হাদীছ শোনা পৌঁছিয়ে দেয়া ও তা লিখার প্রতি উদ্ধৃদ্ধ করণ
<< সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব হাদীস বই এর মুল সুচিপত্র
পরিচ্ছেদঃ হাদীছ শোনা পৌঁছিয়ে দেয়া ও তা লিখার প্রতি উদ্ধৃদ্ধ করণ এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃ]-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার ব্যাপারে ভীতি প্ৰদৰ্শনঃ
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৮৯- ইবনু মাসউদ [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে একথা বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা`আলা মুখমন্ডল উজ্জল করুন সেই ব্যক্তির, যে আমাদের থেকে কিছু শুনবে, অতঃপর যেভাবে শুনেছে সেভাবেই অপরের কাছে পৌঁছে দিবে। কেননা যার কাছে পৌছান হয় সে অনেক সময় শ্রোতার চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারী হয়।”
[আবু দাউদ, তিরমিয়ী ও ইবনু হিব্বান হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন] [১] তবে ইবনু হিব্বানের বর্ণনায় বলা হয়ঃ আল্লাহ রহম করুন সেই ব্যক্তির উপর……। [তিরমিযী বলেন, হাদীছটি হাসান সহীহ] [১] শায়খ আলবানী বলেন, এ হাদীছটি আবু দাউদ বর্ণনা করিয়াছেন একথা ভুল। কেননা তিনি ইবনি মাসউদ থেকে এ হাদীছ বর্ণনা করেননি। তিনি যায়েদ বিন ছাবেত বর্ণিত পরের হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃহাসান সহীহ
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৯০ – যায়েদ বিন ছাবেত [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
আমি শুনিয়াছি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ “আল্লাহ তা`আলা উজ্জলতা দান করুন সেই ব্যক্তিকে যে আমাদের একটি হাদীছ শ্রবণ করে অতঃপর তা অপরের কাছে পৌঁছে দেয়। কেননা জ্ঞান বহনকারী কতক ব্যক্তি তার চেয়ে অধিক জ্ঞানীর কাছে পৌছে দেয়। আর জ্ঞান বহনকারী কতক ব্যক্তি, নিজেই জ্ঞানী নয়।
তিনটি বিষয়ে কোন মুসলিমের অন্তর হিংসা করে নাঃ [১] কর্মকে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা [২] নেতৃবৃন্দকে নসীহত করা এবং [৩] [মুসলমানদের] জামাআতকে আকড়ে থাকা। কেননা এদের দু`আ অন্যান্যদেরকেও পরিবেষ্টিত করে।
যে ব্যক্তির দুনিয়াটাই হল একক উদ্দেশ্য, আল্লাহ তার প্রতিটি বিষয়কে বিশৃংখল করে দেন। দুচোখের সামনে শুধু অভাব-অনটন লাগিয়ে রাখেন। আর নির্ধারিত বস্তু ছাড়া দুনিয়ার কোন কিছুই তার কাছে আসে না। যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আখেরাত, আল্লাহ তার প্রতিটি বিষয় সুশৃংখল করে দেন। তার অন্তরকে পরিতৃপ্ত করে দেন। আর দুনিয়ার সম্পদ তার সামনে লাঞ্ছিত অবস্থায় হাজির হয়।”
[হাদীছটি ইবনু হিব্বান [সহীহ] গ্রন্থে এবং বায়হাকী বাক্যগুলো কিছু আগে পিছে করে বর্ণনা করেন।]
[আর আবু দাউদ, তিরমিয়ী, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ হাদীছটির শুরু থেকে নিজেই জ্ঞানী নয়..। পর্যন্ত বর্ণনা করেন।] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৯১ – আনাস বিন মালেক [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মিনার মসজিদে খায়ফে আমাদের সামনে বক্তব্য রাখলেন। তিনি বললেনঃ
“আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে উজ্জলতা দান করুন, যে আমার কথা শুনেছে- মুখস্ত করেছে ও ধারণ করে রেখেছে। অতঃপর যারা তা শুনেনি তাহাদের কাছে পৌঁছিয়েছে। কেননা কতক জ্ঞান বহনকারী নিজে জ্ঞানী নয়। আর কতক জ্ঞান বহনকারী ব্যক্তি তার চেয়ে বড় জ্ঞানীর নিকট তা পৌঁছিয়ে থাকে।”
[হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন ত্বাবরানী [আওসাত] গ্রন্থে] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ লিগাইরিহি
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৯২- জুবাইর বিন মুতএম [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি শুনিয়াছি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ “আল্লাহ তা`আলা সেই বান্দাকে সৌন্দর্যতা ও উজ্জলতা দান করুন, যে আমার বক্তব্য শুনেছে, উহা মুখস্ত করেছে ও ভালভাবে সংরক্ষণ করেছে এবং যে শুনেনি তার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কেননা কতক জ্ঞান বহনকারী ব্যক্তি কোন জ্ঞান রাখে না। আর জ্ঞান বহনকারী কতক ব্যক্তি তার চাইতে বেশী জ্ঞানীর নিকট তা পৌঁছিয়ে দেয়। তিনটি ক্ষেত্রে মুমিন ব্যক্তির দিলে কোন হিংসা-দ্বেষ থাকে না। [১] আমলকে এখলাসের সাথে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। [২] মুসলমানদের নেতৃবৃন্দকে নসীহত করা এবং [৩] তাহাদের জামাআতকে আঁকড়ে থাকা। কেননা তাহাদের দু`আ পরবর্তদেরকেও শামিল করে।”
[হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন আহমাদ, ইবনু মাজহ ও ত্বাবরানী [কাবীর গ্রন্থে] সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘকারে] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ লিগাইরিহি
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৯৩ – আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এরশাদ করেছেনঃ “আদম সন্তান যখন মৃত্যু বরণ করে, তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়ঃ [১]
সাদকায়ে জারিয়া [২] উপকারী বিদ্যা [৩] সৎ সন্তানের দু`আ৷”
[মুসলিম প্রমুখ হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন]
{ নোটঃ হাফেয ইবনু হাজার বলেনঃ উল্লেখিত হাদীছ ও তদনুরূপ হাদীছ সমূহ দ্বারা বুঝা যায়, উপকারী বিদ্যার নকল কপিকারীও তার ছোয়াব পাবে। এমনি ভাবে যে উহা পাঠ করিবে বা নকল কপি করিবে বা তদানুযায়ী আমল করিবে তার প্রতিদানও লাভ করিবে। আর অপকারী বিদ্যা, যাতে পাপ রহিয়াছে- তার নকলকারী পাপের ভাগী হইবে। এমনিভাবে যে উহা পাঠ করিবে বা নকল কপি করিবে বা সে অনুযায়ী আমল করিবে তার পাপও তাকে বহন করিতে হইবে যতদিন তার সেই লিখা অবশিষ্ট থাকিবে। যেমনটি পূর্বোল্লিখিত হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ইসলামে উত্তম রীতি চালু করিবে…… যে ব্যক্তি ইসলামে খারাপ কাজ চালু করিবে….. } হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৯৪ – আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করিবে, সে তার স্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে করে নিবে।“
[হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন বুখারী ও মুসলিম প্রমূখ। এ হাদীছটি একাধিক সাহাবী থেকে মুতাওয়াতের পর্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। যা সহীহ, সুনান ও মুসনাদ গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান রহিয়াছে] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৯৫- সামুরা বিন জুনদুব [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ “যে ব্যক্তি আমার নামে কোন হাদীছ বর্ণনা করে মনে করে যে হাদীছটি মিথ্যা, তবে [বর্ণনা করার কারণে] সে দু`জন মিথ্যাবাদীর একজন।“
[মুসলিম প্রমূখ হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ৯৬ – মুগীরা [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ “নিঃসন্দেহে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা অন্য কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করিবে, সে তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিবে।”
[হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন বুখারী ও মুসলিম প্রমূখ] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস
Leave a Reply