কসম করা ও যে সব নামের উপর শপথ করা যায়
কসম ও মান্নাত। যে সব নামের উপর শপথ করা যায় >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৩৫, কসম ও মান্নাত, হাদীস (৩৭৬১-৩৮০০)
১.পরিচ্ছেদঃ কসম ও মান্নাত
২.পরিচ্ছেদঃ { যিনি অন্তরসমূহকে ঘুরিয়ে দেন } শব্দ দ্বারা শপথ
৩.পরিচ্ছেদঃ {আল্লাহর পরাক্রম} শব্দ দ্বারা শপথ
৪.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কসম করার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা
৫.পরিচ্ছেদঃ বাপ-দাদার নামে শপথ করা
৬.পরিচ্ছেদঃ মা-দাদীর নামে শপথ করা
৭.পরিচ্ছেদঃ ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের নামে শপথ করা
৮.পরিচ্ছেদঃ ইসলাম হইতে বের হইয়া যাওয়ার শপথ
৯.পরিচ্ছেদঃ কাবার কসম করা
১০.পরিচ্ছেদঃ তাগুত বা দেব-দেবীর শপথ
১১.পরিচ্ছেদঃ লাতের শপথ করা
১২.পরিচ্ছেদঃ লাত ও উয্যাহার শপথ
১৩.পরিচ্ছেদঃ শপথ পূর্ণ করা
১৪.পরিচ্ছেদঃ শপথ করার বিপরীত বিষয়কে উত্তম দেখলে কি করিবে
১৫.পরিচ্ছেদঃ শপথ ভঙ্গের পূর্বেই কাফ্ফারা দেয়া
১৬.পরিচ্ছেদঃ কসম ভাঙ্গার পর কাফ্ফারা আদায় করা
১৭.পরিচ্ছেদঃ যাহার মালিক নয়, এমন কোন জিনিসের শপথ করা
১৮.পরিচ্ছেদঃ শপথ করে ইন্শাআল্লাহ বলা
১৯.পরিচ্ছেদঃ কসমের নিয়্যত করা
২০.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ যা হালাল করিয়াছেন, তা হারাম করা
২১.পরিচ্ছেদঃ রুটির সাথে তরকারি না খাওয়ার কসম করে সিরকা দিয়ে খেলে
২২.পরিচ্ছেদঃ এমন ব্যক্তির শপথ ও মিথ্যাকথন, যে অন্তরে তাকে শপথ ও মিথ্যা কথন মনে করে না
২৩.পরিচ্ছেদঃ মিথ্যা ও অপ্রয়োজনীয় কথা
১.পরিচ্ছেদঃ কসম ও মান্নাত
৩৭৬১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যা বলে শপথ করিতেন, তা ছিল {আরবি} {না, অন্তরসমূহকে পরিবর্তনকারীর শপথ}।
কসম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২.পরিচ্ছেদঃ { যিনি অন্তরসমূহকে ঘুরিয়ে দেন } শব্দ দ্বারা শপথ
৩৭৬২. সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা দ্বারা শপথ করিতেন তা ছিল {আরবি} {না, যিনি অন্তরসমূহকে ঘুরিয়ে দেন, তাহাঁর শপথ}।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩.পরিচ্ছেদঃ {আল্লাহর পরাক্রম} শব্দ দ্বারা শপথ
৩৭৬৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] সূত্রে রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যখন আল্লাহ তাআলা জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করেন, তখন তিনি জিব্রাঈল [আঃ]-কে এই বলে জান্নাতের দিকে পাঠান যে, জান্নাত এবং জান্নাতবাসীদের জন্য যা কিছু আমি প্রস্তুত করে রেখেছি, তা দেখে এসো। তিনি তা দেখে ফিরে এসে বললেনঃ আপনার পরাক্রমের শপথ ! এই জান্নাতের কথা শুনতে পেলে কেউ তাতে প্রবেশ না করে ছাড়বে না। এরপর তাহাঁর আদেশে তা কষ্টকর ও অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করা হলো। তারপর বলিলেন, সেখানে যাও এবং তা ও তার অধিবাসীদের জন্য যা প্রস্তুত করে রেখেছি তা দেখে এসো। তিনি গিয়ে লক্ষ্য করিলেন যে, তা কষ্টদায়ক, মুসীবত ও অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করে রাখা হইয়াছে। তিনি বললেনঃ আপনার পরাক্রমের কসম ! আমার আশংকা হচ্ছে যে, তাতে কেউ-ই প্রবেশ করিবে না। আল্লাহ তাআলা বললেনঃ যাও জাহান্নাম এবং জাহান্নামবাসীদের জন্য আমি তাতে যা কিছু তৈরি করে রেখেছি, তা দেখে এসো। জিবরাঈল [আঃ] তার দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলেন, তার এক অংশ অপর অংশের উপর চড়াও হচ্ছে। তিনি ফিরে এসে বললেনঃ আপনার পরাক্রমের শপথ ! আমার আশংকা যে, এতে কেউ প্রবেশ করিবে না। এরপর আল্লাহর আদেশে তাকে মুগ্ধকর বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করে দেয়া হলো। আল্লাহ বললেনঃ তুমি এখন গিয়ে তা দেখে এসো। তিনি গিয়ে দেখলেন যে, তাকে মুগ্ধকর বস্তু দ্বারা পরিবেষ্টন করে রাখা হইয়াছে। তিনি ফিরে এসে বললেনঃ আপনার পরাক্রমের শপথ ! এখন আমার আশংকা হচ্ছে যে, এতে প্রবেশ করা থেকে কেউ নাজাত পাবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কসম করার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা
৩৭৬৪. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কারো শপথ করিতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ না করে। কুরায়শ গোত্র তাহাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতো। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করো না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৬৫. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতাহাদের নামে কসম করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫.পরিচ্ছেদঃ বাপ-দাদার নামে শপথ করা
৩৭৬৬. সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার উমার [রাঃআঃ] -কে আমার পিতার কসম, আমার পিতার কসম ! বলে শপথ করিতে শুনলেন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতাহাদের নামে কসম করিতে নিষেধ করিয়াছেন। উমার [রাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহর কসম ! এরপর আমি আর কখনও আমার পিতার নামে শপথ করিনি। নিজের থেকেও না এবং অন্য কারও থেকে বর্ণনাস্বরূপও না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৬৭. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহর শপথ! এরপর থেকে আমি আর কখনও এরূপ শপথ করিনি; নিজের থেকেও না; অন্যের থেকে বর্ণনাস্বরূপও না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৬৮. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। উমার [রাঃআঃ] বলেনঃ এরপর আমি আর কখনও এরূপ শপথ করিনি; নিজের থেকেও না এবং অন্যের থেকে বর্ণনাস্বরূপও না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬.পরিচ্ছেদঃ মা-দাদীর নামে শপথ করা
৩৭৬৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ স্বীয় পিতাহাদের, মাতাহাদের এবং মূর্তির নামে কসম করো না। কেবল আল্লাহর নামেই শপথ করিবে। আর তোমরা শপথ করো না, যদি না তোমরা সত্যবাদী হও।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭.পরিচ্ছেদঃ ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের নামে শপথ করা
৩৭৭০. সাবিত ইবনি যাহ্হাক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের মিথ্যা শপথ করিবে, সে ঐরূপই হইবে, যেরূপ সে বলেছে। কুতায়বা [রাঃআঃ] তাহাঁর হাদীসে {আরবী} [ইচ্ছাকৃত] শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন, আর ইয়াযীদ {আরবী} [মিথ্যা] শব্দ বলেছেন। আর যে ব্যক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করলো, আল্লাহ তাআলা তাকে দোজখের আগুনে ঐ বস্তু দ্বারা শাস্তি দিবেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৭১. সাবিত ইবনি যাহ্হাক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের মিথ্যা শপথ করিবে, সে ব্যক্তি ঐরূপ হইয়া যাবে, যেরূপ সে বলেছে। আর যে ব্যক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করিবে, আখিরাতে তাকে ঐ বস্তু দিয়ে শাস্তি দেয়া হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮.পরিচ্ছেদঃ ইসলাম হইতে বের হইয়া যাওয়ার শপথ
৩৭৭২. আবদুল্লাহ্ ইবনি বুরায়দা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বললোঃ “ইসলামের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।” সে যদি মিথ্যাবাদী হয়, তবে সে যেমন বলেছে- তেমন, আর যদি সত্যবাদী হয়, তবে সে নিরাপদে ইসলামে ফিরে আসবে না [অর্থাৎ গুনাহ্গার হইবে]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯.পরিচ্ছেদঃ কাবার কসম করা
৩৭৭৩. জুহায়না গোত্রের এক মহিলা হইতে বর্ণিতঃ
এক ইয়াহূদী নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো ঃ আপনারা তো আল্লাহর সাথে শরীক ও তাহাঁর সমকক্ষ স্থির করে থাকেন। আপনারা বলে থাকেন ঃ যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন আর যা তুমি ইচ্ছা কর। আর আপনারা আরও বলে থাকেন ঃ কাবার কসম ! তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্দেশ দিলেন যে, যখন কসম করার ইচ্ছা করিবে, তখন বলবেঃ কাবার রবের কসম ! আরও বলবে ঃ আল্লাহ যা চেয়েছেন। এরপর তুমি চেয়েছ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০.পরিচ্ছেদঃ তাগুত বা দেব-দেবীর শপথ
৩৭৭৪. আবদুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তোমরা তোমাদের পিতাহাদের শপথ করো না; আর দেব-দেবীর কসমও করো না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১.পরিচ্ছেদঃ লাতের শপথ করা
৩৭৭৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লাতের শপথ করে, সে যেন বলে ঃ লা ইলাহা ইল্লালাহ্। আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে ঃ চল তোমার সাথে জুয়া খেলি, সে যেন কিছু সাদ্কা করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২.পরিচ্ছেদঃ লাত ও উয্যাহার শপথ
