শপথ ও কসম করার বিঁধান সমুহ

শপথ ও কসম করার বিঁধান সমুহ

শপথ ও কসম করার বিঁধান সমুহ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৮৩, শপথ ও মানত, অধ্যায়ঃ (১-২৩)=২৪টি

৮৩/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৮৩/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)-কর্তৃক ওয়া আঈমুল্লাহ শব্দ দ্বারা শপথ করা প্রসঙ্গে।
৮৩/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)-এর শপথ কেমন ছিল?
৮৩/৪. অধ্যায়ঃ বাপ-দাদার কসম করিবে না।
৮৩/৫. অধ্যায়ঃ লাত, উযযা ও প্রতিমাগুলোর নামে কসম করা যায় না।
৮৩/৬. অধ্যায়ঃ কেউ যদি কোন কিছুর কসম করে অথচ তাঁকে কসম দেয়া হয়নি-এ সম্পর্কে বর্ণনা।
৮৩/৭. অধ্যায়ঃ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের কসম করলে।
৮৩/৮. অধ্যায়ঃ “যা আল্লাহ ইচ্ছে করেন ও তুমি যা ইচ্ছে কর” বলবে না। “আমি আল্লাহর সঙ্গে অতঃপর তোমার সঙ্গে” এমন বলা যাবে কি?
৮৩/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তারা আল্লাহর নামে সুদৃঢ় কসম করেছে। (সুরা আনআম ৬/১০৯)
৮৩/১০. অধ্যায়ঃ যখন কেউ বলেঃ আল্লাহকে আমি সাক্ষী মানছি অথবা যদি বলে, আল্লাহকে আমি সাক্ষী করেছি।
৮৩/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর নামে ওয়াদা করা।
৮৩/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর ইযযত, গুণাবলী ও কলেমাসমূহের কসম করা।
৮৩/১৩. অধ্যায়ঃ কারো (আরবী) বলা।
৮৩/১৪. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী): আল্লাহ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য দায়ী করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল। (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/২২৫)
৮৩/১৫. অধ্যায়ঃ শপথ করে ভুলে যখন শপথ ভঙ্গ করে।
৮৩/১৬. অধ্যায়ঃ মিথ্যা কসম
৮৩/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখিরাতের নিয়ামতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি- (সুরা আলু ইমরান ৩/৭৭)।
৮৩/১৮. অধ্যায়ঃ এমন কিছুতে কসম করা কসমকারী যার মালিক নয় এবং গুনাহের কাজের জন্য কসম ও রাগের বশবর্তী হয়ে কসম করা।
৮৩/১৯. অধ্যায়ঃ কোন ব্যাক্তি যখন বলে, আল্লাহর কসম! আজ আমি কথা বলব না।
৮৩/২০. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি কসম করে যে, স্বীয় স্ত্রীর নিকট এক মাস যাবে না আর মাস যদি হয় ঊনত্রিশ দিনে।
৮৩/২১. অধ্যায়ঃ যদি কেউ আঙ্গুর বা খুরমা ভিজানো পান করিবে না বলে কসম করে। অতঃপর তেল, চিনি বা আসীর পান করে ফেলে তবে কারো কারো মতে কসম ভঙ্গ হইবে না, কারণ তাদের মতে এগুলো নাবীযের অন্তর্ভুক্ত নয়।
৮৩/২২. অধ্যায়ঃ যখন কেউ তরকারী খাবে না বলে কসম করে, তারপর রুটির সঙ্গে খেজুর মিশিয়ে খায়। আর কোন জিনিস তরকারীর অন্তর্ভুক্ত।
৮৩/২৩. অধ্যায়ঃ কসমের মধ্যে নিয়ত করা।

৮৩/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে সে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। (এ পাকড়াও থেকে অব্যহতির) কাফফারা হল দশ জন্য মিসকিনকে মধ্যম মানের খাদ্যদান যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী পুত্রকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্তকরণ। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন। এগুলো হল তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ কর। তোমরা তোমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিবে। আল্লাহ তাহাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৮৯)

৬৬২১

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, আবু বাকর (রাদি.) কক্ষনো শপথ ভঙ্গ করেননি, যতক্ষণ না আল্লাহ কসমের কাফ্‌ফারা সংবলিত আয়াত অবতীর্ণ করেন। তিনি বলিতেন, আমি কসম করি। অতঃপর যদি এর চেয়ে উত্তমটি দেখিতে পাই তবে উত্তমটিই করি এবং আমার শপথ ভাঙ্গার জন্য কাফ্‌ফারা দেই। [৫৭] (আঃপ্রঃ- ৬১৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৮)

[৫৭] কোন বিষয়ে শপথ করার পর যদি দেখা যায় যে, শপথ পূর্ণ করার চেয়ে শপথ ভঙ্গ করার মধ্যেই অধিক কল্যাণ নিহিত আছে, তবে শপথ ভেঙ্গে দিতে হইবে এবং শপথ ভঙ্গ করার কাফ্‌ফারা আদায় করিতে হইবে।

৬৬২২

আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কারণ, চাওয়ার পর যদি নেতৃত্ব পাও তবে এর দিকে তোমাকে সোপর্দ করে দেয়া হইবে। আর যদি না চেয়ে তা পাও তবে তোমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করা হইবে। কোন কিছুর ব্যাপারে যদি শপথ কর আর তা ছাড়া অন্য কিছুর ভিতর কল্যাণ দেখিতে পাও, তবে নিজ শপথের কাফ্‌ফারা আদায় করে তাত্থেকে উত্তমটি গ্রহণ কর।[৬৭২২, ৭১৪৬, ৭১৪৭; মুসলিম ২৭/৩, হাদীস ১৬৫২, আহমাদ ২০৬৪২] (আঃপ্রঃ- ৬১৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৯)

৬৬২৩

আবু বুরদাহ (রাদি.)-এর পিতা আবু মূসা আশআরী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি একবার আশআরী গোত্রের একদল লোকের সঙ্গে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে তাহাঁর কাছে বাহন চাইলাম। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে বাহন দিতে পারব না। আর আমার কাছে কিছু নেই যার উপর আরোহণ করা যায়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আল্লাহ যতক্ষণ চাইলেন, ততক্ষণ আমরা সেখানে থাকলাম। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে অতি সুন্দর তিনটি উষ্ট্রী আনা হল। তিনি সেগুলোর উপর আমাদেরকে আরোহণ করালেন। এরপর আমরা যখন চলতে লাগলাম তখন বললাম অথবা আমাদের মাঝে কেউ বলিল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাদেরকে বরকত দিবেন না। কারণ, আমরা যখন নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বাহন চইলে তিনি আমাদেরকে বাহন দিবেন না বলে কসম করিলেন, অতঃপর আমাদেরকে আরোহণ করালেন। চল আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে যাই এবং তাঁকে ব্যাপারটি স্মরণ করিয়ে দেই। এরপর আমরা তাহাঁর কাছে এলাম। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে আরোহণ করাইনি বরং আল্লাহ আরোহণ করিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমি যখন আল্লাহর ইচ্ছায় কোন শপথ করি আর সেটি বাদে অন্যটির মাঝে কল্যাণ দেখি তখন শপথের জন্য কাফ্‌ফারা আদায় করে দেই। আর যেটা কল্যাণকর সেটাই করে নেই এবং স্বীয় শপথের কাফ্‌ফারা আদায় করি। (আঃপ্রঃ- ৬১৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭০)

৬৬২৪

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা (দুনিয়ায়) সবশেষে আগমনকারী আর ক্বিয়ামাতের দিন হব অগ্রগামী।(আঃপ্রঃ- ৬১৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭১)

৬৬২৫

বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে কেউ আপন পরিজন সম্পর্কে শপথ করে এবং সে এর কাফ্‌ফারা আদায় করার পরিবর্তে- যা আল্লাহ ফরয করিয়াছেন- শপথে অনড় থাকে, তাহলে সে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হইবে। [৬৬২৬; মুসলিম ২৭/৬, হাদীস ১৬৫৫, আহমাদ ৮২১৫] (আঃপ্রঃ- ৬১৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- র৭১)

৬৬২৬

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আপন পরিবারের ব্যাপারে কসম করে এর উপর অটল থাকে সে মস্ত বড় পাপী, তার কাফ্‌ফারা তাকে গুনাহ থেকে মুক্ত করিবে না।[৬৬২৫; মুসলিম ২৭/৬, হাদীস ১৬৫৫] (আঃপ্রঃ- ৬১৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭২)

৮৩/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)-কর্তৃক ওয়া আঈমুল্লাহ শব্দ দ্বারা শপথ করা প্রসঙ্গে।

৬৬২৭

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একবার একটি বাহিনী পাঠালেন যার আমীর নিযুক্ত করিলেন উসামাহ ইবনু যায়দকে। কতক লোক তাহাঁর নেতৃত্ব সম্পর্কে সমালোচনা করিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা তাহাঁর নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা কর, তবে ইতোপুর্বে তাহাঁর পিতার নেতৃত্ব সম্পর্কেও তোমরা সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর কসম! সে অবশ্যই নেতৃত্বের যোগ্য ছিল। আর মানুষের মাঝে সে আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল। তারপরে অবশ্যই এ উসামাহ সকল মানুষ অপেক্ষা আমার কাছে প্রিয়। (আঃপ্রঃ- ৬১৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৩)

৮৩/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)-এর শপথ কেমন ছিল?

সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ কসম ঐ সত্ত্বার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আবু ক্বাতাদাহ বলেন, আবু বাক্‌র সিদ্দীক (রাদি.) নাবী (সাঃ)-এর নিকট —— বলেছেন; যেখানে —- বা —- শব্দ দ্বারা কসম করা যায়।

৬৬২৮

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ-এর কসম ছিল وَمُقَلِّبِ الْقُلُوبِ বাক্য দ্বারা। অর্থাৎ অন্তরের পরিবর্তনকারীর কসম। [৬৬১৭] (আঃপ্রঃ- ৬১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৪)

৬৬২৯

জাবির ইবনু সামুরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

জাবির ইবনু সামুরাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্নিত। তিনি বলেন, কায়সারের ধ্বংসের পরে আর কোন কায়সার আসবে না। কিসরার ধ্বংসের পর আর এরপর কোন কিসরা হইবে না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম! অবশ্যই তাদের দুজনের ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় তোমরা খরচ করিবে।(আঃপ্রঃ- ৬১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৫)

৬৬৩০

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কিস্‌রা যখন ধ্বংস হইবে অতঃপর আর কোন কিস্‌রা হইবে না। আর কায়সার যখন ধ্বংস হইবে তখন আর কোন কায়সার হইবে না। যাঁর হাতে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর প্রাণ সেই সত্তার শপথ! এ দু এর ধন-সম্পদ অবশ্যই তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করিবে।

৬৬৩১

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্নিত। তিনি বলেছেনঃ হে উম্মাতে মুহাম্মাদী (সাঃআঃ) আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি যদি তা তোমরা জানতে তবে অবশ্যই তোমরা হাসতে কম আর কাঁদতে বেশি। [৫৮] (আঃপ্রঃ- ৬১৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৭)

[৫৮] কবরের আযাব, হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা, পুলসিরাতের দৃশ্য, পাপ-পুন্য ওজন করার দৃশ্য, জাহান্নামের কঠিন কঠিন আযাবের দৃশ্য আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে দেখানো হয়েছে, তিনি তা স্পষ্ট দেখেছেন। মানুষ এগুলো বিশ্বাস করেছে, কিন্তু চোখে দেখেনি। দেখলে তারা হাসত কম, কাঁদত বেশি।

৬৬৩২

আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা একবার নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তখন উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-এর হাত ধরেছিলেন। উমার (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জান ছাড়া আপনি আমার কাছে সব কিছু চেয়ে অধিক প্রিয়। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ না, যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! তোমার কাছে আমি যেন তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় হই। তখন উমার (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আল্লাহর কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে উমর! এখন (তুমি সত্যিকার ইমানদার হলে)। [৫৯] (আঃপ্রঃ- ৬১৭০, ই. ৬১৭৮)

[৫৯] রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ তার নিজের জীবন, সন্তান, পিতামাতা ও সকল মানুষের চেয়ে আমাকে অধিক না ভালবাসা পর্যন্ত মুমিন হইতে পারবে না-হাদীস। (দ্রষ্টব্য সুরা আহযাব আয়াত নং-৬)

৬৬৩৩

আবু হুরাইরাহ উম্মাতে (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেছেন, একবার দু লোক ঝগড়া করিতে করিতে নাবী সাঃআঃ-এর কাছে এলো। তাদের একজন বলিল, আল্লাহর কিতাব মুতাবিক আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিন। দুজনের মধ্যে (বেশি) বুদ্ধিমান অন্য লোকটি বলিল, হ্যাঁ। হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মুতাবিক ফয়সালা করে দিন। আর আমাকে কিছু বলার অনুমতি দিন। তিনি বললেনঃ বল। লোকটি বলিল, আমার পুত্র ও লোকটির কাছে চাকর হিসাবে ছিল। (মালিক বলেন, الْعَسِيفُ শব্দের অর্থ চাকর) আমার পুত্র এর স্ত্রীর সঙ্গে যেনা করেছে। লোকেরা বলেছে যে, আমার পুত্রের (শাস্তি) রজম হইবে। তাই আমি একশ বক্রী ও একটি বাঁদী নিয়ে তার ফিদইয়া দিয়েছি। এরপর আমি আলিমদের নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। তাঁরা আমাকে জানালেন যে, আমার পুত্রের একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন হইবে। আর রজম হইবে এর স্ত্রীর। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ কসম ঐ সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি তোমাদের উভয়ের মধ্যে অবশ্যই আল্লাহর কিতাব মুতাবিক ফয়সালা করে দেব। তোমার বক্রী ও বাঁদী তোমাকেই ফিরিয়ে দেয়া হইবে। তিনি তাহাঁর পুত্রকে একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য নির্বাসিত করিলেন। আর উনায়ক আসলামীকে আদেশ দেয়া হল অন্য লোকটির স্ত্রীর কাছে যাওয়ার জন্য। সে যদি (ব্যভিচার) স্বীকার করে তবে তাকে রজম করিতে। সে তা স্বীকার করিল, সুতরাং তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হল। [২৩১৪, ২৩১৫] (আঃপ্রঃ- ৬১৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৯)

৬৬৩৪

আবু হুরাইরাহ উম্মাতে (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেছেন, একবার দু লোক ঝগড়া করিতে করিতে নাবী সাঃআঃ-এর কাছে এলো। তাদের একজন বলিল, আল্লাহর কিতাব মুতাবিক আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিন। দুজনের মধ্যে (বেশি) বুদ্ধিমান অন্য লোকটি বলিল, হ্যাঁ। হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মুতাবিক ফয়সালা করে দিন। আর আমাকে কিছু বলার অনুমতি দিন। তিনি বললেনঃ বল। লোকটি বলিল, আমার পুত্র ও লোকটির কাছে চাকর হিসাবে ছিল। (মালিক বলেন, الْعَسِيفُ শব্দের অর্থ চাকর) আমার পুত্র এর স্ত্রীর সঙ্গে যেনা করেছে। লোকেরা বলেছে যে, আমার পুত্রের (শাস্তি) রজম হইবে। তাই আমি একশ বক্রী ও একটি বাঁদী নিয়ে তার ফিদইয়া দিয়েছি। এরপর আমি আলিমদের নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। তাঁরা আমাকে জানালেন যে, আমার পুত্রের একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন হইবে। আর রজম হইবে এর স্ত্রীর। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ কসম ঐ সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি তোমাদের উভয়ের মধ্যে অবশ্যই আল্লাহর কিতাব মুতাবিক ফয়সালা করে দেব। তোমার বক্রী ও বাঁদী তোমাকেই ফিরিয়ে দেয়া হইবে। তিনি তাহাঁর পুত্রকে একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য নির্বাসিত করিলেন। আর উনায়ক আসলামীকে আদেশ দেয়া হল অন্য লোকটির স্ত্রীর কাছে যাওয়ার জন্য। সে যদি (ব্যভিচার) স্বীকার করে তবে তাকে রজম করিতে। সে তা স্বীকার করিল, সুতরাং তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হল। [২৩১৪, ২৩১৫] (আঃপ্রঃ- ৬১৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৯)

৬৬৩৫

আবু বাক্‌রাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু বাক্‌রাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আসলাম, গিফার, মুযায়না এবং জুহাইনাহ বংশ তামীম, আমীর ইবনু সাসাআ, গাতফান ও আসাদ বংশ থেকে উত্তম তোমরা কি এরূপ ধারনা কর? তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাহাবাগণ বলিলেন, হাঁ। তখন তিনি বললেনঃ কসম ঐ সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তাঁরা এদের (শেষোক্ত গোত্রগুলোর) চেয়ে উত্তম। (আঃপ্রঃ- ৬১৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮০)

৬৬৩৬

আবু হুমায়দ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়কারী নিযুক্ত করিলেন। সে কাজ শেষ করে তাহাঁর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! এটা আপনার জন্য আর এ জিনিসটি আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ তুমি তোমার বাপ-মার ঘরে বসে থাকলে না কেন? তা হলে দেখিতে তোমার জন্য হাদিয়া পাঠানো হয় কি না? এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এশার ওয়াক্তের সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাশাহহুদ পাঠ করিলেন ও আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করিলেন। এরপর বললেনঃ রাজস্ব আদায়কারীর অবস্থা কী হল? আমি তাঁকে নিযুক্ত করে পাঠালাম আর সে আমাদের কাছে এসে বলছে, এটা সরকারী রাজস্ব আর এ জিনিস আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে তাহাঁর বাপ-মার ঘরে বসেই থাকল না কেন? তাহলে দেখত তার জন্য হাদিয়া দেয়া হয় কি না? ঐ সত্তার কসম! যার হাতে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ কোন বস্তুতে খিয়ানত করলে, ক্বিয়ামাতের দিন সে ঐ বস্তুটিকে তার কাঁধে বহন করা অবস্থায় আসবে। সে বস্তুটি যদি উট হয় তা হলে উট আওয়াজ করিতে থাকবে। যদি গরু হয় তবে হাম্বা হাম্বা করিতে থাকবে। আর যদি বক্‌রী হয় তবে ভ্যা ভ্যা করিতে থাকবে। আমি (বানী) পৌছিয়ে দিলাম। রাবী আবু হুমায়দ বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর হস্ত মুবারক এতটুকু উঠালেন যে, আমরা তাহাঁর দুবগলের শুভ্রতা দেখিতে পেলাম। আবু হুমায়দ বলেন, এ কথাগুলো যায়দ ইবনু সাবিতও আমার সঙ্গে শুনেছে নাবী (সাঃআঃ) থেকে। কাজেই তোমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখিতে পার।[৯২৫; মুসলিম ৩৩/৭, হাদীস ১৮৩২, আহমাদ ২৩৬৫৯] (আঃপ্রঃ- ৬১৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮১)

৬৬৩৭

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যাঁর হাতে মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর প্রাণ ঐ সত্তার কসম! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে তোমরা অবশ্যই কাঁদতে বেশি আর হাসতে কম।(আঃপ্রঃ- ৬১৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮২)

৬৬৩৮

আবু যর গিফারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি কাবা ঘরের ছায়ায় বসে বলেছিলেনঃ কাবা ঘরের রবের কসম! তারা ক্ষতিগ্রস্ত। কাবা ঘরের রবের কসম! তারা ক্ষতিগ্রস্ত। আমি বললাম, আমার অবস্থা কী? আমার মাঝে কি কিছু (ত্রুটি) দেখা গেছে? তিনি বলছিলেন, এমন অবস্থায় আমি তাহাঁর কাছে বসে পড়লাম। আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। আমি চিন্তায় আচ্ছন্ন রইলাম যতক্ষনের জন্য আল্লাহ চাইলেন। এরপর আরি আরয করলাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! তারা কারা হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! তিনি বললেনঃ অধিক সম্পদের অধিকারী। তবে তারা নয় যারা এভাবে এভাবে এভাবে (সাদকা করে)। [৬০][১৪৬০; মুসলিম ১২/৮, হাদীস ৯৯০, আহমাদ ২১৪০৯] (আঃপ্রঃ- ৬১৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮৩)

[৬০] সম্পদশালীরা যদি সম্পদ অর্জন করে যাকাত আদায় ও দান খয়রাত না করে তবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হইবে, অনুরূপভাবে হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জনকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। আর তাদের যারা যথাযথ যাকাত আদায় করিবে, দান খয়রাত করিবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হইবে না।

৬৬৩৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ একবার সুলায়মান (আঃ) বললেনঃ আমি আজ রাতে নব্বইজন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হব, যারা প্রত্যেকেই একটি করে অশ্বারোহী জন্ম দেবে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করিবে। তাহাঁর সঙ্গী বলিল, ইনশা আল্লাহ (বলুন)। তিনি ইনশা আল্লাহ বলিলেন না। অতঃপর তিনি সকল স্ত্রীর সঙ্গেই মিলিত হলেন। কিন্তু একজন স্ত্রী ছাড়া কেউ গর্ভবতী হলেন না, আর সেও এক অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করিল। যাঁর হাতে মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর প্রাণ, ঐ সত্তার কসম! তিনি যদি ইনশা আল্লাহ বলিতেন, তাহলে সকলেই অশ্বারোহী হয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করত। [৬১](আঃপ্রঃ- ৬১৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮৪)

৬১. আল্লাহর ইচ্ছে ও হুকুম ছাড়া বান্দার কোন কাজ ফলদায়ক হইবে না।

৬৬৪০

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ-এর জন্য একবার রেশমের এক টুক্রা কাপড় হাদিয়া পাঠানো হল। লোকেরা তার সৌন্দর্য ও মসৃণতা দেখে অবাক হয়ে একে একে হাতে নিয়ে দেখছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ তোমরা কি এটা দেখে অবাক হচ্ছ? তাঁরা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ যাঁর মুঠোয় আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম!। নিশ্চয়ই জান্নাতে সাদের রুমাল এর চেয়েও উত্তম হইবে।[১] আবু আবদুল্লাহ (বুখারী রহ.) বলেন, তবে শুবাহ এবং ইসরাঈল আবু ইসহাক থেকে যে বর্ণনা করিয়াছেন তাতে وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ কথাটি বলেননি। [৩২৪৯] (আঃপ্রঃ- ৬১৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮৫)

[৬২] জান্নাতের একটি রুমাল হইবে দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের চেয়েও বেশি মূল্যবান।

৬৬৪১

আয়েশা সিদ্দিকা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হিন্দা বিন্ত উত্বাহ ইব্ন রাবীআ বলিল, হে আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ! এমন এক সময় ছিল যখন ভূ-পৃষ্ঠে যারা তাঁবুতে বাস করছে তাদের মাঝে আপনার অনুসারী যারা তারা অপমানিত হোক এটা আমি খুবই পছন্দ করতাম। (এখানে বর্ণনার মাঝে তিনি أَخْبَاءٍ বলেছেন, না خِبَاءٍ বলেছেন এ সম্পর্কে রাবী ইয়াহইয়ার সন্দেহ রয়েছে।) কিন্তু আজ আমার কাছে এর চেয়ে বেশি প্রিয় কিছুই নেই যে, তাঁবুতে বাসকারীদের মাঝে আপনার অনুসারীরা সম্মানিত হোক। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ যাঁর হাতে মুহাম্মাদ সাঃআঃ-এর প্রাণ কসম ঐ সত্তার! এ সম্মান আরও বাড়ুক। হিন্দা বললো, আবু সুফ্ইয়ান একজন কৃপণ লোক। তার মাল থেকে তার পরিবারবর্গকে) কিছু খাওয়ালে এতে কি আমার কোন দোষ হইবে? তিনি বললেনঃ না। তবে তা (ন্যায়সঙ্গতভাবে হইতে হইবে। [২২১১] (আঃপ্রঃ- ,৬১৭৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮৬)

৬৬৪২

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক সময় ইয়ামানী চামড়ার কোন এক তাঁবুতে তাহাঁর পিঠ হেলান দিয়েছিলেন। তখন তিনি তাহাঁর সহাবীদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হইবে, এতে কি তোমরা সন্তুষ্ট আছ? তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ হইবে, এতে কি তোমরা সন্তুষ্ট নও! তাঁরা বলিলেন হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যাঁর হাতে মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর প্রাণ শপথ ঐ সত্তার! নিশ্চয়ই আমি কামনা করি তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬১৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮৭)

৬৬৪৩

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে (ক্বুল হু ওয়া আল্লাহু আহাদ) বারংবার পাঠ করিতে শুনলেন। সকাল হলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযির হলেন এবং ব্যাপারটি তাহাঁর কাছে উল্লেখ করিলেন। আর ঐ ব্যক্তি যেন উক্ত সুরার পাঠকে কম গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ কসম ঐ সত্তার! নিশ্চয়ই এ সুরা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। [৬৩](আঃপ্রঃ- ৬১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮৮)

[৬৩] কুরআনের মৌলিক আলোচ্য বিষয় হল তিনটি (১) তাওহীদ (২) রিসালাত ও (৩) আখিরাত। মৌলিক এ তিনটি বিষয়ের প্রথমটি তথা তাওহীদ সুরা ইখলাসে অতি স্পষ্টভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। এ সুরায় বলা হয়েছে সেই আল্লাহ এক ও একক, তিনি কারো বা কোন কিছুর মুখাপেক্ষীহীন, তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি আর তাহাঁর সমকক্ষ কেউ নয়। তাওহীদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় তুলে ধরার কারণে সুরাটি আল কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা লাভ করেছে।

৬৬৪৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, তোমরা রুকু ও সাজদাহ পূর্ণভাবে কর। [৬৪] যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! তোমরা যখন রুকু এবং সাজদাহ কর তখন আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকে অবশ্যই দেখিতে পাই। (আঃপ্রঃ- ৬১৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৮৯)

[৬৪] রুকু সিজদা পূর্ণভাবে না করলে তা সালাত হিসেবে গণ্য হইবে না।

৬৬৪৫

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, আনসার গোত্রের এক মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযির হল; সঙ্গে ছিল তার সন্তান-সন্ততি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! মানুষের মধ্যে তোমরা আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬১৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯০)

৮৩/৪. অধ্যায়ঃ বাপ-দাদার কসম করিবে না।

৬৬৪৬

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-কে বাহনে চলা অবস্থায় পেলেন যখন তিনি তাহাঁর পিতার নামে কসম করছিলেন। তিনি বললেনঃ সাবধান! আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কেউ কসম করিতে চাইলে সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে, নইলে যেন চুপ থাকে। [৬৫] (আঃপ্রঃ- ৬১৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯১)

[৬৫] হাদীসটি পিতা-মাতার নামে শপথ করা নিষিদ্ধর প্রমাণ বহন করে। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করিল সে কুফরী করিল অথবা শিরক করিল। (ফাতহুল বারী)

৬৬৪৭

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমি উমার (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করিতে নিষেধ করিয়াছেন। উমার (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি, তখন থেকে আমি তাদের নামে কসম করিনি মনে থাকা অবস্থাতেও না, অন্যের কথা উদ্ধৃত করেও না।

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, {أَوْ أَثَارَةٍ مِنْ عِلْمٍ} দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অবগত বিষয় উদ্ধৃত করা।

অনুরূপ উকায়ল, যুবায়দী ও ইসহাক কালবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।

ইবনু উয়াইনাহ. ইবনু উমার (রাদি.) নাবী সাঃআঃ উমার (রাদি.)-কে বলেছেন। (আঃপ্রঃ- ৬১৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯২)

৬৬৪৮

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের নামে শপথ করো না।(আঃপ্রঃ- ৬১৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯৩)

৬৬৪৯

যাহদাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাদের গোত্র জারাম এবং আশআরী গোত্রের মাঝে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব ছিল। আমরা (একবার) আবু মুসা আশআরীর সাথে ছিলাম। তাহাঁর কাছে খাবার উপস্থিত করা হল, যাতে ছিল মুরগীর গোশত। তাইমিল্লাহ গোত্রের এক লাল রঙের ব্যক্তি তাহাঁর কাছে ছিল। সে দেখিতে গোলামদের মত। তিনি তাকে খাবার খেতে ডাকলেন। তখন সে লোকটি বলিল, আমি মুরগীকে এমন জিনিস খেতে দেখেছি যার জন্য আমি তাকে ঘৃনা করি। তাই আমি কসম করেছি যে, মুরগী খাব না। তিনি বলিলেন, ওঠ, আমি এ সম্পর্কে অবশ্যই তোমাকে একখানা হাদীস বলব। একবার আমি কতক আশআরীর সাথে বাহন সংগ্রহের জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এলাম। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে বাহন দিতে পারব না। তোমাদের বাহন দেয়ার জন্য কিছুই আমার কাছে নেই। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে গনীমতের কিছু উট এল। তিনি আমাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন এবং বললেনঃ আশআরী দলটি কোথায়? এরপর আমাদের জন্য পাঁচটি উত্তম সুন্দর উট দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমরা যখন চলে গেলাম, তখন চিন্তা করলাম আমরা এ কী করলাম? রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তো শপথ করেছিলেন আমাদেরকে বাহন দেবেন না। আর তাহাঁর কাছে কোন বাহন তো ছিলও না। কিন্তু এরপর তিনি তো আমাদেরকে আরোহণের বাহন দিলেন। আমরা রাসুলুল্লাহকে (সাঃআঃ)-তাহাঁর কসমের ব্যাপারে অন্যমনস্ক রেখেছিলাম। আল্লাহর কসম! এ বাহন আমাদের কোন উপকারে আসবে না। কাজেই আমরা তাহাঁর কাছে ফিরে গেলাম এবং তাঁকে বললাম যে, আমাদেরকে আপনি আরোহণ করাবেন এ উদ্দেশ্যে আমরা তো আপনার কাছে এসেছিলাম। আপনি কসম করেছিলেন যে, আপনি আমাদেরকে কোন বাহন দিবেন না। আর আপনার কাছে এমন কোন কিছু ছিলও না, যাতে আমাদেরকে আরোহণ করাতে পারেন। তখন তিনি বলেছিলেনঃ আমি তোমাদেরকে আরোহণ করাইনি বরং আল্লাহ আরোহণ করিয়েছেন। আল্লাহর শপথ! আমি যখন শপথ করি আর তার অন্যটির মাঝে যদি অধিক কল্যাণ দেখিতে পাই, তা হলে যা কল্যাণকর তাই বাস্তবায়িত করি এবং আমি শপথ ভঙ্গ করি।(আঃপ্রঃ- ৬১৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯৪)

৮৩/৫. অধ্যায়ঃ লাত, উযযা ও প্রতিমাগুলোর নামে কসম করা যায় না।

৬৬৫০

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী সাঃআঃ হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি শপথ করে এবং বলে, লাত ও উয্যার শপথ, তখন সে যেন لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ বলে আর যে ব্যক্তি তার সঙ্গীকে বলে এসো জুয়া খেলি তাহলে সে যেন সদাকাহ দেয়।[১] [৪৮৬০] (আঃপ্রঃ- ৬১৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯৫)

[৬৬] লাত ও উযযার নামে (শুধুমাত্র) শপথ করার পাপ (লা ইলাহা ইল্লালাহ) বলার দ্বারা মুছে যায় আর জুয়া খেলার জন্য (জড়িত না হয়ে শুধুমাত্র) আহবানের পাপ সাদাকা করার দ্বারা মুছে যায়।

৮৩/৬. অধ্যায়ঃ কেউ যদি কোন কিছুর কসম করে অথচ তাঁকে কসম দেয়া হয়নি-এ সম্পর্কে বর্ণনা।

৬৬৫১

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি স্বর্ণের আংটি তৈরী করালেন এবং তিনি সেটা ব্যবহার করিতেন। ব্যবহারকালে তাহাঁর পাথরটি হাতের ভিতরের দিকে রাখতেন। তখন লোকেরাও এরূপ করিল। এরপর তিনি মিম্বরের উপর বসে তা খুলে ফেললেন এবং বললেনঃ আমি এ আংটি পরেছিলাম এবং তার পাথর হাতের ভিতরের দিকে রেখেছিলাম। অতঃপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। আর বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি এ আংটি আর কোনদিন ব্যবহার করব না! তখন লোকেরাও তাদের নিজেদের আংটিগুলো খুলে ফেলল।(আঃপ্রঃ- ৬১৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯৬)

৮৩/৭. অধ্যায়ঃ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের কসম করলে।

নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ কেউ যদি লাত ও উযযার কসম করে তবে সে যেন (লা ইলাহা ইল্লালাহ) বলে কিন্তু তিনি এমন ব্যক্তিকে কাফের বলেননি।

৬৬৫২

সাবিত ইবনু যহ্হাক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের কসম করলে সেটা ঐ রকম হইবে, যেমন সে বলিল। তিনি (আরও বলেছেন) কেউ কোন জিনিসের দ্বারা আত্মহত্যা করলে, জাহান্নামের আগুনে তাকে ঐ জিনিস দিয়েই শাস্তি দেয়া হইবে। কোন মুমিনকে লানত করা তাকে হত্যা করা তুল্য। আর কোন মুমিনকে কুফরীর অপবাদ দেয়াও তাকে হত্যা করার তুল্য।(আঃপ্রঃ- ৬১৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯৭)

৮৩/৮. অধ্যায়ঃ “যা আল্লাহ ইচ্ছে করেন ও তুমি যা ইচ্ছে কর” বলবে না। “আমি আল্লাহর সঙ্গে অতঃপর তোমার সঙ্গে” এমন বলা যাবে কি?

৬৬৫৩

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, বানী ইসরাঈল গোত্রের তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ পরীক্ষা করিতে চাইলেন। অতঃপর একজন ফেরেশ্তা পাঠালেন। ফেরেশ্তা কুষ্ঠরোগীর কাছে এল। সে বলিল, আমার সমস্ত উপায়-উপকরণ ছিন্ন হয়ে গেছে। কাজেই আমার জন্য আল্লাহ ব্যতীত, অতঃপর তুমি ব্যতীত কোন উপায় নেই। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করিলেন। (আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯৮)

৮৩/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তারা আল্লাহর নামে সুদৃঢ় কসম করেছে। (সুরা আনআম ৬/১০৯)

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর শপথ! আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করিতে যে ভূল করেছি তা আপনি অবশ্যই আমাকে বলে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি শপথ করো না।

৬৬৫৪

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে কসম পূর্ণ করিতে নির্দেশ দিয়েছেন। (আঃপ্রঃ- ৬১৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯৯)

৬৬৫৫

উসামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার উসামাহ ইবনু যায়দ, সাদ ও উবাই (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর এক কন্যা তাহাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, আমার পুত্র মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। কাজেই তিনি যেন আমাদের নিকট আসেন। তিনি সালামের সঙ্গে এ কথা বলে পাঠালেন যে, আল্লাহ যা দান করেন আর যা নিয়ে নেন সব কিছুই আল্লাহর জন্য। আর সব কিছুই আল্লাহর নিকট নির্ধারিত আছে। অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সাওয়াবের আশা কর। এরপর তাহাঁর কন্যা কসম দিয়ে আবার খবর পাঠালেন। এতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যাওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। আমরাও তাহাঁর সঙ্গে দাঁড়ালাম। (সেখানে গিয়ে) তিনি যখন বসলেন, শিশুটিকে তাহাঁর সামনে আনা হল। তিনি তাকে নিজের কোলে নিয়ে বসালেন, আর শিশুটির শ্বাস নিঃশেষ হয়ে আসছিল। এতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দুচোখ অশ্র“ প্রবাহিত করিল। তখন সাদ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ কী ব্যাপার? তিনি বললেনঃ এ হল রহমত, যা আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তার মনের ভিতরে দিয়ে থাকেন। আর আল্লাহ কেবলমাত্র তাহাঁর দয়ালু বান্দাদের ওপরই দয়া করে থাকেন। [৬৭] (আঃপ্রঃ- ৬১৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০০)

[৬৭] কারো মৃত্যুতে চোখ দিয়ে পানি বের হলে তা নিষিদ্ধ নয়, বরং রাহমাত। নিষিদ্ধ হল চেঁচিয়ে কান্নাকাটি করা, বিলাপ করা, গালে বুকে হাত দিয়ে আঘাত করা, জামা কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি।

৬৬৫৬

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে মুসলিমের তিনটি সন্তান মারা গেছে (সে যদি ধৈর্য ধরে) তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করিবে না। তবে কসম পূর্ণ করার জন্য (তাকে পুলসিরাতের উপর দিয়ে নেয়া হইবে)।(আঃপ্রঃ- ৬১৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০১)

৬৬৫৭

হারিসাহ ইবনু ওয়াহব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছিঃ আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকদের সম্পর্কে জানাব না? তারা হইবে (দুনিয়াতে) দুর্বল, মাযলুম। তারা যদি আল্লাহর ওপর কসম করে, তবে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। আর জাহান্নামের অধিবাসী হইবে অবাধ্য, ঝগড়াটে ও অহংকারীরা।(আঃপ্রঃ- ৬১৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০২)

৮৩/১০. অধ্যায়ঃ যখন কেউ বলেঃ আল্লাহকে আমি সাক্ষী মানছি অথবা যদি বলে, আল্লাহকে আমি সাক্ষী করেছি।

৬৬৫৮

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হল, কোন মানুষ সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ আমার সময়ের মানুষ। এরপর তাদের পরবর্তী লোকেরা, এরপর তাদের পরবর্তী লোকেরা। এরপরে এমন লোক আসবে যে তাদের সাক্ষ্য কসমের উপর অগ্রগামী হইবে, আর কসম সাক্ষ্যের উপর অগ্রগামী হইবে। রাবী ইবরাহীম বলেন যে, আমরা যখন বালক ছিলাম তখন আমাদের সঙ্গীরা সাক্ষ্য এবং অঙ্গীকারের সঙ্গে কসম করিতে নিষেধ করিতেন। (আঃপ্রঃ- ৬১৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০৩)

৮৩/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর নামে ওয়াদা করা।

৬৬৫৯

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কোন মুসলিমের মাল আত্মসাৎ করার জন্য অথবা বলেছেনঃ তার ভাইয়ের মাল আত্মসাৎ করার জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করিবে, আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাত ঘটবে এমন অবস্থায় যে আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। এ কথারই সত্যতায় আল্লাহ তাআলা-অবতীর্ণ করেনঃ নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মুল্যে বিক্রয় করে, এরা আখিরাতের নিমাতের কোন অংশই পাবে না।

৬৬৬০

বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রাবী সুলায়মান তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেন, আশআস ইবনু কায়স্ (রাদি.) যখন পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন জিজ্ঞেস করেন, আবদুল্লাহ তোমাদের কাছে কী বর্ণনা করিয়াছেন? জবাবে লোকেরা তাঁকে কিছু বলিল। তখন আশআস (রাদি.) বলিলেন, এ আয়াত আমার আর আমার এক সাথী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমাদের দুজনের মাঝে একটি কুপ নিয়ে বিবাদ ছিল।(আঃপ্রঃ- ৬১৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০৪)

৮৩/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর ইযযত, গুণাবলী ও কলেমাসমূহের কসম করা।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃ) বলিতেনঃ (আল্লাহ) আমি তোমার ইযযতের আশ্রয় চাই। আবু হুরাইরাহ (রাদি.) নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি (ক্বিয়ামতের দিন) জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝের স্থানে থাকবে। সে তখন নিবেদন করিবে, হে প্রতিপালক! আমার চেহারাটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দাও। তোমার ইযযতের কসম! এছাড়া আর কিছুই আমি তোমার কাছে চাই না। আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, এ পুরষ্কার তোমার আর এরূপ দশ গুন। আইউব (আঃ) বলেন, তোমার ইযযতের কসম! তোমার বরকত হইতে আমি অমুখাপেক্ষী নই। (আ.প্র. অনুচ্ছেদ ই.ফা. ৬২০৫)

৬৬৬১

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জাহান্নাম সর্বদাই বলিতে থাকবে-আরও কি আছে? এমন কি রাব্বুল ইযযত তাতে তাহাঁর পা রাখবেন। বাস, বাস জাহান্নাম বলবে, তোমার ইযযতের কসম! সেদিন তার একাংশ অন্য অংশের সঙ্গে মিলিত হয়ে যাবে। শুবা, ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।[৪৮৪৮; মুসলিম ৫১/১৩, হাদীস ২৮৪৮, আহমাদ ১২৩৮৩] (আঃপ্রঃ- ৬১৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০৬)

৮৩/১৩. অধ্যায়ঃ কারো (আরবী) বলা।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, (আরবী) অর্থ (আরবী) (সুরা আল-হিজর ১৫/৭২) অর্থাৎ তোমার জীবনের কসম।

৬৬৬২

উরঅয়া বিন আয যুবায়ের (র) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশাহ (রাদি.)-এর অপবাদ বিষয়ক হাদীস বর্ণনা করেন। অপবাদ রটনাকারীরা যখন তাহাঁর সম্পর্কে যা ইচ্ছে তাই অপবাদ রটালো, তখন আল্লাহ তাঁকে পূত-পবিত্র বলে প্রকাশ করে দিলেন। রাবী বলেন, উপর্যুক্ত বর্ণনাকারীগণ প্রত্যেকেই হাদীসের এক একটি অংশ আমার কাছে বর্ণনা করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর মিথ্যা রটনা থেকে নিরাপত্তা চাইলেন। এরপর উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাদি.) দাঁড়ালেন এবং সাদ ইবনু উবাদাহ সম্পর্কে বলিলেন, আল্লাহর কসম, অবশ্য অবশ্যই আমরা তাকে হত্যা করব।(আঃপ্রঃ- ৬১৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০৭)

৮৩/১৪. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী): আল্লাহ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য দায়ী করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল। (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/২২৫)

৬৬৬৩

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, {لاَ يُؤَاخِذُكُمْ اللهُ} আয়াতটি- لاَ وَاللهِ (না, আল্লাহর শপথ) এবং بَلَى وَاللهِ

(হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ) এ জাতীয় কথা বলা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। [৪৬১৩] (আঃপ্রঃ- ৬১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০৮)

৮৩/১৫. অধ্যায়ঃ শপথ করে ভুলে যখন শপথ ভঙ্গ করে।

এবং আল্লাহর বাণীঃ এ ব্যাপারে তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই-(সুরা আহযাব ৩৩/৫); এবং আল্লাহর বাণীঃ আমার ভূলের জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না। (সুরা আহকাফ ১৮/৭৩)

৬৬৬৪

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। আর আবু হুরাইরা (রাদি.) অন্যত্র হাদীস মারফু হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, তিনি {নাবী (সাঃআঃ)} বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মাতের ঐ সকল ওয়াস্ওয়াসা ক্ষমা করে দিয়েছেন যা তাদের মনে উদিত হয় বা যে সব কথা মনে মনে বলে থাকে; যতক্ষন না তা বাস্তবে করে বা সে সম্পর্কে কথা বলে।(আঃপ্রঃ- ৬১৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২০৯)

৬৬৬৫

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর দিন খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে নিবেদন করিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধারণা করলাম যে, অমুক অমুক রুকনের পূর্বে অমুক অমুক রুকন হইবে। এরপর আরেক জন উঠে দাঁড়াল এবং বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! অমুক অমুক আমলের পূর্বে অমুক আমাল হইবে, (অর্থাৎ তারা যবহ, হলক ও তাওয়াফ) এ তিনটি কাজ সম্পর্কে জানতে চাইল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ করিতে পার, কোন দোষ নেই। ঐ দিন যে সম্পর্কে তিনি জিজ্ঞেসিত হলেন, বললেনঃ করিতে পার, কোন দোষ নেই। (আঃপ্রঃ- ৬২০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১০)

৬৬৬৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বলিল যে, আমি পাথর নিক্ষেপের আগে যিয়ারাত করেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। আরেক ব্যক্তি বলিল, আমি তো যবহ করার আগে মাথা মুন্ডন করেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। আরেক জন বলিল, আমি পাথর নিক্ষেপের আগে যবহ করেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। (আঃপ্রঃ- ৬২০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১১)

৬৬৬৭

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যাক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করছিল। আর নাবী (সাঃআঃ) তখন মাসজিদের এক কোণে অবস্থান করছিলেন। লোকটি এসে তাঁকে সালাম করিল। তিনি বললেনঃ ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। তখন সে ফিরে গেল এবং সালাত আদায় করিল। আবার এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি বললেনঃ তোমার উপরেও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কারণ, তুমি সলাত আদায় করনি। তৃতীয়বারে লোকটি বলিল, আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দন্ডায়মান হইবে তখন খুব ভালভাবে উযূ করিবে। এরপর কিবলামুখী হইবে। তারপর তাকবীর বলবে। এরপর কুরআন থেকে যা তোমার জন্য সহজ তা তিলাওয়াত করিবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে রুকূ করিবে। এরপর মাথা উঠাবে। এমনকি সঠিকভাবে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর সাজ্‌দাহ করিবে ধীরস্থিরভাবে। এরপর মাথা তুলে সোজা হইবে এবং ধীরস্থিরভাবে বসে যাবে। এরপর আবার ধীরস্থিরভাবে সাজদাহ করিবে। তারপর সিজ্‌দা থেকে মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে বসবে। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর তোমার পুরো সালাতেই এরূপ করিবে। [৬৮](আঃপ্রঃ- ৬২০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১২)

[৬৮] এ হাদীসটি খুবই স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে যে, সালাতের যাবতীয় কার্যাদি ধীরস্থিরভাবে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে করিতে হইবে। তাড়াহুড়া করে কেবল উঠক বৈঠক করলে তা মোটেই সালাত বলে গণ্য হইবে না। এ হাদীসের আলোকে আমরা যেন সালাতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করি।

৬৬৬৮

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদের যুদ্ধে মুশরিকরা প্রকাশ্যতঃ পরাজিত হলে ইবলিস চিৎকার করে বলিল, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা পিছনের দিকে ফির। এতে সামনের লোকগুলো পিছনের দিকে ফিরল। তারপর পিছনের লোকগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হুযাইফা ইবনু ইয়ামান (রাদি.) হঠাৎ তাহাঁর পিতাকে দেখে (মুসলিমদের প্রতি লক্ষ্য করে) বলিলেন, এ তো আমার পিতা, আমার পিতা। আল্লাহর কসম! তারা ফিরল না। শেষে তারা তাঁকে হত্যা করিল। হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। উরওয়াহ (রাদি.) বলিলেন যে, আল্লাহর কসম! মৃত্যু পর্যন্ত হুযাইফাহ (রাদি.)-এর মাঝে এ ব্যাপারটি বিদ্যমান ছিল।(আঃপ্রঃ- ৬২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৩)

৬৬৬৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে সায়িম ভুলে কিছু খায় সে যেন তার সওম পূর্ণ করে। কেননা, আল্লাহ তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন। [৬৯](আঃপ্রঃ- ৬২০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৪)

[৬৯] ভুলবশতঃ পেট পুরে পানাহার করলেও সওম নষ্ট হইবে না।

৬৬৭০

আবদুল্লাহ ইবনু বুহাইনাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। প্রথম দুরাকআতে বসার পূর্বেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবেই সলাত আদায় করিতে থাকলেন। সলাত শেষ করলে লোকেরা তাহাঁর সালামের অপেক্ষা করছিল। তিনি আল্লাহু আকবর বলে সালামের পূর্বে সাজদাহ করিলেন। এরপর তিনি তার মাথা উঠালেন। আবার আল্লাহু আকবর বলে সাজদাহ করিলেন। এরপর আবার মাথা উঠালেন এবং সালাম ফিরালেন।(আঃপ্রঃ- ৬২০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৫)

৬৬৭১

ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) একবার তাঁদের নিয়ে যুহুরের সলাত আদায় করিলেন। তিনি সালাতে কিছু বেশি করিলেন বা কিছু কম করিলেন। মানসূর বলেন, এই কম-অধিকের ব্যাপারে সন্দেহ ইবরাহীমের না আলক্বামাহর তা আমার জানা নেই। রাবী বলেন, জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! (সাঃআঃ) সালাতের মাঝে কি কিছু কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন? তিনি বললেনঃ কী হয়েছে? সহাবাগন বলিলেন, আপনি এভাবে এভাবে সলাত আদায় করিয়াছেন। রাবী বলেন, তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দুটি সাজদাহ করেন। এরপর বলিলেন, এ দুটি সাজদাহ ঐ ব্যাক্তির জন্য যার স্মরণ নেই যে, সালাতে সে কি অধিক কিছু করেছে, না কম করেছে। এমন অবস্থায় সে চিন্তা করে (নির্ভুলটি স্থির করার চেষ্টা করিবে)। আর যা বাকি থাকবে তা পুরা করে নেবে। এরপর দুটি সাজদাহ করিবে। (আঃপ্রঃ- ৬২০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৬)

৬৬৭২

উবাহ ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ থেকে আল্লাহর বাণীঃ لاَ تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلاَ تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا (মূসা বলিল, আমার ভুলের জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না, আর আমার ব্যাপারে আপনি অধিক কড়াকড়ি করবেন না) সম্পর্কে শুনেছেন। তিনি বলেছেনঃ মূসা (আঃ)-এর প্রথমটি ভুলবশত হয়েছিল। [৭৪] (আঃপ্রঃ- ৬২০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৭)

৬৬৭৩

শাবী (র) হইতে বর্ণিতঃ

শাবী থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন যে, বারাআ ইবনু আযিব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট কয়েকজন মেহমান ছিল। তিনি তাহাঁর পরিবার-পরিজনকে তাঁদের জন্য সলাত থেকে ফেরার আগেই কিছু যবহ করিতে হুকুম করিলেন, যেন ফিরে এসে তাঁরা আহার করিতে পারেন। তখন পরিবারের লোকেরা সলাত থেকে ফেরার আগেই (কুরবানীর পশু) যবহ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে লোকেরা এ সম্পর্কে বর্ণনা করিল। তিনি পুনরায় যবহ করার জন্য হুকুম করিলেন। বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে এমন একটি বক্‌রীর বাচ্চা আছে যা দুটি বড় বকরির গোশতের চেয়েও উত্তম।

ইবন আওন শাবীর মাধ্যমে বর্ণনা করিতে গিয়ে এ জায়গায় থেমে যেতেন। তিনি মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এরকমই বর্ণনা করিতেন এবং এ স্থানে থেমে যেতেন। আর বলিতেন, আমার জানা নেই তিনি ব্যাতীত অন্য কারও জন্য এরূপ অনুমতি আছে কিনা?

আইউব ……. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬২০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৭)

৬৬৭৪

জুনদুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি ঈদের সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর খুতবাহ প্রদান করিলেন। এরপর বললেনঃ যে ব্যাক্তি (সলাতের আগেই) যবহ করেছে সে যেন তার স্থলে আরেকটি যবহ করে। আর যে এখনও যবহ করেনি সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করে।(আঃপ্রঃ- ,৬২০৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৮)

৮৩/১৬. অধ্যায়ঃ মিথ্যা কসম

(আল্লাহর বাণী) পরস্পর ধোঁকা দেয়ার জন্য তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যাবহার কর না। করলে পা স্থির হবার পর পিছলে যাবে। আর তোমাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি—(সুরা নাহল ১৬/৯৬)।

(আরবী) দ্বারা ধোঁকা ও খিয়ানত উদ্দেশ্য।

৬৬৭৫

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের (অন্যতম) হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতামাতার নাফারমানী করা, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা। [৭০] (আঃপ্রঃ- ৬২০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৯)

[৭০] (……..) মিথ্যা শপথের তওবা ছাড়া কোন কাফ্‌ফারা নেই। বলা হয়, এই নামে নাম করণের কারণ হল উহা শপথকারীকে পাপে নিমজ্জিত করে অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। (ফাতাহুল বারী)

৮৩/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখিরাতের নিয়ামতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি- (সুরা আলু ইমরান ৩/৭৭)।

এবং আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর নামে এমন শপথ করে তাকে ওজুহাত করে নিও না। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা- (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/২২৪)। এবং আল্লাহর বাণীঃ তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা নগণ্য মূল্যে বিক্রয় করো না। আল্লাহর নিকট যা আছে তোমাদের জন্য তা-ই উত্তম—তোমরা যদি জানতে!- (সুরা নাহল ১৬/৯৫)। এবং আল্লাহর বাণীঃ তোমরা পরস্পর অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলে আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করিবে, নিজেদের অঙ্গীকার পাকা-পোখত করার পরার পর তা ভঙ্গ করো না, যেহেতু তোমরা আল্লাহকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছ- (সুরা নাহল ১৬/৯১)।

৬৬৭৬

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলিমের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে তবে আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাত হইবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। আল্লাহ এ কথার সত্যতা প্রমাণে আয়াত ……الآية إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ অবতীর্ণ করেন। [২৩৫৬] (আঃপ্রঃ- ৬২১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২০)

৬৬৭৭

বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

এরপর আশআস ইবনু কায়স (রাদি.) প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করিলেন যে, আবু আবদূর রাহমান তোমাদের কাছে কী বর্ণনা করিয়াছেন। লোকেরা বলিল, এমন এমন। তখন তিনি বলিলেন, এ আয়াত আমার ব্যাপারে অবতীর্ণ করা হয়েছে। আমার চাচাত ভাই-এর জমিতে আমার একটি কূপ ছিল। আমি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযির হলাম। তিনি বললেনঃ তুমি প্রমাণ হাযির কর অথবা সে শপথ করুক! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ কথার উপরে সে তো শপথ করেই ফেলবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার মানসে কসম করে, অথচ সে তাতে মিথ্যাচারী, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষত করিবে এমতাবস্থায় যে আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন।(আঃপ্রঃ- ৬২১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২০)

৮৩/১৮. অধ্যায়ঃ এমন কিছুতে কসম করা কসমকারী যার মালিক নয় এবং গুনাহের কাজের জন্য কসম ও রাগের বশবর্তী হয়ে কসম করা।

৬৬৭৮

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে আমার সাথী নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে পাঠাল তাহাঁর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে কোন কিছুই আরোহণের জন্য দিতে পারব না। তখন আমি তাঁকে ক্ষুদ্ধ অবস্থায় পেলাম। এরপর যখন আমি তাহাঁর কাছে এলাম, তিনি বললেনঃ তুমি তোমার সাথীদের কাছে চলে যাও এবং বল যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অথবা আল্লাহর রাসুল তোমাদের আরোহণের জন্য বাহনের ব্যাবস্থা করবেন। (আঃপ্রঃ- ৬২১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২১)

৬৬৭৯

আবদুল আযীয ও হাজ্জাজ (র.)… যুহরী (র.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) এর ব্যাপারে অপবাদ রটনাকারীরা যা বলেছিল তা শুনতে পেলাম। আল্লাহ এ মর্মে তাহাঁর নির্দোষিতা প্রকাশ করে দিয়েছেন। উপরোক্ত বর্ণনাকারীগণ প্রত্যেকেই আমার নিকট উল্লিখিত ঘটনার অংশ বিশেষ বর্ণনা করিয়াছেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আল্লাহ তাআলা {إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ} দশখানা আয়াত আমার নির্দোষিতা প্রকাশ করার জন্য অবতীর্ণ করিয়াছেন। আবু বাকর সিদ্দীক (রাদি.) আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে মিসতাহ ইবনু সালামাহর ভরণ-পোষণ করিতেন। অপবাদ দেয়ার কারণে আবু বাকর সিদ্দীক (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! মিসতাহ যখন আয়েশাহর ব্যাপারে অপবাদ রটিয়েছে; এরপর আমি আর তার জন্য কখনো কিছু খরচ করব না। তখন আল্লাহ {وَلاَ يَأْتَلِ أُولُوا الْفَضْلِ…..}الآية এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। আবু বাকর (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন এটা আমি নিশ্চয়ই পছন্দ করি। তিনি পুনরায় মিসতাহের ভরণ-পোষণের জন্য ঐ খরচ দেয়া শুরু করিলেন, যা তিনি পূর্বে তাকে দিতেন এবং তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি তার খরচ দেয়া কখনো বন্ধ করব না।[১] [২৫৯৩] (আঃপ্রঃ- ৬২১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২২)

[৭১] যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করে, আল্লাহ তার দোষ ক্রুটি ক্ষমা করে দেন।

৬৬৮০

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি কতক আশআরী লোকের সাথে (বাহন চাওয়ার জন্য) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। যখন হাজির হলাম, তখন তাঁকে ক্ষুদ্ধ অবস্থায় পেলাম। আমরা তাহাঁর কাছে বাহন চাইলাম। তিনি কসম করে বলিলেন যে, আমাদেরকে বাহন দিবেন না। এরপর বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি কোন কিছুর ওপর আল্লাহর ইচ্ছা মুতাবিক যখন কসম করি আর তার অন্যটির মাঝে কল্যাণ দেখিতে পাই; তাহলে যেটা কল্যাণকর সেটাই করি আর কসমকে ভঙ্গ করি।(আঃপ্রঃ- ৬২১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২৩)

৮৩/১৯. অধ্যায়ঃ কোন ব্যাক্তি যখন বলে, আল্লাহর কসম! আজ আমি কথা বলব না।

এরপর সে সলাত আদায় করিল অথবা কুরআন পাঠ করিল অথবা সুবহানাল্লাহ বা আল্লাহু আকবর বা আলহামদু ‎লিল্লাহ অথবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলিল। তবে তার কসম তার নিয়ত মোতাবেকই হইবে।

নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ উত্তম বাক্য চারটি? সুবহানল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এবং ওয়াল্লাহু আকবার। আবু সুফ্ইয়ান (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃ) বাদশাহ হিরাক্লিয়াসের কাছে লিখেছিলেনঃ “হে কিতাবীগণ! এসো সে কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান।”(আলু-ইমরানঃ ৬৪) মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (আরবী) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

৬৬৮১

সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রাদি.)-এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু তালিবের যখন মৃত্যু হাযির হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাহাঁর কাছে এলেন এবং বললেনঃ আপনি لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ কলেমাটি বলুন। আমি আল্লাহর নিকট এর দ্বারা আপনার ব্যাপারে সুপারিশ করব। [১৩৬০] (আঃপ্রঃ- ৬২১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২৪)

৬৬৮২

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দুটি কলেমা যা জবানে অতি হাল্‌কা, মীযানে ভারী, আর রাহমানের নিকট খুব পছন্দনীয়; তা হচ্ছে সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম(আঃপ্রঃ-৫ ৬২১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২৫)।

৬৬৮৩

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি কলেমা বলিলেন। আর আমি অন্যটি বললাম। তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে মারা যাবে তাকে জাহান্নামে দাখিল করা হইবে। আমি অন্যটি বললাম, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক না করে মারা যাবে তাকে জান্নাতে দাখিল করা হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬২১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২৬

৮৩/২০. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি কসম করে যে, স্বীয় স্ত্রীর নিকট এক মাস যাবে না আর মাস যদি হয় ঊনত্রিশ দিনে।

৬৬৮৪

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারে কসম করিলেন। আর তখন তাহাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তিনি তখন ঊনত্রিশ দিন কুঠরিতে অবস্থান করিলেন। এরপর তিনি নেমে এলেন (স্ত্রীগণের কাছে ফিরে এলেন)। লোকেরা তখন জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো এক মাসের কসম করেছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ মাস তো ঊনত্রিশ দিনেও হয়। (আঃপ্রঃ- ৬২১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২৭)

৮৩/২১. অধ্যায়ঃ যদি কেউ আঙ্গুর বা খুরমা ভিজানো পান করিবে না বলে কসম করে। অতঃপর তেল, চিনি বা আসীর পান করে ফেলে তবে কারো কারো মতে কসম ভঙ্গ হইবে না, কারণ তাদের মতে এগুলো নাবীযের অন্তর্ভুক্ত নয়।

৬৬৮৫

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সহাবী আবু উসায়দ (রাদি.) বিবাহ করিলেন। তার (ওলীমায়) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে দাওয়াত করিলেন। আর তখন তাহাঁর নব বিবাহিতা স্ত্রী তাঁদের খেদমত করছিলেন। সাহল (রাদি.) তার গোত্রের লোকেদেরকে বলিলেন, তোমরা কি জান সে মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-কে কী পান করিয়েছিলেন? সে রাত্রিবেলা একটি পাত্রে তাহাঁর জন্য খেজুর ভিজিয়ে রেখেছিল সকাল পর্যন্ত। আর সেগুলিই সে তাঁকে পান করাল। [৭২](আঃপ্রঃ- ৬৪১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২৮)

[৭২] এ থেকে বুঝা গেল, নব বিবাহিতা স্ত্রী ওলীমার দাওয়াতে যাথারীতি পর্দা অবলম্বন করে মেহমানদেরকে খাদ্য পরিবেশন করিতে পারে, এটা সুন্নাত।

৬৬৮৬

নাবী (সাঃ)-এর স্ত্রী সাওদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমাদের একটি বক্‌রী মারা গেল। আমরা এর চামড়া দাবাগত (পাকা) করে নিলাম। এরপর থেকে তাতে সর্বদাই আমরা নাবীয (খুরমা-খেজুর ভিজানো শরবত) প্রস্তুত করতাম। শেষ পর্যন্ত ওটা পুরাতন হয়ে গেল।(আঃপ্রঃ- ৬২১৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২২৯)

৮৩/২২. অধ্যায়ঃ যখন কেউ তরকারী খাবে না বলে কসম করে, তারপর রুটির সঙ্গে খেজুর মিশিয়ে খায়। আর কোন জিনিস তরকারীর অন্তর্ভুক্ত।

৬৬৮৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর পরিবার তরকারী দিয়ে গমের রুটি এক নাগাড়ে তিনদিন পর্যন্ত খেয়ে তৃপ্ত হননি। এভাবে তিনি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। [৭৩]

ইবনু কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত যে, তিনি এ হাদীসটি আয়েশাহ (রাদি.) কে বলেছেন।(আঃপ্রঃ- ৬২২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৩০)

[৭৩] আর্থিক দিক দিয়ে গরীব হলেও যে ব্যক্তি ঈমানের ধনে ধনী, আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই সম্মানীয়।

৬৬৮৮

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আবু ত্বলহা (রাদি.) উম্মু সুলায়ম (রাদি.)-কে বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দুর্বল আওয়াজ শুনতে পেলাম, যার ফলে আমি বুঝলাম তিনি ক্ষুধার্ত। তোমার কাছে কি কিছু আছে? উম্মু সুলায়ম (রাদি.) বলিলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি যবের কয়েকটি রুটি বের করিলেন। এরপর তাহাঁর ওড়নাটি নিলেন এবং এর একাংশে রুটিগুলি পেঁচিয়ে নিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, এরপর তিনি আমাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। আমি গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে মাসজিদে পেলাম। এবং কতগুলো লোক তাহাঁর সঙ্গে ছিল। আমি তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাকে কি আবু ত্বলহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সঙ্গীদের বলিলেন, উঠ, (আবু ত্বলহার কাছে যাও)। তখন তাঁরা আবু ত্বলহার নিকট গেলেন। আমি তাদের আগে আগে যেতে লাগলাম। শেষে আবু ত্বলহার কাছে এসে উপস্থিত হলাম এবং তাকে এ ব্যাপারে জানালাম। তখন আবু ত্বলহা (রাদি.) বলিল, হে উম্মু সুলায়ম! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তো আমাদের কাছে এসেছেন কিন্তু আমাদের কাছে তো এমন কোন খাবার নেই যা তাদের খেতে দিতে পারি। উম্মু সুলায়ম (রাদি.) বলিল, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই (সাঃআঃ) এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী জানেন। আবু ত্বলহা (রাদি.) বেরিয়ে এলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু ত্বলহা (রাদি.) উভয়েই সামনাসামনি হলেন এবং দুজনেই একসঙ্গে ঘরে প্রবেশ করিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে তাই নিয়ে এসো। তখন উম্মু সুলায়ম (রাদি.) ঐ রুটিগুলি তাহাঁর সামনে পেশ করিলেন। রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঐ রুটিগুলি ছিঁড়ার জন্য নির্দেশ করিলেন। তখন রুটিগুলি টুকরা টুকরা করা হল। উম্মু সুলায়ম (রাদি.) তার ঘি-এর পাত্র থেকে ঘি বের করিলেন এবং তাতে মেশালেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার উপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী পাঠ করিলেন এবং বললেনঃ দশজন লোককে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তারা সবাই আহার করিলেন, এমনকি সবাই তৃপ্ত হয়ে সেখান থেকে বের হলেন। এরপর তিনি আবার বললেনঃ (আরও) দশজনকে অনুমতি দাও। তখন তাদেরকে অনুমতি দেয়া হল। এভাবে তারা সবাই আহার করিলেন, এমনকি সবাই তৃপ্ত হয়ে সেখান থেকে বের হলেন। এরপর আবারো তিনি বললেনঃ আরও দশজনকে আসতে দাও। দলের লোকসংখ্যা ছিল সত্তুর বা আশি জন। [৭৪](আঃপ্রঃ- ৬২২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৩১)

[৭৪] নাবীগণ তাঁদের নবুওতের প্রমাণ স্বরূপ আল্লাহর নিকট হইতে মুজিযা লাভ করে থাকেন- যা নাবী ছাড়া অন্য মানুষের জন্য লাভ করা অসম্ভব।

৮৩/২৩. অধ্যায়ঃ কসমের মধ্যে নিয়ত করা।

৬৬৮৯

উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, নিশ্চয়ই প্রতিটি আমলের গ্রহণযোগ্যতা তার নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। কোন ব্যক্তি তা-ই লাভ করিবে যা সে নিয়্যাত করে থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসুল (সাঃআঃ)-এর সন্তুষ্টির জন্য হিজরাত করিবে তার হিজরাত আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সন্তুষ্টির জন্যই হইবে। আর যার হিজরাত দুনিয়া লাভের জন্য হইবে অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার জন্য হইবে তা হিজরাত সে উদ্দেশ্যেই হইবে যে জন্য সে হিজরাত করেছে। [৭৫](আঃপ্রঃ- ৬২২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৩২)

[৭৫] যে আমল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয় না, আল্লাহ তা গ্রহণ করেন না।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply