মাতা পিতার সাথে ভালো ব্যবহার

মাতা পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা সম্পর্কে হাদিস

 >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

৭৮/১. অধ্যায়: মহান আল্লাহর বাণী: পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য আমি মানুষের প্রতি ফরমান জারি করেছি। (সুরা আনকাবূত ২৯/৮)
৭৮/২. অধ্যায়: মানুষের মাঝে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার কে অধিক হকদার?
৭৮/৩. অধ্যায়: পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদে গমন করিবে না।
৭৮/৪. অধ্যায়: কোন লোক তার পিতা-মাতাকে গালি দেবে না।
৭৮/৫. অধ্যায়: পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারীর দুআ কবুল হওয়া।
৭৮/৬. অধ্যায়: পিতা-মাতার নাফরমানী করা কবীরা গুনাহ।
৭৮/৭. অধ্যায়ঃ মুশরিক পিতার সাথে সুসম্পর্ক রাখা।
৭৮/৮. অধ্যায়ঃ যে স্ত্রীর স্বামী আছে, ঐ স্ত্রীর পক্ষে তার নিজের মায়ের সঙ্গে ভাল ব্যবহার অক্ষুণ্ন রাখা।

৭৮/১. অধ্যায়: মহান আল্লাহর বাণী: পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য আমি মানুষের প্রতি ফরমান জারি করেছি। (সুরা আনকাবূত ২৯/৮)

৫৯৭০

আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট কোন কাজ সব থেকে অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃসময় মত সালাত আদায় করা। (আবদুল্লাহ) জিজ্ঞেস করিলেন: তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃপিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। আবদুল্লাহ জিজ্ঞেস করিলেন: তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃআল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আবদুল্লাহ বললেনঃনাবী (সাঃআঃ) এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি তাঁকে আরও অধিক প্রশ্ন করলে, তিনি আমাকে আরও জানাতেন।(আঃপ্রঃ- ৫৫৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩২)

আচার-ব্যবহার [১]

[১] এ পর্বে বর্ণিত হাদীসসমূহে মানুষের সৎ স্বভাব সম্পর্কিত যে সব গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলোঃ

১। পিতামাতার সঙ্গে- তারা মুসলিম হোক আর অমুসলিম হোক-দয়া-মায়া ও বিনয় নম্রতায় পূরিপূর্ণ অতি উচ্চ মানের সৌজন্যমূলক আচরণ করা।২। কারো ন্যায্য প্রাপ্য আটকে না রাখা।৩। দরিদ্রতার ভয়ে কন্যা শিশুকে হত্যা না করা।৪। মিথ্যা না বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেয়া।৫। শির্ক না করা।৬। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা না করা।৭। সলাত আদায় করা।৮। যাকাত দেয়া।৯। পবিত্র থাকা। ১০। রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখা।১১। সন্তানদের আদর স্নেহ করা।১২। পিতা-মাতার প্রিয়জন, স্বামী ও স্ত্রীর নিকটত্মায়ীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা।১৩। বিধবা, ইয়াতীম, গরীব ও দুঃস্থদের ভরণ পোষণের চেষ্টা করা ও তাদেরকে সাহায্য করা।১৪। জীব জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।১৫। বৃক্ষ রোপন করা।১৬। প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথিক ও অধীনস্থ দাস-দাসীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করা।১৭। মেহমানকে সম্মান করা।১৮। হাসিমুখে মিষ্ট ভাষায় কথা বলা এবং অশালীনতা বর্জন করা।১৯। সকল কাজে নম্রতা অবলম্বন করা।২০। মুমিনদেরকে পারস্পরিক সহযোগিতা করা ও সৎ পরামর্শ দেয়া।২১। দানশীল হওয়া, কৃপণতা পরিহার করা।২২। পারিবারিক কাজকর্মে সময় দেয়া।২৩। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে ভালবাসা।২৪। অন্যকে উপহাস না করা, হেয়জ্ঞান না করা।২৫। কাউকে গালি ও অভিশাপ না দেয়া।২৬। কাউকে খারাপ নামে না ডাকা।২৭। কারো গীবত না করা। ২৮। চোগলখোরী একজনের কাছে গিয়ে অন্যের প্রতি অপবাদ দেয়া বা তার দুর্নাম করা) থেকে বিরত থাকা।২৯। মুনাফিকী বর্জন করা।৩০। কারো অতিরিক্ত প্রশংসা না করা।৩১। আত্মীয় অনাত্মীয় সকল ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার করা।৩২। কারো প্রতি যুলম অত্যাচার না করা।৩৩। কারো প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ না করা।৩৪। যাদু-টোনা ইত্যাদি না করা।৩৫। কারো প্রতি কু ধারণা পোষণ না করা।৩৬। অন্যের দোষ-ত্রুটি খোঁজার জন্য গোয়েন্দাগিরি না করা।৩৭। আন্দাজ অনুমান করা থেকে বিরত থাকা।৩৮। অন্যের দোষ ত্রুটি গোপন করা।৩৯। সম্পূর্ণরূপে অহংকার বর্জন করা।৪০। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।৪১। অন্যের সাথে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ না রাখা।৪২। আল্লাহর অবাধ্যগণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা।৪৩। আপন লোকের সঙ্গে যথাসম্ভব বেশি বেশি সাক্ষাত করা।৪৪। নেককার সঙ্গী সাথীর বাড়িতে আহার করা।৪৫। সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উত্তম পোশাক পরা।৪৬। মুসলমানদের সঙ্গে ভ্রাতৃ বন্ধনে আবদ্ধ থাকা।৪৭। আলা জিহবা বের করে হো হো করে না হাসা।৪৮। সৎকাজ করিতে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ জেনে নিতে লজ্জাবোধ না করা।৪৯। ধৈর্যশীল হওয়া।৫০। লজ্জাশীল হওয়া।৫১। কাউকে তিরস্কার না করে সাধারণভাবে নাসীহাতের মাধ্যমে ভুল শুধরে দেয়া। ৫২। কাউকে কাফির না বলা। ৫৩। কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন করা। ৫৪। ক্রোধ দমন করা। ৫৫। মানুষকে ক্ষমা করা। ৫৬। কথায় ও কর্মে সহজতা ও সরলতা অবলম্বন করা। ৫৭। আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ক্ষেত্র ছাড়া ব্যক্তিগত কারণে কারো নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ না করা। ৫৮। মানুষের পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য করে নাসীহাত প্রদান করা। ৫৯। স্বীয় পরিবার পরিজনের সঙ্গে হাসি তামাশা করা। ৬০। একই রকমের ভুল কাজ দ্বিতীয়বার না করা। ৬১। সংশ্লিষ্ট সকলের অধিকারের প্রতি মনোযোগী থেকে প্রত্যেকের অধিকার আদায় করা। ৬২। বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা। ৬৩। আগন্তুককে মারহাবা বলে স্বাগত জানানো। ৬৪। সময়কে গালি না দেয়া। ৬৫। ভাল নাম রাখা এবং ভাল নামে ডাকা। ৬৬। আশ্চর্যবোধ করলে আল্লাহু আকবার ও সুবহানাল্লাহ বলা। ৬৭। ঢিল ছুঁড়া হইতে বিরত থাকা। ৬৮। হাঁচি দিলে আল হামদুলিল্লাহ বলা এবং হাই উঠলে মুখ ঢাকা। ৬৯। রোগীর সেবা করা। ৭০। জানাযায় অংশ গ্রহণ করা। ৭১। কেউ দাওয়াত দিলে কবূল করা। ৭২। সালামের জওয়াব দেয়া। ৭৩। মযলুমকে সাহায্য করা। ৭৪। শপথ পূর্ণ করা।

৭৮/২. অধ্যায়: মানুষের মাঝে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার কে অধিক হকদার?

৫৯৭১

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করিল: হে আল্লাহর রাসুল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃতোমার মা। লোকটি বললোঃ অতঃপর কে? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃতোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বলিলেন, তোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বললেনঃঅতঃপর তোমার বাবা।

ইবনু শুবরুমাহ বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব আবু যুরআ (রাদি.) থেকে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।[মুসলিম ৪৫/১, হাদীস ২৫৪৮] আঃপ্রঃ- ৫৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৩)

৭৮/৩. অধ্যায়: পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদে গমন করিবে না।

৫৯৭২

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করিল: আমি কি জিহাদে যাব? তিনি বললেনঃতোমার কি পিতা-মাতা আছে? সে বললোঃ হাঁ। তিনি বললেনঃতা হলে তাদের (সেবা করার মাধ্যমে) জিহাদ কর।(আঃপ্রঃ- ৫৫৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৪)

৭৮/৪. অধ্যায়: কোন লোক তার পিতা-মাতাকে গালি দেবে না।

৫৯৭৩

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন: কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে লানত করা। জিজ্ঞেস করা হলো: হে আল্লাহর রাসুল! আপন পিতা-মাতাকে কোন লোক কীভাবে লানত করিতে পারে? তিনি বললেনঃসে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়।[মুসলিম ১/৩৮, হাদীস ৯০, আহমাদ ৬৫৪০] আঃপ্রঃ- ৫৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৫)

৭৮/৫. অধ্যায়: পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারীর দুআ কবুল হওয়া।

৫৯৭৪

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনজন লোক হেঁটে চলছিল। তাদের উপর বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। এমন সময় পাহাড় হইতে একটি পাথর তাদের গুহার মুখের উপর গড়িয়ে পড়ে এবং মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের একজন অন্যদের বললোঃ তোমরা তোমাদের কৃত আমালের প্রতি লক্ষ্য করো যে নেক আমাল তোমরা আল্লাহর জন্য করেছ; তার ওয়াসীলাহয় আল্লাহর নিকট দুআ করো। হয়তো তিনি এটি হটিয়ে দেবেন।

তখন তাদের একজন বললোঃ হে আল্লাহ! আমার বয়োবৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিল এবং ছোট ছোট শিশু ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্যে মাঠে পশু চরাতাম। যখন সন্ধ্যায় ফিরতাম, তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগেই পিতা-মাতাকে পান করিতে দিতাম। একদিন পশুগুলো দূরে বনের মধ্যে চলে যায়। ফলে আমার ফিরে আসতে দেরী হয়ে যায়। ফিরে দেখলাম তারা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি যেমন দুধ দোহন করতাম, তেমনি দোহন করলাম। তারপর দুধ নিয়ে এলাম এবং উভয়ের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘুম থেকে তাদের উভয়কে জাগানো ভাল মনে করলাম না। আর তাদের আগে শিশুদের পান করানোও অপছন্দ করলাম। আর শিশুরা আমাদের দুপায়ের কাছে কান্নাকাটি করছিল। তাদের ও আমার মাঝে এ অবস্থা চলতে থাকে। শেষে ভোর হয়ে গেল। (হে আল্লাহ) আপনি জানেন যে, আমি কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই এ কাজ করেছি। তাই আপনি আমাদের জন্য একটু ফাঁক করে দিন, যাতে আমরা আকাশ দেখিতে পাই। তখন আল্লাহ তাদের জন্যে একটু ফাঁক করে দিলেন, যাতে তারা আকাশ দেখিতে পায়।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বললোঃ হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে এতখানি ভালবাসতাম যতখানি একজন পুরুষ কোন নারীকে ভালবাসতে পারে। আমি তাকে একান্তে পেতে চাইলাম। সে অসম্মতি জানাল, যতক্ষণ আমি তার কাছে একশ দীনার উপস্থিত না করি। আমি চেষ্টা করলাম এবং একশ স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করলাম। এগুলো নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন আমি তার দুপায়ের মধ্যে বসলাম, তখন সে বললোঃ হে আল্লাহর বান্দাহ! আল্লাহকে ভয় করো, আমার কুমারিত্ব নষ্ট করো না। তখন আমি উঠে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই আমি তা করেছি। তাই আমাদের জন্যে এটি ফাঁক করে দিন। তখন তাদের জন্যে আল্লাহ আরও কিছু ফাঁক করে দিলেন।

শেষের লোকটি বললোঃ হে আল্লাহ! আমি একজন মজদুরকে এক ফার্‌ক[১৪] চাউলের বিনিময়ে কাজে নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ শেষ করে এসে বলিল, আমার প্রাপ্য দিয়ে দিন। আমি তার প্রাপ্য তার সামনে উপস্থিত করলাম। কিন্তু সে তা ছেড়ে দিল ও প্রত্যাখ্যান করলো। তারপর তার প্রাপ্যটা আমি ক্রমাগত কৃষিকাজে খাটাতে লাগলাম। তা দিয়ে অনেকগুলো গরু ও রাখাল জমা করলাম। এরপর সে একদিন আমার কাছে এসে বললোঃ আল্লাহকে ভয় কর, আমার উপর যুল্‌ম করো না এবং আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও। আমি বললাম: ঐ গরু ও রাখালের কাছে চলে যাও। সে বললোঃ আল্লাহকে ভয় করো, আমার সাথে উপহাস কর না। আমি বললাম: তোমার সাথে আমি উপহাস করছি না। তুমি ঐ গরুগুলো ও তার রাখাল নিয়ে যাও। তারপর সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। (হে আল্লাহ!) আপনি জানেন যে, তা আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্যেই করেছি, তাই আপনি অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত করে দিন। তারপর আল্লাহ তাদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৫৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৬)

[১] فَرَقِ ফারক তৎকালীন সময়ে প্রচলিত একটি পরিমাপের পাত্র যা ১৬ রাতল-এর সমান।

৭৮/৬. অধ্যায়: পিতা-মাতার নাফরমানী করা কবীরা গুনাহ।

৫৯৭৫

সাদ ইবনু হাফ্‌স (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হারাম করিয়াছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহণ করা তোমাদের জন্য ঠিক নয় তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত ক্ববর দেয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করিয়াছেন গল্প-গুজব করা, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা ও সম্পদ অপচয় করা।(আঃপ্রঃ- ৫৫৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৭)

৫৯৭৬

আবু বাক্‌রাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন: আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললাম: অবশ্যই সতর্ক করবেন, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃআল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেনঃমিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, দুবার করে বলিলেন এবং ক্রমাগত বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় থামবেন না। (আঃপ্রঃ- ৫৫৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৮)

৫৯৭৭

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কাবীরা গুনাহর কথা উল্লেখ করিলেন অথবা তাঁকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে শারীক করা, মানুষ হত্যা করা ও মা-বাপের নাফরমানী করা। তারপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের কবীরা গুনাহর অন্যতম গুনাহ হইতে সতর্ক করবো না? পরে বললেনঃ মিথ্যা কথা বলা, অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।

শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার বেশি ধারণা হয় যে, তিনি বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।(আঃপ্রঃ- ৫৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৯)

৭৮/৭. অধ্যায়ঃ মুশরিক পিতার সাথে সুসম্পর্ক রাখা।

৫৯৭৮

আবু বাক্‌র (রাদি.) -এর কন্যা আসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বলিলেন, হাঁ।

ইবনু উয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করিতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করিতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।” (সুরা আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)(আঃপ্রঃ- ৫৫৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪০)

৭৮/৮. অধ্যায়ঃ যে স্ত্রীর স্বামী আছে, ঐ স্ত্রীর পক্ষে তার নিজের মায়ের সঙ্গে ভাল ব্যবহার অক্ষুণ্ন রাখা।

৫৯৭৯

আসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাহাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাহাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।(আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)

৫৯৮০

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, আবু সুফ্‌ইয়ান (রাদি.) থেকে জানিয়েছেন যে, (রোম সম্রাট) হিরাক্লিয়াস তাকে ডেকে পাঠায়। আবু সুফ্‌ইয়ান (রাদি.) বললো যে, তিনি অর্থাৎ নাবী (সাঃআঃ) আমাদের সালাত আদায় করিতে, যাকাত দিতে, পবিত্র থাকতে এবং রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখতে নির্দেশ দেন।(আঃপ্রঃ- ৫৫৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪১)

Comments

Leave a Reply