ইবাদাত, জাহান্নাম, ভাল, মন্দ, আমানতদারী, আনুগত্য ও বিনীত হওয়া
ইবাদাত, জাহান্নাম, ভাল, মন্দ, আমানতদারী, আনুগত্য ও বিনীত হওয়া >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৮১, কোমল হওয়া, অধ্যায়ঃ (২৭-৩৮)=১২টি
৮১/২৭. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী : আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব অল্পই হাসতে
৮১/২৮. অধ্যায় : কামনা-বাসনা দিয়ে জাহান্নামকে বেষ্টন করা হয়েছে
৮১/২৯. অধ্যায় : জান্নাত তোমাদের জুতার ফিতার থেকেও সন্নিকটে আর জাহান্নামও সেই রকম
৮১/৩০. অধ্যায় : মানুষ যেন নিজের অপেক্ষা নিম্ন স্তরের ব্যক্তির প্রতি তাকায় এবং নিজের অপেক্ষা উচ্চ স্তরের ব্যক্তির প্রতি যেন না তাকায় ।
৮১/৩১. অধ্যায় : যে ব্যক্তি ভাল বা মন্দের ইচ্ছা করিল ।
৮১/৩২. অধ্যায় : গুনাহকে নগণ্য মনে করা থেকে বেঁচে থাকা ।
৮১/৩৩. অধ্যায় : আমাল শেষ অবস্থার উপর নির্ভরশীল, আর এ ব্যাপারে ভয় রাখা ।
৮১/৩৪. অধ্যায় : অসৎ সংসর্গ হইতে নির্জনতা শান্তিপ্রদ ।
৮১/৩৫. অধ্যায় : আমানতদারী উঠে যাওয়া ।
৮১/৩৬. অধ্যায় : লোকদেখানো ও শোনানো ইবাদাত ।
৮১/৩৭. অধ্যায় : যে আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য স্বীয় নফসের সঙ্গে জিহাদ করে
৮১/৩৮. অধ্যায় : বিনীত হওয়া
৮১/২৭. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী : আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব অল্পই হাসতে
৬৪৮৫
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।(আঃপ্রঃ- ৬০৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪১)
৬৪৮৬
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।(আঃপ্রঃ- ৬০২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪২)
৮১/২৮. অধ্যায় : কামনা-বাসনা দিয়ে জাহান্নামকে বেষ্টন করা হয়েছে
৬৪৮৭
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জাহান্নাম কামনা বাসনা দ্বারা বেষ্টিত। আর জান্নাত বেষ্টিত দুঃখ-মুসিবত দ্বারা। [২৮] [মুসলিম পর্ব ৫১/হাদীস ২৮২২, ২৮২৩, আহমাদ ১২৫৬০] (আঃপ্রঃ- ৬০২৭, ই. ৬০৪৩)
[২৮] যারা নিজেদের খেয়াল-খুশি কামনা-বাসনা পূরণ করার কাজে লিপ্ত হইবে তারা জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছবে । সৎ আমল করা, সত্যের পথে দৃঢ় থাকা ও সৎ জীবন-যাপন করার জন্য বহু দুঃখ-কষ্ট মুসীবত সহ্য করিতে হয় । এ পথ পাড়ি দিতে পারলেই জান্নাতে পৌঁছা সম্ভব হইবে ।
৮১/২৯. অধ্যায় : জান্নাত তোমাদের জুতার ফিতার থেকেও সন্নিকটে আর জাহান্নামও সেই রকম
৬৪৮৮
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জান্নাত তোমাদের জুতার ফিতার চেয়েও বেশি নিকটে আর জাহান্নামও সেইরকম। [২৯](আঃপ্রঃ- ৬০৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪৪)
[২৯] মানুষের মৃত্যু অতি নিকটবর্তী । আর মৃত্যুর সাথে সাথেই কবরে তার কাছে পৌঁছে যাবে জাহান্নামের ভয়ানক শাস্তি কিংবা জান্নাতের অফুরন্ত শান্তি ।
৬৪৮৯
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কবি তার কবিতায় সর্বাধিক সত্য যে কথাটি বলেছেন তা হলঃ “জেনে রেখো আল্লাহ ব্যতীত যা কিছু আছে সবই বাতিল।” [৩০](আঃপ্রঃ- ৬০৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪৫)
[৩০] হাদীসটি আল্লাহ তাআলার এ বাণীরই প্রতিধ্বনি করছে-পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে, মাহাত্ম্য ও সম্মানে পরিপূর্ণ তোমার প্রতিপালকের মুখমণ্ডলই কেবল চির বিরাজমান থাকবে- (আর রহমান ২৬-২৭) ।
৮১/৩০. অধ্যায় : মানুষ যেন নিজের অপেক্ষা নিম্ন স্তরের ব্যক্তির প্রতি তাকায় এবং নিজের অপেক্ষা উচ্চ স্তরের ব্যক্তির প্রতি যেন না তাকায় ।
৬৪৯০
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কারো নজর যদি এমন লোকের উপর পড়ে, যাকে মাল-ধন ও দৈহিক গঠনে অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে তবে সে যেন এমন লোকের দিকে নজর দেয়, যে তার চেয়ে নিম্ন স্তরে রয়েছে। (আঃপ্রঃ- ৬০৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪৬)
৮১/৩১. অধ্যায় : যে ব্যক্তি ভাল বা মন্দের ইচ্ছা করিল ।
৬৪৯১
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) (হাদীসে কুদসী স্বরূপ) তাহাঁর প্রতিপালক হইতে বর্ণনা করে বলেন যে, আল্লাহ ভাল-মন্দ লিখে দিয়েছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করিল, কিন্তু তা বাস্তবে করিল না, আল্লাহ তাহাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ সওয়াব লিখবেন। আর সে ভাল কাজের ইচ্ছা করিল এবং তা বাস্তবেও করিল তবে আল্লাহ তাহাঁর কাছে তার জন্য দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অধিক সওয়াব লিখে দেন। আর যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করিল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করিল না, আল্লাহ তাহাঁর কাছে তার জন্য পূর্ণ সওয়াব লিখবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে, তবে তার জন্য আল্লাহ মাত্র একটা গুনাহ লিখেন।[মুসলিম ১/৫৯, হাদীস ১৩১, আহমাদ ৩৪০২] (আঃপ্রঃ- ৬০৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪৭)
৮১/৩২. অধ্যায় : গুনাহকে নগণ্য মনে করা থেকে বেঁচে থাকা ।
৬৪৯২
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তোমরা এমন সব কাজ করে থাক, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও চিকন। কিন্তু নাবী সাঃআঃ-এর সময়ে আমরা এগুলোকে ধ্বংসকারী মনে করতাম। আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন অর্থাৎ الْمُهْلِكَاتِ ধ্বংসকারী। (আঃপ্রঃ- ৬০৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪৮)
৮১/৩৩. অধ্যায় : আমাল শেষ অবস্থার উপর নির্ভরশীল, আর এ ব্যাপারে ভয় রাখা ।
৬৪৯৩
সাহল ইবনু সাদ আস-সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন। লোকটি ছিল ধনী এবং প্রভাবশালী লোকদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বললেনঃ কেউ জাহান্নামী লোক দেখিতে চাইলে, সে যেন এই লোকটিকে দেখে। (ফলে) এক লোক তার পেছনে পেছনে যেতে লাগল। সে যুদ্ধ করিতে থাকল অবশেষে আহত হয়ে গেল। তখন সে শিঘ্র মৃত্যু কামনা করিল, সে তারই তরবারীর অগ্রভাগ বুকের উপর রেখে সজোরে এমনভাবে চাপ দিল যে, তলোয়ারটি তার বক্ষ ভেদ করে পৃষ্ঠদেশ পার হয়ে গেল। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, কোন লোক এমন কাজ করে যায়, যা দেখে লোকেরা একে জান্নাতী লোকের কাজ বলে মনে করে। কিন্তু (আসলে) সে জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। আর কোন বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা দেখে লোকেরা একে জাহান্নামীদের কাজ বলে মনে করে। অথচ সে জান্নাতী লোকদের অন্তর্ভুক্ত। বস্তুতঃ শেষ অবস্থার উপরই আমালের ফলাফল নির্ভর করে। [৩১] (আঃপ্রঃ- ৬০৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪৯)
[৩১] ইবনু বাত্তাল বলেন : বান্দার শেষ আমল কেমন হইবে তা গোপন রাখার মধ্যে রয়েছে বিরাট হিকমত ও সূক্ষ্ম পরিকল্পনা । কারণ সে যদি জানতো যে, সে নাজাতপ্রাপ্ত তবে সে আনন্দিত হত এবং সে সৎ আমল করিতে অলসতা করত । আর যদি জানতো যে, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত তবে সে অবাধ্যতা ও কুফরীর মাত্রা বাড়িয়ে দিত । (ফাতহুল বারী)
৮১/৩৪. অধ্যায় : অসৎ সংসর্গ হইতে নির্জনতা শান্তিপ্রদ ।
৬৪৯৪
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক বেদুঈন নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি স্বীয় জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে, আর সে ব্যক্তি যে পর্বত গুহায় তার রবের ইবাদত করিতে থাকে এবং মানুষকে তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখে। যুবায়দী সুলায়মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও নুমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে শুআইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আবু সাঈদ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), ইবনু মুসাফির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এক সহাবী কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) থেকে অর্থাৎ আবুল ইয়ামানের হাদীসের মত “কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬০৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫০)
৬৪৯৫
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, মানুষের উপর এক যামানা আসবে যখন বকরিই হইবে মুসলমানের উত্তম সম্পদ। সে তাহাঁর দীনকে নিয়ে ফিতনা থেকে দূরে থাকার উদ্দেশ্যে পর্বত শৃঙ্গে ও বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। [৩২](আঃপ্রঃ- ৬০৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫১)
[৩২] ফিতনা-ফাসাদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ঈমানদার ব্যক্তি লোকালয় ছেড়ে পাহাড়ে চলে যাবে ।
৮১/৩৫. অধ্যায় : আমানতদারী উঠে যাওয়া ।
৬৪৯৬
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন আমানত নষ্ট হয়ে যাবে তখন ক্বিয়ামাতের অপেক্ষা করিবে। সে বলিল : হে আল্লাহর রাসুল! আমানত কিভাবে নষ্ট হয়ে যাবে? তিনি বললেনঃ যখন কোন দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির উপর ন্যস্ত করা হইবে, তখনই ক্বিয়ামাতের অপেক্ষা করিবে।(আঃপ্রঃ- ৬০৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫২)
৬৪৯৭
হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের কাছে দুটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। একটির (বাস্তবায়ন) আমি দেখেছি এবং দ্বিতীয়টির অপেক্ষা করছি। নাবী (সাঃআঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমানত মানুষের অন্তরের কেন্দ্রে সংরক্ষিত। তারপর তারা কুরআন থেকে জ্ঞান লাভ করে। অতঃপর তারা নাবী (সাঃআঃ)-এর সুন্নাহ থেকে জ্ঞান লাভ করে। নাবী (সাঃআঃ) আবার বর্ণনা করিয়াছেন আমানত তুলে নেয়া সম্পর্কে, যে ব্যক্তিটি এক সময় নিদ্রা গেলে, তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়া হইবে, তখন একটি বিন্দুর মত চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। আবার ঘুমাবে। তখন আবার উঠিয়ে নেয়া হইবে। অতঃপর তার চিহ্ন ফোস্কার মত অবশিষ্ট থাকবে। তোমার পায়ের উপর গড়িয়ে পরা অঙ্গার সৃষ্ট চিহ্ন, যেটিকে তুমি ফোলা মনে করিবে, প্রকৃতপক্ষে তাতে কিছুই থাকবে না। মানুষ বেচাকেনা করিতে থাকবে বটে, কিন্তু কেও আমানত আদায় করিবে না। তারপর লোকেরা বলাবলি করিবে যে, অমুক বংশে একজন আমানতদার লোক আছে। সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সে কতই না জ্ঞানী, কতই না হুশিয়ার, কতই না বাহাদুর? অথচ তার অন্তরে সরিষা দানার পরিমাণ ঈমানও থাকবে না।
(বর্ণনাকারী বলেন) আমার উপর এমন একটি সময় অতিবাহিত হয়েছে যে, আমি তোমাদের কারো সঙ্গে বেচাকেনা করিতে একটুও চিন্তা করতাম না। কারন সে মুসলিম হলে ইসলামই তাকে (প্রতারণা হইতে) ফিরিয়ে রাখবে। আর সে খ্রীষ্টান হলে তার শাসকই তাকে (প্রতারণা হইতে) ফিরিয়ে রাখবে। অথচ এখন অবস্থা এমন যে, আমি অমুক অমুককে ব্যতীত বেচাকেনা করি না। [৩৩] [৭০৭৬, ৭২৭৬; মুসলিম ১/৬৪, হাদীস ১৪৩, আহমাদ ২৩৩১৫] (আঃপ্রঃ- ৬০৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৩)
[৩৩] উটের কাজ হল ভার বহন করা । যে উট বোঝা বইতে পারে না সেটা নিজেই বোঝা- উট নয় । তেমনি মানুষ আজ কেবল নামে মাত্র মানুষ । শত শত মানুষের মধ্যেও মানুষের প্রকৃত গুণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায় না ।
৬৪৯৮
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে শুনিয়াছি, তিনি বলিতেন : নিশ্চয়ই মানুষ এমন শত উটের মত, যাদের মধ্যে থেকে তুমি একটিকেও বাহনের উপযোগী পাবে না।[মুসলিম ৪৪/৫৯, হাদীস ২৫৪৭, আহমাদ ৫৬২৩] (আঃপ্রঃ- ৬০৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৪)
৮১/৩৬. অধ্যায় : লোকদেখানো ও শোনানো ইবাদাত ।
৬৪৯৯
সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জুনদুবকে বলিতে শুনিয়াছি নাবী (সাঃআঃ) বলেন। তিনি ছাড়া আমি অন্য কাউকে নাবী (সাঃআঃ) বলেন এমন বলিতে শুনিনি। আমি তাহাঁর নিকট গেলাম এবং তাঁকে বলিতে শুনলাম। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক শোনানো ইবাদাত করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ইবাদাত করিবে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন। [৩৪] [৭১৫২; মুসলিম ৫৩/৫, হাদীস ২৯৮৬] (আঃপ্রঃ- ৬০৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৫)
[৩৪] কিয়ামাতের দিন আল্লাহ কারো লোককে শোনানোর ও লোককে দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন ।
৮১/৩৭. অধ্যায় : যে আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য স্বীয় নফসের সঙ্গে জিহাদ করে
৬৫০০
মুয়ায ইবনু জাবাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে তাহাঁর উটের পিছনে বসলাম। অথচ আমার ও তাহাঁর মাঝখানে ব্যবধান ছিল শুধু সাওয়ারীর গদির কাষ্ঠ-খণ্ড। তিনি বললেনঃ হে মুয়ায! আমি বললাম, আপনার নিকটে আপনার খিদমতে আমি হাজির হে আল্লাহর রাসুল! তারপর আরও কিছুক্ষণ চলার পরে আবার বললেনঃ হে মুয়ায ইবনু জাবাল! আমিও আবার বললাম, আপনার নিকটে আপনার খিদমতে আমি হাজির হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি জানো যে, বান্দার উপর আল্লাহর হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুল বেশি ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, সে তাহাঁরই ইবাদাত করিবে, তাহাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করিবে না। এরপর আরও কিছুক্ষণ পথ চলার পর আবার ডাকলেন, হে মুয়ায ইবন জাবাল! আমি বললাম, আপনার নিকটে আপনার খিদমতে আমি হাজির হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ যদি বান্দা তা করে আল্লাহর কাছে বান্দার প্রাপ্য কী হইবে, তা কি তুমি জান? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই বেশি ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ তখন আল্লাহর কাছে বান্দার হক হল তাদেরকে শাস্তি না দেয়া। [৩৫] (আঃপ্রঃ- ৬০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৬)
[৩৫] আল্লাহর প্রাপ্য হল- বান্দা শির্কমুক্ত তাহাঁর ইবাদাত করিবে, আর বান্দার প্রাপ্য হল আল্লাহ তাকে শাস্তিমুক্ত করে দেবেন ।
৮১/৩৮. অধ্যায় : বিনীত হওয়া
৬৫০১
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর “আয্বা” নামের একটি উটনী ছিল। তাকে অতিক্রম করে যাওয়া যেত না। একবার একজন বেদুঈন তার একটি উটে সাওয়ার হয়ে আসলে সেটি তাকে (অর্থাৎ আয্বাকে) অতিক্রম করে গেল। মুসলিমদের কাছে তা মনোকষ্টের কারণ হল। তারা বলিল যে, আয্বাকে তো অতিক্রম করে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহর কর্তব্য হল, কোন কিছুকে অবনত করে দুনিয়া থেকে তুলে নেয়া। (আঃপ্রঃ- ৬০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৭)
৬৫০২
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করিবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করিতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করিতে চাইলে তা করিতে কোন দ্বিধা করি-না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। [৩৬] (আঃপ্রঃ- ৬০৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৮)
[৩৬] হাদীসটিতে খাঁটি বান্দার গুণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে যার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে তিল পরিমাণও অগ্রসর হয় না । বান্দা মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর ওদিকে আল্লাহ বলেন ওহে প্রশান্তিময় আত্মা! চলে আসো তোমার প্রতিপালকের কাছে সন্তুষ্টি সহকারে এবং সন্তোষের পাত্র হয়ে আমার (সম্মানিত) বান্দাদের মধ্যে প্রবেশ কর আর প্রবেশ কর আমার জান্নাতে- (আল ফজর-২৯-৩০)
Leave a Reply