বুলুগুল মারাম হাদীস – Bulugul Maram Hadis – পানি
বুলুগুল মারাম হাদীস – Bulugul Maram. পানি >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় -১ঃ পানি
বুলুগুল মারাম – পরিচ্ছেদ ০১. সাগর বা সমুদ্রের পানি পবিত্র
পরিচ্ছেদ ০২. পানির মূল পবিত্র অবস্থায় বহাল থাকা
পরিচ্ছেদ ০৩. নাপাক বা ময়লা মিশ্রিত পানির বিধান
পরিচ্ছেদ ০৪. কী পরিমাণ পানি অপবিত্র হইবে; আর কী পরিমান পানি অপবিত্র হইবে না
পরিচ্ছেদ ০৫. আবদ্ধ বা স্থির পানিতে পেশাব করা এবং তাতে ফরয গোসল করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৬. পুরুষ এবং নারীর একে অপরের গোসলের অবশিষ্ট পানি দ্বারা গোসল করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ০৭. স্ত্রীর গোসলের অবশিষ্ট দ্বারা পুরুষের গোসল বৈধ
পরিচ্ছেদ ০৮. যে পাত্রে কুকুর চাটবে সে পাত্র পবিত্রকরণের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ০৯. বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পবিত্র
পরিচ্ছেদ ১০. জমিনকে পেশাব হতে পবিত্রকরণের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ১১. মাছ ও পঙ্গপাল পানিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে পানি অপবিত্র হইবে না
পরিচ্ছেদ ১২. মাছ পানিতে বা অন্য কিছুতে পতিত হয়ে তাকে অপবিত্র করিতে পারে না
পরিচ্ছেদ ১৩. জীবিত প্রাণী হতে কর্তিক অংশ মৃত প্রাণী বলে গণ্য
বুলুগুল মারাম – পরিচ্ছেদ ০১. সাগর বা সমুদ্রের পানি পবিত্র
১ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণী হালাল। চারজন এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। শব্দ বিন্যাস আবূ শাইবার, ইবনু খুযাইমাহ ও তিরমিজি হাদিসটিকে সহীহ্ বলেছেন। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ বিন্ হাম্বালও এটি বর্ণনা করিয়াছেন। {১}
{১} আবূ দাউদ ৮৩, নাসায়ি হাদিস ১/৫০, ১৭৬, ৭০৭ তিরমিজি ৬৯, ইবনু মাযাহ ৩৮৬, ইবনু আবী শায়বাহ ১৩১, ইবনু খুযাইমাহ ১১১ । সফওয়ান বিন সুলাইম সূত্রে; তিনি আলে বানী আযরাক এর সাঈদ বিন সালামাহ [রাঃআঃ] থেকে, তিনি বানী আব্দুল দ্বার এর মুগীরাহ বিন আবূ বুরদাহ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেন, এক ব্যাক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আমরা সমুদ্রে বিচরণ করি, আর আমাদের সাথে অল্প পরিমান পানি নিয়ে যাই, ফলে আমরা যদি এই পানি দিয়ে অযু করি তাহলে আমাদের খাবার পানির পিপাসায় ভোগার আশংকা রয়েছে। সুতরাং আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওযু করিতে পারি? অতঃপর রাসূল [সাঃআঃ] এ উক্তি করেন। ইমাম তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, এই সনদ সহিহ। কেউ আবার এতে ত্রুটি আছে বলে মন্তব্য করলেও তাতে কোন ক্ষতি নেই, কেননা হাদিসটির কয়েকটি শাহেদ [সমর্থক] হাদিস রয়েছে।
হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০২. পানির মূল পবিত্র অবস্থায় বহাল থাকা
২- আবূ সা‘ঈদ খুদরী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ`নিশ্চয়ই পানি পবিত্র জিনিস, কোন কিছুই তাকে অপবিত্র করিতে পারে না।’-৩ জনে; {২} আহমাদ একে সহীহ্ বলেছেন। {৩}
{২} আবূ দাউদ ৬৬, নাসায়ি হাদিস ১৭৪, তিরমযী ৬৬। আবূ সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলা হলো, আমরা কি বুযা’আহ নামক কূপের পানি দিয়ে ওযূ করিতে পারি? আর ঐ কূপটি এমন ছিল যে, তাতে হায়েযের নেকড়া, কুকুরের গোশ্ত এবং অন্যান্য ময়লা আবর্জনা ফেলা হতো। অতঃপর রাসূল এ হাদিস বর্ণনা করেন। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ, যদিও একজন রাবী অস্পষ্টতার কারণে হাদিসটিকে ত্রুটিযুক্ত বলা হয়েছে। কিন্তু এর অন্য একটি সনদ ও কয়েকটি শাহেদ রয়েছে যা হাদিসটি বিশুদ্ধ হাদিসের পরিণত করছে। বিঃ দ্রঃ হাদিসের কথা – “ [আরবী]” বিষয়ে ইমাম খাত্তাবী তাহাঁর মা’আলিমুস সুনান [১/৩৭] গ্রন্থে বলেন, এ হাদিস শ্রবণ করে অনেকের মনে এ ধারণা জন্মাতে পারে যে, তারা এ কাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে করতো। তাদের সম্পর্কে এমন মন্দ ধারণা জায়েজ নয়; বিশেষ করে মুসলিমদের ক্ষেত্রে আরো নয়। তাছাড়া এমন [নোংরা] স্বভাব পূর্বেকার বা বর্তমানকালের কোন মানুষের সে মুসলিম হক বা কাফির হোক এমন [নোংরা] স্বভাব হতে পারে না। বরং তারা পানিকে সব সময় পবিত্র, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতেন। অতএব এমন যুগের লোকদের সম্বন্ধে এমন ধারণা কিভাবে করা যায় অথচ তারা দ্বীনের অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে ব্যক্তিত্ব এবং মুসলমানদের সবচেয়ে সন্মানিত দল! তাছাড়া সেদেশে পানি দুষ্প্রাপ্য অথচ তার প্রয়োজন নিতান্তই বেশি। তা সত্ত্বেও পানির সাথে এমন আচরণ কি অত্যন্ত কঠিন কথা নয়!? এদিকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পানির ঘাট এবং নালায় মলমূত্র ত্যাগকারীর উপর লানত করিয়াছেন। তাহলে কি করে তারা পানির কূপ ও নালাসমূহকে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট করিতে পারে; আর তাতে ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ করা হতে পারে? এমন আচরণ তাদের জন্য মোটেই মানানসই নয়। হ্যাঁ বিষয়টি এমন হতে পারে যে, ঐ কূপটি কোন মধ্যবর্তী স্থানে ছিল এবং পানির প্রবাহ রাস্তা ও ময়লা ফেলার স্থানের বর্জ্যকে ভাসিয়ে নিয়ে উক্ত কূপে নিক্ষেপ করতো। আর তাতে পানির পরিমাণ খুব বেশি হওয়ায় তাতে কোন প্রভাব পড়তো না এবং পানির স্বাভাবিক বৈশিষ্টের কোন পরিবর্তন করতো না। {৩} এ বিষয়টি ইমাম মুনজিরী তার`মুখতাসার’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৩. নাপাক বা ময়লা মিশ্রিত পানির বিধান
৩- আবূ উমামাহ বাহিলী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “নিশ্চয় পানিকে কোন কিছু অপবিত্র করিতে পারে না তবে যা তার ঘ্রাণ, স্বাদ ও রঙকে পরিবর্তন করে দেয়।” – ইবনু মাজাহ, {৪} আবূ হাতিম এটিকে য’ঈফ বলেছেন। তবে হাদিসের প্রথম অংশ সহিহ {৫}
{৪} জঈফ, ইবনু মাযাহ ৫২১-রুশদাইন বিন সা’দ সূত্রে। মুয়াবিয়াহ বিন সালিহ রাশিদ বিন সা‘দ থেকে, তিনি আবূ উমামাহ হতে। তিনি দুর্বল, আবূ রুশদাইদ এর দুর্বলতার কারণে। তাছাড়া হাদিসের সনদে ইজতিরাব-এর সমস্যা রয়েছে। {৫} তাহাঁর ছেলে`ইলাল’ গ্রন্থে [১/৪৪] বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর বলেছেনঃ আমার পিতা বলেছেন যে, রুশদাইদ বিন সা‘দ হাদিসটিকে আবূ উমামাহ সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] থেকে মুত্তাছিল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু রুশদাইন শক্তিশালী রাবী নয়। সঠিক কথা এই যে, হাদিসটি মুরসাল। হাদিসের তাহকীকঃ অন্যান্য
৪ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
বায়হাকীতে রয়েছে “পানি পবিত্র তবে কোন নাজাসাত [অপবিত্র বস্তু] পড়ার কারণে পানির ঘ্রাণ, স্বাদ ও রঙকে নষ্ট ও পরিবর্তন হলে সেই পানি অপবিত্র হয়ে যাবে।” {৬}
{৬} জঈফ। বায়হাক্বী তাহাঁর`আস্-সুনানুল কুবরা’য় [১৫৯-২৬০] আবূ উমামাহ হতে বর্ণনা করিয়াছেন। এর সনদে বাকিয়াহ বিন ওয়ালীদ নামক একজন রাবী আছেন যিনি মুদাল্লিস। আর তিনি`আনআন’ শব্দেও বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদিসের অন্য একটি সনদ রয়েছে, সেটিও দুর্বল। হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৪. কী পরিমাণ পানি অপবিত্র হইবে; আর কী পরিমান পানি অপবিত্র হইবে না
৫- ‘আবদুল্লাহ বিন`উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ`পানির পরিমাণ যদি দু’কুল্লা [কুল্লা হচ্ছে বড় আকারের মাটির পাত্র বিশেষ যাতে প্রায় একশত তের কেজি পানি আটে।] [মটকা] হয় তবে তার মধ্যে কোন অপবিত্র বস্তু পড়লে তা না-পাক হইবে না।’
[চারজনে এটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু হিব্বান এক সহিহ বলেছেন।] {৭} {৭} আবূ দাউদ [৬৩,৬৪,৬৫]; নাসায়ি হাদিস [১/৬৪,১৭৫]; তিরমিজি [৬৭]; ইবনু মাযাহ [৫১৭]। হাদিসটি সহিহ। কিছু দোষ বর্ণনা করা হলেও তা ক্ষতিকর নয়। ইবনু খুযিমাহ [৯২]; হাকিম [১৩২]; ইবনু হিব্বান [১২৪৯] প্রমুখ হাদিসটি সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৫. আবদ্ধ বা স্থির পানিতে পেশাব করা এবং তাতে ফরয গোসল করার বিধান
৬- আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ`অপবিত্র [জুনুবী] অবস্থায় কেউ যেন আবদ্ধ পানিতে [নেমে] গোসল না করে। {৮}
বুখারীর বর্ণনায় আছে, “কোন ব্যক্তি যেন স্রোত নেই এমন আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করার পর তাতে নেমে আবার গোসল না করে।” {৯} সহিহ মুসলিমে ফীহি শব্দের পরিবর্তে মিনহু [উক্ত বর্ণনাকারী থেকে] শব্দ রয়েছে। {১০} আর আবূ দাঊদে রয়েছেঃ “অপবিত্র অবস্থায় তাতে যেন [নেমে] গোসল না করে।” {১১} {৮} মুসলিম [২৮৩] {৯} বুখারী [২৩৯] {১০} মুসলিম [২৮২] {১১} সুনান আবূ দাউদ [৭০] হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৬. পুরুষ এবং নারীর একে অপরের গোসলের অবশিষ্ট পানি দ্বারা গোসল করা নিষেধ
৭- নাবী [সাঃআঃ] – এর জনৈক সহাবী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জুনুবী পুরুষের গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে নারীকে আর নারীর অবশিষ্ট পানি দ্বারা পুরুষের গোসল করিতে নিষেধ করিয়াছেন, বরং তারা যেন পাত্র হতে একই সঙ্গে আজলা-আজলা করে পানি উঠিয়ে নিয়ে গোসল করে।‘ -আবূ দাউদ, নাসায়ি হাদিস এটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং এর সানাদটি সহীহ্। {১২}
{১২} আবূ দাউদ [৮১]; নাসায়ি হাদিস [১/১৩০]- দাঊদ বিন আবদুল্লাহ আল-আওদী সূত্রে, তিনি হামীদ আল-হুমাইরী থেকে তিনি রাসূল [সাঃআঃ] এর একজন সাহাবী হতে বর্ণনা করিয়াছেন। [টিকাকার বলেছেন], মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ এই সনদটি সহিহ, হাফিজ ইবনু হাজার রহঃ ও অনুরূপ বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৭. স্ত্রীর গোসলের অবশিষ্ট দ্বারা পুরুষের গোসল বৈধ
৮- ইবনু`আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] মাইমূনা [রাঃআঃ] এ’র গোসলের অবশিষ্ট পানি দ্বারা গোসল করিতেন।’ [মুসলিম] {১৩}
{১৩} মুসলিম [৩২৩] হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৯- বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
সুনান চতুষ্টয় [আবূ দাউদ, নাসায়ি হাদিস, তিরমিজি ও ইবনু মাজাহ] -র বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছেঃ “গামলার পানিতে নাবী [সাঃআঃ] -এর জনৈক স্ত্রী গোসল করেছিলেন, অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর [অবশিষ্ট] পানি দিয়ে গোসল করিতে এলে তাহাঁর স্ত্রী তাঁকে বলিলেন, আমি তো [জুনুবী] অপবিত্র ছিলাম। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, পানি তো আর অপবিত্র হয় না।‘ তিরমিজি ও ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ্ বলেছেন। {১৪}
{১৪} আবূ দাউদ [৬৮]; তিরমিজি [৬৫]; ইবনু মাযাহ [৩৭০]; সাম্মাক বিন হারর সূত্রে । তিনি ইকরিমাহ হতে, তিনি ইবনু আব্বাস হতে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম তিরমিজি বলেনঃ “এ হাদিসটি হাসান সহিহ”। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইর বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ সনদটি সেরকমই। যদি তা সাম্মাক হতে ইকরিমা সূত্রে বর্ণিত হয়ে থাকে। এটা ত্রুটিযুক্ত। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৮. যে পাত্রে কুকুর চাটবে সে পাত্র পবিত্রকরণের পদ্ধতি
১০- আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] এরশাদ করেছেনঃ`কুকুর কোন পাত্র চাটলে সেই পাত্রকে পবিত্র করিতে সাতবার সেটিকে পরিষ্কার করে ধুতে হইবে-তার প্রথম বার মাঠি দিয়ে [মাজতে হইবে]।’ {১৫}
মুসলিমের আরেক বর্ণনায় “সেটির [চেটে রাখা ] উচ্ছৃষ্ট বস্তু ফেলে দিবে” কথাটি রয়েছে। {১৬} আর তিরমিজিতে আছে,`শেষের বার অথবা প্রথমবার মাটি দিয়ে [মেজে নিয়ে ধুবে]। {১৭}
{১৫} মুসলিম [৯১, ২৯৭] {১৬} মুসলিম [৮৯, ২৭৯] {১৭} সুনান তিরমিজি [৯১], তাহাঁর মতে আরো কিছু অতিরিক্ত শব্দ রয়েছে। তা হচ্ছে`পাত্রে বিড়াল মুখ দেয়া তবে একবার ধুয়ে নিবে। মুহাক্কিক সুমাইর আয-যুহাইরি বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ এ অতিরিক্ত শব্দসমূহ সহিহ। ইবনু শাহিনের`নাসিখুল হাদিস ওয়াল মানসূখাহ’ গ্রন্থে [১৪০] এরূপ বর্ণনা রয়েছে। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৯. বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পবিত্র
১১- আবূ কাতাদাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসুল [সাঃআঃ] বিড়াল প্রসঙ্গে বলেছেন, “সে অপবিত্র নয় এবং তোমাদের মাঝে চলাফেরা করিতে থাকে” । তিরমিজি ও ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ্ বলেছেন। {১৮}
{১৮} আবূ দাউদ [৭৫]; নাসায়ি হাদিস [১/৫৫,১৭৮]; তিরমিজি [৯২], ইবনু মাযাহ [৩৬৭]; ইবনু খুযাইমাহ [১৪০] কাবশাহ বিনতে কা’ব বিন মালিক সূত্রে । সে যখন ইবনু আবূ কাতাদাহর অধীনে ছিল তখন আবূ কাতাদাহ [রাঃআঃ] একদিন তাহাঁর নিকট গেলে সে ওযুর পানপাত্র পেশ করিলেন। কাবশাহ বলেন, অতঃপর একটি বিড়াল এসে পাত্রে মুখ দিয়ে তা থেকে কিছু পানি পান করে ফেলল। তারপর ইবনু আবূ কাতাদাহ পাত্রটি নিয়ে তা থেকে পান করিলেন। কাবশা বলে্ আমি তাহাঁর পান করার দৃশ্য দেখছিলাম। পান করা শেষে তিনি বলিলেন, হে আমার ভাতিজী! তুমি আশ্চর্য হয়েছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বলে উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করিলেন। ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১০. জমিনকে পেশাব হতে পবিত্রকরণের পদ্ধতি
১২- আনাস ইব্নু মালিক [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা জনৈক বেদুঈন এসে মাসজিদের এক পাশে পেশাব করে দিল। তা দেখে লোকজন তাকে ধমক দিতে লাগল। নাবী [সাঃআঃ] তাদের নিষেধ করিলেন। সে তার পেশাব করা শেষ করলে নাবী [সাঃআঃ] -এর আদেশ এর উপর এক বালতি পানি ঢেলে দেয়া হল”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ] {১৯}
{১৯} বুখারী [২১৯]; মুসলিম [২৮৪]; আনাস [রাঃআঃ] হতেও এ হাদিসটির একটি সূত্র বিদ্যমান। আনাস ছাড়াও অন্যান্য কতক সাহাবা [রাঃআঃ] হতেও এরূপ বর্ণিত আছে। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১১. মাছ ও পঙ্গপাল পানিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে পানি অপবিত্র হইবে না
১৩- ইবনু`উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খাদ্যরূপে`দু’প্রকারের মৃত প্রাণী এবং দু’প্রকার রক্তকে আমাদের [মুসলিমদের] জন্য হালাল করা হয়েছে। দু’প্রকার মৃত প্রাণী হচ্ছেঃ টিড্ডি [পঙ্গপাল] ও মাছ। এবং রক্তের দু’প্রকার হচ্ছে- [হালাল প্রাণীর] কলিজা ও হৃৎপিণ্ড।’ {২০}
{২০} আহমাদ [৫৬৯০]; ইবনু মাযাহ [৩৩৪১]; এর সনদ দুর্বল। ইবনু হাজার এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু ইবনু উমার হতে মাওকূফ‘ সূত্রে বর্ণিত হাদিসটিকে সহিহ মন্তব্য করছেন। কেননা তা মাওকূফ‘ বর্ণনার ক্ষেত্রে মারফূ‘ এর বিধান প্রযোজ্য হয়। যেমনটি ইমাম বায়হাকী বলেছেন। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২. মাছ পানিতে বা অন্য কিছুতে পতিত হয়ে তাকে অপবিত্র করিতে পারে না
১৪- আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন তোমাদের`কারো পানীয় বস্তুর মধ্যে মাছি পড়ে তখন সে যেন তাকে তাহাঁর মধ্যে ডুবিয়ে দেয়। তারপর তাকে বাইরে ফেলে দেয়। কেননা ওর এক ডানায় রোগ আর অন্য ডানায় আরোগ্য রয়েছে।’ {২১} আবূ দাঊদে [অতিরিক্ত শব্দ] এসেছে;`মাছি তার জীবাণু যুক্ত ডানাটি [প্রথমে পানীয়ের মধ্যে ডুবিয়ে] তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। {২২}
{২১} বুখারী [৩৩২০], [৫৭৮২] {২২} সুনান আবূ দাউদ [৩৮৪৪], এ হাদিসের সূত্রটি সহিহ। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৩. জীবিত প্রাণী হতে কর্তিক অংশ মৃত প্রাণী বলে গণ্য
১৫- আবূ ওয়াকিদ আল-লায়সী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন,`জীবিত কোন জন্তুর শরীরের অংশ বিশেষ কেটে নেয়ার পর তা [পশুটি] জীবিত থাকলে সেটা [কাটা অংশ] মৃত গণ্য করা হইবে। [অর্থাৎ ঐ অংশটি হারাম] আবূ দাউদ ও তিরমিজি এটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিজি এটিকে হাসান বলেছেন এবং শব্দ বিন্যাস তাহাঁরই । [তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন ] {২৩}
{২৩} হাসান। আবূ দাউদ [২৮৫৮]; তিরমিজি [১৪৮০]; আতা বিন ইয়াসার সূত্রে আবূ ওয়াকি আল-লাইসী থেকে তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদীনায় আগমন করে দেখলেন যে, লোকেরা উটের কূজ এবং বকরির নিতম্বের গোশ্ত [আহার উদ্দেশ্যে] কেটে নিচ্ছে । তখন রাসূল [সাঃআঃ] এ হাদিসটি বর্ণনা করেন । হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply