ইসলামে অসিয়ত
ইসলামে অসিয়ত । মৃতের পক্ষ হইতে সাদাকার ফযীলত >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৩০, অসিয়ত, হাদীস (৩৬১১ – ৩৬৭১)
১.পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] ওয়াসিয়াত করেছিলেন কি?
২.পরিচ্ছেদঃ সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়াত করা প্রসংগে
৩.পরিচ্ছেদঃ ওয়ারিসের জন্য ওয়াসিয়াত করা বাতিল
৪.পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ হইতে সাদাকার ফযীলত
৫.পরিচ্ছেদ ঃ সুফিয়ানের বর্ণনায় বর্ণনা বিরোধ
৬.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতীমের মালের অভিভাবক হওয়ার নিষেধাজ্ঞা
৭.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতীমের মালের দায়িত্ব পালনকালে কি সুযোগ গ্রহণ করিবে
৮.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতিমের মাল খাওয়া থেকে বিরত থাকা
১.পরিচ্ছেদঃ ওয়াসিয়াতে দেরী করা মাকরুহ
৩৬১১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বললোঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! কোন্ সাদাকায় সওয়াব বেশি? তিনি বলিলেনঃ ঐ সাদাকা, যা তুমি সুস্থ অবস্থায় কর এবং মালের প্রতি তোমার অত্যধিক লালসা থাকে, আর তুমি অভাবগ্রস্ততার ভয় কর এবং তোমার আরও বহুদিন বেঁচে থাকার আশা থাকে। আর সাদাকা করিতে এত দেরী করিবে না যে, তোমার মৃত্যু উপস্থিত হইয়া যায়। আর তুমি বলবেঃ এত অমুকের জন্য, অথচ তা তো অমুকের জন্য হইয়াই গেছে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬১২. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কে আছে যে, যাহার ওয়ারিসের মাল তার নিকট তার নিজের মাল হইতে অধিক প্রিয়? তাঁরা বলিলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যাহার নিকট তার নিজের মাল তার ওয়ারিসের মাল হইতে প্রিয় নয়। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ জেনে রাখ, তোমাদের প্রত্যেকের নিকট তার ওয়ারিসের মাল তার নিজের মাল অপেক্ষা প্রিয়। তোমার মাল তো তা-ই যা তুমি [মৃত্যুর] পূর্বেই পাঠিয়ে দিয়েছ, আর ওয়ারিসের মাল তা-ই যা রেখে তুমি মারা যাও।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬১৩. মুতাররিফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও। পরে তিনি বলিলেনঃ মানুষ [আদম সন্তান] বলে, আমার মাল, আমার মাল। [হে মানুষ!] তোমার মাল তো তা, যা তুমি খেয়ে শেষ করেছ কিংবা যা পরিধান করে পুরাতন করে ফেলেছ, অথবা যা তুমি সাদাকা করে কার্যকর করেছ।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬১৪. আবু হাবীবা তাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি কিছু দীনার [আলাদা করে] আল্লাহর রাস্তায় দেয়ার ওয়াসিয়াত করলো। এ ব্যাপারে আবুদ্দারদা [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] থেকে হাদীস বর্ণনা করিলেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুকালে দাসমুক্ত করে অথবা সাদাকা দেয়, তার উদাহরণ এরূপ, যেরূপ কোন ব্যক্তি তৃপ্ত হওয়ার পর হাদিয়া দিয়ে থাকে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৩৬১৫. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলমানের উচিত নয় যে, যা তার ওয়াসিয়াত করার ছিল, তাতে ওয়াসিয়াতের ব্যাপারে ওয়াসিয়াতনামা না লিখে দুরাত অতিবাহিত করা।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬১৬. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলমানের পক্ষে দুটি রাত্রি এমন অবস্হায় অতিবাহিত করা উচিত নয় যে, কোন বিষয়ে তার ওয়াসিয়াত করার রয়েছে। অথচ তার নিকট তার ওয়াসিয়াতনামা লিখিত নেই।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬১৭. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
উক্তি [রুপে] বর্নিত।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬১৮. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যাক্তির জন্য এরুপ উচিৎ নয় যে, যাহার নিকট এমন বস্তু রয়েছে, যাহার ওয়াসিয়াত করা প্রয়োজন, অথচ সে তিন রাত এভাবে অতিবাহিত করে যে, তার নিকট তার ওয়াসিয়াতনামা না থাকে। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে একথা বলিতে শোনার পর থেকে আমার [এমন কোনো সময়] অতিক্রান্ত হয় নি যে, আমার কাছে আমার ওয়াসিয়াত [নামা] ছিল না।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬১৯. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ কোনো মুসলমানের জন্য উচিৎ নয়, যে বিষয়ে তার ওয়াসিয়াত করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে ওয়াসিয়াতনামা না লিখে সে তিন দিন অতিবাহিত করে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২.পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] ওয়াসিয়াত করেছিলেন কি?
৩৬২০. তাল্হা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি ইবনি আবু আওফা[রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি কোনো ওয়াসিয়াত করেছিলেন? তিনি বলিলেনঃ না। তিনি {তাল্হা [রাঃআঃ]} বলেনঃ আমি ইবনি আবু আওফা[রাঃআঃ]-কে বললামঃ তা হলে মুসলমানদের জন্য কিরুপে ওয়াসিয়াতের বিধান করিয়াছেন? তিনি বলিলেনঃ তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] আল্লাহর কিতাব [প্রতিপালন]-এর ওয়াসিয়াত করিয়াছেন।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দীনার, দিরহাম, বকরি এবং উট কিছুই রেখে যাননি, এবং [তাই] তিনি কোনো কিছুর ওয়াসিয়াতও করেন নি।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দীনার, দিরহাম, বকরি, উট কিছুই রেখে যাননি, এবং [তাই] তিনি কোনো কিছুর ওয়াসিয়াতও করেন নি।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দিরহাম, দীনার, বকরি, উট কিছুই রেখে যাননি, আর তিনি ওয়াসিয়াতও করেন নি। রাবী জাফর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] দীনার ও দিরহামের কথা উল্লেখ করেন নি।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২৪. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ লোকে বলে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলী [রাঃআঃ]-কে ওয়াসিয়াত করিয়াছেন। অথচ তাহাঁর অবস্হা এই ছিল যে, তিনি পেশাব করার জন্য পাত্র চেয়েছিলেন; এর পরেই তিনি ঢলে পড়লেন [ইনতিকাল করেন], যা আমি অনুভব করিতেও পারিনি। তাহলে তিনি কার কাছে ওয়াসিয়াত করিলেন? তিনি কাউকে ওয়াসিয়াত করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওফাত বরন করিয়াছেন, তখন তাহাঁর কাছে আমি ব্যতীত কেউ ছিল না। তিনি [পেশাব করার জন্য] পাত্র চেয়েছিলেন।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩.পরিচ্ছেদঃ সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়াত করা প্রসংগে
৩৬২৬. আমর ইবনি সাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি কঠিন রোগে আক্রান্ত হইয়া মৃত্যুর নিকটবর্তী হলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে আসলে আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আমার অনেক সম্পদ রয়েছে। আমার কন্যা ছাড়া আর কোন ওয়ারিছ নেই। আমি কি আমার মালের দুই-তৃতীয়াংশ সাদাকা করে দেব? তিনি বলিলেনঃ না। আমি বললামঃ তাহলে অর্ধেক? তিনি বলিলেনঃ না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ, আর এক-তৃতীয়াংশও অধিক। কেননা তুমি যদি তোমার ওয়ারিসদেরকে ধনী রেখে যাও, তবে তা তাহাদেরকে এরুপ অভাবগ্রস্হ অবস্হায় রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম যে, আর তারা মানুষের কাছে হাত পেতে [দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে] বেড়াবে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২৭. সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার মক্কায় থাকাকালে নাবী [সাঃআঃ] আমার রোগাবস্হায় আমাকে দেখিতে আসলেন। আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি আমার সমস্ত সম্পত্তি ওয়াসিয়াত [আল্লাহর রাস্তায় দান] করিতে চাই। তিনি বলিলেনঃ না। আমি বললামঃ অর্ধেক সম্পত্তি? তিনি বলিলেনঃ না। আমি বললামঃ তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, তিনের এক অংশ। আর এক-তৃতীয়াংশও অধিক। তুমি তোমার ওয়ারিসদেরকে ধনী রেখে যাও, এটা উত্তম এ থেকে যে, তুমি তাহাদেরকে অভাবগ্রস্থ রেখে যাবে। আর তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে বেড়াবে [মানুষের কাছে হাত পাতবে]।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২৮. আমির ইবনি সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মক্কায় থাকাকালে তিনি যখন রোগাক্রান্ত হন, তখন নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে দেখিতে আসেন। তিনি যে স্হান হইতে হিজরত করে গেছেন [মক্কা], সেখানে মৃত্যুবরণ করিতে অপছন্দ করিতেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা সাদ ইবনি আফরাকে রহম করুন। অথবা আল্লাহ্ সাদ ইবনি আফরাকে রহম করুন। এক কন্যা ব্যাতীত তাহাঁর {সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ]-এর} আর কোন সন্তান ছিল না। তিনি বলিলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ। আমি আমার সমস্ত সম্পত্তি [দান] ওয়াসিয়াত করবো? তিনি বলিলেনঃ না। আমি বললামঃ অর্ধেক? তিনি বলিলেনঃ না। আমি বললামঃ এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, তৃতীয়াংশ। আর এক-তৃতীয়াংশও অনেক। যদি তুমি তোমার ওয়ারিসদেরকে ধনী রেখে যাও, তবে তাতে তাহাদেরকে এমন অভাবগ্রস্হ রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম যে, তারা মানুষের হাতে যা আছে তা পাওয়ার জন্য হাত পেতে বেড়াবে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬২৯. সাদ ইবনি ইবরাহীম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ সাদ [রাঃআঃ]-এর পরিবারের এক ব্যাক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, সাদ [রাঃআঃ] অসুস্হ হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে দেখিতে যান। তখন তিনি {সাদ [রাঃআঃ]} বলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ। আমি আমার সমস্ত সম্পদ [দান করার] ওয়াসিয়াত করে যাব? তিনি বলিলেনঃ না। হাদিসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৩৬৩০. আমির ইবনি সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মক্কায় অসুস্হ হইয়া পড়েন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে দেখিতে আসেন। সাদ [রাঃআঃ] তাঁকে দেখে কেঁদে দিলেন এবং বলিলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ। আমি কি ঐ স্হানেই মারা যাব, যেখান হইতে আমি হিজরত করেছি? তিনি বলিলেনঃ না, ইন্শা আল্লাহ্। তিনি বলিলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ। আমি আমার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করার ওয়াসিয়াত করে যাব? তিনি বলিলেনঃ না। তিনি বলিলেনঃ তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেনঃ না। তিনি [সাদ] বলিলেনঃ অর্ধেক? তিনি বলিলেনঃ না। তিনি [সাদ] বলিলেন তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ, আর এক-তৃতীয়াংশও অধিক। যদি তুমি তোমার ছেলেদেরকে ধনবান রেখে যাও, তবে তা তাহাদেরকে অভাবগ্রস্হ হইয়া লোকের নিকট হাত পাতা অবস্হায় রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৩১. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার অসুস্হতার সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে আসলেন এবং তিনি বলিলেনঃ তুমি কোন ওয়াসিয়াত করেছ কিনা? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বলিলেনঃ কত? আমি বললামঃ আমার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় [দান করার ওয়াসিয়াত করেছি]। তিনি বলিলেনঃ তুমি তোমার সন্তানের জন্য কি রেখেছ? আমি বললামঃ তারা ধনী। তিনি বলিলেনঃ এক-দশমাংশ ওয়াসিয়াত কর। এভাবে তিনি বলিতে থাকেন; আর আমিও বলিতে থাকি। অবশেষে তিনি বলিলেনঃ এক-তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়াত কর। আর এক-তৃতীয়াংশও অধিক অথবা বড়।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৩৬৩২. সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তিনি অসুস্হ থাকাবস্হায় নাবী [সাঃআঃ] তাকে দেখিতে আসেন। তিনি বলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ। আমি কি আমার সমস্ত মালের জন্য ওয়াসিয়াত করবো? তিনি বলিলেনঃ না। তিনি { সাদ [রাঃআঃ] } বলিলেনঃ তাহলে অর্ধেক? তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] বলিলেনঃ না। তিনি {সাদ [রাঃআঃ]} আবার বলিলেনঃ এক-তৃতীয়াংশের? তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] বলিলেনঃ এক-তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়াত করিতে পার। আর এক-তৃতীয়াংশও অধিক অথবা বড়।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৩৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ সাদ [রাঃআঃ] অসুস্হ থাকাকালে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে দেখিতে যান। তখন সাদ [রাঃআঃ] তাঁকে বলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ। আমি কি আমার সমস্ত মালের দুই-তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়াত করিতে পারি? তিনি {নাবী [সাঃআঃ]} বলিলেনঃ না। তিনি {সাদ [রাঃআঃ]} বলিলেনঃ তাহলে আমি কি আমার অর্ধেক মালের ওয়াসিয়াত করিতে পারি? তিনি {নাবী [সাঃআঃ]} বলিলেনঃ না। তিনি {সাদ [রাঃআঃ]} বলিলেনঃ আমি কি এক-তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়াত করিতে পারি? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ। আর এক-তৃতীয়াংশও অধিক অথবা বড়। আর যদি তুমি তোমার ওয়ারিসদেরকে ধনী রেখে যাও, তবে তা উত্তম হইবে এর থেকে যে, তুমি তাহাদের দরিদ্র অবস্হায় রেখে যাবে, আর তারা [মানুষের কাছে] হাত পাতবে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৩৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
যদি লোক ওয়াসিয়াত করিতে গিয়ে এক-চতুর্থাংশে পর্যন্ত নেমে আসে, তবে তা-ই ঠিক হইবে। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তৃতীয়াংশ [ওয়াসিয়াত] করিতে পার। আর এক-তৃতীয়াংশই অধিক বা বড়।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৩৫. সাদ ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর নিকট আগমন করেন, তখন তিনি ছিলেন অসুস্হ। তিনি বলিলেনঃ আমার এক কন্যা ব্যাতীত আর কোনো সন্তান নেই। তাই আমি আমার সমস্ত সম্পত্তি ওয়াসিয়াত [আল্লাহর রাস্তায় দান] করিতে চাই। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ না। তিনি [সাদ]ঃ তা হলে কি অর্ধেকের ওয়াসিয়াত করবো? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ না। তিনি {সাদ[রাঃআঃ]} বলিলেনঃ তাহলে কি এক-তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়াত করিতে পারি? তিনি [রসূলুল্লাহ সাঃআঃ] বলিলেনঃ হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ, আর এক-তৃতীয়াংশও অধিক।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৩৬. জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তিনি ছয়জন কন্যা রেখে যান। আর তিনি তার উপর দেনাও রেখে যান। খেজুর কাটার সময় হলে আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বললামঃ আপনি অবগত আছেন যে, আমার পিতা উহুদের যুদ্ধে শহীদ হইয়াছেন, আর তিনি বহু দেনা রেখে গিয়েছেন। আমার মনে চায় যে, পাওনাদাররা যেন আপনাকে দেখে। তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] জাবির [রাঃআঃ]-কে বললেনঃ তুমি গিয়ে প্রত্যেক প্রকারের খেজুরের পৃথক পৃথক স্তুপ লাগাও। আমি তা সম্পন্ন করে তাঁকে ডেকে আনলাম। যখন তাঁরা তাঁকে দেখল, তখন তারা যেন আমার প্রতি ঐ মুহূর্তে ক্ষুব্ধ হইয়া গেল। যখন [নাবী [সাঃআঃ]] তাহাদের এ অবস্থা লক্ষ্য করিলেন, তখন তিনি সর্ববৃহৎ স্তূপের চারদিকে তিনবার প্রদক্ষিণ করিলেন এবং পরে এর উপর বসে পড়লেন। এরপর বললেনঃ তোমার সেই লোকদেরকে ডাক। এরপরে তিনি তাহাদেরকে পাত্র দ্বারা মেপে মেপে দিতে আরম্ভ করিলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আমার পিতার আমানত [সমস্ত দেনা] আদায় করে দিলেন। আর সেখান থেকে একটা খেজুরও কমলো না। আমি শুধু চেয়েছিলাম যে, আল্লাহ তাআলা আমার পিতার দেনা পরিশোধ করে দেন।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ
মীরাসের পূর্বে কর্জ পরিশোধ করা এবং এ বিষয়ে জাবির [রাঃআঃ]-এর হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে বর্ণনা বিরোধ
৩৬৩৭. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা বহু কর্জ রেখে ইনতিকাল করেন। [তিনি বলেন] আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললামঃ আমার পিতা কর্জ রেখে ইনতিকাল করিয়াছেন, আর তিনি তার খেজুর বাগানের উৎপাদন ব্যতীত আর কিছুই রেখে যাননি। আর এর উৎপাদন এমন যে, তাতে কয়েক বছর না মিলালে কর্জ আদায় হইবে না। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার সঙ্গে চলুন, যাতে পাওনাদাররা আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার না করে। এ কথায় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমার সঙ্গে আসলেন এবং প্রত্যেক স্তূপের চারদিকে প্রদক্ষিণ করিতে লাগলেন। তিনি প্রত্যেকটির নিকট গিয়ে সালাম করিলেন এবং দুআ করিলেন, এর উপর বসলেন। আর তিনি পাওনাদারদের ডেকে তাহাদের পাওনা পরিশোধ করিতে শুরু করিলেন এবং তাহাদের দেনা পরিশোধ করে দিলেন। আর সে পরিমান অবশিষ্ট রইল, যে পরিমান তারা নিয়ে গিয়েছিল।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৩৮. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইৱ্ন আমর ইৱ্ন হারাম [রাঃআঃ] ইনতিকাল করেন। তিনি দেনা রেখে যান। আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট পাওনাদারদের কাছে এ মর্মে সুপারিশ করার আবেদন করলাম যাতে তারা তার [পিতার] কিছু ঋণ কমিয়ে দেয়। তিনি তাহাদের কাছে [তা] দাবী করলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] আমাকে বল্লেনঃ হে জাবির! তুমি চলে যাও এবং প্রত্যেক প্রকার খেজুর পৃথক করে ফেল অর্থাৎ আজওয়া পৃথক কর এবং ইযক ইবনি যায়দ পৃথক করে রাখ। এভাবে অন্যান্য প্রকারকে [পৃথক কর]। পরে আমার নিকট লোক পাঠাবে। জাবির [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি [রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর কথামত] কাজ করলাম। পরে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এসে সর্বোচ্চ স্তূপের উপর অথবা মধ্যম স্তূপের উপর বসে বললেনঃ লোকদেরকে মেপে দিতে থাক। তিনি {জাবির [রাঃআঃ]} বলেনঃ আমি তাহাদেরকে মেপে দিতে লাগলাম এবং এভাবে তাহাদের পাওনা পরিশোধ করে দিলাম। আমার খেজুর অবশিষ্ট রইলো। মনে হলো যে, তা হইতে কিছুই কমেনি।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৩৯. জাবির ইৱ্ন আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার পিতা এক ইয়াহুদি হইতে খেজুর ধার নিয়েছিলেন। তার দেনা আদায় না হইতেই তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন এবং দুটি বাগান রেখে যান। ইয়াহুদির [পাওনা] খেজুর দুই বাগানের সব ফলকে পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছিল। নাবী [সাঃআঃ] ইয়াহুদিকে বললেনঃ তুমি কি এরূপ করিতে পার যে, তোমার খেজুরের অর্ধেক এ বছর এবং বাকি অর্ধেক আগামী বছর নিবে? ইয়াহুদি এতে অস্বীকৃত জানালো। তিনি জাবির [রাঃআঃ]-কে বললেনঃ তুমি খেজুর কাটার সময় আমাকে সংবাদ দিতে পারবে? আমি খেজুর কাটার সময় তাঁকে খবর দিলাম। তিনি আবু বকর [রাঃআঃ]-কে সাথে নিয়ে আসলেন এবং খেজুরের নিচের দিক হইতে মেপে মেপে ও কেটে দেওয়া শুরু করা হল। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বরকতের জন্য দুআ করিতে থাকলেন। ফলে তার সমস্ত পাওনা [আম্বারের বর্ণনা অনুসারে] আমাদের ছোট বাগানের খেজুর দ্বারাই আদায় হইয়া গেল। [আর বড় বাগান এমনই রয়ে গেল], জাবির [রাঃআঃ] বলেনঃ পরে আমি তাঁদের নিকট তাজা খেজুর এবং পানি পেশ করলাম। [সকলের পানাহার শেষ হলে] পরে তিনি [রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম]] বললেনঃ এগুলো সেই নিয়ামত, যে সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হইবে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৪০. জাবির ইৱ্ন আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার পিতা মারা যান এবং তাহাঁর উপর দেনা থেকে যায়। আমি আমার পিতার পাওনাদারদের ডেকে বললামঃ তারা যেন তার দেনার বিনিময়ে এই খেজুর নিয়ে নেয়। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করিল। কেননা, তারা তাতে পরিশোধ দেখিতে পেল না [তাহাদের কাছে খেজুরের পরিমান কম মনে হল]। জাবির [রাঃআঃ] বলেনঃ এরপর আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া একথা বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি যখন খেজুর কাটবে এবং উঠানে স্তূপকৃত করিবে, তখন আমাকে সংবাদ দেবে। জাবির [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি খেজুর কেটে উঠানে রেখে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আবু বকর এবং উমার [রাঃআঃ]-কে সাথে নিয়ে আসলেন। তিনি এসে তার উপর বসে পরলেন এবং বরকতের জন্য দুআ করিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তুমি তোমার পাওনাদারদের ডেকে আন এবং তাহাদের পাওনা দিয়ে দাও। তিনি {জাবির [রাঃআঃ]} বলেন, আমার পিতার কাছে যাদের পাওনা ছিল, তাহাদের সকলের পাওনা আদায় করে দিলাম, কারো পাওনা অবশিষ্ট রইলো না; বরং তের ওসাক{১} [খেজুর] অবশিষ্ট থেকে গেল। তারপর আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে এই সংবাদ দিলে তিনি শুনে হাসলেন এবং বললেনঃ যাও তুমি আবু বকর এবং উমারকেও এ খবর দাও। আমি তাঁদের কাছে গিয়ে এ খবর দিলে তারা বললেনঃ আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, নাবী [সাঃআঃ] যা করিলেন, তার ফল এটাই হইবে।
{১} এক ওসাক হল- ষাট সা এবং এক সা হল তিন সের এগার ছটাক।ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ ওয়ারিসের জন্য ওয়াসিয়াত করা বাতিল
৩৬৪১. আমর ইৱ্ন খারিজা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] খুতবায় বললেনঃ আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক হকদারের হক দিয়ে দিয়েছেন আর ওয়ারিসদের জন্য ওয়াসিয়াত নেই [বৈধ নয়]।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৪২. আমর ইৱ্ন খারিজা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হইয়া দেখলেন যে, তিনি নিজের সওয়ারীর উপর থেকে লোকদের খুতবা দিচ্ছেন। তখন ঐ সওয়ারী [উট] জাবর কাটছিল এবং তার মুখ থেকে ফেনা বেয়ে পড়ছিল। তিনি তাহাঁর খুতবায় বললেনঃ আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক লোকের মীরাসের হিস্সা বণ্টন করে দিয়েছেন; কাজেই ওয়ারিসদের জন্য ওয়াসিয়াত করা বৈধ হইবে না।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৪৩. আমর ইৱ্ন খারিজা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মহীয়ান নামের মালিক আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক হকারের অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, এখন আর ওয়ারিসের জন্য ওয়াসিয়াতের অবকাশ নেই।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ
নিকটাত্মীয়ের জন্য ওয়াসিয়াত
৩৬৪৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ [আরবি] [অর্থাৎ আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দের সতর্ক করে দিন।] এ আয়াত নাযিল হলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] [বিশেষভাবে] কুরায়শদের ডাকলেন। তারা একত্রিত হলে তিনি প্রথমে সাধারণ ও ব্যাপকভাবে লোকদেরকে, পরে নিজের আত্মীয়দেরকে [সতর্ক করে] বললেনঃ হে কাব ইবনি লুআঈয়ের বংশধর, হে বনী মুররা ইবনি কাব, হে বনী আবদে শামস, হে আবদে মানাফের সন্তানেরা! হে হাশেমিগন, হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানগণ! তুমি নিজেকে দোযখের আগুন হইতে রক্ষা কর। আমি তোমাদেরকে আল্লাহর [আযাব হইতে] রক্ষা করার মালিক নই। তবে তোমাদের আত্মীয়তা [রক্ত] সম্বন্ধ রয়েছে এবং তার আর্দ্রতায় আমি আর্দ্রিত করব।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৪৫. মুসা ইবনি তালহা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আবদে মানাফের বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে ক্রয় করে নাও [আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা কর]। আমি তোমাদেরকে কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখি না; [আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা করিতে] সক্ষম নই। হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানগণ! তোমরা তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হইতে বাঁচাও। আমি তোমাদের জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখি না। আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা করিতে পারব না। কিন্তু আমার আর তোমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। আমি তার আর্দ্রতা দারা নিজেকে আর্দ্রিত করব [হক আদায় করব]।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৩৬৪৬. আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]–এর উপর [আরবি] “আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দের সতর্ক করে দিন” নাযিল হলো, তখন তিনি বলিলেনঃ হে কুরায়শ সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদেরকে আল্লাহর নিকট হইতে ক্রয় করে নাও [আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা কর]। আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ [আযাব] হইতে রক্ষা করিতে সক্ষম নই। হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানেরা! তোমরা নিজেদের ক্রয় করে নাও। আমি তোমাদেরকে আল্লাহ [আযাব] হইতে রক্ষা করিতে পারব না। হে আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব! আমি তোমাদেরকে আল্লাহ [আযাব] হইতে রক্ষা করিতে পারব না। হে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ফুফী সফিয়্যা! আমি আপনাকে আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা করিতে পারব না। হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা! তুমি যা ইচ্ছা আমার নিকট চাইতে পার, আমি তোমাকে আল্লাহ্ [আযাব] হইতে রক্ষা করিতে পারব না।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৪৭. আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যখন “আপনি আপনার নিকটাত্মীয়কে সতর্ক করুন”, এ আয়াত নাযিল হলো, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে কুরায়শের লোকগণ! তোমরা নিজেদেরকে আল্লাহর নিকট হইতে খরিদ কর [আযাব হইতে রক্ষা কর]। আমি আল্লাহর [আযাবের] সামনে তোমাদেরকে কোন উপকার করিতে পারব না। [রক্ষা করিতে সক্ষম হইবে না]। হে আবদে মানাফের বংশধরগণ! আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা করিতে পারব না। হে আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব! আমি তোমার কোন উপকার সাধন করিতে পারব না। হে রসূলুল্লাহ্র ফুফী সফিয়্যা! আমি আল্লাহর আযাব হইতে আপনাকে রক্ষা করিতে সক্ষম নই। হে ফাতিমা! তুমি যা ইচ্ছা আমার নিকট চাইতে পার, আল্লাহর আযাব হইতে তোমাকে রক্ষা করার সামর্থ্য আমার নেই।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৪৮. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যখন [আরবি] আয়াত নাযিল হলো, তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে মুহাম্মদ-তনয়া ফাতিমা! হে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা সফিয়া! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধররা! আল্লাহর বিপক্ষে আমি তোমাদের কোন কাজে আসব না [আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা করিতে সক্ষম নই]। তোমরা আমার মাল হইতে যা ইচ্ছা চেয়ে নিতে পার।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ
হঠাৎ মৃত্যু হলে মৃতের পক্ষ হইতে তার পরিবারের সাদাকা করা কি মুস্তাহাব?
৩৬৪৯. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বললেনঃ আমার আম্মা হঠাৎ ইনতিকাল করিয়াছেন, আমার বিশ্বাস, যদি তিনি কথা বলার সময় পেতেন, তবে দান করার কথা বলিতেন। আমি কি তার পক্ষ হইতে সাদাকা করবো? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ। তুমি তার পক্ষ হইতে সাদাকা কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৫০. সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম]-এর সাথে কোন যুদ্ধে বের হলেন, এ সময় তার মাতা মদীনায় মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন। তাকে বলা হলোঃ আপনি ওয়াসিয়াত করুন। তিনি বলিলেনঃ আমি কিসের ওয়াসিয়াত করবো, মাল তো সাদ-এর। সাদ পৌছার পূর্বেই তিনি ইনতিকাল করিলেন। সাদ [রাঃআঃ] আসলে তার নিকট একথা বলা হলে তিনি বলিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদি আমি তার পক্ষ হইতে সাদাকা করি, তবে কি তার কোন উপকার হইবে? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হ্যাঁ, তখন সাদ একটি বাগানের নাম নিয়ে বলিলেনঃ আমি তা তার পক্ষ হইতে সাদাকা করলাম।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৫.পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ হইতে সাদাকার ফযীলত
৩৬৫১. আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন লোক মারা যায়, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল [জারি থাকে]। [প্রথম] সাদাকা জারিয়া [চলমান সাদাকা]; [দ্বিতীয়] ঐ ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; [তৃতীয়] নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৫২. আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিলেনঃ আমরা পিতা কিছু মাল রেখে মারা গেছেন, কিন্তু তিনি ওয়াসিয়াত করেন নি। আমি যদি তার পক্ষ হইতে সাদাকা করি, তবে কি তা- তার জন্য কাফ্ফারা হইবে ? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৫৩. শারীদ ইবনি সুআয়দ সাকাফী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামঃ আমার মাতা একটি গোলাম আযাদ করার ওয়াসিয়াত করিয়াছেন। আর আমার নিকট একটি হাবশী দাসী রহিয়াছে, আমি যদি তাকে আমার মার পক্ষ হইতে মুক্ত করি, তবে কি তা যথেষ্ট হইবে? তিনি বলিলেনঃ তাকে [সেই দাসীকে] আমার নিকট নিয়ে এসো। পরে আমি তাকে তার নিকট নিয়ে গেলাম। নাবী [সাঃআঃ] তাকে বলিলেনঃ তোমার রব কে? সে বললঃ আমার রব আল্লাহ। তিনি তাকে বলিলেনঃ আমি কে? সে বলিলঃ আপনি আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]। তিনি বলিলেনঃ তাকে মুক্ত করে দাও, সে ঈমানদার।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৬৫৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমার মাতা ইনতিকাল করিয়াছেন, কিন্তু তিনি কোন ওয়াসিয়াত করে যাননি। আমি কি তার পক্ষ হইতে সাদাকা করবো? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, [করিতে পার]।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৫৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বলিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তার [আমার] মাতা ইনতিকাল করিয়াছেন। তার পক্ষ হইতে আমি সাদাকা করলে তার কি কোন উপকার করিবে? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ। সে বললঃ আমার একটি বাগান আছে। আমি আপনাকে সাক্ষী রাখলাম, আমি তা তার পক্ষ হইতে সাদাকা করলাম।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৫৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, [একদা] তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললেনঃ আমার মাতা মান্নত [অনাদায়ী] রেখে ইনতিকাল করিয়াছেন, আমি তাহাঁর পক্ষ হইতে দাসমুক্ত করলে তা কি তার জন্য যথেষ্ট হইবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তুমি তোমার মাতার পক্ষ হইতে গোলাম আযাদ কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৩৬৫৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তাহাঁর মায়ের মান্নত সম্পর্কে যে, তিনি তা পূর্ণ করার পূর্বেই মারা গেছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তা তাহাঁর পক্ষ হইতে আদায় কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৫৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন তাহাঁর মাতার মান্নত সম্পর্কে, তিনি তা আদায় করার পূবেই ইনতিকাল করিয়াছেন। তিনি বললেনঃ তুমি তা তার পক্ষ হইতে আদায় কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৫৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করিলেন, তার মাতার মান্নত সম্পর্কে, তা আদায় করার পূর্বেই তিনি ইনতিকাল করেন। তিনি বললেনঃ তুমি তা তার পক্ষ হইতে আদায় কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬.পরিচ্ছেদ ঃ সুফিয়ানের বর্ণনায় বর্ণনা বিরোধ
৩৬৬০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করিলেন যে তাহাঁর মাতার উপর মান্নত ছিল, তা আদায় করার আগেই তিনি মারা যান। তিনি [রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তা তাহাঁর পক্ষ হইতে আদায় কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৬১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার মা তাহাঁর [অনাদায়ী] মান্নত রেখে ইনতিকাল করিলেন। আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে [এ বিষয়ে] জিজ্ঞাসা করলে, তখন [নাবী [সাঃআঃ]] আমাকে তাহাঁর পক্ষ হইতে তা আদায় করার আদেশ দিলেন।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৬২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইবনি উবাদা আনসারী [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট মান্নত সম্পর্কে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করিলেন যা তাহাঁর মায়ের যিম্মায় ছিল এবং তা তিনি আদায়ের আগে মারা যান। তিনি [রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তার পক্ষ হইতে তা আদায় কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৬৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললেনঃ আমার মার উপর মান্নত ছিল, কিন্তু তিনি তা আদায় না করে মারা যান। তখন তিনি [নাবী [সাঃআঃ]] বললেনঃ তুমি তা তাহাঁর পক্ষ হইতে আদায় কর।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬৬৪. সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আমার মাতা ইনতিকাল করিয়াছেন, আমি কি তাহাঁর পক্ষ হইতে সাদাকা করব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ কোন্ সাদাকা উত্তম? তিনি বললেনঃ পানি পান করানো[-র ব্যবস্থা করা]।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৬৬৫. সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! কোন সাদাকা উত্তম? তিনি বললেনঃ পানি পান করানো।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৬৬৬. সাদ ইবনি উবাদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর মাতা ইনতিকাল করলে, তিনি বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমার মা ইনতিকাল করিয়াছেন। আমি কি তাহাঁর পক্ষ হইতে সাদাকা করবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি সাদ [রাঃআঃ] বললেনঃ কোন সাদাকা উত্তম? তিনি বললেনঃ পানি পান করানোর ব্যবস্থাপনা [অব্যাহত রয়েছে]।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি
৭.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতীমের মালের অভিভাবক হওয়ার নিষেধাজ্ঞা
৩৬৬৭. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম] আমাকে বললেনঃ হে আবু যর! আমি তোমাকে দুর্বল দেখছি। আর আমি আমার জন্য যা ভালবাসি, তা তোমার জন্যও ভালবাসি। কখনও দুই বাক্তির আমীর [পরিচালক] হইবে না এবং ইয়াতীমের মালের ওলী হইবে না।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতীমের মালের দায়িত্ব পালনকালে কি সুযোগ গ্রহণ করিবে
৩৬৬৮. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]–এর নিকট এসে বললোঃ আমি গরীব, আমার কিছুই নেই, আর আমার [দায়িত্বে] একজন ইয়াতীম রয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি ইয়াতীমের মাল হইতে ভক্ষণ কর; কিন্তু অতিরিক্ত এবং বাহুল্য খরচ করো না, [নাহক খাবে না] আর নিজের জন্য মাল জমা করিবে না।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩৬৬৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যখন {আরবি} [অর্থঃ তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত ইয়াতীমের মালের নিকটবর্তী হয়ো না।] এবং {আরবি} [অর্থঃ যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের মাল ভক্ষণ করে ……….] নাযিল হলো, তখন লোক ইয়াতীমের মালের নিকট যাওয়া এবং তাহাদের খাদ্যের নিকট যাওয়া হইতে নিজকে দুরে রাখতে লাগলো। মুসলমানদের জন্য এটা অত্যন্ত কঠিন হইয়া পড়লো। এ ব্যাপারে তারা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট অভিযোগ করলে আল্লাহ্ তায়ালা নাযিল করলেনঃ {আরবি} পর্যন্ত। [অর্থঃ তারা আপনাকে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, তাহাদের জন্য সংযত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করাই উত্তম ……………]।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৬৭০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এ আয়াত {আরবি} সম্বন্ধে বলেনঃ যাহার তত্তাবধানে ইয়াতীম ছিল, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সে ইয়াতীমের খাদ্য, তার পানীয় তার হাঁড়ি-পাতিল সব পৃথক করে দেয়। এটা মুসলমানদের জন্য কঠিন হইয়া পড়লো। তখন আল্লাহ্ তায়ালা নাযিল করলেনঃ {আরবি} [অর্থ যদি তাহাদের সাথে মিশ্রিত কর [সম্মিলিত রান্নাবান্না ইত্যাদি ……..] তবে তারা তো তোমাদের দ্বীনি ভাই-ই]। ইয়াতীমের মাল তাহাদের মালের সাথে মিশ্রিত করার অনুমতি দিলেন।
ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৯.পরিচ্ছেদঃ ইয়াতিমের মাল খাওয়া থেকে বিরত থাকা
৩৬৭১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা ধ্বংস আনয়নকারী সাত বস্তু হইতে আত্মরক্ষা করিবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রসূলুল্লাহ্! সেগুলো কি? তিনি বললেনঃ [তা হলো] ১। আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, ২। যাদু করা,১ ৩। যে প্রাণ আল্লাহ নিষিদ্ধ [মর্যাদা- সম্পন্ন] করিয়াছেন তা [আইনগত] যথার্থ কারণ ব্যতীত [অন্যায়ভাবে কাউকে] হত্যা করা, ৪। সুদ খাওয়া, ৫। ইয়াতীমের মাল খাওয়া, ৬। যুদ্ধের ময়দান হইতে পলায়ন করা, ৭। মূ্মিন [সরলা সতী] মহিলাদের প্রতি ব্যভিচারের [মিথ্যা] অপবাদ দেয়া।
{১} নাসাঈ–র রিওয়ায়াতে {আরবি} শব্দ রয়েছে যাহার অর্থ অতিশয় লোভজনিত কৃপণতা।তবে বুখারী-মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে {আরবি} শব্দ রয়েছে যাহার অর্থ যাদু করা।ইসলামে অসিয়ত হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply