পর্ব-৩ঃ জানাজা (নিয়ম কানুন ও পদ্ধতি সমুহের বর্ণনা)

জানাজা (নিয়ম কানুন ও পদ্ধতি সমুহের বর্ণনা)

 জানাজা এর নিয়ম কানুন ও পদ্ধতি সমুহের বর্ণনা >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৩ঃ জানাজা

পরিচ্ছেদ ০১. মৃত্যুর কথা অধিক মাত্রায় স্বরণ করার নির্দেশ
পরিচ্ছেদ ০২. মৃত্যু কামনা করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৩. মু’মিনের মৃত্যুর সময় কপাল ঘেমে যায়
পরিচ্ছেদ ০৪. মরনাপন্ন ব্যক্তিকে [আরবি] লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মনে করিয়ে দেয়া শরীয়াতসম্মত
পরিচ্ছেদ ০৫. মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকটে সূরা ইয়াসিন পাঠের বিধান
পরিচ্ছেদ ০৬. – উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে মৃত ব্যক্তির জন্য যা করণীয়
পরিচ্ছেদ ০৭. মৃত ব্যক্তিকে কাফন দাফনের পূর্বে ঢেকে দেয়া মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ০৮. মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা বৈধ
পরিচ্ছেদ ০৯. মৃত ব্যক্তির ঋণ দ্রুত পরিশোধ করা আবশ্যক
পরিচ্ছেদ ১০. মৃত ব্যক্তি যখন মুহরিম হইবে তখন তাকে যা করা হইবে
পরিচ্ছেদ ১১. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় তাকে উলঙ্গ করার বিধান
পরিচ্ছেদ ১২. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার বিধান ও তার বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ১৩. কয়টি কাপড়ে পুরুষকে কাফন দেয়া যায়
পরিচ্ছেদ ১৪. কামীস [জামা] দিয়ে কাফন দেয়া বৈধ
পরিচ্ছেদ ১৫. সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ১৬. সুন্দর কাপড়ে কাফন দেয়া মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ১৭. দু’জনকে এক কাপড়ে কাফন দেয়া ও এক কবরে দাফন দেয়া বৈধ
পরিচ্ছেদ ১৮. কাফনের কাপড়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ১৯. স্বামী স্ত্রীকে গোসল করানো বৈধ
পরিচ্ছেদ ২০. দণ্ডে নিহত ব্যক্তির উপর জানাজা নামাজ পড়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ২১. আত্মহত্যাকারীর উপর জানাযার নামাজ পড়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ২২. কাফন-দাফনের পরে মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার নামাজ পড়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ২৩. মৃত্যুর সংবাদ প্রচার নিষেধ
পরিচ্ছেদ ২৪. অনুস্থিত ব্যক্তির জানাযার বিধান ও তার পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ২৫. জানাযাতে লোকসংখ্যা অধিক হওয়া মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ২৬. মহিলার জানাযার নামাজে ইমামের দাঁড়ানোর বিবরণ
পরিচ্ছেদ ২৭. মসজিদে জানাযার নামাজ বৈধ
পরিচ্ছেদ ২৮. জানাযার নামাজে তাকবীরের সংখ্যা
পরিচ্ছেদ ২৯. প্রথম তাকবীর পর [জানাযা সালাতে] সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক
পরিচ্ছেদ ৩০. জানাজা নামাজে যে দু’আগুলো পড়তে হয়
পরিচ্ছেদ ৩১. মৃত ব্যক্তির জন্য আন্তরিকতার সাথে দু‘আ করার নির্দেশ
পরিচ্ছেদ ৩২. জানাযার নামাজ দ্রুত করা শরীয়তসম্মত
পরিচ্ছেদ ৩৩. যে ব্যক্তি জানাযায় উপস্থিত হইবে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে
পরিচ্ছেদ ৩৪. জানাজার সাথে চলার পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ৩৫. জানাযায় মহিলাদের উপস্থিতি নিষেধ
পরিচ্ছেদ ৩৬. জানাযার জন্য দাঁড়ানোর বিধান
পরিচ্ছেদ ৩৭. মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ৩৮. মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে প্রবেশ করার সময় যা বলিতে হয়
পরিচ্ছেদ ৩৯. মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা হারাম
পরিচ্ছেদ ৪০. কবর ও দাফনের বিবরণ
পরিচ্ছেদ ৪১. কবর পাকা ও তার উপর ঘর নির্মাণ করা এবং সেখানে বসা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ৪২. কবরে মাটি দেয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ৪৩. মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পরে তার জন্য দু‘আ করা মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ৪৪. মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তালকিন দেয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ৪৫. পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ৪৬. নারীদের জন্য [অধিক মাত্রায়] কবর যিয়ারত করা হারাম
পরিচ্ছেদ ৪৭. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন করা হারাম
পরিচ্ছেদ ৪৮. মৃত ব্যক্তির জন্য আওয়াজ ছাড়া ক্রন্দন করা বৈধ
পরিচ্ছেদ ৪৯. রাত্রে দাফন করার বিধান
পরিচ্ছেদ ৫০. মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাবার পাঠানো মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ৫১. কবরস্থানে প্রবেশ করার সময় যা বলিতে হয়
পরিচ্ছেদ ৫২. মৃত ব্যক্তিকে গালি দেয়া নিষেধ

পরিচ্ছেদ ০১. মৃত্যুর কথা অধিক মাত্রায় স্বরণ করার নির্দেশ

৫৩৪ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন – সর্বপ্রকার ভোগ – বিলাসের কর্তনকারী মৃত্যুকে অধিক হারে স্বরণ কর। – ইবনু হিব্বান একে সহীহ্‌ বলেছেন। {৫৭১}

{৫৭১} তিরমিজি ২৩০৭, নাসায়ি হাদিস ১৮২৪, ইবনু মাজাহ ৪২৫৮, আহমাদ ৭৮৬৫। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০২. মৃত্যু কামনা করার বিধান

৫৩৫ – আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ তোমাদের কেউ দুঃখ কষ্টে পতিত হবার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করিতেই চায়, তা হলে সে যেন বলে ঃ

اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي

আল্লাহুম্মা আহইয়ানি মা কানাতিল হায়াতু খইরান লি ওয়া তাওয়াক্কানি ইজা কনাতিল ওয়া ফাতু খয়রান লি

হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যানকর হয়। {৫৭২}

{৫৭২} বুখারী ৫৬৭১, ৬৩৫১, ৭২৩৩, মুসলিম ২৬৮০, তিরমিজি ৯৭১, নাসায়ি হাদিস ১৮২০, ১৮২১, আবূ দাউদ ৩১০৮, মাজাহ ৪২৬৫, আহমাদ ১১৫৬৮। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৩. মু’মিনের মৃত্যুর সময় কপাল ঘেমে যায়

৫৩৬ – বুরাইদাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন- মু’মিনের মৃত্যু ঘটে কপালের ঘামের সাথে। – ইবনু হিব্বান একে সহীহ্‌ বলেছেন। {৫৭৩}

{৫৭৩} তিরমিজি ৯৮২, নাসায়ি হাদিস ১৮২৮, ইবনু মাজাহ ১৪৫২, আহমাদ ২২৫১৩। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৪. মরনাপন্ন ব্যক্তিকে [আরবি] লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মনে করিয়ে দেয়া শরীয়াতসম্মত

৫৩৭ – আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তারা বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিকে

 لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ

[আল্লাহ্‌ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই] কালিমাহর তাল্‌কীন [স্মরণ করিয়ে] দাও। {৫৭৪}

{৫৭৪} মুসলিম ৯১৫, তিরমিজি ৯৭৬, নাসায়ি হাদিস ১৮২৬, অর্থাৎ ঃ তোমরা মুমূর্ষু ব্যক্তির সামনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলিতে থাক যাতে করে এটাই তার জীবনের শেষ কথা হয়। আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, [আরবী] মৃত্যুর সময় যার শেষ কথা হইবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে কোন একদিন জান্নাতে প্রবেশ করিবে যদিও তার এর পূর্বে যাই হোক না কেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৫. মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকটে সূরা ইয়াসিন পাঠের বিধান

৫৩৮ – মা‘কাল বিন ইয়াসির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তিদের নিকট সূরা`ইয়াসীন’ পড়। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {৫৭৫}

{৫৭৫} আবূ দাউদ ৩১২১, ইবনু মাজাহ ১৪৪৮, আহমাদ ১৯৭৮৯, ইবনু হিব্বান হাদিসটিকে সহিহ বললেও ইমাম সুয়ূত্বী জামেউস সগীর [১৩৪৪] গ্রন্থে একে হাসান বলেছেন। তবে বিন বাযের ফাতাওয়া নূর আলাদ দারব [১৪/২৬১] গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন। আলবানী যঈফুল জামে [১০৭২] গ্রন্থেও একে দুর্বল বলেছেন। ইবনু উসাইমীন আশ শারহুল মুমতি [৫/২৪৯] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে মতানৈক্য ও সমালোচনা রয়েছে। ইবনুল কাত্তান আল অহ্‌ম ওয়াল ইহাম [৫/৪৯] গ্রন্থে বলেন, এটি বিশুদ্ধ নয়। ইমাম নববী আল আযকার [১৯২] গ্রন্থে বলেন, এর সনদ দুর্বল এতে দুজন মাজহূল রাবী রয়েছে। আলবানী আবূ দাউদ [৩১২১], ইরওয়াউল গালীল [৬৮৮], তারগীব [৮৮৪], যঈফা [৫৮৬১] গ্রন্থসমূহে হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু উসাইমীন মাজমূ ফাতাওয়া [৭৪/১৭] গ্রন্থেও হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম নাবুবী মাজমু’ [৫/১১০] গ্রন্থে বলেন, তার ইসনাদ দুর্বল, তাতে দু‘জন মাজহুল ব্যক্তি রয়েছে। আলবানী তাখরীজু মিশকাতিল মাসাবীহ [৫৮৯২] গ্রন্থে তার শেষের অতিরিক্ত অংশকে হাসান বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৬. – উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে মৃত ব্যক্তির জন্য যা করণীয়

৫৩৯ – উম্মু সালামাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবূ সালামাহর নিকটে এসে দেখলেন যে, তাহাঁর [মৃত্যুর পর] চক্ষুদ্বয় উন্মুক্ত রয়েছে, তিনি তা বন্ধ করে দিলেন। তারপর বলিলেন-যখন রূহ`কবয’ করে নেয়া হয় তখন চোখ রূহ এর অনুগামী হয়। তার পরিবারের কতক লোক তখন চীৎকার করে কেঁদে উঠল; নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা নিজের জন্য যা কল্যাণকর, শুধু সেটাই চাও। কেননা তোমরা যা বল তার জন্য ফেরেশতাকুল [এ সময়] আমীন আমীন বলিতে থাকেন। তারপর নাবী [সাঃআঃ] এই দু‘আ করিলেন-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي سَلَمَةَ، وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ

আল্লা-হুম্মাগফির লি আবী সালামাহ অরফা’ দারাজাতাহু ফিল মাহদিইয়্যীন, ওয়াফসাহ লাহু ফী ক্বাবরিহী অ নাউওয়িরলাহু ফীহ ওয়াখলুফহু ফী আক্বিবিহী

হে আল্লাহ্‌! আবূ সালামাকে ক্ষমা কর, হিদায়াত প্রাপ্তদের মধ্যে তাহাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দাও, তাহাঁর কবরকে সম্প্রসারিত কর, তাহাঁর কবরকে আলোকোজ্জ্বল কর এবং তার পরবর্তীতে তুমি তার পরিবারে দায়িত্বশীল দান কর। {৫৭৬}

{৫৭৬} মুসলিম ৯২০, আবূ দাউদ ২১১৮, ইবনু মাজাহ ১৪৫৪, আহমাদ ২৬০০৩. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৭. মৃত ব্যক্তিকে কাফন দাফনের পূর্বে ঢেকে দেয়া মুস্তাহাব

৫৪০ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] ইনতিকাল করলে তাকে হিবারাহ নামক চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। {৫৭৭}

{৫৭৭} বুখারী ৫৮১৪, নাসায়ি হাদিস ১৮৯৯, আবূ দাউদ ৩১২০, আহমাদ ২৪২৪২। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৮. মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা বৈধ

৫৪১ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

আবূ বাক্‌র সিদ্দীক [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ] –কে তাহাঁর মৃত্যুর পর [কপাল] চুম্বন করেন। {৫৭৮}

{৫৭৮} বুখারী ১২৪২,৩৬৭০,৪৪৫৪, মুসলিম ২২১৩, নাসায়ি হাদিস ১৮২৯, ১৮৪০, ১৮৪২, ইবনু মাজাহ ১৬২৭, আহমাদ ২৪২৪২,২৭৮০৭। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৯. মৃত ব্যক্তির ঋণ দ্রুত পরিশোধ করা আবশ্যক

৫৪২ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ] হতে বর্ণনা করিয়াছেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন- মু’মিনের নফস্ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যে পর্যন্ত না তার কৃত ঋণ পরিশোধ করা হয়। – আহমাদ ও তিরমিজি; তিরমিজি একে হাসান বলেছেন। {৫৭৯}

{৫৭৯} তিরমিজি ১০৭৯,১০৭৮, ইবনু মাজাহ ২৪১৩, আহমাদ ৯৩৮৭, ৯৮০০, দারেমী ২৫৯১।হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১০. মৃত ব্যক্তি যখন মুহরিম হইবে তখন তাকে যা করা হইবে

৫৪৩ – ইবনু`আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

যে ব্যক্তি উট হতে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে তার সম্পর্কে নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও আর দু’খানা কাপড়ে তাকে দাফন কর। {৫৮০}

{৫৮০} বুখারী ১২৬৫,১২৬৬,১২৬৭, মুসলিম ১২০৬, তিরমিজি ৯৫১, নাসায়ি হাদিস ১৯০৪,২৮৫৪,২৮৫৫, আবূ দাউদ ৩২২৮,২২৪০, ইবনু মাজাহ ২০৮৪, আহমাদ ১৮৫৩,১৯১৭,২৫৮৬, দারেমী ১৮৫২। বুখারী এবং মুসলিমের বর্ণনায় পূর্ণাঙ্গ হাদিসটি হচ্ছে, তাঁকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তাহাঁর মস্তক আবৃত করিবে না । কেননা, কিয়ামাতের দিবসে সে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উত্থিত হইবে। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় তাকে উলঙ্গ করার বিধান

৫৪৪ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

যখন তারা [সহাবাগণ] নাবী [সাঃআঃ]-কে গোসল দেয়ার মনস্থ করেন তখন তাঁরা বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমরা জানিনা আমরা কি করব। আমরা অন্যান্য মৃতের ন্যায় তাহাঁর কাপড়-চোপড় খুলে নিয়ে তাহাঁর গোসল সম্পন্ন করব, নাকি না খুলেই গোসল দেব? [এটি দীর্ঘ হাদিসের খণ্ডাংশ]। {৫৮১}

{৫৮১} আবূ দাউদ ৩১৪১, আহমাদ ২৫৭৭৪. শায়খ আলবানী আহকামুল জানায়েয [৬৬] গ্রন্থে সহিহ বলেছেন। আবূ দাঊদে [৩১৪১] হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। ইমাম আলবানী সহিহ আবূ দাঊদের [৩১৪১] নং হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ১২. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার বিধান ও তার বর্ণনা

৫৪৫ – উম্মু আতিয়্যাহ্ আনসারী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কন্যা যায়নাব [রাঃআঃ] ইনতিকাল করলে তিনি [সাঃআঃ] আমাদের নিকট আসলেন- আমরা তখন তাহাঁর কন্যাকে গোসল দিচ্ছিলাম। তিনি বলিলেন ঃ তোমরা তাকে তিনবার বা পাঁচবার বা প্রয়োজন মনে করলে তার চেয়ে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পুর বা [তিনি বলেছেন] কিছু কর্পুর ব্যবহার করিবে। তোমরা শেষ করে আমাকে খবর দাও। আমরা শেষ করার পর তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাহাঁর চাদরখানি আমাদেরকে দিয়ে বলিলেন ঃ এটি তাহাঁর শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে দাও। ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছে- ডান দিক থেকে উযুর অঙ্গগুলো হতে গোসল শুরু কর। বুখারীতে আছে- আমরা তাহাঁর চুলগুলোতে তিনটি বেণী করে গেঁথে দিয়ে পেছনের দিকে রেখে দিলাম। {৫৮২}

{৫৮২} বুখারী ১৬৭, ১২৫৩, ১২৫৪, ১২৫৫, মুসলিম ৯৩৯, ৯২৯, তিরমিজি ৯৯০, নাসায়ি হাদিস ১৮৮৪, ২২৮৩, আবূ দাউদ ২১৪৫, ইবনু মাজাহ ১৪৫৯, আহমাদ ২৬৭৫২। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৩. কয়টি কাপড়ে পুরুষকে কাফন দেয়া যায়

৫৪৬ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে তিনটি ইয়ামানী সাহুলী সাদা সুতী বস্ত্র দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না । {৫৮৩}

{৫৮৩} বুখারী ১২৬৪, ১২৭১, ১২৭৩, ১২৭২, মুসলিম ৯৪১, তিরমিজি ৯৯৬, নাসায়ি হাদিস ১৮৯৭, ১৮৯৯, আবূ দাউদ ২১৫১, ইবনু মাজাহ ১৪৩৯, আহমাদ ২৩৬০২, ২৪১০৪, ২৪৩৪৮, মুওয়াত্তা মালেক ৫২৮। [আরবী] শব্দটি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, শব্দটির [আরবী] বর্ণে পেশ দ্বারা পড়লে অর্থ হইবে ঃ ইয়ামানের নগরী। আযহারী বলেছেন ঃ [আরবী] বর্ণে যবর দিলে নগরীর নাম আর পেশ দিলে পোশাক-পরিচ্ছদ অর্থ হইবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, পেশ দিলে নগরীর নাম আর যবর দিলে ধোপার অর্থ দিবে। [আরবী] শব্দের অর্থ [আরবী] তথা তুলা, সুতা। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৪. কামীস [জামা] দিয়ে কাফন দেয়া বৈধ

৫৪৭ – ইবনু`উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই [মুনাফিক সর্দার]-এর মৃত্যু হলে তার পুত্র [যিনি সাহাবী ছিলেন] নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলিলেন, আপনার জামাটি আমাকে দান করুন। আমি সেটা দিয়ে আমার পিতার কাফন পরাতে ইচ্ছা করি। ফলে নাবী [সাঃআঃ] নিজের জামাটি তাঁকে দিয়ে দিলেন। {৫৮৪}

{৫৮৪} বুখারী ১২৬৯, ৪৬৭০, ৪৬৭২, ৫৭৯৬, মুসলিম ২৪০০, ২৭৭৪, তিরমিজি ৩০৯৮, নাসায়ি হাদিস ১৯০০, ইবনু মাজাহ ১৫৩২, আহমাদ ৪৬৬৬। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৫. সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া মুস্তাহাব

৫৪৮ – ইবনু`আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান কর কেননা সেটাই তোমাদের কাপড়গুলোর মধ্যে উত্তম এবং তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের এতেই কাফন দাও।

-তিরমিজি এটিকে সহিহ বলেছেন। {৫৮৫}, {৫৮৫} ইবনু মাজাহ ১৪৭২, তিরমিজি ৯৯৪, আবূ দাউদ ৪০৬১, আহমাদ ২২২০, ২০২৭, ২৪১৬। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৬. সুন্দর কাপড়ে কাফন দেয়া মুস্তাহাব

৫৪৯ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন তার ভাইকে কাফন দেবে, তখন যেন তাকে ভাল কাফনই দেয়। {৫৮৬}

{৫৮৬} মুসলিম ৯৪৩, নাসায়ি হাদিস ১৮৯৫, ২০২৪, আবূ দাউদ ২১৪৮,ইবনু মাজাহ ১৫২১, আহমাদ ১৩৭৩২, ১৪১১৫, ১৪২৫২। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৭. দু’জনকে এক কাপড়ে কাফন দেয়া ও এক কবরে দাফন দেয়া বৈধ

৫৫০ – জাবির ইব্‌নু`আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] উহুদের শহীদগণের দু’ দু’ জনকে একই কাপড়ে [ক্ববরে] একত্র করিতেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করিতেন, তাঁদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত? দু’জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে তাঁকে ক্ববরে পূর্বে রাখতেন। তাঁদেরকে গোসল দেয়া হয়নি ও তিনি তাঁদের জানাজা নামাজও আদায় করেননি। {৫৮৭}

{৫৮৭} বুখারী ১৩৪৩, ১৩৪৫, ১৩৪৬, ১৩৪৭, তিরমিজি ১০২৬, নাসায়ি হাদিস ১৯৫৫, ২০২১, আবূ দাউদ ৩১২৮, ইবনু মাজাহ ১৫১৪, আহমাদ ১৩৭৭৭। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৮. কাফনের কাপড়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ

৫৫১ – ‘আলী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা কাফনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না [অধিক মূল্যে ক্রয় করিবে না]। কেননা তা সহসাই ছিনিয়ে নেয়া হইবে। {৫৮৮}

{৫৮৮} আবূ দাউদ ৩১৫৪. ইমাম যাহাবী আল মুহাযযাব [৩/১৩৩৬] গ্রন্থে বলেন, এর সানাদে ইনকিতা’ রয়েছে। ইবনু মুলক্বিন তুহফাতুল মুহতাজ [২/১৮] গ্রন্থে সহিহ অথবা হাসান বলেছেন। [যেমনঃ মুক্বদ্দামাতে তার উপর শর্ত করিয়াছেন। মুহাম্মাদ জারুল্লাহ আস-সা‘দী নাওয়াফিউল উতরহ [৪৫৭] গ্রন্থে হাসান বলেছেন। আলবানী যঈফুল জামে [৬২৪৭] গ্রন্থে জঈফ বলেছেন। আবূ দাউদ সুনানু আবূ দাউদে [৩১৫৪] সাকাতা আনহু বলেছেন। কিন্তু তিনি তার রিসালাতে মাক্কাহ বাসীর ব্যাপারে বলেছেন প্রত্যেক সাকাতা আনহুই স্বালিহ। আলবানী জঈফ আবূ দাউদে [৩১৫৪] একে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৯. স্বামী স্ত্রীকে গোসল করানো বৈধ

৫৫২ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলেন, তুমি আমার পূর্বে মারা গেলে আমি তোমাকে গোসল দিব। [এটি দীর্ঘ হাদিসের খণ্ডাংশ]। -ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন। {৫৮৯}

{৫৮৯} সহীহঃ আহমাদ [৬/২২৮], ইবনু মাজাহ ১৪৬৫। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৫৩ – আসমা বিনতু`উমাইশ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

ফাতিমা [রাঃআঃ]`আলী [রাঃআঃ]-কে তার গোসল দেয়ার জন্য ওয়াসিয়াত করেছিলেন। {৫৯০}

{৫৯০} হাসান। দারাকুতনী ২/৭৯/১২। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ২০. দণ্ডে নিহত ব্যক্তির উপর জানাজা নামাজ পড়ার বিধান

৫৫৪ – বুরাইদাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

গামিদিয়াহ [রমণীর] ঘটনায় বর্ণিত। নাবী [সাঃআঃ] তাকে ব্যভিচারের কারণে রজম [প্রস্তরাঘাতে হত্যা] করার নির্দেশ দিলেন। তিনি [রাবী] বলেন, তারপর তাহাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তার জানাজা নামাজ আদায় করা হয় ও তাকে দাফন করা হয়। {৫৯১}

{৫৯১} মুসলিম ১৬৯৫, আবু দাউদ ৪৪৩৩, ৪৪৩৪, আহমাদ ২২৪৩৩, ২২৪৪০, দারেমী ২২২৪. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২১. আত্মহত্যাকারীর উপর জানাযার নামাজ পড়ার বিধান

৫৫৫ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-কে এমন একটি মাইয়্যিতের নিকট আনা হল যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার উপর নামাজ আদায় করেননি। {৫৯২}

{৫৯২} [আরবী] মুসলিম ৯৭৮, তিরমিজি ১০৬৮, নাসায়ি হাদিস ১৯৬৪, ইবনু মাজাহ ১৫২৬, আহমাদ ২০২৯২, ২০২২৭। শব্দটি [আরবী] এর বহুবচন। এর অর্থঃ বর্শা। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২২. কাফন-দাফনের পরে মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার নামাজ পড়ার বিধান

৫৫৬ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

যে মহিলাটি মসজিদ ঝাড়ু দিত তার সম্পর্কে, নবী [সাঃআঃ] তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, সাহাবীগণ বলিলেন, সে মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? সহাবীগণ যেন তার ব্যাপারে তেমন কোন গুরুত্ব দেননি। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। তারা কবরটি দেখিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি তার কবরের নিকট গেলেন এবং তার জানাজা নামাজ আদায় করিলেন।

মুসলিম এ কথাগুলো বৃদ্ধি করিয়াছেন ঃ তারপর তিনি বলিলেন-কবরগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তায়ালা আমার নামাজের কারণে তাদের কবরগুলোকে আলোকোজ্জ্বল করে দেন। {৫৯৩}{৫৯৩} বুখারী ৪৫৮, ৪৬০, ১২২৭, মুসলিম ৯৫৬, আবু দাউদ ২২০৩, ইবনু মাজাহ ১৫২৭, আহমাদ ৮৪২০, ৮৮০৪, ৯০১৯। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৩. মৃত্যুর সংবাদ প্রচার নিষেধ

৫৫৭ – হুযায়ফাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] মৃত্যু সংবাদ প্রচারে নিষেধ করিতেন। – আহমাদ, তিরমিজি, তিরমিজি একে হাসান বলেছেন। {৫৯৪}

{৫৯৪} তিরমিজি ৯৮৬, ইবনু মাজাহ ১৪৭৭, আহমাদ ২২৯৪৫. হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৪. অনুস্থিত ব্যক্তির জানাযার বিধান ও তার পদ্ধতি

৫৫৮ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাজাশী যেদিন মারা যান সেদিন-ই আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাহাঁর মৃত্যুর খবর দেন এবং জানাযার স্থানে গিয়ে লোকেদের কাতারবন্দী করে চার তাক্বীর আদায় করিলেন। {৫৯৫}

{৫৯৫} বুখারী ১২১৮, ১২২৮, ১২২৩, ১২৪৫ মুসলিম ৯৫১, তিরমিজি ১০২২, নাসায়ি হাদিস ১৮৭৯. ১৯৭২, ১৯৮০, আবূ দাউদ ২২০৪, ইবনু মাজাহ ১৫৩৪, আহমাদ ৭১০৭,৭২৪১,৭৭২৮, মুওয়াত্তা মালেক ৫৩০। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৫. জানাযাতে লোকসংখ্যা অধিক হওয়া মুস্তাহাব

৫৫৯ – ইবনু`আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ যদি কোন মুসলিম মারা যায় আর আল্লাহর সাথে শিরক্ করেনি এমন চল্লিশ জন মুসলিম যদি তার জানাজা [নামাজের জন্য] দণ্ডায়মান হয়ে তাহাঁর জন্য শাফা‘আত করে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা গ্রহণ করেন। {৫৯৬}

{৫৯৬} মুসলিম ৯৪৮, আহমাদ ২৫০৫। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৬. মহিলার জানাযার নামাজে ইমামের দাঁড়ানোর বিবরণ

৫৬০ -সামুরাহ ইব্‌নু জুন্‌দাব [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর পশ্চাতে আমি এমন এক স্ত্রীলোকের জানাযার নামাজ আদায় করেছিলাম, যিনি নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। তিনি তার [স্ত্রীলোকটির] মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। {৫৯৭}

{৫৯৭} বুখারী ২৩২, ১২৩২, মুসলিম ৯৬৪, তিরমিজি ১০২৫, নাসায়ি হাদিস ৩৯৩, ১৯৭৯, আবূ দাউদ ৩১৯৫, ইবনু মাজাহ ১৪৯৩, আহমাদ ১৯৬৪৯, ১৯৭০১। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৭. মসজিদে জানাযার নামাজ বৈধ

৫৬১ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! নাবী [সাঃআঃ] বায়যাআর পুত্রদ্বয়ের [সাহল ও সুহাইল-এর] নামাজ মাসজিদে আদায় করেছিলেন। {৫৯৮}

{৫৯৮} মুসলিম ৯৭৩, তিরমিজি ১০২৩, নাসায়ি হাদিস ১৯৬৭, ১৯৬৮, আবূ দাউদ ৩১৮৯, ৩১৯০, ইবনু মাজাহ ১৫১৮, আহমাদ ২৩৯৭৭, মুওয়াত্তা মালেক ৫২৮। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৮. জানাযার নামাজে তাকবীরের সংখ্যা

৫৬২ – আবদুর রহমান বিন আবূ লাইলা [রহ.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরকাম [রাঃআঃ] আমাদের জানাজা নামাজে চার তাকবীর বলিতেন। তিনি এক জানাযার নামাজে পাঁচ তাকবীর বলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাঁচ তাকবীরও বলেছেন। {৫৯৯}

{৫৯৯} মুসলিম ৯৫৭, তিরমিজি ১০২৩, ১৯৮২, নাসায়ি হাদিস ১৯৮২, আবূ দাউদ ৩১৯৭, ইবনু মাজাহ ১৫০৫, আহমাদ ১৮৭৮৬, ১৮৮১৩, ১৮৮২৫। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৬৩ – ‘আলী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

আলী [রাঃআঃ] সাহল ইবনু হুনায়ফের [জানাযার নামাজে] ছয় তাকবীর উচ্চারণ করিলেন এবং বলিলেন, তিনি [সাহল ইব্‌নু হুনায়ফ] ছিলেন একজন বাদ্‌রী সাহাবী। সা‘ঈদ বিন মানসুর এটি বর্ণনা করিয়াছেন আর এর মূল বক্তব্য বুখারীতে রয়েছে। {৬০০}

{৬০০} বুখারী ৪০০৪। বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে, ইব্‌নু মা‘কিল [রাঃআঃ] হতে বর্ণিত যে [তিনি বলেছেন],`আলী [রাঃআঃ] সাহল ইব্‌নু হুনায়ফের [জানাজা নামাজে] তাকবীর উচ্চারণ করিলেন এবং বলিলেন, তিনি [সাহ ইব্‌নু হুনায়ফ] বাদ্‌র যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৬৪ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের জানাজা চার তকবীর বলিতেন এবং প্রথম তাকবীরের [পর] ফাতিহাতিল কিতাব [সূরা ফাতিহা] পাঠ করিতেন। শাফি‘ঈ দুর্বল সানাদে এটি বর্ণনা করিয়াছেন। {৬০১}

{৬০১} ইবনু হাজার আস কলানী বুলুগুল মারামে [১৫৭] এর সানাদকে দুর্বল বলেছেন। বিন বায বুলুগুল মারামের হাশিয়ায় [৩৫৫] বলেন, এর সানাদে রয়েছেন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উকাইল যিনি দুর্বল। আর তদাপেক্ষাও দুর্বল রাবী হচ্ছেন ইবরাহীম বিন মুহাম্মাদ যিনি ইমাম শাফেযীর উসতাদ। আর তিনি অধিকাংশের নিকট দুর্বল। ইবনু উসাইমীন বুলুগুল মারামের শারাহ [২/৫৬৪] গ্রন্থে বলেন, এটি দুর্বল তবে কিয়াস ও অর্থ একে শক্তিশালী করে। আলবানী ইরওয়াউল গালীল [৭৩৪] গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। ইমাম সনআনী সুবুলুস সালাম [২/১৬৫] গ্রন্থে বলেন, এটি দুর্বল তবে এর শাহেদ হাদিস রয়েছে। শাওকানী তুহফাতুয যাকিরীন [৩৭১] গ্রন্থে মুতাররফ রয়েছে তিনি জঈফ। কিন্তু বায়হাকী শক্তিশালী বলেছেন। রুবায়ী ফাতহুল গাফ্‌ফার [৭৩২/২] গ্রন্থে বলেন তার সানাদ দুর্বল। আলবানী আহকামুল জানায়িয [১৫৫] গ্রন্থে বলেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহিহ। বায়হাকী সুনানুল কুবরা [৪/৩৯] গ্রন্থে বলেন, এ বর্ণনাটি শক্তিশালী। মুসলিম সহিহ মুসলিম [৪৫১] গ্রন্থে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ জাল হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৯. প্রথম তাকবীর পর [জানাযা সালাতে] সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক

৫৬৫ – ত্বলহাহ্ ইবনু`আবদুল্লাহ ইব্‌নু`আওফ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু`আব্বাস [রাঃআঃ] এর পিছনে জানাযার নামাজ আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করিলেন এবং [নামাজ শেষে] বলিলেন, [আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করলাম] যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটা সুন্নাত। {৬০২}

{৬০২} বুখারী ১৩৩৫, তিরমিজি ১০২৪, ১০২৬, ১০২৭, নাসায়ি হাদিস ১৯৮৭, আবূ দাউদ ২১৯৮। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩০. জানাজা নামাজে যে দু’আগুলো পড়তে হয়

৫৬৬ – ‘আউফ্ বিন মালিক [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি জানাজা নামাজ আদায় করছিলেন; আমি তাহাঁর এ দুআটি মুখস্থ করে নিলাম।

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَقِهِ فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَعَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম-মাগফির লাহূ ওয়ারহামহু, ওয়া`আফিহি, ওয়া’ফু আন্‌হু, ওয়া আক্‌রিম নুযুলাহূ, ওয়া ওয়াস্‌সি মাদ-খালাহূ, ওয়াগসিলহু বিলমা’ই ওয়াস সাল্‌জি ওয়াল বারাদি, ওয়া নাক্কিহী মিনাল খাতাইয়া কামা নাক্কায়তাস সাউবাল আবইয়াযা মিনাদ দানাসি, ওয়া আবদিলহু দারান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খায়রান মিন আহলিহী, ওয়া যাওজান খায়রান মিন যাওজিহি, ওয়া আদ্‌খিলহুল জান্নাতা, ওয়াকিহী ফিতনাতাল কাবরি ওয়া`আযাবান নার}
অর্থঃ ইয়া আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর করুণা কর, তাকে শক্তি দাও এবং তাকে রেহাই দাও। তার উপর সহৃদয় হও এবং তার প্রবেশদ্বার প্রশস্ত করে দাও এবং তাকে পানি, বরফ ও তুষার দ্বারা ধৌত করে দাও। তার গুনাহসমূহ পরিস্কার করে দাও, সাদা কাপড় যে ভাবে দাগমুক্ত করে ধৌত করা হয়। সে যে ধরণের আবাসের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে তাকে উত্তম আবাস দাও এবং যে ধরণের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে উত্তম পরিবার দাও এবং তার স্ত্রী হতে উত্তম স্ত্রী দাও। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং কবরের ফিতনা হতে আর জাহা্ন্নামের আগুন হতে তাকে রক্ষা কর। {৬০৩}

{৬০৩} মুসলিম ৯৬৩, তিরমিজি ১০২৫, নাসায়ি হাদিস ১৯৮৩, ১৯৮৪, মুসলিমের বর্ণনায় আরো রয়েছে, আওফ [রাঃআঃ] বলেনঃ {আরবী} মৃত ব্যক্তির উপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উক্ত দু‘য়ার কারণে আমি কামনা করেছিলাম যদি আমি সেই মৃত ব্যক্তিটি হতাম!. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৬৭ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জানাযার নামাজে বলিতেন ঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيمَانِ، اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَهُ

উচ্চারণ ঃ আল্লাহুম-মাগফির লিহাইয়্যিনা, ওয়া মাইয়্যিতিনা, ওয়া শাহিদিনা, ওয়া গায়িবিনা, ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবী-রিনা, ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়ায়তাহূ মিন্না ফা আহইহী`আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ্‌ফায়তাহূ মিন্না ফাতাওয়াফ্‌ফাহু`আলাল ঈমানি, আল্লাহুম্মা লা তাহ্‌রিমনা আজরাহূ ওয়ালা তুযিল্লানা বা’দাহু্।

অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখো তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো এবং আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দান করো, তাকে ঈমানের সাথে মৃত্যুদান করো। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এর প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করো না এবং এর পরে আমাদের পথভ্রষ্ট করো না।” {৬০৪}

{৬০৪} আবূ দাউদ ৩২০১, ৩২০০, তিরমিজি ১০২৪, ইবনু মাজাহ ১৪৯৮, নাসায়ি হাদিস ১৯৮৬। হাদিসটি মূলতঃ মুসলিমে নেই। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩১. মৃত ব্যক্তির জন্য আন্তরিকতার সাথে দু‘আ করার নির্দেশ

৫৬৮ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, যখন তোমরা কোন মৃতের জন্য নামাজ আদায় করিবে-তখন তার জন্য আন্তুরিকভাবে দু‘আ কর। আবূ দাউদ। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {৬০৫}

{৬০৫} আবূ দাউদ ৩১৯৯, ইবনু মাজাহ ১৪৯৭। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩২. জানাযার নামাজ দ্রুত করা শরীয়তসম্মত

৫৬৯ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। কেননা, সে যদি পুন্যবান হয়, তবে এটা উত্তম, যার দিকে তোমরা তাকে এগিয়ে দিচ্ছ, আর যদি সে অন্য কিছু হয়, তবে সে একটি আপদ, যাকে তোমরা তোমাদের ঘাড় হতে জলদি নামিয়ে ফেলছ। {৬০৬}

{৬০৬} বুখারী ১৩১৫, মুসলিম ৯৪৪, তিরমিজি ১০১৫, নাসায়ি হাদিস ১৯১০, ১৯১১, আবূ দাউদ ২১৮১, ইবনু মাজাহ ১৪৭৭, আহমাদ ২৭৩০৪, ৭৭১৪, মুওয়াত্তা মালেক ৫৭৪। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৩. যে ব্যক্তি জানাযায় উপস্থিত হইবে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে

৫৭০ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকিবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকিবে তা জন্য দু’ কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল দু’ কীরাত কী? তিনি বলিলেন, দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য [সাওয়াব]। মুসলিমে আছে- “কবরে রাখা পর্যন্ত হাজির থাকল।”

বুখারীতে আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ]-এর বর্ণনায় আছে-যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও পুণ্যের আশায় কোন মুসলমানের জানাযার অনুগমন করে এবং তার নামাজ-ই-জানাযা আদায় ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, সে দু’ কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কীরাত হল উহুদ পর্বতের মতো। {৬০৭}

{৬০৭} বুখারী ৪৭, ১২২৪, ১৩২৫, মুসলিম ৯৪৫, তিরমিজি ১০৪০, নাসায়ি হাদিস ১৯৯৪, ১৯৯৫. ১৯৯৬, আবূ দাউদ ২১৬৮, ইবনু মাজাহ ১৫২৯, আহমাদ ৪৪২৯, ৭১৪৮, বুখারীর বর্ণনায় পূর্ণ হাদিসটি হচ্ছে [আরবি] আর যে ব্যক্তি শুধু তার জানাযা আদায় করে, তারপর দাফন সম্পন্ন হবার পূর্বেই চলে আসে, সে এক কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৪. জানাজার সাথে চলার পদ্ধতি

৫৭১ – সালিম তাহাঁর পিতা`আবদুল্লাহ্ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ], আবূ বাক্‌র ও`উমার [রাঃআঃ]-কে লাশের আগে আগে হেঁটে যেতে দেখেছেন। পাঁচজনে [আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ি হাদিস, তিরমিজি, ইবনু মাজাহ]। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন এবং নাসায়ি হাদিস একে ত্রুটিযুক্ত গণ্য করিয়াছেন এবং এক জামা‘আত মুহাদ্দিস একে মুরসাল বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন। {৬০৮}

{৬০৮} তিরমিজি ১০০৭, ১০০৮, ৩১৭৯, নাসায়ি হাদিস ১৯৪৪, ১৯৪৫, ইবনু মাজাহ ১৪৮২, মুওয়াত্তা মালেক ৫২৪। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৫. জানাযায় মহিলাদের উপস্থিতি নিষেধ

৫৭২ – উম্মু আতিয়্যাহ্ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জানাযার পশ্চাদানুগমণ করিতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমাদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। {৬০৯}

{৬০৯} বুখারী ২১৩, ১২৭৮, ১২৭৯, ৫৩৪২, মুসলিম ৯২৮, নাসায়ি হাদিস ৩৫৩৪, আবূ দাউদ ২৩০২, ইবনু মাজাহ ২০৮৭, আহমাদ ২০২৭০, ২৬৭৫৯, দারেমী ২২৮৬। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৬. জানাযার জন্য দাঁড়ানোর বিধান

৫৭৩ – আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী [রাঃআঃ] সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন তোমরা কোন জানাযা দেখবে তখন তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আরে যে তার সাথে যাবে সে মাইয়্যেতকে রাখার পূর্বে যেন না বসে। {৬১০}

{৬১০} বুখারী ১২০৯, ১৩১০, মুসলিম ৯৫৯, তিরমিজি ১০৪৩, নাসায়ি হাদিস ১৯১৪, ১৯১৭, ১৯১৮, আবূ দাউদ ২১৭৩, আহমাদ ১০৮১১, ১০৯২৫, ১০৯৭৩। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৭. মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি

৫৭৪ – আবূ ইসহাক [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ বিন যায়দ [রাঃআঃ] মুর্দাকে পায়ের দিক দিয়ে কবরে প্রবেশ করিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, এটাই সুন্নাত [সঠিক পদ্ধতি]। {৬১১}

{৬১১} আবূ দাউদ ৩২১১ , হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৮. মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে প্রবেশ করার সময় যা বলিতে হয়

৫৭৫ – ইবনু`উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ] হতে বর্ণনা করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের মুর্দাকে যখন তোমরা কবরে রাখবে তখন বলবে-

بِسْمِ اللَّهِ، وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ

`বিস্‌মিল্লাহি অ-‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লাহি।’

অর্থ ঃ আল্লাহ্ তা‘আলার নামে ও মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর বিধান অনুযায়ী [দাফন করা হলো]

। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন আর দারাকুৎনী একে মাওকূফ হিসেবে এর ইল্লত [দোষ] বর্ণনা করিয়াছেন। {৬১২}, {৬১২} আবূ দাউদ ৩২১৩, তিরমিজি ১০৪৬ ইবনু মাজাহ ১৫৫০, ১৫৫৩, আহমাদ ৪৭৯৭, ৪৯৭০, ৫২১১। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৯. মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা হারাম

৫৭৬ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন-মুর্দার হাড় ভাঙ্গা জীবিতের হাড়ভাঙ্গার মতই [মন্দ কার্য] । আবূ দাউদ হাদিসটি মুসলিমের সানাদের শর্তানুযায়ী। {৬১৩}

{৬১৩} আবূ দাউদ ৩২০৭, ইবনু মাজাহ ১৬১৬, আহমাদ ২৩৭৮৭, ২৪১৬৫, ২৪২১৮। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৭৭ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

ইবনু মাজাহ উম্মু সালামাহ্‌র হাদিস বর্ণনায় একথা বৃদ্ধি করিয়াছেন ঃ [উভয়ই] পাপের কাজ। {৬১৪}

{৬১৪} ইবনু মাজাহ ১৬১৭। শাইখ সুমাইর আয যুহাইরী বলেন, এটি হাদিসের অংশ নয়, বরং এটি কতিপয় রাবীর নিজস্ব ব্যাখ্যা। ইবনুল মুলকিন তাহাঁর আল বাদরুল মুনীর [৬/৭৭০] গ্রন্থে এর সনদকে হাসান বলেছেন। ইমাম সুয়ূত্বী আল জামেউস সাগীর [৬২৩২] গ্রন্থে একে হাসান বলেছেন। শাইখ আলবানী ইরওয়াউল গালীল [৭৬৩] গ্রন্থে একে সহিহ বলেছেন। তবে তিনি যঈফুল জামে‘ [৪১৭০১] গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন। তিনি জঈফ ইবনু মাজাহ [৩১৯] গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি দুর্বল তবে [আরবী] কথাটি ছাড়া বাকী কথা সহিহ। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪০. কবর ও দাফনের বিবরণ

৫৭৮ – সা‘দ বিন্ আবূ ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার জন্য কবর তৈরী কর এবং এর পাশে কাঁচা ইট খাড়া করে দিবে, যেমনটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কবরে করা হয়েছিল। {৬১৫}

{৬১৫} মুসলিম ৯৬৬, নাসায়ি হাদিস ২০০৭, ২০০৮, ইবনু মাজাহ ১৫৫৬, আহমাদ ১৪৯২, ১৬০৪, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৭৯ – বায়হাকীতে জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বৃদ্ধি করিয়াছেন ঃ তাহাঁর কবর যমীন হতে এক বিঘৎ পরিমাণ উঁচু করা হয়েছিল। -ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন। {৬১৬}

{৬১৬} ইবনু হাজার আসকালানী আত্-তালখীসুল হাবীর [২/৬৯৩] গ্রন্থে বলেন, অন্য একটি মুরসাল সানাদে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে যার মধ্যে জাবের নেই। আলবানী ইরওয়াউল গালীল [৭৫৬] গ্রন্থে হাদিসটিকে মুনকার ও জঈফ বলেছেন। বায়হাকী সুনানুল কূবরা [৩/৪১১] গ্রন্থে মুরসাল বলেছেন, শওকানী নাইলুল আওত্বার [৪/১৩২] গ্রন্থেও অনুরুপ বলেছেন। যাহাবী তানকীহুত তাহকীক [১/৩১৯] গ্রন্থে একে মুনকাতি বলেছেন। বিন বায বুলুগুল মারামের হাশিয়ায় [৩৬৪] বলেন, হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল আর স্পষ্ট হচ্ছে যে, হাদিসটি জাল। ইবনু হাজার আসকালানী বুলুগুল মারাম [১৬১] গ্রন্থে বলেন হাদিসটি মারফূ ও মাওকূফ হিসেবে বর্ণিত। ইবনু উসাইমীন বুলুগুল মারামের শরাহ [২/৬০৪] তে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদ ৪১. কবর পাকা ও তার উপর ঘর নির্মাণ করা এবং সেখানে বসা নিষেধ

৫৮০ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

উক্ত রাবী হতে মুসলিমে আছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবরকে চুন-সুরকী দিয়ে পাকা করে গাঁথতে এবং কবরের উপর বসতে ও তার উপর কোন কিছু নির্মাণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। {৬১৭}

{৬১৭} মুসলিম ৯৭০ তিরমিজি ১০৫২, নাসায়ি হাদিস ২০২৭, ২০২৮, ২০২৯, আবূ দাউদ ৩২২৫, ইবনু মাজাহ ২৫৬২, ১৫৬৩, আহমাদ ১৩৭২৫, ১৪২২২৭, ১৪২২৭, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪২. কবরে মাটি দেয়ার বিধান

৫৮১ – ‘আমির বিন্ রাবী‘আহ থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]`উসমান বিন্ মায‘উন [রাঃআঃ]-এর জানাযা নামাজ আদায় করছিলেন এবং তাহাঁর কবরের নিকট এসে দাঁড়ান অবস্থায় তিন মুঠো মাটি দিয়েছিলেন। {৬১৮}

{৬১৮} অত্যন্ত দুর্বল। দারাকুতনী ২/৭৬, হাঃ ১, ইমাম বায়হাকী তাহাঁর আস সুনান আল কুবরা [৩/৪১০] গ্রন্থে বলেন, এর সনদ দুর্বল, তবে এর মুরসাল শাহেদ বিদ্যমান। আর এটি কখনও মারফূ‘ হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে। ইবনুল মুলকিন তাহাঁর আল বাদরুল মুনীর [৫/৩১৬] গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪৩. মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পরে তার জন্য দু‘আ করা মুস্তাহাব

৫৮২ – উসমান [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুর্দার দাফন সম্পন্ন করে স্থির হয়ে দাঁড়াতেন ও বলিতেন, -তোমরা তোমাদের ভাই-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তার ঠিক [অবিচল] থাকার প্রার্থনা কর। কেননা সে এখনই প্রশ্নের সম্মুখীন হইবে। হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন। {৬১৯}

{৬১৯} আবূ দাউদ ৩২২১, হাকিম ১/৩৭০, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪৪. মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তালকিন দেয়ার বিধান

৫৮৩ – যম্‌রাহ বিন হাবীব থেকে বর্ণিতঃ

যিনি ছিলেন তাবি‘ঈদের একজন, তিনি বলেন, মৃতের কবর ঠিকঠাক হবার পর যখন লোকজন অবসর পায় তখন কবরের নিকট এরুপ বলাকে লোক পছন্দ মনে করতো ঃ হে অমুক, তুমি বল ঃ

 لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُثَلَاثَ مَرَّاتٍ

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্

[আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই] তিনবার।

رَبِّيَ اللَّهُ

রাব্বিইয়াল্লাহ্

[আল্লাহ্ আমার প্রতিপালক]।

دِينِيَ الْإِسْلَامُ

দীনিইয়াল্ ইসলাম,

[ইসলাম আমার দ্বীন]।

নাবীয়্যি মুহাম্মাদ [মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আমার নবী]। সা‘ঈদ বিন মনসুর মাওকুফভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। {৬২০}

{৬২০} জঈফ। সাঈদ ইবনু মানসূর এটি মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনু উসাইমীন তাহাঁর শরহে বুলুগুল মারাম [২/৬০৪] গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ-বলেছেন। তবে বিন বায হাশিয়া বুলুগুল মারাম [৩৬৪] বলেন, হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল এমনকি জাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৫৮৪ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

তাবারানীতে আবূ উমামাহ হতে মারফূ‘ সূত্রে একটি দীর্ঘ বর্ণনাতেও অনুরুপ বর্ণিত আছে। {৬২১}

{৬২১} তাবারানী ১২১৪, আল-মুজামুল কাবীর ৭৯৭৯। জঈফ। এ হাদিসের সনদ দুর্বল। দেখুন আল-মাজমূ’ ৫/৩০৪, ইবনুস সালাহ বলেন, এ হাদিসের সনদ প্রতিষ্ঠিত নয়। ইবনুল কাইয়েম [রহঃ] বলেন, এ হাদিস দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিস একমত। এ হাদিসের রাবী ইসমাঈল বিন আইয়াশ নিজ এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকার লোকদের থেকে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল। আর তিনি যাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন তিনি শামের অধিবাসী নন। বরং হেযাযের অধিবাসী। হায়সামী তাহযীবু মুখতাসারুস সুনান [৭/২৫০] গ্রন্থে বলেন, এ হাদিসের একদল রাবী রয়েছেন যাদেরকে আমি চিনি না। সানয়ানী বলেন সকল মুহাক্কিক্বদের ঐকমত্যে এ হাদিসটি দুর্বল। এ হাদিসের উপর আমল করা বিদআত। ঈ’য বিন আব্দুস সালাম বলেন, দাফনকৃত মাইয়্যেতকে তালকীন দেয়া সঠিক নয়, বরং তা বিদআত। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪৫. পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব

৫৮৫ – বুরায়দাহ বিন্ হুসাইব আল-আসলামী থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করিতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা যিয়ারত করো। তিরমিজিতে অতিরিক্ত আছে- “এটা পরকালকে স্মরণ করাবে। {৬২২}

{৬২২} মুসলিম ৯৭৭, ১৯৭৭, নাসায়ি হাদিস ২০৩২, ২০২৩, ৪৪২৯, আবূ দাউদ ৩৩২৫, ৩৬৯৮, আহমাদ ২২৪৪৯, ২২৪৯৪, ২২৫০৬। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৮৬ – ইবনু মাজাহ ইবনু মাস‘ঊদ [রাঃআঃ]- থেকে বর্ণিতঃ

এর হাদীসে একথা বৃ্দ্ধি করিয়াছেন, “এটা পৃথিবীর ব্যাপারে অনাগ্রহ সৃষ্টি করিবে।” {৬২৩}

{৬২৩} জঈফ। ইবনু মাজাহ ৫১৭১, আহমাদ ৪৩০৭। মিনহাতুল আল্লাম [৪/৩৫৭] গ্রন্থে রয়েছে- এ হাদিসের সকল রাবী শক্তিশালী। তবে আইয়ুব বিন হানী নামক একজন রাবী আছেন যাঁর সম্পর্কে সমালোচনা রয়েছে। হাফেয ইবনু হাজার তাহাঁর তাকরীব গ্রন্থে বলেন, সে সত্যবাদী তবে তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। এ হাদীসে ইবনু যুরাইজ তাদলীস করিয়াছেন। তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে কার থেকে বর্ণনা করিয়াছেন তা পরিষ্কার করেননি। হাদিসের তাহকীকঃ জাল হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪৬. নারীদের জন্য [অধিক মাত্রায়] কবর যিয়ারত করা হারাম

৫৮৭ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবর যিয়ারতকারী নারীদের প্রতি অভিসম্পাত করিয়াছেন। তিরমিজি, ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {৬২৪}

{৬২৪} তিরমিজি ১০৫৬, ইবনু মাজাহ ১৫৭৬, ইবনু হিব্বান ৩১৭৮, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪৭. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন করা হারাম

৫৮৮ – আবূ সা’ঈদ খুদরী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিলাপ করে ক্রন্দনকারিণী ও তা শ্রবণকারিণীদের প্রতি অভিসম্পাত করিয়াছেন। {৬২৫}

{৬২৫} আবূ দাউদ ৩১২৮, আহমাদ ১১২২৮, আলবানী তারগীব [২০৬৮] গ্রন্থে হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন, ইমাম হাইসামী তার মাজমাউয যাওয়ায়িদ [১৭] গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসে আল-হাসান বিন আতিয়্যাহ নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। আবূ দাউদ সুনানু আবী দাঊদ [৩১২৪] গ্রন্থে সাকাতু আনহু বলেন, এবং তার রিসালাতে মাক্কাবাসীকে বলেন প্রত্যেক সাকাতা আনহু সালেহ। ইবনু আদী আল কামিলু ফিয যুআফা ৬/৫৫ গ্রন্থে মাহফুয নয় বলেছেন। ইবনুল মুলকিন তাহাঁর আল-বাদরুল মুনীর [৫/৩৬২] গ্রন্থে বলেন, এ হাদিসের সানাদে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান বিন আতিয়্যাহ রয়েছেন, তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা থেকে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তারা তিনজনই দুর্বল বর্ণনাকারী। বিন বায তার বুলূগুল মারামের হাশিয়া [৩৬৬] গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসে আল-হাসান বিন আতিয়্যাহ আল উফী নামক রাবী রয়েছেন তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, ইবনু হাজার আসকালানী তাদের দুজনকে বিশেষভাবে দুর্বল আখ্যায়িত করে বলেছেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় ভুল করিয়াছেন। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৫৮৯ – উম্মু আতিয়্যাহ্ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বাই’আত গ্রহণকালে আমাদের কাছ হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, আমরা [কোন মৃতের জন্য] বিলাপ করব না।

হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৯০ – ইবনু`উমার [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, বিলাপ করে কাঁদার ফলে মুর্দাকে কবরে`আযাব দেয়া হয়। {৬২৬}

{৬২৬} বুখারী ১২৯২, ১২৮৮, ১২৯০, মুসলিম ৯২৭, ৯২৮, ৯২৯, তিরমিজি ১০০২, নাসায়ি হাদিস ১৮৫৩, ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ ১৫৯৩, আহমাদ ২০৯, ৩২৮৮। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৯১ – মুগীরাহ বিন শু’বাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদিস উক্ত কিতাবদ্বয়ে [বুখারী, মুসলিমে] রয়েছে। {৬২৭}

{৬২৭} বুখারী ১২৮৮, ১২৯১, ১২৯২, মুসলিম ৯৩৩, তিরমিজি ১০০০, আহমাদ ১৭৬৭৪, ১৭৭১৯, ১৭৮২৭, বুখারী এবং মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, যে [মৃত] ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা হয়, তাকে বিলাপকৃত বিষয়ের উপর`আযাব দেয়া হইবে। মুসলিম শেষে [আরবি] শব্দটি বৃদ্ধি করিয়াছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪৮. মৃত ব্যক্তির জন্য আওয়াজ ছাড়া ক্রন্দন করা বৈধ

৫৯২ – আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর এক কন্যা {উম্মু কুলসুম [রাঃআঃ]}-এর দাফনকালে উপস্থিত হলাম। আল্লাহর রসূল কবরের পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। আনাস [রাঃআঃ] বলেন, তখন আমি তাহাঁর চক্ষু হতে অশ্রু ঝরতে দেখলাম। {৬২৮}

{৬২৮} বুখারী ১২৪২, ১২৮৫, আহমাদ ১১৭৬৬, ১২৯৮৫। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৪৯. রাত্রে দাফন করার বিধান

৫৯৩ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের মৃতদেরকে রাতের বেলা দাফন করিবে না, তবে উপায় না থাকলে করিবে। -ইবনে মাজাহ। এর মূল বক্তব্য মুসলিমে রয়েছে। কিন্তু তিনি [রাবী] বলেন, নাবী এ সম্বদ্ধে কড়াকড়ি করিয়াছেন-রাত্রে কবর দিলে জানাযার নামাজ আদায় না করে যেন তা কবরস্থ না করা হয়। {৬২৯}

{৬২৯} মুসলিম ৯৪৩, নাসায়ি হাদিস ১৮৯৫, আবূ দাউদ ৩১৪৮, আহমাদ ১৩৭৩২ , হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৫০. মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাবার পাঠানো মুস্তাহাব

৫৯৪ – আব্দুল্লাহ্ বিন জা’ফর [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন জা’ফরের নিহত [শহীদ] হবার সংবাদ [মাদীনাহতে] পৌঁছল তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, -জা’ফরের পরিবারবর্গের জন্য তোমরা খাবার তৈরী কর। কারণ তাদের নিকট এমন এক বিপদ এসেছে যা তাদেরকে শোকাভিভূত কিংকর্তব্যবিমূঢ করে ফেলেছে। {৬৩০}

{৬৩০} তিরমিজি ৯৯৮, আবূ দাউদ ২১৩২, ইবনু মাজাহ ১৬১০। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৫১. কবরস্থানে প্রবেশ করার সময় যা বলিতে হয়

৫৯৫ – সুলাইমানের পিতা বুরাইদাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সহাবীদের কবরস্থানে যাবার সময় এ দু’আটি শিক্ষা দিতেন। উচ্চারণ ঃ

السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُونَ، أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ

আসসালামু আলাইকুম আহলিদ-দিয়ারী, মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইন্না ইন্‌শা আল্লাহু বিকুম লাহিকূনা, আস্আলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াহ।

অর্থ ঃ ইমানদার ও মুসলিম কবরবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আমি আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য প্রশান্তি চাচ্ছি। {৬৩১}

{৬৩১} মুসলিম ৯৭৫, নাসায়ি হাদিস ২০৪০, ইবনু মাজাহ ১৫৪৭, আহমাদ ২২৪৭৬, ২২৫৩০। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৯৬ – ইবনু`আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনাহ্‌র কবরস্থান হয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তাদের দিকে মুখ করে এই দুয়া বলিলেন-

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ

‘আসসালামু`আলাইকুম ইয়া আহ্‌লাল কবূরি, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা অলাকুম আনতুম্ সালাফুনা অ-নাহনু বিল্ আসারি।’

অর্থ ঃ হে কবরবাসী, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ্‌ আমাদের ও তোমাদের গুনাহ ক্ষমাহ করে দিন, [পরকালের যাত্রায়] তোমরা আমাদের অগ্রগামী আর আমরা তোমাদের পশ্চাতে গমনকারী। -তিরমিজি একে হাসানরূপে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। {৬৩২}

{৬৩২} তিরমিজি ১০৫৩, ইবনু হাজার আসকালানী তার আল ফুতুহাতে আররব্বানিয়্যাহ [৪/২২০] গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান আখ্যায়িত করে বলেন, কাবূস ব্যতিত এ হাদিসের সকল রাবী বিশুদ্ধ, কেননা সে বিতর্কিত। বিন বায তার বুলূগুল মারামের হাশিয়ায় [৩৭০] বলেন, এর সনদের রাবী কাবূস বিন আবূ যাবীনার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে, অবশিষ্ট সকল রাবী বিশ্বস্ত। শাইখ আলবানী তাহক্বীক রিয়াযুস স্বালিহীন [৫৮৯], তাখরিজ মিশকাত [১৭০৯] গ্রন্থদ্বয়ে হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। তিনি তার আহকামুল জানায়িয [২৪৯] গ্রন্থে উক্ত রাবী সম্পর্কে বলেন, তার থেকে দলীল গ্রহণ করা যায় না, সম্ভবত ইমাম তিরমিজি এ হাদিসের অনেক শাহেদ থাকার কারণে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, কেননা সহিহ হাদিসসমূহ দ্বারা এর অর্থ সুসাব্যস্ত। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৫২. মৃত ব্যক্তিকে গালি দেয়া নিষেধ

৫৯৭ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ তোমরা মৃতদের গালি দিও না। কারণ, তারা স্বীয় কর্মফল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। {৬৩৩}

{৬৩৩} বুখারী ৬৫১৬, নাসায়ি হাদিস ১৯২৬, আবূ দাউদ ৪৮৯৯, আহমাদ ২৪৯৪২, দারেমী ২৫১১। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৫৯৮ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

তিরমিজি মুগীরাহ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তাতে গালি না দেওয়ার স্থলে ঃ “এতে তোমরা জীবিতদের কষ্ট দিবে” কথাটি উল্লেখ রয়েছে। {৬৩৪}

{৬৩৪} তিরমিজি ১৯৪২, ১৯৮২, আহমাদ ১৭৭৪৩। হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস


by

Comments

Leave a Reply