আজান ও তার সুন্নাত। আযানের ফাদীলাত দোয়া ও সাওয়াব

আজান ও তার সুন্নাত

আজান ও তার সুন্নাত। আযানের ফাদীলাত দোয়া ও সাওয়াব , এই অধ্যায়ে মোট =২৯ টি হাদীস (৭০৬ – ৭৩৪) >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩ – আযান ও তার সুন্নাত, অধ্যায়ঃ (১-৭) = ৭ টি

১. অধ্যায়ঃ আযানের সূচনা
২. অধ্যায়ঃ আযানের তারজীর বিবরণ
৩. অধ্যায়ঃ আযানের সুন্নাত।
৪. অধ্যায়ঃ মুয়াযযিন যখন আজান দেয় তখন যা বলিতে হইবে ।
৫. অধ্যায়ঃ আযানের ফাদীলাত ও মুয়াযযিনের সাওয়াব ।
৬. অধ্যায়ঃ ইকামতের শব্দগুলো একবার করে বলা ।
৭. অধ্যায়ঃ তুমি মাসজিদে থাকা অবস্থায় আজান হলে, সেখান থেকে বের হয়ে চলে যেও না ।

১. অধ্যায়ঃ আযানের সূচনা

৭০৬ আব্দুল্লাহ বিন যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শিঙ্গাধ্বনি করার মনস্থ করেন এবং ঢোল বাজিয়ে লোকেদের [নামাজের জন্য] ডাকার নির্দেশ দেন। এরপর আবদুল্লাহ বিন যায়দ [রাঃআঃ] কে স্বপ্নে দেখানো হলো। তিনি বলেন, আমি সবুজ বর্ণের একজোড়া কাপড় পরিহিত এক ব্যক্তিকে একটি নাকূস বহন করিতে দেখলাম। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি নাকূস বিক্রি করিবে? সে বললো, তা দিয়ে তুমি কি করিবে? আমি বললাম, আমি তা দিয়ে নামাজের জন্য ডাকবো। সে বললো, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কোন জিনিস সম্পর্কে অবহিত করবো না? আমি বললাম, তা কী? সে বললো, তুমি বলোঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ ‏.‏

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ;
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,
হাইয়্যাআলাস সালাহ, হাইয়্যাআলাস সালাহ।
হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ,
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

“আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই।
নামাজের দিকে এসো, নামাজের দিকে এসো।
আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই”।

রাবি বলেন, আবদুল্লাহ বিন যায়দ [রাঃআঃ] বের হয়ে রাসূল [সাঃআঃ] এর নিকট আসেন এবং যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন সে সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি স্বপ্নযোগে একজোড়া সবুজ কাপড় পরিহিত এক ব্যক্তিকে নাকূস বহন করিতে দেখলাম। এরপর তিনি তাহাঁর কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তোমাদের এই সাথী একটি স্বপ্ন দেখেছে। তুমি বিলালের সাথে মাসজিদে চলে যাও, তাকে এগুলো শিখিয়ে দাও এবং বিলাল যেন আজান দেয়। কারণ বিলাল তোমার চাইতে উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী। রাবি বলেন, আমি বিলালের সাথে মাসজিদে গেলাম। আমি তাকে শিখিয়ে দিলাম এবং তিনি তা উচ্চ স্বরে ঘোষণা দিলেন। রাবি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআঃ] এই বাক্যধ্বনি শুনে বেরিয়ে আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি। ইরওয়া ইবনি মাজাহ এর উষ্ণতায় আবু উবায়দ [রাঃআঃ] বলেন, আবু বাকর আল-হাকামী আমাকে অবহিত করিয়াছেন যে, আবদুল্লাহ বিন যায়দ আল-আনসারী [রাঃআঃ] এ সম্পর্কে [কবিতা] বলেন, আমি মহামহিম গৌরবান্বিত অশেষ প্রশংসা করছি আজান দেয়ার জন্য। যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদদাতা তা নিয়ে আমার নিকট এলো, আমাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য তাকে সম্মান করে, সে তিন রাত আমাকে আজান দিলো, যখনই সে এলো, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিলো। {৭০৪}

{৭০৪} তিরমিজি ১৮৯, আবু দাউদ ৪৯৯, ৫১২; আহমাদ ১৬০৪১, ১৬০৪৩; দারিমি ১১২৭। তাহকিক আলবানিঃ হাসান। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ২৪৬, মিশকাত ৬৫০।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭০৭ আবদুল্লাহ বিন উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] সালাতের জন্য সমবেত করার ব্যাপারে সহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। তারা শিঙ্গার কথা উল্লেখ করেন, কিন্তু এটি ইহুদীদের যন্ত্র বলে তিনি অপছন্দ করেন। অতঃপর তারা নাকূসের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এটি খ্রিস্টানদের ঘণ্টা বলে তিনি অপছন্দ করেন। সেই রাতে আবদুল্লাহ বিন যায়দ নামে এক আনসারীকে স্বপ্নে আযানের পদ্ধতি দেখানো হলো এবং উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআঃ] ও [রাতে একই স্বপ্ন দেখেন]। আনসারী সহাবী রাতেই রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিলালকে আজান দেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি আজান দেন। যুহরী [রাঃআঃ] বলেন, বিলাল [রাঃআঃ] ফজরের সলাতে

الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ

আসসলাতু খাইরুম মিনান-নাওম

[ঘুম থেকে নামাজ উত্তম]

বাক্যটি সংযোজন করেন এবং রাসূল তা বহাল রাখেন। উমার [রাঃআঃ] বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমিও এ ব্যাক্তির অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু সে আমার আগেই পৌঁছে গেছে। {৭০৫}

তাহকিক আলবানীঃ দঈফ, এর কিছু অংশ সহিহ, যা বুখারি, মুসলিমে রয়েছে।{৭০৫} বোখারি ৬০৪, মুসলিম ৩৭৭, তিরমিজি ১৯০, নাসায়ি ৬২৬, আহমাদ ৬৩২১। তাহকিক আলবানিঃ জইফ, এর কিছু অংশ সহিহ যা বোখারি, মুসলিমে রয়েছে।হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

২. অধ্যায়ঃ আযানের তারজীর বিবরণ

৭০৮ আবু মাহযূরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

[আবদুল্লাহ বিন মুহায়রীয়] ইয়াতীম হিসেবে আবু মাহযূরা [রাঃআঃ] এর তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় তিনি আমাকে সিরিয়ার দিকে পাঠান। তখন আমি আবু মাহযূরাহ [রাঃআঃ] কে বললাম, হে চাচাজান! আমি সিরিয়ায় যাচ্ছি। আমি আপনাকে আপনার আজান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছি। তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, আবু মাহযূরাহ [রাঃআঃ] বলেন, আমি একটা দলের সাথে রওয়ানা হলাম এবং আমরা কোন এক রাস্তা অতিক্রম করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর মুয়াযযিন তাহাঁর উপস্থিতিতে সালাতের আজান দেন। আমরাও মুয়াযযিনের আজান ধ্বনি শুনলাম। তা অপছন্দ হওয়ার কারণে আমরা তার শব্দাবলীর প্রতিধ্বনি করিতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রতিধ্বনি শুনে আমাদের নিকট লোক পাঠান। আমাদেরকে তার সামনে পেশ করা হলে তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কার কণ্ঠস্বর উচ্চ, যার কণ্ঠস্বর আমি শুনতে পেলাম? লোকেরা ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে দিল। তিনি সকলকে ছেড়ে দিলেন এবং আমাকে আটক রাখলেন। তিনি আমাকে বলেন, দাঁড়াও এবং আজান দাও। অতএব আমি দাঁড়ালাম। আমার কাছে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তিনি যার নির্দেশ দিয়েছেন তার চাইতে অধিকতর অপ্রিয় কোন কিছুই ছিল না। আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে দাঁড়ালাম এবং তিনি নিজে আমাকে আজান শিক্ষা দিলেন। তিনি বলেন, তুমি বলোঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ 

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ;
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

“আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই; আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল।

অতঃপর তিনি আমাকে বলেন, তুমি আরো উচ্চকণ্ঠে বলোঃ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ 

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ;
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,
হাইয়্যাআলাস সালাহ, হাইয়্যাআলাস সালাহ।
হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ,
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

“আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই; আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই।
আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।
সালাতের দিকে এসো, সালাতের দিকে এসো।
কল্যাণের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো।
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই”।

আমি আজান শেষ করলে তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন এবং কিছু রূপার মুদ্রা ভর্তি একটি থলে দান করেন। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর হাত আবু মাহযূরা [রাঃআঃ]– এর কপালের অগ্রভাগে রাখেন, অতঃপর তা তাহাঁর মুখমণ্ডলে বুলিয়ে দেন, অতঃপর তাহাঁর হাত তার বুকে বুলিয়ে দেন, এমনকি তাহাঁর হাত আবু মাহযূরাহ [রাঃআঃ] – এর নাভিমূল পর্যন্ত পৌঁছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাকে বরকত দান করুন এবং তোমার উপর বরকত নাযিল করুন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে মাক্কাহ মুয়াযযামায় আজান দেয়ার জন্য নিয়োগ করুণ। তিনি বলেন, হাঁ, তোমাকে নিয়োগ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]– এর যা কিছু আমার নিকট অপ্রিয় ছিল তা সব দূর হয়ে গেল এবং তদস্থলে তাহাঁর প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা স্থান পেল। অতঃপর আমি মাক্কাহ মুয়াযযামায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর গভর্নর আত্তাব বিন উসাইদ [রাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম। আমি তার উপস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]– এর নির্দেশ মোতাবেক সালাতের আজান দিলাম। {৭০৬}

{৭০৬} মুসলিম ৩৭৯, তিরমিজি ১৯১-৯২, নাসায়ি ৬২৯-৩৩, আবু দাউদ ৫০২-৪, আহমাদ ১৪৯৫১, ১৪৯৫৫, ২৬৭০৮; দারিমি ১১৯৬, মাজাহ ৭০৯। তাহকিক আলবানিঃ হাসান সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ২০২।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৭০৯ আবদুল্লাহ বিন মুহাইরীয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু মাহযূরা [রাঃআঃ] তাকে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে আযানের ঊনিশটি এবং ইকামতের সতেরটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। আযানের বাক্যগুলো হলোঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ 

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ,
হায়্যা আলাস সালাহ, হায়্যা আলাস সালাহ,
হায়্যা আলাল ফালাহ, হায়্যা আলাল ফালাহ,
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

এবং ইকামাতের ১৭ টি শব্দ হলোঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ 

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ,
হায়্যা আলাস সালাহ, হায়্যা আলাস সালাহ,
হায়্যা আলাল ফালাহ, হায়্যা আলাল ফালাহ,
কদ-কামাতিস সালাহ, কদ-কামাতিস সালাহ,
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। {৭০৭}

{৭০৭} মুসলিম ৩৭৯, তিরমিজি ১৯১-৯২, নাসায়ি ৬২৯-৩৩, আবু দাউদ ৫০২-৪, আহমাদ ১৪৯৫১, ১৪৯৫৫, ২৬৭০৮; দারিমি ১১৯৬, মাজাহ ৭০৮। তাহকিক আলবানিঃ হাসান সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ মিশকাত ৬৪৪, সহিহ আবু দাউদ ৫১৭।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৩. অধ্যায়ঃ আযানের সুন্নাত।

৭১০ সাদ বিন আয়েয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিলাল [রাঃআঃ]– কে তার দুকানের ছিদ্রে তার দু আঙ্গুল প্রবিষ্ট করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, তাতে তোমার কণ্ঠস্বর আরো উচ্চ হইবে। {৭০৮}

