চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজ
চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজ >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় ১৫ঃ চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজ
পরিচ্ছেদ ২৪৭ঃ চন্দ্র সূর্যগ্রহণের রহস্য ও যখন তা সংঘটিত হইবে তখনকার করণীয়
পরিচ্ছেদ ২৪৮ঃ চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজের জন্য আযান ও তাতে উচ্চঃস্বরে কিরাত পাঠ করা শরীয়তসম্মত
পরিচ্ছেদ ২৪৯ঃ চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের নামাজের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ২৫০ঃ বাতাস জোরে প্রবাহিত হলে বা ঝড়ের অবস্থায় যা বলিতে হয়
পরিচ্ছেদ ২৫১ ভূমিকম্পের সময় নামাজ পড়ার বিধান ও তার বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ২৪৭ঃ চন্দ্র সূর্যগ্রহণের রহস্য ও যখন তা সংঘটিত হইবে তখনকার করণীয়
৫০২ – মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]-এর সময় যে দিন [তাহাঁর পুত্র] ইবরাহীম [রাঃআঃ] ইনতিকাল করেন, সেদিন সুর্যগ্রহন হয়েছিল। লোকেরা তখন বলিতে লাগল, ইবরাহীম [রাঃআঃ] এর মৃত্যুর কারনেই সুর্যগ্রহন হয়েছে। তখন আল্লাহর রসুল [সাঃ] বললেনঃ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারনে সুর্য বা চন্দ্রগ্রহন হয় না। তোমরা যখন তা দেখবে, তখন গ্রহনমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দু’আ করিবে এবং নামাজ আদায় করিবে। {৫৩৯}। বুখারীর ভিন্ন একটি বর্ননায় আছে – [গ্রহণমুক্ত হয়ে]`পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত। {৫৪০}
{৫৩৯} ইমাম বুখারী এবং মুসলিম [রঃ] হাদিসটি বর্ননা করিয়াছেন। মুসলিমের বর্ননায় [আরবী] কথাটির যেমন উল্লেখ নেই তেমনি বুখারীর [আরবী] শব্দটির উল্লেখ নেই।,{৫৪০} বুখারী ১০৪৩, ১০৬১, ৬১৯৯, মুসলিম ৯১৫, আহমাদ ১৭৬৭৬, ১৭৭১্ হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৫০৩ – আবূ বাক্র [রাঃআঃ]- থেকে বর্ণিতঃ
এ অবস্থা দূর না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করিবে এবং দু’আ করিতে থাকিবে। {৫৪১}
{৫৪১} বুখারী ১০৪০, ১০৪৮, ১০৬২, ১০৬৩, নাসায়ি হাদিস ১৪৫৯, ১৪৬৩, ১৪৯১, সূর্য গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ২৪৮ঃ চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজের জন্য আযান ও তাতে উচ্চঃস্বরে কিরাত পাঠ করা শরীয়তসম্মত
৫০৪ – আয়িশা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] সূর্যগ্রহনের নামাজে {৫৪২} তাহাঁর কিরাআত সশব্দে পাঠ করেন এবং চার রুকু’ ও চার সাজদাহসহ দু’ রাক’আত নামাজ আদায় করেন। এটা মুসলিমের শব্দ বিন্যাস। মুসলিমেরই অন্য বর্ননায় আছেঃ নাবী [সাঃআঃ] এ নামাজের জামাতের ঘোষনার জন্য ঘোষনাকারী পাঠাতেনঃ [এই বলার জন্য]`আসসালাতু জামি’আহ [অর্থঃ] জামাতের সাথে নামাজের আদায়ের জন্য [হাজির হও]। {৫৪৩}
{৫৪২} বুখারী এবং মুসলিমে [আরবী] শব্দটির উল্লেখ আছে।, {৫৪৩} বুখারী ১০৬৫, ১০৬৬, ১০৪৪, ১০৪৬, ১০৪৭, মুসলিম ৯০১, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ২৪৯ঃ চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের নামাজের পদ্ধতি
৫০৫ – আবদুল্লাহ ইবনু`আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নাবী [সাঃআঃ] -এর সময় সুর্যগ্রহন হল। আল্লাহর রসূল [সাঃ] তখন নামাজ আদায় করেন এবং তিনি সূরাহ আল-বাক্বারাহ পাঠ করিতে যত সময় লাগে সে পরিমান দীর্ঘ কিয়াম করেন। অতঃপর দীর্ঘ রুকু’ করেন। অতঃপর মাথা তুলে পুনরায় দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু’ করিলেন। তবে তা প্রথম রুকু’র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সাজদাহ করেন। আবার দাঁড়ালেন এং দীর্ঘ কিয়াম করিলন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার দীর্ঘ রুকু’ করেন, তবে তা পূর্বের রুকু’র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিয়াম করিলেন, তবে তা প্রথম কিয়াম অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু’ করেন, তবে তা প্রথম রুকু’র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সাজদাহ করেন এবং নামাজ শেষ করেন। ততক্ষনে সূর্যগ্রহন মুক্ত হয়ে গেছে। তারপর লোকেদের জন্য একটি ভাষন দিলেন। {৫৪৪} –শব্দ বিন্যাস বুখারীর। {৫৪৫}
{৫৪৪} [আরবী] উক্তিটি হাদিসের নাস নয়। বরং তা ইমাম হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী [রঃ] এর অভিব্যক্তি। কেননা নাবী [সাঃ] সালাতের পরই খুতবা দিতেন। তারপর তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারনে এ দু’টির গ্রহন হয় না। কাজেই যখন তোমরা গ্রহন দেখবে তখনই আল্লাহকে স্মরণ করিবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেনঃ আমিতো জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেনঃ তাদের কুফরীর কারনে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে ? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচরণ কর, অতঃপর সে তোমার হতে [যদি] সামান্য ত্রুটি পায়, তা হলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না। {৫৪৫} বুখারী ২৯, ৪৩১, ৪৪৮, ১০৪৬, ১০৪৭, ১০৫২, মুসলিম ৯০৭, ১৪৯৩, আহমাদ ১৮৬, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৫০৬ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে-সূর্যগ্রহন লাগলে তিনি আট রুকু’ ও চার সাজদাহতে [দু-রাক্আত] নামাজ আদায় করিলেন। {৫৪৬}
{৫৪৬} মুসলিম ৯০৮ সহিহ। ইমাম বায়হাকী তার সুনানুল কুবরা [৩/৩২৭] গ্রন্থে বলেন, ইমাম বুখারী এ সংক্রান্ত ব্যাপারে চার রুকু ও চার সাজদা ব্যাতীত অন্য কোন রেওয়ায়াত বর্ণনা করেন নি। ইমাম বাযযার আল বাহরুখ যিখার [১১/১৩৮] গ্রন্থে এর সনদকে সহিহ বলেছেন। সূর্য গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৫০৭ – আলী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৫০৮ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] ৬টি রুকূ’ ও চারটি সাজদাহতে [দু’রাকআত] নামাজ আদায় করেছিলেন।
হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৫০৯ – উবাই বিন কা’ব [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-পাঁচ রুকূ’ ও দু’ সাজদাহতে এ নামাজ আদায় করিলেন। দ্বিতীয় রাক্আতেও তাই করিলেন। {৫৪৭}
{৫৪৭} আবূ দাউদ ১১৮২, আহমাদ ১০৭১৯, বিন বায বুলুগুল মারামের হাশিয়ায় [৩২৮] বলেন, এর সনদে আবূ জাফর আররাযী নামক দুর্বল রাবী রয়েছেন। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে তার দলীল অগ্রহণযোগ্য। ইমাম যায়লায়ী নাসবুর রায়াহ [২/২২৭] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে আবূ জাফর আর রাযী ঈসা বিন আব্দুল্লাহ বিন মাহান রয়েছেন যিনি সমালোচিত। আলবানী আবূ দাউদের [১১৮২] নং হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু আবদুল বার [৩/৩১১] বলেন, এর সনদ শক্তিশালী নয়। ইমাম নববী আল খুলাসা [২/৮৫৮] গ্রন্থে এর সনদে দুর্বলতার কথা উল্লেখ করিয়াছেন।হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ২৫০ঃ বাতাস জোরে প্রবাহিত হলে বা ঝড়ের অবস্থায় যা বলিতে হয়
৫১০ – ইবনু`আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, প্রবল ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হলে নাবী [সাঃআঃ] হাঁটু পেতে বসে পড়তেন আর এই বলে দু’আ করিতেন –
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا رَحْمَةً، وَلَا تَجْعَلْهَا عَذَابًا
হে আল্লাহ! তুমি একে আমাদের জন্য রহমত [কল্যাণপ্রসূ] কর আর তাকে তুমি`আযাবে পরিণত করো না। – শাফি’ঈ ও ত্ববারানী। {৫৪৮}
{৫৪৮} নাসিরুদ্দিন আলবানী তাখরিজ মিশকাত [১৪৬৪] এর সনদ কে অত্যন্ত দুর্বল বলেছেন, সিলসিলা যইফা [৫৬০০] গ্রন্থে বলেছেন, এ সংক্রান্ত সবই মুনকার। ইমাম যায়লায়ী তাখরীজুল কাশশাফ [৩/৫৯] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে হুসাইন বিন কায়েস রয়েছে যাকে ইমাম আহমাদ ও নাসায়ি হাদিস দুর্বল আখ্যায়িত করিয়াছেন। এর অন্য একটি সনদ রয়েছে। আলবানীর সিলসিলা যয়ীফা [৪২১৭] গ্রন্থেও হাদিসটিকে অত্যন্ত দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
পরিচ্ছেদ ২৫১ঃ ভূমিকম্পের সময় নামাজ পড়ার বিধান ও তার বর্ণনা
৫১১ -ইবনু`আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] ভূমিকম্পের সময় ছ’টি রুকূ’ ও চারটি সাজদাহ তে [দু’রাকআত] নামাজ আদায় করিলেন, এবং তিনি বলিলেন, এরূপ হচ্ছে-আল্লাহর বিশেষ নিদর্শন প্রকাশকালের নামাজ।
হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৫১২ -শাফি’ঈ`আলী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
অনুরূপ একটি হাদিস উধৃত করিয়াছেন উক্ত হাদিসের শেষাংশ ব্যতীত।
সূর্য গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply