সুন্নি ওয়াজ সমাবেশ ও তার রীতিনীতি
সুন্নি ওয়াজ সমাবেশ ও তার রীতিনীতি , এই অধ্যায়ে হাদীস = ৫১ টি হাদীস (১১৪৬ – ১১৯৬) << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ১৮ সভা-সমাবেশ ও তার রীতিনীতি
৫৩৪. অনুচ্ছেদঃ প্রশস্ত স্থানে বৈঠক অনুষ্ঠান উত্তম।
৫৩৫. অনুচ্ছেদঃ কিবলামুখী হয়ে বসা।
৫৩৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ মজলিস থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে।
৫৩৭. অনুচ্ছেদঃ রাস্তায় বসা।
৫৩৮. অনুচ্ছেদঃ সভা-সমিতিতে বসার জায়গা প্রশস্ত করা।
৫৩৯. অনুচ্ছেদঃ পরে আসা ব্যক্তি মজলিসের শেষ প্রান্তে বসবে।
৫৪০. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন দুইজনের মাঝখানে ফাক করে না বসে।
৫৪১. অনুচ্ছেদঃ মজলিসে লোকজনের ঘাড় টপকিয়ে সভাপতির নিকট গমন।
৫৪২. অনুচ্ছেদঃ সহযোগী অধিক সম্মানের পাত্র।
৫৪৩. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি কি বৈঠকে উপস্থিত লোকদের দিকে তার পা ছড়িয়ে দিয়ে বসতে পারে?
৫৪৪. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি জনসমাবেসের মধ্যে কিভাবে থুথু ফেলবে?
৫৪৫. অনুচ্ছেদঃ বহিরাঙ্গিনার বৈঠক।
৫৪৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজের পায়ের নলা উদলা করে কূপের পাশে বসে পদদ্বয় কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দেয়।
৫৪৭. অনুচ্ছেদঃ কেউ কারো সম্মানে স্বস্থান থেকে উঠে দাঁড়ালে সে যেন সেখানে না বসে।
৫৪৮. অনুচ্ছেদঃ আমানত [বিশ্বস্ততাবারানি]।
৫৪৯. অনুচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] কারো দিকে ফিরলে পূর্ণদেহে ফিরতেন।
৫৫০. অনুচ্ছেদঃ কেউ কোন প্রয়োজনে একজনকে অপরজনের নিকট পাঠালে সে যেন [কাউকে] তা অবহিত না করে।
৫৫১. অনুচ্ছেদঃ কেউ কি জিজ্ঞেস করিতে পারে, তুমি কোথা থেকে এসেছো?
৫৫২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শোনে, অথচ তারা তা অপছন্দ করে।
৫৫৩. অনুচ্ছেদঃ সোফা জাতীয় গদিতে বসা।
৫৫৪. অনুচ্ছেদঃ কতক লোককে গোপনে আলাপরত দেখলে সেখানে তাহাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করিবে না।
৫৫৫. অনুচ্ছেদঃ তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে দুইজনে যেন গোপন পরামর্শ না করে।
৫৫৬. অনুচ্ছেদঃ চারজন একত্র হলে।
৫৫৭. অনুচ্ছেদঃ কেউ কারো পাশে বসলে সে উঠে যেতে তার অনুমতি চাইবে।
৫৫৮. অনুচ্ছেদঃ রোদের দিকে মুখ করে বসবে না।
৫৫৯. অনুচ্ছেদঃ পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ নিয়ম [ইহতিবা]।
৫৬০. অনুচ্ছেদঃ কাউকে হেলান দেয়ার বালিশ পেশ করা।
৫৬১. অনুচ্ছেদঃ দুই হাঁটু খাড়া করে তা দুই হাতে বেড় দিয়ে ধরে নিতম্বের উপর বসা।
৫৬২. অনুচ্ছেদঃ চার জানু হয়ে বসা।
৫৬৩. অনুচ্ছেদঃ পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ নিয়ম [ইহুতি বাযযার]।
৫৬৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি হাঁটু গেড়ে বসে।
৫৩৪. অনুচ্ছেদঃ প্রশস্ত স্থানে বৈঠক অনুষ্ঠান উত্তম।
১১৪৬. আবদুর রহমান ইবনি আবু আমরা আল-আনসারী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ]-কে একটি জানাযার খবর দেয়া হলো। তিনি বিলম্ব করিলেন। লোকজন এসে নিজ নিজ জায়গায় বসে গেলো। অতঃপর তিনি এলেন। তারা তাকে আসতে দেখেই তাড়াহুড়া করলো এবং কতক লোক দাঁড়িয়ে গেলো, যাতে তিনি তাহাদের স্থানে বসেন। তিনি বলেন, না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ প্রশস্ত স্থানের বৈঠক উত্তম। অতঃপর তিনি একটু অগ্রসর হয়ে এক প্রশস্ত স্থানে বসলেন।
[দারিমি, তিরমিজী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৩৫. অনুচ্ছেদঃ কিবলামুখী হয়ে বসা।
১১৪৭. সুফিয়ান ইবনি মুনকিয [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] প্রায়ই কিবলামুখী হয়ে বসতেন। সূর্যোদয়ের পর ইয়াযীদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কুসাইত [রাহিমাহুল্লাহ] সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] ব্যতীত তিনি এবং উপস্থিত সকলে সিজদা করিলেন। তিনি বলেন, তুমি কি তোমার সংগীদের সিজদা লক্ষ্য করেনি? তারা নামায পড়া যায় না এমন সময় সিজদা করেছে।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
৫৩৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ মজলিস থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে।
১১৪৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ মজলিস থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় তথায় ফিরে এলে সে তার পূর্বোক্ত স্থানে বসার অধিক হকদার।
[মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৩৭. অনুচ্ছেদঃ রাস্তায় বসা।
১১৪৯.আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট এলেন। আমরা ছিলাম একদল বালক। তিনি আমাদের সালাম দিলেন। তিনি আমাকে তাহাঁর এক প্রয়োজনে পাঠালেন এবং আমার ফিরে না আসা পর্যন্ত রাস্তায় বসে আমার জন্য অপেক্ষা করিতে থাকলেন। এতে উম্মু সুলাইম [রাঃআঃ]-র নিকট আমার [বাড়িতে] ফিরে আসতে বিলম্ব হলো। তিনি বিলম্বের কারণ জিজ্ঞেস করলে আমি বললাম, নাবী [সাঃআঃ] তার এক প্রয়োজনে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, সেটা গোপনীয় বিষয়। তিনি বলেন, তাহলে তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর গোপনীয় বিষয়ের হেফাজত করো।
