রক্তপণ, রক্তপাত, হত্যা করা ও কাসামাহ

রক্তপণ, রক্তপাত, হত্যা করা ও কাসামাহ

রক্তপণ, রক্তপাত, হত্যা করা ও কাসামাহ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৮৭, রক্তপণ, অধ্যায়ঃ (১-৩২)=৩২টি

৮৭/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী : কেউ ইচ্ছা পূর্বক কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার শাস্তি হল জাহান্নাম। (সুরা আন্-নিসা ৪/৯৩)
৮৭/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩২)
৮৭/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে…… (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১৭৮)
৮৭/৪. অধ্যায়ঃ (ইমাম কর্তৃক) হত্যাকারীকে স্বীকারোক্তি পর্যন্ত প্রশ্ন করা। আর শরীয়তের শাস্তির ব্যাপারে স্বীকারোক্তি।
৮৭/৫. অধ্যায়ঃ পাথর বা লাঠি দিয়ে হত্যা করা।
৮৭/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী: প্রাণের বদলে প্রাণ…………..। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৪৫)
৮৭/৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পাথর দিয়ে কিসাস নিল
৮৭/৮. অধ্যায়ঃ কাউকে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীগণ দুরকমের শাস্তির যে কোন একটি দেয়ার অধিকার রাখে।
৮৭/৯. অধ্যায়ঃ ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া রক্তপাত দাবি করা।
৮৭/১০. অধ্যায়ঃ ভুলবশতঃ হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর ক্ষমা করা।
৮৭/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ কোন মুমিন ব্যক্তির জন্য অন্য মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করা বৈধ নয়। তবে ভুলবশত করলে সেটা আলাদা……….. (সুরা আন্-নিসা ৪/৯২)
৮৭/১২. অধ্যায়ঃ একবার হত্যার কথা স্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হইবে।
৮৭/১৩. অধ্যায়ঃ নারীর বদলে পুরুষকে হত্যা করা
৮৭/১৪. অধ্যায়ঃ আহত হবার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষদের মধ্যে কিসাস।
৮৭/১৫. অধ্যায়ঃ হাকিমের কাছে মামলা পেশ করা ছাড়া আপন অধিকার আদায় করে নেয়া বা কিসাস গ্রহণ করা।
৮৭/১৬. অধ্যায়ঃ ভিড়ে মারা গেলে বা হত্যা করা হলে
৮৭/১৭. অধ্যায়ঃ যখন কেউ ভুলক্রমে নিজেকে হত্যা করে তখন তার কোন রক্তপণ নেই।
৮৭/১৮. অধ্যায়ঃ দাঁত দিয়ে কামড়ানোর কারণে কারো দাঁত উপড়ে গেলে।
৮৭/১৯. অধ্যায়ঃ দাঁতের বদলে দাঁত
৮৭/২০. অধ্যায়ঃ আঙ্গুলের রক্তপণ
৮৭/২১. অধ্যায়ঃ যখন একটি দল কোন এক লোককে বিপদগ্রস্ত করে তোলে, তখন তাদের সবাইকে শাস্তি দেয়া হইবে কি? অথবা সবার নিকট থেকে কিসাস গ্রহণ করা হইবে কি?
৮৭/২২ . অধ্যায়ঃ কাসামাহ (শপথ)
৮৭/২৩. অধ্যায়ঃ যে লোক অন্য লোকেদের ঘরে উঁকি মারল আর তারা তার চক্ষু ফুঁড়ে দিল, এতে ঐ ব্যাক্তির জন্য দিয়াত নেই।
৮৭/২৪. অধ্যায়ঃ আকিলা (রক্তপণ) প্রসঙ্গে
৮৭/২৫. অধ্যায়ঃ মহিলার ভ্রূণ
৮৭/২৬. অধ্যায়ঃ মহিলার ভ্রুন এবং দিয়াত পিতা ও পিতার নিকটাত্মীয়দের উপর বর্তায়, সন্তানের উপর নয়।
৮৭/২৭. অধ্যায়ঃ যে কোন গোলাম অথবা বালক থেকে সাহায্য চায়
৮৭/২৮. অধ্যায়ঃ খণি দণ্ডমুক্ত এবং কূপ দণ্ডমুক্ত
৮৭/২৯. অধ্যায়ঃ পশু আহত করলে তাতে কোন ক্ষতিপূরন নেই ।
৮৭/৩০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি যীম্মিকে বিনা অপরাধে হত্যা করে তার পাপ
৮৭/৩১. অধ্যায়ঃ কাফেরের বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না
৮৭/৩২. অধ্যায়ঃ যখন কোন মুসলিম কোন ইয়াহুদীকে ক্রোধের সময় থাপ্‌পড় মারল ।

৮৭/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী : কেউ ইচ্ছা পূর্বক কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার শাস্তি হল জাহান্নাম। (সুরা আন্-নিসা ৪/৯৩)

৬৮৬১আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক লোক বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! (সাঃআঃ) আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে সমকক্ষ গণ্য কর অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। লোকটি বলিল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তারপর হলো, তুমি তোমার সন্তানকে এ ভয়ে হত্যা কর যে, সে তোমার সঙ্গে খাদ্য খাবে। লোকটি বলিল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তারপর হলো, তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে যিনা কর। অত:পর আল্লাহ এ কথার সত্যতায় অবতীর্ণ করলেনঃ “এবং তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহকে আহ্বান করে না, আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করিয়াছেন উপযুক্ত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যাভিচার করে না। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করিবে” – (সুরা ফুরক্বান ২৫/৬৮)।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৯৬)

এই পরিচ্ছেদে ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ১২টি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। প্রত্যেকটি হাদীসের মধ্যেই হত্যার বিষয়ে কঠোরতা রয়েছে। যারা না বুঝে বলে থাকে যে, ইসলাম মানুষকে হত্যাযজ্ঞের প্রতি উৎসাহ যোগায় তাদের ভাল করে এই হাদীসগুলো অধ্যয়ন করা দরকার। আশা করা যায়, যদি কেউ স্থিরভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মনোযোগ সহকারে সত্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে হাদীসগুলো অধ্যয়ন করে, তবে তার অন্তরে যত কালিমা-ই থাকুক না কেন তা অবশ্য অবশ্যই দূরীভূত হইবে ইনশা-আল্লাহ।

৬৮৬২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃতিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ স্বস্তিতে থাকে, যে পর্যন্ত না সে কোন হারাম ঘটায়।(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৯৭)

৬৮৬৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে সব বিষয়ে কেউ নিজেকে জড়িয়ে ফেলার পরে তার ধ্বংস থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় থাকে না, সেগুলোর একটি হচ্ছে হালাল ছাড়া হারাম রক্ত প্রবাহিত করা (অর্থাৎ অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা)।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৯৮)

৬৮৬৪. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সবার আগে মানুষের মাঝে যে বিষয়ের ফয়সালা করা হইবে তা হলো হত্যা।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৯৯)

৬৮৬৫. বনী যুহরা গোত্রের মিত্র মিকদাদ ইবনু আমর কিনদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যিনি বদরের যুদ্ধে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে উপস্হিত ছিলেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এক কাফেরের সঙ্গে আমার মুকাবিলা হল এবং আমাদের মধ্যে লড়াই বাধল। সে তলোয়ার দিয়ে আমার হাতে আঘাত করিল এবং তা কেটে ফেলল। তারপর সে কোন গাছের আড়ালে আশ্রয় নিল আর বলিল, আমি আল্লাহর জন্য মুসলিম হয়ে গেলাম। এ কথা বলার পর কি আমি তাকে হত্যা করিতে পারব? রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি তাকে হত্যা করিবে না। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো আমার এক হাত কেটে দিয়েছে। আর কেটে ফেলার পরই এ কথা বলেছে, এতে কি আমি তাকে হত্যা করিতে পারব? তিনি বললেনঃ তুমি তাকে হত্যা করিবে না। তুমি যদি তাকে হত্যা কর তাহলে তাকে হত্যা করার আগে তুমি যেখানে ছিলে সে সেখানে এসে যাবে। আর সে ঐ কালিমা উচ্চারণ করার আগে যেখানে ছিল তুমি সেখানে চলে যাবে।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০০)

৬৮৬৬. হাবীব ইবনু আবু আমরা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) মিকদাদ (রাদি.) -কে বলেছেনঃ উক্ত মুমিন লোকটি যখন কাফেরদের মাঝে অবস্হান করছিল তখন সে আপন ঈমান গোপন রেখেছিল। এরপর সে তার ঈমান প্রকাশ করিল আর তুমি তাকে হত্যা করে ফেললে। তুমিও তো এর আগে মক্কায় থাকাকালে আপন ঈমান লুকিয়ে রেখেছিলে।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০০)

৮৭/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩২)

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ মনে করে তার থেকে গোটা মানব জাতির প্রাণ রক্ষা পেল।

৬৮৬৭. আবদুল্লাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ কোন মানুষকে হত্যা করা হলে আদম (আঃ)- এর প্রথম সন্তান (কাবীল) এর উপর (অপরাধের) কিছু অংশ অবশ্যই পড়বে।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০১)

৬৮৬৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ তোমরা আমার পরে কুফরিতে ফিরে যেয়ো না যে (সে অবস্থায়) তোমরা একে অপরের গর্দান উড়িয়ে দিবে।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০২)

৬৮৬৯. জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বিদায় হাজ্জের সময় বলেছেন, লোকদেরকে নীরব কর, তোমরা আমার পরে কুফরিতে ফিরে যেয়ো না যে, তোমরা একে অপরের গর্দান উড়িয়ে দিবে।

আবু বকর ও ইবনু আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে (এরকম) বর্ণনা করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৩)

৬৮৭০. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া অথবা বলেছেন, মিথ্যা কসম করা। শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাতে সন্দেহ করেন। এবং মুয়ায (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, শুবাহ আমাদেরকে বর্ণনা করিয়াছেন, কবীরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, মিথ্যা কসম করা আর মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া অথবা বলেছেন প্রাণ হত্যা করা।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৪)

৬৮৭১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, প্রাণ হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া আর মিথ্যা বলা, কিংবা বলেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৫)

৬৮৭২. উসামাহ ইবনু যায়দ ইবনু হারিসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে জুহাইনা কওমের হারাকা শাখার বিরুদ্ধে পাঠালেন। আমরা ভোরে এ কওমের কাছে এলাম এবং তাদেরকে পরাস্ত করে ফেললাম। তিনি বলেন, আমি ও আনসারদের এক ব্যক্তি তাদের একজনকে ধাওয়া করে তার কাছে পৌঁছে গেলাম। তিনি বলেন, আমরা যখন আক্রমণ করিতে উদ্যত হলাম তখন সে বলে উঠল, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তিনি বলেন, আনসারী ব্যক্তি তার থেকে বিরত হয়ে গেল। কিন্তু আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করলাম। তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনায় আসলাম, তখন নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছল। তিনি বলেন, আমাকে তিনি বললেনঃ হে উসামাহ! তুমি কি তাকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরও হত্যা করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে আসলে হত্যা থেকে বাঁচতে চেয়েছিল। তিনি বললেনঃ আহা! তুমি কি তাকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরও হত্যা করলে? তিনি বলেন, তিনি বারবার কথাটি আমাকে বলিতে থাকলেন। এমন কি আমি কামনা করিতে লাগলাম, যদি আমি ঐ দিনের আগে মুসলিম না হতাম। [১১৪]

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৬)

[১১৪] (সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ?) ইবনু ত্বীন বলেন, এই তিরস্কারের মধ্যে রহিয়াছে মহান শিক্ষা এবং শিক্ষার মধ্যে রহিয়াছে এমন এক ঘোষণা যে, পরবর্তীতে আর কেউ যেন তাওহীদের বাণী উচ্চারণকারীকে হত্যা করিতে উদ্যত না হয়। আর ইমাম কুরতুবী (রাহিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) এর এই বাণী বার বার উচ্চারণের মধ্যে এবং ওযর গ্রহণ না করার মধ্যে অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে রহিয়াছে কঠিন ধমক। (ফাতহুল বারী)

৬৮৭৩. উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ঐ নির্বাচিত নেতাদের একজন ছিলাম যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাতে বায়আত করেছিলেন। আমরা তাহাঁর হাতে এ শর্তে বায়আত করেছি যে, আমরা আল্লাহর সঙ্গে কিছুকে শরীক করব না, যিনা করব না, চুরি করব না, এমন প্রাণ হত্যা করব না যা আল্লাহ হারাম করিয়াছেন, আমরা লুণ্ঠন করব না, নাফরমানী করব না। যদি আমরা ওগুলো ঠিকভাবে পালন করি তবে জান্নাত লাভ হইবে। আর যদি এর মধ্য থেকে কোন একটা করে ফেলি তাহলে তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে সমর্পিত।

(আঃপ্রঃ- ,৬৩৯৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৭)

৬৮৭৪. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে লোক আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র ধারণ করিবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

আবু মূসা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে (এরকম) বর্ণনা করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৮)

৬৮৭৫. আহনাফ ইবনু কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি তাঁকে (আলী (রাদি.)-কে সাহায্য) করার জন্য যাচ্ছিলাম। এমন সময় আমার সঙ্গে আবু বকর (রাদি.) – এর সাক্ষাৎ ঘটল। তিনি বলিলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, ঐ ব্যক্তিকে সাহায্য করিতে। তিনি বলিলেন, ফিরে যাও। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে, যখন দুজন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির অবস্থান হইবে জাহান্নাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! হত্যাকারীর ব্যাপারটা তো বুঝা গেল। কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার সে কেমন? তিনি বললেনঃ সেও তার বিরোধীকে হত্যা করিতে আগ্রহান্বিত ছিল।

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৯)

৮৭/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে…… (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১৭৮)

৮৭/৪. অধ্যায়ঃ (ইমাম কর্তৃক) হত্যাকারীকে স্বীকারোক্তি পর্যন্ত প্রশ্ন করা। আর শরীয়তের শাস্তির ব্যাপারে স্বীকারোক্তি।

৬৮৭৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদী একটি বালিকার মাথা দুটি পাথরের মাঝে রেখে চূর্ণ করে দিল। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হল কে তোমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করিয়াছেন? অমুক অথবা অমুক? শেষ পর্যন্ত ইয়াহূদীটির নাম বলা হল। তাকে নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে আনা হল এবং তিনি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে থাকলেন। অবশেষে সে তা স্বীকার করিল। কাজেই পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ করে দেয়া হল।

আঃপ্রঃ- ৬৩৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১০)

৮৭/৫. অধ্যায়ঃ পাথর বা লাঠি দিয়ে হত্যা করা।

৬৮৭৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রুপার গহনা পরিহিতা এক বালিকা মদীনায় বের হল। রাবী বলেন, তখন এক ইয়াহুদী তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করিল। রাবী বলেন, তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আনা হল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, অমুক কি তোমাকে হত্যা করেছে? সে তার মাথা উঠাল। তিনি আবার বলিলেন, অমুক কি তোমাকে হত্যা করেছে? সে তার মাথা উঠাল। তিনি তাকে তৃতীয়বার বলিলেন, অমুক কি তোমাকে হত্যা করেছে? সে তার মাথা নিচু করিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) প্রস্তর নিক্ষেপকারীকে ডেকে আনলেন এবং দুটি পাথরের মাঝে রেখে তাকে হত্যা করিলেন। [১১৫]

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১১)

হাদীসটি জামহুরের দলীল। কারণ জামহুর ওলামার মতে হত্যাকারীকে অনুরূপভাবেই হত্যা করা হইবে সে যা দ্বারা হত্যা করেছে। তারা আল্লাহ তাআলার ঐ বাণী অাঁকড়ে ধরেছেন। {وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُواْ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرينَ} [সুরা আন্-নাহল (১৬): ১২৬]।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, {فَاعْتَدُواْ عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ} [সুরা আল-বাকারাহ (২): ১৯৪] (ফাতহুল বারী)

৮৭/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী: প্রাণের বদলে প্রাণ…………..। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৪৫)

৬৮৭৮. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল, তিন-তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। (যথা) জানের বদলে জান, বিবাহিত ব্যভিচারী, আর নিজের দ্বীন ত্যাগকারী মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্যক্তি। [১১৬][মুসলিম ৬/২৮, হাদীস ১৬৭৬]

(আঃপ্রঃ- ৬৩৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১২)

[১১৬] হাদীসে উল্লেখিত “জামাআত” দ্বারা উদ্দেশ্য (আরবি) তথা মুসলমানদের জামাআত। অর্থাৎ মুরদাত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের থেকে বিছিন্ন হয় অথবা মুরতাদ (স্বধর্মত্যাগী) হওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের ছেড়ে দেয়। সুতরাং (আরবি) শব্দটি ﺗﺎﺭﻙ ও ﺍﻟﻤﻔﺎﺭﻕ শব্দদ্বয়ের বিশেষণ। যা স্বতন্ত্র বিশেষণ নয়। কারণ স্বতন্ত্র বিশেষণ ধরা হলে হাদীসে উল্লেখিত তিনটি বৈশিষ্ট্যের স্থলে চারটি বৈশিষ্ট্য হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, হাদীসে উল্লেখিত “জামাআত” দ্বারা “মুসলমানদের মাঝে গড়ে ওঠা ছোট, বড় আঞ্চলিক বা জাতীয় ভিত্তিক কোন সংগঠন” উদ্দেশ্য নেয়া মোটেও ঠিক নয়। বরং তা সহীহ আকীদার পরিপন্থী।

৮৭/৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পাথর দিয়ে কিসাস নিল

৬৮৭৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহুদী একটি বালিকাকে তার রুপার অলঙ্কারের লোভে হত্যা করিল। সে তাকে পাথর দিয়ে হত্যা করিল। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আনা হল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, অমুক কি তোমাকে হত্যা করেছে? সে তার মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করিল যে, না। এরপর দ্বিতীয়বার তিনি জিজ্ঞেস করিলেন। সে তার মাথা দিয়ে ইশারা করিল যে, না। অত:পর তৃতীয়বার তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন। সে তার মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করিল যে, হ্যাঁ। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাকে (হত্যাকারীকে) দুটি পাথর দিয়ে হত্যা করিলেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৩)

৮৭/৮. অধ্যায়ঃ কাউকে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীগণ দুরকমের শাস্তির যে কোন একটি দেয়ার অধিকার রাখে।

৬৮৮০. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। খুযাআ গোত্রের লোকেরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করিল। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর খুযাআ গোত্রের লোকেরা জাহিলী যুগের স্বগোত্রীয় নিহত ব্যক্তির প্রতিশোধ হিসেবে বানী লায়স গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ আল্লাহ মক্কা থেকে হস্তীদলকে প্রতিহত করিয়াছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আপন রাসুল ও মুমিনদেরকে কর্তৃত্ব দান করিয়াছেন। জেনে রেখো! মক্কা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল হয়নি, আর আমার পরও কারো জন্য হালাল হইবে না। জেনে রেখো! আমার বেলায় তা দিনের কিছু সময়ের জন্য হালাল করা হয়েছিল। সাবধান! তা আমার এ সময়ে এমন সম্মানিত, তার কাঁটা উপড়ানো যাবে না, তার গাছ কাটা যাবে না,তাতে পড়ে থাকা বস্তু মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া তুলে নেয়া যাবে না। আর যার কাউকে হত্যা করা হয় সে দুপ্রকার দন্ডের যে কোন একটি দেয়ার অধিকার লাভ করিবে। হয়ত রক্তপণ নেয়া হইবে, নতুবা কিসাস নেয়া হইবে। এ সময় ইয়ামনবাসী এক লোক দাঁড়াল, যাকে আবু শাহ বলা হয়। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে লিখে দিন। তখন রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন তোমরা আবু শাহ্কে লিখে দাও। তখন কুরাইশ গোত্রের এক লোক দাঁড়াল। আর বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! ইয্খির ব্যতীত। কেননা, আমরা সেটা আমাদের ঘরে, আমাদের কবরে কাজে লাগাই। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ ইয্খির ছাড়া।

উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শায়বান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে الْفِيلِ (হস্তী)-এর ব্যাপারে হারব ইবনু শাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। কেউ কেউ আবু নুআয়ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে المقتل শব্দ উদ্ধৃত করিয়াছেন। উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) إِمَّا أَنْ يُقَادَ -এর পরে أَهْلُ الْقَتِيلِ শব্দও বর্ণনা করিয়াছেন। [১১২]

(আঃপ্রঃ- ৬৪০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৪)

৬৮৮১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বানী ইসরাঈলদের মাঝে কিসাসের বিধান কার্যকর ছিল। তাদের মাঝে রক্তপণের বিধান ছিল না। তবে আল্লাহ এ উম্মাতকে বললেনঃ নরহত্যার ক্ষেত্রে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে……… কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ হইতে কিছুটা ক্ষমা করা হলে পর্যন্ত- (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১৭৮)।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, ক্ষমা করার অর্থ হলো ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার ক্ষেত্রে রক্তপণ প্রহণ করা। তিনি বলেন, আর প্রচলিত প্রথার অনুসরণ করার অর্থ হচ্ছে, ন্যায়সঙ্গত দাবি ও দয়ার সঙ্গে দায়িত্ব আদায় করা।

(আঃপ্রঃ- ৬৪০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৫)

৮৭/৯. অধ্যায়ঃ ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া রক্তপাত দাবি করা।

৬৮৮২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত লোক হচ্ছে তিনজন। যে লোক হারাম শরীফে অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। যে লোক ইসলামী যুগে জাহিলী যুগের রেওয়াজ অন্বেষণ করে। যে লোক ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া কারো রক্তপাত দাবি করে।

(আঃপ্রঃ- ৬৪০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৬)

৮৭/১০. অধ্যায়ঃ ভুলবশতঃ হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর ক্ষমা করা।

৬৮৮৩. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের দিন ইবলীস লোকদের মধ্যে চিৎকার দিয়ে বলিল, হে আল্লাহর বান্দারা! পিছনের দলের ওপর আক্রমন চালাও। ফলে তাদের সামনের লোকেরা পেছনের লোকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এমন কি তারা ইয়ামানকে হত্যা করে ফেলল। তখন হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আমার পিতা! আমার পিতা! কিন্তু তারা তাকে হত্যা করে ফেলল। তখন হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ তোমাদের মাফ করুন। রাবী বলেন, মুশরিকদের একটি দল পরাজিত হয়ে তায়েফ চলে গিয়েছিল।

(আঃপ্রঃ- ৬৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৭)

৮৭/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ কোন মুমিন ব্যক্তির জন্য অন্য মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করা বৈধ নয়। তবে ভুলবশত করলে সেটা আলাদা……….. (সুরা আন্-নিসা ৪/৯২)

৮৭/১২. অধ্যায়ঃ একবার হত্যার কথা স্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হইবে।

৬৮৮৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদী একটি বালিকার মাথা দুটি পাথরের মাঝে রেখে চূর্ণ করে দিল। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তোমার সাথে এমন ব্যবহার করেছে? অমুক? না অমুক? শেষে ইয়াহুদী লোকটির নাম উল্লেখ করা হল। তখন সে তার মাথা দিয়ে (হ্যাঁ-সূচক) ইশারা করিল। তখন ইয়াহুদী লোকটির নাম উল্লেখ করা হল। তখন ইয়াহুদী লোকটিকে আনা হল এবং সে স্বীকার করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) তার ব্যাপারে আদেশ করিলেন, তাই তার মাথা একটি পাথর দিয়ে চূর্ণ করা হল।

এবং হাম্মা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, দুটি পাথর দিয়ে।

(আঃপ্রঃ- ৬৪০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৮)

৮৭/১৩. অধ্যায়ঃ নারীর বদলে পুরুষকে হত্যা করা

৬৮৮৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একজন ইয়াহুদীকে একজন বালিকার বদলে হত্যা করিয়াছেন। সে রূপার গহনার লোভে মেয়েটিকে হত্যা করেছিল।[২৪১৩; মুসলিম ২৮/৩, হাদীস ১৬৭২, আহমাদ ১৩৮৪১]

(আঃপ্রঃ- ৬৪০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৯)

হাদীসটি হইতে জানা যায় : যদি কোন পুরুষ কোন মহিলাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে তবে ঐ মহিলার হত্যাকারীকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করিতে হইবে। অনুরূপ যদি কোন মহিলা কোন পুরুষকে হত্যা করে তবে ঐ পুরুষের হত্যাকারীকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করিতে হইবে। জামহুর ওলামার এটাই মত এবং এটিই সঠিক। আর ইমাম বুখারী জামহুর উলামার মতের স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করার উদ্দেশ্যেই অধ্যায়ের নামকরণ করিয়াছেন قَتْلِ الرَّجُلِ بِالْمَرْأَةِ ।

৮৭/১৪. অধ্যায়ঃ আহত হবার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষদের মধ্যে কিসাস।

আলিমগণ বলেন, নারীর বদলে পুরুষকে হত্যা করা হইবে। আর উমর (রাদি.) থেকে বর্ণনা করা হয় যে, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রত্যেক হত্যা বা আহত করার ক্ষেত্রে নারীর বদলে পুরুষকে কিসাসের বিধান মতে শাস্তি দেয়া হইবে। এটাই উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং আবুয যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর অভিমত তাদের আসহাব থেকে। রুবায় – এর বোন কোন এক লোককে আহত করলে নাবী (সাঃআঃ) বলেন, এক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান হল কিসাস।

৬৮৮৬. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর অসুখের সময় তাহাঁর মুখের এক কিনারায় ঔষধ ঢেলে দিলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা আমার মুখের কিনারায় ঔষধ দিওনা। আমরা মনে করলাম, রোগী ঔষধ সেবন অপছন্দ করেই থাকে। যখন তাহাঁর হুশ ফিরে এলো, তখন তিনি বললেনঃতোমাদের মধ্যে যেন এমন কেউ থাকে না, যার মুখের কিনারায় জোরপূর্বক ঔষধ ঢেলে দেয়া না হয় শুধুমাত্র আব্বাস ব্যতীত। কেননা, সে তোমাদের কাছে হাযির ছিল না।

আঃপ্রঃ- ৬৪০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২০)

৮৭/১৫. অধ্যায়ঃ হাকিমের কাছে মামলা পেশ করা ছাড়া আপন অধিকার আদায় করে নেয়া বা কিসাস গ্রহণ করা।

৬৮৮৭.আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, আমরা (দুনিয়াতে) সর্বশেষ ও (আখিরাতে) সর্বপ্রথম।

(আঃপ্রঃ- ৬৪০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২১)

৬৮৮৮.উক্ত হাদীসের সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ যদি কেউ তোমার ঘরে তোমার অনুমতি ব্যতীত উঁকি মারে আর তুমি পাথর মেরে তার চক্ষু ফুটা করে দাও, তাতে তোমার কোন গুনাহ হইবে না। [৬৭০২; মুসলিম ৩৮/৯, হাদীস ২১৫৮, আহমাদ ১৯৫৩০] (

আঃপ্রঃ- ৬৪০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২২)

৬৮৮৯.হুমায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক নাবী (সাঃআঃ)-এর ঘরে উঁকি মারল। নাবী (সাঃআঃ) তার দিকে চাকু নিক্ষেপ করিতে উদ্যত হলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, (এ হাদীস) আপনাকে কে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)

(আঃপ্রঃ- ৬৪০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২২)

৮৭/১৬. অধ্যায়ঃ ভিড়ে মারা গেলে বা হত্যা করা হলে

৬৮৯০. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের দিন যখন মুশরিকরা পরাজিত হয়ে গেল তখন ইবলীস চিৎকার দিয়ে বলিল, হে আল্লাহর বান্দাগণ! পিছনের দলের উপর আক্রমণ কর। তখন সামনের লোকেরা পেছনের লোকেদের উপর আক্রমণ করিল ও পরস্পরে লড়াইয়ে লিপ্ত হল। তখন হুযাইফাহ (রাদি.) তাকিয়ে দেখিতে পেলেন যে তাহাঁর বাবা ইয়ামান আক্রান্ত হয়েছেন। তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ! (এতো) আমার পিতা! আমার পিতা! তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তারা তাকে হত্যা না করে থামল না। হুযাইফাহ (রাদি.) বলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ কারণে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত হুযাইফাহ (রাদি.)-এর অন্তরে এই স্মৃতি জাগরুক ছিল।

(আঃপ্রঃ- ৬৪১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২৩)

৮৭/১৭. অধ্যায়ঃ যখন কেউ ভুলক্রমে নিজেকে হত্যা করে তখন তার কোন রক্তপণ নেই।

৬৮৯১. সালাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে খায়বারের পথে রওয়ানা হলাম। তথন তাদের এক ব্যক্তি বলিল, হে আমির! তোমরা আমাদেরকে উট চালনার কিছু গান শোনাও। সে তাদেরকে তা গেয়ে শোনাল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ চালকটি কে? তারা বলিল, আমির। তিনি বলিলেন আল্লাহ তাকে রহম করুন। তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদেরকে তার থেকে দীর্ঘকাল উপকার লাভের সুযোগ করে দিন। পরদিন সকালে আমির নিহত হল। তখন লোকেরা বললে লাগল তার আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, সে নিজেকে হত্যা করেছে। যখন আমি ফিরলাম, আর লোকেরা বলাবলি করছিল যে, আমিরের আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, তখন আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান। তাদের ধারণা, আমিরের আমল নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বললেনঃযে এ কথা বলেছে মিথ্যা বলেছে। কারণ, আমিরের জন্য দ্বিগুণ পুরষ্কার। কারণ সে আল্লাহর পথে সাধ্যমত চেষ্টা করেছ, অন্য কোন্ প্রকারের হত্যা তাকে এর চেয়ে অধিক পুরষ্কারের অধিকারী করত?

(আঃপ্রঃ- ৬৪১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২৪)

৮৭/১৮. অধ্যায়ঃ দাঁত দিয়ে কামড়ানোর কারণে কারো দাঁত উপড়ে গেলে।

৬৮৯২. ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক অন্য এক লোকের হাত দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল। সে তার হাত ঐ লোকের মুখ থেকে টেনে বের করিল। ফলে তার দুটো দাঁত উপড়ে গেল। তারা নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট তাদের মুকাদ্দমা হাজির করিল। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ তার ভাইকে কি কামড়াবে উট যেমন কামড়ায়? তোমার জন্য কোন রক্তপণ নেই। [১১৮][মুসলিম ১৭/৪, হাদীস ১৬৭৩, আহমাদ ১৯৮৫০] (আঃপ্রঃ- ৬৪১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২৫)

[১১৮] ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হাদীসটি তার জ্বলন্ত বাস্তব প্রমাণ। কত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়ের কী চমৎকার সমাধান, যা অন্য কোন ধর্মে বিরল। হাদীসটি হইতে প্রমাণ পাওয়া যায়:

১) রাগ বা ক্রোধ থেকে সতর্কতা।

২) বিচারের রায় পাওয়ার জন্য বিচারকের নিকট কারো অপরাধের বিবরণ তুলে ধরা।

৩) চতুষ্পদ প্রাণীর কর্মের সাথে মানুষের কোন কর্মের উপমা দেয়ার বৈধতা। যদি ঐ কর্মের মত অপছন্দনীয় স্থানে পতিত হয়।

৬৮৯৩

ইয়ালা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি কোন একটি যুদ্ধে বেরিয়েছিলাম। তখন এক লোক দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে, যার ফলে তার দাঁত উপড়ে যায়। তখন নাবী (সাঃআঃ) তার (দাঁতের) রক্তপণকে বাতিল করে দেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২৬)

৮৭/১৯. অধ্যায়ঃ দাঁতের বদলে দাঁত

৬৮৯৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাযরের কন্যা একটি বালিকাকে চড় দিয়ে তার দাঁত ভেঙ্গে ফেলল। তারা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এল। তখন তিনি কিসাসের হুকুম দিলেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২৭)

৮৭/২০. অধ্যায়ঃ আঙ্গুলের রক্তপণ

৬৮৯৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন: রক্তপণের ব্যাপারে এটি এবং ওটির সমান। অর্থাৎ কনিষ্ঠাঙ্গুলি ও বৃদ্ধাঙ্গুলি। (আঃপ্রঃ ৬৪১৫, ইঃফাঃ ৬৪২৮)।

৬৮৯৫/১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে ঐরূপই বলিতে শুনিয়াছি।

(আঃপ্রঃ ৬৪১৬, ইঃফাঃ ৬৪২৯)

৮৭/২১. অধ্যায়ঃ যখন একটি দল কোন এক লোককে বিপদগ্রস্ত করে তোলে, তখন তাদের সবাইকে শাস্তি দেয়া হইবে কি? অথবা সবার নিকট থেকে কিসাস গ্রহণ করা হইবে কি?

মুতার্রিফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এমন দুলোকের ব্যাপারে বর্ণনা করেন যারা এক লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, সে চুরি করেছে। তখন আলী (রাদি.) তার হাত কেটে দিলেন। তারপর তারা অপর একজনকে নিয়ে এসে বলিল, আমরা ভুল করে ফেলেছি। তখন তিনি তাদের সাক্ষ্য বাতিল করে দিলেন এবং প্রথম ব্যক্তির রক্তপণ গ্রহণ করিলেন। আর বলিলেন, যদি আমি জানতাম যে, তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজটি করেছ, তাহলে তোমাদের দুজনের হাত কেটে ফেলতাম।

৬৮৯৬. আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমাকে ইবনু বাশশার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু উমর (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, একটি বালককে গোপনে হত্যা করা হয়। তখন উমর (রাদি.) বলিলেন, যদি গোটা সানআবাসী এতে অংশ নিত তাহলে আমি তাদেরকে হত্যা করতাম।

মুগীরাহ ইবনু হাকীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আপন পিতা হাকীম থেকে বর্ণনা করেন যে, চারজন লোক একটি বালককে হত্যা করেছিল। তখন উমর (রাদি.) ঐরকম কথা বলেছিলেন। আবু বকর ও ইবনু যুবায়র, আলী ও সুওয়ায়দ ইবনু মুকাররিন (রাদি.) চড়ের বিষয়ে কিসাসের নির্দেশ দেন। উমর (রাদি.) ছড়ি দিয়ে মারা ব্যাপারে কিসাসের নির্দেশ দেন। আর আলী (রাদি.) তিনটি বেত্রাঘাতের জন্য কিসাসের নির্দেশ দেন এবং শুরায়হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একটি বেত্রাঘাত ও নখের আঁচড়ের জন্য কিসাস বলবৎ করেন।

(আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ই.ফা, অনুচ্ছেদ)

৬৮৯৭. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন , আমরা নাবী (সাঃআঃ) – এর অসুস্থতার সময় তাহাঁর মুখের এক পাশে ঔষধ ঢেলে দিলাম। আর তিনি আমাদের দিকে ইঙ্গিত করিতে থাকলেন যে, তোমরা আমার মুখের এক পাশে ঔষধ ঢেলে দিও না। আমরা মনে করলাম যে , রোগীর ঔষধের প্রতি অনাসক্তিই এর কারণ। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন , তখন বললেনঃ আমাকে ( জোর পূর্বক ) ঔষধ সেবন করাতে কি তোমাদেরকে নিষেধ করিনি? আমরা বললাম , রোগীর ঔষধের প্রতি অনাসক্তিই এর কারণ বলে আমরা মনে করেছি। তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ যেন না থাকে যার মুখে জোরপূর্বক ঔষধ ঢালা না হইবে আর আমি দেখব শুধু আব্বাস ছাড়া। কারণ, সে তোমাদের সাথে উপস্থিত ছিল না।

(আঃপ্রঃ- ৬৪১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩০)

৮৭/২২ . অধ্যায়ঃ কাসামাহ (শপথ)

আশ্‌আস ইবনু কায়স (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেন, তুমি দুজন সাক্ষী হাজির করিবে, নতুবা তার কসম! ইবনু আবু মুলায়কা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুআবিয়াহ (রাদি.) কাসামা অনুযায়ী কিসাস গ্রহণ করিতেন না। উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পক্ষ থেকে নিযুক্ত বসরার গভর্নর আদী ইবনু আরতাত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট একজন নিহত লোকের ব্যাপারে পত্র লিখেন, যাকে তেল ব্যাবসায়ীদের বাড়ীর নিকট পাওয়া গিয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন, যদি তার আত্মীয়-স্বজনরা প্রমাণ হাজির করিতে পারে তবে দন্ড প্রদান করিবে নতুবা লোকদের উপর যুল্‌ম করিবে না। কেননা, তা এমন ব্যাপার, যা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত ফায়সালা করা যায় না।

৬৮৯৮. আবু নুআয়ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাহল ইবনু আবু হাস্‌মা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তার গোত্রের একদল লোক খায়বার গেল ও সেখানে তারা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ল। তারা তাদের একজনকে নিহত অবস্থায় পেল। এবং যাদের কাছে তাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল তাদেরকে তারা বলিল , তোমরা আমাদের সাথীকে হত্যা করেছ। তারা বলিল, আমরা তাকে হত্যা করিনি, আর হত্যাকারীকে জানিও না। এরপর তারা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে গেল এবং বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা খায়বার গিয়েছিলাম। আর আমাদের একজনকে সেখানে নিহত অবস্থায় পেলাম। তখন তিনি বলিলেন বড়দের কে বলিতে দাও, বড়দেরকে বলিতে দাও। তারপর তিনি তাদেরকে বললেনঃ তোমাদেরকে তার হত্যাকারীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করিতে হইবে। তারা বলিল, আমাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে ওরা কসম করিবে। তারা বলিল, ইয়াহূদীদের কসমে আমাদের বিশ্বাস নেই। এই নিহইতের রক্ত বৃথা হয়ে যাক তা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) পছন্দ করিলেন না। তাই সদাকাহর একশ উট দিয়ে তার রক্তপণ আদায় করিলেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩১)

৬৮৯৯. কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু কিলাবা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর সিংহাসন মানুষদেরকে দেখানোর জন্য বের করিলেন। তারপর লোকদেরকে তাহাঁর নিকট আসার অনুমতি প্রদান করিলেন। তারা প্রবেশ করিল। তারপর বলিলেন, তোমরা কাসামার ব্যাপারে কি মত পোষণ কর? তারা বলিল, আমাদের মতে কাসামার ভিত্তিতে কিসাস গ্রহণ করা বৈধ। খলীফাগণ এর ভিত্তিতে কিসাস কার্যকর করিয়াছেন। তিনি আমাকে বলিলেন, হে আবু কিলাবা ! তুমি কী বল? তিনি আমাকে লোকদের সামনে দাঁড় করালেন। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার কাছে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থগণ ও আরব নেতাগণ আছেন, বলুন তো ! যদি তাদের থেকে পঞ্চাশ ব্যাক্তি দামেশ্‌কের একজন বিবাহিত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় যে সে যিনা করেছে , অথচ তারা তাকে দেখেনি, তাহলে আপনি তাকে রজম করবেন কি? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, বলুন তো ! যদি তাদের মধ্য থেকে পঞ্চাশ জন হিমস নিবাসী এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় যে সে চুরি করেছে অথচ তারা তাকে দেখেনি, তাহলে কি আপনি তার হাত কাটবেন? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম , আল্লাহর কসম ! রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তিন কারণের কোন একটি ছাড়া কাউকে হত্যা করেননি। (যথাঃ) (অন্যায় ভাবে ) কাউকে হত্যা করলে তাকে হত্যা করা হইবে। অথবা যে ব্যাক্তি বিয়ের পর যিনা করে, অথবা যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ও ইসলাম থেকে ফিরে মুরতাদ হয়ে যায়। তখন লোকেরা বলিল, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) কি বর্ণনা করেননি যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) চুরির ব্যাপারে হাত কেটেছেন , লৌহশলাকা দ্বারা চক্ষু ফুঁড়ে দিয়েছেন, তারপর তাদেরকে উত্তপ্ত রৌদ্রে ফেলে রেখেছেন। তখন আমি বললাম, আমি তোমাদেরকে আনাস (রাদি.)-এর হাদীস বর্ণনা করছি। আমাকে আনাস (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন, উক্‌ল গোত্রের আটজন লোক রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এল। তারা তাহাঁর হাতে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করিল। কিন্তু সে এলাকার আবহাওয়া তাদের অনুকূলে হল না এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এর অভিযোগ করিল। তিনি তাদেরকে বলিলেন, তোমরা কি আমার রাখালের সঙ্গে তার উটপালের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করিবেনা? তারা বলিল, হ্যাঁ। তারপর তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করিল। ফলে তারা সুস্থ হয়ে গেল। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কানে পৌঁছলে তিনি তাদের পেছনে ধাওয়া করার জন্য লোক পাঠালেন। তারা ধরা পরল এবং তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হল। তাদের হাত-পা কাটা হল, লৌহশলাকা দিয়ে তাদের চোখ ফুঁড়ে দেয়া হল। এরপর তপ্ত রোদে তাদেরকে ফেলে রাখা হল। অবশেষে তারা মারা গেল। আমি বললাম, তারা যা করেছে এর চেয়ে জঘন্য আর কী হইতে পারে? তারা ইসলাম থেকে মুরতাদ হল, হত্যা করিল, চুরি করিল। তখন আমবাসা ইবনু সাঈদ বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আজকের মত আমি আর কখনো শুনিনি। আমি বললাম , হে আমবাসা! তাহলে তুমি আমার বর্ণিত হাদীসটি প্রত্যখান করছ কি? তিনি বলিলেন, না, তুমি হাদীসটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছ। আল্লাহর কসম! এ লোকগুলো কল্যাণের উপর থাকবে যতদিন এ শায়খ (বুযর্গ) তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন। আমি বললাম, এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে একটা নিয়ম আছে। আনসারদের একটি দল তাহাঁর কাছে আসল। তারা তাহাঁর কাছে আলোচনা করছিল। ইতিমধ্যে তাদের সামনে তাদের এক লোক বেরিয়ে গেল এবং নিহত হল। তারপর তারা বের হল। তারা তাদের সাথী কে দেখিতে পেল যে, রক্তের মাঝে নড়াচড়া করছে। তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে ফিরে এল এবং বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের সাথী যে আমাদের সাথে আলোচনা করছিল এবং সে আমাদের সামনেই বের হয়ে গিয়েছিল, আমরা এখন তাকে রক্তের মাঝে নড়াচড়া করিতে দেখিতে পাচ্ছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বেরিয়ে গেলেন এবং বললেনঃ তাকে হত্যা করার ব্যাপারে কাদের সম্বন্ধে তোমাদের ধারণা? তারা বলিল, আমরা মনে করি, ইয়াহূদীরা তাকে হত্যা করেছে। তিনি ইয়াহূদীদেরকে ডেকে পাঠালেন। এরপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা ওকে হত্যা করেছ? তারা বলিল, না। তিনি আনসারদেরকে বলিলেন, তোমরা কি এতে রাযী আছ যে, ইয়াহূদীদের পঞ্চাশ জন লোক শপথ করে বলবে যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। আনসাররা বলিল, তারা এতে পরওয়া করিবেনা, তারা আমাদের সকলকে হত্যা করার পরও শপথ করে নিতে পারবে। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরা কি এজন্য প্রস্তুত আছ যে, তোমাদের থেকে পঞ্চাশজনের শপথের মাধ্যমে তোমরা দীয়াতের অধিকারী হইবে? তারা বলিল, আমরা শপথ করব না। তখন তিনি নিজের পক্ষ থেকে দীয়াত প্রদান করে দেন। (রাবী আবু কালাবা বলেন) আমি বললাম, হুযায়ল গোত্র জাহিলী যুগে তাদের গোত্রের লোকেরা এক ব্যাক্তিকে সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। এক রাতে সে লোক বাহহা নামক স্থানে ইয়ামনের এক পরিবারের উপর হঠাৎ হামলা চালায়। কিন্তু সে পরিবারের এক লোক তা টের পেয়ে যায় এবং তার প্রতি তরবারী নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করে ফেলে। অতঃপর হুযায়ল গোত্রের লোকেরা এসে ইয়ামনী গোত্রের ব্যাক্তিটিকে ধরে ফেলে এবং (হজ্জের) মৌসুমে উমর (রাদি.)-এর কাছে তাকে নিয়ে পেশ করে। আর বলে সে আমাদের এক সঙ্গী কে হত্যা করেছে। ইয়ামনী লোকটি বলিল, তারা কিন্তু ওকে সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তখন তিনি বলিলেন, হুযায়ল গোত্রের পঞ্চাশ জন লোক এ মর্মে শপথ করিবে যে তারা ওকে সকল দায়-দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের মধ্যে থেকে ঊনপঞ্চাশ জন লোক শপথ করে নিল, অতঃপর তাদের একজন সিরিয়া থেকে এলো, তারা তাকে শপথ করিতে বলিল। কিন্তু সে এক হাজার দিরহামের বিনিময়ে শপথ থেকে তাদের সঙ্গে আপোস করে নিল। তখন তারা তার স্থলে অপর একজন কে যোগ করে নিল। তারা তাকে নিহত ব্যাক্তির ভাইয়ের কাছে পেশ করিল। তারা উভয়েই করমর্দন করিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এবং ঐ পঞ্চাশ জন লোক, যারা শপথ করেছে, চললাম। যখন তারা নাখ্‌লা নামক স্থানে পৌঁছল, তাদের উপর বৃষ্টি নেমে এল। তখন তারা পর্বতের এক গুহায় প্রবেশ করিল। কিন্তু গুহা এ পঞ্চাশজন শপথকারীর উপর ভেঙ্গে পড়ল? এতে তারা সকলেই মারা গেল। তবে করমর্দনকারী দুজন বেঁচে গেল। কিন্তু একটি পাথর তাদের উভয়ের প্রতি নিক্ষিপ্ত হল এবং নিহত লোকের ভাইয়ের পা ভেঙ্গে ফেলল। আর সে এক বছর জীবিত থাকার পর মারা গেল। (রাবী বলেন) আমি বললাম, আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান (এক সময়) কাসামার ভিত্তিতে এক ব্যাক্তির কিসাস গ্রহণ করেন। এরপর আপন কৃতকর্মের উপর তিনি লজ্জিত হন এবং ঐ পঞ্চাশ জন লোক সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন যারা শপথ করেছিল, তাদেরকে রেজিস্ট্রার থেকে খারিজ করে দিয়ে সিরিয়ায় নির্বাসন দিলেন।[২৩৩; মুসলিম ২৮/২, হাদীস ১৬৭১, আহমাদ ১২৯৩৫]

(আঃপ্রঃ- ৬৪২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩২)

৮৭/২৩. অধ্যায়ঃ যে লোক অন্য লোকেদের ঘরে উঁকি মারল আর তারা তার চক্ষু ফুঁড়ে দিল, এতে ঐ ব্যাক্তির জন্য দিয়াত নেই।

৬৯০০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক নাবী (সাঃআঃ)-এর কোন একটি হুজরার ছিদ্র দিয়ে উঁকি মারল। তখন তিনি তার প্রতি লক্ষ্য করে একটি তীক্ষ্ণ প্রশস্ত ছুরি নিয়ে দাড়ালেন এবং তার অজান্তে তাকে খোঁচা দেয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগলেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৩)

৬৯০১. সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কোন হুজরার দরজার এক ছিদ্র দিয়ে উঁকি মারল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট চিরুনির মত একখন্ড লোহা ছিল। এ দিয়ে তিনি নিজ মাথা চুল্‌কাচ্ছিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে দেখলেন তখন বললেনঃ যদি আমি নিশ্চিত হতাম যে, তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ তাহলে এটা দিয়ে আমি তোমার চোখে আঘাত করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ চোখের কারণেই অনুমতির বিধান রাখা হয়েছে। [১১৯] [৫৯২৪; মুসলিম ৩৮/৯, হাদীস ২১৫৬, আহমাদ ২২৮৬৬]

(আঃপ্রঃ- ৬৪২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৪)

[১১৯] উঁকি মেরে বাড়ীর ভিতর তাকানো নিষিদ্ধ- বাড়ী অপরের হোক বা নিজেরই হোক। ইসলাম যে তার অনুসারীদেরকে কত মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত করিতে চায়, এ হাদীস তার এক উজ্জ্বল প্রমাণ।

৬৯০২.আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবুল কাসিম (রাদি.) বলেছেনঃ যদি কোন লোক অনুমতি ছাড়া তোমার দিকে উঁকি মারে আর তখন তুমি তার প্রতি কংকর ছুঁড়ে তার চক্ষু উপড়ে ফেল, এতে তোমার কোন অপরাধ হইবে না। [১২০]

(আঃপ্রঃ- ৬৪২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৫)

[১২০] ৬৯০০-৬৯০২ নং হাদীসগুলো থেকে যে শিক্ষণীয় বিষয় জানা যায় তা নিম্নরূপঃ

(১) মাথায় চুল রাখা ও তার পরিচর্যা করা।

(২) এমন হাতিয়ার রাখা যা দ্বারা বিষাক্ত ও হিংস্র প্রাণীকে তাড়ানো যায় এবং যা ব্যবহারে ময়লা ও উকুন বিতাড়ন করা যায়।

(৩) দরজা বন্ধ করে যে ব্যক্তি বাড়ীতে অবস্থান করছে তার বিনা অনুমতিতে বাড়ীতে প্রবেশ না করা, এমন কি দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দেয়ার নিষেধাজ্ঞা।

(৪) চুল আঁচড়ানোর বৈধতা।

(৫) অনুমতি নেয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র যাদের সাথে বিবাহ হারাম নয় তাদের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং তা মুহরিমদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যেমন মা, বোন ইত্যাদি। (ফাতহুল বারী)

৮৭/২৪. অধ্যায়ঃ আকিলা (রক্তপণ) প্রসঙ্গে

৬৯০৩. আবু জুহায়ফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আলী (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম, যা কুরআনে নেই এমন কিছু আপনাদের নিকট আছে কি? একবার তিনি বলেছেন, যা মানুষের নিকট নেই…তখন তিনি বলিলেন, ঐ সত্তার কসম! যিনি খাদ্যশস্য অঙ্কুরিত করেন এবং প্রাণ সৃষ্টি করেন! কুরআনে যা কিছু আছে তা ছাড়া আমাদের নিকট অন্য কিছু নেই। তবে এমন জ্ঞান যা আল্লাহর কিতাব বুঝবার জন্য কোন ব্যাক্তিকে দেয়া হয় এবং এ কাগজের টুকরায় যা রহিয়াছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাগজের টুক্‌রায় কী রহিয়াছে? তিনি বলিলেন, রক্তপণ ও মুক্তিপণের বিধান। আর (এ নীতি) কোন কাফেরের বদলে কোন মুসলিম কে হত্যা করা হইবে না। [১২১]

(আঃপ্রঃ- ৬৪২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৬)

[১২১] আলী (রাদি.) হয়ত রক্তপণ ও মুক্তিপণ সম্পর্কিত বিধানাবলী রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে জানার পর কাগজের টুকরায় লিখে রেখেছিলেন।

৮৭/২৫. অধ্যায়ঃ মহিলার ভ্রূণ

৬৯০৪. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হুযায়ল গোত্রের দুজন মহিলার একজন আরেকজন কে পাথর ছুঁড়ে গর্ভপাত ঘটিয়ে দিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ মহিলার ব্যাপারে একটি গোলাম অথবা বাঁদী প্রদানের ফায়সালা দিলেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৭)

৬৯০৫. উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মহিলাদের গর্ভপাত সম্বন্ধে সাহাবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তখন মুগীরা (রাদি.) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) এমন ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত লোকটিকে একটি গোলাম অথবা বাঁদী প্রদানের ফায়সালা করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৮)

৬৯০৬.উযার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) সাক্ষ্য দিলেন যে, তিনি নাবী (সাঃআঃ) -কে এ ফায়সালা করিতে দেখেছেন।

(আঃপ্রঃ- ৬৪২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৮)

৬৯০৭. হিশামের পিতা উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উমর (রাদি.) লোকদের কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করিলেন, নাবী (সাঃআঃ) -কে ভ্রূণ হত্যার ব্যাপারে ফায়সালা দিতে কে শুনেছে? তখন মুগীরা (রাদি.) বলিলেন, আমি তাঁকে এরূপ ক্ষেত্রে একটি গোলাম অথবা বাঁদী প্রদানের ফায়সালা করিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তোমার সাক্ষী নিয়ে এসো।

(আঃপ্রঃ- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৯)

৬৯০৮. মুহাম্মাদ ইবনু মাস্‌লামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ ইবনু মাস্‌লামাহ (রাদি.) বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নাবী (সাঃআঃ) এরূপ ফায়সালা প্রদান করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ, ইঃফাঃ ৬৪৩৯)

————————-

৬৯০৮/১. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, তিনি সাহাবীগণের সঙ্গে গর্ভপাত ঘটানোর বিষয়ে এরূপ পরামর্শ করিয়াছেন। [৬৯০৫; মুসলিম ২৮/১১, হাদীস ১৬৮২, আহমাদ ১৮১৬১] (আঃপ্রঃ ৬৪২৮, ইঃফাঃ ৬৪৪০)

৮৭/২৬. অধ্যায়ঃ মহিলার ভ্রুন এবং দিয়াত পিতা ও পিতার নিকটাত্মীয়দের উপর বর্তায়, সন্তানের উপর নয়।

৬৯০৯. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বাণী লিহয়ানের এক মহিলার ভ্রুন হত্যার ব্যাপারে একটি গোলাম অথবা বাঁদী প্রদানের ফায়সালা করেন। তারপর দণ্ডপ্রাপ্ত মহিলার মৃত্যু হল, যার ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ) ঐ ফায়সালা করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) পুনরায় ফায়সালা প্রদান করিলেন যে, তার ত্যাজ্য সম্পত্তি তার ছেলে সন্তান ও স্বামী পাবে। আর দিয়াত আদায় করিবে তার আসাবা।(আঃপ্রঃ- ৬৪২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪১)

৬৯১০. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুযায়ল গোত্রের দুজন মহিলা ঝগড়াকালে একে অন্যের প্রতি পাথর ছুঁড়ে মারে এবং একজন অন্য জনের গর্ভস্থিত সন্তানকে হত্যা করে ফেলল। তারপর তারা নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে বিচার নিয়ে এল। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ভ্রুনের দিয়াত হল একটি গোলাম অথবা বাঁদী আর এ ফায়সালাও দিলেন যে, নিহত মহিলার দিয়াত হত্যাকারিণীর আসাবার উপর আসবে। (আঃপ্রঃ- ৬৪৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪২)

৮৭/২৭. অধ্যায়ঃ যে কোন গোলাম অথবা বালক থেকে সাহায্য চায়

বর্ণিত আছে যে, উম্মু সালামাহ (রাদি.) একটি পাঠশালার শিক্ষকের কাছে খবর পাঠালেন যে, আমার কাছে কতিপয় বালক পাঠিয়ে দিন, যারা পশমের জট ছাড়াবে । তবে কোন আযাদ (বালক) পাঠাবেন না ।

৬৯১১

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মদীনায় আসলেন, তখন আবু ত্বল্‌হা (রাদি.) আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর কাছে গেলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! আনাস একজন হুঁশিয়ার ছেলে। সে যেন আপনার খেদমত করে। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি মুকীম এবং সফরকালে তাহাঁর খেদমত করেছি। আল্লাহর কসম ! যে কাজ আমি করেছি এর জন্য তিনি আমাকে কোন দিন এ কথা বলেননি, এটা এমন কেন করেছ? আর যে কাজ আমি করিনি এ জন্য এ কথা বলেননি, এটা এরকম করনি কেন?(আঃপ্রঃ- ৬৪৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৩)

৮৭/২৮. অধ্যায়ঃ খণি দণ্ডমুক্ত এবং কূপ দণ্ডমুক্ত

৬৯১২

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন পশু কাউকে আহত করলে, কূপে বা খণিতে পড়ে কেউ নিহত বা আহত হলে তাতে কোন দণ্ড বা রক্তপণ নেই। আর কেউ গুপ্তধন পেলে তার প্রতি এক-পঞ্চমাংশ দেয়া ওয়াজিব।(আঃপ্রঃ- ৬৪৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৪)

৮৭/২৯. অধ্যায়ঃ পশু আহত করলে তাতে কোন ক্ষতিপূরন নেই ।

ইবনে সীরিন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তাদের সময় পশুর লাথির আঘাতের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ফায়সালা দিতেন না । এবং লাগাম টানার দরুন কোন ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ফায়সালা দিতেন । হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, লাথির আঘাতের কারণে দায়ী করা যাবে না । তবে যদি কেউ পশুটিকে খোঁচা মারে । শুরায়হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, প্রতিশোধমূলক আঘাতের কারণে পশুকে দায়ী করা যাবে না । যেমন কেউ কোন পশুকে আঘাত করিল, তখন পশুটিও তাকে পা দিয়ে আঘাত করিল । হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি ভাড়া-করা ব্যক্তি গাধাকে হাঁকিয়ে নেয়, যে গাধার উপর কোন মহিলা উপবিষ্ঠ থাকে আর মহিলাটি গাধা থেকে পড়ে যায়, তাহলে তার উপর কিছু বর্তিবে না । শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি কেউ কোন পশু চালায় এবং তাকে ক্লান্ত করে ফেলে তাহলে তার উপর ক্ষতিপূরণ বর্তিবে । আর যদি ধীরে চালায় তাহলে বর্তিবে না ।

৬৯১৩

আবু হুরাইরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)র মাধ্যমে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, পশু আহত করলে, খণি বা কূপে পড়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারে কোন ক্ষতিপূরণ নেই। গুপ্তধনের এক-পঞ্চমাংশ দেয়া ওয়াজিব। [১৪৯৯; মুসলিম ২৯/১১, হাদীস ১৭১০, আহমাদ ৭২৫৮] (আঃপ্রঃ- ৬৪৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৫)

৮৭/৩০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি যীম্মিকে বিনা অপরাধে হত্যা করে তার পাপ

৬৯১৪

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদত্ত কোন লোককে হত্যা করে, সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধির ঘ্রান নিতে পারবে না। অথচ তার সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দুরত্ব থেকে পাওয়া যায়। [১২২](আঃপ্রঃ- ৬৪৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৬)

[১২২] হাদীসটিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কাফিরকে হত্যার ভয়াবহতা বর্ণনা করা হয়েছে । প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কাফিরকে হত্যা করার পরিণাম যদি এমন হয় তাহলে একজন মুসলিমকে হত্যা করার পরিণাম কী হইতে পারে জ্ঞানী লোকদের একটু ভাবা উচিত।

উল্লেখ্য কাফেরকে হত্যার দায়ে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না । তবে এর অর্থ এরুপ নয় যে, মুসলিম ব্যক্তি অপরাধী নয়, বরং সে তার কর্মের দ্বারা বড় গুনাহে জড়িত হয়েছে । হত্যাকারী এ মুসলিম ব্যক্তিকে যে হত্যা করা যাবে না তা পরের হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

৮৭/৩১. অধ্যায়ঃ কাফেরের বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না

৬৯১৫

আবু জুহাইফাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আলী (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের কাছে এমন কিছু আছে কি যা কুরাআনে নেই? তিনি বলিলেন, দিয়াতের বিধান, বন্দী-মুক্তির বিধান এবং (এ বিধান যে) কাফেরের বদলে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না।(আঃপ্রঃ- ৬৪৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৭)

৮৭/৩২. অধ্যায়ঃ যখন কোন মুসলিম কোন ইয়াহুদীকে ক্রোধের সময় থাপ্‌পড় মারল ।

এ সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।

৬৯১৬

আবু সাঈদ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ তোমরা নাবীদের একজনকে অন্য জনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিওনা। (আঃপ্রঃ- ৬৪৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৮)

৬৯১৭

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহূদী, যার মুখে চপেটাঘাত করা হয়েছিল, নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এসে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আপনার জনৈক আনসারী সাহাবী আমার মুখে চপেটাঘাত করেছে। তিনি বলিলেন, তোমরা তাকে ডেকে আন। তারা তাকে ডেকে আনল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি তাকে কেন চড় মারলে? সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এক ইয়াহূদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমি তাকে বলিতে শুনলাম যে, ঐ সত্তার কসম! যিনি মূসাকে মানবকুলের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তখন আমি বললাম, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) – এর উপরেও কি? অতঃপর আমার ভীষণ রাগ এসে গেল। ফলে আমি তাকে চড় মেরে দেই। তিনি বলেনঃ তোমরা আমাকে নাবীদের মাঝে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কেননা সকল মানুষই ক্বিয়ামতের দিন বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তখন আমিই হব প্রথম ব্যক্তি যে হুঁশ ফিরে পাবে। কিন্তু আমি তখন মুসা (আঃ) – কে এমন অবস্থায় পাব যে, তিনি আরশের খুঁটিগুলো থেকে একটি খুঁটি ধরে আছেন। আমি বুঝতে পারব না যে, তিনি আমার আগে হুঁশ ফিরে পেলেন, না তূর পর্বতে বেহুঁশ হবার প্রতিদান দেয়া হয়েছে ( যে জন্য তিনি পুনরায় বেহুঁশই হননি)?(আঃপ্রঃ- ৬৪৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৯)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply