দুধ, পানি, মিষ্টান্ন, পান করার সুন্নত সমূহ। পাত্রগুলো ঢেকে রাখা
দুধ, পানি, মিষ্টান্ন, পান করার সুন্নত সমূহ। পাত্রগুলো ঢেকে রাখা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৭৪, পানীয় দ্রব্যসমূহ, অধ্যায়ঃ (১২-৩১)=২০টি
৭৪/১২. অধ্যায়ঃ দুধ পান করা
৭৪/১৩. অধ্যায়ঃ সুপেয় পানি তালাশ করা।
৭৪/১৪. অধ্যায়ঃ পানি মিশ্রিত দুধ পান করা।
৭৪/১৫. অধ্যায়ঃ মিষ্টান্ন ও মধু পান করা।
৭৪/১৬. অধ্যায়ঃ দাঁড়ানো অবস্থায় পান করা।
৭৪/১৮. অধ্যায়ঃ পান করার ব্যাপারে ডানের, তারপর ক্রমান্বয়ে ডানের ব্যক্তির অগ্রাধিকার।
৭৪/১৯. অধ্যায়ঃ পান করিতে দেয়ার ব্যাপারে বয়োজ্যেষ্ঠ লোককে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য তার ডানে অবস্থিত লোক থেকে অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে কি?
৭৪/২০. অধ্যায়ঃ অঞ্জলি ভরে হাউজের পানি পান করা।
৭৪/২১. অধ্যায়ঃ ছোটরা বড়দের খিদমত করিবে।
৭৪/২২. অধ্যায়ঃ পাত্রগুলো ঢেকে রাখা
৭৪/২৩. অধ্যায়ঃ মশকের মুখ খুলে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করা।
৭৪/২৪. অধ্যায়ঃ মশ্কের মুখ থেকে পানি পান করা।
৭৪/২৫. অধ্যায়ঃ পান পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা।
৭৪/২৬. অধ্যায়ঃ দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা।
৭৪/২৭. অধ্যায়ঃ স্বর্ণের পাত্রে পানি পান করা
৭৪/২৮. অধ্যায়ঃ স্বর্ণ ও রৌপ্য পাত্রে পানি পান করা।
৭৪/২৯. অধ্যায়ঃ পেয়ালায় পান করা
৭৪/৩০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম)-এর ব্যবহৃত পেয়ালায় পান করা এবং তাহাঁর পাত্রসমূহের বর্ণনা।
৭৪/৩১. অধ্যায়ঃ বরকত পান করা ও বরকতযুক্ত পানির বর্ণনা।
৭৪/১২. অধ্যায়ঃ দুধ পান করা
মহান আল্লাহর বাণীঃ “পান করাই ওদের পেটের গোবর আর রক্তের মাঝ থেকে বিশুদ্ধ দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্য খুবই উপাদেয়।” [৪৯] (নাহল ১৬ : ৬৬)
[৪৯] গোবর ও রক্তের মাঝখান দিয়ে পরিষ্কার দুধ বের করা সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেনঃ জন্তুর ভক্ষিত ঘাস তার পাকস্থলীতে একত্রিত হলে তা সিদ্ধ করে। পাকস্থলীর এই ক্রিয়ার ফলে খাদ্যের বিষ্ঠা নীচে বসে যায় এবং দুধ উপরে থেকে যায়। দুধের উপর থাকে রক্ত। এরপর যকৃত এই তিন প্রকার বস্তুকে পৃথকভাবে তাদের স্থানে ভাগ করে দেয়, রক্ত পৃথক করে রগের মধ্যে চালায় এবং দুধ পৃথক করে রগের মধ্যে চালায় এবং দুধ পৃথক করে জন্তুর স্তনে পৌঁছে দেয়। এখন পাকস্থলীতে শুধু বিষ্ঠা থেকে যায়, যা গোবর হয়ে বের হয়ে আসে। (মাআরেফুল কুরআন বাংলা সংস্করণ পৃঃ ৭৪৬)
৫৬০৩
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে ভ্রমণ করানো হয়, সে রাতে তাহাঁর সামনে পেশ করা হয়েছিল দুধের একটি পেয়ালা এবং শরাবের একটি পেয়ালা।(আঃপ্রঃ- ৫১৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৮৯)
৫৬০৪
উম্মুল ফায্ল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আরাফার দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সিয়াম পালনের ব্যাপারে লোকেরা সন্দেহ করে। তখন আমি তাহাঁর নিকট দুধ ভর্তি একটা পেয়ালা পাঠালাম। তিনি তা পান করিলেন। বর্ণনাকারী সুফিয়ান অনেক সময় এভাবে বলিতেন, আরাফার দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সিয়াম পালন সম্পর্কে লোকেরা সন্দেহ করছিল। তখন উম্মুল ফায্ল (রাদি.) তাহাঁর কাছে দুধ পাঠিয়েছিলেন। হাদীসটি মাউসূল না মুরসাল, এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন, এটি উম্মুল ফায্ল (রাদি.) হইতে বর্ণিত।(আঃপ্রঃ- ৫১৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯০)
৫৬০৫
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু হুমাইদ (রাদি.) এক বাটি দুধ নিয়ে আসলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ এটিকে ঢাকলে না কেন? একটি কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখা দরকার।(আঃপ্রঃ- ৫১৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯১)
৫৬০৬
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু হুমাইদ (রাদি.) নামক এক আনসারী নাফি নামক জায়গা থেকে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ এটিকে ঢেকে আননি কেন? এর উপর থেকে কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখা দরকার।
আবু সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীসটি জাবির (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। [৫৬০৫; মুসলিম ৩৬/১২, হাদীস ২০১১] আঃপ্রঃ- ৫১৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯২)
৫৬০৭
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কা থেকে রওয়ানা হলেন, তখন তাহাঁর সাথে ছিলেন আবু বকর (রাদি.)। আবু বকর (রাদি.) বলেনঃ আমরা এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সে সময়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ছিলেন খুব পিপাসার্ত। আবু বকর (রাদি.) বলেনঃ আমি তখন একটি পাত্রে ভেড়ার দুধ দুইলাম। তিনি তা পান করিলেন, আমি খুব খুশি হলাম। এমন সময় সুরাকা ইবনু জুশুম একটি ঘোড়ার উপর চড়ে আমাদের কাছে আসলো। নাবী (সাঃআঃ) তাকে বদ দুআ করিতে চাইলে সে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আরয করিল, যেন তিনি তার জন্য বদ দুআ না করেন এবং সে যেন নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পারে। নাবী (সাঃআঃ) তাই করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫১৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৩)
৫৬০৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ উত্তম সদকা হল উপহার স্বরূপ দেয়া দুধেল উটনী কিংবা বক্রী, যা সকালে একটি পাত্র পূর্ণ করে আর বিকালে পূর্ণ করে আরেকটি।(আঃপ্রঃ- ৫১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৪)
৫৬০৯
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দুধপান করিয়াছেন, এরপর তিনি কুলি করিয়াছেন এবং বলেছেনঃ এর মধ্যে তৈল আছে।(আঃপ্রঃ- ৫১৯৯১), ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৫)
৫৬১০
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার সম্মুখে সিদরাতুল মুনতাহা তুলে ধরা হল। তখন দেখলাম চারটি নহর। দুটি নহর হল যাহেরী, আর দুটি নহর হল বাতেনী। যাহেরী দুটি হল, নীল ও ফোরাত। আর বাতেনী দুটি হল, জান্নাতের দুটি নহর। আমার সম্মুখে তিনটি পেয়ালা তুলে ধরা হল, একটি পেয়ালায় আছে দুধ, একটি পেয়ালায় আছে মধু আর একটিতে শরাব। আমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলাম এবং পান করলাম। তখন আমাকে বলা হল, আপনি এবং আপনার উম্মাত স্বভাবজাত বস্তু গ্রহণ করিয়াছেন। তবে তাঁরা তিনটি পেয়ালার কথা উল্লেখ করেননি।(আঃপ্রঃ- ৫১৯৯২), ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৫)
৭৪/১৩. অধ্যায়ঃ সুপেয় পানি তালাশ করা।
৫৬১১
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু ত্বলহা ছিলেন মদিনার আনসারদের মধ্যে সবার চেয়ে অধিক খেজুর গাছের মালিক। আর তাহাঁর নিকট তাহাঁর প্রিয় সম্পত্তি ছিল বাইরুহা নামক বাগানটি। সেটি ছিল মসজিদে নববীর ঠিক সামনে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এ বাগানে যেতেন এবং সেখানকার উৎকৃষ্ট পানি পান করিতেন। আনাস বলেন, যখন আয়াত অবতীর্ণ হলঃ তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করিবে নাসুরা আলু ইমরান ৩/৯২)।তখন আবু ত্বলহা দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃতোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করিবে না – আর আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হল বাইরুহা বাগান। এটিকে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে সদাকাহ করে দিলাম। আমি আল্লাহর কাছে এর সাওয়াব এবং সঞ্চয় আশা করি। হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটিকে গ্রহণ করুন, আল্লাহর ইচ্ছেয় যেখানে ব্যয় করিতে আপনি ভাল মনে করেন, সেখানে ব্যয় করুন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ খুব ভাল, এটিতো লাভজনক কিংবা বলেছেন) মুনাফা দানকারী। কথাটিতে রাবী আবদুল্লাহ সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন। নাবী সাঃআঃ বলেনঃ তুমি যা বলেছ, আমি তা শুনিয়াছি। তবে আমি ভাল মনে করি যে, তুমি এটিকে আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করে দেবে। আবু ত্বলহা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাই করব। এরপর আবু ত্বলহা বাগানটি তাহাঁর আত্মীয়দের মধ্যে এবং তাহাঁর চাচাত ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।ইসমাঈল ও ইয়াহইয়া رَابِحٌ এর জায়গায় رَايِحٌ বলেছেন। [১৪৬১] আঃপ্রঃ- ৫২০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৬)
৭৪/১৪. অধ্যায়ঃ পানি মিশ্রিত দুধ পান করা।
৫৬১২
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর বাড়ীতে এসে দুধ পান করিতে দেখেন। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি একটি ছাগী দোহন করলাম এবং কূপের পানি মিশিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি পেয়ালাটি নিয়ে পান করেন। তাহাঁর বাঁদিকে ছিলেন আবু বকর (রাদি.) ও ডানদিকে ছিল এক বেদুঈন। তিনি বেদুঈনকে তাহাঁর অতিরিক্ত দুধ দিলেন। এরপর বললেনঃ ডান দিকের আছে অগ্রাধিকার।(আঃপ্রঃ- ৫২০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৭)
৫৬১৩
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আনসারদের এক লোকের কাছে গেলেন। তাহাঁর সাথে ছিলেন তাহাঁর এক সাহাবী। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আনসারীকে বললেনঃ তোমার কাছে যদি মশকে রাখা গত রাতের পানি থাকে তাহলে আমাদের পান করাও। আর না থাকলে আমরা সামনে গিয়ে পান করব। রাবী বলেন, লোকটি তখন তার বাগানে পানি দিচ্ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে গত রাতের পানি আছে। আপনি কুটীরে চলুন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি তাঁদের দুজনকে নিয়ে গেল এবং একটি পেয়ালায় পানি নিয়ে তাতে তার একটা বক্রীর দুধ দোহন করিল। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তা পান করিলেন, তাহাঁর সাথে আগন্তুক লোকটিও পান করিলেন।( আঃপ্রঃ- ৫২০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৮)
৭৪/১৫. অধ্যায়ঃ মিষ্টান্ন ও মধু পান করা।
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হলেও মানুষের পেশাব পান করা হালাল নয়। কেননা, পেশাব অপবিত্র। আল্লাহ তাআলা ইরশাদঃ “তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সকল পবিত্র জিনিস।” (সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪ ও ৫)
ইবনু মাসউদ (রাদি.) নেশাদ্রব্য সম্পর্কে বলেছেনঃ আল্লাহ তোমাদের উপর যে সব বস্তু হারাম করিয়াছেন তাতে তোমাদের জন্য কোন রোগমুক্তির উপাদান নেই।
৫৬১৪
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় দ্রব্য ছিল মিষ্টিদ্রব্য ও মধু।(আঃপ্রঃ- ৫২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৯৯)
৭৪/১৬. অধ্যায়ঃ দাঁড়ানো অবস্থায় পান করা।
৫৬১৫
নায্যাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কুফা মসজিদের ফটকে আলী (রাদি.)-এর নিকট পানি আনা হলে তিনি দাঁড়িয়ে তা পান করিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পান করাকে মাকরূহ মনে করে, অথচ আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখেছি, তোমরা আমাকে যেমনভাবে পান করিতে দেখলে তিনিও তেমনি করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫২০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০০)
৫৬১৬
নায্যাল ইবনু সাবরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.)-এর সম্পর্কে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি যুহরের সালাত আদায় করিলেন। এরপর তিনি মানুষের নানান প্রয়োজনে কূফা মসজিদের চত্বরে বসে পড়লেন। অবশেষে আসরের সালাত আদায়ের সময় হয়ে গেল। তখন পানি আনা হল। তিনি পানি পান করিলেন এবং নিজের মুখমন্ডল ও উভয় হাত ধৌত করিলেন। বর্ণনাকারী আদাম এখানে তাহাঁর মাথা ও দুপায়ের কথা উল্লেখ করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন এরপর আলী (রাদি.) দাঁড়ালেন এবং তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় অযূর উদ্বৃত্ত পানি পান করে নিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ লোকজন দাঁড়িয়ে পান করাকে ঘৃণা করে, অথচ আমি যেমন করেছি নাবী (সাঃআঃ)-ও তেমন করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫২০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০১)
৫৬১৭
আবু নুআইম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৫২০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০২)
৭৪/১৭. অধ্যায়ঃ উটের পিঠে আরোহী অবস্থায় পান করা।
৫৬১৮
উম্মুল ফায্ল বিনতু হারিস (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী সাঃআঃ -এর কাছে এক পেয়ালা দুধ পাঠিয়ে ছিলেন। তখন নাবী সাঃআঃ আরাফাতে বিকালে অবস্থান করছিলেন। তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে পেয়ালাটি নিলেন এবং তা পান করিলেন। [১৬৫৮]
আবুন নাযর থেকে মালিক عَلٰى بَعِيرِه„ তাহাঁর উটের উপর ছিলেন) কথাটি বৃদ্ধি করিয়াছেন। আঃপ্রঃ- ৫২০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৩)
৭৪/১৮. অধ্যায়ঃ পান করার ব্যাপারে ডানের, তারপর ক্রমান্বয়ে ডানের ব্যক্তির অগ্রাধিকার।
৫৬১৯
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাথে সম্মুখে পানি মেশানো দুধ পেশ করা হলে। তাহাঁর ডান পার্শ্বে ছিল এক বেদুঈন ও বাম পার্শ্বে ছিলেন আবু বকর (রাদি.)। নাবী (সাঃআঃ) দুধ পান করিলেন। তারপর বেদুঈন লোকটিকে তা দিয়ে বললেনঃ ডানের লোকের অধিকার আগে। এরপর তার ডানের লোকের। (আঃপ্রঃ- ৫২০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৪)
৭৪/১৯. অধ্যায়ঃ পান করিতে দেয়ার ব্যাপারে বয়োজ্যেষ্ঠ লোককে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য তার ডানে অবস্থিত লোক থেকে অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে কি?
৫৬২০
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সামনে শরবত পেশ করা হল, তিনি তা থেকে পান করিলেন। তাহাঁর ডানে ছিল একটি বালক, আর বামে ছিলেন কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। তখন নাবী (সাঃআঃ) বালকটিকে বললেনঃ তুমি কি আমাকে অনুমতি দেবে যে, আমি ঐ বয়স্ক লোকদের আগে পান করিতে দেই? বালকটি বললঃ আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আপনার নিকট হইতে আমার ভাগ পাওয়ার ব্যাপারে আমি কাউকে আমার উপর অগ্রাধিকার দেব না। রাবী বললেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তখন পেয়ালাটি তার হাতে তুলে দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫২০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৫)
৭৪/২০. অধ্যায়ঃ অঞ্জলি ভরে হাউজের পানি পান করা।
৫৬২১
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আনসারদের এক লোকের নিকট গেলেন। তাহাঁর সাথে ছিল তাহাঁর এক সাহাবী। নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবী সালাম দিলে লোকটি সালামের জবাব দিল। এরপর সে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য আমার পিতা ও মাতা কুরবান! এটি ছিল প্রচন্ড গরমের সময়। এ সময় লোকটি তার বাগানে পানি দিচ্ছিল। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ যদি তোমার কাছে গতরাতের মশ্কে রাখা পানি থাকে তাহলে আমাদের পান করাতে পার। তা নাহলে আমরা আমাদের সামনের পানি থেকে পার করে নেব। তখন লোকটি বাগানে পানি দিচ্ছিল। এরপর লোকটি বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে গতরাতের মশ্কে রাখা পানি আছে। এরপর সে নাবী (সাঃআঃ)-কে কুটীরে নিয়ে গেল। একটি পাত্রে কিছু পানি ঢেলে তাতে ঘরে পোষা বক্রীর দুধ দোহন করিল। নাবী (সাঃআঃ) তা পান করিলেন। এরপর সে আবার দোহন করিল। তখন তাহাঁর সঙ্গে যিনি এসেছিলেন তিনি তা পান করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫২১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৬)
৭৪/২১. অধ্যায়ঃ ছোটরা বড়দের খিদমত করিবে।
৫৬২২
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার বংশের লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাদেরকে অর্থাৎ আমার চাচাদেরকে “ফাযীখ” নামক শরাব পান করাচ্ছিলাম। আমি ছিলাম তাঁদের মাঝে সবার চেয়ে ছোট। এমন সময় বলা হলঃ শরাব হারাম হয়ে গেছে। তাঁরা বললেনঃ এ শরাবগুলো ঢেলে দাও। আমি তা ঢেলে দিলাম। বর্ণনাকারী (সুলাইমান তাইমী ) বলেন, আমি আনাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ তাদের শরাব কী দিয়ে তৈরী ছিল? তিনি বললেনঃ কাঁচা ও পাকা খেজুরের তৈরী। আনাস (রাদি.)-এর পুত্র আবু বক্র বলিলেন, এটিই ছিল তাঁদের যুগের শরাব। তাতে আনাস (রাদি.) কোন অসম্মতি ব্যক্ত করেননি।
সুলাইমান বলেন, আমার কতক বন্ধু আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি আনাস (রাদি.) থেকে শুনেছেনঃ সে যুগে এটিই ছিলা তাঁদের শরাব।(আঃপ্রঃ- ৫২১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৭)
৭৪/২২. অধ্যায়ঃ পাত্রগুলো ঢেকে রাখা
৫৬২৩
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করিবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করিবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোন বস্তু আড়াআড়ি করে রেখে। আর (শয্যা গ্রহণের সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে।(আঃপ্রঃ- ৫২১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৮)
৫৬২৪
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা যখন ঘুমাবে তখন বাতি নিভিয়ে দেবে, দরজাগুলো বন্ধ করিবে, মশ্কের মুখ বন্ধ করিবে, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি ঢেকে রাখবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি আরো বলেছেন, কমপক্ষে একটি কাঠ আড়াআড়ি করে পাত্রের উপর রেখে দেবে।(আঃপ্রঃ- ৫২১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৯)
৭৪/২৩. অধ্যায়ঃ মশকের মুখ খুলে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করা।
৫৬২৫
আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মশ্কের মুখ খুলে, তাতে মুখ লাগিয়ে পানি পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫২১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১০)
৫৬২৬
আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে ইখ্তিনাসিল আসকিয়া (মশ্কের মুখ খুলে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করা) হইতে নিষেধ করিতে শুনিয়াছি।
আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মামার কিংবা অন্য কেউ বলেছেন, ইখ্তিনাস হল মশ্কের মুখে মুখ লাগিয়ে তাথেকে পানি পান করা। [৫৬২৫; মুসলিম ৩৬/১৪, হাদীস ২০২৩, আহমাদ ১১৬৬২] আঃপ্রঃ- ৫২১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১১)
৭৪/২৪. অধ্যায়ঃ মশ্কের মুখ থেকে পানি পান করা।
৫৬২৭
আইউব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইক্রামাহ (রাদি.) আমাদের বলিলেন, আমি তোমাদের সংক্ষিপ্ত এমন কতকগুলো কথা জানাব কি যেগুলো আমাদের কাছে আবু হুরাইরা (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন? (তা হল) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বড় কিংবা ছোট মশ্কের মুখে পানি পান করিতে এবং প্রতিবেশীকে তার দেয়ালের উপর খুঁটি গাড়ার ব্যাপারে বাধা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। [৫১](আঃপ্রঃ- ৫২১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১২)
[৫১] আলোচ্য হাদীসে মানবিক প্রয়োজনের প্রতি মহানাবী (সাঃআঃ) লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কারো নিকট প্রতিবেশী একান্ত প্রয়োজনে কয়েক দিনের জন্য সাময়িকভাবে কারোর দেওয়ালের উপর খুঁটি, বাঁশ, লাকড়ি ইত্যাদি পুঁতে অস্থায়ীভাবে কাজ করিতে চায়, তাকে যেন বাধা দেয়া না হয়। কারণ প্রতিবেশীর নিকট সকলেরই সময়ের প্রয়োজনে ঠেকা থাকতে হয়। আপনি আজকে প্রতিবেশীকে এই কাজে নিষেধ করলে পরবর্তীতে আপনি তার নিকট এর চেয়েও বেশী প্রয়োজনীয় কাজে ঠেকে যাওয়া অসম্ভব নয়। সুতরাং প্রতিবেশীর সাথে পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণভাব রক্ষা করার জন্যই উক্ত হাদীসের একান্ত লক্ষ্য। তবে হাদীসে উল্লেখিত নিষেধ বাণী দ্বারা প্রতিবেশীকে খুঁটি পোঁতার সুযোগ দেয়া ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব বটে। (ফাতহুল বারী ৫ম খণ্ড, হাদীস নং ২৪৬৩)
৫৬২৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) মশকের মুখ থেকে পানি পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫২১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৩)
৫৬২৯
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মশ্কের মুখ থেকে পানি পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫২১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৪)
৭৪/২৫. অধ্যায়ঃ পান পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা।
৫৬৩০
আবদুল্লাহর পিতা আবু ক্বাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন পানি পান করিবে সে যেন তখন পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে। আর তোমাদের কেউ যখন প্রস্রাব করে, সে যেন ডান হাতে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং তোমাদের কেউ যখন শৌচ কার্য করে তখন সে যেন ডান হাতে তা না করে। [৫২](আঃপ্রঃ- ৫২১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৫)
[৫২] হাদীসে পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করিতে নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় নাবী (সাঃআঃ) কতইনা সূক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করিতেন। এর কারণ হল, পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করলে যে কোন মুহূর্তে পানি শ্বাসনালীর মধ্যে প্রবেশ করে শ্বাস আদান-প্রদানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনুরূপভাবে নাকের নালীর মধ্যে পানি প্রবেশ করিতে পারে। ফলে নাক ও মাথার পর্দার মধ্যে ফুলা ধরতে পারে।
৭৪/২৬. অধ্যায়ঃ দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা।
৫৬৩১
সুমামা ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আনাস (রাদি.)-এর নিয়ম ছিল, তিনি দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পাত্র হইতে পানি পান করিতেন। তিনি মনে করিতেন যে, নাবী (সাঃআঃ) তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করিতেন। [৫৩]আঃপ্রঃ- ৫২২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৬)
[৫৩] তিন শ্বাসে পানি পান না করলে নিম্নে বর্ণিত রোগ ব্যাধি জন্ম নিতে পারেঃ
১। শ্বাসনালীতে পানি ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে যেতে পারে।
২। এমন বিঘ্নতা অধিক হলে মাথার খুলির ভিতর চাপ পড়ে। কারণ পানির শিরাসমূহ মাথার পর্দার সাথে সম্পৃক্ত থাকে। আবার মাথার ভিতর ফ্লয়েড আছে যার সম্পর্ক থাকে পানির সাথে। যদি চুষে বা ধীরে ধীরে পানি পান করা হয় তবে বিপদ ও ক্ষতিকর প্রভাব কখনও মাথার উপর পড়ে না।
৩। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত পানি বেশী পরমিাণ জমা হলে বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়। যথা পানি যখন ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে তখন উপর থেকে চাপ পড়লে হার্ট ও লান্সের ক্ষতি হয়। ডান দিক থেকে চাপ হলে যকৃত এবং বাম থেকে চাপ পড়লে নাড়ি-ভূড়ি উল্টেপাল্টে যায়, এভাবে নানাবিধ ক্ষতি হয়।
৭৪/২৭. অধ্যায়ঃ স্বর্ণের পাত্রে পানি পান করা
৫৬৩২
ইবনু আবু লাইলা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুযাইফা (রাদি.) মাদায়েন অঞ্চলে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি পানি পান করিতে চাইলেন। তখন এক গ্রামবাসী একটি রূপার পাত্রে পানি এনে তাঁকে দিল। তিনি পানি সহ পেয়ালাটি ছুঁড়ে মারলেন। এরপর তিনি বললেনঃ আমি এটি ছুঁড়ে ফেলতাম না, কিন্তু আমি তাকে নিষেধ করার পরও সে তা থেকে বিরত হয়নি। অথচ নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নিষেধ করিয়াছেন মোটা ও পাতলা রেশমের কাপড় পরতে, স্বর্ণ ও রৌপ্যের পান-পাত্র ব্যবহার করিতে। তিনি আরো বলেছেনঃ উল্লেখিত বস্তুগুলো হল দুনিয়াতে কাফির সম্প্রদায়ের জন্য; আর আখিরাতে তোমাদের জন্য।(আঃপ্রঃ- ৫২২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৭)
৭৪/২৮. অধ্যায়ঃ স্বর্ণ ও রৌপ্য পাত্রে পানি পান করা।
৫৬৩৩
ইবনু আবু লাইলা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা হুযাইফা (রাদি.)-এর সঙ্গে বাইরে বের হলাম। এ সময় তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর কথা আলোচনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণ ও রৌপ্য পাত্রে পান করিবে না। আর মোটা বা পাতলা রেশম বস্ত্র পরিধান করিবে না। কেননা, এগুলো দুনিয়াতে তাদের (অর্থাৎ অমুসলিমদের) জন্য ভোগ্যবস্তু। আর তোমাদের জন্য হল আখিরাতের ভোগ্যবস্তু।(আঃপ্রঃ- ৫২২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৮)
৫৬৩৪
নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিনী উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রৌপ্য পাত্রে পান করে সে তো তার উদরে জাহান্নামের অগ্নি প্রবিষ্ট করায়।[মুসলিম ৩৭/১, হাদীস ২০৬৫, আহমাদ ২৬৬৪৪] আঃপ্রঃ- ৫২২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৯)
৫৬৩৫
বারা ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের সাতটি বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয় থেকে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আমাদের হুকুম দিয়েছেনঃ রোগীর সেবা শুশ্রুষা করিতে, জানাযার পেছনে যেতে, হাঁচি প্রদানকারীর জবাব দিতে, দাওয়াতদাতার দাওয়াত গ্রহণ করিতে, সালামের প্রসার ঘটাতে, অত্যাচারিতকে সাহায্য করিতে এবং শপথকারীকে শপথ রক্ষার সুযোগ করে দিতে। আর আমাদের তিনি নিষেধ করেছেনঃ স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করিতে, কিংবা তিনি বলেছেন, রৌপ্য পাত্রে পানি পান করিতে, মায়াসির অর্থাৎ এক প্রকার নরম ও মসৃণ রেশমী কাপড় কালসী অর্থাৎ রেশম মিশ্রিত কাপড় ব্যবহার করিতে এবং পাতলা কিংবা মোটা এবং অলঙ্কার খচিত রেশমী বস্ত্র পরিধান করিতে। [১২৩৯; মুসলিম ৩৭/১, হাদীস ২০৬৬, আহমাদ ১৮৫৩০] আঃপ্রঃ- ৫২২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২০)
৭৪/২৯. অধ্যায়ঃ পেয়ালায় পান করা
৫৬৩৬
উম্মুল ফায্ল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
লোকজন আরাফাহর দিনে নাবী (সাঃআঃ)-এর সিয়াম পালন সম্পর্কে সন্দেহ করিল। তখন আমি তাহাঁর নিকট একটি পেয়ালায় কিছু দুধ পাঠালাম। তিনি তা পান করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫২২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২১)
৭৪/৩০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম)-এর ব্যবহৃত পেয়ালায় পান করা এবং তাহাঁর পাত্রসমূহের বর্ণনা।
আবু বুরদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম আমাকে বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে সেই পাত্রে পান করিতে দেব না যে পাত্রে নাবী (সাঃআঃ) পান করিয়াছেন?
৫৬৩৭
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আরবের এক মহিলার কথা আলোচনা করা হলে, তিনি আবু উসাইদ সাঈদী (রাদি.)-কে আদেশ দিলেন, সেই মহিলার নিকট কাউকে পাঠাতে। তখন তিনি তার নিকট একজনকে পাঠালে সে আসলো এবং সায়িদা গোত্রের দূর্গে অবতরণ করিল। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বেরিয়ে এসে তার কাছে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) দূর্গে তার কাছে প্রবেশ করে দেখলেন, এক স্ত্রীলোক মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে। নাবী (সাঃআঃ) যখন তার সঙ্গে কথাবার্তা বলিলেন, তখন সে বলে উঠল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে পানাহ দিলাম। তখন লোকেরা তাকে বলিল, তুমি কি জান ইনি কে? সে বললঃ না। তারা বললঃ ইনি তো আল্লাহর রাসুল। তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। সে বলিল, এ মর্যাদা থেকে আমি চিরদিনের জন্য বঞ্চিতা। এরপর সেই দিনই নাবী (সাঃআঃ) এগিয়ে গেলেন এবং তিনি ও তাহাঁর সাহাবীগণ অবশেষে বানী সায়িদার চত্বরে এসে বসে পড়লেন। এরপর বললেনঃ হে সাহল! আমাদের পানি পান করাও। সাহল (রাদি.) বলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য এ পেয়ালাটিই বের করে আনি এবং তা দিয়ে তাঁদের পান করাই। বর্ণনাকারী বলেন, সাহল (রাদি.) তখন আমাদের কাছে সেই পেয়ালা বের করে আনলে আমরা তাতে করে পানি পান করি। তিনি বলেছেনঃ পরবর্তীতে উমর ইবনু আব্দুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর নিকট হইতে সেটি দান হিসাবে পেতে চাইলে, তিনি তাঁকে তা হেবা করে দেন। [৫২৫৬; মুসলিম ৩৬/৯, হাদীস ২০০৭] আঃপ্রঃ- ৫২২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২২)
৫৬৩৮
আসিম আহওয়াল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-এর কাছে নাবী (সাঃআঃ)-কর্তৃক ব্যবহৃত একটি পেয়ালা দেখেছি। সেটি ফেটে গিয়েছিল। এরপর তিনি তা রূপা দিয়ে জোড়া দেন। বর্ণনাকারী আসিম বলেন, সেটি ছিল উৎকৃষ্ট, চওড়া ও নুযর কাঠের তৈরি। আসিম বলেন, আনাস (রাদি.) বলেছেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে এ পেয়ালায় বহুবার পানি পান করিয়েছি।
আসিম বলেন, ইবনু সীরীন (রাদি.) বলেছেনঃ পেয়ালাটিতে বৃত্তাকারে লোহা বসানো ছিল। তাই আনাস (রাদি.) ইচ্ছে করেছিলেন, লোহার বৃত্তের জায়গায় সোনা বা রূপার একটি বৃত্ত বসাতে। তখন আবু তালহা (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যেভাবে বানিয়েছেন, তাতে কোন পরিবর্তন করো না। ফলে তিনি তার ইচ্ছে পরিত্যাগ করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫২২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৩)
৭৪/৩১. অধ্যায়ঃ বরকত পান করা ও বরকতযুক্ত পানির বর্ণনা।
৫৬৩৯
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম, তখন আসরের ওয়াক্ত। অথচ আমাদের সাথে বেঁচে যাওয়া অল্প পানি ছাড়া কিছুই ছিল না। তখন সেটুকু একটি পাত্রে রেখে পাত্রটি নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে পেশ করা হল। তিনি পাত্রটির মধ্যে নিজের হাত প্রবেশ করালেন এবং আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে দিলেন। এরপর বললেনঃ এসো, যাদের অযূর দরকার আছে। বরকত তো আসে আল্লাহর নিকট হইতে। জাবির (রাদি.) বলেন, তখন আমি দেখলাম নাবী (সাঃআঃ)-এর আঙ্গুলগুলোর ফাঁক থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লোকজন অযূ করিল এবং পানি পান করিল। আমিও আমার পেটে যতটুকু সম্ভব ছিল ততটুকু পান করিতে কসুর করলাম না। কেননা, আমি জানতাম এটি বরকতের পানি। রাবী বলেন, আমি জাবির (রাদি.)-কে বললামঃ সে দিন আপনারা কত জন ছিলেন? তিনি বললেনঃ এক হাজার চারশ জন। জাবির (রাদি.)-এর সূত্রে আমর এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন।
সালিম, জাবিরের (রাদি.) সূত্রের মাধ্যমে হুসাইন ও আমর ইবনু মুররা চৌদ্দশর জায়গায় পনেরশর কথা বলেছেন। সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব জাবির (রাদি.) থেকে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫২২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৪)
Leave a Reply