বিবাহ আইন । পয়গাম, বংশ, কুমারী, বয়স্ক, মুহরিমের বিয়ে

বিবাহ আইন । পয়গাম, বংশ, কুমারী, বয়স্ক, মুহরিমের বিয়ে

বিবাহ আইন । পয়গাম, বংশ, কুমারী, বয়স্ক, মুহরিমের বিয়ে >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ২৬, নিকাহ, হাদীস (৩১৯৬ – ৩২৮২)

১.পরিচ্ছেদঃ ভূমিকা
২.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসূলের উপর যা ফরয [বিধিবদ্ধ] করিয়াছেন এবং অন্যদের জন্য যা হারাম করিয়াছেন – আল্লাহর ইচ্ছানুসারে তাহাঁর নৈকট্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে
৩.পরিচ্ছেদঃ বিবাহে উদ্ধুদ্ধ করা
৪.পরিচ্ছেদঃ চির-কুমার থাকার নিষিদ্ধতা
৫.পরিচ্ছেদঃ যে বিবাহিত ব্যক্তি চারিত্রিক পবিত্রতা [ব্যাভিচার হইতে রক্ষা পেতে] চায়, তার প্রতি আল্লাহর সাহায্য
৬.পরিচ্ছেদঃ কুমারীর বিবাহ
৭.পরিচ্ছেদঃ সম-বয়সীকে বিবাহ করা
৮.পরিচ্ছেদঃ আযাদকৃত গোলামের সংগে আরবী স্বাধীন নারীর বিবাহ
৯.পরিচ্ছেদঃ বংশ মর্যাদা
১০.পরিচ্ছেদঃ নারীকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয়
১১.পরিচ্ছেদঃ বন্ধ্যা নারীকে বিবাহ করা পছন্দনীয় নয়
১২.পরিচ্ছেদঃ ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা
১৩.পরিচ্ছেদঃ ব্যভিচারিণীদের বিবাহ করা মাকরূহ
১৪.পরিচ্ছেদঃ কোন্‌ নারী উত্তম
১৫.পরিচ্ছেদঃ পুণ্যবতী নারী
১৬.পরিচ্ছেদঃ আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন নারী
১৭.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের পূর্বে [কনেকে] দেখার বৈধতা
১৮.পরিচ্ছেদঃ শাওয়াল মাসে বিবাহ
১৯.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের পয়গাম
২০.পরিচ্ছেদঃ এক ব্যাক্তির প্রদত্ত বিবাহের প্রস্তাব চলাকালে অন্য ব্যক্তির প্রস্তাব নিষিদ্ধ
২১.পরিচ্ছেদঃ প্রস্তাব ছেড়ে দিলে অথবা অনুমতি দিলে অন্যজনের প্রস্তাব দেয়া সম্পর্কে
২২.পরিচ্ছেদঃ কোন নারী বিবাহ পয়গাম সমন্ধে পুরুষের নিকট পরামর্শ চাইলে তার [প্রস্তাবকারী] সম্পর্কে জ্ঞান বিষয়কে অবহিত করিবে না।
২৩.পরিচ্ছেদঃ কোন নারী সম্বন্ধে কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নিকট পরামর্শ চাইলে, সে যা জানে তা অবহিত করিবে কি?
২৪.পরিচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির নিজের কন্যাকে পছন্দনীয় ব্যক্তির কাছে বিবাহ দেয়ার প্রস্তাব করা
২৫.পরিচ্ছেদঃ কোন মহিলার পছন্দনীয় ব্যক্তির নিকট নিজেকে পেশ করা
২৬.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের প্রস্তাবে মহিলা নামাজ আদায় এবং এ ব্যাপারে তার রব [আল্লাহ] সমীপে ইস্তিখারা করা।
২৭.পরিচ্ছেদঃ ইস্তিখারা কিভাবে করিতে হইবে?
২৮.পরিচ্ছেদঃ পুত্রের তার মাকে বিবাহ দেওয়া
২৯.পরিচ্ছেদঃ ছোট [অপ্রাপ্ত বয়স্কা] কন্যার বিবাহ দান
৩০.পরিচ্ছেদঃ বয়স্ক কন্যার বিবাহ দেয়া
৩১.পরিচ্ছেদঃ কুমারীর বিবাহে তার সম্মতি গ্রহণ করা
৩২.পরিচ্ছেদঃ কুমারী মেয়ের নিকট পিতার মতামত চাওয়া
৩৩.পরিচ্ছেদঃ পূর্বে বিবাহিতা নারীর অনুমতি গ্রহণ
৩৪.পরিচ্ছেদঃ বিবাহে কুমারীর সম্মতি প্রদান
৩৫.পরিচ্ছেদঃ পূর্বে বিবাহিতা নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পিতা তাকে বিবাহ দেয়া
৩৬.পরিচ্ছেদঃ কুমারী নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পিতার তাকে বিবাহ দেয়া
৩৭.পরিচ্ছেদঃ মুহরিম ব্যক্তির বিবাহের বৈধতা
৩৮.পরিচ্ছেদঃ মুহরিমের বিবাহের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
৩৯.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের সময় যা বলা মুস্তাহাব
৪০.পরিচ্ছেদঃ কোন ধরনের খুতবা মাকরূহ
৪১.পরিচ্ছেদঃ যে কথা দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়
৪২পরিচ্ছেদঃ বিবাহের শর্ত প্রসঙ্গে

১.পরিচ্ছেদঃ ভূমিকা

৩১৯৬. আতা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা ইবন্‌ আব্বাস [রাঃআঃ]- এর সারিফ১, নামক স্থানে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] – এর স্ত্রী মায়মূনা [রাঃআঃ]- এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। ইবন্‌ আব্বাস [রাঃআঃ] বললেনঃ ইনি মায়মূনা [রাঃআঃ]। তোমরা যখন তাহাঁর জানাযা উঠাবে, অধিক ঝাঁকুনি দেবে না এবং হেলাবে না। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] – এর নয়জন স্ত্রী ছিলেন, তিনি আট জনের জন্য [রাত্রি বাসের] সময় বণ্টন করিতেন, আর একজনের জন্য বণ্টন করিতেন না।

{১} মক্কা হইতে দশ মেইল দুরত্তে অবস্থিত একটি স্থানে। এ একই স্থানে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাঁকে বিবাহ করেন এবং মিলিত হন এবং এ স্থানেই তাহাঁর ওফাত হয়।বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১৯৭. ইবন্‌ আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] –এর ওফাতের সময় তাহাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন, যাঁদের সাথে তিনি মিলিত হইতেন, সওদা [রাঃআঃ] ব্যতীত। কেননা তিনি তাহাঁর দিন-রাত [-এর পালা] আয়েশা [রাঃআঃ] – কে দান করেছিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১৯৮. কাতাদা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আনাস [রাঃআঃ] বর্ণনা করিয়াছেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] একই রাতে তাহাঁর সব স্ত্রীদের কাছে গমন করিতেন। তখন তাহাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১৯৯. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে মহিলাগণ রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] – এর জন্য তাঁদের নিজেদের সমর্পণ করিতেন, আমি তাঁদের এ কাজকে আত্মমর্যাদাবোধের হানি মনে করে বলতাম, কোন স্বাধীন নারী কি নিজেদের সমর্পণ করিতে পারে। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেনঃ অর্থঃ আপনি তাহাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন [৩৩ঃ৫৫ ]। তখন আমি বললামঃ আমি দেখছি, আপনার রব আপনার যা ইচ্ছা, তা দ্রুত পূর্ণ করেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০০. সাহ্‌ল ইবনি সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সাহাবীগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় একজন মহিলা বলে উঠলোঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]। আমি আমাকে আপনার জন্য দান করলাম, এখন আমার ব্যাপারে আপনার মতামত প্রয়োগ বাস্তবায়িত করুন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ একে আমার বিবাহে দান করুন। তিনি বললেনঃ যাও, একটি লোহার আংটি হলেও [তা নিয়ে এসো]। সে ব্যক্তি গেল, কিন্তু কিছুই পেল না, একটি লোহার আংটিও না। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ তোমার কি কুরআনের সুরাসমূহ থেকে কিছু মুখস্ত আছে ? সে ব্যক্তি বললোঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, তখন কুরআনের যে সব সূরা তার মুখস্ত ছিল, এর কারণে তাহাঁর কাছে বিবাহ দিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২.পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসূলের উপর যা ফরয [বিধিবদ্ধ] করিয়াছেন এবং অন্যদের জন্য যা হারাম করিয়াছেন – আল্লাহর ইচ্ছানুসারে তাহাঁর নৈকট্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে

৩২০১. আবু সালামা ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] – এর স্ত্রী আয়েশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাহাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, আল্লাহ তাআলা যখন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] – কে তাহাঁর স্ত্রীগণকে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে ইখতিয়ার [স্বাধিকার] প্রদানের আদেশ করিলেন, আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, তখন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে দিয়েই আরম্ভ করিলেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমার নিকট একটি কথা বলব, কিন্তু তুমি সে ব্যাপারে তোমার পিতামাতার পরামর্শ গ্রহনের পূর্বে [অবিলম্বে] সে সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করিবে না। কারন তিনি জানিতেন, আমার মাতাপিতা তাহাঁর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পরামর্শ আমাকে দেবেন না। তারপর রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ [কুরআনের ভাষা অনুসারে] “হে নাবী। আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, যদি তোমরা পার্থিব জীবন এবং এর সাজসজ্জা কামনা কর; তবে আসো, আমি তোমাদের ভোগ সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় দেই [৩৩ঃ২৮]। আমি বললামঃ এ ব্যাপারে আমি আমার পিতামাতার নিকট পরামর্শ করব ? আমি তো আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর স্ত্রীগণকে তাহাঁর দাম্পত্য বন্ধনে থাকা না থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্বাধিকার দিয়েছিলেন। তা কি তালাক বিবেচিত হইয়াছিল ? অর্থাৎ এতে তাঁরা তালাক হননি।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে ইখতিয়ার দিলে আমরা তাঁকেই গ্রহন করলাম তা [কখনো] তালাক বলে গণ্য হয়নি।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০৪. আতা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা [রাঃআঃ] বলেছেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ওফাত লাভ করেন নি, যে পর্যন্ত না মহিলাদের [মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন —- তাকে গ্রহণ করার]।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] – এর ওফাত হয়নি যতক্ষন না আল্লাহ তাআলা তাহাঁর জন্য হালাল করে দিয়েছিলেন যে তিনি মহিলাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বিবাহ করিতে পারবেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩.পরিচ্ছেদঃ বিবাহে উদ্ধুদ্ধ করা

৩২০৬. আলকামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি ইবন্‌ মাসউদ [রাঃআঃ]- এর সঙ্গে এর নিকট ছিলাম এবং তখন তিনি উসমান [রাঃআঃ]- এর কাছে ছিলেন। তখন উসমান [রাঃআঃ] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [একদিন] বের হলেন —– অর্থাৎ কয়েকজন যুবকদের নিকট। আবু আবদুর রহমান বলেন, [আরবি] শব্দ দ্বারা কাদের বুঝানো হইয়াছে, আমি তা উত্তম রূপে বুঝতে পারি নি। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ধনবান [মোহরানা ও স্ত্রীর ঘোরপোষ বহনে সমর্থ] হয়, সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা দৃষ্টি সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের অধিক হিফাজত করে। আর যে ব্যক্তি ধনবান [সমর্থ] না হয়, সিয়াম পালন তার জন্য কামভাবের নিয়ন্ত্রক।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০৭. আলকামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উসমান [রাঃআঃ] ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ]- কে বলিলেনঃ তোমার কি কোন যুবতীর প্রতি আগ্রহ আছে, আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ দিয়ে দেব। তখন আবদুল্লাহ্‌ ইবন্‌ মাসউদ [রাঃআঃ] আলকামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- কে ডেকে হাদীস বর্ণনা করিলেন যে, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিবাহের খরচাদির সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টি সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের অধিক হিফাজত করে। আর যাহার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়াম পালন করে, কেননা তা-ই তার জন্য কামক্ষুধার নিয়ন্ত্রক।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০৮. আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি বিবাহের খরচাদির সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে; আর যে ব্যক্তি অসমর্থ, সে যেন সিয়াম পালন করে। ইহা তার যৌন শক্তির নিয়ন্ত্রক। আবু আব্দুর রহমান বলেনঃ এ হাদিসের আসওয়াদ বর্ণনাকারী মাহফুজ [সুরক্ষিত] নয়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০৯. আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদের বলেছেনঃ হে যুবক দল। তোমাদের মধ্যে যে খরচ বহন করিতে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টি সংযতকারী এবং লজ্জাস্থানের অধিক হিফাজতকারী। আর যে অসমর্থ, সে যেন সিয়াম পালন করে; সিয়াম তার যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রক।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২১০. আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে বলেছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়। তোমাদের মধ্যে যে খরচাদি বহন করিতে সক্ষম, সে যেন বিবাহ করে। অনুরূপ পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২১১. আলকামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি মিনায় আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ]- এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাহাঁর সাথে উসমান [রাঃআঃ]- এর সাক্ষাৎ হলো, তিনি তাহাঁর নিকট দাঁড়িয়ে তাহাঁর সংগে কথা বলিতে লাগলেনঃ হে আবু আব্দুর রহমান। আমি কি তোমাকে একজন যুবতী মেয়ে বিবাহ করাব? হয়তো তাহাঁর সংস্পর্শে তোমার বিগত জীবনের [যৌবনের] কিছুটা স্মরন করিয়ে দেবে। আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তো একথা বললে, অথচ রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে বলেছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিবাহের খরচাদির সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪.পরিচ্ছেদঃ চির-কুমার থাকার নিষিদ্ধতা

৩২১২. সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উসমান ইবনি মায্‌উনকে চির-কুমার থাকতে [অর্থাৎ বিবাহ না করে ও সংসার জীবন বর্জন করে সব ইবাদতে নিমগ্ন থাকতে] নিষেধ করিয়াছেন, তিনি যদি তাকে অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরা খাসি হওয়া গ্রহন করতাম।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২১৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বিবাহ না করে সংসার বিরাগী জীবন যাপন [চির কৌমার্য] হইতে নিষেধ করিয়াছেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩২১৪. সামুরা ইবনি জুন্দুব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বিবাহ না করে সংসার ত্যাগী জীবন যাপন [চির কৌমার্য] হইতে নিষেধ করিয়াছেন। আবু আবদুর রহমান বলেন, কাতাদা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আশআস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে অধিক দৃঢ় ও অধিক স্মরন শক্তির অধিকারী। আর আশআস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর হাদীস অত্যধিক বিশুদ্ধ। মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২১৫. আবু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] বলেছেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ । আমি একজন যুবক ব্যক্তি। আমি নিজের ব্যাপারে ব্যভিচারের ভয় করি, অথচ বিবাহের খরচ বহনের সামর্থ্য ও আমার নাই। আমি কি খাসি হওয়া গ্রহণ করব? [একথা শুনে] তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনবার এমন বলার পর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ হে আবু হুরাইরা। তুমি কী [পরিস্থিতির] সম্মুখীন হইবে তা [তোমার ভবিষ্যৎ কর্ম সম্বন্ধে] লিখিত হইয়া গেছে, এখন তুমি ইচ্ছা হয়, খাসি হইতে পার বা তা পরিত্যাগ করিতে পার। আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আওযায়ী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ হাদীস যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে শ্রবণ করেননি। এ হাদীসটি সহীহ্‌। এ হাদীসটি ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২১৬. সাদ ইবনি হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি বলেন, আমি বললামঃ আমি আপনাকে সংসার ত্যাগী জীবন [কৌমার্য] সম্বন্ধে প্রশ্ন করিতে ইচ্ছা করি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেনঃ তা করো না। তুমি কি শোন নি যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “আর আমি আপনার পূর্বেও অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাহাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম”। [১৩ঃ৩৮]। সুতরাং তুমি বিবাহ না করে সংসার ত্যাগী জীবন-যাপন কর না।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৩২১৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

সাহাবায়ে কিরাম-এর একদলের কেউ কেউ বললেনঃ আমি নারীদের বিয়ে করবো না। কেউ বললেনঃ আমি গোশত আহার করবো না। আর কেউ বললেনঃ আমি বিছানায় শয়ন করবো না। আবার কেউ বললেনঃ এমন সিয়াম পালন করব, আর কখনও সিয়াম ভঙ্গ করবো না। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তা শ্রবণ করে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেনঃ লোকদের কি হলো – যারা এমন এমন কথা বলে! কিন্তু আমি [রাতের] কিছু অংশে নামাজ আদায় করি, আবার নিদ্রা যাই; সিয়াম পালন করি আবার ভঙ্গ করি এবং নারিদের বিয়ে করি। যে আমার সুন্নাত হইতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫.পরিচ্ছেদঃ যে বিবাহিত ব্যক্তি চারিত্রিক পবিত্রতা [ব্যাভিচার হইতে রক্ষা পেতে] চায়, তার প্রতি আল্লাহর সাহায্য

৩২১৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তিন প্রকারের লোক যাদের উপর আল্লাহর জন্য হক রয়েছে, মহান মহিয়ান আল্লাহ অবশ্য তাহাদের সাহায্য করিবেনঃ যে মুকাতাব দাস [কিতাবাতের অর্থ] {১} আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করে, যে বিবাহিত ব্যক্তি চারিত্রিক পুত-পবিত্রতা [ব্যভিচার হইতে রক্ষা পেতে] চায় এবং আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ।

{১} গোলাম ও তার মালিকের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে মালিকের নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ প্রদান করে গোলামের মুক্তি লাভের চুক্তিকে কিতাবাত চুক্তি বলে এবং এরূপ গোলামকে মুকাতিব বলে।বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৬.পরিচ্ছেদঃ কুমারীর বিবাহ

৩২১৯. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

বিবাহ করার পড় আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] –এর খিদমতে আগমন করলে তিনি বললেনঃ হইয়া জাবির! তুমি কি বিবাহ করেছ? আমি বললামঃ জ্বী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কুমারী, না বিবাহিতা? আমি বললামঃ বিবাহিতা। তিনি ইরশাদ করলেনঃ কুমারী কেন বিবাহ করলে না, যে তোমার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতো, আর তুমি তার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করিতে!

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২২০. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেনঃ হে জাবির? আমার অজ্ঞাতে তুমি কি স্ত্রী গ্রহণ করেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ, ইয়া রসূলুল্লাহ্! তিনি বললেনঃ কুমারী, না পূর্বে বিবাহিতা [তালাকপ্রাপ্তা ; বিধবা] ? আমি বললামঃ পূর্বে বিবাহিতা। তিনি বললেনঃ কেন কুমারী [বিবাহ] করলে না, তাহলে তুমি তার সাথে আমদ-ফুর্তি করিতে এবং সেও তোমার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতো।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭.পরিচ্ছেদঃ সম-বয়সীকে বিবাহ করা

৩২২১. আবদুল্লাহ্‌ ইবনি বুরায়দা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবু বকর এবং উমার [রাঃআঃ] ফাতিমা [রাঃআঃ]-এর বিবাহের পয়গাম পেশ করলে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ সে তো অল্প বয়স্কা। এরপর আলী [রাঃআঃ] প্রস্তাব করলে তিনি তাহাঁর সাথে বিবাহ দিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮.পরিচ্ছেদঃ আযাদকৃত গোলামের সংগে আরবী স্বাধীন নারীর বিবাহ

৩২২২. উবায়দুল্লাহ্‌ ইবনি আবদুল্লাহ্‌ ইবনি উতবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্‌ ইবনি আমর ইবনি উসমান, মারওয়ানের খিলাফতকালে বিনত সাঈদ ইবনি যায়দকে চূড়ান্ত [তিন] তালাক দিলেন। তিনি ছিলেন তখন একজন পূর্ণ যুবক। আর বিনত সাঈদ-এর মাতা ছিলেন বিনত কায়স। তার খালা ফাতিমা বিনত কায়স [রাঃআঃ] তার নিকট সংবাদ পাঠালেন, সে যেন আবদুল্লাহ্‌ ইবনি আমরের ঘর থেকে স্থানান্তরিত হইয়া যায়। মারওয়ান এ খবর শুনে বিনত সাঈদ-এর নিকট লোক পাঠিয়ে আদেশ করিলেন, সে যেন তার ঘরে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তার ঘরে ইদ্দত পালনের পূর্বে তাকে কোন বিষয় তাকে তার ঘর হইতে বের করলো? সে খলিফার নিকট সংবাদ পাঠালো, তার খালা তাকে এ আদেশ করিয়াছেন। ফাতিমা বিনত কায়স বলিলেন, তিনি আবু আমর ইবনি হাফসের বিবাহে ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যখন আলী ইবনি আবী তালিব [রাঃআঃ]-কে ইয়ামানে গভর্নর করে পাঠালেন, তখন তিনি [স্বামী] তাহাঁর সাথে গিয়েছিলেন, [সেখান হইতে] তিনি তাহাঁর নিকট এক তালাক পাঠালেন, যা ছিল তাহাঁর অবশিষ্ট তালাক। তিনি হারিস ইবনি হিশাম এবং আইয়াশ ইবনি আবী রবীআ [রাঃআঃ]-কে তাহাঁর খোরপোষ দিয়ে দিতে আদেশ করিলেন। ফাতিমা [রাঃআঃ] হারিস এবং আইয়াশ [রাঃআঃ]-এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাহাঁর স্বামী তাহাদেরকে যে খোরপোষ দিতে বলেছিলেন, তা চেয়ে পাঠালেন। তাঁরা উভয়ে বললেনঃ আল্লাহর শপথ আমাদের নিকট তার কোন খোরপোষ নেই; তবে যদি সে গর্ভবতী হয়। আর আমাদের অনুমতি ব্যতীত তার আমাদের ঘরে থাকার কোন অধিকার নেই। এরপর তিনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর খিদমতে গমন করে তা তাহাঁর কাছে বর্ণনা করিলেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হারিস এবং আইয়াশ [রাঃআঃ]-কে সত্যায়ন করিলেন। তখন ফাতিমা [রাঃআঃ] বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]! আমি কোথায় যাব? তিনি বললেনঃ তুমি অন্ধ ইবনি উম্মু মাকতূম [রাঃআঃ] যাকে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর কিতাবে [অন্ধ] উল্লেখ করিয়াছেন, তাহাঁর নিকট থাক। ফাতিমা [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি তাহাঁর নিকটই ইদ্দত পূর্ণ করলাম। তিনি ছিলেন দৃষ্টি শক্তিহীন ব্যাক্তি। আমি তাহাঁর ঘরে আমার [অতিরিক্ত] কাপড় খুলে রাখতাম। পরে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে উসামা ইবনি যায়দ-এর নিকট বিবাহ দিলেন। মারওয়ান এ বিষয়টি প্রত্যাখান করিলেন। তিনি বলিলেন, তোমার পূর্বে এ হাদীস আমি কারও নিকট শ্রবণ করিনি। এ ব্যাপারে লোককে যে বিধান পালন করিতে দেখেছি, আমি তা-ই পালন করবো। [সংক্ষিপ্ত]

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২২৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুযায়ফা ইবনি উতবা ইবনি রবীআ ইবনি আব্‌দ শামস ছিলেন ঐ সকল লোকের মধ্যে যারা রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সংগে বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সালিম নামে এক ব্যক্তিকে [পালক] পুত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন এবং তার সাথে তার ভ্রাতৃকন্যা হিন্দা বিনত ওয়ালীদ ইবনি উতবা ইবনি রবীআ ইবনি আবদ শামস-এর বিবাহ দেন। সে ছিল এক আনসারী মহিলার ক্রীতদাস। যেমন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যায়দ-কে পূত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। জাহিলী যুগে নিয়ম ছিল, যদি কেউ কাউকেও পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করতো, লোক তাকে তার ছেলে বলেই ডাকতো এবং এ ছেলে ঐ লোকের ওয়ারিশ হতো। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “তোমরা তাহাদের ডাক তাহাদের পিতৃ-পরিচয়ে, এটাই আল্লাহর দৃষ্টিতে অধিক ন্যায়সঙ্গত; যদি তোমরা তাহাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই এবং বন্ধু। [৩৩ঃ৫]।” এরপর যাহার পিতৃ পরিচয় না থাকতো, সে বন্ধু বা ধর্মীয় ভাই হিসেবে পরিগণিত হতো। [সংক্ষিপ্ত]

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২২৪. রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর স্ত্রী আয়েশা [রাঃআঃ] এবং উম্মু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুযায়ফা ইবনি উতবা রবীআ ইবনি আব্‌দ শাম্‌স ছিলেন ঐ লোকদের একজন, যাঁরা রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সালিম [রাঃআঃ] নামক এক ব্যাক্তিকে পুত্র বানিয়ে নেন। সালিম ছিলেন এক আনসারী মহিলার ক্রীতদাস। যেমন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যায়দ ইবনি হারিছাকে পোষ্যপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। আবু হুযায়ফা ইবনি উতবা তার ভাতিজি হিন্দা বিনত ওয়ালীদ ইবনি রবীআ-কে তার সাথে বিবাহ দিলেন। হিন্দা বিনত ওয়ালীদ ইবনি উতবা ছিলেন প্রথম পর্যায়ে [প্রবীণ] হিজরতকারিণীদের অন্যতম এবং কুরায়েশের বিধবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এরপর মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা যখন যায়দ ইবনি হারিসা [রাঃআঃ] সম্বন্ধে আয়াত নাযিল করলেনঃ “তাহাদের [পালক পুত্রদের] তোমরা ডাকবে তাহাদের [জন্মদাতা] পিতার প্রতি সম্বন্ধিত করে। এটিই আল্লাহর কাছে অধিক ন্যায়সংগত।” তখন প্রত্যেকে [পোষ্যপুত্র] এদের [পালক পিতা] থেকে তাহাঁর জন্মদাতা পিতার দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হল। যদি তাহাঁর পিতার সম্বন্ধে জানা না থাকতো, তা হলে তাকে মুক্তিদানকারী মনিবদের প্রতি সম্বন্ধিত করা হত।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯.পরিচ্ছেদঃ বংশ মর্যাদা

৩২২৫. ইবনি বুরায়দা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ দুনিয়াদারদের বংশ মর্যাদা যা তাহাদের কাংক্ষিত তা হচ্ছে ধন-সম্পদ।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০.পরিচ্ছেদঃ নারীকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয়

৩২২৬. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সময় এক নারীকে বিবাহ করিলেন। তাহাঁর সাথে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাক্ষাৎ হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে জাবির, তুমি কি বিবাহ করছো? তিনি বলেন, আমি বললামঃ জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কুমারী, না পূর্ব-বিবাহিতা? আমি বললামঃ বরং বিবাহিতা। তিনি বললেনঃ কেন একজন কুমারী কে বিবাহ করলে না, যে তোমার সাথে মন মাতান আচরণ করতো? তিনি বলিলেন, আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমার কয়েকজন বোন রয়েছে। আমার ভয় হলো, সে আমার এবং তাহাদের মধ্যে দখলদারী সৃষ্টি করিবে। তিনি বললেনঃ তা হলে তাই [ভাল]। নারীদেরকে তাহাদের ধর্ম, সম্পদ, এবং সৌন্দর্যের কারণে বিবাহ করা হইয়া থাকে। অতএব তুমি ধার্মিক মেয়ে বিবাহ করিবে। আল্লাহ তোমার ভাল করুন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১.পরিচ্ছেদঃ বন্ধ্যা নারীকে বিবাহ করা পছন্দনীয় নয়

৩২২৭. মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যাক্তি রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর খিদমতে আরয করলেনঃ আমি এমন এক মহিলার সন্ধান পেয়েছি, যে বংশ গৌরবের অধিকারিণী ও মর্যাদাবান, কিন্তু সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিবাহ করবো? তিনি তাকে নিষেধ করিলেন। দ্বিতীয় বার সে তাহাঁর নিকট আসলে তিনি নিষেধ করিলেন। এরপর তৃতীয় বার তাহাঁর খিদমতে আসলে তিনি তাকে নিষেধ করিলেন এবং বললেনঃ তোমরা অধিক সন্তান প্রসবা মমতাময়ী নারীকে বিবাহ করিবে। কেননা, আমি তোমাদের দ্বারা সংখ্যাধিক্যের প্রতিযোগিতা করবো।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১২.পরিচ্ছেদঃ ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা

৩২২৮. ইবরাহীম ইবনি মুহাম্মাদ তায়মী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

মারছাদ ইবনি আবু মারছাদ গানাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নামক এক ব্যাক্তি ছিল খুব শক্তিশালী। সে মক্কা হইতে মদিনায় কয়েদী বহন করতো। তিনি বলেন, আমি এক ব্যাক্তিকে বহন করার জন্য আহ্বান করলাম। মক্কায় এক পতিতা ছিল- যাহার নাম ছিল আনাক। সে [পতিতা] ছিল তার [মারছাদের] বান্ধবী। সে বের হইয়া দেওয়ালের ছায়ায় আমার কায়া দেখে বললেনঃ এ ব্যাক্তি কে? মারাছাদ নাকি? তোমাকে স্বাগতম। হইয়া মারছাদ! চল আজ রাত আমাদের নিকট [তাঁবুতে] অতিবাহিত কর। আমি বললামঃ হইয়া আনাক! রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ব্যাভিচার হারাম করিয়াছেন। সে বলে উঠলেনঃ হে তাঁবুবাসিগণ! এ দুলদুল [সজারু] যে তোমাদের কয়েদীকে বহন করে মক্কা হইতে মদীনায় নিয়ে যাই। এরপর আমি [আত্ম রক্ষার জন্য] খানদামা পাহাড়ে আশ্রয় নিলাম। আমাকে আটজন লোক তালাশ করিতে এসে তাঁরা আমার মাথার উপর দাঁড়িয়ে পেশাব করে দিল। তাহাদের পেশাব আমার গায়ে পড়লো। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাহাদেরকে আমাকে দেখা হইতে অন্ধ করে দিলেন। আমি আমার সাথীর নিকট এসে যখন আরাক নামক স্থানে পৌঁছালাম, তখন তাহাঁর শক্ত বেড়ী খুলে দিলাম। এরপর আমি রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর খিদমতে পৌঁছে আরয করলামঃ আমি কি আনাক-কে বিবাহ করবো? তিনি নিশ্চুপ থাকলেন। তখন নাযিল হলোঃ “ব্যভিচারিণী, তাকে ব্যভিচার অথবা মুশরিক ব্যতীত কেউ বিবাহ করে না। [২৪ ঃ ৩]” তখন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে ডেকে আয়াত শুনিয়ে বললেনঃ তুমি তাকে বিবাহ করো না।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩২২৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল করীম তা ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] পর্যন্ত মারফূ রূপে বর্ণনা করিয়াছেন, আর হারূন তা মারফূ রূপে বর্ণনা করেন নি। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট এক ব্যাক্তি এসে বললেনঃ আমার এক স্ত্রী রয়েছে যে আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়, কিন্তু সে কোন স্পর্শকারীর হাত ফেরায় না। তিনি বললেনঃ তাকে তালাক দাও। সে বললেনঃ আমি তাহাঁর বিরহ সহ্য করিতে পারব না। তিনি বললেনঃ তাহলে তাকে রেখে দাও। আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ এ হাদীস যথার্থ নয়। আবদুল করীম মযবুত রাবী নন। আর হারূন ইবনি রিআব তাহাঁর চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং তার হাদীস আবদুল করীমের হাদীস হইতে বিশুদ্ধতার অধিক নিকটবর্তী।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩.পরিচ্ছেদঃ ব্যভিচারিণীদের বিবাহ করা মাকরূহ

৩২৩০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নারীদেরকে চারটি কারণে বিবাহ করা হই, তার মাল সম্পদ, তার বংশ গৌরব, তার সৌন্দর্য এবং তার ধার্মিকতা দেখে। তুমি ধার্মিকা নারীকে বিবাহ করে ধন্য হও। তোমার দুহাত মাটিমাখা হোক। [অর্থাৎ বোকামি কর না, বুদ্ধির পরিচয় দাও।]

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪.পরিচ্ছেদঃ কোন্‌ নারী উত্তম

৩২৩১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ [একদা] রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন্‌ নারী উত্তম ? তিনি বললেনঃ সে [স্বামী] যাহার প্রতি দৃষ্টিপাত স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। সে আদেশ করলে তার আনুগত্য করে, এবং [স্ত্রী] নিজের ব্যাপারে ও তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে যা অপছন্দ করে এমন কাজ করে তার বিরোধিতা করে না।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১৫.পরিচ্ছেদঃ পুণ্যবতী নারী

৩২৩২. আবদুল্লাহ্‌ ইবন্‌ আমর ইবন্‌ আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ সমগ্র পৃথিবী মানুষের ভোগ্য-বস্তু, আর পৃথিবীস্থ ভোগ্য বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো পুণ্যবতী স্ত্রী।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬.পরিচ্ছেদঃ আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন নারী

৩২৩৩. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ তাঁরা [সাহাবী নন] বললেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]! আমি আনসারী মহিলাদের বিবাহ করবো না ? তিনি বলিলেন, তাহাদের মধ্যে অত্যধিক আত্মমর্যাদাবোধ রয়েছে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের পূর্বে [কনেকে] দেখার বৈধতা

৩২৩৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এক আনসারী নারীকে বিবাহের পয়গাম দিল। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে বললেনঃ তুমি কি তাকে দেখেছ ? সে ব্যক্তি বললেনঃ না। তখন তিনি তাকে দেখে নেয়ার জন্য তাকে আদেশ করিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৩৫. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূলুলাহ্‌ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সময় আমি এক নারীকে বিবাহ করার পয়গাম দিলাম। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ তুমি তাকে দেখে নাও। কেননা, এতে তোমাদের মধ্যে [ভালবাসার] সম্পর্ক রচিত হইবে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮.পরিচ্ছেদঃ শাওয়াল মাসে বিবাহ

৩২৩৬. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে বিবাহ করেন শাওয়াল মাসে এবং শাওয়াল মাসেই আমাদের বাসর হয়। আর আয়েশা [রাঃআঃ] শাওয়ালে তাহাঁর [সম্পর্কীয়] মেয়েদের বাসর হওয়া পছন্দ করিতেন। [তিনি বলিতেন] ঃ তাহাঁর কোন স্ত্রী তাহাঁর নিকট আমার চাইতে অধিক ভাগ্যবতী ছিল?

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের পয়গাম

৩২৩৭. ইবনি শারাহীল শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ফাতিমা বিনত কায়াস [রাঃআঃ]-কে, যিনি প্রথম পর্যায়ে হিজরতকারিনী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, বলিতে শুনেছেন। মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]- এর একদল সাহাবীর মধ্যে আবদূর রহমান ইবনি আউফ [রাঃআঃ] আমার বিবাহের পয়গাম দিলেন। আর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর মাওলা [আযাদকৃত গোলাম] উসামা ইবনি যায়াদ-এর জন্যও আমার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর পূর্বেই আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছিল যে, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন ঃ যে আমাকে ভালবাসে সে যেন উসামাকে ভালবাসে। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যখন আমার সাথে কথা বলিলেন, তখন আমি বললাম ঃ আমার ব্যাপার আপনার ইখতিয়ারে। আপনি যাহার সাথে ইচ্ছা আমার বিবাহ দিতে পারেন। তিনি বলিলেন ঃ তুমি উম্মু শরীকের নিকট যাও। উম্মু শরীক সম্পদশালিণী আনসারী মহিলা, আল্লাহর রাস্তায় অধিক দানকারিণী। তার নিকট বহু [অতিথি] মেহমানের সমাগম হইয়া থাকে। আমি বললাম ঃ আচ্ছা তাই করব। পরে তিনি বলিলেন ঃ না, তার নিকট যেও না, কারণ উম্মু শরীকের নিকট বহু মেহমানের সমাগম ঘটে। হয়ত তোমার ওড়না পড়ে যাবে। অথবা তোমার পায়ের গোছা হইতে কাপড় সরে যাবে, আর লোকেরা তোমার এমন অংগ দেখে ফেলবে, যা তোমার পছন্দ নয়। তাই তুমি তোমার চাচাত ভাই আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি উম্মু মাকতুম-এর নিকট যাও। সে বনী ফিহরের একজন লোক। এরপর আমি তার নিকট গেলাম। [সংক্ষিপ্ত]

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০.পরিচ্ছেদঃ এক ব্যাক্তির প্রদত্ত বিবাহের প্রস্তাব চলাকালে অন্য ব্যক্তির প্রস্তাব নিষিদ্ধ

৩২৩৮. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন অন্যের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৩৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [মুহাম্মাদের বর্ণনায়- নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তোমরা একজনের দামের উপর বাড়িয়ে দাম বলবে না [প্রতারণা করিবেনা]। আর কোন শহরবাসী কোন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রি করিবে না, একজনের খরিদ করার [প্রস্তাবের] উপর অন্যজন খরিদ করার প্রস্তাব দিবে না। আর এক ভাইয়ের বিবাহের পয়গামের উপর বিবাহের প্রস্তাব দিবে না। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার [মুসলিম] বোনের তালাক না চায়, তার পাত্রে যা আছে তা নিজে ভোগ করার মানসে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৪০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন ঃ কেউ যেন তার [মুসলমান] ভাই-এর বিবাহের পয়গামের উপর পয়গাম না দেয়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৪১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন ঃ তোমাদের কেউ যেন তার ভাই-এর বিবাহের পয়গামের উপর পয়গাম না দেয়, যে পর্যন্ত না সে বিবাহ করে কিংবা [প্রস্তাব] ছেড়ে যায়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৪২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ কোন ব্যাক্তি যেন তার অন্য ভাই-এর বিবাহের পয়গামের উপর বিবাহের পয়গাম না দেয়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

২১.পরিচ্ছেদঃ প্রস্তাব ছেড়ে দিলে অথবা অনুমতি দিলে অন্যজনের প্রস্তাব দেয়া সম্পর্কে

৩২৪৩. ইবনি জুরাইজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি, আব্দুল্লাহ্‌ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলিতেন ঃ কারও খরিদ করার [প্রস্তাবের] উপর অন্য কারো খরিদ করার প্রস্তাব দিতে এবং একজনের বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্যজনের প্রস্তাব দিতে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] নিষেধ করিয়াছেন, যে পর্যন্ত না [ঐ প্রথম] প্রস্তাবকে ছেড়ে যায় অথবা প্রস্তাবক [নিজেই] তাকে অনুমতি দেয়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৪৪. আবু সালামা ইবনি আব্দুর রহমান ও মুহাম্মাদ ইবনি আবদূর রহমান ইবনি ছাওবান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তারা ফাতিমা বিনত কায়সকে তার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন ঃ আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দেয়। সে আমাকে কিছু খোরাক দিত, তাতে কিছু সমস্যা ছিল। আমি বললামঃ আল্লাহর কসম যদি খোরাক ও বাসস্থান আমার প্রাপ্য হইয়া থাকে, তবে আমি তা চাইব। আমি এটা [নিম্নমানের খাদ্য] গ্রহন করবনা। উকিল বলিলেনঃ তোমার জন্য কোন খোরাক ও বাসস্থান [প্রাপ্য] নেই। তখন আমি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]- এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া তাকে তা জানালাম। তিনি বলিলেন ঃ তোমার জন্য খোরাক ও বাসস্থান নেই, তুমি অমুক স্ত্রীলোকের কাছে থেকে ইদ্দত পালন কর। তিনি [ফাতিমা] বলেন ঃ তার নিকট তাহাঁর সাহাবীরা আসা-যাওয়া করত। এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন ঃ তাহলে তুমি উম্মু মাকতূমের নিকট থেকে ইদ্দত পূর্ণ কর। কেননা সে একজন অন্ধ বাক্তি। যখন তুমি ইদ্দত পূর্ণ করিবে, তখন আমাকে অবহিত করিবে। ফাতিমা [রাঃআঃ] বলেন ঃ আমি হালাল হইয়া তাঁকে জানালাম। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন ঃ কে কে তোমাকে বিবাহের পয়গাম দিয়েছে? আমি বললাম ঃ মুআবিয়া [রাঃআঃ] এবং অন্য একজন কুরায়শী ব্যক্তি। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন ঃ মুআবিয়া তো কুরায়শী যুবকদের মধ্যে একজন যুবক, তবে তার কোন সম্পদ নেই। আর অন্য ব্যক্তি একজন মন্দ লোক, তার মধ্যে কোন মঙ্গল নেই; বরং তুমি উসামাকে বিবাহ কর। ফাতিমা [রাঃআঃ] বলেন ঃ আমি তা পছন্দ করলাম না। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তা তিনবার বলিলেন। এরপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২.পরিচ্ছেদঃ কোন নারী বিবাহ পয়গাম সমন্ধে পুরুষের নিকট পরামর্শ চাইলে তার [প্রস্তাবকারী] সম্পর্কে জ্ঞান বিষয়কে অবহিত করিবে না।

৩২৪৫. ফাতিমা বিনত কায়স [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু আমর ইবনি হাফস তাকে তিন তালাক দিয়ে ফেললেন, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন [প্রবাসে]। তার উকিল কিছু যব তার নিকত পাঠালেন। কিন্তু ফাতিমা এতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি [উকিল] বলিলেন ঃ আল্লাহর কসম। আমাদের উপর তোমার কোন পাওনা নেই। ফাতিমা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর খেদমতে এসে এসকল কথা ব্যক্ত করলে তিনি বলিলেন ঃ তোমার কোন খরচ [খোরাক] পাওনা নেই। তিনি তাকে উম্মু শরীকের ঘরে থেকে ইদ্দত পালন করিতে আদেশ করিলেন। এরপর তিনি বলিলেন ঃ সে তো এমন এক নারী যাহার কাছে আমার সাহাবিগণ বেশি যাতায়াত করে। বরং তুমি ইবনি উম্মু মাকতুম-এর নিকট থেকে ইদ্দত পূর্ণ কর। সে একজন অন্ধ ব্যক্তি। তুমি তোমার উত্তম কাপড়-চোপড় খুলে রাখতে পারবে। যখন তুমি হালাল [ইদ্দত পূর্ণ] হইয়া যাবে, তখন আমাকে জানাবে। ফাতিমা [রাঃআঃ] বলেন ঃ যখন আমি হালাল হলাম [ইদ্দত পূর্ণ করলাম],তখন তাহাঁর নিকট বললাম ঃ মুআবিয়া ইবনি আবু সুফিয়ান এবং আবু জাহাম আমাকে বিবাহের পয়গাম দিয়েছে। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন ঃ আবু জাহাম তো এমন ব্যক্তি, যে কখনও কাঁধ হইতে লাঠি নামিয়ে রাখে না [ অর্থাৎ সে স্ত্রীকে কষ্ট দেয় অথবা সদা সফরে থাকে। আর মুআবিয়া তো নিঃস্ব, তার কোন মাল-সম্পদ নেই। তুমি বরং উসামা ইবনি যায়াদ [রাঃআঃ]-কে বিয়ে কর। আমি তা অপছন্দ করলাম। তিনি পুনরায় বলিলেন ঃ উসামা ইবনি যায়েদকে বিবাহ কর। এরপর আমি তাকে বিবাহ করলাম। মহান মহিয়ান আল্লাহ তাতে মঙ্গল দান করিলেন এবং তাহাঁর ব্যাপারে আমি ঈর্ষার পাত্রী হলাম।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩.পরিচ্ছেদঃ কোন নারী সম্বন্ধে কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নিকট পরামর্শ চাইলে, সে যা জানে তা অবহিত করিবে কি?

৩২৪৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ এক আনসারী ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]- এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া বলিলেন ঃ আমি এক মহিলাকে বিবাহ [করার ইচ্ছা] করেছি। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন ঃ তুমি কি তাকে দেখেছ? কেননা, আনসারীদের চোখে কিছু [খুঁত] থাকে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৪৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি এক মহিলাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা করলে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন ঃ তাকে দেখে নাও, কেননা আনসারীদের চোখে কিছু [খুঁত] থাকে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪.পরিচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির নিজের কন্যাকে পছন্দনীয় ব্যক্তির কাছে বিবাহ দেয়ার প্রস্তাব করা

৩২৪৮. উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ খুনায়স অর্থাৎ ইবনি হুযাফা, যিনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবী এবং বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের অন্যতম ছিলেন, মদীনায় তাহাঁর ইন্তিকাল হলে হাফসা বিনত উমার [রাঃআঃ] বিধবা হলেন। উমার [রাঃআঃ] বলেন ঃ আমি উসমান ইবনি আফফান [রাঃআঃ]-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হাফসা [রাঃআঃ]-এর কথা উল্লেখ করে তাকে বললাম ঃ যদি তুমি ইচ্ছা কর, তাহলে হাফসাকে আমি তোমার নিকট বিবাহ দিব। তিনি বলিলেন ঃ এ ব্যাপারে আমি চিন্তা করব। আমি কিছুদিন অতিবাহিত করলাম, পুনরায় তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলিলেন ঃ এসময় আমার বিবাহ করার ইচ্ছা নেই। উমার [রাঃআঃ] বলেন ঃ এরপর আমি আবু বকর সিদ্দীক [রাঃআঃ]-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বললাম ঃ যদি আপনি ইচ্ছা করেন , তাহলে হাফসা [রাঃআঃ]-কে আপনার সাথে বিবাহ দিব। তিনি আমাকে কোন উত্তর দিলেন না। এতে উসমান [রাঃআঃ]-এর উপর আমার ক্ষোভ হইয়াছিল, তার চেয়ে অধিক ক্ষোভ হলো তাহাঁর উপর। এভাবে আমি কিছুদিন অতিবাহিত করলাম। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমার কাছে তার বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। আমি তাঁকে তার বিবাহে সপর্দ করলাম। এরপর আবু বকর [রাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বলিলেন ঃ আপনি আমার নিকট হাফসা [রাঃআঃ]-এর বিবাহের প্রস্তাব দিলে আমি কিছু না বলায় হয়তো আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হইয়াছেন। আমি বললাম , হ্যাঁ। তিনি বলিলেন ঃ আপনি যখন প্রস্তাব দিলেন ঃ তখন আপনাকে কোন উত্তর না দেওয়ার কারণ এ ব্যতীত আর কিছুই ছিলনা যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে তার সম্পর্কে আলোচনা করিতে শুনিয়াছি। আর আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর গোপন কথা প্রকাশ করিতে চাইনি। যদি তিনি তাঁকে বাদ দিতেন তবে আমি তাকে বিবাহ করতাম।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫.পরিচ্ছেদঃ কোন মহিলার পছন্দনীয় ব্যক্তির নিকট নিজেকে পেশ করা

৩২৪৯. আবু আব্দুস সামাদ মারহুম ইবনি আব্দুল আযীয আত্তার হইতে বর্ণিতঃ

আমি সাবিত বুনানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ [একদা] আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ]-এর নিকট ছিলাম। তখন তাহাঁর নিকট তাহাঁর এক কন্যাও ছিল। তিনি বলিলেনঃ এক মহিলা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর খিদমতে এসে নিজের বিবাহ প্রস্তাব করে বলিলেন ঃ ইয়া রাসুলাল্লহ্‌। আপনার কি কোন প্রয়োজন আছে?

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৫০. মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]—আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

[একদা] এক মহিলা নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে এসে তাকে নিজের বিবাহের প্রস্তাব দিল। এতে আনাস [রাঃআঃ]-এর কন্যা হেসে উঠে বলিলেন ঃ সে কত নির্লজ্জ। আনাস [রাঃআঃ] বলিলেন ঃ সে তোমার চাইতে উত্তম, সে তো নিজেকে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর খিদমতে পেশ করেছে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের প্রস্তাবে মহিলা নামাজ আদায় এবং এ ব্যাপারে তার রব [আল্লাহ] সমীপে ইস্তিখারা করা।

৩২৫১. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ [যায়দ রা সংগে বিবাহ বিচ্ছেদের পর] যখন যয়নব [রাঃআঃ]-এর ইদ্দত শেষ হল তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যায়দকে বলিলেন ঃ তার নিকট আমার বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন কর। যায়দ [রাঃআঃ] বলেন ঃ আমি গিয়ে বললাম হে যয়নব! সুসংবাদ গ্রহন কর, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তোমার কথা উল্লেখ করে আমাকে [প্রস্তাব দিয়ে] তোমার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন। তিনি বলিলেন ঃ আমি আমার রবের পরামর্শ না নিয়ে কিছুই করবনা। এই বলে তিনি তাহাঁর নামাযের স্থানে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলো এবং রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আগমন করিলেন। অর্থাৎ তার অনুমদন ব্যতীত তার নিকট গমন করিলেন। [কারণ আল্লাহ তাআলা নিজেই যয়নব [রাঃআঃ]-কে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট বিবাহ দিয়েছিলেন]।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৫২

আবু বকর ঈসা ইবনি তাহমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যয়নব বিনত যাহা্‌স [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অন্যান্য বিবিদের উপর গর্ব করে বলিতেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে বিবাহ দিয়েছেন আসমানে। আর তার ব্যাপারেই পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হইয়াছে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭.পরিচ্ছেদঃ ইস্তিখারা কিভাবে করিতে হইবে?

৩২৫৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে প্রত্যেক কাজে ইস্তিখারা করিতে শিক্ষা দিতেন, যেমন আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলিতেনঃ যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করিবে, সে যেন ফরয ব্যতীত দুরাকআত নামাজ আদায় করে নেয়, তারপর বলে ঃ

[অর্থ ঃ ইয়া আল্লাহ। আমি আপনার ইল্‌ম দ্বারা আপনার কাছে কল্যাণ [সুপরামর্শ] কামনা করছি এবং আপনার কুদরাতের সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা, নিশ্চয় আপনিই ক্ষমতাবান, আমার ক্ষমতা নেই; আপনি জানেন, আমি জানি না এবং আপনি অদৃশ্য জগতের মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ। যদি আপনার ইলমে এরুপ থাকে যে, এ বিষয়টি আমার দীন, আমার জীবন ও আমার কর্ম- পরিণতির বিচারে- অথবা তিনি বলেছেন- আমার নগদ কর্ম ও বাকী কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে- আমার জন্য কল্যাণকর, তবে আপনি তা আমার জন্য নির্ণীত [ ও সহজসাধ্য] করে দিন। এরপর তাতে আমাকে বরকত দান করুন। আর যদি আপনার ইলমে এরুপ থাকে যে, এ বিষয়টি আমার দীন, আমার জীবন মান ও আমার কাজের পরিণামে- অথবা বলিলেন—নগদে ও বিলম্বে- আমার জন্য অকল্যাণকর তবে আপনি তা আমার হইতে [দূরে] সরিয়ে দিন এবং আমাকে তা হইতে সরিয়ে দিন এবং কল্যাণ যেখানেই [যাতেই] থাক না কেন তা আমার জন্য নির্ণীত [তাকদীর ও সহজসাধ্য] করে দিন এবং তাতে আমাকে তুষ্টতা দান করুন।

তিনি বলেন, [এ বিষয়টি বলার সময়] নিজ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করিবে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮.পরিচ্ছেদঃ পুত্রের তার মাকে বিবাহ দেওয়া

৩২৫৪. উম্মু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যখন তার ইদ্দত পূর্ণ হলো, আবু বকর [রাঃআঃ] তাহাঁর নিকট নিজের বিবাহ প্রস্তাব দিয়ে লোক পাঠালেন। কিন্তু তিনি তাঁকে বিবাহ করিলেন না। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ]-কে তাহাঁর বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। তিনি বলিলেন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলুন, আমি একজন আত্মাভিমানী নারী, আর আমার সন্তান রয়েছে। আর এখানে আমার কোন আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত নেই। উমার [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া সব কিছুই বর্ণনা করিলেন। তিনি বলিলেনঃ তুমি তার নিকট ফিরে গিয়ে বল, আপনি যে বলেছেন, আমি আত্মাভিমানী, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করব তা হলে আপনার আভিমান দূর করে দিবেন। আর আপনি বলেছেন, আমি সন্তানওয়ালী, আপনার সন্তানদের জন্য আপনাকে একটা ব্যবস্থা করে দেয়া হইবে। আর আপনি বলেছেন, এখানে আপনার কোন আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত নেই। আপনার উপস্থিত অনুপস্থিত কোন আত্মীয় এতে অনিচ্ছা প্রকাশ করিবে না। তখন তিনি তার ছেলেকে বলিলেন ঃ হে উমার ঃ উঠ, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সংগে আমার বিবাহ দাও। ফলে সে তাঁকে বিবাহ দিল। [সংক্ষিপ্ত]

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

২৯.পরিচ্ছেদঃ ছোট [অপ্রাপ্ত বয়স্কা] কন্যার বিবাহ দান

৩২৫৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে বিবাহ করেন, তখন তাহাঁর বয়স ছিল ছয় বছর। আর যখন তাঁকে নিয়ে বাসর ঘর করেন, তখন তাহাঁর বয়স ছিল নয় বছর।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৫৬. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে বিবাহ করেন, আমার ছিল সাত বছর বয়স। আর নয় বছর বয়সে তিনি আমার সাথে বাসর করেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৫৭. আবু উবায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়েশা [রাঃআঃ] বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে নয় বছর বয়সের সময় বিবাহ [বাসর] করেন। আর আমি তাহাঁর [দাম্পত্য] সঙ্গলাভ করি নয় বছর পর্যন্ত।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩২৫৮. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকেঁ বিবাহ করেন, তখন তাহাঁর বয়স ছিল নয় বছর। আর যখন তিনি ইনতিকাল করেন তখন তাহাঁর বয়স ছিল আঠারো বছর।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০.পরিচ্ছেদঃ বয়স্ক কন্যার বিবাহ দেয়া

৩২৫৯. উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

খুনায়স ইবনি হুযাফা সাহমী [রাঃআঃ]-এর ইন্তিকাল হওয়ায় হাফসা বিনত উমার [রাঃআঃ] বিধবা হলেন। খুনায়স [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবী ছিলেন এবং তিনি মদীনায় ইন্তিকাল করেন। উমার [রাঃআঃ] বলেন, আমি উসমান ইবনি আফ্ফানের [রাঃআঃ] নিকট গিয়ে তাহাঁর সাথে হাফসা বিনত উমার- এর বিবাহ প্রস্তাব দিলাম। উমার [রাঃআঃ] বলেন, আমি বললাম, যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তা হলে হাফসাকে আপনার সাথে বিবাহ দিব। তিনি বলিলেনঃ এ ব্যাপারে আমি চিন্তা করবো। আমি কিছু দিন অপেক্ষা করলাম। এরপর তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বলিলেনঃ আমি মনে করছি, এ সময় আমি বিবাহ করবো না। উমার [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি আবু বকর সিদ্দীকের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললামঃ যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তাহলে আমি হাফসা বিনত উমার [রাঃআঃ]-কে আপনার সাথে বিবাহ দিব। আবু বকর সিদ্দীক [রাঃআঃ] চুপ রইলেন। কোন উত্তরই দিলেন না। এতে উসমান [রাঃআঃ]-এর উপর আমার যে ক্ষোভ হইয়াছিল, তার চাইতে তাহাঁর উপর অধিক ক্ষোভ হলো। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত করলাম। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [রাঃআঃ] হাফসাকে বিবাহের পয়গাম দিলে, আমি তাহাঁর সাথে তাকে বিবাহ দেই। পরে আবু বকর সিদ্দীক [রাঃআঃ]-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি বলিলেনঃ আপনি যখন হাফসা বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন হয়তো আপনি আমার উপর রাগ করেছিলেন, কেননা আমি কোন উত্তর দেইনি। উমার [রাঃআঃ] বলেন, আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আপনার প্রস্তাবে আমার কিছু না বলার কারণ এটাই ছিল যে, আমি জানতাম, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [রাঃআঃ] তার আলোচনা করিয়াছেন। আর আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [রাঃআঃ]-এর গোপন কথা প্রকাশ করিতে চাইনি। যদি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাঁকে গ্রহণ না করিতেন, তাহলে আমি তাকে গ্রহণ করতাম।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১.পরিচ্ছেদঃ কুমারীর বিবাহে তার সম্মতি গ্রহণ করা

৩২৬০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ বিধবা তার নিজের [বিবাহের] ব্যাপারে তার ওলীর চাইতে অধিক হকদার। আর কুমারীর ব্যাপারে তার সম্মতি নেয়া হইবে। আর তার সম্মতি হলো তার চুপ থাকা।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৬১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ বিধবা তার নিজের ব্যাপারে তার ওলীর চাইতে অধিক হকদার। আর ইয়াতীম কন্যার মতামত গ্রহণ করা হইবে এবং তার সম্মতি হলে তার চুপ থাকা।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৩২৬২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, বিধবা নারী তার ব্যাপারে নিজেই অগ্রয়ধিকারিণী। আর ইয়াতীম কন্যার মতামত গ্রহণ করা হইবে। তার সম্মতি হলো চুপ থাকা।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৬৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, বিধবা [পূর্বে বিবাহিতা] নারীর ব্যাপারে অভিভাবকের কোন কিছু করার নেই। আর ইয়াতীম কন্যার [কুমারী নারীর] ব্যাপারে তার মতামত গ্রহণ করা হইবে। আর তার চুপ থাকাই তার স্বীকারোক্তি।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২.পরিচ্ছেদঃ কুমারী মেয়ের নিকট পিতার মতামত চাওয়া

৩২৬৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, পূর্বে বিবাহিতা নারী নিজের ব্যাপারে হকদার আর কুমারীর ব্যাপারে তার পিতা তার সম্মতি নিবে। আর তার সম্মতি হলো- তার চুপ থাকা।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩.পরিচ্ছেদঃ পূর্বে বিবাহিতা নারীর অনুমতি গ্রহণ

৩২৬৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, পূর্বে বিবাহিতা নারীকে তার [স্পটে] অনুমতি ব্যতীত বিবাহ দেয়া যাবে না। আর কুমারী নারীকে তার সম্মতি না নিয়ে বিবাহ দেয়া হইবে না। লোকে জিজ্ঞাসা করলোঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]! তার সম্মতি কিভাবে হইবে? তিনি বলিলেন, তার সম্মতি হলো চুপ থাকা।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪.পরিচ্ছেদঃ বিবাহে কুমারীর সম্মতি প্রদান

৩২৬৬. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা নারীদের বিবাহে তাহাদের সম্মতি গ্রহণ করিবে। বলা হলো, কুমারী নারী তো লজ্জা করিবে এবং চুপ থাকিবে। তিনি বলেন, এটাই তার অনুমতি।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৬৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, বিধবা [পূর্বে বিবাহিতা] নারীকে বিবাহ দেবে না তার অনুমতি ব্যতীত, আর কুমারীকে তার মতামত না নিয়ে বিবাহ দেবে না। তাঁরা [সাহাবীগণ] বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]! তার মতামত কিভাবে নেয়া হইবে? তিনি বলিলেন, তার সম্মতি হল তার চুপ থাকা।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫.পরিচ্ছেদঃ পূর্বে বিবাহিতা নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পিতা তাকে বিবাহ দেয়া

৩২৬৮. খানসা বিনত খিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ছিলেন, সায়্যিব [পূর্বে বিবাহিতা-] তিনি তা অপছন্দ করিলেন। এরপর তিনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট গেলে তিনি এ বিবাহ ভেঙে দিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬.পরিচ্ছেদঃ কুমারী নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পিতার তাকে বিবাহ দেয়া

৩২৬৯. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক তরুণী তাহাঁর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেন, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার নিকট বিবাহ দিয়েছে। আমার দ্বারা তার নীচুতা দূর করে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং আমি তা অপছন্দ করি। তিনি বলিলেন, তুমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর আগমন পর্যন্ত এখানে বস। পরে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আগমন করলে তিনি তাঁকে বিষয়টি অবহিত করিলেন। তিনি তার পিতার নিকট লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং ঐ তরুণীর সম্মতির উপর বিষয়টি ছেড়ে দিলেন। তরুণী বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]! আমার পিতা যা করিয়াছেন, তাতে আমি সম্মতি দিলাম। কিন্তু নারীদের এ বিষয়ে কোন অধিকার আছে কি না তা জেনে নেয়াই ছিল আমার ইচ্ছা।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল শায

৩২৭০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কুমারী নারী [র বিয়ে] সম্বন্ধে তার মতামত নেয়া হইবে, সে যদি চুপ থাকে তবে তাই তার সম্মতি। আর যদি সে অস্বীকার করে, তবে তার উপর কোন চাপ প্রয়োগ করা চলবে না।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭.পরিচ্ছেদঃ মুহরিম ব্যক্তির বিবাহের বৈধতা

৩২৭১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [রাঃআঃ] মায়মূনা বিনত হারিস [রাঃআঃ]-কে বিবাহ করেন, তখন তিনি মুহরিম ছিলেন। ইয়ালার হাদীসে আছে [বিবাহ হয়] সারিফ নামক স্থানে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ শায

৩২৭২. আবু শাসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] তাঁকে অবহিত করিয়াছেন যে, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মায়মূনাকে বিবাহ করেন, তখন তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ শায

৩২৭৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [রাঃআঃ] মায়মূনাকে বিবাহ করেন ইহরাম অবস্থায়। মায়মূনা [রাঃআঃ] ব্যাপারটি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর উপর ন্যস্ত করলে, তিনি তাঁকে তার সংগে বিবাহ দেন।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ শায

৩২৭৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মায়মূনা [রাঃআঃ]-কে বিবাহ করেন ইহরাম অবস্থায়।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ শায

৩৮.পরিচ্ছেদঃ মুহরিমের বিবাহের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা

৩২৭৫. নুবায়হ ইবনি ওয়াহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবান ইবনি উসমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, আমি উসমান ইবনি আফফান [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, মুহরিম [নিজে] বিবাহ করিবে না, অন্য কাউকে বিবাহ দেবে না, আর বিবাহের পয়গামও পাঠাবে না।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৭৬. আবান ইবনি উসমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উসমান ইবনি আফফান [রাঃআঃ] নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, মুহরিম [নিজে] বিবাহ করিবে না, আর কাউকে বিবাহ দেবে না; আর বিবাহের পয়গামও পাঠাবে না।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের সময় যা বলা মুস্তাহাব

৩২৭৭. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে নামাযের তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন, আর [বিবাহ ইত্যাদি] প্রয়োজনের বিষয়ের তাশাহহুদও শিক্ষা দিতেন, তিনি বলেন, [তথা বিবাহ ইত্যাদির] তাশাহহুদ হলোঃ

الْحَمْدُ لِلَّهِ، نَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا، مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ، فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ، فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ 

[অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাহাঁর সাহায্য কামনা করি তার ক্ষমা প্রার্থণা করি এবং আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থণা করি আমাদেরকে প্রবৃত্তির মন্দ কর্ম হইতে। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথহারা করিতে পারে না এবং আল্লাহ যাকে পথহারা করেন তাকে কেউ পথের দিশা দিতে পারে না। আর আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর বান্দা ও রাসূল।]

এরপর তিনটি আয়াত পাঠ করিবে। আরবি

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৭৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি কোন ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলিলেনঃ

الْحَمْدَ لِلَّهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ، مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ، فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ، فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০.পরিচ্ছেদঃ কোন ধরনের খুতবা মাকরূহ

৩২৭৯. আদী ইবনি হাতিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দুব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর নিকট তাশাহহুদ খুতবার ভূমিকা [প্রারম্ভিকা] পাঠ করিলেন, তাহাদের একজন বলিলেনঃ [আরবি] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, তুমি কত মন্দ ভাষণ দানকারী।১

{১} তার বলা উচিত ছিল {আরবি} যে আল্লাহর অবাধ্য হয় এবং তাহাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়, সে পথহারা হইয়াছে। বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১.পরিচ্ছেদঃ যে কথা দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়

৩২৮০. সুফিয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবু হাযিম [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, সাহল ইবনি সাদ [রাঃআঃ] বলিতেনঃ আমি এক দল লোকের সঙ্গে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]! এ মহিলা আপনার জন্য নিজকে হিবা করেছে। এখন এ ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত দেন? তিনি নিশ্চুপ রইলেন এবং কোন উত্তর দিলেন না। আবার সে মহিলা দাঁড়িয়ে বলিলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ! এ মহিলা আপনার জন্য নিজকে হিবা করেছে। এখন এ ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন? তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]! তাকে আমার সঙ্গে বিবাহ দিন। তিনি বলিলেন, তোমার নিকট কি কোন বস্তু আছে? সে বলিলেন, না। তিনি বলিলেন, যাও একটি লোহার আংটি হলেও তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসো। সে ব্যক্তি গিয়ে খোঁজ করে এসে বলিলেন, আমি কিছুই পেলাম না, এমনকি একটি লোহার আংটিও না। তিনি বলিলেন, তোমার কি কুরআনোর কিছু মুখস্থ আছে? সে বলিলেন, হ্যাঁ, অমুক অমুক সুরা আমার মুখস্থ আছে। তিনি বলিলেন, কুরআনের যা তোমার নিকট রয়েছে, তার সূত্রে আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪২.পরিচ্ছেদঃ বিবাহের শর্ত প্রসঙ্গে

৩২৮১. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শর্ত [চুক্তি]-সমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রতিপালনীয় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, তোমরা যা দ্বারা [মহিলার] লজ্জাস্থান হালাল করিবে, [অর্থাৎ মোহর আদায় করা]।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৮২. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, প্রতিপালনীয় রূপে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, তোমরা যা দ্বারা [মহিলার] লজ্জাস্থান হালাল করিবে।

বিবাহ আইন হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

One response to “বিবাহ আইন । পয়গাম, বংশ, কুমারী, বয়স্ক, মুহরিমের বিয়ে”

Leave a Reply