স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার ।এক স্ত্রী অপেক্ষা অপর স্ত্রীকে বেশী ভালবাসা >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ৩৭, স্ত্রীর সাথে ব্যবহার, হাদীস (৩৯৩৯ – ৩৯৬৫)
১.পরিছেদঃ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা
২.পরিছেদঃ একাধিক স্ত্রীর মধ্যে কারো প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়া
৩.পরিছেদঃ এক স্ত্রী অপেক্ষা অপর স্ত্রীকে বেশী ভালবাসা
৪.পরিছেদঃ আত্মাভিমান
১.পরিছেদঃ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা
৩৯৩৯.আনাস [রাঃআঃ] -এর সূত্রে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ পার্থিব বস্তুর মধ্যে স্ত্রী ও সুগন্ধী আমার নিকট পছন্দনীয় করা হইয়াছে এবং নামাযে রাখা হইয়াছে আমার নয়নের প্রশান্তি।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩৯৪০. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ স্ত্রী ও সুগন্ধী আমার জন্য পছন্দনীয় করা হইয়াছে এবং নামাযে নিহিত রাখা হইয়াছে আমার নয়ন প্রীতি।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৪১. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে স্ত্রীদের পরে ঘোড়া অপেক্ষা বেশি প্রিয় আর কিছু ছিল না।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২.পরিছেদঃ একাধিক স্ত্রীর মধ্যে কারো প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়া
৩৯৪২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী থাকিবে এবং একজনের প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়বে, সে কিয়ামত দিবসে এই অবস্থায় উঠবে যে, তার শরীরের একাংশ একদিকে ঝুঁকে থাকিবে।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৪৩. হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সকল স্ত্রীদের মাঝে সমভাবে বন্টন করিতেন। এরপরে বলিতেনঃ হে আল্লাহ! এটা আমার কাজ যতটুকু আমি পারি, যা তুমি পার আমি পারি না, সে বিষয়ে আমাকে পাকড়াও করো না। হান্নান ইবনি যায়দ হাদীসটি মুরসাল হিসেবেও বর্ণনা করেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৩.পরিছেদঃ এক স্ত্রী অপেক্ষা অপর স্ত্রীকে বেশী ভালবাসা
৩৯৪৪. হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণ একদা হযরত ফাতেমা [রাঃআঃ] -কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট পাঠালেন। তিনি এসে অনুমতি চাইলেন, সে সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চাদর গায়ে আমার সাথে শোয়া ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাতিমা [রাঃআঃ] -কে অনুমতি দিলেন। তখন ফাতিমা [রাঃআঃ] বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনার স্ত্রীগণ আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। তারা আবু কুহাফার মেয়ের [হযরত আয়েশা] বিষয়ে তাহাদের সাথে ইনসাফ করার অনুরোধ করিয়াছেন। হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বললেনঃ আমি চুপ ছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাতিমা [রাঃআঃ] -কে বলিলেন, যাকে আমি ভালবাসি তাকে কি তুমি ভালবাস না? ফাতিমা [রাঃআঃ] বলিলেন, কেন ভালবাসব না? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে একে ভালবাস। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কথা শুনার পর হযরত ফাতিমা [রাঃআঃ] উঠে গেলেন এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীদের কাছে ফিরে গিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলেছিলেন তার বর্ণনা দিলেন। তাঁরা বলিলেন, তোমার দ্বারা আমাদের কোন কাজ হল না। তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে পুনরায় যাও এবং তাঁকে বল, আপনার স্ত্রীগণ আবু কুহাফার মেয়ে {আয়েশা[রাঃআঃ]} -এর বিষয়ে ইনসাফের অনুরোধ করছে। ফাতিমা [রাঃআঃ] বলিলেন, এই বিষয়ে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে আর কখনো কোন কথা বলব না। আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণ যয়নাব বিনত জাহাশকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে পাঠালেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনিই একমাত্র রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে মর্যাদার বিষয়ে আমার সমপর্যায়ের ছিলেন। আমি যয়নব [রাঃআঃ] অপেক্ষা বেশি দীনদার, আল্লাহর ভয়, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী, সত্যবাদী-দানশীলা যেই কাজে দান-সাদকার সওয়াব হয় ও নৈকট্য লাভ করা যায়, সেই কাজে অধিকতর সাধনাকারিণী আর কাউকে দেখিনি। শুধু এতটুকু কথা যে, তিনি হঠাৎ রেগে যেতেন। আবার তার রাগ পড়েও যেত খুব তাড়াতাড়ি। তিনি আসলেন এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে অনুমতি চাইলেন। এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হযরত ফাতিমা [রাঃআঃ] প্রবেশ করার সময় যেই রকম হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] -এর সাথে চাদর আবৃত অবস্থায় ছিলেন, সেই অবস্থায় ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে অনুমতি দিলেন। তিনি বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমাকে আপনার স্ত্রীগণ পাঠিয়েছেন। তারা আবু কুহাফার মেয়ের [আয়েশা -এর] ব্যাপারে তাহাদের ইনসাফ করার অনুরোধ করিয়াছেন। এই বলে তিনি আমার সাথে লেগেই গেলেন এবং ভাল-মন্দ বহু কিছু বলিলেন। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর দৃষ্টির দিকে তাকাচ্ছিলাম তিনি আমাকে উত্তর দেয়ার অনুমতি দিচ্ছেন কি না এটা বুঝার জন্য। যয়নব তার অবস্থার মধ্যেই আছেন। শেষে আমি বুঝতে পারলাম যে, আমার উত্তর দেয়াটা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অপছন্দ করবেন না। আমি যখন তার জওয়াব দেওয়া শুরু করলাম, তখন তাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। শেষ পর্যন্ত আমি তার উপর বিজয়ী হলাম। পরিশেষে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এতো আবু বকরেরই মেয়ে।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৪৫. হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি পূর্বের মত হাদীসটি বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেনঃ নাবী করীম [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণ যয়নবকে পাঠালেন, তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] থেকে অনুমতি নিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে অনুমতি দিলেন। তিনি প্রবেশ করিলেন এবং পূর্বে বর্ণিত হাদীসে যা বলা হইয়াছে সেভাবে বলিলেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৪৬. হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণ একত্রিত হলেন এবং ফাতিমা [রাঃআঃ] -কে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর কাছে এই বলে পাঠালেন যে, আপনার স্ত্রীগণ আবু কুহাফার মেয়ের বিষয়ে তাহাদের সাথে ইনসাফ করার অনুরোধ করিয়াছেন। এইরকম কিছু বলিলেন। আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, হযরত ফাতিমা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর নিকট প্রবেশ করিলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] -এর সাথে তাহাঁর চাদরের ভেতরে ছিলেন। তিনি বলিলেন, আপনার স্ত্রীগণ আমাকে পাঠিয়েছেন, তারা আবু কুহাফার মেয়ের বিষয়ে তাহাদের সাথে ইনসাফ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, তুমি কি আমাকে ভালবাস? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে তাকেও ভালবাস। আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, হযরত ফাতিমা [রাঃআঃ] তাহাদের কাছে ফিরে গেলেন এবং রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যা বলেছেন, তা তাহাদেরকে বলিলেন। তখন তারা বলিলেন, আপনি তো আমাদের জন্যে কিছুই করিলেন না। পুনরায় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] –এর কাছে যান। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম, তাহাঁর কাছে আর আমি এই বিষয়ে কখনো যাব না। ফাতিমা [রাঃআঃ] [চরিত্র ও চাল-চলনে দিক থেকে] বাস্তবিকই রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর মেয়ে ছিলেন। পুনরায় তাঁরা সবাই [স্ত্রীগণ] মিলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর কাছে যয়নব বিন্ত জাহাশকে পাঠালেন। হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণের মধ্যে যয়নব বিন্ত জাহাশই একমাত্র স্ত্রী [রসূলুল্লাহ সাঃআঃ -এর কাছে মর্যাদার দিক থেকে] যে আমার সমপর্যায়ের ছিল। তিনি বলিলেন, আপনার স্ত্রীগণ আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। তাঁরা আবু কুহাফার মেয়ের [আয়েশার] বিষয়ে তাহাদের সাথে ইনসাফ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, এরপরে যয়নব আমাকে কটু কথা বলিতে শুরু করে দিলেন। আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর দিকে লক্ষ্য করিতে লাগলাম এবং তিনি আমার উত্তর দেয়ার ব্যাপারে মৌন সম্মতি দিচ্ছেন কি না বুঝার জন্য তাহাঁর ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করিতে লাগলাম। হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, তিনি