সুরা আল ফাত্হ এর তাফসীর
সুরা আল ফাত্হ এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা ফাতাহ আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা আল ফাত্হ এর তাফসীর
৬৫/৪৮/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় আমি আপনাকে এক প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি (সুরা আল-ফাত্হ ৪৮/১)
(48) سُوْرَةُ الْفَتْحِ
সুরা (৪৮) : আল-ফাত্হ
قَالَ مُجَاهِدٌ {بُوْرًا} هَالِكِيْنَ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ} السَّحْنَةُ وَقَالَ مَنْصُوْرٌ عَنْ مُجَاهِدٍ التَّوَاضُعُ {شَطْأَهُ} فِرَاخَهُ فَاسْتَغْلَظَ غَلُظَ {سُوْقِهِ} السَّاقُ حَامِلَةُ الشَّجَرَةِ وَيُقَالُ دَائِرَةُ السَّوْءِ كَقَوْلِكَ رَجُلُ السَّوْءِ وَدَائِرَةُ السُّوْءِ الْعَذَابُ تُعَزِّرُوْهُ تَنْصُرُوْهُ شَطْأَهُ شَطْءُ السُّنْبُلِ تُنْبِتُ الْحَبَّةُ عَشْرًا أَوْ ثَمَانِيًا وَسَبْعًا فَيَقْوَى بَعْضُهُ بِبَعْضٍ فَذَاكَ قَوْلُهُ تَعَالَى فَآزَرَهُ قَوَّاهُ وَلَوْ كَانَتْ وَاحِدَةً لَمْ تَقُمْ عَلَى سَاقٍ وَهُوَ مَثَلٌ ضَرَبَهُ اللهُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ خَرَجَ وَحْدَهُ ثُمَّ قَوَّاهُ بِأَصْحَابِهِ كَمَا قَوَّى الْحَبَّةَ بِمَا يُنْبِتُ مِنْهَا.
মুজাহিদ বলেন, سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ তাদের মুখমন্ডলের নিদর্শন। মানসূর মুজাহিদের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। شَطْأَهُ অর্থ, কচি পাতা। فَاسْتَغْلَظَ পুষ্ট হয়। سُوْقِهِ ঐ কান্ড যা গাছকে দাঁড় করিয়ে রাখে। دَآئِرَةُالسَّوْءِ শব্দটি এখানে رَجُلُالسَّوْءِ-এর মত ব্যবহৃত হয়েছে। دَآئِرَةُالسُّوْءِ শাস্তি। تُعَزِّرُوْهُ তাঁরা তাঁকে সাহায্য করে। شَطْأَهُ কচি পাতা, একটি বীজ থেকে দশ, আট এবং সাতটি করে বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। আল্লাহর বাণীঃ فَاٰزَرَهُ (এরপর এটা শক্তিশালী হয়) এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। অঙ্কুর যদি একটি হয় তাহলে তা কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আল্লাহ তাআলা এ উপমাটি নাবী সাঃআঃ সম্বন্ধে ব্যবহার করিয়াছেন, কেননা, প্রথমত তিনি একাই দাওয়াত নিয়ে উত্থিত হয়েছেন, তারপর সহাবীদের দ্বারা (আল্লাহ) তাকে শক্তিশালী করিয়াছেন যেমন বীজ থেকে উদগত অঙ্কুর দ্বারা বীজ শক্তিশালী হয়।
৪৮৩৩
আসলাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতের বেলা কোন এক সফরে ছিলেন। তাহাঁর সঙ্গে উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-ও চলছিলেন। উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) তাঁকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করিলেন, কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে কোন উত্তর দিলেন না। তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তারপর তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তখন উমার (রাদি.) (নিজেকে) বলিলেন, উমরের মা হারিয়ে যাক। তুমি তিনবার রাসুল (সাঃআঃ)-কে প্রশ্ন করলে, কিন্তু একবারও তিনি তোমার জবাব দিলেন না। উমার (রাদি.) বলেন, তারপর আমি আমার উটটি দ্রুতবেগে চালিয়ে লোকদের আগে চলে গেলাম এবং আমার ব্যাপারে কুরআন নাযিলের আশংকা করলাম। অধিকক্ষণ হয়নি, তখন শুনলাম এক আহ্বানকারী আমাকে ডাকছে। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি তো আশংকা করছিলাম যে, আমার ব্যাপারে কোন আয়াত অবতীর্ণ হইতে পারে। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সুরা নাযিল হয়েছে, যা আমার কাছে, এই পৃথিবী, যার ওপর সূর্য উদিত হয়,তা থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি পাঠ করিলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়। [৪১৭৭] (আ.প্র. ৪৪৬৮, ই.ফা. ৪৪৭০)
৪৮৩৪
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا “এর দ্বারা হুদাইবিয়াহর সন্ধি বোঝানো হয়েছে। [৪১৭২] (আ.প্র. , ই.ফা. ৪৪৭১)
৪৮৩৫
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মাক্কাহ বিজয়ের দিন সুরা ফাতহ সমধুর কণ্ঠে পাঠ করেন। মুআবিয়াহ (রাদি.) বলেন, আমি ইচ্ছে করলে নাবী (সাঃআঃ)-এর কিরাআত তোমাদের নকল করে শোনাতে পারি। [৪২৮১] (আ.প্র. ৪৪৬৯, ই.ফা. ৪৪৭২)
৬৫/৪৮/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
{لِّيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْـ.ـبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَه” عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا لا}.
যেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন আপনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ এবং পূর্ণ করেন আপনার প্রতি তাহাঁর অনুগ্রহ, আর আপনাকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (সুরা আল-ফাত্হ ৪৮/২)
৪৮৩৬
মুগীরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এত অধিক সলাত আদায় করিতেন যে, তাহাঁর পদযুগল ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, আল্লাহ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দিয়েছেন। তিনি বলিলেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? [১১৩০] (আ.প্র. ৪৪৭০, ই.ফা. ৪৪৭৩)
৪৮৩৭
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) রাতে এত অধিক সলাত আদায় করিতেন যে, তাহাঁর পদযুগল ফেটে যেতো। আয়েশাহ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? তবু আপনি কেন তা করছেন? তিনি বলিলেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পছন্দ করব না? তাহাঁর মেদ বর্ধিত হলে তিনি বসে সলাত আদায় করিতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছে করিতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়তেন, তারপর রুকূ করিতেন। [১১১৮] (আ.প্র. ৪৪৭১, ই.ফা. ৪৪৭৪)
[১] অর্থাৎ তিনি বার্ধক্যে পৌঁছলে।
৬৫/৪৮/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আমি তো আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্য প্রদানকারী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। (সুরা আল-ফাত্হ ৪৮/৮)
৪৮৩৮
আমর ইবনু আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কুরআনের এ আয়াত, “আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে” তাওরাতে আল্লাহ এভাবে বলেছেন, হে নাবী, আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও উম্মী লোকদের মুক্তি দাতারূপে। তুমি আমার বান্দা ও রাসুল। আমি তোমার নাম রেখেছি নির্ভরকারী যে রূঢ় ও কঠোরচিত্ত নয়, বাজারে শোরগোলকারী নয় এবং মন্দ মন্দ দ্বারা প্রতিহতকারীও নয়; বরং তিনি ক্ষমা করবেন এবং উপেক্ষা করবেন। বক্র জাতিকে সোজা না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাহাঁর জান কবয করবেন না। তা এভাবে যে, তারা বলবে, আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। ফলে খুলে যাবে অন্ধ চোখ, বধির কান এবং পর্দায় ঢাকা অন্তরসমূহ। [২১২৫] (আ.প্র. ৪৪৭২, ই.ফা. ৪৪৭৫)
৬৫/৪৮/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন। (সুরা আল-ফাত্হ ৪৮/৪)
৪৮৩৯
বারাআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর জনৈক সহাবী কিরাআত করছিলেন। তাহাঁর একটি ঘোড়া ঘরে বাঁধা ছিল। হঠাৎ তা পালাতে লাগলো। সে ব্যক্তি বেরিয়ে এসে দৃষ্টিপাত করিলেন; কিন্তু কিছুই দেখিতে পেলেন না। ঘোড়াটি পালিয়েই যাচ্ছিল। যখন ভোর হলো তখন তিনি ঘটনাটি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে ব্যক্ত করলে তিনি বলিলেন, এ হলো সেই প্রশান্তি, যা কুরআন তিলাওয়াত করার সময় অবতীর্ণ হয়ে থাকে। [৩৬১৪] (আ.প্র. ৪৪৭৩, ই.ফা. ৪৪৭৬)
[১] কুরআন তিলাওয়াতের কারণে মালায়িকাহ নাযিল হয়েছিল যাঁদের দেখে ঘোড়া পালাচ্ছিল।
৬৫/৪৮/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করিল। (সুরা আল-ফাত্হ ৪৮/১৮)
৪৮৪০
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুদাইবিয়াহর (সন্ধির) দিন আমরা এক হাজার চারশ লোক ছিলাম। [৩৫৭৬] (আ.প্র. ৪৪৭৪, ই.ফা. ৪৪৭৭)
৪৮৪১
আবদুল্লাহ ইবনু মাগাফ্ফাল মুযানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
(যিনি সন্ধির সময় উপস্থিত ছিলেন) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দুই আঙ্গুলের মাঝে কাঁকর নিয়ে নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। [৫৪৭৯, ৬২২০] (আ.প্র. ৪৪৭৫, ই.ফা. ৪৪৭৮)
৪৮৪২
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ صُهْبَانَ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ مُغَفَّلٍ الْمُزَنِيَّ فِي الْبَوْلِ فِي الْمُغْتَسَلِ
উক্বাহ ইবনু সুহ্বান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমি আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল মুযানী (রাদি.)-কে গোসলখানায় প্রস্রাব করা সম্পর্কে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। (আ.প্র. ৪৪৭৫, ই.ফা. ৪৪৭৮)
৪৮৪৩
সাবিত ইবনু দাহ্হাক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনিও বৃক্ষতলে বায়আতকারী সহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। [১৩৬৩] (আ.প্র. ৪৪৭৬, ই.ফা. ৪৪৭৯)
৪৮৪৪
হাবীব ইবনু আবু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু ওয়ায়িল (রাদি.)-এর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য এলে, তিনি বলিলেন, আমরা সিফ্ফীনের ময়দানে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বলিলেন, তোমরা কি সে লোকদেরকে দেখিতে পাচ্ছ না, যাদের আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে? আলী (রাদি.) বলিলেন, হাঁ। তখন সাহ্ল ইবনু হুনায়ফ (রাদি.) বলিলেন, প্রথমে তোমরা নিজেদের খবর নাও। হুদায়বিয়াহ্র দিন অর্থাৎ নাবী (সাঃআঃ) এবং মাক্কাহ্র মুশরিকদের মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল, আমরা সেটা দেখেছি। যদি আমরা একে যুদ্ধ মনে করতাম, তাহলে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম। সেদিন উমার (রাদি.) রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে) এসে বলেছিলেন, আমরা কি হাকের উপর নই, আর তারা কি বাতিলের উপর নয়? আমাদের নিহত ব্যক্তিরা জান্নাতে, আর তাদের নিহত ব্যক্তিরা কি জাহান্নামে যাবে না? তিনি বলিলেন, হাঁ। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, তাহলে কেন আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অপমানজনক শর্তারোপ করা হইবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে হুকুম করেননি। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে খাত্তাবের পুত্র! আমি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ কখনো আমাকে ধ্বংস করবেন না। উমার রাগে মনে দুঃখ নিয়ে ফিরে গেলেন। তিনি ধৈর্য ধরতে পারলেন না। তারপর তিনি আবু বাক্র সিদ্দীক (রাদি.)-এর কাছে গেলেন এবং বলিলেন, হে আবু বাক্র! আমরা কি হাকের উপর নই এবং তারা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বলিলেন, হে খাত্তাবের পুত্র! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ কক্ষণো তাঁকে ধ্বংস করবেন না। এ সময় সুরা ফাতহ অবতীর্ণ হয়। [৩১৮১] (আ.প্র. ৪৪৭৭, ই.ফা. ৪৪৮০)
Leave a Reply