যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন বিষয়ক হাদিস সুনান নাসাই

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন বিষয়ক হাদিস সুনান নাসাই

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন বিষয়ক হাদিস সুনান নাসাই >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ৩৯, যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন, হাদীস (৪১৩৩ – ৪১৪৮)

পরিছেদঃ যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন

৪১৩৩. ইয়াযীদ ইবনি হুরমুয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

খারিজী নেতা নাজ্‌দা হারুরী যখন আবদুল্লাহ্‌ ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ]-এর আমলের গণ্ডগোলের সময়ে মাঠে নামে, তখন সে আবদুল্লাহ্‌ ইবনি আব্বাসের নিকট বলে পাঠায় যে, নিকটাত্মীয়দের অংশ কে কে পেতে পারে বলে আপনি মনে করেন ? তখন ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বললেনঃ তা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিকটাত্মীয় তথা আমরাই পাব। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাদের মধ্যেই তা বণ্টন করিয়াছেন। উমার [রাঃআঃ] আমাদেরকে কিছু দিতে চাইলে আমরা দেখলাম যে, তা আমাদের প্রাপ্য অপেক্ষা কম। তখন আমরা তা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করি। তিনি তা দ্বারা তাহাদের বিবাহকারীকে সাহায্য করিতে এবং কর্য আদায় করিতে এবং তাহাদের মধ্যে যে অভাবগ্রস্ত তাহাদের দিতে চেয়েছিলেন, আর এর অধিক দিতে অস্বীকার করেছিলেন।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  সহীহ হাদীস

৪১৩৪. ইয়াযীদ ইবনি হুরমুয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাজদা হযরত ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] কে লিখেন যে, নিকটাত্মীয়দের অংশ কারা পাবে ? ইয়াযীদ ইবনি হুরমুয [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] এর পক্ষ হইতে নাজদাকে জবাবে লিখলামঃ তুমি আমার কাছে নিকটাত্মীয়দের অংশ সম্বন্ধে জানিতে চেয়েছ, তা আহ্‌লে বায়তের জন্য। উমার [রাঃআঃ] আমাদেরকে বলেছিলেন যে, তিনি এর দ্বারা আমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাহাদের বিবাহের ব্যবস্থা করে দেবেন, আমাদের মাঝে যারা গরীব, তাহাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদের মাঝে যারা ঋণগ্রস্ত তাহাদের ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করবেন। আমরা তা অস্বীকার করি এবং দাবি জানাই যে, তা আমাদের কাছেই অর্পণ করিতে হইবে। কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকার করিলেন। শেষে আমরা তা তাহাঁর উপর ছেড়ে দেই।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  সহীহ লিগাইরিহি

৪১৩৫. আওযাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ উমার ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উমার ইবনি ওয়ালীদকে লিখলেনঃ তোমার পিতার খুমুসের অংশ সম্পূর্ণই তোমার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তোমার পিতার অংশ মুসলমানদের এক ব্যক্তির অংশের সমান ছিল। আর তাতে আল্লাহর এবং রাসূলের, নিকটাত্মীয়দের, ইয়াতীমদের, মিসকীনদের এবং মুসাফিরদের হক ছিল, চিন্তা করে দেখ কিয়ামতের দিন তোমার পিতার কাছে দাবিদার কত বেশি হইবে? আর যাহার বিরুদ্ধে এত অধিক দাবিদার হইবে, তার নিস্তার কিভাবে হইবে? আর তুমি যে বাদ্যযন্ত্র ও সেতার বের করেছ, তা তো ইসলামে বিদআত। আমি স্থির করেছি তোমার নিকট এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাব, যে তোমার মাথার লম্বা বাবড়ি সমান করে কেটে দেবে।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  সহীহ মাকতু

৪১৩৬. জুবায়র ইবনি মুতইম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি এবং উসমান [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিকট গিয়ে হুনায়নের মালের ব্যাপারে বলিলেন, যা তিনি বনূ হাশিম এবং বনূ মুত্তালিবের মধ্যে বণ্টন করেছিলেন। তারা দুজন বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌। আপনি আমাদের ভাই বনূ আবদুল মুত্তালিবকে দান করিলেন এবং আমাদেরকে কিছুই দিলেন না। অথচ আমরাও আপনার ঐরূপ আত্মীয়? তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে বললেনঃ আমি তো বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবকে একই মনে করি। জুবায়ের ইবনি মুতইম [রাঃআঃ] বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বনূ আবদ শামস ও বনূ নওফলকে তা থেকে কিছুই দিলেন না, যেমন তিনি বনূ হাশিম এবং আবদুল মুত্তালিবকে দিলেন।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  সহীহ হাদীস

৪১৩৭. জুবায়র ইবনি মুতইম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যখন আত্মীয়দের অংশ বনূ হাশিম এবং বনূ মুত্তালিবের মধ্যে বণ্টন করিলেন তখন আমি ও উসমান ইবনি আফ্‌ফান তাহাঁর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! ওই যে বনূ হাশিম, আল্লাহ তাআলা তাহাদের সাথে আপনার যে সম্পর্ক রেখেছেন, তজ্জনিত তাহাদের শ্রেষ্ঠত্বকে আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু আপনি আমাদের ভাই বনূ আবদুল মুত্তালিবকে দান করিলেন এবং আমাদেরকে কিছুই দিলেন না। অথচ আমরা ও তারা সমপর্যায়ের আত্মীয়? তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তারা জাহেলিয়াতে এবং ইসলামে আমাকে ছেড়ে যায়নি।১ আমি তো বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবকে একই মনে করি। এই বলে তিনি নিজ আঙ্গুলসমূহ পরস্পর গেঁথে দিলেন।

অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] মক্কার জীবনে বনূ আবদুল মুত্তালিব ইসলাম গ্রহণ না করলেও কখনও তারা তাহাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেনি; বরং বনূ হাশিমের মত তারাও তাহাঁর পাশে থেকেছে। এমনকি আবু তালিব উপত্যকার অন্তরীণ জীবনেও তারা কুরায়শের বিরুদ্ধে এসে স্বেচ্ছায় তাহাঁর সঙ্গে অন্তরীণ জীবন যাপন করেছে। পক্ষান্তরে বনূ আব্দ শাম্‌স ও বনূ নাওফালের আচরণ ছিল এর বিপরীত, যদিও তারাও বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবের মত আব্দ মানাফের বংশধর এবং মহানাবী [সাঃআঃ] এর সমপর্যায়ের আত্মীয়। মহানাবী [সাঃআঃ] তাহাদের এই অবস্থানগত পার্থক্যের দিকেই ইশারা করিয়াছেন।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  হাসান সহীহ

৪১৩৮. উবাদা ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হুনায়নের দিন একটি উটের পার্শ্বদেশ থেকে কিছু পশম নিলেন। তারপর বলিলেন, হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে গনীমত দিয়েছেন, তা থেকে খুমুস ব্যতীত এটুকু নেয়াও আমার জন্য হালাল নয়, আর খুমুসও তোমাদের মধ্যেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ সম্যক অবগত।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  হাসান সহীহ

৪১৩৯. আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তাহাঁর পিতা হইতে তিনি তাহাঁর দাদা হইতে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একটি উটের নিকট গিয়ে তার কুঁজ হইতে একটি পশম তাহাঁর দুই আঙ্গুলের মধ্যে নিয়ে বললেনঃ যুদ্ধলব্ধ মালের পঞ্চমাংশ ব্যতীত আমার জন্য এতটুকুও নেই। আর আমার পঞ্চমাংশও তোমাদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  হাসান সহীহ

৪১৪০. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বনু নযীরের সম্পদ তাহাঁর রাসূল-কে ফায়১ হিসেবে দান করিয়াছেন। মুসলমানগণ তা পেতে ঘোড়াও দৌড়ায়নি এবং উটও না। তিনি তা থেকে এক বছরের খরচ নিজের জন্য নিতেন এবং অবশিষ্ট মাল যুদ্ধের জন্য ঘোড়া, হাতিয়ার এবং জিহাদের উপকরণ ক্রয়ের জন্য ব্যয় করিতেন।

অমুসলিমদের যে সম্পদ বিনাযুদ্ধে মুসলিমদের হাতে আসে তাকে ফায় বলে।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  সহীহ হাদীস

৪১৪১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ফাতিমা [রাঃআঃ] আবু বকর [রাঃআঃ] এর নিকট তাহাঁর মীরাস চাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠান, যা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সাদকা এবং খায়বরের খুমুস থেকে রেখে যান। আবু বকর [রাঃআঃ] বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ আমাদের ওয়ারিস হয় না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা সাদকা।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  সহীহ হাদীস

৪১৪২. আতা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ জেনে রাখ যে, তোমরা যুদ্ধে যা লাভ কর, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর, আল্লাহর রাসূলের, আর তাহাঁর আত্মীয়দের। এখানে আল্লাহর পঞ্চমাংশ এবং রাসূলের পঞ্চমাংশ একই। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তা থেকে লোকদের সওয়ারীর ব্যবস্থা করিতেন, লোকদের দান করিতেন। যেখানে ইচ্ছা খরচ করিতেন এবং যা ইচ্ছা ব্যয় করিতেন।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  অন্যান্য

৪১৪৩. কায়স ইবনি মুসলিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি হাসান ইবনি মুহাম্মদকে {আরবি} এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেনঃ এটি {অর্থাৎ বণ্টনে আল্লাহর উল্লেখ এই হিসেবে যে এটি} দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর কালামের চাবি {অর্থাৎ সূচনা} দুনিয়া ও আখিরাত তো আল্লাহরই। তবে রাসূলের এবং রাসূলের নিকটাত্মীয়ের অংশের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর ইন্তিকালের পরে মতভেদ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বললেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর অংশ তাহাঁর পরে খলীফার প্রাপ্য। কেউ কেউ বললেনঃ আত্মীয়দের অংশ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর আত্মীয়দের প্রাপ্য। কেউ বলিলেন, আত্মীয়দের অংশ খলীফার আত্মীয়দের জন্য। অবশেষে সকলে এ কথায় একমত হলেন যে, এই অংশদ্বয় ঘোড়া এবং যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করার জন্য ব্যয় হওয়া উচিত। আবু বকর এবং উমার [রাঃআঃ]-এর সময় এই দুই অংশ এভাবেই ব্যয় হতো।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  অন্যান্য

৪১৪৪. মূসা ইবনি আবু আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি জায্‌যাহারকেঃ {আরবি} এ আয়াতে নাবী [সাঃআঃ] এর জন্য খুমুসে কত অংশ ছিল, জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ খুমুসে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর অংশ ছিল পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  অন্যান্য

৪১৪৫. মুতাররিফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, শাবী [রাঃআঃ] এর নিকট রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর অংশ এবং তাহাঁর সফী১ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর অংশ তো ছিল একজন মুসলমান-এর অংশের সমান। আর সফীর অংশ হিসেবে তাহাঁর যা ইচ্ছা তা নেওয়ার ইখতিয়ার ছিল।

মালে গনিমত বন্টনের আগে নিজের জন্য ঈমাম যা বেছে নেন, তাকে সফী বলে।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  অন্যান্য

৪১৪৬. ইয়াযীদ ইব্ন শিখ্খীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মিরবাদ নামক স্থানে মুতাররিফের সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি চামড়ার এক টুকরো নিয়ে উপস্থিত হলো এবং বললেনঃ এটা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে লিখে দিয়েছেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ পড়তে পারে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, আমি পড়তে পারবো। তাতে লেখা ছিলোঃ মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ-এর পক্ষ হইতে বনী যুহায়র ইব্ন উকায়শ এর প্রতি, তাহাদের জানা উচিত যদি তারা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ্‌ নেই, আর মুহাম্মদ [সাঃআঃ] আল্লাহর রাসুল এবং তারা মুশরিক হইতে পৃথক হইয়া যায়, আর তারা একথা স্বীকার করে যে, গনীমতের পঞ্চমাংশ নাবীর অংশ এবং সফীও তাহাঁর, তবে তারা আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলের প্রদত্ত নিরাপত্তায় থাকিবে।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  সহীহ হাদীস

৪১৪৭. মুজাহিদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কুরআন মাজীদে যে বলা হইয়াছে। খুমুস বা পঞ্চমাংশ আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলের জন্য, তা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর নিকটাত্মীয়দের জন্য, কারন তাঁদের জন্য সদকা গ্রহন করা বৈধ ছিলো না। রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ঐ পঞ্চমাংশের পঞ্চমাংশ গ্রহন করিতেন আর তাহাঁর আত্মীয়দের জন্য ছিলো পঞ্চমাংশের পঞ্চমাংশ। আর ইয়াতিমদের জন্যও ছিলো অনুরূপ। আর মুসাফিরদের জন্য অনুরূপ এবং নিকট আত্মীয়দের জন্য অনুরূপ অংশ ছিল।

