মুসাফাহা ও আলিঙ্গন করা। যে লাব্বাইকা এবং সাদাইকা বলে জবাব দিল
মুসাফাহা ও আলিঙ্গন করা। যে লাব্বাইকা এবং সাদাইকা বলে জবাব দিল >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৭৯, অনুমতি চাওয়া, অধ্যায়ঃ (২৬-৩০)=৫টি
৭৯/২৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এর বাণীঃ তোমরা তোমাদের সরদারের জন্য দাঁড়াও।
৭৯/২৭. অধ্যায়ঃ মুসাফাহা করা।
৭৯/২৮. অধ্যায়ঃ দু হাত ধরে মুসাফাহা করা।
৭৯/২৯. অধ্যায়ঃ আলিঙ্গন করা এবং কারো এ কথা কীভাবে তোমার সকাল হয়েছে?
৭৯/৩০. অধ্যায়ঃ যে লাব্বাইকা এবং সাদাইকা বলে জবাব দিল।
৭৯/২৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এর বাণীঃ তোমরা তোমাদের সরদারের জন্য দাঁড়াও।
৬২৬২
আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কুরাইযাহ গোত্রের লোকেরা সাদ -এর ফায়সালার উপর আত্মসমর্পণ করলো। নাবী সাঃআঃ তাঁকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তারপর তিনি এলে নাবী সাঃআঃ সহাবীদের বললেনঃ তোমরা আপন সরদারের প্রতি অথবা বললেনঃ তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সম্মানার্থে উঠে দাঁড়াও। তারপর সাদ এসে নাবী সাঃআঃ -এর পার্শ্বেই উপবেশন করিলেন। তখন নাবী সাঃআঃ তাঁকে বললেনঃ এরা তোমার ফায়সালার উপর আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বললেনঃ তা হলে আমি ফায়সালা দিচ্ছি যে, এদের মধ্যে যারা যুদ্ধ করার যোগ্য তাদের হত্যা করা হোক। আর তাদের ছোটদের বন্দী করা হোক। তখন নাবী সাঃআঃ বললেনঃ এদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা অনুযায়ীই ফায়সালা দিয়েছ। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার কোন কোন সঙ্গী উস্তাদ আবুল ওয়ালীদ থেকে আবু সাঈদের এ হাদীস عَلٰى حُكْمِكَ এর স্থলে إِلٰى حُكْمِكَ শব্দ আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন। [৪০৪৩] আঃপ্রঃ- ৫৮১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৫)
৭৯/২৭. অধ্যায়ঃ মুসাফাহা করা।
ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ)যখন আমাকে তাশাহহুদ শিক্ষা দেন তখন আমার হাত তাহাঁর দু হাতের মাঝে ছিল। কাব ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, একবার আমি মাসজিদে ঢুকেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে পেয়ে গেলাম। তখন ত্বলহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাদি.) আমার দিকে দৌড়ে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করিলেন এবং আমাকে মুবারাকবাদ জানালেন।
৬২৬৩
ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমি আনাস (রাদি.) –কে জিজ্ঞেস করলামঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর সাহাবীগণের মধ্যে কি মুসাফাহা চালু ছিল? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।(আঃপ্রঃ- ৫৮২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৬)
৬২৬৪
আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) –এর হস্ত ধারণকৃত অবস্থায় ছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৮২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৭)
৭৯/২৮. অধ্যায়ঃ দু হাত ধরে মুসাফাহা করা।
হাম্মাদ ইবনু যায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু মুবারকের সঙ্গে দুহস্তে মুসাফাহ করিয়াছেন।
৬২৬৫
ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার হাত তাহাঁর উভয় হস্তের মধ্যে রেখে আমাকে এমনভাবে তাশাহ্হুদ শিখিয়েছেন, যেভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সুরা শিখাতেনঃ التَّحِيَّاتُ للهِ÷ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه” وَرَسُوْلُه” এ সময় তিনি আমাদের মাঝেই অবস্থান করছিলেন। তারপর যখন তাহাঁর ওফাত হয়ে গেল, তখন থেকে আমরা السَّلاَمُ عَلَيْكَ এ স্থলে السَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ পড়তে লাগলাম। [৮৩১] আঃপ্রঃ- ৫৮২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৮)
৭৯/২৯. অধ্যায়ঃ আলিঙ্গন করা এবং কারো এ কথা কীভাবে তোমার সকাল হয়েছে?
৬২৬৬
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আলী ইবনু আবু ত্বলিব যখন নাবী (সাঃআঃ) -এর শেষ কালে তাহাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন, লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলোঃ হে আবুল হাসান! কীভাবে নাবী (সাঃআঃ) -এর সকাল হয়েছে? তিনি বললেনঃ আলহামদু লিল্লাহ সুস্থ অবস্থায় তাহাঁর সকাল হয়েছে। তখন আব্বাস (রাদি.) তার হাত ধরে বললেনঃ তুমি কি তাহাঁর অবস্থা বুঝতে পারছো না? তুমি তিনদিন পরই লাঠির গোলাম হয়ে যাবে। আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে ধারণা করছি যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর এ অসুখেই শীঘ্রই ইন্তিকাল করবেন। আমি বনূ আবদুল মুত্তালিবের চেহারা থেকে তাঁদের মৃত্যুর আলামত বুঝতে পারি। অতএব তুমি আমাদের রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট নিয়ে যাও। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করবো যে, তাহাঁর অবর্তমানে খিলাফতের দায়িত্ব কাদের হাতে থাকবে? যদি আমাদের বংশেই থাকে, তবে তা আমরা জেনে রাখলাম। আর যদি অন্য কোন গোত্রের হাতে থাকবে বলে জানি, তবে আমরা তাহাঁর সাথে পরামর্শ করবো এবং তিনি আমাদের জন্য অসিয়ত করে যাবেন। আলী (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর কসম! যদি আমরা এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করি আর তিনি এ ব্যাপারে আমাদের বিরত থাকার নির্দেশ দেন, তাহলে লোকজন কখনও আমাদের এ সুযোগ দেবে না। সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে কখনো জিজ্ঞেস করবো না।(আঃপ্রঃ- ৫৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৯)
৭৯/৩০. অধ্যায়ঃ যে লাব্বাইকা এবং সাদাইকা বলে জবাব দিল।
৬২৬৭
মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) বলেন, আমি একবার নাবী (সাঃআঃ)-এর পেছনে তাহাঁর সাওয়ারীর উপর উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি আমাকে ডাক দিলেনঃ ওহে মুআয! আমি বললাম, লাব্বাইকা ওয়া সদাইকা। তারপর তিনি এরূপ তিনবার ডাকলেন। এরপর বললেনঃ তুমি কি জানো যে, বান্দাদের উপর আল্লাহর হক কী? তিনি বললেনঃ তা হলো, বান্দারা তাহাঁর ইবাদত করিবে আর এতে তাহাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করিবে না। আবার কিছুক্ষণ চলার পর তিনি বললেনঃ ওহে মুআয! আমি জবাবে বললামঃ লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি জানো যে, বান্দা যখন তাহাঁর ইবাদত করিবে, তখন আল্লাহর উপর বান্দাদের হক কী হইবে? তিনি বললেনঃ তা এই যে, তিনি তাদের আযাব দিবেন না।(আঃপ্রঃ- ৫৮২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২০)
৬২৬৮
যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহর কসম! আবু যার (রাদি.) রাবাযাহ নামক স্থানে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, একবার আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে এশার সময় মাদীনায় হার্রা নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা উহূদ পাহাড়ের সম্মুখীন হলে তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবু যার! আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক। আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছাড়া এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত অথবা তিন রাত পর্যন্ত আমার হাতে তা থেকে যাক। বরং আমি পছন্দ করি যে, আমি এগুলো আল্লাহর বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। (কীভাবে দেবেন) তা তাহাঁর হাত দিয়ে দেখালেন। তারপর বললেনঃ হে আবু যার! আমি বললামঃ লাব্বাইকা ওয়া সদাইকা, হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বললেনঃ দুনিয়াতে যার বেশি ধন, আখিরাতে তারা হইবে অনেক কম সাওয়াবের অধিকারী। তবে যারা তাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দেবে। তারা হইবে এর ব্যতিক্রম। তারপর তিনি আমাকে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত, হে আবু যার! তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোথাও যেয়ো না। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন, এমনকি আমার অদৃশ্যে চলে গেলেন। এমন সময় একটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়লাম যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কোন বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সে দিকে এগিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)এর নিষেধাজ্ঞা- যে কোথাও যেয়ো না- মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি একটা আওয়ায শুনে ভীত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোন বিপদে পড়লেন কিনা। কিন্তু আপনার কথা স্মরণ করে থেমে গেলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরীল। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মাতের মধ্যে যে লোক আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদিও সে ব্যক্তি ব্যভিচার করে? যদিও সে ব্যক্তি চুরি করে? তিনি বললেনঃ সে যদিও ব্যভিচার করে, যদিও চুরি করে থাকে তবুও।
আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমি যায়দকে বললাম, আমার কাছে খবর পৌঁছেছে যে, এ হাদীসের রাবী হলেন আবুদ দারদা। তিনি বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এ হাদীসটি আবু যারই রাবাযা নামক স্থানে আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন। আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু সালিহও আবু দারদা (রাদি.) সূত্রে আমার কাছে এ রকম বর্ণনা করিয়াছেন। আর আবু শিহাব, আমাশ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তিন দিনের অতিরিক্ত। [১২৩৭; মুসলিম ১/৪০, হাদীস ৯৪, আহমাদ ২১৪৭১] আঃপ্রঃ- ৫৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২১)
Leave a Reply