{৭০৮} জইফ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়া ২৩১ জইফ, মিশকাত ৬৫৩। উক্ত হাদিসের রাবি ১. আব্দুর রহমান বিন সাদ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম বোখারি বলেন, তার ব্যাপারে মন্তব্য রয়েছে। ২. সাদ আম্মার সম্পর্কে ইবনিল কাত্তান বলেন, তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭১১ আবু জুহায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আল-আবতাহ [মিনা] নামক উপত্যকায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি লাল তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করছিলেন। বিলাল বেরিয়ে এসে আজান দিলেন। আজান দেয়ার সময় তিনি এদিক-সেদিক তার মুখ ফিরান এবং তার দুকানের ছিদ্রে তার দু আঙ্গুল প্রবিষ্ট করান। {৭০৯}

{৭০৯} বোখারি ৬২৪, মুসলিম ৫০১-২, তিরমিজি ১৯৭, নাসায়ি ৬৪৩, ৫৩৭৮; আবু দাউদ ৫২০, আহমাদ ১৮২৭৫, দারিমি ১১৯৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ২৩০।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭১২ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মুয়াযযিনের কাঁধে মুসলিমদের দুটি বিষয় অর্পিতঃ তাহাদের নামাজ ও সাওম। {৭১০}

{৭১০} মওযু। তাখরিজ আলবানিঃ জামি সগীর ২৮৩১ মাউযূ, মিশকাত ৬৮৮, যঈফা ৯০১ মাউযূ। হাদিসটি ইমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ ইবনিল মুসাফফা আল হিমসী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী ও ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হিব্বান তাকে সিকাহ বললেও অন্যত্রে বলেন তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ২. মারওয়ান বিন সালিম সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ নন। ইমাম বোখারি ও মুসলিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। ইমাম নাসাঈ বলেন। তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আস-সাজী বলেন, তিনি মিথ্যুক ও বানিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন।হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস

৭১৩ জাবির বিন সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ওয়াক্‌ত হলে বিলাল [রাঃআঃ] কখনো আজান দিতে বিলম্ব করিতেন না। তবে তিনি কখনো ইকামতে কিছুটা বিলম্ব করিতেন। {৭১১}

{৭১১} হাসান। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ২২৭। হাদিসটি ইমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৭১৪ উসমান বিন আবুল আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমার থেকে সর্বশেষ যে অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছেন তা হলোঃ আমি যেন বেতনভুক্ত মুয়াযযিন নিয়োগ না করি। {৭১২}

{৭১২} তিরমিজি ২০৯, নাসায়ি ৬৭২, আবু দাউদ ৫৩১, আহমাদ ১৫৮৩৬, ১৭৪৪৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৩১৬, সহিহ আবু দাউদ ৫৪১।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭১৫ বিলাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – আমাকে ফজরের সলাতে তাসবীব করার নির্দেশ দেন এবং ইশার সালাতে তাসবীব করিতে নিষেধ করেন। {৭১৩}

{৭১৩} তিরমিজি ১৯৮, আহমাদ ২৩৩৯৫। তাহকিক আলবানিঃ জইফ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়া ২৩৫ জইফ, মিশকাত ৬৪৬। উক্ত হাদিসের রাবি আবু ইসরাইল সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অনেক সন্দেহ করেন। ইয়াকুব বিন সুফইয়ান তাকে সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭১৬ বিলাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ফজরের নামাজ সম্পর্কে অবহিত করার জন্য নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এলেন। তাকে বলা হলো যে, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তখন বিলাল [রাঃআঃ] বলেন,

الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ

আসসলাতু খাইরুম মিনান-নাওম, আসসলাতু খাইরুম মিনান-নাওম

“ঘুম থেকে নামাজ উত্তম; ঘুম থেকে নামাজ উত্তম”।

এ বাক্য ফজরের আযানে যোগ করা হলো এবং তদনুযায়ী আমাল চলে আসছে। {৭১৪}

{৭১৪} সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ আবু দাউদ ৫৯০ জইফ, জামি ৪৮৬৬ জইফ, মিশকাত ১১১৯ জইফ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭১৭ যিয়াদ ইবনিল হারিস আস-সুদাঈ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এক সফরে রসূ্লুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলে আমি আজান দিলাম। বিলাল [রাঃআঃ] ইকামাত দিতে চাইলে রসূ্লুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তোমার ভাই সুদাঈ আজান দিয়েছে। আর যে ব্যক্তি আজান দিবে সেই ইকামাত দিবে। {৭১৫}

{৭১৫} তিরমিজি ১৯৯, আবু দাউদ ৫১৪, আহমাদ ১৭০৮৩। তাহকিক আলবানিঃ জইফ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৩৩৭, মিশকাত ৬৪৮, যঈফাহ ৩৫। উক্ত হাদিসের রাবি আল ইফরিকী সম্পর্কে ইবনি মাহদী বলেন, তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা উচিত নয়। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, কোন সমস্যা নেই। তবে আমি তার থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করিনি।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪. অধ্যায়ঃ মুয়াযযিন যখন আজান দেয় তখন যা বলিতে হইবে ।

৭১৮ আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূ্লুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মুয়াযযিন যখন আজান দেয়, তখন তোমরা তার কথার অনুরূপ বলো। {৭১৬}

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৭১৯ উম্মু হাবীবাহ [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তার পালার দিন ও রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তার নিকট অবস্থান করিতেন তখন তিনি তাঁকে মুয়ায্‌যিনের আজান শুনে তার অনুরূপ বলিতে শুনেছেন। {৭১৭}

সহিহ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২০ আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা যখন আজান শুনতে পাও, তখন মুয়ায্‌যিন যা বলে তোমরাও তা বলো। {৭১৮}

{৭১৮} বোখারি ৬১১, তিরমিজি ২০৮, নাসায়ি ৬৭৩, আবু দাউদ ৫২২, আহমাদ ১১১১২, ১১৩৩৩, ১১৪৫০; মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫০, দারিমি ১২০১। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৫৩৫।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২১ সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি মুয়ায্‌যিনের আজান শোনার পর নিম্নোক্ত দুআ পড়লে তার গুনাহ ক্ষমা করা হবেঃ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ 

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। রাদিতু বিল্লাহি রব্বা ওয়া বিল ইসলামি দিনা ওয়া বিমুহাম্মাদ নাবিয়্যিয়ান গুফেরা লাহু জানবুহু

“আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাহাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ তাহাঁর বান্দা ও রসূল। আমি আল্লাহ্‌কে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট”। {৭১৯}

{৭১৯} মুসলিম ৩৮৬, তিরমিজি ২১০, নাসায়ি ৬৭৯, আবু দাউদ ৫২৫, আহমাদ ১৫৬৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৫৩৭।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২২ জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন ব্যক্তি মুয়ায্‌যিনের আজান শুনে নিম্নোক্ত দুআ পড়লে তাহাঁর জন্য কিয়ামাতের দিন শাফাআত অবধারিত হবেঃ

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ

আল্লাহুম্মা রব্বি হাযিহিদ্ দাওয়াতিত্ তাম্মাতি ওয়াস্ সলাতিল ক্বায়িমাতি আতি মুহাম্মাদান ওয়াসিলাতা ওয়ালফাযীলাহ্ ওয়াবআসহু মাকামাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়াআদ্তাহু।

“হে আল্লাহ, এই পূর্ণাঙ্গ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের প্রভু! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] কে দান করুন সুমহান মর্যাদা ও সম্মান এবং তাঁকে প্রশংসিত স্থানে পৌছান, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাকে দিয়েছেন।” {৭২০}

{৭২০} বোখারি ৬১৪, ৪৭১৯; তিরমিজি ২১১, নাসায়ি ৬৮০, আবু দাউদ ৫২৯, আহমাদ ১৪৪০৩। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৩৪৩, সহিহ আবু দাউদ ৫৪০।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫. অধ্যায়ঃ আযানের ফাদীলাত ও মুয়াযযিনের সাওয়াব ।

৭২৩ আবদুর রহমান বিন আবু সাসাআহ হইতে বর্ণিতঃ

আবু সাঈদ [রাঃআঃ] আমাকে বলেছেন, যখন তুমি গ্রামে বা বন-জঙ্গলে থাকিবে, তখন উচ্চৈঃস্বরে আজান দিবে। কেননা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছিঃ  জিন, মানুষ, বৃক্ষলতা ও পাথর যে-ই এই আজান শুনবে, সে তাহাঁর জন্য [আখেরাতে] সাক্ষ্য দিবে। {৭২১}

{৭২১} বোখারি ৬০৯, ২৩৯৬, ৭৫৪৮; নাসায়ি ৬৪৪, আহমাদ ১০৯১২, ১১০০০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৫৩। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪ আবু হূরায়রাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে নিজ মুখে বলিতে শুনিয়াছিঃ  মুয়াযযিনের আজান ধ্বনি যত দূর পর্যন্ত পৌছবে, তত দূর তাঁকে ক্ষমা করা হইবে এবং জীবিত ও নির্জীব সকলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। সলাতে উপস্থিত লোকদের পঁচিশ নেকী লেখা হয় এবং তার দু নামাজের মধ্যর্বতী কালের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। {৭২২}

{৭২২} নাসায়ি ৬৪৫, আবু দাউদ ৫১৫, আহমাদ ৭৫৫৬, ৯০৭৩, ৯২৫৭। তাহকিক আলবানিঃ হাসান সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ মিশকাত ৬৬৭, সহীহ্ আবু দাউদ ৫২৮।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৭২৫ মুআবিয়াহ বিন আবু সুফ্‌ইয়ান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কিয়ামাতের দিন মুয়াযযিনগণ লোকদের মাঝে সুদীর্ঘ ঘাড়বিশিষ্ট হইবে। {৭২৩}

{৭২৩} মুসলিম ৩৮৭, আহমাদ ১৬৪১৯, ১৬৪৫৩। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২৬ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, অবশ্যই তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তি আজান দিবে এবং তোমাদের মধ্যকার উত্তম কারী [কুরআন বিশেষজ্ঞ] ইমামতি করিবে। {৭২৪}

{৭২৪} আবু দাউদ ৫৯০ তাহকিক আলবানিঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি হুসায়ন বিন ঈসা সম্পর্কে ইমাম বোখারি বলেন, তিনি অপরিচিত। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭২৭ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি নেকীর আশায় সাত বছর আজান দেয় আল্লাহ তাঁকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ লিখে দেন। {৭২৫}

{৭২৫} তিরমিজি ২০৬ তাহকিক আলবানিঃ জইফ। তাখরিজ আলবানিঃ জামি সগীর ৫৩৭৮ জইফ, তিরমিজি ২০৬ জইফ, মিশকাত ৬৬৪ জইফ, জইফ তারগিব ১৬৭ জইফ, যঈফা ৮৫০ জইফ জিদ্দান। উক্ত হাদিসের রাবি ১. হাফয বিন উমার আল আযরাক আল বুরযুমী সম্পর্কে ইমামগন বলেন, তিনি অপরিচিত। ২. জাবীর সম্পর্কে শুবাহ ইবনিল হাজ্জাজ বলেন, তিনি হাদিসের ব্যাপারে সত্যবাদী। আহমাদ বিন হাম্বল ও ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি হাদিসের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য নয়। আল জাওযুজানী বলেন, তিনি মিথ্যুক।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭২৮ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি বারো বছর আজান দেয় তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আজান বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকী লেখা হয়। {৭২৬}

{৭২৬} সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ মিশকাত ৬৭৮, সহিহা ৪২, সহিহ তারগিব ২৪২।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬. অধ্যায়ঃ ইকামতের শব্দগুলো একবার করে বলা ।

৭২৯ আনাস বিন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

সাহাবীগণ নামাজের ওয়াক্তের সংকেতবাহী কোন পন্থা খুঁজছিলেন। তখন বিলাল [রাঃআঃ]-কে আযানের শব্দাবলী দুবার করে এবং ইকামতের শব্দাবলী একবার করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়। {৭২৭}

{৭২৭} বোখারি ৬০৩, ৬০৫-৭, ৩৪৫৭; মুসলিম ৩৭১-৩, তিরমিজি ১৯৩, নাসায়ি ৬২৭, আবু দাউদ ৫০৮, আহমাদ ১১৫৯০, ১২৫৫৯; দারিমি ১১৯৪-৯৫, মাজাহ ৭৩০। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৫২৫।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩০ আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

বিলাল [রাঃআঃ]-কে আযানের শব্দাবলী জোড়া সংখ্যায় এবং ইকামাতের শব্দাবলী বেজোড় সংখ্যায় বলার নির্দেশ দেয়া হয়। {৭২৮}

{৭২৮}বোখারি ৬০৩, ৬০৫-৭, ৩৪৫৭; মুসলিম ৩৭১-৩, তিরমিজি ১৯৩, নাসায়ি ৬২৭, আবু দাউদ ৫০৮, আহমাদ ১১৫৯০, ১২৫৫৯; দারিমি ১১৯৪-৯৫, মাজাহ ৭২৯। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহীহাহ্ ২৭১, সহিহ আবু দাউদ ৫২৫।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩১ সাদ বিন আয়েয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

বিলাল [রাঃআঃ] আযানের শব্দাবলী দুবার করে এবং ইকামতের শব্দাবলী একবার করে উচ্চারণ করিতেন। {৭২৯}

সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবি আব্দুর রহমান বিন সাদ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম বুখকারী বলেন, তার ব্যাপারে মন্তব্য রয়েছে। ২. সাদ বিন আম্মার সম্পর্কে ইবনিল কাত্তান বলেন, তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩২ আবু রাফি [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি বিলাল [রাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, তিনি রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উপস্থিতিতে আযানের প্রতিটি বাক্য দুবার করে এবং ইকামতের প্রতিটি বাক্য একবার করে বলেছেন। {৭৩০}

সহিহ লিগাইরিহী। উক্ত হাদিসের রাবি মুআম্মার বিন মুহাম্মাদ বিন উবায়দুল্লাহ বিন আবু রাফি সম্পর্কে ইমাম বোখারি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। আবু হাতিম আর-রাযী তাকে দুর্বল বলেছেন। হাম্মাদ বিন উবায়দুল্লাহ সম্পর্কে ইমাম বোখারি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ও অধিক মুনকার হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম দারাকুতনী তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ লিগাইরিহি

৭. অধ্যায়ঃ তুমি মাসজিদে থাকা অবস্থায় আজান হলে, সেখান থেকে বের হয়ে চলে যেও না ।

৭৩৩ আবুশ-শাসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমরা আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ]-এর সাথে মাসজিদে বসা ছিলাম। মুয়ায্‌যিন আজান দিলে পর এক ব্যক্তি মাসজিদ থেকে ঊঠে চলে যেতে থাকে। আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ]–এর দৃষ্টি তাকে অনুসরণ করিতে থাকে। অবশেষে সে মাসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যায়। আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] বলেন, লোকটি তো আবুল কাসিম [সাঃআঃ]-এর নাফরমানী করলো। {৭৩১}

{৭৩১} মুসলিম ৬৫১-২, তিরমিজি ২০৪, নাসায়ি ৬৮৩-৮৪, আবু দাউদ ৫৩৬, আহমাদ ১০১৯৪, ১০৫৫০; দারিমি ১২০৫। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ২৪৫।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩৪ উসমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মাসজিদে আজান হয়ে যাওয়ার পর যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে বেরিয়ে যাবে এবং তার ফিরে আসার ইচ্ছা নাই সে মুনাফিক। {৭৩২}

{৭৩২} সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহা ২৫১৮। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ বিন জাব্বার বিন উমার সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম বোখারি বলেন, তিনি একাধিক মুনকার হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। আয যাহলী বলেন, তিনি খুবই দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ও মুনকার। ২. ইবনি আবু ফারওয়াহ সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, আমার মতে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা ঠিক নয়। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ নন বরং মিথ্যুক। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। আমর বিন ফাল্লাস ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইমাম বোখারি বলেন, হাদিস বিশারদগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

Comments

Leave a Reply