রসূলুল্লাহ [সাঃ] এর রাত্রে গল্প বলা
রসূলুল্লাহ [সাঃ] এর রাত্রে গল্প বলা , এই অধ্যায়ে হাদীস ১ টি ( ১৮৮-১৮৮ পর্যন্ত ) << শামায়েলে তিরমিযী হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-৩৮ঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রাত্রে গল্প বলা
১।পরিচ্ছদঃ রসূলুল্লাহ [সাঃ] এর রাত্রে গল্প বলা
১৮৮. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার ১১ জন মহিলা এ মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো যে, তারা তাহাদের নিজ নিজ স্বামী সম্পর্কে সব খুলে বলবে এবং কোন কিছুই গোপন করিবে না।
প্রথম মহিলা বলিল, আমার স্বামী অলস, অকৰ্মণ্য, দুর্বল উটের গোশততুল্য, তা আবার পর্বত চূড়ায় সংরক্ষিত; যা ধরাছোঁয়া দুঃসাধ্য। তাহাঁর আচরণ রুক্ষ। ফলে তাহাঁর কাছে যাওয়া যায় না। সে স্বাস্থ্যবানও নয়, আর তাকে ত্যাগও করিতে পারছি না।
দ্বিতীয় মহিলা বলিল, আমার স্বামী এমন যে, আমি আশংকা করছি, তাহাঁর দোষক্ৰটি বর্ণনা করে শেষ করিতে পারব না। আর আমি যদি বর্ণনা করে দেই, তাহলে কেবল দোষত্রুটিই বর্ণনা করব।
তৃতীয় মহিলা বলিল, আমার স্বামী দীর্ঘদেহ বিশিষ্ট, দেখিতে কদাকার। আমি কথা বললে [উত্তরে আসে] তালাক। আর নীরব থাকলে সে তো ঝুলন্ত রশি [অর্থাৎ কিছু চাইলে বদ মেজাজের সম্মুখীন হতে হয় এবং নীরব থাকলে হতে হয় বঞ্চিত]।
চতুর্থ মহিলা বলিল, আমার স্বামী তিহামার রাত্রির ন্যায়- না [প্রচণ্ড] গরম, আর না [প্রচণ্ড] ঠাণ্ডা। তাহাঁর থেকে কোন ভয়-ভীতি কিংবা অস্বস্তির কারণ নেই।
পঞ্চম মহিলা বলিল, আমার স্বামী ঘরে এলে মনে হয় চিতাবাঘ আর বাইরে বের হলে সে হয় সাহসী সিংহ। বাড়িতে কি ঘটল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না।
ষষ্ঠ মহিলা বলিল, আমার স্বামী যখন খায়, তৃপ্তি ভরে খায়। আর পান করলে সব সাবাড় করে দেয় এবং কোন কিছু অবশিষ্ট রাখে না। আর যখন ঘুমাতে চায়, চাদর দেহে জড়িয়ে দেয়। আমার কোন বিপদাপদ আছে কি না তা হাত বাড়িয়েও দেখে না।
সপ্তম মহিলা বলিল, আমার স্বামী অক্ষম, কথা বলিতে পারে না, সব ধরনের রোগে আক্রান্ত। সে আমার মস্তক চূর্ণ করিতে পারে অথবা মারধোর করে হাড়গোড় সব ভেঙ্গে দিতে পারে বা উভয়টিও করিতে পারে।
অষ্টম মহিলা বলিল, আমার স্বামীর পরশ খরগোশের ন্যায় কোমল। [তাহাঁর ব্যবহৃত সুগন্ধি] জাফরানের সুগন্ধির ন্যায়।
নবম মহিলা বলিল, আমার স্বামী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ত্ব। অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, দীর্ঘ দেহবিশিষ্ট, তাহাঁর বৈঠকখানা ঘরের নিকটবর্তী।
দশম মহিলা বলিল, আমার স্বামী হলো আমার মালিক। মালিকের প্রশংসা কী আর করব [উপরে বর্ণিত সকলের প্রশংসা একত্র করলেও তাহাঁর গুণ গেয়ে শেষ করা যাবে না]। তার রহিয়াছে অসংখ্য উট, অধিকাংশ সময় সেগুলো বাধাই থাকে। খুব কমই মাঠে চরানো হয়। এসব উট যখন বাদ্যের ঝংকার শোনে, তখন তারা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, তাহাদেরকে যবেহ করা হইবে।
একাদশ মহিলা উম্মে যারআ বলিল, আমার স্বামী আবু যারআ। আবু যারআর কী আর প্রশংসা করব, সে তো অলংকার দিয়ে আমার দুকান ভর্তি করে দিয়েছে, উপাদেয় খাবার খাইয়ে দুবাহু চর্বিযুক্ত করে দিয়েছে। আমাকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছে। ফলে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। আমি ছিলাম বকরী রাখালের কন্যা, খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করিতে হতো। আমি এখন অসংখ্য ঘোড়া, উট ও বকরী পালের মধ্যে তথা পর্যাপ্ত ধন-সম্পদের মধ্যে আছি। আমি তাকে কিছু বললেও আমাকে মন্দ বলত না। সারাক্ষণ নিদ্রায় কাটালেও কিছুই বলত না। পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও খাবার অবশিষ্ট থাকত।
উম্মে আবু যারআর [একাদশ মহিলার শাশুড়ির] প্রশংসাই বা কি করব! তাহাঁর বড় বড় পাত্রগুলো সর্বদা খানায় পরিপূর্ণ থাকতো। আর তার বাড়ির সীমানা সুবিশাল। ইবনি আবু যারআ তরবারির ন্যায় সূক্ষ্ম, বকরীর একটি উরুর গোশত তাহাঁর জন্য যথেষ্ট। আবু যারআর কন্যা সম্পর্কেই কী বলব! পিতামাতার অনুগত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, স্বাস্থ্যবান সতীনদের অন্তর্জ্বালার কারণ। আবু যারআর পরিচারিকার কথাই বা কি বলব! সে ঘরের গোপন তথ্য ফাঁস করে না। আমাদের খাবার বিনা অনুমতিতে হাত দেয় না। বাড়িতে কখনো আবর্জনা জমা করে রাখে না।
সে [একাদশ মহিলা] বলিল, আমি এমনই সুখ শান্তি, আদর সোহাগ সমৃদ্ধির মধ্যে দিনকাল কাটাচ্ছিলাম। এমন সময় একবার আবু যারআ বাইরে যান এবং দেখিতে পান যে, স্বাস্থ্যবান দুটি শিশু তাহাদের মায়ের স্তন নিয়ে খেলা করছে। এরপর আবু যারআ আমাকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেন।
এরপর আমি একজন বিত্তশালী উষ্ট্রারোহী ব্যক্তিকে বিয়ে করি। সেও আমাকে পর্যাপ্ত সামগ্রী জোড়ায় জোড়ায় দিয়েছিল। সে স্বামী বলিল, উম্মে যারআ! তৃপ্তি সহকারে খাও এবং ইচ্ছেমতো তোমার বাপের বাড়িতে পাঠাও। সে মহিলা বলিল, তার দান-দক্ষিণার যাবতীয় বস্তু একত্র করলে আবু যারআর সামান্যও হইবে না। আয়েশাহ [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, আবু যারআ যেমন উম্মে যারআর জন্য, আমিও ঠিক তদ্রুপ তোমার জন্য। [কিন্তু কখনো আবু যারআর মতো তোমাকে তালাক দেব না]{১}
{১} সহিহ বোখারী, হাদিস নং/৫১৮৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৬৪৫৮; ইবনি হিব্বান, হাদিস নং/৭১০৪; জামেউস সগীর, হাদিস নং/১৪১ গল্প বলা গল্প বলা হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply