যিনা, মদ্য, গুনাহ, ধর্মত্যাগী বিদ্রোহী ও চুরির শাস্তি
যিনা, মদ্য, গুনাহ, ধর্মত্যাগী বিদ্রোহী ও চুরির শাস্তি >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৮৬, শরীয়তের শাস্তি, অধ্যায়ঃ (১-১৮)=১৯টি
৮৬/১. অধ্যায়ঃ যিনা ও মদ্য পান।
৮৬/২. অধ্যায়ঃ মদ্যপায়ীকে প্রহার করা সম্পর্কিত।
৮৬/৩. অধ্যায়ঃ ঘরের ভিতরে শরীয়াতের শাস্তি দেয়ার হুকুম সম্পর্কিত।
৮৬/৪. অধ্যায়ঃ গাছের ডাল এবং জুতা দিয়ে মারার বর্ণনা।
৮৬/৫. অধ্যায়ঃ মদ্যপায়ীকে লানত করা মাকরূহ এবং সে মুসলিম থেকে খারিজ নয়
৮৬/৬. অধ্যায়ঃ চোর যখন চুরি করে।
৮৬/৭. অধ্যায়ঃ চোরের নাম উল্লেখ না করে তার উপর লানত করা।
৮৬/৮. অধ্যায়ঃ হুদুদ (শরীয়াতের শাস্তি) (গুনাহ্র) কাফ্ফারা হয়ে যায়।
৮৬/৯. অধ্যায়ঃ শরীয়াতের শাস্তি বা হক ব্যতীত মুমিনের পিঠ সংরক্ষিত।
৮৬/১০. অধ্যায়ঃ শরীয়াতের হদ কায়িম করা এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজে (কেউ লিপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে) প্রতিশোধ নেয়া।
৮৬/১১. অধ্যায়ঃ উচ্চ-নীচ সকলের বেলায় শরীয়াতের শাস্তি কায়িম করা।
৮৬/১২. অধ্যায়ঃ বাদশাহ্র নিকট যখন মামলা পেশ করা হয় তখন শারীআতের শাস্তি দেয়ার বেলায় সুপারিশ করা অনুচিত।
৮৬/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ পুরুষ কিংবা নারী চুরি করলে তাদের হাত কেটে দাও- (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩৮)। কী পরিমাণ মাল চুরি করলে হাত কাটা যাবে। আলী (রাদি.) কব্জি পর্যন্ত কেটেছিলেন। আর ক্বাতাদাহ (রাদি.) এক মহিলা সম্পর্কে বলেছেন যে চুরি করেছিল, এতে তার বাম হাত কাটা হয়েছিল। এ ব্যতীত আর কোন শাস্তি দেয়া হয়নি।
৮৬/১৪. অধ্যায়ঃ চোরের তাওবাহ।
৮৬/১৫. অধ্যায়ঃ কাফির ও ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিবরণ, আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের শাস্তি…। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩৩)
৮৬/১৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) ধর্ম পরিত্যাগকারী বিদ্রোহীদের ক্ষতস্থানে লোহা পুড়ে দাগ দেননি। শেষতক তারা মারা গেল।
৮৬/১৭. অধ্যায়ঃ ধর্ম পরিত্যাগকারী বিদ্রোহীদেরকে পানি পান করানো হয়নি; অবশেষে তারা মারা গেল।
৮৬/১৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) বিদ্রোহীদের চোখগুলো লোহার শলাকা দিয়ে ফুঁড়ে দিলেন।
৮৬/১. অধ্যায়ঃ যিনা ও মদ্য পান।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, যিনার কারণে ঈমানের জ্যোতি দূর হয়ে যায় ।
৬৭৭২. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যিনাকার যখন যিনায় লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। কেউ যখন মদপান করে তখন সে মুমিন থাকে না। যে চুরি করে চুরি করার সময় মুমিন থাকে না এবং কোন ছিনতাইকারী এমনভাবে ছিনতাই করে যে, মানুষ তার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকে; তখন সে মুমিন থাকে না। [৯৪]
ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এরকমই বর্ণনা করেন। কিন্তু তাতে النُّهْبَةَ -র উল্লেখ নেই। [২৪৭৫] (আঃপ্রঃ- ৬৩০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১৫)
[১] শাস্তি বা দন্ডবিধি কার্যকর করিবে প্রশাসন। যে কেউ যখন তখন যেখানে ইচ্ছা এই বিধান কার্যকর করলে একটি দেশের প্রশাসনিক অবকাঠামোই শুধু নষ্ট হইবে না বরং সুষ্ঠু সমাজের সার্বিক সুখ ও শান্তি হুমকির সম্মুখীন হইবে। ফলে হদ্দ বা শাস্তির মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য ব্যহত হইবে। কারণ অপরাধীকে শাস্তি দেয়া হলে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা নেবে এবং অপরাধ সমূলে উৎপাটন হইবে। অবশেষে শাস্তির মূল উদ্দেশ্য শান্তি, শৃখংলা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হইবে।
[2] ইমাম নববী বলেন, এই হাদীসের তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলেমগণ মতভেদ করিয়াছেন। তাহাঁর এই কথার সূত্র ধরে মতভেদগুলো একত্রিত করলে প্রায় ১৩টি মত পাওয়া যায়। কিন্তু মজার কথা হল, মতামত ১৩টি হলেও সবগুলো মতই একটি আরেকটির দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং উপসংহারে যার অর্থ দাঁড়ায় : (১) হাদীসে উল্লেখিত গুনাহগুলোতে লিপ্ত থাকার সময় তা সম্পাদনকারীর ঈমান থাকে না। অতঃপর যখন সে এসব গুনাহের কাজ ছেড়ে দেয় হয় তখন আবার ঈমান ফিরে আসে। অর্থাৎ গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকার সময় ঈমানহীন হয়ে পড়ে। এটিই হাদীসের প্রকাশ্য অর্থ। এর প্রমাণ ইমাম বুখারী كتاب المحاربين এর অন্তর্গত باب إثم الزنا তে আব্দুল্লাহ বিন আববাস বর্ণনা করেন। আর তা হল, قال عكرمة قلت لابن عباس كيف ينزع منه الإيمان قال هكذا وشبك بين أصابعه অনুরূপ হাদীস ইমাম আবু দাঊদ এবং ইমাম হাকেম সহীহ সূত্রে মারফূভাবে সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি শুনেছেন আবু হুরাইরার (রাদি.) নিকট এবং আবু হুরাইরা রাসুল (সাঃ) কে বলেতে শুনেছেন :
إذا زنى الرجل خرج منه الإيمان فكان عليه كالظلة فإذا أقلع رجع إليه الإيمان
এবং ইমাম হাকিম ইবনু হুজায়ফার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবু হুরাইরাকে বলিতে শুনেছেন :
من زنى أو شرب الخمر نزع الله منه الأيمان كما يخلع الإنسان القميص من رأسه
উল্লেখিত গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকার সময় পূর্ণ ঈমান থাকে না। অর্থ্যাৎ পূর্ণ ঈমানদারগণ এ গুনাহগুলো করে না।
এখানে ঈমানের পূর্ণতা নিষেধ করা হয়েছে। যেমন কারো একথা বলা যে, لا علم إلا ما نفع এ ব্যাখ্যার সপক্ষে যে প্রমাণ পেশ করা হয় তা হলো,
(ক) আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিত হাদীস : من قال لا إله إلا الله دخل الجنة وإن زنى وإن سرق
(খ) উবাদাহ (রাদি.) এর সুপ্রসিদ্ধ সহীহ হাদীস : أنهم بايعوا رسول الله صلى الله عليه وسلم على أن لا يسرقوا ولا يزنوا
(ফাতহুল বারী)
৮৬/২. অধ্যায়ঃ মদ্যপায়ীকে প্রহার করা সম্পর্কিত।
৬৭৭৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) মদ পানের জন্য গাছের ডাল এবং জুতা দ্বারা মেরেছেন। আর আবু বকর (রাদি.) চল্লিশ চাবুক লাগিয়েছেন
।[৬৭৭৬; মুসলিম ২৯/৮, হাদীস ১৭০৬, আহমাদ ১২৮০৫] (আঃপ্রঃ- ৬৩০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১৬)
৮৬/৩. অধ্যায়ঃ ঘরের ভিতরে শরীয়াতের শাস্তি দেয়ার হুকুম সম্পর্কিত।
৬৭৭৪. উক্বাহ ইবনু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নুআয়মান অথবা (রাবীর সন্দেহ) নুআয়মানের পুত্রকে মদ্যপায়ী অবস্থায় আনা হল। তখন নাবী (সাঃআঃ) – এর ঘরে যারা ছিল তাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে প্রহার করার জন্য। রাবী বলেন, তারা তাকে প্রহার করিল, যারা তাকে জুতা মেরেছিল তাদের মাঝে আমিও ছিলাম।
[৯৫] (আঃপ্রঃ- ৬৩০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১৭)
[৯৫] জামহুর উলামার মতে প্রকাশ্যে জন সম্মুখে হাদ্দ জারী করা শর্ত নয় বরং দায়িত্বশীলদের নির্দিষ্ট কক্ষের (যেমন কারাগার, কোর্ট, বিচারালয়) অভ্যন্তরে হাদ্দ জারী করলেও যথেষ্ট হইবে। তাদের মতে উমার (রাদি.) তাহাঁর ছেলের হাদ্দ প্রকাশ্যে জারী করার ব্যাপারটি। প্রকাশ্যে হাদ্দ জারী না করলে ঠিক হইবে না এমনটি নয়, বরং খলীফা উমার (রাদি.) স্বীয় ছেলেকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এটি করিয়াছেন।
হাদীসটি হইতে আরও জানা যায়ঃ (১) মদ্যপান হারাম। (২) মদ্যপানকারীকে শাস্তি প্রদান ওয়াজিব চাই সে অল্প পান করুক অথবা বেশী এবং সে মাতাল হোক বা না হোক। (ফাতহুল বারী)
৮৬/৪. অধ্যায়ঃ গাছের ডাল এবং জুতা দিয়ে মারার বর্ণনা।
৬৭৭৫.উক্বাহ ইবনু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার নুআয়মান অথবা (রাবীর সন্দেহ) নুআয়মানের পুত্রকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে আনা হল। তার অবস্থা দেখে তিনি দুঃখিত হলেন। তখন ঘরের ভিতরে যারা ছিল তিনি তাদেরকে হুকুম করিলেন তাকে মারার জন্যে। তাই তারা তাকে গাছের ডাল এবং জুতা দিয়ে মারল। রাবী বলেন, যারা তাকে মেরেছিল, আমিও তাদের মাঝে ছিলাম।
(আঃপ্রঃ- ৬৩০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১৮)
৬৭৭৬. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মদপানের অপরাধে নাবী (সাঃআঃ) গাছের ডাল এবং জুতা দিয়ে পিটিয়েছেন। আবু বকর (রাদি.) চল্লিশটি চাবুক মেরেছেন।
(আঃপ্রঃ- ৬৩০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১৯)
৬৭৭৭.আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে এক লোককে আনা হল, সে মদ পান করেছিল। তিনি বললেনঃ তোমরা একে প্রহার কর। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, তখন আমাদের মাঝে কেউ হাত দিয়ে প্রহার করিল, কেউ জুতা দিয়ে মারল, আর কেউ কাপড় দিয়ে মারল। মার-ধোর যখন থামল তখন কেউ বলে উঠল, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এমন বলো না, শয়তানকে এর বিরুদ্ধে সাহায্য করো না।
[৬৭৮১] (আ. প্র. ৬৩০৮, ই. ফা. ৬৩২০)
৬৭৭৮. আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি কাউকে শরীয়াতের দণ্ড দেয়ার সময় সে তাতে মরে গেলে আমার দুঃখ হয় না। কিন্তু মদ পানকারী ছাড়া। সে মারা গেলে আমি জরিমানা দিয়ে থাকি। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ শাস্তির ব্যাপারে কোন সীমা নির্ধারণ করেননি।
[মুসলিম ২৯/৮, হাদীস ১৭০৭] (আঃপ্রঃ- ৬৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২১)
৬৭৭৯. সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর যুগে ও আবু বকর (রাদি.) – এর খিলাফত কালে এবং উমার (রাদি.) – এর খিলাফাতের প্রথম দিকে আমাদের কাছে যখন কোন মদ্যপায়ীকে আনা হত তখন আমরা তাকে হাত দিয়ে, জুতা দিয়ে এবং আমাদের চাদর দিয়ে মারতাম। অতঃপর উমার (রাদি.) – তাহাঁর খিলাফাতের শেষ সময়ে চল্লিশটি করে চাবুক মেরেছেন। আর এ সব মদ্যপায়ী যখন বাড়াবাড়ি করেছে এবং পাপে লিপ্ত হয়েছে তখন আশিটি করে চাবুক লাগিয়েছেন।
(আঃপ্রঃ- ৬৩১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২২)
৮৬/৫. অধ্যায়ঃ মদ্যপায়ীকে লানত করা মাকরূহ এবং সে মুসলিম থেকে খারিজ নয়
৬৭৮০. উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) – এর যুগে এক লোক যার নাম ছিল আবদুল্লাহ আর ডাকনাম ছিল হিমার। এ লোকটি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে হাসাত। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) শরাব পান করার অপরাধে তাকে বেত্রাঘাত করেছিলেন। একদিন তাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আনা হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে চাবুক মারার আদেশ দিলেন। তাকে চাবুক মারা হল। তখন দলের মাঝ থেকে এক লোক বলিল, হে আল্লাহ! তার উপর লানত বর্ষণ করুন! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকে কতবার যে আনা হল! তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তাকে লানত করো না। আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, সে আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলকে ভালবাসে।
[৯৬](আঃপ্রঃ- ৬৩১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৩)
[৯৬] আল্লাহর রসূলের বাণীর সত্যতার প্রমাণ আমাদের সমাজে আমরা অনেক দেখেছি। আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের তথা ইসলামের অবমাননা হইতে দেখলে কখনও কখনও মদখোররা জানবাজি রেখে আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে – যেটা অনেক ভাল ভাল মুসল্লির পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। দ্বিতীয়ত যে কোন অপরাধের যা শাস্তি বা যতটুকু শাস্তি তার চেয়ে বেশি বা পরিবর্তন করে বিকল্প শাস্তি দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।
৬৭৮১. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট একটি নেশাগ্রস্ত লোককে আনা হল। তিনি তাকে মারার জন্য দাঁড়ালেন। তখন আমাদের কেউ তাকে হাত দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে আর কেউ বা কাপড় দিয়ে মারল। লোকটি চলে গেলে, এক লোক বলিল, এর কী হল, আল্লাহ তাকে অপমানিত করিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ো না।
(আঃপ্রঃ- ৬৩১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৪)
৮৬/৬. অধ্যায়ঃ চোর যখন চুরি করে।
৬৭৮২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন সে মুমিন থাকে না। এবং চোর যখন চুরি করে তখন সে মুমিন থাকে না। [৯৭]
(আঃপ্রঃ- ৬৩১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৫)
[৯৭] হাদীসটি হইতে জানা যায়ঃ
(১) কবীরা গুনাহ সম্পাদনকারীকে কাফির আখ্যায়িত করার নিষিদ্ধতা। কারণ – চুরি, ব্যভিচার উভয়টি কবীরা গুনাহ হওয়া সত্ত্বেও রাসুল (সাঃআঃ) উক্ত গুনাহে জড়িতদের মুমিন বলেই আখ্যায়িত করিয়াছেন। কিন্তু খারেজী, মুতাযিলা ও শীআরা ভিন্ন মত পোষণ করে।
খারেজী ও শীআদের মতে কবীরা গুনাহগার কাফির। ফলে তারা তাওবা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হইবে। আর মুতাযিলাদের মতে, কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি ফাসিক এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কিন্তু তাদের এই বিশ্বাস আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা ও বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হল, কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি স্বল্প ঈমানের অধিকারী, অর্থাৎ পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি নয়। ফলে সে তাওবাহ না করে মৃত্যুবরণ করলে তার ব্যাপারটা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ যদি চান তাকে ক্ষমা করে দেবেন ও জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যদি চান প্রথমে কবীরাগুনাহের কারণে জাহান্নামে শাস্তি দেবেন এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকার কারণে ও স্বল্প ঈমানদার হওয়ার কারণে জাহান্নাম থেকে বের করে তাকে জান্নাত দেবেন।
(২) সকল মানুষের ঈমান সমান নয়, বরং ঈমান কম-বেশী হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
(আরবি)
মুমিন তো তারাই আল্লাহর কথা আলোচিত হলেই যাদের অন্তর কেঁপে উঠে, আর তাদের কাছে যখন তাহাঁর আয়াত পঠিত হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে। [সুরা আনফাল ২]। (ফাতহুল বারী)
৮৬/৭. অধ্যায়ঃ চোরের নাম উল্লেখ না করে তার উপর লানত করা।
৬৭৮৩. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, চোরের উপর আল্লাহর লানত হোক, যখন সে একটি হেলমেট চুরি করে এবং এ জন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে একটি রশি চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয়।
আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তারা মনে করত যে, হেলমেট লোহার হইতে হইবে আর রশির ব্যাপারে তারা ধারণা করত তা কয়েক দিরহামের সমমূল্যের হইবে।[
৬৭৯৯; মুসলিম ২৯/১, হাদীস ১৬৮৭, আহমাদ ৭৪৪০] (আঃপ্রঃ- ৬৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৬)
৮৬/৮. অধ্যায়ঃ হুদুদ (শরীয়াতের শাস্তি) (গুনাহ্র) কাফ্ফারা হয়ে যায়।
৬৭৮৪. উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একবার নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট এক মজলিসে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আমার কাছে এ বায়আত কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছু শরীক করিবে না, চুরি করিবে না এবং ব্যভিচার করিবে না। এরপর তিনি এ আয়াত পুরো তিলাওয়াত করলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (বায়আতের শর্তসমূহ) পুরো করে তার বিনিময় আল্লাহর কাছে। আর যে ব্যক্তি এত্থেকে কিছু করে বসে আর তার জন্য শাস্তি দেয়া হয়, তবে এটা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যায়। আর যদি কেউ এত্থেকে কিছু করে বসে আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন তবে এটা তাহাঁর ইচ্ছাধীন। তিনি ইচ্ছে করলে তাকে ক্ষমা করবেন, ইচ্ছে করলে শাস্তি দিবেন।
(আঃপ্রঃ- ৬৩১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৭)
৮৬/৯. অধ্যায়ঃ শরীয়াতের শাস্তি বা হক ব্যতীত মুমিনের পিঠ সংরক্ষিত।
৬৭৮৫. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিদায় হাজ্জে বললেনঃ আচ্ছা বলতো কোন মাসকে তোমরা সবচেয়ে সম্মানিত বলে জান? তাঁরা বলিলেন, আমাদের এ মাস নয় কি? তিনি আবার বললেনঃ তোমরা কোন শহরকে সর্বাধিক সম্মানিত বলে জান? তাঁরা বলিলেন, আমাদের এ শহর নয় কি? তিনি বললেনঃ বলতো! কোন দিনকে তোমরা সর্বাধিক সম্মানিত বলে জান? তাঁরা বলিলেন, আমাদের এ দিন নয় কি? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের রক্ত, ধন-সম্পদ ও সম্মানকে শারীআতের হক ব্যতীত এমন পবিত্র করে দিয়েছেন, যেমন পবিত্র তোমাদের এ মাসে এ শহরের মাঝে আজকের এ দিনটি। ওহে! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? এ কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন। প্রত্যেকবারেই তারা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমাদের জন্য আফসোস অথবা ধ্বংস! তোমরা আমার পরে একে অপরের গর্দান মেরে কাফির হয়ে পেছনের দিকে ফিরে যেও না।
[৯৮] (আঃপ্রঃ- ৬৩১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৮)
[৯৮] জিলহজ্জ মাস, মাক্কা শহর আর আরাফার দিন যেমন সম্মানীয় প্রতিটি মুসলমানের রক্ত, ধন-সম্পদ ও সম্মান তেমনি পবিত্র – তবে কেউ শরীয়তী দণ্ডবিধির মুখোমুখী হলে ভিন্ন কথা।
৮৬/১০. অধ্যায়ঃ শরীয়াতের হদ কায়িম করা এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজে (কেউ লিপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে) প্রতিশোধ নেয়া।
৬৭৮৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)- কে যখনই (আল্লাহর নিকট থেকে) দুটো কাজের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হত, তখন তিনি দুটোর সহজটি বেছে নিতেন, যতক্ষণ না সেটা গুনাহর কাজ হত। যদি সেটা গুনাহর কাজ হত তাহলে তিনি তাত্থেকে বহু দূরে থাকতেন। আল্লাহর কসম! তিনি কখনও তাহাঁর ব্যক্তিগত কারণে কোন কিছুর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, যতক্ষণ না আল্লাহর হারামসমূহকে ছিন্ন করা হত। সেক্ষেত্রে আল্লাহর জন্য তিনি প্রতিশোধ নিতেন।
[৯৯](আঃপ্রঃ- ৬৩১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৯)
[৯৯] কেউ শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা অপরাধ আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ)র সুন্নতের অনুসরণে ক্ষমা করে দেয়ার শিক্ষা গ্রহণ করিতে হইবে।
৮৬/১১. অধ্যায়ঃ উচ্চ-নীচ সকলের বেলায় শরীয়াতের শাস্তি কায়িম করা।
৬৭৮৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, উসামাহ (রাদি.) এক মহিলার ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে সুপারিশ করিলেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের আগেকার সম্প্রদায়সমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে। কারণ তারা নিম্নশ্রেণীর লোকদের উপর শরীআতের শাস্তি কায়িম করত। আর শরীফ লোকদের অব্যাহতি দিত। ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জান, ফাতিমাও যদি এমন কাজ করত, তাহলে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম।
[১০০](আঃপ্রঃ- ৬৩১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩০)
[১০০] সমাজের কাঠামোকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা। বিচারের ক্ষেত্রে কোন সমাজে বৈষম্য করা হলে সে সমাজের ধ্বংস অনিবার্য।
৮৬/১২. অধ্যায়ঃ বাদশাহ্র নিকট যখন মামলা পেশ করা হয় তখন শারীআতের শাস্তি দেয়ার বেলায় সুপারিশ করা অনুচিত।
৬৭৮৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মাখযুমী গোত্রের এক মহিলার ব্যাপারে কুরাইশ বংশের লোকদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল যে চুরি করেছিল। সাহাবাগণ বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে কে কথা বলিতে পারবে? আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর প্রিয় জন উসামাহ (রাদি.) ছাড়া এটা কেউ করিতে পারবে না। তখন উসামাহ (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে কথা বলিলেন। এতে তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহর শাস্তির বিধানের ব্যাপারে সুপারিশ করছ? এরপর তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিলেন এবং বললেনঃ হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের আগের লোকেরা গুমরাহ হয়ে গিয়েছে। কারণ, কোন সম্মানী ব্যক্তি যখন চুরি করত তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল লোক চুরি করত তখন তার উপর শরীয়াতের শাস্তি কায়েম করত। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) – এর কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) তাহাঁর হাত কেটে দেবে।
[১০১](আঃপ্রঃ- ৬৩১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩১)
[১০১] মাখযূমী মহিলাটির পরিচয়ঃ তিনি হচ্ছেন ফাতিমা বিনতে আসাদ বিন আব্দুল আসাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন মাখযূম। সে উম্মু সালামার পূর্ব স্বামী আবু সালামার ভাইয়ের মেয়ে।
হাদীসটি হইতে জানা যায়ঃ
(১) বিচারকের একই বিষয়ের ফায়সালায় দ্বৈত নীতি অবলম্বনের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন।
(২) হুদূদ বা দন্ডের ব্যাপারে সুপারিশ নিষিদ্ধ।
(৩) শাসকের কাছে বিচার পৌঁছলে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হল হাদ্দ কায়েম করা।
(৪) চোরের তাওবা কবুল হওয়া।
(৫) চুরির হাদ্দ বা শাস্তির ক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার একই বিধান।
(৬) উসামা (রাদি.) এর মহান বৈশিষ্ট্য।
(৭) রাসুল (সাঃআঃ)- এর নিকট ফাতেমার (রাদি.) সুঊচ্চ মর্যাদা।
(৮) হাদ্দ বা দন্ড কায়েমের পরে দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য কষ্ট অনুভব করা জায়েয।
(৯) পূর্ববর্তী জাতির পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেয়া, বিশেষ করে যারা শারয়ী বিধান লঙ্ঘন বা অমান্য করেছিল।
(১০) হাদ্দ বা দণ্ড অপরিহার্য হয়ে পড়েছে এমন ব্যক্তির উপর হাদ্দ কায়েমের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব পরিহার করা, যদিও সে তার ছেলে অথবা নিকটাত্নীয় অথবা মর্যাদাবান ব্যক্তি হোক না কেন।
(১১) হাদ্দ কায়েমের ব্যাপারে খুব জোর দেয়া এবং যারা এ ব্যাপারে নমনীয় তাদের প্রত্যাখান করা।
(১২) হাদ্দ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সুপারিশের জন্য যারা হস্তক্ষেপ করে তাদেরও প্রত্যাখান করা। (ফাতহুল বারী)
৮৬/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ পুরুষ কিংবা নারী চুরি করলে তাদের হাত কেটে দাও- (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩৮)। কী পরিমাণ মাল চুরি করলে হাত কাটা যাবে। আলী (রাদি.) কব্জি পর্যন্ত কেটেছিলেন। আর ক্বাতাদাহ (রাদি.) এক মহিলা সম্পর্কে বলেছেন যে চুরি করেছিল, এতে তার বাম হাত কাটা হয়েছিল। এ ব্যতীত আর কোন শাস্তি দেয়া হয়নি।
৬৭৮৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দীনারের চার ভাগের এক ভাগ বা এর বেশি বা ততোধিক চুরি করলে হাত কাটা যাবে। আবদুর রহমান ইবনু খালিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আখী যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…… যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে ইবরাহীম ইবনু সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর অনুসরণে বর্ণনা করিয়াছেন।
[৬৭৯০, ৬৭৯১; মুসলিম ২৯/১, হাদীস ১৬৮৪, আহমাদ ২৪৭৭৯] (আঃপ্রঃ- ৬৩২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩২)
৬৭৯০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক দীনারের চার ভাগের এক ভাগ চুরি করলে হাত কাটা হইবে।
(আঃপ্রঃ- ৬৩২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩৩)
৬৭৯১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক দীনারের চার ভাগের এক ভাগ (মূল্যের দ্রব্য) চুরি করলে হাত কাটা যাবে।
[৬৭৮৯; মুসলিম ২৯/১, হাদীস ১৬৮৪, আহমাদ ২৪৭৭৯] (আঃপ্রঃ- ৬৩২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩৪)
৬৭৯২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) – এর যামানায় কোন চামড়া নির্মিত ঢাল বা সাধারণ ঢালের সমান মূল্যের জিনিস চুরি করা ব্যতীত হাত কাটা হত না।
উসমান, হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান…… আয়েশা (রাদি.) থেকে ঐ রকম বর্ণনা করিয়াছেন।[মুসলিম ২৯/১, হাদীস ১৬৮৫]
(আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩৫)
৬৭৯৩.আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, চামড়ার ঢাল বা সাধারণ ঢাল যার প্রতিটির মূল্য আছে, এর চেয়ে কম চুরি করলে [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর যামানায়] হাত কাটা হত না।
(আঃপ্রঃ- ৬৩২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩৬)
৬৭৯৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) – এর যামানায় কোন চোরের হাত কাটা হত না যদি সে একটি চামড়ার ঢাল বা সাধারণ ঢালের প্রতিটির মূল্যের চেয়ে কম মূল্যের কিছু চুরি করত।
ওয়াকী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও ইবনু ইদ্রিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩৮)
৬৭৯৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঢাল চুরির বেলায় হাত কেটেছেন, যার মূল্য ছিল তিন দিরহাম। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক এবং লায়স বলেন, নাফি বলেছেনঃ তার মূল্যমান। [৬৭৯২; মুসলিম ২৯/১, হাদীস ১৬৮৬, আহমাদ ৪৫০৩]
(আঃপ্রঃ- ৬৩২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩৮)
৬৭৯৬.ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) ঢাল চুরির ব্যাপারে হাত কেটেছেন, যার মূল্য ছিল তিন দিরহাম।
(আঃপ্রঃ- ৬৩২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৩৯)
৬৭৯৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ঢাল চুরির ব্যাপারে হাত কেটেছেন, যার মূল্য ছিল তিন দিরহাম।
(আঃপ্রঃ- ৬৩২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪০)
৬৭৯৮.আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তিন দিরহাম মূল্যের ঢাল চুরির জন্য চোরের হাত কেটেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক এবং লায়স বলেন, নাফি বলেছেনঃ তার মূল্যমান। [৬৭৯৫; মুসলিম ২৯/১, হাদীস ১৬৮৬, আহমাদ ৪৫০৩]
(আঃপ্রঃ- ৬৩২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪১)
৬৭৯৯.আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর লানত বর্ষিত হয় চোরের উপর যে একটি ডিম চুরি করেছে তাতে তার হাত কাটা গেছে বা একটি দড়ি চুরি করেছে যার ফলে তার হাত কাটা গেছে।
(আঃপ্রঃ- ,৬৩৩০ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪২)
৮৬/১৪. অধ্যায়ঃ চোরের তাওবাহ।
৬৮০০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এক মহিলার হাত কেটেছেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, সে মহিলাটি এরপরও আসত। আর আমি তার প্রয়োজনকে নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে তুলে ধরতাম। মহিলাটি তাওবাহ করেছিল এবং সুন্দর হয়েছিল তার তাওবাহ।
(আঃপ্রঃ- ৬৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪৪)
৬৮০১. উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একটি দলের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর কাছে বায়আত করেছি। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের এ মর্মে বায়আত করছি যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করিবে না, চুরি করিবে না, তোমাদের সন্তান হত্যা করিবে না, সামনে বা পিছনে কারো অপবাদ দিবে না, শারীয়াত সম্মত কাজে আমার অবাধ্যতা করিবে না, তোমাদের মধ্যে যে আপন ওয়াদাগুলো মেনে চলবে তার বিনিময় আল্লাহর নিকট। আর যে এগুলো থেকে কিছু করে ফেলবে আর সে জন্য দুনিয়াতে যদি তার শাস্তি হয়ে যায়, তাহলে এটি হইবে তার জন্য গুনাহর কাফ্ফারা এবং গুনাহর পবিত্রতা। আর যার (দোষ) আল্লাহ গোপন রেখেছেন তার ব্যাপারটি আল্লাহর উপর। (আল্লাহ) ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।
আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, চোর যদি হাত কেটে দেয়ার পর তাওবাহ করে তবে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে। তেমনি শরীয়াতের শাস্তিপ্রাপ্ত প্রত্যেকটি লোকের ব্যাপারেই এ বিধান প্রযোজ্য যখন সে তাওবাহ করিবে, তখন তার সাক্ষ্য গ্রহণীয় হইবে।
(আঃপ্রঃ- ৬৩৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪৫)
৮৬/১৫. অধ্যায়ঃ কাফির ও ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিবরণ, আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের শাস্তি…। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩৩)
৬৮০২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উক্ল গোত্রের একদল লোক নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট হাজির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করিল। কিন্তু মাদীনাহর আবহাওয়া তাদের অনুকূল হল না। তাই তিনি তাদেরকে সদাকাহর উটপালের কাছে গিয়ে সেগুলোর প্রস্রাব ও দুধপান করার আদেশ করিলেন। তারা তা-ই করিল। ফলে তারা সুস্থ হয়ে গেল। শেষে তারা দ্বীন ত্যাগ করে উটপালের রাখালদেরকে হত্যা করে সেগুলো নিয়ে চলল। এদিকে তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাদেরকে (ধরে) আনা হল। আর তাদের হাত-পা কাটলেন ও লোহার শলাকা দিয়ে তাদের চোখগুলো ফুঁড়ে দিলেন। কিন্তু তাদের ক্ষতস্থানে লোহা পুড়ে দাগ দিলেন না। শেষতক তারা মারা গেল। [১০২]
(আঃপ্রঃ- ৬৩৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪৬)
[১০২] উকল গোত্রের দলটিকে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কঠিন শাস্তি দেয়া হয়েছিল, কারণ তারা ছিল (১) ধর্মত্যাগী, (২) হত্যাকারী, (৩) ডাকাত ও (৪) খিয়ানাতকারী।
৮৬/১৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) ধর্ম পরিত্যাগকারী বিদ্রোহীদের ক্ষতস্থানে লোহা পুড়ে দাগ দেননি। শেষতক তারা মারা গেল।
৬৮০৩.আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) উরাইনা গোত্রীয় লোকেদের (হাত, পা) কাটলেন, অথচ তাদের ক্ষতস্থানে লোহা পুড়ে দাগ দেননি। শেষতক তারা মারা গেল।
(আঃপ্রঃ- ৬৩৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪৭)
৮৬/১৭. অধ্যায়ঃ ধর্ম পরিত্যাগকারী বিদ্রোহীদেরকে পানি পান করানো হয়নি; অবশেষে তারা মারা গেল।
৬৮০৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উক্ল গোত্রের একদল লোক নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট আসল। তারা সুফ্ফায় থাকত। মাদীনাহর আবহাওয়া তাদের অনুকূলে না হওয়ার কারণে তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করুন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের জন্য এ ব্যতীত কিছু পাচ্ছি না যে, তোমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর উটপালের কাছে যাবে। তারা সেগুলোর কাছে আসল। আর সেগুলোর দুধ প্রস্রাব পান করিল। ফলে তারা সুস্থ ও মোটা তাজা হয়ে উঠল ও রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে খবর আসলে তাদের খোঁজে লোক পাঠালেন। রোদ প্রখর হবার আগেই তাদেরকে আনা হল। তখন তিনি লৌহশলাকা আনার আদেশ দিলেন। তা গরম করে তা দিয়ে তাদের চোখ ফুঁড়ে দিলেন এবং তাদের হাত-পা কেটে দেয়া হল। অথচ লোহা গরম করে দাগ লাগাননি। এরপর তাদেরকে তপ্ত মরুভুমিতে ফেলে দেয়া হল। তারা পানি পান করিতে চাইল কিন্তু পান করানো হল না। অবশেষে তারা মারা গেল।
আবু ক্বিলাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তারা চুরি করেছিল, হত্যাও করেছিল, তারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
(আঃপ্রঃ- ৬৩৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪৮)
৮৬/১৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) বিদ্রোহীদের চোখগুলো লোহার শলাকা দিয়ে ফুঁড়ে দিলেন।
৬৮০৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, উক্ল গোত্রের একদল (অথবা তিনি বলেন উরাইনা গোত্রের – জানামতে তিনি উক্ল গোত্রেরই বলেছেন) মদিনায় এলো, তখন নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে দুধেল উটের কাছে যাবার হুকুম দিলেন। তাদেরকে আরো নির্দেশ করিলেন যেন তারা সে সব উটের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করে। তারা তা পান করিল। শেষে যখন তারা সুস্থ হয়ে গেল, তখন রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। ভোরে নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এ খবর পৌঁছল। তিনি তাদের খোঁজে লোক পাঠালেন। রোদ বাড়ার আগেই তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের ব্যাপারে তিনি আদেশ করিলেন, তাদের হাত-পা কাটা হল। লোহার শলাকা দিয়ে তাদের চোখগুলো ফুঁড়া হল। এরপর প্রখর রোদে ফেলে রাখা হল। তারা পানি পান করিতে চাইল। কিন্তু পান করানো হল না।
আবু ক্বিলাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ঐ লোকগুলো এমন একটি দল যারা চুরি করেছিল, হত্যাও করেছিল, ঈমান আনার পর কুফ্রী করেছিল আর আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
(আঃপ্রঃ- ৬৩৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৪৯)
Leave a Reply