প্রতিবেশীর হক ও অসীয়ত। মানুষ ও জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন
প্রতিবেশীর হক ও অসীয়ত। মানুষ ও জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
৭৮/২৬. অধ্যায়ঃ মিসকীনদের অভাব দূর করার জন্য চেষ্টাকারী সম্পর্কে।
৭৮/২৭. অধ্যায়ঃ মানুষ ও জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন।
৭৮/২৮. অধ্যায়ঃ প্রতিবেশীর জন্য অসীয়ত।
৭৮/২৯. অধ্যায়ঃ যার ক্ষতি হইতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, তার গুনাহ।
৭৮/৩০. অধ্যায় : কোন প্রতিবেশী মহিলা তার প্রতিবেশী মহিলাকে হেয় প্রতিপন্ন করিবে না।
৭৮/৩১. অধ্যায়: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে।
৭৮/৩২. অধ্যায় : প্রতিবেশীদের অধিকার নির্দিষ্ট হইবে দরজার নৈকট্য দিয়ে।
৭৮/২৬. অধ্যায়ঃ মিসকীনদের অভাব দূর করার জন্য চেষ্টাকারী সম্পর্কে।
৬০০৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করার জন্য সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর ন্যায়। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমার ধারণা যে কানাবী (বুখারীর উস্তাদ আবদুল্লাহ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেনঃ সে রাতভর দাঁড়ানো ব্যক্তির মত যে (ইবাদাতে) ক্লান্ত হয় না এবং এমন সিয়াম পালনকারীর মত, যে সিয়াম ভঙ্গ করে না।(আঃপ্রঃ- ৫৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৯)
৭৮/২৭. অধ্যায়ঃ মানুষ ও জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন।
৬০০৮
আবু সুলাইমান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা কয়জন নাবী (সাঃআঃ) -এর দরবারে আসলাম। তখন আমরা ছিলাম প্রায় সমবয়সী যুবক। বিশ দিন তাহাঁর কাছে আমরা থাকলাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারের নিকট প্রত্যাবর্তন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। যাদের আমরা বাড়িতে রেখে এসেছি তাদের ব্যাপারে তিনি আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করিলেন। আমরা তা তাঁকে জানালাম। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয় ও দয়ার্দ্র। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও। তাদের (কুরআন) শিক্ষা দাও, (সৎ কাজের) আদেশ কর এবং যে ভাবে আমাকে সলাত আদায় করিতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সলাত আদায় কর। সলাতের ওয়াক্ত হলে, তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামাত করিবে।(আঃপ্রঃ- ৫৫৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭০)
৬০০৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ একবার এক লোক পথে হেঁটে যাচ্ছিল। তার ভীষণ পিপাসা লাগে। সে একটি কূপ পেল। সে তাতে নামল এবং পানি পান করলো, তারপর উঠে এলো। হঠাৎ দেখলো, একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে। পিপাসার্ত হয়ে কাদা চাটছে। লোকটি ভাবলো, এ কুকুরটি পিপাসায় সেরূপ কষ্ট পাচ্ছে, যেরূপ কষ্ট আমার হয়েছিল। তখন সে কূপে নামল এবং তার মোজার মধ্যে পানি ভরলো, তারপর মুখ দিয়ে তা (কামড়ে) ধরে উপরে উঠে এলো। তারপর সে কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তাকে এর প্রতিদান দিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! জীব-জন্তুর (প্রতি দয়া প্রদর্শনের) জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? তিনি বললেনঃ হাঁ, প্রত্যেক দয়ালু অন্তরের অধিকারীদের জন্য প্রতিদান আছে।(আঃপ্রঃ- ৫৫৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭১)
৬০১০
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একবার সলাতে দণ্ডায়মান। আমরাও তাহাঁর সঙ্গে দণ্ডায়মান হলাম। এ সময় এক বেদুঈন সলাতের মাঝেই বলে উঠলোঃ হে আল্লাহ! আমার ও মুহাম্মাদের উপর দয়া করো এবং আমাদের সঙ্গে আর কারোর উপর দয়া করো না। নাবী (সাঃআঃ) সালাম ফিরানোর পর বেদুঈন লোকটিকে বললেনঃ তুমি একটি প্রশস্ত ব্যাপারকে সংকুচিত করেছো অর্থাৎ আল্লাহর দয়া।(আঃপ্রঃ- ৫৫৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭২)
৬০১১
নুমান ইবনু বাশীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নুমান ইবনু বাশীর (রাদি.) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মুমিনদের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়। [মুসলিম ৪৫/১৭, হাদীস ২৫৮৬, আহমাদ ১৮৪০১] আঃপ্রঃ- ৫৫৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৩)
৬০১২
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন মুসলিম যদি গাছ লাগায়, আর তাত্থেকে কোন মানুষ বা জানোয়ার কিছু খায়, তবে তা তার জন্য সদাকাহয় পরিগণিত হইবে। (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৪)
৬০১৩
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে (সৃষ্টির প্রতি) দয়া করে না, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তার প্রতি দয়া করা হয় না। [৭৩৭৬; মুসলিম ৪৩/১৫, হাদীস ২৩১৯] আঃপ্রঃ- ৫৫৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৫)
৭৮/২৮. অধ্যায়ঃ প্রতিবেশীর জন্য অসীয়ত।
মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, কিছুকেই তাহাঁর শরীক করো না এবং মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের আয়ত্তাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ লোককে ভালবাসেন না, যে অহংকারী, দাম্ভিক। (সুরা আন-নিসা ৪/৩৬)
৬০১৪
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাকে জিবরীল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বদা প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত করিতে থাকেন। এমনকি, আমার ধারণা হয়, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন।[মুসলিম ৪৫/৪২, হাদীস ২৬২৪, আহমাদ ২৪৩১৪] আঃপ্রঃ- ৫৫৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৬)
৬০১৫
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত করিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন [মুসলিম ৪৫/৪২, হাদীস ২৬২৫, আহমাদ ২৬০৭২] আঃপ্রঃ- ৫৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৭)
৭৮/২৯. অধ্যায়ঃ যার ক্ষতি হইতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, তার গুনাহ।
৬০১৬
আবু শুরায়হ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) একবার বলেছিলেনঃ আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসুল! কে সে লোক? তিনি বললেনঃ যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।
ভিন্ন সূত্রে অনুরূপ একটি হাদীস আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতেও বর্ণিত হয়েছে।[মুসলিম ১/১৮, হাদীস ৪৬, আহমাদ ৮৮৬৪] আঃপ্রঃ- ৫৫৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৮)
৭৮/৩০. অধ্যায় : কোন প্রতিবেশী মহিলা তার প্রতিবেশী মহিলাকে হেয় প্রতিপন্ন করিবে না।
৬০১৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলিতেন: হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশী মহিলা যেন তার অপর প্রতিবেশী মহিলাকে (হাদিয়া ফেরত দিয়ে) হেয় প্রতিপন্ন না করে। তা ছাগলের পায়ের ক্ষুরই হোক না কেন।(আঃপ্রঃ- ৫৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৯)
৭৮/৩১. অধ্যায়: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে।
৬০১৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে। যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা চুপ থাকে।[৫১৮৫; মুসলিম ১/১৯, হাদীস ৪৭, আহমাদ ৭৬৩০] আঃপ্রঃ- ৫৫৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮০)
৬০১৯
আবু শুরায়হ আদাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যখন কথা বলেছিলেন, তখন আমার দুকান শুনছিল ও আমার দুচোখ দেখছিল। তিনি বলছিলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান দেখায় তার প্রাপ্যের বিষয়ে। জিজ্ঞেস করা হলো: মেহমানের প্রাপ্য কী, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃএকদিন একরাত ভালভাবে মেহমানদারী করা আর তিন দিন হলে (সাধারণ) মেহমানদারী, আর তার চেয়েও অধিক হলে তা হল তার প্রতি দয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। [৬১৩৫, ৬৪৭৬; মুসলিম ১/১৯, হাদীস ৪৮, আহমাদ ১৬৩৭০] আঃপ্রঃ- ৫৫৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮১)
৭৮/৩২. অধ্যায় : প্রতিবেশীদের অধিকার নির্দিষ্ট হইবে দরজার নৈকট্য দিয়ে।
৬০২০
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসুল! আমার দুজন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের কার কাছে হাদিয়া পাঠাব? তিনি বললেনঃযার দরজা তোমার বেশি কাছে, তার কাছে।(আঃপ্রঃ- ৫৫৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮২)
Leave a Reply