-[মুসলিম, বোখারী, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, দারিমি, ইবনি খুজাইমাহ], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৩৮. অনুচ্ছেদঃ সভা-সমিতিতে বসার জায়গা প্রশস্ত করা।
১১৫০. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন অপর ব্যক্তিকে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে না বসে। বরং তোমরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জায়গা প্রশস্ত করে বসো।
-[মুসলিম, বোখারী, দারিমি, আবু আওয়ানাসায়ী, ইবনি হিব্বান], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৩৯. অনুচ্ছেদঃ পরে আসা ব্যক্তি মজলিসের শেষ প্রান্তে বসবে।
১১৫১. জাবের ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর মজলিসে এসে যেখানে জায়গা [খালি] পাওয়া যেতো, আমাদের যে কেউ সেখানে বসে যেতো।
[আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৪০. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন দুইজনের মাঝখানে ফাক করে না বসে।
১১৫২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য দুইজনের মাঝে তাহাদের অনুমতি ছাড়া ফাঁক করে বসা হালাল নয়।
[আবু দাউদ, তিরমিজী, আহমাদ], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৪১. অনুচ্ছেদঃ মজলিসে লোকজনের ঘাড় টপকিয়ে সভাপতির নিকট গমন।
১১৫৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
উমার [রাঃআঃ] সন্ত্রাসী কর্তৃক আহত হলে যারা তাকে ধরে তার ঘরে নিয়ে আসেন, আমিও তাহাদের সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! বাইরে গিয়ে দেখো, কে আমাকে হামলা করেছে এবং আমার সাথে আর কে আহত হয়েছে? আমি বাইরে গিয়ে তাকে খবর দেয়ার জন্য ফিরে এলাম। দেখি যে, ঘর লোকে লোকারণ্য। তাই আমি তাহাদের ঘার ডিঙ্গিয়ে সামনে যেতে পছন্দ করলাম না। আমি ছিলাম উঠতি বয়সের যুবক। অতএব আমি বসে পড়লাম। আর তিনি কাউকে কোন কাজে পাঠালে নির্দেশ দিতেন, সে যেন ফিরে এসে তাকে তা অবহিত করে। তখন তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ইত্যবসরে কাব [রাঃআঃ] এসে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমীরুল মুমিনীনের দোয়া করা উচিৎ যাতে আল্লাহ তাকে এই উম্মাতের জন্য জীবিত রাখেন। অন্যথায় তিনি তাকে তুলে নিলে এই এই [অনিষ্ট] ঘটতে পারে। এমনকি কাব [রাঃআঃ] মোনাফিকদের নাম-উপনাম ও তাহাদের সংখ্যা পর্যন্ত উল্লেখ করেন। আমি বললাম, আপনি যা বলিলেন তা আমি তার নিকট পৌছাবো। কাব [রাঃআঃ] বলেন, তুমি তার কাছে পৌছাবে এই উদ্দেশেই তো আমি বলেছি। এবার আমি [ইবনি আব্বাস] সাহস সঞ্চার করে উঠে দাঁড়ালাম এবং লোকজনের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে তার শিয়রে গিয়ে বসলাম। আমি বললাম, আপনি আমাকে এজন্য পাঠিয়েছিলেন। আপনার সাথে আরো তেরোজন আহত হয়েছেন। কুলাইব আল-জাযযারও আহত হয়েছেন, তখন তিনি উখলির [পানির চৌবাচ্চা] নিকট উযু করছিলেন। আর কাব [রাঃআঃ] আল্লাহর শপথ করে এই এই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কাবকে ডাকো। তিনি কাব [রাঃআঃ]-কে ডাকলেন। উমার [রাঃআঃ] জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি বলেছেন? তিনি বলেন, আমি এই এই কথা বলেছি। উমার [রাঃআঃ] বলেন, নাসায়ী, আল্লাহর শপথ আমি দোয়া করবো না। আল্লাহ যদি উমারকে ক্ষমা না করেন তবে সে তো হতভাগ্য।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
১১৫৪. শাবী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ]-র নিকট এলো। তার নিকট একদল লোক বসা ছিল। সে তাহাদের ডিঙ্গিয়ে তার নিকট যেতে থাকলে তারা তাকে বাধা দেয়। তিনি বলেন, তোমরা তাকে বাধা দিও না। সে এসে তার নিকট বসার পর বলে, আপনি আমাকে এমন কিছু অবহিত করুন যা আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুনেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ
“যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে সে-ই হলো প্রকৃত মুসলমান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিহার করে সে-ই হলো প্রকৃত মুহাজির”।
-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, দারিমি, ইবনি হিব্বান, আহমাদ] সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৪২. অনুচ্ছেদঃ সহযোগী অধিক সম্মানের পাত্র।
১১৫৫. মুহাম্মাদ ইবনি আব্বাদ ইবনি জাফর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেছেনঃ লোকজনের মধ্যে আমার সহযোগীরাই আমার নিকট অধিক সম্মানের পাত্র।
[নাসায়ী, ইবনি হিব্বান], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৫৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমার সঙ্গীরাই অন্যদের চেয়ে আমার নিকট অধিক সম্মানের পাত্র, যদিও তারা লোকজনের ঘাড় টপকিয়ে এসে আমার নিকট বসে।
[পূর্বোক্ত বরাত], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫৪৩. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি কি বৈঠকে উপস্থিত লোকদের দিকে তার পা ছড়িয়ে দিয়ে বসতে পারে?
১১৫৭. কাছীর ইবনি মুররা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি জুমুআর দিন মসজিদে প্রবেশ করে আওফ ইবনি মালেক আল-আশজাঈ [রাঃআঃ]-কে একটি সভায় জনগণের দিকে তার দুই পা প্রসারিত করে দিয়ে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি আমাকে দেখামাত্র তার পদদ্বয় গুটিয়ে নিয়ে আমাকে বলেন, তুমি কি জানো, কি কারণে আমি আমার পদদ্বয় প্রসারিত করে রেখেছিলাম? যাতে কোন সৎকর্মশীল লোক এসে [আমার নিকটে] বসতে পারে।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৪৪. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি জনসমাবেসের মধ্যে কিভাবে থুথু ফেলবে?
১১৫৮. হারিস ইবনি আমর আস-সাহ্মী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি মিনা অথবা আরাফাতে ছিলেন। লোকজন তার চারপাশে ঘোরাফেরা করছিল। বেদুইনরা এসে যখন তাহাঁর চেহারা দেখতো তখন বলতো, এতো বরকতময় চেহারা। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا
হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।
আমি পুনরায় ঘুরে এসে বললাম, আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا
হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।
তার মুখে থুথু এলে তিনি তা নিজ হাতে নিয়ে তার জুতায় মুছে ফেলেন এই আশংকায় যে, তা লোকজনের গায়ে না পড়ে।
-[আবু দাউদ, নাসায়ী, হাকিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৪৫. অনুচ্ছেদঃ বহিরাঙ্গিনার বৈঠক।
১১৫৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বহিরাঙ্গিনায় [বা রাস্তায়] সভা অনুষ্ঠান বা বৈঠকাদি করিতে নিষেধ করেন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ঘরে বসে থাকা তো আমাদের জন্য কষ্টকর। তিনি বলেনঃ যদি তোমরা বহিরাঙ্গনে [বা রাস্তায়] বসো তবে বৈঠকের দাবি পূরণ করো [বা কর্তব্য পালন করো]। তারা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! বৈঠকের দাবি কি? তিনি বলেনঃ পথভোলা লোককে তার গন্তব্য পথ বলে দেয়া, [পথচারীদের] সালামের জবাব দেয়া, চোখের দৃষ্টি সংযত রাখা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজে বাধা দেয়া।
[আবু দাউদ, ইবনি হিব্বান], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৬০. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ রাস্তায় বসার ব্যাপারে তোমরা সাবধান হও। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তায় না বসে তো আমাদের উপায় নাই, তথায় আমরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা যখন অসম্মত হচ্ছে, তাহলে রাস্তার দাবি পূরণ করো। তারা বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ রাস্তার দাবি কি? তিনি বলেনঃ চোখের দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ।
[বোখারী, মুসলিম, দারিমি]’সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৪৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজের পায়ের নলা উদলা করে কূপের পাশে বসে পদদ্বয় কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দেয়।
১১৬১. আবু মূসা আশআরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
একদিন নাবী [সাঃআঃ] তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়ার জন্য মদীনার এক বাগানে প্রবেশ করেন। আমিও তার পিছে পিছে গেলাম। তিনি বাগানের ভেতর প্রবেশ করলে আমি এর ফটকে বসে থাকলাম এবং মনে মনে বললাম, আমি আজ অবশ্যই নাবী [সাঃআঃ]-এর দ্বাররক্ষী হবো, যদিও তিনি আমাকে আদেশ করেননি। নাবী [সাঃআঃ] গিয়ে তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়ার পর একটি কূপের কিনারায় বসেন এবং তার পায়ের নলা উদলা করে তা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আবু বাকর [রাঃআঃ] এসে তাহাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রবেশানুমতি প্রার্থনা করেন। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না আপনার জন্য অনুমতি চাই। তিনি অপেক্ষা করিলেন। আমি গিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-কে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আবু বকর [রাঃআঃ] আপনার সাক্ষাতপ্রার্থী। তিনি বলেনঃ তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদও দাও। তিনি প্রবেশ করে নাবী [সাঃআঃ]-এর ডান দিক দিয়ে এসে নিজ পায়ের নলা উদলা করে কূপের মধ্যে তা ঝুলিয়ে দিয়ে বসলেন। অতঃপর উমার [রাঃআঃ] এলে আমি বললাম, আমি আপনার জন্য অনুমতি না আনা পর্যন্ত স্বস্থানে অপেক্ষা করুন। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তাকেও অনুমতি দাও এবং তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দাও। উমার [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-এর বাম পাশ দিয়ে এসে নিজ পদদ্বয়ের নলা উদলা করে তা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিয়ে বসলেন। ফলে কূপের বেষ্টনী দেয়াল ভরে গেলো এবং তাতে আর বসার জায়গা থাকলো না। অতঃপর উসমান [রাঃআঃ] এলে আমি বললাম, আমি আপনার জন্য অনুমতি না আনা পর্যন্ত স্বস্থানে অপেক্ষা করুন। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তাকেও আসার অনুমতি দাও এবং তার উপর বিপদ আপতিত হওয়াসহ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তিনি প্রবেশ করে তথায় তাহাদের সাথে বসার খালি জায়গা পেলেন না। তাই তিনি ঘুরে গিয়ে তাহাদের সম্মুখভাগে কূপের কিনারে এলেন। তিনিও নিজ পদদ্বয়ের নলা উন্মুক্ত করে দিয়ে তা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেন। আমি তখন আকাঙ্ক্ষা করিতে থাকলাম, আমার ভাইটি যদি এসে পৌছতো এবং আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করিতে থাকলাম যে, তিনি যেন তাকে নিয়ে আসেন। তাঁরা উঠে যাওয়া পর্যন্ত সে এসে পৌঁছেনি। ইবনুল মুসাইয়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি উক্ত হাদিসের এই ব্যাখ্যা করেছি যে, সেটা তাহাদের তিনজনের কবর যা এখানে এক স্থানে অবস্থিত, আর উসমান [রাঃআঃ]-র কবর পৃথক স্থানে অবস্থিত।
[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী] ,সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৬২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] দিনের কোন এক অংশে বের হলেন। [পথিমধ্যে] তিনিও আমার সাথে কোন কথা বলেননি এবং আমিও তাহাঁর সাথে কোন কথা বলিনি। এমতাবস্থায় তিনি কায়নুকা গোত্রের বাজারে এলেন। [ফেরার পথে] তিনি ফাতেমা [রাঃআঃ]-র বাড়ির আঙ্গিনায় বসে ডেকে বলেনঃ খোকা [হাসান] কি এখানে আছে, খোকা কি এখানে আছে? ফাতেমা [রাঃআঃ] শিশুকে আসতে দিতে খানিক বিলম্ব করিলেন। আমি ভাবলাম, হয়তো তিনি তাকে পোশাক পরাচ্ছেন অথবা গোসল করাচ্ছেন। সে দ্রুতবেগে বের হয়ে আসলে নাবী [সাঃআঃ] তাকে বুকে চেপে ধরে চুমা দিলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তাকে মহব্বত করো এবং যারা তাকে ভালোবাসে তাহাদেরকেও মহব্বত করো”।
-[বোখারী, মুসলিম, আহমাদ, আবু আওয়ানাসায়ী, ইবনি হিব্বান], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৪৭. অনুচ্ছেদঃ কেউ কারো সম্মানে স্বস্থান থেকে উঠে দাঁড়ালে সে যেন সেখানে না বসে।
১১৬৩. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
কোন ব্যক্তিকে স্বস্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে অপর ব্যক্তিকে সেখানে বসতে নাবী [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।
[বোখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,তিরমিজী,আহমাদ] ইবনি উমার [রাঃআঃ]-র সম্মানে কেউ স্বস্থান থেকে উঠে দাঁড়ালে তিনি তার সেই জায়গায় বসতেন না। [মুসলিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৪৮. অনুচ্ছেদঃ আমানত [বিশ্বস্ততাবারানি]।
১১৬৪. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক দিন আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর খেদমত করলাম। শেষে আমি যখন দেখলাম যে, আমি তাহাঁর খেদমত থেকে অবসর হয়েছি, আমি ভাবলাম, নাবী [সাঃআঃ] হয়তো দুপুরের বিশ্রাম নিবেন। তাই আমি তাহাঁর নিকট থেকে বের হয়ে চলে গেলাম। পথিমধ্যে শিশুরা খেলছিল। আমি তাহাদের খেলা দেখার জন্য দাড়িয়ে গেলাম। নাবী [সাঃআঃ] এসে তাহাদের নিকট পৌঁছে তাহাদের সালাম দিলেন। অতঃপর আমাকে ডেকে একটি প্রয়োজনে পাঠালেন। আমি তার প্রয়োজন সেড়ে তার নিকট ফিরে এলাম এবং মায়ের নিকট ফিরে যেতে আমার বিলম্ব হলো। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, বিলম্বের কারণ কি? আমি বললাম, নাবী [সাঃআঃ] একটি প্রয়োজনে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, তা নাবী [সাঃআঃ]-এর গোপনীয় বিষয়। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর গোপনীয় বিষয়ের হেফাজত করো। সৃষ্টিকুলের কারো সাথে আমি সে বিষয়ে আলোচনা করিনি। আমি যদি তা কারো কাছে বলতাম, তবে তা আপনার কাছে বলতাম।
[বোখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসায়ী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৪৯. অনুচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] কারো দিকে ফিরলে পূর্ণদেহে ফিরতেন।
১১৬৫. সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দৈহিক গঠন বর্ণনা করিতে শুনেছেন। তাহাঁর দেহের গড়ন ছিল মধ্যম আকৃতির, প্রায় দীর্ঘকায়, অত্যন্ত গৌরবর্ণের, দাড়ির চুল কালো, সুন্দর মুখাবয়ব, লম্বা ভ্রুযুগল, বাহুদ্বয় চওড়া, প্রশস্ত গণ্ডদেশ, পদদ্বয় সম্পূর্ণ সমতল, তার তালুতে গর্ত ছিলো না। কারো প্রতি তাকালে সমস্ত শরীর ঘুরিয়ে তাকাতেন এবং সমস্ত শরীরে পশ্চাদমুখী হইতেন। আমি তাহাঁর আগে কিংবা পরে আর কাউকে তার অনুরূপ দেখিনি।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি
৫৫০. অনুচ্ছেদঃ কেউ কোন প্রয়োজনে একজনকে অপরজনের নিকট পাঠালে সে যেন [কাউকে] তা অবহিত না করে।
১১৬৬. আবদুল্লাহ ইবনি যায়েদ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, উমার [রাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, আমি তোমাকে কারো নিকট পাঠালে তুমি [অপরকে] অবহিত করো না যে, কেন আমি তোমাকে তার নিকট পাঠিয়েছি। অন্যথায় শয়তান ঐ সময় তার জন্য মিথ্যা রচনা করিবে।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
৫৫১. অনুচ্ছেদঃ কেউ কি জিজ্ঞেস করিতে পারে, তুমি কোথা থেকে এসেছো?
১১৬৭. মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
কোন ব্যক্তির দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকানো অথবা সে উঠে চলে গেলে তার দিকে নজরদারি করা অথবা তাকে জিজ্ঞেস করা, তুমি কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাবে ইত্যাকার আচরণ দূষণীয়।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১১৬৮. মালেক ইবনি যুবাইদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমরা রাবাযা নামক স্থানে আবু যার [রাঃআঃ]-র নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কোথা থেকে আগমন করেছো? আমরা বললাম, মক্কা থেকে অথবা বাইতুল আতীক [কা বাযযার] থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এটাই কি তোমাদের কাজ ছিল? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, এর সাথে কি ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো না? আমরা বললাম, না। তিনি বলেন, তোমাদের কাজ অব্যাহত রাখো।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫৫২. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শোনে, অথচ তারা তা অপছন্দ করে।
১১৬৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি [বিচরণশীল প্রাণীর] প্রতিকৃতি নির্মাণ করে তাকে তাতে প্রাণ সঞ্চার করার জন্য বাধ্য করা হইবে এবং শাস্তি দেয়া হইবে, যদিও সে কখনো তাতে প্রাণ সঞ্চার করিতে পারবে না। যে ব্যক্তি মনগড়া স্বপ্ন বলবে তাকে দুটি গমের দানার মধ্যে গিঠ দিতে বাধ্য করা হইবে এবং শাস্তি দেয়া হইবে, যদিও সে কখনো তাতে গিঠ দিতে পারবে না। যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শোনে, অথচ তারা তার শ্রবণ অপছন্দ করে, তার দুই কানের মধ্যে উত্তপ্ত তরল সীসা ঢেলে দেয়া হইবে।
[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী, দারিমি, আহমাদ, ইবনি হিব্বান], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৫৩. অনুচ্ছেদঃ সোফা জাতীয় গদিতে বসা।
১১৭০. উরয়ান ইবনুল হায়ছাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমার পিতা প্রতিনিধি হিসাবে মুআবিয়া [রাঃআঃ]-র নিকট গেলেন। আমি তখন তরুণ। তিনি তার নিকট প্রবেশ করলে তিনি বলেন, মারহাবা মারহাবা। তার নিকটেই এক ব্যক্তি সোফায় বসা ছিল। তিনি বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এই ব্যক্তি কে যাকে আপনি মারহাবা বলে স্বাগত জানালেন? তিনি বলেন, ইনি প্রাচ্যবাসীর নেতা। ইনি হায়ছাম ইবনুল আসওয়াদ [রাঃআঃ]। আমি বললাম, ইনি কে? লোকজন বললো, ইনি আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনুল আস [রাঃআঃ]। আমি তাকে বললাম, হে অমুকের পিতা! দাজ্জাল কোথা থেকে আত্মপ্রকাশ করিবে? তিনি বলেন, তুমি যে এলাকার বাসিন্দা সেই এলাকার লোকদের চেয়ে দূরবর্তী বিষয় সম্পর্কে অধিক জিজ্ঞাসাকারী এবং নিকটবর্তী বিষয় অধিক ত্যাগকারী আমি আর কোন এলাকার লোককে পাইনি। অতঃপর তিনি বলেন, গাছপালা ও খেজুর বৃক্ষ সমৃদ্ধ ইরাক থেকে সে আত্মপ্রকাশ করিবে।
[তাবারানি] ,সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
১১৭১. আবুল আলিয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-র সাথে গদিতে বসেছি।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৭২. আবু জামরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-র সাথে উঠা-বসা করতাম। তিনি আমাকে তার গদিতে বসাতেন। তিনি আমাকে বলেন, তুমি আমার নিকট অবস্থান করে যাবত না আমি তোমাকে আমার মালের একটি অংশ দান করি। অতএব আমি তার নিকট দুই মাস অবস্থান করলাম।
[বোখারী, মুসলিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৭৩. খালিদ ইবনি দীনার আবু খালদা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ]-কে বসরার শাসক আল-হাকামের সাথে গদিতে বসা অবস্থায় বলিতে শুনিয়াছি, নাবী [সাঃআঃ] গরমের মৌসুমে বিলম্বে এবং শীতের মৌসুমে ত্বরায় [ওয়াক্তের প্রারম্ভে] নামায পড়তেন।
[বোখারী, নাসায়ী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য
১১৭৪. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি খেজুর পাতার দড়ির তৈরী একটি চারপায়ার উপর শায়িত ছিলেন। তার মাথার নিচে ছিল খেজুর গাছের বাকল ভর্তি একটি চামড়ার বালিশ। চারপায়া ও তার দেহের মাঝখানে কোন কাপড় বিছানো ছিলো না। উমার [রাঃআঃ] তার নিকট প্রবেশ করে কেঁদে দিলেন। নাবী [সাঃআঃ] তাকে বলেনঃ হে উমার! তোমাকে কিসে কাঁদালো? তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি এজন্যই কাদছি যে, আমি জানি আল্লাহর কাছে আপনার মর্যাদা [পারস্য রাজ] কিসরা ও [রোমসম্রাট] কাইজারের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে। তারা এই পার্থিব জগতের কতো অফুরন্ত ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে আছে। আর হে আল্লাহর রাসূল! আপনার অবস্থা তো আমি স্বচক্ষে দেখছি! নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ হে উমার! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হইবে না যে, তাহাদের জন্য দুনিয়ার ভোগসামগ্ৰী আর আমাদের জন্য আখেরাতের ভোগসামগ্ৰী? আমি বললাম, অবশ্যই ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ বিষয়টি এরূপই।
[মুসনাদ আহমাদ, ইবনি হিব্বান], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১১৭৫. আবু রিফাআ আল-আদাবী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে পৌঁছলাম। তিনি তখন ভাষণ দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! একজন মুসাফির এসেছে, সে তার দ্বীন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করিতে চায়। সে জানে না তার দ্বীন কি? তিনি তৎক্ষণাৎ তার ভাষণ স্থগিত রেখে আমার সামনে এলেন। একটি কুরছি [চেয়ার] আনা হলো, আমার ধারণামতে এর পায়াগুলো ছিল লোহার। অধস্তন রাবী হুমাইদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মনে হয় পায়াগুলো ছিল কালো কাঠের এবং তিনি তাকে লোহা ধারণা করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ] তাতে বসলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যা শিখিয়েছেন তা তাকে শিখালেন। অতঃপর তিনি তার অসমাপ্ত ভাষণ সমাপ্ত করিলেন।
[মুসলিম, নাসায়ী, দূলাবী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৭৬. মূসা ইবনি দিহকান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]-কে লাল রং-এর কাপড় পরিহিত অবস্থায় বাসর রাতের খাটের উপর বসা দেখেছি।
-[তাহাবী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
১১৭৭. ইমরান ইবনি মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আনাস [রাঃআঃ]-কে তার এক পা অপর পায়ের উপর রেখে গদিতে বসা অবস্থায় দেখেছি।
-[তাহাবী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৫৪. অনুচ্ছেদঃ কতক লোককে গোপনে আলাপরত দেখলে সেখানে তাহাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করিবে না।
১১৭৮. সাঈদ আল-মাকবুরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ]-র নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তার সাথে এক ব্যক্তি কথা বলছিল। আমি তাহাদের পাশে দাড়ালে ইবনি উমার [রাঃআঃ] আমার বুকে চপেটাঘাত করে বলেন, তুমি দুই ব্যক্তিকে একত্রে কথাবার্তা বলিতে দেখলে তাহাদের অনুমতি না নিয়ে তাহাদের সাথে দাঁড়াবেও না এবং বসবেও না। আমি বললাম, হে আবদুর রহমানের পিতা আল্লাহ আপনার সংশোধন করুন, আমি আপনাদের দুইজনের নিকট কল্যাণকর কিছু শোনার আশাই করেছিলাম।
[আবু দাউদ].,সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৭৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শোনে, অথচ তারা এটা পছন্দ করে নাসায়ী, তার কানের মধ্যে গলিত সীসা ঢেলে দেয়া হইবে। আর যে ব্যক্তি মনগড়া স্বপ্ন বলবে তাকে গমের দানায় গিঠ দিতে বাধ্য করা হইবে।
[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী, দারিমি, আহমাদ, ইবনি হিব্বান] সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য
৫৫৫. অনুচ্ছেদঃ তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে দুইজনে যেন গোপন পরামর্শ না করে।
১১৮০. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু [সাঃআঃ] বলেনঃ তিনজন একসাথে থাকলে তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে দুইজনে যেন গোপন পরামর্শ না করে।
-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ, আবু আওয়া নাসায়ী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৫৬. অনুচ্ছেদঃ চারজন একত্র হলে।
১১৮১. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা তিনজন একত্র হলে একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে আলাদা হয়ে গোপন আলাপ করো না। কারণ তা তাকে মনক্ষুণ্ন করিবে।
[বোখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,ইবনি মাজাহ] ,সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৮২. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমরা বললাম, যদি তাহাদের সংখ্যা চার হয়। তিনি বলেনঃ তাহলে কোন ক্ষতি নাই।
[আবু দাউদ, ইবনি হিব্বান], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৮৩. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তিনজন একত্র হলে একজনকে বাদ রেখে দু’জনে আলাদা হয়ে গোপন আলাপ করিবে নাসায়ী, যাবত না তারা লোকদের সাথে মিলিত হয়। কারণ তা তাকে মনোক্ষুণ্ন করিবে।
[বোখারী, মুসলিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৮৪. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তারা চারজন একত্র হলে [দু’জনের স্বতন্ত্র গোপন আলাপে] কোন ক্ষতি নাই।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৫৭. অনুচ্ছেদঃ কেউ কারো পাশে বসলে সে উঠে যেতে তার অনুমতি চাইবে।
১১৮৫. আবু বুরদা ইবনি আবু মূসা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাঃআঃ]-র নিকট বসলাম। তিনি বলেন, তুমি আমার পাশে এসে বসেছে অথচ আমার উঠে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমি বললাম, তা আপনার ইচ্ছা। অতএব তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং তিনি দরজায় পৌঁছা পর্যন্ত তার সাথে সাথে গেলাম।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫৫৮. অনুচ্ছেদঃ রোদের দিকে মুখ করে বসবে না।
১১৮৬. কায়েস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি যখন এসে উপস্থিত হন তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন। নাবী [সাঃআঃ] তাকে নির্দেশ দিলে তিনি ছায়ায় চলে আসেন।
[আহমাদ, হাকিম, ইবনি খুজাইমাহ, ইবনি হিব্বান,তায়ালিসী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৫৯. অনুচ্ছেদঃ পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ নিয়ম [ইহতিবা]।
১১৮৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুই ধরনের পোশাক পরিধানের নিয়ম এবং দুই ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি ক্রয়-বিক্রয়ে মুলামাসা ও মুনাবাযা নিষিদ্ধ করিয়াছেন। মুলামাসা হলো, কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির কাপড় স্পর্শ করা। আর মুনাবাযা হলো, কোন ব্যক্তির কাপড় অপর ব্যক্তির দিকে ছুঁড়ে মারা। [পণ্য নিরীক্ষণ করে না দেখলেও] এতে উভয়ের জন্য ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক হয়ে যেতো। আর দুই ধরনের পোশাক পরার নিয়মের ক্ষেত্রে তিনি ইশতিমালুস সাম্মা নিষিদ্ধ করিয়াছেন। সাম্মা এই যে, নিজের পরিধেয় বস্ত্র নিজের এক কাঁধে এমনভাবে তুলে দেয়া, যাতে অন্য কাঁধ অনাবৃত থেকে যায়। পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ অপর নিয়ম এই যে, এক পরত কাপড় নিজের গোটা দেহে পেঁচিয়ে কারো এমনভাবে বসা, যাতে তার লজ্জাস্থানে কোন কাপড়ই থাকে না।
[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৬০. অনুচ্ছেদঃ কাউকে হেলান দেয়ার বালিশ পেশ করা।
১১৮৮. আবু কিলাবা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবুল মালীহ [রাহিমাহুল্লাহ] আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি তোমার পিতা যায়েদের সাথে আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ]-র নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেন যে, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আমার রোযা সম্পর্কে আলোচনা হলো। তিনি আমার নিকট এলেন। আমি তাহাঁর জন্য খেজুর গাছের ছাল ভর্তি চামড়ার একটি বালিশ পেশ করলাম। কিন্তু তিনি মাটিতে বসে গেলেন এবং বালিশটি আমার ও তার মাঝখানে পড়ে থাকলো। তিনি আমাকে বলেনঃ প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখলে কি তোমার জন্য যথেষ্ট হয় না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! [আরো অধিক]। তিনি বলেনঃ পাঁচ দিন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! [আরো অধিক]। তিনি বলেনঃ সাত দিন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ নয় দিন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেনঃ এগারো দিন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেনঃ দাউদ [আবু দাউদ]-এর রোযার চেয়ে উত্তম রোযা হয় নাসায়ী, অর্ধবছর। একদিন রোযা এবং এক দিন বিরতি।
-[বোখারী, মুসলিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৮৯. আবদুল্লাহ ইবনি বুসর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] তার পিতার নিকট এলে তিনি তার জন্য নরম গদি পেতে দেন। তিনি তার উপর বসেন।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৬১. অনুচ্ছেদঃ দুই হাঁটু খাড়া করে তা দুই হাতে বেড় দিয়ে ধরে নিতম্বের উপর বসা।
১১৯০. কাইলা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর দুই হাঁটু খাড়া করে তা দুই হাতে বেড় দিয়ে ধরে নিতম্বের উপর বসা অবস্থায় দেখেছি। নাবী [সাঃআঃ]-কে এরূপ বিনীতভাবে বসা অবস্থায় দেখে আমি ভীত-কম্পিত হলাম।
[আবু দাউদ হা/৪৮৪৭], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৬২. অনুচ্ছেদঃ চার জানু হয়ে বসা।
১১৯১. হানযালা ইবনি হিযয়াম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে তাকে চার জানু হয়ে বসা অবস্থায় দেখলাম।
[তাহযীবুল কামাল, ইসতীআব], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৯২. আবু যুরাইক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-র পুত্র আলীকে তার এক পা অপর পায়ের উপর অর্থাৎ ডান পা বাম পায়ের উপর রেখে চার জানু হয়ে বসা অবস্থায় দেখেছেন।
সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাকতু
১১৯৩. ইমরান ইবনি মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ]-কে তার এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চার জানু হয়ে বসে থাকতে দেখেছি।
[তাহাবী], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫৬৩. অনুচ্ছেদঃ পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ নিয়ম [ইহুতি বাযযার]।
১১৯৪. সুলাইম ইবনি জাবের আল-হুজায়মী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি একটি চাদর মুড়ি দিয়ে বসা অবস্থায় ছিলেন। চাদরের ঝালর তাহাঁর পায়ের পাতার উপর ছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ “তুমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করিবে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৎকাজকেও তুচ্ছজান করো নাসায়ী, তা যদি তোমার বালতি থেকে পানি প্রার্থীর পাত্রে পানি ঢেলে দেয়ার মত নগণ্য কাজও হয় অথবা হাস্যোজ্জ্বল মুখে তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার আলাপ-আলোচনাও হয়। পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে দেয়া থেকে সাবধান হও। কারণ তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কোন ব্যক্তি যদি তার জ্ঞাত তোমার কোন ত্রুটির কারণে তোমাকে গালি দেয়, তবে তুমি তোমার জ্ঞাত তার কোন ত্রুটির কারণে তাকে গালি দিও না। তার কর্মের পরিণতি ভোগের জন্য তাকে ছেড়ে দাও এবং তার সওয়াব পাবে তুমি । তুমি কোন কিছুকে গালি দিও না”। রাবী বলেন, পরে আমি কখনো পশু বা মানুষ কাউকে গালি দেইনি
। -[আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি যখনই হাসানকে দেখেছি আমার চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়ে গেছে। তা এজন্য যে, একদিন নাবী [সাঃআঃ] বের হয়ে এসে আমাকে মসজিদে পেলেন। তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমি তাহাঁর সাথে রওয়ানা হলাম। আমরা কায়নুকা গোত্রের বাজারে না পৌঁছা পর্যন্ত তিনি আমার সাথে কোন কথা বলেননি। তিনি বাজারে ঘুরলেন এবং দেখলেন, অতঃপর আমাকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন। শেষে আমরা মসজিদে এসে পৌঁছলাম। তিনি চার জানু হয়ে বসলেন, অতঃপর বলেনঃ খোকা কোথায়? খোকাকে আমার নিকট ডেকে আনো। হাসান দ্রুতবেগে বের হয়ে এসে তার কোলে ঝাপিয়ে পড়লো, অতঃপর তার হাত তাহাঁর দাড়ির ভেতর ঢুকালো। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] নিজের মুখ ফাঁক করে তার মুখ নিজের মুখে প্রবেশ করান [মুখে চুমা দেন]। তারপর বলেনঃ “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তাকে ভালোবাসি। অতএব তুমিও তাকে ভালোবাসো এবং যারা তাকে মহব্বত করে, তুমি তাহাদেরকেও মহব্বত করো”।
[বোখারী, মুসলিম, হাকিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৬৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি হাঁটু গেড়ে বসে।
১১৯৬. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের সাথে নিয়ে যুহরের নামায পড়লেন। তিনি সালাম ফিরানোর পর মিম্বারে উঠে দাঁড়ালেন, কিয়ামতের উল্লেখ করিলেন এবং আরো উল্লেখ করেন যে, এর সাথে রহিয়াছে অনেক সাংঘাতিক বিষয়। অতঃপর তিনি বলেনঃ কেউ আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করিতে চাইলে সে তা জিজ্ঞেস করুক। আল্লাহর শপথ! আমি আমার এই জায়গায় থাকা পর্যন্ত তোমরা আমার নিকট যা-ই জিজ্ঞেস করিবে, আমি তোমাদের তা অবহিত করবো। আনাস [রাঃআঃ] বলেন, লোকজন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মুখে এটা শোনার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও বারবার বলিতে থাকেন ? তোমরা জিজ্ঞেস করো। উমার [রাঃআঃ] হাঁটু গেড়ে বসে বলেন, আমরা আল্লাহকে প্রভুরূপে, ইসলামকে দীনরুপে এবং মুহাম্মাদকে রাসূলরুপে পেয়ে সন্তুষ্ট। উমার [রাঃআঃ] একথা বলাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিশ্চুপ হন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ বিপদ সন্নিকটে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এইমাত্র এই দেয়ালের পাশে আমার নামাযরত অবস্থায় আমার সামনে বেহেশত ও দোযখ উপস্থিত করা হয়েছে। অতএব আজকের মত কল্যাণ ও অনিষ্টকে [একত্রে] আর দেখিনি।
-[বোখারী, মুসলিম], সুন্নি ওয়াজ হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহীহ
Leave a Reply