আমাকে কটু কথা বলেই যাচ্ছেন। এতে আমি ধারণা করলাম, আমার এসব কথার উত্তর দেওয়াটা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] অপছন্দ করিবে না। সুতরাং তার মুখোমুখি হলাম এবং তাকে থামিয়ে দিলাম। এরপর রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, এতো আবু বকরের মেয়ে। আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, আমি যয়নব থেকে বেশী দানশীল, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী এবং যে কাজে দান-সাদকার সওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, তাতে তার চেয়ে বেশী চেষ্টাকারী কাউকে দেখিনি। অবশ্য একটু দ্রুত ক্রোধপ্রবণা ছিলেন তবে তা খুবই দ্রুত নিঃশেষ হইয়া যেত।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৪৭. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ অপরাপর খাদ্যের উপর গোশত-রুটি মিশ্রিত স্যুপের যেই প্রাধান্য, অন্য নারীদের উপর আয়েশারও সেই প্রাধান্য।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৪৮. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ অপরাপর খাদ্যের উপর গোশত-রুটি মিশ্রিত স্যুপের যেই প্রাধান্য, অন্য নারীদের উপর আয়েশারও সেই প্রাধান্য।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৪৯. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আয়েশার ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিও না। কেননা আল্লাহর শপথ, আয়েশা ছাড়া তোমাদের মধ্যে আর কারো লেপে অবস্থান করা অবস্থায় ওহী নাযিল হয়নি।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৫০. উম্মে সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণ তাঁকে বলেন যে, তিনি যেন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -কে বলেন, মানুষ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে তাহাদের হাদিয়া পেশ করার জন্য আয়েশা [রাঃআঃ] –এর পালার [দিনের] অপেক্ষা করে থাকে। অতএব তিনি যেন তাকে বলেন, যে আমরাও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর কল্যাণ চাই যেরকম আয়েশা চায়। [অতএব হাদীয়া পেশ করার জন্য শুধু আয়েশার পালার দিনের অপেক্ষা করে লাভ কি?] উম্মে সালামা উক্ত বিষয় নিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে আলাপ করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে কোন উত্তর দিলেন না। পর্যায়ক্রমে যখন উম্মে সালামার পালার দিন আসল সেই দিনও উম্মে সালামা উপরোক্ত বিষয় নিয়ে আলাপ করিলেন। এতেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তাঁকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণ বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি উত্তর দিলেন? উম্মে সালাম বলিলেন, তিমি কোন উত্তর দেননি। তারা বলিলেন, আপনি বলিতে থাকুন, যাবত না তিনি আপনার কথার উত্তর দেন কিংবা দেখেন তিনি কী বলেন। যখন তার [উম্মে সালামার] পালা আসল, তিনি উপরোক্ত বিষয় নিয়ে পুনরায় আলাপ করিলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আয়েশার ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিও না। কেননা আল্লাহর শপথ! আয়েশা ছাড়া তোমাদের মধ্যে আর কারো লেপে অবস্থান করা অবস্থায় ওহী নাযিল হয়নি।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৫১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে লোকেরা হাদিয়া পেশ করার জন্যে হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] –এর পালার দিনটি খুঁজতেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৫২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে ছিলাম এমতাবস্থায় নাবী [সাঃআঃ] -এর উপর আল্লাহপাক ওহী নাযিল করিলেন। আমি উঠে গেলাম এবং তাহাঁর আমার মাঝখানে দরজা ভেজিয়ে দিলাম। যখন ওহী নাযিল শেষ হল ও তাহাঁর কষ্ট লাঘব হল, তখন তিনি আমাকে বললেনঃ হে আয়েশা! জিবরাঈল [আঃ] তোমাকে সালাম পেশ করিয়াছেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৩৯৫৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে [আয়েশাকে] বলেছেন, জিবরাঈল [আঃ] তোমাকে সালাম পেশ করিয়াছেন। উত্তরে হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, তাহাঁর উপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত, বরকত বর্ষিত হোক। আপনি দেখেন, যা আমরা দেখিনা।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৫৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আয়েশা ইনি হচ্ছেন জিবরাঈল, তিনি তোমাকে সালাম পেশ করছেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪.পরিছেদঃ আত্মাভিমান
৩৯৫৫. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুমিনদের মাতাহাদের কোন এক মাতার ঘরে ছিলেন। অপর এক মাতা খাদ্যভর্তি এক পেয়ালা পাঠালেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাহার কাছে অবস্থান করছিলেন, তিনি বাহকের হাতে আঘাত করিলেন। এতে পেয়ালা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি ভাঙ্গা টুকরা নিয়ে একটি আরেকটির সাথে জোড়া দিলেন এবং তার মধ্যে খানা জমা করিতে লাগলেন এবং বলিলেন [উপস্থিত সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলিলেন] ঃ তোমাদের মাতার আত্মাভিমানে লেগেছে [অন্য মাতা তার কাছে কিছু পাঠানোর কারণে]। তোমরা খাও। তাঁরা খেলেন এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা নিজে ধরে রাখলেন। এরপরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাহার কাছে ছিলেন তিনি একটি পেয়ালা আনলেন। অক্ষত পেয়ালাটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বাহককে দিয়ে দিলেন আর ভাঙ্গা পেয়ালাটি যিনি ভেঙেছেন তার ঘরে রাখলেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৫৬. হযরত উম্মে সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তিনি একবার থালায় করে কিছু খানা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবায় কিরামের কাছে পেশ করিলেন। ইত্যবসরে হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] চাদর জড়িয়ে আসলেন। তাহাঁর হাতে একটি পাথর ছিল। পাথরটি দিয়ে থালাটি ভেঙ্গে দিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থালার ভাঙ্গা টুকরো দুটি একত্র করিলেন এবং বলিলেন, তোমরা খাও। তোমাদের মাতার আত্মমর্যাদাবোধে লেগেছে। এ কথাটি দুবার বলিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] –এর থালা নিয়ে উম্মে সালামা [রাঃআঃ] –এর নিকট পাঠালেন। উম্মে সালামা [রাঃআঃ] -এর [ভাঙ্গা] থালাটি হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] -কে দিয়ে দিলেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৫৭. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি সফিয়্যার মত ভালো খানা তৈরি করিতে পারে এরকম কাউকে দেখি নি। তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে এক থালা খাবার হাদিয়া পাঠালেন। তখন আমি নিজেকে আর আয়ত্বে রাখতে পারিনি; এমনকি থালাটা ভেঙ্গে দিলাম। এরপর আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে তার কাফ্ফারার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলিলেন, থালার পরিবর্তে থালা, খানার পরিবর্তে খানা।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৩৯৫৮. উবায়দ্ ইবনি উমাইর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] থেকে শুনিয়াছি। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ যয়নব বিন্ত জাহাশ [রাঃআঃ] -এর কাছে অবস্থান করিতেন এবং তাহাঁর কাছে মধু পান করিতেন, আমি এবং হাফসা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের যাহার কাছেই আসবেন, সেই বলবেঃ আপনি মাগাফীর পান করিয়াছেন। [মাগাফীর এক প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত আঠাকে বলা হয়]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের একজনের কাছে প্রবেশ করলে যা বলার সিদ্ধান্ত ছিল তা বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি যয়নব বিন্ত জাহাশ –এর কাছে মধুই তো পান করলাম এবং বলিলেন, আর কোন দিন তা করব না। অর্থাৎ মধু পান করব না। এ কারণে নাযিল হলঃ [আরবি] “হে নাবী আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করিয়াছেন তা আপনি নিজের জন্য হারাম করিয়াছেন কেন?” [আরবি] “তোমরা উভয়ে যদি তওবা করো” এটা হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] এবং হাফসা [রাঃআঃ] –এর উদ্দেশ্যে নাযিল করেছেনঃ [আরবি] “যখন নাবী তাহাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপন করিলেন” এটা তাহাঁর উক্তি আমি মধু পান করেছি এবং আর করব না। -এর পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হইয়াছে।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৫৯. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর কাছে একটি বাঁদি ছিল যাহার সাথে রসূলুল্লাহ [সাঃ] সহবাস করিতেন। এতে আয়েশা [রাঃআঃ] এবং হাফসা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর সাথে লেগে থাকলেন। পরিশেষে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেই বাঁদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক নাযিল করেনঃ [আরবি] “হে নাবী আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করিয়াছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন [সূরা তাহরীমঃ ০১] নাযিল করেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৬০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে খুঁজতে গিয়ে আমার হাত তাহাঁর চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার কাছে শয়তান এসেছে। [অর্থাৎ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অন্য স্ত্রীর কাছে চলে গেছেন এই ধারণা সৃষ্টি করে দিচ্ছে]। আমি বললাম, আপনার জন্য কি শয়তান নেই? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উত্তর দিলেন, থাকিবে না কেন? আল্লাহর শপথ, তবে আল্লাহ পাক তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করিয়াছেন; ফলে সে আমার অনুগত হইয়া গেছে।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৬১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বিছানায় পেলাম না। মনে করলাম, তিনি তাহাঁর অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গমন করিয়াছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে পেলাম যে, তিনি রুকু ও সিজদায় রত আছেন এবং বলছেনঃ হে আল্লাহ! তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। এতে আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আপনি এক অবস্থায় আছেন আর আমি অন্য এক অবস্থায় আছি।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৬২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে [বিছানায়] পেলাম না। মনে করলাম, তিনি তাহাঁর অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গমন করিয়াছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে পেলাম যে, তিনি রুকু ও সিজদায় রত আছেন এবং বলছেনঃ হে আল্লাহ! তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। এতে আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্যে উৎসর্গ হোক। আপনি এক অবস্থায় আছেন আর আমি অন্য এক অবস্থায় আছি।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৬৩.মুহাম্মদ ইব্ন কায়েস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] থেকে শুনিয়াছি, তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদেরকে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, কেন করবেন না? তিনি বললেনঃ একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার পালার রাতে [ইশার নামাজ আদায়ের পর] ফিরে আসলেন। তারপর তাহাঁর জুতা পায়ের দিকে রাখলেন, তাহাঁর চাদর রেখে দিলেন এবং তাহাঁর লুঙ্গি বিছানার উপর বিছালেন। তারপর তিনি মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করিলেন যতক্ষণে তাহাঁর ধারণা হল যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর উঠে আস্তে করে জুতা পড়লেন এবং আস্তে করে তাহাঁর চাদর নিলেন। তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং বের হইয়া আস্তে দরজা চাপিয়ে দিলেন। আর আমি মাথার উপর দিয়ে কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম এবং চাদরটি গায়ে আবৃত করলাম ও তাহাঁর পিছনে চললাম, তিনি জান্নাতুল বাকীতে আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন ও বহুক্ষণ দাঁড়ালেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম। তিনি একটু তীব্র গতিতে চললেন, আমিও তীব্র গতিতে চললাম, তিনি দৌঁড়ালেন, আমিও দৌঁড়ালাম। তিনি পৌঁছে গেলেন, তবে আমি তাহাঁর আগে পৌঁছে গেলাম। ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়লাম। তিনিও প্রবেশ করিলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! কি হইয়াছে তোমার পেট যে ফুলে গেছে। বর্ণনাকারী সুলায়মান বলেনঃ ইব্ন ওয়াহাব [আরবি] এর পরিবর্তে حسيا দ্রুত চলার কারণে হাঁপিয়ে ওঠা শব্দটি বলেছেন বলে ধারণা করছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, ঘটনা কি বল, নচেৎ আল্লাহ্ যিনি সুক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত, তিনিই আমাকে খবর দিবেন। আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে তুমিই সেই [ছায়ামূর্তি] যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করিলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাহাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করিবে? হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বললেনঃ লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি যখন আমাকে দেখছিলে তখন জিবরাঈল [আঃ] আমার কাছে এসেছিলেন। তুমি যে [শুয়ে যাওয়ায়] কাপড় খুলে ফেলেছ। তাই জিবরাঈল [আঃ] প্রবেশ করেননি। তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমার থেকে গোপন করে উত্তর দিলাম। মনে করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে জাগিয়ে দেওয়াটা পছন্দ করলাম না এবং এ ভয়ও ছিল যে, [আমি চলে যাওয়ার কারণে] তুমি নিঃসঙ্গতা বোধ করিবে। জিবরাঈল [আঃ] আমাকে নির্দেশ দিলে বাকীতে অবস্থানকারীদের কাছে যাই এবং তাহাদের রব্বের কাছে তাহাদের জন্য ক্ষমা চাই।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৬৪. মুহাম্মদ ইবনি কায়স ইবনি মাখরামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদের কাছে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, করবেন না কেন? তিনি বললেনঃ যে রাতে তাহাঁর অর্থাৎ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর আমার কাছে থাকার কথা, সেই রাত যখন আসল, তিনি [ইশার নামাজ আদায়ের পর] ফিরে আসলেন। তারপর তাহাঁর জুতাগুলো পায়ের দিকে রাখলেন। চাদর খুলে রাখলেন। ইযারের এক পার্শ্ব বিছানার উপর বিছালেন। তারপর মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করিলেন, যতক্ষণে তাহাঁর ধারণা হল আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর আস্তে করে জুতা পড়লেন, আস্তে চাদর নিলেন, তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং আস্তে করে বের হলেন এবং আস্তে করে দরজা বন্ধ করিলেন। আর আমি মাথার দিক থেকে আমার কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম, চাদরটি গায়ে দিয়ে আবৃত হলাম, তারপর তাহাঁর পিছনে চলতে লাগলাম। তিনি জান্নাতুল বাকী পর্যন্ত আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন, বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম, তিনি তীব্র গতিতে হাঁটলে আমিও তীব্র গতিতে চললাম। তিনি একটু দৌঁড়ে চললেন, আমিও একটু দৌঁড়ে চললাম। পরিশেষে তিনি বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। তবে আমি তাহাঁর একটু আগে পৌঁছলাম। ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে গেলাম। তিনিও প্রবেশ করিলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! তোমার কি হইয়াছে, পেট ফোলা দেখা যাচ্ছে ও হাঁপাচ্ছ যে? আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, না তো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হয় তুমি আমাকে বলবে, নয়ত আমাকে সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত সত্তা জানিয়ে দিবেনই। আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমার পিতামাতা আপনার উপর উৎসর্গ হোক এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে ঘটনাটি খুলে বললাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে তুমিই সেই ছায়ামূর্তি যা আমি আমার আগে আগে দেখছিলাম। হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বলেন, তখন তিনি আমার বুকের উপর এমন এক মুষ্ঠাঘাত করিলেন, যা আমাকে ব্যথা দিল। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি কি মনে করেছ যে, আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবেন? হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলিলেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ তা নিশ্চিত জানেন। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর বলিলেন, তুমি যখন আমাকে দেখছিলে জিবরাঈল [আঃ] আমার কাছে এসেছিলেন, তখন তুমি পোশাক রেখে দিয়েছিলে বলে জিবরাঈল [আঃ] প্রবেশ করেনি। তিনি তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমাকে না শুনিয়ে উত্তর দিলাম। আমি ধারণা করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ এবং শংকিত ছিলাম যে, [তোমাকে জাগিয়ে দিলে একাকীত্ব অনুভব করার কারণে] তুমি ভয় পাবে। জিবরাঈল [আঃ] আমাকে বাকীতে অবস্থানকারীদের [মৃত ব্যক্তিদের] কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেন তাহাদের জন্য ক্ষমা চাই।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি আমির ইবনি রবীয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আয়েশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, এক রাত্রে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বিছানায় পেলাম না। তারপর তিনি পূর্ণ হাদীসটির বর্ণনা দেন।
স্ত্রীর সাথে ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply