সুরা আল মুমতাহিনাহ এর তাফসীর
সুরা আল মুমতাহিনাহ এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা মুমতাহিনা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা আল মুমতাহিনাহ এর তাফসীর
৬৫/৬০/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ (হে মুমিনগণ!) আমার শত্রু তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (সুরা আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১)
(60) سُوْرَةُ الْمُمْتَحِنَةِ
সুরা (৬০) : আল-মুমতাহিনাহ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {لَا تَجْعَلْنَا} فِتْنَةً لَا تُعَذِّبْنَا بِأَيْدِيْهِمْ فَيَقُوْلُوْنَ لَوْ كَانَ هَؤُلَاءِ عَلَى الْحَقِّ مَا أَصَابَهُمْ هَذَا {بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ} أُمِرَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِفِرَاقِ نِسَائِهِمْ كُنَّ كَوَافِرَ بِمَكَّةَ.
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, لَا تَجْعَلْنَا আমাদেরকে কাফিরদের হাতে শাস্তি দিও না। তাহলে তারা বলবে, যদি মুসলিমরা হাকের ওপর থাকত, তাহলে তাদের ওপর এ মুসীবত আসত না। بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ নাবী সাঃআঃ-এর সহাবীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাঁরা যেন তাদের ঐ স্ত্রীদের বর্জন করে, যারা মক্কাতে কাফির অবস্থায় বিদ্যমান আছে।
৪৮৯০
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) যুবায়র (রাদি.), মিকদাদ (রাদি.) ও আমাকে পাঠালেন এবং বলিলেন, তোমরা রওযা খাখ নামক স্থানে যাও। সেখানে এক উষ্ট্রারোহিণী মহিলা পাবে। তার সঙ্গে একখানা পত্র আছে, তোমরা তার থেকে সে পত্রখানা নিয়ে নিবে। এরপর আমরা রওয়ানা হলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ছুটে চলল। যেতে যেতে আমরা রওযায় গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছেই আমরা উষ্ট্রারোহিণীকে পেয়ে গেলাম। আমরা বললাম, পত্রখানা বের কর সে বলিল, আমার সঙ্গে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, অবশ্যই তুমি পত্রখানা বের করিবে, অন্যথায় তোমাকে বিবস্ত্র করে ফেলা হইবে। এরপর সে তার চুলের বেনী থেকে পত্রখানা বের করিল। আমরা পত্রখানা নিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এলাম। দেখা গেল, পত্রখানা হাতিব ইবনু আবু বাল্তাআহ (রাদি.)-এর পক্ষ হইতে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে লেখা যাতে তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর বিষয় তাদের কাছে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, হাতিব কী ব্যাপার? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ব্যাপারে ত্বড়িৎ কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি কুরাইশ বংশীয় লোকদের সঙ্গে বসবাসকারী এক ব্যক্তি; কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার কোন বংশগত সম্পর্ক নেই। আপনার সঙ্গে যত মুহাজির আছেন, তাদের সবারই সেখানে আত্মীয়-স্বজন আছে। এসব আত্মীয়-স্বজনের কারণে মক্কাহয় তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম, যেহেতু তাদের সঙ্গে আমার বংশীয় কোন সম্পর্ক নেই,তাই এবার যদি আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি, তাহলে হয়তো তারাও আমার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াবে। কুফর ও স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করার মনোভাব নিয়ে আমি এ কাজ করিনি। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সে তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অনুমতি দিন এক্ষুণি আমি তাহাঁর গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তুমি কি জান না, আল্লাহ অবশ্যই বদরের অংশগ্রহণকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ “তোমরা যা চাও কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” আমর বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে ঃ “হে ঈমানদারগণ! আমার শত্র“ ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।” সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আয়াতটি হাদীসের অংশ না আমর (রাদি.)-এর কথা, তা আমি জানি না। [৩০০৭] (আ.প্র. ৪৫২২, ই.ফা. ৪৫২৫)
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, সুফ্ইয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে “হে মুমিনগণ! আমার শত্র“কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না” আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সুফ্ইয়ান বলেন, মানুষের বর্ণনার মাঝে তো এ রকমই পাওয়া যায়। আমি এ হাদীসটি আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে মুখস্থ করেছি। এর থেকে একটি অক্ষরও আমি বাদ দেইনি। আমার ধারণা, আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে আমি ছাড়া আর কেউ এ হাদীস মুখস্থ করেনি। (ই.ফা. ৪৫২৬)
৬৫/৬০/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ (হে মুমিনগণ!) যখন তোমাদের কাছে মুমিন নারীরা দেশত্যাগী হয়ে আসে। (সুরা আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১০)
৪৮৯১
উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) তাকে বলেছেন, কোন মুমিন মহিলা রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে হিজরাত করে এলে, তিনি তাকে আল্লাহর এই আয়াতের ভিত্তিতে পরীক্ষা করিতেন- অর্থঃ “হে নাবী! মুমিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়আত করিতে আসে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন শরীক করিবে না, চুরি করিবে না, ব্যভিচার করিবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করিবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না, এবং সৎকার্যে তোমাকে অমান্য করিবে না, তখন তাদের বায়আত গ্রহণ করিবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিবে।) আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (সুরা আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১২)। উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আয়েশাহ (রাদি.) বলেছেন, যে মুমিন মহিলা এসব শর্ত মেনে নিত, রাসুল (সাঃআঃ) তাকে বলিতেন, আমি কথার মাধ্যমে তোমাকে বায়আত করে নিলাম। আল্লাহর কসম! বায়আত কালে কোন নারীর হাত নাবী (সাঃআঃ)-এর হাতকে স্পর্শ করেনি। নারীদেরকে তিনি শুধু এ কথার দ্বারাই বায়আত করিতেনقَدْ بَايَعْتُكِ عَلَى ذَلِكِ অর্থাৎ আমি তোমাকে এ কথার ওপর বায়আত করলাম।
ইউনুস, মামার ও আবদুর রহমান ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরীর মাধ্যমে উক্ত বর্ণনার সমর্থন করিয়াছেন।
ইসহাক ইবনু রাশিদ, যুহরী থেকে এবং যুহরী উরওয়াহ ও আমর (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন। [২৭১৩] (আ.প্র. ৪৪২৩, ই.ফা. ৪৫২৭)
৬৫/৬০/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ হে নাবী! মুমিন নারীরা যখন আপনার কাছে এসে এই মর্মে আনুগত্যের শপথ করে। (সুরা আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১২)
৪৮৯২
উম্মি আতিয়্যাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেছি। এরপর তিনি আমাদের সামনে পাঠ করিলেন, “তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক স্থির করিবে না।” এরপর তিনি আমাদেরকে মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করিলেন। এ সময় এক মহিলা তার হাত টেনে নিয়ে বলিল, অমুক মহিলা আমাকে বিলাপে সহযোগিতা করেছে, আমি তাকে এর বিনিময় দিতে ইচ্ছা করেছি। নাবী (সাঃআঃ) তাকে কিছুই বলেননি। এরপর মহিলাটি উঠে চলে গেল এবং আবার ফিরে আসলো, তখন রাসুল (সাঃআঃ) তাকে বায়আত করিলেন। [১৩০৬] (আ.প্র. ৪৫২৪, ই.ফা. ৪৫২৮)
৪৮৯৩
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর বাণী, وَلاَ يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ -এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, এটা একটা শর্ত, যা আল্লাহ তাআলা নারীদের প্রতি আরোপ করিয়াছেন। (আ.প্র. ৪৫২৫, ই.ফা. ৪৫২৯)
৪৮৯৪
উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কি এসব শর্তে আমার কাছে বায়আত গ্রহণ করিবে যে, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছুকে শরীক করিবে না, যিনা করিবে না এবং চুরি করিবে না। এরপর তিনি নারীদের শর্ত সম্পর্কিত আয়াত পাঠ করিলেন। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান প্রায়ই বলিতেন, রাসুল (সাঃআঃ) আয়াতটি পাঠ করিয়াছেন। এরপর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের যে ব্যক্তি এসব শর্ত পূরণ করিবে, আল্লাহ তার প্রতিফল দেবেন। আর যে ব্যক্তি এ সবের কোন একটি করে ফেলবে এবং তাকে শাস্তিও দেয়া হইবে। এ শাস্তি তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ সবের কোন একটি করে ফেলল এবং আল্লাহ তা লুকিয়ে রাখলেন, তাহলে এ বিষয়টি আল্লাহর কাছে থাকল। তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, আর তিনি যদি চান তাহলে তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। আবদুর রায্যাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সূত্রে এ রকম বর্ণনা করিয়াছেন। [১৮] (আ.প্র. ৪৫২৬, ই.ফা. ৪৫৩০)
৪৮৯৫
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ঈদুল ফিত্রের দিন ঈদের সলাতে রাসুল (সাঃআঃ) সঙ্গে সঙ্গে হাজির ছিলাম এবং আবু বাক্র (রাদি.), উমার (রাদি.) এবং উসমান (রাদি.)-ও সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা সকলেই খুত্বার আগে সলাত আদায় করিয়াছেন। সলাত আদায়ের পর তিনি খুতবা দিয়েছেন। এরপর আল্লাহর নাবী মিম্বর থেকে নেমেছেন। তখন তিনি যে লোকজনকে হাতের ইশারায় বসাচ্ছিলেন, এ দৃশ্য আমি এখনো যেন দেখিতে পাচ্ছি। এরপর তিনি লোকদের দুভাগ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং মহিলাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাহাঁর সঙ্গে বিলাল (রাদি.)-ও ছিলেন। এরপর তিনি পাঠ করিলেন, “হে নাবী! মুমিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এসে বায়আত করে এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক স্থির করিবে না, চুরি করিবে না, ব্যভিচার করিবে না, নিজেদের সন্তানকে হত্যা করিবে না এবং তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না।” তিনি পূর্ণ আয়াত তিলাওয়াত করে সমাপ্ত করিলেন। এরপর তিনি আয়াত শেষ করে বলিলেন, এ শর্ত পূরণে তোমরা রাজি আছ কি? একজন মহিলা বলিল, হাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! এ ব্যতীত আর কোন মহিলা কোন উত্তর দেয়নি। এ মহিলাটি কে ছিল, হাসান (রাদি.) তা জানতেন না। রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা দান করো। বিলাল (রাদি.) তাহাঁর কাপড় বিছিয়ে দিলেন। তখন মহিলারা তাদের রিং ও আংটি বিলাল (রাদি.)-এর কাপড়ে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলতে লাগলেন। [৯৮] (আ.প্র. ৪৫২৭, ই.ফা. ৪৫৩১)
Leave a Reply