৩৭৭৬. মুসআব ইবনি সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমরা কোন ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম, আর আমি নতূন ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। এক পর্যায়ে আমি লাত ও উয্যাহার কসম করলাম। আমাকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কয়েকজন সাহাবী বললেনঃ তুমি অতি মন্দ কথা বলেছ। তুমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট চল, তাঁকে এটা জানাও। আমরা মনে করি, তুমি কুফরী করেছ। আমি তাহাঁর নিকট এসে তাঁকে এ কথা জানালে তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি তিনবার বলঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, আর শয়তান হইতে আল্লাহ তাআলার নিকট তিনবার আশ্রয় চাও এবং তোমার বামদিকে তিনবার থুথু ফেল। আর কখনও এরূপ কথা বলবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৭৭. মুসআব ইবনি সাদ হইতে বর্ণিতঃ
। তিনি বলেনঃ আমি লাত ও উয্যাহার শপথ করলাম। তখন আমার সাথীরা আমাকে বললোঃ তুমি বড় মন্দ কথা বললে। আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে তা বললে, তিনি বললেনঃ তুমি বলঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাহাঁর কোন শরীক নেই। “আর তুমি তোমার বামদিকে তিনবার থুথু ফেল এবং আল্লাহর নিকট শয়তান হইতে আশ্রয় প্রার্থনা কর। আর কখনো এরূপ বলবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩.পরিচ্ছেদঃ শপথ পূর্ণ করা
৩৭৭৮. বারা ইবনি আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদেরকে সাতটি কাজের আদেশ দিয়েছেনঃ জানাযাহার অনুগমন করার, রোগীকে দেখিতে যাওয়ার, হাঁচির উত্তর দেয়ার, আমন্ত্রণ গ্রহণ করার, মযলূমের সাহায্য করার, কসম পূর্ণ করার এবং সালামের উত্তর দেয়ার।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪.পরিচ্ছেদঃ শপথ করার বিপরীত বিষয়কে উত্তম দেখলে কি করিবে
৩৭৭৯. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ পৃথিবীর যে কোন বিষয়েই আমি শপথ করি; আর পরে তার বিপরীত বিষয়কে উত্তম দেখিতে পাই, তখন আমি সেটাই করি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫.পরিচ্ছেদঃ শপথ ভঙ্গের পূর্বেই কাফ্ফারা দেয়া
৩৭৮০. আবু মূসা আশ্আরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা আমি আশ্আরী সম্প্রদায়ের একদল লোকসহ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট বাহন চাওয়ার জন্য উপস্থিত হলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ ! আমি তোমাদেরকে বাহন দিতে পারব না এবং তোমাদেরকে দেব এমন কোন বাহনও আমার নিকট নেই। আবু মূসা [রাঃআঃ] বলেনঃ অতঃপর আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম, যেমন আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। অতঃপর তাহাঁর কাছে কিছু উট আসলো নাবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে তিনটি উট দেয়ার নির্দেশ দিলেন। যখন আমরা সেখানে থেকে রওয়ানা হলাম, তখন আমাদের লোকেরা বলাবলি করিতে লাগলো, এই সওয়ারীতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বরকত দান করবেন না। কেননা যখন আমরা তাহাঁর কাছে বাহন চাইবার জন্য উপস্থিত হই, তখন তিনি শপথ করে বলেনঃ আমি তোমাদেরকে সওয়ারী দেব না। আবু মূসা [রাঃআঃ] বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট ফিরে এসে একথা উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে সওয়ারী দেইনি,বরং আল্লাহ তাআলা তা তোমাদের দান করিয়াছেন। আল্লাহর শপথ ! আমি যদি কোন বিষয়ের উপর শপথ করি, পরে অন্য বিষয়কে তার চেয়ে উত্তম দেখিতে পাই, তখন আমি আমার শপথের কাফ্ফারা আদায় করি এবং যেটা উত্তম সেটাই করি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮১. আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কিছুর শপথ করে, এরপর অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখিতে পায়, তখন সে যেন নিজের কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দেয় এবং ঐ উত্তম কাজটি করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮২. আবদুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন কিছুর শপথ করে, পরে সে অন্য কোন বস্তুকে তার চাইতে উত্তম দেখিতে পায়, তখন সে যেন তার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে ঐ উত্তম কাজটি করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮৩. আবদুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ যখন তুমি শপথ করিবে, তখন তুমি তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দিবে, এরপর যেটা উত্তম সেটা করিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮৪. আবদুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তুমি কোন কসম করিবে, আর অন্য কোন বস্তু তা থেকে উত্তম দেখিতে পাবে, তখন তুমি তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দিবে, আর যা উত্তম তা করিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬.পরিচ্ছেদঃ কসম ভাঙ্গার পর কাফ্ফারা আদায় করা
৩৭৮৫. আদী ইবনি হাতিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ কোন বিষয়ে শপথ করে যদি অন্য কোন বিষয়কে তার চাইতে উত্তম দেখিতে পায়; তবে সে যেন উত্তমকে গ্রহণ করে এবং পরে স্বীয় শপথের কাফ্ফারা আদায় করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮৬. আদী ইবনি হাতিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে শপথ করে, তারপর অন্য বিষয়কে তার চাইতে উত্তম দেখিতে পায়, সে যেন শপথ পরিত্যাগ করে উত্তমকে গ্রহণ করে এবং শপথের কাফ্ফারা দিয়ে দেয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮৭. আদী ইবনি হাতিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ কোন শপথ করার পর যদি অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখিতে পায়, তবে সে যেন উত্তমকে গ্রহণ করে এবং শপথ ভঙ্গ করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮৮. আবু যারা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর চাচা আবু আহওয়াস হইতে, তিনি তাহাঁর পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট বললামঃ এ বিষয়ে কী বলেন যে, আমি আমার চাচাত ভাইয়ের নিকট গিয়ে কিছু চাইলে সে আমাকে তা দেয় না এবং আত্মীয়তাও ঠিক রাখে না। কিন্তু তাহাঁর কিছু প্রয়োজন হলে সে আমার নিকট এসে তা চায়। এজন্য আমিও শপথ করেছি যে, তাকে কিছুই দেব না এবং তার সাথে আত্মীয়তাও রক্ষা করবো না। তিনি আমাকে আদেশ করলেনঃ এখন তুমি যেটা উত্তম সেটা কর এবং তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে যাও।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৮৯. আবদুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাকে বলেছেনঃ যখন তুমি কোন শপথ করে অন্য বস্তুকে তা অপেক্ষা উত্তম দেখিতে পাবে, তখন উত্তমটা করে ফেলবে এবং তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দেবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৯০. আবদুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তুমি যখন কোন শপথ করার পর অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখিতে পাবে, তখন উত্তমটা করিবে এবং নিজ শপথের কাফ্ফারা দিয়ে দিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৯১., আবদুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তুমি যখন কোন কিছুর শপথ করার পর অন্য কিছুকে তার চাইতে উত্তম দেখিতে পাবে, তখন ঐ উত্তমটা করিবে এবং তোমার শপথের কাফ্ফারা আদায় করিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭.পরিচ্ছেদঃ যাহার মালিক নয়, এমন কোন জিনিসের শপথ করা
৩৭৯২. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কিছুর মালিক নয়, ঐ বস্তুর মান্নত ও শপথ করিতে পারবে না। আর গুনাহের কাজে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে শপথ হইতে পারে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮.পরিচ্ছেদঃ শপথ করে ইন্শাআল্লাহ বলা
৩৭৯৩. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করে ইন্শাআল্লাহ বলে, সে তা পূর্ণ করুক অথবা না করুক তার কাফ্ফারা দিতে হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯.পরিচ্ছেদঃ কসমের নিয়্যত করা
৩৭৯৪. উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নিয়্যতের উপর কাজের ফলাফল নির্ভর করে, যে যা নিয়্যত করে, সে তা-ই পাবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূলের সন্তস্টির জন্য হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূলের জন্যই হইবে। আর যে ব্যক্তি পার্থিব উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হিজরত করে, অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার নিয়্যতে হিজরত করে; সে যে নিয়্যতে হিজরত করে, তার হিজরত সে জন্যই হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ যা হালাল করিয়াছেন, তা হারাম করা
৩৭৯৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যয়নব বিন্ত জাহ্শের নিকট কিছুক্ষন থাকতেন এবং সেখানে তিনি মধু পান করিতেন। আমি এবং হাফ্সা পরামর্শ করলাম যে, আমাদের মধ্যে যাহার নিকটই রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাশ্রীফ আনেন, সে যেন বলেঃ আপনার মুখ হইতে মাগাফিরের গন্ধ আসছে। আপনি কি মাগাফির খেয়েছেন? এরপর তিনি আমাদের একজনের গৃহে আসলে তিনি তাঁকে তা বলিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ না, বরং আমি যয়নব বিন্তে জাহশের নিকট মধু পান করছি। আমি আর কখনো তা পান করবো না; তখন অবতীর্ণ হয়ঃ {আরবী} অর্থঃ হে নাবী ! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করিয়াছেন, আপনি তা হারাম করছেন কেন? [৬৬ঃ১]..{আরবী}। অর্থঃ যদি তোমরা উভয়ে [আয়েশা ও হাফসা] অনুতপ্ত হইয়া আল্লাহর দিকে ফিরে এসো। [৬৬ঃ২]..{আরবী}….অর্থঃ স্মরণ কর, নাবী তাহাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন।……..[৬৬ঃ৩]….এটা নাবী [সাঃআঃ]-এর উক্তিঃ “বরং আমি মধু পান করেছি—-সে সম্পর্কিত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১.পরিচ্ছেদঃ রুটির সাথে তরকারি না খাওয়ার কসম করে সিরকা দিয়ে খেলে
৩৭৯৬. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ আমি একবার রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] –এর সঙ্গে তাহাঁর ঘরে ঢুকে দেখলাম, রুটির টুকরা এবং সিরকা রাখা হইয়াছে। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন ঃ খাও, সিরকা উত্তম তরকারি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২.পরিচ্ছেদঃ এমন ব্যক্তির শপথ ও মিথ্যাকথন, যে অন্তরে তাকে শপথ ও মিথ্যা কথন মনে করে না
৩৭৯৭. কায়স ইবনি আবু গারাযা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বলেন ঃ লোক আমাদেরকে দালাল বলতো। একদিন আমরা বেচাকেনা করছিলাম। এমন সময় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট এসে আগের নামের চাইতে উত্তম নামে আমাদেরকে ডেকে বলিলেন ঃ হে ব্যবসায়ীর দল ! ক্রয়-বিক্রয়ে অনেক সময় শপথ এবং মিথ্যা কথনও হইয়া যায়, [যদিও তোমরা অন্তরের সাথে তা বলো না]। অতএব তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে কিছু সাদ্কা মিলিয়ে নেবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৭৯৮. কায়স ইবনি আবু গারাযা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
। তিনি বলেন ঃ আমরা বাকী নামক স্থানে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। আমাদেরকে বলা হতো দালাল। এক সময় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট এসে বলিলেন ঃ হে ব্যবসায়ীর দল ! তিনি আমাদেরকে আমাদের পূর্ব নাম অপেক্ষা উত্তম নামে ডাকলেন। তিনি বলিলেন ঃ এই ক্রয়-বিক্রয়ে শপথ ও মিথ্যা এসে যায়। অতএব তোমরা তাতে সাদকা মিলিয়ে নেবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩.পরিচ্ছেদঃ মিথ্যা ও অপ্রয়োজনীয় কথা
৩৭৯৯. কায়স ইবনি আবু গারাযা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ একদা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট আসেন, তখন আমরা ছিলাম বাজারে। তিনি আমাদেরকে বলিলেন ঃ এটা বাজার, এখানে মিথ্যা ও অপ্রয়োজনীয় কথাও হইয়া থাকে। অতএব তোমরা এতে কিছু সাদ্কা মিলিয়ে নাও।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৮০০. কায়স ইবনি আবু গারাযা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ আমরা মদীনায় ক্রয়-বিক্রয় করছিলাম। আমরা আমাদেরকে দালাল বলতাম এবং লোকেরাও আমাদেরকে দালাল বলতো। একদিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট এসে আমাদের এমন নামে ডাকলেন, যা ছিল আমরা আমাদেরকে এবং লোকেরা আমাদেরকে যে নামে ডাকতো, তা থেকে উত্তম। তিনি বলিলেন ঃ হে ব্যবসায়ীর দল ! তোমাদের ব্যাবসায়ে মিথ্যা এবং শপথ মিশ্রিত হইয়া থাকে। অতএব তোমরা এতে সাদ্কা মিশিয়ে নাও।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply