪৭৭৪. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছু বন্টন করছিলেন; তখন এক ব্যক্তি সামনের দিক থেকে তাহাঁর উপর ঝুঁকে পড়ে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর হস্তস্থিত কাঠি দ্বারা তাকে খোঁচা দিলে সে ব্যক্তি চিৎকার দিয়ে ওঠে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ এসো, প্রতিশোধ গ্রহণ কর। সে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২০.পরিচ্ছেদঃ চড়ের কিসাস
৪৭৭৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি হযরত আব্বাস [রাঃআঃ]-এর কোন পূর্বপুরুষকে গালি দিলে তিনি তাকে চড় মারেন। তখন তার গোত্রের লোকজন এসে বলিতে লাগলোঃ সেও তাঁকে চড় মারবে, যেমন তিনি তাকে চড় মেরেছেন। এক পর্যায়ে তারা অস্ত্র সজ্জিত হল। এ খবর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পৌঁছলে তিনি মিম্বরে আরোহণ করে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা কি জান বিশ্ববাসীর মধ্যে কে আল্লাহ্ তাআলার নিকট অধিক সম্মানিত? তারা বললোঃ আপনি। এরপর বললেনঃ আমি আব্বাসের হইতে এবং আব্বাসও আমা হইতে। তোমরা আমাদের মৃতদেরকে মন্দ বলো না। এতে আমাদের জীবিতদের দুঃখ হয়। তখন একদল লোক আসলো। তারা একথা শুনে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা আপনার অসন্তুষ্টি হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২১.পরিচ্ছেদঃ mটানা-হেঁচড়া করার কিসাস
৪৭৭৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে মসজিদে উপবিষ্ট থাকতাম। তিনি যখন দাঁড়াতেন আমরাও দাঁড়াতাম। একদিন তিনি দাঁড়ালে আমরাও তাহাঁর সাথে দাঁড়ালাম। যখন তিনি মসজিদের মধ্যস্থলে পৌঁছলেন, তখন এক ব্যক্তি এসে তাহাঁর চাদর ধরে তাহাঁর পিছন দিকে টানলো। তাহাঁর চাদরখানা ছিল মোটা, এতে তাহাঁর ঘাড় লাল হইয়া গেল। সেই ব্যক্তি বললোঃ হে মুহাম্মদ! আমার এই উষ্ট্রদ্বয়কে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা বোঝাই করে দিন। কেননা, আপনি তো আপনার মাল হইতে বা আপনার পিতার মাল হইতে দিচ্ছেন না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ না, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি তোমাকে কখনও দেব না, যতক্ষণ না তুমি আমার ঘাড় টানা-হেঁচড়া করার বদলা নিতে না নাও। তখন ঐ গ্রাম্য লোকটি বললোঃ আল্লাহর শপথ! আমি কখনও তোমাকে প্রতিশোধ গ্রহণ করিতে দেব না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ তিনবার বলিলেন। আর ঐ গ্রাম্য লোকটিও বলিতে থাকলো যে, আল্লাহর কসম! আমি এর বদলা নিতে দেব না। আমরা যখন লোকটির কথা শুনলাম, দৌঁড়ে তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ যে আমার কথা শুনেছে, তাকে আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, কেউ যেন ততক্ষণ নিজ স্থান হইতে না নড়ে, যতক্ষণ না আমি আদেশ দেই। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকদের একজনকে বলেনঃ হে অমুক! তুমি তার এক উটকে যব এবং অন্য উটকে খেজুর দ্বারা বোঝাই করে দাও। পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা চলে যাও।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২২.পরিচ্ছেদঃ বাদশাহদের নিকট হইতে কিসাস
৪৭৭৭. আবু ফিরাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি দেখেছি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের পক্ষ হইতেও প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ দিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২৩.পরিচ্ছেদঃ বাদশাহর কাজে বাধা প্রদান
৪৭৭৮. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] আবু জাহ্ম ইবনি হুযায়ফাকে সাদ্কা আদায় করার জন্য পাঠান। এক ব্যক্তি সাদ্কা দেয়ার ব্যাপারে তাহাঁর সাথে ঝগড়া করলে, আবু জাহম তাকে প্রহার করেন। তখন সে তাহাঁর লোক নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা প্রতিশোধ চাই। তিনি বললেনঃ তোমরা তার বদলে এই-এই পাবে। তারা তাতে সন্তুষ্ট হলো না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [পরিমাণ আরও বাড়িয়ে] বললেনঃ তোমরা এই-এই পাবে। তারা তাতে রাযী হলো। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি লোকের সামনে খুতবা দানের সময় তোমাদের রাযী হওয়ার কথা উল্লেখ করবো। তারা বললোঃ ঠিক আছে। পরে নাবী [সাঃআঃ] খুতবা দিতে গিয়ে বললেনঃ এই সকল লোক আমার নিকট কিসাস নিতে এসেছিল। আমি তাহাদের সামনে এত, এত মাল পেশ করায়, তারা রাযী হইয়া গেছে। তখন তারা বললোঃ না, আমরা রাযী হইনি। তখন মুহাজির লোকেরা তাহাদের প্রহার করিতে উদ্যত হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে থামতে বলিলেন। তারা থেমে গেলেন। এরপর তিনি তাহাদেরকে ডেকে বলেনঃ তোমরা কি রাযী হও নি? তখন তারা বললোঃ হ্যাঁ, আমরা রাযী হলাম। তিনি বললেনঃ আমি লোকের মধ্যে খুতবা দেয়ার সময় তাহাদেরকে কি তোমাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দেব? তারা বললোঃ হ্যাঁ। এরপর তিনি ভাষণ দানকালে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা রাযী হলে তো? তারা বললোঃ হ্যাঁ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪.পরিচ্ছেদঃ ধারালো অস্ত্র ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা কিসাস নেয়া
৪৭৭৯. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ইয়াহূদী এক বালিকাকে রূপার অলংকার পরিহিত অবস্থায় দেখে প্রস্তরাঘাতে তাকে হত্যা করে। পরে লোকেরা ঐ বালিকাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে আসে, আর তখনও তার প্রাণ অবশিষ্ট ছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমাকে কি অমুক ব্যক্তি হত্যা করেছে? সে মাথার ইঙ্গিতে জানায়, না। পরে তিনি ঐ ইয়াহূদীর নাম নিয়ে জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমাকে কি ঐ ব্যক্তি মেরেছে? তখন সে মাথায় ইঙ্গিতে বলেঃ হ্যাঁ। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ ইয়াহূদীকে ডেকে পাঠান, এবং তার মাথাকে দুটি পাথরের মধ্যে রেখে প্রস্তর আঘাতে হত্যা করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৮০. কায়স [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাসআম গোত্রের দিকে একটি ছোট সেনাদল পাঠালেন। তারা সিজদার মাধ্যমে আত্মরক্ষা করিতে চাইল, কিন্তু তবু তাহাদের হত্যা করা হল। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাদের সম্পর্কে অর্ধ দিয়াতের ফয়সালা দিলেন এবং বললেনঃ যে মুসলিম মুশরিকদের সাথে থাকে, ঐ সকল মুসলমানের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ দেখ, মুসলমান মুশরিকদের সাথে বসবাস করিতে পারে না। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সাবধান! উভয় সম্প্রদায়ের রান্নার আগুন যেন পাশাপাশি দেখা না যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৫.পরিচ্ছেদঃ তার ভাইয়ের পক্ষ হইতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার দেয় আদায় বিধেয় [২ঃ১৭৮]-এর ব্যাখ্যা
৪৭৮১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে কিসাসের বিধান ছিল, কিন্তু দিয়াতের বিধান ছিল না, তখন আল্লাহ্ তাআলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ [আরবি] অর্থঃ “নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর কিসাস ফরয করা হলো আযাদের বদলে আযাদ এবং দাসের পরিবর্তে দাস, নারীর পরিবর্তে নারী। আর যাকে তার ভাইয়ের পক্ষ হইতে কিছুটা ক্ষমা করা হয়, সে যেন উত্তমরূপে তার দেয় আদায় করে।” ক্ষমা করার অর্থ এই যে, নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত গ্রহণ করিবে, আর ক্ষমাকারীগণ আইনমত চলবে। আর হত্যাকারী উত্তমরূপে দিয়াত আদায় করিবে। “এটা তোমাদের রবের পক্ষ হইতে ভার লাঘব এবং রহমত।” কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর কেবল কিসাসই ছিল; দিয়াতের বিধান ছিল না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৮২. মুজাহিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ “তোমাদের নিহত ব্যক্তিদের পরিবর্তে কিসাস ফরয করা হলো, আযাদের পরিবর্তে আযাদ এবং দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী” [২ঃ১৭৮] বনী ইসরাঈলের মধ্যে কিসাসের বিধান ছিল, দিয়াত বিধেয় ছিল না, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের উপর দিয়াতের বিধান দিয়েছেন। একে আল্লাহ্ তাআলা এ উম্মতের উপর সহজতর করে দিয়েছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২৬.পরিচ্ছেদঃ কিসাস ক্ষমা করার আদেশ
৪৭৮৩. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট কিসাসের মোকদ্দমা পেশ করা হলে, তিনি তাতে ক্ষমা প্রদর্শনের আদেশ করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭৮৪. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট কিসাসের যত মোকদ্দমা পেশ হত তার প্রত্যেকটাতেই তিনি ক্ষমা করার আদেশ দিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply