নফল রোজা। যে দিনগুলোতে রোযা রাখা মুস্তাহাব

নফল রোজা। যে দিনগুলোতে রোযা রাখা মুস্তাহাব

নফল রোজা। যে দিনগুলোতে রোযা রাখা মুস্তাহাব >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় -১ঃ নফল রোযা ও তাঁর নিসিদ্ধকাল

পরিচ্ছেদ ০১. যে দিনগুলোতে রোজা রাখা মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ০২. শাওয়াল মাসের ছয় রোযার ফযীলত
পরিচ্ছেদ ০৩. আল্লাহর রাস্তায় রোযা রাখার ফযীলত
পরিচ্ছেদ ০৪. নাবী [সাঃআঃ]-এর নফল রোযা পালনের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ০৫. প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখার ফযীলত
পরিচ্ছেদ ০৬. স্বামীর উপস্থিতিতে স্ত্রীর নফল রোযা রাখার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৭. দুই ঈদে রোযা রাখার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৯. জুমার দিনে রোযা রাখার বিধান
পরিচ্ছেদ ১০. মধ্য শা‘বান হলে রোযা রাখার বিধান
পরিচ্ছেদ ১১. – শনিবার ও রবিবার রোযা রাখা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ১২. শনিবার এবং রবিবারে রোযা রাখার ব্যাপারে অনুমতি প্রদান
পরিচ্ছেদ ১৩. আরাফার দিবসে আরাফার মাঠে উপস্থিত থেকে রোযা রাখার বিধান
পরিচ্ছেদ ১৪. সারা বছর সাওম ব্রত পালনের বিধান

পরিচ্ছেদ ০১. যে দিনগুলোতে রোজা রাখা মুস্তাহাব

৬৮০ – আবূ কাতাদাহ আল-আনসারী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]`আরাফাহর দিনে রোজা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলিলেন-এর দ্বারা বিগত ও আগত এক বছরের গোনাহ [পাপ] মোচন হয়। “আশুরাহর দিনের রোযা পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলিলেন-বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়। সোমবারের দিনে রোযা পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলিলেন, এটা সেদিন যেদিন আমি জন্মেছি এবং নুবুওয়াত লাভ করেছি আর আমার উপর [কুরআন] অবতীর্ণ হয়েছে।” {৭২৫}

{৭২৫} মুসলিম ১১৬২, তিরমিজি ৬৭৬, নাসায়ী ২৩৮২, আবু দাউদ ২৪২৫, ইবনু মাজাহ ১৭১৩, আহমাদ ২২০২৪। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০২. শাওয়াল মাসের ছয় রোযার ফযীলত

৬৮১ – আবূ আইয়ূব আনসারী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- যে ব্যক্তি রমযানের রোযাব্রত পালনের পর শাওয়ালেরও ৬টি রোযা পালন করিল, [পুণ্যের দিক দিয়ে] পূর্ণ একটি বছর রোযা পালন করিল । {৭২৬}

{৭২৬} মুসলিম ১১৬৪, তিরমিয়ী ৭৫৯, আবূ দাউদ ২৪৩৩, ইবনু মাজাহ ১৭১৬, আহমাদ ২৩০২২। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৩. আল্লাহর রাস্তায় রোযা রাখার ফযীলত

৬৮২ -আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন-যে বান্দা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় একটি দিন রোজা পালন করিবে আল্লাহ তার [বিনিময়ে] তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন। শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। {৭২৭}

{৭২৭} বুখারী ২৮৪০, মুসলিম ১১৫৩, তিরমিয়ী ১৬২৩, নাসায়ী ২২৫১, ২২৫৩, ২২৫২, ইবনু মাজাহ ১৭১৭, আহমাদ ১০৮২৬, দারেমী ২৩৯৯। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৪. নাবী [সাঃআঃ]-এর নফল রোযা পালনের পদ্ধতি

৬৮৩ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] একাধারে [এত অধিক] রোযা পালন করিতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর রোযা পরিত্যাগ করবেন না। [আবার কখনো এত বেশি] রোযা পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর [নফল] রোযা পালন করবেন না। আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে রমাযান ব্যতীত কোন পুরা মাসের রোযা পালন করিতে দেখিনি এবং শা’বান মাসের চেয়ে কোন মাসে অধিক [নফল] রোযা পালন করিতে দেখিনি। শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। {৭২৮}

{৭২৮} বুখারী ৪৩, ১১৩২, ১১৫১, ১৯৬৯, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬১৬, ১৬৪২, আবু দাউদ ১২১৭, ১২৬৮, ১২৭০, ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২২৮, আহমাদ ২৩৫২৩, মুওয়াত্তা মালেক ৪২২, ৬৮৮। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৫. প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখার ফযীলত

৬৮৪ – আবূ যার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে প্রতি মাসে তিনটি [নফল] রোযা পালনের [ঐচ্ছিক] নির্দেশ দিলেন, [চান্দ্র মাসের] ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। -ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন।” {৭২৯}

{৭২৯} তিরমিয়ী ৭৬১, নাসায়ী ২৪২৪, হাদিসটি হাসান, তাওযিহুল আহকাম ৩/৫৪০ পৃঃ। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৬. স্বামীর উপস্থিতিতে স্ত্রীর নফল রোযা রাখার বিধান

৬৮৫ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন স্বামী উপস্থিত থাকিবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য রোযা পালন বৈধ নয়। -শব্দ বিন্যাস বুখারী। আবু দাউদে একথাও আছে, “রমাযানের রোযা ব্যতীত’’। {৭৩০}

{৭৩০} বুখারী ২০৬৬, ৫১৯২, ৫১৯৫, ৫২৬০, মুসলিম ১০২৬, আবু দাউদ ১৬৮৭, আহমাদ ২৭৪০৫। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৭. দুই ঈদে রোযা রাখার বিধান

৬৮৬ – আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

অবশ্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটো দিন রোজা পালন করিতে নিষেধ করিয়াছেন। -ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহার [কুরবানীর] দিন।

{৭৩১} বুখারী ৩৬৭, ১৯৯১, ২১৪৪, ২১৪৭, ৫৮২০, ৫৮২২, মুসলিম ৮২৭, নাসায়ী ৫৬৬, ৫৬৭, আবূ দাউদ ২৪১৭, ইবনু মাজাহ ২১৭০, ২৫৫৯, আহমাদ ১০৬২৯, ১০৭১০ | হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৯. জুমার দিনে রোযা রাখার বিধান

৬৮৯ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, রাতগুলোর মধ্যে থেকে শুধু জুমু‘আহর রাতকে কিয়ামের [তাহাজ্জুদের] জন্য নির্দিষ্ট কর না। আর দিনগুলোর মধ্যে শুধু জুমু‘আহর দিনটিকে রোযা পালনের জন্য নির্দিষ্ট কর না। হাঁ, তবে কেউ [পূর্ববর্তী অভ্যাসের কারণে এক নির্দিষ্ট তারিখে] রোযা পালন করে আসছে সেই তারিখটি যদি জুমুআহর দিনে পড়ে যায় তবে কোন দোষ নেই। {৭৩৪}

{৭৩৪} বুখারী ১৯৮৫, মুসলিম ১১৪৪, ইরমিযী ৭৪৩, আবু দাউদ ২৪২০, ইবনু মাজাহ ১৭২৩, আহমাদ ৭৩৪১, ৭৭৮০, ১০৫০৯। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৬৯০ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন শুধু জুম‘আর দিনে রোজা পালন না করে কিন্তু তার পূর্বে একদিন অথবা পরের দিন [যদি পালন করে তবে জুমার দিনে রোযা পালন করা যায় ]। {৭৩৫}

{৭৩৫} বুখারী ১৯৮৫, মুসলিম ১১৪৪, তিরমিজি ৭৪৩, আবু দাউদ ২৪২০, ইবনু মাজাহ ১৭২৩, আহমাদ ৭৩৪১, ৭৭৮০, ১০৫০৯। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১০. মধ্য শা‘বান হলে রোযা রাখার বিধান

৬৯১ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন-শা‘বানের অর্ধেক [১৫ দিনগত] হলে কোন নফল রোযা পালন করিবে না। -আহমাদ একে মুনকার হাদিসরূপে [অগ্রহণযোগ্য] আখ্যায়িত করিয়াছেন। {৭৩৬}

{৭৩৬} আবূ দাউদ ২৩৩৭, তিরমিজি ৭২৮, ইবনু মাজাহ ১৬৫১, আহমাদ ৯৪১৪, দারেমী ১৭৪০। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১. – শনিবার ও রবিবার রোযা রাখা নিষেধ

৬৯২ – আসসাম্মা বিনতু বুসর [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ফরয ব্যতীত তোমরা শনিবারে রোযা পালন করনা। যদি তোমরা খাবার মত কিছু না পাও তবে আঙ্গুরের ছিলকা বা গাছের ডালও চিবিয়ে নেবে। -এর রাবীগুলো নির্ভরযোগ্য তবে এটা মুযতারিব হাদিস। মালিক এ হাদিস গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিয়াছেন। আবূ দাউদ বলেন, হাদিসটি মান্সুখ [রহিত]। { ৭৩৭}

{৭৩৭} আবূ দাউদ ২৪২১, তিরমিজি ৭৪৪, ইবনু মাজাহ ১৭২৬, আহমাদ ২৬৫২৪, দারেমী ১৭৪৯। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ১২. শনিবার এবং রবিবারে রোযা রাখার ব্যাপারে অনুমতি প্রদান

৬৯৩ – উম্মু সালামাহ [রাযিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেসব দিনে রোযা পালন করিতেন তার মধ্যে শনি ও রবিবারেই বেশী রোযা পালন করিতেন। আর তিনি বলিতেন-এ দুটি দিন মুশরিকদের`ঈদ [খুশির] উদ্যাপনের দিন, আমি তাদের বিপরীত করিতে চাই। নাসায়ি হাদিস ইবনু খুযাইমাহ একে সহিহ বলেছেন আর শব্দ বিন্যাস তারই। {৭৩৮}

{৭৩৮} নাসায়ি হাদিস কুবরা ২/১৪৬, ইবনু খুযাইমাহ ২১৬৭। শাইখ আলবানী সহিহ ইবনু খুযাইমাহ [২১৬৮], তাখরিজ মিশকাতুল মাসাবীহ [২০১০] গ্রন্থে বলেছেন, এর সনদ দুর্বল। সিলসিলা যঈফা [১০৯৯] গ্রন্থেও এর সনদের দুর্বলতার কথা বলেছেন। জিলবাবুল মারআহ [১৭৯] গ্রন্থে বলেছেন, তাতে দূর্বলতা রয়েছে। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৩. আরাফার দিবসে আরাফার মাঠে উপস্থিত থেকে রোযা রাখার বিধান

৬৯৪ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]`আরাফাহর ময়দানে অবস্থানকালে`আরাফাহ দিবসের রোযা পালন করিতে নিষেধ করিয়াছেন। -ইবনু খুযাইমাহ ও হাকিম একে সহিহ বলেছেন, উকাইলী একে মুনকার [অগ্রহণযোগ্য] বলেছেন। {৭৩৯}

{৭৩৯} আবূ দাউদ ২৪৪০, ইবনু মাজাহ ১৭৩২।ইবনু উসাইমিন বুলুগুল মারামের শরাহ [৩/২৫৮] গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন। ইমাম নববী মাজমু’ [৬/৩৮০] গ্রন্থে বলেছেন, এর সনদে অপরিচিত রাবী রয়েছে। কিন্তু বিন বুলুগুল মারামের হাশিয়া [৪২৫] গ্রন্থে তার সানদকে উত্তম বলেছেন। শাইখ আলবানী যঈফুল জামি’ [৬০৬৯] গ্রন্থে দুর্বল বলেছেন। জঈফ তারগীব [৬১২], জঈফ আবূ দাউদ আবী [২৪৪০] দুর্বল বলেছেন। ইবনু উসাইমীন মারহুল মুমতি’ [৬/৪৭১]। ইবনু উসাইমিন মারহুল বুখারী লি ইবনি উসাইমিন [৪/৯৯] গ্রন্থে বলেছেন, এতে দুর্বলতা রয়েছে। ইবনু উসাইমিন শারহু বুলুগিল মারাম লি ইবনু উসাইমিন [৩/২৮৭] গ্রন্থে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৪. সারা বছর সাওম ব্রত পালনের বিধান

৬৯৫ – ‘আবদুল্লাহ্ বিন`উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি বিরতিহীন রোজা পালন করে সেটা রোযা নয়। {৭৪০}

{৭৪০} বুখারী ১১৩১, ১১৫২, ১১৫৩, ১৯৭৭, মুসলিম ১১৫৯, তিরমিযি ৭৭০, নাসায়ি হাদিস ১৬৩০, ২২৪৪, ২২৮৮, আবূ দাউদ ১২৮৮, ১২৮৯, ১২৯০, ইবনু মাজাহ ১২৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৩৪১, ৬৪৫৬, ৬৪৮০, দারেমী ২৪৮৬। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৬৯৬ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

মুসলিমে আবূ কাতাদাহ হতে বর্ণিত আছে এরূপ শব্দে ঃ ”সাওম ও ইফতার কোনটিই হয় না ” {৭৪১}

{৭৪১} মুসলিম ১১৬২, তিরমিযি ৭৬৭, নাসায়ি হাদিস ২২৮২, ২২৮৩, আবূ দাউদ ২৪২৫, ইবনু মাজাহ ১৭১৩, আহমাদ ২২০২৪, ২২০৪৪। নফল রোজা হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস


by

Comments

Leave a Reply