আবু আবদুর রহমান [ঈমাম নাসাঈ] বলেন, আল্লাহ তায়ালা যে নিজের নাম নিয়ে শুরু করে [আরবি] বলেছেনঃ এটা বাক্যের সুচনাবিশেষ। কারন সমুদয় বস্তু আল্লাহরই। এবং ফায় ও খুমুস-এর ক্ষেত্রে তিনি প্রথমে নিজের নাম নিয়ে শুরু করিয়াছেন। এর কারন এই যে, এ দুটো উত্তম অর্জন। আর সাদকার ক্ষেত্রে নিজের নাম নিয়ে আরম্ভ করেন নি। বরং বলেছেনঃ [আরবি] অর্থাৎ, সাদকা ফকিরদের জন্য—-। কারন সাদকা মানুষের ময়লা-স্বরূপ। কেউ কেউ বলেছেনঃ গনিমতের মালের কিছু অংশ নিয়ে কাবার মধ্যে রেখে দেওয়া হইবে আর সেটাই আল্লাহর অংশ। রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর অংশ ঈমাম বা শাসক পাবেন। তিনি তা দিয়ে ঘোড়া, অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করবেন, যাকে দেওয়া ভাল মনে করবেন, দেবেন, যাকে দিলে মুসলিম সাধারনের উপকার ও কল্যাণ হয় তাকে এবং মুহাদ্দিস, ফুকাহা ও কুরআনচর্চাকারীদের দেবেন। রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর আত্মীয়দের অংশ বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব পাবেন; চাই তাঁরা ধনী হন বা দরিদ্র। কেউ কেউ বলেনঃ তাহাদের মধ্যে যারা দরিদ্র কেবল তারাই পাবেন, ধনীরা পাবেন না। যেমন ইয়াতীম ও মুসাফিরদের মধ্যে যারা দরিদ্র, তারাই পাবে।

এ মতই আমার কাছে অধিক সঠিক বলে মনে হয়। কিন্তু পাওয়ার ক্ষেত্রে ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই সমান। কেননা আল্লাহ তায়ালা এই সম্পদ তাহাদের দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাদের মধ্যে বন্টন করিয়াছেন। আর হাদীসে উল্লেখ নেই যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাউকে বেশি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাউকে কম।

এই মাসআলায় ঈমামগনের কোন মতভেদ আছে বলে আমাদের জানা নেই যে, যদি কেউ কারো সন্তানদের জন্য নিজের এক-তৃতীয়াংশ মাল প্রদানের ওসীয়ত করে, তাহলে সকল সন্তানই সমান হারে পাবে; চাই তারা ছেলে হোক বা মেয়ে- যদি তাহাদের পরিসংখ্যান জানা থাকে। এমনিভাবে যদি কোন জিনিস কারো সন্তানদের দেওয়ার জন্য বলা হয়, তাহলে ওই জিনিস সকল সন্তানই সমান হারে পাবে। অবশ্য যে ব্যক্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়, সে যদি পরিস্কার বলে দেয় যে, অমুক এতটুকু পাবে, আর অমুক এতোটুকু, তাহলে তার কথানুযায়ী দেয়ার ব্যবস্থা করা হইবে। আর এক অংশ মুসলমান ইয়াতীমগন পাবে। এক অংশ মুসলমান মিসকীনগন এবং এক অংশ মুসাফিরগন পাবে। আর কাউকে মিসকিনের অংশ ও মুসাফিরের অংশ-এই দুই অংশ একত্রে দেয়া হইবে না; বরং তাকে বলা হইবে তুমি হয় মিসকিনের অংশ গ্রহন কর অথবা মুসাফিরের অংশ গ্রহন কর। গনীমতের মালের অবশিষ্ট চারভাগ ঈমাম ওই মুসলমানদের দেবেন, যারা বালেগ এবং যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল।

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন হাদিস এর তাহকিকঃ  দুর্বল মুরসাল

৪১৪৮. মালিক ইব্ন আউস ইব্ন হাদাসান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আব্বাস এবং আলী [রাঃআঃ] বিবাদমান অবস্থায় উমার [রাঃআঃ]-এর কাছে আসেন। এরপর আব্বাস [রাঃআঃ] বলেনঃ আমার এবং এর মধ্যে ফয়সালা করে দিন। লোকেরাও বললেনঃ এদের মধ্যে বন্টন করে দিন। তখন উমার [রাঃআঃ] বললেনঃ আমি তাহাদের মধ্যে বন্টন করবো না। তাঁরা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ আমাদের ওয়ারিস হয় না। আমরা যা রেখে যাই, তা সাদকা। রাবী বলেনঃ এরপর যুহরী বলেনঃ যে, উমার [রাঃআঃ] বলিলেন, রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সে সম্পদের মুতাওয়াল্লী ছিলেন। তিনি তা হইতে তার পরিবারের খরচ পরিমাণমতো গ্রহন করিতেন এবং অবশিষ্ট যা থাকতো তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করিতেন। তাহাঁর পরে এই মালের মুতাওয়াল্লী ছিলেন আবু বকর [রাঃআঃ]। আবু বকরের পর আমি এর মুতাওয়াল্লী হইয়াছি। আমিও ঐরূপই করেছি, যেরূপ তিনি করিতেন। এখন এঁরা দুজন আমার নিকট এসে এই মাল তাঁদেরকে দেয়ার জন্য বলিলেন, যেন তাঁরা মুতাওয়াল্লী হইতে পারেন, যেরূপ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এবং আবু বকর [রাঃআঃ] মুতাওয়াল্লী ছিলেন এবং আমি এর মুতাওয়াল্লী হইয়াছি। সুতরাং তখন আমি ঐ মাল তাহাদেরকে দিয়ে দিলাম এবং তাহাদের হইতে অঙ্গীকার গ্রহন করলাম। পরে তারা উভয়ে আবার আসলেন। একজন বললেনঃ আমার ভাতিজার থেকে আমার অংশ ভাগ করে দিন। অপরজন বলিলেন, আমার স্ত্রীর পক্ষ হইতে আমার প্রাপ্য অংশ আমাকে ভাগ করে দিন। তিনি বললেনঃ যদি তারা সম্মত হন তাহলে আমি এই মাল তাহাদেরকে দিয়ে দিবো এই শর্তে যে, তারা মালের ব্যাপারে ঐরূপ কাজ করবেন, যেরূপ রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] করিতেন এবং তারপরে আবু বকর [রাঃআঃ] করিতেন এবং তাহাঁর পরে আমি করেছি। যদি তাঁরা দুজন এতে সম্মত না হন তাহলে তাঁরা যেনো তাহাদের ঘরে বসে থাকেন, আর মাল আমি আমার তত্ত্বাবধানে রাখবো। এরপর উমার [রাঃআঃ] বললেনঃ মালের গনিমত সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ জেনে রাখ, যুদ্ধে যা তোমরা লাভ কর, তাহাঁর এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ তায়ালার, রাসুলের এবং নিকটাত্মীয়দের, ইয়াতীমদের, মিসকিনদের ও মুসাফিরদের। আল্লাহ আরো বলেনঃ আর সাদকা ফকীর, মিসকীন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের এবং যাদের হৃদয় আকৃষ্ট করা হয় তাহাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্ত ও আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। যে মাল আল্লাহ তায়ালা তাহাঁর রাসুলকে দান করিয়াছেন। তোমরা তাতে নিজেদের ঘোড়া বা উট হাঁকাও নি। যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ এই মাল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জন্য নির্দিষ্ট, আর তা হলো, কয়েকটি আরব গ্রাম, তথা ফিদক এবং অন্যান্য। এই মালের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ জনপদবাসীদের থেকে যে মাল আল্লাহ তায়ালা তাহাঁর রাসুলকে দান করিলেন, তা আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীম, মিসকিন, মুসাফিরদের। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ এ সম্পদ ঐ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি থেকে উৎখাত হইয়াছে। মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ এই মালে ঐ সকল লোকের হোক রয়েছে। যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এই নগরীতে এসে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে। আর ঐ সকল লোকেরও হক রয়েছে, যারা এদের পরে এসেছে। এই আয়াতে প্রত্যেক মুসলমান শামিল রয়েছে, কোন মুসলমানই অবশিষ্ট নেই যাহার এ মালে হক নেই। তবে তোমাদের মাঝে কিছু দাস-দাসী রয়েছে, যাদের এ মালে হক নেই। এরপর উমার [রাঃআঃ] বলেনঃ যদি আমি জীবিত থাকি, তবে ইন্শাআল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানের কাছে তার হক পৌঁছে যাবে।

Comments

One response to “যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন বিষয়ক হাদিস সুনান নাসাই”

Leave a Reply