সুরা আল হাদীদ এর তাফসীর
সুরা আল হাদীদ এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা হাদীদ আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা আল হাদীদ এর তাফসীর
৬৫/৫৯/১.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
(57) سُوْرَةُ الْحَدِيْدِ
সুরা (৫৭) : আল-হাদীদ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ} مُعَمَّرِيْنَ فِيْهِ {مِنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّوْرِ} مِنْ الضَّلَالَةِ إِلَى الْهُدَى {فِيْهِ بَأْسٌ شَدِيْدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ} جُنَّةٌ وَسِلَاحٌ {مَوْلَاكُمْ} أَوْلَى بِكُمْ {لِئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ} لِيَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ يُقَالُ {الظَّاهِرُ} عَلَى كُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا {وَالْبَاطِنُ} عَلَى كُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا {أَنْظِرُوْنَا} انْتَظِرُوْنَا.
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ আমি তোমাদেরকে তাতে আবাদকারী বানিয়েছি। مِنْ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّوْرِ ভ্রান্তি থেকে হিদায়াতের দিকে। وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ ঢাল ও অস্ত্রশস্ত্র। مَوْلَاكُمْ তিনিই তোমাদের জন্য যোগ্য। لِئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ যাতে কিতাবী লোকেরা জানতে পারে। বলা হয়, বস্তুর বাহ্যিক বিষয়ের উপরও عِلْمٍ ব্যবহৃত হয়। এমনিভাবে বস্তুর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উপরও عِلْم ব্যবহৃত হয়। أَنْظِرُوْنَا তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর।
(58) سُوْرَةُ الْمُجَادَلَةِ
সুরা (৫৮) : মুজাদালাহ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {يُحَادُّوْنَ} يُشَاقُّوْنَ اللهَ {كُبِتُوْا} أُخْزُوْا مِنَ الْخِزْيِ {اسْتَحْوَذَ} غَلَبَ. سُوْرَةُ الْحَشْرِ.
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, يُحَادُّوْنَ তারা (আল্লাহর) বিরোধিতা করছে। كُبِتُوْا তাদেরকে অপদস্থ করা হইবে। الْخِزْيِ ধাতু হইতে উক্ত শব্দটির উৎপত্তি। اسْتَحْوَذَ সে প্রাধান্য বিস্তার করেছে।
(59) سُوْرَةُ الْحَشْرِ
সুরা (৫৯) : আল-হাশর
{الْجَلَآءَ} الإِخْرَاجُ مِنْ أَرْضٍ إِلَى أَرْضٍ.
الْجَلَاءَ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্বাসিত করা।
৪৮৮২
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে সুরা তাওবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এ তো লাঞ্ছনাকারী সুরা। وَمِنْهُمْ وَمِنْهُمْ অর্থাৎ তাদের একদল এই করেছে, আরেক দল ওই করেছে, এ বলে একাধারে এ সুরা অবতীর্ণ হইতে থাকলে লোকেরা ধারণা করিতে লাগলো যে, এ সুরায় উল্লেখ করা হইবে না, এমন কেউ আর তাদের মধ্যে বাকী থাকবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে সুরা আনফাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এ সুরাটি বদর যুদ্ধের সময় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তাকে সুরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এটি বানু নযীর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। [৪০২৯; মুসলিম ৫৪/৬, হাদীস ৩০৩১] (আ.প্র. ৪৫১৪, ই.ফা. ৪৫১৭)
৪৮৮৩
সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে সুরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এ সুরাকে সুরা বানী নাযীর বল। [৪০২৯] (আ.প্র. ৪৫১৫, ই.ফা. ৪৫১৮)
৬৫/৫৯/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যে খর্জুর বৃক্ষগুলো কর্তন করেছ বা যেগুলো কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে; এতো এ জন্য যে, আল্লাহ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন- (সুরা আল-হাশর ৫৯/৫)।
৪৮৮৪
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) বানী নযীর গোত্রের খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কেটে ফেলেছিলেন। এ গাছগুলো ছিল বুয়াইরা নামক জায়গায়। এরপর অবতীর্ণ করিয়াছেন আল্লাহ তাআলাঃ তোমরা যে খর্জুর বৃক্ষগুলো কর্তন করেছ বা যেগুলোকে কাণ্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে; এ এজন্য যে, আল্লাহ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। [২৩২৬] (আ.প্র. ৪৫১৬, ই.ফা. ৪৫১৯)
৬৫/৫৯/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ এই জনপদবাসীদের নিকট হইতে তাহাঁর রাসুল সাঃআঃ-কে যা কিছু দিয়েছেন। (সুরা আল-হাশর ৫৯/৭)
৪৮৮৫
উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বনু নযীরের বিষয়-সম্পত্তি ঐ সমস্ত বস্তুর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আল্লাহ তাহাঁর রাসুলকে ফাই হিসেবে দিয়েছেন এ জন্য যে মুসলিমরা অশ্বে কিংবা উষ্ট্রে অরোহণ করে যুদ্ধ করেনি। সুতরাং এটা খাস ছিল রাসুল (সাঃআঃ)-এর জন্য। এর থেকে তিনি তাহাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খরচ দান করিতেন। এরপর বাকিটা তিনি অস্ত্রশস্ত্র এবং ঘোড়া সংগ্রহের পিছনে ব্যয় করিতেন আল্লাহর পথে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে। [২৯০৪] (আ.প্র. ৪৫১৭, ই.ফা. ৪৫২০)
৬৫/৫৯/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ রাসুল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর (এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হইতে বিরত থাক)। (সুরা আল-হাশর ৫৯/৭)
৪৮৮৬
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ লানাত করিয়াছেন ঐ সমস্ত নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকণ করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকণ করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভূরু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সে সব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনয়ন করে। এরপর বানী আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নামের এক মহিলার কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে সে এসে বলিল, আমি জানতে পারলাম, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লানত করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যার প্রতি লানাত করিয়াছেন, আল্লাহর কিতাবে যার প্রতি লানাত করা হয়েছে, আমি তার প্রতি লানাত করব না কেন? তখন মহিলা বলিল, আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুরআন) পড়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছেন, তা তো এতে পাইনি। আবদুল্লাহ বলিলেন, যদি তুমি কুরআন পড়তে তাহলে অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি রাসুল (সাঃআঃ) তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হইতে বিরত থাক। মহিলাটি বলিল, হাঁ নিশ্চয়ই পড়েছি। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, রাসুল (সাঃআঃ) এ কাজ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তখন মহিলা বলিল, আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে তিনি বলিলেন, তুমি যাও এবং ভালমত দেখে এসো। এরপর মহিলা গেল এবং ভালভাবে দেখে এলো। কিন্তু তার দেখার কিছুই দেখিতে পেলো না। তখন আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, যদি আমার স্ত্রী এমন করত, তবে সে আমার সঙ্গে একত্র থাকতে পারত না। [৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮; মুসলিম ৩৭/৩৩, হাদীস ২১২৫, আহমাদ ৪৩৪৩] (আ.প্র. ৪৫১৮, ই.ফা. ৪৫২১)
৪৮৮৭
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে নারী নকল চুল লাগায়, তার প্রতি রাসুল (সাঃআঃ) লানাত করিয়াছেন। রাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি উম্মু ইয়াকূব নামক মহিলার নিকট হইতে হাদীসটি শুনিয়াছি, তিনি আবদুল্লাহ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন, মানসূরের হাদীসের মতই। [৪৮৮৬] (আ.প্র. ৪৫১৯, ই.ফা. ৪৫২২)
৬৫/৫৯/৫.অধ্যায়ঃ আনসারদের যারা এ নগরীতে বসবাস করে আসছে ও ঈমান এনেছে, (তাঁরা মুহাজিরদেরকে ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তাঁরা অন্তরে আকাঙক্ষা পোষণ করে না)। (সুরা আল-হাশর ৫৯/৯)
৪৮৮৮
আমর ইবনু মায়মূন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমার (রাদি.) বলেছেন, আমি আমার পরবর্তী খালীফাকে ওসীয়াত করেছি, প্রথম যুগের মুহাজিরদের হাক আদায় করার জন্য এবং আমি পরবর্তী খালীফাকে আনসারদের ব্যাপারে ওসীয়াত করছি, যারা নাবী (সাঃআঃ)এর হিজরাতের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করিতেন এবং ঈমান এনেছিলেন যেন তিনি তাদের পুণ্যবানদের সৎকর্মকে গ্রহণ করেন এবং দোষ-ত্র“টিকে ক্ষমা করে দেন। [১৩৯২] (আ.প্র. ৪৫২০, ই.ফা. ৪৫২৩)
৬৫/৫৯/৬.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এবং তাঁরা তাঁদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় (নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও) শেষ পর্যন্ত। (সুরা আল-হাশর ৫৯/৯)
الْخَصَاصَةُ الْفَاقَةُ الْمُفْلِحُوْنَ الْفَائِزُوْنَ بِالْخُلُوْدِ وَالْفَلَاحُ الْبَقَاءُ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ عَجِّلْ وَقَالَ الْحَسَنُ حَاجَةً حَسَدًا.
الْخَصَاصَةُ ক্ষুধা। الْمُفْلِحُوْنَ যারা (জান্নাতে) চিরকাল থাকার সফলতা অর্জন করিয়াছেন। الْفَلَاحِ স্থায়িত্ব। حَيَّعَلَىالْفَلَاحِ সফলতা ও চিরস্থায়ী জীবনের দিকে তাড়াতাড়ি আস। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, حَاجَةٌ হিংসা।
৪৮৮৯
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, আমি খুব ক্ষুধার্ত। তখন তিনি তাহাঁর সহধর্মিণীদের নিকট পাঠালেন; কিন্তু তিনি তাদের কাছে কিছুই পেলেন না। এরপর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এমন কেউ আছে কি, যে আজ রাতে এ লোকটিকে মেহমানদারী করিতে পারে? আল্লাহ তাহাঁর প্রতি রহমাত করবেন। তখন আনসারদের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিলেন, আমি আছি, হে আল্লাহর রাসুল! এরপর তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং নিজ স্ত্রীকে বলিলেন, ইনি রাসুল (সাঃআঃ)-এর মেহমান। কোন জিনিস জমা করে রাখবে না। মহিলা বলিল, আল্লাহর কসম! আমার কাছে ছেলে-মেয়েদের খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বলিলেন, ছেলেমেয়েরা রাতের খাবার চাইলে তুমি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দিও, (খাবার নিয়ে) আমার কাছে আসিও, অতঃপর বাতিটি নিভিয়ে দিও। আজ রাতে আমরা ভুখা থাকব। সুতরাং মহিলা তা-ই করিল। পরদিন সকালে আনসারী সহাবী রাসুল (সাঃআঃ)-এর খিদমাতে আসলেন। তিনি বলিলেন, অমুক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন অথবা অমুক অমুকের কাজে আল্লাহ হেসেছেন। এরপর আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন ঃ “এবং তাঁরা তাদের নিজেদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও।” [৩৭৯৮] (আ.প্র. ৪৫২১, ই.ফা. ৪৫২৪)
Leave a Reply