তারাবী বিতর ও তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নফল নামাজ
তারাবী বিতর ও তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নফল নামাজ >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ২০, তাহাজ্জুদ এবং দিনের নফল নামাজ, হাদীস (১৫৯৮-১৬৭৪)
পরিচ্ছেদঃ ঘরে নফল নামাজ আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং তার
পরিচ্ছেদঃ বিতর এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
পরিচ্ছেদঃ ইবাদাত জ্ঞানে সওয়াব লাভের নিয়তে তারাবীহ্র নামাজ আদায়কারীর সওয়াব
পরিচ্ছেদঃ রমযান মাসে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করা
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদ এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
পরিচ্ছেদঃ রাত্রের নামাজের ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ সফরকালীন সময়ে রাত্রে নামাজ আদায় করার ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদ এর নামাজের জন্য জাগ্রত হওয়ার সময়
পরিচ্ছেদঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর যিক্র
পরিচ্ছেদঃ রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিরূপ মিসওয়াক করিতেন
পরিচ্ছেদঃ হাদিস শরীফে আবু হাসীন উসমান ইবনি আসিম এর বর্ণনার মধ্যে পার্থক্যের উল্লেখ
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদ এর নামাজ কোন্ দোয়া দ্বারা শুরু করা হইবে?
পরিচ্ছেদঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর রাত্রের নামাজের উল্লেখ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর নাবী দাঊদ [আঃ]-এর নামাজ আদায় করার উল্লেখ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ্র নাবী মূসা কালীমুল্লাহ [আঃ]-এর নামাজ আদায় করার এবং অত্র হাদিস শরীফে সুলায়মান তায়মী [রহঃ]-এর বর্ণনার মধ্য পার্থক্যের উল্লেখ
পরিচ্ছেদঃ পূর্ণরাত্রি জাগরণ
পরিচ্ছেদঃ পূর্ণ রাত্রি জাগরণ সম্পর্কে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর মতপার্থক্য
পরিচ্ছেদঃ নফল নামাজ বসে বসে আদায় করা
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদের নামাজে কিয়াম রুকূ, রুকূর পরে দাঁড়ানো সিজদা এবং উভয় সিজদার মধ্যে বসায় সমতা বিধান করা
পরিচ্ছেদঃ রাত্রের নামাজ কিভাবে আদায় করিতে হইবে?
পরিচ্ছেদঃ ঘরে নফল নামাজ আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং তার
১৫৯৮. নাফি [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা নফল নামাজ আপন আপন ঘরেই আদায় করিবে। ঘরে নফল নামাজ আদায় না করে ঘরকে কবরের ন্যায় বানিয়ে নিও না।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৫৯৯. যায়দ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] মসজিদে একটি চাটাইকে হুজরার ন্যায় বানিয়ে নিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাতে কয়েক রাত্রি নামাজ আদায় করলে কিছু লোকও তাহাঁর সাথে একত্রিত হয়ে গেল। পরে এক রাত্রিতে তারা তাহাঁর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে অনুমান করিল যে, তিনি হয়ত ঘুমিয়ে আছেন। তাই কেউ কেউ গলা খাঁকারি দিতে লাগল, যাতে তিনি তাঁদের সামনে বেরিয়ে আসেন। তিনি বলিলেন, আমি তোমাদের আমার সাথে রাত্রে জামাতে নফল নামাজ আদায় করিতে বরাবর দেখেই আসছি। তাতে আমার ভয় হল যে, তা তোমাদের উপর ফরযই না করে দেওয়া হয়। যদি তা তোমাদের উপর ফরয করে দেওয়া হত তবে তোমরা তা যথাযথ রুপে আদায় করিতে সক্ষম হইতে না। অতএব, হে লোক সকল! তোমরা আপন আপন ঘরেই নফল নামাজ আদায় করিবে, কেননা ফরয নামাজ ছাড়া মানুষের অধিক উত্তম নামাজ হল তার ঘরেই আদায়কৃত নামাজ।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬০০. কাব ইবনি উজরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার আব্দুল আশহাল গোত্রের মসজিদে মাগ্রিবের নামাজ আদায় করিলেন। যখন তিনি নামাজ আদায় করে নিলেন, কিছু লোক নফল নামাজ আদায় করার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের এ নফল নামাজ ঘরেই আদায় করা উচিত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ বিতর এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
১৬০১. সাদ ইবনি হিশাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বিত্র নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাকে বিশ্ববাসীর মধ্যে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিত্র নামাজ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তির সংবাদ দিব না? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলিলেন, তিনি হলেন আয়িশাহ [রাঃআঃ]। তুমি তাহাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁকেই জিজ্ঞাসা করে দেখ এবং পরে আমার কাছে এসে তোমাকে দেয়া উত্তর সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করে যাবে। আমি হাকীম ইবনি আফলাহের কাছে এসে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর কাছে যাওয়ার জন্য তাঁকে সাথী বানাতে চাইলে তিনি বলিলেন, আমি তার ঘনিষ্টজন নই, আমি তাঁকে উষ্ট্র যুদ্ধ ও সিফফীন ইত্যকার যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহনকারী উভয় পক্ষ সম্পর্কে তাঁকে কিছু বলিতে নিষেধ করলেও তিনি তা মানেন নি বরং তাতে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আমি হাকীম ইবনি আফলাহকে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর কাছে যাওয়ার জন্য শপথ দিলে তিনি আমার সাথে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর কাছে গেলেন। আয়িশাহ [রাঃআঃ] হাকীমকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার সাথে এ কে? আমি বললাম, “সাদ ইবন হিশাম” [রাঃআঃ]। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, হিশাম কে? আমি বললাম আমেরের ছেলে। তিনি তাহাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বলিলেন, আমের বড় ভাল মানুষ ছিল। সাদ ইবনি হিশাম [রাঃআঃ] বলিলেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন, তুমি কুরআন পাঠ কর না? সাদ [রহঃ] বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পাঠ করি। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] এর স্বভাব-চরিত্র ছিল কুরআন। আমি যখন দাঁড়াতে মনস্থ করলাম তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দাঁড়ানোর [রাত্রে নফল নামাজ আদায়ের] আমার মনে এসে গেল। তিনি বলিলেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে নাবীয়্যুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রাত্রে নফল নামাজ আদায় সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন, তুমি “ইয়া আয়্যুহাল মুয্যামমিল” এই সূরাটি পাঠ কর না? আমি বললাম হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পাঠ করি। তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদকে এই সূরার প্রথমাংশে ফরয করেছিলেন, তখন নাবী [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবীগণ এক বৎসর পর্যন্ত তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করিলেন, যাতে তাঁদের পা ফুলে গেল। আল্লাহ তাআলা উক্ত সূরার শেষাংশের নাযিল করা বার মাস পর্যন্ত স্থগিত রেখেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা উক্ত সূরার শেষাংশে সহজীকৃত বিধান অবতীর্ণ করিলেন। অতএব তাহাজ্জুদ এর নামাজ ফরয হিসাবে অবতীর্ণ হওয়ার পর নফল হিসাবে অবশিষ্ট রয়ে গেল। আমি পুনরায় যথন দাঁড়াতে মনস্থ করলাম তখন আমার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিত্রের কথা স্মরনে এসে গেল। আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন, আমরা তাহাঁর জন্য মিসওয়াক এবং উযুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। রাত্রে যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে জাগানোর ইচ্ছা হত তাঁকে জাগ্রত করে দিতেন। তিনি উঠে মিসওয়াক এবং উযু করিতেন এবং আট রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তাতে সালাম ফিরানোর জন্য শুধু অষ্টম রাকআতেই বসতেন। বসে আল্লাহ তাআলার যিকর এবং দোয়া করিতেন। অতঃপর আমরা শুনতে পারি এমনভাবে তিনি সালাম ফিরাতেন। এরপর দুরাকআত নামাজ আদায় করিতেন এবং দুরাকআতের পর সালাম ফিরিয়ে বসে থাকতেন। আবার এক রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তাহলে হে প্রিয় বৎস! সর্বমোট এগার রাকআত নামাজ আদায় করা হত। যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বয়স বেড়ে গেল এবং শরীরে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে গেল তিনি সাত রাকআত বিত্রের নামাজ আদায় করিতেন। আর সালামের পর বসে থেকে দুরাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তাহলে হে প্রিয় বৎস! সর্বমোট নরাকআত নামাজ আদায় করা হত। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোন নামাজ আদায় করিতেন, তা নিয়মিত আদায় করিতে ভালবাসতেন। আর যদি তাঁকে নিদ্রা অথবা কোন অসুখ বা ব্যথা-বেদনা তাহাজ্জুদ থেকে বিরত রাখত তাহলে তিনি দিনে বার রাকআত নামাজ আদায় করে নিতেন। আমি এ ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত নই যে, নাবী [সাঃআঃ] এক রাত্রে সম্পূর্ণ কুরআন মজীদ পাঠ করিয়াছেন। আর তিনি সকাল পর্যন্ত পুরা রাত্র তাহাজ্জুদ এর নামাজও আদায় করিতেন না এবং রমযান ব্যতীত পুরা মাস রোযাও রাখতেন না। আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর কাছে এসে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর হাদিস তাঁকে বর্ণনা করলে তিনি বলিলেন, আয়িশাহ [রাঃআঃ] সত্যই বলেছেন। আমি যদি তাহাঁর কাছে কখনো যেতাম তাহলে এ হাদিসটা তাহাঁর মুখ থেকে শুনতে পেতাম। আবু আব্দুর রহমান [নাসাঈ] বলেন, আমার কাছে এরকমই রয়েছে কিন্তু আমি জানি না যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিত্রের ব্যাপারে ভুল বর্ণনা কার থেকে হয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ইবাদাত জ্ঞানে সওয়াব লাভের নিয়তে তারাবীহ্র নামাজ আদায়কারীর সওয়াব
১৬০২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি ইবাদত জ্ঞানে সওয়াব লাভের নিয়তে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করে তার পূর্ববর্তী সমস্ত [সগীরা] গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬০৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি ইবাদত জ্ঞানে সওয়াব লাভের নিয়তে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত [সগীরা] গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ রমযান মাসে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করা
১৬০৪. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক রাত্র মসজিদে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন, তাহাঁর সংগে শরীক হয়ে কিছু সংখ্যক লোক নামাজ আদায় করিল। তারপর তিনি পরবর্তী রাত্রেও তারাবীহর নামাজ আদায় করলে লোকের সংখ্যা বেড়ে গেল। তারপর তারা তৃতীয় রাত্রেও অথবা চতুর্থ রাত্রেও তারাবীহ্র নামাজ আদায় করার জন্য জড়ো হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আর তাহাদের সামনে বের হলেন না। সকাল হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা যা করেছিলে আমি তা দেখছিলাম। তোমাদের উপর তারাবীহ্র নামাজ ফরয হয়ে যাওয়ার আশংকা ব্যতীত অন্য কোন কিছুই তোমাদের সামনে বের হওয়া থেকে আমাকে বিরত রাখেনি। এ ঘটনা রমযান মাসে ঘটেছিল।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬০৫. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সিয়াম পালন করেছিলাম। রমযান মাসে তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন না। যখন মাসের মাত সাত রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল, তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিতে লাগলেন রাত্রের তৃতীয় প্রহর অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। যখন মাসের ছয় রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন না। যখন পাঁচ রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন অর্ধ রাত্রি অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! যদি আপনি আমাদের নিয়ে অত্র রাত্রের অবশিষ্ট অংশেও নফল নামাজ আদায় করিতেন! তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরে যায় আল্লাহ তা’আলা তার জন্য পূর্ণ রাত্রি নামাজ আদায় করার সওয়াব লিখে রাখেন। অতঃপর তিনি আমাদের নিয়েও তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন না এবং নিজেও আদায় করিলেন না। যখন মাসের তিন রাত্রি অবশিষ্ট রয়ে গেল, তিনি আমাদের নিয়ে ঐ রাত্রে তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিলেন [এবং ঐ নামাজে] তাহাঁর সন্তান-সন্ততি এবং পরিবারবর্গও জড়ো হয়ে গেল। আমরা আশংখা করিতে লাগলাম যে, “ফালাহ” না হারিয়ে ফেলি। আমি বললাম, “ফালাহ“-এর অর্থ কি? তিনি বলিলেন, সাহ্রি খাওয়ার সময়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬০৬. নুআয়ম ইবনি যিয়াদ আবু তাল্হা হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনি বশীর [রাঃআঃ]-কে হিম্স নামক স্থানের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে রমযান মাসের তেইশতম রাত্রের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত তারাবীহ্র নামাজ আদায় করলাম। অতঃপর পঁচিশতম রাত্রে তাহাঁর সাথে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত তারাবীহ্র নামাজ আদায় করলাম। আবার তাহাঁর সাথে সাতাইশতম রাত্রেও তারাবীহ্র নামাজ আদায় করিতে লাগলাম। এমন কি আমরা আশংকা করলাম যে, “ফালাহ” পাব না। সাহাবীগণ সাহরীকে ফালাহ বলিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদ এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
১৬০৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় শয়তান তার মাথায় তিনটা গিঁট লাগিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিঁট লাগানোর সময় সে বলে, “এখনো অনেক রাত্র বাকী আছে” অর্থাৎ তুমি শুয়ে থাক। যদি সে জেগে উঠে আল্লাহ্র যিক্র করে তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি উযু করে তাহলে আরও একটি গিঁট খুলে যায়, যদি নামাজ আদায় করে তাহলে সমুদয় গিঁট খুলে যায় এবং তার সকাল হয় আনন্দ ও উদ্দীপনায়। অন্যথায় তার সকাল হয় অবসাদ ও বিষাদময়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬০৮. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এমন ব্যক্তির উল্লেখ করা হল, যে সারা রাত্রি সকাল পর্যন্ত নিদ্রা গিয়েছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সে ব্যক্তির কর্ণদ্বয়ে শয়তান প্রশ্রাব করে দিয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬০৯. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি বলিল, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! অমুক ব্যক্তি গত রাত্রের নামাজ আদায় না করেই সকাল অবধি নিদ্রা গিয়েছে। তিনি বলিলেন, সে ব্যক্তির কর্ণদ্বয়ে শয়তান প্রশ্রাব করে দিয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬১০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে, অতঃপর তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে। যদি তার স্ত্রী জাগ্রত হইতে না চায় তবে তার মুখমন্ডলে পানির ছিঁটা দেয়। ঐ মহিলার উপরও আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে। অতঃপর তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে। যদি সে জাগ্রত হইতে না চায় তবে তার মুখমন্ডলে পানির ছিঁটা দেয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৬১১. আলী ইবনি আবু তালিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর এবং ফাতিমা [রাঃআঃ]-এর কাছে একবার রাতের বেলা আসলেন। তিনি বলিলেন, তোমরা নামাজ আদায় করছ না? আমি [লজ্জিত হয়ে] বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের প্রাণ তো আল্লাহর কুদরতী হস্তে। যখন তিনি তা আমাদের কাছে পাঠাতে মনস্থ করেন পাঠিয়ে দেন। যখন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। অতঃপর আমি তাঁকে ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের উপর রাগান্বিত হয়ে উরুতে হাত মেরে বলিতে শুনিয়াছি, “মানুষ অত্যাধিক বিতর্ককারী।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬১২. আলী ইবনি হুসায়ন এর দাদা আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক রাত্রে আমার এবং ফাতিমা [রাঃআঃ]-এর কাছে এসে আমাদের তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করার জন্য জাগিয়ে দিলেন। অতঃপর নিজের ঘরে গিয়ে দীর্ঘ রাত্র তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করেন এবং আমাদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পুনরায় এসে আমাদের জাগিয়ে দিয়ে গেলেন। তিনি বলিলেন, তোমরা উভয়ে জাগ্রত হয়ে যাও এবং [তাহাজ্জুদ এর] নামাজ আদায় কর। আলী [রাঃআঃ] বলিলেন, আমি উভয় চক্ষু রগড়াতে রগড়াতে বসে পড়ে বললাম, আল্লাহ্র শপথ! আমরা তো আল্লাহ তাআলা যা আমাদের উপর ফরয করিয়াছেন তাছাড়া অন্য কোন নামাজ আদায় করি না। আমাদের প্রাণ তো আল্লাহ তাআলার কুদরতী হাতে, যখন তিনি তা আমদের কাছে পাঠিয়ে দিতে চান পাঠিয়ে দেন। আলী [রাঃআঃ] বলেন, তিনি উরুতে হাত মেরে মেরে এই বলিতে বলিতে চলে গেলেন যে, “আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর যা ফরয করিয়াছেন, তাছাড়া অন্য কোন নামাজ আদায় করি না আর মানুষ অত্যধিক তর্কপ্রবণ।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ রাত্রের নামাজের ফযীলত
১৬১৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, রমযান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহররম মাসের সাওম [আশুরার সাওম] এবং ফরয নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল রাত্রের নামাজ।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬১৪. আবু বিশ্র জাফর ইবনি আবু ওয়াহ্ শিয়্যাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি হুমায়দ ইবনি আব্দুর রহমান [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ফরয নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল তাহাজ্জুদ এর নামাজ। আর রমযান মাসের সাওমের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহাররম মাসের সাওম [আশুরার সাওম]। শুবা ইবনি হাজ্জাজ [রহঃ] উক্ত হাদিস শরীফকে সাহাবীর নাম উল্লেখ না করে বর্ণনা করিয়াছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
পরিচ্ছেদঃ সফরকালীন সময়ে রাত্রে নামাজ আদায় করার ফযীলত
১৬১৫. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা ভালবাসেন। এক, ঐ দানকারী ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি কোন গোত্রের কাছে এসে আল্লাহ্র ওয়াস্তে সাহায্য চায়; তার এবং উক্ত গোত্রের মধ্যকার কোন আত্মীয়তার সম্বন্ধের দোহাই দিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে না। গোত্রের লোকেরা তাকে সাহায্যদানে অস্বীকৃতি জানায় কিন্তু [তাহাদের মধ্য থেকে] এক ব্যক্তি তাহাদের পেছনে থেকে গিয়ে তাকে গোপনে কিছু দান করিবে। তার দান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এবং গ্রহিতা ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ অবগত হয় না। দুই, ঐ ব্যক্তি যখন তার সহযাত্রীগণ রাত্রে সফর করে, নিদ্রা যখন তাহাদের কাছে অত্যধিক প্রিয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তারা সফর ক্ষান্ত দিয়ে নিদ্রা যায়, তখন সে জাগ্রত হয়ে আমার [আল্লাহ তাআলা] দরবারে কায়মনোবাক্যে কান্নাকাটি করে দোয়া করে এবং আমার কুরআনে করীমের আয়াত তিলাওয়াত করে। তিন, ঐ ব্যক্তি যে কোন যুদ্ধে গমনপূর্বক শত্রুবাহিনীর মোকাবেলা করে তাহাদের পরাজিত করে দেয় এবং সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শহীদ অথবা গাযী হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদ এর নামাজের জন্য জাগ্রত হওয়ার সময়
১৬১৬. মাসরূক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে বললাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে কোন্ কাজটি অত্যধিক প্রিয় ছিল? তিনি বলিলেন, নিয়মিত আমল। আমি বললাম, তিনি রাত্রের কোন্ সময় জাগ্রত হইতেন? তিনি বলিলেন, যখন মোরগের ডাকের আওয়াজ শুনতে পেতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর যিক্র
১৬১৭. আসিম ইবনি হুমায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী [সাঃআঃ] রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর কি যিক্র করিতেন?
তিনি বলিলেন, তুমি আজ আমাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছ, যে বিষয়ে তোমার পূর্বে অন্য কেউ আমাকে প্রশ্ন করেনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দশবার তাকবীর [আল্লাহু আকবার] দশবার তাহমীদ [আলহামদুলিল্লাহ] দশবার তাসবীহ [সুবাহানাল্লাহ] দশবার তাহলীল [লা-ইলাহা ইলাল্লাহ্] এবং দশবার ইস্তিগফার [আস্তাগফিরুল্লাহ] পড়তেন, আর বলিতেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي وَعَافِنِي، أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ ضِيقِ الْمَقَامِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৬১৮. রবীআ ইবনি কাব আসলামী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর হুজরার পাশেই রাত্রিযাপন করতাম। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে যখন তিনি রাত্রে জাগ্রত হইতেন অনেকক্ষণ পর্যন্ত বলিতে শুনতামঃ [……আরবি……] অতঃপর অনেকক্ষণ পর্যন্ত [……আরবি……]
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬১৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হইতেন, তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করিতেন। [আর] তিনি বলিতেনঃ [……আরবি…..]
অতঃপর কুতায়বা [রহঃ] আরো কিছু বাক্যের উল্লেখ করেছে, যে গুলোর অর্থ হলঃ […..আরবি……]
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬২০. কুরায়ব [রহঃ] হইতে বর্ণীত
আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি একবার উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা [রাঃআঃ]-এর সাথে রাত্রি যাপন করেন। [তিনি সম্পর্কে তাহাঁর খালা ছিলেন] তিনি শুইলেন বালিশের প্রস্থে আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর পরিবার শুইলেন বালিশের দৈর্ঘে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শুয়ে পড়লেন। যখন অর্ধ রাত্রি অতিবাহিত হয়ে গেল তার কিছু পূর্বে বা পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জাগ্রত হলেন এবং হাত দ্বারা মুখমন্ডল থেকে নিদ্রার লক্ষন দূরীভূত করিতে লাগলেন। তারপর সূরা আলে ইমরান এর শেষ দশটি আয়াত তিলাওয়াত করিলেন। এরপর একটি লটকানো মশকের কাছে গেলেন এবং তাহাঁর [পানি] দ্বারা উত্তমরূপে ঊযূ করিলেন এবং দাঁড়িয়ে [তাহাজ্জুদ এর] নামাজ আদায় করিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলিলেন, আমিও দাঁড়িয়ে তাহাঁর মত করলাম এবং গিয়ে তাহাঁর পাশে দাঁড়ালাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং [ঠিকমত না দাঁড়ানোর জন্য] আমার ডান কান মলতে লাগলেন। তারপর তিনি দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন। পুনরায় দুরাকআত, আবার দুরাকআত, তারপরও দুরাকআত, আবারও দুরাকআত, পুনরায় দুরাকআত নামাজ আদায় করে বিত্রের নামাজ আদায় করিলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। পড়ে মুয়ায্যিন তাহাঁর কাছে আসলে সংক্ষিপ্তভাবে দুরাকআত ফজরের সুন্নাত আদায় করিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিরূপ মিসওয়াক করিতেন
১৬২১. হুযায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হইতেন তাহাঁর দাঁত মিস্ওয়াক দ্বারা মলতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬২২. হুযায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করার জন্য জাগ্রত হইতেন তাহাঁর দাঁত মিসওয়াক দ্বারা মলতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ হাদিস শরীফে আবু হাসীন উসমান ইবনি আসিম এর বর্ণনার মধ্যে পার্থক্যের উল্লেখ
১৬২৩. হুযায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতাম তখন মিসওয়াক করার জন্য আমরা আদিষ্ট হতাম।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬২৪. শকীক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা যখন রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতাম তখন আমাদের দাঁত মিসওয়াক দ্বারা মলার আদেশ দেওয়া হত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদ এর নামাজ কোন্ দোয়া দ্বারা শুরু করা হইবে?
১৬২৫. আবু সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ] এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী [সাঃআঃ] কোন্ দোয়া দ্বারা তাহাজ্জুদ এর নামাজ শুরু করিতেন। তিনি বলিলেন, যখন তিনি রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হইতেন তাহাঁর নামাজ এই দোয়া পড়ে শুরু করিতেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ، فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ، اللَّهُمَّ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ، إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৬২৬. হুমায়দ ইব্ন আব্দুর রহমান ইবনি আওফ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একজন সাহাবী বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সফরে থাকা কালীন মনে মনে বললাম যে, আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজের সময়ের প্রতি গভীর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য রাখব, যাতে তাহাঁর আমল দেখিতে পারি। যখন তিনি ইশার নামাজ আদায় করে নিলেন যাকে আতামাহ্ও বলা হয়; দীর্ঘ রাত্র পর্যন্ত শুয়ে রইলেন। অতঃপর জাগ্রত হয়ে আসমানের দিগন্তের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন এবং […..আরবী…..] থেকে [ Arabic ] পর্যন্ত পড়লেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিছানার দিকে হাত বাড়িয়ে তাহাঁর নিচ থেকে একটি মিসওয়াক বের করিলেন এবং তাহাঁর কাছে থাকা একটি পানির পাত্র থেকে লোটাই পানি ঢাললেন, মিসওয়াক করিলেন এবং দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিলেন। আমি মনে মনে ধারণা করলাম যে, তিনি যে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে ছিলেন, সে পরিমাণ সময় নামাজ আদায় করিলেন। পুনরায় ঘুমিয়ে গেলেন, আমি মনে মনে ধারণা করলাম যে, তিনি যে পরিমাণ সময় নামাজ আদায় করেছিলেন সে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে রইলেন। আবার জাগ্রত হয়ে প্রথমবার যেরূপ করেছিলেন তদ্রুপ করিলেন এবং যা যা বলেছিলেন তা বলিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফজরের পূর্বে অনুরূপ তিনবার করেছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর রাত্রের নামাজের উল্লেখ
১৬২৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা যখনই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে রাত্রে নামাজ আদায়রত অবস্থায় দেখিতে চাইতাম, তাঁকে সে অবস্থাতেই দেখিতে পেতাম। আর যদি আমরা তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখিতে চাইতাম, তাঁকে সে অবস্থাতেই দেখিতে পেতাম।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬২৮. ইব্ন আবু মুলায়কা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
ইয়ালা ইব্ন মামলাক তাঁকে অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি উম্মে সালামা [রাঃআঃ]-কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ আদায় করে তাসবীহ পড়তেন। তারপর রাতে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্র ইচ্ছা হত ততক্ষন পর্যন্ত নামাজ আদায় করিতেন। আবার ফিরে এসে যে পরিমান সময় নামাজ আদায় করেছিলেন সে পরিমান সময় ঘুমিয়ে থাকতেন। আবার সেই নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে যে পরিমান সময় ঘুমিয়ে ছিলেন সে পরিমান সময় নামাজ আদায় করিতেন। তাহাঁর সেই শেষবারের নামাজ সকাল অবধি প্রলম্বিত হত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৬২৯. ইয়ালা ইবনি মামলাক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] এর সহধর্মিণী উম্মে সালামা [রাঃআঃ]- কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরআন তিলাওয়াত এবং তাহাঁর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তোমরা তাহাঁর নামাজ সম্পর্কে জেনে কি করিবে? [তোমরা তাহাঁর মত নামাজ আদায় করিতে পারবে না।] তিনি নামাজ আদায় করিতেন এবং যে পরিমাণ সময় নামাজ আদায় করেছিলেন সে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে থাকতেন। আবার যে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে ছিলেন সে পরিমাণ নামাজ আদায় করিতেন। তারপর যে পরিমাণ সময় নামাজ আদায় করেছিলেন সে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে থাকতেন সকাল অবধি। অতঃপর তিনি ইয়ালা [রহঃ] কাছে তাহাঁর কিরাআত সম্পর্কে বলিলেন। তিনি কিরাআতকে উত্তমরূপে থেমে থেমে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর নাবী দাঊদ [আঃ]-এর নামাজ আদায় করার উল্লেখ
১৬৩০. আমর ইবনি আউস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি আস [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বোত্তম সাওম হল দাঊদ [আঃ]-এর সাওম। তিনি সাওম পালন করিতেন একদিন এবং সাওম ভঙ্গ করিতেন একদিন। আর আল্লাহ্ তাআলার কাছে সর্বোত্তম নামাজ হল দাঊদ [আঃ]-এর নামাজ; তিনি অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত নিদ্রা যেতেন, রাত্রের এক তৃতীয়াংশ সময় নামাজ আদায় করিতেন। পুনরায় রাত্রের এক ষষ্টমাংশ সময় নিদ্রা যেতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ্র নাবী মূসা কালীমুল্লাহ [আঃ]-এর নামাজ আদায় করার এবং অত্র হাদিস শরীফে সুলায়মান তায়মী [রহঃ]-এর বর্ণনার মধ্য পার্থক্যের উল্লেখ
১৬৩১. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমাকে মিরাজের রাত্রে একটি লাল টিলার নিকট মূসা [আঃ]-এর কাছে নিয়ে যাওয়া হল। তিনি তখন তাহাঁর কবরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৩২. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি একটি লাল টিলার সন্নিকটে মূসা [আঃ]-এর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তখন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। আবু আব্দুর রহমান নাসায়ী বলেন, অত্র সনদসহ এই হাদিসটি মুআয ইবনি খালিদ –এর হাদিস হইতে আমার নিকট অধিক সঠিক।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৩৩. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি মূসা [আঃ]-এর কবরের পার্শে গিয়েছিলাম, তিনি তখন নিজ কবরে নামাজ আদায় করছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৩৪. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি মিরাজের রাত্রে মূসা [আঃ]-এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি নিজ কবরে নামাজ আদায় করছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৩৫. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] মিরাজের রাতে মূসা [আঃ]-এর কাছে গিয়েছিলেন, তখন তিনি নিজ কবরে নামাজ আদায় করছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৩৬. মু’তামিরের পিতা [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আনাস [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমাকে নাবী [সাঃআঃ] এর কোন কোন সাহাবী সংবাদ দিয়েছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] মিরাজের রাত্রে মূসা [আঃ]-এর কাছে গিয়েছিলেন। তখন তিনি নিজ কবরে নামাজ আদায় করেছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৩৭. কুতায়বা [রহঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ]-এর কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, মিরাজের রাত্রে আমি মূসা [আঃ]-এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি নিজ কবরে নামাজ আদায় করছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ পূর্ণরাত্রি জাগরণ
১৬৩৮. খাব্বাব ইবনি আরাত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বদরের যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে শরীক ছিলেন। একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সারা রাত ব্যাপী নামাজ করলে তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে ফরজ অবধি তাহাঁর প্রতি লক্ষ্য রাখেন। যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজ নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন, খাব্বাব [রাঃআঃ] তাহাঁর কাছে এসে বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি অত্র রাত্র এত দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী নামাজ আদায়ে ব্যাপৃত রইলেন যে, আপনাকে আমি ইতিপূর্বে এত দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী নামাজ আদায়ে ব্যাপৃত থাকতে দেখিনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যা; তা ছিল আশা-নিরাশার নামাজ। আমি আমার রবের সমীপে ৩ টি বিষয়ের প্রার্থনা করেছিলাম, তিনি দুটি বিষয়ের প্রার্থনা কবুল করিয়াছেন আর একটি বিষয়ের অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আমি আমার রবের সমীপে প্রার্থনা করেছিলাম, তিনি যেন আমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতদের ন্যায় আমাদের আযাব দ্বারা ধ্বংস করে না দেন। তিনি আমার এ প্রার্থনা কবুল করিয়াছেন। আমি আমার রবের সমীপে প্রার্থনা করেছিলাম, তিনি যেন আমাদের উপর আমাদের বিপক্ষ [বিধর্মী] শক্তিসমূহকে বিজয়ী না করেন। তিনি আমার এ প্রার্থনাও কবুল করিয়াছেন। আমি আমার রবের সমীপে এও প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে না দেন। কিন্তু তিনি আমার এই প্রার্থনা কবুল করেন নি।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ পূর্ণ রাত্রি জাগরণ সম্পর্কে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর মতপার্থক্য
১৬৩৯. মাসরুক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন যে, আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, যখন রমযানের শেষ দশ দিন আসত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাত্রে ইবাদাতের জন্য জাগ্রত হয়ে যেতেন এবং তাহাঁর পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন আর লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। [স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থেকে ইবাদাতে নিমগ্ন থাকতেন]
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪০. আবু ইসহাক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি একবার আসওয়াদ ইবনি ইয়াযীদ [রহঃ]-এর কাছে আসলাম। তিনি সম্পর্কে আমার ভ্রাতা এবং বন্ধু ছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু আমর [রহঃ]! উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ [রাঃআঃ] আপনার কাছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ সম্পর্কে যা যা বর্ণনা করিয়াছেন তা আপনি আমার কাছে বর্ণনা করুন। আবু আমর [রহঃ] বলেলেন, আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতের প্রথম দিকে নিদ্রা যেতেন এবং শেষের দিকে জাগ্রত হয়ে ইবাদত করিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪১. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমার জানা নেই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক রাত্রে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করিয়াছেন কিংবা তিনি সারা রাত্র সকাল অবধি নামাজ আদায় করিয়াছেন এবং রমযান ব্যতীত কখনো সম্পূর্ণ মাস সাওম পালন করিয়াছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪২. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] একবার তাহাঁর কাছে আসলেন, তখন তাহাঁর কাছে একজন মহিলা ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন এ মহিলা কে? আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিলেন, সে অমুক [হাওলা]। সে রাত্রে নিদ্রা যায় না এবং তার নামাজের কথাও উল্লেখ করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা [তার নামাজ আদায়ের আধিক্যহেতু আমার কাছে তার প্রশংসা বর্ণনা থেকে] বিরত থাক। যতটুকু তোমাদের সাধ্যে কুলায় ততটুকুই তোমরা কর্তব্য জ্ঞান করে নাও। আল্লাহ্র শপথ! আল্লাহ তাআলা কখনো তোমাদের সওয়াব দেয়ার ব্যাপারে কুণ্ঠাবোধ করবেন না বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে তাহাঁর ইবাদাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাহাঁর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় ইবাদাত হল ঐটা যা আমলকারী সর্বদা করে থাকে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার মসজিদে প্রবেশ করে দুখুঁটির মাঝখানে লম্বমান অবস্থায় একটা রশি দেখে জিজ্ঞাসা করিলেন, এটা কিসের রশি? সাহাবীরা বলিলেন, এটা যয়নব [রাঃআঃ] এর রশি। যখন তিনি নামাজ আদায় করিতে দাঁড়াতে অসমর্থ হয়ে যান, তখন এ রশির সাথে লটকে থেকে নামাজ আদায় করে থাকেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, ও রশি খুলে ফেল, তোমরা প্রফুল্লচিত্ততা অবশিষ্ট থাকা অবধি নামাজ আদায়ে রত থাকিবে। আর যখনি ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন বসে পড়বে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪৪. যিয়াদ ইবনি আলাকাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি মুগীরা ইবনি শুবাকে বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী [সাঃআঃ] এত দীর্ঘক্ষণ নামাজে দাঁড়িয়ে রইলেন যে, তাহাঁর কদমদ্বয় ফুলে গেল। তখন তাঁকে বলা হল, আল্লাহ্ তাআলা আপনার পূর্বাপর সমুদয় ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করে দিয়েছেন। [এতদসত্ত্বেও আপনি ইবাদাতে এত ক্লেশ কেন করছেন?] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি কি তাহলে কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এত দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী নামাজ আদায়ে রত থাকতেন যে, তাহাঁর কদমদ্বয় [অত্যধিক ফুলে যাওয়ার কারণে] ফেটে যাওয়ার উপক্রম হত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪৬. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দীর্ঘ রাত্র পর্যন্ত নামাজ আদায়ে রত থাকতেন, যখন তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিতেন দাঁড়ানো অবস্থাতেই রুকু করিতেন আর যখন বসে নামাজ আদায় করিতেন, বসা অবস্থাতেই রুকু করিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪৭. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়েও নামাজ আদায় করিতেন আর বসেও নামাজ আদায় করিতেন। যখন তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় নামাজ শুরু করিতেন দাঁড়ানো অবস্থাতেই রুকু করিতেন আর যখন বসা অবস্থায় নামাজ শুরু করিতেন, বসা অবস্থাতেই রুকু করিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪৮. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] কখনো বসা অবস্থায় নামাজ শুরু করিতেন। নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করিতেন তখনও তিনি বসা অবস্থায় থাকতেন। যখন তাহাঁর কিরাআতের ত্রিশ কি চল্লিশ আয়াত পরিমাণ অবশিষ্ট থাকত তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করে রুকূ করিতেন আর সিজদা করিতেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরূপ করিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৪৯. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কখনো বসে নামাজ আদায় করিতে দেখিনি। যখন তাহাঁর বার্ধক্য এসে গেল, তিনি বসে বসেও নামাজ আদায় করিতেন, কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। যখন সূরার ত্রিশ কি চল্লিশ আয়াত পরিমাণ অবশিষ্ট থাকত তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং অবশিষ্ট আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে নিতেন, তারপর রুকূ করিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৫০. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বসা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। যখন রুকূ করার ইচ্ছা করিতেন লোকদের চল্লিশ আয়াত পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করার সময় থাকতে দাঁড়িয়ে যেতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৫১. সাদ ইবনি হিশাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি একবার মদীনা শরীফে গেলে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কে? আমি বললাম, আমি সাদ ইবনি হিশাম ইবনি আমির। তিনি বলিলেন, তোমার পিতার উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। আমি বললাম, আপনি আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ এরূপ ছিলেন না? আমি বললাম, নিশ্চয়। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাত্রে ইশার নামাজ আদায় করিতেন। তারপর তাহাঁর বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে যেতেন। যখন অর্ধ রাত্রি হয়ে যেত তিনি তাহাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার জন্য এবং উযূর পানি নেয়ার জন্য উঠে যেতেন এবং উযূ করে নিতেন। তারপর মসজিদে প্রবেশ করে আট রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। আমার ধারনা হত, যেন তিনি উপরোক্ত রাকআত সমূহের কিরাআত, রুকু এবং সিজদাতে সমতা বিধান করিতেন। অতঃপর একটি রাকআত দ্বারা উপরোক্ত নামাজ সমূহকে বেজোড় করে দিতেন। {১} পরে বসা অবস্থায় দুরাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তারপর তিনি শুয়ে পড়তেন। কখনো কখনো বিলাল [রাঃআঃ] এসে তাঁকে হালকা নিদ্রা আসার পূর্বেই নামাজের সংবাদ দিতেন আর কখনো কখনো তাহাঁর হালকা নিদ্রা এসে যেত, এবং কখনো কখনো আমার সন্দেহ হয়ে যেত যে, তিনি হালকা নিদ্রা গেলেন কি না। ইতিমধ্যে তাঁকে নামাজের সংবাদ দেওয়া হত। এই ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর নামাজ। যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হলেন এবং তাহাঁর শরীর ভারী হয়ে গেল। আয়িশাহ [রাঃআঃ] আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল তাহাঁর ভারী হওয়া সম্পর্কে উল্লেখ করিলেন। তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] লোকদের নিয়ে ইশার নামাজ আদায় করিতেন। তারপর নিদ্রা যেতেন। যখন অর্ধ রাত্রি হত তিনি উযূর পানি নেয়ার জন্য এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার জন্য নিদ্রা থেকে উঠে যেতেন এবং উযূ করিতেন মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত নামাজ আদায় করিতেন। আমি ধারণা করতাম যে, উক্ত দুরাকআত নামাজে তিনি কিরাআত, রুকু এবং সিজদায় সমতা বিধান করিতেন। অতঃপর একটি রাকআত দ্বারা উক্ত নামাজ সমূহকে বেজোড় করে দিতেন। তারপর বসা অবস্থায় দুরাকআত নামাজ আদায় করিতেন। পরে নিদ্রা যেতেন। কখনো কখনো বিলাল [রাঃআঃ] এসে তাঁকে হালকা নিদ্রা যাওয়ার পূর্বেই নামাজের সংবাদ দিতেন আর কখনো কখনো তিনি হালকা নিদ্রা যেতেন। আর কখনো কখনো আমার সন্দেহ হয়ে যেত যে, তিনি হালকা নিদ্রা গেলেন কি না। ইতিমধ্যে তাঁকে নামাজের সংবাদ দেওয়া হত। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, এই ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর সব সময়ের নামাজ।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ নফল নামাজ বসে বসে আদায় করা
১৬৫২. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাওম পালন অবস্থায় আমার মুখে চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন না। আর মৃত্যু অবধি তাহাঁর অধিকাংশ [নফল] নামাজই ছিল বসা অবস্থায়। এরপর তিনি আরও একটি বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। যার অর্থ দাঁড়ায় ফরয নামাজ ব্যতীত। আর তাহাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল যা মানুষ সর্বদা করিতে থাকে; যদিও তা পরিমাণে অল্পই হোক না কেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১৬৫৩. উম্মে সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যু অবধি অধিকাংশ নামাজ ছিল বসা অবস্থায়, ফরয নামাজ ব্যতীত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১৬৫৪. উম্মে সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, ফরয নামাজ ব্যতীত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইনতিকাল অবধি অধিকাংশ নামাজ ছিল বসা অবস্থায় আর তাহাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল যা সর্বদা করা হত, তা পরিমাণে অল্পই হত না কেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৫৫. উম্মে সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, ঐ সত্তার শপথ যাঁর কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইনতিকাল অবধি তাহাঁর অধিকাংশ নামাজ ছিল বসা অবস্থায়, ফরয নামাজ ব্যতীত। আর তাহাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল যা সর্বদা করা হত যদিও তা পরিমাণে অল্পই হত না কেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৫৬. আবু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আয়েশা [রাঃআঃ] অবহিত করিয়াছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] ইনতিকাল অবধি তাহাঁর অধিকাংশ নামাজ বসা অবস্থাতেই আদায় করিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৫৭. আব্দুল্লাহ ইবনি শাকীক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বসা অবস্থায় নামাজ আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ; মানুষের দায়িত্ব ভারে দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর থেকে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৫৮. হাফ্সা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর নফল নামাজ বসে বসে আদায় করিতে কখনো দেখিনি তাহাঁর ইনতিকালের এক বৎসর পূর্ব পর্যন্ত। এরপর তিনি বসে বসেও নফল নামাজ আদায় করিতেন। তিনি যখন কোন সূরা তিলাওয়াত করিতেন তখন তা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করিতেন, তাতে দীর্ঘ সূরা আরো দীর্ঘ [মনে] হত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ বসে বসে নামাজ আদায় করার উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার ফযীলত
১৬৫৯. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বসা অবস্থায় দেখলাম। আমি বললাম, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আপনি বলেছেনঃ বসে বসে নামাজ আদায়কারীর সওয়াব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কারীর অর্ধেক। অথচ আপনি বসে বসে নামাজ আদায় করছেন? তিনি বলিলেন, নিশ্চয়; কিন্তু আমি তোমাদের কারো মত নই। [আমি বসে বসে নামাজ আদায় করলেও আমাকে পূর্ণ সওয়াব দেয়া হয়।]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ শুয়ে শুয়ে নামাজ আদায় করার উপর বসে বসে নামাজ আদায় করার ফযীলত
১৬৬০. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে বসে বসে নামাজ আদায় করে। তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নফল নামাজ আদায় করে তার এ নামাজ সর্বোত্তম। আর যে ব্যক্তি বসে বসে নামাজ আদায় করে তার জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি শুয়ে শুয়ে নামাজ আদায় করে, তার জন্য বসে বসে নামাজ আদায়কারীর তুলনায় অর্ধেক সওয়াব রয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ বসে বসে নামাজ কিরূপে আদায় করিতে হইবে?
১৬৬১. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে একবার দেখলাম যে, তিনি চার জানু হয়ে নামাজ আদায় করছেন। আবু আব্দুর রহমান [নাসাঈ] বলেন, আমি অত্র হাদিস শরীফ আবু দাঊদ [রহঃ] ভিন্ন অন্য কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি অবশ্য নির্ভরযোগ্য কিন্তু আমি অত্র হাদিস শরীফকে ভুল ভিন্ন কিছুই মনে করি না। আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ রাত্রে কুরআন কিতাবে পাঠ করিতে হইবে ?
১৬৬২. আব্দুল্লাহ ইবনি অবূ কায়স [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাত্রে কিভাবে কুরআন পাঠ করিতেন, উচ্চ স্বরে না নিম্ন স্বরে? আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিলেন, উভয়রূপেই তিনি কুরআন পাঠ করিতেন। কখনো উচ্চ স্বরে পাঠ করিতেন, কখনো নিম্ন স্বরে পাঠ করিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ [স্থান-কাল ভেদে] উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করার উপর নিম্নস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করার ফযীলত
১৬৬৩. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি [স্থান-কাল ভেদে] উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে প্রকাশ্যে দান খয়রাত করে, আর যে ব্যক্তি নিম্নস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে গোপনে দান খয়রাত করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদের নামাজে কিয়াম রুকূ, রুকূর পরে দাঁড়ানো সিজদা এবং উভয় সিজদার মধ্যে বসায় সমতা বিধান করা
১৬৬৪. হুযায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি একরাত্রে রাসূল্লুলাহ্ [সাঃআঃ]-এর সাথে নামাজ আদায় করলাম। তিনি সূরা বাকারা শুরু করিলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, হয়তো তিনি একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন, আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি দুশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন, কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি পূর্ণ সূরা এক রাকআতেই তিলাওয়াত করে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন এবং সূরা “নিসা” শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তারপর সূরা “আলে-ইমরান” ও শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তিনি ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করিতেন। যদি তিনি এমন কোন আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন যাতে কোন তাসবীহ্ রয়েছে তবে তাসবীহ পাঠ করিতেন, যদি কোন যাঞ্ছা করার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন তবে যাঞ্ছা করিতেন। যদি কোন বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন, তবে আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন। তারপর রুকূ করিতেন এবং বলিতেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ
“সুবাহানা রাব্বিয়াল আজীম”
তাহাঁর রুকূ প্রায় তাহাঁর কিয়ামের সমান হত। পরে তাহাঁর মাথা উঠাতেন এবং বলিতেন
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”।
তাহাঁর দাঁড়ানো প্রায় তাহাঁর রুকূর সমান হত। তারপর সিজদা করিতেন এবং বলিতেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা”
তাহাঁর সিজদা প্রায় তাহাঁর রুকূর সমান হত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৬৫. হুযায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এক রমযান নামাজ আদায় করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রুকূ করিলেন এবং রুকূতে বলিলেন
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ
“সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম”;
তাহাঁর রুকূ তাহাঁর দাঁড়ানো থাকার সমপরিমাণ হত। তারপর উভয় সিজদার মধ্যে বসে বলিলেন,
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
তাহাঁর বসা ও তাহাঁর কিয়ামের সমপরিমাণ হত তারপর সিজদা করিলেন এবং বলিলেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
“সুবাহানা রাব্বিয়াল আলা”
তাহাঁর সিজদা ও তাহাঁর কিয়ামের সমপরিমাণ হত। মাত্র চার রাকআত নামাজ আদায় করিতেই বিলাল [রাঃআঃ] এসে ফজরের নামাজের সংবাদ দিলেন। আবু আব্দুর রহমান নাসায়ী বলেন, আমার নিকট এই হাদিসটি মুরসাল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ রাত্রের নামাজ কিভাবে আদায় করিতে হইবে?
১৬৬৬. আলী আয্দী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি উমর [রাঃআঃ]-কে বর্ণনা করিতে শুনেছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, রাত্রের এবং দিনের নামাজ দুরাকআত দুরাকআত করে আদায় করিবে। আবু আব্দুর রহমান নাসায়ী [রহঃ] বলেন। অত্র হাদিস শরীফ আমার ধারণা মতে ভুল। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৬৭. তাউস [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, ইবনি উমর [রাঃআঃ] বলেছেন যে, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে রাত্রের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, দুরাকআত দুরাকআত করে আদায় করিবে, যখন ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করিবে, তখন এক রাকআত আদায় করে নেবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৬৮. মুহাম্মাদ ইবনি সাদাকাহ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
সালিমের পিতা সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাত্রের নামাজ দুরাকআত দুরাকআত। যখন ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করিবে তখন একটি রাকআত দ্বারা [পূর্বের আদায়কৃ্ত সমুদয় নামাজকে] বেজোড় করে নেবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৬৯. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মিম্বারে দণ্ডায়মান থাকাকালীন রাত্রের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বলিতে শুনিয়াছি, “দুরাকআত দুরাকআত” [করে আদায় করিবে] যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করিবে, তখন একটি রাকআত দ্বারা [পূর্বের আদায়কৃত সমুদয় নামাজকে] বেজোড় বানিয়ে নেবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৭০. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে রাত্রের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, “দুরাকআত, দুরাকআত” [করে আদায় করিবে]। যদি তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে, তবে যেন একটি রাকআত দ্বারা [পূর্বের আদায়কৃ্ত সমুদয় নামাজকে] বেজোড় বানিয়ে নেয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৭১. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাত্রের নামাজ দুরাকআত, দুরাকআত [করে আদায় করিবে]। “যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করিবে তখন একটি রাকআত দ্বারা [পূর্বে আদায়কৃত সমুদয় নামাজকে] বেজোড় বানিয়ে নেবে।”
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৭২. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মুসলমানদের এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করিল, “রাত্রের নামাজ কিরূপে আদায় করিতে হইবে?” তিনি বললেনঃ “রাত্রের নামাজ “দুরাকআত, দুরাকআত [করে আদায় করিবে]। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করিবে তখন একটি রাকআত দ্বারা [পূর্বে আদায়কৃত সমুদয় নামাজকে] বেজোড় বানিয়ে নেবে।”
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৭৩. আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে রাত্রের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, রাত্রের নামাজ “দুরাকআত, দুরাকআত” [করে আদায় করিবে]। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করিবে তখন একটি রাকআত দ্বারা [পূর্বের আদায়কৃ্ত সমুদয় নামাজকে] বেজোড় বানিয়ে নেবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬৭৪. আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, এক বাক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ [সাঃআঃ]! রাত্রের নামাজ কিরূপে আদায় করিতে হইবে? রাসুলুল্লাহ্ বলিলেন, রাত্রের নামাজ “দুরাকআত, দুরাকআত” [করে আদায় করিবে]। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করিবে তখন একটি রাকআত দ্বারা [পূর্বের আদায়কৃত সমুদয় নামাজকে] বেজোড় বানিয়ে নেবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply