সুরা ফুসসিলাত এর তাফসীর

সুরা ফুসসিলাত এর তাফসীর

সুরা ফুসসিলাত এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

সুরা ফুসসিলাত এর তাফসীর

৬৫/৪১/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

(41) سُوْرَةُ حم السَّجْدَةِ

সুরা (৪১) : হা-মীম আস্সাজদাহ (ফুসসিলাত)

وَقَالَ طَاوُسٌ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ {اِئْتِيَا طَوْعًا} أَوْ كَرْهًا أَعْطِيَا {قَالَتَا أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ} أَعْطَيْنَا وَقَالَ الْمِنْهَالُ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِابْنِ عَبَّاسٍ إِنِّيْ أَجِدُ فِي الْقُرْآنِ أَشْيَاءَ تَخْتَلِفُ عَلَيَّ قَالَ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ {يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَآءَلُوْنَ} و {وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ} فَقَدْ كَتَمُوْا فِيْ هَذِهِ الْآيَةِ وَقَالَ {أَمِ السَّمَآءُ بَنَاهَا} إِلَى قَوْلِهِ {دَحَاهَا} فَذَكَرَ خَلْقَ السَّمَاءِ قَبْلَ خَلْقِ الْأَرْضِ ثُمَّ قَالَ {أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُوْنَ بِالَّذِيْ خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ} إِلَى قَوْلِهِ {طَآئِعِيْنَ} فَذَكَرَ فِيْ هَذِهِ خَلْقَ الْأَرْضِ قَبْلَ خَلْقِ السَّمَاءِ وَقـَالَ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا}{عَزِيْزًا حَكِيْمًا}{سَمِيْعًامبَصِيْرًا} فَكَأَنَّهُ كَانَ ثُمَّ مَضَى فَقَالَ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ فِي النَّفْخَةِ الْأُوْلَى ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللهُ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ وَلَا يَتَسَاءَلُوْنَ ثُمَّ فِي النَّفْخَةِ الآخِرَةِ {أَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ}وَأَمَّا قَوْلُهُ {مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ} حَدِيْثًا فَإِنَّ اللهَ يَغْفِرُ لِأَهْلِ الإِخْلَاصِ ذُنُوْبَهُمْ وَقَالَ الْمُشْرِكُوْنَ تَعَالَوْا نَقُوْلُ لَمْ نَكُنْ مُشْرِكِيْنَ فَخُتِمَ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ فَتَنْطِقُ أَيْدِيْهِمْ فَعِنْدَ ذَلِكَ عُرِفَ أَنَّ اللهَ لَا يُكْتَمُ حَدِيْثًا وَعِنْدَهُ {يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا} الْآيَةَ وَ{خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ثُمَّ خَلَقَ السَّمَآءَ ثُمَّ اسْتَوٰى إِلَى السَّمَآءِ فَسَوَّاهُنَّ فِيْ يَوْمَيْنِ اٰخَرَيْنِ ثُمَّ دَحَا الْأَرْضَ} وَدَحْوُهَا أَنْ أَخْرَجَ مِنْهَا الْمَاءَ وَالْمَرْعَى وَخَلَقَ الْجِبَالَ وَالْجِمَالَ وَالآكَامَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ يَوْمَيْنِ آخَرَيْنِ فَذَلِكَ قَوْلُهُ {دَحَاهَا} وَقَوْلُهُ {خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ} فَجُعِلَتْ الْأَرْضُ وَمَا فِيْهَا مِنْ شَيْءٍ فِيْ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ وَخُلِقَتْ السَّمَوَاتُ فِيْ يَوْمَيْنِ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا} سَمَّى نَفْسَهُ ذَلِكَ وَذَلِكَ قَوْلُهُ أَيْ لَمْ يَزَلْ كَذَلِكَ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يُرِدْ شَيْئًا إِلَّا أَصَابَ بِهِ الَّذِيْ أَرَادَ فَلَا يَخْتَلِفْ عَلَيْكَ الْقُرْآنُ فَإِنَّ كُلاًّ مِنْ عِنْدِ اللهِ قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ حَدَّثَنِيْ يُوْسُفُ بْنُ عَدِيٍّ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِيْ أُنَيْسَةَ عَنِ الْمِنْهَالِ بِهَذَا.

وَقَالَ مُجَاهِدٌ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ مَحْسُوْبٍ أَقْوَاتَهَا أَرْزَاقَهَا فِيْ كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا مِمَّا أَمَرَ بِهِ نَحِسَاتٍ مَشَائِيْمَ وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَاءَ قَرَنَّاهُمْ بِهِمْ تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ الْمَوْتِ اهْتَزَّتْ بِالنَّبَاتِ وَرَبَتْ ارْتَفَعَتْ مِنْ أَكْمَامِهَا حِيْنَ تَطْلُعُ لَيَقُوْلَنَّ هَذَا لِيْ أَيْ بِعَمَلِيْ أَنَا مَحْقُوْقٌ بِهَذَا وَقَالَ غَيْرُهُ سَوَاءً لِلسَّائِلِيْنَ قَدَّرَهَا سَوَاءً فَهَدَيْنَاهُمْ دَلَلْنَاهُمْ عَلَى الْخَيْرِ وَالشَّرِّ كَقَوْلِهِ وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ وَكَقَوْلِهِ هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ وَالْهُدَى الَّذِيْ هُوَ الإِرْشَادُ بِمَنْزِلَةِ أَصْعَدْنَاهُ وَمِنْ ذَلِكَ قَوْلُهُ أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمْ اقْتَدِهْ يُوْزَعُوْنَ يُكَفُّوْنَ مِنْ أَكْمَامِهَا قِشْرُ الْكُفُرَّى هِيَ الْكُمُّ وَقَالَ غَيْرُهُ وَيُقَالُ لِلْعِنَبِ إِذَا خَرَجَ أَيْضًا كَافُوْرٌ وَكُفُرَّى وَلِيٌّ حَمِيْمٌ الْقَرِيْبُ مِنْ مَحِيْصٍ حَاصَ عَنْهُ أَيْ حَادَ مِرْيَةٍ وَمُرْيَةٌ وَاحِدٌ أَيْ امْتِرَاءٌ وَقَالَ مُجَاهِدٌ اعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ هِيَ وَعِيْدٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ادْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ الصَّبْرُ عِنْدَ الْغَضَبِ وَالْعَفْوُ عِنْدَ الإِسَاءَةِ فَإِذَا فَعَلُوْهُ عَصَمَهُمْ اللهُ وَخَضَعَ لَهُمْ عَدُوُّهُمْ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ.

তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….ইবনু আববাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বলেছেন, ائْتِيَا طَوْعًاأعطيا অর্থাৎ তোমরা উভয় আস; তারা উভয়ে বলিল, أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ অর্থাৎ আমরা এলাম। মিনহাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি ইবনু আববাস (রাদি.)-কে প্রশ্ন করিল, আমি কুরআনে এমন বিষয় পাচ্ছি, যা আমার কাছে পরস্পর বিরোধী মনে হচ্ছে। আল্লাহ বলেছেন, যে দিন (যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হইবে) সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ খবর নেবে না। আবার বলেছেন, তারা একে অপরের সামনা-সামনি হয়ে খোঁজ খবর নেবে। তারা আল্লাহ থেকে কোন কথাই গোপন করিতে পারবে না। (তারা বলবে) আল্লাহ আমাদের রব! আমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তারা আল্লাহ থেকে নিজেদের মুশরিক হবার ব্যাপারটিকে লুকিয়ে রাখবে। (তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন), না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই তা নির্মাণ করিয়াছেন….এরপর পৃথিবীকে করিয়াছেন সুবিস্তৃত পর্যন্ত। এখানে আকাশকে যমীনের পূর্বে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন; কিন্তু অন্য এক স্থানে বর্ণিত আছে যে, তোমরা কি তাঁকে স্বীকার করিবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন দুই দিনে, আমরা এলাম অনুগত হয়ে। এখানে যমীনকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে।

আল্লাহ বলেছেনঃ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا}{عَزِيْزًا حَكِيْمًا}{سَمِيْعًامبَصِيْرًا} উপরোক্ত আয়াতসমূহের প্রেক্ষাপটে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত গুণাবলী প্রথমে আল্লাহর মধ্যে ছিল; কিন্তু এখন নেই। (জনৈক ব্যক্তির এসব প্রশ্ন শুনার পর) ইবনু আববাস (রাদি.) বলিলেন, যে দিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না।

এ আয়াতের সম্পর্ক হল প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সঙ্গে। কেননা, ইরশাদ হয়েছে যে, এরপর শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হইবে। ফলে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছে করেন, তারা বাদে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে। এ সময় পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অন্যের খোঁজ খবর নেবে না। তারপর শেষবারের মত শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর তারা একে অপরের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিবে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে এক আয়াতে আছে, তারা আল্লাহ থেকে কোন কথাই গোপন করিতে পারে না। অন্য আয়াতে আছে মুশরিকগণ বলবে যে, আমরা তো মুশরিক ছিলাম না। এর সমাধান হচ্ছে এই যে, ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে আল্লাহ রাববুল আলামীন মুখ্লিস লোকদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। এ দেখে মুশরিকরা বলবে, আস! আমরাও বলব, (হে আল্লাহ! আমরাও তো মুশ্রিক ছিলাম না। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন। তখন তাদের হাত কথা বলবে। এ সময় প্রকাশ পাবে যে, তাদের কোন কথাই আল্লাহ থেকে গোপন রাখা যাবে না। এবং এ সময়ই কাফিরগণ আকাঙ্ক্ষা করিবে (…..হায়! যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত)। তৃতীয় প্রশ্ন সম্বন্ধে সমাধান হচ্ছে এই যে, প্রথমে আল্লাহ তাআলা দুদিনে যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন। এরপর আসমান সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি আকাশের প্রতি মনোযোগ দেন এবং তাকে বিন্যস্ত করেন দুদিনে। তারপর তিনি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন। যমীনকে বিছিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, এর মাঝে পানি ও চারণভূমির বন্দোবস্ত করা, পর্বত-টিলা, উট এবং আসমান ও মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা। এ সবকিছুও তিনি আরো দুদিনে সৃষ্টি করেন। আল্লাহর বাণীঃ دَحَاهَا -এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে : خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ এবং তিনি দুদিনে যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন এ কথাও ঠিক; তবে যমীন এবং যত কিছু যমীনের মধ্যে বিদ্যমান আছে এসব তিনি চার দিনে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে দুদিনে।

وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا সম্বন্ধে উত্তর এই যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজেই এ সমস্ত বিশেষণযুক্ত নামের দ্বারা নিজের নামকরণ করিয়াছেন। উল্লিখিত গুণবাচক নামের অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন সর্বদাই এই গুণে গুণান্বিত থাকবেন। কারণ, আল্লাহ রাববুল আলামীন যখন কারো প্রতি কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন তিনি তাহাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী করেই থাকেন, সুতরাং কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের একটিকে অপরটির বিপরীত সাব্যস্ত করিবে না। কেননা, এগুলো সব আল্লাহর পক্ষ হইতে অবতীর্ণ হয়েছে। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন ممنون অর্থ গণনাকৃত। أَقْوَاتَهَا তাদের জীবিকা। فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَا যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। نَحِسَاتٍ শুভ। وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَআমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম তাদের সহচর। تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَآئِكَةُতাদের নিকটবর্তী হয় মালায়িকাহ। আর এ সময়টি হচ্ছে عِنْدَ الْمَوْتِমৃত্যুর সময়। اهْتَزَّتْফলে ফুলে আন্দোলিত হয়ে উঠে। وَرَبَتْ বেড়ে যায় এবং স্ফীত হয়ে উঠে। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যেরা বলেছেন, مِنْ أَكْمَامِهَاযখন তা আবরণ হইতে বিকশিত হয়। لَيَقُوْلَنَّهَذَالِيْ আমলের ভিত্তিতে এ সমস্ত অনুগ্রহের হকদার আমিই। سَوَآءً لِلسَّآئِلِيْنَআমি সমভাবে নির্ধারণ করেছি। فَهَدَيْنَاهُمْ অর্থাৎ আমি তাদেরকে ভাল-মন্দ সম্বন্ধে পথ বলে দিয়েছি। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এবং আমি তাকে দুটি পথই দেখিয়েছি। অন্যত্র বর্ণিত আছে যে, আমি তাকে ভাল পথের নির্দেশ দিয়েছি। الْهُدٰىপথ দেখানো এবং গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া। এ অর্থেই কুরআনে বর্ণিত আছে যে, তাদেরই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন। يُوْزَعُوْنَ তাদের আটক রাখা হইবে। مِنْ أَكْمَامِهَا অর্থ বাকলের উপরের আবরণ। এটাকে كم ও বলা হয়। وَلِيٌّحَمِيْمٌ নিকটতম বন্ধু। مِنْ مَحِيْصٍ শব্দটি حَاصَعَنْهُ থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, সে তার থেকে পলায়ন করেছে। مِرْيَةٌ এবং مُرْيَةٌ একার্থবোধক শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সন্দেহ। মুজাহিদ বলেছেন, اعْمَلُوْامَاشِئْتُمْ (তোমাদের যা ইচ্ছে কর) বাক্যটি মূলত সতর্কবাণী হিসেবে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেছেন, بِالَّتِيْ هِيَأَحْسَنُ -এর মর্মার্থ হচ্ছে, রাগের মুহূর্তে ধৈর্যধারণ করা এবং অন্যায় ব্যবহারকে ক্ষমা করে দেয়া। যখন কোন মানুষ ক্ষমা ও ধৈর্যধারণ করে তখন আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাজত করেন এবং তার শত্রুকে তার সামনে নত করে দেন। ফলে সে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়।

{وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ أَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ}

তোমাদের কান, তোমাদের চোখ ও তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না- এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করিতে না। উপরন্তু তোমরা মনে করিতে যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। (সুরা হা-মীম আস্-সাজদাহ ৪১/২২)

৪৮১৬

الصَّلْتُ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ زُرَيْعٍ عَنْ رَوْحِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ} وَلَا أَبْصَارُكُمْ الْآيَةَ قَالَ كَانَ رَجُلَانِ مِنْ قُرَيْشٍ وَخَتَنٌ لَهُمَا مِنْ ثَقِيْفَ أَوْ رَجُلَانِ مِنْ ثَقِيْفَ وَخَتَنٌ لَهُمَا مِنْ قُرَيْشٍ فِيْ بَيْتٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ أَتُرَوْنَ أَنَّ اللهَ يَسْمَعُ حَدِيْثَنَا قَالَ بَعْضُهُمْ يَسْمَعُ بَعْضَهُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَئِنْ كَانَ يَسْمَعُ بَعْضَهُ لَقَدْ يَسْمَعُ كُلَّهُ فَأُنْزِلَتْ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ}.

ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর বাণী ঃ “তোমাদের কর্ণ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে- এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।” আয়াত সম্পর্কে বলেন, কুরাইশ গোত্রের দু ব্যক্তি ছিল, যাদের জামাতা ছিল বানী সাকীফ গোত্রের অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) দু ব্যক্তি ছিল বানী সাকীফ গোত্রের আর তাদের জামাতা ছিল কুরাইশ গোত্রের। তারা সকলেই একটি ঘরে ছিল। তারা পরস্পর বলিল, তোমার কী ধারণা, আল্লাহ কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন? একজন বলিল, তিনি আমাদের কিছু কথা শুনছেন। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল, তিনি যদি আমাদের কিছু কথা শুনতে পান, তাহলে সব কথাও শুনতে পাবেন। তখন নাযিল হল ঃ “তোমাদের কান ও তোমাদের চোখ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।…..আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [৪৮১৭, ৭৫২১; মুসলিম ৫০/২৭৭৫, আহমাদ ৩৮৭৫] (আ.প্র. ৪৪৫২, ই.ফা. ৪৪৫৩)

৬৫/৪১/২.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর তোমাদের এ ধারণাই যা তোমরা স্বীয় রব সম্বন্ধে করিতে, তোমাদের সর্বনাশ করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের শামিল হয়ে গেছ। (সুরা হা-মীম আস্-সাজদাহ ৪২/২৩)

৪৮১৭

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, কাবার কাছে দুজন কুরাইশী এবং একজন সাকাফী অথবা দুজন সাকাফী ও একজন কুরাইশী একত্রিত হয়। তাদের পেটের মেদ ছিল অধিক; কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল কম। তাদের একজন বলিল, তোমাদের কী ধারণা, আমরা যা বলছি তা কি আল্লাহ শুনছেন? উত্তরে অপর এক ব্যক্তি বলিল, আমরা যদি জোরে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান। আর যদি চুপে চুপে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান না। তৃতীয় ব্যক্তি বলিল, আমরা জোরে বললে যদি তিনি শুনতে পান, তাহলে চুপে চুপে বললেও তিনি শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন, তোমাদের চোখ, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না….. (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। হুমাইদী বলেন, সুফ্ইয়ান এ হাদীস বর্ণনার সময় বলিতেন, মানসুর বলেছেন, অথবা ইবনু আবু নাজীহ অথবা হুমায়দ তাঁদের একজন বা দুজন। এরপর তিনি মানসূরের উপরই নির্ভর করিয়াছেন এবং একাধিকবার তিনি সন্দেহ বর্জন করে বর্ণনা করিয়াছেন। [৪৮১৬] (আ.প্র. ৪৪৫৩, ই.ফা. ৪৪৫৪)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply