ফাজায়েলে নামাজ
ফাজায়েলে নামাজ >> সহীহ ফাযায়িলে আমল এর মুল সুচিপত্র দেখুন
নামাজ অধ্যায়
১ পরিচ্ছেদঃ নামাজ পরিচিতি
২ পরিচ্ছেদঃ ফাযায়িলে ত্বাহারাত – উযূ করার ফাযীলাত
৩ পরিচ্ছেদঃ উযূর পানির সাথে গুনাহ্সমূহ ঝরে যায়
৪ পরিচ্ছেদঃ উযূ করে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
৫ পরিচ্ছেদঃ উযূর শেষে যে দুআ পড়া ফাযীলাতপূর্ণ
৬ পরিচ্ছেদঃ উযূসহ রাতে ঘুমানোর ফাযীলাত
৭ পরিচ্ছেদঃ উযূ করে মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত
৮ পরিচ্ছেদঃ মিশওয়াক করার ফাযীলাত
৯ পরিচ্ছেদঃ ফাযায়িলে আযান - আযান ও ইক্বামাতের ফাযীলাত
১০ পরিচ্ছেদঃ মুয়াজ্জিনের আযানের জবাবে যা বলা ফাযীলাতপূর্ণ
১১ পরিচ্ছেদঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু
আর ফাযীলাত
১২ পরিচ্ছেদঃ ফাযায়িলে মাসাজিদ – মাসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত
১৩ পরিচ্ছেদঃ সকাল সন্ধ্যায় মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত
১৪ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে লেগে থাকার ফাযীলাত
১৫ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদ ঝাড়– দেয়ার ফযীলাত
১৬ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে বসে থাকার ফযীলাত
১৭ পরিচ্ছেদঃ নামাজ আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত
১৮ পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের বাড়িতে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
১৯ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদুল হারামে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
২০ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে নাববীতে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
২১ পরিচ্ছেদঃ বাইতুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
২২ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
১ পরিচ্ছেদঃ নামাজ পরিচিতি
নামাজ শব্দটি স্থানভেদে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন : [১] আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হইবে : অনুগ্রহ, দয়া [২] বান্দার সাথে সম্পর্কিত হলে এ অর্থ হইবে : প্রার্থনা, দু`আ [৩] ফিরিশতার সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হইবে : ক্ষমা প্রার্থনা [৪] নবীর সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হইবে : দরূদ পড়া [৫] পশু পাখির সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হইবে : তাসবীহ পাঠ করা [৬] নামাজ আদায় করা- যা একটি বিশেষ `ইবাদাত` আলোচ্য অনুচ্ছেদে এটাই উদ্দেশ্যে।
পরিভাষায় নামাজ হলো : কতিপয় নির্দ্দিষ্ট আরকান ও আহকামের সমষ্টি একটি নির্দ্দিষ্ট `ইবাদাত। ইসলামী শরীয়তে এর নিদ্দিষ্ট সময়সীমা বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ফরয। নামাজ ইসলামের শ্রেষ্ঠতম `ইবাদাত এবং ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ।
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “তোমরা নামাজ আদায় করো ঠিক ঐভাবে যেভাববে আমাকে আদায় করিতে দেখো।” [সহীহুল বুখারি]
২ পরিচ্ছেদঃ ফাযায়িলে ত্বাহারাত – উযূ করার ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ৭৩ঃ আবু মালিক আল-আশ`আরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৫৬, আহমান শাকির বলেন [হা/২২৮০০, ২২৮০৬] : সানাদ সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৭৪ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল হয় না।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৫৭ . হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৭৫ঃ `আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : পবিত্রতা [উযূ] হলো সলাতের চাবি।
হাসান সহিহ : তিরমিজি হা/৩, শায়খ আলবানী বলেন : হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৭৬ঃ `উসমান ইবনু `আফফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি এভাবে [উত্তমরূপে] উযূ করে, তার পূর্বেকার সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ফলে তার নামাজ ও মাসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত `আমল বলে গণ্য হয়।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৬৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৭৭ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহবান করা হইবে যে, পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করার কারণে তাহাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকিবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা অধিক উজ্জ্বলতাসহ উঠতে চেষ্টা করো।
হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/১৩৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৭৮ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : আমার উম্মাত [ক্বিয়ামাতের দিন] আমার নিকট উপস্থিত হইবে। আর আমি লোকদেরকে তা [হাওয] থেকে এমনভাবে বিতাড়িত করবো, যেভাবে কোন ব্যক্তি তার উটের পাল থেকে অন্যের উটকে বিতাড়িত করে থাকে। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? জবাবে তিনি [সাঃ] বলিলেন, হ্যাঁ। তোমাদের এক নিদর্শন হইবে যা অন্য কারো হইবে না। উযুর প্রভাবে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পায়ের উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে। উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত অবস্থায় তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হইবে। আর তোমাদের একদল লোককে জোড় করে আমার থেকে ফিরিয়ে দেয়া হইবে। ফলে তারা আমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। তখন আমি বলবো, হে আমার রব! এরা তো আমার লোক। জবাবে ফিরিশতারা আমাকে বলবে, আপনি জানেন না আপনার অবর্তমানে তারা কি কি নতুন কাজ [বিদ`আত] করেছে।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৬০৫। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩ পরিচ্ছেদঃ উযূর পানির সাথে গুনাহ্সমূহ ঝরে যায়
ফাজায়েলে আমল – ৭৯ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কোন মুসলিম বান্দা উযূর সময় যখন মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা দু`খানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়, এভাবে সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৬০০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৮০ঃ `উসমান ইবনু `আফফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : উযূ করার সময় কেউ যদি উত্তমরূপে উযূ করে তাহলে তার শরীরের সমস্ত গুনাহ ঝরে যায়। এমনকি তার নখের নীচের গুনাহও বের হয়ে যায়।৪৮
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৬০১। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৮১ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাবো না, যা করলে আল্লাহ্ [বান্দার] গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল আপনি বলুন। তিনি [সাঃ] বলিলেন : কষ্টকর অবস্থায় থেকেও পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করা, সলাতের জন্য বারবার মাসজিদে যাওয়া এবং এক সলাতের পর আরেক সলাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি [রিবাত]।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৬১০ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪ পরিচ্ছেদঃ উযূ করে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ৮২ঃ `উসমান ইবনু `আফফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একদা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করার পর বলিলেন। যে ব্যক্তি আমার ও উযূর ন্যায় উযূ করার পর একাগ্রচিত্তে দু` রাক`আত নামাজ আদায় করিবে এবং এ সময় অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হইবে না। তাহলে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হইবে।
হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/১৫৫। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৮৩ঃ `উসমান ইবনু `আফফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : কোন মুসলিম উত্তমরূপে উযূ করে নামাজ আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজ পর্যন্ত তার সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। {৫১}
{৫১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৬২ শির্ক। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৮৪ঃ `উসমান ইবনু `আফফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যখন কোন মুসলিমের ফরয সলাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন যদি কোন মুসলিম উত্তমরূপে উযূ করে এবং একান্ত বিনীতভাবে সলাতের রুকূ` সাজদাহ্ ইত্যাদি আদায় করে তাহলে সে পুনরায় কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ্-ক্ষমা হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হইতে থাকে।
৫২ হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৬৫, হাদীসের শব্দাবলী তার। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৮৫ঃ `উসমান ইবনু `আফ্ফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : মহান আল্লাহ্ যেভাবে আদেশ করিয়াছেন যদি কোন ব্যক্তি সেইভাবে উযূ করে এবং ফরয নামাজসমূহ আদায় করে তাহলে তার ফরয নামাজসমূহের মধ্যবর্তী সকল গুনাহ্ ক্ষমা হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৬৯- হাদীসের শব্দাবলী তার, আহমাদ হা/৪০৬- শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : এর সানাদ বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৮৬ঃ `উসমান ইবনু `আফ্ফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি উযূ করে সলাতের জন্য মাসজিদের দিকে যায় এবং তার মাসজিদে যাওয়া যদি নামাজ ছাড়া অন্য কোন কারণে না হয় তবে তার অতীত জীবনের সব গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হইবে।
৫৪ হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৭০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৮৭ঃ`উক্ববাহ ইবনু `আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কোন মুসলিম যখন উত্তমরূপে উযূ করে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে দাঁড়িয়ে দুই রাক`আত নামাজ আদায় করে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।
৫৫ হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৭৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫ পরিচ্ছেদঃ উযূর শেষে যে দু`আ পড়া ফাযীলাতপূর্ণ
ফাজায়েলে আমল – ৮৮ `উক্ববাহ ইবনু `আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : তোমাদের মধ্যকার কেউ যদি উত্তমরূপে উযূ করার পর বলে : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ তাহাঁর বান্দা ও রাসূল।” তাহলে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয় সে ইচ্ছে করলে এর যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করিতে পারবে।
৫৬ হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫৭৬ ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬ পরিচ্ছেদঃ উযূ করে মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ৮৯ঃ আবূ সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “যে ব্যক্তি উযূ করার পর বলবে : “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামাদিক আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক্”– তার জন্য এটি একটি সাদা পাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর তা সীল করে দেয়া হয় যা কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত নষ্ট করা হয় না।”
ত্বাবারানী আওসাত ২/১২৩, নাসায়ীর সুনানুল কুবরা ৬/২৫, হাকিম, সহিহ আত্-তারগীব হা/১৪৭। আলবানী হাদিসটিকে সহিহ লিগাইরিহি বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ লিগাইরিহি
ফাজায়েলে আমল – ৯০ঃ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক আনসারী সাহাবীর মৃত্যু আসন্ন হলে তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিকট কেবল সাওয়াব লাভের আশায় একটি হাদিস বর্ণনা করবো। আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি। তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে উযূ করে সলাতের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন সে তার ডান পা উঠাতেই মহান আল্লাহ্ তার জন্য একটি সাওয়াব লিখে দেন। এরপর বাম পা ফেলার সাথে সাথেই মহা সম্মানিত আল্লাহ্ তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এখন তোমাদের ইচ্ছা হলে মাসজিদের নিকটে থাকিবে অথবা দূরে।
অতঃফর সে যখন মাসজিদে গিয়ে জামা`আতে নামাজ আদায় করে তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। যদি জামা`আত শুরু হয়ে যাওয়ার পর মাসজিদে উপস্থিত হয় এবং অবশিষ্ট সলাতে শামিল হয়ে সলাতের ছুটে যাওয়া অংশ পূর্ণ করে, তাহলেও তাকে অনুরূপ [জামা`আতে পূর্ণ নামাজ আদায়কারীর সমান সাওয়াব] দেয়া হয়। আর যদি সে [মাসজিদে এসে] জামা`আত সমাপ্ত দেখে একাকী নামাজ আদায় করে নেয়, তবুও তাকে ঐরূপ [ক্ষমা করে] দেয়া হয়।
হাদিস সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৫৬৩- তাহক্বীক্ব আলবানী : হাদিস সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ৯১ঃ আবূ সুমামাহ্ আল-হান্নাত হইতে বর্ণিতঃ
একদা মাসজিদে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কা`ব ইবনু `উজরাহর [রাঃআঃ] সাথে তার সাক্ষাত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে আমার দু` হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাতে দেখিতে পেয়ে আমাকে এরূপ করিতে নিষেধ করিলেন। তিনি আরো বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উযূ করে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলে সে যেন তার দু` হাতের আঙ্গুল না মটকায়। কেননা সে তখন সলাতের মধ্যেই থাকে [অর্থাৎ উযূ করা অবস্থায় তাকে নামাজ আদায়কারী হিসেবেই গণ্য করা হয়]।৫৮
৫৮ হাদিস সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৫৬২- হাদীসের শব্দাবলী তার, তিরমিজি হা/৩৮৬- তাহক্বীক্ব আলবানী : হাদিস সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭ পরিচ্ছেদঃ উযূসহ রাতে ঘুমানোর ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ৯২ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেন : কেউ উযূ করে রাত্রি যাপন করলে তার কাছাকাছি একজন ফিরিশতা রাত্রি যাপন করেন। সে জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত [বা জাগ্রত হলে] ঐ ফিরিশতা তার জন্য এই বলে দু`আ করেন : হে আল্লাহ! আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দিন, কেননা সে পবিত্রতা অর্জন করে রাত্রি যাপন করেছে।৫৯
৫৯ হাসান সহিহ : ইবনু হিব্বান হা/১০৫৭- শায়খ আলবানী বলেন : হাদিসটি হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
ফাযায়েলে আমল – ৯৩ঃ মু`আয ইবনু জাবাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : কোন মুসলিম যদি পবিত্র অবস্থায় রাত্রি যাপন করে, অতঃপর রাতে উঠে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ্ তাই দান করেন।৬০
৬০ হাসীদ সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৫০৪২- আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ৯৪ঃ বারাআ ইবনু `আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃ] বলেছেন : যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সলাতের উযূর মতো উযূ করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে বলবে : “হে আল্লাহ্! আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পণ করলাম। আমার সকল কাজ আপনার কাছে সমর্পণ করলাম এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম আপনার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন আশ্রয়স্থান ও পরিত্রাণের স্থান নেই। হে আল্লাহ্! আমি ঈমান আনলাম আপনার অবতীর্ণ কিতাবের উপর এবং আপনার প্রেরিত নবীর উপর।”-অতঃপর যদি সেই রাতেই তোমার মৃত্যু হয় তবে ইসলামের উপর মৃত্যু হইবে। কাজেই এ কথাগুলো তোমার সর্বশেষ পরিণত করো।
হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/২৩৯ ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮ পরিচ্ছেদঃ মিশওয়াক করার ফাযীলাত
ফাযায়েলে আমল – ৯৫ঃ `আয়িশাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃ] বলেছেন : মিসওয়াক হচ্ছে মুখের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উপায়।৬২
হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/২৪২০৩, ইমাম ইবনু হিব্বান, শু`আইব আরনাউত্ব ও শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ৯৬ঃ `আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মিসওয়াক করার আদেশ দিয়ে বলেন, নবী [সাঃ] বলেছেন : বান্দা যখন মিসওয়াক করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তখন তার পিছনে একজন ফিরিশতা দাঁড়ায় এবং মনোযোগ দিয়ে তার ক্বিরাআত শুনে। অতঃপর ফিরিশতা তার অতি নিকটবর্তী হয় এমনকি ফিরিশতার নিজের মুখ তার মুখের উপর রাখেন। তখন তার মুখ থেকে কুরআনের যা কিছুই তিলাওয়াত বের হয় তা ফিরিশতার উদরে প্রবেশ করে। কাজেই তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র রাখো কুরআনের জন্য।৬৩
৬৩ হাদিস সহিহ : বাযযার হা/৬০৩- শায়খ আলবানী হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ৯৭ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবার সম্ভাবনা না থাকলে আমি প্রত্যেক সলাতের জন্য মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।”
৬৪ হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৮৩৮ ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯ পরিচ্ছেদঃ ফাযায়িলে আযান – আযান ও ইক্বামাতের ফাযীলাত
ফাযায়েলে আমল – ৯৮ঃ জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : শয়তান সলাতের আযানের শব্দ শুনে পলায়ন করিতে করিতে রাওহা পর্যন্ত ভেগে যায়। আ`মাশ বলেন, আমি আবূ সুফিয়ানকে রাওহা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এ স্থানটি মাদীনাহ্ হইতে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত।
৬৫ হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৮৭৮ ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ৯৯ঃ জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : শয়তান সলাতের আযানের শব্দ শুনে পলায়ন করিতে করিতে রাওহা পর্যন্ত ভেগে যায়। আ`মাশ বলেন, আমি আবূ সুফিয়ানকে রাওহা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এ স্থানটি মাদীনাহ্ হইতে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত।৬৬
৬৬ হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৮৮০শির্ক ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০০ঃ আবূ সাঈদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : যেকোন মানুষ, জ্বিন অথবা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়ায শুনবে, সে ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে।৬৭
৬৭ হাদিস সহিহ ; সহীহুল বুখারি হা/৩০৫৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০১ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যখন সলাতের আযান দেয়া হল, তখন শয়তান পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে বাতকর্ম করিতে করিতে [দ্রুত] পলায়ন করে, যেন সে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত দেয়া হয় তখন সে পলায়ন করে। ইক্বামাত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে এবং মুসল্লীর মনে সংশয় সৃষ্টি করিতে থাকে। সে তাকে বলে, এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো। অথচ এ কথাগুলো সলাতের পূর্বে তার স্মরণও ছিলো না। শেষ পর্যন্ত মুসল্লী এমন এক বিভ্রাটে পড়ে যে, সে বলিতেও পারে না, সে কত রাক`আত নামাজ আদায় করেছে।৬৮
৬৮ হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৫৭৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০২ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
“মুয়াজ্জিনের আযানের আওয়ায যেকোন জ্বিন, ইনসান, গাছ এমনকি পাথরও শুনবে সে ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে।”
ইবনু মাজাহ্, সহিহ আত-তারগীব হা/২২৫। শায়খ আলবানী বলেন : হাদিসটি সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০৩ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি বার বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাতে নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার জন্য তার প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে লিখা হয় ষাট নেকী এবং প্রত্যেক ইক্বামাতের বিনিময়ে লিখা হয় ত্রিশ নেকী।
হাদিস সহিহ : ইবনু মাজাহ্ হা/৭২৮- শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০৪ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন ; মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর যতদূর পর্যন্ত যায় তাকে ততদূর ক্ষমা করে দেয়া হয় তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি জিনিসই [ক্বিয়ামাতের দিন] তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে। আর কেউ জামাআতে হাজির হলে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত সলাতের সাওয়াব লিখা হয় এবং এক নামাজ থেকে আরেক সলাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
হাদিস সহিহ ; আবূ দাউদ হা/৫১৫, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০৫ঃ বারাআ ইবনু `আযিব্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : মুয়াজ্জিন ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব পায় যে তার সাথে নামাজ আদায় করে।
হাদিস সহিহ : নাসায়ী হা/৬৪৬, তাহক্বীক্ব আলবানী : সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০৬ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : ইমাম হচ্ছে যিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন [ওয়াক্তের] আমানতদার। `হে আল্লাহ্! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।
হাদিস সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৫১৭, তিরমিজি হা/২০৭, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০৭ঃ ইবনু `উমার হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি জিনিসই মুয়াজ্জিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।”
[আহমাদ হা/৬২০২, ইবনু মাজাহ্ হা/৭২৪, সহিহ আত-তারগীব হা/২৩৪। তাহক্বীক্ব আলবানী : হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১০ পরিচ্ছেদঃ মুয়াজ্জিনের আযানের জবাবে যা বলা ফাযীলাতপূর্ণ
ফাযায়েলে আমল – ১০৮ঃ `আবদুল্লাহ্ ইবনু `আমর ইবনুল `আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবী [সাঃ]- কে বলিতে শুনেছেন। তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বলবে। তারপর আমার উপর দরূদ পাঠ করিবে। কেননা কেউ আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ্ তার প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ প্রার্থনা করিবে। ওয়াসিলাহ্ হচ্ছে জান্নাতের একটি বিশেস মর্যাদার আসন, যার অধিকারী হইবেন আল্লাহর একজন বিশিষ্ট বান্দা। আমি আশা করছি, আমিই হবো সেই বান্দা। কেউ আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ্ প্রার্থনা করলে সে আমার শাফা`আত পাবে।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৮৭৫। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১০৯ঃ জাবির ইবনু `আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে দু`আ করে : [অর্থ] : “ হে আল্লাহ্ যে পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সলাতের রব! মুহাম্মাদ [সাঃ]- কে ওয়াসিলাহ্ ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সেই মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিন যার অঙ্গীকার আপনি করিয়াছেন”– ক্বিয়ামাতের দিন সে আমার শাফা`আত লাভের অধিকারী হইবে।
হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৫৭৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১১০ঃ `আবদুল্লাহ্ ইবনু `আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্ রাসূল! মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের উপর মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেন : মুয়াজ্জিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। অতঃপর আযান শেষ হলে [আল্লাহর নিকট] দু`আ করিবে। তখন তোমাকে তাই দেয়া হইবে [তোমার দু`আ ক্বুবুল হইবে]।
হাসান সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৫২৪- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব আলবানী : হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১১১ঃ সা`দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে : “এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তাহাঁর কোন শরীক নেই, মুহাম্মাদ [সাঃ] তাহাঁর বান্দা ও রাসূল, আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদ [সাঃ]- কে রাসূল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট”– তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হইবে।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৮৭৭- শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১১২ঃ `উমার ইবনুল খাত্তাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : তোমাদের কেউ যদি মুয়াজ্জিনের আল্লাহ্ আকবার আল্লাহু আকবার-এর জওয়াবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে এবং আশহাদু আল্-লা ইলাহা- ইল্লাল্লাহ-এর জওওয়াবে আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলে এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ এর জওয়াবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলে, অতঃপর হাইয়্যা `আলাস্-সলাহ্ এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ বলেত, তারপর হাইয়্যা `আলাল-ফালাহ্-এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ বলে, তাপর যদি আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এর জওয়াতে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৮৭৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১ পরিচ্ছেদঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু`আর ফাযীলাত
ফাযায়েলে আমল – ১১৩ঃ আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু`আ কখনো প্রত্যাখ্যাত হয় না।৭৮
৭৮ হাদিস সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৫২১- হাদীসের শব্দাবলী তার, আহমাদ হা/১২২০০, তিরমিজি হা/২১২, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১১৪ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
অন্যবর্ণায় রয়েছে: “যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে মুয়াজ্জিন যা বলে তাই বলবে সে জান্নাতের প্রবেশ করিবে।”
নাসায়ী, ইবনু হিব্বান, হাকিম। শায়খ আলবানী বলেন : হাদিসটি হাসান। তা`লীক্বাতুল হাস্সান `আলা সহিহ ইবনি হিব্বান হা/১৬৬৫। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১১৫ঃ জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যখন সলাতের ইক্বামাত দেয়া হয় তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দু`আ কবুল করা হয়।
হাদিস হাসান : আহমাদ হা/১৪৬৮৯- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহিহ আত-তারগীব হা/২৬০, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ লিগাইরিহি বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১১৬ঃ আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “আযান ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু`আ কবুল হয় । সুতরাং তোমরা দু`আ করো।”
[ইবনু খুযাইমাহ হা/৪২৫, তা`লীক্বাতুল হাস্সান `আলা ইবনি হিব্বান হা/১৬৯৪, তাহক্বীক্ব আলবানী : সহিহ] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১১৭ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
“দুই সময়ে দু`আকারী দু`আ করলে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না। যখন সলাতের ইক্বামাত দেয়া হয় এবং আল্লাহর পথে [জিহাদের] কাতারে।”
[ইবনু হিব্বান, হাকিম। ইমাম হাকিম ও শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। সহী আত-তারগীব হা/২৫৪, ২৬০। মালিক হাদিসটি মাওকুফভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২ পরিচ্ছেদঃ ফাযায়িলে মাসাজিদ – মাসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১১৮ঃ `উসমান ইবনু `আফফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে শুনিয়াছি : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১২১৭শির্ক। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১১৯ঃ `আয়িশাহ [রা] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন: যে ব্যক্তি মাসজিদ নির্মাণ করলো এবং মাসজিদ নির্মাণে তার লোক দেখানো বা সুনাম অর্জনের কোন ইচ্ছা না থাকলে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। {১}
“আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর নির্মাণ করেন।” [সহীহুল বুখারি সহিহ মুসলিম ও অন্যান্য]
“আল্লাহ্ জান্নাতে তার জন্য ঐ মাসজিদ ঘরের চাইতেও অধিক প্রশন্ত ঘর নির্মাণ করেন।” [আহমাদ হা/২৭৬১২, সহিহ আত-তারগীব হা/২৬৮। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন : শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : সহিহ লিগাইরিহি]
“আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে এর চাইতে অতি উত্তম ঘর তৈরি করেন।” [আহমাদ হা/১৬০০৫, ত্বাবারানী, সহিহ আত-তারগীব হা/২৬৯। শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : সানাদে দুর্বলতা আছে তবে হাদিস সহিহ। শায়খ আলবানী একে হাসান বলেছেন]
{১} হাসান লিগাইরিহি : ত্বাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ হা/১৯৪২, সহিহ আত-তারগীব হা/২৭৪। শায়খ আলবানী বলেন : হাদিসটি হাসান লিগাইরিহি। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি
১৩ পরিচ্ছেদঃ সকাল সন্ধ্যায় মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১২০ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি সকালে এবং সন্ধ্যায় সালাত আদায় করিতে মাসজিদে যায় এবং যতবার যায় আল্লাহ্ তা`আলা ততবারই তার জন্য জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর উপকরণ প্রস্তুত করেন।
হাদিস সহিহ ; সহীহুল বুখারি হা/৬২২ ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে লেগে থাকার ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১২১ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : আল্লাহ্ সাত শ্রেণীর লোককে ক্বিয়ামাতের দিন তাহাঁর ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। যে দিন তাহাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকিবে না। [১] ন্যায়পরায়ণ শাসক, [২] যে যুবক আল্লাহর `ইবাদাতে রত থাকে, [৩] যার অন্তর মাসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, [৪] এমন দু`ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্য কেবল পরস্পরে ভালবাসায় মিলিত অথবা পৃথক হয়, [৫] ঐ ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী উচ্চ বংশীয় ভদ্র মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নিজের দিকে আকৃষ্ট করে আর সে বলে, আমি আল্লাহর `আযাবকে ভয় করি, [৬] যে ব্যক্তি গোপনে সদাক্বাহ করে। এমন কি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কি খরচ করছে, [৭] যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর স্মরণকালে তার দু`চোখ অশ্রুসিক্ত হয়।
হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৬২০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১২২ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : যতক্ষণ কোন মুসলিম ব্যক্তি মাসজিদে নামাজ ও যিকিরে মশগুল থাকে,আল্লাহ্ তার প্রতি এরূপ সন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন, যেরূপ প্রবাসী তার প্রবাস থেকে ফিরে এলে তার ঘরের লোকেরা তাকে পেয়ে খুশি হয়ে থাকে।
৮৪ হাদিস সহিহ : ইবনু মাযাহ হা/৮০০- শায়খ আলবানী বলেন হাদিসটি সহিহ এবং তা বুখারি ও মুসলিমের শর্তে, যেমনটি হাকিম বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদ ঝাড়– দেয়ার ফযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১২৩ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা কালো বর্ণের মহিলা মাসজিদ ঝাড়ু দিতো। অতঃপর সে মারা গেলো। কিন্তু নবী [সাঃ] তা জানতেন না। একদা নবী [সাঃ] তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বলিলেন, তার খবর কি? সাহাবীগণ বলেন, সে মারা গেছে, হে আল্লাহর রাসূল! নবী [সাঃ] বলিলেন : তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? তারা লোকটির কাহিনী বলে বললো, সে তো এরূপ এরূপ ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা তাকে যেন খাটো করলো। আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি [সাঃ] তার কবরের নিকট গেলেন এবং তার জানাযার নামাজ আদায় করিলেন।
হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/১২৫১- হাদীসের শব্দাবলী তার, ইবনু মাযাহ হা/১৫৩০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১২৪ঃ `আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] আদেশ করিয়াছেন মহল্লায় মাসজিদ নির্মাণ ও মাসজিদকে পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করে রাখতে।
হাদিস সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৪৫৫, তিরমিজি হা/৫৯৪- হাদীসের শব্দাবলী উভয়ের, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে বসে থাকার ফযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১২৫ঃ আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজ আদায়রত ব্যক্তি হিসেবেই গণ্য হইবে, যতক্ষণ সালাত [অর্থাৎ সলাতের অপেক্ষা] তাকে আটকে রাখবে। তাকে তো তার পরিবার পরিজনদের নিকট ফিরে যেতে কেবল সালাতই বারণ করছে।
হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৬১৯, সহিহ মুসলিম হা/১৫৪২- হাদীসের শব্দাবলী উভয়ের, আবূ দাউদ হা/৪৭০, আহমাদ হা/৮২৪৬, ১০৩০৮। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১২৬ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রা] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কোন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত সালাত আদায়ের স্থানে [জায়নামাযে] সলাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরো সময় সে সলাতেই থাকে। তার প্রত্যাবর্তন না করা অথবা উযূ টুটে না যাওয়া পর্যন্ত মালায়িকাহ্ [ফিরিশতারা] তার জন্য এই বলে দু`আ করিতে থাকে : হে আল্লাহ্! তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ্! তার প্রতি রহম করুন।` আমি বললাম, উযূ টুটে যাওয়ার অর্থ কী? তিনি বলিলেন। [পায়খানার রাস্তা দিয়ে] নিঃশব্দে অথবা সশব্দে বায়ু নির্গত হওয়া।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১৫৪১। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১২৭ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব [রাঃআঃ] বলেন : “ রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] আমাদেরকে আদেশ করিয়াছেন মহল্লায় মাসজিদ নির্মাণ করিতে এবং আমাদেরকে আদেশ করিয়াছেন মাসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখতে।”
[আহমাদ ও তিরমিজি। ইমাম তিরমিজি বলেন : হাদিসটি সহিহ। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১২৮ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কেউ কোন উদ্দেশ্যে মাসজিদে এলে, সে ঐ উদ্দেশ্য অনুপাতেই [প্রতিদান] পাবে।
হাদিস সহিহ : আবূ দাঊদ হা/৪৭২, হাদীসের শব্দাবলী তার, বায়হাক্বী। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৭ পরিচ্ছেদঃ নামাজ আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত
ফাযায়েলে আমল – ১২৯ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : মাসজিদ থেকে যার [বাসস্থান] যত বেশী দূরে, সে তত বেশি সাওয়াবের অধিকারী।
হাদিস সহিহ : ইবনু মাজাহ্ হা/৭৮২, অনুরূপ ইমাম যাহাবী এবং শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১৩০ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “যার হাটার পথ মাসজিদ থেকে বেশি দূরে সে সলাতের অধিক সাওয়াব লাভের হকদার।” [সহিহ মুসলিম] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১৩১ঃ উবাই ইবনু কা`ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার জানা মতে মাদীনাহর সালাত আদায়কারীদের মধ্যে এক ব্যক্তির বাসস্থান মাসজিদ থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে অবস্থিত ছিল। এ সত্ত্বেও তিনি সর্বদা পায়ে হেঁটে জামা`আতে উপস্থিত হইতেন। আমি তাকে বললাম, আপনি একটি গাধা খরিদ করে নিলে গরম ও অন্ধকারে তাতে সাওয়ার হয়ে আসতে পারতেন। তিনি বলিলেন, আমার ঘর মাসজিদের নিকটবর্তী হোক, তা আমি অপছন্দ করি। একথা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন। তি বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি মাসজিদে আসা ও মাসজিদ থেকে ঘরে ফেরার বিনিময়ে সাওয়াব লাভের প্রত্যাশা করি [তাই এরূপ বলেছি]। তিনি [সা:] বলিলেন : তুমি যা পাওয়ার আশা করেছ, আল্লাহ্ তোমাকে তাই দিয়েছেন : তুমি যা সাওয়াবের প্রত্যাশা করেছ আল্লাহ তা পূর্ণরূপেই তোমার জন্য মঞ্জুর করিয়াছেন।
হাদিস সহিহ : আবূ দাউদ হা/৫৫৭- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহিহ মুসলিম হা/১৫৪৬, ইবনু মাজাহ্ হা/৭৮৩, দারিমা। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল -১৩২ঃ জাবির ইবনু `আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি মাসজিদ থেকে দূরে অবস্থিত ছিল। আমরা মাসজিদের আশেপাশে বাড়ি নির্মাণের জন্য ঐ বাড়ি-ঘর বিক্রি করার মনস্থ করলে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] তা করিতে নিষেধ করিলেন। তিনি [আমাদেরকে] বলিলেন : [সলাতের উদ্দেশ্যে মাসজিদে আসার] প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে মর্যাদা ও সাওয়াব বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১৫৫০শির্ক। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১৩৩ঃ জাবির ইবনু `আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা বনু সালিম গোত্রের লোকেরা মাসজিদের সামনে বসতি স্থাপন করিতে মনস্থ করলে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] তাহাদেরকে বলিলেন : হে বনু সালিম গোত্রের লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঐ বাড়িতেই থাকো। কারণ তোমাদের সালাতের জন্য মাসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়। [অন্য বর্ণনায় রয়েছে] এ কথা শুনে তারা বললো : আমরা এতে এতো খুশি হলাম যে, আমাদের বাড়ি-ঘর স্থানান্তরিত করে মাসজিদের কাছে আসলে এতোটা খুশি হতাম না।
উল্লেখ্য, যে যতদূর থেকে মাসজিদে সলাতের জন্য আসবে তার সাওয়াব ততো বেশি হইবে- এ মর্মে বহু সহিহ হাদীসাবলী বর্ণিত আছে সহিহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১৫৫১, ১৫৫২শির্ক। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১৩৪ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে পাক পবিত্র হয় [উযূ করে] তারপর কোন ফরয নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর কোন ঘরে [মাসজিদে] যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপের একটিতে গুনাহ্ ঝরে পড়ে এবং অপরটিতে মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১৫৫৩শির্ক। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাযায়েলে আমল – ১৩৫ঃ `উক্ববাহ্ ইবনু `আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন: যখন কোন ব্যক্তি পবিত্রতা হাসিল করে সালাতের জন্য মাসজিদে আসে, তখন তার জন্য দু`জন কিংবা একজন লিখক [ফিরিশতা] মাসজিদের উদ্দেশ্যে প্রতিটি কদমের বিনিময়ে দশটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করেন।
হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/১৭৪৪০- শায়খ আলবানী ও শু`আইব আরনাউত্ব হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৩৬ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “তার প্রতি কদমের একটিতে নেকী লিখা হয় এবং অপরটিতে গুনাহ মুছে ফেলা হয়।”
[নাসায়ী হাকিম, ইবনু হিব্বান, মালিক, সহিহ আত-তারগীব হা/২৯৩। ইমাম হাকিম বলেন : মুসলিমের শর্তে সহিহ। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৩৭ঃ আবূ উমামাহ্ আল-বাহিলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেন : তিন প্রকার লোকের প্রত্যেকেই মহান আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়, তার মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ্ তার দায়িত্বশীল। অতঃপর আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন । দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আগ্রহ সহকারে মাসজিদে যায়, আল্লাহ্ তার দায়িত্বশীল। এমনকি তার মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। তৃতীয়ত, যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হয়ে সালাম বিনিময় করে, আল্লাহ্ তার জিম্মাদার।
হাদিস সহিহ : আবূ দাঊদ হা/২৪৯৪- হাদীসের শব্দাবলী তার, মিশকাত, হা/৭২৭। শায়খ আলাবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৩৮ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
“যে ব্যক্তি জামা`আতের সাথে ফরয নামাজ আদায়ের জন্য সন্ধ্যা বেলায় পায়ে হেঁটে মাসজিদে যায় তার একটি পদক্ষেপে একটি গুনাহ্ মোচন হয় এবং আরেক পদক্ষেপে একটি নেকী লিপিবদ্ধ হয়, তার আসা ও যাওয়া উভয়টিতেই এরূপ হয়ে থাকে।”
[আহমাদ- হাসান সানাদে এবং ত্বাবারানী ও ইবনু হিব্বান। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, সহিহ আত-তারগীব হা/২৯৫] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৩৯ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
“যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে কোন ফরয নামাজ আদায়ের জন্য মাসজিদে যায়, অতঃপর ইমামের সাথে সালাত আদায় করে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়।”
[ইবনু খুযাইমাহ। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন সহিহ আত-তারগীব হা/২৯৬] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৪০ঃ সালমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে সুন্দরভাবে উযূ করে মাসজিদে আসে সে আল্লাহর যিয়ারাতকারী। আর যাকে যিয়ারাত করা হয় তার উপর হক যে, তিনি যিয়ারাতকারীকে সম্মানিত করবেন।
হাদিস সহিহ : ত্বাবারানী কাবীর হা/৬১৩৯- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহিহ আত-তারগীব হা/৩১৭। শায়খ আলবানী বলেন : হাদিসটি হাসান। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৪১ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেরই জিম্মাদারী আল্লাহর উপর। তারা বেঁচে থাকা অবস্থায় আল্লাহ্ তাহাদের রিযিকের ব্যবস্থা করবেন এবং তাহাদের জন্য তিনিই যথেষ্ট হইবেন। আর যদি তারা মারা যায় তাহলে আল্লাহ্ তাহাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তারা হলোঃ যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে সে আল্লাহর জিম্মায়, যে ব্যক্তি মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় সে আল্লাহর জিম্মায় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে [জিহাদে] বের হয় সে আল্লাহর জিম্মায়।”
ইবনু হিব্বান হা/৪৯৯-তাহক্বীক্ব আলবানী, সহিহ আত-তারগীব হা/৩১৬। শু`আইব আরনাউত্ব ও শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮ পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের বাড়িতে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১৪২ ঃ উম্মু হুমাইদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে সালাত আদায় করিতে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : আমি জানি যে, তুমি আমার সাথে সালাত আদায় করিতে ভালোবাসো। কিন্তু [জেনে রেখো], তোমার ঘরে সালাত আদায় তোমার কক্ষে সালাত আদায়ের চাইতে উত্তম, তোমার কক্ষে নামাজ আদায় তোমার বাড়িতে নামাজ আদায় হইতে উত্তম এবং তোমার বাড়িতে সালাত আদায় আমার এ মাসজিদে সালাত আদায় হইতে উত্তম। অতঃপর ঐ মহিলার নির্দেশে তার বাড়ি থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী ও অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাতে একটি মাসজিদ নির্মাণ করা হলো। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ঐ মাসজিদে সালাত আদায় করিতেন।
হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/২৭০৯০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৪৩ঃ `আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন: কোন নারী তার বাড়ির সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে বসে যে সালাত আদায় করে, সেই সালাত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।
হাসান লিগাইরিহি : ইবনু খুযাইমাহ হা/১৬৯১, ১৬৯২- হাদীসের শব্দাবলী তার, ত্বাবারানী, সহিহ আত-তারগীব হা/৩৪৩। তাহক্বীক্ব আলবানী : হাসান লিগাইরিহি। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি
ফাজায়েলে আমল – ১৪৪ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : তোমরা তোমাদের নারীদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করিবে না। অবশ্য তাহাদের ঘর তাহাদের জন্য উত্তম।
হাদিস সহিহ : আবূ দাউদ হা/৫৬৭- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহিহ আত-তারগীব হা/৩৩৮। শায়খ আলবানী বলেন : হাদিস সহিহ। উল্লেখ্য, মহিলারা মাসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করিতে পারবে। যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নবী [সাঃ]-এর যুগে মহিলা সাহাবীরা মাসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করিতেন এমনকি অন্ধকার রাতে ফজরের নামাজও তারা মাসজিদে গিয়ে আদায় করিয়াছেন। তবে মহিলাদের জন্য নামাজ আদায়ে মাসজিদে যাওয়া আবশ্যক করা হয়নি। আবশ্যক করলে হয়তো তা পালন করা তাহাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে যেতো। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৪৫ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “মহিলারা পর্দার আড়ালে থাকার যোগ্য। সে যখন বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তার উপর প্রবল হয়ে যায়।”
[ত্বাবারানী আওসাত। এর রিজাল সহিহ রিজাল। শায়খ আলবানী বলেন : হাদিসটি সহিহ। সহিহ আত-তারগীব হা/৩৩৯, ৩৪১। হাদিসটি প্রমাণ করে, মহিলাদের বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়া অপছন্দনীয়। তাহাদের জন্য বাড়িতে বসেই অনেক `ইবাদাত বন্দেগী করার সুযোগ রয়েছে] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদুল হারামে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১৪৬ঃ জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : মাসজিদুল হারামে সালাত আদায়ে অন্য যে কোন মাসজিদে সালাতের চেয়ে একলক্ষ গুণ বেশি ফাযীলাত রয়েছে।
হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/১৫২৭১, ইবনু মাজাহ্ হা/১৪০৬- শব্দাবলী উভয়ের, ইরওয়াউল গালীল হা/১১২৯। আল্লামা মুনযিরী, আল্লামা বুসয়রী , ইবনু `আবদুল হাদী, শু`আইব আরনাউত্ব, শায়খ আলবানী এবং একদল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে নাববীতে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১৪৭ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : আমার এই মাসজিদ [মাসজিদে নাববীতে] এক রাক`আত সালাত আদায় অন্য মাসজিদে এক হাজার রাক`আত সালাত আদায়ের চাইতেও উত্তম। কিন্তু মাসজিদুল হারাম ব্যতীত।
১০২ হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/১১১৬- শু`আইব আরনাউত্ব, শায়খ আলবানী ও একদল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১ পরিচ্ছেদঃ বাইতুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১৪৮ঃ `আবদুল্লাহ্ ইবনু `আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন: সুলাইমান ইবনু দাঊদ বাইতুল মাকদিস মাসজিদের কাজ সম্পন্ন করে আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেন: আল্লাহর বিধানের অনুরূপ সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হইবে না, এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে শুধুমাত্র নামাজ আদায়ের জন্য আসবে, সে তার গুনাহ্ হইতে সদ্য প্রসূত সন্তানের মত নিস্পাপ অবস্থায় বের হইবে। অতঃপর নবী [সাঃ] বলেন: প্রথম দু`টি তাঁকে দেয়া হয়েছে। আর আমি আশা করি তৃতীয়টি আমাকে দান করা হইবে।
হাদিস সহিহ : ইবনু মাজাহ্ হা/১৪০৮- হাদীসের শব্দাবলী তার, নাসায়ী, আহমাদ হা/৬৬৪৪, ইবনু খুযাইমাহ হা/১৩৩৪, ইবনু হিব্বান হা/৪৪২০, মুস্তাদরাক হাকিম হা/৩৬২৪, তা`লীকুম রাগীব ২/১৩। আল্লামা বুসয়রী `মিসবাহুয যুজাজাহ` গ্রন্থে হা/৫০২, এবং ডক্টর মুস্তফা আ`যমী ইবনু খুযাইমাহর তাহক্বীক্বে বলেন : সানাদ জঈফ।
শায়খ আলবানী বলেন : মুসনাদ আহমাদ ও অন্যত্র এর ভিন্ন একটি সহিহ সানাদ রয়েছে। ইমাম হাকিম বলেন : বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ, এর কোন ক্রটি আছে বলে জানা নেই। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করিয়াছেন। শু`আইব আরনাউত্ব ইবনু হিব্বান ও আহমাদের তাহক্বীক্ব গ্রন্থে বলেন : সানাদ সহিহ। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “বাইতুল মাকদিসে নামাজ আদায়ের মর্যাদা মাসজিদে নাববীর সলাতের এক চতুর্থাংশ।” [বায়হাক্বী- সহিহ সানাদে। দেখুন, শায়খ আলবানী প্রণীত `তাহজীরুল সাজিদ`- হাদীসের শব্দ তার থেকে গৃহীত] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৪৯ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃ] বলেছেন : তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও [সাওয়াবের উদ্দেশে] সফর করা যাবে না। এ মাসজিদগুলো হলো : মাসজিদুল হারাম, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] এর মাসজিদ এবং মাসজিদুল আকসা।
হাদিস সহিহ ; সহীহুল বুখারি হা/১১৫। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২ পরিচ্ছেদঃ মাসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ের ফাযীলাত
ফাজায়েলে আমল – ১৫০ঃ সাহল ইবনু হুনাইফ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করার পর মাসজিদে কুবায় এসে নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি `উমরাহর সাওয়াব রয়েছে।
হাসীস সহিহ : ইবনু মাজাহ্ হা/১৪১২- হাদীসের শব্দাবলী তার, তা`লীকুর রাগীব। শায়খ আলবানী বলেন : হাদিস সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজায়েলে আমল – ১৫১ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “কুবার মাসজিদে নামাজ আদায় করা `উমরাহ্ করার সমতুল্য।”
[ইবনু মাজাহ্ হা/১৪১১, আহমাদ হা/১৫৯৮১, ত্বাবারানী, হাকিম, তা`লীকুর রাগীব ২/১৩৮, ১৩৯। ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী ও হাফিয ইরাক্বী বলেন। সানাদ সহিহ। শু`আইব আরনাউত্ব ও আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply