আদ দারেমী
পরিচ্ছেদঃ ১. নবী সাঃআঃ প্রেরিত হওয়ার পূর্বে লোকেরা যে অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত ছিল
সুনান আদ দারেমী হাদীস শরীফ এর হোম পেজে জেতে এখানে কিল্ক করুন
আদ দারেমী নং – ১. ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলিল, ইয়া রসূলুল্লাহ! কোন ব্যক্তি জাহিলী যুগে যে সকল [মন্দ] আমল করেছে, [ইসলাম গ্রহণের পর] তাকে কি সেসব আমলের জন্য পাকড়াও [জবাবদিহিতার মুখোমুখি] করা হইবে? রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`যে ব্যক্তি ইসলামে থাকা অবস্থায় [অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণের পর] উত্তম আমল করিবে, তাকে তার জাহিলী যুগে কৃত [মন্দ] আমলসমূহেহর জন্য পাকড়াও করা হইবে না। কিন্তু, যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পরও মন্দ কাজ করিবে, তাকে জাহিলী ও ইসলাম- উভয় যুগে কৃত আমলের জন্য পাকড়াও করা হইবে।”{1}
{1} তাহকিকঃ হাদিসটির সনদ সহিহ । এ হাদিসটি বুখারী ও মুসলিম উভয়ে বর্ণনা করিয়াছেন । তাখরিজঃ বুখারী [৬৯২১]; মুসলিম [১২০] [১৯০]; আহমাদ [১/৩৭৯-৩৮০, ৪০৯, ৪২৯ ও ৪৩১]। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আদ দারেমী নং – ২. হাদিসের তাহকীকঃ মুরসাল
ওয়াদ্বীন রাহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলিল, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমরা ছিলাম জাহিলী যুগের লোক এবং আমরা মূর্তিপূজক ছিলাম। আর আমরা আমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করতাম। আমার একটি কন্যা ছিল। আমি যখনই তাকে ডাকতাম, তখনই সে আনন্দের সাথে আমার ডাকে সাড়া দিত। একদিন আমি তাকে ডাকলে সে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমার পিছনে পিছনে চলতে লাগল। আমি চলতে লাগলাম যতক্ষণ না বাড়ির অদূরে একটি কূপের নিকট পৌঁছলাম। অতঃপর আমি তার হাত ধরে তাকে কূপে নিক্ষেপ করলাম। শেষ পর্যন্ত সে বলিতেছিলঃ হে আব্বা! হে আব্বা। একথা শুনে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ কাঁদতে লাগলেন, এমনকি তাহাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। এ কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে বসা এক ব্যক্তি সেই লোকটিকে বলিল, তুমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে দুঃখ দিয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ ঐ ব্যক্তিকে বলিলেনঃ`থাম! কেননা, যা তাকে কষ্ট দিয়েছে, সে তো সে বিষয়েই জিজ্ঞেস করছে।’ অতঃপর সেই লোকটিকে বলিলেনঃ`তোমার কথাগুলো আমাকে আবার শোনাও।’ ফলে সে লোকটি আবার [উল্লিখিত কাহিনীটি] বলিতে লাগল। এ কাহিনী শুনে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ [আবারও] কাঁদতে লাগলেন, এমনকি তাহাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়ে তাহাঁর দাড়ির উপর পড়তে লাগল। অবশেষে তিনি তাকে বলিলেনঃ`নিশ্চয় আল্লাহ জাহিলী যুগে কৃত [মন্দ] আমলসমূহ থেকে তাদেরকে অব্যহতি দিয়েছেন [অর্থাৎ সেসব পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দেয়া হইবে না]। অতএব তুমি নতুন করে আমল করা শুরু করো।’{1}
{1} তাহকিকঃ সনদের রাবীগণ সিকাহ’ বা নির্ভরযোগ্য । তবে এটি মুরসাল [তথা সাহাবীর উল্লেখ ছাড়াই তাবিঈ’ কর্তৃক বর্ণিত] হাদিস।তাখরিজঃ এটি ইমাম দারিমী একাই বর্ণনা করিয়াছেন।
আদ দারেমী নং – ৩.
মুজাহিদ রাহ. এর দাস বর্ণনা করেন, তার মনীব [বাড়ির কর্তা] তাকে দুধ ও মাখনের পেয়ালা দিয়ে তাদের উপাস্যগণের [দেবতা বা মূর্তিগুলোর] নিকট পাঠালো। তিনি বলেনঃ আমি দেবতার ভয়ে মাখন খাওয়া হতে বিরত রইলাম। তিনি বলেন, অতঃপর একটি কুকুর এসে মাখন খেয়ে ফেলল এবং দুধ পান করে নিল। তারপর সেটি মূর্তির উপর পেশাব করে দিল। আর সেই মূর্তিগুলো ছিলো`ইসাফ’ ও`নায়িলাহ’-এর মূর্তি।{1}
হারুন বলেনঃ জাহিলী যুগে মানুষ যখন সফর করত তখন সে তার সাথে চারটি পাথর সাথে রাখতো। তার মধ্যে তিনটি পাথর চুলা তৈরির জন্য এবং চতুর্থ পাথরটির সে ইবাদত করত। আর সে কুকুর পালত এবং তার সন্তানদের হত্যা করত।{2}
{1} এ মূর্তি দুটির কিচ্ছা দেখুন, সীরাতে সীরাতে ইবনু হিশাম ১/৮২-৮৩; সীরাতে ইবনু কাসীর ১/৬৯-৭০।{2} তাহকিকঃ এর সনদ হাসান বা উত্তম ।তাখরিজঃ এটি দারিমী একাই বর্ণনা করিয়াছেন। অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন আহমদ, ৩/৪২৫।
আদ দারেমী নং – ৪. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আবী রাজা বলেনঃ জাহিলী যুগে আমরা যখন কোন সুন্দর পাথর পেতাম, তখনই তার পূজায় লেগে যেতাম। আর যখন কোন পাথরই পেতাম না, তখন আমরা বালি একত্রিত করে ঢিবি বানাতাম। তারপর দুগ্ধবতী উষ্ট্রী নিয়ে এসে এর পা ফাঁক করে ধরে এ ঢিবির উপর এর দুধ দোহন করতাম। এমনকি ঢিবিটি দুধে ভিজে যেতো। অতঃপর যতক্ষণ আমরা এ স্থানে অবস্থান করতাম, ততক্ষণ এ ঢিবিরই ইবাদত করতাম।’
আবু মুহাম্মদ [দারিমী] বলেন,`الصفي’ অর্থঃ অধিক দুগ্ধদায়ী, فنفاج অর্থ উটনী যখন দুধ দোহনের জন্য তার উভয় পা ফাঁক করে। এবং الفج অর্থঃ প্রশস্ত রাস্তা। এর বহুবচনঃ فجاج ।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ। কিন্তু আবী নুয়াইম তার`হিলইয়া’ গ্রন্থে [২/৩০৬] হাসান সনদে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তাখরিজঃ আবী নুয়াইম তার`হিলইয়া’ গ্রন্থে [২/৩০৬]।
পরিচ্ছেদঃ ২. নবী সাঃআঃ [নবী হিসেবে] প্রেরিত হওয়ার পূর্ববর্তী [আসমানী] কিতাবসমূহে লিখিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলী
আদ দারেমী নং – ৫. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
কাব বলেনঃ আমরা [তাওরাতে] লিখিত পেয়েছি যে, মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ কঠোর স্বভাবের হইবেন না, নির্দয় হইবেন না; আর হাটে-বাজারে শোরগোলকারী হইবেন না, মন্দ আচরণের প্রতিদানে মন্দ আচরণ করবেন না, বরং তিনি ক্ষমা ও মার্জনা করবেন। আর তাহাঁর উম্মত প্রত্যেক উচ্চ ভূমিতে [আরোহণকালে] মহান আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা’র অধিক হামদ্ [প্রশংসা] বর্ণনাকারী ও তাকবীর [বড়ত্ব] উচ্চারণকারী হইবে। আর তারা সকল অবস্থানেই আল্লাহ’র প্রশংসা করিবে। তারা`ইযার’ বা তহবন্দ [এর নিম্নাংশ] তাদের [পায়ের গোছার] অর্ধেক বরাবর পরিধান করিবে। তারা পার্শ্ববর্তী অঙ্গসমূহ [ধুয়ে] ওযু করিবে। তাদের মুয়াযযিন আকাশ পরিমণ্ডলে আযান [ছড়িয়ে] দিবে। তাদের যুদ্ধের সারী ও সালাতের সারী একইরূপ হইবে। তাদের রাতের [তাহাজ্জুদের সলাতে কান্নার] আওয়াজ হইবে মৌমাছির গুণগুণ আওয়াজের মত। আর তাহাঁর জন্ম হইবে মক্কায় ও তিনি ত্বয়্যিবায় [মদীনায়] হিজরত করবেন এবং তাহাঁর রাজ্য পৌঁছবে শাম দেশ পর্যন্ত।’{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ । তবে এটি মুরসাল হাদিস। তাখরিজঃ ইবনু সা’দ, ত্ববাকাত ১/২/৮৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ [৩৬৪৮]; আবী নুয়াইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৫/৩৮৭; দেখুন, ফাতহুল বারি ৮/৫৮৬ ।
আদ দারেমী নং – ৬. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
[আব্দুল্লাহ] ইবনু সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলিতেন, নিশ্চয়ই আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলী [তাওরাতে] পেয়েছিঃ [সেখানে লেখা আছে, আল্লাহ বলেছেন] নিশ্চয়ই আমি আপনাকে শাহীদ [সাক্ষ্যদাতা], সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী এবং উম্মী’দের [বেদুইনদের] আশ্রয়স্থল হিসেবে পাঠিয়েছি। আপনি আমার বান্দা ও আমার রাসূল। আমি আপনার নাম রেখেছি`মুতাওয়াক্কীল’ [ভরসাকারী]। তিনি কঠোর স্বভাবের নন, নির্দয় নন; আর হাটে-বাজারে শোরগোলকারী নন। তিনি মন্দের প্রতিদানে মন্দ কিছু করবেন না, বরং তিনি ক্ষমা ও উপক্ষো করবেন। আপনার “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই”- এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে আমরা বাঁকা [খারাপ] হয়ে যাওয়া জাতিকে সোজা না করা পর্যন্ত আমি আপনাকে মৃত্যু দেব না। তাহাঁর মাধ্যমে অন্ধ চোখসমূহকে [দেখার জন্য], বধির কানসমূহকে [শ্রবণের জন্য] এবং গাফিল বা উদাসীন হৃদয়সমূহকে উন্মোচন করে দেব।’{1}
আতা ইবনু ইয়াসার [রহঃ] বলেনঃ আমাকে আবী ওয়াকেদ লাইছী বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে তা-ই বলিতে শুনেছেন যা আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন।
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ বা দুর্বল । লাইছের লেখক আব্দুল্লাহ ইবনু সালিহ এর দুর্বলতার জন্য ।
তাখরিজঃ বায়হাকী, দালাইলুন নবুওয়াত ১/৩৭৬; ইবনু কাসীর, সীরাত ১/৩২৭; দেখুন, ফাতহুল বারি ৪/৩৪৩।
আদ দারেমী নং – ৭. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতঃ [তাওরাতের] প্রথম লাইনে/অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছেঃ মুহাম্মাদ সা আল্লাহর রাসূল, আমার নির্বাচিত বান্দা, তিনি কঠোর স্বভাবের ও নির্দয় হইবেন না; আর হাটে-বাজারে শোরগোলকারীও হইবেন না; তিনি মন্দ আচরণের প্রতিদানে মন্দ আচরণ করবেন না, বরং তিনি ক্ষমা ও মার্জনা করবেন। আর তাহাঁর জন্ম হইবে মক্কায় ও তিনি ত্বয়্যিবায় [মদীনায়] হিজরত করবেন এবং তাহাঁর রাজ্য পৌঁছবে শাম দেশ পর্যন্ত।
দ্বিতীয় লাইনে/অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছেঃ মুহাম্মাদ সা আল্লাহর রাসূল, আর তাহাঁর উম্মত মহান আল্লাহ’র অধিক হামদ্ [প্রশংসা] বর্ণনাকারী, তারা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহ’র প্রশংসা করিবে, আর তারা সকল অবস্থানেই আল্লাহ’র প্রশংসা করিবে। প্রত্যেক উচ্চ ভূমিতে [আরোহণ কালে] তাকবীর [আল্লাহর বড়ত্ব/আল্লাহু আকবার] উচ্চারণকারী হইবে। সূর্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে সালাতের ওয়াক্ত হওয়া মাত্র তারা সালাত আদায় করিবে, এমনকি যদিও তারা ময়লা-আবর্জনার স্থানের চূড়ায়ও থাকে। তারা`ইযার’ বা তহবন্দ [এর নিম্নাংশ] তাদের [পায়ের গোছার] মাঝ বরাবর পরিধান করিবে। তারা তাদের অঙ্গসমূহ [ধুয়ে] ওযু করিবে। তাদের রাতের [সলাতে দাঁড়িয়ে কান্নার] আওয়াজ হইবে আকাশে মৌমাছির গুণগুণ আওয়াজের মত।{1}
{1} তাহক্কীক্কঃ এর সনদে যাইদ ইবনু আউফ রয়েছে। সে মাতরূক বা পরিত্যক্ত ।
এবং পূর্ববর্তী ৫ নং হাদিস দ্রষ্টব্য।
আদ দারেমী নং – ৮ঃ হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি কা’ব আল আহবারকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ তুমি তাওরাতে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর গুণাবলী কেমন পেয়েছ? কা’ব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমরা তাওরাতে পেয়েছি যে, মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় জন্ম গ্রহণ করবেন, ত্ববাহ বা মদীনায় হিজরত করবেন, আর তাহাঁর রাজ্য শাম পর্যন্ত বিস্তৃত হইবে। আর অশ্লীলতার সাথে তাহাঁর কোন সম্পর্ক থাকিবে না, তিনি হাটে-বাজারে শোরগোলকারীও হইবেন না, তিনি মন্দ আচরণের প্রতিদানে মন্দ আচরণ করবেন না, বরং তিনি ক্ষমা ও মার্জনা করবেন। আর তাহাঁর উম্মত মহান আল্লাহ’র অধিক হামদ্ [প্রশংসা] বর্ণনাকারী, তারা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহ’র প্রশংসা করিবে, তারা অঙ্গসমূহ [ধুয়ে] ওযু করিবে এবং প্রত্যেক উঁচু ভূমিতে [আরোহণকালে] তাকবীর [আল্লাহর বড়ত্ব/আল্লাহু আকবার ধ্বনি] উচ্চারণ করিবে। তারা`ইযার’ বা তহবন্দ [এর নিম্নাংশ] পরিধান করিবে তাদের [পায়ের গোছার] মাঝ বরাবর। তারা যেভাবে যুদ্ধে সারিবদ্ধ হইবে, তারা তাদের সালাতেও তদ্রূপ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। তাদের মসজিদসমূহে তাদের [তিলাওয়াত ও যিকিরের] আওয়াজ হইবে মৌমাছির গুণগুণ আওয়াজের মত। আর তাদের আহ্বানকারীর আহ্বান [মুয়াযযিনের আযান] দূর আকাশে শোনা যাবে।{1}
{1} তাহকিকঃ ইবনু হিব্বান এ হাদিসের বর্ণনাকারী সম্পর্কে তার`আস সিক্বাত’ গ্রন্থে ইবনু আব্বাস থেকে তার যে বর্ণনা উল্লেখ করিয়াছেন তা সঠিক হলে এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ ইবনু সা’দ, ত্বাবাকাত ১/২/৮৭।
আদ দারেমী নং – ৯. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
যুবায়র ইবনু নুফাইর আল হাদরামী রাঃআঃ থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেনঃ`তোমাদের নিকট এমন একজন রাসূল এসেছেন যিনি দুর্বল নন এবং অলসও নন, তিনি এসেছেন অন্তরসমূহের পর্দা সরিয়ে দেয়ার জন্য, অন্ধ চোখসমূহকে খুলে দেয়ার জন্য, বধির কানসমূহকে শ্রবণ করানোর জন্য এবং বিকৃত হয়ে যাওয়া সুন্নাত{1} [রীতিসমূহ]কে সোজা [সংস্কার করে সঠিক] করার জন্য। [তিনি এই কাজ করে যাবেন] যতক্ষণ না সাক্ষ্য দেয়া হইবেঃ`আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক’।{2}
{1} মিল্লাতে ইবরাহীমের সুন্নাত
{2} তাহক্কীক্কঃ এটি মুরসাল [তাবিঈ কর্তৃক রাসূল সাঃআঃ থেকে বর্ণিত হাদিস] ও এর সনদ জঈফ । তবে কাছীর ইবনু মুররাহ হতে তার বাণী হিসেবে এটি সহিহ সনদে বর্ণনা করিয়াছেন ইবনু সা’দ [ত্বাবাকাত ১/২/৮৮]। হাফিজ ইবনু হাজার [ফাতহুল বারিতে ৮/৫৮৬] দারেমী কর্তৃক বর্ণিত জুবাইর ইবনু নুফাইরের এ মুরসালের সনদকে সহিহ বলেছেন।
তাখরিজঃ অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, ইবনু সা’দ [ত্বাবাকাত ১/২/৮৮]।
আদ দারেমী নং – ১০. হাদিসের তাহকীকঃ মুরসাল
আমির রাহিমাহুল্লাহ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট তাহাঁর কোন সাহাবী কোন এক প্রয়োজনে আসলেন। ফলে তিনি তার সাথে চলতে লাগলেন যতক্ষণ না তিনি ঘরে প্রবেশ করিলেন। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, তাহাঁর এক পা ঘরের ভিতর এবং এক পা বাইরে থাকা অবস্থায় তিনি যেন কারো সাথে চুপি চুপি আলাপ করিলেন। অতঃপর তিনি তার দিকে তাকালেন এবং বলিলেনঃ`তুমি জান কি আমি কার সাথে কথা বলছি? ইনি একজন ফেরেশতা, আজকের আগে আমি কোনদিন তাকে দেখিনি। তিনি আমাকে সালাম দেয়ার জন্য তাহাঁর প্রতিপালকের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করিয়াছেন । তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে ফয়সালাকারী হিসাবে কুরআন দিয়েছি অথবা [আপনার ওপর] নাযিল করেছি [কুরআন]। সহনশীলতা দান করেছি ধৈয্যরূপে, ফুরকান [হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী] দান করেছি সেতুবন্ধনরূপে।{1}
{1} তাহক্কীক্বঃ এটি মুরসাল । আমর ইবনু আবী কায়েস ব্যতীত এর অন্যান্য রাবীগণ বিশ্বস্ত।
তাখরিজঃ এটি দারেমী একাই বর্ণনা করিয়াছেন।
আদ দারেমী নং – ১১. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আতিয়্যাহ, রবী’আহ আল-জুরাশীকে বলিতে শুনেছেনঃ তিনি বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট একজন আগন্তুকে এল, অতঃপর তাঁকে বলা হল, আপনার চক্ষু ঘুমাক, আপনার কর্ণ শ্রবণ করুক এবং আপনার অন্তর উপলব্ধি করুক।
তিনি বলেনঃ`তখন আমার চক্ষুদ্বয় ঘুমিয়ে গেল, আমার কর্ণদ্বয় শুনতে থাকল এবং আমার অন্তর উপলদ্ধি করিতে থাকল।’ তারপর আমাকে বলা হল, একজন অধিকর্তা একটি গৃহ নির্মাণ করিলেন, এবং সেখানে খাবারের আয়োজন করিলেন। আর একজন আহ্বানকারীকে প্রেরণ করিলেন [সবাইকে দাওয়াত দেয়ার জন্য]। ফলে যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল, সে গৃহে প্রবেশ করিল, খানা খেল এবং সেই অধিকর্তা তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। আর যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল না, সে গৃহে প্রবেশ করিতে পারল না, খানাও খেতে পারল না এবং সেই অধিকর্তাও তার প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন ।
তিনি বলিলেনঃ সুতরাং আল্লাহই হলেন সেই অধিকর্তা, মুহাম্মদ সাঃআঃ হলেন সেই আহ্বানকারী এবং গৃহটি হল ইসলাম, আর ভোজ আয়োজন হল জান্নাত।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ। ইবাদ ইবনু মানসুর জঈফ।
তাখরিজঃ তাবারানী, আল কাবির ৫/৬৫ নং ৪৫৯৭; মুহাম্মদ ইবনু নাছর, আস সুন্নাহ নং ১০৯।
আদ দারেমী নং – ১২. হাদিসের তাহকীকঃ হাসান
আবী উছমান নাহদী [রহঃ] থেকে বর্ণিত, [একদা] রসূলুল্লাহ সাঃআঃ ইবনু মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে নিয়ে`বাতহা’ [উপত্যকা]-য় গেলেন। সেখানে তাকে বসিয়ে তার চারপাশে রেখা টেনে দিলেন। তারপর বলিলেনঃ`তুমি নড়বে না, কেননা কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার নিকট কিছু লোক আসবে। তুমি তাদের সাথে কথা বলবে না। আর তারাও তোমার সাথে কথা বলবে না।
এ কথা বলে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ যেদিকে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিলেন সেদিকে চলে গেলেন। অতঃপর ঐ সব লোকেরা রেখার নিকট এসে উপস্থিত হল কিন্তু তারা রেখাটি অতিক্রম করিল না। তারপর তারা নবী সাঃআঃ এর দিকে ফিরে গেল। রাতের শেষভাগে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার নিকট এলেন এবং আমার উরুর উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লেন। আর যখন তিনি ঘুমাতেন তখন নাক ডাকাতেন। যখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার উরুর উপর ঘুমে বিভোর, তখন কিছু লোক আসল, যারা ছিল অত্যন্ত উঁচু মানের [ও সম্ভ্রান্ত{1}]। তাদের পরনে ছিল সাদা পোশাক। আল্লাহই ভাল জানেন, কী অপূর্ব সৌন্দর্য যে তাদের ছিল! তাদের একদল তাহাঁর মাথার নিকট এবং একদল তাহাঁর পায়ের নিকট বসল। এরপর তারা পরস্পর বলাবলি করিতে লাগলঃ এ নবী [সাঃআঃ] কে যা দেওয়া হয়েছে, আর কোন বান্দাকে তা দেওয়া হয়েছে বলে আমরা দেখিনি। নিশ্চয় তাহাঁর চোখদু’টি ঘুমালেও তাহাঁর অন্তর সদা জাগ্রত।’ তোমরা তাহাঁর একটি উপমা দাও। [তা হচ্ছে] কোন এক অধিকর্তা একটি প্রাসাদ নির্মাণ করিলেন, তারপর সেখানে একটি ভোজ সভার আয়োজন করিলেন, অতঃপর লোকদেরকে সে ভোজের খাদ্য ও পানিয় গ্রহণের জন্য আহ্বান করিলেন।’ তারপর [এ উপমাটি দিয়েই] তারা উঠে গেলেন। আর ঠিক এ সময় রসূলুল্লাহ সাঃআঃও জেগে উঠলেন। তারপর তিনি বলিলেনঃ`এরা কারা তা কি তুমি জান?’ আমি বললামঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বলিলেনঃ`তারা ছিল ফেরেশতা।’ তিনি [আরও] বলিলেনঃ তারা যে উপমাটি দিল, সে সম্পর্কে তুমি কি কিছু জান? আমি বললামঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন তিনি বলিলেনঃ`আর রহমান [আল্লাহ] জান্নাত বানিয়েছেন, তারপর তিনি তাহাঁর বান্দাদেরকে সেদিকে আহ্বান করিয়াছেন। ফলে যে তাহাঁর আহ্বানে সাড়া দেবে, সে তাহাঁর জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আর যে আহ্বানে সাড়া দেবে না, তিনি তাকে পাকড়াও করবেন এবং শাস্তি দেবেন।”{2}
{1} ফাতহুল মান্নান, অত্র হাদিসের টীকা দ্রঃ
{2} তাহকিকঃ এর সনদ হাসান। তবে এটি মুরসাল [তাবিঈ বর্ণিত হাদিস]। তবে মুসনাদে আহমাদে ইবনু মাসউদ থেকে আমর কর্তৃক বর্ণিত এ হাদিসের সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ তিরমিযী ২৮৬৫; আহমদ, হাদিস আল মুসনাদ ১/৩৯৯;
পরিচ্ছেদঃ ৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাথমিক অবস্থা কেমন ছিল?
আদ দারেমী নং – ১৩. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
উতবা ইবনু আব্দুস সুলামী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাহাবী ছিলেন্, তিনি তাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করিলঃ ইয়া রসূলুল্লাহ সাঃআঃ, আপনার [জীবনের] প্রাথমিক অবস্থা কেমন ছিল? তিনি বলিলেনঃ`আমি বনী সা’দ ইবনু বাকর গোত্রে প্রতিপালিত হয়েছি। [একদা] আমি ও তার [দুধ মায়ের] ছেলে মেষ চরাতে গেলাম কিন্তু আমাদের সাথে কোন খাদ্য ও পানিয় নিলাম না। তাই আমি বললামঃ হে আমার [দুধ] ভাই! যাও, আমাদের মায়ের নিকট থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসো।’ ভাই চলে গেলে আমি মেষপালের নিকট থেকে গেলাম। তখন শকুনের মত সাদা রংয়ের দু’টি পাখি [সদৃশ ফেরেশতা] আমার নিকট উপস্থিত হল। তাদের একজন অপরজনকে বলিলঃ ইনিই কি তিনি? অপরজন বলিলঃ হাঁ। তারা দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে ধরে চিত করে শুইয়ে দিল। তারপর আমার পেট চিরে ফেলে আমার`কলব’ বের করে সেটিও চিরে ফেলল। সেখান থেকে কালো রংয়ের দু’টি রক্তপিণ্ড বের করে ফেলল। এরপর তাদের একজন তার সাথীকে বলিলঃ বরফের পানি নিয়ে আস। অতঃপর সে পানি দিয়ে আমার ভেতরটা ধুয়ে দিল। এরপর বলিলঃ এবার তুষার [শীতল] পানি নিয়ে এসো। আর তা দ্বারা সে আমার কলবটিকে ধুয়ে দিল। তারপর বলিল,`সাকিনাহ’ [স্থিরতা/ মানসিক দৃঢ়তা] আমার কলবের ভিতরে ছড়িয়ে দিল। তারপর একজন অপরজনকে বলিলঃ সমান করে সেলাই করে দাও, ফলে সে সমান করে সেলাই করে দিল। তারপর তার উপর নবুওয়াতের মোহর দিয়ে সিলগালা করে দিল। তারপর একজন অপরজনকে বলিলঃ তাঁকে এক পাল্লায় রাখ এবং তাহাঁর উম্মাতের এক হাজার লোককে আরেক পাল্লায় রাখ।
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেনঃ আমি যখন আমার উপরের দিকে উঠে যাওয়া পাল্লার হাজার লোকের দিকে তাকালাম, তখন আমার ভয় হচ্ছিল যে, তাদের কেউ আবার আমার উপরে পড়ে যায় কি-না।’ তারপর সে ব্যক্তি বলিলঃ যদি তাহাঁর সকল উম্মতকেও তাহাঁর সাথে ওজন করা হয়, তবুও তাহাঁর পাল্লা ঝুঁকে যাবে।’ তারপর তারা দু’জন আমাকে ছেড়ে চলে গেল।
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেনঃ তখন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। তারপর আমার [দুধ] মা’র নিকট এসে আমি যে ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম, তা সব খুলে বললাম। তিনি আশংকা করিলেন, আমি হয়তো সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি। তাই তিনি বলিলেনঃ আমি তোমার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তারপর তিনি তার উষ্ট্রীতে সাওয়ার হলেন এবং আমাকেও তুলে নিয়ে আমার পিছনে বসে যাত্রা করিলেন। এভাবে সোজা আমার মা’য়ের নিকট পোঁছে গেলাম। তারপর তিনি বলিলেনঃ আমি আমার আমানত ও যিম্মা আদায় করেছি।’ এবং আমাকে কেন্দ্র করে যা কিছু ঘটেছে তিনি তাকে সব খুলে বলিলেন। কিন্তু তিনি এতে ভয় পেলেন না। বরং তিনি বলিলেনঃ তার ভুমিষ্ঠ হওয়ার সময় আমি এমন একটি নূর দেখেছি, যাতে শামের [সিরিয়া অঞ্চল] রাজপ্রাসাদও আলোকিত হয়ে গিয়েছিল।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ। অপর দু’টি সনদে আহমাদ, হাকিম, তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেন, যার সনদ সহিহ ।
তাখরিজঃ আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ ৪/১৮৪-১৮৫; হাকিম, আল মুসতাদরাক, নং ৪২৩০; তাবারানী, মু’জামুল কাবীর নং ৩২২।
আদ দারেমী নং – ১৪. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আবী যার গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি [রসূলুল্লাহ সাঃআঃ]কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে নবী, একথা আপনি কিভাবে জানতে পারলেন, আর কিভাবেই বা তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করিলেন? তিনি বলিলেনঃ`হে আবূ যার! [একদা] আমি যখন মক্কার কোন এক উপত্যকায় ছিলাম, তখন আমার নিকট দু’জন ফেরেশতা এল। তাদের একজন জমিনের উপর অবতরণ করিল এবং অপরজন আসমান ও জমিনের মাঝামাঝি রইল। তাদের একজন অপরজনকে বলিলঃ ইনিই কি তিনি? অপরজন বলিলঃ হাঁ। সে বলিলঃ তাঁকে একজন লোকের সাথে ওজন কর। আমাকে [তার সাথে] ওজন করা হল। আর আমি তার চেয়ে ভারী হয়ে গেলাম। তারপর সে বলিলঃ তাঁকে দশজন লোকের সাথে ওজন কর। আমাকে [তাদের সাথে] ওজন করা হল। আর আমি তাদের চেয়েও ভারী হয়ে গেলাম। তারপর সে বলিলঃ তাঁকে একশ’ জন লোকের সাথে ওজন কর। আমাকে [তাদের সাথে] ওজন করা হল। আর আমি তাদের চেয়েও ভারী হয়ে গেলাম। তারপর সে বলিলঃ তাঁকে এক হাজার জন লোকের সাথে ওজন কর। আমাকে [তাদের সাথে] ওজন করা হল। আর আমি তাদের চেয়েও ভারী হয়ে গেলাম। এমতাবস্থায় আমি যেন তাদেরকে দেখিতে পাচ্ছি যে, তারা ওজনের পাল্লা হতে আমার উপর ছিটকে পড়তে যাচ্ছে। তিনি বলেনঃ তারপর তাদের একজন তার সাথীকে বলিলঃ যদি তাঁকে তাহাঁর পুরো উম্মাতের সাথেও ওজন কর, তবু তিনি তাদের চেয়ে ভারী হয়ে যাবেন।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ বিচ্ছিন্ন। বাকী বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
তাখরিজঃ বাযযার, হাদিস আল মুসনাদ [কাশফুল আসতার, ৩/১১৫-১১৬ নং ২৩৭১ ]; তাবারানী, তারীখ ২/৩০৪-৩০৫; আবু নুয়াইম, দালাইল নং ১৬৭।
আদ দারেমী নং – ১৫. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আবু সালিহ [রহঃ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ তাদেরকে ডেকে বলিতেনঃ হে মানব মণ্ডলী! নিশ্চয় আমি [আল্লাহর] রহমত ও হিদায়াতের মাধ্যম হিসেবে প্রেরিত।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ। তবে এটি মুরসাল। তবে অনেকে এ হাদিস আবু হুরাইরা রাঃআঃ হতে মারফু’ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন যার সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ বাযযার [৩/১১৪, নং ২৩৬৯]; তাবারানী, আস সগীর [১/৯৫] এবং আল আওসাত [৫, ৩০]; মুসনাদুশ শিহাব [১১৬০, ১১৬১]; বায়হাকী, দালাইল ১/১৫৮ যিয়াদ্ ইবনু ইয়াহইয়া আল হাসানী হতে …. আবু সালেহ আবু হুরাইরা হতে, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন … এর সনদ সহিহ ।
পরিচ্ছেদঃ ৪. আল্লাহ তায়ালা তাহাঁর নবীর প্রতি গাছ-পালা, চতুষ্পদ জন্তু ও জিনদের ঈমান আনয়নের মাধ্যমে তাঁকে যে সম্মানিত করিয়াছেন, তার বর্ণনা
আদ দারেমী নং – ১৬. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। তখন একজন বেদুইন এসে উপস্থিত হল। যখন সে তাহাঁর নিকটবর্তী হল, তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে বলিলেনঃ`তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ? সে বলিল, আমার পরিবারের নিকট যেতে চাচ্ছি। তিনি তাকে বলিলেনঃ তোমার কি কল্যাণের কোন প্রয়োজন আছে? সে বলিল, তা [সে কল্যাণ] আবার কি? তিনি বলিলেনঃ`তুমি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তাহাঁর কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দা ও রাসূল। সে জিজ্ঞেস করিল, আপনার এ কথার সত্যায়ন করিবে কে? তিনি বলিলেনঃ এই বাবলাগাছ সাক্ষ্য দেবে। তাই রসূলুল্লাহ সাঃআঃ উপত্যকার কিনারায় অবস্থিত বাবলা গাছটিকে ডাকলেন এবং সে মাটিতে দাগ কাটতে কাটতে এসে তাহাঁর সামনে দাঁড়াল। আর তিনি সেই গাছের নিকট তিনবার এর সাক্ষ্য চাইলেন, আর সেটি তিনবারই সেভাবে সাক্ষ্য দিল যেভাবে তিনি বলেছিলেন। তারপর সেই গাছটি আপন স্থানে ফিরে গেল। তখন বেদুইন লোকটিও তার গোত্রের নিকট ফিরে গেল। আর বলে গেল, যদি আমার ক্বওম আমার অনুসরণ করে, তবে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমি আপনার কাছে উপস্থিত হইবে এবং নইলে আমি একাই ফিরে আসব এবং আপনার নিকট অবস্থান করব।”{1}
{1} তাহ্কীক্বঃ হাদিসটি সহিহ। [হাইছামী বলেনঃ এর রাবীগণ সহিহ হাদিস বর্ণনাকারী- মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২৯২; ইবনু কাছীর বলেনঃ এর সনদ জাইয়্যেদ [উত্তম]।]
তাখরিজঃ আবী ইয়ালা, হাদিস আল মুসনাদ ৫৬৬৪; সহিহ ইবনু হিব্বান, আস সহিহ, ২১১০।
আদ দারেমী নং – ১৭. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক সফরে বের হলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে এতটা আড়ালে চলে যেতেন যাতে তাঁকে আর দেখা যেত না। আমরা এমন এক উন্মুক্ত স্থানে অবতরণ করলাম যেখানে কোন গাছপালা কিংবা পাহাড় চোখে পড়ছিল না। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ হে জাবির, তোমার পাত্রে পানি নাও এবং আমার সাথে এসো।’ বর্ণনাকারী [জাবির রাদি] বলেন, আমরা চলতে লাগলাম [এবং এত দূরে গেলাম যাতে] আমাদেরকে আর দেখা না যায়। চলতে চলতে দু’টি গাছ দেখা গেল, যাদের মাঝে দূরত্ব ছিল হাত চারেক। তখন তিনি আমাকে বলিলেনঃ`হে জাবির, তুমি এ গাছটির নিকট যাও এবং তাকে বলঃ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তোমাকে বলছেন যে,`তুমি তোমার সাথীর সাথে যুক্ত বা মিলিত হও, আমি তোমাদের পেছনে বসতে পারি।’
বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি তাই করলাম। তখন সেই গাছটি অন্য গাছের সাথে মিলে গেলো আর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ গাছ দুটির পিছনে বসলেন [এবং প্রয়োজন পূরণ করিলেন]। তারপর গাছ দুটি যার যার স্থানে ফিরে গেল। তারপর আমরা আবার রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাথে রওয়ানা হলাম। তিনি আমাদের মাঝে থাকলে আমাদের মনে হতো, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি ছায়া দান করছে। এ সময় রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সামনে এক মহিলা আসলো, তার সঙ্গে ছিল তার একটি ছেলে। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এ ছেলেটার উপর প্রত্যেক দিন তিন বার করে শয়তান আছর করে। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন তিনি ছেলেটিকে তুলে নিলেন এবং তাহাঁর এবং জিনের [উটের পিঠে বসানো গদি] সামনের অংশের মাঝে বসালেন। তারপর বলিলেনঃ “আল্লাহর দুশমন, দূর হ! আমি আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ। আল্লাহর দুশমন, দূর হ! আমি আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ।- একথাটি তিনি তিনবার বলিলেন।
তারপর ছেলেটিকে ঐ মহিলার নিকট ফিরিয়ে দিলেন। তারপর যখন আমরা আমাদের সফর শেষ করে এ স্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন সেই মহিলাটি আবার আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তার সাথে তার ছেলেটি ছিল এবং দু’টি মেষ ছিল যেগুলো সে হাঁকিয়ে আনছিল। মহিলাটি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার পক্ষ থেকে এ হাদিয়াটুকু গ্রহণ করুন। যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, সেই সত্ত্বার কসম, সেই দিনের পর শয়তান আর ওর কাছে ফিরে আসেনি। তখন রাসূল সাঃআঃ বলিলেনঃ তার নিকট থেকে একটি মেষ গ্রহণ কর এবং অপরটি তাকে ফিরিয়ে দাও।’
বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর আমরা রওনা দিলাম এবং রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের মাঝেই ছিলেন, এমতাবস্থায় মনে হচ্ছিল যেন পাখিরা আমাদের উপর ছায়া দান করছে। এমন সময় কোথা হতে জানি আওয়াজ করিতে করিতে একটি উট পালিয়ে আসল এবং লোকদের দুই সারির মাঝে সাজদায় পড়ে গেল। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বসে পড়লেন এবং লোকদেরকে বলিলেনঃ`এ উটটির মালিক কে?’ তখন আনসারী কিছু যুবক বলে উঠলঃ ইয়া রসূলুল্লাহ, ওটি আমাদের উট।
তিনি বলিলেনঃ`ওটার কী হয়েছে?’ তারা বলিল, এর পিঠে আমরা প্রায় বিশ বছর ধরে পানি বহন করে আসছি। আর ওটা বেশ মোটা তাজা ছিল। এখন আমরা চাচ্ছি এটিকে যবেহ/কুরবানী করে আমাদের বাচ্চাদের মাঝে বণ্টন করে দিতে। এমতাবস্থায় এটি আমাদের থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তিনি বলিলেনঃ`তোমরা একে আমার কাছে বিক্রি করে দাও।’ তারা বলিল, না, বরং ওটি আপনারই, হে আল্লাহর রাসূল!
তিনি বলিলেনঃ তা যখন করিবে না, তখন ওর মৃত্যু পর্যন্ত ওর সাথে সদাচারণ কর। তখন মুসলিমগণ বলে উঠলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ, পশুদের থেকে আমরাই তো আপনাকে সাজদা করার ব্যাপারে অধিক হকদার। তিনি বলিলেনঃ`কোন কিছুরই কোন কিছুকে সাজদা করা উচিত নয়। তা যদি হত [অর্থাৎ এভাবে সাজদা করার অনুমতি থাকত], তবে নারীদের জন্য তাদের স্বামীদেরকে সাজদা করাই সঙ্গত হত [কিন্তু এর অনুমতি নেই]।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ, ইসমাইল ইবনু আব্দুল মালিক [এ হাদীছের একজন রাবী] দূর্বল। তবে হাদিসটির অনেকগুলি শাহিদ [সমর্থনকারী হাদিস] থাকার কারণে সহিহ ।
তাখরিজঃ ইবনু আবী শাইবা ১১/৪৯০-৪৯২; আব্দ ইবনু হুমাইদ ১০৫৩; বায়হাকী [৬/১৮-১৯] ও আবী নু্য়াইম [২৮২] উভয়ে, দালাইলুন নবুওয়াতে।
আদ দারেমী নং – ১৮. হাদিসের তাহকীকঃ হাসান
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা একদিন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাথে হাঁটতে হাঁটতে বনী নাজ্জারের এলাকায় একটি বাগানের নিকট পৌঁছলাম। তখন সেই বাগানে একটি উট ছিল। যে ব্যক্তিই সেই বাগানে প্রবেশ করত, তার উপরই সেটি চড়াও হত। নবী সাঃআঃকে লোকেরা এ কথা জানালো। তিনি সেখানে গেলেন এবং উটটিকে ডাকলেন। উটটি নিচু হয়ে ঠোঁট মাটির উপর লাগিয়ে তাহাঁর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তখন তিনি বলিলেনঃ`তোমরা এর লাগাম আনো।’ তারপর তিনি একে লাগাম পরালেন এবং তার মালিককে ফিরিয়ে দিলেন। পরে আমাদেরকে লক্ষ্য করে তিনি বলিলেনঃ “আসমান হতে জমিন পর্যন্ত যা কিছু আছে, সকলেই জানে যে, আমি আল্লাহর রাসূল। কেবলমাত্র জ্বিন ও মানুষের মধ্য থেকে অবাধ্যরা ব্যতীত।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জাইয়্যেদ [উত্তম]।
তাখরিজঃ আবদ ইবনু হুমাইদ, হাদিস আল মুসনাদ ১১২২; আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ ৩/৩১০; ইবনু আবী শাইবা নং ১১১৬৮।
আদ দারেমী নং – ১৯. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একদা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট একটি ছেলেসহ একজন মহিলা এলো। সে বললো, ইয়া রাসূলূল্লাহ, আমার এ ছেলেটিকে জিনে ধরেছে। সে সকালে খাওয়ার সময় এবং সন্ধায় খাওয়ার সময় তার উপর আক্রমণ চালায় বা প্রভাব বিস্তার করে। ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। তখন রাসূল সাঃআঃ তার বুকে হাত দিয়ে মাসেহ করে দিলেন এবং তার জন্য দু’আ করিলেন। অতঃপর সে অনেকখানি বমি করলো। তখন তার ভেতর থেকে কালো বাচ্চার মত কিছু একটা বের হয়ে দৌড়ে চলে গেল।{1}
{1} তাহকিকঃ সনদ জঈফ, ফারকদ সাবাখী’র কারণে।
তাখরিজঃ আহমদ, হাদিস আল মুসনাদ ১/২৩৯, ২৫৪, ২৬৮; তাবারানী, মু’জামুল কাবীর, ১২/৫৭ নং ১২৪৬০; বায়হাকী, দালাইল ৬/১৮২।
আদ দারেমী নং – ২০. হাদিসের তাহকীকঃ হাসান
জাবির ইবনু সামুরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ`আমি [নবী হিসেবে] প্রেরিত হওয়ার পূর্ব থেকেই মক্কার একটি পাথরকে আমি চিনি, যে আমাকে সালাম দিত, নিশ্চয় সেটিকে আমি এখনও চিনি।’{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জাইয়্যেদ [উত্তম]।
তাখরিজঃ আহমদ, হাদিস আল মুসনাদ ৫/৮৯, ৯৫, ১০৫; মুসলিম, সহিহ ২২৭৭; তিরমিযী ৩৬২৮ ও অন্যান্যরা ।
আদ দারেমী নং – ২১. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আলী ইবনু আবু তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মক্কায় ছিলাম। একদা তাহাঁর সাথে মক্কার পার্শ্ববর্তী কোন এক অঞ্চলের দিকে বের হয়েছিলাম। তখন আমরা পাহাড় ও গাছপালার মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাম। আমরা যে গাছ কিংবা যে পাহাড়কেই অতিক্রম করতাম, সে গাছই কিংবা পাহাড়ই বলে উঠতঃ আস্ সালামু আলাইকা, ইয়া রসূলুল্লাহ!{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদে একজন জঈফ ও একজন অজ্ঞাত রাবী রয়েছে। তবে অন্য সনদে তাবারানী, আওসাতে [৬/২০৬ নং ৫৪২৮] অন্য রাবী হতে হাসান সনদে বর্ণনা করিয়াছেন।
তাখরিজঃ তিরমিযী ৩৬৩০; বায়হাকী, দালাইল২/১৫৩-১৫৪।
আদ দারেমী নং – ২২. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
শিমর ইবনু আতিয়্যা কর্তৃক মুযাইনা কিংবা জুহাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ ফজরের সালাত আদায় করে দেখলেন সেখানে প্রায় একশটি নেকড়ে। তাদের প্রতিনিধিগণ নিতন্বের উপর ভর দিয়ে বসে রয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ লোকদেরকে বলিলেনঃ তোমাদের খাদ্য থেকে সামান্য কিছু এদেরকে দাও, তাহলে অন্যগুলো থেকে নিরাপদে থাকিবে। সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে [নিজেদের সেগুলির] প্রয়োজন রয়েছে বলে অভিযোগ করিলেন। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`তাদেরকে এ খবর জানিয়ে দাও।’ তিনি বলেন, সেগুলোকে তা জানিয়ে দেয়া হল। ফলে তারা বিলাপ করিতে করিতে বের হয়ে গেল।{1}
{1} তাহকিকঃ রাবীগণ সকলেই নির্ভযোগ্য। এর অনেক শাহিদ রয়েছে যা একে অপরকে শক্তিশালী করে।
তাখরিজঃ তাবারাণী, মু’জামুল কাবীর যেমন বলেছেন ইবনু কাছীর`বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া’ [৬/১৪৬] এ।
আদ দারেমী নং – ২৩. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ ভারাক্রান্ত মনে বসে ছিলেন, এমতাবস্থায় জিবরীল আলাইহিস সালাম তাহাঁর নিকট আসলেন। আর তখন মক্কার কুরাইশদের অত্যাচারে তিনি রক্তে রঞ্জিত ছিলেন। জিবরীল বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ, আপনি কি চান আমি আপনাকে কোন নিদর্শন দেখাই? তিনি বলিলেনঃ`হাঁ’। তখন তিনি [জিবরীল] তাহাঁর পিছনের একটি গাছের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, আপনি একে ডাকুন। তখন তিনি গাছটিকে ডাকলেন আর সেটি চলে আসল এবং তাহাঁর সামনে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর তিনি [জিবরীল] বলিলেন, আপনি একে ফিরে চলে যেতে নির্দেশ দিন। তখন তিনি একে ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন আর সঙ্গে সঙ্গে সেটি আপন স্থানে ফিরে চলে গেল। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`‘আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে, আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ ইবনু মাজাহ ৪০২৮; আহমদ, হাদিস আল মুসনাদ ৩/১১৩; ইবনু আবী শাইবা ১১/৪৭৮-৪৭৯ নং ১১৭৮১; আবী ইয়ালা নং ৩৬৮৫, ৩৬৮৬।
আদ দারেমী নং – ২৪. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী আমির হতে এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট এলে তিনি লোকটিকে বলিলেনঃ`আমি কি তোমাকে কোন নিদর্শন দেখাব না?’ লোকটি বলিল, অবশ্যই দেখাবেন। তখন তিনি বলিলেনঃ`যাও, ঐ খেজুর গাছটিকে ডেকে নিয়ে এসো।’ তখন সে গাছটিকে ডাকলো এবং গাছটি লাফিয়ে তার সামনে চলে এলো। লোকটি তাঁকে বললো, আপনি একে ফিরে যেতে বলুন। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এটিকে বলিলেনঃ`ফিরে যাও।’ তখন সেটি ফিরে তার আপন স্থানে ফিরে গেল। এই ঘটনা দেখার পর সেই লোকটি তার সম্প্রদায় বনী আমিরকে উদ্দেশ্য করে বললো, হে বনী আমির, আজকের মতো এই লোকটির চেয়ে বড় যাদুকর আমি আর কাউকে দেখিনি।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ। হাকিম একে সহিহ বলেছেন ও যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন।
তাখরিজঃ তিরমিযী, ৩৬৩২; আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ ১/২২৩; হাকিম ২/৬২০; তাবারানী, আল কাবির ১২/১১০ নং ১২৬২২।
পরিচ্ছেদঃ ৫. নবী সাঃআঃ-এর আঙুলের মাঝ থেকে পানি প্রবাহিত করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাকে যে সম্মানিত করিয়াছেন তার বর্ণনা
আদ দারেমী নং – ২৫. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী সাঃআঃ বিলালকে [ওযুর পানি আনার জন্য] ডাকলেন। তখন বিলাল পানির খোঁজ করিলেন, তারপর ফিরে এসে বলিলেন, না, আল্লাহর কসম, কোথাও পানি পেলাম না। তখন নবী সাঃআঃ বলিলেনঃ`পানির কোন পাত্র আছে কি?’ তখন বিলাল তাঁকে একটি পাত্র দিলে তিনি তাতে তার দুই হাতের তালু বিছিয়ে দিলেন। তখন তাহাঁর হাতের তালুর নিচ থেক ঝর্ণা প্রবাহিত হতে লাগল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন সেই পানি থেকে ইবনু মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু পান করিতেন এবং অন্যান্যরা ওযু করত।{1}
{1} তাহকিকঃ শুয়াইব ইবনু ছাফওয়ান ব্যতীত এর সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। তিনি স্মৃতিশক্তি এলোমেলো হয়ে যাওয়ার আগে না পরে বর্ণনা করিয়াছেন তা জানা যায় না। তবে`নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতের আঙুল থেকে পানি প্রবাহের ঘটনা সংক্রান্ত হাদিস সহিহ, যা বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করিয়াছেন।
তাখরিজঃ আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ ১/২৫১, ৩২৪; বায়হাকী দালাইল ৪/১২৮; তাবারানী, আল কাবির ১২/৮৭ নং ১২৫৬; বাযযার [কাশফুল আসতার ৩/১৩৬-১৩৭]।
আদ দারেমী নং – ২৬. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাথে কোন যুদ্ধে কিংবা সফরে ছিলাম। সেদিন আমাদের দলে লোকসংখ্যা ছিল দুইশত দশ জনেরও কিছু বেশি। পথিমধ্যে সালাতের সময় এসে গেল। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`লোকদের নিকট পবিত্রতার উপকরণ [তথা পানি] আছে কি?’ [এই কথা শুনে] এক ব্যক্তি একটি পাত্র নিয়ে দৌড়ে এল, সেই পাত্রে সামান্য কিছু পানি ছিল। এছাড়া আর কারও নিকটই কোন পানি ছিল না। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ সেই পানিটুকু একটি পাত্রে ঢাললেন। তারপর তিনি সুন্দরভারে ওযু করিলেন, তারপর ওযু শেষ করে পাত্রটি রেখে চলে গেলেন। অমনি লোকেরা এ পাত্রটির উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল এবং বলিতে লাগলো, মুছে নাও, মুছে নাও। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন তাদেরকে এ কথা বলিতে শুনলেন তখন তিনি বলিলেনঃ`ধীরে সুস্থে কর।’ অতঃপর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ পানি ও পাত্রের মধ্যে তাহাঁর হাতের তালু স্থাপন করিলেন এবং বলিলেনঃ`বিসমিল্লাহ। তোমরা পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন কর।’
[বর্ণনাকারী বলেন], সেই সত্ত্বার কসম, যিনি আমার দৃষ্টির ব্যাপারে আমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন, আমি দেখেছি পানির ঝর্ণা তাহাঁর আঙুলসমূহের মাঝ থেকে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর তারা সকলে ওযু শেষ করার আগ পর্যন্ত তিনি তাহাঁর হাত উঠান নি।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ, ৩/২৯২, ৩৫৮; ইবনু আবী শাইবা ১১/৪৭৪ নং ১১১৭২; বায়হাকী, দালাইল ৪/১১৭-১১৮; ইবনু খুযাইমা নং ১০৭।
আদ দারেমী নং – ২৭. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমরা একদা পিপাসায় কাতর অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট ছুটে গেলাম। তখন তিনি একটি তামার পাত্রে তাহাঁর একটি হাত রাখলেন, তখন তাহাঁর আঙ্গুলের ফাঁকসমূহের মধ্য থেকে ঝর্ণাধারার মত [পানি] উথলে উঠতে লাগল। তিনি বলিতে লাগলেনঃ`তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করো অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলো।’ অতঃপর আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলাম এবং তা আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেল।
আমর ইবনু মুররাহ’র হাদীসে রয়েছেঃ`আমরা জাবিরকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা সংখ্যায় কত ছিলেন? তিনি বলিলেন, আমরা সংখ্যায় দেড় হাজার লোক ছিলাম, আর যদি আমরা এক লক্ষও হতাম তবুও তা আমাদের জন্য যথেষ্ট হত।’{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ। এটি বুখারী-মুসলিমের হাদিস।
তাখরিজঃ বুখারী ৩৫৭৬, ৪১৫২, ৫৬৩৯; মুসলিম [৭২]১৮৫৬, [৭৩] ১৮৫৬; আহমাদ ৩/৩২৯, ৩৬৫।
আদ দারেমী নং – ২৮. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাহাবীগণ তাহাঁর নিকট পিপাসার অভিযোগ করিলেন। [সাহাবীদের এই অভিযোগ শুনে] তিনি একটি বড় পাত্র চাইলেন। তারপর তাতে কিছু পানি ঢাললেন এবং রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাতে একটি হাত রাখলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমার মনে হচ্ছিল, যেন আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর আঙ্গুলসমূহের মাঝ থেকে ঝর্ণাধারার মত পানি নির্গত হতে দেখছিলাম এবং লোকদের সকলের পানি পান করা শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা পানি পান করেই যাচ্ছিল।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ
তাখরিজঃ পূর্বের হাদিসের অনুরূপ।
আদ দারেমী নং – ২৯. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আলকামা রাহিমাহুল্লাহ আব্দুল্লাহ [ইবনু মাসউদ] রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন চন্দ্রগ্রহণের সংবাদ শুনলেন, তখন তিনি বলেনঃ আমরা মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাহাবীগণ এ সকল নিদর্শনকে বরকতের বিষয় বলে মনে করতাম, আর তোমরা একে ভীতি প্রদর্শনের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করছ। একদা আমরা রসূলুল্লাহ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে ছিলাম, তখন আমাদের সাথে কোন পানি ছিল না। তখন রসূলুল্লাহ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`খোঁজ কর, কার নিকট অতিরিক্ত পানি আছে।’ তারপর তাহাঁর নিকট পানি আনা হল। তিনি তা পাত্রে ঢাললেন, তারপর তার মধ্যে তাহাঁর হাতের তালু স্থাপন করিলেন। ফলে তাহাঁর আঙ্গুলসমূহ হতে পানি উথলে উঠতে লাগল। তখন তিনি বলিলেনঃ`বরকতময় পবিত্রকারী পানির দিকে এসো, আর বরকত তো আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।’ তারপর আমরা পান করলাম।
আব্দুল্লাহ বলেনঃ আমরা খাদ্য গ্রহণের সময় খাবারের তাসবীহ পড়া শুনতে পেতাম।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ সহিহ বুখারী ৩৫৭৯, ইবনু আবী শাইবা, ১১/৪৭৪ নং ১১৭৭১; বায়হাকী, দালাইল ৪/১২৯।
আদ দারেমী নং – ৩০. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সময় একদা ভূমিকম্প হল। তখন তাকে এ খবর দিলে তিনি বলিলেনঃ আমরা মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাহাবীগণ এ সকল নিদর্শনকে বরকতের বিষয় বলে মনে করতাম, আর তোমরা একে ভীতি প্রদর্শনের লক্ষণ হিসেবে গণ্য কর। একদা আমরা রসূলুল্লাহ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ সাথে কোন এক সফরে ছিলাম, তখন সালাতের সময় এসে গেল, কিন্তু আমাদের সাথে সামান্য একটু ব্যতীত কোন পানি ছিল না। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ একটি পাত্রে করে সেই পানিটুকু নিয়ে আসতে বলিলেন এবং সেই পাত্রে তিনি তাহাঁর হাতের তালু স্থাপন করিলেন। তখন তাহাঁর হাতের আঙ্গুলসমূহের মাঝ থেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল। তারপর তিনি ডেকে বলিলেনঃ`ওযু করিতে আগ্রহী ব্যক্তিগণ এদিকে এসো। আর বরকত তো আল্লাহর পক্ষ হতেই হয়ে থাকে।’ তখন লোকেরা উপস্থিত হয়ে ওযু করিতে লাগল। আমি কেবল যা পান করিতে পারলাম তা ব্যতীত নিজের ব্যাপারে পানির জন্য চিন্তা করিনি, শুধু তাহাঁর একথার জন্য,`বরকত তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়’।
[উর্ধ্বতন রাবী বলেন] আমি এ হাদিস সালিম বিন আবুল জা’দ-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বলিলেনঃ তারা ছিলেন পনেরশ’ জন। {1}
{1} তাহকিকঃ হাদিসটি সহিহ।
তাখরিজঃ পাওয়া যায়নি।
পরিচ্ছেদঃ ৬. মিম্বারের কান্নার মাধ্যমে নবী সাঃআঃকে সম্মানিত করার বিবরণ
আদ দারেমী নং – ৩১. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাঃআঃ একটি কাষ্ঠখণ্ডের নিকট দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। তারপর যখন মিম্বার [বানিয়ে] নিলেন, তখন কাষ্ঠখণ্ডটি কান্না জুড়ে দিল যতক্ষণ না তিনি সেটির কাছে এসে তার উপর হাত বুলিয়ে না দিলেন।{1}
{1} তাহকিকঃ হাদিসটির সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ বুখারী, ৩৫৮৩; তিরমিযী ৫০৫।
আদ দারেমী নং – ৩২. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
ইবনু বুরাইদা তার পিতা বুরাইদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ যখন খুতবা দিতেন তখন তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে তাহাঁর কষ্ট হত। তখন তাহাঁর জন্য খেজুর গাছের একটি কাষ্ঠ খণ্ড নিয়ে আসা হল এবং তিনি যেখানে দাঁড়াতেন তার পাশে গর্ত করে খাড়া ভাবে পূঁতে দেওয়া হল। অতঃপর তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে খুতবা দেওয়ার সময় সেটিতে ভর করে ঠেস দিয়ে দাঁড়াতেন। এর প্রতি মদীনায় আগত এক ব্যক্তির দৃষ্টি আকৃষ্ট হল। সে নবী সাঃআঃকে ঐ কাষ্ঠখণ্ডটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। সে তার পাশে বসা এক ব্যক্তিকে বলিল, যদি জানতে পারতাম যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য উপকারী কিছু করলে তিনি আমার প্রশংসা করবেন, তাহলে অবশ্যই আমি তাহাঁর জন্য একটি বসার জায়গা বানিয়ে দিতাম, যার উপর তিনি দাঁড়াতে পারতেন। তিনি ইচ্ছা করলে বসতে পারতেন, আবার ইচ্ছা করলে দাঁড়াতেও পারতেন।
একথা নবী সাঃআঃ-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলিলেনঃ`তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো।’ তাকে তাহাঁর নিকট নিয়ে আসা হলে তাকে তিন বা চার ধাপ উঁচু এই [মিম্বার]টি বানানোর নির্দেশ দিলেন, যা এখনকার মদীনার [মসজিদে নববীর] মিম্বার। [সেটি বানানো হলে] নবী সাঃআঃ সেটিতে বসে বেশ আরাম পেলেন। যখন নবী সাঃআঃ এই কাষ্ঠ খণ্ডটিকে ছেড়ে তাহাঁর জন্য বানানো মিম্বারে আরোহন করিলেন, তখন কাষ্ঠ খণ্ডটি অস্থির হয়ে এমনভাবে কাঁদতে লাগলো, যেভাবে উটনী নবী সাঃআঃ-এর থেকে পৃথক হওয়ার সময় কেঁদেছিল।
ইবনু বুরাইদা তার পিতা হতে তাহাঁর ধারণা অনুযায়ী আরও বর্ণনা করেন যে, নবী সাঃআঃ যখন কাষ্ঠ খণ্ডটির কান্না শুনতে পেলেন, তখন তিনি তার সেটির কাছে ফিরে গিয়ে এর গায়ে হাত রেখে বলিলেনঃ`তুমি সিদ্ধান্ত নাও [কোনটি চাও], তুমি যেখানে ছিলে সেখানে তোমাকে পূঁতে রাখব, ফলে তুমি যেমন ছিলে তেমনই থাকিবে নাকি আমি তোমাকে জান্নাতে রোপণ করব, আর তুমি সেখানকার নদী ও ঝর্ণা থেকে পান করিবে এবং তোমার থেকে অনেক সুন্দর চারা গাছ হইবে এবং ফল-ফলাদি দেবে, আল্লাহর ওলীগণ তোমার ফল-ফলাদি ও খেজুর খাবে, তুমি যদি চাও তবে আমি তাই করব?’
তাহাঁর আরও ধারণা, তিনি নবী সাঃআঃকে সম্ভবত আরও বলিতে শুনেছেন, তিনি সেটিকে বলেছেনঃ`হাঁ, আমি দু’বার তাই করব।’ তখন নবী সাঃআঃকে জিজ্ঞাসা করা হলো, [যে সে কোনটি বেছে নিয়েছে?], তখন তিনি বলিলেনঃ`সে বেছে নিয়েছে যে, আমি যেন তাকে জান্নাতে রোপণ করে দেই।”{1}
{1} তাহকিকঃ এখানে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।
তাখরিজঃ [মুহাক্কিক্ব এখানে তার তাহক্বীক্বকৃত হাইছামীর মাজমাউয যাওয়াইদ [৩১৩২ নং] হাদিসের আলোচনা দেখিতে বলেছেন।]
আদ দারেমী নং – ৩৩. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিম্বার তৈরীর পূর্বে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ একটি কাষ্ঠ খণ্ডের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন। তারপর যখন মিম্বার তৈরী করা হল, তখন এই কাষ্ঠখণ্ডটি এমনভাবে কাঁদতে লাগল যে, আমরা তা শুনতে পেলাম। তখন রসূলুল্লাহ এটির উপর তাহাঁর হাত রাখলেন, ফলে এটি শান্ত হল।”{1}
{1} তাহকিকঃ [মুহাক্কিক্ব এ সনদ সম্পর্কে কোন মতামত দেননি]। হাফিজ ইবনু কাছীর এর সনদকে জাইয়্যেদ [উত্তম] বলেছেন। [ফাতহুল মান্নান] তবে এটি অপর সনদে ইমাম আহমদ জাবির রাঃআঃর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, যেটি সহিহ হাদিস। তাছাড়া ইমাম বুখারীও এটি বর্ণনা করিয়াছেন [নং ৩৫৮৫]।
তাখরিজঃ আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ ৩/২৯৩; বুখারী ৪৪৯; সহিহ ইবনু হিব্বান ৬৫০৮।
আদ দারেমী নং – ৩৪. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ একটি কাষ্ঠ খণ্ডের সাথে হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন। তারপর যখন মিম্বার তৈরী করা হল, তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ মিম্বারের উপর বসলেন, তখন সেটি [কাষ্ঠখণ্ডটি] দশ মাসের গর্ভবতী উটনীর ন্যায় [শব্দ করে] কান্না জুড়ে দিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ এটির উপর তাহাঁর হাত রাখলেন, ফলে তা শান্ত হয়ে গেল।{1}
{1} তাহকিকঃ সহিহ।
তাখরিজঃ পূর্ববর্তী হাদিসটি দেখনু।
আদ দারেমী নং – ৩৫. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কাষ্ঠ খণ্ডটি এমনভাবে কাঁদতে লাগল, যেভাবে বাচ্চা হারানো উটনী কেঁদে থাকে।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ আহমদ ৩/২৯৩; আবী ইয়ালা, হাদিস আল মুসনাদ নং ২১৭৭; পূর্ণ তাখরীজের জন্য পূর্বের হাদিসটি দ্রঃ
আদ দারেমী নং – ৩৬. হাদিসের তাহকীকঃ হাসান
তুফাইল তার পিতা উবাই ইবনু কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, মাসজিদ যখন ছাদবিহীন ছিল, তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ একটি কাষ্ঠখণ্ডের নিকট দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিতেন এবং সেটির উপর ভর দিয়ে খুতবা দিতেন। একজন সাহাবী বলিলেন, আমরা কি আপনার [মসজিদের] জন্য একটি মাচা বানিয়ে দেব না, যার উপর দাঁড়ালে জুমু’আর দিন লোকজন আপনাকে দেখিতে পায় এবং আপনার খুতবা শুনতে পায়? তিনি বলিলেনঃ`হাঁ’। তখন তাহাঁর জন্য তিনটি স্তরবিশিষ্ট মিম্বার তৈরী করা হল। মিম্বার তৈরী হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ যে স্থানে [সালাত আদায় করিতেন ও খুতবা দিতেন], সে স্থানে স্থাপন করা হল।
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর যখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এসে মিম্বারের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য একে [কাষ্ঠখণ্ডটিকে] অতিক্রম করে আগে বেড়েছেন, ঠিক তখনই তা আর্তনাদ করে ফেটে ভেঙ্গে পড়ল। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এটির উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, অতঃপর সেটি শান্ত হল। তারপর তিনি মিম্বারে ফিরে এলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে যখনই তিনি সালাত আদায় করিতেন, এর নিকটেই আদায় করিতেন। তারপর যখন মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হল, তখন উবাই ইবনু কা’ব সেই কাষ্ঠ খণ্ডটি নিয়ে গেলেন। যতদিন তা জীর্ণ না হয় এবং উইপোকা খেয়ে টুকরা টুকরা না করেছিল, ততদিন তা তার নিকটই ছিল।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ হাসান।
তাখরিজঃ আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ ৫/১৩৮-১৩৯; ইবনু মাজা ১৪১৪; আবু নুয়াইম, আদ দালাইল ৩০৬।
আদ দারেমী নং – ৩৭. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ একটি কাষ্ঠখণ্ডের নিকট [দাঁড়িয়ে] খুতবা দিতেন। তারপর একজন রোমান ব্যক্তি এসে বলিল, আমি আপনার জন্য একটি মিম্বার বানিয়ে দিব যার উপরে [দাঁড়িয়ে] আপনি খুতবা দিবেন। তারপর সে তাহাঁর জন্যে একটি মিম্বার তৈরী করিল, যা তোমরা দেখছ। তারপর যখন নবী সাঃআঃ খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বারের উপর দাঁড়ালেন, তখন উটনী তার বাচ্চার জন্য যেভাবে কাঁদে, তেমনিভাবে কাষ্ঠখণ্ডটি কান্না জুড়ে দিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ [মিম্বার থেকে] নেমে সেটির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং একে আলিঙ্গন করিলেন, ফলে তা শান্ত হয়ে গেল। তখন আদেশ দেয়া হলো, এর জন্য একটি গর্ত খুঁড়ে একে দাফন করে দিতে হইবে।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ, মুজালিদ বিন সাঈদের দুর্বলতার কারণে।
তাখরিজঃ ইবনু আবী শাইবা, ১১/৪৮৬ নং ১১৭৯৮; আবী ইয়ালা [১০৬৮] সংক্ষেপে হাসান সনদে।
আদ দারেমী নং – ৩৮. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
হাসান রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী রসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন মদীনায় আগমন করিলেন তখন লোকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি একটি কাষ্ঠখণ্ডের সাথে হেলান দিতেন। তারপর যখন তার চারিপাশে অনেক লোকের সমাগম হল, আর তিনি লোকদেরকে [তাহাঁর কথা] শুনাবার ইচ্ছা করিলেন, তখন তিনি বলিলেনঃ`আমার জন্য এমন একটি জিনিস বানাও, যার উপর আমি আরোহণ করে [খুতবা দিতে] পারি।’ তারা বলিলেনঃ হে আল্লাহর নবী, সেটি কেমন হইবে? তিনি বলিলেনঃ`মুসা’র মাচা যেমন ছিল, ঠিক তেমনি একটি মাচা। অতঃপর যখন তারা তাহাঁর জন্য [মিম্বার] তৈরী করিলেন, তখন তিনি বলিলেনঃ`চমৎকার!’ আল্লাহর কসম! তখন সেই কাষ্ঠখণ্ডটি কান্না জুড়ে দিল। হাসান বলেন, সুবহানাল্লাহ! এমন লোকদের খুঁজে পাওয়া যাবে কি যাদের অন্তর শুনবে [উপদেশ গ্রহণ করিবে]? আবূ মুহাম্মদ বলেনঃ`অর্থাৎ এ [ঘটনা]টি।’{1}
{1} তাহকিকঃ মুরসাল হিসেবে এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ আবী ইয়ালা, হাদিস আল মুসনাদ ২৭৫৬; সহিহ ইবনু হিব্বান ৬৫০৭; হাইছামী, মাওয়ারিদুয যাম’আন ৫৭৪। আলবানী সহীহাহ ৬১৬।
দারেমী নং – ৩৯. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিম্বার বানানোর পূর্বে নবী সাঃআঃ একটি কাষ্ঠখণ্ডের নিকট [দাঁড়িয়ে] খুতবা দিতেন। তারপর যখন তিনি মিম্বার বানালেন এবং সেটির দিকে ফিরে গেলেন, তখন কাষ্ঠখণ্ডটি কান্নাজুড়ে দিল। ফলে তিনি এটিকে আলিঙ্গন করিলেন, অতঃপর এটি শান্ত হল। আর তিনি বলিলেনঃ`আমি যদি একে আলিঙ্গন না করতাম, তবে অবশ্যই তা কিয়ামত পর্য়ন্ত [এভাবে] কাঁদতে থাকত।’{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ আহমাদ, হাদিস আল মুসনাদ ১/২৪৯, ২৬৩, ২৬৭; ইবনু আবী শাইবা ১১/৪৮৪ নং ১১৭৯৫; আবদ্ ইবনু হুমাইদ ১৩৩৬; বুখারী, আল কাবির ৭/২৬; তাবারানী, মু’জামুল কাবীর ১২/১৮৭ নং ১২৮৪১।
দারেমী নং – ৪০. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ তিরমিযী ৩৬৩১; ইবনু মাজাহ ১৪১৫; সহিহ ইবনু হিব্বান ৬৫০৭।
দারেমী নং – ৪১. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
সাহল ইবনু সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যে কাষ্ঠখণ্ডটির নিকট রসূলুল্লাহ সাঃআঃ [খুতবার সময়] দাঁড়াতেন, সেটি কাঁন্না জুড়ে দিয়েছিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ সেটির নিকট গেলেন এবং সেটির উপর তাহাঁর হাত রাখলেন, এরপর সেটি শান্ত হল।{1}
{1} তাহকিকঃ এ সনদটি জঈফ, মাসউদীর দুর্বলতার কারণে। তবে এ হাদিসটি [অন্য সনদে] বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করিয়াছেন।
তাখরিজঃ বুখারী ৯১৭; মুসলিম ৫৪৪; ইবনু মাজাহ ১৪১৬; ইবনু আবী শাইবাহ ১১/৪৮৫ নং ১১৭৯৬।
দারেমী নং – ৪২. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করিয়াছেন, নবী সাঃআঃ জুমু’আর দিনে মসজিদের একটি কাষ্ঠখণ্ডের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে লোকদের মাঝে খুতবা দিতেন। তারপর এক রোমান ব্যক্তি এসে বলিল, আমি আপনার জন্য একটি কিছু বানিয়ে দিব যার উপরে বসলে মনে হইবে যেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন? তারপর সে তাহাঁর জন্যে একটি মিম্বার তৈরী করিল, যার [নিচের দিকে] দু’টি ধাপ ছিল, আর [উপরের দিকে] তৃতীয় ধাপে তিনি বসতেন। অতঃপর যখন আল্লাহর নবী সাঃআঃ সেই মিম্বারে বসলেন, তখন কাষ্ঠখণ্ডটি ষাঁড়ের মত আর্তনাদ করিতে লাগলো, এমনকি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর শোকে পুরো মসজিদ প্রকম্পিত হয়ে উঠল। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ মিম্বার হতে নেমে সেটির দিকে আসলেন এবং আর্তনাদরত কাষ্ঠখণ্ডটিকে আলিঙ্গন করিলেন। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ সেটিকে আলিঙ্গন করা মাত্র তা শান্ত হয়ে গেল। তারপর তিনি বলেনঃ`সেই মহান সত্ত্বার কসম, যার হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি যদি একে আলিঙ্গন না করতাম, তবে অবশ্যই তা কিয়ামত পর্যন্ত রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর শোকে এভাবে কাঁদতে থাকত।’ এরপর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এটিকে দাফন করার নিদের্শ দিলেন, ফলে একে দাফন করে দেয়া হল।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ আহমদ, ৩/২২৬; তিরমিযী ৩৬৩১; ইবনু মাজাহ ১৪১৫।
পরিচ্ছেদঃ ৭. খাদ্যে বরকত প্রদানের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে
দারেমী নং – ৪৩. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আব্দুল ওয়াহেদ বিন আইমান আল মাক্কী তার পিতা হতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেন, আমি জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা-কে বললাম, আমার নিকট আপনি এমন একটি হাদিস বর্ণনা করুন, যা আপনি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ থেকে শুনেছেন। আমি আপনার সূত্রে তা বর্ণনা করব। জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলিলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন করছিলাম। আমরা তিনদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম, আর আমরা ছিলাম অভুক্ত। আর খাওয়ার কোন অবকাশও আমাদের ছিল না। [হঠাৎ] পরিখার ভেতরে একটি শক্ত পাথর দেখা দিল। আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! পরিখার ভেতর একটি শক্ত পাথর দেখা দিয়েছে, আমরা সেটির উপর পানি ছিটিয়ে দিয়েছি। অতঃপর নবী সাঃআঃ উঠে দাঁড়ালেন। তখন তাহাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল। তিনি কোদাল কিংবা বেলচা তুলে নিলেন, তারপর তিনবার`বিসমিল্লাহ’ বলে সেটিকে আঘাত করিলেন। ফলে পাথরটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকণায় পরিণত হয়ে গেল।
আমি রাসূল্লাহ সাঃআঃ-এর [ক্ষুধার্ত] অবস্থা লক্ষ্য করে বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমাকে একটু [বাড়িতে যাওয়ার] অনুমতি দিন। তিনি অনুমতি দিলেন। বাড়ি এসে স্ত্রীকে বললাম, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে যে অবস্থায় দেখে এলাম তাতে ধৈর্য ধারণ করিতে পারছি না। তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলিল, আমার কাছে মাত্র এক সা’ যব এবং একটি ছাগলের বাচ্চা রয়েছে। তিনি বলেন, অতঃপর আমরা যব পিষলাম ও ছাগলের বাচ্চাটি যবেহ্ করে তার চামড়া ছিলে তা হাঁড়িতে চড়ালাম এবং যব দিয়ে আটা তৈরী করলাম। তারপর আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ তাহাঁর সাথে থাকার পর পূনরায় বাড়ি যাবার জন্য তাহাঁর অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি বাড়িতে ফিরে দেখলাম আটা খামির বানানোর উপযোগী হয়েছে, তখন আমি আমার স্ত্রীকে রুটি বানাবার নির্দেশ দিয়ে হাঁড়ি চুলায় চড়ালাম।’
[আবী আব্দুর রহমান বলেনঃ শব্দটি ছিল`الأثافي’ কিন্তু আসলে সেটিই তেমনি [আমি পেয়েছি]।
তিনি বলেনঃ তারপর আমি নবী সাঃআঃ-এর নিকট এসে তাঁকে বললাম, আমাদের নিকট সামান্য কিছু খাদ্য রয়েছে, যদি আপনি ও আপনার সঙ্গে আরও একজন কিংবা দু’জন লোক নিয়ে আমার সাথে যেতেন! তিনি জিজ্ঞেস করিলেনঃ`কী পরিমাণ খাবার আছে?’ আমি বললাম, এক সা’ যব ও একটি ছাগলের বাচ্চা। তিনি বলিলেনঃ`তুমি বাড়ি যাও, তোমার স্ত্রীকে বল, আমি না আসা পর্যন্ত সে যেন চুলা থেকে গোশতের হাঁড়ি না নামায় এবং তন্দুর থেকে রুটির বের না করে।’ তারপর লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলিলেনঃ`তোমরা জাবিরের বাড়িতে চলো।’ একথা শুনে এমনভাবে লজ্জিত হলাম যে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। স্ত্রীকে বললাম, তোমার সর্বনাশ হোক! রাসূলূল্লাহ সাঃআঃ তাহাঁর সকল সঙ্গী-সাথীসহ আসছেন। স্ত্রী জিজ্ঞেস করিল, নবী সাঃআঃ কি তোমাকে খাদ্যের পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? আমি বললাম, হাঁ। তখন সে বলিল, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আমাদের কাছে যা আছে তা তো তাঁকে জানিয়েই দিয়েছ।
[তার কথা শুনে] আমার মনের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে গেল। বললাম, তুমি ঠিকই বলেছ। নবী সাঃআঃ এলেন এবং ভেতরে প্রবেশ করিলেন। তারপর সাথীদের বলিলেনঃ`তোমরা ভীড় করো না।’ তারপর তিনি হাড়িতে রাখা গোশত ও তন্দুরে রাখা রুটির বরকতের জন্য দু’আ করিলেন। তারপর আমরা তন্দুর থেকে রুটি নিয়ে টুকরা করে এবং হাঁড়ি থেকে গোশত নিয়ে তাদেরকে দিতে থাকলাম। নবী সাঃআঃ বলিলেনঃ`প্রত্যেক পাত্রে যেন সাত কিংবা আটজন করে বসে।’ তারা যখন খেতে থাকল, তখন আমরা তন্দুর ও হাঁড়ির ঢাকনা খুলে দেখলাম দু’টিই পূর্বে যেমন পূর্ণ ছিল, তেমনি রয়েছে। আমরা এরূপ করিতে থাকলাম অর্থাৎ আমরা তন্দুর ও হাঁড়ির ঢাকনা খুলে দেখতাম দু’টিই পূর্বের মত পরিপূর্ণ রয়েছে এমনকি সকল মুসলিম তৃপ্তির সাথে খাওয়ার পরও আরো কিছু খাদ্য উদ্বৃত্ত রইল। অতঃপর রাসূল সাঃআঃ আমাদেরকে বলিলেনঃ`অনেক লোক ক্ষুধার্ত রয়েছে, অতএব, তোমরা নিজেরা খাও এবং অন্যদেরকেও খাওয়াও।’ আমরা সেদিন সারাদিন খেয়েছি ও খাইয়েছি।
বর্ণনাকারী বলেন, তারা ছিলেন আটশ’ জনের মত, অথবা বলেছেন, তিনশ’ জনের মত। আইমান বলেন, আমি জানি না তিনি কোনটি বলেছিলেন।{1}
{1} তাহকিকঃ সনদ দুর্বল। তবে এটি সহিহ সনদে অন্যদের থেকে বায়হাকী তার`দালাইলুন নবুয়াত’-এ [৩/৪২২] বর্ণনা করিয়াছেন।
তাখরিজঃ ইবনু আবী শাইবা, ১১/৪৬৬-৪৬৯; বায়হাকী, দালাইল ৩/৪২২-৪২৪; অনুরূপ ঘটনা রয়েছে, বুখারী ২১৪৩; মুসলিম ২০৩৯।
দারেমী নং – ৪৪. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু তালহা উম্মু সুলাইমকে নির্দেশ দিলেন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর জন্য খাবার তৈরি করিতে। তারপর আবু তালহা আমাকে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট পাঠালেন। আমি এসে তাঁকে বললাম, আবু তালহা আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। তিনি লোকদেরকে বলিলেনঃ`তোমরা সবাই চলো।’ একথা বলে তিনি চলতে লাগলেন, লোকজনও তাহাঁর সাথে চলতে লাগলো। আবু তালহা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো শুধু আপনার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলিলেন, তুমি ভেবো না, চলো।’
তিনি বলেন, একথা বলে তিনি চলতে লাগলেন, লোকজনও তাহাঁর সাথে চলতে লাগলো। খাবার উপস্থিত করা হলে রাসূলূল্লাহ সাঃআঃ খাবারের উপর হাত রাখলেন এবং`বিসমিল্লাহ’ পড়ে বলিলেনঃ`দশজনকে আসতে বল।” তাদেরকে আসতে বলা হল। তিনি বলিলেনঃ`তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু কর।’ তারা সকলেই পরিতৃপ্তির সাথে খেয়ে চলে গেল। তারপর প্রথমবারের মত আবারও বিসমিল্লাহ বলে খাবারের উপর হাত রাখলেন এবং বলিলেনঃ`দশজনকে আসতে বল।’ তাদেরকে আনা হলে তিনি বলিলেনঃ`বিসমিল্লাহ বলে খেতে থাক।’ তারাও পরিতৃপ্তির সাথে খেয়ে চলে গেল। এভাবে তিনি আশি জনকে খাওয়ালেন।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ নিজে খেলেন, তার পরিবার-পরিজন খেলেন এবং তারপরও খাবার অবশিষ্ট রইল।{1}
{1} তাহকিকঃ সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ মালিক, ১৯; বুখারী ৪২২; ৩৫৭৮; মুসলিম ২০৪০; তিরমিযী ৩৬৩৪।
দারেমী নং – ৪৫. হাদিসের তাহকীকঃ হাসান
শাহর ইবনু হাওশাব, আবু উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য [গোশত] রান্না করেছিলেন। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে বলিলেনঃ`আমাকে সামনের একটি রান দাও।’ তিনি সামনের রানের গোশত পছন্দ করিতেন। তাঁকে সামনের রান দেয়া হল। আবার বলিলেনঃ`আমাকে সামনের রান দাও।’ তাঁকে সামনের রান দেয়া হল। তিনি আবারও বলিলেনঃ`আমাকে সামনের রান দাও।’ তখন আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! একটি ছাগলের সামনের রান কয়টি হয়? তিনি উত্তরে বলিলেনঃ`যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার কসম! তুমি যদি চুপ থাকতে তাহলে যতক্ষণ চাইতাম ততক্ষণ তুমি আমাকে সামনের রান দিতেই থাকতে।’{1}
{1} তাহকিকঃ সনদ হাসান।
তাখরিজঃ তাবারানী, কাবীর ২২/৩৩৫ নং ৮৪২; তিরমিযী, শামাইল ১৭০।
দারেমী নং – ৪৬. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ মুশরিকদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে বেরিয়েছিলেন। আমার পিতা আব্দুল্লাহ আমাকে বলিলেন, হে জাবির, তোমার জন্য জরুরী যে, তুমি যুদ্ধে না গিয়ে মদীনাবাসীর দেখাশুনা করিবে। এভাবে তুমি আমাদের পরিণতি কী হয় তা জানতে পারবে। আল্লাহর কসম! যদি আমার এ আশংকা না থাকত যে, আমার মৃত্যুর পর এতগুলো মেয়েকে [অভিভাবকবিহীন] রেখে যেতে হইবে, তবে অবশ্যই আমি পছন্দ করতাম যে, তুমি যুদ্ধে গিয়ে সামনে থেকে জিহাদ করে শহীদ হয়ে যাও। জাবির বলেন, আমি মদীনা দেখাশুনাকারীদের মাঝে রয়ে গেলাম। [পরে] দেখলাম আমার ফুফু আমার আব্বা ও মামার লাশ নিয়ে এলেন আমাদের কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করার জন্য। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, নবী সাঃআঃ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন নিহতদের লাশ ফেরত দিতে এবং তারা যেখানে নিহত হয়েছেন সেখানেই তাদেরকে দাফন করিতে। আমরা তাদের দু’জনের লাশ ফেরত দিলাম এবং তাদের নিহত হওয়ার স্থানে তাদেরকে দাফন করলাম।
মু’আবিয়া ইবনু আবী সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর শাসনামলে এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বলিলেন, হে জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, আপনার আব্বার কবর মু’আবিয়ার লোকজন খুঁড়ে ফেলেছে, তার লাশের কিছু অংশ বের হয়ে পড়েছে। কতিপয় লোক সেখানে গেল। আমিও সেখানে গেলাম। আমি আমার আব্বাকে ঠিক তেমনি পেলাম যেমন আমরা দাফন করেছিলাম। শাহাদাতের ক্ষত ছাড়া লাশের আর কোন বিকৃতি ঘটেনি।
জাবির বলেন, অতঃপর আব্বার লাশ পুনঃদাফন করে ফিরে এলাম। আব্বা জীবদ্দশায় কিছু খেজুর ঋণ নিয়েছিলেন। কিছু ঋণদাতা সেই ঋণ পরিশোধের জন্য আমাকে চাপ দিতে লাগলো। আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমার আব্বা অমুক দিন শহীদ হয়েছেন। তিনি কিছু খেজুর ঋণ করে গেছেন। কতিপয় পাওনাদার আমাকে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি চাই আপনি এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন যেন সামনের ফসল তোলার পূর্ব পর্যন্ত আমাকে তারা অবকাশ দেয়। তিনি বলেনঃ`ঠিক আছে, দুপুরের কাছাকাছি সময়ে আল্লাহ চান তো আমি তোমার কাছে যাবে।’ জাবির বলেন, তিনি আসলেন, তাহাঁর সাথে কয়েকজন সঙ্গীও ছিল। তারা সবাই ছায়ায় বসে পড়লেন। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এসে সালাম দিলেন এবং ভেতরে প্রবেশের জন্য অনুমতি চাইলেন। তারপর তিনি আমাদের নিকট এলেন। আমি আমার স্ত্রীকে বলে রেখেছিলাম, আজ দুপুরে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের নিকট আসবেন। তিনি যেন তোমাকে না দেখেন। তুমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে কোন কারণে কষ্ট দিবে না। তুমি তাহাঁর সাথে কথাও বলবে না।
তারপর আমি চাদর বিছিয়ে দিলাম এবং সেখানে একটি বালিশ রাখলাম। তিনি তাহাঁর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। আমার কাছে একটি ছাগল ছানা ছিল, সেটি ছিল আমার পোষা ও বেশ মোটাতাজা। আমার গোলামকে বললাম, এই ছাগলটি যবেহ করো এবং রসূলুল্লাহ সাঃআঃ ঘুম থেকে জেগে উঠার আগেই তাড়াতাড়ি বানিয়ে ফেল। আমি তোমার সাথে আছি। আমরা কাজ শেষ না করে আর বিশ্রাম নিলাম না। তখনও তিনি ঘুমে ছিলেন। আমি বললাম, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ জেগে ওযুর পানি চাইবেন। আমার ভয় হচ্ছে, তিনি ওযু করেই যদি চলে যান। ওযু শেষ করার সাথে সাথেই যদি তাহাঁর সামনে ছাগলের মাংস পেশ করা না যায়! তখন তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠে বলিলেনঃ`হে জাবির, আমাকে ওযুর পানি দাও।’ আমি বললাম, জ্বি, দিচ্ছি। তিনি ওযু শেষ করার আগেই তাহাঁর সামনে গোশত রাখা হল। তিনি আমার দিকে চাইলেন। তারপর বলিলেন, আবু বকরকে ডাকো। অতঃপর তিনি তাহাঁর সঙ্গীদেরকে ডেকে পাঠালেন।
জাবির বলেন, খানা এনে সামনে রাখা হলো। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ সেগুলোর ওপর হাত রেখে বলিলেনঃ বিসমিল্লাহ, তোমরা খাও। তারা সকলেই পরিতৃপ্তির সাথে খেলেন। তারপরও অনেক গোশত বেঁচে গেল। আল্লাহর কসম! বনী সালামার লোকজন তাদেরকে দেখছিলেন। তিনি তাদের কাছে তাদের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয় ছিলেন। তারা কাছে আসতে পারছিলেন না। তাদের ভয় ছিল, তারা না আবার [তাদের কোন কথা বা কাজের দ্বারা] তাঁকে কষ্ট দিয়ে ফেলেন! তারপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন, তাহাঁর সাথীরাও উঠে দাঁড়ালেন এবং তাহাঁর সামনে সামনে চলতে লাগলেন। তখন তিনি বলিলেনঃ`আমার পেছনের দিকটা ফেরেশতাদের জন্য ছেড়ে দাও।’ আমি তাহাঁর সাথে দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত যেতেই আমার স্ত্রী মাথা বের করে দিল। সে বেশ পর্দানশীন ছিল। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার ও আমার স্বামীর জন্য দু’আ করুন। তিনি বলিলেনঃ`আল্লাহ তোমার ও তোমার স্বামীর উপর রহমত করুন।’
তারপর বলিলেনঃ`অমুককে আমার নিকট ডেকে নিয়ে আস।’ অর্থাৎ যিনি ঋণ পরিশোধের জন্য আমাকে চাপাচাপি করছিল। তিনি তাকে বলিলেনঃ`জাবিরের পিতার উপর যে ঋণ ছিলো, তা পরিশোধের জন্য জাবিরকে আগামী ফসল তোলা পর্যন্ত অবকাশ দাও।’ সে বললো, আমি তা পারব না। সে টালবাহানা করিতে লাগলো। সে বললো, তা ইয়াতীমের সম্পদ। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`জাবির কোথায়?’ বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! এই যে আমি। তিনি বলিলেনঃ`আজওয়া খেজুর তাকে মেপে দাও। আর শীঘ্রই আল্লাহ তা পরিশোধ করে দেবেন।’ তারপর তিনি আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে তাকালেন। সূর্য্য তখন মাত্র হেলে পড়েছিল। তিনি বলিলেনঃ`হে আবু বকর! সালাত।’ বর্ণনাকারী বলেন, একথা বলেই তারা মসজিদের দিকে ধাবিত হলেন। আমি ঋণদাতাকে বললাম, তোমার পাত্র কাছে আন এবং আমি তাকে আজওয়া খেজুর মেপে দিতে লাগলাম। দেখা গেল, আল্লাহ তা পরিশোধ করে দিলেন এবং অনেক পরিমাণে খেজুর অতিরিক্ত থাকলো। আমি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত দ্রুত দৌড়ে মসজিদে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট গেলাম। আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তিনি মাত্র সলাত আদায় শেষ করিলেন।
অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার কাছে পাওনাদারকে তার প্রাপ্য খেজুর মেপে দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ তাঁকে তা পূর্ণ করে দিয়েছেন। এমনকি তারপরও অনেক পরিমাণে খেজুর আমাদের জন্য উদ্বৃত্ত থাকলো। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`উমার ইবনুল খাত্তাব কোথায়? [ডাক শুনে] তিনি দৌড়ে কাছে এলেন। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে বলিলেনঃ`জাবির ইবনু আব্দুল্লাহকে তার ঋণ ও খেজুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর।’ তিনি বলিলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করব না। কেননা, আমি জানি যে, আল্লাহই তাকে পরিশোধ করে দিবেন, আপনি যখন বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ তাকে পরিশোধ করে দিয়েছেন। এভাবে তিনি তিনবার এ কথার পুনরাবৃত্তি করিলেন। প্রত্যেকবারই তিনি বলিলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করব না। তৃতীয়বারের পর আর তিনি এর পুনরাবৃত্তি করেন নি। তখন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ`তোমার ঋণদাতা আর খেজুরের কী হল?’ আমি বললাম, আল্লাই তা পরিশোধ করে দিয়েছেন এবং সেই খেজুরে এত এত বরকত দিয়েছেন, আমাদের নিকট এত এত পরিমাণ রয়ে গেছে। তারপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট ফিরে এলাম। তাকে বললাম, আমি কি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে আমার বাড়িতে কথা বলিতে নিষেধ করিনি? সে বললো, তুমি তো জানো, আল্লাহ তাহাঁর রাসূলকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন আবার তিনি চলে যাবেন, এমতাবস্থায় আমি তাহাঁর নিকট আমার জন্য ও আমার স্বামীর জন্য রহমতের দু’আ চাইব না?{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ আহমদ ৩/৩৯৭-৩৯৮; হাকিম ৪/১১০-১১১; বুখারী ২৬০১।
দারেমী নং – ৪৭. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ মুহাম্মদ সাঃআঃকে নবীগণ ও আসমানবাসী [ফিরিশতাগণের] ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তারা জিজ্ঞেস করিল, হে ইবনু আব্বাস! তিনি কিভাবে আসমানবাসীর ওপর তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন? তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ বলেছেনঃ তাদের মধ্যে যে বলবে, আল্লাহ ছাড়া আমিও একজন ইলাহ, তাকে আমি জাহান্নামে শাস্তি দেব। এভাবে আমি যালিমদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি। [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ২৯]
মুহাম্মাদ সাঃআঃকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, আমি নিশ্চয় আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি, যাতে আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। [সূরা আল-ফাতহঃ ১-২]
তারা বলিলঃ তাহলে নবীগণের উপর তাহাঁর শ্রেষ্ঠত্ব কী? তিনি বলিলেন, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেনঃ আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বগোত্রের ভাষায় প্রেরণ করেছি। যাতে তিনি তাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করিতে পারেন। [সূরা ইবরাহীমঃ ৪]
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাঃআঃকে লক্ষ্য করে বলেনঃ আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যই পাঠিয়েছি।” [সূরা সাবাঃ ২৮]
সুতরাং তিনি তাঁকে জিন ও মানব উভয় জাতির জন্যই রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ । হাকিম ও যাহাবী একে সহিহ বলেছেন।
তাখরিজঃ হাকিম ২/৩৫০; বায়হাকী, দালাইল ৫/৪৮৬-৪৮৭; তাবারানী, কাবীর ১১/২৩৯-২৪০ নং ১১৬১০।
পরিচ্ছেদঃ ৮. নবী সাঃআঃকে যে সকল মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে তার বর্ণনা
দারেমী নং – ৪৮. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একবার রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কিছু সাহাবী বসে তাহাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বের হয়ে যখন তাদের কাছাকাছি এলেন, তিনি তাদের পারস্পরিক কিছু আলাপ-আলোচনা করিতে শুনলেন। অতঃপর তিনি তাদের কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তাদের কেউ বলছিল, কী আশ্চর্য্যের কথা! আল্লাহ তাহাঁর সৃষ্টিকুল থেকে একজনকে খলীল রূপে গ্রহণ করিয়াছেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হচ্ছেন তাহাঁর সেই খলীল। আরেকজন বলিল, “মুসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন”- [সূরা নিসাঃ ১৬৪] এটিও কম আশ্চর্য্যের বিষয় নয়। অপর একজন বলিল, ঈসা আলাইহিস সালাম তো আল্লাহর কালিমা এবং তাহাঁর [প্রদত্ত] রূহ। আরেকজন বলিল, আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ বিশেষভাবে মনোনীত করিয়াছেন। [তাদের আলোচনা চলছিলো] এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাদের কাছে এসে সালাম দিলেন এবং বলিলেনঃ`আমি তোমাদের কথা-বার্তা ও বিস্মিত হওয়ার বিষয়গুলি শুনিয়াছি।
ইবরাহীম আল্লাহর খলীল, এটা ঠিকই। আল্লাহ মুসা’র সাথে গোপনে কথা বলেছেন, সেটাও ঠিক। ঈসা আল্লাহর কালিমা ও তাহাঁর রূহ, সেটিও ঠিক। আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহ’র মনোনীত, একথাও ঠিক। তবে তোমরা শুনে রাখ, আমি আল্লাহর হাবীব, এতে আমার কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই প্রশংসার পতাকা বহন করবো, তাতে কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই সর্বপ্রথম শাফা’আত করবো এবং আমার শাফা’আতই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হইবে, তাতে কোন অহংকার নেই। আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের কড়া নাড়াব এবং এতেও কোন অহংকার নেই। আর আমার জন্যই আল্লাহ সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলে দেবেন এবং আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং আমার সাথে থাকিবে দরিদ্র মুমিনগণ, এতেও কোন অহংকার নেই। আর আমি হলাম আল্লাহর নিকট পূর্বাপর সকলের চেয়ে মর্যাদাবান, এতেও কোন অহংকার নেই।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ, যাম’আহ’র দুর্বলতার কারণে। তিরমিযী ও ইবনু কাছীর একে`গারীব’ বলেছেন। কিন্তু আমি বলছিঃ এর কয়েকটি সহিহ শাহীদ রয়েছে। দেখুন, মুসনাদে আবী ইয়ালা ৩৯৫৯, ৩৯৬৪, ৩৯৬৭, ৩৯৮৯ এর আমার তাহক্বীক্ব।
তাখরিজঃ তিরমিযী ৩৬২০; ইবনু কাছীর তাফসীর ২/৩৭৫।
দারেমী নং – ৪৯. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ [কিয়ামাতের দিন] সর্বপ্রথম আমিই বের হব। আল্লাহর সামনে লোকেরা যখন উপস্থিত হইবে আমিই হব, তাদের পরিচালক বা নেতা। তারা সকলেই যখন চুপ থাকিবে, আমিই তখন তাদের হয়ে কথা বলব। তারা যখন আটকে পড়বে, তখন আমিই তাদের জন্য সুপারিশকারী হব। তারা যখন নিরাশ হয়ে যাবে, তখন আমিই তাদের সুসংবাদ দেব। সকল সম্মাননা ও চাবি সেদিন আমার হাতে থাকিবে। সকল আদম সন্তানের মধ্যে আমিই আমার রবের নিকট সবচেয়ে সম্মানিত হবো। আমার চতুর্দিকে ঘুরতে থাকিবে হাজারো সেবক, তারা যেন সুরক্ষিত ডিমের মত কিংবা বিক্ষিপ্ত মুক্তার মতো।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ, লাইস বিন আবী সুলাইম দুর্বল রাবী।
তাখরিজঃ তিরমিযী, ৩৬১৪; বায়হাকী দালাইল ৫/৪৮৪; খিলাল, আস সুন্নাহ ২৩৫;
দারেমী নং – ৫০. হাদিসের তাহকীকঃ হাসান
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, আমিই রাসূলদের নেতা আর এতে কোন অহংকার নেই। আর আমিই`খাতামুন নাবিয়্যীন’ বা নবীদের ধারাবাহিকতা সমাপ্তকারী, এতে আমার কোন অহংকার নেই। আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমারই সুপারিশ কবুল করা হইবে, এতে আমার কোন অহংকার নেই।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জাইয়্যেদ [উত্তম]। এর অংশসমূহ বিভিন্ন সহিহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। [সংক্ষেপিত]
তাখরিজঃ বুখারী, আল-কাবীর ৪/২৮৬; তাবারানী, আল-আওসাত ১/১৪২ নং ১৭২; বায়হাকী, দালাইল ৫/৪৮০।
দারেমী নং – ৫১. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ/জঈফ {মিশ্রিত}
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেনঃ আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের কড়া ধরে নাড়াবো। আনাস বলেনঃ আমি যেন দেখিতে পাচ্ছি, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ হাত নাড়াচ্ছেন। সুফইয়ান আমাদেরকে এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। আর আবু আব্দুল্লাহ হাতের আঙ্গুলসমূহ একত্রিত করিলেন এবং নাড়ালেন। তিনি বলেনঃ ছাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি তোমার হাত দিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত স্পর্শ করেছিলে? তিনি বলেন, হাঁ । তিনি বলেন, তাহলে আমার দিকে আপনার হাতটা একটু বাড়িয়ে দিন, আমি তাতে চুম্বন করবো।’{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ, এর বর্ণনাকারী আলী ইবনু যাইদ ইবনু জুদ’আনের দুর্বলতার কারণে। তবে`জান্নাতের কড়া নাড়ার হাদিস সহিহ যা ইমাম আহমাদ ৩/১৪৪, ২৪৭-২৪৮ এ বর্ণনা করিয়াছেন।
তাখরিজঃ তিরযিমী ৩১৪৭; হুমাইদী ১২৩৮।
দারেমী নং – ৫২. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
আনাস রাদ্বিযাল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ`আমিই হব জান্নাতের ব্যাপারে সর্বপ্রথম শাফা’আতকারী।’{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ।
তাখরিজঃ সহিহ মুসলিম ১৯৬ [৩৩২]; ইবনু আবী শাইবা, আল মুছান্নাফ ১১/৪৩৬ নং ১১৬৯৭ ও ১৪/৮৭, ৯৫ নং ১৭৬৫৮, ১৭৬৯৫; বায়হাকী, দালাইল ৫/৪৭৯; আবী আওয়ানাহ ১/১১০, ১৫৮।
দারেমী নং – ৫৩. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেনঃ`আমিই হলাম সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার মাথার উপর থেকে মাটি ফেটে যাবে, কিন্তু এতে কোন অহংকার নেই। আর আমাকে প্রশংসার পতাকা দেয়া হইবে, তাতেও কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব মানবজাতির নেতা, এতেও আমার কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি, এতেও কোন অহংকার নেই। আর আমি জান্নাতের দরজায় এসে কড়া নাড়বো, তখন তারা [জান্নাতের প্রহরীরা] বলবেঃ এ ব্যক্তি কে? তখন আমি বলবঃ`আমি মুহাম্মদ’। ফলে আমার জন্য তারা জান্নাতের দরজা খুলে দিবে আর আমি তাতে প্রবেশ করেই`আল-জাব্বার’ [মহাপ্রতাপশালী] আল্লাহ’কে আমার সম্মুখেই পাব, ফলে আমি তাঁকে সাজদা করব, তখন তিনি বলবেনঃ ইয়া মুহাম্মদ, তোমার মাথা উঠাও, তুমি কথা বল, তোমার কথা শোনা হইবে; তুমি বল, তোমার বক্তব্য কবুল করা হইবে; তুমি শাফা’আত কর, তোমার শাফা’আত গৃহীত হইবে।’ তখন আমি মাথা উঠাব এবং বলবঃ`হে রব! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত। তখন তিনি বলবেনঃ তুমি তোমার উম্মতের নিকট যাও, [তাদের মধ্য থেকে] যার অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান পাবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তারপর আমি [তাদের নিকট] যাব, [তাদের মধ্য থেকে] যাদের অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান পাব, তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।’
তারপর আমি [আবার]`আল-জাব্বার’ [মহাপ্রতাপশালী] আল্লাহ’কে আমার সম্মুখে পাব, ফলে আমি তাঁকে সাজদা করব, তখন তিনি বলবেনঃ হে মুহাম্মদ, তোমার মাথা উঠাও, তুমি কথা বল, তোমার কথা শোনা হইবে; তুমি বল, তোমার বক্তব্য কবুল করা হইবে; তুমি শাফা’আত কর, তোমার শাফা’আত গৃহীত হইবে।’ তখন আমি মাথা উঠাব এবং বলবঃ`হে রব! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত। তখন তিনি বলবেনঃ তুমি তোমার উম্মতের নিকট যাও, [তাদের মধ্য থেকে] যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান পাবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তারপর আমি [তাদের নিকট] যাব, [তাদের মধ্য থেকে] যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান পাব, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।’ যখন লোকদের হিসাব-নিকাশ শেষ হইবে এবং আমার উম্মতের মধ্যকার যারা অবশিষ্ট রইল তাদেরকে জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হইবে, তখন জাহান্নামের অধিবাসীরা তাদেরকে বলবে, তোমরা তো আল্লাহর ইবাদত করিতে এবং তাহাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করিতে না, কিন্তু আজকে তা [তোমাদের এ কাজ] তোমাদের কোনই উপকারে আসল না।
তখন মহাপ্রতাপশালী [আল্লাহ] বলবেন,`আমার ইযযতের কসম! আমি অবশ্যই তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিব।’ এরপর তাদের নিকট [দূত] পাঠানো হইবে, অতঃপর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে, তারপর তাদেরকে`সঞ্জীবনী নহর’-এ প্রবেশ করানো হইবে। তখন তারা সেখানে এমনভাবে পুনর্জীবন লাভ করিবে, যেভাবে আবর্জনা স্তুপের পানিতে শস্য দানা গজিয়ে উঠে। তাদের দু’চোখের মাঝে [কপালে] লেখা থাকিবে`এরা আল্লাহ’র [দয়ায়] মুক্তি প্রাপ্ত।’ তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হইবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হইবে। তখন জান্নাতের অধিবাসীরা এদেরকে বলবে,`এরা [ছিল] জাহান্নামী’। তখন মহাপ্রতাপশালী [আল্লাহ] বলবেনঃ`না, বরং`এরা আল্লাহ’র [দয়ায়] মুক্তি প্রাপ্ত।’{1}
{1} তাহকিকঃ এসনদে এটি সনদ জঈফ। আব্দুল্লাহ ইবনু সালিহ জঈফ। তবে ইমাম আহমাদ অন্য সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন যার সনদ সহিহ। [৩/১৪৫]। [ফাতহুল মান্নানের লেখক [হাশিম আলগুমারী] বলেছেনঃ এর সনদ এ হাদিস… সহিহ হাদিসের শর্তপুরণকারী ]
তাখরিজঃ আহমদ ৩/১৪৪; ইবনু মানদাহ, আত তাওহীদ ৮৭৭; বায়হাকী, দালাইল ৫/৪৭৯-৪৮০।
দারেমী নং – ৫৪. হাদিসের তাহকীকঃ মুরসাল
ইবনু গানাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জীবরীল আলাইহিস সালাম একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অবতরণ করিলেন এবং তাহাঁর পেট চিরে ফেললেন। অতঃপর জীবরীল বলিলেনঃ অন্তর অত্যন্ত মজবুত, তাতে শ্রবণশক্তিসম্পন্ন দু’টি কান রয়েছে এবং দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন দু’টি চোখ রয়েছে। মুহাম্মদ সাঃআঃ আল্লাহর সর্বশেষ [সবার পশ্চাতে আগমনকারী] রাসূল, [আপনি] একত্রকারী, আপনার চরিত্র সুপ্রতিষ্ঠিত, আপনার জিহবা সত্যভাষী, আপনার হৃদয় [নফস্] প্রশান্ত।’
আবু মুহাম্মাদ বলেনঃ وكيع মানে شديدا [কঠোর, মজবুত]{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদে তিনটি ত্রুটি রয়েছে। [দুজন রাবী জঈফ এবং এটি মুরসাল]। [তবে ফতহুল মান্নানের লেখক একে মুরসাল হিসেবে সহিহ বলেছেন- ফাতহুল মান্নান [১/৪৩৩, ৫৬ নং হাদিসের ব্যাখ্যা দ্রঃ]- অনুবাদক]
তাখরিজঃ ইবনু আসাকীর, আত তারীখ [/৩৮৯]; আবী নুয়াইম, দালাইল, সূয়ূতী, খাসাইসুল কুবরা, ১/১৬১-১৬২।
দারেমী নং – ৫৫. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
আমর ইবনু কায়েস রাদ্বিযাল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ`আল্লাহ আমাকে রহমত লাভের সময় [তথা মৃত্যুর সময়] সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। আর আমার [আয়ুষ্কাল] সংক্ষিপ্ত করিয়াছেন। [দুনিয়াতে] আমরা পরে আগমনকারী হলেও আখিরাতে আমরা অগ্রগামী। আমি কোন অহংকার ব্যতীতই আরেকটি কথা বলছিঃ ইবরাহীম খলীলুল্লাহ, মুসা সফীউল্লাহ [খাঁটি বন্ধু], আর আমি হাবীবুল্লাহ। আর কিয়ামতের দিন আমার সাথেই থাকিবে প্রশংসার পতাকা। এবং নিশ্চয় আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমার উম্মতের ব্যাপারে আমার সাথে ওয়াদা করিয়াছেন এবং তাদের তিনটি বিষয় থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেনঃ ব্যাপকভাবে তাদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিবেন না, শত্রু তাদেরকে সমূলে উৎপাটন করিতে পারবে না এবং তাদেরকে বিভ্রান্তির উপরে একত্রিত করবেন না।”{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদে দু’টি ত্রুটি রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু সালিহ [দুর্বল] এবং [এ সনদের] বিচ্ছিন্নতা । [দেখুন ইবনু কাছীর, বিদায়া ৬/২৭০]
তাখরিজঃ কানযুল উম্মাল, ৩২০৮০; ইবনু আসাকীর ।
পরিচ্ছেদঃ ৯. আসমান হতে খাদ্য নাযিল করার মাধ্যমে নবী সাঃআঃকে সম্মানিত করা হয়েছে [তার বর্ণনা]
দারেমী নং – ৫৬. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
যামরাহ ইবনু হাবীব হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাসলামাহ আস-সাকুনীকে বলিতে শুনিয়াছি, মুহাম্মাদ বাদে অন্যরা বলেছেনঃ সালামাহ আস-সাকুনী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলিতে শুনেছেন, তিনি বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ছিলাম, তখন একজন লোক বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে কি আসমান হতে খাদ্য প্রদান করা হয়েছে? তিনি জবাবে বলেনঃ`হাঁ, আমাকে [আসমান হতে] খাদ্য প্রদান করা হয়েছে।’ লোকটি বলিল, হে আল্লাহর নবী! তার থেকে কিছু উদ্বৃত্ত ছিল কি? তিনি বলিলেনঃ`হাঁ’। সে লোকটি বলিলঃ তা কী করা হয়েছিল? তিনি বলিলেনঃ`আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর আমার নিকট ওহী করা হয়েছে যে, আমি তোমাদের মাঝে সামান্য কয়টা দিনই অবস্থান করবো। অতঃপর তোমরা অপেক্ষা করিতে থাকিবে, যতক্ষণ না তোমরা বলবেঃ [কিয়ামত] কখন হইবে, কখন হইবে? তখন তোমরা দলে দলে আমার নিকট আসবে এবং একে অপরকে হত্যা করিতে থাকিবে। কিয়ামতের পূর্বে দু’টি ভীষণ মহামারী দেখা দেবে এবং এরপর আসবে ভূমিকম্পের বছরসমূহ।’{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ জঈফ, মুয়াবিয়া ইবনু ইয়াহইয়ার দূর্বলতার কারণে। কিন্তু হাদিসটি সহিহ। অন্যান্যরা সহিহ সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। হাইছামী মাজমা’উয যাওয়াইদে [৭/৩০৬] বলেছেনঃ এর বর্ণনাকারীগণ সিকাহ বা বিশ্বস্ত।
তাখরিজঃ আবী ইয়ালা, হাদিস আল মুসনাদ ৬৮৬১ সনদ সহিহ; আহমদ ৪/১০৪।
দারেমী নং – ৫৭. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
সামুরাহ বিন জুনদুব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, [একদা] রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বড় এক বাটি ছারীদ [ঝোলে ভেজানো রুটি] দেয়া হল। তা লোকদের সামনে রাখা হল। তারপর তারা সকাল থেকে জুহর পর্যন্ত তা থেকে পালাক্রমে খেতে থাকল। একদল লোক খেয়ে উঠে যায় তো আরেকদল খেতে বসে – [এভাবে চলতে থাকে]। তখন এক ব্যক্তি সামুরাহকে জিজ্ঞেস করিল, সেটা কি বৃদ্ধি করা হয়েছিল না? তখন সামুরাহ বলিলেনঃ তুমি কি কারণে আশ্চর্যবোধ করছো? বৃদ্ধি তো কেবল এইখান থেকেই হতো’ – একথা বলে তিনি আসমানের দিকে ইঙ্গিত করিলেন।{1}
{1} তাহকিকঃ এর সনদ সহিহ । [বায়হাকী, তিরমিযী, হাকিম সকলেই সহিহ বলেছেন।]
তাখরিজঃ ইবনু আবী শাইবাহ ১১/৪৬৫-৪৬৬;, তিরযিমী, ৩৬২৯; সহিহ ইবনু হিব্বান ৬৫২৯, আহমাদ ৫/১২; বায়হাকী, দালাইল ৬/৯৩।
পরিচ্ছেদঃ ১০. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সৌন্দর্য প্রসঙ্গে
দারেমী নং – ৫৮. হাদিসের তাহকীকঃ জঈফ
জাবির ইবনু সামুরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি এক চাঁদনী রাতে রসূলুল্লাহ সাঃআঃকে লাল রংয়ের একজোড়া উত্তম মোটা [কিংবা পাতলা{1}] কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। আমি একবার তাহাঁর দিকে আরেকবার চাঁদের দিকে তাকাচ্ছিলাম। আর আমার চোখে চাঁদের চেয়ে তাঁকেই বেশি সুন্দর লাগছিলো।{2}
{1} [হুল্লাহ’ শব্দের অর্থ সুন্দর উত্তম মোটা কিংবা পাতলা দুইখানা কাপড় একই পুরুষের।- শাইখ আরনাউত্বের টীকা দ্রঃ – অনুবাদক]
{2} সনদ জঈফ । আশ’আস বিন সিওয়ার জঈফ। তবে তিরমিযী বারা’ ইবনু আযিব রাঃ হতে বর্ণিত হাদিসটির ব্যাপারে ইমাম বুখারীর মতামত উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি একে সহিহ বলেছেন। শাইখ আরনাউত্ব ও আল মাউসিলী, আল মুসনাদের [১৬৯৯, ১৭০০,১৭১৪] তাহক্বীক্বে এ হাদিসকে সহিহ বলেছেন।
তাখরিজঃ তিরমিযী ২৮১২; তাবারানী, মু’জামুল কাবীর ২/২০৬ নং ১৮৪২; হাকিম ৪/১৮৬; বায়হাকী, দালাইল ১/১৯৬।
দারেমী নং – ৫৯. হাদিসের তাহকীকঃ মুনকার [সর্বদা পরিত্যক্ত]
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সামনের দু’দাঁতের মাঝে সামান্য একটু ফাঁক ছিল। যখন তিনি কথা বলিতেন, তখন মনে হতো যেন তাহাঁর দু’দাঁতের মাঝ দিয়ে নূর [আলোকচ্ছটা] বিচ্ছুরিত হচ্ছে।{1}
{1} তাহকিকঃ আব্দুল আযীয বিন আবী ছাবিত হল, ইবনু ইমরান, আর সে হল পরিত্যক্ত রাবী [মাতরূক]।
তাখরিজঃ তিরমিযী, শামাইল ১৪; বায়হাকী, দালাইল ১/২১৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ১৩/২২৩ নং ৩৬৪৪।
আদ দারেমী নং – ৬০. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ
ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে অধিক সাহসী, দানশীল, বীরপুরুষ, উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন ও নির্মল [চরিত্রের অধিকারী] কাউকে দেখিনি।{1}
{1} তাহকিকঃ এর বর্ণনাকারীগণ সকলেই বিশ্বস্ত।
তাখরিজঃ ইবনু সা’দ, আত তাবাকাত ১/২/৯৬; তাবারানী, আল কাবির ২৪/২৭৪ নং ৬৯৬, আল আওসাত ৫/২৩০; বায়হাকী, দালাইল ৫৫১।
সুনান আদ দারেমী Sunan Ad Daremi Sharif Bangla এই বই টি অনুবাদ করেছেন hadithbd.com । তাই সম্পূর্ণ বই পড়তে হলে hadithbd.com ভিজিট করুন। আপনাদের সুবিদারথে পরে দেখার জন্য শুধু ভুমিকা অংশ টুকু দিয়াছি।
Leave a Reply